আল-বালাগ ম্যাগাজিন || ইস্যু-৩ | download now
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
https://archive.gnews.to/index.php/s/TqJbTxexKGo3tmX
https://banglafiles.net/index.php/s/cCMkgL3P7XRknmi
https://archive.org/details/al-balagh-issue-3-word-file-final
https://www.mediafire.com/file/eykmyuuhn28pirn/AL+BALAGH-ISSUE+3+(Word+File+Final).rar/file
******
আল বালাগ ম্যাগাজিন ইস্যু-৩
সূচীপত্র
মুমিনের মুসীবত মর্যাদা লাভেরই সোপান. 9
বিজয়ী উম্মাহর প্রতি সংক্ষিপ্ত বার্তা.. 12
আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে থাকতে হবে নেতৃত্বদানের গুণাবলী.. 17
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুস সালাম. 17
আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য: 21
শায়খ উমর আবদুর রহমান রহ. এর অছিয়ত. 22
ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী. 28
হোলি উৎসব: বসন্ত বরণ, না জাহান্নামের অগ্নি বরণ?. 31
ফেরাউন-মূসা বনাম তাগুত-জঙ্গি: একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি.. 37
মুমিনদের ‘সিরাজাম মুনীরা’র উভয় অর্থই ধারণ করতে হবে.. 40
ভারতরে সাথে প্রতরিক্ষা চুক্তিঃ…. 41
আমরা কেমন সন্তানের মা হওয়ার স্বপ্ন দেখি?. 48
তাগুত শাসকেরা আমাদের কিসের ভয় দেখায়?. 51
দ্বীনের বিধানগুলো মানার ক্ষেত্রে কি আমরাআল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করি? 55
আসবাব গ্রহণ তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়….. 58
মুতাওয়াক্কিল আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র. 59
তাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট. 59
২. জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাথে সুন্দর আচরন করা। মামলায় জড়ানো থেকে বাঁচার উপায় 68
২. ভাইদের সাথে উত্তম আচরণ করা: 71
৩. আপনার তথ্যবলী গোপন রাখুন: 73
কাণ্ডারী হুশিয়ার
এ সময়ে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ও চর্চিত বিষয় হচ্ছে- আগামী ৭-১০ এপ্রিলের মধ্যে ভারতের সাথে হতে যাওয়া সামরিক চুক্তি। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে এর পক্ষে বিপক্ষে প্রচার-প্রচারণা চলছে। ক্ষমতাসীনদের বাদ দিলে ‘হলুদালীয়’ বুদ্ধিজীবী ছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ এ চুক্তির বিরুদ্ধে- এটা স্পষ্ট।
সরকারী কর্ণধাররা বিষয়টিকে কৌশলে চেপে যাচ্ছেন। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ ও সে দেশের সামরিক-বেসামরিক উর্ধŸতন কর্মকর্তাদের দৌড়ঝাঁপ ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত বহন করে। তাদের সে খায়েশ পূরণের জন্যেই কি কথিত জঙ্গি নাটকের শুটিং চলছে কিনা- জনমনে এ সন্দেহ ক্রমেই ভিত্তি পাবার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
কী আছে সে চুক্তি বা এমইউতে? আগামী ২৫ বছর মেয়াদী বাণিজ্যিক ও সামরিক চুক্তির মাধ্যমে গোলামীর স্থায়ী জিঞ্জির পরানোর হীন প্রয়াস এটি। এর লাভ সবটুকু দাদাদের আর ক্ষতির পুরোটা ভাগ আমাদের! বন্ধ্প্রুতীম মানসিকতা বটে!
যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফেরি করেন তারা কি বলতে পারেন, স্বাধীনতার মূলো ছাড়া ভারত আমাদের কী দিয়েছে? পক্ষান্তরে আমরা শুধু দিয়েই চলছি। তাদের কোন আবদারটা আমরা অপূর্ণ রেখেছি? বেরুবাড়ি দিয়েছি, ট্রানজিট দিয়েছি, শুল্কমুক্ত অবাধ বাণিজ্য সুবিধা দিয়েছি। সোনার বাংলা শ্মশান করেছি; তারপরও দাদারা সুখে থাক! কিন্তু পরিণামে দাদারা দিয়েছেন- লাশের মিছিল! নদীমাতৃক স্বদেশের বুকে ধু-ধু বালিয়াড়ি! আর অস্থির পার্বত্যাঞ্চল!
ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতে আজ হিন্দুত্যবাদের রামরাজ্যে রূপ নিতে চলেছে। কসাইবাবুরা কোন রকম রাখঢাক ছাড়াই তার আয়োজন সম্পন্ন করছে। উত্তর প্রদেশের হিং¯্র আদিত্যনাথ যোগীর বিধায়ক নির্বাচিত হওয়া তারই স্পষ্ট প্রমাণ। যে কিনা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়েছে- মুসলিম নারীদের কবর থেকে তুলে এনে ধর্ষণ করার! আর এদিকে চলছে নাস্তক্যবাদি জালিমশাহীর শয়তানী শাসন।
আশ্চর্য! এভাবে জঙ্গী তকমা দিয়ে দুধের শিশু, নিরস্ত্র নারীদের পর্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হচ্ছে। অথচ আমরা তামাশা দেখছি!
প্রিয় উম্মাহ! এখনও কি বুঝার বাকি আছে?- এসব শাসকরাই আমাদের তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অথর্ব জাতিতে পরিণত করার চানক্যনীতি অবলম্বন করছে!
আজ ওদের তো, কাল আমরাই যে ওদের টার্গেট হবো না- তার কি গ্যারান্টি আছে? পরিস্থিতির কিন্তু দ্রুত অবনতি হচ্ছে। তাই সময় থাকতেই গা ঝাড়া দিয়ে ওঠুন! গণতন্ত্রের বাতিল নীতির পক্ষে আর কতো?…
ওই দেখুন, ভারতযুদ্ধের মুজাহিদ বাহিনী সংঘবদ্ধ হচ্ছে। সে কাতারে শামিল হয়ে জান্নাতের সওদা করুন। ফেলানীদের রক্তের মূল্য কড়ায় গণ্ডায় উসূল করতে হবে। আমার বোনের ইজ্জতের মূল্য কত বেশি তা ওদের বুঝিয়ে দিতে হবে।-তিতুমীর মিডিয়া
দারসুল কুরআন
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
‘‘এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করবো কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।” (সূরা বাকারা: ১৫৫)
মুমিনের জীবন চলার পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়; বরং পরীক্ষা ও ধৈর্যের কাঁটাময় পথ মাড়িয়েই তাকে চলতে হয়। এগিয়ে যেতে হয় অভীষ্ট লক্ষ্য জান্নাতের দিকে।
জান্নাত প্রভুর দেয়া নেয়ামত। সেকি এমনি এমনিই পাওয়া যায়? অনেক পথ পাড়ি দিয়েই তবে তা অর্জন করা সম্ভব। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন-
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ
‘‘(হে মুমিনগণ!) তোমরা কি মনে করেছো, তোমরা জান্নাতে (এমনিতেই) প্রবেশ করবে; অথচ এখনও পর্যন্ত তোমাদের ওপর সেই রকম অবস্থা আসেনি, যেমনটা এসেছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। তাদের ওপর এসেছিল অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট এবং তাদেরকে করা হয়েছিল প্রকম্পিত; এমনকি রাসূল এবং তাঁর ঈমানদার সঙ্গীগণ বলে উঠেছিল আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে? মনে রেখো, আল্লাহর সাহায্য নিকটেই।” (সূরা বাকারা: ২১৪)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন –
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
‘‘মানুষ কি মনে করে ‘আমরা ঈমান এনেছি’ এ কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে ছেড়ে দেওয়া হবে? ” – (সূরা আনকাবূত: ২)
কেন এই পরীক্ষা?
সূরা বাকারার আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে বলেছেন, অবশ্যই তিনি তার বান্দাদের পরীক্ষা নেবেন; নানাভাবে। যেন ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী আর মিথ্যাবাদীদের মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট হয়ে যায়। কে ধৈর্যশীল আর কে ধৈর্যহারা তা চিহ্নিত হয়ে যায়। এটা মহান প্রভুর নীতি। অবশ্য এর বোধগম্য কারণও রয়েছে। মুমিনরা যদি সর্বদা স্বাচ্ছন্দ্যে জীবন যাপন করেন, কষ্ট-মুসীবতের মুখোমুখি না হন – তাহলে দুরাচার বেড়ে যাবে; যা পরিণামে ধ্বংস ডেকে আনতে পারে। তবে প্রজ্ঞাময় আল্লাহ চান উভয়ের মধ্যকার ব্যবধান সুস্পষ্ট করে তুলতে। পরীক্ষার মাহাত্ম্য এখানেই। উদ্দেশ্য মোটেই তাদের বিতাড়িত করা নয়।
বান্দার সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা হলো রবের পথে স্বীয় প্রাণ বিসর্জন করা। যার ভাগ্যে এটা জুটে; সে তো ভাগ্যবান। যে সফলতা তাকে নবীদের পড়শি হওয়ার সুযোগ করে দেয় তার তুল্য কীসে? যাদের ভাগ্যে এটা না আসে তাদের পরীক্ষাও কিন্তু কম নয়!
পরীক্ষার বিবরণ অনেক আয়াতে এসেছে। যেমন, সূরা মুহাম্মাদে আল্লাহ তা’আলা বলেন –
وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ حَتَّىٰ نَعْلَمَ الْمُجَاهِدِينَ مِنكُمْ وَالصَّابِرِينَ وَنَبْلُوَ أَخْبَارَكُمْ ﴿٣١﴾
‘‘অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো। যেন স্পষ্ট করে তুলি, তোমাদের কারা মুজাহিদ আর ধৈর্যশীল এবং তোমাদের অবস্থাদিও যাচাই করে নিই।” (সূরা মুহাম্মদ: ৩১)
সূরা বাকারার উপরোক্ত আয়াতেও পরীক্ষার বিস্তারিত বিবরণ এসেছে।
আল্লাহ বলেন, অবশ্যই আমি তোমাদের পরীক্ষা নিব! কীভাবে? কিছু ভয় দিয়ে। কিছু ক্ষুধার পীড়ন দিয়ে। ধন-সম্পদের ক্ষতিসাধন করে। ফল-ফসলের ক্ষতি করে। এমনকি তোমাদের প্রিয়জনের জীবন অবসানের মাধ্যমে।
প্রকৃতপক্ষে, এ পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাকে প্রশিক্ষণ দিতে চান। কারণ, দ্বীনের সৈনিকদের বিপদাপদ ও সংকটাবস্থার মধ্য দিয়েই সামনে এগিয়ে যেতে হবে। কথায় আছে না ‘আগুনে পুড়িয়া সোনা খাঁটি হয় তবে।’।
হ্যাঁ, দ্বীনের পথে যখন কষ্ট-মুসীবত আসবে, তখন তার প্রতি ভালোবাসা গাঢ় হবে! তার মূল্য বুঝে আসবে। আর তখন দ্বীনের ওপর আঘাত আসলে, সে আঘাত তার অন্তরে যেয়ে লাগবে। দ্বীনের জন্যে এ কুরবানিই শত্রুদের ভাবতে বাধ্য করবে ‘এরা কীসের বলে মৃত্যুকে হাসিমুখে বরণ করে নেয়? কীসে এদের এতোটা ক্ষিপ্ত করে তুলে?’
হ্যাঁ, আল্লাহর সাহায্য তখনই অবিরল ধারায় বর্ষিত হয়। দলে দলে মানুষ কাফেলাবদ্ধ হতে ছুটে আসে। উমর, হামজা, খালিদ রাযিয়াল্লাহু আনহু এ আকর্ষণেই মাথা নুইয়ে দিয়েছেন সত্যের সম্মুখে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো বিপদ-মুসীবত এলেই আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক দৃঢ় হয়। মুমিন যখন দেখে, পুরো পৃথিবী তার বিরুদ্ধে; বাহ্যত সাহায্যের সকল পথ রুদ্ধ; তখন আল্লাহ তা‘আলার ওপর তার ভরসা শতগুণ বৃদ্ধি পায়। আর তখনই আল্লাহর মদদ অকল্পনীয়ভাবে আসে। গায়েবের দরজা যখন খুলে যায় তার দানটাও হয় অফুরান! যেমনটা পবিত্র কুরআনে বিবৃত হয়েছে, এভাবে ‘‘নিশ্চয়ই ধৈর্যশীলদের প্রতিদান দেয়া হয় অগুনতিভাবে।”
প্রশ্ন ওঠতে পারে, কষ্ট-পরীক্ষা যখন চরমে পৌঁছে; তখন ধৈর্যের বাঁধও তো দুর্বল হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়?
