ইতিহাস- ঐতিহ্যউসামা মিডিয়াবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ সুলাইমান আল আতিবি রহিমাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

খোরাসানের পুণ্যভূমিতে শাইখ আবু সুলাইমান আল-আতীবী রহ. এর শাহাদাতের গল্প

PDF
—-
http://www.mediafire.com/file/ef8xfssaumctxpg/26._sahadat_abu_sulaim_%2528r%2529.pdf/file

https://archive.org/download/U_M_A/26.%20sahadat%20abu%20sulaim%20%28r%29.pdf

Word
—–
http://www.mediafire.com/file/0vd59mhag0tykoy/26._sahadat_abu_sulaim_%2528r%2529.docx/file

https://archive.org/download/U_M_A/26.%20sahadat%20abu%20sulaim%20%28r%29.docx

 

 

খোরাসানের পুণ্যভূমিতে
শাইখ আবু সুলাইমান আল-আতীবী রহ.
এর
শাহাদাতের গল্প

মূল লেখকঃ

মুতাসিম বিল্লাহ খোরাসানী হাফিজাহুল্লাহ

অনুবাদঃ

আব্দুল্লাহ হিন্দুস্তানী হাফিজাহুল্লাহ

পরিবেশনা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

মুসলিম উম্মাহ তার দীর্ঘ ইতিহাসে ভিতরের শত্রু এবং বহিরাগত শত্রুর দ্বারা বারবার যুদ্ধ-বিগ্রহ, ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যার শিকার হয়েছে। শতকোটির এই উম্মাহ আজও বিভিন্ন শহরে গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের নিশান বহন করে আছে। রক্তের ছোপ ছোপ দাগ অলিগলিতে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।এত এত হত্যা, নিধন আর ধ্বংস সত্তেও উম্মাহর পুতপবিত্র নারীগণ যুগে যুগে উম্মাহকে বহু বীর বাহাদুর উপহার দিয়েছে। আরও উপহার দিয়েছে কুরআন-সুন্নাহর উপর আমলকারী সত্য-নিষ্ঠ্য বহু পুরুষ-নারী, যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী ও বৃদ্ধকে।
সত্য-নিষ্ঠ উলামায়ে কেরাম উম্মাহর হৃৎপিণ্ড তুল্য। যখনই উম্মাহর উপর কোনো বিপর্যয় নেমে এসেছে, চাই আরব থেকে আসুক কিংবা অনারব থেকে আসুক, তখনই তারা উম্মাহকে রক্ষার ক্ষেত্রে বড় ভুমিকা পালন করেছেন। উম্মাহর ক্রান্তিলগ্নে উম্মাহর করণীয় বাতলে দিয়ে এবং মুজাহিদদেরকে জিহাদ ও প্রতিরোধের উপর উৎসাহ-উদ্দিপনা যুগিয়ে, জিহাদ ও মুজাহিদদের পক্ষে জনমত তৈরি করে তারা উম্মাহর বড় খেদমত করে গেছেন। তাদের মধ্যে অনেকে এমনও ছিলেন যারা শুধু উৎসাহ-উদ্দিপনা যুগিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, বরং নিজেরা ¯^শরিরে জিহাদের ময়দানে শরীক হয়েছেন, কাফেরদের জুলুম-আগ্রাসন প্রতিহত করণার্থে হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। নিজেদের জান-মাল আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় সাবলীলভাবে আল্লাহর রাস্তায় বিলীন করে দিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ তো আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করে শাহাদাতের অমীয় সুধা পানে ধন্য হয়েছেন, আর কেউ এখনও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। উম্মাহকে আল্লাহর পথে, জিহাদের পথে মূল্যবান জান-মাল খরচ করতে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন। আমাদের ধারনা শাইখ আবু সুলাইমান রহ. ঐসব সত্য-নিষ্ঠ উলামাদের অর্ন্তভুক্ত যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করে শাহাদাতের অমীয় সুধাপানে ধন্য হয়েছেন। তবে আল্লাহ তাআলাই সকলের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে ভাল জানেন।

শাইখের বংশ পরিচিতি:

আবু সুলাইমান মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন মুতর বিন আয়েশ আসসাবেতী আররওকী আল আতীবী। তায়েফে জন্মগ্রহণ করেছেন। অত:পর পিতার সাথে পিতার কর্মস্থল ‌মিনতাকাতুশ শারকিয়া’র আল-খুবর নামক এলাকায় চলে গেছেন। সেখানেই তিনি বেড়ে উঠেছেন। শৈশক কাল থেকেই তার মধ্যে তার দাদার মত ইলমের প্রতি অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়েছিল। শৈশবে কুরআন হিফজ করতে শুরু করেন। বালেগ হওয়ার পর হিফজ সম্পন্ন করেন। তিনি খুব ভাল হাফেজ ছিলেন। একটা হরফও এদিক সেদিক হত না। মিনতাকাতুশ্ শারকিয়্যাতেই ইলম অন্বেষণ শুরু করেন। সেখানে উলামাদের দরস ও মজলিসে হাজির হতে থাকেন। মিনতাকাতুশ্ শারকিয়্যাতে যাদের কাছে ইলম অর্জন করেছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ। তিনি শাইখের হাদীস ও তাফসীরের দরসে হাজির হয়েছেন এবং বেশ কিছু সময় সাথে লেগে রয়েছেন। শাইখের সাথে শাইখের গাড়িতে করে যাতায়াতের সময় তিনি তার কাছ থেকে ফিকহ সম্পর্কীয় ইলমও অর্জন করেছেন। বয়স কম থাকা সত্তেও তিনি ইলমী অনেক বিষয় এবং অনেক হাদীস মুখস্ত করে ফেলেছেন।

