আহলুল হারামের জাগরণে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব -দ্বিতীয় পর্ব || সৌদি রাজপরিবার : ইতিহাসের অজানা কথা – শাইখ হামজা বিন উসামা হাফিজাহুল্লাহ
https://banglafiles.net/index.php/s/TfwSCtcZ6XBHiEg
https://archive.org/download/KhairulUmam2/khairul%20umam-2.pdf
https://archive.org/download/KhairulUmam2_201906/khairul%20umam-2.pdf
https://www.file-upload.com/4m6hot15a0kt
http://www.mediafire.com/file/hv076k74tv0s2q3/khairul_umam-2.pdf/file
WORD
https://banglafiles.net/index.php/s/ds9PzBJgekMjSn7
https://archive.org/download/KhairulUmam2/khairul%20umam-2.docx
https://archive.org/download/KhairulUmam2_201906/khairul%20umam-2.docx
https://www.file-upload.com/wd58uds2eiqk
http://www.mediafire.com/file/0o1k0bvk0imnazq/khairul_umam-2.docx/file
====================
আহলুল হারামের জাগরণে খাইরুল উমামের নেতৃত্ব
দ্বিতীয় পর্ব
সৌদি রাজপরিবার : ইতিহাসের অজানা কথা
শাইখ হামজা বিন উসামা হাফিজাহুল্লাহ
ألحمد لله الكريم الذي أصبغ نعمه علينا باطنة وظاهرة، العزيز الذي خضعت لعزته رقاب الجبابرة. وأشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له شهادة نرجو بها النجاة في الدار الآخرة. وأشهد أن محمدا عبده ورسوله صلى الله عليه وعلى آله وصحبه وسلم تسليما كثيرا
সমস্ত প্রশংসা সেই পরম দাতা আল্লাহ তা’আলার জন্য, যিনি আমাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সর্বাঙ্গীণে ভরপুর নিয়ামত দান করেছেন৷ সমস্ত প্রশংসা সেই মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ তা’আলার জন্য, যার প্রতাপের সামনে সকল প্রতাপশালীদের গর্দান নত হয়ে যায়৷ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই এবং তাঁর কোন শরীক নেই৷ এমন সাক্ষ্য, যা দ্বারা আমরা পরকালে মুক্তির আশা করে থাকি৷ আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূল৷ আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রতি এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গী-সাথীদের প্রতি অঝোরে রহমত বর্ষণ করুন৷
হামদ ও সালামের পর–
সমগ্র উম্মতে মুসলিমাহর প্রতি ব্যাপকভাবে এবং আমাদের হারামাইন শরীফ দেশের জনগণের প্রতি বিশেষভাবে…
ألسلام عليكم ورحمة الله وبركاتة
আপনাদের সামনে আহলুল হারামের জাগরণে খাইরুল উমামের নেতৃত্বের দ্বিতীয় পর্ব উপস্থাপন করছি; যেখানে আমরা উল্লেখ করেছি জাজিরাতুল আরবের নব্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলি ও মুসলিম উম্মাহর অনেক সন্তান সম্পর্কিত চেপে রাখা বাস্তবতাসমূহ; যেখানে এসে জড়ো হয়েছে শত্রুদের সকল প্রবঞ্চনা ও দালালদের সকল বিশ্বাসঘাতকতা এবং যা নিয়ে জালিয়াতি করা ও যার বিকৃতি সাধনের ঠিকাদারি গ্রহণ করেছে সৌদি সরকার৷ ফলে এমন প্রজন্মের আবির্ভাব হওয়া শুরু হয়েছে, যারা হারামাইন শরীফের দেশের ইতিহাসের সাথে পরিচিত হচ্ছে একমাত্র সৌদি পরিবারের কাছ থেকে৷ যারা নিজেদের ইতিহাস নিজহাতে লিখেছে যাকে খুশি ওপরে তোলার জন্য, যাকে খুশি অধীনস্থ বানানোর জন্য, যাকে খুশি মর্যাদায় উন্নীত করার জন্য এবং যাকে খুশি অবজ্ঞা ও তুচ্ছজ্ঞান করার জন্য৷
