নির্বাচিতবই ও রিসালাহ [আল হিকমাহ]

Important || মিডিয়া: গুরুত্ব ও অবদান || শাইখ হামদ আত-তামিমী হাফিযাহুল্লাহ || আল হিকমাহ মিডিয়া

مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

الإعلام أهميته ودوره

মিডিয়া: গুরুত্ব ও অবদান

Media: Its importance and contribution

الشيخ حمد التميمي حفظه الله
শাইখ হামদ আত-তামিমী হাফিযাহুল্লাহ
Shaykh Hamd At-Tamimi Hafizahullah

 

 

للقرائة المباشرة والتحميل
সরাসরি পড়ুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Reading and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/media_gurutto_o_obodan
লিংক-২ : https://mediagram.me/71d4f97caeb50b8d
লিংক-৩ : https://noteshare.id/Oi0Eru5
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20230507…rutto_o_obodan
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20230507…d4f97caeb50b8d
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20230507…are.id/Oi0Eru5

روابط بي دي اب
PDF (656 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬৫৬ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/MjtwFHWmLTgEAPm
লিংক-২ : https://archive.org/download/mediar-gurutto-o-obodan-update/media%20gurotto%20o%20obodan.pdf
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy32603e048286425db3c1a068cb4a55b1
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/41a44792-e986-4cd0-874e-a3ff79a2fd03/5a3afcc9608d6f8ff0d8778583c1a0565e74578e0ad2e532dbe0be9c09a30633
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/MediaGurtto/media+gurotto+o+obodan.pdf

روابط ورد
Word (403 KB)
ওয়ার্ড [৪০৩ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/4jiSNLiECkqFt5c
লিংক-২ : https://archive.org/download/mediar-gurutto-o-obodan-update/media%20gurotto%20o%20obodan.docx
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy8e96aff5447c42d3a919cb4462a748ff
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/457787eb-74cf-4d01-a17c-f3573b7132cb/f2b61328bef22459b80d60c70469f6c46bcda3119efd4dc0f034cec1872f665c
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/MediaGurtto/media+gurotto+o+obodan.docx

 

روابط الغلاف- ١
book Banner [1.2 MB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.২ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/b7QMqtXJfMtYF6x
লিংক-২ : https://archive.org/download/mediar-gurutto-o-obodan-update/Mediar-gurutto-o-obodan.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qyc8fdc667067f4b3fac8feaad9e779266
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/52a92134-5d07-4989-abdf-7c8d7186b3f3/3e6404d7fcd89f5dfce8cb3d654d2b866e65471bb108e547e97e0f30a51a1521
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/MediaGurtto/Mediar-gurutto-o-obodan.jpg

 

روابط الغلاف- ٢
Banner [1.2 MB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [১.২ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://archive.gnews.to/index.php/s/nDoYmpkiCGRX4ys
লিংক-২ : https://archive.org/download/mediar-gurutto-o-obodan-update/Mediar-gurutto-o-obodan-Banner.jpg
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/835qy7212e9b4eba14a59903350367b6461d9
লিংক-৪ : https://drive.internxt.com/sh/file/c30b5906-57e8-437b-bd52-4aa3eeaf7c23/1987f7a4edd495dba7ae0a91e8cb2ac0e02148b34d81d35e27da716b987b8013
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/MediaGurtto/Mediar-gurutto-o-obodan-Banner.jpg

 

================

 

মিডিয়া: গুরুত্ব ও অবদান

শাইখ হামদ আত-তামিমী হাফিযাহুল্লাহ

 

অনুবাদ: আল হিকমাহ অনুবাদ টিম

 

প্রকাশনা

আল হিকমাহ  মিডিয়া

 

এই বইয়ের স্বত্ব সকল মুসলিমের জন্য সংরক্ষিত। পুরো বই, বা কিছু অংশ অনলাইনে (পিডিএফ, ডক অথবা ইপাব সহ যে কোন উপায়ে) এবং অফলাইনে (প্রিন্ট অথবা ফটোকপি ইত্যাদি যে কোন উপায়ে) প্রকাশ করা, সংরক্ষণ করা অথবা বিক্রি করার অনুমতি রয়েছে। আমাদের অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। তবে শর্ত হল, কোন অবস্থাতেই বইয়ে কোন প্রকার পরিবর্তন, পরিবর্ধন, সংযোজন, বিয়োজন করা যাবে না।

 

 

ভূমিকা

 

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على أشرف الأنبياء والمرسلين وعلى آله وصحبه أجمعين.

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের জন্য, রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক নবী-রাসূলদের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর, তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর এবং তাঁর সকল সাহাবীর উপর।

 

হামদ ও সালাতের পর…

‘মিডিয়া: গুরুত্ব ও অবদান’ নামক এই পুস্তিকাটি আমি সংকলন করেছি। মিডিয়া যুদ্ধের ময়দানে লড়াইরত মুজাহিদ ভাইদেরকে তাহরিদ-উদ্বুদ্ধ করা আমার এ রচনার উদ্দেশ্য, যেন তারা নিজেদের দায়িত্বের ব্যাপারে আরো উদ্যমী ও প্রয়াসী হন; এ পথে চলতে গিয়ে তারা যত ধরনের ধারাবাহিক বিপদ-আপদের মুখোমুখি হবেন, সেই পরিস্থিতিতে যেন তারা ধৈর্য অবলম্বন করেন, নিজেদের প্রচেষ্টাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং সকল কঠোরতা সহ্য করে নেন।

আমি আল্লাহর কাছে কামনা করি, তিনি যেন এই সংকলনের মাধ্যম সকল মুসলিম; বিশেষত মুজাহিদীনকে—উপকৃত করেন  এবং একে তাঁর সন্তুষ্টির মাধ্যম হিসেবে কবুল করেন!

 

শাইখ হামদ আত-তামিমী হাফিযাহুল্লাহ

 

 

মিডিয়া

 

মিডিয়ার সংজ্ঞাঃ কারো উপর প্রভাব সৃষ্টির উদ্দেশ্যে তাকে কোন বিষয়ের বাস্তবতা জানানোর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাকে ঘিরে তথ্য সমাবেশ ঘটানো।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিরাতে নববীর আলোকে জিহাদি কাজে মিডিয়ার গুরুত্ব:

 

প্রথমত: মিডিয়ার কাজ নিঃসন্দহে সশস্ত্র জিহাদের মতই:

এক কুরাইশ ব্যবসায়ী কাফেলাকে ধাওয়া করার উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন, যা সারিয়্যাতুন নাখলাহ নামে প্রসিদ্ধ। এই সারিয়্যাতে আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র নেতৃত্বে মুসলিমরা কাফেলার সকল কুরাইশ মুশরিককে হত্যা করে মালে গনীমত নিয়ে মদীনায় ফিরে আসেন। কিন্তু ভুলবশত এই যুদ্ধটা সংঘটিত হয়েছিলো হারাম হারাম মাস তথা রজবে। কেননা আব্দুল্লাহ বিন জাহাশ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু আশংকা করছিলেন যে, যদি হারাম মাস শেষ হওয়ার অপেক্ষা করা হয়, তাহলে কাফেলা তাঁর নাগাল থেকে বের হয়ে মক্কার হারামের সীমানায় প্রবেশ করে ফেলবে, আর হারামের সীমানায় যেহেতু যুদ্ধ নিষিদ্ধ, তাই তখন তাদেরকে আর কিছু করার সুযোগ থাকবে না। ফলে হারাম মাসেই তিনি আক্রমণ পরিচালনা করেন।

উপরোক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুরাইশের মুশরিকরা পুরো আরব জুড়ে প্রচারণা শুরু করে যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাহ এবং  তাঁর সাথীরা হারাম মাসেও যুদ্ধ করে। কাফেলা আক্রমণ করে। অথচ আরবের লোকেরা পূর্ব থেকেই হারাম মাসে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকতো; এটাই ছিলো আরবদের রীতি ও নীতি। কিন্তু যখন তারা তাদের এই ‘প্রচারণা ও হৈচৈ-হামলার’ মাধ্যমে  মুসলিমদের দুর্নাম করতে শুরু করলো, তখন আল্লাহ তায়ালা নাযিল করলেন-

﴿وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّى يَرُدُّوكُمْ عَنْ دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا﴾ [البقرة: 217]

“তারা সর্বদা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতেই থাকবে, যতক্ষণ না ফিরিয়ে নিচ্ছে তোমাদেরকে তারা তোমাদের আপন ধর্ম থেকে; যদি তারা এতে সক্ষম হয়।” [সূরা বাকারাহ: ২১৭]

কুরাইশদের প্রচারণা-আক্রমণ ও দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে নাজিল করা এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাদের উপরোক্ত কর্মকে সশস্ত্র লড়াই বলে আখ্যায়িত করেছেন; অথচ বাস্তবে  মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের এই প্রচারণা-আক্রমণ ছাড়া তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে অন্য কোন সশস্ত্র যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়নি।  উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয় যে, শত্রুর মাঝে প্রচারণা বা মিডিয়ার কাজ করা সশস্ত্র লড়াইয়ের অন্তর্ভুক্ত।

এই আলোচনাটি শাইখ আবু কাতাদাহ ফিলিস্তিনী হাফিযাহুল্লাহ তাঁর এক রেকর্ডে করেছেন।

 

দ্বিতীয়ত: নবী যুগের কিছু মিডিয়া কার্যক্রম:

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মিডিয়া বা গণমাধ্যমের কাজগুলো হতো খুতবা-বক্তৃতা প্রদান, ঘটনা বর্ণনা করা, কবিতা রচনা করা, পারস্পরিক সাক্ষাত বা বাজারে উপস্থিত হয়ে খবরাখবর আদান-প্রদান করা, প্রতিনিধি দলকে স্বাগত জানানো, সামরিক শক্তির প্রদর্শনী ও বিরোধীদের দাবি অপনোদন করার মাধ্যমে।

অতঃপর খৃষ্টীয় পনের শতকে প্রেস-ছাপাখানা আবিষ্কার হলে মিডিয়ার কার্যক্রম উন্নীত হয় নূতন এক স্তরে। তখন মানুষের পড়া ও শোনার জন্যে চালু হয় প্রিন্ট এবং ভয়েস মিডিয়া। উনিশ শতকের শেষের দিকে মানুষ সফল হয় কণ্ঠ স্থানান্তরে, বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ১৯২০ সালে আবিষ্কৃত হয় রেডিও, ১৯৫২ সালে আবিষ্কৃত হয় টিভি, এর প্রায় ২০ বছর পর শুরু হয় স্যাটেলাইটের যুগ এবং ইলেকট্রনিক তথ্য উপাত্ত আদান-প্রদানের যুগ।

আমরা ফিরে আসি নবী যুগের মিডিয়ার আলোচনায়। সেই যুগে মিডিয়ার অন্যতম মাধ্যম ছিলো শে’র বা কবিতা রচনা। নবী যুগের কবিতা সম্বন্ধে কিছু হাদীস উল্লেখ করার পর কিছু কবিতা নিচে তুলে ধরা হলো।

বুখারী রহিমাহুল্লাহ হযরত বারা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম হাসসান বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলেন-

« اهْجُهُمْ – أوْ هَاجِهِمْ وجِبْرِيلُ معكَ »

তুমি কুরাইশদের কুৎসা বর্ণনা করো, যেমনটা তারা করছে আমাদের, জিবরীল আলাইহিস সালাম তোমার সাথে আছেন।” [সহীহ বুখারী: ৩২১৩]

অপর এক বর্ণনায় এসেছে, বনু কুরাইজার যুদ্ধের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন-

« اهْجُ المُشْرِكِينَ؛ فإنَّ جِبْرِيلَ معكَ »

মুশরিকদের নিন্দা করো, নিশ্চয়ই জিবরীল তোমার সাথে আছেন”। [সহীহ বুখারী: ৪১২৪]

ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

«اهْجُوا قُرَيْشًا؛ فإنَّه أشَدُّ عليها مِن رَشْقٍ بالنَّبْلِ»

“কুরাইশদের বিরুদ্ধে তোমরা ব্যাঙ্গাত্তক কবিতা রচনা কর। কেননা, তা তাদের বিরুদ্ধে তীর নিক্ষেপের চাইতে অধিকতর শক্তিশালী।”

এরপর তিনি আবদুল্লাহ ইবন রাওয়াহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র কাছে এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করলেন। তিনি তাকে বললেন, ওদের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গাত্মক কবিতা রচনা কর। তিনি ব্যাঙ্গ কবিতা আবৃতি করলেন, কিন্তু তিনি তাতে খুশী হলেন না। তখন তিনি কা’ব ইবনু মালিককে ডেকে পাঠালেন। এরপর তিনি হাসসান ইবনু সাবিতের কাছে লোক পাঠালেন। সে যখন তাঁর কাছে গেল তখন হাসসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, তোমাদের জন্য সঠিক সময় এসেছে যে, তোমরা সেই পশুরাজ সিংহকে ডেকে পাঠিয়েছ, যে তাঁর লেজ দ্বারা সাবাড় করে দেয়। এরপর তিনি তাঁর জিহবা বের করে নাড়াতে লাগলেন।

