আরবইলম ও আত্মশুদ্ধিউসামা মিডিয়াফাতাওয়া-ফারায়েজবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ হামুদ বিন উকলা আশ শুয়াইবী রহিমাহুল্লাহসৌদী আরবহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ : মর্ম ও বাস্তবতা -শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুআইবী রহ.

আলহামদু লিল্লাহ রিলিজ…

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ : মর্ম ও বাস্তবতা

মূল
শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুআইবী রহ.

অনুবাদ
মুফতি আব্দুল মালেক মুসা হাফিজাহুল্লাহ

https://archive.org/details/irhab_BN

PDF
https://archive.org/download/irhab_BN/irhab.pdf
http://www.mediafire.com/file/zhdbceb83pfr6rj/irhab.pdf

WORD
https://archive.org/download/irhab_BN/irhab.docx
http://www.mediafire.com/file/7uwjhn…itc/irhab.docx

প্রচ্ছদ
https://archive.org/details/Bw86m6

 

 

PDF
—-
http://www.mediafire.com/file/y4jsar0neveiewk/116._irhab.pdf/file

https://archive.org/download/U_M_A_04/116.%20irhab.pdf

Word
—–
http://www.mediafire.com/file/4lfldg9v2dt1v88/116._irhab.docx/file

https://archive.org/download/U_M_A_04/116.%20irhab.docx

===========

সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ

মর্ম ও বাস্তবতা

মূল

শাইখ হামুদ বিন উকলা আশ-শুআইবী রহ.

অনুবাদ 

মুফতি আব্দুল মালেক মুসা হাফিজাহুল্লাহ

(সর্বস্বত্ব সকল মুসলমানের জন্য সংরক্ষিত)

 

الحمد لله رب العالمين، والصلاة والسلام على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين.  أما بعد

إرهاب (ইরহাব) এর সংজ্ঞা নিয়ে অনেক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়েছে। إرهاب এর অর্থ প্রকাশ করতে গিয়ে মতামত ও পরিভাষাসমূহের মাঝে বেশ জটিলতা দেখা দিয়েছে। কিন্তু إرهاب এর এতসব সংজ্ঞা ও পরিচয় পাওয়ার পরও তার বাস্তব ও স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো সংজ্ঞা সম্পর্কে আমরা এখনো অবহিত হতে পারিনি। আর যে সংজ্ঞা স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়, সেটি সঠিক সংজ্ঞা বলে বিবেচিত হতে পারে না। যদিও আলোচকবৃন্দ ‘ইরহাব’ এর হাজারেরও বেশি সংজ্ঞা ও পরিচয় তুলে ধরেছেন; কিন্তু এসব সংজ্ঞা থেকে ‘ইরহাব’ এর উদ্দেশ্য নিরূপণ করার ক্ষেত্রে সুক্ষ্ম একটি বিষয় বাদ পড়ে যায়, আশা করি পাঠক এ আলোচনার মাধ্যমে ইরহাব ও ইরহাবের বাইরে অন্য বিষয়ের মাঝে পার্থক্য করতে সক্ষম হবে। সেই সাথে এ কথাও পরিস্কার হয়ে গেলো যে, ইরহাবের পরিচয় সম্পর্কে যত আলোচনা হয়েছে, তা ইরহাবের উদ্দেশ্য নিরূপণ করার জন্য যথেষ্ট নয়। এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।

 

إرهاب এর পরিচয় নিয়ে যেসব বক্তব্য উঠে এসেছে তার কিছু দৃষ্টান্ত এখানে উল্লেখ করছি,

১. إرهاب এমন কিছু কাজের নাম, যা স্বভাবতই আশঙ্কাজনক পদ্ধতিতে যেকোনো ব্যক্তিকে ভয়ের অনুভূতি দিয়ে প্রভাবিত করতে পারে।

২. إرهاب বলা হয়, যার মাধ্যমে সহিংসতাপূর্ণ কাজের সাহায্যে মানুষকে ভয় দেখানো হয়।