বলি, কুরআন এর সহজ সমাধান বলে দিয়েছে –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ مَعَ الصَّابِرِينَ ﴿١٥٣﴾
‘‘হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চিতই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।” (সূরা বাকারা: ১৫৩)
হ্যাঁ, নামাজ এমন এক ইবাদত; যার মাধ্যমে খালেকের সাথে মাখলুকের সম্পর্ক স্থাপিত হয় অত্যন্ত নিবিড়ভাবে। নামাজই সবকিছুর চাবিকাঠি। আর এজন্যেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন বিষয়ে চিন্তিত হতেন নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন।
প্রিয় ভাই! হীনবল হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না! রব্বে মুহাম্মদের শপথ! তোমরাই বিজয়ী হবে! তাই পরিস্থিতি যত জটিল হোক; দুনিয়া তোমাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিক; বন্ধুরা-শত্রুরা এক কাতারে চলে যাক। রব তো আছেন তোমাদের সাথে! তাঁর কদমে সঁপে দাও নিজেদের! সাহায্য চাও সেই সত্তার কাছে; যিনি অসীম দাতা; পরম দয়ালু।
দারসুল হাদীস
মুমিনের মুসীবত মর্যাদা লাভেরই সোপান।
মুহাম্মাদ আনিসুর রহমান
الحمد لله الذى وحده والصلوة والسلام على من لا نبى بعده، اما بعد: فقد قال رسول الله صلَّى الله عليه وسلّم: مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
ক্রমাগত বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবত ঈমানদারদের জন্যে উচ্চ মর্যাদা লাভের এক একটি সোপান। মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বালা-মুসীবতে আক্রান্ত করার মাধ্যমে নিজের নৈকট্যশীল করে নেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُصِبْ مِنْهُ
‘‘আল্লাহ যার কল্যাণ চান; তাকে মুসীবতে আক্রান্ত করেন।” -সহীহ বুখারী: ৫৬৪৫
আল্লাহ তা‘আলার সবচেয়ে নৈকট্যশীল বান্দা নবী-রাসূলগণই সর্বাপেক্ষা বেশি বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবতে আক্রান্ত হয়েছেন। দ্বীন প্রতিষ্ঠায় এবং দ্বীনের ওপর দৃঢ়পদে অটল-অবিচল থাকার ক্ষেত্রে তাঁরা সম্মুখীন হয়েছেন একের পর এক পাহাড়সম কঠিন পরীক্ষায়। আর যারা নবী-রাসূলগণের একনিষ্ঠ অনুসারী, তাঁদের উত্তম আদর্শের আলোকে মহান আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী; তাঁদের ওপরও একের পর এক পরীক্ষা আপতিত হয়। হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে –
عَنْ مُصْعَبِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ النَّاسِ أَشَدُّ بَلَاءً؟ قَالَ: الأَنْبِيَاءُ ثُمَّ الأَمْثَلُ فَالأَمْثَلُ، فَيُبْتَلَى الرَّجُلُ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَإِنْ كَانَ دِينُهُ صُلْبًا اشْتَدَّ بَلَاؤُهُ، وَإِنْ كَانَ فِي دِينِهِ رِقَّةٌ ابْتُلِيَ عَلَى حَسَبِ دِينِهِ، فَمَا يَبْرَحُ البَلَاءُ بِالعَبْدِ حَتَّى يَتْرُكَهُ يَمْشِي عَلَى الأَرْضِ مَا عَلَيْهِ خَطِيئَةٌ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ
মুস‘আব ইবনে সা’দ রহ. হতে তাঁর বাবার সূত্রে বর্ণিত, তিনি (সা’দ) বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! মানুষের মাঝে কার পরীক্ষা সবচেয়ে কঠিন হয়? তিনি বললেন নবীদের পরীক্ষা, তারপর যারা নেককার তাদের, এরপর যারা নেককার তাদের পরীক্ষা। মানুষকে তার ধর্মানুরাগের অনুপাত অনুসারে পরীক্ষা করা হয়। তুলনামূলকভাবে যে লোক বেশি ধার্মিক; তার পরীক্ষাও সে অনুপাতে কঠিন হয়ে থাকে। আর যদি কেউ তার দ্বীনের ক্ষেত্রে শিথিল হয়ে থাকে; তাহলে তাকে সে মোতাবেক পরীক্ষা করা হয়। অতএব বান্দার ওপর বিপদ-আপদ লেগেই থাকে। অবশেষে তা তাকে এমন অবস্থায় ছেড়ে দেয় যে, সে জমিনে চলাফেরা করে; অথচ তার কোন গুনাহই থাকে না। -সুনানে তিরমিযী: ২৩৯৮
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, যারা আল্লাহ তা‘আলার যত অধিক নৈকট্যশীল; তাদেরকে তত বেশি কঠিন ইবতিলা তথা পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়। যার ওপর কোন বিপদাপদই আপতিত হয় না, এটা তার জন্যে বুযুর্গীর কোন বিষয় নয়; বরং বুঝতে হবে সে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মত তাওহীদের একনিষ্ঠ বিশ্বাস অর্জন করতে পারেনি।
মুমিন বান্দার ওপর তাদের মহান রবের বিশেষ অনুগ্রহ যে, তারা সামান্য কষ্ট আর আঘাত সহ্য করার কারণে, তাদের আমলনামা থেকে গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ الصَّالِحِينَ يُشَدَّدُ عَلَيْهِمْ، وَإِنَّهُ لَا يُصِيبُ مُؤْمِنًا نَكْبَةٌ مِنْ شَوْكَةٍ، فَمَا فَوْقَ ذَلِكَ إِلَّا حُطَّتْ بِهِ عَنْهُ خَطِيئَةٌ، وَرُفِعَ بِهَا دَرَجَةً
‘‘নেককার লোকেরা অধিক পরিমাণে কষ্টের সম্মুখীন হন; আর কোন মুমিনের গায়ে যদি কোন কাটার আঁচড় লাগে, তাহলে তার আমলনামা থেকে সে পরিমাণ গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়।” -মুসনাদে আহমাদ
অপর এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
إِنَّ عِظَمَ الْجَزَاءِ مَعَ عِظَمِ الْبَلاءِ، وإِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِذَا أَحَبَّ قَوْمًا ابْتَلاهُمْ، فمَنْ رَضِيَ فَلَهُ الرِّضَا، وَمَنْ سَخِطَ فَلَهُ السَّخَطُ
‘‘নিশ্চয়ই বিপদ বাড়ার সাথে সাথে প্রতিদানও বৃদ্ধি পায়, আর আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন জাতিকে ভালোবাসেন; তখন তাদের পরীক্ষায় ফেলেন। যে ব্যক্তি পরীক্ষার এই কঠিন মুহূর্তেও সন্তুষ্ট থাকে, আল্লাহ তা‘আলাও তার ওপর সন্তুষ্ট থাকেন। আর যে ব্যক্তি অসন্তুষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলাও তার ওপর অসন্তুষ্ট হন।” -তিরমিযী
সুতরাং আমরা খুব সহজে এ কথা বুঝতে পারি মুমিনদের ওপর আপতিত যে কোন কষ্ট-ক্লেশ, বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবত তাদের জন্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়, গুনাহ মাফের মাধ্যম এবং উচ্চ মর্যাদা লাভের একেকটি সোপান। এ জন্যে আমাদেরকে সব ধরনের কঠিন পরিস্থিতিতে উপযুক্ত প্রতিদান লাভের আশায় সন্তুষ্ট চিত্তে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আর আল্লাহ তা‘আলা পরীক্ষার মাধ্যমেই যাচাই করবেন, কারা তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ধৈর্যধারণ করে? পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন –
أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَعْلَمِ اللَّهُ الَّذِينَ جَاهَدُوا مِنْكُمْ وَيَعْلَمَ الصَّابِرِينَ
‘‘নাকি তোমরা মনে করেছ যে, তোমরা (এমনিতেই) জান্নাতে পৌঁছে যাবে; অথচ আল্লাহ এখনও পর্যন্ত তোমাদের মধ্য হতে সেই সকল লোককে যাচাই করে দেখেননি, যারা জিহাদ করবে এবং তাদেরকেও যাচাই করে দেখেননি, যারা ধৈর্যধারণ করবে।” (সূরা আলে ইমরান: ১৪২)
মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সকল বিপদ-আপদ ও বালা-মুসীবতে উত্তম ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
বিজয়ী উম্মাহর প্রতি সংক্ষিপ্ত বার্তা
পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ
শত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেকের ওপরই ফরয; এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُم بُنْيَانٌ مَّرْصُوصٌ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন; যারা তাঁর পথে যুদ্ধ করে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায়।”-সূরা ছফ: ৪
কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে যারা নিরন্তর নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন। তাঁদের অন্যতম ছিলেন- শায়খ উসামা বিন লাদেন রহ.। তিনিই যুগের হোবল আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্যে উম্মাহকে এক করার চেষ্টা করেন।
এর উজ্জ্বল উদাহরণ হচ্ছে, তাঁর উল্লেখযোগ্য উদ্ভাসিত রাজনৈতিক কৌশল- তিনি ইমারাতে ইসলামিয়ার অধীনে বায়আত দিয়েছেন। এবং বিশে^র সমস্ত মুসলমানদের এ বায়আত দেয়ার জন্যেই আহ্বান করেছেন।
এটি এমন এক ইমারাহ, যার প্রশংসা করেছেন- শায়খ হামুদ উকালা রহ., শায়খ সালমান আল-উলওয়ানী ও আলী আল-খাদির (আল্লাহ তাঁদেরকে মুক্ত করুন), সেনাধ্যক্ষ শায়খ আবু হাফস রহ., শায়খ আবু মুসআব আয-যারকাভী রহ., শায়খ আবু হামযা আল-মুহাজির রহ., শায়খ আবুল লাইছ আল-লিবী, শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল-লিবী, শায়খ আবু ইয়াহইয়া আল-লিবী রাহিমাহুমুল্লাহ, শায়খ নাসির আল-ওয়হশী রহ., শায়খ মুখতার আবু যুবায়ের রহ., শায়খ আবু মুহাম্মাদ আত-তুরকিস্তানী রহ., শায়খ আবু কাতাদা আল-ফিলিস্তিনী, শায়খ আবু মুহাম্মদ আল-মাকদিসী, শায়খ হানী আস-সিবায়ী, শায়খ তারেক আব্দুল হালীম সহ অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম ও নেতৃত্বশীলগণ এবং দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানের বিশিষ্টব্যক্তিগণ। তাঁরা কোন অতি উৎসাহ বা ভয়ের বশবর্তী হয়ে এ ইমারাহ’র প্রশংসা করেননি; বরং তাঁদের প্রশংসা ছিল সত্যের প্রতি সাক্ষ্যদান; এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে উম্মতে মুসলিমার এক কাতারে একতাবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যেই পদক্ষেপ।
এটি সে ইমারাহ; যা সৎকাজের আদেশ দেয়, মন্দ কাজ হতে নিষেধ করে, শরীয়ত অনুযায়ী বিচার-ফয়সালা করে, মুহাজির ও দুর্বলদের আশ্রয় প্রদান করে, তন্ত্র-মন্ত্র নামক মূর্তিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়, সীমালঙ্গনকারী ক্রুসেডারদেরকে সমুচিত জওয়াব দেয়।
তাই আমার মুসলিম ও মুজাহিদ ভাইদের আহ্বান করছি, বিশেষ করে আফগানিস্তানের ভাইদেরকে আহ্বান করছি- আপনারা এই ইমারাহ’র পাশে সমবেত হোন। মুজাহিদদেরকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যে হীন চেষ্টার প্রতি আপনারা মোটেও সাড়া দেবেন না। যারা এমন অপচেষ্টায় লিপ্ত; তাদের কাজই প্রমাণ করে- তারা ইসলামের শত্রু বৈ ভিন্ন কিছু নয়।
মুজাহিদদেরকে বিচ্ছিন্ন করার এ হীন অপচেষ্টায় প্রথমে আসে জামাআতু ইবরাহীম আল-বদরীর নাম। যারা হলো নিকৃষ্ট খারেজীদের উদাহরণ। অনবরত মুসলিম জনসাধারণ ও মুজাহিদদেরকে তাকফীর করাই যাদের বৈশিষ্ট্য। এমনকি তারা সৎকর্মের কারণেও মুসলমান ভাইদের প্রতি কুফরের অপবাদ চাপায়। উদাহরণ চাইলে, বলা যায়- শহীদ ভাই আবু সাঈদ আল-হাদরামী রহ. এর কথা। তাকে তাকফীর করা হয়, কেননা তিনি জায়শুল হুর এর কাছ থেকে জিহাদের ওপর বায়আত নেন।
জামাআতু ইবরাহীম আল-বদরী আল-কায়েদার নেতৃত্বশীলকে পর্যন্ত তাকফীর করে। কারণ কী? তারা দাওয়াতের ক্ষেত্রে কখনো কখনো নরম কথাও বলে।
এ জামাআতের আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হলো- শরীয়তের আলোকে বিচার-ফয়সালা থেকে পলায়ন করা, মিথ্যা রটানো, অপবাদ আরোপ করা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা।
এত কিছুর ওপর তারা ঘোষণা দিল- যারা তাদের বিরুদ্ধে যাবে, চাই সে শরীয়তের আলোকে বিচার প্রার্থণা করুক না কেন; সে কাফের, তার স্ত্রী ব্যাভিচারিণী! এ যেন তারা নবুওয়তের দাবী করছে- যারাই তাদের বিরুদ্ধে যায়; তারাই কাফের!
আল-কায়েদাকে তাকফীর করার যথোপযুক্ত একটি কারণ বর্ণনার জন্যে তাদেরকে বহু বার আহ্বান করা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তারা কোন প্রকার জবাব দেয়নি। আজও আমরা তাদেরকে, তাদের নেতা ইবরাহীম আল-বদরীকে আহ্বান করছি- আমাদেরকে তাকফীর করার কারণগুলো বর্ণনা করে দাপ্তরিকভাবে বিবৃতি প্রদান করুন। যে কারণগুলো হতে হবে অকাট্য এবং সুদৃঢ়।
আমাদের বারবার বলা সত্ত্বেও তারা আজ পর্যন্ত এটা বলেনি যে, সে সব লোক কারা? যারা তাকে নেতা হিসেবে ঘোষণা দেয়। তাকে খলীফার আসনে বসায়। আমরা আজও ইবরাহীম আল-বদরীর কাছে জানতে চাইবো- যারা তাকে খলীফার আসনে বসিয়েছে, তাকে বায়আত দিয়েছে; কে তারা? তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডই বা কী? তাদের বৈশিষ্ট্য কী? তাদের বিষয়ে স্পষ্ট করতে হবে- যারা সাদ্দাম বাহিনীতে ছিল, বিশেষ করে যারা ছিল সাদ্দামের গোয়েন্দা বিভাগে। কোন অধিকারে তাদেরকে উম্মতে মুসলিমার নিয়ন্ত্রণে বসানো হয়েছে?
হে মুসলিম ও মুজাহিদ ভাইগণ! বিশেষ করে আফগানের ভাইয়েরা! ইমারাতে ইসলামিয়া তার আমীর, দায়িত্বশীল ও সেনাদের নিয়ে চৌদ্দ বছরেরও বেশি সময় ধরে, একমাত্র রবের ওপর ভরসা করে স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে ক্রুসেডারদের হামলার প্রতিরোধ করে আসছে । তাদের দেয়া এমন অসংখ্য কোরবানীর পর নব্য খারেজীদের আবির্ভাব ঘটেছে, তাদেরকে কাফের বলার জন্যে! বলে কী?- তালেবান তাগুতের গোয়েন্দা দল! তাহলে বলো- আমেরিকার বিমানগুলো কেন তাদের গোয়েন্দাদের ওপর হামলা করবে? আমেরিকার গোয়েন্দা দল কী আমেরিকাকে মৃত্যুর ঘাটে নিয়ে যাবে? নিজেদেরকে লাঞ্ছনার শেষ দেখিয়ে ছাড়বে? তাগুত গোয়েন্দা দল কি মুরতাদ সরকারকে হত্যা করবে? আফগানিস্তানকে তাদের ফাসাদ থেকে মুক্ত করবে?
তাই আমি সতর্ক করছি- ইবরাহীম আল-বদরীর অপরাধগুলো জেনেও যারা তাকে বায়আত দেবে; তারা তার এ সব কর্মে তার সমান সাহায্যকারী।
সে তাদের মতোই শরীয়তের বিচার-ফয়সালা থেকে পালানোর ব্যাপারে তাদের সঙ্গী। মুসলমানদেরকে তাকফীর করা, ক্রুসেডারদেরকে প্রতিহতকারী মুজাহিদদেরকে বিচ্ছিন্ন করা, তাঁদেকে মিথ্যা অপবাদ দেয়া, মুজাহিদদের পূত স্ত্রীদেরকে কযফ তথা ব্যভিচারের অপবাদ দেয়ার ক্ষেত্রে, যারা শরীয়তের আলোকে বিচার-ফয়সালা করতে চায় তাঁদেরকে হত্যা করা, তাঁরা তাদের অনুগত না হলে তাঁদেরকে হত্যার হুমকি দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের সমান অংশীদার। তাদের অংশীদার তাদের সকল অপরাধে। বিচার দিনের জন্যে তারা যেন জবাব তৈরি করে রাখে।
সবশেষে, সকল প্রশংসা মহান রব্বুল আলামীনের। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক আমাদের নেতা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি এর ওপর। তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীদের ওপর। আস-সালামু আলাইকুম ও রহমাতুল্লাহি ওবারাকাতুহু।
আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে থাকতে হবে নেতৃত্বদানের গুণাবলী
মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুস সালাম
আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিবর্গ হলেন অপরাপর লোকদের কাছে অনুসৃত ব্যক্তিত্ব, অর্থাৎ তাদের নির্দেশনার অনুসরণ করা হয়। অনুসরণকারীর পক্ষে অপরের যথাযথ অনুসরণ করে পথ চলা সহজ; কিন্তু একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে পথ চলার ক্ষেত্রে অনেক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। তাদের সঠিক নেতৃত্বদানের সুফল যেমন সবাই লাভ করে থাকেন; ঠিক তেমনি তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতির ফলে সৃষ্ট ভোগান্তিও সবাইকে পোহাতে হয়। কাজেই সঠিক নেতৃত্বদানের জন্যে একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে থাকতে হবে সঠিক নেতৃত্বদানের গুণাবলী।
নেতৃত্বদানের গুণাবলী:
১. ইলমী গভীরতা ও বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত থাকা: শরীয়তের আবশ্যকীয় বিষয়সমূহে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির পাণ্ডিত্য ও ইলমী গভীরতা থাকতে হবে। অবগত হতে হবে বাস্তবতা ও চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে।
২. বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা: প্রতিটি কাজ বাস্তবায়নে এবং নিজের কর্তব্য পালনে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
৩. সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদর্শীতা: উপস্থিত যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে হতে হবে দূরদর্শী। কাজের ফলাফল ও পরিণাম চিন্তা করেই যথাযথ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে হবে।
৪. বীরত্ব ও সাহসিকতা: ভীরু-কাপুরুষ স্বভাবের লোক কখনো নেতৃত্বদানের উপযুক্ত নয়; নেতৃত্বদানের জন্যে অবশ্যই একজন নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে থাকতে হবে বীরত্ব ও সাহসিকতা, থাকতে হবে দ্বীনের পথে নিজের জান উৎসর্গ করার একান্ত ইচ্ছা ও মানসিকতা।
৫. কর্মচাঞ্চল্য ও কৌশল অবলম্বন: প্রত্যেকটি কাজ বাস্তবায়নে এবং কর্তব্য পালনে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে হতে হবে কর্মঠ ও কৌশলী। অলসতা পরিহার করে উদ্যমী হয়ে অবিরাম কাজ করার মেজাজ গড়তে হবে। অব্যাহত রাখতে হবে যথাযথ কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা।
৬. দৃঢ়প্রত্যয়: কাজে দৃঢ়প্রত্যয়ী ব্যক্তি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণে থাকেন অটল ও অবিচল; তাই একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মাঝে এ গুণ থাকা চাই।
৭. ওয়াদা-প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা: অপরের সাথে কৃত ওয়াদা-প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে হবে; সমন্বয় থাকতে হবে কথায় ও কাজে। অন্যথায় কারো কাছে নিজের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না।
৮. সত্যবাদিতা: আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে অবশ্যই সত্যবাদী হতে হবে। মিথ্যা বলায় অভ্যস্ত হলে কারো কাছে বিশ্বস্ত হতে পারবে না।
৯. উপদেশ দেওয়া ও সদুপদেশ গ্রহণ করা: নিজের অধীনের এবং সাধারণ লোকদের ভালো উপদেশ দেওয়া; এমনিভাবে অপরের সদুপদেশও গ্রহণ করা। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- الدِّينُ النَّصِيحَةُ “দ্বীন হচ্ছে উপদেশের নাম”
১০. ক্ষমা ও উদারতা: যে কোন নিরপরাধী ব্যক্তির প্রতি ক্ষমা ও উদারতার মেজাজ দেখাতে হবে।
১১. ন্যায়পরায়ণতা: বিচারকার্য সম্পাদন করতে হবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে; অপরাধীকে শরীয়তের বিধান অনুযায়ী শাস্তি দিতে হবে, নিরপরাধীকে মুক্তি প্রদান করতে হবে।
১২. কোমল চরিত্র ও নিষ্কলুষ থাকার প্রবণতা: আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হবে। শান্ত-শিষ্টতা, বিনয়-নম্রতা, মানুষের সাথে সহজভাবে মিশতে পারা, অপরের কথা মনোযোগের সাথে শোনা, কৃতজ্ঞতা আদায়, কুপ্রবৃত্তিকে দমন করা, হিংসা থেকে মুক্ত থাকা, গীবত-পরনিন্দা না করা এবং কারো থেকে তা না শোনা, রাগ দমন করা, নিজেকে সংযত রাখা; এককথায় সব ধরনের উত্তম গুণে চরিত্রবান হতে হবে, মন্দ স্বভাবগুলো পরিহার করতে হবে। আর এ আখলাক শুধু একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির জন্যেই নয়; বরং প্রত্যেক মুমিনের জন্যেই আবশ্যক।
১৩. কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করা: মুসলিমদের জন্যে কিছুতেই বৈধ নয় কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করা; তাহলে মুসলিমদের আমীর বা নেতা কিভাবে কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে পারে? এ ব্যাপারে তো আমীর বা নেতার মাঝেই সর্বাধিক কঠোরতা থাকা উচিত।
১৪. প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার নিখুঁত-সুষ্ঠু বাস্তবায়ন:
(ক) যুদ্ধ পরিচালনা করা।
(খ) নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা।
(গ) বিরোধী-শত্রু, সমালোচকদের ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া।
(ঘ) অমুসলমান নাগরিকদের অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
(ঙ) সামাজিক ব্যবস্থায় শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
(চ) যোগাযোগ ব্যবস্থা-ডাক বিভাগকে যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা।
(ছ) প্রত্যেককে তার কাজের ধরন অনুযায়ী পারিশ্রমিক ও বিনিময় প্রদান করা।
(জ) কোন কাজে শরীয়তের খেলাফ করে দল-প্রীতিতে মত্ত না থাকা। তানজীমকে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির ওপর পরিচালনা করা।
১৫. শৃঙ্খলা ও সুবিন্যস্ততা: সব কাজে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকে হতে হবে সুশৃঙ্খল-পরিপাটি। নিয়ম-নীতি বজায় রেখে মজলিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত বিষয়াদি পরিচালনা করতে হবে সুশৃঙ্খল ও সুবিন্যস্তভাবে।
আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য:
১. শরীয়তের বিধান বাস্তবায়ন: আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির মূল কাজই হল শরীয়তের বিধান অনুযায়ী সব কাজ পরিচালনা করা।
২. ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা: মুসলিমদের পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির উল্লেখযোগ্য প্রধান কাজ।
৩. বন্দীদের মুক্তকরণ: একজন আমীর বা নেতার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব-কর্তব্য হলো নিরপরাধ বন্দীদের বন্দীদশা থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করা। আর যে কোন উপায়ে একজন অবরুদ্ধ-বন্দী মুসলিমকে কাফেরদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।
৪. মাজলুম ও সর্বসাধারণের সাহায্যে জরুরী ব্যবস্থা: এ জন্যে আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তিকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
বস্তুত, এ সকল গুণাবলী ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য একদিকে যেমন প্রত্যক্ষ নেতৃত্বের সাথে সম্পৃক্ত; আবার উত্তম চরিত্রের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায়, এমন গুণে গুণান্বিত হওয়া প্রত্যেক মুমিনের জন্যেই আবশ্যক। তাহলে একজন আমীর বা নেতৃত্বশীল ব্যক্তির এমন গুণাবলী ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জনে কি পরিমাণ সচেষ্ট হওয়া উচিত, তা কি বলার অপেক্ষা রাখে?