এরপর বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আমার জিহ্বা দ্বারা ওদেরকে ফেড়ে টুকরো টুকরো করে দেব, যেমনিভাবে হিংস্র বাঘ তার থাবা দিয়ে চামড়া খসিয়ে ফেলে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

«لا تَعْجَلْ؛ فإنَّ أبا بَكْرٍ أعْلَمُ قُرَيْشٍ بأَنْسابِها، وإنَّ لي فيهم نَسَبًا، حتَّى يُلَخِّصَ لكَ نَسَبِي»

“হে হাসসান! তুমি তড়িঘড়ি করো না। কেননা, আবূ বকর (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) কুরাইশদের বংশলতিকা সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত আছেন। কারণ, তাদের মধ্যে আমারও আত্নীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সুতরাং তিনি এসে আমার বংশ তোমাকে পৃথক করে বাতলে দিবেন।”

এরপর হাসসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর (আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র) কাছে গেলেন এবং (বংশলতিকা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হয়ে) ফিরে এলেন। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি আপনার বংশলতিফা সম্পর্কে আমাকে অবহিত করেছেন। সেই মহান সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন, আমি আপনাকে তাদের মধ্য থেকে এমন সুকৌশলে বের করে আনব, যেমনিভাবে আটার মণ্ড থেকে সূক্ষ্ম কেশাগ্র বের করা হয়।

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন, এরপর আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাসসান সম্পর্কে বলতে শুনেছি যে,

«إنَّ رُوحَ القُدُسِ لا يَزالُ يُؤَيِّدُكَ ما نافَحْتَ عَنِ اللهِ ورَسولِهِ»

“যতক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে কাফিরদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে থাকবে, ততক্ষন পর্যন্ত রুহুল কুদ্দুসঅর্থাৎ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) সারাক্ষণ তোমাকে সাহায্য করতে থাকবেন।”

তিনি [আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা] আরও বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে,

«هَجاهُمْ حَسَّانُ فَشَفَى واشْتَفَى»

“হাসসান তাঁদের নিন্দা বর্ণনা করে নিজের অন্তর শান্ত করেছে এবং মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত করেছে।”

হাসসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন-

هَجَوْتَ مُحَمَّدًا فأجَبْتُ عنْه … وعِنْدَ اللهِ في ذاكَ الجَزاءُ

“তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিন্দাবাদ করছ, আর আমি তার পক্ষ থেকে জবাব দিচ্ছি, এতে আছে আল্লাহর কাছে পুরষ্কার ও প্রতিদান।”

কবিতার শেষ পর্যন্ত…[1] [সহীহ মুসলিম: ২৪৯০]

ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ আবু সালামা বিন আব্দুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি হাসসান বিন সাবেত আনসারী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে সাক্ষী রেখে বলতে শুনেছেন যে, “ হে আবু হুরাইরা, আমি তোমাকে দৃঢ়ভাবে জিজ্ঞেস করছি যে, তুমি কি শোননি যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يا حَسَّانُ، أجِبْ عن رَسولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ، اللَّهُمَّ أيِّدْهُ برُوحِ القُدُسِ»

হে হাসসান, আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে তুমি কুরাইশদের জবাব দাও। হে আল্লাহ, আপনি হাসসানকে জিবরীলের মাধ্যমে সাহায্য করেন।”

আবু হুরাইরা বলেন, হ্যাঁ, আমি এটা শুনেছি। [সহীহ বুখারী: ৪৫৩]

আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতিরক্ষার্থে হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র দাঁড়ানো প্রচারণা বা মিডিয়ার গুরুত্বের প্রতি জোর নির্দেশ করে। তাই যে-ই এই কাজ আঞ্জাম দিবে তাঁর সাহায্যে জিবরীল আলাইহিস সালাম থাকবেন। এর ধারাবাহিকতায় আমরা আল্লাহর কাছে কামনা করি যে, যারা হাসসান বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র এ পথ অনুসরণ করে মুশরিকদের বিরুদ্ধে জবানের জিহাদ করবে, তিনি তাদেরকে সেই মর্যাদা দান করবেন।

হাসসান বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক মুশরিকদের বিরুদ্ধে কুৎসা বলার ব্যাপারে ইমাম ইবনে বাত্তাল রহিমাহুল্লাহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থতে উল্লেখ করেন, “মুশরিকদেরকে নিন্দা করে তাদের থেকে প্রতিশোধ নেয়া, তাদের কুফুরী এবং মন্দ কর্মগুলো স্মরণ করিয়ে দেয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বোত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত। হাসসান বিন সাবেত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে বলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা খেয়াল করুন- তুমি ওদের কুৎসা বলে যাও, জিবরীল তোমার সাথে আছেন। হে আল্লাহ, আপনি হাসসানকে সাহায্য করুন, জিবরীলের মাধ্যমে।” এ কাজ এবং যে এ কাজ আঞ্জাম দিবে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদার জন্যে নবীজির এই কথাগুলোই যথেষ্ট। [শরহুল বুখারীঃ ৯/৩২৬]

কা’ব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললাম, “হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তায়ালা তো কবিতার নিন্দা করে আয়াত নাযিল করেছেন! তখন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«إنَّ المؤمنَ يُجاهِدُ بسيفِه ولسانِه والَّذي نفسي بيدِه لكأنَّما ترمونَهم نَضْحَ النَّبلِ»

মুমিন জিহাদ করে নিজ তলোয়ার ও জিহ্বা দ্বারা। ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা নিজেদের কবিতার মাধ্যমে তাদের উপর শুধু তীর বাণই নিক্ষেপ কর।’” [ইবনে হিব্বানঃ ৫৭৮৬, সনদ সহীহ]

এ হাদীসের ব্যাখায় মোল্লা আলী ক্বারী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “এর অর্থ হচ্ছে, কাফেরদের বিরুদ্ধে তাদের কুৎসা বলা, কাফেরদের উপর তীরের আঘাতের ন্যায় প্রভাব সৃষ্টি করে। [মিরকাতুল মাফাতিহঃ ৭/৩০১৮]

ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ ও নাসায়ী রহিমাহুল্লাহ আনাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কাযা উমরা আদায়ের উদ্দেশে মক্কায় প্রবেশ করলেন, তখন কবি আবদুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাঁর সামনে সামনে এ কবিতা বলে হেঁটে যাচ্ছিলেনঃ

خَلّوا بني الكفار عن سبيلهِ*اليومَ نضرِبُكُم على تنزيلهِ

ضَربا يُزيلُ الهامَ عن مقيلِهِ*ويذْهلُ الخليلُ عن خليلهِ

“হে বনী কুফফার! ছেড়ে দে তাঁর চলার পথ।

আজ মারবো তোদের কুরআনের ভাষায় মারার মতো।

কল্লা উড়ে যাবে তোদের গর্দান হতে,

বন্ধু হতে বন্ধু হবে পৃথক তাতে

উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তাকে বললেন, হে ইবনু রাওয়াহা! তুমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে আল্লাহ তায়ালার হেরেমের মধ্যে কবিতা বলছ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-

« خلِّ عنهُ فلهو أسرعُ فيهم من نضْحِ النَّبلِ »

“হে উমার! তাকে বলতে দাও। কেননা এই কবিতা তীরের চাইতেও দ্রুতগতিতে গিয়ে তাদেরকে (কাফিরদের) আহতকারী।” [তিরমিযী: ২৮৪৭, নাসায়ী: ২৮৭৩]

মুবারকপুরী রহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘তুহফাতুল আহওয়াযী’ নামক গ্রন্থে আল্লাহর রাসূলের এই কথার ব্যাখ্যা করে বলেন যে, “তাদের উপর অধিক দ্রুতগামী” অর্থাৎ কাফেরদের উপর।” নিক্ষেপিত তীরের চেয়েও বেশি” অর্থাৎ তাঁর আবৃত্তি করা কবিতা তাদের উপর দ্রুতগামী তীরের চেয়েও বেশী দ্রুত আঘাত করে। প্রভাব সৃষ্টি করে।” [তুহফাতুল আহওয়াযীঃ ৮/ ১১২]

ইমাম ত্ববারী তাঁর ‘তাহযিবুল আসার’ নামক কিতাবে ইবনে সিরীন রহিমাহুল্লাহ এর মুরসাল রেওয়াতে বর্ণনা করেন যে, মুশরিকদের তিনজন লোক – আমর বিন আস (তিনি তখনো মুসলিম হননি), আব্দুল্লাহ বিন যাবআরী ও আবু সুফিয়ান বিন হারেস বিন আব্দুল মুত্তালিব—রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে। তখন মুহাজির সাহাবা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম আজমাইন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আলী রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে আমাদের পক্ষ থেকে ঐ মুশরিকদের কটু কথার জবাব দেয়ার আদেশ দিবেন না? উত্তরে নবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-

«ليس علي هنالك»

আলী ওখানে কিছুই করতে পারবে না”

অতঃপর বললেন-

«إذا القوم نصروا النبي بأيديهم وأسلحتهم، فبألسنتهم أحق أن ينصروه»

যেই জাতি নবীকে নিজ শক্তি ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করেছে, তারা নিজেদের জবান দিয়ে নবীকে সাহায্য করার দাবি তো আরও বেশি!

তখন আনসাররা (রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেছেন। অতঃপর তারা হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র কাছে নবীজীর ঐ কথা পৌঁছিয়ে দিলে তিনি নবীজীর সামনে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! ঐ সত্ত্বার শপথ যিনি আপনাকে হক্ব সহ প্রেরণ করেছেন, ‘সান’আ ও বসরার মাঝে সবকিছু আমার কবিতার কারণে আমার হয়ে যাক তা আমি চাই না। নবীজী বললেন-

«أنت لها »

তোমার জন্যে এমনটাই হবে।”

তখন হাসসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! কুরাইশদের বংশের ব্যাপারে তো আমার কোন জ্ঞান নেই!। নবীজি তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে বললেন-

«أخبره عنهم، ونقب له في مثالبهم»

কুরাইশদের বংশের ব্যাপারে তাকে বলে দাও এবং তাকে কুরাইশদের কিছু দোষ দেখিয়ে দাও।”

তখন হাসসান, আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহ এবং কাব বিন মালেক তাদের কটুক্তি বর্ণনা করেন।” [তাহযিবুল আসার: ৯৭৬]

—হাদিসটি মুরসাল, তবে ইবনে সিরীনের মুরসাল সূত্র সবচেয়ে শক্তিশালী মুরসাল সূত্রের অন্তর্ভুক্ত।

 

মুশরিকদেরকে শক্তি প্রদর্শনের ব্যাপারে কিছু হাদীস:

ফাতহে মক্কার দিন আবু সুফিয়ানের সামনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লামের সৈন্য-শক্তি প্রদর্শন।

বুখারী রহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা-কে বললেন-

«احبس أبا سفيان عند خطم الجبل حتى ينظر إلى المسلمين»

“আবূ সুফিয়ানকে পথের একটি সংকীর্ণ জায়গায় (পাহাড়ের কোণে) দাঁড় করাবে, যেন সে মুসলিমদের সমগ্র সেনাদলটি দেখতে পায়।”

তাই আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা তাকে যথাস্থানে থামিয়ে রাখলেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে আগমনকারী বিভিন্ন গোত্রের লোকজন আলাদা আলাদাভাবে খণ্ডদল হয়ে আবূ সুফিয়ানের সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করে যেতে লাগল।

এভাবে মুসলিমদের সৈন্য আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে যাওয়ার কারণে, তাঁর অন্তরে এর বিরাট প্রভাব সৃষ্টি হয়। তাঁর অন্তর ও তাকে ঘিরে রাখা এই ভয় এতই প্রবল ছিলো যে, যখন মুহাজির ও আনসারদের সৈন্য দল তাঁর সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিল, তখন সে বলেই বসলো, ‘এদের মুকাবিলা করার মত শক্তি ও সামর্থ্য কারোর-ই নেই।’ [সহীহ বুখারী: ৪২৮০]

নিজেদের সৈন্য ও অস্ত্র প্রদর্শনের এই পদ্ধতি বর্তমান আধুনিক সৈন্য বাহিনীর মাঝে আজও চালু আছে।

ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ ও ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে,  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে মক্কায় আসলেন উমরা করতে, কিন্তু মদীনার জ্বরের কারণে তখন তাদের শরীর ছিলো দুর্বল। ফলে মুশরিকরা মুসলিমদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে বলাবলি করতে লাগলো যে, আগামীকাল তোমরা এমন এক জাতির সাক্ষাৎ পাবে (মদীনার) জ্বর যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে, জ্বরের কারণে যারা অনেক বিপদে আছে। (পরের দিন) তারা তামাশা দেখার জন্যে পাথরের আড়ালে বসে পড়লো। এমতাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে আদেশ করলেন, তারা যেনো তিন চক্কর ‘রমল’ করে ও দুই রোকনের মাঝে দ্রুত হাটে; যাতে মুশরিকরা মুসলিমদের শক্তি দেখতে পায়, তাঁদের সামনে মুসলিমদের শক্তি প্রদর্শিত হয়। এরপর মুসলিমরা যখন এভাবে তাওয়াফ করতে লাগলো, তখন মুশরিকরা বলা বলা শুরু করলো যে, ‘এদের ব্যাপারে তোমাদের ধারণা ছিলো যে, জ্বর তাদেরকে দুর্বল বানিয়ে দিয়েছে, অথচ তারা অমুক অমুক থেকেও বেশি শক্তিশালী’। [সহীহ বুখারী: ১৬০২, সহীহ মুসলিম: ১২৬৬]

মুসলিমরা এখনো মুশরিকদের সামনে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে থাকে, যেন এর মাধ্যমে মুশরিকদের মনে মুসলিমদের শক্তির প্রভাব পড়ে।

 

বিরোধীদের প্রতিহত করা এবং তাদের রাগ বাড়িয়ে তোলার ব্যাপারে বর্ণিত কিছু হাদীস:

উহুদ যুদ্ধের শেষের দৃশ্যগুলো যা ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ বারা বিন আযেব রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণনা করেন।

… অতঃপর আবু সুফিয়ান গর্বভরে উচ্চস্বরে বললো, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কি জীবিত আছে এখনো? নবীজি বললেন-

« لا تُجِيبُوهُ »

“তোমরা এর কথার জবাব দিও না!”