অত:পর তিনি ইলম অন্বেষণের জন্য রিয়াদ চলে যান। সেখানে ড. নাসের উমরের সাথে তার সম্পর্ক হয় এবং গভীর সুসম্পর্ক তৈরি হয়। শাইখ যখন তার মধ্যে উচু মাপের প্রতিভা লক্ষ্য করলেন তখন তাকে ইলমের জন্য পরিপূর্ণ ফারেগ হতে উদ্বুদ্ধ করলেন। তিনি শাইখের এ পরামর্শ দ্বারা উপকৃত হয়েছেন এবং তার কাছে বুলুগুল মারাম’ কিতাবটি পরিপূর্ণভাবে অধ্যায়ন করেছেন। এ কিতাবটি তিনি মুখস্তও করেছিলেন। এরপর তিনি ড. সাহেবের নিজ বাড়িতে আম মজলিসে মুনযিরী রহ. প্রণীত মুখতাসারু সহীহি মুসলিম’ অধ্যায়ন করেছেন।ঐ সময় তিনি হাদীস শাস্ত্রে ইমাম মুসলিমের অবস্থান সম্পর্কে কয়েকটি প্রবন্ধও রচনা করেছেন।

অত:পর তিনি রিয়াদের অন্যান্য বড় বড় উলামাদের দরস ও মজলিসে হাজির হয়েছেন। এবং তাদের থেকে অনেক ইলম হাসিল করেছেন। তাদের মধ্য থেকে একজন হলেন, শাইখ আব্দুল আযীয আররাজেহী। তিনি সফরে-হযরে তার সঙ্গে থেকেছেন এবং তার থেকে ফিকহ, হাদীস ও আকীদা সম্পর্কে বিস্তর ইলম হাসিল করেছেন। এমনিভাবে শাইখ আব্দুর রহমান আলবাররাক থেকে আকাইদ ও অন্যান্য ইলম হাসিল করেছেন। আর শাইখ আব্দুল্লাহ বিন আকীল থেকে ফিকহ হাসিল করেছেন এবং শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন মালেক আররওকী থেকে ইলমুল হাদীস হাসিল করেছেন এবং তার কাছে মুআত্তা মালেক পড়েছেন।

এছাড়া রিয়াদে আরও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম থেকে তিনি ইলম অর্জন করেছেন। যেমন, শাইখ আব্দুল্লাহ বিন জিবরীন, শাইখ আব্দুর রহমান আল-মাহমূদ, শাইখ আব্দুল কারীম আলখদীর, শাইখ সা‘দ আল হুমাইদ, শাইখ আব্দুল্লাহ আসসা‘দ প্রমুখ উলামায়ে কেরাম।

রিয়াদে আসার পূর্বে তিনি তায়েফে বিভিন্ন শাইখ থেকে ইলম হাসিল করেছেন। যেমন, শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ., শাইখ ফায়েয সালাহ। শাইখ ফায়েয সালাহ এর কাছে তিনি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর দুর্বোধ্য বাণীগুলো হল করতেন। শাইখ তার সম্পর্কে বলতেন, ‘এ যুবক বেঁচে থাকলে বড় একটা কিছু হবে’। এ কথা তার একাধিক উস্তাদই তার সম্পর্কে বলেছেন। আল্লাহ তাআলা শাইখকে শহীদ হিসাবে কবূল করে নিন এবং জান্নাতে তাকে উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।

জামিআতুল ইমাম মুহাম্মাদ বিন সাউদ-এর কুল্লিয়্যাতুশশরীয়াহ- বিভাগের কিছু উস্তাদ থেকেও তিনি ইলম অর্জন করেছেন। তিনি কিছু দিনের জন্য উক্ত জামিআয় ভর্তি হয়ে ছিলেন। এরপর উলামায়ে কেরামের মজলিসকেই তিনি নিজের ঠিকানা বানিয়ে নেন।

ইলম অন্বেষণের প্রতি শাইখের ভিষণ আগ্রহ ছিল। ইলমের জন্য তিনি সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন। তিনি দ্বীনের মূল ভিত্তি তাওহীদ ও আকাইদের ব্যাপারে বেশি গুরুত্বারোপ করতেন। আর হাদীস তার কাছে ছিল সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। হাদীসের দরসে বসা, হাদীসের অর্থ বোঝাএবং সনদ-মতন বিশ্লেষণ করা ছিল তার অতি পছন্দনীয় বিষয়।

