আলজেরিয়াইতিহাস- ঐতিহ্যউসামা মিডিয়াবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ আবু মুসআব আব্দুল ওয়াদুদ রহিমাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

সাহারার সিংহপুরুষ শাইখ আবু মুস’আব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহ || খালিদ জুবাইর অনুদিত

ইয়েমেন থেকে প্রকাশিত সাড়াজাগানো ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনকে প্রদত্ত শাইখ আবু মুস’আব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহর ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার।

সাহারার সিংহপুরুষ
শাইখ আবু মুস’আব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহ

খালিদ জুবাইর অনুদিত

 

সাহারার সিংহপুরুষ শাইখ আবু মুস’আব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহ || খালিদ জুবাইর অনুদিত

 

پی ڈی ایف
PDF (1.6 MB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [১.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/inspire-interview-aqim/inspire%20interviewAQIM.pdf
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hyb0250d5103d243eba35bc76f0bb00c84
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/00719404-4872-4f3c-ab1a-d4b10200b147/c041268475c475424c3dced7f17d608cd80163510983246a87118e569889df83
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/shahararshingopurus/inspire+interviewAQIM.pdf
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=d3p1x2w1j7
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/aiq3e5y8c6nueqb/inspire+interviewAQIM.pdf/file

ورڈ
WORD (1.3 MB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [১.৩ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/inspire-interview-aqim/inspire%20interviewAQIM.doc
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hyd4b414be2e7a424bac2cb50d49cb8656
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/6706d677-f7f7-4ef0-87a2-8112c7a739f5/789cde76f061720dd52b28f1d5e70037034827e24ddb2224c373173cd3d3e467
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/shahararshingopurus/inspire+interviewAQIM.doc
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=w0z6u4p3k7
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/dwkmeg2ghe17sd2/inspire+interviewAQIM.doc/file

غلاف
book cover [1 MB)
বুক কভার [১ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.org/download/inspire-interview-aqim/inspire%20interviewAQIM.jpg
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy9cb64d8d823a4e66bc42c10a7b13f4c3
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/02cb9e04-19f9-4489-a07d-7f944fe3d7fb/9e4373985953ea41f87f29d2b39f94dc089837dfdd327d9becf82d3c8272c8c2
লিংক-৪ : https://f005.backblazeb2.com/file/shahararshingopurus/inspire+interviewAQIM.jpg
লিংক-৫ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=t8d3z0u6m2
লিংক-৬ : https://www.mediafire.com/file/iq4wtpm4ouyzhi5/inspire+interviewAQIM.jpg/file

 

=================

 

ইয়েমেন থেকে প্রকাশিত সাড়াজাগানো ইন্সপায়ার ম্যাগাজিনকে

প্রদত্ত শাইখ আবু মুসআব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহর

ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার

 

সাহারার সিংহপুরুষ

শাইখ আবু মুস’আব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহ

অনুবাদ

খালিদ জুবাইর

 

আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি যিনি সবচে’ দয়ালু, সবচে’ ক্ষমাপরায়ন। আল্লাহ্‌র শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সঙ্গী-সাথীদের উপর। ইন্সপায়ার সাক্ষাৎকারে অতিথি হিসেবে তানজীম কায়দাতুল জিহাদের ইসলামিক মাগরেব শাখার প্রিয় শাইখ আবু মুস’আব আব্দুল ওয়াদুদ হাফিজাহুল্লাহ’কে আমাদের সাথে পেয়ে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। ইন্সপায়ারের সকল সদস্যদের পক্ষ থেকে সম্মানিত শাইখকে আমরা উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাচ্ছি। আমাদের অনুরোধে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে সাড়া দিয়ে আমাদেরকে সম্মানিত করায় আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।

 

প্রশ্নঃ আপনার ব্যক্তিগত পরিচয় এবং জিহদী জীবনের সংক্ষিপ্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা শুরু করতে চাই।

উত্তরঃ আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি, সালাম ও সালাত বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর, তাঁর পবিত্র পরিবার ও তাঁর নির্বাচিত সাহাবীদের উপর এবং তাঁদের উপর যারা তাকে বিচার দিবস পর্যন্ত অনুসরণ করেন।

প্রথমে প্রশংসা করতে চাই আমাদের প্রিয় ম্যাগাজিন ইন্সপায়ারের দেখাশুনাকারী ভাইদের এবং ইন্সপায়ার টিমের জন্যও উষ্ণ অভ্যর্থনা রইল। আমরা তাঁদেরকে দাওয়াহর ময়দানে মুসলিম এবং মুজাহিদদের মাঝে সচেতনতা তৈরিতে -যা তাঁদের দ্বীন ও দুনিয়ার জন্য কল্যাণকর- এবং মানুষকে জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণে তাঁদের অতুলনীয় প্রচেষ্টর জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই।

ভাইদের দৃঢ় সংকল্প এবং সারা বিশ্বের মুজাহিদদের ব্যাপারে তাঁদের উদ্বেগের জন্য আমরা তাঁদের প্রশংসা করতে চাই। আল্লাহ্‌ আপনাদের কাজে সহায় হোন, আপনাদের প্রচেষ্টাগুলোকে কবুল করে নিন এবং মুজাহিদীন ও জিহাদের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে সর্বোচ্চ পুরুষ্কারে পুরষ্কৃত করুন।

আর আপনাদের সাক্ষাতকার দানকারী হচ্ছেন আল্লাহ্‌র একজন বিনয়ী বান্দা যিনি তার রবের ক্ষমা আশা করেন, আব্দুল মালিক দ্রৌকদেল বিন রাবেন বিন আল-ওয়ানাস; ২০ এপ্রিল ১৯৭০ ইংরেজি/১৩ সফর ১৩৯০ হিজরি সালে রাজধানী আল জাযাইরের পশ্চিমে অবস্থিত আল-বালিদা প্রদেশের মিফতাহ জেলার যায়ান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

আমি আমার পরিবার থেকেই দ্বীনের প্রতি ভালোবাসা এবং শিশুকালেই দ্বীনের প্রতি আনুগত্যের শিক্ষা লাভ করি। আমি ছিলাম গ্রামের মসজিদে নিয়মিত গমনকারী এবং পরবর্তীতে আমার প্রাথমিক ও সেকেন্ডারী স্কুলে পড়ার সময় মিফতাহ’র মসজিদে সালাত পড়তে যেতাম।

আমি গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে যোগ দেই, আমার মাধ্যমিক ও সেকেন্ডারী স্কুলের পড়ালেখা মিফতাহ জেলা শহরে সম্পন্ন করি। ১৯৮৯ সালে আমি গণিতে আমার ব্যাচেলর ডিগ্রী লাভ করি। এরপর আমি আল-বালীদা ইউনিভার্সিটির টেকনোলজী বিভাগে যোগ দেই এবং ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সেখানে আমার পড়াশুনা চালিয়ে যাই।

আমার ভাইদের সাথে এখানে একটি ছোট গল্প শেয়ার করতে চাই এবং এটা ঘটেছিল যখন আমি খুব ছোট ছিলাম। আমাদের গ্রামের মসজিদের মাইক্রোফোনটি খুব সমস্যা করছিল এবং এটা ছিল এমন সময় যখন বাজারে মাইক্রোফোন খুব দুষ্প্রাপ্য জিনিষ ছিল। ছোটবেলা থেকেই আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহে আমার ইলেক্ট্রনিক্স ও ইলেকট্রিকাল যন্ত্রপাতির ব্যাপারে আমার আগ্রহ কাজ করত এবং ইলেকট্রিকাল কাজে আমার হাত পাকা ছিল। তো সেই অতি সাধারণ উপাদানগুলো ব্যাবহার করে আমি একটি নতুন ধরনের (improvised) মাইক্রোফোন তৈরি করি; শুরুতে একটি অ্যামপ্লিফায়ার, একটি ফ্ল্যাস্ক যা দিয়ে মাইক্রোফোনের বডি তৈরি হয় আর কিছু তামার তার। তারপর আমি এটা যোহরের আযানের সময় পরীক্ষা করি এবং কেউ ধরতেই পারেনি যে একটি নতুন ধরনের প্রাথমিক পর্যায়ের মাইক্রোফোন দিয়ে আমি আযান দিয়েছিলাম। বরং মসজিদের সবাই ভেবেছিল যে মসজিদ কমিটি হয়তো নতুন মাইক্রোফোন ক্রয় করেছে। সমস্যা সমাধান হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আল্লাহ্‌কে ধন্যবাদ জানালেন এবং সেদিন এটাই ছিল সকলের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। যাই হোক মসজিদের মুরুব্বীরা যখন বুঝতে পারলেন যে কি ঘটেছে তখন তারা আমাকে বকা দেননি বরং সেদিন থেকে আমি সকলের কাছে প্রিয় ও সম্মানী হয়ে যাই। তাঁরা এমনকি আমাকে তাঁদের মসজিদের ইলেকট্রিক মেইনটেইন্সের কাজে নিয়োগ দিয়ে দেন। শুরুতে এবং শেষে সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌ তা’য়ালার যিনি আমাদের সততা ও সঠিক পথের দিশা দান করেছেন, আমাদেরকে সকল প্রকার খারাপ কাজ ও বিচ্যুতি থেকে শিশুকাল থেকেই রক্ষা করেছেন।

 

স্ত্র সংগ্রামের সূচনা

আমার হাইস্কুলের দিনগুলোতে, আমি সারা বিশ্বের মুসলিমদের খবরগুলো পর্যবেক্ষণ করতে থাকি বিশেষ করে আফগান জিহাদের। আফগান জিহাদ পাথর ছুড়ে মারার মাধ্যমে সূচিত ফিলিস্তিন বিদ্রোহের (ইন্তিফাদা) সাথে মিলে গিয়েছিল এবং যায়োনিস্ট দখলদারদের বিরুদ্ধে এক নতুন ধারার সূচনা হয়েছিল। মুজাহিদদের খবরগুলো শুনে আমার অন্তরে আগুন জ্বলে উঠেছিল। এর সাথে ছিল প্রাপ্তবয়স্কতা ও বৈশ্বিক সংগ্রামের একটা নিগূঢ় চিন্তাধারা এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের গণহত্যা। এর সাথে আরও যুক্ত হয়েছিল ১৯৯১ এর প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ যা একই সময় ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্টের উত্থান, ফ্রান্সের অনুগত জেনারেলদের মাধ্যমে সামরিক উচ্ছেদ ও ফ্রাঙ্কোফোন শ্রেনীর একদল অর্থবদের তাতে সমর্থন। একজন যুবক হিসেবে উম্মাহর এই ধ্বংসযজ্ঞে আমরা খুবই ব্যাথিত হয়েছিলাম। সবচেয়ে কষ্টদায়ক ছিল যা আলজেরিয়ানদের সাথে হয়েছিল। মরুভূমির মাঝে থাকা জেলখানা এবং কারাবাসগুলো বন্দী আলজেরিয়ানদের দ্বারা উপচে পড়ছিল যারা কোন অপরাধই করেনি শুধু এই কথা বলা ছাড়া যে –“আমাদের রব হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ্‌”।

১৯৯২ (১৪১২ হিজরি) এর শুরুতে জিহাদী সংগ্রাম শুরু হয়েছিল এবং সর্বপ্রথম জিহাদী সেল গঠন করা হয়। সাঈদ মাখলুফী রহিমাহুল্লাহ আলজেরিয়ান জিহাদের প্রথম দিকের একজন অন্যতম নেতা ছিলেন এবং হরকাতুদ দাওয়াহ্‌ আল ইসলামিয়্যাহ্‌’র আমীর ছিলেন। তাঁর সাথে যুক্ত করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌ আমার প্রতি অনুগ্রহ করেন। তাঁর কর্মক্ষেত্র ছিল আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সের নিকটবর্তী মিফতাহ এলাকা। শহরে থাকাকালীন সময়ে আমি তাদের সাথে কাজ করেছিলাম। ১৯৯৩ এর শেষ দিকে আমি জিহাদের ময়দানে যুক্ত হই।

আমার একাডেমিক বিশেষত্ব, ইলেক্ট্রিকাল ডিভাইস তৈরিতে আমার পুরোনো শখ, ক্যামিক্যাল ও যন্ত্রাংশের মূলনীতির সাথে আমার পরিচয় কারণে আমাকে বিষ্ফোরক তৈরি করা এবং ময়দানে বিষ্ফোরক নিয়ে কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়। এখানে আসলে কাজের অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। পরবর্তীতে অল্প সময়ের জন্য আমাকে আল-কুদস বিগ্রেডের দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর থেকে আমি নিজেকে বিষ্ফোরক তৈরি, ট্রেনিং দেয়া এবং মিলিটারী কাজে ব্যাস্ত রাখি।

২০০১ সালে আমাকে জামাতুস সালাফিয়্যাহ লিদদাওয়াহ্‌ ওয়াল কিতাল (সালাফিস্ট অর্গানিজেশন ফর দাওয়াহ্‌ এন্ড কিতাল) এর হেডকোয়ার্টারে আমন্ত্রন জানানো হয়। সেখানে আমাকে জোন-২ এর একজন সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৩ এ আবু হামজা হাসসান হাত্তাব জামাতের নেতৃত্ব থেকে ইস্তিফা দিলে শাইখ আবু ইব্রাহীম মুস্তফা নাবীল রহিমাহুল্লাহকে জামাহ্‌র আমীর নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০৪ এ শাইখ আবু ইব্রাহীম মুস্তফা একটি ডেলিগেশনের প্রধান হিসেবে আমাকে পুর্ব আলজেরিয়ায় জিহাদী মিশনে প্রেরণ করেন। ২০০৪ এ আমরা যখন আমাদের মিশন নিয়ে ব্যাস্ত ছিলাম তখন শাইখ আবু ইব্রাহীম মুস্তফার শাহাদাতের খবর আমাদের কাছে পৌছে। আল্লাহ্‌ তাঁর উপর রহম করুন। ঘটনাটি ঘটেছিল তাঁর আমীর হওয়ার মাত্র ১বছরের মধ্যে। শাইখ শাহাদাতের পূর্বে আমাকে তাঁর উত্তরসূরী মনোনীত করে যান এবং আল্লাহ্‌ই একমাত্র সাহায্যকারী।

২০০৫ এ শাহাদাত-সন্ধানী আবু মু’সাব আয যারকাবী রহিমাহুল্লাহর অফিসের মাধ্যমে আল-কায়েদার সাথে যুক্ত হওয়ার ব্যাপারে জামাতের মজলিশে শূরার সাথে আমরা ধারাবাহিকভাবে বেশ কয়েকবার পরামর্শে বসি। আল্লাহ্‌ আমাদের জন্য এটা সহজ করে দেন এবং ২০০৬ সালের শেষের দিকে আল-কায়েদার সাথে সংযুক্তি ঘটে। আল-কায়েদার সাথে যুক্ত হওয়ার পর আমরা শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র সাথে সংগঠনের নাম পরিবর্তনের ব্যাপারে পরামর্শ করি। শাইখ আমাদেরকে আল-কায়দা ইন ইসলামী মাগরিব নাম নেয়ার পরামর্শ দেন। উভয় পক্ষের সম্মতিতে বুধবার ৫ই মুহাররম ১৪২৮ হিজরীতে (২০০৭) তা বাস্তবায়ন করা হয়।