তখন সে আবার বলে উঠলো, আবু কুহাফার ছেলে কি জীবিত আছে? নবীজি বললেন,

« لا تُجِيبُوهُ »

“তোমরা এর কথার জবাব দিও না!”

তখন সে আবার বললো, উমার বিন খাত্তাব কি জীবিত আছে? কোন জবাব আসল না। (মুসলিমদের পক্ষ থেকে কোন উত্তর না পেয়ে) সে বলে উঠলো, ‘এদের সবাই মারা গেছে; যদি জীবিত থাকতো, তাহলে অবশ্যই জবাব দিতো।’

এ কথা শোনার পর উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বলে ফেললেন, হে আল্লাহর শত্রু, তুমি মিথ্যুক, মিথ্যা কথা বলছ তুমি। আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করার উৎস এখনো বাকী রেখেছেন।

তখন আবু সুফিয়ান বলে উঠলো, ‘হুবালের জয়’। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে বললেন

«أجِيبُوهُ »

“তোমরা এর কথার জবাব দাও!”

সাহাবারা বললেন, কি বলে জবাব দিবো? নবীজী শিখিয়ে দিয়ে বললেন,

« قُولوا: اللَّهُ أعْلَى وأَجَلُّ »

“তোমরা বলো: আল্লাহ সর্বোচ্চ ও সবচেয়ে সম্মানিত।”

আবু সুফিয়ান বললো, আমাদের উযযা আছে, কিন্তু তোমাদের কোন উযযা নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«أجِيبُوهُ »

“তোমরা তার এ কথার জবাব দাও!”

সাহাবারা বললেন, কি বলে জবাব দিবো? নবীজী বললেন,

« قُولوا اللَّهُ مَوْلَانَا، ولَا مَوْلَى لَكُمْ..»

“তোমরা বলো, আল্লাহ আমাদের অভিভাবক, আর তোমাদের কোন অভিভাবক নেই।.. [সহীহ বুখারী: ৪০৪৩]

উপরোক্ত হাদীসে আবু সুফিয়ানের কথার পরিপ্রেক্ষিতে উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র জবাবের আলোচনা করতে গিয়ে যাদুল মাআদ গ্রন্থকার বলেন,

‘ওহে আল্লাহর শত্রু তুমি মিথ্যা বলছ,’ উমার রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-র এই  জবাবের মাধ্যমে শত্রুদেরকে লাঞ্ছিত করা, তাদেরকে ভয় না পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করা,  মুসলিমদের বীরত্ব জাহির করা, এমন করুণ অবস্থায়ও শত্রুর প্রতি সজাগ থাকা কুরাইশদেরকে মুসলিমদের শক্তিমত্তা ও অবিচলতা দেখিয়ে দেয়, শত্রু পক্ষের সামনে ভীত, দুর্বল ও হীনমন্য না হওয়া এবং কুরাইশ কাফেরদের লাঞ্ছনার উৎসের বাকী থাকার পরিচয় পাওয়া যায়। এই তিনজনের জীবিত থাকার কথা জানানোর মাধ্যমে আবু সুফিয়ান এবং তাঁর গোত্র কুরাইশদের অন্তরে তিনজনের মৃত্যুতে যে সুখের আনন্দ হয়েছিলো, তা দূর হয়ে ভয়ের সৃষ্টি হয়েছে এবং মুসলিমদের শত্রুদের রাগ বৃদ্ধি পেয়েছে;  মুসলিমদের শক্তি একত্রিত হয়েছে।

আবু সুফিয়ান যখন তিনজনের কথা আলাদা আলাদা জানতে চেয়েছিলো, তখন জবাব না দিয়ে যখন সে একসাথে তিনজনের কথা বলেছে, তখন জবাব দেয়ার মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং এই তিনজনের বেঁচে থাকার ব্যাপারে তার প্রশ্নগুলো ছিলো শত্রুদের সর্বশেষ তীর এবং ষড়যন্ত্র, কিন্তু নবীজি জবাব না দিয়ে ধৈর্য ধরতে বলে তাদের ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন। অতঃপর তিনজনের কথা একসাথে বলার দ্বারা উমারের জবাব তাদের ষড়যন্ত্রের তীরকে তাদের দিকেই ফিরিয়ে দিয়েছে। তাই, প্রথমবার জবাব না দিয়ে চুপ থাকা এবং দ্বিতীয়বার জবাব দেয়াটা উত্তম হয়েছে।

এ ছাড়াও আবু সুফিয়ানের প্রথমবারের প্রশ্নে জবাব না দেয়ার মাধ্যমে তাকে ছোট ও অপমানিত করা হয়েছে। অতঃপর যখন সে তিনজনের মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হলো, অহংকার করতে উদ্বুদ্ধ হলো, তখন উমারের এই জবাব তাকে দ্বিতীয়বার অপমানিত  ও লাঞ্ছিত করেছে।

আবু সুফিয়ানের কথার জবাব দেয়ার দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদেশ “তোমরা তার কথার জবাব দিও না” এর অমান্যও হয়নি, কেননা তিনি তো আবু সুফিয়ানের নিম্নোক্ত জিজ্ঞাসার জবাব দিতে নিষেধ করেছিলেন যে, ‘তোমাদের মাঝে কি মুহাম্মাদ জীবিত আছেন? অমুক জীবিত আছেন?’ অতঃপর আবু সুফিয়ান যখন বললো, ‘এরা সবাই নিহিত হয়েছে’— এর জবাব দিতে তিনি নিষেধ করেননি। শেষ কথা হলো, সর্বাবস্থায়ই প্রথমবার জবাব না দিয়ে দ্বিতীয়বারে জবাব দেয়াটা উত্তম হয়েছে।” [যাদুল মায়াদঃ ৩/১৮১]

অপরদিকে নবী যুগে আমরা যদি মুশরিকদের মিডিয়ার কাজ বা প্রচার কাজের একটি চিত্র সন্ধান করি, তাহলে আমরা বেশ কিছু চিত্র দেখতে পাই। যেমন-

মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা, যেমনটা ঘটেছে সারিয়্যাতুন নাখলাহ’য়।

এমনিভাবে মুসলিমদের ব্যাপারে জনমতকে বিভ্রান্ত করা, তাদেরকে ক্ষেপিয়ে তোলা। যেমনটা করত কুরাইশের কাফেররা। তারা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে যাদুকর, জ্যোতিষী, কবি, পাগল এবং অন্যান্য আরো নানাভাবে অপবাদ দিয়ে মানুষকে তাঁর থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সচেষ্ট থাকতো। এর কিছু বিবরণ আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজীদে উল্লেখ করেছেন।

 

 

 

 

 

মিডিয়ার অবদান:

 

মিডিয়ার এই অবদানগুলো একত্রিত করার পর লক্ষ্য করলাম যে, কুরআন-হাদীসে প্রচার-মাধ্যম বা মিডিয়া নিয়ে বর্ণিত বিভিন্ন ফযীলতগুলোই মূলত মিডিয়ার অবদান। অবদানগুলো হচ্ছে সাধারণত মিডিয়া সংক্রান্ত গুরুত্বপুর্ণ কাজ। তবে এর অধিকাংশই মিডিয়ার ফযীলত হতে পারে। সামনের আলোচনাগুলোতে এ ব্যাপারটি আরো স্পষ্ট হবে, ইনশা আল্লাহ।

 

প্রথমত: মুখের মাধ্যমে জিহাদ করা:

শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের দু’টি স্তম্ভ রয়েছে; এই দু’টি স্তম্ভের অন্যতম একটি  হচ্ছে, মিডিয়া জিহাদ।’ জিহাদের প্রথম স্তম্ভ হলো মুখের মাধ্যমে জিহাদ করা; এটাকে মুখের অস্ত্র বা কথার জিহাদও বলা যায়। আর দ্বিতীয় স্তম্ভটি হলো, ‘হাতের মাধ্যমে জিহাদ করা।’ এ দু’টি ছাড়া সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করা সরাসরি শত্রুর বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা মৌলিক কোন অস্ত্র না, বরং এটি হচ্ছে জিহাদের বাকী দুই রুকন বা স্তম্ভের সাহায্যকারী। তবে জিহাদ বিল মাল বা সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ কখনো কখনো সরাসরি জিহাদেও প্রভাব ফেলে, যেমন- অবরোধকালীন সময়ে ইত্যাদি।

তবে মুল কথা হলো, সম্পদের মাধ্যমে জিহাদ করা সরাসরি কোন অস্ত্র না, বরং এটি হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ একটি সাহায্যকারী অস্ত্র। আর হ্যাঁ, অস্ত্রের ব্যপারটি ভিন্ন।

তবে মুখের জিহাদ হচ্ছে, জিহাদের মৌলিক দু’ রকনের একটি, যেমনটি ক্বাব বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র হাদীসে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবিতার ক্ষেত্রে বলেছেন-

« إِنَّ المؤمِنَ يُجَاهِدُ بِسَيْفِهِ وَلِسانِهِ »

নিশ্চয়ই, মুমিন তাঁর মুখ ও তলোয়ারের মাধ্যমে জিহাদ করে থাকে।”

এরপর আরো স্পষ্ট করে বলেছেন যে, মুখের মাধ্যমে জিহাদ করা হাত বা অস্ত্রের মাধ্যমে জিহাদের সমপর্যায়ের। তিনি বলেছেন-

« والَّذي نفسي بيدِه لكأنَّما ترمونَهم نَضْحَ النَّبلِ »

ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা তো তাদের উপর তীর বাণ নিক্ষেপ করছো শুধু।”

আর বাস্তবেও জিহাদী কাজের অস্তিত্ব ও বিজয়ের অর্ধেক হলো ‘মিডিয়া জিহাদ।’  মিডিয়া জিহাদের গুরুত্ব বোঝার জন্যে প্রচার-প্রসার হীন একটি জিহাদী অপারেশন ও প্রচার-প্রসার করে একটি জিহাদী অপারেশনের পার্থক্য বুঝতে পারো।

এ পর্যায়ে আমরা কিছু ভাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি ভুল চিন্তাধারার স্পষ্টকরণ আবশ্যক মনে করছি। তা হচ্ছে এই যে, তারা ক্বিতালকে শুধু সশস্ত্র লড়াই ও যুদ্ধের ময়দানেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেন, এর বাহিরে জিহাদের অন্যান্য কাজকে তুচ্ছ মনে করেন বা ভুলে যান। অথচ এগুলোর ব্যাপারেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস এসেছে, যেখানে তিনি এ রকম জিহাদের কাজের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এ রকম কিছু নস তো আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি।

সশস্ত্র লড়াইয়ের মাঝে জিহাদকে সীমাবদ্ধ করার এই চিন্তা একটি সংকীর্ণ চিন্তাধারা! বিশেষত এই জামানায়। কেননা এখন যুদ্ধের মাধ্যম ও পদ্ধতির মাঝে নতুনত্ব এসেছে, যুদ্ধের মাধ্যম এখন অনেক। তাই, মুখোমুখি লড়াই ও সশস্ত্র কার্যক্রমকেই শুধুমাত্র জিহাদ বলা যাবে না, জিহাদকে এর মাঝে সীমাবদ্ধ করা যাবে না। কেননা মিডিয়ার ব্যপকতার কারণে বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, কোন একটি মিডিয়া – প্রচার মাধ্যম একাধিক সশস্ত্র কার্যক্রম থেকে বেশী প্রভাবশালী হয়ে থাকে। তাই, মিডিয়ার মাধ্যমে করা যুদ্ধ কোনভাবেই প্রচণ্ডতায় কম হবে না ময়দানে সশস্ত্র লড়াই থেকে, বরং কখনো কখনো আরও বেশি হবে! আর এই ব্যাপারে দিকনির্দেশনা ও আদেশ তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-ই দিয়ে গেছেন-

« اهْجُوا قُرَيْشًا؛ فإنَّه أشَدُّ عليها مِن رَشْقٍ بالنَّبْلِ »

তোমরা কুরাইশ কাফেরদের নিন্দা বর্ণনা করো, কেননা এটা তাদের উপর তীর নিক্ষেপের চেয়েও বেশী তীব্রতর!

