অডিও ও ভিডিওআল-হিকমাহ মিডিয়াবই ও রিসালাহ [আল হিকমাহ]বাংলা প্রকাশনা

আল-কায়েদা’র সঙ্গে “জাবহাতুন নুসরাহ” এর সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ে কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ- ড. শাইখ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল

 

مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

شهادات حول فك الارتباط بين جبهة النصرة (فتح الشام) بتنظيم القاعدة
আল-কায়েদা’র সঙ্গে “জাবহাতুন নুসরাহ” (জাবহাতু ফাতহিশ-শাম) এর
সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ে কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ
Some evidence concerning the splitting of Jabhahtun Nusrah (Jabhatu Fathish-Sham) from Al-Qaeda.

دكتور. الشيخ سامي العريدي حفظه الله
ড. শাইখ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ
Dr. Sheikh Sami Al-Uraidi Hafizahullah

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

https://justpaste.it/7xj9k
https://mediagram.io/ea869e30baca4cd9

روابط بي دي اب
PDF (1.30 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১.৩০ মেগাবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/rDAc6Mw35D3PfCp

https://archive.org/download/aq-hts-somporkovongger-sakkho-proman_202012/AQ-HTS%20Somporkovongger%20Sakkho%20Proman.pdf
https://anonfiles.com/X3E4r4Y9o9/AQ-…oman_final_pdf
https://www116.zippyshare.com/v/hx9e3QJ1/file.html
https://mymegacloud.com/download/dXBsb2Fkcy9qYWhpZDI0L0FMLUhJS01BSC1NRURJQS9BUS1IVFMtU29tcG9ya292b25nZ2VyLVNha2toby1Qcm9tYW4tZmluYWwucGRm/h/85b81522ec3f6a77faa69ad8a1604c19
https://www.solidfiles.com/v/WGrAy3PNayzMr
https://mega.nz/file/KQtnBayA#GnX3jO_nFdo8hs-sTbdvGT7Gk9Kr3SZiCDijMRiU1Do


روابط ورد
Word (844 KB)
ওয়ার্ড [৮৪৪ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/D2dtA9Z8xLjkBQR
https://archive.org/download/aq-hts-somporkovongger-sakkho-proman_202012/AQ-HTS%20Somporkovongger%20Sakkho%20Proman.docx
https://anonfiles.com/T3E5raYco3/AQ-…ho_Proman_docx
https://www116.zippyshare.com/v/oId5dI9U/file.html
https://mymegacloud.com/download/dXBsb2Fkcy9qYWhpZDI0L0FMLUhJS01BSC1NRURJQS9BUS1IVFMtU29tcG9ya292b25nZ2VyLVNha2toby1Qcm9tYW4uZG9jeA==/h/4c94adb5ca30a0fb449cbe739203fa12
https://www.solidfiles.com/v/WGrAy3PNayzMr
https://mega.nz/file/CZtVnIwb#Wb4qeyHNxsLWAJAP4paWLI25smUAJbDlIfdI2ikoVjI

 


روابط الغلاف -١
Book Cover [690 KB] বুক কভার ডাউনলোড করুন [৬৯০ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/5YN8XmXJaftHicT
https://anonfiles.com/h2F1r3Y4o4/prossod-3_jpg
https://b.top4top.io/p_1728e9p3l3.jpg
https://ufile.io/9xbqw9uc
https://www116.zippyshare.com/v/zIHG7NSM/file.html
https://files.fm/f/7hzek9qs
https://i.ibb.co/X7VrT2G/prossod-3.jpg


روابط الغلاف -٢
Banner [88 KB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [৮৮ কিলোবাইট]

https://banglafiles.net/index.php/s/bsapa5ZDBDnWijJ
https://anonfiles.com/dfF4rdY1o2/prossod-3-Banner_jpg
https://c.top4top.io/p_17282i26l4.jpg
https://ufile.io/fbgmkql7
https://www116.zippyshare.com/v/hAZFy4am/file.html
https://files.fm/f/8vcbm7gg
https://i.ibb.co/0DJNK8r/prossod-3-Banner.jpg

বিভিন্ন প্লাটফর্মে আমাদের সাথে যুক্ত থাকতে-
চারপওয়্যার অ্যাকাউন্ট
https://chirpwire.net/profile/alhikmahmedia
চারপওয়্যার গ্রুপ
https://chirpwire.net/groups/profile…l-hikmah-media
টেলিগ্রাম চ্যানেল
https://t.me/alhikmahmedia1
টেলিগ্রাম বট
https://t.me/alhikmahmedia_bot
রায়ট রুম
https://riot.im/app/#/room/#alhikmahmedia3:matrix.org
জিও নিউজ চ্যানেল
https://talk.gnews.bz/channel/al-hikmah-or-mussh-alhkmh


مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

 

 

 

আল-কায়েদার সঙ্গে “জাবহাতুন নুসরাহ” (জাবহাতু ফাতহিশ-শাম) এর

সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ে কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ

মূল

ড. শাইখ সামী আল-উরাইদী হাফিযাহুল্লাহ

অনুবাদ

মুহাম্মাদ সালমান

 

 

  

সূচিপত্র

কিছু কথা.. 4

ভূমিকা: 8

প্রথম আসর: (১) 10

দ্বিতীয় আসর: (২) 12

তৃতীয় আসর: (৩) 16

চতুর্থ আসর: 20

পঞ্চম আসর: (৫) 26

প্রথম মাসআলা: 26

দ্বিতীয় মাসআলা : 35

পরিশিষ্ট: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নসীহাহ ও কল্যাণকামিতা: 41

 

 

 

 

 

কিছু কথা

শাইখের মুখতাসার পরিচিতি

শাইখ সামী আল উরাইদি ছিলেন জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের বিলুপ্ত শাম শাখা ‘জাবহাতুন নুসরাহ’র প্রধান শরিয়াহ বিশেষজ্ঞ, মুফতি এবং বর্তমান শাখা তানযিম হুররাসুদ্দীনেরও প্রধান মুফতি। ১৯৭৩ সালে জর্ডানের আম্মানে জন্মগ্রহণকারী এই আলেম জামেয়া জর্ডান থেকে হাদিস এর উপর পড়াশোনা করেন এবং একই প্রতিষ্ঠান থেকে হাদিসের উপর পিএইচডি করেন। তিনি প্রখ্যাত সিরিয়ান জিহাদি সমরকৌশলবিদ শাইখ আবু মুসআব আস-সুরী দ্বারা খুবই অনুপ্রাণিত ছিলেন। আফগানিস্তানে আল কায়েদার প্রখ্যাত জিহাদি সমরকৌশলবিদদের সাথে থেকে তিনি জিহাদ করেছিলেন, অতঃপর আল কায়েদার হয়ে ইরাকে লড়াই করেন এবং জাবহাতুন নুসরাহর প্রধান ছয় প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন। তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে আন নুসরাহ ফ্রন্টের ২য় প্রধান নেতা ছিলেন। সিরিয়াতে আন নুসরাহ ফ্রন্টের শক্ত অবস্থানের পেছনে আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তিনি জিহাদ ও মুজাহিদদের নিয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদি লিখেছেন। আধুনিক জিহাদের কর্মকৌশল নিয়ে তাঁর কিতাব ও ভিডিও মজলিসগুলো বিশ্বব্যাপী মুজাহিদদের মাঝে প্রভাব ফেলেছিল। আল কায়েদা প্রধান ডক্টর আইমান আয যাওয়াহিরি তাঁর লিখিত “ফিতনার যুগে মুজাহিদদের প্রতি নসিহত” নামক একটি বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন।

এ রচনা ও অনুবাদের প্রেক্ষাপট

শামের জিহাদের অন্যতম শক্তিশালী বাহিনী ছিল আল কায়েদার অঙ্গসংগঠন জাবহাতুন নুসরাহ। ইরাক ও শামে জামাতুল বাগদাদীর কর্মকান্ডের কারণে সিরিয়ার জিহাদে নানা মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। অতঃপর ২০১৬ সালে আল কায়েদা নেতৃবৃন্দের অনুমতি ব্যাতীত নুসরাহ ফ্রন্টের তৎকালীন নেতৃবৃন্দ আল কায়েদার বাইয়াত থেকে বের হয়ে জাবহাতু ফাতহিশ শাম গঠন করে। যদিও প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়েছিল এ সিদ্ধান্ত আল কায়েদা নেতৃবৃন্দের সম্মতিক্রমে হয়েছে, কিন্তু বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। সিরিয়ার জিহাদকে রক্ষার স্বার্থে আল কায়েদা নেতৃবৃন্দ বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকে।

পরবর্তীতে এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও সিরিয়ায় অবস্থানরত আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট শাইখদের সাথে পরামর্শ ছাড়াই জাবহাতু ফাতহিশ শামের নেতৃবৃন্দ তাহরির আশ শাম গঠন করে। এরপর শাইখ সামী আল উরাইদি, শাইখ আবু জুলাইবিব সহ অনেক নেতৃবৃন্দ তাহরির আশ শাম ছেড়ে বেড়িয়ে যান।

পরের কয়েক মাসে শায়খ সামী আল উরাইদির মতো শামে অবস্থিত আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ ও উমারাহর সাথে তাহরির আশ শামের নেতৃবৃন্দের বিবাদের বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠে। এর জের ধরেই শাইখ সামী আল উরাইদি সহ অনেক শাইখ ও মুজাহিদকে গ্রেফতার করে তাহরির আশ শাম।

সে সময় শাইখ যাওয়াহিরি এক বার্তায় বলেন-

কিছু লোক চিৎকার করে বলে, আমাদের উপর আমেরিকাকে চাপিয়ে দিবেন না! কেমন যেন তারা অজ্ঞ যে পাঁচ দশকের অধিক সময় ধরে আমেরিকা আমাদের উপর চেপে বসে আছে, আমাদের উপর হিংস্রতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার পূর্বে ব্রিটিশরা, ফ্রান্সিসরা ও রুশরা উসমানী সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারকে পরস্পর বণ্টন করে নিয়েছে। কেন ব্রিটিশরা জাবালে তারেক থেকে ভারত উপমহাদেশ পর্যন্ত ইসলামের ভূমিগুলোর উপর দখলদারিত্ব কায়েম করেছিল? কেন রুশরা মুসলমানদের কাফকাজ ও মধ্য এশিয়াকে ধ্বংস করে দিয়েছিল? কেন চীন পূর্ব তুর্কিস্তানের মুসলমানদের উপর দখলদারিত্ব কায়েম করেছে? কেন ফ্রান্সিসরা শাম ও মাগরিবুল ইসলাম (মরক্কো ও আফ্রিকান আরও কিছু মুসলিম ভুমি) এর উপর দখলদারিত্ব চালিয়েছিল? কেন আমেরিকা ইসরাইলকে পরিপূর্ণ সমর্থন ও সাহায্য করছে? অথচ এই ইসরাইল ইসলামী বিশ্বের মধ্যভাগে জগদ্দল পাথরের ন্যায় চেপে বসে আছে এবং সেখানকার খনিজ সম্পদকে লুণ্ঠন করছে?

তাহলে আল কায়েদা কি তাদের উপর চেপে বসেছিল? আল কায়েদা কি তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল? তাদেরকে কি ভয় দেখিয়েছিল??

শামে (সিরিয়াতে) কারা তাদের ইতর লোকজন বরং সৈন্যদের দ্বারা বাড়িঘর ধ্বংস করেছে, বোমা বর্ষণ করেছে, হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে? কারা সেখানে নোংরা বিভাজনের খেলা খেলেছে? কারা মুজাহিদদের উত্তম লোকদের উপর বোমা মেরেছে? আল কায়েদা-ই কি সেখানে আমেরিকাকে চেপে ধরেছে? টেনে এনেছে?

আল্লাহ তায়ালার দয়া ও অনুগ্রহে আল কায়েদা-ই শামে আমাদের অধিবাসীদের জিহাদের প্রথম দিন থেকেই সমর্থন করেছে, রিবাত ও জিহাদের শামে প্রত্যেক মুজাহিদের জন্য তাঁরা তাদের হাতকে প্রশস্ত করেছেন, তাঁদের বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন!