[শায়খ সাঈদ হাওয়া কর্তৃক লিখিত ‘ফুসূল ফিল ইমারাতি ওয়াল আমীর’ ও ‘লুমুহাত ফি ফন্নিল কিয়াদাতি’ নামক গ্রন্থদ্বয় অবলম্বনে এবং সম্পাদক কর্তৃক মূল বিষয়াদির বিশ্লেষণ সহকারে সংকলিত]
শায়খ উমর আবদুর রহমান রহ. এর অছিয়ত
আমাকে বন্দী হিসেবে দেখতে পারাই আমেরিকানদের কাছে বিশেষ একটি গুরুত্বের বিষয়। তারা এটাকে নিজেরদের সাফল্য ও গৌরব মনে করে। আমার বন্দী দশাকে পুঁজি করে তারা মুসলমানদের কাটা ঘায়ে নুন ছিটানোর জন্যে বলতে চায়- মুসলমানরা এবার পরাজিত হচ্ছে। তাদের অহংকার ধুলোয় মিশে যাচ্ছে। মুচড়ে যাচ্ছে তাদের শক্তি।
এ জন্যে তারা আমার ওপর শুধু শারীরিক নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং শত অনাচার করে যাচ্ছে মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত করার জন্যে। তারা আমাকে বাইরের আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত রেখেছে। আমাকে দেয়নি বসন্তের কোকিলের গান শুনতে, দেয়নি মৃদু বাতাসে হেলে-দুলে পরশ দেওয়া শরতের ফোটা ফুল দেখতে। বঞ্চিত করেছে বৈধ অধিকারটুকুও ভোগ করতে। বেঁচে থাকার আবশ্যকীয় আহার-বস্ত্র থেকে বঞ্চিত করতেও ভুল করেনি তারা। এমনকি আমাকে পত্রিকা, রেডিও বা অন্য কোন সংবাদ মাধ্যমের সহায়তা দিতে প্রস্তুত নয়। আমি যেন ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ি; ঝরে পড়ে ইসলামের একটা বসন্তের ফোটা ফুল ও উজ্জল নক্ষত্র।
তারা আমাকে সর্বদা একাকী একটি প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ রাখে। আরবী জানে এমন কোন ব্যক্তিকে আমার কাছেই ঘেষতে দিতো না। এভাবে একের পর এক দিন, রাত, সপ্তাহ, এমনকি বছরও অতিক্রম হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমাকে কারো সাথে একটু কথা বলার সুযোগ পর্যন্ত তারা দেয়নি। নেই কি আমার সেই প্রয়োজনীয় অধিকারটুকুও ভোগ করার? এ কেমন নির্মমতা! এ কেমন বর্বরতা? কিন্তু আল্লাহকে আমি উত্তম বন্ধুৃ হিসেবে পেয়েছি। পেয়েছি তাঁর কালামকে একাকীত্বের নীরব প্রাচীর ভাঙ্গার সঙ্গী রূপে। যদি আল্লাহর কালামকে আমি একাকীত্বের বন্ধু হিসেবে, মানসিক প্রশান্তির খোরাক হিসেবে না পেতাম; তাহলে হয়তো অকালেই আমি আমার বোধশক্তিও হারিয়ে ফেলতাম। কুরআনকে কাছে পেয়ে আমি আনন্দিত, আমি প্রফুল্ল। এতে যেমন আমার কেটেছে একাকীত্বের অসহায়ত্ব, তেমনি আমার প্রিয় বন্ধু আল্লাহর সাথেও আলাপচারিতার সুযোগ হয়েছে।
তারা আমাকে বিভিন্ন উপায়ে হেনস্তা করতো। সব সময় আমার আশপাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করে রাখতো। বন্দী করতো আমার সব কিছু; এমনকি জৈবিক নড়াচড়াও। গোসল করতে গেলে সেখানেও দেখতাম- সিসি ক্যামেরা। কি আশ্চর্য! আমি কি তাহলে তাদের কাছে দৈত্য-দানব বনে গেলাম? না ভিন গ্রহের কোনো প্রাণী! উপরন্তু এতেও তাদের শান্তি মিলতো না। সর্বদা আমার পিছনে দু’পা বিশিষ্ট একটা লাল কুকুর নিযুক্ত করে রাখতো।
তাদের হীনতার বহিঃপ্রকাশ করতে গিয়ে তারা আরো হীনতায় র্জজরিত হওয়ার জন্যে সুযোগ নিতো আমার চোখের ক্ষীণজ্যোতির। তল্লাশীর নামে আমাকে নবজাতকের মতো বিবস্ত্র করতে একটুও লজ্জা করেনি তারা। করবেই বা কি করে? থাকলেই তো তবে! বরং এর চেয়েও জঘন্য কাজ করতেও তাদের মানবতায় বাধে নি। নেড়ে-চেড়ে দেখতো লজ্জাস্থান পর্যন্ত। সেখানে আবার কোন এটম বোমা লুকিয়ে আছে কিনা! নাকি সেটা আবার কোন এটম বোমের জন্ম দেয়!
তারা প্রতিবারই যখন তাদের আপন সত্ত্বাকে হীন করতে আমার কাছে আসতো, প্রতিটি সাক্ষাতের শুরুতে এবং শেষে তাদের সেই মানবতার(!) একটা পর্ব আমার জন্যে উপঢৌকন করতো।
হৃদয়ে তখনি ঝড় উঠতো- ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে ফেলার জন্যে। আমি সে কথাটাই ভাবতাম- যা বলেছিলেন হযরত মরিয়াম আ.। “হায় আমি যদি কোনরূপে এর পূর্বে মরে যেতাম এবং বিলুপ্ত হয়ে যেতাম!” মৃত্তিকা কোলে যদি একটু লুকাবার জায়গা হতো! নিভু নিভু জীবনটুকুর জন্য যদি একটু জায়গা খুঁজে পেতাম! শুধু একটু! যাতে লুকাতে পারি- আমার এই দেহখানা! সাথে ইজ্জতটুকুও!
না! সেটা হয়নি। হয়েছে তাদের জন্যে জর্জরিত মুসলিমের কলজে ফাটা ঘায়ে আরো একবার নুন ছেটাবার সুযোগ। তৈরি করেছে একটি দৃষ্টান্ত। যেন মুসলমান তাদের মত মানবতাটাকেও জলাঞ্জলী দিয়ে পরিণত হয় নরপশুতে। তুলনা করলে যেন পশুদের পশুত্বও তাদের পশুত্বের কাছে হার মানায়।
তারা আমাকে জুমার নামায, ইজতেমায়ী ইবাদত, ধর্মীয় উৎসব সহ কোন ধরনের ইবাদতই সুষ্ঠ-সুন্দরভাবে পালন করতে দেয়নি। এমনকি কোন মুসলমানকে আমার কাছে ঘেষতে দেয় নি। তারা আমাকে মহান প্রভূর ইবাদত থেকেও বঞ্চিত করেছে। বঞ্চিত করেছে নির্বঘেœ ধ্যানমগ্নতা থেকেও। বিভিন্ন কৌশলে বঞ্চিত করতো আমাকে আল্লাহর সাথে নিবিড়ভাবে জুড়ে থাকতে।
আমার সর্বদাই অনুভূত হতো- এরা আমাকে তিলে তিলেই শেষ করবে। দুনিয়ার মানুষ কি করে জানবে- আমাকে তারা কিভাবে তিলে তিলে শেষ করে দিতে চাচ্ছে? তারা যদি খাবারে কোন বিষাক্ত ভাইরাস মিশিয়ে দেয়, তার খবরও তো কেউ জানবে না! হয়তো কোন সময় তারা আমাকে নেশাজাত দ্রব্যও দিয়ে থাকতে পারে। যেন বোধ শক্তিটুকুও লোপ পায়। নিভু নিভু করতে করতে এক সময় যেন সত্যিই নিভে যায়- এই জীবন প্রদীপটি।
কখনো এমন হতো- আমাকে যে তলায় রাখা হয়েছিল তার ওপর তলা থেকে এমন দুর্গন্ধ আসতো, মনে হতো- আমার দেহ থেকে পুরো তক্ব খসে পড়বে। এমন বিরক্তিরকর আওয়াজ আসতো, মনে হতো- শত বছরের পুরানো এয়ারকন্ডিশন বহু কষ্টে গ্রেনেডের বিষ্ফোরণ ঘটাতে ঘটাতে চলতে শুরু করেছে। এই অসহ্যকর আওয়াজ অনেক ঘন্টা ধরে চলতো। এমনকি মাঝে মাঝে দিনও অতিক্রম হয়ে যেতো এই আওয়াজের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে।
এ তো হাজার বেদনা থেকে ঝড়ে পড়া দু’একটা বেদনার চিত্র মাত্র! এমন আরো কত বেদনা যে এই বক্ষে দাফন করা আছে, তা বলে শেষ করা যাবে না। বললে হয়তো শূন্য হৃদয়ও সে ভার সহ্য করতে গিয়ে পিপাসার্ত হয়ে ফেটে পড়বে।
কিন্তু তাদের পৈশাচিকতা শুধু আমার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ নয়। তারা মুসলিম উম্মাহর ক্ষত-বিক্ষত ও জর্জরিত হৃদয়ে তাজা শোকের আঘাত হানতে হাজার রকমের অপচেষ্টায় লিপ্ত। আমার কোন ছবি দিয়ে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ক্ষতে তাজা ক্ষত প্রয়োগ করতেও পারে তারা। তারা তো বাক্সততার উর্ধ্বে। মিথ্যে তাদের কাছে সত্যের মর্যাদায় আসীন। বলতে পারে- না ঘটা কাহিনীও; যা মুসলিম উম্মাহর মানসিকতাকে করতে পারে আরো র্জজরিত।
না! হে আমার ভাইগণ! দুঃখ পেও না। এগিয়ে যাও- তোমাদের প্রভূর নির্দেশ পালনে। নিভিয়ে দাও- কোল হারা মায়ের ভগ্ন হৃদয়ের আগুন। ভয় করো না তাদের; যারা হক্বের আওয়াজকে বুলন্দ হতে দেয় না। যারা সত্য দেখলে সামেরীর মত বলে ওঠে ‘লা-মিসাস’ এটা জাগতে দেওয়া যাবে না। মিটিয়ে দাও তাদের এবং তাদের দোসর ‘আলে সাউদ’ নামের নির্বোধ তাগুতদের। ‘আলে সাউদ’ নাম দিয়ে কি হবে? যদি না থাকে সাআদাত। যারা নিভিয়ে দিতে চায় শায়খ সাফর আল হাওয়ালী নামক নক্ষত্রকে। নিভিয়ে দিতে চায় শায়খ সুলাইমান আল আওদা নামক তারকাকে। তিলে তিলে ধুকে ধুকে মারার জন্যে- বন্দী করে, শাস্তি দিয়ে বা ভিন্ন কোনভাবে। আসলে তাদেরকে ‘আলে সাউদ’ না বলে ‘আলে সালুল’ বলাই শ্রেয়। কারণ কোনক্রমেই তাদের চেয়ে তারা পিছিয়ে নেই। যেমন মিশর তাদের অনুসরণই করেছিল।
পবিত্র কুরআনে এই অবশিষ্ট দুই ভাইরাস ইহুদী আর খ্রিষ্টানদের ব্যাপারে বহু সাবধানতার বাণী উল্লেখ করেছে। কিন্তু আমরাই সেটাকে ভুলে বসতে চলছি, লক্ষ্য করুন!
وَلَا يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُوا ۚ
অর্থাৎ, বস্তুত তারা তো সর্বদাই তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাকবে, যাতে করে তোমাদিগকে দ্বীন থেকে ফিরিয়ে দিতে পারে; যদি সম্ভব হয়। -সূরা বাকারা: ২১৭
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ
অর্থাৎ, ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনোই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না; যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। -[সূরা বাকারা: ১২০]
اشْتَرَوْا بِآيَاتِ اللَّهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَصَدُّوا عَن سَبِيلِهِ ۚ إِنَّهُمْ سَاءَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ [٩:٩[
অর্থাৎ, তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ নগন্য মূল্যে বিক্রয় করে, অতঃপর লোকদের নিবৃত্ত রাখে তাঁর পথ থেকে; তারা যা করে চলছে, তা অতি নিকৃষ্ট। -[সূরা তাওবা: ৯]
لَا يَرْقُبُونَ فِي مُؤْمِنٍ إِلًّا وَلَا ذِمَّةً ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُعْتَدُونَ [٩:١٠[
অর্থাৎ, তারা মর্যাদা দেয় না কোন মুসলমানের ক্ষেত্রে আত্মীয়তার, আর না অঙ্গীকারের। আর তারাই সীমালংঘনকারী। -[সূরা তাওবা: ১০]
إِن يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُم بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ [٦٠:٢[
অর্থাৎ, তোমাদেরকে করতলগত করতে পারলে তারা তোমাদের শত্রু হয়ে যাবে এবং মন্দ উদ্দেশ্যে তোমাদের প্রতি বাহু ও রসনা প্রসারিত করবে এবং চাইবে যে, কোনরূপে তোমরাও কাফের হয়ে যাও। -[সূরা মুমতাহিনা: ২]
প্রিয় বন্ধুগণ! আমাকে যদি তারা হত্যা করে ফেলে, আর আমি এমনটাই ভাবছি; তাহলে তোমরা আমার জানাযা উন্মুক্ত ময়দানে আদায় করবে। তোমরা যেন আমার মৃত্তিকার এই দেহখানি আমার পরিবারকে সোপর্দ করে দাও। তবে আমাকে তোমরা ভুলে যেও না। ভুলে যেও না- আমার এই দ্বীনের জন্যে বিসর্জিত লোহিত কনিকার রক্তের স্মৃতিটুকুও। তোমার সে ভাইকে একটু এভাবে স্মরণ রেখো- তোমার একটি ভাই ছিল! যে সত্য বলতো- নির্দ্বিধায়, দৃঢ়পদে, সংকল্পচিত্তে, স্পষ্ট ভাষায়, প্রাঞ্জল উপস্থাপনায়, পালোয়ানের হুংকারে। আর এ কারণেই তাকে উৎসর্গিত হতে হলো- সেই সত্যের পথেই।
এটাই আমার শেষ অছিয়ত। বলার ছিল; বলে দিলাম। বাকিটা তোমাদের ন্যস্তে। ক্ষমা সবার কাছে পছন্দনীয় হলেও, অন্তত শহীদের রক্ত ক্ষমা করতে জানে না।
আল্লাহ সবাইকে সীরাতে মুস্তাক্বীমের উপর পরিচালিত করুন! আপনার কাজে বরকত দিন! আল্লাহ আপনাকে হেফাজত করুন! আয়ু দীর্ঘ করুন! আপনাকে শক্তি ও বিজয় দান করুন! আমীন!
ইতি, আপনারই এক ভাই -উমর আব্দুর রহমান।
স্মৃতিচারণ:
শায়খ উসামা রহ.
ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী
এই মজলিসে আমার আরো স্মরণ আসছে- শায়খ উসামা রহ. ছিলেন এমন একজন সিংহ পুরুষ; আমেরিকার মানুষ স্বপ্নের মাঝেও আঁতকে ওঠতো- শায়খ রহ. বুশকে হুমকি দিচ্ছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এ ব্যাপারটি জানতো না যে, শায়খ উসামা রহ. ছিলেন অত্যন্ত কোমল হৃদয়ের অধিকারী, ধৈর্যশীল এবং লাজুক প্রকৃতির। তাঁর মাঝে পূর্ণমাত্রায় ছিল উত্তম চরিত্রের গুণাবলী। আর যারা তাঁর সাথে উঠাবসা করেছেন; তারা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন- শায়খ রহ. কেমন উন্নত চরিত্রের অধিকারী ছিলেন! উদাহরণ স্বরূপ আমার সাথে শায়খ রহ. এর একটি ঘটনা উল্লেখ করছি; যা থেকে তাঁর নরম তবিয়ত স্পষ্টত বুঝে আসে। তখন আমরা তোরাবোরায় অবস্থান করছিলাম; আমার নিকট আমার স্ত্রীর শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছল। আল্লাহ তাঁদের প্রতি এবং তাঁদের সাথে যারা শহীদ হয়েছেন সব ভাইদের প্রতি রহম করুন! এই সংবাদ নিয়ে যিনি এসেছিলেন; তিনি ছিলেন আমাদেরই একজন ভাই। শায়খ রহ. চেয়েছিলেন, সে যেন আমার সাথে কথা না বলে।
কিছুক্ষণ পর যখন ফজরের সময় হলো; শায়খ আমাকে ইমামতি করতে বললেন। নামাজের পর আমরা যিকির-আযকারে মশগুল ছিলাম। আমি দেখছিলাম- নামাজের পর ভাইয়েরা একের পর এক সেখান থেকে ওঠে যাচ্ছে। আর আমি আমার জায়গায় বসা ছিলাম। তারপর সেই ভাই আমার কাছে আসলেন, পরস্পর সালাম বিনিময় হলো; আর তিনি আমাকে শোনালেন- আমার স্ত্রীর শাহাদাতের সংবাদ। আমাকে জানালেন- আমার স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে এবং আমাদের আরো তিন জন ভাই তাঁদের সন্তান সহ শাহাদাত বরণ করেছেন। আমি ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লাম। এবং আল্লাহর নিকট সবর ও আজরের দু‘আ করলাম। ঠিক তখনি শায়খ এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন, একেবারে অশ্রুসজল অবস্থায়।
তারপর এক এক করে সাথীরা আমার কাছে আসছিল আর আমাকে সান্ত¡না দিচ্ছিল। আগেই সিদ্ধান্ত হয়েছিল, আমরা এখান থেকে অপর এক স্থানে চলে যাবো। আর এ সময় শায়খও আমাদের সাথে ছিলেন। আমরা ছিলাম প্রায় ত্রিশ জনের ওপরে। শায়খ ভাইদের বৃহৎ এক অংশকে অন্য কোথাও চলে যেতে বললেন । আর আমার উদ্দেশ্যে বললেন- আমি, তুমি ও আরো কিছু ভাই এখানে থাকবো। আমি বললাম- আমরা এখান থেকে চলে যাই। সফর তো মানুষের দুঃখ-কষ্ট মুছে দেয়। পরে অবশ্য শায়খের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সেখানে থেকে গেলাম। এমনকি আমার অন্তর থেকে দুঃখ-বেদনাও দূর হয়ে গেল। আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করলাম- তিনি যেন আমাদের পরিবারকে উত্তম প্রতিদান দান করেন এবং তাঁদের থেকে আমাদের মাহরুম না করেন। আর আমাদেরকে দান করেন- শাহাদাতের মৃত্যু, নসিব করেন- মুসলমানের মৃত্যু। তারপর আমি যখনি আমার ছেলে মুহাম্মাদের কথা শায়খ রহ. এর কাছে বলতাম, তখনি তাঁর চোখে অশ্রু এসে যেতো। আর আমি তাঁর চোখের অশ্রু দেখতাম!
আরেকটি ঘটনা আমার স্মরণ হয়েছে। আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি হলেন একমাত্র ব্যক্তি; যিনি আমাকে সর্বপ্রথম আমার মায়ের ব্যাপারে সান্ত¡না দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করুন! আমাদেরকে মুসলমানের মৃত্যু নসীব করুন! শায়খ রহ. আমার কাছে একটি পত্র লিখে আমাকে খুব সান্ত¡না দিলেন। আমি তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করে বললাম- শায়খ আপনি আমার আগেই আমার মায়ের শাহাদাতের সংবাদ জেনেছেন! আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!
আরেকটি ঘটনা। যারা শায়েখ উসামা রহ. এর নৈকট্য লাভ করেছেন; তারা তা জানবেন। তিনি খুবই কোমল প্রকৃতির ছিলেন। অল্পতেই কেঁদে ফেলতেন। যখনি তিনি ভাষণ দিতেন, খুব কাঁদতেন। একবার তিনি আমাকে বললেন- অনেকে আমাকে বলে থাকে, শায়খ আপনি আলোচনা শুরু করার আগেই কেঁদে ফেলেন! আপনি চাইলে আরেকটু নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তখন তিনি এ বিষয়টি নিয়ে আমার সাথে আলাপ করলেন- আমি কি করতে পারি? আমি বললাম- সুবহানাল্লাহ! শায়খ, এটা তো আপনার জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত। যা আল্লাহ আপনাকে দান করেছেন।
হোলি উৎসব: বসন্ত বরণ, না জাহান্নামের অগ্নি বরণ?
পত্রিকার পাতা খুললে দেখা যায় প্রতিদিন কোন কোন দিবস উদযাপনের চিত্র। বাবা দিবস, মা দিবস, শিশু দিবস; দিবসের কোন শেষ নেই। যখন যে দিবস আসে ঠিক তখনি তা নিয়ে দোঁড়-ঝাঁপ, মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। এ হলো এমন আর কি- প্রহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশে বাঙালি সাজো আবার হ্যাপি নিউ ইয়ারে ইংরেজপনায় মজো! এগুলো আসলে অলস-অকর্মণ্যদের তামাশা বৈ কিছুই নয়। যাইহোক, এ দেশকে বলা হয় ষড়ঋতুর দেশ। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত ও শীতকে অনুষ্ঠানাদির মাধ্যমে বরণ করে নেওয়ার কথা অবশ্য এখনো শুনিনি; তবে ১লা ফাল্গুনে বসন্ত বরণের নামে দুলাল-দুলালীদের রঙ-পিকচারি মাখামাখি আর মারামারির দরুণ ট্রাফিক জ্যামের ঝামেলাও কিন্তু পোহাতে হয় অনেক সময়। কোথা হতে উৎপত্তি এ বসন্ত বরণের? বসন্ত বরণ বা বসন্তোৎসব- ভারতের প্রাচীন হিন্দুদের মাঝে প্রচলিত বসন্তকালে অনুষ্ঠিত কামদেবের পূজার অনুষ্ঠান; এটিই বর্তমানে নব্য আধুনিকদের মাঝে দোল বা হোলি উৎসব নামে অভিহিত, যাকে ফাগ বা ফাগুয়া উৎসব আবার দোলযাত্রা বা দোলপূর্ণিমাও বলা হয়। কারণ এই পূজা ফাল্গুনী পূর্ণিমাতে হিন্দু-বৌদ্ধরা পালন করা থাকে। এই বিষয়ে হিন্দুদের পৌরাণিক কাহিনীতে শ্রুত আছে, শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে আবীর ও গুলাল নিয়ে রাধিকা ও অন্যান্য গোপীগণের সাথে অশ্লীল নৃত্য সহকারে রঙ খেলায় মেতেছিল; তাই হিন্দুরা এই দিনে পরস্পর রঙ ছড়াছড়ি ও নৃত্য করে আমেজ করে থাকে। সুতরাং হোলি উৎসবের উৎপত্তি ও ইতিহাস থেকে বুঝা যায়- এটি হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। আর বর্তমানেও হিন্দু ও উলুপ্রেমীরা এ দিনটিতে সিঁদুর হাতে নিয়ে যাকে সামনে পায়, তার কপালে সিঁদুরের এক পুছ লাগিয়ে দেয়ার অভিযানে মেতে ওঠে। বসন্তকে স্বাগত জানাতে ছেলেরা পাজামা-পাঞ্জাবী ও চটি পরে; আর মেয়েরা বাসন্তী রঙ্গের শাড়ি, মাথার খোঁপায় সাদা ফুল গুঁজে রাস্তায় নেমে পড়ে। অনেকে একেবারে ধুতি পরে, কপালে তিলক-সিঁদুর এঁকে শ্রীকৃষ্ণের ঢংয়েই গোপী-দুলালীদের ভিড়ে মত্ত হয়ে যায়। শ্রীকৃষ্ণ-রাধিকা পূজারী হিন্দুরা তো এমন উন্মাদনায় মেতে ওঠে তাদের ধর্মীয় উৎসব পালনে; কিন্তু মুসলিম পরিবারে বেড়ে ওঠা দুলাল-দুলালীরা এমন রঙ্গে মেতে ওঠার কারণই বা কী? কারণ এগুলো বল্গাহীন কামনা চরিতার্থের উন্মুক্ত মঞ্চক্ষেত্র। এখানে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা-বেলেল্লাগিরিতে একাকার হওয়াটাই সংস্কৃতি, উৎসব- অনুষ্ঠান। মা-বাবার পক্ষ থেকেও কোন বারণ থাকে না; তারা খুশি- তাদের আদরের সন্তান বসন্তকে বারণ করছে! আসলে কি বসন্ত বরণ করছে, না বেদ্বীন কাফের-মুশরিকদের কৃষ্টি-কালচারে ডুবে জাহান্নামের অগ্নি বরণ করছে? সে বুঝ না আছে মা-বাবাদের মাঝে; আর না আছে সন্তানদের!
মুসলিমদের জন্যে বেদ্বীনদের কোন কৃষ্টি-কালচার গ্রহণ করা, তাদের উৎসব-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা কিছুতেই বৈধ নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
‘‘যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে; সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত” -আবু দাউদ: ৪০৩১
সুতরাং মুসলিমদের অবশ্যই বিজাতীয় সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার, বেশভ’ষা পরিহার করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ মুমিনদের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তম আদর্শে আদর্শিত হওয়ার কথাই বলেছেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا
‘‘বস্তুত আল্লাহর রাসূলের মাঝে তোমাদের জন্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ- এমন ব্যক্তির জন্যে, যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।” -সূরা আহযাব: ২১
অতএব, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতে উত্তম প্রতিদান লাভের আশা রাখে, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ পালনকেই স্টাইল-ফ্যাশন, স্মার্টনেস মনে করবে, সে অনুযায়ী জীবন সাজাবে, ইসলামি সংস্কৃতিকে ধারণ করবে; বেদ্বীনদের অনুকরণ-অনুসরণে নয়।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরনের বিজাতীয় আগ্রাসন প্রতিহত করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উত্তম আদর্শে আলোকিত সমাজ গড়ার প্রত্যেয়ে জিহাদের পথে অবিচলতা দান করুন!
আল বালাগ / সংখ্যা – ৩ / কৌশল মুজাহিদের অস্ত্র
কৌশল মুজাহিদের অস্ত্র
এক.
কয়েকদিন আগে ফিলিস্তিনের এক ভাই তার ওয়ালে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন সিরিয়ার মুজাহিদদের উদ্দেশ্যে। সেখানে তিনি সিরিয়ার মুজাহিদ ভাইদের নিরাপত্তার ব্যাপারে উদাসীনতার অভিযোগ এনেছেন। বাস্তবেই বিষয়টি গুরুতর। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সিরিয়ার মুজাহিদীন ভাইয়েরাই সম্ভবত অনলাইনে বেশি সক্রিয়। সমস্যা হচ্ছে অনেক ভাইয়ের মাঝে অপারেশন চলাকালীন নিরাপত্তা কৌশলের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীনতা দেখা যায়। নিজেদের সৈন্য সংখ্যা, অস্ত্রশস্ত্র; এমনকি অবস্থানের সচিত্র দৃশ্য, ভিডিও ফুটেজ খুব স্বাভাবিকভাবে ফেসবুক, টুইটার, স্ন্যাপচ্যাটে শেয়ার করছেন। অনেক দায়িত্বশীল ভাইদেরও এ ব্যাপারে বেপরোয়া মনোভাব দেখা যায়। এটা অবশ্যই শত্রুকে ‘ঘরের তথ্য সরবরাহ’ বৈ কিছু নয়! এর কারণে অনেকবার শত্রুর অতর্কিত হামলার শিকার হয়েছেন মুজাহিদগণ। তাই ভাইদের প্রতি আহ্বান থাকবে¬ এ ব্যাপারে সচেতন হওয়ার।
দুই.
যুদ্ধের অপর নাম ‘কৌশল’। এখানে পেশীশক্তির চেয়ে বুদ্ধির মারটা কার্যকর ভূমিকা রাখে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুদ্ধনীতিও এমনই ছিল। সিরাতের পাতায় এর ভুরি ভুরি নজির রয়েছে।
উসমানী খেলাফতের সময়কার কথা। একবার মুসলিমদের মিত্র দেশ স্কটল্যান্ডের ওপর বহিঃশক্তি আক্রমণ করে। যুদ্ধের একপর্যায়ে আইরিশ বাহিনী পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হলে তারা খলীফার কাছে সামরিক সহায়তার আর্জি জানায়। খলীফা বললেন, আমি সাহায্য পাঠাচ্ছি। শত্রুবাহিনী রণাঙ্গনে তুর্কী সৈনিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে রণভঙ্গ দিয়ে পলায়ন করে! অথচ ঘটনা কী ছিল জানেন? একজন সৈন্যও খলীফা পাঠাননি! পাঠিয়েছেন বিশ হাজার যুদ্ধপোশাক ও খেলাফতের সবুজ ঝাণ্ডা! এটাই হচ্ছে কৌশল।
সুলতান সালাউদ্দীন আইয়ুবী সীমিত সৈন্যবাহিনী নিয়ে ক্রুসেডারদের বিশাল বাহিনীকে ঘোল খাইয়েছেন, কৌশলের মারপ্যাঁচে ফেলেই।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও কৌশলী বাহিনী আমার দৃষ্টিতে তালেবান। কারণ, সম্মুখ লড়াইয়ের সবচেয়ে কঠিন ফ্রন্ট হিসেবে পাহাড়বেষ্টিত আফগানিস্তানই প্রসিদ্ধ। এ ভূমির পাথুরে পর্বতমালার সাথে টেক্কা দিতে গিয়ে তাতারীরাও আঁতকে উঠেছে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে কয়েক ভাগ হয়েছে। আর কথিত নব্য সুপার-পাওয়াররা তো রীতিমতো চোখে সর্ষেফুল দেখছে! ন্যাটো তার পূর্ণশক্তি প্রয়োগ করেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তালেবানের তীব্র আক্রমণে কতবার যে কেঁপে ওঠেছে দখলদারদের সুরক্ষিত ঘাঁটি তার ইয়ত্তা নেই। রাজধানী কাবুলের সেই ‘ফিদায়ী হামলা’ তো এই সেদিনকার ঘটনা। কাবুলের গোয়েন্দা হেডকোয়ার্টারে মাত্র তিনজন জানবাজ মুজাহিদ গ্রীণজোনের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা পেরিয়ে আক্রমণ হানে। মৃতের সংখ্যা কত জানেন?
তিন-শতাধিক! আর এ পক্ষে মাত্র দু’জন!
তৃতীয় জন স্বশরীরে ফিরে আসেন অপারেশন শেষে। কি অবাক লাগছে না? কত প্রশিক্ষিত ও কৌশলী হলে এটা সম্ভব! বাহ্যিক উপকরণের উপর ভরসা করতে বলছি না। ভরসা আল্লাহর উপরই করতে হবে। তবে কৌশল অবলম্বনও আবশ্যক। আল্লাহ নামাজের সময়ও মুমিনদের অস্ত্র ত্যাগ করতে বারণ করেছেন! গায়েবী নুসরত আসার জন্য কৌশলী হওয়াও পূর্বশর্ত।
দেখুন, আমীরুল মুমিনীন মোল্লা ওমর রহ. মারা যান ২০১৩ এর আগস্টে। কিন্তু কৌশলবশত এ খবর প্রকাশ করা হয় ২০১৬ তে। কাফেরদের এতো প্রযুক্তি সত্ত্বেও কই কিছুই তো জানতে পারলো না!