তিনি তার কোনো কোনো উস্তাদের নির্দেশে কিছু কাল ইলম অন্বেষণর পাশাপাশি নামাযের ইমামতিও করেছেন এবং জনসাধারণকে হেদায়াতের পথে রাহবারী করেছেন। এ সূত্রে তিনি আন্নফলুল গরবী’ নামক জামে মসজিদ এবং আযীযিয়্যাহ মহল্লাহর জামে মসজিদেও ইমামতি করেছেন। এরপূর্বে এবং পড়ে তিনি কিছু স্থানে পড়িয়েছেন এবং কিছু কিতাবের শরাহ লিখেছেন। তিনি তার কিছু ছাত্রের জন্য ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব রহ. এর কিছু রেসালার ব্যাখ্যা গ্রন্থ রচনা করেছেন। এবং শরহু আকীদাতুত তহাবিয়্যাহ’ বুলূগুল মারাম’ ও আদ্দুরারুল বাহিয়্যাহ’ এর অংবিশেষের ব্যাখ্যা লিখেছেন। এবং তিনি দাওয়াতের কাজে পূর্ব-পশ্চিমের বিভিন্ন দূরবর্তী স্থানে সফর করেছেন। তিনি কিতাবাদি রচনার কাজেও কিছু কাল কাটিয়েছেন। কিতাবকে নির্ভুল ও সুন্দর করার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন এবং নিজ শাইখদের কাছে পেশ করার পূর্বে তিনি কিতাব ছাপাতেন না।

তাঁর রচিত কয়েকটি কিতাব নিম্নরূপ:

১. ঝাঁর-ফুঁক ও তাবীজ-কবয’ সম্পর্কে একটি রেসালা (প্রকাশিত)।
২. আহকামুল মাউলূদ’ সম্পর্কে একটি রেসালা (পাণ্ডুলিপি)
৩.মুওয়ালাতুল কাফেরীন’ সম্পর্কে একটি রেসালা (পাণ্ডুলিপি)।
৪. শরহু মুখতাসার লিল কাওয়ায়েদিল আরবাআ লিল ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব রহ.

এসবের সাথে সাথে তিনি তার উদ্যিপ্ত যৌবনে বিভিন্ন অঞ্চলে মুসলিমদের উপর নির্যাতনের বিষয়টি নিয়ে বেশ ভাবতেন। মুসলিম ভাই-বোনদের দু:খে তিনি দু:খিত হতেন এবং তাদের আনন্দে নিজে পুলকিত হতেন। মুসলিমদের উপর আপতিত বিপদ মুসীবত তাকে চিন্তান্বিত করে রাখত। তিনি অন্তরে অন্তরে জিহাদের আশা পোষণ করতেন। অবশ্য জিহাদের আশা তো প্রত্যেক ঐ মুমিনই পোষণ করে যে মুনাফিকির শাখার উপর ইন্তিকাল করতে ভয় করে। একপর্যায়ে এমন সময় আসল যখন মুসলিম উম্মাহর উপর বিপদের কালো মেঘ ছেয়ে গেল, একের পর এক মুসলিম ভূখণ্ডগুলো কাফেরদের সম্মিলিত বাহিনী দখল করে নিতে লাগল। একসময় সেই সময়টিও আসল যখন আমেরিকা আফগান অত:পর ইরাকে প্রবেশ করল। তখন সত্যনিষ্ঠ উলামায়ে কেরাম ব্যাপকভাবে জিহাদ ফরয হওয়ার ফতওয়া দিলেন। এই ফতওয়ার পর অনেকের মত শাইখের বড় ভাই ইরাকের রণাঙ্গনে শরীক হলেন এবং ফালূজার এক যুদ্ধে শাহাদাত লাভে ধন্য হলেন (আমরা এমনটিই ধারণা করি)।
আপন বড় ভাইয়ের শাহাদাতের পর জিহাদের ব্যাপারে শাইখের আগ্রহ আরো বৃদ্ধি পেল। তিনি জিহাদে বের হওয়ার জন্য প্রস্তুতি জোড়দার করলেন এবং বিভিন্ন ভাবে মুজাহিদদের সংবাদ সংগ্রহ করতে লাগলেন। এক পর্যায়ে বড় ভাইয়ের শাহাদাতের প্রায় এক বছর পর সেই মহেন্দ্রক্ষণটি উপস্থিত হল যখন তিনি নিজ সন্তান সুলাইমানকে গর্ভাবস্থায় রেখেই আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়ে পড়লেন।

জিহাদে বের হওয়ার সময় তার কিছু হিতাকাঙ্খী তাকে ইরাকের শাইখ আবু মুসআব যারকাবী রহ. এর অনুগত বাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে যুদ্ধ করার পরামর্শ দিলেন। তিনি তাদের পরামর্শ মোতাবেক শাইখ যারকাবীর নেতৃত্বে ইরাকের যুদ্ধে শরীক হলেন। একপর্যায়ে তিনি মুজাহিদদের মজলিসুশ শুরার কাযী নিযুক্ত হন এবং দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়্যাহ ঘোষণার পরে সেখানকার বিচারপতি নিযুক্ত হন।

প্রায় দুই বছর ইরাকের ময়দানে থাকার পর তিনি আফগান তালেবান মুজাহিদীনদের কাছে চলে আসেন। আফগানের ভাইয়েরা তাকে যথাযথ আপ্যায়ন ও মেহমানদারী করেন এবং যথাযোগ্য আসনে তাকে সমাসীন করেন। আফগান রণাঙ্গনে শরীক হওয়ার প্রায় ছয় মাস পরেই আল্লাহ তাআলা তাকে ঐ শাহাদের সুধাপানে ধন্য করেন যে শাহাদাত তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে কায়মনো বাক্যে কামনা করতেন। তিনি শাহাদাতের সুমহান মর্যাদায় ভুষিত হয়েছেন ১৪২৯ জিহরীর জুমাদাল উলা মাসে। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসাবে কবূল করুন। শাহাদাতের প্রায় দুই সপ্তাহ পূর্বে তিনি বলতেন, ‘মাঝে মাঝে আমার মনে হয় আমি আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী স্থানে হাঁটছি’। হে আসমান ও যমীনের প্রভু‚! তুমি শাইখকে মাফ করে দেও এবং তোমার সৃষ্টির অনেকের তুলনায় তাকে বেশি সম্মানিত কর।