শাইখের এই বার্তার প্রেক্ষিতে তাহরির আশ শামের শরিয়াহ বোর্ডের সদস্য আবু আব্দুল্লাহ আশ শামীসহ অন্যান্যরা বিভ্রান্তিরকর বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করে।  এমন অবস্থায় শাইখ ড. সামী আল উরাইদি, শাইখ আবু জুলাইবিবসহ অন্যান্য মুজাহিদিন নেতৃবৃন্দ পাল্টা বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। সেই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে শাইখ সামী আল উরাইদি ৫ পর্বে سلسلة لله ثم للتاريخ ١-٥ شهادات حول فك الارتباط بين جبهة النصرة (فتح الشام) بتنظيم القاعدة  রচনা করেন, যার অনুবাদ আপনাদের কাছে পেশ করা হয়েছে আলহামদু লিল্লাহ।

এইচটিএস কর্তৃক শাইখকে গ্রেফতার

জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের পক্ষ নেওয়ার কারণেই ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর সিরিয়ার ইদলিব থেকে হাইয়াত তাহরির আশ শামের স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনী শাইখ সামী আল উরাইদিসহ জামাআত কায়িদাতুল জিহাদের চার শাইখ ও নেতৃত্বকে গ্রেফতার করেছিল। তাহরির আশ শামের নিরাপত্তা বাহিনী গ্রেফতারকৃত নেতৃত্বদের বাড়িঘরসহ সিরিয়ায় অবস্থানরত শাইখ আবু মুসআব যারকাবির নায়েব বা ডেপুটি শাইখ আবুল কাসসাম উরদুনির বাসাও তছনছ করে দেয়। গ্রেফতারকৃতদের মাঝে আরও ছিলেন – শাইখ আবু হুমাম আস সুরি ও শাইখ আব্দুল করিম আল মিসরি। তাহরির আশ শাম এক বিবৃতিতে গ্রেফতারকৃত শাইখ ও উমারাহদের ‘ফিতনা ও ফাসাদের মূল’ আখ্যায়িত করে তাঁদের তাহরির এর শরিয়াহ আদালতে পেশ করা হবে জানিয়েছিল। গ্রেফতারীর ধারাবাহিকতা পরবর্তীতেও চলমান আছে। তবে এই ঘটনারও অনেক আগে প্রায় এক বছর পূর্বে, শাইখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাক্বদিসি সর্বপ্রথম জনসম্মুখে বলেন – আন-নুসরার জাবহাতু ফাতহিশ শামে পরিণত হবার সিদ্ধান্ত হাকিমুল উম্মাহ শায়খ যাওয়াহিরি’র সমর্থিত ছিলো না।

এই ঘটনার কিছুদিন পূর্বে তাহরির আশ শাম ও আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে শাইখ আবু কাতাদাহ ও শাইখ মাকদিসির নেতৃত্বে উলামাদের একটি বোর্ড সন্ধির আহবান জানিয়েছিল, তবে তাহরির কৌশলে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল।

উল্লেখ্য তাহরির এর অনেক নেতৃবৃন্দসহ সিরিয়া ও সিরিয়ার বাহিরের অসংখ্য উলামা, উমারাহ ও জিহাদি নেতৃত্ব নিঃশর্তে গ্রেফতারকৃত শাইখদের মুক্ত করে দিতে আহবান জানিয়েছেন এবং তাহরিরকে উম্মাহর আলেমদের কাছে আসার আহবান করেছেন। এদের মাঝে তাহরির এর অনেক সামরিক, প্রশাসনিক ও শরিয়াহ বিভাগের সদস্যও রয়েছেন। তাঁরা এই কাজটিকে খুবই বাড়াবাড়ি হিসেবে বিবেচনা করেছেন।

বর্তমানে এ দলটির যুলুম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে আল-কায়েদা নেতৃবৃন্দের উপর আমেরিকার ড্রোন স্ট্রাইক। আল্লাহ তাঁদের শহীদ হিসাবে কবুল করুন। তুরস্কের সহায়তায় উম্মাহর দরদী উলামা, উমারাহ এবং বিভিন্ন আত্মত্যাগী ব্যক্তিদের গ্রেফতার করা হয়েছে। শামের হকপন্থী মুজাহিদদের কোণঠাসা করা হয়েছে, এবং অনেক ক্ষেত্রে নুসাইরিদের বিরুদ্ধে সামরিক কার্যক্রম পরিচালনার উপর ব্যাপক বাধা দেয়া হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে জাবহাতুন নুসরাহ থেকে তাহরির আশ শামের বিবর্তনের বিষয়টি জিহাদের পথের পথিক এবং সমর্থকদের পরিষ্কারভাবে জানানো জরুরী মনে করছি। শামের বর্তমান ফিতনার প্রেক্ষাপটে এ বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

আল্লাহ সব ধরণের ফিতনা থেকে উম্মাহ ও মুজাহিদিনকে হিফাযত করুন। আমিন।

আবু যুবাইদা

২৯ মুহররম, ১৪৪২ হিজরি

১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ ইংরেজি

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ.

 

সিরিজ প্রকাশনা: لله ثم للتاريخ লিল্লাহি ছুম্মা লিত্তারীখবা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, অতঃপর ইতিহাস রচনার লক্ষ্যে-

الحمد وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى وبعد

ভূমিকা:

আল্লাহর তাওফিকে “আল-কায়েদাহ’র সঙ্গে “জাবহাতুন নুসরাহ” (জাবহাতু ফাতহিশ-শাম)-এর সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ে কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে লিল্লাহি ছুম্মা লিত্তারিখনামক সিরিজটি রচনা করতে আরম্ভ করছি।

ইতিপূর্বে যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন কল্যাণের কথা বিবেচনা করে, তুলনামূলক অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে এবং আরও নানাবিধ কারণে এ বিষয়ে আমরা মুখ বন্ধ করে রেখেছিলাম।

কিন্তু সম্প্রতি শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ’র সর্বশেষ বিবৃতি (سنقاتلكم حتى لا تكون فتنة بإذن الله) (আল্লাহর ইচ্ছায় ফিতনা নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো)-এর ওপর শাইখ আব্দুর রহমান শামী ওরফে আব্দুর রহীম আত্তুন সাহেবের মন্তব্য ও জবাবের প্রেক্ষিতে; -যা আম-খাস সর্ব শ্রেণীর মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে- সে মন্তব্যের বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি তুলে ধরার লক্ষ্যে; ইস্তেখারা ও কতিপয় সুহৃদ বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে পরামর্শ করার পর সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ে কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ রচনার জন্য কলম ধরেছি। বস্তুত: আপন দায়িত্ব পালন ও কিছু সত্য উন্মোচন-এর জন্যই এই প্রয়াস। সর্বোপরি আল্লাহর কাছে তাওফিক ও সত্য পথের দিশা কামনা করি!

# জ্ঞাতব্য:

শাইখ আবু আব্দুল্লাহ শামী’র বক্তব্যে গোপন বিষয় ফাঁস করা, মজলিসের আমানতের খেয়ানত করার মতো ত্রুটিপূর্ণ দিক রয়েছে, যেগুলোর কারণে তারা নিজেরাই অন্যদেরকে দোষারোপ করে থাকেন। এরপরও নিজেদের দাবিতে যেহেতু তারা এ বিষয়ে সতর্ক, তাই আমি ইসলামী শিষ্টাচার হিসেবে সে সকল গোপন বিষয় উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকব।

***************************

 

 

 

প্রথম আসর: (১)

আমি আমার আলোচনা ও সাক্ষ্য-প্রমাণ শুরু করতে চাই শাইখ আত্তুন-এর নিম্নোক্ত বক্তব্যের খণ্ডন দিয়ে। তিনি লিখেন-

পূর্বের আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি, আমরা বাইয়াত এবং প্রতিশ্রুতি কোনটাই ভঙ্গ করিনি। আমরা শরয়ী ও সাংগঠনিক নীতিমালা অনুযায়ী পথ চলছি।

আল্লাহর তাওফিকে আমি বলব:

শাইখের এই বক্তব্যের অসারতা প্রমাণের জন্য সম্মানিত পাঠকের অল্প যে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে, সেটাকেই আমরা পাঁচ আসরে ধারাবাহিকভাবে বর্ণনা করবো, ইনশা আল্লাহ।

[আজকের আসরে সাক্ষ্য-প্রমাণের প্রথমটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।]

১.

শাইখ আবুল খায়ের রহ. হাইআতু তাহরীর আশ-শাম গঠনের (পরিপূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদ) দুই সপ্তাহেরও অধিক সময়কাল যাবৎ এ বিষয়ে ছিলেন অনবগত।

হাইআতু তাহরীর আশ-শাম গঠনের ঘোষণা শোনার পর আনুমানিক সপ্তাহখানিক পর আমি নিজে এবং শাইখ ক্বাসামসহ আরো কিছু ভাই তাঁর কাছে যাই। হাইআত গঠনের কার্যকারণ কি? এটা কেমন করে সম্ভব হল? তিনি এই বিষয়ে অবগত কিনা? ড. আইমান হাফিজাহুল্লাহ’র উভয় দলের পরিপূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারে সমর্থন আছে কিনা? এমন আরো অনেক প্রশ্ন করলাম…

এমন সব প্রশ্নের জবাবে তিনি জোরালো উত্তর দিয়ে বলেন—

আমি হাইআত গঠনের কথা মিডিয়া থেকে জানতে পাই। জাবহাতু ফাতহিশ-শাম -এর সিদ্ধান্তদাতা মহলের সঙ্গে আমার দেড় মাস যাবত কোনো বৈঠক হয়নি।

কিছুদিন পর আমি এবং কতক ভাই পুনরায় তাঁর কাছে যাই। জাবহাতু ফাতহিশ-শাম গঠনের পর ততদিনে দুই সপ্তাহেরও অধিক সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে।

অভিন্ন প্রশ্নে সেবারও তার কঠোর জবাব ছিল এ রকম—

এখন পর্যন্ত তাদের কর্ণধারদের সঙ্গে আমার কোনো বৈঠক হয়নি বিধায় আমি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই জানি না। তবে অচিরেই তাদের সঙ্গে আমার বৈঠকের ইচ্ছা আছে।

আমি তাদেরকে বলতে চাই, আপনাদের সম্পর্কচ্ছেদ কিরূপে শরীয়তের ও সংগঠনের নীতিমালা অনুযায়ী হতে পারে, অথচ ড. আইমানের নায়েব আপনাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও আপনারা তাঁর সঙ্গে পরামর্শ তো দূরের কথা, ব্যাপারটা একবার তাঁকে জানালেনও না?

# শরীয়ত বা সংগঠন কি আপনাদেরকে এমনটাই নির্দেশনা দিয়েছে?!!

# সম্পর্কচ্ছেদ এবং বাইয়াত ভঙ্গ কি এভাবেই করতে হয়?!!

# আপনাদের এই কাজ আর আমাদের সকলের নিকট নিন্দিত বাগদাদীর কাজের মাঝে তাহলে আর কি পার্থক্য রইলো?!!

নিজেদের অবস্থানের নড়বড়ে দশা ও ভিত্তিহীনতা বোঝার জন্য খুব বেশি না, এ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনারা চিন্তা করুন!

সামনে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় দ্বিতীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে আলোচনা হবে।

সেখানে আমাকে এবং আরো কতক বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে শাইখ আবুল খায়ের রহ.-এর নিম্নোক্ত উক্তি নিয়ে আলোচনা করব, ইনশা আল্লাহ।

যদি শাইখ হাকীমুল উম্মত হাফিজাহুল্লাহ সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং শামে আল-কায়েদা পুনর্গঠনের নির্দেশ আসে, তাহলে প্রয়োজনে আমি ষাটটি কিংবা সত্তরটি ঘাঁটি গঠন করবো।

সম্মানিত পাঠক! সে পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকুন।

الحمد لله وكفى الصلاة والسلام على عباده الذين اصطفى وبعد

দ্বিতীয় আসর: (২)

[আজকের আসরে সাক্ষ্য-প্রমাণের দ্বিতীয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।]

আমি এই সিরিজের প্রথম আলোচনাটি শুরু করেছিলাম, শাইখ আবু আব্দুল্লাহ আশ-শামী (আব্দুর রহমান আত্তুন)-এর বক্তব্যের শেষ দিকের একটি বাক্য দিয়ে। যার খণ্ডন ইতিপূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। আর তা হলো—“পূর্বের আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি, আমরা বাইয়াত এবং প্রতিশ্রুতি কোনটাই ভঙ্গ করিনি। আমরা শরয়ী ও সাংগঠনিক নীতিমালা অনুযায়ী পথ চলছি।

আমার এ পন্থা গ্রহণের কারণ হলো: বাতিল খণ্ডন ও সংশয় নিরসন নিয়ে যে সমস্ত আলেম লেখালেখি করেন, তারা এমনটিই করে থাকেন। অর্থাৎ প্রথমেই প্রতিপক্ষকে তার বক্তব্য দিয়েই ঘায়েল করেন। তার বক্তব্যের মধ্যকার পারস্পরিক বিরোধ উঠিয়ে নিয়ে এসে বক্তব্যের গোড়া কেটে দেন। এরপর প্রয়োজন অনুপাতে বিশ্লেষণে হাত দেন ও সবিস্তারে খণ্ডন করেন।

আজ শাইখ আত্তুনের পূর্বোক্ত বক্তব্যের অসারতা প্রমাণের জন্য আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণের দ্বিতীয়টি উল্লেখ করবো।

২.

সম্মানিত পাঠক! আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে, জাবহাতু ফাতহিশ-শাম গঠনের অল্প কিছুদিন পরেই শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ’র প্রথম চিঠিটি আসে। প্রথমদিন থেকেই তিনি এ সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করতে বলেন এবং জাবহাতু ফাতহিশ-শাম গঠনের ঘোষণা-পূর্ব অবস্থা বহাল রাখতে বলেন। তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন- যা ঘটেছে, তা আমীরের বিরোধিতা ও অবাধ্যতা

শাইখ আত্তুন অনিবার্য কারণেই তার বক্তব্যে শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর এ চিঠির প্রতি ইঙ্গিত করেন। কিন্তু চিঠিতে যে তাদের এই কাজকে অবাধ্যতা বলা হয়েছে, সে কথা বেমালুম চেপে যান।

শাইখ আত্তুনের গোপন করা ওই চিঠির আরো কিছু বিষয় ছিল এ রকম যে, হাকীমুল উম্মত শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ ওই চিঠিতে স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, সংগঠনের যেকোন শাখা বিচ্ছিন্ন হবার বিষয়টি সংগঠনের শূরা সদস্যদের মাঝে আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়। কেন্দ্রীয় আমীরেরও এ বিষয়ে একক ক্ষমতা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই, নায়েবে আমীরের ক্ষমতা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া তো আরো দূরের কথা। বরং বিষয়টি একান্তই আহলে শুরাদের আলোচনা সাপেক্ষ একটি বিষয়। (এই ছিল চিঠির বক্তব্য।)

এখানে একটি বিষয় বলে রাখি, শাইখ আত্তুন যদি ওই চিঠিটির কথা উল্লেখ না করতেন, চিঠিতে উল্লেখিত কিছু বিস্তারিত আকারে আলোচিত বিষয় প্রকাশ না করতেন এবং অপর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় গোপন না করতেন, তাহলে আমি কিছুতেই ওই চিঠির আলোচনা আনতাম না। কিন্তু তিনিই প্রথম ওই চিঠির কথা প্রকাশ করেন। ফলে এ বিষয়ে বাস্তবতা যতটুকু জানি, সে সম্পর্কে কিছু বলা জরুরি হয়ে পড়ে।

