জাতীয় দৈনিকগুলোতে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, ৩০ শে আগস্ট বৃহস্পতিবার নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে চতুর্থ বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের অনুষ্ঠানের ফাঁকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৈঠক করে।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলে, দুই প্রধানমন্ত্রীই বলেছে “আমরা আমাদের দুই দেশের জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে একত্রে কাজ অব্যাহত রাখতে চাই।” এ কথার মাধ্যমে বুঝে আসে যে, ভারত-বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে উভয় দেশের সরকার পূর্ব থেকেই কাজ করে আসছে এবং এখনও তা অব্যাহত রাখতে চায়! তো, এখন চলুন দেখা যাক দুই দেশের সরকার মিলে এতকাল জনগণের ভাগ্যের কী ধরণের পরিবর্তন করেছে-
উভয় দেশের বন্ধুত্ব যখন ৭১-এর যুদ্ধের পরেই বেশি ঘনিষ্ঠতা লাভ করেছে; তাই, আমরাও ৭১ থেকেই আলোচনা শুরু করবো!
১৯৭১ সালের যুদ্ধ শেষে বাংলাদেশীদের ২৭০০ কোটি টাকার অস্ত্র- সরঞ্জাম লুট করেছিলো ভারতীয় সেনাবাহিনী। (অমৃতবাজার দৈনিক -১২ মে ১৯৭৪) ! ৭৪-সালের চুক্তি সত্ত্বেও ভারত তিন বিঘা করিডোর হস্তান্তর করেনি বাংলাদেশকে ! ৭৫সাল থেকে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়নি। তিস্তার পানির এখনো কোন সমাধান হয় নি। প্রতিবাদের পরেও টিপাইমুখে বাধ – সিলেটের ১৬ জেলা মরুভূমি হয়ে যাবে! শেখ হাসিনার সহায়তায় বিনা যুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমি ও সম্পদে ভরপুর সাগর সোপান দক্ষিণ তালপট্টি ভারতের দখলে নিয়ে গেছে। প্রতিরক্ষা চুক্তির নামে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব অনেকটা ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে একের পর এক লাশ বাংলাদেশকে উপহার দিচ্ছে। উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ১৯৬৬-২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে নিহত হয়েছে প্রায় ১০৩৯জন! [সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সংখ্যা যে এর থেকে আরো অনেক বেশি হতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখে না!] আর, ১৫সালে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সীমান্তে নিহত হওয়ার সংখ্যা বেশি! মানে হলো- সীমান্তে হত্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছেই! সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ, মাথার উপর দাদাগিরিসহ নানাভবে বাংলাদেশ আজ নির্যাতিত ভারতের কাছে!
এই হলো সংক্ষেপে ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের নমুনা! আর, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সরকার মিলে জনগণের ভাগ্যের কী ধরণের উন্নতি করেছেন, তার চিত্রও এ বর্ণনায় ভেসে ওঠে!
বাংলাদেশ সরকার দেশের মানুষের ভাগ্যের কী ধরণের পরিবর্তন ঘটিয়েছে তা একটি পরিসংখ্যান থেকে বুঝা যাবে আসা করি-
দেশীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা যায়, চলতি বছরের গত ১১ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার সময় গত ২৩ জুন পর্যন্ত ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত এক হাজার ২৬৫ জন আহত হন। একই সময়ে নৌপথে ১৮টি দুর্ঘটনায় ২৫ জন নিহত, ৫৫ জন নিখোঁজ ও ৯ জন আহত হয়েছেন।
এবং ঈদুল আজহায় ১৩ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন ২৫৯ জন, আহত ৯৬০। গত ঈদুল আজহার তুলনায় এবার সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা ১৩.৫০ শতাংশ বেড়েছে। [সূত্র: জাগোনিউজ২৪, ৩১ আগস্ট ২০১৮]
এদিকে, যেখানে ২০০৬-০৭ অর্থবছরে মাথাপিছু বৈদিশিক ঋণ ছিল ১৩৬ দশমিক ৪৫ মার্কিন ডলার এবং মাথাপিছু অভ্যন্তরীণ ঋণ ছিল ৫ হাজার ৫৩৩টাকা [সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৯ আগষ্ট, ২০১৫ ইং] ; সেখানে ২০১৮ তে এসে তা হয়েছে মোট ৬০০০০টাকা। [সূত্র: যুগান্তর, ০৯ জুন ২০১৮]
এই ছিল জনগণের ভাগ্যের উন্নয়ন! যদি এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যহত থাকে, তাহলে জনগণের ভাগ্যে যে আরো কী পরিমাণ ঋণের বোঝা চাপার আপেক্ষায় আছে, আরো কী পরিমাণ নির্যাতন হতে যাচ্ছে. তা কল্পনা করাও মুশকিল!