প্রবন্ধ-নিবন্ধ

আদর্শ এবং প্রযুক্তির পার্থক্য

#প্রশ্ন – আপনারা পশ্চিমা গণতন্ত্রের বিরোধিতা করেন, সারাক্ষন পশ্চিমের বিরুদ্ধে কথা বলেন আবার তাদের তৈরি ফেসবুক ব্যবহার করেন তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করেন এটা কি দ্বিমুখীতা নয়?
.
#উত্তর – এ কথাটা বহুল প্রচলিত, এবং অনেকেই একথাটা বলে মনে করেন জঙ্গিদের যুক্তির একটা মোক্ষম জবাব দেয়া গেছে, এক প্রশ্নে বাজিমাৎ করা গেছে। কিন্তু বাস্তবে এ কথাটা অত্যন্ত দুর্বল যুক্তি ও দুর্বল চিন্তাশক্তির পরিচায়ক।

ও আদর্শের মধ্যে তফাৎ করা হয়। আমরা কাফিরদের তৈরি জীবনব্যবস্থা, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিরোধিতা করি। তাদের আক্বিদা-বিশ্বাসের বিরোধিতা করি, কারন এবিষয়গুলো ইসলামের সাথে সুস্পষ্টভাবে সাঙ্ঘর্ষিক – এটা পশ্চিমা কাফিরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, পূর্বের কাফিরদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কিন্তু কোন একটি প্রযুক্তির ব্যবহার করা ইসলামের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক না।
.
ব্যাপারটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাক। খন্দকের যুদ্ধের সময় রাসুলুল্লাহ ﷺ মদীনার চারপাশে খাদ খনন করেছিলেন। কোন শহর বা অঞ্চলকে আগ্রাসি সেনাবাহিনীর আক্রমন থেকে রক্ষার জন্য খাদ খননের এ রণকৌশলটি উদ্ভাবন করেছিলে পারস্যের লোকেরা, আরবদের কাছে এটা ছিল অপরিচিত। তাই রাসুলুল্লাহ ﷺ এবং অধিকাংশ সাহাবার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন কাছেও পদ্ধতিটি ছিল অজানা।
.
সালমান আল ফারিসি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন পারস্যের অধিবাসী। সে সুবাদে তিনি এ রণকৌশলের সাথে পরিচিত ছিলেন। তিনি রাসুলুল্লাহকে ﷺ পরামর্শ দেন এ কৌশল গ্রহণ করার, এবং রাসুলুল্লাহ ﷺ এ রণকৌশলটি গ্রহণ করেন।
.
লক্ষ্য করুন পারস্যের অধিবাসীরা ছিল অগ্নিপূজারী কাফির-মুশরিক, এবং পারস্যের বিরুদ্ধে মুসলিমরা পরবর্তীতে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু তাই বলে এ কৌশল গ্রহণে শরীয়তের দিক থেকে কোন বাধা ছিল না। আবার একই সাথে এ-ও লক্ষ্যনীয় যে, রাসুলুল্লাহ ﷺ রণকৌশল গ্রহণ করলেও পারস্যের অধিবাসিদের রাজনৈতিক আদর্শ, দর্শন বা পদ্ধতি গ্রহণ করেন নি।
.
একইভাবে রাসুলুল্লাহ একজন সাহাবীকে প্রেরন করেছিলেন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের টেকনোলজি বা প্রযুক্তি সম্পর্কে জানার জন্য। অর্থাৎ রোমানদের কাছ থেকেও রাসুলুল্লাহ ﷺ প্রযুক্তি গ্রহণ করেছিলেন, কিন্তু আদর্শ, দর্শন, জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি।
.
একারনে পশ্চিমাদের তৈরি একে-৪৭ বা আরপিজি বা ফেইসবুক ব্যবহারমাত্রই হারাম এমন না। আপনি কোন কাজে এগুলো ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করবে এটা কি হারাম না হালাল। যদি আপনি একে-৪৭ ব্যবহার করেন মুসলিমদের হত্যার জন্য তবে সে কাজটা অবশ্যই হারাম। আবার যদি আগ্রাসী শত্রুর মোকাবেলায় আপনি ঐ একই একে-৪৭ ব্যবহার করেন তবে তা হালাল এবং উত্তম ইবাদাত।
.
যদি আপনি ফেইসবুক ব্যবহার করেন ইসলামের বিরুদ্ধে বিষোদগার, কিংবা অশ্লীলতার প্রসার বা শেখ মুজিবকে নবী দাবি করার কোন কাজে তবে অবশ্যই এ কাজগুলো সেটা হারাম। কিন্তু যদি সে একই ফেইসবুক আপনি ব্যবহার করেন ইসলামের দাওয়াহর জন্য, মুমিনদের অনুপ্রানিত করার জন্য, তবে ইন শা আল্লাহ এটা উত্তম আমল। এছাড়াও বর্তমান প্রযুক্তি , কম্পিউটার বিজ্ঞান এমনকি ফেসবুকের জন্য ব্যবহৃত এলগরিদম – কোন কিছুতেই পাশ্চাত্য সভয়তার একক অবদান আছে এমন না। বরং মুসলিমদের আবিষ্কারগুলো বাদ দিলে হয়তো ইন্টারনেট প্রযুক্তিই পৃথিবীর ইতহাস থেকে বাদ দিতে হবে। কারন এ সকল শাস্ত্রে ইসলামী সভ্যতারও অবদান আছে। মুসলিমদের মাধ্যমেই ইউরোপ ‘০” সংখ্যাটির সাথে, অ্যালজেব্রার সাথে পরিচিত হয়। আর কম্পিউটারে ভাষা হল বাইনারী অর্থাৎ ০ ও ১ নির্ভর। সুতরাং কম্পিউটার, ইন্টারনেট -এগুলো কোন কিছুই কাফিরদের একচেটিয়া আবিষ্কার এমনো না।

