আকিদা-মানহাজআল-ফজর বাংলাপিডিএফ ও ওয়ার্ডবই ও রিসালাহবিষয়মিডিয়াশাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী রহিমাহুল্লাহ

আল সউদদের তাওহীদ আর প্রকৃত তাওহীদ- শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি

আল সউদদের তাওহীদ আর প্রকৃত তাওহীদ- শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি

আল সউদদের তাওহীদ আর প্রকৃত তাওহীদ- শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

https://banglafiles.net/index.php/s/9LaxgJ3Wisgjaa4

https://archive.org/download/ale-saud_20210617/ale%20saud.docx

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

https://banglafiles.net/index.php/s/M2zTnLtT43N2CCQ

http://www.mediafire.com/file/jcxai1n5n47dtug/12_AleSaudErTawhidVsProkritoTawhid.pdf

****************************************

আল সউদদের তাওহীদ আর প্রকৃত তাওহীদ- শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল লিবি

 

আস-সউদের তাওহীদ বনাম প্রকৃত তাওহীদ

 

 

শাইখ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবি

رحمه الله تعالى

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হে আল্লাহ, কিতাব নাযিলকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, ও মেঘ সঞ্চালনকারী; কুফফার শত্রুদের পরাজিত করুন। হে আল্লাহ, তাদের পরাজিত করুন। আর তাদের ভয়ে প্রকম্পিত করুন।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاء بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاء بَعْضٍ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ

إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

হে মুমিনগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [সূরা মায়েদা:৫১]

 

আস-সউদের তাওহীদ

আর প্রকৃত তাওহীদ

 

-শাইখ আবু ইয়াহইয়া

(আল্লাহ তাঁর উপর রহম করুন)

 

জুমাদা আল-উলা, ১৪২৮

একমাত্র আল্লাহরই জন্য সমস্ত প্রশংসা। এবং দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সেই নবীর উপর; যার পরে আর কোনো বার্তাবাহক আসবে না, আর তার পরিবার ও সাহাবীদের উপরও।

সেই শ্রেষ্ঠতম মহান আল্লাহর রহমতে জাযিরাতুল আরবের মুজাহিদীনরা (আল্লাহ তাদের সঠিক পথে পরিচালিত করুন) হচ্ছেন সেই দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী যারা তাদের কাজের উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। তাদের কাজের শরীয়াগত শুদ্ধতার বিচারের জন্য ও মুজাহিদীনদের সম্পর্কে ভুল ধারণা ও মিথ্যা অপবাদগুলো খন্ডনের ব্যপারে আমার মত কারো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের মুখাপেক্ষী তারা নন।

যে মূহুর্ত থেকে তারা আল-সউদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন, তাদের কলম দিয়ে ঈমানের আদর্শের শব্দগুলো জীবন্ত হয়ে ফুটে উঠছে, ইলমের আলোয় দীপ্তি ছড়াচ্ছে, ন্যায়বিচার ও সাম্যের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, তাওহীদের উপলব্ধির উপর তাদের মজবুত ভীত গড়ে উঠছে।

মুজাহিদ শাইখ ইউসুফ আল-ইউয়ারির (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) লেখনী, বার্তা আর কিতাবগুলো চলমান জিহাদে প্রতি পদক্ষেপে সঙ্গ দিয়েছে। আর শাইখ আব্দুল্লাহ আর-রুশদ (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) এর বক্তব্য যুবকদের হৃদয়ে প্রভাব বিস্তার থেকে কখনও থেমে থাকেনি, তাদের অন্তরে সর্বদা জোশ তৈরী করেছে, জিহাদের সিদ্ধান্তকে অটল করেছে, তাদের আশান্বিত করেছে, আর হতাশার ছায়া দূর করে দিয়েছে। এছাড়াও এমন অনেক জিহাদী আলেম এবং ত্বলিব আল-ইলম আছেন যারা জিহাদের পাঠাগারকে তাদের কাজের মাধ্যমে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের অধয্য়ন, অনুসন্ধান, শরয়ী আলোচনা এবং আইনগত বৈধতার বিচারের মাধ্যমে জিহাদের অগ্রযাত্রাকে পরিচালিত ও সীমারেখা নির্ধারণ করেছে, তারা জিহাদের সীমা নির্ধারণ করে তার মূল্যবোধগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন; তার মূল্যবোধগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন; যারা জিহাদের সত্যতাকে বিরোধীতা করে, তাদের মুখগুলোকে বন্ধ করে দিয়েছেন, শত্রুদের শত সাজানো মিথ্যার যথোচিত জবাব দিয়েছেন। আলেমগণ নির্ভীক হৃদয়ে খোলাখুলি সত্যকে প্রকাশ করেছেন।

আর মিথ্যা নড়বড়ে শক্তির প্রতি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছেন, তারা ঘোষণা করেছেন: “আসো আমরা বিবর্তনের মাধ্যমে সমাধান করি, কারণ যুক্তিকে যুক্তি দিয়েই ও স্বাক্ষ্য-প্রমাণকে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমেই মোকাবিলা করতে হয় তদন্তকে তদন্তকারীর মাধ্যমে নয়, বরং তদন্তের মাধ্যমেই সমাধান করতে হয়। কিন্তু সেই দেউলিয়া, পরাজিত মিথ্যার ধারকেরা তাদের নির্দেশক এবং শিক্ষকদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে।

قَالَ لَئِنِ اتَّخَذْتَ إِلَٰهًا غَيْرِي لَأَجْعَلَنَّكَ مِنَ الْمَسْجُونِينَ ﴿الشعراء: ٢٩﴾

“তুমি যদি আমার পরিবর্তে অন্যকে উপাস্যরূপে গ্রহণ কর তবে আমি অবশ্যই তোমাকে কারাগারে নিক্ষেপ করবো।” [সূরা শু’আরা: ২৯]

আর তাই আজকে আস-সউদের অত্যাচারীরা তাদের আক্রমণ পূর্নবহাল করেছে। তারা ইরাকে সহায়তার নামে আন্তর্জাতিক আলোচনা সভা আয়োজনের পূর্বে এমন একটি প্রতিকী প্রস্তব প্রকাশ করল যা কথিত ‘সন্ত্রাস’ দমনে তাদের আন্তরিক মনোভাবের পরিচয় দেয়, আর এটাই প্রমাণ যে তারা এখনও তাদের কৃত চুক্তির প্রতি কতটা দ্বীধাহীনভাবে অনুগত। আর তারই ফলশ্রুতিতে তারা জাযিরাতুল আরবের মুজাহিদীনদের উপর হিংস্র আক্রমণ চালালো। আর তাদের এই আক্রমণকে শক্তিশালী করতে তারা তাদের সংবাদ মাধ্যমগুলোকে এই বলে প্ররোচিত করল যেন গ্রেফতারকৃত ও নিজেদের প্রতিরক্ষায় অক্ষম মানুষগুলোকে চেঙ্গিস খানের ভয়ঙ্কর দুষ্কৃতি বাহিনী হিসেবে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করতে থাকে, যতক্ষণ না মানুষের মনে এই ভয় ঢুকে যায় যে, মক্ত থাকলে তারা মানুষ আর পাথর সব ধ্বংস করে ফেলত।

এছাড়াও আমরা আস-সউদ সরকারের সাথে এতই অভ্যস্ত যে, তারা কোনো তথ্যই প্রকাশ করতে দেবে না, সম্পূর্ণ গোপন করে রাখবে। আর সেই সব খবরগুলোকে কবর দিয়ে দিবে যাতে বোঝা যায় যে, আভ্যন্তরীন বিপক্ষ বাহিনী সরকারের ঘুম হারাম করে রেখেছে, এমনকি যদি তা বিশ্লেষণের মাধ্যমা করা লাগে তবুও।

আজকে যখন সমস্ত অঞ্চলের অবস্থা আগুনের মত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, তখন কেনো তারা তাদের দীর্ঘদিনের তথাকথিত বিজ্ঞতা এবং আনুষ্ঠানিকতা থেকে বের হয়ে এসে একের পর এক শক্তিশালী হামলা চালাচ্ছে আর তা ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করছে, যতক্ষণ না তাদের ক্ষমতার কিবলা সেই হোয়াইট হাউজ থেকে তাদের কাজের প্রশংসা করা হচ্ছে এবং প্রশান্তি এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তাদের পিঠ চাপড়ে দিচ্ছে?

