তাহাজ্জুদ … মুমিনের অন্তরের প্রশান্তি (১-২)- শাইখ আহমাদ মুসা জিবরীল হাফিজাহুল্লাহ
তাহাজ্জুদ … মুমিনের অন্তরের প্রশান্তি
(১-২)
– শাইখ আহমাদ মুসা জিবরীল হাফিজাহুল্লাহ
একটি রাত আসছে। আলোকিত আঁধারের রাত। এ রাতে শহরগুলো নিজেদের সাজিয়ে নেয় বুনো আনন্দের প্রস্তুতিতে। ঘোরলাগা উন্মত্ত উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে লক্ষ কোটি রাতজাগা নেশাতুর চোখের মালিকেরা। কিছু সস্তা সুখে ডুবে ‘নতুন বছরকে অভ্যর্থনা’ জানানো হয়। আনন্দ-সুখের মোড়কের আদতে মানবজাতির প্রকাশ্য শত্রুর পদাঙ্ক অনুসরণ করা হয়। এ রাতে মদ-মাংস-মাৎসর্য্যের মোহে নষ্ট হয় অসংখ্য প্রাণ – যুবক ও যুবতী, মানব ও মানবী। এরা আমাদেরই সন্তান, আমাদের ভাইবোন, আমাদের পরিবার। পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণে তারা এ রাত জাগবে। আনন্দ খুঁজে বেড়াবে শহরের কোনে। পরদিন ঢুলুঢুলু চোখে ঘরে ফিরবে। আদিমতম শত্রু, বিতাড়িত শয়তান হয়তো আমাদের এই আদিম-উল্লাসে মুচকি হাসবে…!
.
আমাদের পবিত্র পূর্বসুরীরাও রাত জাগতেন। তাঁদের জীবনেও আমরা খুঁজে পাই রাত জাগার দৃষ্টান্ত। তবে সেই রাত জাগা কোন পার্থিব সুখের মোহে না। শারীরিক সস্তা তৃপ্তির জন্যে না। পাশবিক উল্লাসে মেতে ওঠার জন্য এই রাত জাগা না। এই রাত জাগা শুধুমাত্র ‘একজনের জন্য’। তাঁর নৈকট্য অর্জনের জন্য। শুধুই তাঁর সন্তুষ্টির জন্য। এই রাত জাগা নির্জনে প্রভুর সামনে নিজেকে নিবেদনের জন্য। শীতের রাতে সবাই যখন ঘুমিয়ে, এই রাত জাগা তখন মহিমান্বিত আল্লাহর সামনে সিজদাহবনত হবার জন্য।
.
পাশ্চাত্যের অনুকরণে আমরা অনেকেই হয়তো অনেক নির্ঘুম রাত কাটিয়েছি আদিম উল্লাসে। আমরা অথবা আমাদের চেনাজানা অনেকেই হয়তো এভাবেই আরেকটি রাত কাটাতে যাচ্ছেন। কিন্তু এমনো কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা পবিত্র পূর্বসূরিদের অনুকরণে এ রাতকে জীবন্ত রাখবেন।
.
দুটো দলই জেগে থাকবে। কেউ সাময়িক উত্তেজনার মোহে, আর কেউ অপার্থিব প্রশান্তির খোঁজে। কেউ রাত কাটাবে থার্টি ফার্স্টের পার্টিতে আর কেউ তাহাজ্জুদের নামাযে, জায়নামাযে। এক দল পরকালকে ধ্বংস করবে, আরেক দল নিজেদের পরকালকে সাজিয়ে নেবে।
.