তাই জাজিরাতুল আরবের জনগণের সামনে ইতিহাস বিষয়ক কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাস্তবতা তুলে ধরা আমরা নিজেদের জন্য আবশ্যক মনে করছি, যেন আমাদের দেশের জালেমরা কি পরিমাণ জুলুম করে যাচ্ছে তারা তা আঁচ করতে পারে; যেন তারা তাদের এমন অনেক অধিকার সম্পর্কে অবগত হতে পারে, যা থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে ও যা আজ স্বঘোষিত “উলুল আমর” তথা অভিভাবকদের অধিকার বলে স্বীকৃতি লাভ করেছে; এবং আমরা যেন সে অধিকারসমূহ পুনরুদ্ধারে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালাতে পারি৷
ইতিহাস বিষয়ক শিক্ষা একজন মুসলিমের জীবনে বিরাট গুরুত্ব বহন করার কারণে কুরআনুল কারীমে আমাদের নিকট পূর্ববর্তী উম্মতদের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে এবং একাধিক জায়গায় ইতিহাস ও অতীতের লোকদের সংবাদ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-গবেষণা ও পর্যালোচনা করার জন্য আমাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
قل سيروا في الأرض ثم انظروا كيف كان عاقبة المكذبين
অর্থাৎঃ বলে দিনঃ তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর, অতঃপর দেখ, মিথ্যারোপকারীদের পরিণাম কী হয়েছে। (সূরা আনআম: ১১)
অন্যত্র বলেনঃ
قل سيروا في الأرض فانظروا كيف كان عاقبة الذين من قبل كان أكثرهم مشركين
অর্থাৎঃ বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম কী হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। (সূরা রুম: ৪২)
আল্লামা ইবনে খলদুন রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ “কেননা ইতিহাসশাস্ত্র হচ্ছে এমন এক শাস্ত্র, প্রজন্মের পর প্রজন্ম এক জাতি থেকে আরেক জাতি পালাক্রমে যার চর্চা করে থাকে এবং যেখানে এসে সকল কাফেলা যাত্রাবিরতি করে থাকে ও উষ্ট্রী বেঁধে থাকে…”৷ এক পর্যায়ে তিনি বলেনঃ “এবং তার অভ্যন্তরীণ পর্বে রয়েছে সৃষ্টিজগতের জন্য চিন্তা, গবেষণা ও পরিতোষণ৷ তার মূলনীতিসমূহ অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং তা হচ্ছে ঘটনাসমূহের ধরন ও হেতু সম্পর্কে একটি গভীর জ্ঞানপাত্র৷ ফলে তা হেকমত ও প্রজ্ঞা অর্জনের সুপ্রতিষ্ঠিত উৎপত্তিস্থল এবং তা এর উপযুক্ত যে, তাকে হেকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ ইলমের কাতারে গন্য করা হবে৷”
আগের পর্বে আমরা জাজিরাতুল আরব কী পরিমাণ গুরুত্ব বহন করে তা উল্লেখ করেছি, যে গুরুত্ব আমাদের শত্রুদেরও নজর এড়াতে পারেনি৷ তাই যে সুপারপাওয়ার সমগ্র বিশ্বের উপর তার প্রভাব বিস্তার করার স্বপ্ন দেখে, সে জাজিরাতুল আরবের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করাকে সারাবিশ্ব নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি মনে করে৷
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং বিংশ শতাব্দীর সূচনালগ্নে উসমানিয়া খেলাফত তথা অটোমান সাম্রাজ্যের সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দী শক্তি ছিল বৃটেন, যা জাজিরাতুল আরবের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তখন ক্ষিপ্রগতিতে প্রচেষ্টা চালিয়েছিল এবং তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডগুলো থেকে উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদেরকে বহিষ্কার করে দিয়েছিল৷ বৃটেন এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্য কুয়েত গভর্নর মুহাম্মাদ আছ-ছাবাহকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে এবং তার স্থলে বৃটেনের অন্তরঙ্গ বন্ধু মুবারক আছ-ছাবাহকে ক্ষমতায় বসায়৷ এর দ্বারা বৃটেনের উদ্দেশ্য হল কুয়েতের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এবং বৃটিশদের অনুগামী একটি সুরক্ষিত