এতদস্বত্তেও এই অত্যাচারী আস-সউদ এখানেই থেমে থাকেনি বরং তাদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা এবং শক্তিশালি করার জন্য তা অন্য খাতে প্রবাহিত করেছে; অর্থাৎ এমন ফতোয়া এনে হাজির করেছে যার মাধ্যমে তারা যা করেছে তার বৈধতা এবং সমর্থন প্রমাণ করেছে, যে ঘুমিয়ে আছে তাকে আরও গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন করেছে, বিভ্রান্তকে আরও বিভ্রান্ত করেছে, অপরাধীকে আরও স্পর্ধিত করেছে এবং অবদমিত মুজাহিদীনদের অবহেলা ও দমনের ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি করেছে, অহংকারী অত্যাচারী শাসকদের আরও অত্যাচারী করে তুলেছে।

এভাবেই সম্প্রতি এই রাজ্যের একজন মুফতির একটি ফাতওয়া আমার নজরে এসেছে যা তাদের নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা এই জাযিরাতুল আরবে জিহাদী যুবকদের বিরুদ্ধে চালানো আক্রমণকে সমর্থন করে, সেই আক্রমণ যাতে অগনিত যুবকদের বন্দী করা হয়েছে যা তাদের মিডিয়ার স্বীকৃত খবর। আর আমি যখন তাদের প্রতারণা ও হঠকারিতা দেখি, বিভিন্ন ঘটনার ভুল ব্যাখ্যা আয়াত ও হাদিসের মিথ্যা প্রয়োগ দেখি, তখন এই কথাগুলো বলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি।

এখানে যেই ফাতওয়াটির কথা বলা হচ্ছে তাতে উল্লেখিত করা হয়েছে, “এই ফাতওয়া প্রকাশ করা হল আমার কর্তব্য পূরণ ও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবার জন্য, সত্যকে প্রকাশ করার জন্য এবং আল্লাহ, তাঁর কিতাব এবং তাঁর রাসূল, মুসলিমদের নেতা, তাদের পদমর্যাদা ও সৈন্যশ্রেণীর প্রতি সততা প্রমাণ করার জন্য।”

প্রাচুর্যময় সুমহান আল্লাহর নামে প্রার্থনা করছি যেন তারা তাদের বস্তুদের দ্বারা উপকৃত হয়, উপকৃত হয় তাদের শ্রোতা এবং পরিবেশকগণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব শুনেন এবং সব জানেন।

প্রথমত: ফাতওয়াটিতে বারবার উল্লেখ করা উক্তিগুলো থেকে এটা সংশয়াতীতভাবে প্রতিয়মান হয় যে, এই ফাতওয়ায় যে ‘দল’ এর অবস্থা বিশ্লেষণ করা হয়েছে তার পুরো ভীতটাই রচিত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির উপর। আর এটা মুফতি তার ভূমিকাতেই বলেছেন,

“এই ফাতওয়া এবং জুম্মা, ১০/০৪/১৪২৮ হিজরীতে প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি… ইত্যাদি” এবং তিন থেকে চারবার এই বাক্যটির পুনরাবৃত্তি করেছেন, “আর এই বিষয়টি বিবৃতিতেও উল্লেখ করা হয়েছে।” এটা সহজেই প্রতীয়মান হয় যে, ফাতওয়াটি আসলে তখনই তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে যখন তা তার যথার্থতা প্রমাণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সাজানো বিবৃতির উপর নির্ভর করেছে- যা পরিচালনা করেন কুফরদের সর্দারদের ইমাম, ‘আরব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ডাঁন নায়েফ বিন আব্দ আল আযিয যে তার মন্ত্রণালয়ের লোকবল ব্যবহার করেন যারা জনগণের শ্বাস-প্রশ্বাস গণনা করে, তাদের প্রতিটি পদক্ষেপের অনুসরণ করে, তাদের বাড়ীর পবিত্রতা ভঙ্গ করে, সেইসব ইমামদের নির্যাতন করে যারা তাওহীদকে আলিঙ্গন করেছেন, সেই তাওহীদ সমন্ধে এমন দক্ষ বক্তৃতা দেয়, যেমন বোতলের মুখ দিয়ে পানি পড়ে, তাদের জিহবা সেরূপ সঞ্চলিত হয়; শুধু যখন তাদের সামনে রাষ্ট্রের সেই সব বীভৎস কার্যাবলী চলে আসে যা তাওহীদের মূল ভিত্তিকেই ধ্বংস করে দেয় তারা তাদের চোখ ও কান বন্ধ করে ফেলে এবং বলে, ‘আমরা দেখিও নাই, শুনিও নাই”। আর তারা আল্লাহর নামে শপথ করে বলে যে, এই রাষ্ট্রই তাওহীদের রক্ষক এবং শরীয়াহর ধারক।

এই মুফতি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জালিয়াতির উপর নির্ভর করেছে তারা হচ্ছে সেই একই মন্ত্রণালয় যারা প্রকাশ্যে এবং অহংকার ভরে তাদের কথা ও কাজ দ্বারা আরব দেশগুলোর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। দিনের পর দিন ধরে আরব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়গুলো সম্মেলন করে যাচ্ছে শুধু তাদের তথাকথিত ‘জঙ্গীবাদের’ বিরুদ্ধে যুদ্ধকে আরও জোরদার ও শক্তিশালী করবার জন্য আর তাদের অভিধানে এই জঙ্গীবাদের অর্থ একমাত্র ইসলাম, যদিও বা অধিকাংশ মানুষ তা বুঝতে বা মেনে নিতে পারে না।

وَمَن يُرِدِ اللّهُ فِتْنَتَهُ فَلَن تَمْلِكَ لَهُ مِنَ اللّهِ شَيْئًا

“আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্যে আল্লাহর কাছে আপনি কিছু করতে পারবেন না”।

[সূরা মায়েদা: ৪১]

এই মুফতি যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভ্রান্তিকে নিজের বক্তব্যের উৎস হিসেবে গ্রহণ করেছেন, আর যারা তাদের অন্তরের গভীর ঘৃণা এবং জ্বলন্ত প্রতিহিংসাকে পুঁজি করে জেলখানার অন্ধকারে পবিত্র কিছু দেহের উপর জানোয়ার ছেড়ে দিচ্ছে যেন তাদের নখগুলো সেই দেহগুলোকে ছিঁড়ে খেতে পারে তারা একই স্বত্তা। সেই সব ঈমানদারদের জিহবা সদা সর্বদা সুমহান আল্লাহর যিকিরে ব্যস্ত থাকে, তাঁর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করে, আর তাঁর কাছেই অভিযোগ জ্ঞাপন করে আর অন্যদিকে এই নিষ্ঠুর জুলুমবাজ জল্লাদেরা রবের নামে কটুক্তি করে চিৎকার করে, দ্বীন নিয়ে হাসি-তামাশা করে, মু’মিনদের প্রতি উপহাস করে এবং কদর্য, নোংরা আর অশালীন কথা দ্বরা বমির উদ্রেক করে।

আপনি যতই অস্বীকার করুন বা মুখ ঘুরিয়ে নিন না কেন, এই সত্য বারবার করে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবং পরস্পর সংযুক্ত হয়ে পড়েছে। আর অনেকে যেমন চিন্তা করে, এটা তেমন নতুন কোন ঘটনা নয়, বরং সাম্প্রতিক সময় তা বেশ পরিচিতি পেয়েছে যখন যুদ্ধ প্রকৃত পক্ষে ছড়িয়ে পড়েছে তখন মানুষ মূলত: দুইটি দলে ভাগ হয়ে পড়েছে, প্রত্যেক সে যার ইবাদত করে তারই পতাকা তুলে ধরেছে।

وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَاداً يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلّهِ جَمِيعاً وَأَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ

“আর কোনো লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালোবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। আর কতইনা উত্তম হত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোনো কোনো আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে, যাবতীয় ক্ষমতা শুধু আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিন।” [সূরা বাকারা: ১৬৫]