এবং আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে বলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীটি দেখুন-

«فوالذي نفسي بيده لكلامه أشد عليهم من وقع النبل»

ঐ সত্ত্বার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কথা কুরাইশদের উপর তীর নিক্ষেপ করার চেয়ে বেশী প্রচণ্ডতর।”

সশস্ত্র লড়াইয়ের চিন্তাধারায় জিহাদকে সীমাবদ্ধ করে ফেলার এই চিন্তা বাস্তবতা না বোঝার কারণেই হয়ে থাকে। কেননা আজকের জিহাদী বাস্তবতা হচ্ছে, যে সমস্ত ব্যক্তিগণ মিডিয়ার মাধ্যমে জিহাদ করে যাচ্ছেন, তারা সশস্ত্র মুজাহিদ হওয়ার সাথে সাথে মুখের মাধ্যমেও জিহাদ করে যাচ্ছেন। ময়দানের মিডিয়া-ব্যক্তিত্বের সাথীগণ সশস্ত্র মুজাহিদ এতে কোন সন্দেহ নেই, সাথে সাথে তারা জবানের মাধ্যমে জিহাদ করার কারণেও মুজাহিদ।

শাইখ আবু কাতাদাহ হাফিযাহুল্লাহ বলেন

“সততা ও বৈধতার দিক থেকে করা মুজাহিদদের অনেক ইলমী ও আমলী কাজের প্রভাব ও ক্রিয়া হারিয়ে যেত, যদি না তাদের পিছনে থাকতো এমন একটি দল, যারা লেখার মাধ্যমে তাদের কাজগুলোকে প্রকাশ করেছে, বিভিন্ন কাজকে ময়দানের মুজাহিদদের দিকে সম্বন্ধিত করেছে। আল্লাহর কসম! যদি আমি বলি যে, মিডিয়ায় কাজ করা এই ভাইয়েরা সরাসরি সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত এমন অনেক মুজাহিদের চেয়েও মর্যাদায় অগ্রগামী হবে, তাহলে আমি মোটেও ভুল বা অত্যুক্তি কিছু বলবো না! কেননা আমাদের সম্পাদিত অনেক কাজই হারিয়ে যেতো, বা অন্যরা নিজেদের দিকে সম্বোধিত করে ফেলতো; যদি না মিডিয়ার এই ভাইয়েরা না থাকতেন, যারা সততা ও নিষ্ঠার সাথে আমাদের কাজগুলোকে মানুষের কাছে পৌঁছিয়েছেন, আমাদের কাজগুলোকে সুদৃঢ় করেছেন।”

অতঃপর তিনি বলেন:

“নিঃসন্দেহে মিডিয়ার ময়দানে করা কিছু ভুল কখনো কখনো অনেক সশস্ত্র লড়াইয়ের ময়দানে করা ভুল থেকেও মারাত্মক ও পরিণামে মন্দ হয়ে থাকে।”

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর পথে দাওয়াহ করা ও সৈনিক তৈরী করা:

মিডিয়ার মূল কাজ-ই হচ্ছে আল্লাহর পথে দাওয়াহ করা ও সৈনিক তৈরী করা।  কারণ, মিডিয়ার কাজের মূলই হচ্ছে, ছোট থেকে ছোট কাজের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা এবং উম্মাহকে জাগিয়ে তোলা, যেন তারা ফিরে আসে তাদের দ্বীনের দিকে এবং শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদের পথে। তাই এ কথা বলা যায় যে, প্রত্যেক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব-ই দাঈ, কিন্তু প্রত্যেক দাঈ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব না! কেননা, মিডিয়া-ভাইদের রিলিজ করা প্রতিটি বিষয় হচ্ছে এমন এক পাত্র, যা দ্বারা ‘জিহাদী জামাত’ উম্মাহকে উদ্বুদ্ধ করে, ইচ্ছেমত উম্মাহর সদস্যদেরকে নিজের সাথে সম্পৃক্ত করে নিতে পারে। এমন কত মানুষ আছেন, যারা কখনো জিহাদ ও মুজাহিদদেরকে জানত না, তারা কখনো মুজাহিদদের সাহায্য করেনি এবং তাদের সাথে দেখা করেনি, কিন্তু মিডিয়ার বিভিন্ন প্রকাশনা তাদেরকে মুজাহিদদের কাতারে এনে শামিল করে দিয়েছে।

দাঈর মিডিয়া বিবর্জিত দাওয়াহ-কার্যক্রমের উপর মিডিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের আরেকটি দিক হলো, মিডিয়ার দাওয়াত সাধারণত একটি প্রশস্ত অঙ্গনে হয়ে থাকে এবং পুরো উম্মাহকে সম্বোধন হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে পুরো উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দেয়া যায়, তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা যায়। আর মিডিয়ার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করা শুধু দাওয়াতি কাজ করে উদ্বুদ্ধ করার চেয়ে বেশী প্রভাবশীল ও কার্যকরী হয়ে থাকে। কেননা, দাঈ সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু মানুষকে সম্বোধন করে দাওয়াহর কাজ করে থাকে, অপরদিকে একই পরিমাণ শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করে মিডিয়ার ভাইয়েরা আরো বেশী কাজ করার সুযোগ পেয়ে থাকেন—যেমনটা কেউ কেউ বলেছেন।

মিডিয়ার মাধ্যমে স্বল্প শক্তি ও প্রচেষ্টা ব্যয় করে অধিক সংখ্যক মানুষের কাছে পৌছা যায়। যেমন- আমরা যদি কোন একটি লেখা বা রিসালাহ নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই দাঈদের মাধ্যমে, তাহলে এর জন্যে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ দাঈ, সময়, পরিশ্রম ও সফর করার মত অনেক বিষয়ের প্রয়োজন পড়বে। আবার অনেক সময় এমন হয় যে, পরিস্থিতির শিকার হয়ে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও আমাদের অনেক দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে মিডিয়া আমাদেরকে এই সুযোগ দেয় যে, একজন মাত্র ভাই তাঁর নিজ অবস্থানে থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ চেষ্টা ব্যয় করে লক্ষ-লক্ষ মানুষের কাছে তাঁর বার্তা পৌঁছে দিতে পারে।

আমাদের এই আলোচনার দ্বারা এটা বোঝার কোন অবকাশ নেই যে, দাঈ ভাইয়েরা আল্লাহর দ্বীনের প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে চেষ্টার ত্রুটি করে; বরং আমাদের উদ্দেশ্য হলো, আমরা যখন মিডিয়ার মাধ্যমে কাজ করি, তখন দাওয়াতের সুযোগ ও মানুষের কাছে বার্তা পৌঁছানোর সুবিধা বেশী থাকে।

শেষ কথা হলো, দাওয়াত ও দাঈর ফযীলত নিয়ে কুরআনে যত আয়াত এসেছে, তাঁর সবই মিডিয়া-কর্মী ভাইদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যাবে। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

﴿وَمَنْ أَحْسَنُ قَوْلًا مِمَّنْ دَعَا إِلَى اللَّهِ وَعَمِلَ صَالِحًا وَقَالَ إِنَّنِي مِنَ الْمُسْلِمِينَ﴾ [فصلت: 33]

তাঁর কথা থেকে আর কার কথা অধিক উত্তম হতে পারে, যে মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে এবং বলে আমি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পনকারী”। [সূরা ফুসসিলাত: ৩৩]

অন্য আয়াতে তিনি বলেন-

﴿قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي﴾ [يوسف: 108]

হে নবী! আপনি বলুন, এটা আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীরা জেনে-বুঝে আল্লাহর পথে আহ্বান করি।” [সূরা ইউসুফঃ ১০৮]

কতক ভাই বলেছেন,  যে দাওয়াত মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্যে দাঈ খুঁজে পায় না, এমন দাওয়াত হচ্ছে ‘বন্ধ্যা’। এমন দাওয়াত কিছু শিক্ষা-সমাবেশ বা গ্রুপ-স্টাডির মাঝেই ঘুরপাক খেতে খেতে নিঃশেষ হয়ে যায়; তাঁর কোন আহ্বান ও আবেদন থাকে না।

 

তৃতীয়ত: মানুষের কাছে দ্বীন পৌঁছানো, তাদেরকে দ্বীন শেখানো এবং জীবনের নানা অঙ্গনের দিক নির্দেশনা দেয়া।

অর্থাৎ, মানুষের সামনে সত্যকে স্পষ্ট করা, সত্যের সৌন্দর্য ও দীপ্তি প্রকাশ করা, মিথ্যার মুখোশ উন্মোচন করা এবং এর মন্দ দিকগুলো সকলের সামনে তুলে ধরার এই অঙ্গনে মিডিয়ার অবদান রয়েছে মৌলিকভাবে। বরং মিডিয়া শব্দের মূল ধাতুর মাঝেই রয়েছে এর অর্থ, অর্থাৎ প্রকাশ করা।

মানুষকে দ্বীন শেখানো, দ্বীন পৌঁছানো, সত্য ও কল্যাণের পথের শিক্ষা তাদের কাছে স্পষ্ট করা, সে পথে চলতে তাদেরকে উৎসাহিত করা, দিকনির্দেশনা দেয়া, জাতির মাঝে সচেতনতার বিকাশ ঘটানো, উম্মাহর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করা, এ অবস্থায় শরয়ীভাবে তাদের উপর যে হুকুম-আহকাম বা বিধান আবশ্যক হয় – সে সম্পর্কে জানানো, উম্মাহর সদস্যদের বুদ্ধি ও জ্ঞানকে আলোকিত করা, বাস্তবতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা বিষয় সম্পর্কে তাদেরকে জানানো—এই সবকিছুই মিডিয়ার কাজ এবং মিডিয়ার মাধ্যমেই এই কাজগুলো করা সহজ।

অপরদিকে মিথ্যা ও এর বাহকদের প্রতিহত করা, মানুষের সামনে তাদের কুৎসিত চেহারাকে উন্মোচন করে তাদের পথ ও মত থেকে মানুষকে দূরে থাকতে সতর্ক করে যাওয়া, তাদের দোষ-ত্রুটি ও পদক্ষেপের ব্যাপারে মানুষকে জানানো মিডিয়ার কাজ; মিডিয়ার মাধ্যমেই এ কাজগুলো করা সহজ।

শত্রুপক্ষ যখন তাদের গোমরাহ ও ভ্রষ্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করা ও সত্যকে গোপন করার  প্রয়াসে লিপ্ত হয়, যেমনটা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,

﴿وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ (42)﴾ [البقرة: 42]

তোমরা সত্যকে গোপন করার নিমিত্তে সত্য ও মিথ্যাকে মিশ্রিত করো না” [সূরা বাকারাহ: ৪২]

জিহাদী মিডিয়াগুলো সত্য ও মিথ্যার মাঝে পার্থক্যের রেখা টেনে দিয়ে সত্যকে মিথ্যা থেকে পৃথক করে দেয় এবং বাস্তবতার ভিত্তিতে সত্য ও মিথ্যাকে স্পষ্ট করে দেয়। মিডিয়া জিহাদের পথ, বিধি-বিধান, ফরীযাহ, উম্মাহর প্রকৃত চিত্র, তাগুত শাসকদের আসল চেহারা, তাদের প্রণীত বিধি-বিধান, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্রের মতো ভ্রান্ত ও মিথ্যা মতবাদ এবং মানবাধিকার ও নারী পুরুষ সমান অধিকারের মিথ্যা বুলি শোনাবার রহস্য উম্মাহর সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরে। হক্ব ও এর সাথে সম্পৃক্ত হুকুম-আহকাম এবং মিথা ও মিথ্যার সাথে সম্পৃক্ত বাতিল আকীদা-বিশ্বাস খণ্ডন করে মানুষের সামনে স্পষ্ট করে তোলে। মিডিয়ার এই কাজগুলো অনেক সম্মানের ও গুরুত্বের। কারণ এই কাজগুলো নবীদের কাজের সাথে সাদৃশ্য রাখে।

অনেক মানুষ শুধুমাত্র মুজাহিদদের প্রকাশিত মিডিয়া রিলিজ ও সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়ে থাকা জিহাদী কন্টেন্ট থেকেই জিহাদের বুঝ পান। তো, মিডিয়ায় কাজ করা ভাইদের উচিত হলো, খালেস-একনিষ্ঠ নিয়্যতে তারা আল্লাহর কাছে সাওয়াবের আশা করে এই কাজ আঞ্জাম দেবে; এ কথা জানবে যে, তারা মানুষকে কল্যাণের কথা শেখাচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إنَّ اللَّهَ وملائِكتَهُ وأَهلَ السَّماواتِ والأرضِ حتَّى النَّملةِ في جُحرِها وحتَّى الحوتِ ليصلُّونَ على مُعلِّم النَّاسِ الخيرَ»