আমরা শাইখকে ইসলামী মাগরিব শাখার জন্য একজন নতুন আমীর নিয়োগ দেয়ারও পরামর্শ দেই। আর এটা করতে আমরা তাঁকে দ্বিধা করতে না করি, বাস্তবে আমরা এই ব্যাপারে জোর করি যে, তিনিই সিদ্ধান্ত নিবেন এবং উক্ত পদের জন্য উপযুক্ত কাউকে নিয়োগ দিবেন যাতে তিনি এমন কাউকে পান যিনি মন দিয়ে শ্রবণকারী, অনুগত এবং ভালোবাসবেন। আমরা অপেক্ষা করছিলাম বরং আমরা তো এমনটাই আশা করছিলাম যে তিনি আমাদের জন্য নেতা ও শিক্ষক হিসেবে শাইখ আবুল লাইস আল লিবী রহিমাহুল্লাহকে আমাদের জন্য নিয়োগ দিবেন।

আজ অবধি আপনাদের ভাই হিসেবে হিংসাবিহীনভাবে পদে আসীন আছি এবং এই দায়িত্বে পরীক্ষিত হচ্ছি। আমরা আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি আমাদের দুর্বলতাগুলোর জন্য,  ক্ষমা প্রার্থনা করি আমাদের ভুলগুলোর জন্য, তিনি আমাদের প্রচেষ্টাগুলোকে কবুল করুন এবং তাঁর রাস্তায় কোন প্রকার ফিৎনা ও বিচ্যুতি ছাড়াই শহীদ হিসেবে কবুল করুন।

 

প্রশ্নঃ ইসলামী মাগরিবের জিহাদের ও মুজাহিদের সাধারণ অবস্থা সম্পর্কে আমাদেরকে কিছু বলুন।

উত্তরঃ কাফের রাষ্ট্রগুলোর মিত্রতা এবং স্থানীয় মুরতাদদের দালাল থাকা সত্ত্বেও ইসলামিক মাগরিবের জিহাদ তৎপরতার সঙ্গে জারি আছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে তুমুল সংঘর্ষ সত্ত্বেও মুজাহিদগণ দুই দশকের অধিক সময় ধরে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। মুজাহিদদের সাথে আল্লাহর কুর’আনের এই আয়াতটি মিলে যায়-

كَزَرْعٍ أَخْرَجَ شَطْأَهُ فَآزَرَهُ فَاسْتَغْلَظَ فَاسْتَوَىٰ عَلَىٰ سُوقِهِ يُعْجِبُ الزُّرَّاعَ لِيَغِيظَ بِهِمُ الْكُفَّارَ ۗ

“এর উদাহরণ হচ্ছে একটি বীজের মত যা মাথা উঁচু করে দাঁড়ায়,  এরপর একে শক্তিশালী করে, এরপর এটা মোটা হয় এবং এটা তার কান্ডের উপর দাঁড়ায় এবং তার মালিককে খুশি করে যার মাধ্যমে সে অবিশ্বাসীদের রাগান্বিত করে”। সুরা ফাতাহ-২৯

হ্যা, আমাদের ও শত্রুদের মধ্যে আমাদের লড়াইটা পর্যায়ক্রমে চলে এবং দিন পরিবর্তিত হয়। কখনো আমরা তাদের উপর জয়ী হই কখনও তারা আমাদের উপর বিজয়ী হয় কিন্তু আমাদের কোন সন্দেহ নেই যে শত্রুরা পরাজিত হবে। মহান আল্লাহ্‌ তাঁর কিতাবে বলেন-

وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ

“নিশ্চয়ই যারা তাদের সামনে ছিল তারা পরিকল্পনা করেছিল এবং আল্লাহও পরিকল্পনা করেন। তিনি জানেন প্রত্যেক ব্যক্তি কি অর্জন করেছে এবং অবিশ্বাসীরা সেদিন জানতে পারবে কার শেষ পরিণতি ভালো”। সুরা রা’দ- ৪২

 

প্রশ্নঃ আমরা ইসলামিক মাগরিবে মুজাহিদদের সংখ্যার একটা বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি, দাওয়াহ্‌ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছেএর কি কার থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

উত্তরঃ সামগ্রিকভাবে এটা সত্য যে শুধুমাত্র আলজেরিয়ান ফ্রন্ট একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে আটকে আছে। আলজেরিয়ান ফ্রন্ট মুজাহিদদের অভাবে ভুগছে এবং কখনো কখনো তো এমনও হয় যে সেখানে বাহির বা ভেতর থেকে সাহায্য ও সহযোগিতা করার জন্য কাউকে পাওয়াই যায় না। ফলে আলজেরিয়াতে এর একটা প্রভাব রয়েছে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিশেষ করে তিউনিশিয়া, লিবিয়া, সাহেল, সাহারা বিষ্ময়াতীত রকমের জিহাদী পূণর্জাগরণ দেখিয়েছে। আমরা মনে করি এটা অনুগ্রহপ্রাপ্ত মুজাহিদদের প্রতি আল্লাহ্‌র বিশেষ অনুগ্রহ ও নিদর্শন। হ্যা, এই জাগরণটা এমন যা পশ্চিমাদের মেরুদন্ডে কম্পন ধরিয়ে দিয়েছে এবং তারা এটা নিয়ে এমন ধাঁধায় পড়ে গিয়েছে যে তারা এই যুদ্ধে সরাসরি মুজাহিদদের সাথে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য হয়েছে।

আজকে সাহেল এবং সাহারাতে ফ্রান্স সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত, যেখানে আমেরিকা তাঁর নিজ পদ্ধতিতে লিবিয়া এবং তিউনিশিয়াতে লড়াইরত। এটা এই বাস্তবতাকে প্রমান করে যে দালাল সরকারগুলো মুজাহিদদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যে প্রক্সি যুদ্ধগুলো চালিয়ে যাচ্ছিল তাতে তারা বিজয় অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে, যার প্রতিশ্রুতি তারা তাদের পশ্চিমা প্রভুদের দিয়েছিল।

আর সামরিক অগ্রগামিতার নামে সন্ত্রাসবাদ নিশ্চিহ্নকরণের যে সব বড় বড় দাবী শোনা যাচ্ছে তা ব্যর্থ অহংকার ছাড়া আর কিছুই নয়। আলজেরিয়ান বিপ্লব এই বাস্তবতার প্রমাণ বহন করে যে, যখন ফ্রান্স আলজেরিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিল তারা তখন তাদের সামরিক দক্ষতার সর্বোচ্চ স্তরে ছিল এবং বিপ্লবীদের থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী ছিল। এতদাসত্বেও ফ্রান্সকে বিদায় নিতে হয়েছিল লাঞ্ছিত ও পরাজিত হয়ে। অর্থাৎ দৃশ্যমান শক্তি কখনই জয় পরাজয় নির্ধারণের জন্য একমাত্র নির্দেশক নয়।

এটা বলার মাধ্যমে আমি যা পরিষ্কার করে বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে বিজয়ে অন্যতম পূর্বশত হিসেবে আমরা সবার আগে লক্ষ্য অর্জনের ধীরতা এবং আদর্শকে গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এর মানে হচ্ছে লক্ষ্য ও আদর্শের ক্ষেত্রে কোন সমঝোতা করা যাবে না। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের উপর অটল রাখেন যতদিন না আমরা তাঁর সাথে মিলিত হই।

প্রশ্নঃ ৯০ এর দশকের শুরুর দিকে ইসলামপন্থীরা আলেজেরিয়াতে ক্ষমতা লাভের কাছাকাছি গিয়ে পৌছেছিল। এটা কি ক্ষমতাসীনদের দ্বারা জনগনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিল না যাতে এই লক্ষ্য অর্জিত না হয়?; যেহেতু চতুর্দিকে মানুষের মধ্যে ইসলামী আদর্শ ছড়িয়ে পড়ছিল। আমরা আরব বসন্তের পর মিশরেও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পাই। তো এই ব্যাপারে মুসলিম জনসাধারনের জন্য আপনার কি কোন বার্তা রয়েছে?

উত্তরঃ ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর বেশ কিছু ভিত্তির উপর ভর করে একটা আন্তর্জাতিক ব্যাবস্থা গড়ে উঠে যা সব ধরনের ধর্ম বা জাতি ভিন্নতা ছাড়াই সব সময় অলঙ্ঘনীয় বলে মনে হয়। যে কেউ এই আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাড়িয়েছে তাকে নির্মমভাবে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যারা এই ক্ষমতার হাল ধরে আছে তাদের খেয়াল খুশির বিরুদ্ধে সামান্যতম বিরোধিতা অথবা তাদের ইচ্ছা-আকাংখার হার মানেনি এমন কোন ব্যক্তি, দল, দেশই অনুমোদিত নয়। সাম্প্রতিক ইতিহাসে এর বহু উদাহরণ রয়েছে যা এটাকে পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করে। সিআইএ নিজেই এটা স্বীকার করেছে যে, এই পর্যন্ত তারা ৩০০ এরও অধিক সংখ্যক সামরিক অভ্যুত্থানে জড়িত ছিল এবং এটা উল্লেখযোগ্য যে এই বিদ্রোহগুলোর সিংহভাগই আফ্রিকান দেশগুলোতে সংঘটিত হয়েছে।

তো যেখানে ইসলামের সাথে আন্তর্জাতিক ব্যাবস্থার এই মুখোমুখি অবস্থান যা ইসলামের কোনরূপ আনুগত্য করে না সেখানে তাদেরই গণতন্ত্রের মাধ্যমে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সামগ্রিক প্রচেষ্টা চালানোর মাধ্যমে আপনি তাদের কাছ কি আশা করতে পারেন?

এমনটাই ঘটেছিল আলজেরিয়ার ক্ষেত্রে এবং এখন মিশরেও। মুসলিমদের এই দুটি ঘটনার প্রতি গভীর দৃষ্টি দেয়া উচিত কারণ দুটি ঘটনাই শিক্ষনীয় এবং শিক্ষাতে পরিপূর্ণ।

لِمَن كَانَ لَهُ قَلْبٌ أَوْ أَلْقَى السَّمْعَ وَهُوَ شَهِيدٌ

“তাঁর জন্য যার বিবেক অথবা কান এবং সাক্ষী রয়েছে”। সুরা কাফ-৩৭

প্রথম বারের অভিজ্ঞতার পর পুনরায় একটি ধোঁকার পিছনের সময় এবং শ্রম ব্যয় না করে মুসলিম উম্মাহ্‌র বাস্তবতা বুঝা উচিত ছিল। এই দুটি পরীক্ষা এবং অন্যান্যগুলো যা এখানে আলোচনায় আসেনি তাতে প্রচুর বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা রয়েছে। উম্মাহর এটা উপলদ্ধি করা উচিত ছিল যে অবিশ্বাসীদের নির্ধারণ করে দেয়া কোন সিস্টেমে ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, উদাহরণস্বরূপ নির্বাচন, র‍্যালী, হরতাল এবং অনূরুপ কিছু। বরং ইসলামিক রাষ্ট্র তো শুধুমাত্র হিজরত, জিহাদ এবং আত্মত্যাগের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

ইমাম মালিক বিন আনাস (রহিমাহুল্লাহ্‌) বলেছেন- “এই উম্মাহ্‌র শেষ অংশ তা দ্বারাই উপকৃত হবে যার দ্বারা এই উম্মাহ্‌র প্রথম অংশ উপকৃত হয়েছে”।

এমনকি বাস্তবতা তো এটাই যে আরব বিপ্লবও হচ্ছে জিহাদ এবং গণতন্ত্রের একটি মঝামাঝি পথ যা প্রমাণ করেছে যে ইসলাম বা আল-কুরআনকে তাঁর পূর্বের গৌরব উজ্জ্বল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে তা যথেষ্ট নয়।

এই সব তিক্ত অভিজ্ঞতার পর এটা উম্মাহ্‌র জন্য অপরিহার্য হয়ে যায় যে, একই সাথে জিহাদ এবং দাওয়াহ্‌ ব্যতীত ভিন্ন কোন পথ নেই। উম্মাহ্‌কে অবশ্যই আগ্রাসী নিপীড়নমূলক আন্তর্জাতিক ব্যাবস্থাকে প্রতিহত করতে হবে, শক্তির বিচারে তাঁর যা কিছু আছে তাঁর সবটুকু নিয়ে। উম্মাহ্‌কে অবশ্যই এই ব্যাবস্থার সাথে মানিয়ে চলতে এবং শত্রুদের তৈরি করা কর্মপন্থা যা নিশ্চিত করে যে এই উম্মাহ একই কক্ষপথে বারবার বিচরণ করতে থাকবে তা পরিহার করতে হবে। অনুরূপভাবে তাকে গণতন্ত্রের এই খেলা থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ আমাদের জন্য দ্বীন হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; কোন ঠাট্টা-তামাশার বিষয় বস্তু নয়। আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের সতর্ক করেছেন মুমিন কখনো এক গর্তে দুইবার পা দেয় না

 

প্রশ্নঃ আল-কায়েদার প্রতি ইসলামী মাগরেবের মুসলিমরা বিশেষ করে সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে আলজেরিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি কিরূপ যেখানে ৯০ এর দশকে কিছু গ্রুপ মুসলিমদের মুরতাদ ঘোষনা করেছিল এবং তাদের রক্ত হালাল করে নিয়েছিল, সেই চরমপন্থী গ্রুপগুলোর প্রতি জনগণের প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে অবস্থার উন্নয়নে আল-কায়েদা জনগনের মধ্যে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

উত্তরঃ আলজেরিয়ার মুসলিমরা জানেন যে প্রাথমিকভাবে দুটি দল জিহাদের নামে গণহত্যা করেছিল- আলজেরিয়ান ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস এবং জিআইএ (GIA- Armed Islamic Group) যখন এটি বিচ্যুত হয়ে পড়েছিল। আর এ কারণেই “সালাফিস্ট গ্রুপ ফর দাওয়া এন্ড কমব্যাট”  যা পরবর্তীতে “আল কায়েদা ইন ইসলামী মাগরিব” এ পরিণত হয়েছে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে এই ধরনের নৃশংস কাজ থকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিল।