শাইখ আবু লাইছ, আল্লাহ তাকে হেফাযত করুন, আস-সউদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জেলে আটক হবার প্রথম সময়কার অবস্থার বর্ণনা করেছেন, তার ভাষায়, ‘কোন প্রশ্ন করা বা ভূমিকা দেয়া ছাড়াই আমাকে পাওয়া মাত্রই সাথে সাথে নির্যাতন করা শুরু করে দিল। যখন আমার ইসলামিক পরিচয় জানতে পারল, তখন তাদের সম্পর্কে আমার ধর্মীয় বিরূপ মনোভাব দূর করার চেষ্টা করতে লাগলো।

কাজেই মিশরীয় যেই জেনারেল এর উপর আমার নির্যাতনের বিষয়টি তদারকি করার ভার ছিল, যার নাম আমিন জাকজুক, আমার সাথে কথা বলা আরম্ভ করল এবং দ্বীনের ব্যপারে বাজে মন্তব্য করা শুরু করল। আমি বুঝতে পারলাম যে, সে আমাকে উত্তেজিত করে তুলতে চাচ্ছে, আর তাই আমি উদাসীন হয়ে রইলাম। তখন সে আরো অগ্রসর হয়ে আল্লাহকে ন্যাক্কারজনক কথা বলতে লাগল, কিন্তু আমি তারপরও স্বাভাবিক থাকার ভান করলাম। তখন সে আল্লাহর রাসূল (তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক) কে অপমান করা শুরু করল। এরপরও সে যখন আমাকে উদাসীন দেখল, তখন সে আক্ষরিক ভাবেই বলল, ‘ইবন বায আর উসাইমিন কোথায় আর সে কয়েকজন মাশাইখদের নাম নিল যদি তারা এখানে থাকত তবে তাদেরকে আমি **** করতাম’। সে ঠিক এইভাবে বলল এবং কদর্য শব্দ বয্বহার করল পায়ুকামকে বোঝানোর জন্য। এরপর সে আমাদের অত্যাচার করা শুরু করলো।” এটি ছিল আল-ফজর ম্যাগাজিন থেকে নেয়া একটি সাক্ষাৎকার।

আর চাইলে তোমার জন্য পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা এমন ঘটনা, নির্যাতন আর পাশবিকতার কথা বলে যেতে পারি, কোনো ছলচাতুরী বা অতিরঞ্জন ছাড়াই শুধু সত্য কথা শুনিয়ে, বিশ্বস্ত সূত্র প্রমাণ ও বিস্তারিত বর্ণনা সহ। কিন্তু তুমি যদি পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই চাও, তাহলে তুমি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত যাদের ব্যপারে প্রাচুর্যময় সুমহান বলেছেন,

وَإِن يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوا بِهَا وَإِن يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِن يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ﴿الأعراف: ١٤٦﴾

“যদি তারা সমস্ত নিদর্শন প্রত্যক্ষ করে ফেলে, তবুও তারা বিশ্বাস করবে না। আর যদি হেদায়েতের পথ দেখে, তবে সে পথ গ্রহণ করে না। অথচ গোমরাহীর পথ দেখলে তাই গ্রহণ করে নেয়।” [সূরা আ’রাফ: ১৪৬]

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্ধকার কারাগারের প্রকোষ্ঠে যখন চাবুকের আঘাতে ইসলামের খেদমতগার যুবকদের দেহগুলো ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল, আর জল্লাদদের মুখ দিয়ে যখন অশোভন ভাষায় কুফর আর নোংরা অপমানজনক কথার তুবড়ি ছুটছিল, তখন আস-সউদ সরকারের তথ্য সরবরাহকারী মিডিয়াগুলোকে আজকের মতই ‘হিরাবাহ (যুদ্ধ)’ এর আয়াতগুলো তেলাওয়াত করা হচ্ছে, প্রচারিত ও ছাপানো হচ্ছে শুধু এই লক্ষ্যে যে, এর মাধ্যমে তারা যেন আল্লাহ ভীরু বান্দাদের গলায় কোষমুক্ত তরবারীর মত আঘাত হানতে পারে।

আর কারা তা করছে? সেই সব লোক যাদের উপর এই বিশ্বাস স্থাপন করা হয়েছে যে তারা সত্যের ঘোষণা দিবে, অন্যায়কারীদের শাস্তি দিবে এবং সেই সব অসহায় মজলুমদের মুক্ত করবে যাদের ফরিয়াদ করা ছাড়া আর কোনো সহায় নেই,

رَبِّ ابْنِ لِي عِندَكَ بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ وَنَجِّنِي مِن فِرْعَوْنَ وَعَمَلِهِ وَنَجِّنِي مِنَ الْقَوْمِ الظَّالِمِين

“হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্য গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।” [সূরা তাহরীম: ১১]

যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিথ্যার উপর মুফতির এত আস্থা, যাদের উড়ো খবরকে মুফতির এত বিশ্বাস, তারা সেই একই লোক যারা তাদের কুকুরগুলোকে লেলিয়ে দিয়েছিল এবং যখন আমেরিকা রাগান্বিত এবং বিরক্ত হয়ে উঠেছিল আর তাদের বোকা নেতা বলেছিল, “যে আমাদের সাথে থাকবে না, সেই আমাদের বিপক্ষে” এরা নিজেদের উদ্যোগেই সর্বশ্রেষ্ঠ সাহায্যকারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠার কোন কমতি রাখল না, আর তার জন্য যে যুক্তি তারা পেশ করল তা ছিল,

يَقُولُونَ نَخْشَى أَن تُصِيبَنَا دَآئِرَةٌ

“আমরা আশঙ্কা করি, পাছে না আমরা কোন দুর্ঘটনায় পতিত হই।” [সূরা মায়েদা: ৫২]

আর নিশ্চিত থাকো:

وَيَقُولُ الَّذِينَ آمَنُواْ أَهَـؤُلاء الَّذِينَ أَقْسَمُواْ بِاللّهِ جَهْدَ أَيْمَانِهِمْ إِنَّهُمْ لَمَعَكُمْ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَأَصْبَحُواْ خَاسِرِينَ

“এরাই কি সেসব লোক, যারা আল্লাহর নামে প্রতিজ্ঞা করত যে, আমরা তোমাদের সাথে আছি? তাদের কৃতকর্ম বিফল হয়ে গেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আছে।” [সূরা মায়েদা: ৫৩]

আর তাই তাদের কাছে যা চওয়া হয় নাই তাও তারা করতে থাকল, বরং আরো বেশি। ফলশ্রুতিতে তারা আলেমদের বন্দী করা শুরু করল, সেই সব আলেম যারা দ্বীনের স্বচ্ছ জ্ঞান ও বিশুদ্ধ সত্যকে প্রচার করত, যদিও তারা সেই দলের মধ্যে ছিলেন না যারা “অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল”, তাদের মধ্যেও নয় যারা “মুসলিমদের কাফের বলেছিলো” অথবা “তাদের রক্তকে হালাল মনে করত” অথবা “নেতৃস্থানীয়দের বিরুদ্ধ বিদ্রোহ করত” অথবা “বিখ্যাত ব্যক্তিদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল” অথবা “বিদেশী শক্তির সাথে মিলে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছিল” যেমনটা তাদের মৃতুদন্ড দেবার মানসে তাদের বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগগুলোতে বলা হয়েছে। তা যদি নাই হবে তাহলে কেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারাগারগুলো তাদের দ্বারা পরিপূর্ণ?