# শাইখ আত্তুন হাকীমুল উম্মত শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ’র বিবৃতির জবাবে গুরুত্বপূর্ণ আরো যে বিষয়টি উল্লেখ করেন নি এবং যা উল্লেখ করা ও প্রকাশ করা অতি জরুরী, তা হলো—

শাইখ আবুল খায়ের (তাকাব্বালাহুল্লাহ্) শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর চিঠি পাবার পর সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে সমর্থন বা শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থেকেছেন। কারণ, শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ তাতে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত দানের ক্ষমতা সংক্রান্ত নীতিমালা উল্লেখ করে বলেছেন যে, আহলে শুরা ছাড়া অন্য কারো এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবার ক্ষমতা নেই। ফলে শেখ আবুল খায়ের তাঁর সাথীদেরকে এবং যারাই সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত ও তা বলবৎ থাকার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেন, তাদেরকে তিনি বলতেন—এই বিষয়ে আমার কিছু বলার ক্ষমতা নেই।” এমনকি হাইআতু তাহরীর আশ-শাম গঠনের পর একবার যখন আমি এবং আরো কয়েকজন উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি এই সিদ্ধান্তকে শুভেচ্ছা জানাবেন কিনা? তখনো তিনি জবাবে সুস্পষ্ট ভাষায় আমাদেরকে বলেছিলেন যে, এই বিষয়ে আমার কিছু বলার ক্ষমতা নেই। শুভেচ্ছা জানানো কিংবা না জানানো এটা হাকীমুল উম্মত হাফিজাহুল্লাহ-এর ব্যাপার।” এ নিয়ে অনেকদিন আগের একটি অডিও ক্লিপ রয়েছে।

হাইআতের একজন বড় মাপের আইন বিশেষজ্ঞও আমাকে অনুরূপ বলেছেন। তাছাড়া শাইখ আবুল খায়েরের এই অবস্থানের কথা খোদ উনার কাছ থেকেই একাধিক লোক জেনেছেন।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের দিক-নির্দেশনার আগ পর্যন্ত শাইখ আবুল খায়েরের সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে নিরব অবস্থান ও শুভেচ্ছা জানানো থেকে বিরত থাকার বিষয়টা জানার পরে; এবার আসুন আমরা দেখি যে, ওই চিঠি আসার পর সম্পর্কচ্ছেদের প্রশ্নে আমীরদের অবস্থান কি দাঁড়ায়:—

সংগঠনের কেন্দ্রীয় আমীর ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

সংগঠনের প্রথম নায়েবে আমীর শাইখ আবুল খায়ের রহ. ড. আইমান আল জাওয়াহিরীর নির্দেশনা ছাড়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন।

দ্বিতীয় নায়েবে আমীর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তৃতীয় নায়েবে আমীর সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

শাইখ আত্তুন কেন্দ্রীয় আমীর, প্রথম নায়েবে আমীর ও দ্বিতীয় নায়েবে আমীরের এই অবস্থানের কথা তার বক্তব্যে স্বীকার করলেও শাইখ আবুল খায়ের রহ.-এর অবস্থানকে তিনি গোপন করেছেন। অথচ তা আমি নিজে শুনেছি এবং আমাদের অনেক ভাইও শুনেছেন। আমার জানা নেই, তিনি কেন এমনটি করলেন?!!

বিস্তারিত এ আলোচনার পর; বিশেষ করে কেন্দ্রীয় আমীর, তাঁর তিন নায়েবের অবস্থান এবং তারা কেউই যে পরিপূর্ণ সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারে ও হাইয়াত প্রতিষ্ঠিত হবার ঘোষণার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে কিছুই জানতেন না—এ বিষয়গুলো জানার পর আমরা তাদেরকে সে কথাই জিজ্ঞেস করতে চাই, যা ইতিপূর্বে জিজ্ঞেস করেছি:

# শরীয়ত অথবা সংগঠন আপনাদেরকে এমন কাজেরই আদেশ দিয়েছে?!!

# সম্পর্কচ্ছেদ এবং বাইয়াত ভঙ্গ কি এভাবেই করতে হয়?!!

# আপনাদের এই কাজ এবং আমাদের সকলের নিকট নিন্দিত বাগদাদীর কাজের মাঝে তবে কী পার্থক্য রইল?!!

নিজেদের অবস্থানের নড়বড়ে দশা ও ভিত্তিহীনতা বোঝার জন্য খুব বেশি না, এ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনারা চিন্তা করুন।

আল-কায়েদার সঙ্গে জাবহাতুন নুসরাহ’র সম্পর্কচ্ছেদের ব্যাপারে সাক্ষ্য-প্রমাণের সিরিজ আলোচনাটি আজকের মতো আর সামান্য একটু বলেই আমি শেষ করবো।

এখানে আমি সে বিষয়গুলোই তুলে ধরেছি, যা একাধিক সাথীবর্গের উপস্থিতিতে আমার নিজের সামনে ঘটতে দেখেছি। আমি ছাড়া অন্যের সঙ্গেও এমন ঘটতে শুনেছি। যেমন- শাইখ আবুল ক্বাসাম (শাইখ যারক্বাভীর নায়েব) আমাকে এ জাতীয় কিছু তথ্য দিয়েছেন। এই আলোচনাকে আরও স্পষ্ট করার জন্য আমি তা উল্লেখ করতে চাই।

শাইখ আবুল খায়ের রহ.-এর সঙ্গে এ বিষয়ক আমার এক আলোচনায় আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি– যদি সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান মর্মে হাকীমুল উম্মত আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ’র নির্দেশ আসে, তখন আপনার অবস্থান কী হবে? তখন তিনি আমাকে বলেন: “যদি হাকীমুল উম্মত সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং শামে আল-কায়েদার পুনর্গঠনের নির্দেশ আসে, তাহলে আমি সে নির্দেশ পালন করে ষাটটি ঘাঁটি গঠন করব।”

আর শাইখ ক্বাসামকে বলেন: আমি সত্তরটি ঘাঁটি গঠন করব।

********************

 

الحمد لله وكفى الصلاة والسلام على عباده الذين اصطفى وبعد

তৃতীয় আসর: (৩)

[আজকের আসরে সাক্ষ্য-প্রমাণের তৃতীয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।]

আল্লাহর ইচ্ছায় আজ আমি সিরিজের এই আসরটি পূর্ণ করব; এমন একটি বাস্তবতা তুলে ধরে, যা শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ’র বিবৃতির ওপর প্রদত্ত আত্তুন সাহেবের জবাব ও বক্তব্যকে ভিত্তিহীন, অমূলক প্রমাণিত করবে। কারণ, তা তাঁর নিজেরই অন্য বক্তব্যের বিরোধী।

৩.

প্রত্যেক সত্যান্বেষী ব্যক্তিদের সামনে সুস্পষ্টভাবে মূল সমস্যা তুলে ধরার জন্য এখানে যে বিষয়টি অতি গুরুত্বের সঙ্গে উল্লেখ করতে হয়, তা হলো: শাইখ আবুল খায়ের, শাইখ আবুল ফারাজ (আল্লাহ তা‘আলা উভয়ের আত্মাকে সম্মানিত করুন!), শাইখ জাওলানী এবং শাইখ আত্তুন—প্রত্যেকেই কিছু বৈঠকে নিজেদের সঙ্গে অঙ্গীকার করেছেন যে, যখন সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নাকচ করার ব্যাপারে ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী -হাফিজাহুল্লাহর নির্দেশ আসবে, তখন তারা সেই বিষয়ে শ্রবণ ও আনুগত্য প্রদর্শন করবেন।”

নিম্নে সংক্ষেপে তার কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো:

শাইখ আবুল খায়ের রহ. প্রসঙ্গে তো পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে। যদিও সেখানে আরও কিছু কথা রয়ে গেছে, কিন্তু প্রয়োজন না থাকার কারণে; আমরা সেগুলো উল্লেখ করব না। কারণ, আমাদের উদ্দেশ্য কেবল সুন্দরভাবে শালীনতার সাথে প্রকৃত সত্য উন্মোচন করে দেওয়া। তাই একান্ত প্রয়োজয় ছাড়া আমরা বিশ্লেষণে যাব না।

শাইখ আবুল ফারাজ রহ. প্রসঙ্গে বলবো, জাবহাতু ফাতহিশ-শাম ঘোষণার পর পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য তিনি কিছু ভাইয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের মাঝে দীর্ঘ আলাপচারিতা হয়েছে। তাদের আলোচনার মাঝে একটি বিষয় এমন ছিল যে, যদি হাকীমুল উম্মত আইমান হাফিজাহুল্লাহ’র পক্ষ থেকে সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার নির্দেশ আসে, তখন আমাদের অবস্থান কি হবে? তখন সবাই বলেন: “ বিনা বাক্য ব্যয়ে শ্রবণ ও আনুগত্য প্রদর্শন করবো

শাইখ আবুল ফারাজ রহ.-এর অবস্থান জানার জন্য আরও একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। নিহত হবার এক ঘণ্টারও কম সময় আগে তিনি একটি মজলিসে ছিলেন। তাতে তিনি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেকে জানানো ছাড়া উদ্ভূত এই সমস্যা, যার দরুন সম্পর্কচ্ছেদের প্রশ্ন এসেছে, তা থেকে উত্তরণের কি উপায় হতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনার জন্য সংগঠনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মিলিত হন। সেখানেও তিনি ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহু’র নির্দেশনা আঁকড়ে থাকার অপরিহার্যতা ব্যক্ত করেন।

উক্ত বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ কর্তৃক সম্পর্কচ্ছেদের এমন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যাত হবার এবং তা গুনাহ হিসেবে আখ্যায়িত হবার পর। বৈঠকটি কখনোই শাইখ যারক্বাভীর নায়েব শাইখ ক্বাসামের (যিনি ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন) সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ড. আইমানের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করার জন্য ছিল না। শাইখ আবুল ফারজ রহ.-এর সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সূত্রে আলোচ্য বিষয়ে উনার এমন অবস্থানটি আমি নিজেই জানতে পেরেছি।

শাইখ আবুল ফারাজ রহ.-এর অবস্থান সম্পর্কে পূর্বে যা কিছু আলোচনা হল, তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, উনার সম্পর্কে শাইখ আত্তুনের উপস্থাপিত দাবি বাতিল ও ভিত্তিহীন।

শাইখ জাওলানী এবং শাইখ আত্তুন যে ড. আইমান হাফিজাহুল্লাহ’র নির্দেশ পালনের জন্য নিজেদের সঙ্গে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছেন, সে প্রসঙ্গে বলবো—

ইতিপূর্বে আমি একাধিক বৈঠকে শাইখ আত্তুনকে এই প্রশ্নটি করেছিলাম, হাকীমুল উম্মত আইমান হাফিজাহুল্লাহ যখন সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বলবেন, তখন আপনার অবস্থান কী হবে? তখন তার জবাবে তিনি বলতেন: “আমরা শ্রবণ ও আনুগত্য প্রদর্শন করব”। প্রতিটি বৈঠকেই অনেক ভাইদের উপস্থিতিতে তিনি এমনটি বলেছেন।

হাকীমুল উম্মত আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করার পর আমি শাইখ জাওলানীকে জিজ্ঞেস করেছি, হে শাইখ! আপনি কি অনেকের সামনে এই অঙ্গীকার করেন নি যে, হাকীমুল উম্মত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বললে আপনি শ্রবণ ও আনুগত্য প্রদর্শন করবেন? এখন কোথায় সেই শ্রবণ ও আনুগত্য?? তখন তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের বিভিন্ন কল্যাণ ইত্যাদির দোহাই দিতে লাগলেন।

ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহু’র প্রতি এই দুই শাইখের শ্রবণ ও আনুগত্যের অঙ্গীকার প্রমাণ করার জন্য আশা করি এতটুকুই যথেষ্ট। জবাবমূলক এই রচনা লেখার পেছনে আমার উদ্দেশ্য— বিষয়গুলোর নিছক প্রচার, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা সূক্ষ্ম অপবাদ দেয়া নয়। অথচ শাইখ আত্তুন তাঁর মন্তব্য ও জবাবমূলক রচনার মাঝে এমনটিই করেছেন। বরং আমার উদ্দেশ্য হল, যেটাকে আমরা বাস্তব বলে জানি, অতি অল্প কথায় তা তুলে ধরা। পরিস্থিতি যদি আমাদেরকে বাধ্য না করত, তবে কিছুতেই আমরা এ বিষয়ে মুখ খুলতাম না। ইতিপূর্বে দীর্ঘ সময় আমরা এ বিষয়ে চুপ ছিলাম; তুলনামূলক অধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করে। শাইখ আত্তুন যদি তাঁর মন্তব্যে ও বক্তব্যে ভুলভাল, ভিত্তিহীন ও অমূলক বিষয় না ছড়াতেন, তবে এ বিষয়ে কিছুতেই আমি মুখ খুলতাম না, যেমনটি ভূমিকায় উল্লেখ করেছি।

এখানে আমি তাদেরকে আরো একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তাদের এই মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও অপপ্রচার যে, সম্পর্কচ্ছেদ ও ভাঙ্গনের এই সিদ্ধান্ত কেবল প্রচারসর্বস্ব একটি ব্যাপার ছাড়া আর কিছুই নয় —এর কারণে আমাদের ভাইদের অনেকেই প্রথমে তাদের এ সিদ্ধান্তের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেন। এটি তারা যেমন জানেন, অন্যরাও তেমনি জানেন। এখন আমরা বুঝতে পারছি, শাইখ আত্তুন নিজ বক্তব্যে সে সকল ভাইদের সমর্থনের কথা কিভাবে বলতে পারলেন? সামনে প্রয়োজন মনে করলে এ বিষয়ে আল্লাহ চাহেন তো বিস্তারিত কিছু বলবো।

উলামা-মাশায়েখ যখন নিজেদের সঙ্গে শ্রবণ ও আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছেন, এ পর্যায়ে তাদেরকে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই:

# শরয়ী ও সাংগঠনিক অবশ্য পালনীয় কর্তব্য কি এই নয় যে, আপনারা নিজেদের অঙ্গীকার পূর্ণ করে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশ পালন করবেন; যেমনটি শাইখ আবুল খায়ের রহ. করেছেন?!!