তাই সরকারের স্পন্সর করা মিডিয়াগুলোর ক্রমাগত প্রচেষ্টা যার একমাত্র কাজই ছিল মুজাহিদদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং লোকদেরকে তাদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই সংগঠনেরর ভাবমূর্তিতে কোন কলঙ্কের ছাপ পড়েনি। বাস্তবে তো এই দলটি গঠিতই হয়েছিল বিচ্যুতি এবং সকল ধরনের বিকৃতি মোকাবেলা করা জন্য এবং আল্লাহর পথে জিহাদের কাফেলাকে আমাদের পূণ্যবান পূর্বসূরীদের কর্মপন্থা অনুযায়ী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) অব্যাহত রাখার জন্য।

এই বিশেষ পর্যায়টি যার কথা আপনি বললেন তা এর নিজস্ব দিক থেকেই খুব অন্ধকারাছন্ন এবং কষ্টদায়ক ছিল এবং নিরপরাধ লোকদের উপর স্বৈরাচারী সরকার এবং জিআইএ’র বিচ্যুত চরমপন্থীদের বাকি অংশের দ্বারা সংগঠিত অপরাধের কারণে এর প্রতিক্রিয়া নেতিবাচক ছিল ।

যাইহোক এটা ছিল এমন অভিজ্ঞতা যা থেকে মুজাহহিদরা উপকৃত হয়েছিল যেহেতু এটা তাদেরকে দূরদৃষ্টি দান করেছে যার দ্বারা তারা অত্যান্ত কঠিন এবং জটিল পরিস্থিতি কোনরূপ গুরুতর বিপত্তি ছাড়াই সফলভাবে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছেন। এটা কোন গোপন বিষয় নয় যে জিহাদের ভূমিগুলো সাধারণত যে অসুখ দ্বারা আক্রান্ত হয় তা হচ্ছে চরমপন্থা যা অনৈতিক তাকফীরে পর্যবসিত হয় অথবা সেই সব বিষয়ে ইরজা বা অযৌক্তিক নমনীয়তা যা দ্বীন এবং জিহাদের উদ্দেশ্য ত্যাগের কারণ হয় অথবা পারষ্পরিক দন্দ্ব যা আত্ম-কলহে রূপ নেয়। আল্লাহ্‌ আমাদের ইসলামিক মাগরিবকে এই সকল বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন। সর্বপ্রথম এর কৃতিত্ব হচ্ছে আল্লাহ্‌র এবং তারপর সেই সকল মুজাহিদীন যারা দ্বীনের পথে অটল ছিলেন এবং ব্যাপক পরিমান সতর্কতা ও পরিপক্কতা অর্জন করেছিলেন। আর সকল প্রশংসাই আল্লাহ্‌র।

প্রশ্নঃ ৯০ এর প্রথম দিকে আলজেরিয়ায় এবং আজকে শাম (সিরিয়া) ও ইরাকে জিহাদী আন্দোলনের গতিপথে মুসলিমদের মুরতাদ ঘোষণার পদ্ধতিগত বিচ্যুতি এবং তাদের রক্তকে হালাল করে নেয়ার একটি বিরূপ প্রভাব রয়েছে। উভয় ঘটনায় এই পন্থার অনুসারীদের ব্যাপক পরিসরে বিচ্যুতি ঘটেছিল বিশেষ করে যারা মুজাহিদ গ্রুপগুলোর নেতৃস্থানীয় পদ দখল করেছিল। আল কায়েদা ইন মাগরিব তাঁর সদস্যদের এবং নেতৃত্বকে অনুরূপ বিপর্যয় থেকে রক্ষা করার জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে?

 

উত্তরঃ এখানকার জিহাদকে যে বিচ্যুতিটি আক্রান্ত করেছিল এবং যার বিপদজ্জনক ফলাফল ছিল এই যে তা আলজেরিয়ার শাসকবর্গের পতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রথম কারণ ছিল। সেই বেপরোয়া ক্ষুদ্র দলটি জিআইএ’র নেতৃত্ব দখল করে নেয়ার পর দেশে ভ্রষ্টাচার ছড়াতে সক্ষম হয়েছিল। এটা সাধারণ আলেজেরিয়ানদের উপর ভয়াবহ গণহত্যা এবং নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে মুজাহিদদের ব্যাপকভাবে হত্যা করেছিল। এভাবে খুব অল্প সময়ে জিহাদের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে বিকৃত করা হয়েছিল এবং সমগ্র ব্যাপারটাই সন্দেহের আবর্তে ঘোরপাক খেতে শুরু করে। দুখঃজনকভাবে আজও আমরা এর ফলস্বরূপ ভোগান্তির স্বীকার হই।

তাই আমরা সকল জিহাদী দলকে আলজেরিয়ার অভিজ্ঞতা গভীরভাবে অধ্যয়নের পরামর্শ দেই এবং এটা এমন কিছু যার ব্যাপারে আগেও গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। আমরা একথা বলি কারণ আমরা আজকে ইরাক এবং শামেও এমন কিছু দল দেখতে পাচ্ছি যারা পদে পদে জিআইএ’র পদাংক অনুসরণ করছে। তারা যদি তাদের পথকে সঠিক না করে, তাদের পন্থাকে সংশোধন না করে এবং তাদের মধ্যে থাকা চরমপন্থীদের দমন না করে সন্দেহাতীতভাবে এর ফলাফল দাঁড়াবে পরাজয় এবং সংখ্যায় হ্রাস।

سُنَّةَ اللَّهِ فِي الَّذِينَ خَلَوْا مِن قَبْلُ ۖ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلًا

“এমনই ছিল আল্লাহ্‌র আচরণ যারা পূর্বে গত হয়েছে তাদের প্রতি এবং তুমি কখনও আল্লাহ্‌ পন্থায় পরিবর্তন দেখতে পাবে না”। সুরা আহযাব-৮২

আপনি খেয়াল করে দেখবেন যে বিভিন্ন জিহাদী ময়দানগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র আলজেরিয়াতেই দাওলার ফিতনা সবচেয়ে কম। খুব কম লোকই তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছে; কিছু ছোট ছোট দল যাদের অধিকাংশ লোকই নতুন, যাদের খুবই কম অভিজ্ঞতা রয়েছে, কিন্তু তাদের আবেগ ও উত্তেজনাতে কোন কমতি নেই। সামগ্রিকভাবে মুজাহিদদের বিশেষ করে সংগঠনের সদস্য ও মুজাহিদদের কথা বলতে গেলে তারা সব সময়ই অটল থাকেন কারণ তারা ফিতনার ব্যাপারে বেশী জানেন। আর কেন এমনটা হবে না যেহেতু তারা এদের পূর্ববর্তীদের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।

প্রশ্নঃ ৮ বছর ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট ওবামার পর ট্রাম্প আমেরিকান প্রেসিডেন্টের অফিস লাভ করেছে। মুসলিম বিশ্ব এবং সাধারণ মুসলিমদের জন্য এর কোন আলাদা গুরুত্ব আছে কি?

উত্তরঃ আমাদের মনে রাখতে হবে যে ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানরা বিগত দেড়শ বছরও অধিক সময় ধরে পর্যায়ক্রমে ক্ষমতায় এসেছে। এতদসত্ত্বেও অ্যামেরিকান ফরেন পলিসিতে তেমন কোন বড় পরিবর্তন আসেনি। এই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য শুধু অতি-পরিচিত কিছু অভ্যন্তরীন বিষয় নিয়েই। (যেমনঃ ট্যাক্স, সামাজিক সমস্যা, অর্থনৈতিক পলিসি ইত্যাদি।)

যখন ইসলাম এবং মুসলিমদের ব্যাপার আসে তখন আমেরিকান পলিটিশিয়ানদের মধে বাজপাখি ও নিরীহ কবুতর বলে কিছু নেই। ইসলামের বিরুদ্ধে শত্রুতার ব্যাপারে তারা সবাই সমান। পার্থক্য শুধু এটাই যে কেউ তাঁর শত্রুতা খোলাখুলিভাবে প্রকাশ করে অন্যদিকে কেউ লুকিয়ে এবং প্রতারণার মাধ্যমে করে। তো ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান উভয় দলই হচ্ছে সেই সাপ যা প্রাণঘাতী বিষ বহন করে চলেছে। আগের জন ভদ্র-কুটিল মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে ছিল আর পরের জন তার আসল রঙ দেখিয়েছে।

অনেক মুসলিম চেয়েছিল ট্রাম্প যেন নির্বাচনে হেরে যায় এই আশায় যে হিলারী ক্লিনটন হয়তো তাদের প্রতি কিছুটা দয়ালু ও কম শত্রুভাবাপন্ন হবে।

এটা শুধুই একটা ভুল আশা ছিল। তারা কি ভুলে গেছে ডেমোক্রেট বিল ক্লিন্টন মুসলিমদের প্রতি কিরূপ আচরণ করেছিল?  তারা কি লাখ লাখ ইরাকী শিশুর মৃত্যকে ভুলে গেছে যার কারণ ছিল ডেমোক্র্যাটদের অবরোধ? তারা কি সে সকল হাজার হাজার ভোক্তভূগীকে ভুলে গেছে যারা ওবামার শাসনকালে আমেরিকার স্মার্ট বোমা ও ড্রোন হামলার স্বীকার হয়েছে?  কুফর হচ্ছে একটি জাতি। বরং বাস্তবে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের খোলামেলা বক্তৃতা ও শত্রুভাবাপন্ন দৃষ্টিভঙ্গি মুসলিমদের জন্য হয়তো কোনভাবে উপকারী হতে পারে যা আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন। তার বেপরোয়া অকপটতা ইসলামী উম্মাহ্‌র জন্য একটি শক্তিশালী রিমাইন্ডার হতে পারে যে, এই সকল কাফেরদের বাস্তবতা হচ্ছে এটাই যা আল্লাহ্‌ তাঁর কুরআনে আমাদের এই শব্দে জানিয়েছেন-

وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ

“তারা ততক্ষন পর্যন্ত তোমাদের প্রতি শত্রুতা পোষন করবে যতক্ষন না তোমরা তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরে যাও, যদি তারা তা করতে পারে”। (সুরা বাকারা-২১৭)

এটা উম্মাহ্‌র সামনে দালাল শাসকদের প্রতারণাকারী বাস্তবতার মুখোশ খুলে দিবে। বরং এটি হচ্ছে ইউরোপ আমেরিকায় বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ আরব এবং মুসলিমদের জেগে উঠার জন্য একটি ডাক। এটা তাঁদেরকে তাঁদের ধর্মের কথা, তাঁদের পরিচয় মনে করিয়ে দিয়েছে, যাদের বহু লোক কাফেরদের পরিবেশে তাদের সদৃশ হয়েছে এবং নিজেদের শিকড়কে ভুলে গেছে। মোটের উপর, এটা হচ্ছে সেই সকল আন্ত-ধর্ম ও সভ্যতার সেতুবন্ধন তৈরিতে বিশ্বাসকারী প্রবক্তাদের চেহারায় একটি ব্যাথাদায়ক চড়।

প্রশ্নঃ জরিপ এবং সাধারণ জনগন হিলারীর জয় হবে বলে ধারনা করেছিল। এমনটা আশা করা হয়েছিল বেশ কিছু কারণে, যার মধ্যে একটা হচ্ছে ইসলামের বিপক্ষে ট্রাম্পের বর্ণবাদী বক্তব্য, বিশেষ করে নির্বাচনকালীন প্রচারনা চলাকালে। আর তারা এমনটা মনে করেছিল কার আপাতদৃষ্টিতে এটা আমেরিকার মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক। তো আমরা আমেরিকান নির্বাচনের ফলাফল থেকে কি বুঝতে পারি?

উত্তরঃ প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ট্রাম্পের জয় বুঝার জন্য এর হলিস্টিক রিডিং জানা প্রয়োজন। পশ্চিমা দেশগুলোতে (বিশেষ করে আমেরিকা এবং ইউরোপ) সাধারণ রাজনৈতিক চিত্র হচ্ছে জনসাধারণের মাঝে একটি সর্বব্যাপী জাতীয়তাবাদী চরমপন্থার আবির্ভাব এবং এই চরমপন্থা ফলাফল হচ্ছে অরাজকতা।

ডোনাড ট্রাম্পের উত্তেজনাময় বর্ণবাদী প্রকৃতি হচ্ছে বাস্তবতার সঠিক চিত্রায়ন। তার নির্বাচনকালীন প্রচারণার ভিত্তি হচ্ছে বর্ণবাদ প্রভাবিত সাদা আমেরিকান ভোটারদের আকৃষ্ট করা। এটা করতে গিয়ে ট্রাম্পের প্রচারণা আমেরিকান জনগনের রাজনৈতিক অজ্ঞতার পরিপূর্ণ সুযোগ নিয়েছে, যেখানে একটি মাত্র আবেগপূর্ণ বক্তৃতা মাঝে মধ্যে বহু লোকের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট হয়ে থাকে। একারণেই আমরা দেখেছি যে বেশ কিছু বক্তৃতায় তার স্পষ্টবাদী কথাবার্তা বেহায়াপনার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সে বুঝতে পেরেছিল যে সাধারণ আমেরিকানরা ডেমোক্রেট রাজনীতির মধ্যে একটা মধ্যপন্থা ভাব দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই সে জানত কিভাবে তাদের অনুভূতি ও আবেগ নিয়ে খেলতে হবে। সে সেই সমস্যাটাকে সকলের সামনে উঠিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে যা ছিল তাদের কষ্টের কারণ, যার মধ্যে সর্বাগ্রে রয়েছে দেশের মাটিতে ও বিদেশে আমেরিকান জনসাধারণের নিরাপত্তা সমস্যা। ট্রাম্প দুইবার সফল হয়েছে- প্রথমবার যখন সে জনসাধারণের মাঝে ইসলামভীতি সঞ্চারিত করতে সক্ষম হয়েছে, আর দ্বিতীয়বার যখন সে তাদেরকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, এই বিপদে সে তাদের একমাত্র আশা।

আমরা যদি ভালোভাবে লক্ষ্য করি, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটা বিশাল সংখ্যক পশ্চিমা জনসাধারণের মাঝে একটি শক্তিশালী বর্ণবাদী ও জাতীয়তাবাদী প্রবণতায় প্রত্যাবর্তনের ট্রেন্ড স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এটা দ্রুত গজিয়ে উঠা ডানপন্থী দাবীদার দলগুলোর মধ্যে দৃশ্যমান। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, এই বর্ণবাদী প্রবণতা বেশ কয়কটি পশ্চিমা সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কার্যনীতি প্রণয়নের একটি দুঃসাহসিক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। বাস্তবে এমনকি বাম-ঘরনার সরকারগুলোও অনুরূপ বৈষম্যমূলক পলিসি গ্রহণ করছে।