وَ مَا نَقَمُوۡا مِنۡهُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡا بِاللّٰهِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ

“তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিলো শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল” [সূরা বুরুজ: ৮]

وَ مَا تَنۡقِمُ مِنَّاۤ اِلَّاۤ اَنۡ اٰمَنَّا بِاٰیٰتِ رَبِّنَا لَمَّا جَآءَتۡنَا ؕ رَبَّنَاۤ اَفۡرِغۡ عَلَیۡنَا صَبۡرًا وَّ تَوَفَّنَا مُسۡلِمِیۡنَ

“বস্তুত: আমাদের সাথে তোমার শত্রুতা তো এ কারণেই যে,আমরা ঈমান এসেছি আমাদের পরওয়ারদিগারের নিদর্শনসমূহের প্রতি যখন তা আমাদের নিকট পৌঁছেছে। হে আমাদের পরওয়ারদিগার, আমাদের জন্য ধৈর্য্যের দ্বর খুলে দাও এবং আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে মৃত্যু দান কর।” [সূরা আ’রাফ : ১২৬]

শুধু তাই না, এই মন্ত্রণালয় বেশ কিছু সংখ্যক মুজাহিদীনকে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে, আর এই হস্তান্তরের সময় তারা প্রত্যক্ষ করেছে মুজাহিদীনদের অপমান, অভিসস্পাত, কটুক্তি করা হচ্ছে। মুজাহিদীনদের তাদের আমেরিকান প্রভূদের সামনে হীন অপমানিত করা হয়েছে, তখন অহংকারী আমেরিকান প্রভুদের সামনে মুসলিমরা ছিল বিষন্ন, অপমানিত, জীর্ণ-শীর্ণ এবং বিবস্ত্র।

যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গাড়ীতে করে মুজাহিদীনদের ক্রুশের পূজারীদের প্লেনে তাদের তুলে দেয়া হচ্ছিল তখন মুজাহিদীনদের হৃদয় দু:খ এবং হতাশায় ম্নান হয়ে গিয়েছিল, কারণ তারা জানত না কোন কারাগার তাদের গিলে খাবে আর কোন কারাগার তাকে উগলে দিবে।

একই সময়ে এই মন্ত্রণালয় রোমানদের গোয়েন্দা বিভাগের জন্য তাদের দরজা খুলে দিয়েছে যাতে তারা যখন খুশি, যাকে খুশি, যেখানে খুশি, যেভাবে খুশি, জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। আর আল্লাহর শপথ, নিজেদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জালিম অফিসারদের থেকে এই সব সি.আই.এ ও এফ.বি.আই-এর কর্মকর্তারা বরং সময়ে সময়ে মুজাহিদীনদের প্রতি নরম এবং কোমল আচরণ করত, নিজ জালিম সেই অফিসারদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল এক টুকরা তথ্য বের করে ক্রুশের পূজারীদের খুশি করে তাদের নেক নজরে আসা, যদিও তারা জানত যে এই তথ্যগুলো মুসায়লামার ওহী নাযিলের মতই মিথ্যা ছিল।

এমনই এক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির উপর ভর করে সেই মুফতি বৃষ্টির পানির চেয়েও পরিষ্কার ও পবিত্র ভাইদের বিরুদ্ধে তার গুরুত্বপূর্ণ ফাতওয়া প্রকাশ করলেন!

যে কাউকে এই দ্বিধায় হতবিহবল হয়ে থমকে যেতে হয় এবং তার মনে এই প্রশ্ন ঘুরে ফিরে যে, আসলেই কি সবার কাছ থেকে গোপন রেখে এই সব কর্মকাণ্ড তারা চালিয়ে যাচ্ছে যা বেদুঈনদের প্রবীণদের জন্যও অস্বীকার করা সম্ভব হয়নি?

এই ধরণের ঘটনা এবং খবর বেশ বারংবার প্রকাশ পাচ্ছে, আর খোঁজখবর করে তাদের সত্যতা নিরূপন করাও অন্য সব সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি সহজ; তাহলে কেন জোর করে মিথ্যা জল সেঁচে এইসব আসামী বাঁচানোর এমন সব যুক্তি তর্ক সাজানো হচ্ছে, আল্লাহর কসম তারা সেসব কথা চিন্তাও করেনি এবং সেসব কথা কল্পনাতেও আনা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় এবং যেগুলোর উপর বিশেষ ভরসাও করা যায় না?! এবং কেন তাদের এই জঘন্য প্রকাশ্য অপরাধ দেখেও চোখ বন্ধ করে রাখা হচ্ছে, যা অস্বীকার করা অকাট্য সত্যকে কূটতর্ক দিয়ে না মানার শামিল?

হে আল্লাহ, আমাদের সত্যকে সত্য হিসাবে স্বীকার করার ও তা পালন করার তাওফিক দান করুন। আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে মেনে নিয়ে তা বর্জন করার তাওফিক দান করুন।

দ্বিতীয়ত: মুফতি সাহেব এখানে তার ফাতওয়া শুরু করেছেন ইমাম মুহাম্মাদ বিন আবদ-আল-ওয়াহহাব (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) এর জাহিলিয়্যাহর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তার উল্লেখ করে, যেগুলো তাদের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করেছিল।

একে বলা যায় ভুল জায়গায় প্রয়োগকৃত সত্য, অনির্ভরযোগ্য, ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করা একটি ঘটনা যা কেবল তাদেরকেই আতঙ্কিত করে তোলে যারা শেষ প্রান্তে সীমায় ঝুলে আছে এবং ধরার জন্য কোন মজবুত হাতল পায়নি অথবা সত্যার মূল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি।

অন্যথায়, আমি মনে করি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কারাগার যাদের অন্তরীণ করেছে তারা হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করে ইমাম মুহাম্মাদ বিন আবদ আল-ওয়াহহাব এর কিতাবগুলো মুখস্থ করে ফেলেছে, সত্যিই বুঝতে শিখেছে এতে বর্ণিত নিয়ম-তত্ত্বগুলো এবং সে অনুযায়ীই আমল করেছে, তার বিষয়বস্তুর প্রতি আহবান জানিয়েছে ও আমল করেছে আর তা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

তাই আস-সউদ যখন এই কিতাবগুলোর সুগভীর প্রভাব অনুভব করতে পারল এবং বুঝতে পারল তাদের ও দ্বীনের মধ্যেকার অসঙ্গতি-যতবারই তারা তাকে পরিবর্তন বা মিথ্যার আবরণে ঢাকার চেষ্টা করল, কিন্তু তা খুব বাজে ভাবে প্রকাশিত হয়ে পড়ছিল, তারা এই কিতাবের পাঠ্যক্রম শিক্ষাকে পরিবর্তিত করে ফেলার চেষ্টা করল এবং তাদের খেয়াল খুশি মত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করল যাতে তাদের প্রভুদের দাবীগুলো পূরণ করতে পারে। আর তারা সেই সব আহবায়কদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করেছিল যারা জীবন্ত বইগুলোর মাধ্যমে সত্যকা প্রকাশিত করছিল, সেই সব কিতাব যেগুলোর প্রতি বছরের পর বছর আস-সউদ সরকার অনুগত থাকার ভান করেছে এবং তার সাথে সংযুক্ত থাকার ভান করার মাধ্যমে ও ছাপানোর মাধ্যমে তারা জনগণকে প্রতারিত করেছে।

কিন্তু এটা তারা বুঝতে পারেনি যে তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ বলেছেন:

یُخۡرِبُوۡنَ بُیُوۡتَهُمۡ بِاَیۡدِیۡهِمۡ وَ اَیۡدِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ٭ فَاعۡتَبِرُوۡا یٰۤاُولِی الۡاَبۡصَارِ

“তারা ধ্বংস করে ফেললো তাদের বাড়ী-ঘর নিজেদের হাতে এবং মুমিনদের হাতেও; অতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণ! তোমরা উপদেশ গ্রহণ কর।” [সূরা হাশর : ২]

কাজেই পরিণামে তারা এই কিতাবগুলোর সাথে নিজেদের এমন এক অবস্থানে আবিষ্কার করল যেখানে আর নিজেদের খেয়াল খুশি মত কিতাবগুলোকে পেচিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়, আবার কিতবাগুলোকে অনুসরণও করা সম্ভব নয়, এমনকি শুধু কথার খাতিরে হলেও নয়।

কাজেই তারা সিদ্ধান্ত নিল তাদের প্রতি বিরূপ আচরণ করার এবং পিছন দিকে ছুড়ে ফেলার। আর এভাবেই সত্য মানুষের মাধ্যমে সৎরূপে, অকপটে এবং নিরপেক্ষভাবে নথিভূক্ত হয়: মিথ্যা কখনও তাকে প্রতারিত করতে পারে না, আর যদি তা চেষ্টাও করে তবে আজ হোক বা কাল তা প্রকাশিত হয়ে যায়:

وَلَا يَأْتُونَكَ بِمَثَلٍ إِلَّا جِئْنَاكَ بِالْحَقِّ وَأَحْسَنَ تَفْسِيرًا

“তারা আপনার কাছে কোনো সমস্যা উপস্থিত করলেই আমি আপনাকে তার সঠিক জওয়াব ও সুন্দর ব্যাখ্যা দান করি।” [সূরা ফুরকান : ৩৩]

সুতরাং আমাদের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু হওয়া উচিত: এই যুবকেরা দ্বীনে এমন কি অনৈক্য তৈরী করেছে যা ইমাম মুহাম্মাদ বিন আবদ আল-ওয়াহহাব এর চিন্তা-চেতনা বিরোধী? নাকি তা শুধু অর্থহীন অভিযোগ এবং অযথা অপবাদ যা কোনো কিছু পর্যালোচনা বা অধ্যায়ন না করেই শুধু মুখের কথায় প্রতিষ্টা করার চেষ্টা করা হচ্ছে?