আমরা নিম্নে শাইখের এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরবো যা ইরাকের রণাঙ্গন, আফগানের রণাঙ্গন এবং শাহাদাতের সাথে সম্পৃক্ত। আল্লাহ তাআলা তাওফীক দান করুন।

২০০৮ সালে শাইখ যখন খুরাসানের ভূমিতে পৌঁছলেন, তখন আমরা শুনতাম যে, জাযীরাতুল আরবের এক তালিবুল ইলমও খোরাসানে এসেছে। উক্ত তালিবুল ইলম ইরাক এবং ইরাকের পরিস্থিতি নিয়ে অনেক বেশি কথা বলতেন। শাইখ রহ. কোনো কিছু গোপন করতেন না। তিনি সব সময় যুবকদেরকে ইরাকে না যাওয়ার পরামর্শ দিতেন এবং বলতেন যে, বর্তমানে খোরাসানের ভূমিই তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর।

যখন আল্লাহ তাআলা আমাকে শাইখের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দিলেন, তখন আমি শাইখের সাথে ইরাকের নাযুক পরিস্থিতি, সমস্যা ও সমাধান নিয়ে অনেক কথা বলেছি এবং ইরাকের পরিস্থিতি সম্পর্কে যেসব কথা আমরা শুনে থাকি তার বাস্তবতা নিয়েও কথা হয়েছে। শাইখ আমাকে বলতেন, ‘খোরাসানে থেকে আমেরিকানদের উপর মাসে একটি রকেট নিক্ষেপ করাও তোমার জন্য ইরাকে যাওয়ার চেয়ে অনেক কল্যাণকর।’ খোরাসানে থেকে শাইখের এ কথার মর্ম আমার বুঝে আসেনি। যখন আমার দাওলাতুল ইরাকে যাওয়ার সুযোগ হল, তখন দেখলাম সেখানে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে যা যুবককে বৃদ্ধ বানিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। এর মধ্য থেকে একটি হল, কতলুল মাসলাহ! আবার তাদেরকে বলতে শুনেছি যে, আমরা আমাদের মুসলিম ভাইদেরকে আমেরিকানদের চেয়ে বেশি ভয় করছি! আর তাদেরকে বিভিন্ন মুজাহিদ গ্রুপের উপর অভিযান পরিচালনা করতে দেখেছি। বরং পরিস্থিতি এতই খারাপ আকার ধারণ করেছিল যে, দাওলাতুল ইরাকের ভাইয়েরা মুজাহিদদের স্ত্রীদেরকে ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তালাক দেওয়ার অপচেষ্টায়ও লিপ্ত হয়েছিল।

আমেরিকানদের সাথে ঘটে যাওয়া শাইখের কয়েকটি ঘটনা:

শাইখ ইংরেজী ভাল পারতেন এবং খুব স্বাচ্ছন্দের সাথে ইংরেজীতে কথা বলতে পারতেন। তিনি গাড়িতে অস্ত্র লুকিয়ে রেখে আমেরিকানদের দখলকৃত এলাকায় প্রবেশ করতেন। শাইখকে এক দিন পথিমধ্যে সেনাবাহিনী থামতে বলল। ইরাকী এক সৈনিক এগিয়ে এসে শাইখের সাথে কথা বলতে শুরু করল। সেখানে আমেরিকান সৈনিকরাও ছিল। শাইখ ইরাকী আরবীর লাহজা ভাল করে পারতেন না। শাইখ বলতেন, ইরাকের সুন্নীরা এক ধাঁচে কথা বলে আর শিয়ারা আরেক ধাঁচে কথা বলে। কথার ধরণ থেকেই শিয়া সুন্নী পৃথক করা যায়। উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে শাইখ ইরাকী সৈনিকের সাথে ইংরেজীতে কথা বলতে শুরু করলেন। শাইখকে ইংরেজীতে কথা বলতে দেখে আমেরীকান এক সৈনিক অগ্রসর হয়ে শাইখের সাথে কথা বলল। ফলে আল্লাহর ফযলে তিনি আমেরিকান সৈনিককে এ কথা বুঝাতে সক্ষম হলেন যে,তিনি একজন প্রগতিবাদী মানুষ, মুজাহিদদেরকে তিনি খুবই অপছন্দ করেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আমেরিকান সৈনিক শাইখের কথা বিশ্বাস করে তাকে ছেড়ে দিল এমনকি তারা তার গাড়িটিও তল্লাশি করল না। ইরাকী সৈনিকরা ইংরেজী বুঝে না বিধায় তারা কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে পারল না। এ ঘটনা সম্পর্কে শাইখ বলতেন, ‘আল্লাহর কসম যদি সে দিন তারা আমার গাড়ি তল্লাশি করত তাহলে তার মধ্যে এমন সব ভয়ংকর অস্ত্র পেত যার কারণে আমাকে আজীবন বন্দী করে রাখা যেত। কিন্তু আল্লাহর বি আরেকটি ঘটনা: শাইখ বলেন, আমি এক রণাঙ্গনে ছিলাম। আমি আল্লাহ তাআলা কাছে দুআ করলাম তিনি যেন আমাকে একটি নিদর্শন দেখান। একথা বলে দুআ করলাম যে, আমি যেন কোনো শহীদ ভাইয়ের রক্ত থেকে মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ পাই, আমি ব্যতীত অন্য কেউ যেন সেই সুঘ্রাণ অনুভব করতে না পারে। এরপর কোনো এক রণাঙ্গনে এক ভাই শহীদ হল। আমি তার কাছে গেলাম। তার রক্ত থেকে আমি মিশক আম্বরের সুঘ্রাণ অনুভব করতে লাগলাম। আমি আশেপাশের যুবকদেরকে বললা, তোমরা কি মেশকের সুঘ্রাণ পাচ্ছ? তারা বলল, না হে শাইখ কোনো ঘ্রাণই এখান থেকে আসছে না। আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি এই ভাই থেকে মেশকের সুঘ্রাণ পাচ্ছি। কোনো এক ভাই বলল, হয়তো তার সাথে কোনো আতর বা সেন্টের বোতল থাকতে পারে। আমি বললাম, না এটা কোনো আতর বা সেন্টের ঘ্রাণ না। এটা একদম খাঁটি মেশকের ঘ্রাণ। তখন অন্যান্য ভাইয়েরা বলল, কিন্তু শাইখ! আমরা কোনো ঘ্রাণই পাচ্ছি না। আমি এই ঘটনা প্রতক্ষ্য করার পর আল্লাহ হামদ আদায় করলাম। কেননা তিনি আমার মত নাদানকে এতবড় কারামাত দেখার সৌভাগ্য দান করেছেন।