এলাকা তৈরি করা ও সেখান থেকে উসমানিয়াদেরকে অপসারণ করা৷ এটা ছিল উসমানিয়া খেলাফতের সাথে ভবিষ্যৎ সংঘর্ষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আর ঐ লোকটাকে কি আপনারা চিনেন, যে কুয়েত থেকে হারামাইন শরীফের দেশে বৃটিশ ক্রুসেডারদের প্রভাব অনুপ্রবেশের পথ সুগম করে দিয়েছিল? সে হচ্ছে আব্দুল আযীয বিন সৌদ, যে বৃটিশদের প্রতি মনোনিবেশ করে বৃটিশ দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করেছিল এবং তাদের নিকট সাহায্যের আবেদন করেছিল৷ তার এই অনুরোধ বৃটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্সের মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল দারুণভাবে৷ কেননা নজদ-ই ছিল একমাত্র অঞ্চল, যা বৃটিশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল এবং উসমানিয় খেলাফতের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইবনে রশিদের দখলে ছিল৷
আব্দুল আযীয বৃটেনের সম্মতি পেয়েছিল এবং বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি; এরইমধ্যে তার অনুগত চল্লিশজনের একটি সেনাদল কুয়েত থেকে রিয়াদ অভিমুখে বেরিয়ে পড়ে, যা তখন উসমানিয়া খেলাফতের মিত্র রশিদী আমিরগণের নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল৷ সেসময় জাজিরাতুল আরবের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় অঞ্চল তাদের রাজত্বের আওতাধীন ছিল, যা উত্তরে হাইল থেকে শুরু করে মাঝখানে কাছীম হয়ে দক্ষিণে রিয়াদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল৷
ইবনে সৌদ ও তার সৈনিকরা অবিচার ও বিশ্বাসঘাতকতাকে আবরণ বানিয়ে রাতের অন্ধকারে রশিদীদের ওপর আক্রমণ করে এবং সেই প্রাসাদ অভিমুখে অগ্রসর হয়, যেটিতে ইবনে রশিদের প্রতিনিধি আ’জলান থাকতেন৷ তারা তাকে অবরোধ করে ও তার দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সবধরনের অন্যায় সাধন করে এবং উসমানিয়া খেলাফতের এই মিত্রকে হত্যা করে রিয়াদ দখল করে নেয়৷ এ হামলাটিই ছিল জাজিরাতুল আরবে সৌদ পরিবারের প্রথম পদচিহ্ন, যা ইবনে সৌদ নিজের প্রভাব বিস্তারে উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের বিরুদ্ধে পরিচালনা করেছিল। এটি সংঘটিত হয়েছিল ১৩১৯ হিজরী মোতাবেক ১৯০২ ঈসায়ী সালে৷
সৌদি উপন্যাসগুলো এই রণাঙ্গনের যাবতীয় শরিয়তগর্হিত কাজগুলো যেমনঃ বৃটিশদের খুশি করার জন্য উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের প্রতি জুলুম-আগ্রাসন চালানো, অন্যায়ভাবে মুসলমানদের হত্যা করা ও তাদের নিষ্পাপ রক্ত প্রবাহিত করা, ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে গেছে এবং এরচেয়ে আগে বেড়ে আব্দুল আযীয যে উসমানিয়া খেলাফতকে বিক্রি করে দিয়েছে ও যার বৈধতার স্বীকারোক্তি সে দিত, সেই উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের প্রতিনিধির প্রাসাদকে একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও স্মৃতিসৌধে রূপান্তর করেছে, যা অচিরেই একটি তীর্থস্থানে রূপ নেবে৷
আব্দুল আযীয বিন সৌদ উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের সাথে নিরবচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যায়৷ সে নজদের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে এবং তার হাতে কয়েকটি শহরের পতন ঘটে ও কাছীমকে সে উভয়পক্ষের মধ্যকার একটি ভয়াবহ উত্তপ্ত যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে লড়াই অব্যাহত রাখে৷