আর কি সেই দ্বীন যা এই লোকগুলোকে জালিম আস-সউদ সরকারের সাথে একত্রিত হতে দিচ্ছে না, তাদের এই একই চিন্তায় একই ছাদের নিচে মিলিত করছে না? তবে তা কি ইসলাম, নাকি ইউনাইটেড ন্যাশন তথা জাতিসংঘের এর দ্বীন?

এটা কি সেই দ্বীন যা শরীয়াহর প্রতি অনুগত হতে শেখায়, নাকি নিরাপত্তা পরিষদের দেখানো নিয়মে দেশ চালাতে উৎসাহিত করে?

এটা কি সেই দ্বীন যা ঈমানের উপর ভ্রাতৃত্ববোধকে প্রতিষ্ঠিত করে, নাকি তা জাতীয়তা, আন্তর্জাতিক পরিবার আর আন্তর্জাতিক আইনের উপর নির্ভর করে?

এটা কি ইসলামের প্রকৃত আক্বীদার একাত্বতা, নাকি আরব লীগের ধর্ম? এটা কি তবে ইসলাম নাকি গালফ কো-অপারেশন দেশগুলোর ধর্ম?

এটা কি কাফিরদের পরিত্যাগ করার এবং তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শনের দ্বীন, নাকি এই অহংকারী জালিম নাস্তিকদের প্রতি ভ্রাতৃত্ববোধ আর আকর্ষণ প্রকাশের ধর্ম?

এটা কি সেই দ্বীন যাতে দুর্বল, মজলুমদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয় এবং অন্যায়ভাবে আগ্রাসীদেরকে বহিষ্কার করার শিক্ষা দেয়, নাকি সেই ধর্ম যা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সাহায্য করা এবং তাদের প্রতি সমর্পিত হওয়ার শিক্ষা দেয়?

এটা কি সেই দ্বীন যা অংশীদারবাদ ও মুশিরকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, নাকি সেই ধর্ম যা সেই সমস্ত কাফিরদের সমর্থন করে যা সাহাবাদের এবং নবীদের সর্দার মুহাম্মাদ (তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক) এর নামে কুৎসা রটনা করে?

আমরা সেই মুফতির সামনে এই প্রশ্নগুলো রাখলাম, আর আমরা পূর্ণ প্রমাণ ও দালীল সহ তার অকপট ও সাহসী উত্তরের দাবী জানিয়ে রাখলাম, আর তারপর তিনি আমাদের একজন আলেমের প্রকৃত সাহস নিয়ে তার উত্তর জানিয়ে দিন,

مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ

“যারা তাদের জীবনে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।” [সূরা রূম: ৩২]

আর তার উত্তরের স্বপক্ষে তিনি যা খুশি দলীল পেশ করুক। ইমাম মুহাম্মাদ বিন আল-ওয়াহহাব বা দাওয়াহর (নাজাদি) ইমামদের বর্ণনা থেকে (আল্লাহ তাদের উপর রহম করুন), যাদের কিতাবগুলো আজও সত্য বয়ান করে যাচ্ছে এবং মিথ্যার উল্কাপিণ্ড ধ্বংস করে যাচ্ছে, যে কিতাবগুলো আস-সউদের জালিমরা এমন ভয় করে যে, তারা চায় এর একটা পৃষ্ঠাও অবিকৃত না থাকুক যা তাদের ঘুম হারাম করার জন্য যথেষ্ট।

وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا بَيِّنَاتٍ تَعْرِفُ فِي وُجُوهِ الَّذِينَ كَفَرُوا الْمُنكَرَ يَكَادُونَ يَسْطُونَ بِالَّذِينَ يَتْلُونَ عَلَيْهِمْ آيَاتِنَا قُلْ أَفَأُنَبِّئُكُم بِشَرٍّ مِّن ذَلِكُمُ النَّارُ وَعَدَهَا اللَّهُ الَّذِينَ كَفَرُوا وَبِئْسَ الْمَصِيرُ

“যখন তাদের কাছে আমার সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ আবৃত্তি করা হয়, তখন তুমি কাফেরদের চোখে মুখে অসন্তোষের লক্ষণ প্রত্যক্ষ করবে। যারা তাদের কাছে আমার আয়াত সমূহ পাঠ করে, তারা তাদের প্রতি মারমুখো হয়ে উঠে। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে তদপেক্ষা মন্দ কিছুর সংবাদ দেবো? তা আগুন; আল্লাহ কাফেরদেরকে এর ওয়াদা দিয়েছেন। এটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তনস্থল।” [সূরা হাজ্জ : ৭২]

ইমাম মুহাম্মাদ বিন আল-ওয়াহহাব জাহিলিয়াত এর অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছিলেন সেই সময় এমন সব লোকদের হত্যা করা হবে যারা সত্য ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, আর তিনি সঠিক ছিলেন, আল্লাহ তার উপর রহম করুন, কারণ প্রাচুর্যময় সুমহান আল্লাহ বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ حَقٍّ وَيَقْتُلُونَ الِّذِينَ يَأْمُرُونَ بِالْقِسْطِ مِنَ النَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

“যারা আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে এবং পয়গম্বরকে হত্যা করে অন্যায়ভাবে আর সেসব লোককে হত্যা করে যারা ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দেয়, তাদেরকে বেদনাদায়ক শাস্তির সংবাদ দিন।” [সূরা আলে-ইমরান: ২১]

ঠিক এই কাজটি কি আল-সউদরা করছে না?

সত্য ন্যায়পরায়ণতার প্রতি আহবানকারী কত অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, হিদায়েত প্রাপ্ত কত ইমামকে অত্যাচার করা হয়েছে, কত মুজাহীদিনকে গৃহহীন করা হয়েছে, এমনকি সতি-সাব্ধী নারীগণও তাদের হাত থেকে নিরাপদ নন, ফেরাউনের মত জঘন্য নষ্টামি করা এদের সকলকেই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে,

مَا أُرِيكُمْ إِلَّا مَا أَرَى وَمَا أَهْدِيكُمْ إِلَّا سَبِيلَ الرَّشَادِ

“আমি যা বুঝি, তোমাদেরকে তাই বোঝাই, আর আমি তোমাদেরকে মঙ্গলের পথ দেখাই।” [সূরা মু’মিন: ২৯]

আর যে সমস্ত দলীল প্রমাণ দেখিয়ে তারা এই সব ভাই-বোনদের রক্ত ঝরাচ্ছে এবং সম্মান হরণ করছে তা তো এমনই:

إِنَّ هَؤُلَاء لَشِرْذِمَةٌ قَلِيلُونَ – وَإِنَّهُمْ لَنَا لَغَائِظُونَ – وَإِنَّا لَجَمِيعٌ حَاذِرُونَ

“নিশ্চয়ই এরা ক্ষুদ্র একটি দল। তারা আমাদের ক্রোধের উদ্রেক করেছে। এবং আমরা সবাই সদা শংকিত।” [সূরা শু’আরা: ৫৪-৫৬]

আর এগুলো জাহিলিয়াতের সে বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত যা ইমাম (আল্লাহ তাকে রহম করুন) তালিকাবদ্ধ করেছেন এভাবে: কাফির এবং তাদের কাজের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া। আর এই বিষয়ে মধ্য দুপুরের সূর্যের মতই আস-সউদের আচরণ সুস্পষ্ট “দিনের আলোয় যখন প্রমাণ দরকার হয় তখন মনে কোন ভালো কিছুই উদয় হয় না।” তাদের অন্যায় শুধু অন্তরে সীমাবদ্ধ নেই যা দিয়ে তারা ভারী শপথ নিবে এবং সেই সব যুক্তি তর্ক খুঁজে বের করবে যা আগে কখনও কেউ ভাবেনি। বরং তাদের অনুগামিতা এবং সাহায্যের প্রতিশ্রুতি তো সেই পর্যায়ের যার মাধ্যমে তারা সকল কাফিরদের মুসলিমদের বিরুদ্ধে সব ধরণের পৃষ্ঠপোষকতা করবে বলে তাদের সভা, সম্মেলন এবং সংবাদ মাধ্যমে সদম্ভে প্রচার প্রচারণা চালায়, আর এই ব্যাপক প্রচারের ফলে অনেকেই তাকে সঠিক বলে মেনে নেয় এবং তার নোংরামী, নির্লজ্জ আর কুৎসিত চেহারাটা তাদের কাছে অলক্ষিতই থেকে যায়।