আরেকটি ঘটনা:

শাইখ বলেন, আমরা এক এলাকায় অবস্থান করছিলাম। ইতিমধ্যে ঐ এলাকার এক গ্রামে আমেরিকান ফৌজ প্রবেশ করল। অত:পর তারা সুন্নীদের বাড়িগুলো টর্গেট করে তাতে প্রবেশ করতে লাগল। আমাদের অবস্থানস্থলের খুব কাছের এক বাড়িতে এক বৃদ্ধা এবং তার যুবতী মেয়ে থাকত। আমেরিকানরা ঐ বাড়িতে প্রবেশ করলে সেখান থেকে মহিলাদের আর্তচিৎকার ভেসে আসতে লাগল। তখন আমি ভাইদেরকে বললাম, আমাদের বসে থাকা ঠিক হবে না। আমেরিকান এই কুকুরদের মোকাবেলা করা উচিত। হয়তো আমরা তাদের অনিষ্ট থেকে মুসলিমদেরকে বাঁচাতে সক্ষম হব!। আমরা আমেরিকানদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ার জন্য বের হয়ে পড়লাম। কিন্তু যে বাড়িতে আমেরিকানরা প্রবেশ করেছিল তার বাস্তব অবস্থা সম্পর্কে আমরা অজ্ঞ ছিলাম। যাই হোক, একপর্যায়ে আমেরিকানরা আমাদেরকে দেখে ফেলল। গুলি পাল্টা গুলি শুরু হয়ে গেল। সংঘর্ষ কঠিনরূপ ধারণ করল। একপর্যায়ে আমেরিকানরা ময়দান ছেড়ে পলায়ন করল। আমরা উক্ত বাড়িতে প্রবেশ করলাম। দেখলাম যে, বৃদ্ধা মহিলা ক্রন্দন করছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে মা! কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, বেটা এ অশ্রু দু:খের নয়; আনন্দের। আমেরিকান কুকুরগুলো আমার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে ছিল। যখন তোমরা প্রথম গুলিটি ছুড়লে তখনই তারা পালিয়ে জীবন বাঁচানো শুরু করলো। আল্লাহর মেহেরবানীতে এবং তোমাদের প্রচেষ্টার ফলে তারা আমার মেয়ের পবিত্রতা নষ্ট করতে পারে নি। আমাদের মর্যাদায় কালিমা লেপন করতে পারেনি।

শাইখ যখন ওয়াজিরিস্তান পৌঁছলেন এবং শাইখ আবু ইয়াহইয়া আললীবী রহ. এর সাথে সাক্ষাৎ হল। তখন শাইখ আবু ইয়াহইয়া তাকে ঐসকল বন্দীদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলেন যাদেরকে ইরাকের ভাইয়েরা পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। তখন শাইখ এর বৈধতা সাবেত করার জন্য বলেন, অন্যায়ের বদলা তার অনুরূপ অন্যায়। তারা আমাদের ভাইদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল ফলে এর প্রতিশোধ হিসাবে আমরাও তাদেরকে পুড়িয়ে হত্যা করেছি।
শাইখ বলেন, ইরাকের ভাইয়েরা এক যাদুকরকে বন্দী করল। শরীয়তের বিধানে যাদু করে শাস্তি হল মৃত্যুদণ্ড। যাদু করের উপর শরয়ী হদ কায়েম করণার্থে হত্যার ফায়সালা হল। দণ্ড বাস্তবায়নের আগে ভাইয়েরা তাকে আল্লাহকে ভয় করার এবং তাওবা করার জন্য উপদেশ দিতে লাগল। কিন্তু আল্লাহর শ্ত্রু এ যাদুকর ভাইদের কোনো উপদেশই গ্রহণ করল না। সে কেমন যেন অনুভ‚তিশূণ্য ছিল। এমনটি যখন হদ কায়েমের জন্য এক ভাই তার উপর ছুরি চালাতে শুরু করল, তখন সে মুচকি হাসতে শুরু করল। আসলে এটা ছিল শয়তানের কারসাজি। সে রুহ বের হওয়ার সময়ও মানুষকে ধোঁকায় ফেলতে চেয়েছিল।