আল-কায়েদার যুগান্তকারী হামলাগুলো পর্যালোচনা করে দেখুন কতটা কৌশলী ছকে পরিকল্পনাগুলো সম্পাদিত হয়েছে।
সিরিয়ায় তাহরীর আশ-শামের যুদ্ধ কৌশলটাও বেশ কার্যকর মনে হচ্ছে। ‘শত্রুকে স্থির থাকতে দিও না, বুঝতে দিও না তুমি কী চাচ্ছো? আঘাত এমন জায়গায় করো যা তার চিন্তার বাইরে।’
হ্যাঁ, চলমান এ লড়াইয়ে আমাদের আরও সক্রিয় ও কৌশলী হতে হবে।
ব্রিটেন আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ার সময় বলেছিল, ‘আমরা কখনোই আর এখানে আসছি না’।
এরকম ‘ছেড়ে দে মা; কেঁদে বাঁচি!’ অবস্থার সৃষ্টি করতে হবে। যেন ওরা কোমর সোজা করে দাঁড়াতে না পারে।
আল্লাহ তা‘আলা সত্যের বিজয় ত্বরান্বিত করুন! আমীন।
(লেখাটি আল বালাগ ম্যাগাজিনের ৩য় সংখ্যা থেকে সংগৃহীত ও অনূদিত)
ফেরাউন-মূসা বনাম তাগুত-জঙ্গি: একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি
মুসাল্লাহ কাতিব
যুগে যুগে কুফর ও তাগুতিশক্তি ইসলাম ও মুসলমানদের নির্মূল করার জন্যে তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল; এমনকি তাগুতরা সর্বশক্তি ব্যয় করে ও তাদের মিত্রদের সাথে সংঘবদ্ধ হয়ে ইসলামের আলোকে এক ফুঁৎকারেই নিভিয়ে দিতে চাইতো। কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি সত্যের আলোকে পূর্ণতা দান করবেন; যদিও কুফরি শক্তি তা অপছন্দ করে।
সম্প্রতি ১২ মার্চ ২০১৭ ঢাকা সোনারগাঁও হোটেলে জঙ্গিবাদ দমন বিষয়ক তিন দিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় পুলিশ প্রধানদের নিয়ে একটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ১৪ টি দেশ ও ৬ টি আন্তর্জাতিক সংস্থা অংশগ্রহণ করেছে। তন্মধ্যে ইন্টারপোল, এফ.বি.আই ও ফেসবুক উল্লেখযোগ্য।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ট্যাক্সের টাকায় প্রতিপালিত পুলিশ বিভাগ হল এর আয়োজক। যারা দুর্নীতি, জুলুম, ধর্মদ্রোহিতা, মিথ্যা ষড়যন্ত্র সহ সকল প্রকার নিকৃষ্ট চরিত্রে বিশেষিত হয়ে ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে দুর্নাম অর্জন করেছে। যাদের অপকর্মের ফিরিস্তি বর্ণনা করে শেষ করা দুষ্কর। এরকম একটি আদর্শ বিকৃত দল নাকি জঙ্গি দমন করবে! তাদের এই আয়োজন দেখে আমার ফেরাউনের ঘটনা স্মরণ হয়ে গেল। সে ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সীমালঙ্ঘনকারী তাগুত। সে বলেছিল, যেমনটি সূরা ত্বহা-৬৪ নং আয়াতে উল্লেখ আছে।
সে তার যাদুকরদের নির্দেশ দিয়েছিল “তোমরা তোমাদের সমস্ত শক্তি ও কলাকৌশল একত্রিত করো এবং ময়দানে সারিবদ্ধভাবে মূসার মুকাবেলায় দাঁড়িয়ে যাও। মনে রেখো! আজ যে প্রাধান্য বিস্তার করবে; সেই জয়ী হবে।” ফেরাউন মনে করেছিল যে, সাধারণ মানুষকে যাদুর প্রভাব দেখিয়ে বিভ্রান্ত করা এবং মূসা আ. কে যাদুকর সাব্যস্ত করে বাতিল প্রমাণিত করা তার পক্ষে খুব সহজই হবে। কিন্তু সে ধারণাও করেনি যে, তার ষড়যন্ত্র তার বিরুদ্ধেই কার্যকর হয়ে যাবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ঠিকই সত্যকে মিথ্যার ওপর বিজয়ী করে ছাড়লেন।
আজ ঠিক তেমনিভাবে হক্বের অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বের নব্য ফেরাউন ও তাদের যাদুকর বাহিনী সম্মিলিতভাবে জঙ্গিবাদ নির্মূলের নামে মুসলিম উম্মাহর ‘সূর্যসন্তান’ মুজাহিদদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। যারা সর্বক্ষেত্রে আক্রান্ত মাজলুম দ্বীনকে নিজেদের বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রক্ষা করার ও পৃথিবীর বুকে পুনঃ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে জীবন বাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু তাগুতরা ধারণাও করতে পারছে না যে, তারা ব্যর্থ ও পরাভূত হবে। কারণ তারা কেবল মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি; বরং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আর যারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে; তাদের পরাজয় নিশ্চিত।
অতএব, মুজাহিদ ভাইদের ভয় পাওয়ার বা হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ এমন পরিস্থিতিতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা অভয় দিয়ে মূসা আ. কে বলেছিলেন, “ভয় করো না, তুমিই জয়ী হবে।”… সূরা ত্বহা-৬৪ ।
মূসা আ. কে যে রকম হাতে যা আছে তা নিক্ষেপ করতে আদেশ দিয়েছিলেন; ঠিক তেমনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদেরকেও এই নব্য ফেরাউন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে হাতে যা আছে তা নিয়েই মুকাবেলা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। সুতরাং আমরা যদি অটল থাকতে পারি; তাহলে আমাদেরই বিজয় সুনিশ্চিত। আর কুফরি সম্মিলিত শক্তির চক্রান্ত এক সময় তাদের জন্য আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। যেমনি আফগানিস্তানে আমেরিকার আক্রমণ এখন তাদেরই আফসোসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তালেবান মুজাহিদদের ফাঁদে আটকা পড়ে এখন তারা বেরও হতে পারছে না; আবার পরাজয় স্বীকারও করতে পারছে না। এ যেন অনেকটা ‘মাইনকার চিপায়’ পড়ার মত অবস্থায় আছে।
অবশেষে আমি মুরতাদ বাহিনীকে বলবো- তোমরা তোমাদের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শক্তিসমূহ একত্রিত করে মাঠে নামো। আমরাও বি-ইজনিল্লাহ মাঠে আছি, পিছু হঠে যাব না ইনশাআল্লাহ। দেখা যাক, কার প্রভু বেশি শক্তিশালী? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা মুজাহিদদের ধৈর্য ও অবিচলতা বৃদ্ধি করুন।
মুমিনদের ‘সিরাজাম মুনীরা’র উভয় অর্থই ধারণ করতে হবে
আল্লাহ তা‘আলা সূর্যের গুণ বর্ণনায় سراجا هاجا ‘সিরাজ’ ও ‘হাজ’ দু’টি শব্দ এনেছেন। এ শব্দ দু’টির অর্থ হলো প্রজ¦লিত প্রদীপ- এর মূলে হলো نار ‘নার’ তথা আগুন। যাতে রয়েছে উত্তপ্ততা- আর তা জ্বালানোর ক্ষমতা রাখে।
চাঁদের গুণ বর্ণনায় منيرا ‘মুনীরা’ শব্দ এনেছেন। যার অর্থ আলোকজ¦ল- এর মূলে হলো نور ‘নূর’ তথা আলো। এতে জ্বালানোর শক্তি নেই।
আর আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গুণ বর্ণনা করেছেন منيرا سراجا ‘সিরাজাম মুনীরা’ দ্বারা। যাতে দুই ধরনের প্রজ¦লন আছে। এ থেকে আমরা বুঝতে পারি- তাঁর মধ্যে সাথীদেরকে আলোকিত করার নূরও আছে; আবার শত্রুদেরকে ভস্ম করার আগুনও আছে।
অনেকে এ পূর্ণতা ও ভারসাম্যতার কথা বুঝতে সক্ষম নন।
যার ফলে তারা বিনম্রভাবে শুধু নূরের কথাই বলেন। এটার পেছনেই তাদের সব দৌঁড়-ঝাঁপ। শত্রুদেরকে প্রতিরোধ করার যে ‘নার’ এর কথাও আল্লাহ উল্লেখ করেছেন; তারা তা উল্লেখই করেন না।
অনেকে আবার বাড়াবাড়ি করে সবার জন্যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নারের ব্যাপারটা সাব্যস্ত করতে থাকেন। তারা পারে না যে, সবাইকে ভস্ম করে দেবে। কি শত্রু, কি মিত্র?- সবার জন্যে এটিকেই সাব্যস্ত করে থাকেন। আর বেমালুম হজম করে যান- তাঁর নূরের রোশনিতে আলোকিত হওয়ার ব্যাপারটি।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের নেতা সিরাজাম মুনীর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন এবং তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবাদের ওপরও শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন!
ভারতরে সাথে প্রতরিক্ষা চুক্তিঃ
হন্দিুত্ববাদরে আগ্রাসন
শাইখ তামমি আল আদনানী হাফজিাহুল্লাহ
চলছে সরকারের ডাকু বাহিনী, র্যাব, ডিবি আর সোয়াটের পাইকারী হত্যা। চলছে হলুদ মিডিয়ার যাত্রাপালা। চলছে ক্রিকেট নিয়ে উন্মাদনা। আর এসব তামাশার আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। আর তা হলো- ভারতের সাথে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি। এই চুক্তির ব্যাপারটা শুনলেও, অনেকেরই হয়তো এই চুক্তি সম্পর্কে সঠিক কোন ধারণাই নেই।
সহজ ভাষায় বলি, হাসিনার সাথে দিল্লীর মুশরিকরা চুক্তি করেছে- বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেবে। তারপর সেই ঋণের টাকা দিয়েই বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে অস্ত্র কিনবে। আর এই ঋণের ওপর ভারতকে সুদও দেবে বাংলাদেশ। কইয়ের তেলে কই ভাজার কথা নিশ্চয় শুনেছেন। আর এটা হলো- দাসের তেলে দাস ভাজা।
এই চুক্তি অনুসারে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী ভারতীয় মুশরিক সেনাবাহিনীর অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে, তাদের সাথে নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করবে এবং বিশেষ প্রয়োজনে এ দেশের মাটিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাথে বাংলাদেশী বাহিনীর যৌথ অভিযানের প্রস্তাবনাও রয়েছে। আর এ চুক্তি সম্পন্ন হলে এমন যৌথ অভিযানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ওপর নেতৃত্ব দেবে ভারতীয় গো-পূজারী মুশরিক বাহিনী। অর্থাৎ চুক্তিতে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে বিশেষ প্রয়োজনে সরাসরি ভারতের সেনাবাহিনীর অনুগত বানানোর প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়েছে।
সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলেও এই চুক্তি চরম অপমানজনক। সেক্যুলার জাতি-রাষ্ট্রের অবস্থান থেকে দেখলেও এটা নিছক দাসখত দেওয়া ছাড়া আর কিছুই না। কিন্তু সারাক্ষণ যারা দেশের সার্বভৌমত্ব, জনগণের সার্বভৌমত্ব নিয়ে জিকির করে- তারা আজ নিশ্চুপ। মানব রচিত সংবিধানে নামেমাত্র রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম থাকা নিয়ে এদের সমস্যা, সুপ্রীম কোর্টে স্থাপিত মূর্তির বিরুদ্ধে বললে এদের সমস্যা, পাঠ্যবই থেকে নাস্তিক্যবাদী এবং ইসলামবিদ্বেষী লেখা অপসারণ করতে বললে এদের সমস্যা, নারীরা হিজাব পরলে এদের সমস্যা, পুরুষরা দাড়ি রাখলে এদের সমস্যা, মুসলিমরা কুরবানী করলে এদের সমস্যা, মুসলিমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে ভালোবাসলে এদের সমস্যা, মুসলিমরা ইসলাম মানলে তাদের সমস্যা। আর তাদের এতো সব সমস্যাকে তারা যৌক্তিক প্রমাণ করতে চায়- দেশপ্রেম, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আর রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কথা বলে। কিন্তু প্রতিরক্ষা চুক্তি নামক এই দাসখতের ব্যাপারে তারা একেবারেই নীরব! কারণ দেশের নামজপ করতে করতে দেশকে বিক্রি করাই এদের কাজ। দেশপ্রেম আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বুলি আওড়ানো এসব ভারতীয় দালালদের দিন যায় দেশ বেচে।
তবে এখানেই শেষ নয়। এই চুক্তিতে- শিল্পে সহযোগিতা, শিল্পের বিকাশে যৌথ উদ্যোগ, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি ও মহাকাশ প্রযুক্তি গবেষণা এবং সামুদ্রিক অবকাঠামো উন্নয়নে একে অন্যকে সহযোগিতার বিষয় উল্লেখ আছে। এই চুক্তির মতো আরো ৪৯ টি চুক্তি স্বাক্ষরের পায়তারা চলছে। দেশ ও জাতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এসব ক্ষেত্রে ভারত ঠিক কী ধরনের সাহায্য দিতে পারে তা সবারই জানা আছে। এ দেশের অশীতিপর বৃদ্ধ থেকে ছোট শিশু পর্যন্ত সবাই বোঝে ঠিক কী ধরনের সহায়তা আমরা ভারতের কাছ থেকে পেতে পারি। বোঝে না কেবল চেতনাবাজ, শাহবাগী, কথিত সুশীল সমাজ আর আওয়ামী দালালেরা। তবে যদি কেউ অবুঝ হয়ে থাকেন বা ভারতের অনুগ্রহের কথা কেউ যদি ভুলে গিয়ে থাকেন; তাহলে স্মরণ করিয়ে দেই-
এই হলো সেই ভারত- যারা ১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ৪১ দিনের জন্য ফারাক্কা বাঁধ চালু করার কথা বলেছিল। আজ ৪১ বছরের বেশি পার হয়ে গেছে। গড়াই নদী বিলুপ্ত হয়েছে, পদ্মা বিলুপ্তির পথে, নদীমাতৃক বাংলার উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে, নষ্ট হয়েছে নাব্যতা, এ মাটির উর্বরতা; কিন্তু সেই ৪১ দিন, আজো শেষ হয়নি!
এই হলো সেই ভারত- যারা পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবন এবং বাংলাদেশের জলবায়ুকে ধ্বংস করার জন্য দালাল আওয়ামী সরকারকে দিয়ে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করাচ্ছে।
এই হলো সেই ভারত- যাকে বাংলাদেশের স্থলভূমি ও বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হয়েছে, মাশুলছাড়া ট্রানজিট দেওয়া হয়েছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ও চাকরিজীবিদের জন্য বাংলাদেশের বাজার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে, কথিত সার্বভৌমত্ব তিলে তিলে সম্পূর্নটাই বেচে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু তবুও তাদের কাছ থেকে পাওয়া যায় নি- তিস্তার পানি !
এই হলো সেই ভারত- যারা বছরের পর বছর ধরে সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশীদের হত্যা করছে।
এই হলো সেই ভারত- যারা সুকৌশলে দখল করে নিয়েছে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক বাজার। যাদের অর্থনৈতিক আগ্রাসণের কারণে বাংলাদেশের সৎ ব্যবসায়ীরা আজ বিপর্যস্ত।
এই হলো সেই ভারত- যারা দালাল শাসকের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন সিকিমকে অঙ্গরাজ্য বানিয়েছিল।
এই হলো হিন্দুত্ববাদী ভারত- যার প্রভাবে বাংলাদেশের ১০% হিন্দু চাকরি ক্ষেত্রে ৩০% এর বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষিত মুসলিম তরুনেরা আজ বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে; কিন্তু হিন্দুস্তানের হিন্দুত্ববাদীদের কারণে বাংলাদেশের মুশরিকদের অবস্থা রমরমা।
এই হলো সেই ভারত- যারা বাংলাদেশের চাকরিখাত, ব্যবসাখাত দখল করে নিয়েছে। যারা তাদের দালাল হাসিনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাষ্ট্র ও প্রশাসনকে। বঙ্গভবন কিভাবে চলবে তার নির্দেশ আসছে দিল্লী থেকে। রাষ্ট্র ও প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মুশরিকরা জেঁকে বসেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে শুরু করে প্রাইমারী স্কুল সব জায়গায় জাল পেতে বসে আছে মুশরিকরা। মুশরিক বিচারপ্রতির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বিচার বিভাগকে আর এখন সম্পূর্নভাবে নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সামরিক বাহিনীকে। আর মিডিয়া, কথিত সুশীল সমাজ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনকেও নিয়ন্ত্রন করছে এই মালাউনরা।
এই হলো সেই ভারত- যারা স্যাটেলাইট চ্যানেলের মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের মুসলিমদের মধ্যে যিনা-ব্যভিচার, অশ্লীলতা, নির্লজ্জতার প্রচার-প্রসার করে চলেছে।
এই হলো সেই ভারত- যারা বাংলাদেশে সমকামিতা ও বিকৃতকামিতা প্রসারের জন্য সরাসরি আর্থিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও মিডিয়া সাহায্য দিচ্ছে।
এই হলো সেই ভারত- যার ভরসায় আজকে পরিমল, শ্যামল কান্তি আর বিপ্লব বিকাশ পালরা ইসলাম নিয়ে প্রকাশ্যে কটূক্তি করছে আর মুসলিম মেয়েদের ধর্ষণ করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে।
এই হলো সেই ভারত- যার ভরসায় আজকে বাংলাদেশের মুশরিকরা মুসলিমদের ওপর ছড়ি ঘুরানোর সাহস করেছে। রাস্তায় হোলি খেলার নামে পর্দানশীন মুসলিম নারীদের শ্লীলতাহানি করছে, জু’মার নামাযের সময় উচ্চস্বরে গান বাজনা করছে, মুসল্লিদের উপর আক্রমণ করছে, মসজিদে তালা দিচ্ছে, মসজিদকে অপবিত্র করছে, প্রকাশ্যে কুরআন পোড়াচ্ছে। ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুআতা ইল্লাহ বিল্লাহ!
এই হলো সেই ভারত- যেখানে নাপাক মুশরিক আদিত্যনাথের জনসভায় বলা হয় মুসলিম নারীদের মৃতদেহ কবর খুড়ে বের করে ধর্ষনের জন্য, আর তারপর সেই আদিত্যনাথ উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হয় ।
এই হলো সেই ভারত- যেখানে গরুর গোস্ত খাওয়ার অপরাধে, বিক্রি করার অপরাধে, পরিবহনের অপরাধে মুসলিমদের পিটিয়ে মারা হয়। এই হলো সেই ভারত- যেখানে আহমেদাবাদ আর মুজাফফারনগরে মাসজিদের ভেতরে মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা হয়, আর এই সময় মাসজিদের মাইক অন করে রাখা হয় যাতে সব মুসলিমরা ধর্ষিতার আর্তচিৎকার শুনতে পায়। এই হলো সেই ভারত- যেখানে গুজরাটে গর্ভবতী মুসলিম মায়ের পেট চিরে শিশুকে বের করে এনে তলোয়ারের মাথায় গেঁথে মুশরিকরা উল্লাস করে। এই হলো সেই ভারত- যারা প্রতিনিয়ত পেলেট গুলি চালিয়ে কাশ্মীরের মুসলিমদের ঝাঁঝরা করে দিচ্ছে।
এই হলো গুজরাটের কসাইয়ের ভারত, এই হলো শিবসেনার ভারত, এই হলো আরএসএসএর ভারত, এই হলো ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ভারত, এই হলো হিন্দুত্ববাদীদের ভারত, এই হলো মুশরিকদের ভারত, এই হলো মালাউনদের ভারত।
আর এই ভারত, এই হিন্দুত্ববাদ, এই ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্ত আজ গ্রাস করেছে বাংলাদেশের সমাজ, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে। আর এই কফিনে শেষ পেরেক হলো- এই সামরিক প্রতিরক্ষা চুক্তি। এই হলো মোদির ভারত আর এই হলো হাসিনার বাংলাদেশ। এই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, আর গণতন্ত্রের শাসন।
হে আমার মুসলিম ভাই-বোনেরা! হে এ ভূখন্ডের মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসারীরা! সতর্ক হোন ! জাগ্রত হোন! কারণ আজ আমাদের আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। শত্রু চারপাশ থেকে আপনাকে ঘিরে ফেলেছে, প্রস্তুতি চুড়ান্ত করছে, অস্ত্রে ধার দিচ্ছে। কিন্তু আপনি এখনো আসন্ন বিপদ সম্পর্কে গাফেল। আপনি এখনো ঘুমিয়ে আছেন। আপনি বুদ হয়ে আছেন ভারতীয় সিরিয়ালে, ক্রিকেটে আর হলুদ মিডিয়ার বানোয়াট কল্পকাহিনীতে। সতর্ক হোন। এক প্রচন্ড ঝড় ধেয়ে আসছে- এই দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে কোন দল, কোন লীগ, কোন নেতাকে আপনি আপনার পাশে পাবেন না। মালাউনদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আপনার পাশে শুধু মাত্র আপনার মুসলিম ভাইকেই পাবেন, আপনার তাওহীদবাদী ভাইকেই পাবেন। তাই এই জাতীয়তাবাদী অর্থহীন পরিচয় ছুড়ে ফেলুন! সতর্ক হোন! জাগ্রত হোন আর ঐক্যবদ্ধ হোন কালেমার পতাকাতলে ; বাম-রামীয় সকল অপশক্তির হীন প্রচেষ্টাকে রুখে দিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করুন। এক প্রচন্ড ঝড় ধেয়ে আসছে, এক মহা দুর্যোগ ধেয়ে আসছে, এই প্রচন্ড ঝড় আর মহা দুর্যোগকে সম্মিলিতভাবেই প্রতিহত করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সম্মিলিতভাবে এই দুর্যোগকে মোকাবেলা করার তাওফীক দান করুন! আমীন!