.
একারনে আমরা যা বলি তা হল পশ্চিমাদের সংস্কৃতি, আক্বিদা-বিশ্বাস, দর্শন, জীবন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা বর্জনের জন্য। কারন এর সবগুলোই স্পষ্ট ভাবে দ্বীন ইসলামের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক। কিন্তু প্রযুক্তি গ্রহণ করা বৈধ যদি না তা সরাসরি শরীয়তের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক হয়। কিন্তু যারা গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, লিবারেলিসম (উদারনৈতিকতা), ফেমিনিসম (নারীবাদ), মর্ডানিসম (আধুনিকতা) – ইত্যাদি তন্ত্রমন্ত্র ও মতবাদ কাফিরদের কাছ থেকে গ্রহণ করেন তারা প্রুযক্তি বা কৌশল গ্রহণ করছেন না বরং আদর্শ, দর্শন, ব্যবস্থা ও বিশ্বাস গ্রহণ করছেন, যেটা বৈধ না।
.
সহজ ভাষায় গণতন্ত্র এ এজাতীয় মতবাদ ও পদ্ধতিগুলো সরাসরি শরীয়তের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক, এগুলোর মধ্যে শিরক ও কুফরের উপাদান বিদ্যমান এবং এধরণের কোন উদাহরণ আমরা সুন্নাহ ও সীরাহ থেকে পাই না। অন্যদিকে প্রযুক্তি সরাসরি শরীয়তের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক না, এগুলোর মধ্যে সত্ত্বাগতভাবে শিরক ও কুফর বিদ্যমান না, এবং কাফির-মুশরিকদের কাছ থেকে কৌশল ও প্রযুক্তি গ্রহনের উদাহরণ আমরা সীরাহ ও সুন্নাহ থেকে পাই। একারনে এদুটো বিষয় এক না। বরং যারা এ দুটো বিষয়কে এক করতে চায় তাদের চিন্তাই অসংলগ্ন।
.
আমরা সিরাতুল মুস্তাক্বিমের অনুসরণ করি এবং দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবন করি না। তাই যেমনটা রাসুলুল্লাহ ﷺ প্রযুক্তি ও কৌশল গ্রহণ করেছেন তেমনি ভাবে আমরাও গ্রহণ করি। আর পুর্বের ও পশ্চিমের কাফির-মুশরিকদের আদর্শ, দর্শন, আক্বিদা-বিশ্বাস, ও জীবন ব্যবস্থা আমরা বর্জন করি ও বর্জনের আহবান জানাই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 3 =

Back to top button