ইরাকের আরেকটি ঘটনা হল,

একদিন দাওলাতুল ইরাকের পাঁচজন ভাই আমরা এক সাথে ছিলাম। ঐ পাঁচজনের প্রত্যেকেই দাওলাতুল ইরাকের একেকজন মন্ত্রী ছিল। একজন শীল্পমন্ত্রী,একজন অর্থমন্ত্রী, একজন বিদ্যুৎমন্ত্রী ইত্যাদি কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, আমাদের এই মন্ত্রীদের ঘুমানোর মত কোনো ঘর ছিল না।

আরেকদিন আমরা মন্ত্রীরা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম আর আসমানের দিকে দেখছিলাম। আমরা দেখলাম যে, আমাদের মধ্যে একজন দাওলাতুল ইরাকের অমুক মন্ত্রী, আরেকজন তমুক মন্ত্রী, একজন প্রধান বিচারক কিন্তু হাস্যকর বিষয় হল, আমাদেরকে এক রাত বাগানে ঘুমাতে হত আরেক রাত ফসলের ক্ষেতে ঘুমাতে হত। ঘুমানোর জন্যও আমাদের কোনো ঘর ছিল না।

আমরা কখনো কখনো মাগরিবের পর কোনো বাড়িতে গিয়ে ২-৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে বেড়িয়ে পড়তাম। একদিন এক বাড়ির ছাদে আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ আমেরিকান ফৌজ ঐ বাড়িতে প্রবেশ করল। তারা চতুর্দিক থেকে বাড়ি ঘেরাও করল। তাদের সাথে নাইট ভিশন গ্লাস ছিল। যা দ্বারা দিনের আলোর মতই সব কিছু পরিষ্কার দেখা যায়। আমরা কোনো রকম কোনো কিছু দিয়ে আসলিহা ঢেকে রাখার চেষ্টা করলাম। তারা আসলিহা দেখলা না। আমাদেরকেও দেখতে পেল না। এই যাত্রাও আমরা আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেলাম।অশেষ মেহের বানীতে সেদিন মুক্তি পেয়ে গেলাম।’

ইরাকের পরিস্থিতি ধারাবাহিক খারাপের দিকে গড়াতে লাগল। একদিন আমেরিকান বাহিনী ঐ বাড়িতে হানা দিল যেখানে শাইখ আবু মুসআব যারকাবী রহ. এর যাতায়াত ছিল। (মূলত বাড়িটি শাইখের চাচার ছিল)। আমেরিকানরা শাইখের চাচাকে অনুসন্ধান করতে লাগল। এক পর্যায়ে তাকে পেয়ে গেল এবং তাকে গ্রেফতার করল। সাথে ঐ বাড়ির এক মহিলাকেও গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে লাগল। কিন্তু কিছু দূর গিয়ে মহিলাকে ছেড়ে দিল। আর শাইখের চাচাকে বিমানে করে নিয়ে যেতে লাগল। বিমান যখন উপড়ে উঠল, তখন উপর থেকে তার বাড়িতে কয়েকটি সাউণ্ড বোমা নিক্ষেপ করল। আর আমেরিকানরা তাকে বলল, তোমার ঘর-বাড়ি পরিবার পরিজন সবই ধ্বংস করে দেয়া হল। অতএব, পরিবারের কাছে ফিরে আসার আশা অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেল।
শাইখ আবু মুসআব বলেন, আমার চাচা জেল খানায় আবদ্ধ জীবন যাপন করতে লাগলেন। নতুন মজমূআর এক সাথী আমার চাচার সাথে সাক্ষাৎ করল। তিনি সাথীকে সবার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তখন সাথী তাকে জানালেন যে, চাচার পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-সন্তান সবাই ভাল আছে। এ কথা শুনে চাচা বললেন, আমাকে মিথ্যা সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করছ কেন? আমার সামনে আমেরিকানরা আমার বাড়িতে বোমা ফেলেছে। আমার পরিবার-পরিজন তো আমার গ্রেফতারীর দিনই শহীদ হয়ে গেছে। উক্ত সাথী কোনো ক্রমেই চাচাকে এ কথা বিশ্বাস করাতে পারল না যে, তার পরিবার বেঁচে আছে। একপর্যায়ে যখন তাদের রেকর্ডকৃত কথা তার কাছে পেশ করা হল এবং রেকর্ডে তারা জানাল যে, তারা ভাল আছে তখন তিনি তার পরিবার-পরিজন বেঁচে থাকার কথা বিশ্বাস করলেন। আল্লাহ তাআলা সব কিছুই করতে পারেন।