৩. إرهاب বলা হয়, ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ এবং নিয়মতান্ত্রিক এমন কিছু মাধ্যম, যার স্বভাব হলো, নির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে ত্রাস সৃষ্টি করা।

৪. বর্বর মন্দ আচরণের নাম إرهاب

৫. সামাজিক আচার ও মানুষের সম্মান ক্ষুণ্ণকারী কাজকে إرهاب বলা হয়।

 

প্রিয় পাঠক, যখন আপনি এই সংজ্ঞাগুলোকে বিশ্লেষণ করে দেখবেন এবং তার সূক্ষ্মতা ও নির্ভরযোগ্য কার্যকরী গুণ, বিন্যাস, সংজ্ঞাদানের প্রকৃত বিষয়টি যাচাই করবেন, তখন লক্ষ্য করতে পাবেন যে, তাকে ‘আমলে ইরহাবী’ বলে নামকরণ করা যাচ্ছে না। এই সংজ্ঞাগুলোর কোনোটির মধ্যেই إرهاب এর অর্থ বোঝার ক্ষেত্রে সংজ্ঞা ও পরিচয়দানের যেসব শর্তাবলী পাওয়া যাওয়ার কথা ছিল, পরিস্কারভাবে তার বর্ণনা নেই, যা যথেষ্ট হতে পারে। কেননা প্রতিটি সংজ্ঞা এমন, যার কোনটি হয়তো جامع (জামে’) কিন্তু مانع (মানে’) নয়, অথবা مانع কিন্তু جامع নয়, অথবা جامع مانع কোনোটিই নয়। إرهاب এর পরিচয় নিয়ে এই মতবিরোধ মূলত প্রত্যাবর্তীত হয় প্রত্যেক দেশের রুচি, স্বার্থ ও আদর্শের দিকে। সুতরাং প্রত্যেক দেশ তার রাজনীতি ও স্বার্থের ভিত্তিতে إرهاب এর ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে, চাই তা إرهاب এর সঠিক অর্থের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হোক বা না হোক। এ জন্য দেখবে, একটি কাজ এক শ্রেণীর লোক করলে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে; অপর দিকে হুবহু একই কাজ অথবা তারচে’ জঘন্যতম কোনো কাজ অন্য এক শ্রেণীর লোক করলে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলে বিবেচিত হচ্ছে না।

এর একটি দৃষ্টান্ত পেশ করছি:

ফিলিস্তিন প্রেক্ষাপট: পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে ইহুদীচক্র আমাদের ফিলিস্তিনী ভাইদের উচ্ছেদ, ধ্বংস ও তাঁদের বাড়িঘর নিধন করার মাধ্যমে তাঁদের উপর কঠিন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে; অথচ বানর-শুয়োরের দল ও তাদের সহপাঠী আমেরিকা ও ইউরোপীয় ক্রসেডারদের দৃষ্টিতে এ কাজটি তাদের জানের নিরাপত্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আর এদিকে এদের মোকাবেলায় নির্যাতিত ভাইদের পক্ষ থেকে সামান্য পাথর কিংবা তার মতো কোনো নগণ্য কিছুর নিক্ষেপ সন্তাসী কর্মকাণ্ড হিসাবে দেখা হচ্ছে।

যেহেতো এ বিষয়টি স্থির হলো, তাই জেনে রাখা দরকার, إرهاب এর সঠিক সংজ্ঞা দু’ধরণের:

১. আরবি ভাষা হিসাবে إرهاب এর সংজ্ঞা।

২. শরিয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে إرهاب এর সংজ্ঞা।

 

আরবি ভাষা হিসাবে إرهاب এর সংজ্ঞা:

إرهاب শব্দটি باب إفعال থেকে أرهب يرهب এর মাসদার। ثلاثى مجرد থেকে رَهِبَ। الإرهاب، الخوف، الخشية، الرعب، الوجل সবকটি সমার্থবোধক শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে ‘ভয়’। তবে ভয়ের ক্ষেত্রে এগুলোর কোনটি অপরটি অপেক্ষা বেশি। যখন কুরআনে কারিমে এই মাদ্দা থেকে ব্যবহৃত رهب অথবা أرهب এর অর্থের দিকে লক্ষ্য করেছি, তখন লক্ষ্য করতে পেরেছি যে, তা প্রচণ্ড ভয়কে বোঝাচ্ছে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وإياي فارهبون

‘তোমরা আমাকেই ভয় করো’।

আল্লাহর বাণী-

ويدعوننا رغبا ورهبا

‘তাঁরা আমাকে আশা ও ভয় নিয়ে ডাকে।’

অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেন-

وأعدوا لهم ما استطعتم من قوة ومن رباط الخيل ترهبون به عدو الله وعدوكم

‘তাদের জন্য সাধ্যানুযায়ী শক্তি ও অশ্ববাহিনী প্রস্তুত করো। এগুলো দিয়ে তোমরা আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে ভয় দেখাবে।’ -[সূরা আনফাল: ৬০]

ইবনে জারির রহ. বলেন- ‘এখান থেকে বলা হয়, أرهبت العدو و رهبته (শত্রুকে ভয় দেখিয়েছি), সুতরাং أنا أرهِبه وأرهِّبه إرهابا وترهيبا এর অর্থ হচ্ছে, ভয়।

তুফায়েল আল-গানাবীর বক্তব্য-

ويل أم حي دفعتم في نحورهم  +  بني كلاب غداة الرعب والرهب

‘হে উম্মে হাই, আফসোস তোমাদের! তোমরা বনু কালবের প্রচণ্ড ভয়ের সময় তাদের টুঁটি চেপে ধরেছ।’

অর্থাৎ- এখানে ভয় বোঝানো উদ্দেশ্য।

ইবনে জারির রহ. বলেন- বিশর রহ. ইয়াযিদ থেকে, তিনি সাঈদ থেকে, তিনি কাতাদা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, ‘واضمم إليك جناحك من الرهب ‘ভয় হেতু তোমার হাত তোমার উপর চেপে ধর।’ الرهب এর তাফসীর الرعب দ্বারা করা প্রমাণ বহন করে যে, الرعب শব্দটি الرهب এর সমার্থবোধক শব্দ। উভয়টির অর্থ হচ্ছে, প্রচণ্ড ভয়। এর সপক্ষে প্রমাণ বহন করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণী, نصرت بالرعب مسيرة شهر

আরবী ভাষায় الإرهاب এর অর্থ কী? তা বোঝাতে এ সংক্ষিপ্ত বিবরণটি পেশ করা হল।

 

শরিয়তের পরিভাষায় إرهاب এর অর্থ

তা দু’প্রকার:

প্রথম প্রকার: যা নিন্দিত, যার সাথে জড়িত হওয়া ও সম্পর্ক রাখা হারাম। যা মারাত্মক কবিরা গোনাহের অন্তর্ভূক্ত। এর সাথে জড়িত ব্যক্তি শাস্তি ও নিন্দার উপযুক্ত। এটি হয়ে থাকে দেশ, দল ও ব্যক্তির স্তর হিসাবে। এর প্রকাশভঙ্গি হচ্ছে, মালামাল ছিনতাই, জবরদখল, সীমালঙ্ঘন, শহরের বাইরে রাস্তায় ভীতি প্রদর্শন, জালেম শাসক কর্তৃক স্বাধীনতা হরণ ও মুখ বন্ধ করে দেয়ার মাধ্যমে প্রজাদের উপর অত্যাচারসহ বিভিন্ন উপায়ে  নিরপরাধ মানুষের উপর আক্রমণ করা, কোনো অপরাধী রাষ্ট্র কর্র্তৃক কিংবা দল কর্তৃক কিংবা ব্যক্তি কর্তৃক।