# আমাদের সকলের কাছে নিন্দিত বাগদাদী ও আদনানীর কর্মকাণ্ড এবং আপনাদের এই কার্যকলাপের মাঝে তবে কি পার্থক্য রইলো?!!

# সম্পর্কচ্ছেদ এবং বাইয়াত ভঙ্গ কি এভাবেই করতে হয়?!!

নিজেদের অবস্থানের নড়বড়ে দশা ও ভিত্তিহীনতা বোঝার জন্য খুব বেশি না, এ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আপনারা চিন্তা করুন।

সামনে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চতুর্থ সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে আলোচনা হবে।

আল্লাহ চাহেন তো তাতে আমরা তুলে ধরব, আম চিঠিপত্র এবং খাস চিঠিপত্রগুলোতে ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহু’র বক্তব্যে স্ব-বিরোধিতার যে দাবি শাইখ আত্তুন করেছেন, তা কতটা অমূলক।

*************

 

 

 

 

الحمد لله وكفى الصلاة والسلام على عباده الذين اصطفى وبعد

চতুর্থ আসর:

আল্লাহর চাহেন তো সম্পর্কচ্ছেদ ইস্যুতে আজ অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

বিষয়টি হলো: আল-কায়েদার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর পক্ষ থেকে আসা বিভিন্ন আম চিঠিপত্রে এ এবং সর্বপ্রথম খাস চিঠিতে শামের ভূমিতে জিহাদি দলগুলোর প্রতি একতা ও ঐক্যের নসীহাহ্।

আমরা দেখতে পেয়েছি যে, ড. আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর সর্বশেষ চিঠি এবং তাঁর পূর্বের কোন চিঠির মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। ড. আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর সর্বশেষ চিঠির জবাবে শাইখ আত্তুনের বক্তব্য থেকেও বিষয়টি বোঝা যায়।

এটি এমন এক বাস্তবতা, যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শাইখ আত্তুনের বক্তব্য অমূলক ও ভিত্তিহীন। যা আমরা অচিরেই বিশ্লেষণ করব, ইনশা আল্লাহ।

মূল আলোচনা শুরু করার আগে আমি আবারো একটি বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই যে, শাইখ আত্তুন প্রথমে যদি এই চিঠির কথা মিডিয়ায় প্রকাশ না করতেন, চিঠির যে বিষয়গুলো তার মতের অনুকূল হয়, সেগুলো রেখে অন্যান্য বিষয় গোপন না করতেন, তবে আমি নিজে থেকে কখনোই ওই চিঠির কথা আলোচনায় আনতাম না। তিনি এবং তার সাথীদের কারণেই বাধ্য হয়ে আমাদেরকে এ বিষয়ে মুখ খুলতে হচ্ছে।

যাই হোক, আল্লাহর কাছে তাওফিক, সত্য পথ ও ন্যায়নিষ্ঠা কামনা করে মূল আলোচনা শুরু করছি—

.

সম্মানিত পাঠক! প্রথমেই আপনাকে অতি গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি জানতে হবে যে, ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ শামের ভূমিতে জিহাদের সূচনালগ্ন থেকেই সাধারণভাবে সকলের কাছে প্রেরিত তাঁর বিভিন্ন চিঠিতে মুজাহিদদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসাহ ও নির্দেশনা দিয়ে আসছেন। আস-সাহাব মিডিয়ার কল্যাণে এ বিষয়গুলো আমাদের সকলেরই জানা। একইভাবে সম্পর্কচ্ছেদের পর তাঁর প্রথম খাস চিঠিতেও তা-ই রয়েছে।

তাঁর প্রথম খাস চিঠিতে ঐক্য সংক্রান্ত কিছু বিষয় আমি পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি—

ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ ঐ চিঠিতে স্পষ্টতই বর্ণনা করেছেন যে, শামের ভূমিতে জিহাদের সূচনালগ্ন থেকেই তিনি মুজাহিদদের মাঝে ঐক্যের কথা বলে আসছেন।

তিনি চিঠিতে আরো বর্ণনা করেন যে, আম এবং খাস চিঠিতে তিনি যে পদ্ধতির কথা বলেছেন, ওই পদ্ধতিতে সম্পর্কচ্ছেদ করা হলে তা মুজাহিদদের ঐক্যের পথে বাধা হবে না।

সে পদ্ধতিটি হলো: সিরিয়ার অধিবাসী ও মুজাহিদরা মিলে একটি পুণ্যময় ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবে, অথবা গোটা সিরিয়ায় মুজাহিদদের ঐক্য ব্যাপকতা লাভ করতে হবে। (পাঠক! এই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটি লক্ষ্য করুন—”গোটা সিরিয়ায়”। কেবল ইদলিব এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ঐক্য হলে যথেষ্ট হবে না। একইভাবে সকল মুজাহিদদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কিছুসংখ্যক মুজাহিদের মধ্যকার ঐক্য যথেষ্ট হবে না।)

শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন যে, শামের ভূমিতে যদি পুণ্যময় ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়, অথবা গোটা অঞ্চলে যদি সর্বাত্মক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয় (কেবল ইদলিব ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে নয়, আর কেউই ওই ঐক্যের আহবানকে প্রত্যাখ্যান না করে) —বাস্তবে যদি এই সব কিছু ঠিকঠাকভাবে ঘটে, তবে আল-কায়েদার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পৃক্ততা এসব কিছুর পথে বাধা হবে না।

তিনি ওই চিঠিতে আরো বর্ণনা করেন যে, গোটা শাম-অঞ্চলে (কেবল ইদলিব ও তৎসংলগ্ন অঞ্চলে নয়) এমন একটি পূণ্যময় ইসলামী শাসনব্যবস্থা অথবা সর্বাত্মক ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবার আগে সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। যদি তা করা হয়, তবে সেটা হবে আমীরের আদেশ ও নির্দেশনা বিরুদ্ধ কাজ। আর তা হবে আমীরের অবাধ্যতা। ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ এভাবেই সম্পর্কচ্ছেদ এবং জাবহাতু ফাতহিশ-শাম-এর ঘোষণাকে অবাধ্যতা বলে আখ্যায়িত করেছেন।

ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ আরো বর্ণনা করেন যে, সংগঠনের যে কোন শাখার সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় আমীরের হাতেই নেই, নায়েবে আমীরের হাতে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। বরং এটি ব্যক্তিসীমা-উর্ধ্ব আহলে শুরার আলোচনা সাপেক্ষ বিষয়।

এই ছিল ওই চিঠির কিছু চুম্বকাংশ, যা শাইখ আত্তুনের বক্তব্যের অসারতা প্রমাণের জন্য আমি উল্লেখ করতে বাধ্য হয়েছি। কারণ, তাঁর বক্তব্যে বোঝা যায়, সর্বশেষ চিঠিতে হাকীমুল উম্মতের নির্দেশনা পূর্বের সাধারণ চিঠিগুলোতে উল্লেখিত ঐক্যের আহ্বান ও নির্দেশনার বিপরীত। (বাস্তবে কিন্তু তা নয়।)

আল্লাহর ইচ্ছায় সংক্ষিপ্ত এই আলোচনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীর সর্বশেষ চিঠির জবাবে শাইখ আত্তুনের বক্তব্য অমূলক ও ভিত্তিহীন। আমরা এটা বুঝতে পারি যে, শাইখ জাওলানী এবং তার সাথীদের কর্মকাণ্ড প্রকৃতপক্ষে অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশনার বিরোধিতা করা ও আমীরের অবাধ্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এ জাতীয় কার্যকলাপ না শরীয়ত সমর্থিত, আর না সাংগঠনিকভাবে বৈধ কোন পন্থা। শাইখ আত্তুন নিজেও তা উল্লেখ করেছেন। বস্তুতঃ এসব কাজ শরীয়তের দৃষ্টিতে গুনাহ এবং সাংগঠনিকভাবে নীতিবিরুদ্ধ। ফলে তাদের সকলের উচিত এ থেকে তাওবা করা।

বর্তমান বাস্তবতা প্রমাণ করেছে যে, এ বিষয়ে ড. আইমান এবং তাঁর সাথীবর্গের হেকমতপূর্ণ পন্থা-ই সঠিক ছিল। (আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে হিফাজত করুন। আমীন)

আমরা বুঝতে পারলাম, শাইখ জাওলানী নিজ আমীরের অবাধ্যতা করেছেন এবং তাঁর নির্দেশনা উপেক্ষা করেছেন। নিজ আমীর কর্তৃক নির্দেশিত নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। নিজ আমীর কর্তৃক নির্দেশিত পন্থা উপেক্ষা করে ভুল পন্থায় সম্পর্কচ্ছেদ করেছেন। যার ফলে তাকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে, যা আমরা সকলেই জানি।

আল্লাহ তা‘আলার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদের জন্য ও তাদের জন্য পদস্খলন থেকে মুক্তি ও সত্য পথের দিশা কামনা করি। শরীয়তের মূলনীতি বলে—“নির্ধারিত সময়ের আগে যে কোনো বিষয়ে তাড়াহুড়ো করে, সে বঞ্চনার পরিণতি ভোগ করে।

এ পর্যায়ে আমি বলতে চাই-

শাইখ আত্তুনের উচিত ছিল, চিঠির বিষয়গুলো প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ন্যায়বান হওয়া। হাকীমুল উম্মত আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর ঐ চিঠির নির্দেশনাগুলোর কিছু কিছু গোপন না করে, সেগুলো স্পষ্টভাবে পরিপূর্ণরূপে প্রকাশ করা।

তাদেরকে আমি আরো বলতে চাই- হাকীমুল উম্মত আইমান হাফিজাহুল্লাহ আপনাদেরকে ঐক্যের এবং মিলেমিশে থাকবার নির্দেশ দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বরং তার পন্থা ও উপযুক্ত সময় বলে দিয়েছেন। কিন্তু আপনারা অবাধ্যতা করেছেন এবং উনার নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন। এরপর নিজেদের আমীর এবং সংগঠনকেই তিরস্কার করতে আরম্ভ করেছেন। আসলে তিরস্কার তো আপনাদের নিজেদেরকেই করা উচিত। আর আল্লাহ তা‘আলার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করুন!

যেহেতু প্রসঙ্গক্রমে অনেক কথা চলে আসে, তাই আমি শাইখ আত্তুনের এ জাতীয় ভুলের আরো একটি চিত্র তুলে ধরব। শাইখ আত্তুনের একটি বক্তব্য হল—

“আরেকটা সমস্যা হলো: আল-কায়েদার সকল শাখার পক্ষ থেকে তালেবানদের নিকট “ইমামতে ‘উযমা” (বড় ইমামতি) সংক্রান্ত শাইখ আইমানের বাইয়াতের বিষয়টি। এটা এমন একটা বিষয়, যার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। কাজেই এ নিয়ে অধিক আলোচনার কিছু নেই।”

বাস্তবিকপক্ষে আমি শাইখ আত্তুনের এমন কাজ ও বক্তব্য শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছি, যেমনিভাবে আগের ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য শুনে হতবাক হয়েছি। কি কারণে শুনুন—

শাইখ আত্তুন ভালো করেই জানতেন যে, ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ তাঁর পূর্বের চিঠিগুলোতে এ প্রশ্নের সমাধান দিয়েছিলেন। সংক্ষেপে তার একটি প্রমাণ নিন—

শাইখ আবুল খায়ের রহ. একবার আমাকে ডাকলেন। হাকীমুল উম্মত আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর পূর্বের চিঠিগুলো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর তিনি আমাকে একটি নোট দিলেন। বললেন, নোটটিতে তাঁর প্রতি হাকীমুল উম্মত আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর চিঠির একটি অংশ রয়েছে। অংশটিতে আমীরুল মু’মিনীন মোল্লা উমর এবং মোল্লা আখতার রহিমাহুমুল্লাহকে তানযীমের পক্ষ থেকে আম বা সাধারণ বাইয়াত দেয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসার উত্তর রয়েছে।

মূল ঘটনা হলো: আমরা শাইখ আবুল খায়ের রহ-এর কাছে আবেদন করেছিলাম, যেন তিনি এ বিষয়ে জানতে চেয়ে পত্র লিখেন। তিনি তা করেছিলেন এবং তার জবাবও এসেছিল।

যাই হোক, শাইখ আবুল খায়ের রহ. তখন আমাকে বললেন, ওই জবাবের একটি কপি তিনি শাইখ আত্তুনকে দিয়েছিলেন।

আমার জানা নেই, কেন শাইখ আত্তুন এ বিষয়টি নিয়ে পুনরায় জল ঘোলা করতে চাচ্ছেন?! শাইখ আইমান যে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন, সেটা উল্লেখ না করে কেন তিনি এ বিষয়টা উঠালেন?!

আজ এতটুকুতেই ক্ষান্ত করছি, ইনশা আল্লাহ…

উপরোক্ত আলোচনার পর আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই—

# শরীয়ত অথবা সংগঠন আপনাদেরকে এমন কাজেরই আদেশ দিয়েছে?!! নাকি তা স্পষ্ট অবাধ্যতা এবং সাংগঠনিক নীতি বহির্ভূত কর্মকাণ্ড, যার কারণে তা থেকে আপনাদের সকলের তওবা করা উচিত?!!

# আপনাদের এহেন কর্মকাণ্ড কি নীতিসম্মত পন্থায় সম্পর্কচ্ছেদ এবং বাইয়াত ভঙ্গের প্রক্রিয়া? না এক গুরু দায়িত্ব থেকে বাঁচার কূটকৌশল?!!