আমরা কেমন সন্তানের মা হওয়ার স্বপ্ন দেখি?
উনাইসা আহসান বুশরা
প্রত্যেক মা-বাবা নিজের সন্তানদের সফলতার সর্বোচ্চ শিখরে সমাসীন দেখতে চান। সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় তারা নানান স্বপ্ন দেখেন। ছোটবেলা থেকেই আদরের সন্তানের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন হয় কাঙ্ক্ষিত সেই স্বপ্ন পূরণের পথে; এ প্রচেষ্টায় মা-বাবা কোন ত্রুটি করেন না।
সন্তানকে ঘিরে বাবার চেয়ে মায়ের মাঝেই থাকে বেশি আশা-আকাঙ্ক্ষা। আর মায়ের সান্নিধ্যেই তো তারা বেড়ে ওঠে একটা দীর্ঘ সময়। এ সময় তাদের ওপর মায়ের মেজাজ ও রুচির প্রতিফলন ঘটে। বাস্তবিকই, মায়ের সান্নিধ্য হচ্ছে সন্তানদের জন্যে একটি উত্তম শিক্ষালয়। একটি ছোট্ট শিশু ধীরে ধীরে খুব সহজেই মায়ের মাঝে বিদ্যমান প্রতিটি স্বভাব গুণে গুণান্বিত হয়ে ওঠে। মাকে দেখেই যখন সন্তানরা শিখে থাকে; তাহলে একজন মায়ের মাঝে কেমন রুচিবোধ ও মেজাজ থাকা জরুরী?
সন্তানদের ব্যাপারে একজন মায়ের কেমন স্বপ্ন আর আশা-আকাঙ্ক্ষা পোষণ করা উচিত? কিন্তু আফসোস! অধিকাংশ মা-ই এ ক্ষেত্রে মরীচিকার স্বপ্নে বিভোর থাকেন। খুব কম মা-ই আছেন; যারা প্রকৃত পরিণামের কথা ভেবে সঠিক স্বপ্নটি দেখেন, বা সন্তানদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বর্তমানে আমাদের মা-বোনেরা পারিপার্শ্বিক সমাজ ব্যবস্থার প্রচলিত জীবনাচারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে থাকেন। আশপাশের অন্য দশজন যেভাবে চলতে পছন্দ করে; সেভাবেই নিজের পরিবার সাজাতে পছন্দ করেন।
অধিকাংশ মায়েরই ইচ্ছে আপন সন্তান ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে; অথবা দেশ জুড়ে বাহবা পায়, এমন একজন মডেল-তারকা (?) হিসেবে সুনাম অর্জন করবে। বর্তমান মায়েদের কাছে ইসলামের ইতিহাসের আলোকিত ব্যক্তিত্বদের জীবনী এতটাই অপরিচিত যে, তারা হয়তো অনেক মহা মানবের নাম পর্যন্তও শোনেননি। তারা ভালোভাবে জানেনও না মুসলিম উম্মাহর জন্যে সে সব বীর পুরুষদের কুরবানির কথা। অনেক মা-বাবা নিজেদের সন্তানের নাম খালিদ, তারেক, সালাউদ্দীন রাখেন; কিন্তু কয়জন জানেন, এ নামের মহান ব্যক্তিদের কীর্তির কথা? আর যদি এমন বীর পুরুষদের জীবন চরিত সম্পর্কে কোন ধারণাই না থাকে; তাহলে কীভাবে নিজের সন্তানদেরকে এ মহা বীরদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার শিক্ষা দিবেন?
আজকের মায়েরা সন্তানদের সামনে শেক্সপিয়র, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ – এ ধরনের অমুসলিম পণ্ডিতদের কল্প কাহিনী শোনাতে অভ্যস্ত; কিন্তু তারা আপন সন্তানদের আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম, সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহু, ও উম্মাহর মহান ব্যক্তিত্বদের আলোকিত জীবন কাহিনী শোনাতে অভ্যস্ত নয়। আজকের মায়েরা সন্তানদের চার-ছক্কার মার দেখে আনন্দিত হয়; সেঞ্চুরি আর নিত্য নতুন রেকর্ড দেখে গর্বিত হয়; গান আর নাচের প্রতিযোগিতায় সন্তানদের কার্যকলাপ দেখে পুলকিত হয়। আর কেনইবা এমন হবে না? আমাদের মায়েরা কি পরকালের চূড়ান্ত ফলাফল নিয়ে কখনো ভাবেন?
হে সন্তানের জননী!
একটু ভাবুন, দ্বীন বিমুখ হওয়ার কারণে যে সন্তানরা আজ পাপাচার আর অশ্লীলতায় মত্ত হয়ে উঠেছে; কেমন হবে এমন সন্তানদের অন্তিম পরিণতি?
এরাই তো এক সময় দ্বীনকে মিটিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে যাবে। আর এমন সন্তানরাই তো নিজের মা-বাবার জন্যে জাহান্নামে যাওয়ার পথকে সুগম করে দিবে। আর আমরা যদি হতে পারি দ্বীন বিজয়ের বীর সৈনিকদের গর্বিত মা; তাহলে তা কেবল আমাদের জন্যেই কল্যাণকর হবে, এমন নয়; বরং আমাদের বীর সন্তানরা পুরো উম্মতের জন্যেই কল্যাণ বয়ে আনবে। চূড়ান্ত পরিণামে তথা পরকালে এমন সন্তানরাই মা-বাবার কাজে আসবে।
তাহলে হে মা!
অন্তত নিজেদের কল্যাণার্থে তো আমরা সন্তানদের ব্যাপারে সঠিক স্বপ্ন দেখতে পারি; তাদেরকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারি। আর স্বপ্ন দেখতে পারি তারেক বিন যিয়াদ, সালাউদ্দীন আইয়ুবী, মুহাম্মাদ বিন কাসিমের মতো বীর সন্তানদের মা হওয়ার! এমন স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাময় পরিস্থিতিই আমরা এখন অতিক্রম করছি। গাযওয়াতুল হিন্দের কাফেলা তো বিজয়ের পথে সম্মুখ পানে অগ্রসর হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের হৃদয় প্রশান্তকারী বীর মুজাহিদের গর্বিত মা হওয়ার সৌভাগ্য নসীব করুন। আমীন।
তাগুত শাসকেরা আমাদের কিসের ভয় দেখায়?
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ
# ওরা আমাদের হত্যার হুমকি দেয়!
ওরা আমাদের বলে- তোমরা যদি তাওহীদ ও জিহাদের পথ থেকে ফিরে না আসো; তাহলে আমরা তোমাদের হত্যা করবো। আমরা নির্ভয় চিত্তে এই নির্বোধদের জানিয়ে দিতে চাই- আমরা হচ্ছি আল্লাহর সৈনিক; আমরা মৃত্যুকে পরোয়া করি না।
তোমরা আমাদের যেই মৃত্যুর ভয় দেখাও, আমরা সেই মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করি। মৃত্যুর পর্দা ভেদ করেই আমরা পৌঁছে যাই- আমাদের রবের সান্নিধ্যে। তোমরা আমাদের পরম আকাঙ্খিত সেই মৃত্যুর ভয়ই দেখাচ্ছো?
মনে রেখো! তোমাদের সমস্ত সৈন্য-সামন্তের কাছে নারী আর মদ যত বেশি প্রিয়, আল্লাহর রাস্তায় জীবন উৎসর্গ করা আমাদের কাছে তার চেয়েও বেশি প্রিয়।
আমরা বছরের পর বছর ধরে শাহাদাতের অপেক্ষায় ময়দান থেকে ময়দানে ছুটে চলছি!
কাদের তোমরা হত্যার হুমকি দিচ্ছো? যারা মৃত্যুকে হন্য হয়ে খুঁজে- তাদের? শাহাদাতের নেশায় যারা দূর্বার ছুটে চলে- তাদের? যারা কিয়ামতের দিবসে রক্তাক্ত বদনে আপন প্রতিপালকের সামনে দাঁড়াতে চায়- তাদের? যারা আপন রক্তস্রোতের মাঝেও সহাস্যে বলে- কাবার রবের শপথ! আমরা সফলকাম হয়ে গেছি!- তাদেরকে হত্যার হুমকি দিচ্ছো? পৃথিবীর এমন কোন শক্তি রয়েছে; যে শক্তি তাদের প্রতিহত করবে? তাদেরকে আপন লক্ষ্য থেকে পিছপা করবে?
# ওরা আমাদের কারাগারের ভয় দেখায়!
ওরা আমাদের বলে- আমরা যদি জিহাদের পথ থেকে ফিরে না আসি; ওরা আমাদেরকে বন্দী করে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করবে! রিমান্ডে দিবে!
আমরা নির্বিঘ্ন চিত্তে ওদের জানিয়ে দিতে চাই- তোমরা আমাদের যেই কারাগারের ভয় দেখাও, আমরা কারাগারের সেই বন্দী জীবনকে আম্বিয়া আলাইহিমুস সালাম ও সালাফে সালেহীনদের সুন্নাহ মনে করি।
হযরত ইউসুফ আ. তো জীবনের দীর্ঘ কয়েকটি বছর কারাগারেই কাটিয়েছেন ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামগণ শিয়াবে আবু তালিবে দীর্ঘ দিন যাবৎ অবরুদ্ধ ছিলেন।
ইমাম আবূ হানীফাহ রহ. জেলখানায় বসে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. জালিমের কারাগারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. দীর্ঘ দিন যাবৎ তাগুতের কারাগারে বন্দী ছিলেন।
জেনে রেখো! আমরা কারাগারের ভয়ে জিহাদের এই পথকে ছেড়ে দিবো না। আমরা তো তাগুতের কারাগারের চেয়ে কবরের অন্ধকার কুঠুরিকে অনেক বেশি ভয় করি।
# ওরা আমাদের নির্যাতনের ভয় দেখায়!
ওরা আমাদের বলে- আমরা যদি এই পথ থেকে ফিরে না আসি; ওরা আমাদের বন্দী করবে; কারার আঁধার সেলে রেখে নির্দয় নির্যাতন করবে!
আমরা সুস্পষ্ট ভাষায় দীপ্ত কন্ঠে ওদের জানিয়ে দিতে চাই- কোন নির্যাতনকারীর নির্যাতন এই জিহাদকে বন্ধ করতে পারবে না। কোন জালিমের জুলুম আমাদেরকে এই পথ থেকে সরাতে পারবে না।
আমরা শত নির্যাতনের মাঝেও হযরত বেলাল রাযি. এর মতো আহাদ আহাদ উচ্চারণ করে আমাদের মহান রবের একত্ববাদের স্বীকৃতি দিবো।
আমাদের যদি হযরত খাব্বাব রাযি. এর মতো জলন্ত অঙ্গারের ওপর শুইয়ে রখা হয়, আর আমাদের শরীরের রক্ত-মাংস গলে সেই জলন্ত অঙ্গার নিভে যায়; তবুও আমরা এই পথ থেকে বিন্দুমাত্রও পিছু হটবো না।
আমাদের যদি হযরত খুবাইব রাযি. এর মতো শূলে চড়ানো হয়, আর ধারালো তরবারির আঘাতে আমাদের দেহকে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করা হয়; তখনও আমরা খুবাইব রাযি. এর মতো নির্ভয়ে কবিতা আবৃতি করবো-
ولست أبالي حين أُقتل مسلما على أي جنب كان لله مصرعي
وذاك في ذات الإله وإن يشأ يبارك على أوصال شلو ممزّع
“আমি কোন কিছুরই পরোয়া করি না; যখন একজন মুসলিম হিসাবে আমাকে হত্যা করা হয়। আল্লাহর রাহে আমাকে যেভাবেই ক্ষত-বিক্ষত করা হোক, তা কেবল মহান আল্লাহর জন্যেই। তিনি ইচ্ছে করলে আমার দেহ হতে বিচ্ছিন্ন করা প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে বরকত দান করবেন !” -সহীহ বুখারী: ৩৯৮৯
মনে রেখো! আমরা তোমাদের নির্যাতনের ভয়ে দ্বীনের পথকে ছেড়ে দিবো না। আমরা তো তোমাদের নির্মম নির্যাতনের চেয়েও আল্লাহর আজাবকে অনেক অনেক বেশি ভয় করি।
# ওরা আমাদের দুনিয়ার লোভ দেখায়!
ওরা আমাদের বলে- আমরা যদি জিহাদের পথ থেকে ফিরে আসি; ওরা আমাদের দুনিয়ার এই দিবে সেই দিবে, শান্তিতে বসবাস করতে দিবে!
আমরা ওদের জিজ্ঞেস করতে চাই- তোমরা কি আমাদের এই তুচ্ছ দুনিয়ার লোভ দেখাচ্ছো? এই সামান্য দুনিয়ার কাছে আমাদের আখিরাতকে বিক্রয় করে দিতে বলছো?
ওল্লাহি! আল্লাহর শপথ করে বলছি- আমাদেরকে যদি এই দুনিয়ার সম পরিমাণ দশটা দুনিয়াও দিয়ে দেয়া হয়; তারপরও আমরা ক্ষণিকের জন্যে জিহাদের এই পথ থেকে দূরে সরবো না। শুনে রেখো! আমাদের রবের জান্নাত এই তুচ্ছ দুনিয়ার চেয়ে হাজার কোটি গুণ বেশি শ্রেষ্ঠ।
আমরা আমাদের শত্রুদের লক্ষ্য করে ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহ. এর সেই বানীটি উচ্চারণ করতে চাই-
مايصنع أعدائي بي ؟ أنا جنتي وبستاني في صدري أين رحت فهي معي لا تفارقني إن حبسي خلوة وقتلي شهادة وإخراجي من بلدى سياحة
“শত্রুরা আমার কি ক্ষতি করবে? আমি তো জান্নাতকে বুকে নিয়ে চলি, কারাগার আমাকে আমার রবের সাথে একাকী সময় কাটানোর সুযোগ করে দেয়, ওরা যদি আমাকে হত্যা করে; তাহলে আমি তো শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করবো, আর যদি আমাকে দেশান্তর করে দেয়; তাহলে আমি বেরিয়ে পড়বো দ্বীনি সফরে।
সুতরাং আমাদের শত্রুদের খুশি হওয়ার কোন কারণ নেই; ওরা যত চক্রান্তই করুক, সর্বাবস্থায় আমরাই সফল।
দ্বীনের বিধানগুলো মানার ক্ষেত্রে কি আমরাআল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করি?
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যে যিনি আমাদের প্রতিপালক, আমাদের ভালো-মন্দের মালিক, যাঁর কাছে আমাদের সব চাওয়া, যাঁর জন্যে আমাদের ভালোবাসা, একমাত্র যাঁর ওপরই আমাদের ভরসা। শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর; তাঁর পরিবার-পরিজন, সাহাবাগণ এবং যারা তাঁদের অনুসারী তাঁদের উপর।
আমরা প্রত্যেকে অন্তরে ঈমান ধারণ করি। সে অর্থে আমরা সবাই আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করি। কারণ তাওয়াক্কুল ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ। তাওহীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একমাত্র আল্লাহর ওপর ঈমান আনার মানে একমাত্র তাঁর ওপর ভরসা করা। ভরসা মানে এ নয় যে, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে তাঁকে মানি। কিন্তু যখন দুঃখ বা পরীক্ষা আসে; তখন দূরে সরে যাই। ভরসা মানে এই যে, সব সময়ই তাঁকে ভালোবাসা। তাঁকে ছাড়া অন্য কাউকে ভয় না করা। কারও রক্ত চক্ষুকে পরোয়া না করা।
তাওয়াক্কুল কী?
শাব্দিকভাবে তাওয়াক্কুল অর্থ ভরসা করা, নির্ভর করা। এ শব্দটি الوكالة থেকে নির্গত হয়েছে। অর্থাৎ সকল ব্যাপার আল্লাহর প্রতি ন্যস্ত করে তাঁর ওপর ভরসা করা। যে তাওয়াক্কুল করে তাকে বলা হয় মুতাওয়াক্কিল। সুতরাং মুতাওয়াক্কিল মুমিনের অপর আরেকটি নাম।
মুমিন ব্যক্তি যখন কোন বিপদে আক্রান্ত হয়; তখন সে তার রবের আশ্রয় নিয়ে বিষয়টি তাঁর প্রতি ন্যস্ত করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের প্রতি অতিশয় দয়ালু। তাঁর রহমতের চেয়ে অধিক আর কারো রহমত হতে পারে না। তিনিই সব কিছু করতে সক্ষম। অন্য কেউ নয়। তিনিই হেদায়েত দাতা । আর বান্দা যখন বুঝবে এবং এই বিশ্বাস করবে যে, আল্লাহই হচ্ছেন একমাত্র স্রষ্টা। তিনিই সব কিছু পরিচালনা করেন। আর আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া মাখলুক কারো উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না, তখন তার অন্তর শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই নিবেদিত হবে। তার সকল কাজ আল্লাহর জন্যেই হবে। ফলে সে কোন মাখলুকের পরোয়া না করে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আশ্রয় প্রার্থী হবে এবং তাঁকেই ভয় করবে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করবে না।
কার ওপর তাওয়াক্কুল?