“যে ব্যক্তি মানুষকে কল্যাণের কথা শেখায়, তাঁর উপর আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন। ফেরেশতা, জমিনবাসী এমনকি গর্তের পিপিলিকা এবং মৎস্যজাতি পর্যন্ত তাঁর জন্যে দুয়া করে।” [তিরমিযী: ২৬৮৫]

ইমাম তিরমিযী রহিমাহুল্লাহ বর্ণিত এই হাদীসটির বেশ কিছু শাহেদ {সাক্ষ্য মূলক ভিন্ন হাদিস তথা এই হাদিসের সত্যতা নিশ্চিতকারী সমার্থবোধক অন্য বর্ণনার আরো কিছু হাদিস} রয়েছে। তন্মধ্যে একটি শাহেদ হল হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র হাদিস, যা সংকলন করেছেন ইমাম তাবারানী তাঁর আল মুজামুল আওসাত নামক হাদীস গ্রন্থে (৬২১৯)।

এমনিভাবে মা’মার রহিমাহুল্লাহ তাঁর জামে’তে বলেন যে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে: তিনি বলেন-

«إن معلم الخير لتصلي عليه دواب الأرض حتى الحيتان في البحر»

“মানুষকে কল্যাণের শিক্ষাদান যারা করে, তাদের জন্যে সমস্ত প্রাণী দুয়া করে, এমনকি সমুদ্রের মাছও দুয়া করে!” [জামেঃ ২১০৩০]

 

চতুর্থত: শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে মিডিয়া হচ্ছে বর্শার ফলার ন্যায়:

মিডিয়া-যুদ্ধ পুরোপুরি মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। শত্রুর ইচ্ছাশক্তি ও মানসিক শক্তিকে চুরমার করা এবং তাকে মানসিকভাবে পরাজিত করা মিডিয়ার কাজ। শত্রু ও মুজাহিদগণ—একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পূর্ণভাবে মিডিয়া ব্যবহার করছে এবং মিডিয়া উভয়ের এই যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী অবদান রাখছে। মিথ্যা, ধোঁকা, সত্য গোপন করা ও নানা অবৈধ উপায়ে বিভিন্ন রেডিও-চ্যানেল ব্যবহার করে এবং বিভিন্নভাবে শত্রু তার মিডিয়ার শক্তি সমাবেশ ঘটাচ্ছে। মুজাহিদদের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকিয়ে দিতে এবং জনগণকে নিজেদের শিবিরে নেয়ার জন্য তারা প্রয়াস চালাচ্ছে। এভাবে উম্মাহর কত যুবককে শত্রু তার দলে ভিড়িয়েছে! কত যুবককে তাদের ছাতার ছায়ায় নিয়ে গেছে!!

অপরদিকে মুজাহিদগণ সত্য সংবাদ প্রচার, বিবৃতি, প্রকাশনা, মুজাহিদদের বিজয় এবং কুফফারদের বিজয়ের মিথ্যা সংবাদ ও বিভিন্ন উপায়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, শত্রুর বিরুদ্ধে মানুষকে সমবেত করতে এবং উম্মাহকে তার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে। মুজাহিদ ও শত্রু উভয়দল-ই উম্মাহকে নিজ নিজ শিবিরে টানছে। সুতরাং যারাই এই মাঠে শক্তিশালী হবে, অধিকাংশ উম্মাহ তাদের দিকেই থাকবে।

জিহাদ-মুজাহিদদের ক্ষেত্রে তুমি যদি মিডিয়ার গুরুত্ব বুঝতে চাও, তাহলে মিডিয়াহীন মুজাহিদ ও জিহাদকে কল্পনা করো। এই কারণেই বিভিন্ন দেশের সরকারের চেষ্টা থাকে, অন্য দেশের শত্রুর বিরুদ্ধে সামরিক অস্ত্রের পাশাপাশি প্রচার মাধ্যমের অস্ত্রও যেনো নিজেদের পক্ষে থাকে। দেশের জনগণের সমর্থন পাওয়ার জন্যে সরকারগুলো ভালোভাবেই জানে যে, তাদের ও জনগণের মাঝে যোগাযোগ, তথ্য-আদান-প্রদান এবং তাদেরকে বাস্তবতা জানানোর গুরুত্ব কতটা—যেন তাদের ও জনগণের মাঝে শক্তিশালী সম্পর্কের প্রতিষ্ঠা হয়। আর এ সবই হয় মিডিয়ার মাধ্যমে।

আকাশ চ্যানেল ও স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর উপর শত্রুদের দখলদারিত্ব থাকা সত্ত্বেও তাদের ব্যর্থতা ও জিহাদী মিডিয়াগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বা বিভিন্ন প্রকাশনার মাধ্যমে আমেরিকানদের উপর কি পরিমাণ প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে; যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাই তারা আরো চ্যানেল ও গবেষণা সংস্থা তৈরী করে যাচ্ছে, যেন অন্ততপক্ষে মুজাহিদদের অগ্রযাত্রা রুখে দিতে পারে এবং মুসলিমদের মন-মানস থেকে মুজাহিদদের প্রভাব দূর করতে পারে।

এই কথাগুলোর মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, প্রচার-মাধ্যমের অস্ত্র শক্তির অন্যতম একটি উপকরণ, যার আদেশ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দিয়েছেন-

﴿وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ﴾ [الأنفال: 60[

“আর তোমরা শত্রুর বিরুদ্ধে যথাসম্ভব শক্তি অর্জন কর।” [সূরা আনফাল: ৬০]

 

পঞ্চমত: মুজাহিদদের পরিচিত করানো:

আমরা কারা? আমরা কী চাই? আমাদের বার্তা ও দাওয়াত কী? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর মানুষকে জানানো হচ্ছে দাওয়াত ও জিহাদের এই পথে অগ্রসর হওয়ার প্রাথমিক পদক্ষেপ। আর এগুলো করা সম্ভব মিডিয়ার মাধ্যমেই। এই কাজগুলো বিশেষভাবে মিডিয়া-ই আঞ্জাম দেয়। জিহাদ ও মুজাহিদদের প্রতি উম্মাহর মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে মিডিয়া হচ্ছে প্রধানতম অস্ত্র। বিশেষভাবে শত্রুর পক্ষ থেকে যখন মিথ্যা, ধোঁকা, সত্য গোপন করার মত নানা কাজ সামনে আসে, তখন এর বিপরীতে মুজাহিদদের আসল পরিচয় মানুষের সামনে তুলে ধরার জন্যে তাদের প্রচার মাধ্যমের বিপরীতে আমাদেরও প্রচার মাধ্যম লাগবে।

 

ষষ্ঠত: জিহাদের কাজে সাহায্য ও বিরুদ্ধবাদীদের প্রতিরোধ:

মুজাহিদদের চিত্রের বিকৃতি ও জনমনে তাঁদের ব্যাপারে ধোঁয়াশা সৃষ্টি করা, আল্লাহর পথ থেকে তাদেরকে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে জিহাদ সম্পর্কে সন্দেহ এবং মুজাহিদদেরকে সাহায্য করা থেকে বিরত রাখার জন্যে প্রচার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে শত্রুরা রাত-দিন মিথ্যা অপবাদের আশ্রয় নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া মুসলিমদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া, তাদের মন-মেজাজকে নিয়ন্ত্রণ করার মত কাজগুলোর বেশিরভাগ হয় মিডিয়ার মাধ্যমে।

অপরদিকে সত্যকে মানুষের সামনে প্রকাশ করা, মুজাহিদদেরকে সাহায্য করা ও তাঁদের বিভিন্ন কাজের সমর্থন করা, তাঁদের প্রতিপক্ষদের প্রতিহত করা, শত্রুদের মিথ্যা ও অপবাদগুলোকে অপনোদন করার কাজগুলো যদি জিহাদী-মিডিয়া না করে, তাহলে লাগাম মুজাহিদদের হাত থেকে পড়ে গিয়ে শত্রুদের হাতে চলে যাবে। ফলে উম্মাহর বড় একটা অংশ মুজাহিদদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। এতে মুজাহিদরাই ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। অথচ সূচালোভাবে মিডিয়া কার্যক্রম পরিচালনা করলে উম্মাহর এই অংশটি মুজাহিদদের পক্ষে থাকার জোরালো সম্ভাবনা ছিল।

মুজাহিদদের পক্ষ থেকে মিডিয়ার কাজগুলো হচ্ছে: আহলে বাতিলের শয়তানী মিডিয়ার বিরুদ্ধে মুখোমুখি অবস্থান নেয়া। আর প্রকৃতপক্ষে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে শত্রু-মিডিয়ার করা প্রতিটি কাজের জবাব মুজাহিদদের মিডিয়া থেকে আসা উচিত। সুতরাং, সত্য গোপন করার বিপরীতে সত্য ও বাস্তবতার প্রচার-প্রসার করা, মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ধোঁয়াশা সৃষ্টির বিপরীতে তাঁদের আসল পরিচয় ও উত্তম চেহারা প্রকাশ করা, উম্মাহকে গোমরাহ করার বিপরীতে সত্য পথকে তাঁদের সামনে তুলে ধরা, মিথ্যা অপবাদের বিরুদ্ধে মানুষকে স্বচ্ছতা ও নিষ্কলুষতার পথ দেখানো, ফিতনা ও ইখতিলাফ ছড়ানোর বিপরীতে এগুলো দমন করা, ওদের প্রচারণাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করা, মনস্তত্ত্বকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার বিপরীতে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করা, ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও সাংস্কৃতি ছড়িয়ে দেয়া —এসব কিছু সামনে রেখে মিডিয়ার কাজ পরিচালনা করতে হবে।

এছাড়াও আছে অনেক মৌলিক কাজ, যা মিডিয়া আঞ্জাম দিবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-কে এই ব্যাপারেই স্পষ্ট করে বলেছিলেন,

« إنَّ رُوحَ القُدُسِ لا يَزالُ يُؤَيِّدُكَ ، ما نافَحْتَ عَن اللهِ و رسولِهِ »

জিবরীল তোমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকবে, যতক্ষণ তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে প্রতিরোধ করতে থাকবে।[মুসলিমঃ ২৪৯০]

সম্মান ও মর্যাদার জন্যে এতটুকুই তো যথেষ্ট!!

 

সপ্তমত: দ্বীন ও জিহাদের দিকে ফিরে আসার জন্যে উম্মাহকে উদ্বুদ্ধ করা এবং কল্যাণের পথে তাদেরকে দিকনির্দেশনা প্রদান করা:

এই মাঠে মিডিয়া অনেক বড় কাজ করতে পারে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন-

﴿وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ﴾ [النساء: 84]

আপনি মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকুন।” [সূরা নিসা: ৮৪]

তিনি আরো বলেছেন-

﴿يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ عَلَى الْقِتَالِ﴾ [الأنفال: 65]

হে নবী! আপনি জিহাদের জন্যে মুমিনদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে থাকুন।” [সূরা আল আনফাল: ৬৫]

পাশ্চাত্যের প্রভাব, চিন্তা-যুদ্ধ ও শত্রুদের বিদ্বেষপূর্ণ মিডিয়ার কারণে উম্মাহ দ্বীন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে, উম্মাহর মাঝে ভুল ও বিভ্রান্তিকর নানা চিন্তাধারা গেঁড়ে বসেছে। অপরদিকে জিহাদকে বিকৃতি ও জিহাদের পথে বিভিন্ন বাধা সৃষ্টি তো করেই যাচ্ছে। প্রচারণার এই লাগাম মুজাহিদদের হাতে নিয়ে উম্মাহকে সত্য ও কল্যাণের দিকে পথ দেখানো, দ্বীনের দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা, জিহাদের পথকে আঁকড়ে ধরতে শেখানো এবং এই পথে চলতে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্যে মিডিয়ার প্রয়োজন।

মানুষকে কল্যাণ ও জিহাদের দিকে পথ দেখানো এবং তাঁদের দীনের পথে ফিরে আসার কারণ হওয়ায় তাঁদের উত্তম কাজসমূহের প্রতিদানের বড় একটি অংশ মিডিয়ার ভাইয়েরাও লাভ করবেন। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

«مَن دَلَّ علَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ»

যে ব্যক্তি ভালো কাজের দিকে কাউকে পথ দেখাবে, তাহলে তাঁর জন্যে ঐ ভালো কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ সাওয়াব থাকবে।” [সহীহ মুসলিম: ১৮৯৩]

তিনি অন্য জায়গায় বলেন-

«مَن دَعا إلى هُدًى، كانَ له مِنَ الأجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَن تَبِعَهُ، لا يَنْقُصُ ذلكَ مِن أُجُورِهِمْ شيئًا، ومَن دَعا إلى ضَلالَةٍ، كانَ عليه مِنَ الإثْمِ مِثْلُ آثامِ مَن تَبِعَهُ، لا يَنْقُصُ ذلكَ مِن آثامِهِمْ شيئًا»

ভালো কাজের দিকে আহ্বানকারী ব্যক্তির সওয়াব ভালো কাজটি সম্পাদনকারী ব্যক্তির সমপরিমাণ হবে; আর এতে ভালো কাজ সম্পাদনকারীর কোন সওয়াবকে কমানো হবে না। একইভাবে মন্দ কাজের দিকে আহ্বানকারীর গুনাহ মন্দ কাজ সম্পাদনকারীরর সমপরিমাণ হবে। এতে মন্দ কাজ সম্পাদনকারীর কোন গুনাহে কমতি করা হবে না।” [সহীহ মুসলিম: ২৬৭৪]

জিহাদী মিডিয়ার প্রচার-প্রসার, সংবাদ পরিবেশন এবং বিভিন্ন রিলিজের কারণে কত পথভ্রষ্ট ব্যক্তি পথের সন্ধান পেয়েছেন, কত মানুষ গুনাহ থেকে তাওবা করেছে, কত মানুষ জিহাদের পথে বেরিয়ে শাহাদাত লাভে ধন্য হয়েছে। কত মুজাহিদ ও শহীদদের প্রতিদান কেয়ামতের দিন মিডিয়া ভাইদের দাড়ি পাল্লায় উঠবে! কারণ তারাই ছিলেন মাধ্যম এই ভাইদের শাহাদাত লাভ ও জিহাদের পথে আসার। জিহাদী মিডিয়া পাশ্চাত্যের দেশগুলোতেও কত বীর জিহাদী প্রজন্ম ও একাকী মুজাহিদকে তৈরী করেছে!! এবার এগুলোর ভারে মুজাহিদদের সাওয়াবের পরিমাণ কি রূপ হতে পারে তা অনুমান করা যায়?!

