প্রবন্ধ-নিবন্ধফাতাওয়া-ফারায়েজবিষয়শাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনী

আইএস’র প্রচারিত ভিডিও, অডিও ইত্যাদি দেখা, শোনা এবং পড়ার ব্যপারে মুজাহিদ শায়খ ডঃ আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনি (হাফিজাহুল্লাহ)’র ফতোয়া

আইএস’র প্রচারিত ভিডিও, অডিও ইত্যাদি দেখা, শোনা এবং পড়ার ব্যপারে মুজাহিদ শায়খ ডঃ আব্দুল্লাহ আল মুহাইসিনি (হাফিজাহুল্লাহ)’র ফতোয়ার অনুবাদঃ

মুজাহিদীনদের মধ্যে এবং সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে থাকা আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা একটা বিষয়ে আমাদের অবহেলা ব্যপক আকারে ছড়িয়ে পরেছে যা জনগণকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করে রেখেছে এবং আলোর পথে আসার গতি রোধ করে দিচ্ছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মিডিয়ার মাধ্যমে যারা বিদা’আতের প্রচারক এবং যারা তাদের মিডিয়ার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিপর্যয় ডেকে আনে আমাদের ভাই-বোনেরা আজ তাদের প্রচারগুলো দেখায় ব্যস্ত। এবং মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে যে এই প্রচারকগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় নাস্তিক অথবা জিন্দিক। তারা তাদের মায়াবী উপস্থাপন কুশলী দিয়ে মিডিয়ায় আসে। আর সুবহানাল্লাহ যাদের মধ্যে সংশয়, বিভ্রান্তি এবং মানসিক দুর্বলতা রয়েছে তারা পথভ্রষ্ট হয়ে পরছে। আমরা আল্লাহ’র কাছে নিরাপত্তা ও আশ্রয় চাই।

ফিতনা-ফ্যাসাদের এই সময় আমাদের প্রয়োজন অত্যন্ত দৃঢ় থাকা। তাই এসময় মুসলিমদের জন্য এটা অনুমোদিত হবে না যে তারা যেসব লোক বিদা’আত ছড়ায় তাদের প্রচারিত কোন কিছু দেখবে বা অনুসরণ করবে। এটা শুধুমাত্র তাদের প্রচারিত বিষয়ের সংশয় নিরসনের কারণে দেখা যেতে পারে। আর যখন আমরা বিদা’আত প্রচারকারী বলি তখন এর মধ্যে বাগদাদী’র খিলাফার আওতাভুক্ত লোকজন, সূফিবাদের প্রচারক, রাসূল (সঃ) এর সাহাবীদের (রাঃ) নিয়ে কটুক্তিকারী এরা সকলেই অন্তর্ভুক্ত থাকে যদিও এরা অপ্রকাশ্যে এই কাজ করে। আপনারা লক্ষ্য করে থাকবেন কিছু লোক এমন আছে যারা খারেজীদের নিন্দা করে কিন্তু তারপরেও এই লোকগুলো খারেজীদের মিডিয়ায় প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও, অডিও, লেখায় চোখ রাখে।
এব্যপারে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে সে প্রত্যুত্তর দেয় যে, আমি আসলে তাদের কাজ দেখে হাসি অথবা বলে যে তাদের নাশিদ আমার ভাল লাগে।

রাসূল (সঃ) একদিন উমর (রাঃ) কে বললেন (তখন উমর (রাঃ) এর হাতে আহলে কিতাবধারীদের লিখিত কিছু পুস্তিকা ছিল পড়ার জন্য) হে খাত্তাবের পুত্র তুমি কি এটার (কুরআনের ব্যপারে) ব্যপারে সংশয়ে পতিত হয়েছ? সেই স্বত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ আমি ত এটা তোমার কাছে পরিষ্কার করে দিয়েছি। আর তুমি উমর! (অর্থাৎ হক আসার পরে আর বাতিল নিয়ে পরে থাকার কোন সুযোগ নেই)

রাসূল (সঃ) বলেছেন, ‘তোমরা যদি দাজ্জালের আবির্ভাবের সংবাদ অবগত হও তাহলে তার থেকে দূরে থাক, আল্লাহ’র কসম একজন দাজ্জালের কাছে যাবে এই ভেবে যে, সে ঈমানের উপর দৃঢ় কিন্তু সে ফিরবে দাজ্জালের অনুসারী হয়ে। দাজ্জালের ফিতনা দ্বারা সে এতটাই বিভ্রান্ত হবে যে তার পরিণতি এটা হবে’।