আমেরিকার ব্যাপারে বলতে গেলে এটা হচ্ছে মূল্যবোধ থেকে বহু দূরের দেশ এবং সবার শেষে যা সর্বসম্মুক্ষে প্রকাশিত হবে তা হচ্ছে মূল্যবোধ। এর কারণ হচ্ছে ঐতিহাসিকভাবেই আমেরিকা লুটতরাজ এবং হত্যার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করেছে এবং এর ইতিহাস অপরাধে কলংকিত যার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে মুসলিম-অমুসলিম সবাই। আর এই বিশেষত্ব শুধুমাত্র দেশ হিসেবে আমেরিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বরং প্রত্যেক আমেরিকানের মধ্যেই এমনটা দেখা যায়। এ কারণেই আমরা দেখি যে, অপরাধের মাত্রা অন্যান্য দেশের তুলনায় আমেরিকাতে যথেষ্ট বেশী এবং এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু যে এই অপরাধগুলোর বেশিরভাগের ধরণই হচ্ছে বর্ণবাদী। আর এটা এমন বিষয় যা ওবামা হোয়াইট হাউস ত্যাগকালে নিজেই খোলাখুলিভাবে তা স্বীকার করে গেছে।

ট্রাম্পের অবশ্যম্ভাবী বিজয়ের ফলাফল এবং পশ্চিমা দেশগুলোতে তাঁর মত মানুষের হাতে ক্ষমতা আসার অর্থ হচ্ছে যে, প্রতিদিন পশ্চিমা সভ্যতার সাথে সহাবস্থানের সুযোগ কমে আসছে। আর এটা শুধু মুসলিমদেরই প্রভাবিত করবে না বরং সাদা ব্যাতীত সকল জাতির ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটবে (যেমনটা তারা নিজেদের সম্পর্কে মনে করে)। আল্লাহ্‌র ইচ্ছায় এই প্রবণতাটি মুসলিমদের পক্ষে যাবে যেহেতু এটা মুসলিম উম্মাহ্‌র চেতনাকে জাগ্রত করবে এবং উম্মাহ্‌কে পশ্চিমা ক্রুসেডারদের অসভ্যতার বাস্তবতা সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করবে। ফলশ্রুতিতে এই উম্মাহ জেগে উঠবে এবং শত্রুকে পরাজিত করার জন্য ফিরে আসবে; আর বীরত্বপূর্ণ ও আত্ম-ত্যাগের নিদর্শনও উম্মাহ্‌র মাঝে ফিরে আসবে। যার ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় এটা তাকে তাঁর পূর্বেকার নেতৃত্বদানকারী ও কর্তৃত্বময় অবস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। আগামী দিনগুলোতে মোকাবেলা অবশ্যম্ভাবী; হয় উম্মাহ্‌ নিজ ইচ্ছায় এই যুদ্ধে নেতৃত্ব দিবে অথবা তাকে বাধ্য করা হবে আর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই আল্লাহ্‌র হাতে।

এখানে, যারা ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট মনোনীত করেছে তাদেরকে সেই কথাটি মনে করিয়ে দেয়া উচিত হবে যা তার প্রদর্শন করা সকল ঘৃনা ও দ্বিমুখিতা সত্ত্বেও এবং তার ইসলাম ও মুসলিমদেরকে মোকাবেলার হুমকি দেখানো সত্ত্বেও শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী তাঁর বার্তায় আমেরিকানদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন-

“ক্রুসেডারদের মিত্রশক্তি, আমরা তোমাদেরকে বার বার সতর্ক করেছি কিন্তু মনে হচ্ছে যে তোমরা চাও যে আমরা তোমাদেরকে সবচেয়ে ভয়াবহ মৃত্যু প্রত্যক্ষ করাই। তাই স্বাদ গ্রহণ কর যার স্বাদ তোমরা আমাদের দিয়েছ এবং এই আগ্রাসনের মূল্য পরিশোধ কর। সবর কর আর অপেক্ষা কর কারণ যুদ্ধ তো সবে মাত্র তার প্রথম ধাপে প্রবেশ করেছে”।

প্রশ্নঃ ট্রাম্পের এক উপদেষ্টা সাক্ষাৎকারে বলেছে আমাদের একটা গুরুতর সমস্যা আছে যা কেউ স্বীকার করতে চাইছে না, কারণ এমন করাটা রাজনৈতিকভাবে অসুবিধাজনক। সমস্যাটি হচ্ছে ইসলাম। আমি মুসলিম বিশ্বের কথা বলছিনা বরং ইসলামের কথা বলছি। ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য কর্তাব্যক্তিরাও এমন বক্তব্যই প্রদান করেছে। এই সকল বক্তব্য এবং ট্রাম্পের বক্তব্য- আমেরিকা তাঁর পলিসিতে একটি নতুন নীতি গ্রহণ করেছে, উদাহরণস্বরূপ ইসলামের উপর সরসরি আঘাত থেকে আমাদের কি এটাই ধারণা করে নেওয়া উচিত হবে এই ধরণের বক্তব্যের তাৎপর্য কি হতে পারে?

উত্তরঃ এই উপদেষ্টার বক্তব্য পশ্চিমা বিশ্বাসের সকল রাজনীতিবিদদের সাথেই মিলে যায় কিন্তু তারা এটাকে কূটনৈতিক বক্তব্যের ছদ্মবেশে লুকিয়ে রাখে। যখন তারা তাদের এই মুখোশ খুলে ফেলে তখন আমরা পশ্চিমাদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরাসরি আক্রমন দেখতে পাই। আমরা সবাই অপরাধী জুনিয়র বুশকে খোলাখুলিভাবে ঘোষণা করতে শুনেছি “এটা হচ্ছে ক্রুসেড”। পশ্চিমাদের বেশ কয়েকজন নেতা যেমন রোমানো ব্রডি ও রাসমুসেন এবং পোপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সাংবাদিকসহ অন্যদের ইসলামের উপর মৌখিক আক্রমণ একই সূত্রে গাথা। এটা হচ্ছে বক্তব্য এবং শত্রুতার উন্মুক্ত ঘোষণা আর আমরা বিশ্বাস করি যা তাদের অন্তরে আছে তা আরও অধিক।

আর তাদের কর্মের ব্যাপারটি আরও পরিষ্কার। তাদের স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র চরিত্র এবং আমাদের পবিত্র বিশ্বাসের উপর পদ্ধতিগত আক্রমনে উৎসাহ প্রদান এর পরিষ্কার প্রমাণ বহন করে।

তাদের অন্তরে ঘৃনা গোপন থাকা সত্ত্বেও আমেরিকান রাজনীতিবিদদের ইতিহাস থেকে কিছু শিক্ষা মনে করিয়ে দেয়া উচিত বলে মনে করছি, যাতে না তাদের স্মৃতি আবার তাদের ধোঁকা দেয়। ট্রাম্প আর তার দল ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতায় যা কিছুই করুক না কেন এবং যত বর্ণবাদীই তারা হোক না কেন তাদের পুর্ববর্তীরা (এক দশক আগে) বুশ জুনিয়রের চেয়েও বেশী  শত্রুতা ও বর্ণবাদীরূপে এসেছিল। তো তার পরণতি কি ছিল?

তার নিজস্ব লোকেরা এবং বিশ্বের বেশির ভাগ রাজনীবিদরা তাকে কি আমেরিকা ও আমেরিকানদের জন্য একটি অভিশাপ হিসেবে দেখেনি? এমন কি তা এই পর্যন্ত পৌছেছিল যে, সে হচ্ছে আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে প্রেসিডেন্ট? তাই ট্রাম্প যদি ইসলামের প্রতি তাঁর শত্রুতামূলক পলিসিতে অটল থাকে এবং মুসলমানদের আক্রমন করার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে যায় তাঁর ভাগ্যও বুশ জুনিয়রের মতই হবে অথবা তাঁর চেয়েও খারাপ।

وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ

“আর যারা অন্যায় করে তারা জানতে পারবে কেমন উল্টানো তাদেরকে উল্টানো হবে”। (সুরা শুয়ারা-২২৭)

 

প্রশ্নঃ আমেরিকা বিদেশের মাটিতে তার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে আছে, এমন একটা যুদ্ধ যা মাত্র কয়েকশত মুজাহিদ যুবকের মাধ্যমে সূচিত হয়েছিল। বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রের পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ সমর্থন সত্ত্বেও আমেরিকা তার উল্লেখিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে উদাহরণস্বরূপ জিহাদ এবং মুজাহিদদের পরাজিত করা। আপনার দৃষ্টিতে এই ব্যর্থতার কারণ কি? আর কি হবে যদি এই যুদ্ধ আরও দীর্ঘ মেয়াদী হয়?

উত্তরঃ এটা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ এবং দয়ার মধ্যে একটি যে তিনি দ্বীন প্রতিষ্ঠার সবচে’ সংক্ষিপ্ত পথ দাওয়াহ্‌ এবং জিহাদকে মুসলিমদের জন্য নির্বাচন করাকে সহজ করে দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি তাঁদের পছন্দকে নিখুঁত করে দিয়েছেন সাপের মাথার (আমেরিকা) প্রতি পুর্ণ মনোনিবেশ করা এবং একে আঘাত করার মাধ্যমে। আর যে যুদ্ধ আমেরিকা তার শয়তান অনুচর এবং দালালদের মাধ্যমে ঘোষনা করেছে, তার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে এবং মুজাহিদীন বিভিন্ন ঘটনায় তাঁদের নীতি পরিষ্কার করেছেন।

এই নীতিমালা সবচেয়ে পরিষ্কারভাবে বিবৃত হয়েছে শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ্‌র এই বক্তব্যে- “সবাই শান্তি চায়। যদি আমরা শান্তিতে থাকি তবে তোমরাও শান্তিতে থাকবে। আর যদি আমরা আক্রান্ত হই এবং নিহত হই তবে তোমরাও নিশ্চিতভাবে আক্রান্ত ও নিহত হবে। এটাই হচ্ছে সঠিক সমীকরণ। তাই বুঝতে চেষ্টা কর যদি তোমাদের বুঝার ক্ষমতা থাকে”।

মুজাহিদীন শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ্‌র কাছে দেয়া প্রতিজ্ঞার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, “আমেরিকা কখনোই শান্তির স্বপ্ন দেখতে পাবে না যতদিন পর্যন্ত ফিলিস্তিনের মুসলিমরা শান্তিতে থাকতে পারে এবং যতদিন না বিধর্মী সেনাবাহিনী মুহাম্মাদ (ﷺ) এর ভূমি ত্যাগ না করে”। আর এই ধরনের স্থির সংকল্প না কোন শত্রু পরাজিত করতে পারবে, না ভাঙ্গতে পারবে।

একথা অনুলেক্ষ্য নয় যে, মুসলিম উম্মাহ হচ্ছে খুবই উর্বর এবং উদার উম্মাহ। আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে এই উম্মাহ্‌র কোন প্রজন্ম-ই সৎ গুণ ব্যতীত ছিল না, যেহেতু এই উম্মাহ অনুপ্রেরণা পায় এক সুপ্রসিদ্ধ অতীতের যা অনুকরণীয় এবং নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগে পরিপূর্ণ।

وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ

“আর আল্লাহ্‌ হচ্ছেন বিশ্বাসীদের বন্ধু”। সুরা আলে ইমরান-৬৮

এই বিষয়টা আমেরিকার একেবারে বিপরীত, আমেরিকানরা হচ্ছে এমন জাতি যার কোন ইতিহাস নেই, যার ইসলামের ব্যাপারে ভাসা-ভাসা জ্ঞান রয়েছে এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের বিপরীতে মুসলিমদের সাথে তার পরিচয় অতি সাম্প্রতিক।

তাই আমরা যদি আমেরিকার ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ সাম্রাজ্যবাদীতার বিষয়টা বিবেচনা করি তবে এর সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তি সেই অবস্থার মত, যখন ফেরাউন বলেছিল “আমাদের চেয়ে শক্তিশালী আর কে আছে?” আর এ থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, আমেরিকা মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে।

যাই হোক এখন দেখা যাচ্ছে যে, আমেরিকা এতক্ষনে মুজাহিদদের লড়াই ক্ষমতা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করেছে এবং তাঁদের শক্তি, ধৈর্য্য এবং সহনশীলতা পরখ করেছে। এর ফলে তাদের পূর্বের বহু আত্ম-অহংকার ম্লান হয়ে গেছে এবং তা বাস্তবতা দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছে। আমেরিকা মুজাহিদদের হাতে তার অন্ধকার এবং কষ্টদায়ক দিনগুলো দেখতে পেয়েছে, যারা তাকে শাস্তি দিয়েছে আফগানিস্তান এবং ইরাকে তার মূর্খতা জন্য। আমরা দুয়া করি আমেরিকা যেন স্বাদ পায়

عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَخْزَىٰ ۖ وَهُمْ لَا يُنصَرُونَ

“এই দুনিয়ায় একটি অপমানকর শাস্তির… আর নিশ্চয়ই পরকালের শাস্তি হচ্ছে আরও লজ্জাজনক এবং (সেদিন) তাদের কোন সাহায্য করা হবে না”। সুরা ফুসসিলাত-১৬

তাই এই প্রেসিডেন্ট কি সাধারণ বোধবুদ্ধির অনুসরণ করবে এবং মুসলিমদের তাঁদের ভূমিতে স্বাধীন ও সম্মানের সাথে বসবাস করতে দিবে নাকি সেই ফাঁদেই পা দিবে যাতে পা দিয়েছিল জর্জ বুশ সিনিয়র এবং পরবর্তীতে তার ছেলে।

প্রশ্নঃ আল-কায়েদা তার বার্তায় পশ্চিমা শত্রুদের কেন তার কেন্দ্রবিন্দুতে রাখে। কেউ কেউ বলে যে পশ্চিমাদের টার্গেট করে এখানে সেখানে করা ছন্ন-ছাড়া কিছু অপারেশনের কোন প্রভাব নেই বরং স্থানীয় অপরাধী শাসকদের সবার আগে ক্ষমতা থেকে অপসারন বেশি কার্যকর হবে। তাদের দৃষ্টিতে এমনটা একটা জনবিপ্লবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে হবে (আরব বিশ্বে), আর এর ফলে উক্ত অঞ্চলে আমরা একটা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ পাব। এই ব্যাপারে আপনার মতামত কি?