শাইখ মুহাম্মাদ বিন আবদ আল-ওয়াহহাব (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) দ্বীন ধ্বংসকারী বিষয়সমূহের মধ্যা উল্লেখ করেছিলেন, “আট: মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সমর্থন ও সহায়তা দেয়া।

এর দলীল হচ্ছে আল্লাহর কালাম:

وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

“তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।”[সূরা মায়েদা: ৫১]

আর শাইখ হামদ বিন আতিক (আল্লাহ তাকে রহম করুন) বলেছেন, “কাফির ও মুশরিকদের কঠোরতা প্রদর্শনের ব্যপারে জেনে রাখো আল্লাহ (সুমহান প্রশংসিত) তা অবশ্যকর্তব্য করে দিয়েছেন এবং তা অবশ্যপালনের উপর জোর দিয়েছেন। আর তাদের প্রতি অনুগত হওয়া হারাম করেছেন এবং তার উপর এমনই কঠোরতা প্রকাশ করেছেন যে, আল্লাহর কিতাবে এর পক্ষে অসংখ্য আয়াত এবং বিধান দিয়ে তা সুস্পষ্ট করা হয়েছে, তা সংখ্যায় কেবল তাওহীদের পক্ষে এবং কুফরের বিপক্ষে দলীলের পরই সর্বোচ্চ।” (সাবিল আল নাজাহ ৩১)

কাজেই দুই হারামাইনের ভূমিতে পশ্চিমা সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে দেয়া, যেখান থেকে টন টন বোমাবাহী যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন করে এবং ইরাকে এবং আফগানিস্তানে মুসলিমদের বাড়ি ঘর ধ্বংস করে, যেগুলো সকালে পেট ভরে বের হয় আর ফেরত আসে খালি অবস্থায়: এইসব কার্যক্রম মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সহায়তা প্রদান করা নয় কি?

আর সমুদ্রতট এবং বন্দর খালি করে দেওয়া এই জন্য যাতে হাজার হাজার কাফির সৈন্য, ডজন ডজন যুদ্ধবিমান আর শত শত মিসাইল বহনকারী জাহাজ নোঙ্গর করতে পারে, যারা মুসলিমদের জমিনে প্রবেশ করে তাদের গৃহহীন করে দিচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ী ভেঙ্গে সমান করে দিচ্ছে: এসব মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সহায়তা প্রদান করা নয় কি?

আর কানায় কানায় পূর্ণ ব্যাংকের ভাণ্ডার কুফফারদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া যাতে পশ্চিমারা তা থেকে যখন খুশি, যত খুশি হাতিয়ে নিতে পারে, যাতে তারা তাদের যুদ্ধবিদ্ধস্ত অর্থনীতির সাহায্যে তা কাজে লাগাতে পারে। কুফফারদের এই সহযোগিতা দেয়া মুসলিমদের বিরুদ্ধাচরণ নয় কি?

আর মিলিয়ন মিলিয়ন ব্যরেল তেল সরবরাহ করা তাদের বিমান, ট্যাংক, জাহাজ এবং গাড়িতে, যেগুলো তারা মুসলিমদের হত্যা, অত্যাচার আর ধ্বংস করার কাজে ব্যবহার করে, হোক তা ফ্রি কিংবা বিক্রির জন্য: তা মুসলিমদের বিরুদ্ধাচারণ নয় কি?

আর ক্ষুধার্ত বন্দীদের সামনে আগ্রাসী এই সৈন্য বাহিনীকে তাদের রসনার জন্য সবচেয়ে ভালো খাবার এবং পানীয় সরবরাহ করা, তাদেরকে ইসলাম এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে উন্মুক্ত যুদ্ধে শক্তিশালী করে তোলা: এসব কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুফফারদের মদদ দেয়া নয়?

কাজেই তুমি এমন দুই বিষয়ের মাঝখানে আটকা পড়েছ যা থেকে কোন মুক্তির পথ নেই? হয় তোমাকে অস্বীকার করতে হবে যে আস-সউদের জালিমরা এসব কাজের কোনটিই করেনি তারাই সবার প্রথমে তোমার মুখের উপর চিৎকার করে তোমাকে মিথ্যাবাদী বলবে, অথবা তোমাকে স্বীকার করে নিতে হবে (অবশ্য এ ছাড়া আর কোন পথ খোলা নেই) যার মাধ্যমে তুমি তাদের শাসন ব্যবস্থার মুখোশ খুলে দিবে এবং তাদের বিরুদ্ধে সত্য প্রকাশ করে দিবে ও তোমাকে ঘোষণা দিতে হবে যে তুমি তাদের জুলমের শাসন ব্যবস্থা মানো না, তুমি তা থেকে মুক্ত। আর তাই আমরা আশা করি।

তৃতীয়ত: মুফতি যেসব দলীল প্রমাণ দেখিয়ে শাসকদের প্রতি অনুগত থাকা, তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করার ব্যপারে জোর দিয়েছেন, ভয় দেখিয়েছেন যে, বাইয়াত দিয়ে তার রজ্জু নিজ গলা থেকে ছিড়ে ফেললে আল্লাহর শাস্তি আপতিত হবে, আমাদের উল্লিখিত বিষয়গুলো তাকে নাকচ করে দেয়। কারণ তিনি যেসব হাদিস দিয়ে দলীল পেশ করেছেন তার একটিই এই ব্যপারটি পরিষ্কার করে দেয়।

আর তা হচ্ছে উবাদা বিন সামিত এর হাদিস (যাঁর প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট ছিলেন), তিনি বলেছেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূলের কাছে বাইয়াত দিয়েছিলাম তাঁর কথা শুনা এবং মানার জন্য সকল প্রতিকূলতায় ও সকল স্বাচ্ছন্দ্যে, সকল পছন্দ ও অপছন্দে এবং যদিও আমাদেরকে আমাদের পরিপূর্ণ পাওনা শোধ না করা হয় এবং আমরা কখনও শাসকদের বিরুদ্ধাচারণ করব না এবং আমরা সর্বাবস্থায় সত্য বলব এবং কোন নিন্দাকারীর নিন্দাকে আল্লাহর জন্য ভয় করব না।”

অন্য এক রেওয়াতে, “এবং ততক্ষণ পর্যন্ত শাসকদের বিরুদ্ধাচারণ করব না যতক্ষন পর্যন্ত না তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট কুফরী পরিলক্ষিত হয় যার প্রমাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট।” (হাদিসটি সহীহ)।

আস-সউদের সুস্পষ্ট কুফরীই মুজাহিদীনদের উত্থান ঘটিয়েছে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তারা

তা অপসারণে বদ্ধপরিকর। আল্লাহ বলেন,

وَلَن يَجْعَلَ اللّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلاً

“কিছুতেই আল্লাহ কাফিরদেরকে মুমিনদের উপর বিজয় দান করবেন না।” [সূরা নিসা: ১৪১]

আর আল্লাহর রাসুলের (তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক) আনুগত্যে তারা অটল যিনি বলেছেন,

“… যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্যে সুস্পষ্ট কুফরী পরিলক্ষিত হয় যার প্রমাণ আল্লাহর পক্ষ থেকে স্পষ্ট।”

আর বিবেকের সত্যকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে এটা অবশ্য পালনীয় হয়ে যায় যে, একজন কাফির শাসককে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ফেলা এবং তার জায়গায় একজন মুসলিম শাসককে নিয়োগ করা যার কথা লোকে শুনবে এবং পালন করবে যা একাধিক আলেম উল্লেখ করেছেন।