ইবনে সৌদের পক্ষ থেকে উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের বিরুদ্ধে বারংবার এ সকল আক্রমণ পরিচালনা করা সত্ত্বেও মমতাময়ী উসমানিয়া খেলাফত ক্রমাগতভাবে ইবনে সৌদের সাথে সম্পর্ক বজায় রেখে যাচ্ছিলেন দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তি এবং যুদ্ধের ইতি টানার প্রচেষ্টা স্বরূপ৷
এক্ষেত্রে উসমানিয়া খেলাফত কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করেঃ
ইবনে সৌদ কাছীমের ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার পর উসমানিয়া নেতৃত্ব তাকে কাছীম ও দক্ষিণ নজদের গভর্নর হিসেবে মেনে নেয়৷ প্রাথমিকভাবে তাকে কাছীমের জেলা অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়েছিল এবং এরপর তার প্রতি সদয় হয়ে তাকে উসমানিয়া খেলাফত কর্তৃক গভর্নর নিযুক্ত করা হয়৷
১৩৩১ হিজরীর জুমাদিউস সানি মাস মোতাবেক ১৯১৩ ঈসায়ী সনের মে মাসে ইবনে সৌদ সৌদি আরবের উসমানিয়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, যার অধীনে উসমানিয়াগণ নিশ্চিত করেন যে, আব্দুল আযীয পাশা উসমানিয়া ফরমান অনুযায়ী নজদের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছেন৷
উসমানিয়া খেলাফত ভূপৃষ্ঠে ঘটমান বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করতো ও ইবনে সৌদের সাথে একবার মতৈক্যে পৌছার পরও ধারাবাহিকভাবে তার বিশ্বাসঘাতকতা করতে থাকা, বৃটিশদের ছত্রছায়ায় তার ঘুরঘুর করা ও উসমানিয়া খেলাফতের মিত্রদের সাথে তার ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া দেখে আশ্চর্যবোধ করতো৷ ফলে ইবনে সৌদ যখন কুয়েতিদের সাথে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ হল ও সকল বৃটিশদের সমর্থন করতে লাগলো, যারা উসমানিয়াদের কর্তৃক ইবনে রশিদকে সহায়তা করাকে কুয়েতে অবস্থিত নিজেদের স্বার্থের জন্য হুমকিস্বরুপ মনে করতো, তখন উসমানিয়াগণ তাদের মিত্র ইবনে রশিদের নিকট সৈন্য-সামান্ত ও সরঞ্জামাদি প্রেরণ করতে শুরু করেন৷
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাদুর্ভাবের সাথে সাথে সুপারপাওয়ারগুলোও সেজন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে৷ তাই উসমানিয়া কর্মকর্তাগণ উভয় পক্ষের মাঝে সন্ধি স্থাপন এবং উভয়ের প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি সামরিক সহযোগিতার হাত সম্প্রসারণ করবে, এই প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করার জন্য প্রয়াস চালিয়েছিলেন৷
ইবনে সৌদ উসমানিয়া খেলাফতের আহবানে সাড়া দিয়ে তাদের সাথে সন্ধি করতে একমত হয়েছিলেন এবং ১৩৩২ হিজরীর জুমাদিউস সানি মাস মোতাবেক ১৯১৪ ঈসায়ী সনের মে মাসে ইবনে সৌদ ও উসমানিয়াদের মাঝে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়৷ তাতে ধার্য করা হয় যে, উসমানিয়া ফরমান অনুযায়ী নজদ ইবনে সৌদের অধিকৃত অঞ্চল সমূহের মধ্যেই বহাল থাকবে এবং বংশপরম্পরাক্রমে তা তার পুত্র ও নাতিদের হাতে হস্তান্তর করা হবে৷ পাশাপাশি এ চুক্তি ইবনে সৌদকে বারণ করেছিল কোন বিদেশী শক্তির সাথে চুক্তিমূলক কোন সম্পর্ক রাখতে বা তার অধিকৃত অঞ্চলসমূহে অবস্থিত বিদেশী কাউকে কোন বিশেষ সুবিধা প্রদান করতে৷
সুতরাং, ইবনে সৌদ, আব্দুল আযীয পাশা তখন “উপ গভর্নর” ও উসমানিয়াদের বন্ধু ছিল এবং উসমানিয়াগণও তাকে নিজেদের অধীনস্থ উসমানিয়া কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচনা করত৷ কিন্তু উসমানিয়াদের উল্লিখিত পদক্ষেপের বিনিময়ে ইবনে সৌদ কি এই অবস্থা বহাল রেখেছিল?