আমি দেখছি যে, বাগদাদী’র পরিষ্কার পথভ্রষ্টতা এবং মুসলমানের রক্ত প্রবাহিত করা দেখেও আজ উম্মাহ’র এক বিরাট অংশ তার অনুসারী হয়ে গেছে। তাই এটা আর আমাকে অবাক করে না যে মানুষ দাজ্জালের অনুসারী হবে যদিও তার কার্যক্রম সবকিছু পরিষ্কার করে দেবে। দাজ্জালের দুই চোখের মাঝখানে ‘কাফির’ লেখা থাকবে তারপরেও আমাদেরকে রাসূল (সঃ) বলেছেন আমাদেরকে তার থেকে দূরে থাকতে কারণ যাতে করে তার (দাজ্জালের) তৈরি করা বিভ্রান্তির দ্বারা আমরা পথভ্রষ্ট না হই। আর আজকে এভাবেই বিদা’আত পন্থীদের প্রচারণায় মানুষজন পথভ্রষ্ট হচ্ছে।

আজকে তাই আমি আমার ভাইদের জন্য এ ব্যপারে যে ফতোয়া জারী করছি তা হলোঃ

মিডিয়ার এই ধরণের প্রচারণা দেখা হারাম কারণ এগুলো বানোয়াট বিষয়াদির অনুমোদন দেয়, এটাও হারাম হবে যে কেউ অন্যকে এগুলোর দিকে আমন্ত্রণ জানাবে এবং প্রচার করবে। শুধুমাত্র তার জন্যই এটা (দেখা) অনুমোদিত হবে যিনি এর মধ্যকার বানোয়াটকে প্রকাশ করার জন্য দেখবেন। আল্লাহ সুবহানুতাআলা তাঁর বান্দাদের বর্ণনায় বলেন, ‘এবং (আল্লাহ’র বান্দারা) তারাই যারা কোন মিথ্যার প্রত্যক্ষদর্শী না’-(আল-ফুরকানঃ৭২)। আর এখানে যে মিথ্যার কথা বলা হয়েছে তাঁর মধ্যে এমন সব ধরণের মিথ্যা অন্তর্ভুক্ত যা পরিশুদ্ধ ও সৌন্দর্যময় করা হয়। এবং এখনকার মিথ্যার চেয়ে ভয়ানক ফিতনা আর কি হতে পারে!

নিশ্চিতভাবেই ইসলাম আমাদেরকে সেসব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয় যা আমাদেরকে বিপথগামিতা, অনৈক্য এবং বিশৃঙ্খলার দিকে পরিচালিত করে। যেমনটি হাদিসে এসেছে, ‘যে কেউ ভাগ্য জানার জন্য ভাগ্য গণনাকারীর নিকট তাঁর ইবাদত ৪০ দিন পর্যন্ত গৃহীত হবে না’ এবং এই হাদিস এসেছে শুধুমাত্র যদি কেউ জিজ্ঞেস করে নিজের ব্যপারে (অর্থাৎ কেউ যদি গণনাকারীর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে তাহলে সে ঈমানহীন হয়ে যাবে)!

এবং এটা আহলুল সুন্নাহ’র লোকদের বৈশিষ্ট্য ছিল যে তারা কোন বিদা’আত প্রচারকারীর সংস্রবে বসত না এবং তারা এটাও জরুরী মনে করত যে চলার নিজের কানকে ঢেকে রাখবে যাতে পথে এ ধরণের কোন কথা না শুনতে হয়। কারণ তারা ভয় করত যে এসব কথা যদি তারা শুনতে পায় তাহলে তা তাদের মনের উপর প্রভাব ফেলবে।

হাসান বসরী (রঃ) একদা বলেছিলেন, ‘তোমরা হাওয়া’র (যারা নিজেদের খেয়ালের বসে কথা বলত) লোকদের পাশে বসবে না, কারণ তারা তোমার অন্তরকে প্রভাবিত করবে তাদের ফিসফিসানি দ্বারা, আর যদি তোমরা সেগুলোর অনুসরণ কর তাহলে তোমরা নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনলে, আর যদি তোমরা এগুলো অস্বীকার কর তাহলে তোমাদের অন্তর দুর্বল হয়ে যাবে’। একদা মুতা’জিলার এক লোক ইবনে তাউস (রঃ) এর কাছে এসেছিলেন কথা বলতে, তিনি তাঁর উভয় কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে বন্ধ করে দিলেন এবং তাঁর সন্তানদেরকেও শক্ত করে কান বন্ধ করতে বললেন এবং নির্দেশ দিলেন ‘শক্ত করে ধর এবং সে যা বলে তাঁর কোনকিছুই শুন না’।

আস-সাখতিয়ানী (রঃ) বিদা’আতধারীদের নিকট থেকে একটা হাদীস বা আয়াত শোনা থেকেও অস্বীকৃতি জানাতেন। এবং এদের মধ্যে কেউ যখন এসে তাঁকে বলত যে, অন্তত একটা শব্দ শোনেন। তিনি প্রত্যুত্তরে বলতেন, না অর্ধেক শব্দও না।