# আপনাদের এবং বাগদাদী ও আদনানীর কর্মকাণ্ডের মাঝে কোন ফারাক (পার্থক্য) আছে কি?!!

সামনে আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় পঞ্চম সাক্ষ্য-প্রমাণ নিয়ে আলোচনা হবে।

সেখানে খোদ শাইখ আত্তুনের পূর্বেকার বক্তব্য দিয়ে উনার বর্তমান বক্তব্যকে ভিত্তিহীন প্রমাণ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

*************************

 

 

 

 

الحمد لله وكفى وسلام على عباده الذين اصطفى وبعد

পঞ্চম আসর: (৫)

এটি আল-কায়েদার সঙ্গে জাবহাতুন নুসরাহ (জাবহাতু ফাতহিশ-শাম)-এর সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ক সাক্ষ্য-প্রমাণের পঞ্চম পর্ব। সিরিজের এটিই সর্বশেষ সংযুক্তি। এখানে গুরুত্বপূর্ণ দু’টি মাসআলা নিয়ে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ।

মাসআলা দু’টিতে রয়েছে ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর সর্বশেষ বিবৃতির জবাবে শাইখ আত্তুনের বক্তব্যের খণ্ডন। সবশেষে পরিশিষ্টে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উপদেশমূলক কিছু কথা বলে আলোচনার ইতি টানবো।

আল্লাহর কাছে তাওফিক, সাহায্য ও সঠিক পথের দিশা কামনা করে মূল আলোচনা শুরু করছি—

.

প্রথম মাসআলা:

ইতিপূর্বে শাইখ আব্দুর রহীম আত্তুন তার বিভিন্ন লিখনীতে ও অডিও বক্তব্যে এবং টকশো ও সাক্ষাৎকারে তানজীম আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ততার গুরুত্ব, বাইয়াতের তাৎপর্য, তা রক্ষা করার আবশ্যকতা এবং তা ভঙ্গ করার নিষিদ্ধতা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে খুব বেশি আলোচনা করেছেন। আজ তার সে আলোচনাগুলোই ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর সর্বশেষ বিবৃতির জবাবে তার বক্তব্য ও সে বক্তব্যের যৌক্তিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বিষয়টি শামের রণাঙ্গনে অবস্থানরত সচেতন মুজাহিদীন এবং বিশ্লেষকদের কাছে সুস্পষ্ট। এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। আসুন! তেমনি কিছু উদাহরণের দিকে আমরা দৃষ্টিপাত করি।

প্রথম উদাহরণ: আল-মানার মিডিয়ার সাক্ষাৎকারে শাইখ আত্তুন বলেন-

“তানযীম আল-কায়েদার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা বাস্তবিকপক্ষে এ জামা’আতটির পতাকাতলে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য শরীয়তসম্মত একটি বাইয়াতের প্রতিফলন ও বাস্তবায়ন, যা রক্ষা করা আমরা অবশ্যপালনীয় কর্তব্য বলে মনে করি। এটিকে আমরা একক দল-শক্তির অধীনে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অংশ মনে করি। এই হল আমাদের প্রথম কথা।

দ্বিতীয়ত: নিষ্ঠার সঙ্গে আমরা আমাদের ধর্মীয় গবেষণার উপর ভিত্তি করে বলতে চাই, আমাদের এই সম্পৃক্ততা আমাদের জন্য এবং গোটা সিরিয়াবাসীর জন্য ব্যাপক পরিসরে সর্বময় শরয়ী কল্যাণ এবং রাজনৈতিক স্বার্থকে নিশ্চিত করবে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে একতাবদ্ধ থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।

তাছাড়া আমাদের শত্রু যেখানে বৈশ্বিক বিন্যাসকে সামনে রেখে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, সেখানে কিরূপে আমরা অন্যান্য ভূখণ্ডে অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধরত আমাদের অন্যান্য মুজাহিদ ভাইদের সঙ্গে নূন্যতম যোগাযোগটি পর্যন্ত রাখবো না।

ইরান যেমনিভাবে ইয়েমেনে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, একইভাবে ইরাকে, লেবাননে এবং শামেও তারা আমাদের প্রতিপক্ষ। আমেরিকাও অনুরূপ। অতএব বোঝা গেল, আমাদের শত্রু কেবল বাশার আল আসাদ এবং তার বাহিনীর ভেতরেই সীমাবদ্ধ না।

আমরা এই কথা বহুবার বলেছি যে, আল-কায়েদা মূলত: একটি সংগঠন, যেটিকে আমরা অনুসরণ করছি। আমরা শতাধিকবার একথাও বলেছি এবং আমাদের পূর্বে শাইখ ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহও বলেছেন: “সিরিয়াবাসী যদি তাদের আন্দোলনকে নিয়ে অগ্রসর হয়ে একটি ইসলামী রাষ্ট্র অথবা ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর্যায়ে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়, তবে আমরা এবং আমাদের সংগঠন কখনোই শরীয়ত শাসিত, আহলে শুরা কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত, ইনসাফপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্র এবং ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সিরিয়াবাসীর ঐক্যবদ্ধ একক প্ল্যাটফর্ম থেকে পিছিয়ে থাকব না।” ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহকে আমরা নিজেরাও এ কথাটি অসংখ্যবার ও বারংবার বলেছি।

আমাদের কেউ এটা ভেবে থাকতে পারে যে, রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর্যায়ে পৌঁছে গেলে জাবহাতুন নুসরা নামক সংগঠনের রাষ্ট্রের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবার যে কথা ছিল, তা আল-কায়েদার সঙ্গে আমাদের সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা হিসেবে ধর্তব্য হবে, তার বুঝি সময় হয়ে গেছে! কিন্তু আমরা বলব, এখন পর্যন্ত সে পর্যায়ে আমরা পৌঁছাতে পারেনি।

বিভিন্ন গ্রুপ, যারা এ বিষয়ে পীড়াপীড়ি করে, আমরা তাদেরকে জানিয়ে দিয়েছি যে, আমরা এ পর্যায়ে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ভেতর শরীয়তসম্মত কোন কল্যাণ দেখি না। তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা কেবল স্বার্থগত ও স্ট্র্যাটেজিক নয়, যেমনটা অনেকেই মনে করে থাকেন। বরং এটি একটি শরয়ী সম্পর্ক। অর্থাৎ আমরা বিশ্বাস করি, এ সম্পর্ক ও তাদেরকে দেয়া আমাদের বাইয়াত রক্ষা করা অবশ্য পালনীয় কর্তব্য, শরীয়তের পরিভাষায় যা ওয়াজিব।

আমরা কখনোই মনে করি না যে, আল-কায়েদাকে দেয়া আমাদের বাইয়াত সিরিয়াবাসীর কল্যাণ ও তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং সিরিয়া ও সিরিয়ার বাইরে গোটা মুসলিম উম্মতের স্বার্থবিরোধী।

ধরে নেই, আমরা আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ করলাম, তাহলে কি আমেরিকা আমাদেরকে ছেড়ে দেবে? আমাদের ব্যাপারে তার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে ফেলবে?? কখনোই নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন—

وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ﴿البقرة: ١٢٠﴾

অর্থ: “ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন।” [সূরা বাকারাহ (২): ১২০]

(মিসরের প্রেসিডেন্ট) মুহাম্মাদ মুরসি, তিনি তো আল-কায়েদার কেউ ছিলেন না। বহু বিষয়ে তিনি নমনীয়তা ও নতজানু নীতির আশ্রয় নিয়েছিলেন। অনেক ছাড় দিয়েছিলেন। তবুও তো শত্রুদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে পদচ্যুত হন।

(ইরাকের প্রেসিডেন্ট) সাদ্দাম হোসাইন, তিনিও তো আল-কায়েদার কেউ ছিলেন না। এরপরও যখন আমেরিকার দেখানো পথে চলতে অস্বীকৃতি জানালেন, তখন আমেরিকা তার নামে বিভিন্ন মিথ্যা অজুহাত দাঁড় করায়। অতঃপর তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ধ্বংস করে দেয়।

এসব বলার উদ্দেশ্য হলো: এ বিষয়টা যেন আমরা বুঝে যাই যে, আল-কায়েদার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা মূলত: আমাদের জন্য অবশ্য পালনীয় একটি শরীয়তসম্মত বাইয়াত। এরপর আমরা যখন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা অথবা ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর্যায়ে উপনীত হতে সক্ষম হব, তখন স্বাভাবিকভাবেই সকল দল-উপদল দলীয় সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বের একটি বিষয় তথা রাষ্ট্রের সঙ্গে একাকার হয়ে যাবে। এমনটিই শাইখ উসামা রহ. বলেছেন। তিনি বলেন- রাষ্ট্রীয় স্বার্থের প্রাধান্য থাকবে দলীয় স্বার্থের ওপর। গোটা উম্মাহর স্বার্থের প্রাধান্য থাকবে রাষ্ট্রীয় স্বার্থের ওপর।

যেসব দল আমাদের কাছে সম্পর্কচ্ছেদের আবেদন করেছে, তাদেরকে আমরা অনেক বুঝিয়েছি যে, আমরা এমন এক পর্যায়ে আছি, এ-ই অবস্থায় সম্পর্কচ্ছেদের কোন শরীয়তসম্মত কারণ দেখি না।

এত সব কিছুর পরেও কেন আল-কায়েদা এবং তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে এত চেঁচামেচি? আমরাই আল-কায়েদা। জাবহাতুন নুসরা-ই আল-কায়েদা। এটি আন্তর্জাতিক সংগঠন আল-কায়েদার একটি শাখা। আর আল্লাহর ইচ্ছায় আমাদের যাত্রার সূচনালগ্ন থেকেই আমরা শামের ভূমিতে স্বজাতি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পিছপা হই নি। আল্লাহর অনুগ্রহে জাবহাতুন নুসরাহ শামের ভূমিতে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের একটি শক্তিশালী সামরিক প্ল্যাটফর্ম। তারা যুদ্ধ পরিস্থিতিতে যতটুকু পারা যায় পানি, বিদ্যুৎ, আটা, ময়দা বিতরণ ইত্যাদি নানামূখী সেবা এ এই ভূখণ্ডের জনগণকে দিয়ে আসছে।

আদালতে, বিচার-ফয়সালার মজলিসগুলোতে যথাসম্ভব মানুষের সু-বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করছে। বিভিন্ন সামরিক সংগঠন, সেবামূলক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে মিলে উন্নয়নমূলক কাজে অংশগ্রহণ করছে। আর এ সবই আল-কায়েদার মানহাজ বা কর্মপন্থা। তাহলে কেন আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের জন্য আমাদের উপর এত চাপ সৃষ্টি? আমরা তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পরিহার করি কিংবা না করি —আমাদের কর্মপন্থা তো একই থাকছে।

এ পর্যায়ে আমরা তুরস্ক, কাতারের বৈষয়িক সহযোগিতায় পরিচালিত এবং লজিস্টিক সাপোর্টেড ও আদর্শিকভাবে সমর্থনপুষ্ট বিভিন্ন গ্রুপকে বলব — যারা অতি সম্প্রতি নিজেরা একটি জোট গঠন করেছে — আপনারা কেন আমাদের থেকে প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছেন? আল-কায়েদার সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততাকে কেন বাঁকা চোখে দেখছেন, অথচ এই সম্পর্ক আমাদেরকে গর্বিত করেছে?! কেন আমাদের ব্যাপারে আপনাদের এই অবস্থান, অথচ আপনারা নিজেরাই বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক রাখছেন? তাদের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সঙ্গে আপনারা যোগাযোগ করছেন। তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। অথচ আপনারা ভালভাবেই জানেন, কারা সে সমস্ত এজেন্সির হয়ে আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে? কেন আপনারা নিজেদের দিকে দৃষ্টিপাত না করে আমাদেরকে দোষ দিচ্ছেন?!”

দ্বিতীয় উদাহরণ: لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ “লিতুবায়্যিনাহু লিন্নাস” বা “তা মানুষের নিকট বর্ণনা করবে” শিরোনামে একটি অডিও বার্তায় শাইখ আত্তুন বলেন—

“আইএস নিজেদের কর্মপন্থা বিশুদ্ধ প্রমাণের জন্য এবং তাদের তথাকথিত খিলাফাহ রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেভাবে পারে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। নিজেদের স্বার্থকে সামনে রেখে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তারা ছলছাতুরি করেছে।

ড. আইমান আয-যাওয়াহিরীর পক্ষ থেকে জবাব আসার আগ পর্যন্ত তাদের বক্তব্য, যা তারা নিজেদের সদস্য এবং জাবহাতুন নুসরাহ’র সদস্যদের মাঝে প্রচার করেছে, তা হলো: তারা শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর সিদ্ধান্ত আসামাত্রই তা মেনে নিবে। কারণ, তিনি সকলের আমীর আমাদের কাছে বাগদাদীর জোরালো বক্তব্য ছিল, শাইখ উসামা তাকাব্বালাহুল্লাহ-এর বাইয়াতে তিনি আবদ্ধ। তাঁর শাহাদাতের পর শাইখ আইমান হাফিজাহুল্লাহ-এর হাতে বাইয়াত নবায়ন করে পত্র পাঠান। আর এরই ওপর শাইখ জাওলানী ও তার বাহিনী বাগদাদীকে বাইয়াত প্রদান করে। এরপর আইএস নিজের সৈন্যদের মাঝে “আমীর নির্দেশ করেছেন, আর সৈন্য তা প্রত্যাখ্যান করেছে” এ রকম একটি সংশয় প্রচার করে। জাবহাতুন নুসরার নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে আমীরের আদেশ অমান্যের অপবাদ প্রচার করে। এসবের পেছনে তাদের হীন উদ্দেশ্য হলো— জাবহাতুন নুসরার হাতে থাকা সম্পদ ও অস্ত্রাদির অন্যায় লুন্ঠনকে বৈধতা দেয়া।

সর্বপ্রথম তারা সত্য-মিথ্যার পরীক্ষার মুখোমুখি হয়, যখন ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ এই মর্মে প্রথম চিঠি প্রেরণ করেন যে, “চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যাই হোক, পরিস্থিতি যেন শান্ত থাকে”। আইএস ওই চিঠিতে পরিস্থিতি শান্তের নির্দেশ সংক্রান্ত অংশ গোপন করে বোঝাতে চায় যে, এমন কোনো নির্দেশের ব্যাপারে তারা অবগত নয়। যাতে করে তারা জাবহাতুন নুসরার প্রাণ ও সম্পদের ব্যাপারে সীমালংঘন চালিয়ে যেতে পারে।

এরপরে যখন চূড়ান্ত ফয়সালা সংবলিত পত্র আসে, তখন তারা দ্বিতীয়বার সে পত্র গোপন করে। আর নিজেদের পক্ষ থেকে একটি অভ্যন্তরীণ বিবৃতি প্রকাশ করে, যার দ্বারা বোঝা যায়; তারা কোন চিঠির ব্যাপারে অবগত নয় এবং তা অস্বীকার করে।

এরপরে তারা প্রচার করে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাদের দেয়া বাইয়াত রক্ষা করা আবশ্যক না। তা শুধুই একটি অফিশিয়াল ব্যাপার। এ কাজের মাধ্যমে তারা কেন্দ্রের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের পথ সুগম করে। এরই সঙ্গে আম এবং খাস মজলিসে মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের আকীদা ও মানহাজ সম্পর্কে অপবাদ ও মিথ্যাচার চালিয়ে যেতে থাকে।

পাঠক! আপনারা তাদের মুখপাত্রের অফিশিয়াল বক্তব্য শুনলেই স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে, তারা কেবল শাইখ আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর নির্দেশ অমান্য করার জন্য কি কি পন্থার আশ্রয় নিয়েছে?”