দ্বিতীয় প্রকার: শরীয়ত সম্মত ইরহাব, আল্লাহ তা’আলা যাকে আমাদের উপর বিধিবদ্ধ করেছেন, যার ব্যাপারে আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। আর তা হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শত্রুদের মোকাবেলা করার জন্য শক্তি অর্জন করা এবং যথাসাধ্য প্রস্তুতি নেয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন-

وأعدوا لهم ما استطعتم من قوة ومن رباط الخيل ترهبون به عدو الله و عدوكم وآخرين من دونهم لا يعلمونهم الله يعلمهم

‘তোমরা তাদের মোকাবেলায় সাধ্যানোযায়ী শক্তি ও অশ্ববাহিনী তৈরি কর, যেন এর মাধ্যমে আল্লাহর শত্রু ও তোমদের শত্রুকে ভয় দেখাতে পার এবং তাদের ছাড়া অন্যান্যদেরকে, যাদের সম্পর্কে তোমরা জান না; আল্লাহ তাআলা তাদেরকে চিনেন।’ -[সূরা আনফাল: ৬০]

এ আয়াতে কারিমার ভাষ্য মতে মুসলমানাদের উপর ওয়াজিব হল, অস্ত্র সংগ্রহ করা, শক্তি অর্জন ও সৈনিকদের ট্রেনিংয়ের ব্যাপারে সর্বাত্মক চেষ্টা ব্যয় করা; যাতে শত্রুরা সর্বক্ষণ তাঁদের ভয়ে থাকে এবং হাজারবার হিসাব মিলিয়ে নেয়।

শত্রুর সাথে জিহাদের জন্য প্রস্তুতি নেয়া ফরজ হওয়ার বিষয়টি উলামায়ে উম্মতের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত। চাই সে জিহাদটি প্রতিরক্ষামূল জিহাদ হোক কিংবা আক্রমণাত্মক জিহাদ হোক। তবে এ বিষয়টি অবশ্যই জানা থাকা দরকার যে, শুধু অস্ত্র-শস্ত্র ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে বাহ্যিক কিছু শক্তি অর্জন করা শত্রুর মোকাবেলায় জিহাদ বাস্তবায়ন করার জন্য যথেষ্ট নয়; বরং এর জন্য প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ যথেষ্ট শক্তি অর্জন করা। আর সে শক্তি হচ্ছে, আল্লাহর প্রতি মজবুত ঈমান, তাঁর উপর পরিপূর্ণ ভরসা, বেশি বেশি ইবাদত এবং আল্লাহ তা’আলা নারাজ হোন এমন সর্ব প্রকার গোনাহ ও অপরাধ থেকে বেঁচে থাকা। যে ইতিহাস ঘাঁটাঘাঁটি করে, সে অবশ্যই এ দৃষ্টিভঙ্গির সত্যতা যাচাই করতে সক্ষম হবে।

আল্লাহ তা’আলা বলেন-

كم من فئة قليلة غلبت فئة كثيرة بإذن الله والله مع الصابرين

‘কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল বিরাট দলের মোকাবেলায় বিজয়ী হয়েছে আল্লাহর হুকুমে! আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।’ -[সূরা বাকারা: ২৪৯]

আল্লাহ তা’আলার এরশাদ-

لقد نصركم الله في مواطن كثيرة ويوم حنين إذ أعجبتكم كثرتكم فلم تغني عنكم شيئا وضاقت عليكم الأرض بما رحبت ثم وليتم مدبرين

‘আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করেছেন অনেক ক্ষেত্রে এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদের প্রফুল্ল করেছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি এবং পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল। অতঃপর পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।’ -[সূরা তাওবা: ২৫]