 

অষ্টমত: মুমিনদের পুনরুজ্জীবিত করা, তাদেরকে সুসংবাদ দেয়া, তাঁদের মানসিকতার উন্নয়ন করা, সাহস যোগানো এবং মানসিকভাবে দৃঢ় করা:

মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের শিরোনামে শত্রুদের প্রচার মাধ্যমের আধিক্যতা, মুসলিমদেরকে শত্রু মিডিয়ার দ্বারা বেষ্টন করে রাখা, মুজাহিদদের সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, তাঁদেরকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা, শত্রুদের টেকনোলজি ও শক্তিমত্তাকে বড় ও অপরাজেয় করে দেখানো, মুজাহিদদের জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতিকে বড় করে দেখিয়ে নিজেদের ক্ষয়-ক্ষতিকে হালকা করে দেখানো–এই কাজগুলো মানুষদেরকে মানসিকভাবে পরাজিত করে দেয়, নিরাশ করে তোলে এবং বিদ্যমান মিথ্যা অবস্থাকে বাস্তব বলে মেনে নিতে বাধ্য করে।

অপরদিকে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জিহাদী আন্দোলনের সফলতার সুসংবাদ প্রদানকারী মিডিয়ার উপস্থিতি, মুজাহিদদের বিজয়, শহীদদের ঘটনার প্রচার-প্রসার, শক্রদের প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতির সংবাদ পরিবেশন ইত্যাদি কাজগুলো নিঃসন্দেহে মুমিনদের মানসিকতার উন্নয়ন করে, মুজাহিদদের সাহায্য করা ও মুসলিমদের বিভিন্ন সমস্যায় বসে না থেকে কোন কাজ করার দিকে ধাবিত করে। ইতিবাচক মিডিয়ার উপস্থিতি মুসলিম মানসে পরাজিত মানসিকতার বীজ বপন করা এবং হতাশ করে দেয়ার শত্রু-প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে।

কঠিন অবস্থায় মুসলিমদেরকে সুসংবাদ প্রদান করা, তাঁদের আশা জাগিয়ে তোলা, শুভ লক্ষণ প্রকাশ করা— এই কাজগুলো নববী কাজ। এমনটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খন্দক যুদ্ধে করেছিলেন; যখন মুসলিমরা কঠিন হতাশায় সময় পার করছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে কিসরা ও কায়সার প্রাসাদ বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। এমনিভাবে মুমিনদেরকেও তিনি সুসংবাদ প্রদান করতে এবং উৎসাহ প্রদান করতে আদেশ দিয়ে বলেছেন-

«بَشِّرُوا وَلَا تُنَفِّرُوا، وَيَسِّرُوا وَلَا تُعَسِّرُوا»

তোমরা সুসংবাদ প্রদান করো; ভীতি ছড়িয়ে দিও না এবং সহজ করো; কঠিন করো না।” [সহীহ বুখারী: ৬৯, সহীহ মুসলিম: ১৭৩২]

এছাড়াও জিহাদী মিডিয়াগুলোর সরাসরি জিহাদী অপারেশনের সংবাদ পরিবেশনা এবং এই অপারেশনের প্রভাবের প্রচার-প্রসার করা মুমিন অন্তরকে আনন্দিত করে থাকে। আর কুরআন ও হাদীসে মুমিনদেরকে সুসংবাদ প্রদান করার আদেশ করা হয়েছে।

ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়ার অনুসন্ধানে জিহাদী মিডিয়াগুলো মুসলিমদের হিম্মত যোগায়, মনোবল বৃদ্ধি করে। জিহাদের কাজে বের হওয়ার আগে কত এমন জিহাদী প্রকাশনা ছিলো, যেগুলো আমাদের মনে ভালো প্রভাব সৃষ্টি করেছে। কত মানুষ এমন আছে, যারা সাধারণ কোন জিহাদী মিডিয়া রিলিজের জন্যেও আগ্রহভরে অপেক্ষমান থাকে, জিহাদে বের হতে না পারার জন্যে অনুতপ্ত অন্তরে প্রকাশনাগুলো গ্রহণ করে থাকে। জিহাদী মিডিয়ার প্রতিটি পরিবেশনা উম্মাহকে ময়দানে মুজাহিদদের কাছে নিয়ে যায়। আগ্রহী ব্যক্তিরা দুয়া, দান-সদাকা, জান ও মাল দিয়ে সাহায্য করে মুজাহিদের সুখে-দুঃখে শরীক হয়।

 

নবমত: শত্রুদের মানসিকতাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া এবং তাদের অন্তরে ভীতির সৃষ্টি করা:

উপরে মুমিনদের মানসিকভাবে দৃঢ় করতে জিহাদী মিডিয়ার যে আলোচনা করা হলো, এর বিপরীতে শত্রুদের মানসিক পরাজয়, তাদের অন্তরে ভীতির সৃষ্টি করার মত কাজগুলোও জিহাদী মিডিয়ার অবদান। কেননা মানসিকতার পতন ঘটানোর এই বিষয়টি ময়দানে প্রকৃত পরাজয়ের দিকে নিয়ে যায়। সুতরাং মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের ময়দানে যখন শত্রুদের মানসিকতার পূর্ণ পতন ঘটবে, তাদের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যাবে, তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত ও মানসিকভাবে পরাজিত অন্তর এবং ক্ষয়-ক্ষতির প্রকৃত অবস্থা মিডিয়াতে প্রকাশ করা হবে, তখন অবশিষ্ট শত্রুরা লড়াইয়ে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়বে। যুদ্ধের ময়দানে বস্তুগত ক্ষয়-ক্ষতির বৃদ্ধির জন্যে মানসিকভাবে পরাজিত করার এই পদক্ষেপগুলো আবশ্যক। আর এই পদক্ষেপ ও অবদান বিশেষভাবে মিডিয়ার ভাইদের মাধ্যমেই হয়।

এই বিষয়টি মানসিক যুদ্ধের অন্তর্ভুক্ত— যেমনটা আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি। তবে গুরুত্বের জন্যে এখানে আবার উল্লেখ করা হলো।

 

দশম: মুমিনদের অন্তরের প্রশান্তি:

এই আলোচনাটি পূর্বোক্ত আলোচনার বিপরীত। পূর্বের আলোচনা ছিলো, মুমিনদের মানসিক শক্তি যোগাড় করা এবং তাদেরকে পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে। আর এখন আগ্রাসী শত্রুদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার পর মুমিন-অন্তরগুলোতে আনন্দ ও খুশীর যে ঝলক দেখা যাবে, তার আলোচনা। মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি আনয়নের এই কাজটি ময়দানে মুজাহিদদের বিজয়ের খবর এবং শত্রুদের লাঞ্ছিত ও পরাজিত হওয়ার সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে হয়ে থাকে, যা মিডিয়ার অবদান। এই সবগুলোই ময়দানের মুজাহিদদেরকে খুশী ও আনন্দিত করার পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মুসলিমদেরও আনন্দিত করে। এই কারণেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু’র কবিতার—যা মূলত নবী-যুগে মিডিয়া রূপে ব্যবহৃত হতো—ব্যাপারে বলেছেন,

«هَجاهُمْ حَسَّانُ فَشَفَى واشْتَفَى»

হাসসান তাদের নিন্দা বর্ণনা করে নিজের অন্তর শান্ত করেছে এবং মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত করেছে।” [সহীহ মুসলিম: ২৪৯০]

ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ বলেন, “হাসসান তাদের নিন্দা বর্ণনা করে নিজের অন্তর শান্ত করেছে এবং মুমিনদের অন্তর প্রশান্ত করেছে।” অর্থাৎ কাফেরদের নিন্দা বর্ণনা, কথার আঘাতে তাদেরকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়া, ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে প্রতিরোধ করার দ্বারা তিনি নিজে যেমন প্রশান্তি পেয়েছেন, তেমনিভাবে মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্তি দান করেছেন।’ [শরহুল মুসলিম: ১৬/৪৯]

এ ছাড়াও মুমিনদের অন্তরকে খুশী করা তাঁদের অন্তরকে প্রশান্তি দান করা জিহাদের একটি উদ্দেশ্যও বটে। যেমনটা আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেছেন:

﴿وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ﴾ [التوبة: 14[

“তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি দান করবেন।” [সূরা তাওবা: ১৪]

 

এগারতম: কাফেরদেরকে রাগান্বিত করা, তাদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা এবং তাদেরকে কষ্ট দেয়া:

এই দুটো বিষয় জিহাদের উদ্দেশ্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- আল্লাহ তায়ালা বলেন:

﴿وَلَا يَطَئُونَ مَوْطِئًا يَغِيظُ الْكُفَّارَ﴾ [التوبة: 120]

“তাদের নেয়া এমন পদক্ষেপ যা কাফেরদের রাগান্বিত করে।” [সূরা তাওবা: ১২০]

বলপ্রয়োগের ব্যাপারে তিনি বলেন:

﴿وَلَا يَنَالُونَ مِنْ عَدُوٍّ نَيْلًا﴾ [التوبة: 120]

“এবং তারা শত্রুদের থেকে যা কিছু লাভ করে।” [সূরা তাওবা: ১২০]

কাফেরদেরকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন:

﴿إِنْ تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ﴾ [النساء: 104]

 “তোমরা যদি কষ্ট পেয়ে থাকো, তাহলে তারাও তোমাদের মত কষ্ট পেয়েছে।” [সূরা নিসা: ১০৪]

শত্রুদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করা সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য ও শারীরিক হতে পারে, আবার মিডিয়ার মাধ্যমে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে মানসিকভাবেও হতে পারে। বরং শারীরিক জয়ের চেয়েও অনেক সময় গুরুত্বপুর্ণ হয়ে দেখা দেয় মানসিক জয়। এ কারণেই বলা হয়, শত্রুর মানসিকতা নষ্ট করে দেয়া – তাকে হত্যা করার চেয়েও বেশী ফলদায়ক।

যাই হোক, এই উদ্দেশ্যগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে অর্জন হতে পারে।

সশস্ত্র লড়াইয়ের ময়দানে শত্রুকে যেভাবে রাগান্বিত করা যায়, তেমনিভাবে মিডিয়ার মাধ্যমেও তাকে কষ্ট দেয়া যায় এবং রাগান্বিত করা যায়। বরং মিডিয়ার মাধ্যমে রাগান্বিত করা ও কষ্ট দেয়া ময়দানের চেয়েও কঠিন হয়ে থাকে।

এ বিষয়টি আরো ভালোভাবে বুঝতে চাইলে একটি বিষয় লক্ষ্য করুন। যে সমস্ত শত্রু-মিডিয়াগুলো দিন-রাত মুজাহিদদের বিরোধিতায় লিপ্ত থাকে, মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকে, এই মিডিয়াগুলোর প্রতি মুজাহিদদের দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুভূতি কেমন। অপরদিকে মুজাহিদ-মিডিয়াগুলো যেগুলো শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে, এগুলোর প্রতি ওদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং অনুভূতি কেমন হয়ে থাকে। এ কারণে এটা সম্ভব যে, তুমি শত্রুর বিরুদ্ধে কোন সামরিক অপারেশন চালাবে, কিন্তু সে তোমার থেকে প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকবে; কিন্তু যখনই মিডিয়ার মাধ্যমে এই আক্রমণের বিশদ বিবরণ প্রকাশ করবে তখন হিংসা, রাগ ও মানুষের কাছে মুজাহিদদের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিরোধে তোমার থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে সে মরিয়া হয়ে উঠবে। এই ব্যাপারেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনে রাওয়াহাকে বলেছেন,