জিহাদের জীবন কষ্ট আর পরীক্ষার এক জীবন। কিন্তু তুমি এই কষ্ট আর পরীক্ষার মধ্যে ইবাদাত এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য অর্জনের এমন এক মিষ্টতা অনুভব করবে যা তুমি অন্য কিছুর মধ্যে পাবে না।
শাইখের ইরাক থেকে বের হওয়ার ঘটনা: একবার শাইখকে গ্রেফতার করা হল। গ্রেফতারীর পর শাইখ নিজেকে পরিপূর্ণরূপে আল্লাহ কাছে সঁপে দিলেন। এ দিকে একভাই শাইখের সাথে দেখা করতে আসতো। সেই ভাই শাইখের মুক্তির ব্যাপারে ফিকির করল এবং কোনো এক পন্থায় শাইখকে জেল থেকে বের করে খুরাসানে পৌঁছার ব্যবস্থা করল।

শাইখ যখন ওয়াজিরিস্তান পৌঁছলেন তখন সেখানে শাইখ আবু ইয়াহইয়া আললীবী রহ.ও উপস্থিত ছিলেন। লীবী রহ. আবু সুলাইমান রহ. কে উদ্দেশ্য করে বলতেন, ‘আল্লাহ কসম এই শায়েখ আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় আমি ফতওয়া দিতে পারি না।’ তিনি আরো বলতেন, ‘এই ভাই ইলমের সমূদ্র, তিনি আমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় আমার পক্ষে ফতওয়া দেয়া সম্ভব নয়।’

আমার নিজের দেখা একটি ঘটনা বলছি: শাইখের একটি ল্যাপটপ ছিল। একদিন ল্যাপটপের ব্যাগটি খোলা হলে তাতে এমন অনেকগুলো চিঠি পাওয়া গেল যেগুলো শাইখ আবু ইয়াহইয়া আললীবী রহ. শাইখের কাছে বিভিন্ন সমস্যার শরয়ী সমাধান জানতে চেয়ে পাঠিয়ে ছিলেন। ঐ চিঠির সংখ্যা প্রচুর ছিল। এর দ্বারাও শাইখের ইলমী মাকাম কত উর্দ্ধে তা বুঝে নেয়া যেতে পারে।

শাইখ যুবকদেরকে পছন্দ করতেন। যুবকদের সাথে থাকতে ভালবাসতেন। তাকে অধিকাংশ সময় রণাঙ্গনের ভাইদের সাথে দেখা যেত। কিন্তু মুরুব্বীগণ বলতেন, আপনাকে আমরা শরয়ী বোর্ডে দেখতে চাই। শাইখের অন্তরে রণাঙ্গনে যাওয়ার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহ ছিল। কিন্তু শরয়ী বোর্ডের ভাইয়েরা তাকে দরস প্রদানে এক রকম বাধ্য করতো বলা চলে। তিনি বলতেন, এসব যুবকগণ আত্মোৎসর্গের শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করেছে। এদের উসীলায় সব ধরণের নেয়ামতের আশা করা যেতে পারে।

তিনি পবিত্র অন্তরের অধিকারী ছিলেন। অনেক অভাবে থাকা সত্তে¡ও কারো কাছে কিছু চাইতেন না। অনেক সময় এত সংকটাপন্ন অবস্থায় পড়েছেন যে, অতি প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয়ের মত সামান্য টাকাও তার কাছে থাকত না। এক দিনের ঘটনা এখনও আমার মনে পড়ে। শাইখের সাথে আমি এক জায়গায় যাচ্ছিলাম। পথি মধ্যে তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। তখন আমি লক্ষ্য করলাম শাইখের পায়ে জুতা নেই। মূলত তিনি জুতা ক্রয়ের জন্যই নেমে ছিলেন। কিন্তু তার কাছে জুতা ক্রয়ের মত টাকা ছিল না। তিনি এক ভাইয়ের কাছ থেকে কিছু ঋণ নিয়ে প্রয়োজন পুরা করলেন।

এত অভাব সত্ত্বেও তিনি ছিলেন প্রফুল্ল ও প্রশান্ত হৃদয়ের অধিকারী। অন্যান্য মুজাহিদ ভাইদের সাথে অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী আচরণ করতেন। ছোট-বড় সবার সাথে প্রফুল্ল চিত্তে হাঁসতেন। আনসারী ভাইদের অনেক বেশি মুহাব্বাত করতেন। তাদের মুহব্বত লাভের চেষ্টা করতেন। আনসারগণও তাকে ভালবাসত। এক বয়স্ক আনসার ছিল। যখন তার কাছে শাইখের শাহাদাতের সংবাদ আসল তখন তিনি এত পরিমাণ কাঁদলে যে, তার দাড়িগুলো ভিজে গেল। আর কাঁদবেইবা না কেন, তিনি তো আনসারদের জন্য এমন শিক্ষক ছিলেন, যিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদেরকে কুরআন-সুন্নাহ শিক্ষা দিতেন।