আর জাজিরাতুল আরবকে পরিশুদ্ধ করা, যে জায়গাকে সাহাবাগণ (আল্লাহ যাদের উপর রাজি ছিলেন) নিজ রক্ত দিয়ে ধুয়ে পবিত্র করেছিলেন, যে পবিত্র জায়গাকে এখন আস-সউদ প্রতিটি গোত্র এবং ধর্মের কুফফার, ব্যভিচারী এবং ভ্রষ্টচারী সৈন্য বাহিনীর প্রবেশাধিকার দিয়ে তার পবিত্রতাকে নষ্ট করেছে, যারা এই পবিত্র ভূমিকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করেছে, যেখানে তাদের সৈন্য মোতায়েন করেছে, আর তাদের জন্য তা অভয়ারণ্য হিসেবে কাজ করছে যেখানে তারা মুসলিম এবং তাদের দেশে জঘন্যতম হত্যা, লুণ্ঠন আর ধ্বংসযজ্ঞ ঘটানোর পরে আত্মরক্ষা করছে।

রাসুলুল্লাহ (তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক) তাকে অভিশাপ করেছেন যে একজন অপরাধীকে আশ্রয় দেয়, তাহলে তার ব্যাপারে কি হবে যে এই জল্লাদদের পালাক্রমে আমন্ত্রণ জানায়, তাদের সম্মানের সাথে গ্রহণ করে, নিজেদের রাজ্যে যাদের আশ্রয় দেয়, আর শুধু সেই অপরাধী খুনিদের অন্তরকে প্রশান্ত ও খুশি করার জন্য আল্লাহর বান্দাদের নিপীড়ণে জর্জরিত করে।

তারা কি আশা করে এই উদ্যমী যুবকেরা তাদের এই নীতি অনুসরণ করবে?

তারা কি আশা করে এই যুবকেরা নিজেদের বিরোধে নিজেদের হীনবল করবে, কোন উদ্বেগ আকাঙ্খা ছাড়াই দুনিয়ার প্রতি মোহাবিষ্ট হয়ে থাকবে, দুনিয়ার প্রাপ্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকবে আর দুনিয়ার ছিঁটেফোটা প্রাপ্তির জন্য একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবে- যখন তাদের উম্মাহ কুফফার বাহিনীর দ্বারা পতিত, আহত আর নিহত হয়ে চিৎকার করে গোঙ্গাচ্ছে আর স্রষ্টার কাছে অনুনয় বিনয় করে শুধু বিলাপ করে যাচ্ছে, করে যাচ্ছে আর করেই যাচ্ছে অথচ এর শাসকরা তখন বসে বসে হাসি ঠাট্টায় মত্ত আছে?

আল্লাহর রাসুল (তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক) এই ধরণের মুসলিমদের বর্ণনা করতে

গিয়ে বলেছেন, “তারা একে অপরের শত্রু” এবং তিনি আরো বলেছেন (তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক), “মুশরিকদের জাজিরাতুল আরব থেকে বহিষ্কৃত কর”।

কাজেই ইসলামের সেই সব বীর সেনানী আর জান্নাতের উচ্চাকাঙ্খী ভাইদের পক্ষে আর চুপকরে থাকা সম্ভব হল না, যখন তারা দেখতে পেল যে সেই সব ক্রুশ পূজারীদের হাতে তাদের প্রতিবেশি দ্বীনি ভাইদের বাড়ী ঘরগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, তাদের দেশগুলোকে ছাড়খাড় করে দেয়া হয়েছে, তাদের সন্তানদের এতীম করা হচ্ছে, নারীদের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে, যুবক-বৃদ্ধকে অপমানিত করা হচ্ছে, তাদের জমিন থেকে দ্বীনের শিকড় উপড়ে ফেলা হচ্ছে, তাদের সস্পদ লুণ্ঠিত হচ্ছে, আর সেই সব ক্রুশের পূজারীরা জাজিরাতুল আরবে নিরাপদ প্রশান্ত ঘাঁটিতে তাদের মানব বিধ্বংসী অস্ত্র আর সৈন্য নিয়ে আরামে বসবাস করছে এবং তাদের নিরাপত্তার বিধান করছে তাদের চারপাশ ঘিরে রাখা জালিম আস-সউদের খলনায়ক সৈন্যরা: তাদের পক্ষে তখন আর মমির মত নিশ্চুপ হয়ে পরে থাকা সম্ভব হলো না যে, তারা তাদের আংগুলও সঞ্চালন করবে না, সেই জালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করবে না যারা এই খুনী অপরাধী সৈনদের রক্ষা করছে, সহায়তা দিচ্ছে, তাদের ভূমিকে নিরাপত্তার নামে তাদের জন্য খুলে দিচ্ছে, তাদের আত্মরক্ষার জন্য নিজের বাহিনীদেরকে সমবেত করেছে, নিজেদের সম্পদ দিয়ে তাদের হাতকে শক্তিশালী করছে, আর সেইসব নিরাপত্তা বাহিনীকে তাদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ করছে।

যারা এই সব কুফফারদের বাঁচাতে নিজেদের জীবনকে বিলিয়ে দিচ্ছে; যেখানে তাদের দায়িত্ব ছিল ইরাক, আফগানিস্তান এবং অন্যান্য জায়গায় মুসলিমদের নিরাপত্তার বিধান করতে গিয়ে শহীদ হয়ে যাওয়া।

আর জাবির (যার প্রতি আল্লাহ রাজি ছিলেন) আল্লাহর রাসুলের (আল্লাহ তারঁ উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত করুন) হতে বর্ণনা করেছেন, “যখন আল্লাহর সাহায্য তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে, সুমহান আল্লাহ, একজন ব্যক্তিকে সেই অবস্থার উপরই ত্যাগ করবেন যে তার ভাইকে এমন এক স্থানে ত্যাগ করেছিল, যেখানে তার সম্মান নষ্ট হচ্ছে এবং পবিত্রতা লঙ্ঘিত হচ্ছে।

আর যে তার ভাইকে এমন এক অবস্থায় উপকার করবে যেখানে তার সম্মান নষ্ট হচ্ছে এবং পবিত্রতা লঙ্ঘিত হচ্ছে, আল্লাহও তাকে এমন এক সময় উপকার করবেন যখন তা তার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হবে।” (আবু দাউদ)

কাজেই এ পরিস্থিতি মুজাহিদদের বাধ্য করেছে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে, যা মুফতির কাছে দ্বীনের পরিপন্থি মনে হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যই তার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে যাতে বলা হয়েছে, “তাদের অস্ত্র প্রস্তুত করাও তার মধ্যে শামিল যেমনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে।” অথচ সেই মুসলিম যুবকেরা আল্লাহর পবিত্র বানীর সাড়া প্রদান করেছে মাত্র:

وَأَعِدُّواْ لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدْوَّ اللّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآخَرِينَ مِن دُونِهِمْ

لاَ تَعْلَمُونَهُمُ اللّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنفِقُواْ مِن شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لاَ تُظْلَمُونَ

“আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যাই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান না; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুত: যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।” [সূরা আনফাল: ৬০]

আর উকবাহ বিন আমির (আল্লাহ যার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন) বলেছেন: “আমি আল্লাহর রাসুলকে (আল্লাহ তাঁর উপর দরুদ ও সালাম বর্ষিত করুন) তাঁর মিম্বরে বসে বলতে শুনেছি,

“তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের সর্বোচ্চ শক্তি সঞ্চয় কর। নিশ্চয় নিক্ষেপই হচ্ছে শক্তি, নিশ্চয় নিক্ষেপই হচ্ছে শক্তি, নিশ্চয় নিক্ষেপই হচ্ছে শক্তি।” (মুসলিম)

কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভাষ্যতে এমন কিছু ছিল যা সেই মুফতি অনুসরণ করে বলেছেন, “আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র বিদ্রোহের অভিসন্ধি” আল্লাহর কসম এটা একটি মিথ্যা, এমন একটি মিথ্যা যা এই জালিম সরকারের অধীনে থাকা সকল রাজ্যে অত্যন্ত সার্থকতার সাথে প্রচার এবং প্রসার করা হয়েছে।