«لكلامه أشد عليهم من وقع النبل»

তাঁর কথা ওদের ওপর তীর বর্ষণ থেকেও প্রবল।”

 

বারোতম: শত্রুর একচেটিয়া মিডিয়া দখলদারিত্বের বিনাশ সাধন:

প্রত্যেকজন জ্ঞানী মানুষ জানে যে, তাগুত—কোন স্থান বা কাল ব্যতিরেকে—তাওহীদ ও জিহাদের চিন্তা-চেতনা লালনকারী কাউকে নিজস্ব চ্যানেল বা রেডিও দূরের কথা; কখনো কোন বক্তৃতা, সভা-সমাবেশ বা টকশোতে অংশগ্রহণ করতে দেবে না; যেগুলোতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সে নিজের চিন্তা প্রকাশ করতে পারবে এবং তাগুত ও তাদের দোসরদের দোষ-ত্রুটি মানুষের সামনে তুলে ধরবে। বরং তাদের মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর মতবাদ প্রকাশ করার জন্যে এগুলোকে নিবেদিত করে রাখে। ফলে শত্রুদের একচেটিয়া ও আধিপত্যপূর্ণ মিডিয়া দখলদারিত্বের কারণে সত্য ম্রিয়মাণ ও ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু জিহাদী-মিডিয়াগুলো উম্মাহকে নিয়ন্ত্রণে শত্রুদের এই আধিপত্য ভেঙ্গে দেয়। কোন রূপ ধোঁকা, প্রতারণা, মিথ্যা ও অমূলক তথ্য পরিবেশন, সত্য গোপন ও অপ্রকাশিত না করে যথাযযগ্যভাবে উম্মাহর সামনে বাস্তবতা তুলে ধরছে জিহাদি-মিডিয়াগুলো।

মিডিয়াগুলো যতই নিরপেক্ষতা ও পেশাদারিত্বের দাবী করুক না কেন, বিশ্বের সামনে তারা কখনোই সত্য যথাযথভাবে তুলে ধরে না। কারণ প্রতিটি মিডিয়া-ই অধীন। আর বাস্তবে জিহাদী-মিডিয়াগুলোর মত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ কোন মিডিয়াই নেই। সে বাস্তবতা তুলে ধরতে থাকে আন্তর্জাতিক শক্তির কোন অ্যাকশনের ভয় না করেই। বরং অনেক ইসলামী সংগঠন তাগুতের নির্যাতনের ভয়ে তাদের মনে লুকিয়ে থাকা সত্য প্রকাশ করতে না পারার ব্যথার উপশম ও  নিঃশ্বাস নেয়ার জায়গা পায় জিহাদী-মিডিয়াগুলোতে। কারণ, জিহাদী মিডিয়াগুলো সেই সত্য প্রকাশে কারো পরোয়া করে না এবং কেউ এই মিডিয়াগুলোর উপর দুঃসাহস দেখাতে পারে না।

 

 

মিডিয়া ভাইদের প্রতি বিশেষ কিছু ওসীয়ত

 

জিহাদী-মিডিয়ার অবদান আলোচনা করার পর মিডিয়া ভাইদের প্রতি কিছু ওসীয়ত করতে ইচ্ছা করেছি, যেনো তারা এগুলোর প্রতিফলন ঘটান তাঁদের কাজে:

 

প্রথমত: আল্লাহর ভয় বা তাকওয়া অবলম্বন করা:

এটি এমন এক বিষয়, এর আলোচনা ও উপদেশ যতবারই হোক না কেন, তা কম হবে। প্রতিজন মুসলিমের উপর আবশ্যক হচ্ছে মৃত্যু পর্যন্ত এই তাকওয়া আঁকড়ে থাকা। কেননা এর মাধ্যমেই দুনিয়া-আখেরাতের মুক্তি মিলবে; বিশেষত মুজাহিদদের জন্যে এই তাকওয়া আবশ্যকীয় একটি বিষয়। কেননা জিহাদ অত্যাবশ্যক এমন দু’টি খুঁটির উপর দণ্ডায়মান, যার আলোচনা আল্লাহ তায়ালা বারবার বহু জায়গায় করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

﴿وَإِنْ تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا﴾ [آل عمران: 120]

“যদি তোমরা ধৈর্য ও সবর অবলম্বন করো এবং তাকওয়া ও খোদাভীতিকে সঙ্গী করো, তাহলে শত্রুদের চক্রান্ত তোমাদের কোন-ই ক্ষতি করতে পারবে না।” [সূরা আলে-ইমরান: ১২০]

অন্য জায়গায় বলেন:

﴿بَلَى إِنْ تَصبِرُوا وَتَتَّقوا وَيَأْتوكُمْ منْ فوْرِهِمْ هذَا يُمدِدْكُمْ رَبُّكمْ بِخَمْسَةِ آلَافٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُسَوِّمِينَ (125)﴾ [آل عمران: 125]

“হাঁ, যদি তোমরা ধৈর্য ধর এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, এবং শত্রুরা যদি অকস্মাৎ তোমাদের উপর আক্রমণ করে, তাহলে তোমাদের রব চিহ্নিত পাঁচ হাজার ফেরেশতা পাঠিয়ে তোমাদের সাহায্য করবেন।” [সূরা আলে-ইমরান: ১২৫]

তাকওয়া হচ্ছে, আল্লাহর ক্রোধ ও রাগ এবং শাস্তি ও দণ্ড থেকে বাঁচার জন্যে তাঁর ভয়ে শরীয়াহ-আদিষ্ট কর্মসমূহ পালন করা এবং শরীয়াহ কর্তৃক নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাকা। সুতরাং, মানুষ যখন অধিক পরিমাণে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে এবং বেশী পরিমাণে আল্লাহর আনুগত্য করতে পারে, তখন এর দ্বারা তাঁর অধিক পরিমাণ তাকওয়া অর্জিত হয়।

 

দ্বিতীয়ত: কথা-বার্তার প্রতি সজাগ থাকা ও দায়িত্বশীল হওয়া:

কেননা বনী আদমের মুখ নিঃসৃত প্রতিটি কথা ও বাক্য লিপিবদ্ধ থাকে। কোন কথাই অলিখিত থাকে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

﴿مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ (18)﴾ [ق: 18]

“মানুষের মুখ থেকে যে কথাগুলোই বের হয়, (তা লিপিবদ্ধ করার জন্যে) সদা প্রস্তুত পর্যবেক্ষক তাঁর সাথেই বিদ্যমান।” [সূরা ক্বফ: ১৮]

অচিরেই মানুষকে হিসেব দিতে হবে প্রতিটি কথার এবং এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে যে প্রভাব ও দায়ভার আসবে তার। তাই, মিডিয়ার ভাইদের জন্যে আবশ্যক হচ্ছে, মুখ থেকে কথা বের করার পূর্বে হিসেব করে নেবে। আমি কী বলছি? যা বলছি তা কি হক্ব ও সত্য? এতে কি সাওয়াব হবে না গুনাহ? এই কথা কেয়ামতের দিন আমার পক্ষে হবে না বিপক্ষে?

বিশেষভাবে মিডিয়ার কথা ও আওয়াজ যেহেতু দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছে, তাই কখনো কখনো এমন কথাও মুখ ফসকে বের হয়ে যায়, যার প্রভাব, পরিণাম এবং দায়ভার এতদূর যাবে, কেউ কল্পনাও করতে পারে না। অথচ বাস্তবতা এমনই হয়। তাই, মিডিয়া ব্যক্তিত্বের জন্যে আবশ্যক হচ্ছে, তার মুখের কথা এবং এর আপদ সম্পর্কে সতর্ক হওয়া।

 

তৃতীয়ত: ঘটনার পরম্পরা:

মিডিয়াতে এটি একটি পরিচিত পরিভাষা। এর উদ্দেশ্যে হচ্ছে, ঘটনা প্রবাহ— বিশেষভাবে উম্মাহ সংশ্লিষ্ট ময়দানে চলমান ঘটনা পরম্পরা এবং ঘটনার সাথে উপযুক্ত মন্তব্য যোগ করে দ্রুত সেই মন্তব্য প্রকাশ করা। এমনিভাবে অপারেশন সংঘটিত হবার সাথেই সাথেই বিলম্ব না করে এর সংবাদ প্রচার করা; কেননা মানুষের মাঝে এর প্রভাব ও ক্রিয়া অনেক, এই প্রভাব হয়ত ইতিবাচকভাবে মুজাহিদদের মাঝে ফিরবে যদি উত্তমভাবে সমন্বয় করা হয়। অন্যথায় হিতে বিপরীত হবে; যদি এর সমন্বয় না হয় অথবা ঘটনার সাথে মন্তব্য জুড়ে প্রকাশ করতে দেরী হওয়ায় উত্তমভাবে সমন্বয় না হয়। কেননা এই বিষয়টি অনেক সময় মন্দ প্রভাবের কারণ হয়।

 

চতুর্থত: উপস্থাপনে ভারসম্যতা:

এটা হবে যুগপৎ উম্মাহর জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী এবং ময়দানের প্রয়োজনের সংবাদ ধারাবাহিক ও পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করার দ্বারা। ফলে, মিডিয়া রিলিজ এক উপত্যকায় আর ময়দানের প্রয়োজন আরেক উপত্যকায়— এমন হওয়া যাবে না।

 

পঞ্চমত: ভিতর ও বাহিরে সমন্বয়:

এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, বক্তব্যটি হওয়া উচিত মুজাহিদ এবং তাঁদের সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে, একইসঙ্গে মুজাহিদদের সাথে সম্পৃক্ত না এমন পুরো মুসলিম জাতিকে সম্বোধন করে। একদিকে গুরুত্ব দিয়ে অন্য দিক উপেক্ষা করা যাবে না। এমন করা যাবে না যে, পুরো মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে কথা বললাম, কিন্তু নিজের সাথে একই কাতারে যারা আছে, সেই মুজাহিদদেরকে ভুলে গেলাম। এই ভুলের কারণে জিহাদী সংগঠনের মাঝে ফাটল সৃষ্টি হয়। ঈমান ও বিশ্বাস, জিহাদী চেতনা, উদ্যমতা, পারস্পরিক ভালোবাসা-মহব্বতে দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। অথচ জিহাদ ও সংগঠনের মূলধনই হচ্ছে এগুলো।

এরপর আবার পুরো জাতিকে ভুলে গিয়ে শুধু জিহাদের সাহায্যকারী-আনসার ও সৈনিকদের উদ্দেশ্য করে কথা বলা যাবে না, কেননা এতেও বিচ্ছিন্নতা ও নানা সমস্যা তৈরী হয়। মিডিয়া-সম্ভাষণগুলো হওয়া উচিত বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার উপর ভিত্তি করে।

 

ষষ্ঠত: খবরের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করা:

এর অর্থ হচ্ছে হাজারো রকমের সংবাদ ও সংবাদ উৎসের মধ্য হতে যাচাই-বাছাই করে সঠিক সংবাদটি নিশ্চিত করা। মিডিয়াতে এই কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সংবাদের ভিত্তি ও উৎসমূল মজবুত ও সত্য হওয়া আবশ্যক, বিষেশত সংবাদটি যখন হবে মুসলিমদের কোন বিষয়ে এবং তাদের কোন ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ক হয়। জরুরী হচ্ছে যে, মিডিয়ার ভাইয়েরা নিম্নের দু’টি আয়াতকে নিজেদের আলোকবর্তিকা ও পথপ্রদর্শক বানাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ-

﴿يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا أَنْ تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ﴾ [الحجرات: 6]

মুমিনগণ! যদি কোন পাপাচারী ব্যক্তি তোমাদের কাছে কোন সংবাদ আনয়ন করে, তবে তোমরা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন সম্প্রদায়ের ক্ষতিসাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” [সূরা হুজুরাত: ৬]

অন্য আয়াতে তিনি বলেনঃ-

﴿لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ﴾ [النور: 12]

তোমরা যখন একথা শুনলে, তখন ঈমানদার পুরুষ ও নারীগণ কেন নিজেদের লোক সম্পর্কে উত্তম ধারণা করনি এবং বলনি যে, এটা তো নির্জলা অপবাদ?” [সূরা নূর: ১২]

এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, সত্যতা যাচাই-বাছাই না করে কেবল শোনা কথা প্রচার করে বেড়ানো উচিত না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

« كَفَى بالمَرْءِ مِنَ الكَذِبِ أنْ يُحَدِّثَ بكُلِّ ما سَمِعَ »

যা শোনে তা-ই প্রচার করে বেড়ানো মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্যে এটাই যথেষ্ট।” [সহীহ মুসলিম: ৫]