আদ-ধাহাবী (রঃ) ইবনে আল-রাওয়ান্ডী সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন, সে একজন জিন্দিক এবং সে (আল-রাওয়ান্ডী) রাফেজী ও নাস্তিকদের সঙ্গ দিত। এ ব্যপারে তাকে কিছু বললে সে বলত আমি ত শুধুমাত্র তাদের আকিদা সম্পর্কে জানার জন্যই তাদের সঙ্গ দেই। এবং তাঁর শেষ পরিণতি এই হয়েছিল যে সে জিন্দিকদের আকিদা নিয়ে বই লেখা শুরু করেছিল। আল্লাহ’র অভিশাপ তার উপর।

সুফিয়ান আস-সওরী (রঃ) বলেন, ‘যে কেউ একজন বিদা’আতধারীর কথা শুনল সে আল্লাহ’র নিরাপত্তার বাইরে চলে গেল এবং বিদা’আতধারীদের একজন হিসেবে সাব্যস্ত হলো’।

তাই আমার ভাই-বোনদের জন্য বলছি আল্লাহ আপনাদের নিরাপত্তা দান করুন। আপনারা দেখেন আমাদের পূর্বসূরিরা এই বিদা’আত প্রচারকারীদের থেকে দূরে থাকার জন্য কত চেষ্টা করেছেন। আর এখানে আমি বিদা’আতধারীদের মধ্যে শুধুমাত্র বাগদাদীর লোকদের কথাই বলছি বরং এমন সকল দলের কথা বলছি যারা বিপথগামী।

এবং আপনাকে বলছি, আল্লাহ আপনার নিরাপত্তা দান করুন, আপনি যদি বিদা’আতধারীদের কাউকে অনুসরণ করেই থাকেন তাহলে অতিসত্বর তাদের পরিত্যাগ করুন এবং এমন সব রাস্তা পরিহার করুন যে দিক থেকে তাদের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। আর যদি আপনি তা না করেন তবে এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী থাকবেন যদি আপনার সামনে সত্য প্রকাশিত না হয়।

যখন আপনাদেরকে মিডিয়ার প্রচারিত এগুলো দেখা থেকে বিরত রাখা হলো তার অর্থ এই না যে সত্য পন্থিদের জন্য এই মিথ্যার স্বরূপ উদঘাটন করা অসম্ভব । বরং এটা ত এজন্য যে, আপনার উপর একটা মৌলিক দায়িত্ব যে আপনি উম্মাহকে এই সংশয়, অনৈক্য এবং বিপথগামিতা থেকে উদ্ধার করবেন। এজন্যই আমরা বলি যদি সত্যকে জানার পরেও কেউ এই বিদা’আতধারীদের সাথে বিতর্কে জরায় এবং তাদের কাজের প্রতিক্রিয়া দেখানোয় জরিয়ে পরে তবে তাদেরকে থাকতে দিন সেখানে। আমাদের পূর্বসূরিরা এমনি ছিলেন। এবং এখানে তাঁদের কিছু উক্তিও তুলে ধরা হয়েছে, এই উক্তিগুলো তাঁরা এজন্য করেননি যে তাঁরা সেসব নিয়ে যুক্তি খণ্ডনে অসমর্থ ছিলেন।

আল্লাহ আপনাকে নিরাপত্তা দিন এবং দৃঢ়পদ রাখুন এবং আমাকে ও আপনাকে যা কিছু ভাল ও সত্য তা থেকে উপকৃত করুন। এবং সর্বদা এই দুয়া করুন যে, হে চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী ফিতনার সময়ে আমাকে সত্য পথে পরিচালিত করুন এবং কেবল আপনিই ত পারেন বান্দাকে সরল-সঠিক পথে পরিচালিত করতে।

রাসূল (সঃ) খারেজীদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘তারা ততদিন পর্যন্ত খান্ত হবে না যতদিন পর্যন্ত তাদের শেষ দলটি দাজ্জালের সাথে মিলিত হয়’।

আপনি কি জানেন এটা কেন হবে? কারণ খারেজীদের ধর্মই হলো এটা যে তারা সব ধরণের সংশয় এবং মিথ্যা আগমনবার্তার পিছনে ছোটে।

দাবিকের ময়দান ও কালো পতাকা এবং আরও অন্যান্য বিষয় নিয়ে যেসব হাদিস বর্ণিত হয় আর যখন সেগুলো মানুষ অনর্থক অনুসরণ করে’- এই বর্ণনাগুলো এক সময়ে এক ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য হয় আর অন্য সময়ে হয়ত তা আরেকজনের জন্য প্রযোজ্য হয় আর এভাবেই সেই হাদিসগুলোর ব্যবহার বিভ্রান্তির কারণ হয়।

দাজ্জালের চোখের মাঝখানে যখন ‘কাফির’ লেখা থাকবে তাহলে কেন খারেজিরা পরবর্তীতে তাকে অনুসরণ করবে?
দাজ্জালের মধ্যে অস্পষ্ট এবং ধাঁধায় ফেলে দেওয়ার মত বৈশিষ্ট্য যা থাকবে আর যাকে দাজ্জাল জান্নাত আর জাহান্নাম বলবে তা দেখেই এই খারেজীরা তাকে অনুসরণ করবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

12 − nine =

Back to top button