উত্তরঃ জিহাদের নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিভংগিতে, এই ব্যাপারে তাদের মত হচ্ছে একটি ইজতিহাদ, যা তাঁরা অর্জন করেছেন তাদের বরকতময় জিহাদী অভিজ্ঞতার গভীর এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ পর্যালোচনার মাধ্যমে। তাঁদের উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি কৌশল যা উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে আল্লাহ্‌র শরীয়াহ্‌র ছায়ায় উম্মাহর সম্মান ও মর্যাদা ফিরিয়ে আনবে, তার অভ্যন্তরীন বিষয়াদীতে সকল ধরনের বাইরের কর্তৃত্ব ও হস্তক্ষেপ ছাড়া। আর এটা হবে একই সময়ে উম্মাহ্‌র ভূমি ও সম্পদকে সকল ধরনের দখলদারিত্ব ও লুটতরাজ থেকে মুক্ত করার মাধ্যমে। এটা জিহাদের নেতৃবৃন্দের উপলদ্ধি যে, উম্মাহ্‌ সেই বিদেশী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ যার শত্রুতা এবং আগ্রাসন সুস্পষ্ট। আর সকলের সাহায্য ঐক্যবদ্ধকরণে এটাই হচ্ছে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গি।

আর বাস্তবতা ও কৌশলগত দিক থেকে যারা পশ্চিমা শত্রুদের উপর নজর দিচ্ছেন, বিশেষত আমেরিকা; তারা বিশ্বাস করেন যে, একটি সাপ যার মাথা হচ্ছে আমেরিকা এবং লেজের বাকি অংশ হচ্ছে মুরতাদ পুতুল সরকারসমূহ। তাই যে কেউ সাপকে হত্যা করতে চায় তাকে অবশ্যই মাথায় আঘাত করতে হবে, লেজকে নয়। যেহেতু তাঁদের দৃষ্টিতে আমেরিকার পতন স্বয়ংক্রিয়ভবে তার কক্ষপথে থাকা পুতুল শাসকগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়বে। আর এটা নিজেদের ক্ষতি হ্রাস করা এবং সময় ও প্রচেষ্টার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

আমাদের আমেরিকার সাথে বর্তমান অবস্থা হচ্ছে মুসলিমদের সাথে কুরাইশদের অবস্থার অনুরূপ, ইসলামপুর্ব গোত্রীয় সমাজে কুরাইশরা ছিল সকলের নেতৃত্বে। যখন কুরাশদের পতন হল, সকল গোত্রের মধ্যে যে সাধারণ সংযোগ ছিল তা আর রইল না এবং ইসলাম খুব দ্রুতগতিতে ও অল্পসময়ে পুরো উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ল।

অপরপক্ষে যারা মুরতদ সরকারগুলোর বিরুদ্ধে তাঁদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে, তাঁদের মতে এই সরকারগুলো তাদের কুফুরি এবং প্রতারণায় বিদেশী শক্তির চেয়েও অধিক, আর তারা আমাদের বেশী নিকটবর্তী ও আমাদের জন্য অধিক ক্ষতিকারক। আল্লাহ্‌ বলেন-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قَاتِلُوا الَّذِينَ يَلُونَكُم مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوا فِيكُمْ غِلْظَةً ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ

“হে বিশ্বাসীরা, তোমারা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের সাথে লড়াই কর এবং তাদেরকে তোমাদের কঠোরতা প্রদর্শন কর আর জেনে রেখ আল্লাহ্‌ ধার্মিকদের সাথে আছেন”। (সুরা তাওবা-১২৩)

তাই তাঁদের দৃষ্টিতে এই সকল স্বৈরাচারী সরকারের পতন আমেরিকা ও তার অক্ষশক্তিকে দুর্বল করে দিবে এবং তাদের পরিকল্পনাকে ব্যাহত করবে। এই দলটি মনে করে যে, যদি বিদেশী শত্রুর হাত কেটে ফেলা হয় এবং স্থানীয় দালালদের ব্যতীত সে যদি আর কোন হাত না পায় তবে সেই হাতকে বাধা দেয়াই অধিক গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি যে, এটা সত্যের অধিক নিকটবর্তী যে এই বিষয়টা যারা জিহাদের ময়দানে আছেন তাঁদের ইজতিহাদের উপর-ই ছেড়ে দেই আর তাঁদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক না করি। প্রত্যেক গ্রুপেরই আমেরিকান স্বার্থে আঘাত করার উপকরণ এবং সুযোগ নেই। তাই কেউ যদি প্রথমে ঘরের শত্রুকে দমন করতে চায় যাতে পরে সে বিদেশী শক্তির সাথে লড়াই করতে পারে, তাঁকে তাঁর পথেই যেতে দাও।

এই কথা বলে, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে বর্তমান সময়ে দেশী এবং বিদেশী শত্রুর মাঝে পার্থক্যসূচক কোন দাগ নেই বললেই চলে। কিছু আরব এবং ইসলামী রাষ্ট্রে, নিকটবর্তী শত্রু হলো আমেরিকা; কেননা ঐসকল দেশের ভূমি এবং আকাশসীমায় আমেরিকার উপস্থিতি মজবুত ও স্থায়ী এবং স্থানীয় গাদ্দারদের চেয়ে বিদেশী শত্রুর সাথে সরাসরি এবং সর্বাধিক মুখোমুখি হওয়া সম্ভব। আর এই ইস্যুটি শায়েখ আবু হুরায়রা আল সান’আনী হাফিজাহুল্লাহও আল-মালাহিমের (আল্লাহ তায়ালা মালাহিম মিডিয়ার তত্ত্বাবধানকারী প্রত্যেককে পুরস্কৃত করুন) একটি পরিবেশনায় উত্থাপন করেছিলেন।

আমাদের শাইখ ও আমীর ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ আগেই এই বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন যখন তিনি বলেছিলেন, “আর যদি আমরা এই সংঘাতের এবং এটার উপাদানের বাস্তবতা বুঝতে পারি, তবে পরিস্থিতির ছদ্মবেশ বোঝা আমাদের জন্য সহজ হয়ে যাবে; ‘আমাদের উচিত স্থানীয় শত্রুদের মুখোমুখি না হয়ে শুধু বিদেশী শত্রুদের মোকাবেলা করা’ এটা একটি ভুল অবস্থান। এই অযৌক্তিক দাবি বাস্তবতাকে দুইবার উপেক্ষা করে। প্রথমত যখন এই অযৌক্তিক দাবিটি এ বিষয়টাকে উপেক্ষা করে যে, স্থানীয় শত্রুদের মাধ্যম ব্যতীত বিদেশী শত্রুরা কাজ করে না; কেননা তাদের (বিদেশী শত্রু) সাহায্য করার জন্য প্রত্যেক রাজধানীতে একজন করে ‘কারজাঈ’ এবং প্রত্যেক সরকারে আছে একজন করে ‘মালিকী’ আছে। আর দ্বিতীয়ত, ওই অযৌক্তিক দাবিটি এই বিষয়টির ব্যাপারেও অন্ধের মত আচরণ করে যে, যারা এই উম্মাহর বিদেশী শত্রুর সাথে মুখোমুখি, তাঁদের অনেকেই আবার তাঁর দেশীয় শত্রুদের বিরুদ্ধেও জেগে উঠেছে। অতএব, কারা ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, চেচনিয়া এবং আলজেরিয়াতে ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে…”

 

প্রশ্ন: আমরা আফগানিস্তান থেকে ইসলামিক মাগরিব, ইরাক, শাম, আরব উপদ্বীপ এবং সোমালিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অংশে আমেরিকার বোমা হামলার চলমান অভিযান লক্ষ্য করছি
এগুলোর মধ্যে আফগানিস্তানে করা গণহত্যা সবচেয়ে সুস্পষ্ট  গণহত্যায় তারা ডজন ডজন মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধদেরকে নির্বিচারে হত্যা করেছে
আমরা কীভাবে এই নৃশংসতা এবং বর্বরতাকে ব্যাখ্যা করতে পারি, এসকল বোমা হামলার মাধ্যমে আমেরিকার কী অর্জন করতে চায়?

উত্তরঃ এটা হলো কাফেরদের স্বভাব-

لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ

“একজন বিশ্বাসীর ব্যাপারে না তারা মূল্যায়ন করে কোন বন্ধনকে, আর না মূল্যায়ন করে রক্তের সম্পর্ক বা চুক্তিপত্রকে”। (সুরা তাওবা- ১০)

আর যেমনটা তাদের পূর্বসূরীরা (ইহুদীরা) বলেছিল-

لَيْسَ عَلَيْنَا فِي الْأُمِّيِّينَ سَبِيلٌ

“আমাদের উপর কোন দোষ নেই যদি আমরা অশিক্ষিতদের (আরব) সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করি অথবা তাদের ধনসম্পদ গ্রহণ করি”। সুরা আলে ইমরান-৭৫

পবিত্র এই আয়াতগুলোতে উম্মাহর শত্রুদের মানসিকতা বর্ণনা করা হয়েছে, আরো বর্ণনা করা হয়েছে তাদের মানসিক অবস্থা এবং কীভাবে তারা আমাদেরকে হৃদয়ঙ্গম করে তা। আর যারা এই আয়াতগুলো অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছে তারা পশ্চিমা নেতাদের বিবৃতিগুলো যথাযথভাবে বুঝতে পারবে যখন তাদের নেতারা আমাদের ক্ষতিগ্রস্থদের সম্পর্কে উপহাস করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন অপুষ্টির ফলে মৃত্যুবরণ করা ইরাকী শিশুদের আতঙ্কিত সংখ্যা সম্পর্কে মেডেলিন অলব্রাইটকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সে তখন বলেছিল, “এটা ছিল নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ।” তার এই উত্তর ছিল নিষ্পাপ বাচ্চাদের প্রাণ নিয়ে খোলাখুলি উপহাস… এমন বাচ্চাদের প্রাণ নিয়ে যারা এমন ভয়ানক আচরণ পাওয়ার মত কোন অপরাধ করেনি।

তাই, বিভিন্ন মুসলিম দেশে ড্রোন ব্যবহার করে নিরপরাধ ব্যক্তিদের নজিরবিহীন টার্গেট করা আমেরিকার চলমান বর্বরতারই অংশ। এটা হলো মুসলিমদেরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার ব্যাপারে আমেরিকার দেখানো প্রতিমূর্তি।

সন্ত্রাসীদেরকে টার্গেট করা হচ্ছে এমন দাবীর মাধ্যমে আমেরিকা যত বারই এই অপরাধগুলো এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করুক না কেন আমরা দেখতে পাই যে এসব হামলাগুলোতে এত অধিক সংখ্যক নিরপরাধ জনগণ নিহত হয়েছে যে তা যে কারো কল্পনাকেও হার মানাবে।
এগুলোই মুসলিম এবং তাদের ধর্মের বিরুদ্ধে আমেরিকার শত্রুতার প্রকটতার প্রমাণ বহন করে এবং এ সম্পর্কেও পূর্ববর্তী প্রশ্নে আমরা কিছু কথা উল্লেখ করেছিলাম। অত্যন্ত জঘন্যভাবে এত বিশাল সংখ্যক নিরপরাধকে (যাদের বেশিরভাগই হচ্ছেন নারী এবং শিশু) হত্যা করে কখনো ‘অমুক’ ‘অমুক’ সংখ্যক সন্ত্রাসী মারার অজুহাত দিয়ে সন্তোষজনকভাবে এর সত্যতা প্রমাণ করা যাবে না। এটা আমেরিকার জন্য একটি লজ্জাজনক বিষয় হয়ে বিদ্যমান থাকবে, তার শক্তিহীনতা এবং (তার) সভ্যতার মিথ্যাবাদীতার একটি নির্দেশক।

আমাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে, আমেরিকা ড্রোন প্রোগ্রাম গ্রহণ করেছিল যাতে যুদ্ধে আমেরিকানদের জীবন হারাতে না হয়। পরবর্তীতে আমেরিকান শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছিল যে, আমেরিকান সৈন্যরা যুদ্ধে তাদের সাহস প্রমাণ করতে খুবই কাপুরুষ। প্রকৃতপক্ষে তাদের সৈন্যদের অবস্থা ঐ ইহুদীদের মত যাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-

لَا يُقَاتِلُونَكُمْ جَمِيعًا إِلَّا فِي قُرًى مُّحَصَّنَةٍ أَوْ مِن وَرَاءِ جُدُرٍ ۚ

“তারা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে লড়াই করবে না, তবে দুর্ভেদ্য নগরীতে অথবা দেয়ালের পেছন থেকে ব্যতীত।” (সুরা হাশর-১৪)

আমেরিকানরা গভীর সমুদ্রের রণতরী থেকে অথবা পাইলট বিহীন ড্রোন থেকে হামলা করা ব্যতীত মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস করবে না।

অধিকন্তু, এর মাধ্যমে তারা মুসলিমদেরকে ভয় দেখাতে চেষ্টা করে এবং তাদেরকে একটি সাধারণ বার্তা দেয় যে: “এটা-ই তাদের ভাগ্য, যারা জিঞ্জীরমুক্ত হতে চেষ্টা করবে অথবা ওয়াশিংটনের কথার সুর থেকে ভিন্নতর কোন সুরে কথা বলবে, আর যারা নিজেদেরকে নিরপরাধ মনে করে তাদের অবশ্যই “সন্ত্রাসীদের” থেকে দূরে থাকতে হবে”।

 

প্রশ্ন: আমেরিকা এবং ফ্রান্সের কথায় আসি, আমেরিকা ফ্রান্সের জন্য কীরূপ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, আর ফ্রান্সও আমেরিকার জন্য। ইসলামী মাগরিবে সুনির্দিষ্টভাবে দুই দেশের মাঝে কী ধরণের সহযোগিতা হয়?