তৃতীয় উদাহরণ: শাইখ আত্তুন মুবাহালায় (এক পক্ষ আরেক পক্ষকে অভিশাপ দিয়ে সত্য উন্মোচনের শরীয়তসম্মত একটি বিশেষ পন্থা) বলেন:—

“আমি আপনার [কেউ একজন] সঙ্গে এই মর্মে মুবাহালা করছি যে, আমরা শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহকে ফয়সালাকারী এবং বিচারক মেনে নিয়ে আমাদের সমস্যা তাঁর কাছে উত্থাপন করেছি। আপনাদের উপর্যুপরি বক্তব্যে আমরা নিশ্চিত হয়েছি, আপনারাও তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট। আপনাদের ভেতর যারা সম্মতি প্রকাশ করেছেন, তাদের মাঝে আছেন—আবু বকর বাগদাদী, তার নায়েব আমবারী, আপনি, আইন বিশারদ আবু বক্কর আল-কাহতানী ও আইন বিশারদ আবু আনাস আল-ইরাকী প্রমুখ ব্যক্তিবর্গসহ আরো অনেকেই।”

“আমি আপনার সঙ্গে এই মর্মে মুবাহালা করছি যে, আপনারা আপনাদের কর্মপন্থা বিশুদ্ধ প্রমাণ করার জন্য মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছেন। আপনারা মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের আকীদা ও মানহাজের ব্যাপারে মিথ্যাচার করেছেন ও অপবাদ রটিয়েছেন, যাদের শীর্ষে রয়েছেন শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ। আবু বকর বাগদাদী শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর সিদ্ধান্ত সম্বলিত ওই চিঠিকে শরীয়ত ও মানহাজের দৃষ্টিকোণ থেকে ত্রুটিযুক্ত আখ্যায়িত করেছেন। আর তার পরপরই এলো আপনার বিবৃতি, যা অনুরূপ বাগাড়ম্বরে ঠাসা।”

চতুর্থ উদাহরণ: শাইখ আত্তুন শাইখ আবু বাসীর আত-তারতূসীর সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বলেন—

“সপ্তম পয়েন্ট: সম্পর্কচ্ছেদের পরিভাষা।

আমাদের এবং তানযীম আল-কায়েদার মধ্যকার সম্পর্কের প্রকৃতি হলো: শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর কাছে শ্রবণ ও আনুগত্যের উপর আমাদের জন্য অবশ্যপালনীয় একটি তাৎপর্যপূর্ণ বাইয়াত। জিহাদের লক্ষ্যসমূহ অর্জনের উপর বাইয়াত। এ বাইয়াত রক্ষা করা শরীয়তের পরিভাষায় আমাদের জন্য ওয়াজিব। তা ভঙ্গ করা আমাদের জন্য জায়েজ নয়। শরীয়ত সমর্থিত কারণ ব্যতিরেকে তা প্রত্যাহার করার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। যদি শরীয়তের নির্দেশনা ছাড়া আমরা তা প্রত্যাহার করি, তবে বাইয়াত প্রত্যাহার এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করার মহাপাপ আমাদের উপর চেপে বসবে। আমরা মনে করি না, আপনি প্রথমেই আমাদের কাছে এমনটি আশা করবেন। হ্যাঁ, এতটুকু করতে পারেন যে, শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরীর কাছে উক্ত বাইয়াত থেকে আমাদেরকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য আবেদন রাখতে পারেন। যদি এমনটি করেন, তবুও আমরা এতে শরীয়তসম্মত সময়োপযোগী কোন কল্যাণ দেখি না। যেদিন জাবহাতুন নুসরাহর নেতৃবৃন্দ, আহলে শুরা, আহলে ইলম ও তালিবে ইলমদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কচ্ছেদ করাকে অধিক কল্যাণকর ও সময়োপযোগী মনে করবেন, আমি নিশ্চয়তার সঙ্গে বলতে পারি, সেদিন শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ আমাদের এমন প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়ে আল-কায়েদার বাইয়াত থেকে আমাদেরকে মুক্ত করে দেবেন। আল্লাহু আ’লাম!”

শাইখ আবু আবদুল্লাহ্ শামী ওরফে আব্দুর রহীম আত্তুনের উপরোক্ত কয়েকটি বক্তব্যই আশা করি যথেষ্ট। যদিও এমন আরও বহু বক্তব্য পাওয়া যাবে।

আমরা দেখতে পাচ্ছি শাইখ আত্তুনের উপরোক্ত বক্তব্যগুলোই ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর সর্বশেষ বিবৃতি-سنقاتلكم حتى لا تكون فتنة بإذن الله (সানুকাতিলুকুম হাত্তা লা তাকুনা ফিতনা বিইযনিল্লাহ) [আল্লাহর ইচ্ছায় ফিতনা নির্মূল হওয়ার আগ পর্যন্ত আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাবো]-এর জবাবে তার নিজের হাতে লেখা কথাগুলোর অসারতা প্রমাণের জন্য যথেষ্ট।

আর উপরে আমি তাদের অফিশিয়াল বক্তব্যগুলোই উদ্ধৃত করেছি। কারণ, এগুলো শাইখ আত্তুনের একার পক্ষে পালনীয় নয়, বরং জাবহাতের অনুগত প্রত্যেক এমন ভাই, যিনি আল-কায়েদার কাছে প্রদত্ত বাইয়াতে আবদ্ধ, সে-ও এ সকল বিষয় পালনে দায়বদ্ধ। অতএব, উপরোক্ত বক্তব্যগুলো তাদের তৎকালীন দলীয় অবস্থানের প্রতিভূ।

এর বাইরে সাধারণ আলোচনা-সভাগুলোতে কী আলোচনা হয়েছে, তা আমি এখানে উল্লেখ করব না। কারণ, তা অনেক দীর্ঘ, যা আপনারা ভালভাবেই জানেন। আমি আশাবাদী- ভবিষ্যতে কখনো সেগুলো উল্লেখ করতে আমি বাধ্য হবো না।

উপরোক্ত আলোচনার পর আমি শাইখ আত্তুন এবং তার বাইয়াত-ভঙ্গ-করা সহচরবৃন্দকে বলব—আসুন! নিজেদের মূলনীতি দিয়েই আপনারা আপনাদের বর্তমান কর্মকাণ্ডকে বিচার করুন। আপনাদের মূলনীতি অনুসারেই বর্তমানে আপনারা আমীরের অবাধ্যতা করেছেন এবং শরীয়তসম্মত কারণ ব্যতিরেকে বাইয়াত প্রত্যাহার করেছেন। আর তাই বাইয়াত ও অঙ্গীকার ভঙ্গের পাপ আজ আপনাদের মাথার উপর চেপে বসে আছে —যেমনটা আপনি নিজেই ইতিপূর্বে বলেছিলেন হে শাইখ আত্তুন!

আপনাদের বর্তমান কার্যকলাপ আপনাদের সকলের নিন্দার পাত্র বাগদাদী, আদনানী এবং তাদের জামাআতের কর্মকাণ্ডের সদৃশ প্রমাণিত হয়েছে।

নিজেদের অবাধ্যতা এবং বাইয়াত-প্রত্যাহারকে বৈধতা দেবার জন্য আপনি এরপর এমন যুক্তি নিয়ে আসেন, যা না শরীয়তের দৃষ্টিতে গ্রহণযোগ্য, না সাধারণ বিচারে যুক্তিযুক্ত, আর না সাংগঠনিক নীতিমালা সমর্থিত। এসব বর্জনের পাঠ তো আপনারাই এক সময় আপনাদের অনুসারীদেরকে দিয়েছেন। আপনারাই নীতির পক্ষে বলেছেন এবং নীতিহীনতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। আর আজ…? আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে তাঁর পছন্দনীয় ও সন্তুষ্টির পথে পরিচালিত করুন! আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করছি।

এ পর্যায়ে আমি কতিপয় সম্মানিত ভ্রাতা ও মহান শাইখকে বলবো —যারা মনে করেন, আমরা ফিতনা ছড়াচ্ছি, ফাটল সৃষ্টি করছি, আলোচ্য বিষয়ে শরীয়তের লক্ষ্য, উদ্দেশ্যের ও চাহিদার বিরোধিতা করছি —

হে সম্মানিত ভাইয়েরা এবং প্রিয় শাইখগণ!

এই নিন্দা-বাণী তো আমাদের শোনার কথা নয়। বরং যারা একতার রজ্জুকে আঁকড়ে থাকার পর নিজেরা প্রথমে বিভক্তি সৃষ্টি করেছে, তাদের শুনবার কথা। তারাই তো একতার সারিকে দ্বিখণ্ডিত করেছে। ঐক্যের সুদৃঢ় কাঠামোকে ভেঙ্গে দিয়েছে। ওয়াজিব মনে করেও বাইয়াত ও অঙ্গীকারকে ভঙ্গ করেছে। পূর্ব পশ্চিমের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে এককালে সচেতন থেকেও আজ প্রতারিত হয়েছে। এত ঝামেলা আর সংকটের কারণ তো এগুলোই, যার দরুন ঐক্যের সারি বিক্ষিপ্ত হয়েছে, একতার কাঠামো ভেঙেছে।

হে দোষারোপকারীরা! হে ভর্ৎসনাকারীরা!! আল্লাহর শপথ করে আমাকে বলুন তো..

যারা বাইয়াতকে আঁকড়ে থেকেছে, অঙ্গীকার রক্ষা করে চলেছে, ঐক্যের কাঠামোকে অক্ষত রেখেছে, যারা পূর্ব-পশ্চিমের ষড়যন্ত্রের দ্বারা প্রতারিত হয়নি, যারা খোদাভীরু নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা মেনে চলেছে —ঐ সমস্ত নেতৃবৃন্দ, যাদের কেউ কেউ নিজেদের অঙ্গীকার পূর্ণ করে বিদায় নিয়েছেন, কেউ কেউ অপেক্ষায় আছেন, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকারকে পরিবর্তন করেন নি, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা হেকমত ও দৃঢ়তার দ্বারা সাহায্য করেছেন—যারা এই সমস্ত পুণ্যবান ব্যক্তিদের দিক- নির্দেশনা উপেক্ষাকারীদের পরিণাম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেরা সে ভুলে পা দেয় নি, তাদেরকে কেমন করে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করা যেতে পারে?

যারা মোবারক এই দাওয়াত, তার দা’য়ী ও আলেমদের নিষ্কলুষতা ও নির্দোষিতা উদঘাটন করেছে, আল্লাহর ইচ্ছায় যে দাওয়াতকে আমরা বিজয় ও ভূমিতে কর্তৃত্ব প্রাপ্তির পথে এক বিরাট মাইলফলক ও নিদর্শন মনে করি; অবশ্যই আল্লাহর উপর প্রাধান্য দিয়ে নয় —কেমন করে তাদেরকে দোষারোপ করা যেতে পারে, অথচ তারা এই দাওয়াতকে, তার নিদর্শনাবলীকে দেখে বিকৃত হতে, তা গ্রহণকারীদের দেখে অপবাদের শিকার হতে?!

হে নিন্দুক ভাই! ভর্ৎসনা করবার আগে আরেকবার দেখে নিন। হয়তো কাজের ক্ষেত্রে আমাদের অপারগতা এবং লেখার ক্ষেত্রে আমাদের বাধ্যবাধকতা আপনাদের দৃষ্টিতে এবার ধরা দেবে।

দ্বিতীয় মাসআলা :

আমাদের শাইখগণ, নেতৃবৃন্দ এবং ভাইদের নির্দোষিতা প্রমাণ প্রসঙ্গে, যাদেরকে শাইখ আত্তুনের পক্ষ থেকে কটাক্ষ করা হয়েছে, অপবাদ দেয়া হয়েছে —

এই মাসআলাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। এটিও শাইখ আত্তুনের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন প্রমাণিত করে। কারণ, তিনি তাদের ব্যাপারে এমন সব কথা বলেছেন, যা থেকে তারা মুক্ত। সে কথার পক্ষে কোনো দলীল-প্রমাণ ব্যতিরেকেই তাদের উপর অপবাদ আরোপ করেছেন। ফলে তাদের ব্যাপারে শাইখ আত্তুনের বক্তব্যের ব্যাপারে আরবী এই প্রবাদ বলা যায়, “একদিকে নষ্ট খেজুর দিয়েছেন, অপরদিকে মাপেও হেরফের করেছেন”। অর্থাৎ কোনোভাবেই তাদের ব্যাপারে সুবিচার করেননি।

তাই দুঃখ ভরে বলতে হয় —হে শাইখ আত্তুন! শেষ পর্যন্ত আপনি এ কাজও করতে পারলেন!?