অজ্ঞাত সংবাদ উৎস থেকেও মুজাহিদদের বেঁচে থাকা জরুরী। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« بِئسَ مَطيَّةُ الرَّجُلِ: زَعَموا »

ধারণা পোষণ করা মানুষের কত নিকৃষ্ট বাহন!” [ আবু দাউদ: ৪৯৭২]

এ ছাড়া এ ব্যাপারে অন্যান্য হাদীসও রয়েছে।

 

সপ্তমত: গোপনীয়তা রক্ষা করা:

মিডিয়ার ভাই যেহেতু অনেক খবর জানেন, তাঁর সামনে থাকে বহু রকমের সংবাদ উৎস, এর মাঝে কখনো এমন সংবাদও আসে, যার সাথে সংশ্লিষ্টগণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ দিয়ে থাকেন। তো, মিডিয়ার ভাইদের জন্যে জায়েয হবে না যে, তাঁর কাছে আমানত রাখা এই সংবাদটি সে প্রকাশ করে দিবে, চাই যেকোন দায়মুক্তির অযুহাতেই হয়ে থাক না কেন। আর যদি সে প্রকাশ করে থাকে, তাহলে সে ঐ গোপন ব্যক্তির সাথে খেয়ানতকারী হিসেবে গণ্য হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

« إذَا حدَّثَ الرَّجُلُ بالحديثِ ثمَّ التفتَ فَهيَ أمانَةٌ »

যখন কেউ কোন কথা বলে এদিক-ওদিক তাকায়, তবে তা আমানত।” [ আবু দাউদ: ৪৮৬৮]

শুধু তাকানোর ব্যাপারে যদি এই নির্দেশনা আসে, যেখানে এই ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে লোকটি সংবাদ প্রকাশ না করার ইশারা দিয়েছে। তাহলে কেউ যখন দাবী করে যে, কথাটি যেন প্রকাশ করে না হয়, তখন সে কথার গোপনীয়তা বজায় রাখার গুরুত্ব কেমন হতে পারে?

 

অষ্টমত: চক্ষু হেফাজত করা:

মিডিয়ার কাজের জন্যে কখনো কখনো মিডিয়ার ভাইয়েরা বাধ্য হয়ে থাকেন সংবাদ দেখার। যেখানে মহিলাদের ছবি এবং প্রকাশ অনুচিত এমন অনেক ছবি প্রকাশ করা হয়ে থাকে। তাই, তাঁর জন্য আবশ্যক হবে, অনৈতিক এই বিষয়গুলো দেখা থেকে নিজের চক্ষুকে হেফাজত করা। প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে মিডিয়া (নেট) ব্যবহার না করা।

 

নবমত: মিডিয়ার ধারাবাহিক উন্নয়ন বজায় রাখা:

ইতিপূর্বে মিডিয়া ও মিডিয়ার উন্নতির ইতিহাসের ব্যাপারে আমরা আলোচনা করে এসেছি। নতুন নতুন এই উন্নতি ধারাবাহিকতার মুখাপেক্ষী। আর বাস্তবতা হচ্ছে, জিহাদী মিডিয়াগুলো এই দিকে সর্বদাই ত্রুটি ও কমতি ভোগ করে আসছে! মিডিয়া আবিষ্কার ও উন্নতি হয়ে মানুষের সামনে আসারও দীর্ঘ সময় পর জিহাদী মিডিয়া মাঠে এসেছে। এরপর কিছু কিছু কাজ করেছে, যা এতই অপ্রতুল যে, প্রয়োজন পূরণ হয় না বললেই চলে। এই কারণে অনেক সময় জিহাদী মিডিয়াগুলোর উপর অনেক সমস্যা আপতিত হয়, তবে উচিত হচ্ছে বাস্তবতার ভিত্তিতে এর সমাধান করা। মিডিয়ার অনেক দিক এখনো অনাবিষ্কৃত রয়ে গেছে, অথবা আবিষ্কার তো হয়েছে কিন্তু যথাযোগ্য হতে পারেনি, যা ক্লাসিক্যাল ও মানসম্মত হবে।

 

দশমত: আলোচনায় শিষ্টাচার এবং উত্তম আখলাকে সজ্জিত হওয়া:

এই গুণটি উত্তম গুণাবলির অন্তর্ভুক্ত। পূর্বে আমরা বলেছি যে, মিডিয়ার কাজ হচ্ছে আল্লাহর পথে আহ্বান করা। আর আল্লাহর পথে দাওয়াতের উসলুব ও তরীকা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন—

﴿ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ﴾ [النحل: 125]

হিকমত ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে আল্লাহর পথে আহ্বান করুন এবং (প্রয়োজনে) উত্তমভাবে তাঁদের সাথে বিতর্ক করুন।” [সূরা নাহল: ১২৫]

সুতরাং মিডিয়াকে বানানো যাবে না কোন ব্যক্তিত্বকে প্রতিহত করার মঞ্চ এবং আপত্তিকর কথা-বার্তা ছড়ানোর মাধ্যম। মিডিয়া ব্যবহার করে বিরোধীদেরকে লাঞ্ছিত করা ও তাদের প্রতি বে-ইনসাফী তথা অন্যায় করা যাবে না। দয়া প্রদর্শনের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কঠোরতা প্রদর্শন করা যাবে না। পারস্পরিক গালি-গালাজ এবং কটুক্তি করা যাবে না।

 

এগারতম: লক্ষ্য স্থির থাকা:

কেননা লক্ষ্য সুস্পষ্ট থাকলে দৃঢ় পদক্ষেপে পথ চলা সম্ভব হয় এবং (মানুষের কাছে পাঠানো) বার্তা স্পষ্ট ও মর্মসমৃদ্ধ হয়। পক্ষান্তরে লক্ষ্য-উদ্দেশ্য স্থির না থাকলে বিচ্ছিন্নতা ও বিক্ষিপ্ততা জাপটে ধরে এবং চেষ্টা-মেহনত হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে বিভিন্ন জিহাদী রিলিজেও দুর্বলতার ছাপ পাওয়া যায়। লক্ষ্য স্পষ্ট না থাকার দরুন মিডিয়ার ভাই এক ঘাট থেকে অন্য ঘাটে যেতে থাকে কিন্তু কোন ঘাটেই অবতরণ করতে পারে না।

 

বারোতম: ক্বলবকে আল্লাহর স্মরণের সাথে লাগিয়ে রাখা:

মিডিয়া ভাইদের ঐকান্তিক চেষ্টা-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও প্রচার মাধ্যমগুলোতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন বাতিল ও মিথ্যা বিষয় এবং গর্হিত কথা-বার্তা বারবার শুনতে বাধ্য হতে হয় এবং বাতিল পন্থীদের উত্থাপন করা বিভিন্ন বিষয় শুনতে হয়। এ বিষয়গুলো অন্তঃকরণে প্রভাব সৃষ্টি করে। ফলে কখনো-কখনো গাফলতি ও অলসতার চাদর বিজয়ী হয়ে যায় মিডিয়া ভাইদের উপর। ফলশ্রুতিতে অন্তর শক্ত হয়ে যায়।

এই রোগের চিকিৎসা হচ্ছে এর বিপরীত কাজগুলো করা। অর্থাৎ তেলাওয়াতে কুরআন, নাসীহা শ্রবণ করা, তাযকিয়া মূলক এবং আক্বীদা-মানহায বিষয়ক কিতাবগুলো পড়া। এই বইগুলোর সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারলে অন্তঃকরণ আলোকিত হবে, শুবুহাত-সন্দেহগুলো দূরীভূত হয়ে যাবে এবং মনের কামনা-বাসনা দমে থাকবে।

والحمد لله رب العالمين.

সর্বোপরি সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যে।

 

*****

[1] বাকি কবিতা ও তার অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো।–সম্পাদক

هَجَوْتَ مُحَمَّدًا بَرًّا حَنِيفًا … رَسولَ اللهِ شِيمَتُهُ الوَفاءُ فَإنَّ أبِي ووالِدَهُ وعِرْضِي … لِعِرْضِ مُحَمَّدٍ مِنكُم وِقاءُ ثَكِلْتُ بُنَيَّتي إنْ لَمْ تَرَوْها … تُثِيرُ النَّقْعَ مِن كَنَفَيْ كَداءِ يُبارِينَ الأعِنَّةَ مُصْعِداتٍ … علَى أكْتافِها الأسَلُ الظِّماءُ تَظَلُّ جِيادُنا مُتَمَطِّراتٍ … تُلَطِّمُهُنَّ بالخُمُرِ النِّساءُ فَإنْ أعْرَضْتُمُو عَنَّا اعْتَمَرْنا … وكانَ الفَتْحُ وانْكَشَفَ الغِطاءُ وَإِلَّا فاصْبِرُوا لِضِرابِ يَومٍ … يُعِزُّ اللَّهُ فيه مَن يَشاءُ وَقالَ اللَّهُ: قدْ أرْسَلْتُ عَبْدًا … يقولُ الحَقَّ ليسَ به خَفاءُ وَقالَ اللَّهُ: قدْ يَسَّرْتُ جُنْدًا … هُمُ الأنْصارُ عُرْضَتُها اللِّقاءُ لَنا في كُلِّ يَومٍ مِن مَعَدٍّ … سِبابٌ أوْ قِتالٌ أوْ هِجاءُ فمَن يَهْجُو رَسولَ اللهِ مِنكُمْ … ويَمْدَحُهُ ويَنْصُرُهُ سَواءُ وَجِبْرِيلٌ رَسولُ اللهِ فِينا … ورُوحُ القُدْسِ ليسَ له كِفاءُ

“তুমি ব্যাঙ্গ করেছ এমন মুহাম্মদকে, যিনি পুন্যবান, একনিষ্ঠ ও সর্বশ্রেষ্ঠ পরহেযগার… তিনি হচ্ছে আল্লাহর রাসূল, যার চরিত্র মাধুর্য অনুপম।

আমার পিতা ও তাঁর পিতা, আমার ইজ্জত আবরু… মুহাম্মদের সম্মানের জন্য রক্ষাকবচ (অতন্দ্র প্রহরী)।

আমি কসম করে বলছি, কাদা (পার্বত্য ঘাঁটি)-র দুই প্রান্তে (মুসলিম মুজাহিদ বাহিনীর) বিজয় ধুলি উড়বে…তা তোমরা দেখতে পাবে, নতুবা আমার জন্য মাতম করা হবে (আমি ধ্বংস হয়ে যাব)

যুদ্ধাভিযানকালে সে অশ্বারোহী বাহিনীর লাগামের সাথে দৌঁড় পাল্লা দেয় (অথবা বললাম নিয়ে ঠোকাঠুকি করে)…(আর) তাদের কাঁধের উপরে রয়েছে রক্তের তৃষ্ণার্ত বর্শা (অথবা ক্ষুধার্ত সিংহ)

আমাদের অশ্বারোহীরা ছুটে চলে দ্রুতবেগে দুরন্ত…আর মহিলারা আদর ও সম্মান করে নিজেদের ওড়না দিয়ে তাদের (ঘোড়াদের) মুছে দেয়।

তোমরা যদি আমাদের (ইসলামের) বিমুখ হও, (জনশূন্য কর)…তাহলেও আমরা উমরা পালন করবই এবং ইসলামের বিজয় নিশান উড়বেই

আর আবরণ উন্মুক্ত হয়ে যাবে (অন্ধকার চিরদিনের জন্য বিদূরিত হয়ে যাবে)…নতুবা তোমরা প্রতিক্ষায় থাক ঐ সময়ের, যে দিন (মুসলিমদের সাথে কাফিরদের) মুকাবিলা হবে; আর সেদিন আল্লাহ যাকে চান বিজয় মাল্য পরিয়ে দেবেন।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি আমার বান্দাকে রাসূল হিসাবে পাঠিয়েছি; যিনি সত্য বলেন (সর্বদা লোকদের সত্যের দিকে আহবান জানান) যার মধ্যে নেই কোন কপটতা, অস্পষ্টতা।

আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, আমি এমন এক বাহিনী তৈরি করেছি যারা আনসার। যাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শত্রু মুকাবিলা করা (প্রত্যেহ তারা শত্রু মুকাবিলায় থাকে সতত প্রস্তুত)

প্রতিদিন আমাদের ভাগ্যে জুটে মা’আদ (কুরাইশ গোষ্ঠী) এর পক্ষ থেকে… কখনো বা গাল মন্দ, যুদ্ধ বিগ্রহ অথবা নিন্দাবাদ।

তোমাদের মধ্যে যে, আল্লাহর রাসুলের নিন্দাবাদ করে; অথবা তাঁর প্রশংসা ও সাহায্য সহায়তা করে, এ দুইই সমান।

(কেননা) জিবরাঈল (আঃ) আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত সম্মানিত বাণীবাহক (দূত)…এবং তিনি রুহুল কুদ্স (পবিত্র আত্মা) যার সমকক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ নেই।” [সহীহ মুসলিম: ২৪৯০]

********************

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four + 12 =

Back to top button