প্রথমত, আমাদের এটা ভুলে গেলে চলবে না যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান নাৎসি দখলদারিত্বের কবল থেকে ফ্রান্সকে মুক্ত করার জন্য ফ্রান্স আমেরিকার কাছে ঋণী। আর এমনকি আজ পর্যন্ত, ফ্রান্সের আমেরিকান নিরাপত্তা প্রয়োজন: যদিও এই ভয় নাৎসি জার্মানির কারণে নয়, তবে ভূমধ্যসাগরীয় জলধারার অপর দিকে জিহাদের জোয়ার জেগে ওঠার ভয়ের কারণে, একইভাবে সন্ত্রাসবাদের কারণে যেটা তার পশ্চাদভাগে (আফ্রিকায়) তার স্বার্থের জন্য হুমকি। তবে এর মানে এই না যে আমেরিকা ফ্রান্সকে ছাড়া কিছু করতে পারবে বরং ফ্রান্স তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার অপরিহার্য মিত্র, এর কারণ হলো মুসলিমদের সাথে এবং ইসলামের সাথে ফ্রান্সের পরিচয়, আর সাবেক উপনিবেশগুলোতে তার অভিজ্ঞতা। আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় (অভিজ্ঞতা) যা আমেরিকার নেই।

ইসলামিক মাগরিবে দায়িত্বের বিভাজন সম্বন্ধে, এটা একজন সাধারণ লোকের কাছেও স্পষ্ট যে, আমেরিকা তার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে তেল এবং গ্যাস সম্পদের বৃহৎ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, যখন ফ্রান্স তার নিজের জন্য শিক্ষা, সংস্কৃতি ও শাসনকে বেছে নিয়েছে। এটা সুপরিচিত যে ফ্রান্সের তার শিক্ষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে একটি বদ্ধ ধারণা রয়েছে, আর এ কারণে আমরা দেখতে পাই যে তারা ফরাসীভাষী সাহিত্যিকদের পুরস্কৃত করেছে, আর ফরাসিভাষী ফোরামের প্রতি ফ্রান্স কর্তৃক উৎসাহদান এটার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তথাকথিত যুদ্ধে, আমেরিকা এমন উপযুক্ত পুতুল (যে দেশ আমেরিকার কথামত চলবে) খুঁজছে যে আফ্রিকমের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে তার স্বার্থসমূহ দেখাশোনা করবে, একইসাথে দুইদেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা দৃঢ় থাকবে। আফ্রিকার সরকারগুলোর সাথে ফ্রান্সের দৃঢ় বন্ধন রয়েছে। ফ্রান্স আফ্রিকাকে তার পশ্চাদভাগ (ব্যাকইয়ার্ড) ভেবে চলেছে, আর নির্দিষ্ট অঞ্চলসমূহ এবং সেগুলোর প্রাকৃতিক সম্পদসমূহকে এটা তার জাতীয় নিরাপত্তা লক্ষ্যের অংশ ভাবছে, যেমন নাইজারের ইউরেনিয়াম খনিগুলোকে। অন্যদিকে, আফ্রিকায় পশ্চিমা স্বার্থের জন্য হুমকি এরূপ জাগ্রত হওয়া প্রতিটি শক্তিকে বাঁধা দিতে আমেরিকা সামরিক দিক দিয়ে যথেষ্ট শক্তিশালী। জাগ্রত হওয়া দলটি সরকারী হোক অথবা বিদ্রোহী দল যার মধ্যে সবার আগে রয়েছে মুজাহিদীন। এটা প্রত্যাশিত যে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা চলতে থাকবে, যতদিন না আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে প্রচন্ড একটি আঘাত আসে যা ধারাবাহিক বিচ্ছিন্নতা থেকে সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খলাতে পরিণত হয়। আর আমরা তাদের উপর একটি দুর্যোগের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি, সেটা হতে পারে স্বর্গীয় হুকুমে অথবা আমাদের হাতে।

তাই মুজাহিদগণকে এমন জোটগুলোকে টুকরো টুকরো করে ফেলতে তাঁদের যৌথ এবং মুখ্য স্বার্থসমূহকে টার্গেট করার মাধ্যমে কাজ করে যেতে হবে, আর এটা কোন অসম্ভব কাজ নয়। আমরা এখনো ভুলিনি কীভাবে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাকুয়েস ছিরাক বুশ জুনিয়রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল এবং  আন্তর্জাতিক কোয়ালিশনে (বিশেষ উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সাময়িক বন্ধন) যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। যে কোয়ালিশনটি ফ্রেঞ্চ স্বার্থের ভয়ে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, যদি ফ্রান্স জোটে অংশগ্রহণ করত তাহলে যে স্বার্থটি বিপদে পড়ত। তাই অব্যাহতভাবে একই রকম চাপ প্রকৃতপক্ষে এই ধরনের জোটকে টুকরো টুকরো করতে সক্ষম।

এই পয়েন্টটিতে আরেকটি বিষয় হলো ইরাক থেকে স্প্যানিশ বাহিনীর প্রত্যাহার; যখন ইরাকের রাজধানী তখনকার শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সম্পাদিত অত্যাচারী এবং প্রভুত্বমূলক নীতির পাল্টা জবাব হিসেবে আক্রান্ত হয়েছিল।

 

প্রশ্ন: ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার এবং দখলদারিত্বের তিক্ত রেকর্ড আর বর্তমানে মুসলিমদেরকে কষ্ট দেওয়ার এক দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে ফ্রান্সের। দয়া করে এই রাষ্ট্রের বাস্তবতার উপর কিছু আলোকপাত করুন, যে রাষ্ট্রটি নিজেদেরকে স্বাধীনতা, সমতা এবং ভ্রাতৃত্বের আলোকবর্তিকা হিসেবে উপস্থাপন করে।

উত্তরঃ ইসলামের সাথে ফ্রান্সের শত্রুতা ঐতিহাসিক এবং এর শিকড় অনেক গভীরে, আর মুসলিমদের সাথে এটার ইতিহাস অনেক কলঙ্কিত। প্রথম ক্রুসেডে ফ্রান্স ছিল ক্রুশের ঝাণ্ডাবাহী। ফ্রান্সের সমসাময়িক ইতিহাসে মুসলিমদের সামগ্রিক স্মৃতি ট্র্যাজেডি দিয়ে পরিপূর্ণ, যেহেতু তাঁদেরকে এই অত্যাচারী রাষ্ট্রের মোকাবেলা করতে হয়েছিল। আর এটাই পরবর্তী মুসলিম প্রজন্মকে ধারাবাহিকভাবে এই সকল অপরাধ এবং স্মৃতিসমূহের উত্তরাধিকারী বানিয়েছে। আমাদের জাতির স্মৃতি আমাদের ভুলে যেতে বাঁধা দেয় এবং সেই প্রজন্ম যতদিন পর্যন্ত না আসে যারা প্রত্যেক সীমালঙ্ঘনকারী জালিমদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করে।

আরব এবং মুসলিম ভূমিগুলোর বিভিন্ন অংশে ফ্রান্সের দখলদারিত্ব ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ফ্রান্সের জন্য যথেষ্ট হয়নি মুসলিমদের ভূমিগুলো আত্মসাৎ করা, তাঁদের বিষয়-সম্পত্তি জব্দ করা, তাঁদের সম্পদগুলো লুণ্ঠন করা, তাঁদেরকে মরুময় ভূমিতে বাস্তুচ্যুত করা এবং তাঁদের স্থানে ইউরোপিয়ানদের পুনর্বাসন করা, উপনিবেশ স্থাপনে উৎসাহ দেওয়ার প্রচেষ্টায় নিজেদের লোকদেরকে সর্বাধিক উর্বর কৃষি ভূমি প্রদান করা…!

ফ্রান্সের অপরাধ এখানেই শেষ হয়নি। বরং তারা মুসলিমদের প্রকৃত পরিচয়টুকুও মুছে ফেলতে চেয়েছিল, তাঁদের অতীত থেকে তাঁদেরকে বঞ্চিত করতে চেয়েছিল, তাঁদের ইতিহাস এবং তাঁদের বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্য, তাঁদের ধর্ম, ভাষা এবং সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে চেয়েছিল… মসজিদ এবং কুরআনী মাদরাসাগুলো ধ্বংস করার মাধ্যমে ইসলামী এবং আরবী শিক্ষার বিরুদ্ধে ফ্রান্স একটি যুদ্ধ চালিয়ে গেছে। ফরাসিরা শরীয়াহ আদালতকে বন্ধ করে দিয়েছিল এবং সক্রিয়ভাবে মিশনারি আন্দোলনের প্রসারে উৎসাহ জুগিয়েছিল।

এক কথায়, ফ্রান্স তার দখলদারিত্বের অধীনে সম্প্রদায়গুলোর সামাজিক গঠন ধ্বংস করে দিয়েছিল। পরিণতিতে দারিদ্রতা, রোগব্যাধি এবং অজ্ঞতার প্রসার ঘটেছিল, আর আবির্ভাব ঘটেছিল নব্যরীতি ও ভ্রষ্টতার। আর আল্লাহ ব্যতীত সেখানে কোন শক্তি বা সাহায্যকারী ছিল না। অতএব, কোথায় স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব এবং সমতা… কোথায় বিপ্লবের স্লোগান যেটাকে ফ্রান্স সকল বিপ্লবের মা বলে দাবি করেছিল?

কোথায় স্বাধীনতা, যেখানে আলজেরিয়ার মরুভূমির বালু তার অপরাধ উন্মোচন করে চলেছে।

কোথায় ভ্রাতৃত্ব… ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আলজেরিয়ার মরুভূমিতে ৪টি আনবিক পরীক্ষা, যার ফলাফল ছিল হিরোশিমাতে নিক্ষিপ্ত পারমানবিক বোমার চেয়েও বহুগুন বেশী?!

সাম্য কোথায়, যখন আলজেরিয়ার মরুভূমিতে রাক্কানের অধিবাসীদের ফ্রান্স আনবিক পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করেছিল?!

এমন শয়তানীই তারা মুসলিমদের সাথে করেছিল… অথচ এরপরও মানবাধিকারের দাবী বহাল থাকে! চিন্তা করুন, ফ্রান্স কী করত যদি তারা অসভ্য হতো?!

আজকে ফ্রান্সের মুসলিম ভূমি ত্যাগের ৫ দশক পরও এটা পরিষ্কার যে স্বাধীনতা ছিল একটা রূপকথা মাত্র। হ্যা ফ্রান্স তার সেনাবাহিনী নিয়ে চলে গেছে কিন্তু তারা ফ্রেঞ্চ চিন্তা-চেতনা ও সংস্কৃতির দাসত্বকারী একটা শ্রেণী রেখে গেছে, একটা শ্রেণী যাদেরকে ফ্রান্স নিজস্ব সংস্কৃতিক পরিবেশে লালন-পালন করে গেছে যাতে তারা ফ্রান্সের সাম্রাজ্যবাদী প্রকল্পগুলো আগ্রহ এবং ভালোবাসা মাধ্যমে বহন করে চলে, এমনকি তাদের চেয়েও বেশী। সকল মুসলিমের অনুধাবন করা উচিত এই সকল পুতুল শাসকের বিরুদ্ধে জিহাদ করার অর্থ হচ্ছে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে জিহাদেরই অংশ। আর এই সকল শাসকের হাতে থেকে স্বাধীনতার অর্থ হচ্ছে ফ্রান্সের হাত থেকে মুক্তি।

 

প্রশ্নঃ পশ্চিমা দেশগুলোতে স্বতন্ত্র জিহাদী অপারেশনগুলোর ক্ষেত্রেঃ ইসলাম এবং কুফরের যুদ্ধের অবস্থা কি; এবং যুদ্ধের লক্ষ্য নির্ধারনে এর গুরুত্ব ও ভূমিকা কি?

উত্তরঃ আমেরিকা, তার সামরিক নেতৃত্ব, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং রাজনীতিবিদরা পরিষ্কারভাবে ঘোষনা করেছে যে সমগ্র বিশ্বই হচ্ছে “সন্ত্রাসের” বিরুদ্ধে যুদ্ধক্ষেত্র এবং তারা “সন্ত্রাসীদের” জন্য বিশ্বের কোন জায়গাকেই নিরাপদ হিসেবে ছাড়বে না।

আমরাও আমেরিকার অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যে আঘাত করার মাধ্যমে আমেরিকার সাথে একই আচরণ করি। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে বিশ্বের কোথাও যেন আমেরিকা নিরাপদ অনুভব না করে। এটা তখন একটি বৈধ অধিকার হয়ে যায় এবং যে এটার সূচনা করেছে তাকেই এর দায়ভার নিতে হবে।

فَمَنِ اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَىٰ عَلَيْكُمْ ۚ

“যে কেউ তোমাদের বিরুদ্ধে সীমালংঘন করে তোমরাও তাদের বিরুদ্ধে সীমালংঘন কর”। (সুরা বাকারা-১৯৪)

জিহাদের এই পদ্ধতিটি হচ্ছে আমাদের এবং পশ্চিমের সাথে লড়াইয়ের একটি মাধ্যম –যার উভয়েরই কিছু অংশ নতুন এবং পুরাতন –শত্রুকে প্রতিরোধ করার এবং এর শক্তিকে ভেঙ্গে ফেলার এটি একটি উপায় এবং এই ধরনের অসমতার যুদ্ধের এই পদ্ধতি আমাদের পূর্বসূরীরা বহু শতাব্দী আগেই প্রবর্তন করে গেছেন।

স্বতন্ত্র জিহাদ (লোন উলফ) খুবই কার্যকর এবং শত্রুকে প্রতিরোধের সক্ষম প্রমাণিত হয়েছে। তাদের সামরিক শক্তির উন্মাদনা সাথে বহু অবস্থা রয়েছে যেখানে তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একটি চিরস্থায়ী আগ্রাসী অবস্থায় রয়েছে যেখানে কোন ইসলামিক দেশ বা দলই তাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে সক্ষম নয়। এই দেশগুলো হয় সামরিকভাবে নিরাপদ উদাহরণস্বরূপ পারমানবিক শক্তিধর অথবা ভূ-রানৈতিকভাবে আক্রমন সীমার বাইরে যেমন আমেরিকা যাকে আমেরিকা মহাদেশের বাইরের কোন শক্তির পক্ষে আক্রমণ করা অসম্ভব যেহেতু এটি ৬০০০কিলোমটার বিস্তৃত আটলান্টিক মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটা হচ্ছে বস্তুগত বাঁধা যা কোন সেনাবাহিনীর পক্ষেই অতিক্রম করা সম্ভব নয়। আর আল্লাহর অনুগ্রহে স্বতন্ত্র জিহাদী অপারেশনের ক্ষেত্রে তারা সম্ভাব্যতার সীমায় রয়েছে।

যে বিষয়গুলো শত্রুকে দ্বিধান্বিত এবং বিরক্ত করে তা হচ্ছে সেই সকল অপারেশন যা বেশীর ভাগ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে থাকে। গোয়েন্দা সংস্থার কোন নেটওয়ার্ক বা দলের মধে অনুপ্রবেশ করার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে কিন্তু তারা একজন ব্যক্তির অন্তরে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম নয়!  আমি সাধারণভাবে মুসলিমদের এবং বিশেষ করে মুজাহিদদের এই ধরনের জিহাদ পরিচালনায় উৎসাহিত করি এবং তা করতে মানুষকে উত্তেজিত করি। মুসলিমদের জীবন ও সম্পদের ক্ষেত্রে কম ব্যায়বহুল হওয়া সত্বেও তা শত্রুর উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তারকারী এবং অত্যান্ত অসামঞ্জস্যপূর্ণ। আমরা অনেক ঘটনায় দেখেছি, কিভাবে একজন শাহাদাত-সন্ধানী অনেক সময় একটি পুরো দেশকে প্যারালাইজ (অকার্যকর) করে ফেলেছে।