আমি এই মাসআলায় আলোচনা দীর্ঘ করব না। কারণ, শাইখ আবুল ক্বাসাম হাফিজাহুল্লাহ এ বিষয়ে খুব চমৎকার লিখেছেন। (আমাদের ভাই এবং শাইখদের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য কলম হাতে নেয়ায় আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!) তবে এখানে আমি অতিরিক্ত দু’টি পয়েন্ট উল্লেখ করতে চাই—

প্রথম পয়েন্ট: হে আবু আব্দুল্লাহ শামী! (আব্দুর রহীম আত্তুন)! আপনি কেন আমাদের শাইখদেরকে এবং আমীরদেরকে পর্যন্ত ছাড়লেন না????

আমি এই পয়েন্টে আপনাকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিম্নোক্ত হাদীসটি মনে করিয়ে দিতে চাই। মুসলিম শরীফে বিশুদ্ধ সূত্রে আব্দুর রহমান ইবনে জুবায়ের তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ‘আউফ ইবনে মালেক রাযি. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন—

عَنْ عَوْفِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَتَلَ رَجُلٌ مِنْ حِمْيَرَ رَجُلاً مِنَ العَدُوّ، فَأَرَادَ سَلَبَهُ، فَمَنَعَهُ خَالِدُ بْنُ الوَلِيدِ، وَكَانَ وَالِياً عَلَيْهِمْ. فَأَتَى رَسُولَ الله صلى الله عليه وسلم عَوْفُ بْنُ مَالِكٍ، فَأَخْبَرَهُ. فَقَالَ لِخَالِدٍ: «مَا مَنَعَكَ أَنْ تُعْطِيَهُ سَلَبَهُ؟» قَالَ: اسْتَكْثَرْتُهُ، يَا رَسُولَ الله! قَالَ: «ادْفَعْهُ إلَيْهِ» فَمَرّ خَالِدٌ بِعَوْفٍ فَجَرّ بِرِدَائِهِ. ثُمّ قَالَ: هَلْ أَنْجَزْتُ لَكَ مَا ذَكَرْتُ لَكَ مِنْ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم؟ فَسَمِعَهُ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم فَاسْتُغْضِبَ. فَقَالَ: «لاَ تُعْطِهِ يَا خَالِدُ لاَ تُعْطِهِ يَا خَالِدُ، هَلْ أَنْتُمْ تَارِكُونَ لِي أُمَرَائِي؟ إنّمَا مَثَلُكُمْ وَمَثَلُهُمْ كَمَثَلِ رَجُلٍ اسْتُرْعِيَ إِبِلاً أَوْ غَنَماً فَرَعَاهَا، ثُمّ تَحَيّنَ سَقْيَهَا، فَأَوْرَدَهَا حَوْضاً، فَشَرَعَتْ فِيهِ فَشَرِبَتْ صَفْوَهُ وَتَرَكَتْ كَدِرَهُ، فَصَفْوُهُ لَكُمْ وَكَدِرُهُ عَلَيْهِمْ». أخرجه مسلم.

“হিময়ার গোত্রের এক ব্যক্তি (যুদ্ধকালে) শত্রুপক্ষীয় একজনকে হত্যা করে। সে নিহত ব্যক্তির ‘সালাব’ (নিহত ব্যক্তির সাথে থাকা অস্ত্র, কাপড়-চোপড়, অর্থ-কড়ি ও অন্যান্য সামগ্রীকে একত্রে সালাব বলে) পেতে চেয়েছিল। কিন্তু খালিদ বিন ওয়ালীদ রাযি. তাকে তা দিতে অস্বীকার করেন। তিনি ছিলেন দলপতি। আওফ বিন মালিক রাযি. তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট এসে তাঁকে খবরটা দেন। তিনি খালিদ রাযি.কে বললেন, কি জন্যে তুমি ওকে তার সালাবটা দিলে না? তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমার কাছে পরিমাণটা বেশী মনে হয়েছিল। তিনি বললেন, ওকে সালাব দিয়ে দাও। পরে খালিদ আওফের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। আওফ তখন তাঁর চাদর টেনে ধরে বলেন, আমি তোমার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট যা বলেছিলাম, তা কি পূরণ করতে পেরেছি? কথাটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুনে ফেলেন। এতে তাঁর খুব রাগ হয়। তিনি বলতে থাকেন, খালিদ, ওকে দিও না! খালিদ, ওকে দিও না!! তোমরা কি আমার কথার সূত্র ধরে আমার আমীরদের সাথে যাতা আচরণ করবে? তোমাদের ও তাদের উপমা তো সেই ব্যক্তির মত, যাকে উটের কিংবা ছাগলের পালের রাখাল নিযুক্ত করা হয়েছে। সে পশুপাল চরাচ্ছিল। তারপর পানি পান করানোর সময় হলে সে তাদের একটা চৌবাচ্চার ধারে নিয়ে গেল। পশুগুলো সেখানে নেমে পরিষ্কার পানি পান করল, আর ঘোলা পানি রেখে গেল। এই পরিষ্কার পানি হল তোমাদের ভাগে, আর ঘোলা পানি মিলল তাদের।” (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪৬৬৯)

উক্ত হাদীসটির উপর জাবহাতের সাবেক প্রধান আইন বিশারদ জাবহাতের নেতৃবৃন্দের নির্দোষিতা প্রমাণের জন্য একটি পুস্তিকা রচনা করেছেন। হে শাইখ আত্তুন! আপনি এবং আপনার সাথীবর্গ শাইখদের ব্যাপারে কলম ধরার আগে একটি বার কেন এই হাদীসটি মনে করলেন না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং আপনাদেরকে হেদায়েত দান করুন!

দ্বিতীয় পয়েন্ট: এটি হলো প্রচার বিভাগের ভাইদের নির্দোষিতা প্রমাণ প্রসঙ্গে। এ পয়েন্ট নিয়েও শাইখ আবুল ক্বাসাম চমৎকার লিখেছেন বিধায় আমি দীর্ঘ কোন আলোচনায় যাব না। তবে শাইখ আবুল ক্বাসামের উল্লেখ না করা একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আমি এখানে তুলে ধরব।

এটি এমন এক বাস্তবতা, যা প্রচার বিভাগের ভাইদেরকে শাইখ আত্তুন যে বিষয়ে অভিযুক্ত করেছেন, সে বিষয়ে থেকে যে তারা মুক্ত, একথা প্রমাণ করে। (আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এবং আপনাকে ক্ষমা করুন!)

বাস্তবতাটা হলো: নিজ বক্তব্যে শাইখ আত্তুন যে চিঠির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন এবং যে চিঠির কারণে প্রচার বিভাগের ভাইদেরকে অভিযুক্ত করেছেন, চিঠিটি প্রচার বিভাগের মাধ্যমে প্রচারিত হয়নি। আল্লাহু আ’লাম!

চিঠিটি পৌঁছার সংবাদ ছড়িয়েছে; তা জাবহাতের হাতে আসার পর।

শাইখ আত্তুন! আপনি তো ভালো করেই জানেন যে, চিঠিটি পৌঁছার পর এক সপ্তাহের অধিক সময়কাল যাবৎ যখন তা নেতৃবৃন্দের হাতে ছিল, তখন এই সময়টাতে অল্প কিছু লোক ছাড়া কেউই চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত ছিল না। আর এ সময়ের ভেতরেই অর্থাৎ আপনারা চিঠি পাবার পরই সম্পর্কচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাতিল মর্মে চিঠি পৌঁছার সংবাদ ছড়াতে শুরু করে। তবে চিঠিতে কি বলা হয়েছে, সে বিষয়টি তখনও অজানা ছিল।

হে শাইখ আত্তুন! আপনাকে সংক্ষিপ্ত ইঙ্গিতাকারে একটি ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি। আশা করি এই ঘটনাটি অনেক ভুলে যাওয়া বিষয় আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে!

আপনার কি মনে নেই যে, আপনাদের হাতে চিঠি পৌঁছার এক সপ্তাহেরও অধিককাল অতিক্রান্ত হলে আমরা শাইখ জাওলানীর সঙ্গে এক বৈঠকে মিলিত হই। তখন আমি শাইখ জাওলানীকে বলি, “হে শাইখ! হাকীমুল উম্মতের পক্ষ থেকে চিঠি পৌঁছার সংবাদ তো ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি দারা ও গৌতায়ও একথা জানাজানি হয়ে গেছে। তাই আমরা জানতে চাই ওই চিঠিতে কি রয়েছে?”……. ঘটনার শেষ অবধি।

ঘটনার এতোটুকু উল্লেখই যথেষ্ট। আশা করি বাকিটুকু আপনার মনে পড়ে যাবে। তখন আপনি বুঝতে পারবেন, চিঠি পৌঁছার খবর ছড়িয়েছে; আপনাদের হাতে চিঠি যাবার পর। আর চিঠির বিষয়বস্তুর কথা জানাজানি হয়েছে শাইখ জাওলানী উক্ত চিঠি শীর্ষক একাধিক দীর্ঘ আলোচনার মজলিসে তা বর্ণনা করার পর। আর এভাবেই শেষ পর্যন্ত মিডিয়ার কাছে সংবাদ পৌঁছে যায়। আমি আশা করছি, দ্বিতীয়বার এই নিয়ে এর চেয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে আমি বাধ্য হবো না।

হে শাইখ আত্তুন!  আপনি ভালোভাবেই জানেন, শাম রণাঙ্গনে এমন এক বাস্তবতা বিরাজ করছে, যেখানে সংবাদ খুব দ্রুত রটে যায়, আর সকলে সব বিষয়ে থাকে ওয়াকিফহাল। এটাই মূলত: চিঠির পৌঁছার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার কারণ। আর চিঠির বিষয়বস্তুর কথা জানাজানি হয়েছে একাধিক আলোচনার বৈঠক অনুষ্ঠিত হবার পর। যা হোক, সুদীর্ঘ সীমান্ত এলাকায় অবস্থানরত আমাদের ভাইদেরকে নির্দোষ প্রমাণের জন্য আপনাকে এ বিষয়ে আমরা খুলে বলবো।

—আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রচেষ্টা ও জিহাদকে কবুল করুন এবং নিজ হিফাজতের আঁচলে তাদেরকে জড়িয়ে রাখুন!

এ দু’টি মাসআলা উল্লেখ করার পর হে ভাইয়েরা! আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাই—

# শাইখ আত্তুনের বর্ণনা মতে প্রথম পর্যায়ে (জাবহাতু ফাতহিশ-শাম) মিডিয়ার চোখে উপরে উপরে বাইয়াত ভঙ্গ করা এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে (হাইআতু তাহরীর আশ-শাম) বাস্তবেই তা ভঙ্গ করা—এসব কি শরীয়ত বা সংগঠনের নির্দেশনা, না আপনাদের কাঁধে ঝুলে থাকা গুনাহ ও পাপের বোঝা? যেমনটি আপনারাই এক সময় বলতেন, অনুসারীদের শিখাতেন এবং প্রতিপক্ষদের অবস্থান রদ করতেন!!

# আপনাদের চর্চা করা এই পন্থা সম্পর্কচ্ছেদের এবং বাইয়াত ভঙ্গ করার নীতিসম্মত পন্থা নাকি প্রতিশ্রুতি রক্ষার গুরু দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নিন্দনীয় এক অপকৌশল? যেমনটা আপনারাই এক সময় বলতেন!!

# আপনাদের এহেন কর্মকাণ্ড এবং বাগদাদী, আমবারী ও আদনানীর কর্মকাণ্ডের মাঝে কোন পার্থক্য আছে কি, অথচ তাদেরকে আপনারা একই কারণে নিন্দা করেন, অপছন্দ করেন ও ঘৃণা করেন?