ইয়ারমুক যুদ্ধে সেনাপতি যখন আমিরুল মুমিনীন উমর ইবনে খাত্তাব রা. বরাবর লিখে পাঠালেন, ‘আমরা বালুকণার মত এক জাতির মুখোমুখি হয়েছি। সুতরাং আমরা আরো শক্তি ও সৈন্যের আশাবাদী।’ তখন উমর রা. উত্তরে লিখেছিলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আল্লাহর বান্দা উমর ইবনে খাত্তাবের পক্ষ থেকে সেনাপতি অমুকের ছেলে অমুকের প্রতি। পরসমাচার, জেনে রাখ, তোমরা তোমাদের শক্তি ও আধিক্যতার জোড়ে শত্রুর সাথে কিতাল করতে পার না; তোমরা তো তোমাদের নেক আমল দিয়ে শত্রুর সঙ্গে কিতাল কর। তোমরা যদি তোমাদের নেক আমলকে সুধরে নাও তাহলে বিজয় তোমাদের। আর যদি তোমরা তোমাদের নেক আমলকে বরবাদ করে ফেল তাহলে পরাজয় নিশ্চিত। সুতরাং তোমরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাক, যেভাবে বেঁচে থাক শত্রুবাহিনী থেকে।’

ইতিহাসের অনেক ঘটনা এ দৃষ্টিভঙ্গিকে সত্যায়ন করে। যেমন- ইয়ারমুক যুদ্ধ:

এ যুদ্ধে শত্রুবাহিনী সংখ্যা ও শক্তি উভয় দিক থেকে মুসলমানদের চেয়ে প্রবল ছিল। এক বর্ণনা অনুযায়ী তাদের এক লক্ষ বিশ হাজার রোমান সৈন্য ছিল। তারা ছিল আগুন নিক্ষেপযন্ত্র ও মিনজানিকের মত অত্যাধুনিক মরণাস্ত্রে সজ্জিত। অপরদিকে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল অর্ধ লক্ষ। তাঁদের কাছে তরবারি ও তীর জাতীয় সাধারণ কিছু অস্ত্র ছিল। তা সত্ত্বেও মুসলমানগণ শত্রুবাহিনীর উপর বিজয় লাভ করলেন। এর একমাত্র কারণ, তাঁদের মাঝে অভ্যন্তরীণ শক্তি ছিল। আর তা হচ্ছে, আল্লাহর উপর ঈমান ও তাঁর উপর পরিপূর্ণ ভরসা। এটিই হচ্ছে إرهاب এর প্রকৃত অর্থ।

কিন্তু আল্লাহর শত্রু, তাঁর রাসূল ও দ্বীনের শত্রু, মুসলিম বিদ্বেষী খ্রীষ্টান ও ইয়াহুদীদের কাছে إرهاب এর অর্থ ভিন্ন কিছু। এসব কাফেরদের কাছে إرهاب দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইসলাম ও জিহাদ। আর সন্ত্রাসী হল মুসলমান মুজাহিদগণ।

এজন্য পৃথিবীর সকল কাফের আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারাহ’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে একমত। এর কারণ, তারা إرهاب তথা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এছাড়া তাদের কাছে অন্য কোনো প্রমাণ বিদ্যমান নেই। বরং এছাড়া কোনো লক্ষণও নেই, যে ব্যাপারে আমেরিকায় ইসলামী ইমারাহ নিয়ে গবেষণা চলে। এমনকি উসামা বিন লাদেনও কোনো কারণ নয়। ইয়াহুদী-খ্রীষ্টানরা দৃঢ়ভাবেই জানে যে, নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনের এই হামলার ফলে চরমপন্থি কাফিররা কিছু জনসমর্থন লাভ করছে। কিন্তু তাদের দৃষ্টি আফগানিস্তানে ইসলামী বিপ্লবের দিকে। ইসলামী ইমারাহ’র শরঈ বিধিবিধানের আকর্ষণীয় প্রয়োগ তাদেরকে আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে। তারা ভয় পেয়ে গেছে যে, ইসলামের এ বিস্তৃতি আফগানের পার্শ্ববর্তী দেশসমূহেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই তারা দেরি না করে (আফগানিস্তানে) এই সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। যাতে ব্যবহার করেছে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অনেক মরণাস্ত্র। হত্যা করেছে হাজার হাজার পুরুষ ও নারী-শিশুকে।