নজদ অঞ্চলে উসমানিয়া ক্ষমতার পতন ঘটাতে বৃটিশরা স্থানীয় মিত্রদের সহায়তাকেও আবশ্যক বলে গণ্য করছিল৷ তাই তাদেরকে তারা সন্ধান করতে লাগল এবং তারা নিজেদের জন্য বিশ্বস্ত এজেন্ট ও সহযোগীরূপে ইবনে সৌদ ব্যতিত আর কাউকে খুঁজে পেলো না৷ এক বছর যেতে না যেতেই সে উসমানিয়া খেলাফতের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করে ফেলল৷ উসমানিয়া খেলাফত ও মুসলিম উম্মাহর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে সে বৃটিশদের সন্তুষ্ট করে ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রারম্ভে তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়৷ অথচ সে জানে যে, এ চুক্তিবদ্ধ হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে উসমানিয়া খেলাফতের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া এবং বৃটিশ ও তার মিত্রদেরকে মুসলিম ভূখণ্ডগুলোতে অনুপ্রবেশের সুযোগ করে দেয়া৷ আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট, আর তিনি কতইনা উত্তম কর্মবিধায়ক৷
পরবর্তীতে আব্দুল আযীয বিন সৌদকে তার বিশ্বাসঘাতকতার প্রতি অভিনন্দন জানিয়ে বৃটেন বিভিন্ন ধরণের সহায়তা করেছিল৷ সহায়তাসমূহের মধ্যে আর্থিক সহায়তা, সামরিক সহায়তা, প্রতিকূল অবস্থায় প্রতিরোধ গড়ে তোলা, উপদেশ-পরামর্শ, পরিকল্পনা এবং অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মাধ্যমে তাকে উপকৃত করা ছিল উল্লেখযোগ্য৷
যেসকল বিশিষ্ট বিশেষজ্ঞরা ইবনে সৌদকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ক্যাপ্টেন উইলিয়াম হেনরি আরভিন শেক্সপিয়ার, যে আব্দুল আযীযকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা করে দিকনির্দেশনা প্রদান করত ও তার কাজকর্ম পরিচালনা করত৷ শেক্সপীয়ার কর্তৃক আব্দুল আযীয বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান ও সেগুলোকে বিভিন্ন সারিতে বিন্যাসকরণ হচ্ছে ইবনে সৌদের প্রতি বৃটিশদের সামরিক ও রাজনৈতিক সহায়তার জ্বলন্ত প্রমাণ৷
১৩৩৩ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাস মোতাবেক ১৯১৫ ঈসায়ী সনের জানুয়ারী মাসে ইবনে সৌদ ও ইবনে রশিদের মাঝে যুদ্ধ সংঘটিত হয়৷ ইহুদী বংশোদ্ভূত বৃটিশ ক্যাপ্টেন শেক্সপিয়ার ছিল আব্দুল আযীয ও তার সাথে থাকা তার সহমনা অন্যান্য বাহিনীর কমান্ডার৷ এ যুদ্ধেই উসমানিয়া খেলাফতের মিত্ররা শেক্সপিয়ারকে গুলি করে হত্যা করতে সমর্থ হয়েছিলেন ও তাকে তরবারী দ্বারা কেটে ফেলেছিলেন৷ তেমনিভাবে হত্যা করেছিলেন তার সেক্রেটারীকেও৷ তখন শেক্সপিয়ারের হত্যার উপর আব্দুল আযীয তার বৃটেনস্থ মহামান্য ব্যক্তির নিকট অনুতপ্ত হয়ে উপসাগরীয় অঞ্চলের বৃটিশ প্রতিনিধির নিকট একটি শোকবার্তা প্রেরণ করেন৷
প্রিয় ভাইয়েরা!
আমাদের হারামাইন শরীফের জনগণ থেকে এই ঐতিহাসিক বাস্তবতাগুলো লুকিয়ে রাখার জন্য সৌদি সরকার সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে থাকে৷ তারা জানে যে, এগুলো প্রকাশিত হয়ে গেলে তাদের বৈধতা বাতিল হয়ে যাবে, আমাদের মহানুভব জনগণ তাদের অন্যায়-নিপীড়ন নিরবে সয়ে যাবে না এবং তারা মেনে নিতে পারবে না যে, ক্রুসেডারদের দালালরা তাদের ওপর শাসন চালাবে৷ কাজেই বিভিন্ন উপায়ে তারা সে ইতিহাসকে লোকচক্ষুর আড়াল করে রাখা ও তাতে জালিয়াতি করা শুরু করেছে৷ কোমলমতি শিশুদেরকে তাদের শিক্ষা পাঠ্যক্রমে বাল্যকাল থেকেই সৌদ পরিবার সম্পর্কে একটি উৎকৃষ্টতর প্রতিকৃতি দেওয়া হয়৷ তাদের সামনে এসকল বাস্তবতাসমূহের খুব সামান্যই তুলে ধরা হয়৷ আর যখন তুলে ধরা হয় তখন সে আলোচনা থাকে আইনসম্মত চরিত্রায়ন ও বাস্তব উদ্দেশ্য থেকে মুক্ত৷ সুতরাং সেক্ষেত্রে তাদেরকে বলা হয়না যে, সেটি ছিল মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের নিকট সাহায্য