এই ব্যাপারে খুব কমই সন্দেহ আছে যে এই ধরনের জিহাদ কাফিরদের আরও বেশি রাগান্বিত করে যখন একজন নওমুসলিম যিনি কিনা তাদের বর্ণ বা জাতীয়তার মধ্য থেকে তা পরিচালনা করেন… যিনি এক সময় তাদের সমাজেরই অংশ ছিলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাকে ইসলাম এবং জিহাদের দিশা দান করেন। এটা ইসলামের শত্রুদের রাগের কারণ। এটা প্রমাণ করে যে ইসলাম তাদের জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণতাকে অতিক্রম করে গেছে এবং  একজন মুসলিমের বিশ্বস্ততা তার ধর্মের প্রতি তার মাতৃভূমির প্রতি নয়। এই বিষয়টা তাদের হজম করতে বেশ কষ্ট হয় যতটা না কষ্ট হয় কোন অপারেশন নিয়ে, তাই এটা আমাদের গুরুতরভাবে ভাবা উচিত। এটা কাফিরদের অন্যতম একটা দুর্বল পয়েন্ট যা তাদেরকে রাগান্বিত করে। এটা বিশাল পুরষ্কার অর্জনের একটা মাধ্যম

فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُحْسِنِينَ

“আর আল্লাহ্‌ তাদের পুরস্কার নষ্ট করেন না যারা সৎকর্ম করে”। (সুরা হুদ-১১৫)

তাই আমাদের এই পুষ্কার অর্জনে চেষ্টা করা উচিত এবং সৎকর্মশীলদের বৈশিষ্ট ধারন করা উচিত। যে সকল সুবিধা পশ্চিমে বসবাসকারী একজন মুসলিম পেয়ে থাকেন, বহু আলীম এবং জিহাদের নেতৃবৃন্দ পশ্চিমে শাহাদাতী অপারেশন চালানোর জন্য তাঁদের উৎসাহ প্রদান করেছেন। এমন ব্যক্তির অবস্থা এবং পুরষ্কার জিহাদের ভূমিতে হিজরত করা ব্যক্তির চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

একটা বিষয় যা সবসময় আমাদের মনে রাখা উচিত, স্বতন্ত্র জিহাদে একজন মুজাহিদকে অবশ্যই শরীয়াহ্‌র নীতিমালা অনুসরণ করা উচিত। তাকে তার লক্ষ্য নির্ধারনেও অত্যান্ত সতর্ক হওয়া উচিত এবং লক্ষ্য বৈধ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা লাভ করা উচিত।

জিহাদের উলামাগণ এই বিষয়টির গুরুত্বের ব্যাপারে অধিক জোর দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ শাইখ আতিয়াতুল্লাহ রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেন, “এই জিহাদ এবং শত্রুর স্বার্থে আঘাত করা তা শত্রুর ভূমিতে বা বাইরে যেখানেই হোক না কেন তা অবশ্যই কঠোরভাবে শরীয়াহ্‌র নিয়মনীতি দ্বারা পরিচালিত হতে হবে। এটাকে মুজাহিদদের সামগ্রিক কৌশলেরও সহায়ক হতে হবে এবং লক্ষ্য নির্ধারণে ও অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে যথাযহ জ্ঞানেরও সমন্বয় থাকতে হবে। দৃঢ় ইচ্ছা এবং সত্যিকারের নিয়ত সহকারে এর জন্য সতর্কতা এবং সঠিক বুঝ থাকতে হবে”।

এই সকল নীতিমালা অনুসরণের নিশ্চয়তা বিধান করার পর আর যা বলার বাকি থাকে তা হচ্ছে-

فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ

“অতঃপর যখন তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ কর, আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাদের ভালোবাসেন যারা আল্লাহ্‌র উপর ভরসা করে”। (সুরা আলে ইমরান- ১৫৯)

 

প্রশ্নঃ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আমরা আমেরিকা ও ফ্রান্সে স্বতন্ত্র জিহাদের একটা বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। এই অপারেশনগুলো সম্পর্কে আপনার মতামত কি?

উত্তরঃ শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি রহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমরা মুসলিমদের কোন জাতি বা বর্ণের প্রতি কোন শত্রুতা নেই। আমরা আমেরিকার বিরুদ্ধে শুধু আমেরিকা হওয়ার কারণে বিরোধিতা করি না। আমরা শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি এবং আমেরিকা সামগ্রিকভাবে একটি শয়তান জাতিতে পরিণত হয়েছে”।

এটা সর্বজন বিদিত যে, মুজাহিদরা বিভিন্ন দেশ এবং জাতির প্রতি শত্রুতা পোষণের ক্ষেত্রে পার্থক্য করে থাকেন এবং লক্ষ্য নির্ধারণে তাঁদের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। তাই সেই দেশ যা শয়তানী অক্ষশক্তিকে অথবা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সীমালংঘনে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদেরকে সার্বিক গুরুত্ব দেয়া হয়। আমরা যদি আমেরিকা এবং ফ্রান্সের ব্যাপার দেখি তবে দেখতে পাই যে তারা আগ্রাসন এবং বিদ্বেষের দিক দিয়ে সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতক সীমালংঘনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আর এই ব্যাপারে মুসলিম যুবকদের ক্ষোভ ফ্রান্স এবং আমেরিকার মাটিতে চালানো অপারেশোনগুলোরই অনুবাদ।

স্বতন্ত্র জিহাদ সম্পর্কিত আলোচনায় যা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, যারা এই ধরনের অপারেশন পরিচালনা করেন তারা বেশির ভাগ সময়ই নিরাপত্তা ব্যাবস্থা ফাঁকি দিয়ে থাকেন, তাই যেসব দেশ এই ধরনের লক্ষ্যের শিকার হয় এটা তাদের জন্য একটা দুঃস্বপ্নের মত।

উদাহরণস্বরুপ আমেরিকা, ফ্রান্স এবং যে সব দেশ এই ধরনের জিহাদী অপারেশনের স্বীকার হয়েছে তারা এখন পর্যন্ত এর বিষয়ের মোকাবেলায় নিশ্চিদ্র কোন পদ্ধতি বের করতে সক্ষম হয় নি। গোয়েন্দারা একজন স্বতন্ত্র মুজাহিদের বিরুদ্ধে প্রায় সময়ই অকার্যকর, যেহেতু তার মোবাইলে যোগাযোগ অথবা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের কোন দরকার নেই। তদন্তও অকার্যকর যেহেতু তার কোন অস্ত্র, স্টোরেজ ডাম্প অথবা বিষ্ফোরকের দরকার নেই। তাই কার্য সম্পাদনের আগে এটা এমনকি সবচেয়ে প্রফেশনাল গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষেও উক্ত অপারেশনের সম্ভাবনা আঁচ করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই এটা পশ্চিমাদের দুশ্চিন্তার কারণকে ব্যাখ্যা করে। বিশেষ করে আমেরিকা এবং ফ্রান্স যেখানে তাদের সমাজে এই ধরনের ঘটনার বৃদ্ধি এবং বিস্তৃতি রয়েছে। এটা এমন দুঃস্বপ্ন যা তাদের মনের সুখ কেড়ে নিয়েছে।

তাই এটা আমাদের উপর দায়িত্ব যে, এই অস্ত্রটিকে আমরা যেন অবহেলা না করি।  বরং এটা যেন আরো নিয়মিত এবং এর পদ্ধতির উন্নয়নের মাধ্যমে এটা যেন শত্রুপক্ষের আরো বেশি ক্ষতি করে তার চেষ্টা করা উচিত। এভাবে আমরা তাদেরকে যে কোন দিক থেকে অনিরাপদ বোধ করতে বাধ্য করতে পারি। সেই মূহূর্তে তারা হয়তো তাদের চেতনা ফিরে পাবে এবং তাদের সীমালংঘন বন্ধ করবে যা অনেকদিন যাবত চলে আসছে।

প্রশ্নঃ এই নির্যাতন থেকে বেড়িয়ে আসার উপায় কি যার মধ্য দিয়ে উম্মাহ্‌ দিনাতিপাত করছে এবং ভবিষ্যতের ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কি?

উত্তরঃ যার সর্বোত্তম এবং সমসাময়িক ইতিহাস সম্পর্কে বুঝ আছে তাদের কারো কাছে এটা অজানা নয় যে এমন কোন জাতি নেই যাদের অন্যদের তুলনায় অধিক আক্রমণ ও ষড়যন্ত্রের স্বীকার হতে হয়েছে, আর তাঁরা হচ্ছে মুসলিম উম্মাহ্‌। এমন কোন জাতি যদি থাকত যার চার ভাগের এক ভাগও যা ইতিহাসের আমাদের উম্মাহ মোকাবেলা করছে তবে তারা ক্ষয়প্রাপ্ত হত এবং ইতিহাসের ম্যাপ থেকে বিলুপ্ত হয়ে যেত। এতে কোন সন্দেহ নেই যেসব আক্রমন ও ষড়যন্ত্র আমাদের উম্মাহ মোকাবেলা করেছে তার ছাপ এবং ধ্বংসাবশেষ রেখে গিয়েছে আর তার বর্ণনা স্পষ্টভাবে নিচে প্রতীয়মান হয়- “উম্মাহ্‌র আজ যে শোচনীয় অবস্থা তার কারণ হচ্ছে সেই সকল শাসক যারা জোরপূর্বক তাদের ঘাড়ে বসে আছে। এভাবে সামগ্রিকভাবে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহ্‌র নির্দেশনা থেকে বিচ্যুতি ঘটেছেঃ শাসন, রাজনীতি, আইন, শিক্ষা, অর্থব্যাবস্থা, ব্যাবসা, নীতিবোধ এবং শিষ্টাচার। এটাই হচ্ছে আজকে উম্মাহর দুর্বল অবস্থা, অসম্মান এবং মুল্যহীনতার অন্যতম কারণ যেখানে লোভী শত্রুদের জন্য উম্মাহ একটি সহজ শিকারে পরিণত হয়েছে। এটি আল্লাহ্‌র বর্ণিত আয়াতেরই অনুরূপ-

وَمَنْ أَعْرَضَ عَن ذِكْرِي فَإِنَّ لَهُ مَعِيشَةً ضَنكًا

“যে কেউ আমার স্মরণ থেকে ফিরে যাবে, নিশ্চয়ই তার জন্য রয়েছে কষ্ট”। (সুরা তোহা-১২৪)

তাই অবশ্যই একটা পরিবর্তন প্রয়োজন এবং পথের সর্বপ্রথম ধাপটিই হচ্ছে যা আল্লাহ্‌ এই আয়াতে বর্ণনা করেছেন-

إِنَّ اللَّهَ لا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ

“আল্লাহ্‌ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষন না তারা নিজেরাই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করে”। (সুরা রাদ-১১)

তাই দ্বীনে ফিরে আসুন এবং ইসলামী জীবন-যাপন শুরু করুন যার মধ্যে প্রাধান্য পাবে কুর’আন এবং সুন্নাহ্‌। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, যতদিন তোমরা এই দুটি জিনিস আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে নাঃ আল্লাহ্‌র কিতাব এবং আমার সুন্নাহ্‌”। তাই এই যুগে উম্মাহ্‌র মৌলিক কাজ হবে বিশুদ্ধ এই দুটি উৎসের অধীনে ফিরে আসা। কোন সন্দেহ নেই যে এই ফিরে আসাটা দ্রুত এবং সহজ হবে না বরং এর জন্য একটা মূল্য পরিশোধ করতে হবে। আর মূল্যটি মাথা, মৃতদেহ, কান্না এবং রক্তের চেয়ে কোন অংশে কম হবে না। আল্লাহ্‌ বলেন-

أَحَسِبَ النَّاسُ أَن يُتْرَكُوا أَن يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ

وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ ۖ فَلَيَعْلَمَنَّ اللَّهُ الَّذِينَ صَدَقُوا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكَاذِبِينَ

“তারা কি এ কথা বলেই পার পেয়ে যাবে যে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ অথচ তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না। আমরা তদেরকে পরীক্ষা করেছি যারা তাদের পূর্বে এসেছিল আর আল্লাহ্‌ জেনে নিবেন কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যুক”। (সুরা আনকাবুত-১-২)

তাই উম্মাহ যদি ইসলামকে তার পুর্বের অবস্থা এবং গৌরবে ফিরিয়ে নিতে চায় এবং এর সম্মান ও মর্যাদা ফিরে পেতে চায় তবে তাকে অবশ্যই সৎকাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধের দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাকে আল্লাহর সাথে সত্যবাদী হতে হবে এবং তার দিকে ফিরে যাওয়ার অসুবিধায় ধৈর্যধারন করতে হবে এবং জিহাদের ভুলে যাওয়া দায়িত্ব তার সন্তানদের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে হবে।

ইতিমধ্যেই এই পুণর্জাগরনের কিছু নিদর্শন দিগন্তে দেখা দিতে শুরু করেছে, আর সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র। উম্মাহ তাঁর জিহাদে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে যা সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌছে গেছে এবং বড় বা ছোট হোক, কাছে বা দূরের এমন কোন দেশ নেই যেখানে জিহাদ প্রবেশ করেনি, হয় সম্মানজনকভাবে অথবা অপদস্থতার মাধ্যমে; সম্মান যেখানে আল্লাহ্‌ ইসলামকে ও এর জনগণকে শক্তিশালী করেছেন, আর অপদস্থতার মাধ্যমে যেখানে কুফরের অবনতি ঘটিয়েছেন।

তাই এট আমাদের অনুমান করতে দেয় যে, এই ভোরই বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে আসবে এবং পূর্ব ও পশ্চিমের দূরতম বিন্দু থেকেও যার নিদর্শন চোখে পড়ছে। সত্যের পতাকা উত্তর হতে দক্ষিনে পতপত করে উড়তে শুরু করেছে এবং ইসলামের সেনানায়কেরা আল-আকসার জন্য ছুড়ে মারা পাথরের স্তুপ থেকে জিহাদের পতাকা উঁচু করে তুলে ধরছেন। মুসলিমদের পুর্বে বহু শত্রুর কাছে এটা পরিষ্কার যে ভবিষ্যত এই দ্বীনের এবং এই উম্মাহ্‌র হাতেই। তাই মুজাহিদীন এবং তাদের সমর্থনকারী মুসলিম ভাইদেরকে অবশ্যই আরো ধৈর্যশীল হতে হবে এবং দুর্বলতা ও ব্যার্থতার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আরো বেশি আত্মত্যাগ এবং নিঃস্বার্থপরতা এখন সময়ের দাবী। যেমনটা ইবনুল কায়্যিম বলেছেন, “বোকাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সবচেয়ে বোকা যে তার পথ হারিয়ে ফেলেছে যখন সে প্রায় তাঁর লক্ষ্যে পৌছে গিয়েছে”।

وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

“আর দুর্বল হয়ো না এবং কষ্ট পেয়ো না, তোমরাই বিজয়ে অগ্রগামী হবে যদি তোমরা সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়ে থাক”।  (সুরা আলে ইমরান-১৩৯)