যে-ই ইসলাম ও মুসলমানদের সাথে কাফেরদের চরম শত্রুতার কথা জানে, তার কাছে এ বিষয়টি অবাক হওয়ার মত কিছু নয়।

আল্লাহ তা’আলা বলেন-

ولا يزالون يقاتلونكم حتى يردوكم عن دينكم إن استطاعوا

‘তারা তোমাদের সাথে সর্বদা কিতাল করতেই থাকবে যতক্ষণ না তারা তোমাদেরকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে, যদি সম্ভব হয়।’ -[সূরা বাকারা: ২১৭]

বরং অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে, এসব কাফেরের সাথে আরব-মুসলিম অনেক শাসক ও কিছু কিছু আলেমের অবস্থান এবং আফগানিস্তানে মুসলমানদের সাথে যুদ্ধের প্রতি তাদের উৎসাহ প্রদান। অথচ তাদের জানা নেই যে, আমেরিকা ও তালেবান সরকারের মাঝে যুদ্ধের সূত্রটা কী! إرهاب এর অর্থটাই-বা কী, আমেরিকা ও তার বন্ধুরাষ্ট্রগুলো যার উদ্দেশ্য নিচ্ছে?

আমার লেখা পড়ে পাঠকের নিশ্চয় ধারণা হয়েছে যে, আফগানিস্তানে খ্রীষ্টানদের আক্রমণের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে ইসলাম ও জিহাদের ফায়সালা করা।

আসলে প্রধান কারণ এটিই। তবে এ হামলার পেছনে আরো কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে, তা হল-

ক. এ ভূখণ্ডে পরমাণু প্রকল্পের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লালসা। যেমন, পাকিস্তানের পরমাণু শক্তি। মুসলমানদের পরমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী হওয়া তাদের জন্য বিশাল একটি ঝুঁকির ব্যাপার। ইয়াহুদীবাদ ও খ্রীষ্টবাদের জন্য এটি বড় ধরণের হুমকির কারণ। খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, ইয়াহুদীরা ইরাকের পরমাণু প্রকল্পকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। এমনিভাবে তারা বর্তমানে আমেরিকাকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি পরমাণুশক্তির উপর নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

খ. তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য হল, মধ্য এশিয়ায় পেট্রলের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। ইত্যাদি আরো অনেক অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তারা গোটা পৃথিবীর কর্তৃত্ব হাতে নিতে চায়। তা নাহলে পুরো পৃথিবীটাই তো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দিয়ে ভরা। দক্ষিণ আমেরিকার পেরু, আর্জেন্টিনা ও কলাম্বিয়ায় রয়েছে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। উত্তর আমেরিকাতেও রয়েছে অনেক। রয়েছে ইউরোপের স্পেনে, ইটালিতে। রয়েছে রাশিয়াসহ আরো অনেক রাষ্ট্রে। কিন্তু এই রাষ্ট্রগুলোতে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হামলা ও  যুদ্ধের বিষয়টিকে কেন শনাক্ত করা হচ্ছে না? অথচ এরা প্রতিষ্ঠিত সন্ত্রাসী অপরাধী গোষ্ঠী? অপরদিকে রয়েছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ; ফিলিস্তিনে চলে ইয়াহুদীদের, আফগানিস্তানে চলে আমেরিকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এর আগে চলেছিল বসনিয়ায়, চলেছিল হারসাক ও কুসুফাতেও।

আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন সকল মুসলমানকে তাঁর কিতাব ও নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করার তাওফীক দান করেন এবং শরীয়তের পবিত্র শিক্ষার বিপরীত কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখেন।

صلى الله على نبينا محمد وعلى أله وصحبه أجمعين

৫/৯/১৪২২ হি.

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one + eleven =

Back to top button