কামনা করা ও সেটি ছিল আব্দুল আযীয কর্তৃক উসমানিয়া খেলাফতের হাতে কৃত বাইআতকে ভঙ্গ করা; বলা হয়না যে, আব্দুল আযীয ঐ সমস্ত পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়ের একজন, যারা মুসলমানদের খলিফা হিসেবে যার নিকট বাইআত গ্রহণ করেছে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ প্রকাশ করেছে ও দ্বীনের দুশমনদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেছে৷ তাদের নিকট এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ওয়াজিব হওয়ার শরয়ী দলিল বর্ণনা করা তো দূরের কথা বৈধ হওয়ার দলিলও বর্ণনা করা হয়না৷ যেমনিভাবে প্রচলিত উপন্যাসগুলো সৌদি রাজ্যের আবির্ভাবকে বৃহত্তর আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তথা সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় উল্লেখ না করে একটি আঞ্চলিক আক্রমণ হিসেবে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। অথচ আব্দুল আযীয বৃটেনের পক্ষে উসমানিয়া খেলাফতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, যার চাক্ষুষ পরিণাম ছিল ফিলিস্তিনে বৃটিশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা, আর এটাই ছিল ইসরাইলী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মসৃণ পন্থা৷
সে যুদ্ধে ক্রুসেড বিদ্বেষ ও ইহুদিবাদ প্রবণতা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার ছিল৷ এ কারণেই মিশর আক্রমণের কমান্ডার লর্ড এলেনবি ১৩৩৬ হিজরীর সফর মাস মোতাবেক ১৯১৭ ঈসায়ী সনের ১০ই ডিসেম্বর সৈন্যদেরকে জেরুজালেমের সম্মানার্থে পদব্রজে সামরিক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে জেরুজালেমে প্রবেশ করতে উদ্বুদ্ধ করে। সেখানেই তার প্রসিদ্ধ বিবৃতিটি প্রদান করেন যে, “এবারই ক্রুসেডের অবসান হলো”৷ তেমনিভাবে বৃটিশ গুপ্তচর টমাস এডওয়ার্ড লরেন্সকে এই উৎসবে শরীফ হুসাইনের নিকট উপস্থিত হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে সে৷
এভাবে ইতিহাস আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, ইবনে সৌদ আব্দুল আযীয পাশা ক্রুসেডারদের সুহৃদ বন্ধু এবং তাদের জন্যে সে হারামাইন শরীফ দেশে প্রবেশ করার পথ সুগম করে দিয়েছিল৷ মুসলমানদের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ পরিচালনা করতে সে তাদের কাছে সাহায্য প্রার্থণা করেছিল ও এই ন্যাক্কারজনক কাজে অংশগ্রহণ করার জন্য তাদেরকে সে সুযোগ করে দিয়েছিল৷ এর বিনিময়ে সে উসমানিয়াদের সহিত বৈরী আচরণ ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিল, তাদের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছিল ও তাদের নিষ্পাপ রক্ত প্রবাহিত করেছিল এবং উসমানিয়া খেলাফতের হাতে নিজেদের বাইআত ও উসমানিয়া খেলাফতের সাথে কৃত চুক্তি ভঙ্গ করেছিল, যেন বৃটিশদের সাথে সে সুষ্ঠুভাবে চুক্তি সম্পাদন করতে পারে৷
কিন্তু এতেই কি ইবনে সৌদ পরিতৃপ্ত হয়েছিল?
ইবনে সৌদ পূর্বোক্ত সকল বিশ্বাসঘাতকতা ও অপমানজনক কর্মকাণ্ডতেই পরিতৃপ্ত হয়নি; বরং বৃটিশদের নথিপত্রে সেগুলো নথিভুক্তকরণেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল৷ সে সম্পর্কিত আলোচনা আমরা পরবর্তী পর্বে অন্তর্ভুক্ত করেছি৷
হে আল্লাহ্! এ উম্মাহর জন্য আপনি এমন হেদায়াতের পথ সুদৃঢ় করে দিন, যা আপনার আনুগত্যকারীদের সম্মানিত করবে এবং আপনার নাফরমানদের লাঞ্ছিত করবে এবং যা মানুষদেরকে সৎকাজের প্রতি নির্দেশ করবে ও অসৎকাজ থেকে বিরত রাখবে৷
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের পাপ ও আমাদের কাজে যা কিছু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে তা মোচন করে দিন, আর আমাদেরকে দৃঢ় রাখুন এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন৷