পূর্ব যুগের মুশরিকদের যখন জিজ্ঞাসা করা হতো, এ আসমান জমিন কার বানানো? তারা বলতো, আল্লাহর বানানো। কিন্তু তাদের মুশরিক বলা হয় কেন? আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা কে? এর জবাবে আল্লাহর নাম বললেও কেন তারা মুসলমান হিসেবে গণ্য হয়নি? কারণ তারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করতো না। আর এই একত্ববাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল তাওয়াক্কুল। ঐ সব মুশরিকরা দেব-দেবীর ওপর ভরসা করতো। জ্ঞানের জন্যে এ দেবী, ধন-সম্পদের জন্যে এ দেবতা এমনই ছিল তাদের বিশ্বাস! এখনো আমাদের আশেপাশে এমন মানুষ কম নয়, যারা দেব-দেবীর পূজা করছে আর তাদের ওপরই আস্থা রাখছে। আবার কেউ মাজার-কবর, পীর পূজা করছে এবং তাদের ওপরই ভরসা করছে!
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এ সম্পর্কে বলেন-
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْعَزِيزِ الرَّحِيمِ
“আর তোমরা ভরসা করো পরাক্রমশালী করুণাময়ের ওপর।” (সূরা শুআরা: ২১৭)
وَتَوَكَّلْ عَلَى الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوتُ
“ভরসা করো চিরঞ্জীবের ওপর; যার কোন মৃত্যু নাই।” –(সূরা ফুরকান – ৫৮)
আসবাব গ্রহণ তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়…
আসবাব গ্রহণ করা তাওয়াক্কুল পরিপন্থী নয়। প্রকৃত অর্থে, তাওয়াক্কুল হল অন্তরের কাজ। আর অন্তরের কাজ হল আল্লাহর ওপর নির্ভর করা, তাঁর ওপর ভরসা করা। এ কথার বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তা‘আলাই ক্ষতি ও উপকার করার মালিক।
তাওয়াক্কুল করতে হবে আসবাব গ্রহণ করে। আসবাব গ্রহণ করা ব্যতীত নয়। আমরা নিজেদের মন-মেজাজ দ্বারা বুঝতে যাব না। বরং এ বোঝার ক্ষেত্রেও আল্লাহর ওপরই তাওয়াক্কুল করতে হবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন –
وَشَاوِرْهُمْ فِي الأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللّهِ
“আপনি তাদের সাথে পরামর্শ করুন। আর যখন কোন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিবেন; তখন আল্লাহর ওপর ভরসা করুন।” –(সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, একজন সাহাবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন-
يا رسول الله أعقلها -أي الناقة- وأتوكل، أو أطلقها وأتوكل؟!
হে আল্লাহর রাসূল! আমি কী উটটি বেঁধে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করবো? না উটটা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করবো?!
قال: اعقلها وتوكل
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-“আগে উট বাঁধো, তারপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করো।”
মুতাওয়াক্কিল আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র
যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে। সে আল্লাহর ভালোবাসার পাত্র হয়ে যায়।
إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ
“যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান: ১৫৯)
তাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট
আল্লাহর ওপর যারা তাওয়াক্কুল করে তাদের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। আল্লাহ তাদের দায়িত্ব নিয়ে নেন। তাদেরকে গোমরাহী হতে রক্ষা করে সঠিক পথ দেখান।
وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ
“আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ তার জন্যে যথেষ্ট হয়ে যান।” -সূরা তালাক: ০৩
তাওয়াক্কুলের দাবীদার
আমরা অনেকে তাওয়াক্কুল করার দাবী করি। অন্যকেও নসিহত করি। কিন্তু নিজের বেলায় তার আমল করি না। তাওয়াক্কুলের সাথে রয়েছে তাকওয়ার নিবিড় সম্পর্ক। কারণ কেউ যখন আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে; তখন তার অন্তরে আল্লাহর জন্যে তাকওয়া ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। আর আমি যদি সত্যিকারের মুত্তাকীই হয়ে থাকি; তবে কেন জেল-জরিমানা, মাদরাসা-মক্তব ও বেতন-ওযীফা বন্ধের ভয় পাই?
কেন মনে করি আল্লাহর দেয়া একটি ফরয বিধান পালন করলে আমাকে জেলে যেতে হবে? আমাকে বন্দী করা হবে? আমার মাদরাসা একেবারে তালাবন্ধ হয়ে যাবে? এ কাজে জড়ালে বন্ধ হয়ে যাবে আমার মাদরাসার পড়ালেখা? বন্ধ হয়ে যাবে আমার বেতন-ওযীফা?
আমরা যদি এসব চিন্তাই করে থাকি; তবে কি আমরা নিজের সংকীর্ণ আকল আর স্থূল বুদ্ধির ওপর ভরসা করছি না? আমরা কি নিজের কিঞ্চিৎ মানব জ্ঞান দ্বারা চিন্তা করছি না?
আমি যদি মনে করে থাকি, তারা আমাকে জেলে দিবে। তাহলে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল কীভাবে হোল? আমি তো মনে করি, তাওয়াক্কুল হল পৃথিবীর সকলে মিলে আমার একটি ক্ষতি করতে চাইলে, যতক্ষণ না আল্লাহ তার ইচ্ছা করেন; ততক্ষণ তারা সে ক্ষতিটি করতে পারে না। তাহলে জেলকে ভয় পেয়ে কি আমি আমার ঈমান হারাবো?
আমি যদি ভাবি জিহাদের কথা বললে তারা আমার মাদরাসা বন্ধ করে দিবে। আমার বেতন-ওযীফা বন্ধ হয়ে যাবে। তাহলে তো ক্ষমতাবান হিসেবে আমি তাগুতকেই মানছি। অথচ সকল ক্ষমতা আল্লাহর। তিনি যা করেন তাই হয়। মাদরাসা, বেতন-ওযীফা বন্ধের ভয় করে আমি কি ঈমান হারাবো?
আমি জীবন গড়ার, ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা করছি; তো সে ক্ষেত্রে তাগুতকে সমীহ করেই চলছি; তাদেরকে ভয় করছি। তাহলে কার জন্যে আমার ইলম শেখা হচ্ছে? আর কার জন্যে আমার ক্যারিয়ার গড়া হচ্ছে? আমি সত্য প্রচার করলে, জিহাদের প্রস্তুতি নিলে তারা আমার মাদরাসা, আমার ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দিবে। আর এক্ষেত্রে আমি এই জ্বালানো-পূরানোর ভয়ে ফরয বিধান উপেক্ষা করছি। তাহলে কোথায় আমার ঈমান? কোথায় তাওহীদ? কোথায় গেল আমার তাকওয়া আর তাওয়াক্কুল?
শুধু কি গুনাহ ত্যাগ করলেই তাওয়াক্কুল হয়? নাকি বিধানগুলো পালন করার ক্ষেত্রেও তাওয়াক্কুল প্রয়োজনীয়?
ইউসুফ আ. এর মাদরাসা
-রুপান্তরে: মুহাম্মাদ
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্যে, দুরূদ ও রহমত বর্ষিত হোক তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ওপর।
এক ব্যক্তি শাফেয়ী রহ. কে জিজ্ঞেস করলেন, “কোন ব্যক্তি উত্তম? যাকে আল্লাহ পরীক্ষা করেছেন সে উত্তম; না এমন যোগ্য ব্যক্তি যাকে পরীক্ষা করা হয়নি?”
উত্তরে শাফেয়ী রহ. বলেন, “পরীক্ষা ব্যতীত কেউই যোগ্য হয় না।”
হে আমার ভাই! এই বন্দিত্বই কত বীরকে প্রসব করেছে। পরিশুদ্ধ করেছে তাঁদের অন্তর-আত্মাকে। পৃথক করে দেখিয়েছে- কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী?
মহান প্রতিপালকের বাণী-
وَلِيُمَحِّصَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا وَيَمْحَقَ الْكَافِرِينَ
“আর এর কারণেই আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে পাক-সাফ করেন ও কাফেরদেরকে ধ্বংস করেন।” -সূরা আলে ইমরান: ১৪১
কারাগারে যাওয়ার একটি ফায়েদা হলো- মুসলমানগণ এ সব তাগুতদের শত্রুতা সম্পর্কে স্পষ্টরূপে জানতে পারে। জানতে পারে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’র বিরুদ্ধে তাদের কঠোর বিদ্বেষের বিষয়টাও । যদি আপনারা দেখতেন- এ সব তাগুতরা, আমেরিকার এ সব গোলামরা জেলের ভেতর আমাদের ভাই, আমাদের বোনদের সাথে কিরূপ আচরণ করে! যা দেখে কোন পাষন্ড নেই; যার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়বে না।
হে আমার ভাই! হে আমার বোন! ধৈর্যধারণ করুন। ধৈর্যধারণ করুন। সাহায্য অতি নিকটে। কবির ভাষায়-
হে আল্লাহর সৈনিক সবর করো নিশ্চয়ই স্বস্তি রয়েছে কষ্টের পরেই নির্যাতন ভেবো না- কারার বন্দীদশাকে কারার প্রভুর সাহায্য অতি নিকটেই।
কেউ কেউ হয়তো মনে মনে বলছেন, এটা আবার কেমন সাহায্য?! এখানে তো কষ্টের পর কষ্ট! লাঞ্ছনার পর লাঞ্ছনা! নির্যাতনের পর নির্যাতন! যা পাহাড় সম দৃঢ় একজন মানুষকেও ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।
তাকে বলতে চাই- এটি সেই মাদরাসা; যেখান থেকে ইউসুফ আ. শিক্ষিত হয়ে বের হয়েছিলেন। এখানে তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন। এটা সেই মাদরাসা; যা তাঁকে উম্মাহর নেতৃত্ব দিতে শেখায়। জানায়- কীভাবে তাদেরকে পরিচালনা করতে হবে।
যদিও এ মাদরাসা আপাতদৃষ্টিতে বিপদ হিসেবে দেখা যায়। যা কষ্ট নির্যাতনের একাশেষ। কিন্তু অন্যদিকে এটি অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে, কঠিন অবস্থা প্রতিরোধ করতে শেখায়, বাতিল শক্তির মোকাবেলায় সাহস জোগায়। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, আমাদের এ দাবি শুধু মুখের বুলি নয়। এটি অভিজ্ঞতায় অর্জিত বাস্তবতা।
ইবনে তাইমিয়া, আহ্মাদ ইবনে হাম্বলের মত উম্মতের পূর্বসূরী অনেকেই কারাবরণ করেন। কারার মাঝে ছিলেন আমাদের এ যুগের উম্মাহর অনেক নেতৃত্বশীল ব্যক্তিও। তাঁদের মধ্যে অন্যতম সিংহরাজ মুজাহিদ নেতা আবু মুস‘আব আয-যারকাভী (আল্লাহ তাঁকে কবুল করুক)। যিনি ইরাকে কঠিন থেকে কঠিনতর যুদ্ধসমূহ পরিচালনা করেন। যার হাতে আল্লাহ তা‘আলা লোক মুখে কথিত বিশে^র সুপার পাওয়ার আমেরিকাকে লাঞ্ছিত করেছেন। তাদেরকে নাকে খড় দিয়েছেন। পরিশেষে আল্লাহ তাঁকে শাহাদাতের মহান মর্যাদায় সম্মানিত করেন।
কীভাবে গড়ে ওঠলো এই বীর? তবে শুনুন- তাঁর জীবন গঠনের কাহিনী; তিনি পাঁচ বছর যাবত জর্ডানের কারাগারে বন্দী ছিলেন। আল্লাহ তাঁকে দান করেছেন কারাগারের সময়কে কাজে লাগানোর সৌভাগ্য। কেননা এটা উপকার লাভের মোক্ষম জায়গা। এটি এমন এক জায়গা; যেখানে অফুরন্ত সময় পাওয়া যায়। তিনি কারার মাঝে জ্ঞান অন্বেষণে লিপ্ত হোন। পুরো কুরআন হিফ্জ করেন। প্রতি তিন দিনে মনোযোগ সহকারে কুরআন খতম করতেন। তারপর একসময় তিনি কারার অন্ধকার প্রকোষ্ঠ থেকে বাইরে আসেন। এরপর আপনারা জানেন- কী হয়েছিল? কী ঘটেছিল?- দজলা-ফোরাতের দেশে। আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন। এবং তাঁকে আপন প্রশস্ত জান্নাতের অধিবাসী বানান।
তাছাড়া এ রকম অন্যান্যরা হলেন- আবু হাজের মুকাররান, ফাওয়াজ রাবিয়ী, শায়খ ইউসুফ উয়াইরী’র মতো ব্যক্তিত্ব। বর্তমানের কিছু উদাহরণ- শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী, শায়খ উমর আব্দুর রহমান (যিনি ইতিমধ্যে শাহাদাত লাভ করেন), আবু লাইছ লিবী। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি তাঁদেরকে দ্বীনের ওপর অটল রাখুন! তাঁদেরকে কাফেরদের গলার কাঁটা স্বরূপ বানান। এখানে কিছু সংক্ষিপ্ত বর্ণনা করলাম মাত্র। যাদের কাছ থেকে কারার মাঝে বারাকাহ লাভের কথা আমরা শুনেছি। যারা কারার প্রকোষ্ঠে ঈমানের স্বাদ অর্জন করেছেন; সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। আমি নিজে স্বয়ং এগুলো শুনেছি। আল্লাহর কাছে তাঁদের কল্যাণ কামনা করি। তাঁদেরকে আল্লাহ বন্দিত্ব থেকে মুক্তি দান করুন!
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
اللھم إني أعوذ بك من الأسر ومن البتر
“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে বন্দিত্ব ও নির্বংশ হওয়া থেকে মুক্তি চাই।”
… و أعوذ بك من غلبة الدین وقھر الرجال ..
“… আর আমি ঋণ থেকে, মানুষের নির্যাতন থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বন্দীদের মুক্ত করার আদেশ দিয়ে বলেন-
فكوا العاني
“তোমরা দুর্দশাগ্রস্ত বন্দীদের মুক্ত করো।”
আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি- তিনি যেন মুসলিম বন্দী ভাই-বোনদের অতি তাড়াতাড়ি মুক্ত করার জন্যে আমাদেরকে যথাযথ প্রদক্ষেপ গ্রহণ করার তাওফীক দান করেন। তাদেরকে শান্তিতে রাখেন। তাদের ওপর যে বিপদ আসে তার চেয়ে বেশি তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন।
মানুষ নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালাতে পারে না। সে আল্লাহর কাছ থেকে পালিয়ে যেতে পারে না; বরং ঘুরে ফিরে সেদিকেই যায়। তাই নিষ্কৃতি দানকারী একমাত্র তিনিই। যদি কারো ওপর কোন বিপদ লিখিত হয়ে যায় বা তার কপালে কারার জীবন লিপিবদ্ধ থাকে। তবে সে পালানোর সকল উপায় অবলম্বন করেও বাঁচতে পারবে না। তাই সে সবর করবে, তার মনে রাখতে হবে- আল্লাহ তার জন্যে যা নির্ধারণ করেছেন, তাতেই কল্যাণ নিহিত।
আমার মুজাহিদ ভাই! আল্লাহ যদি তোমার ভাগ্যে বন্দিত্ব রাখেন তবে হতাশ হওয়ার কোন কারণ নেই। কারার সময়কে আমরা কীভাবে কাজে লাগাবো? কীভাবেই বা সে সময়ের বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবো? আমাদের নিরাপত্তার মূলনীতিই বা কী হবে? বন্দিত্বের সময়কে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- জিজ্ঞাসাবাদের সময়, জিজ্ঞাসাবাদের পর।
জিজ্ঞাসাবাদের সময়
১. দৃঢ় থাকা এবং ধৈর্যধারণ করা।
ক. আপনাকে মনে রাখতে হবে, আপনি ইসলামের জন্যে যুদ্ধ করছেন। আপনার এ অবস্থা আল্লাহর দ্বীনের খাতিরে। অপরদিকে, জিজ্ঞাসাবাদকারীর মাথা ব্যথা হলো- সে মাস শেষে বেতন পায় বা তার বস-স্যারের সন্তুষ্টিই সর্বোতভাবে কাম্য। এ দু’টি অবস্থার মাঝে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। কেউ হাতিয়ে নেবে সুরাইয়া তারকা আর কারো রিক্ত-শূন্য হাত।
খ. আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে বন্দী করে আপনার ওপর দয়া করেছেন। তিনি চান- এ বিপদের মাধ্যমে আপনাকে পবিত্র করবেন, নিষ্কলুষ করবেন। যাতে আপনি দুনিয়ার দুনিয়াবী থেকে উঁচু সম্মান-মর্যাদার অধিকারী হোন। তিনি চান- আপনাকে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা প্রদান করতে। আর আপনি কি তাতে ইচ্ছুক নন?
একটি দৃষ্টান্ত দেখি- বাবা তার সন্তানকে হিংসা করে মারেন না। বরং সন্তানের প্রতি তার প্রবল ভালোবাসা, তাকে বড় করার আশায় তাকে প্রহার করেন। আর আল্লাহ তো আমাদের এই বাবার তুলনায় অধিক ভালোবাসেন। তাই আমাদেরকে পরিশুদ্ধ করার জন্যে এ কারাগার জীবন।
গ. সাহাবার কথা খেয়াল করুন। তাঁরা কতভাবে পরীক্ষিত হয়েছেন। বেলাল ইবনে রাবাহ রা.। তাঁকে শাস্তি দেয়া হতো। তিনি ‘আহাদ ‘আহাদ বলে একত্ববাদের ঘোষণা দিয়ে যেতেন। আম্মার ইবনে ইয়াসির, খুবাইব প্রমুখ সাহাবা রা. এর কথা ভাবুন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
كان الرجل فيمن كان قبلكم يُحفر له في الأرض فيجاء بالمنشار فيوضع على رأسه فيشق إثنين وما يصده ذلك عن دينه ويمشط بأمشاط الحديد مادون لحمه من عظم وعصب وما يصده ذلك عن دينه ….
“তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে বন্দী করে আনা হতো, একটি গর্ত খোঁড়া হতো। তারপর করাত এনে তাঁর মাথার ওপর চালিয়ে দিয়ে দু’ভাগে ভাগ করে দিতো, কিন্তু সে দ্বীনের ওপর অটল থাকতো। লোহার চিরুনি দিয়ে তার হাঁড় থেকে গোশত আলাদা করা হতো, কিন্তু তাকে দ্বীন থেকে টলানো যেতো না…”
ঘ. স্মরণ করুন, যে বিপদে ধৈর্যধারণ করে তাঁর বিনিময় কী হয়। আল্লাহ তা‘আলা কেয়ামতের দিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ব্যক্তিদের জন্যে আলাদা বিনিময় রেখেছেন। কেয়ামতের দিন তিনি সকলের মাঝে প্রশংসিত হবেন।
ঙ. এ সময়ে অধিক দোয়া করুন। কেননা মহান আল্লাহ বলেন-
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنْ الْمُسَبِّحِينَ لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
“যদি তিনি আল্লাহর তাসবীহ পাঠ না করতেন। তবে তাঁকে কেয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হতো।” সূরা সাফফাত: ১৪১
চ. জেলের ভয়, জল্লাদের চাবুক, শিকলের গুঞ্জন, জিজ্ঞাসাবাদকারীর আক্রমণ সবই প্রথমে এক ধরনের অজানা আশঙ্কা মনে হবে। কিন্তু অচিরেই তা ঈমানের কাছে হার মানবে। যে ঈমান আপনার হৃদয় বহন করছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-
إنما الصبر عند الصدمة الأولى
“ধৈর্য হল প্রথম ধাক্কার সময়।”
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এখানে বলেছেন, প্রথম পর্যায়ের কঠিন সময়ের কথা। আর আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, একটু ধৈর্যধারণ করুন। তারপর যাই আসবে আল্লাহর সাহায্যে সহজ হয়ে যাবে।
ছ. মনে রাখুন, ইতিপূর্বে অনেক ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তারপর একসময় তাদের এই জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়ে যায়। যখনই আপনার ওপর দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঝড় বয়ে যায়, আপনার ওপর শাস্তি দ্বিগুন করে দেওয়া হয়। আল্লাহর অনুমতিতে, তখনই কিন্তু আপনার মুক্তির সময় নিকটে এসে যায়। তারপর বিপদ টলে যাবে আর আপনার জন্যে ইনশাআল্লাহ আল্লাহর পক্ষ থেকে বিনিময় সাব্যস্ত হয়ে যাবে।
২. জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাথে সুন্দর আচরন করা। মামলায় জড়ানো থেকে বাঁচার উপায়।
প্রথমত: আপনাকে দৃঢ় হতে হবে। জিজ্ঞাসাবাদকারীকে কোন তথ্য দেওয়া যাবে না। তথ্য দিলে কি আপনি বেঁচে যাবেন? এটা তো কিছু দুরাশা মাত্র; বরং আপনার ওপর মামলা আরো মজবুত হয়ে যাবে। যখন তারা আপনার ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে না বা আপনার ব্যাপারে তারা স্পষ্ট এমন ধারণা পাবে, যা আপনি জেনে যাবেন; তখন ব্যাপারটি আয়ত্বে আনা, তাদেরকে গোমরাহ করা আপনার জন্যে সহজ হয়ে যাবে। যখন দেখবেন- তাদের জানা তথ্য অন্য তথ্যকে টেনে আনছে না, তখন তাদের হাত থেকে ব্যাপারটি ফসকে যাবে। তখন আপনাকে মুক্ত করে দেবে অথবা মেরে ফেলার আশঙ্কাও বিদ্যমান থাকে। তখন কোন কিছু জানার পথ তাদের জন্যে রুদ্ধ হয়ে যাবে।
আর যখন আপনি তাদেরকে এমন তথ্য দিবেন, যাতে তারা পথ হারিয়ে ফেলে আর কাজেরও কোন ক্ষতি না হয়। তবে তা হবে উত্তম। আর এই পদ্ধতিটিই আমাদের ভাই আবু যুবাইদাহ (আল্লাহ তাকে মুক্ত করুন), রামজী বিন শায়বা প্রমুখ ব্যবহার করেছেন।
দ্বিতীয়ত: তাদেরকে কিছু না জানানোর ব্যাপারে নির্দেশনা হলো-
ক. তারা জানার পর আপনাকে ছেড়ে দিবে না। বরং আপনার অবস্থা আরো খারাপ থেকে খারাপতর হয়ে যাবে।
খ. যারা পাপী, ফাসেক তারা নিজেদের ব্যাপারে অন্যকে জানায় না। আর আপনিতো হলেন সর্বোত্তম কাজে, তাহলে কেন আপনি অন্যকে জানিয়ে আপনার আমলকে নষ্ট করবেন? আপনাকে তো আরো বেশি স্থির থাকা আবশ্যক।
তৃতীয়ত: যে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদকারীরা তথ্য হাতিয়ে নেয় তা জানতে হবে।
জিজ্ঞাসাবাদের পর:
যখন জিজ্ঞাসাবাদের কঠিন সময় শেষ হয়ে যায় । আর এ সময়ে স্থির থাকতে পারলে, আল্লাহর মদদে সামনে আরো বেশি স্থির থাকতে পারবেন। এ সময়টাতে আপনি কারাগারে অন্যান্য ভাইদের সাথে থাকবেন। আপনি যদি এ সময়কে সুন্দরভাবে কাটাতে চান তবে করণীয় হলো:
১. উপকারী কাজে লিপ্ত হওয়া:
চমৎকার হবে যদি আপনার এ রকম একটা সূচী থাকে- আপনি আল্লাহর কালাম মুখস্থ করলেন, তারপর শরয়ী ইলম অর্জন করলেন, কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ শিখলেন। যেন আপনার সময় খালি না থাকে। কারণ¬,
ক. যেন আপনি এ মাদরাসা থেকে ইমাম হয়ে বের হতে পারেন। যাকে মানুষ মনে-প্রাণে ভালোবাসবে, যাকে তারা অনুসরণ করবে।
খ. আপনি যদি কারার সময়কে গুরুত্ব না দেন; তবে শয়তান তার গুরুত্ব দিবে, আপনার কুপ্রবৃত্তি তার গুরুত্ব দিবে। এতে করে কারার এ মাদরাসা আপনার জন্যে সংকীর্ণ হয়ে পড়বে। আপনার কাছে সময় মনে হবে অনেক কম। কখন বের হওয়ার সময় আসবে? এ আশায় প্রহর গুনতে থাকবেন। এ দিকটা আপনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
অপর দিকে আপনার কাছে যদি একটি সূচী থাকে। আপনি যে কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তাহলে আশা করা যায়, সময়ে অনেক করকত পাবেন। আপনার জন্যে কারার এ মাদরাসা উপকারী হবে। যেমন শায়খ ইউসুফ উয়াইরী (আল্লাহ তাকে কবুল করুন)। এক ব্যক্তি কারামুক্তির সুসংবাদ দিতে তাঁর কাছে গেল। তখন তাঁর মুখ থেকে অনিচ্ছাকৃতভাবে বের হয়ে এলো, “আল্লাহ তোমাকে কোন সুসংবাদ না শোনাক।” আপনি কি জানেন কী কারণে তিনি এমনটি বললেন?
তাঁর মুখ থেকেই শুনি, “আল্লাহর কসম! আমার মনে হতো- দিন মনে হয় ৪৮ ঘণ্টার হয়ে গেছে।”
শোনো ভাই! শায়খ সে সময় কুতুবে সিত্তাহ মুখস্থ করে নেন। যখন তিনি অন্যদের সাথে একত্রে থাকছিলেন, তিনি দেখলেন- তাঁর অনেক সময় নষ্ট হচ্ছে। তাই কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জেদ ধরলেন- তাকে এককভাবে রাখতে হবে। বলতে পারেন?- কেন জেল তাঁর জন্যে জান্নাতের একটি বাগানে রূপান্তরিত হয়?
কারণ তিনি জেলের সময়কে কাজে লাগিয়েছেন। এর গুরুত্ব দিয়েছেন। যা তাঁকে দুনিয়া ও আখেরাতে উপকৃত করে। তিনি এ অবসর থেকে উপকৃত হওয়ার ব্যাপারে জানতেন। জানতেন যে, যদি এখান থেকে বের হোন; তাহলে তিনি গনীমত তুল্য এ অবসরতা আর পাবেন না।
আর আপনার সময়কে দাওয়াতের কাজে ব্যয় করতে ভুলবেন না। ভাইদের সাথে আনন্দ করতে ভুল করবেন না। তাদের জরুরত পূরণ করার কথাও যেন মনে থাকে।
২. ভাইদের সাথে উত্তম আচরণ করা:
আপনি সেখানে একা নন। অনেকের মাঝে একজনের ব্যক্তিত্ব আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারে। তাই আপনি তাদের সাথে উত্তম আচরন করুন। তাই জানতে হবে, বিভিন্ন মেজাজের মানুষের সাথে কীভাবে চলতে হয়। কেননা মানুষের প্রকৃতি বিভিন্ন রূপ হয়ে থাকে। আর ভাইরা তো আর ফেরেশতা নন। তাদের চরিত্রও বিভিন্ন রকম হয়। কিন্তু আমরা তাদেরকে সবচেয়ে উত্তম জাতিতে গণ্য করবো। কেন করবো না? অথচ তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষায় ফেলা হয়।
জেল আর ময়দান হলো- এমন স্থান যেখানে কখনো কখনো পরীক্ষার কারণে মন-মেজাজ সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। আর জেল হলো প্রস্তুতির জায়গা। যদি এক ভাইয়ের সাথে অন্য ভাই কোন ভুল করে থাকে। তবে তা আপনি সুন্দরভাবে শুধরিয়ে দিন। তাকে বলুন, জেলের বাইরে হলে এ রকম ভুল হতো না।
অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি, মুমিন ভাইদের সাথে ক্ষমা বা মাফ করার মতো আর কোন শ্রেয় পদ্ধতি খুঁজে পাওয়া যায়নি। আপনি যখন কোন ভাইকে ক্ষমা করে দিবেন, আপনার জন্যে তার ভালোবাসা বেড়ে যাবে। আপনি তার চোখে বড় হয়ে যাবেন। আপনি এটাকে লাঞ্ছনা মনে করবেন না। ভাববেন না, আপনি তার সামনে ছোট হয়ে যাচ্ছেন; বরং এটিতো মুমিনের প্রতি সদয়। যার প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলা করেছেন-
أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ
“মুমিনদের ওপর তারা সদয়, কাফেরদের ওপর তারা কঠোর।” -সূরা মায়েদা: ৫৪
مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ وَالَّذِينَ مَعَهُ أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَمَاءُ بَيْنَهُمْ
“মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল এবং তাঁর সাথীরা কাফেরদের ওপর কঠোর আর নিজেদের মাঝে ভালোবাসার সম্পর্ক।” -সূরা ফাত্হ: ২৯
وَلَا تَسْتَوِي الْحَسَنَةُ وَلَا السَّيِّئَةُ ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ
“ভালো ও মন্দ সমান নয়। সুতরাং ভালো দিয়ে মন্দকে প্রতিহত করুন। তখন দেখবেন, যার সাথে আপনার শত্রুতা আছে, সে যেন অন্তরঙ্গ বন্ধু।” -সূরা ফুসসিলাত: ৩৪
আপনার ওপর আবশ্যক হচ্ছে, আপনি আপনার ভাইকে উত্তম কথা বলবেন। আল্লাহ বলেন-
وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا
“আর আমার বান্দাদের বলে দিন- তারা যা বলে যেন ভাল বলে। শয়তান তাদের মাঝে সংঘর্ষ বাঁধাতে চায়। আর শয়তান হলো মানুষের প্রকাশ্য শত্রু।” সূরা ইসরা: ৫৩
আপনি বেশি কথা বলবেন না। বেশি হাসবেন না, কেননা তা অন্তরকে মৃতে পরিণত করে। এর কারণে শয়তান প্রবেশ করে। আপনি সব সময় নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। আপনার সূচী অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যান। অধিক পরিমাণে আল্লাহকে স্মরণ করুন। আর আপনার ভাইদের ভুলে যাবেন না।
৩. আপনার তথ্যবলী গোপন রাখুন:
অর্থাৎ তার কাছ থেকেও গোপন রাখুন, যে আপনার কথা কাউকে বলবে না। আপনিও তার কথা কাউকে বলবেন না। আপনি নিজের কথা নিজের কাছে রাখুন। তা কোন আপনের আপনের কাছেও বলতে যাবেন না। যদিও তিনি বিশ^স্ত হোক না কেন। কারণ তাগুত সব সময় গোয়েন্দা নিযুক্ত করার চেষ্টা করে। সে এমন ভাব ধরবে যেন সে একজন মুজাহিদ, জিহাদের ময়দানে তার কাজের অভিজ্ঞতা আছে। সে এভাবে ভাইদের থেকে তথ্য নিতে চেষ্টা করে। তারপর তা কর্তৃপক্ষকে দিয়ে দেয়। তাই কোন বন্ধুকে নিজের তথ্যগুলো জানাবেন না। কেননা বন্ধু তার নির্ভরযোগ্য বন্ধুর কাছে বলবে। এভাবে বলতে বলতে তাগুতের কাছে খবর পৌঁছে যাবে। তাগুতও তো কারো না কারো বন্ধু!
এর মানে এটা নয়, আপনি ভাইদের কে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখবেন। তাদের প্রতি খারাপ ধারণা করবেন। তাদেরকে বিশ্বাসঘাতক বলবেন। তাদের সাথে খারাপ আচরণ করবেন। বরং এটি সতর্কতার একটি মাধ্যম। যেন সামনে কোন সম্যসা না হয়।
সতর্কতা: এই কথাগুলো খুব জরুরী। কিন্তু শত্রুদের অপকৌশল থেকে সাবধান। একবার ইয়ামানে, তাগুতরা ভাইদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করার চেষ্টা করে। তারা এর জন্যে একটি ঘৃণ্য কৌশল রচনা করে। ভাইদের মধ্যে তারা সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দেয়। যেমন: জিজ্ঞাসাবাদকারী একজনকে ডেকে আনে। তার সাথে হাসি-মজাক করে। সুন্দর আচরণ করে। এভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যায়। ফলে অন্য ভাইরা তাকে সন্দেহ করতে থাকে। মনে করে, এতো তাগুতের গোয়েন্দা! এমনভাবে অন্য অনেক উপায় তারা অবলম্বন করে থাকে। এভাবে তারা কিছু যুবককে ধোঁকা দিতে সক্ষম হলো। এরা সে সকল ভাইদেরকে তাগুতের চর হওয়ার অভিযোগ দিলো। অথচ তারা এ থেকে শত ক্রোশ দূরে! যদি আপনার ভাই তাগুত জিজ্ঞাসাবাদকারীর সাথে হেসে কথা বলে, তার মানে এই নয়, সে তাদের চর। হতে পারে তিনি এটা কৌশল স্বরুপ করছেন বা তাদেরকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করছেন। সুতরাং, সাবধান! সাবধান! আপনার ভাইকে গোয়েন্দা মনে করবেন না। কেননা তাগুত আপনাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।
কারো ওপর শরীয়তের কোন হুকুম লাগাতে হলে তার থেকে তা কী কারণে স্পষ্টরূপে প্রকাশ পেতে হয় তা জানেন?
কেননা, যদি আপনি তাকে তাগুতের গুপ্তচর হওয়ার হুকুম লাগিয়ে দেন। তাহলে তার ওপর আপনি কাফের হওয়ার হুকুম লাগালেন। তার রিদ্দাহর হুকুম লাগালেন। অথচ কুফুরী ও রিদ্দাহ সাব্যস্ত করার জন্যে দু’জন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির সাক্ষ্য লাগে। যারা তাকে স্পষ্টরূপে কুফুরী করতে দেখেছে। যাতে কোন সন্দেহের অবকাশ থাকবে না বা তা সন্দেহের ভিত্তিতে হবে না; কিংবা অপধারণার কারণেও নয়।
আপনার ভাইদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহ বলেন-
لَوْلَا إِذْ سَمِعْتُمُوهُ ظَنَّ الْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بِأَنْفُسِهِمْ خَيْرًا وَقَالُوا هَذَا إِفْكٌ مُبِينٌ
“যখন তারা এ অপবাদ শুনলো; তখন কেন ঈমানদার নারী পুরুষ নিজেদের ব্যাপারে সুধারণা করেনি? কেন বলেনি, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ।” সূরা নূর: ১২
إِذْ تَلَقَّوْنَهُ بِأَلْسِنَتِكُمْ وَتَقُولُونَ بِأَفْوَاهِكُمْ مَا لَيْسَ لَكُمْ بِهِ عِلْمٌ وَتَحْسَبُونَهُ هَيِّنًا وَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ عَظِيمٌ
“যখন তোমরা মুখে মুখে এটা ছড়াচ্ছিলে, তোমরা নিজেদের মুখে এমন কথা বলেছিলে, যার জ্ঞান তোমাদের নেই। তোমরা এটাকে তুচ্ছ বিষয় মনে করেছিলে। কিন্তু তা আল্লাহর নিকট অনেক বড় বিষয়।” সূরা নূর:১৫
তাই এ ব্যপারে সতর্ক হতে হবে! শয়তানের পক্ষ হয়ে ফেতনা ছড়ানোর ব্যাপারে সাবধান! আপনার ক্ষতি হয় এমন কথা বলবেন না। এ ব্যাপারে চুপ থাকার চেষ্টা করুন। আপনার ভাইদের প্রতি উত্তম আচরণ করুন।