স্বতন্ত্র মুজাহিদের প্রতি বার্তা

এটা কোনক্রমেই বাড়িয়ে বলা হবে না যদি আমরা বলি যে, একজন স্বতন্ত্র মুজাহিদ নিজেই একজন উম্মাহ্‌। আমরা দেখেছি আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে এই মুজাহিদগণ সেই সাফল্য অর্জন করেছে যা একজন সেনা বা পুরো সেনাবাহিনী অর্জন করতে ব্যার্থ হয়েছে। কতগুলো স্বতন্ত্র জিহাদী অপারেশনই পশ্চিমাদের নীতি পরিবর্তনে প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে রাজনৈতিক দল এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও প্রভাবশালী দেশগুলোর সরকারের পর্যন্ত পতন হয়েছে! একারণেই শাহাদাত সন্ধানী এবং ঝটিকাবাহিনী অন্যান্য যোদ্ধাদের বিপরীতে শত্রুদের অন্তরে ভীতি সঞ্চারিত করতে সফল হয়েছে। তাই স্বতন্ত জিহাদী অপারেশনের বাস্তবধর্মী ফলস্বরূপ আমরা উম্মাহ্‌র সন্তানদেরকে জিহাদের এই নতুন পদ্ধতিকে গ্রহণের এবং শক্ত করে ধরে রাখার আহবান জানাই। এর মাধ্যমে বার্মা, মিয়ানমার, মৌসুল, আলেপ্পো, আল-কুদস, গাযা, বেনগাযী, দারনা এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে গণহত্যার স্বীকার হওয়া মুসলিম উম্মাহ্‌র প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারি।

ময়দানে লড়াইরত মুজাহিদীনদের প্রতি বার্তা

আমি আমার মুজাহিদীন ভাইদেরকে আমীরুল মু’মিনিন উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) এর স্বীয় সেনাবাহিনীর আমীর সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) কে যা বলেছিলেন তা মনে করিয়ে দিতে চাই, বর্ণিত হয়েছে-

“আমি তোমাকে এবং তোমার সাথে সেনাবাহিনীতে যারা রয়েছে তাঁদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি যে সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় কর, কারণ আল্লাহকে ভয় হচ্ছে শত্রুর বিরুদ্ধে সর্বোত্তম প্রস্তুতি এবং যুদ্ধের সবচেয়ে শক্তিশালী কৌশল। আমি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছি তোমাদের শত্রু সম্পর্কে সতর্কতার চেয়ে তোমাদের পাপ সম্পর্কে বেশী সতর্কতার, কারণ মানুষের পাপ তার শত্রু অপেক্ষাও বেশী বিপদজ্জনক। মুসলিমরা শুধুমাত্র তাঁদের শত্রুদের আল্লাহর অবাধ্যতার কারণেই জয় পেয়ে থাকে অন্যথায় আমরা তাদের বিরুদ্ধে জয়ী হতে পারতাম না কারণ আমাদের সংখ্যা এবং সরঞ্জামাদি তাদের সমতুল্য নয়। তাই আমরা যদি পাপকর্মে তাদের সমান হয়ে যাই তবে শক্তিতে তারা আমাদের উপর জয়ী হবে। আর আমরা যদি তাদের নৈতিক অগ্রগামীতা দ্বারা পরাজিত করতে না পারি তবে শক্তি দিয়ে আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পারব না। জেনে রেখ তোমাদের এই অভিযানে তোমাদের সাথে আল্লাহ্‌র প্রহরীরা রয়েছেন, তাঁরা জানেন তোমরা কি করছ, তাই তাঁদেরকে লজ্জা কর। অবাধ্যতার কোন কাজ করো না, কারণ তোমরা আল্লাহ্‌র রাস্তায় রয়েছ। এমন ভেবো না যেমন-“আমাদের শত্রুরা আমাদের চেয়ে নিকৃষ্ট, তাই এটা (শাস্তি) আমাদের উপর আরোপিত হবে না”, কারণ তাদের থেকে নিকৃষ্ট মানুষই সেই সকল মানূষদের উপর (শাস্তি হিসেবে) আরোপিত হয়। আল্লাহ্‌র কাছে নিজের বিরুদ্ধে আশ্রয় প্রার্থনা কর যেভাবে তোমরা তার কাছে শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয় কামনা কর”।

তাই তাঁদের প্রতি আমার বার্তা এই যে- “তোমাদের শত্রুদেরকে ভয় করো না, তোমাদের পাপ ব্যতীত আর কিছুকেই ভয় করো না। নিজেরদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এককে, দলাদলি এবং বিভিন্ন গ্রপে ভাগ হয়ো না, যদি তোমরা এমন করো তবে আল্লাহ্‌ তোমাদের শক্তি থেকে বঞ্চিত করবেন এবং তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ভয় তুলে নিবেন। আমরা কি আল্লাহ্‌র কিতাবে দেখতে পাই না যে-

وَإِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً

“নিশ্চয়ই তোমাদের এই উম্মাহ্‌ হচ্ছে এক উম্মাহ্‌”। (সুরা মুমিনুন-৫২)

তাই কেন আমাদের দল একটি একক দল হতে পারবে না। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা কি তাঁর কিতাবে বলেননি যে-

إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ

“নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তাঁদের ভালোবাসেন যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে লড়াই করে, যেন তাঁরা সীসাঢালা প্রাচীর”। (সুরা সফ-৪)

তাই কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব বিভিন্ন পতাকার নিচে, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন সারিতে এবং ভগ্ন হৃদয়ে?

এই পয়েন্টে আমরা তাঁদেরকে শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহর সেই কথাটি মনে করিয়ে দিতে চাই, “এটা সত্য যে পারষ্পরিক বাদানুবাদ, অসম্মতি পরাজয়ে ও শক্তি ক্ষয়ের অন্যতম বড় কারণ যার কারণে উম্মাহ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে, আর শক্ত করে আল্লাহ্‌র রশিকে আঁকড়ে ধরাই হচ্ছে বিজয় ও সাফল্যের চাবিকাঠি এবং কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের দরজা। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে আদেশ করেছেন-

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ

“এবং একত্রে আল্লাহ্‌র রশিকে আঁকড়ে ধর এবং পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না”। (সুরা আলে ইমরান-১০৩)

এবং তিনি আমাদেরকে অনৈক্য ও বিতর্ক সম্পর্কে সতর্ক করেছেন-

وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ

“এবং একে অন্যের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়ো না, পাছে না তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলো এবং তোমাদের শক্তি চলে না যায় এবং সবর কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ সবরকারীদের সাথে আছেন।” (সুরা আনফাল-৪৬)

তাই আমার বন্ধুরা, আসুন এই দ্বীন সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করি। আসুন আল্লাহ্‌কে ভয় করি এই নির্যাতিত এবং পরাধীন উম্মাহ্‌র ব্যাপারে। আর আসুন নিজেরা সতর্ক হই তাদের বিরুদ্ধে যখন তারা আল্লাহ্‌র অবাধ্যতা করে।

فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَن تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

“আর তাদেরকে হুশিয়ার কর যারা আল্লাহ্‌র রাসূলের অবাধ্যতা করে পাছে না কোন ফিতনা অথবা শাস্তি তাদের উপর আপতিত হয়”। (সুরা নুর-৬৩)

কারণ আল্লাহ্‌র সুন্নাহতে কারও জন্য কোন পক্ষপাতিত্ব নেই।

 

কুফর প্রধান আমেরিকার প্রতি বার্তা

আমেরিকার জানা উচিত যে মুসলিম উম্মাহ যার বিরুদ্ধে সে প্রতিদিন চক্রান্তের ছক একে চলেছে তা সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবেই ছিল, আছে, থাকবে; মানুষের জন্য যাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে।

এই উম্মাহ হচ্ছে তাঁরাই যাদেরকে বাকি সকল উম্মতের জন্য শেষ বিচারের দিন সাক্ষী হিসেবে দাঁড় করানো হবে।

আল্লাহ্‌র দয়া ও অনুগ্রহে, এরা হচ্ছে বিজয়ী, নিরাপরাধ উম্মাহ। এরা দুর্বল হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে কিন্তু কখনোই মারা যায় না।

অন্যান্য জাতির উপর কত সুন্দর প্রভাবই না এই উম্মাহ রেখেছে এবং এই উম্মাহ্‌র উপর অন্যান্য জাতির প্রভাব কতই না নিকৃষ্ট!

তাতারা জয় পেয়েছিল। তারা হারিয়ে গেছে, এই উম্মাহ জীবিত রয়ে গেছে।

সাম্রাজ্যবাদীরা এর উপর কর্তৃত্ব করতে চেয়েছে, সাম্রাজ্যবাদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে, এই উম্মাহ জীবিত রয়েছে।

আজকে আমেরিকা দাঙ্গা-হাঙ্গামার মাধ্যমে শত্রুতা এবং শত্রুদের অক্ষশক্তি তৈরির মাধ্যমে এই উম্মাহকে পরাজিত করতে চাইছে। আমেরিকাও বিলুপ্ত হয়ে যাবে এবং এই উম্মাহ বেঁচে রইবে, সবার উপর দাঁড়িয়ে, কর্তৃত্বপূর্ণ এবং উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন হয়ে। এরা কখনই তাঁর শত্রুদের বিরোধিতা এবং শত্রুতা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

 

আমেরিকার ইসলামিক কমিউনিটির প্রতি বার্তা

আমরা তাদেরকে তা-ই বলছি যা মুজাহিদ শাইখ আনওয়ার আল-আওলাকি রহিমাহুল্লাহ তাঁর “আমেরিকান জনগণের প্রতি বার্তায়” বলেছিলেন-

“আমেরিকার মুসলিমদের প্রতি আমার এটাই বলার আছে যে, কিভাবে তোমার বিবেক তোমাকে এমন জাতির সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে দেয় যারা তোমার নিজ ভাই-বোনদের উপর অত্যাচার এবং অপরাধের দায়ী। কিভাবে এ তুমি এমন সরকারের প্রতি বিশ্বস্ত যা ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছে! আমেরিকার মুসলিম সমাজ আজ ইসলামের মৌলিক নীতিমালার ধারাবাহিক ক্ষয়প্রাপ্তির সাক্ষী হচ্ছে, আজকে বহু আলেম এবং ইসলামিক প্রতিষ্ঠানসমূহ খোলাখুলিভাবে মুসলিমদের ইউএস আর্মিতে যোগ দিয়ে মুসলিমদের হত্যা করার অনুমতি দিচ্ছে, মুসলিমদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরির জন্য এফবিআই’তে যোগ দিচ্ছে এবং তোমার এবং তোমার জিহাদের দায়িত্বে বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে। ধীরে কিন্তু নিশ্চিতরূপেই আজকে তোমাদের অবস্থা গ্রানাডার পতনের পর লড়াইরত মুসলিমদের মতো হয়ে যাচ্ছে। পশ্চিমের মুসলিমরা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন এবং ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন। দিগন্তে অশুভ মেঘ জমা হচ্ছে। গতকাল আমেরিকা ছিল দাসত্ব, বৈষম্য, অবৈধ মৃত্যুদন্ড এবং কু-ক্ল্যাক্স ক্ল্যান এর দেশ আর আগামীকাল এটি ধর্মীয় বৈষম্য ও বন্দী-শিবিরের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে।

সেই সরকার যারা আজকে আপনার ভাই-বোনদের হত্যা করছে তাদের আপনার অধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতিতে প্রতারিত হবে না। আজকে মুসলিম এবং পশ্চিমাদের মধ্যে যুদ্ধ বৃদ্ধি পাচ্ছে, আপনি অগণিত সান্ত্বনার বানী কোন সামাজিক গ্রুপ বা কোন একটি রাজনৈতিক দল থেকে পেয়ে থাকবেন অথবা আপনার দয়ালু প্রতিবেশী বা ভাল একজন সহকর্মী থেকে কতক শব্দমালার সমর্থন পেয়ে থাকবেন। কিন্তু পরিশেষে পশ্চিমা দেশগুলো তার মুসলিম নাগরিকদের বিরুদ্ধেই দাড়াবে।

 

যুদ্ধরত ফ্রান্সের প্রতি সতর্ক বার্তা

ফ্রান্স! তুমি কি জান যে ঋন পরিশোধের সময় এগিয়ে আসছে? তাই ভেবো না যে তুমি শাস্তি থেকে পালাতে পারবে। আর প্রস্তুতি নাও সে মূল্য পরিশোধের যা তুমি মুসলিদের কাছে ঋনী, অর্থ এবং রক্তমূল্যে।

ফ্রান্স এই প্রশ্নের উত্তর দাও!

তুমি যদি মুসলিমদের স্বাধীনভাবে বাঁচতে দিতে, তাঁদের দ্বীন পালন করতে দিতে, তাঁদের ভাষায় কথা বলতে দিতে, তাঁদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ পালন করতে দিতে, তাঁদেরকে মসজিদে জড়ো হতে দিতে, তাঁদের বৈষয়িক ক্ষেত্রে তাঁদের প্রভুর শরীয়াহ পালন করতে দিতে তবে তোমার হারানোর কি ছিল?

তবে তোমার হারানো কি ছিল যদি যদি তুমি মুসলিম বিশ্বের সম্পদকে মুসলিমদের জন্য ছেড়ে দিতে, সেগুলো লুট না করতে, তাঁদেরকে সেই অবস্থায়ই ছেড়ে দিতে এবং কলুষিত না করতে?

তুমি ষড়যন্ত্র করেছ, চক্রান্ত করেছ এবং জঘন্যতম অপরাধ করেছ শুধুমাত্র এই কারণে যাতে আলজেরিয়া ফ্রান্সের কলোনি (দাস) হয়ে থাকে। আজকে ২০০ বছরের দখলদারিত্বের পর তুমি নিজেই এই ভয়ে কাপছ যে ফান্স না আবার ইসলামিক রাষ্ট্র হয়ে যায়। মালি ত্যাগ কর এবং তাকে তার উপরই ছেড়ে দাও! আফ্রিকাকে তার উপরই ছেড়ে দাও! আমাদের বিষয়াদির মধ্যে নাক গলানো বন্ধ কর! আর আমরা ততক্ষন পর্যন্ত জিহাদ বন্ধ করব না যতক্ষন না মুসলিমদের বিরুদ্ধে তোমাদের আগ্রাসন বন্ধ না হচ্ছে।

তুমি যদি তোমার একগুঁয়েমিতেই অটল থাক, তবে জেনে রাখ ইসলামের এমন সন্তান রয়েছে যারা নিপীড়নের মুখে ঘুমায় না, আর তারা দুনিয়ার স্বল্প মূল্য বা জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে যায় না।

وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ

“সম্মান, ক্ষমতা আর গৌরব আল্লাহ্‌, তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং বিশ্বাসীদের কিন্তু প্রতারকরা তা জানে না”। (সুরা মুনাফিকুন-৮)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eleven + 16 =

Back to top button