উদ্ভূত এই সমস্যা, যার যৎ সামান্য এখানে উল্লেখ করা হয়েছে, তা নিয়ে নিজেদের পূর্বেকার বক্তব্য ও নীতিমালা একবার স্মরণ করুন এবং উপরের প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজুন। দেখবেন, নিজেদের কাছেই নিজেদের বর্তমান কর্মকাণ্ড ও তার পক্ষে লেখালেখিকে কতটা ছিন্নমূল ও শিকড়হীন মনে হয়!? আল্লাহ সহায়! আমি আর কথা বাড়াতে চাই না।

 

 

 

 

পরিশিষ্ট: আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নসীহাহ ও কল্যাণকামিতা:

তানযীম আল-কায়েদার সঙ্গে জাবহাতুন নুসরাহ’র সম্পর্কচ্ছেদ বিষয়ে এতটুকু আলোচনাই যথেষ্ট। আমি মনে করছি এ বিষয়ে এর চেয়ে বেশি বিস্তারিত আলোচনার প্রয়োজন নেই। আমার বিশ্বাস, এমন অনেক ভাই, যারা বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত ছিলেন না, এ-ই আলোচনায় বাস্তবতা তাদের সামনে ফুটে উঠেছে। এটাই আমার উদ্দেশ্য ছিল। তা না হয় এই আলোচনা চলতেই থাকবে। উদ্দেশ্য কখনোই নিছক আলোচনা চালিয়ে যাবার জন্য আলোচনা করা নয়। বরং উদ্দেশ্য হলো: যে বাস্তবতা তুলে ধরতে আমরা বাধ্য হয়েছি, তা কেবল তুলে ধরা।

এই কারণেই দীর্ঘ সময়ব্যাপী আমরা এ বিষয়ে মুখ বন্ধ রেখেছি। আল্লাহর আনুগত্য মনে করে এবং তুলনামূলক অধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনায় নিয়ে এ বিষয়ে চুপ থেকেছি। তখনো আমরা প্রয়োজন অনুপাতে জবাব দিয়েছি। আর আজও আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য মনে করে প্রয়োজনের মাত্রা অনুপাতে এ বিষয়ে মুখ খুলেছি। আমরা কেবল অতটুকুই উল্লেখ করেছি, যা দ্বারা ভ্রান্তি নিরসন হয়ে যায় এবং সত্য উন্মোচিত হয়ে যায়। অতএব, আমাদের এই আলোচনা প্রয়োজনের মাত্রা বিবেচনাপ্রসূত একটি জবাবপত্র, যেমনটা ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল মহলের ভালোভাবেই জানা।

বিশদভাবে শাইখ আত্তুনের বক্তব্যের ভুল-ভ্রান্তি নিরসনের জন্য আমাদের এই আলোচনা নয়। যদি আমরা তা করতে যেতাম, তবে আলোচনা আরো বহুগুণ দীর্ঘ হত।

আমি এখানে আমার নিজেকে এবং আল্লাহর পথে আমার সকল ভাইকে উপদেশ দেবো, দৃষ্টিভঙ্গি এবং মতামতের ভিন্নতা সত্ত্বেও আমরা যেন আমাদের প্রচেষ্টাকে দ্বীনের শত্রুদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একযোগে ও সমন্বিতভাবে কাজে লাগাই। মুসলিম জাতির ইতিহাসের এহেন সংকটাপন্ন মুহূর্তে এটিই সর্বপ্রধান কর্তব্য। তবুও যদি কখনও নিজেদের মধ্যকার কোন সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হয়, কোন সংশয় নিরসন করতে হয়, তবে যেন আমরা প্রয়োজন পরিমাণে তা করে ক্ষান্ত দেই। কারণ, বৈশ্বিক কুফরি শক্তির টার্গেট আমরা সকলেই। আপনারা সকলেই জানেন, তারা আমাদের কাউকেই ছেড়ে দেবে না। তারা অসদুপায়ে ও ঘৃণ্য পন্থায় রাতদিন আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। আল্লাহর কাছে কামনা, তিনি যেন তাদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে তাদেরকেই ফেলেন এবং সকল মুসলমানকে তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করেন।

এ সকল ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসন মোকাবেলা করা গোটা উম্মতের উপর শরীয়তের পরিভাষায় ফরজে আইন। আমি আমার পুস্তিকা “জিহাদুল উম্মাহ ওয়া জামা’আতুল উম্মাহ”-তে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। এটি এখন সময়ের দাবি। পুস্তিকার সামান্য অংশ এখানে তুলে ধরছি—

“আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে উম্মাহকে জিহাদে অংশগ্রহণ করানোর দু’টো অবস্থা হতে পারে-

প্রথম অবস্থা: উম্মাহ’র একজন অবিসংবাদিত ইমাম ও সুলতান থাকবেন, তিনি শরীয়ত অনুযায়ী তাদেরকে পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে গোটা উম্মাহ আকীদাগত এবং ফিকহী শাখাগত মতপার্থক্য সত্বেও ওই সুলতানের পতাকাতলে সমবেত হবে। সৎকাজে তাঁর নির্দেশ এবং তাঁর নিযুক্ত করা আমীরদের নির্দেশ পালন করে আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাবে। এটি এতটাই স্পষ্ট বিষয়, যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই।

দ্বিতীয় অবস্থা: উম্মাহ’র কোন অবিসংবাদিত ইমাম ও সুলতান থাকবে না। বরং গোটা উম্মাহ বিভিন্ন দলে, উপদলে, বিভিন্ন শাসকের অধীনে বিভক্ত থাকবে। এক্ষেত্রে গোটা উম্মাহ ওই অবস্থাতেই শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদে অংশগ্রহণ করবে। পাশাপাশি ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবে। কারণ, সর্বদা ঐক্যবদ্ধ থাকা আমাদের ওপর সার্বক্ষণিক দায়িত্ব ও কর্তব্য। যদি কোন কারণে তা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হয়, তবে এর জন্য জিহাদ স্থগিত থাকবে না। বরং উম্মাহ দলের ও মতের ভিন্নতা নিয়েই আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। কারণ, উক্ত অবস্থায় ইসলামের দাবিদার, শরীয়তের পক্ষ থেকে ভারার্পিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিটি ব্যক্তির উপর জিহাদ শরীয়তের পরিভাষায় ফরজে আইন।

শত্রুদের বিরুদ্ধে উম্মাহর লড়াইয়ের ইতিহাসের বড় অংশ জুড়ে বাস্তবতা এমনটাই। শাইখ আবু বকর নাজী “ইদারাতুত তাওয়াহহুশ” (পৃ: ১২) গ্রন্থে লিখেন —

“আমাদের ইসলামী ইতিহাসের বড় অংশ জুড়ে বিশেষ করে রাজতান্ত্রিক খিলাফত ব্যবস্থার আমলে এক বংশের পতন ও অন্য বংশের উত্থানের যুগসন্ধিক্ষণগুলোতে কিংবা বহিঃশত্রুর আক্রমণের মুখে, যেমন তাতারি অভিযানের সময় কিংবা ক্রুসেড অভিযানের সময়—উম্মাহর এ সমস্ত ক্রান্তিলগ্নগুলোতে এ সকল প্রশাসনগুলো প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর মাঝে কোন কোনটা অনেকগুলো ক্ষুদ্র রাজ্যকে একীভূত করে শেষে একটি খিলাফাহ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দিকে অগ্রসর হয়। কোন কোনটি পার্শ্ববর্তী এক বা একাধিক রাষ্ট্রশক্তির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয় কিংবা সরাসরি খিলাফাহ’র সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়। এর সবচেয়ে স্পষ্ট উদাহরণ, যেমনটি শাইখ আল্লামা উমর মাহমুদ আবু উমর ওরফে আবু কাতাদাহ আল-ফিলিস্তিনি (আল্লাহ তাঁকে বন্দীদশা থেকে মুক্তি দান করুন) উল্লেখ করেছেন, ক্রুসেডচলাকালীন খেলাফাহশূন্য সময়গুলো। শাইখ লিখেন—

“অধিকাংশ লেখক, যারা বিরতির সময় ও যুগসন্ধিক্ষণগুলো নিয়ে লিখেছেন, তারা তার প্রতিকার বিধানে কেবলমাত্র সে সকল ব্যক্তির অবদানকেই তুলে ধরেছেন, যারা নিজেদের পূর্বেকার বিক্ষিপ্ত বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ, নানান ভূমিকা ও বিচিত্র প্রয়াসকে একীভূত করে এ সব কিছুর সমন্বয়ে একটি যুগান্তকারী কীর্তির স্বাক্ষর রেখেছিলেন। আমরা কোন লেখককে দেখি, সকল অবদান একমাত্র নেতা নুরুদ্দীন জঙ্গীর বলে দাবি করেন, কিংবা কেবল সালাহউদ্দিন আইয়ুবীর বলে দাবি করেন ইত্যাদি। এতে করে পাঠকের মনে এই ভুল ধারণার সৃষ্টি হয় যে, ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের ইতিহাসের উক্ত অধ্যায়টি রচিত হয়েছে এমন একটি রাষ্ট্রশক্তির অধীনে, যা গোটা মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক একতার প্রতিনিধিত্ব করে। অথচ এমন ধারণা স্পষ্ট ভুল। খেলাফতশূণ্য এই সময়গুলোর ইতিহাস যে ব্যক্তি গভীরভাবে অধ্যয়ন করবে, তার কাছে এটা স্পষ্ট যে, মুসলমানরা সে সময় ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ছোট ছোট দলে, বিক্ষিপ্ত সংগঠনে বিভক্ত হয়ে তবেই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। অমুক দুর্গ কোন এক জামাত দখল করেছে, যার পতাকাতলে কিছু লোক জড়ো হয়েছে, তো তমুক গ্রাম অপর একজন আলেম নেতার নেতৃত্ব মেনে নিয়ে তার চারপাশে সমবেত হয়ে জিহাদ করেছে। এদিকে কোন একজন আলেম তার কিছু ছাত্রকে সংগঠিত করেছেন, যারা তাঁকে নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে, তো অন্য প্রান্তে অপর কেউ এ কাজ করেছে। এভাবেই।

আমি মনে করি, যে গ্রন্থটি সবচেয়ে সুচারুরূপে এই বাস্তবতা তুলে ধরেছে, তা হলো—”আল-ই’তিবার”। এর রচয়িতা আমীর উসামা ইবনে মুনক্বিয। তিনি “শিরায” দুর্গের অধিপতি। তাঁর বংশ আলে মুনক্বিয এই দুর্গ শাসন করেছে। ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। উসামা ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের যুদ্ধের প্রত্যক্ষদর্শী ব্যক্তি।

আমি অন্য একটি পয়েন্টে যাবার আগে যে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বলে যেতে চাই, তা হলো—নুরুদ্দীন জঙ্গী এবং সালাহউদ্দিন আইয়ুবী (রহ:)-এর বংশধরদের মত বড় বড় নেতাদের ভূমিকা হলো: বিভিন্ন খণ্ড দল-উপদল ও সংগঠনের মাঝে সমন্বয় করে এক নেতৃত্বের অধীনে সেগুলোকে নিয়ে আসা। এসবের পরেও ক্রুসেড মোকাবেলায় সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছোটছোট সে সকল দল-উপদলের বিরাট বিরাট স্বতন্ত্র অবদান অনস্বীকার্য।

এ সমস্ত ছোট ছোট দল ও সংগঠন, যেগুলো কোন কোন দুর্গ অধিকার করেছে, ছোট ছোট শহর দখলে নিয়েছে, একই সঙ্গে শত্রু শিবিরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করেছে, ক্রুসেড মোকাবেলায় এগুলোই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।(পাঠক! আপনি চাইলে ক্রুসেডগুলোর ইতিহাস বিস্তারিত পড়ে দেখতে পারেন যে, ইলম ও জিহাদের পথিকদলের দ্বারা যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেগুলোই শেষে বড় বড় যুদ্ধগুলোতে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। বিজয়ের ক্ষেত্রে বড় বড় সে সকল যুদ্ধের একক কোনো ভূমিকা ছিল না। বরং হিত্তিনের মতো বড় বড় যুদ্ধগুলো ছোট ছোট এমন অনেক যুদ্ধের ফসল ছিল, যেগুলো ইতিহাসে সেভাবে আসেনি। কিন্তু যুগান্তকারী একটি বিজয়ের জন্য এগুলোই ছিল প্রথম চাল।” (শাইখ আবু কাতাদাহ আল-ফিলিস্তিনি ওরফে উমর মাহমুদ আবু উমর {ফা.আ.} রচিত- “تلك أمة محمد صلى الله عليه وسلم ولن تموت “তিলকা উম্মাতু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়া লান তামূতা” নামক প্রবন্ধ থেকে সংগৃহীত)

অতএব, আমরা বুঝতে পারলাম, এই প্রত্যেকটি দল, গোত্র, রাষ্ট্র, মতাদর্শ এই উম্মতের এক একটি অংশ। সকলেরই দায়িত্ব হলো: আগ্রাসী শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, যা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। পাশাপাশি একজন সুলতান ও শাসকের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাওয়া।

সমাপ্তির আগে হে প্রিয় ভাই! একটি কথা বলে যেতে চাই—

আল্লাহ কখনো কখনো দু’টি দলকে এমন অবস্থায় মিলিয়ে দেন, যখন তাদের উভয়েরই ধারণা হয় আর বুঝি ঐক্য হবে না!

পরিশেষে হে মুজাহিদ ভাই! নিম্নোক্ত আয়াত দু’টি স্মরণ করুন—

إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ ﴿آل‌عمران: ١٢٠﴾

“তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়; তাহলে তাদের খারাপ লাগে। আর তোমাদের যদি অমঙ্গল হয় তাহলে আনন্দিত হয় আর তাতে যদি তোমরা ধৈর্য্যধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে তাদের প্রতারণায় তোমাদের কোনই ক্ষতি হবে না। নিশ্চয়ই তারা যা কিছু করে সে সমস্তই আল্লাহর আয়ত্তে রয়েছে।” (সূরা আলে-ইমরান (৩): ১২০)

إِنَّهُ مَن يَتَّقِ وَيَصْبِرْ فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ ﴿يوسف: ٩٠﴾

“নিশ্চয় যে তাকওয়া অবলম্বন করে এবং সবর করে, আল্লাহ এহেন সৎকর্মশীলদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না।” [সূরা ইউসূফ (১২): ৯০]

এটিই উভয় জগতে সৌভাগ্য ও মুক্তির একমাত্র পথ।

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ ﴿البقرة: ٢٥٠﴾

“হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের মনে ধৈর্য্য সৃষ্টি করে দাও এবং আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখ-আর আমাদের সাহায্য কর সে কাফের জাতির বিরুদ্ধে।” [সূরা বাকারাহ (২): ২৫০]

رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ ﴿الأعراف: ١٢٦﴾

“হে আমাদের পরওয়ারদেগার আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বার খুলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসাবে মৃত্যু দান কর।” [সূরা আরাফ (৭): ১২৬]

হে আল্লাহ! আপনি মুজাহিদদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে দিন! সত্যের পথে তাদের শক্তিকে একজোট করে দিন! সাহায্য এবং বিজয়ের পথে তাদেরকে এগিয়ে নিন! আপনার পথে শাহাদাতের দ্বারা আমাদের ইহজাগতিক জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান! আমাদের আমলসমূহ কবুল করে নিন! নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين.

লেখক-

ড. শাইখ সামী আল-উরাইদী হাফিজাহুল্লাহ

(আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে দৃঢ় রাখুন ও ক্ষমা করুন।)

মুহাররম ১৪৩৯ হিজরী

***************

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 − 1 =

Back to top button