আমাদের ভাই ও বোনেরা,
আসুন না – ময়লা-আবর্জন-পঙ্কিলতা ছেড়ে, অন্ধ অনুকরণ আর স্রোতে গা ভাসানো থেকে বের হয়ে আসি আমরা। শয়তানের পদাঙ্কের বদলে অনুসরণ করি শ্রেষ্ঠ প্রজন্মের। যদি একটা রাত জেগেই থাকতে হয়, আসুন না – সেটা কাটানো যাক আসমান ও যমীনের একমাত্র অধিপতির স্মরণে…
ছোট ছোট বিষয়গুলোর ব্যাপারটা অদ্ভূত। এক দিকে আমরা ছোট বিষয়গুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিতে চাই না। অন্যদিকে ছোট ছোট বিষয়ের মায়া ছাড়তে পারি না। ক্লাস, অফিস, পরীক্ষা, পিকনিক, কিংবা পার্কে গিয়ে ব্যায়ামের জন্য ভোরে ঘুম থেকে ওঠতে আমাদের ভুল হয় না। আবার সে একই আমরা ফজরের নামাযের জন্য ঘুম থেকে উঠতে পারি না। সব মিলিয়ে বড়জোর ৩০ মিনিটের ঘুমের মায়া আমরা ছাড়তে পারি না। অদ্ভূত বৈপরীত্য!
.
রাত জাগা। একেবারেই তুচ্ছ বিষয়। ১২টা, ১টা, ২টা পর্যন্ত জেগে থাকা কোন বিষয়ই না। পছন্দের সিনেমা দেখা, ফোনে বা চ্যাটে কথা বলা, বিক্ষিপ্ত ভাবে ফেইসবুক কিংবা ইউটিউব স্ক্রল করা, পরীক্ষার পড়া, কোন পার্টি – এসবের জন্য রাত জাগতে আমাদের সমস্যা হয় না। তরুণদের অনেকেই রাতে জেগে থাকা আর প্রায় দুপুর পর্যন্ত ঘুমানোকে নিজেদের রুটিন বানিয়ে নিয়েছে। কিন্তু একই আমরা সপ্তাহে দু’রাতে মাত্র ২০ মিনিট করে সময়ও আল্লাহর ইবাদতে কাঁটাতে- পারি না। আল্লাহর জন্য আমরা ২০ মিনিট সময় বের করতে পারি না, এতোই ব্যস্ত আমরা। কিন্তু বার্থ ডে উইশ করার জন্য, নতুন বছরকে “আমন্ত্রণ জানানোর জন্য”, তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয়ের জন্য আমাদের সময়ের অভাব হয় না। রাতের পর রাত নির্ঘুম কেটে যায়, কিন্তু এ জেগে থাকা আমাদের জন্য ভালো কিছু নিয়ে আসে না।
.
আমাদের যদি বলা হয় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের, তাঁর স্পেশাল বান্দাদের, তাঁর বেছে নেয়া নৈকট্যপ্রাপ্ত বান্দাদের একজন হবার জন্য ১০, ২০ কিংবা ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে – প্রায় সবাই এক বাক্যে রাজি হয়ে যাবে। যদি টানা এক মাস কঠিন কোন আমলের প্রেসক্রিপশান দেয়া হয়, সেটাতেও অনেক উৎসাহী পার্টিসিপেন্ট পাওয়া যাবে। কিন্তু খুব সহজ একটা পথ আল্লাহ আমাদের জন্য খোলা রেখেছেন। পৃথিবী যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহর যে বান্দারা তাদের ঘুমের কিছু অংশকে বিসর্জন দিয়ে তাঁর স্মরণে মগ্ন তাকে, তারা নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু এ কাজটা আমরা করতে পারি না। ছোট আমল, আপাতভাবে সহজ আমল – তাই বোধহয় আমরা গুরুত্ব দিতে চাই না। যেখানে পার্কে হাঁটার গুরুত্ব আমাদের কাছে ফজরের নামাযের চেয়ে বেশি সেখানে এটা গুরুত্ব না পাওয়াই স্বাভাবিক।
.
তবে আমাদের পূর্বসূরীরা, যাদেরকে আমরা সর্বশ্রেষ্ঠ প্রজন্ম মনে করি তারা এ ব্যাপারগুলোকে ভিন্ন ভাবে দেখতেন। তাদের মাপকাঠি ভিন্ন ছিল। হাতেগোণা কিছু মানুষ দুনিয়ার মুখোমুখি হয়েছিলেন, দুনিয়াকে বদলে দিয়েছিলেন। এ শক্তির উৎস কী ছিল? তাদের রাতগুলো তারা কীভাবে কাটাতেন?
ডাউনলোড
প্রথম পর্বঃ https://goo.gl/yv4SUX
দ্বিতীয় পর্বঃ https://goo.gl/U19apz