সেই সব মুসলিম কারা যাদের বিরুদ্ধে মুজাহিদীনরা বিদ্রোহের অভিসন্ধি করছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে? যদি তারা সাধারণ জনগণ হয়ে থাকে, তবে আল্লাহর কসম মুজাহিদীনরা শুধু তাদের রক্ষা করার জন্যই এগিয়ে গিয়েছেন, এগিয়ে গিয়েছেন তাদেরকে তাদের অত্যাচার জুলুম থেকে মুক্ত করার জন্য এবং জালিমদের সেই সব অত্যাচারী আইনের যাঁতাকলে পড়ে মুসলিমরা আজ বিলাপ করছে।

আর মুজাহিদীনদের উৎসাহী করেছে আল্লাহর বাণী যেখানে সুমহান ঐশ্বর্যময় বলেন,

وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاء وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا

أَخْرِجْنَا مِنْ هَـذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا

“আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর, এখানকার অধিবাসীরা তো অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষাবলম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।” [সূরা নিসা: ৭৫]

অপরপক্ষে যদি কারও সাধারণ মুসলিমদের হত্যা করাই উদ্দ্যেশ্য হতো তবে তার জন্য কোনো কৌশল করার প্রয়োজন নেই, কেননা রাস্তা আর বাজারগুলো সর্বদাই সাধারণ মানুষের দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। আর তাই এই সব কথা সেই সব দেউলিয়া লোকগুলোর প্রপাগাণ্ডা এবং যাদের বুকে হিংসা ভরা ও তর্ক করার কোন দলীল নেই তাদের ভুল ধারণা মাত্র।

তাই, হে মুফতি, তুমি জেনে রেখো, একদিন তুমি সেই সুমহান সুউচ্চ আল্লাহর সামনে হাজির হবে যিনি বলেছেন,

مَّا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ ﴿ق: ١٨﴾

“সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে।”[সূরা ক্বাফ: ১৮]

এবং তিনি আরও বলেছেন (সমস্ত প্রশংসা তাঁরই প্রাপ্য),

وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً

“যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তার পিছনে পড়ো না। নিশ্চয়ই কান, চক্ষু ও অন্ত:করণ এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।” [বনী ইসরাঈল: ৩৬]

পক্ষান্তরে যদি মুসলিম বলতে সেই জালিম সরকারকে বুঝানো হয়ে থাকে, যাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগ করা হয়, যারা হচ্ছে জালিমদের রক্ষক, ইসলামী শরীয়ার অনেক উল্লেখযোগ্য বিষয় পালন করা থেকে যারা বিরত থাকে, তবে আমি বলব এই বিদ্রোহের কৌশল কতই না মহৎ উদ্যোগ, আর এই লক্ষ্যে তাদের কাজ কতইনা তারিফের যোগ্য এবং আল্লাহর ইচ্ছায় নিশ্চয়ই সঠিক।

শাইখ আল-ইসলাম (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) বলেছেন,

“প্রতিটি দল যারা কোন প্রতিষ্ঠিত, বহুল ব্যবহৃত ইসলামের আইন থেকে বিমুখ হয় তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই যুদ্ধ করতে হবে এই বিষয়ে প্রায় সকল ইমামই একমত, যদিও তারা শাহাদার দুটি অংশেরই স্বাক্ষ্য দেয়। সুতরাং তারা যদি শাহাদার দুটি অংশেরই স্বাক্ষ্য দেয় কিন্তু পাঁচ ওয়াক্ত নামায ছেড়ে দেয় আর তা প্রতিষ্ঠিত না করা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক, তারা যদি যাকাত দিতে অস্বীকার করে, তারা যাকাত দেয়া শুরু করা না পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা বাধ্যতামূলক। একই কথা প্রযোজ্য হবে যদি তারা রমজানে রোযা না রাখে, কাবা ঘরে হজ্জ্ব না করে, অথবা যদি তারা অশ্লীল কর্মকাণ্ড, ব্যভিচার, জুয়া মদ অথবা শরীয়াহর অন্যান্য নিষেধ থেকে বিরত না হয়। তাদের জন্যও একই কথা প্রযোজ্য হবে যারা হত্যা, সম্পদ, সম্মান, যৌন সম্পর্ক এর বিচারের ব্যপারে আল্লাহর কিতাব এবং রসূলের সুন্নাহর অনুসরণ করেনা” (মাজমুআ’ আল ফাতওয়া, ২৮ : ৫১০)।

আর আস-সউদ সরকারকে ‘ন্যায় পরায়ন শাসক’ বলাটা কতই না আশ্চর্যজনক, কিন্তু মহান ঐশ্বর্যময় আল্লাহর আয়াত পাঠ করলে সে আজব ভাব দূরীভূত হয়,

وَمَن لَّمْ يَجْعَلِ اللَّهُ لَهُ نُورًا فَمَا لَهُ مِن نُّورٍ ﴿النور: ٤٠﴾

“আল্লাহর পক্ষ থেকে যার প্রতি কোন আলো আসেনি, তার জন্য কোন আলো নেই”। [সূরা নিসা : ৪০]

আমি সেই সকল বিষয়গুলো এখানে তুলে ধরলাম না যেসব রাস্তা দিয়ে আে-সউদ সরকার ইসলাম ছেড়ে দিয়েছে, কারণ সৎ, সত্যবাদী, নিরপেক্ষ আলেমগণ তা বহু আগেই সে দায়িত্ব অনেকবার পালন করেছেন এবং বিভন্ন বিষয়ে ধরে ধরে তাদের যুক্তিকে খণ্ডন করেছেন।

পক্ষান্তরে আমি শুধু সেই সাদা সত্যটাকেই আবার প্রকাশ করতে চেয়েছি যা একজন সাধারণ আলেমের আগে, একজন মুসলিমের আগে একজন কাফিরও বুঝতে পারে, আর প্রকৃত পক্ষেই আল-সউদ নিজেরাই এমন প্রতিটি সুযোগের বড়াই করে যাতে তারা কুফফারদের সাহায্য সহযোগিতার মাধয্মে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়, যেমনটা এখানে উল্লেখ করা হল এবং আমরা দাবী করি যে, যারা এই মুরতাদ সরকারকে আমীর হিসেবে দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরে রাখতে চান, তারা যেন সম্ভব সমস্ত দিক থেকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেন: হতে পারে তা পরিষ্কার এবং সুস্পষ্ট আইনানুগ দলীলের মাধ্যমে- কিন্তু তা সম্ভব না, অথবা কিতাবের অক্ষরগুলো পরিবর্তন করে বা ভেঙ্গে দিয়ে। আর যদি তা তারা করতে ব্যর্থ হন, কোন সন্দেহ নেই তারা ব্যর্থ হবেন তারা যেন তাদের গুরুত্বহীন পটকা ফাঁসকে আলগা করে দেন এবং অক্ষম ষড়যন্ত্রের বেশ ঝেড়ে ফেলেন এবং সত্যকা প্রকাশ করে দেন অথবা অন্যায়কে সহায়তা করা বন্ধ করে দেন, কারণ যাদের ব্যপারে কথা বলেন তারা তো ইসলামের যোদ্ধা আর সেই সব বিখ্যাত আলেম যারা এই সত্যকে সবার মধ্যে প্রকাশ করে দিবেন, ছড়িয়ে দিবেন এবং যারা বিশ্বাস করেন,

الَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِسَالَاتِ اللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا اللَّهَ وَكَفَى بِاللَّهِ حَسِيبًا

“যারা আল্লাহর বাণী প্রচার করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ভয় করে না, আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট।” [সূরা আহযাব: ৩৯]

হে আল্লাহ, আস-সউদের জালিমদের ব্যবস্থা করুন। হে আল্লাহ, তাদের সংখ্যা গুনে নিন, তাদের হত্যা করুন এবং অবলুপ্ত করুন। আর তাদের একজনকেও ছাড় দিবেন না।

হে আল্লাহ, তাদের উপর আপনার সেনাবাহিনী এবং মু’মিন বান্দাদের শক্তিশালী করুন। আর তাদেরকে যারা বুঝে তাদের জন্য একটি নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করুন।

আপনার বান্দা এবং মুজাহিদীনদের বিজয়ী করুন, তাদের এবং তাদের পরিবারদের রক্ষা করুন, তাদের নিরাপদ করুন।

হে মু’মিনদের রক্ষাকর্তা। আর আমাদের চূড়ান্ত আবেদন হল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই প্রাপ্য যিনি সমগ্র পৃথিবীর মালিক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × four =

Back to top button