শাইখ একদিন আমাকে বলেছেন। তিনি শাইখ আবুল লাইস লীবী রহ. এর শাহাদাতের পর একটি স্বপ্ন দেখলেন। শাইখ বলেন স্বপ্নটি ছিল এমন: একবার আমি শাইখ আবু ইয়াহইয়া আললীবী রহ. এর সাথে এক কামরায় বসা ছিলাম। আমার সাথে ল্যাপ্টপ ছিল। আমি ল্যাপ্টপ খুললাম। আমরা একটি কিতাবের ব্যাপারে আলোচনা করতে ছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ দরজা খুলে গেল এবং শাইখ আবুল লাইস আললীবী রহ. প্রবেশ করলেন। আমি শাইখকে দেখে প্রথমে থমকে গেলাম। এরপর কাছে গেলাম এবং তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমি কাঁদলাম এবং শাইখ আবুল লাইসও কাঁদলেন। স্বপ্ন এতটুকুই। ঘুম থেকে জাগার পর আমি বুঝতে পারলাম যে, আমার মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু আমি জানি না সেটা কখন ঘটবে।

শাইখ যখন এই স্বপ্নের কথা আবু ইয়াহইয়া আললীবী রহ. কে জানালেন, তখন তিনি বললেন, আমি দুআ করি আল্লাহ তাআলা যেন আপনার হায়াত দীর্ঘ করে দেন এবং আপনার ইলম দ্বারা যেন উম্মত বেশি বেশি উপকৃত হতে পারে। শাইখ আবু ইয়াহইয়া এবং শাইখ আবুল লাইস আললীবী উভয়-ই শাইখ আবু সুলাইমানকে অত্যন্ত ভালবাসতেন।

শাইখ আমেরিকানদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং অনুসন্ধানে যেতে খুব পছন্দ করতেন। অন্যান্য ভাইদেরকেও তিনি এ কাজে যাওয়ার জন্য খুব তাকিদ করতেন। শহীদ হওয়ার পূর্বে শাইখ ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছিলেন। আর ম্যালেরিয়া প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছিল। কিন্তু ঐ সময়ও যখন কিছু ভাই আমেরিকান ফৌজের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বের হচ্ছিল, তখন তিনিও ভাইদের সাথে যাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। ভাইয়েরা বলল, হযরত! আপনি অত্যন্ত অসুস্থ। আপার শরীরে আমাদের সাথে চলার মত সামান্য শক্তিও বাকি নেই। এ কথা বলায় তিনি নিবৃত হলেন। কিন্তু তার চোখের ভাষা বলছিল, ‘আল্লাহর পথে জিহাদে একটি সকল অথবা একটি বিকাল দুনিয়া ও দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম’ এই ফযীলত থেকে আমি মাহরুম হচ্ছি, আর তোমরা এই ফযীলত নিয়ে নিচ্ছ। অত:পর তিনি নিজেকে এ কথা বলে প্রবোধ দিলেন, হায়! হয়তো আমি কোনো গুনাহ করেছি যার কারণে আল্লাহ তাআলা আমাকে মাহরুম করছেন।

তিনি অত্যন্ত সাহসী ছিলেন। সীমান্ত প্রহরী এবং শত্রুদের উপর আক্রমণে অগ্রগামী ভাইদের সাথে তাদের মারকাজে থাকতে পছন্দ করতেন। এসব জায়গা ছাড়া অন্য জায়গায় অবস্থান করতে অসহ্য বোধ করতেন। ভাইদেরকে বলতেন, আমি সীমান্ত প্রহরী ভাইদের কাছে যেতে চাই। আমি ঐ জায়গা ছাড়া অন্য জায়গায় থাকতে শান্তি পাই না।

কবি বলেন,

অন্তরের কি হল যে, সে জিহাদ থেকে বিমুখ হয়?
জিহাদ সম্পর্কে কি কুরআনের মাহা বানী অবর্তীণ হয় নি?
সাহাবী প্রজন্ম থেকে নিয়ে অন্যান্য প্রজন্ম কি জিহাদ দ্বারাই
উন্নতি লাভ করে নি? তারাই তো ছিল উত্তম প্রজন্ম।
জিহাদের মাধ্যমেই তো আমাদের রবের সাথে লাভবান ব্যবসা করা যায়,
দয়াময় প্রভূ জিহাদের ক্ষেত্রে এমন ওয়াদা করেছেন যার ব্যতিক্রম কখনো হওয়ার নয়।

শাইখ মুরুব্বীদেরকে বলতেন, সীমান্ত এলাকায় দাওরাতুশ শরইয়্যাহর ব্যবস্থা করা হোক। তিনি সেখানেই দাওরা করাবেন। শাইখ অস্ত্রের মধ্যে ক্লাশিনকোভ খুব পছন্দ করতেন। ইরাকের ময়দানে থাকাবস্থায়ও ক্লাশিনকোভই ছিল তার প্রিয় অস্ত্র। একদিন তিনি ভাইদের সাথে শত্রুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য যাচ্ছিলেন। তখন অনেক সরঞ্জাম বহন করেছিলেন এবং প্রায় তিন শত রাউণ্ড গুলি সাথে নিয়ে ছিলেন।

শাইখের শাহাদাতের পূর্বের রাতের ঘটনা।

আমরা আফগানিস্তান এবং ওয়াজিরিস্তান এর মাঝামাঝি এক এলাকায় ছিলাম। পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত গৃহিত ছিল যে, ফজরের পর শাইখ অন্যান্য ভাইদের সাথে শত্রুদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং তাদের পথে ভূমি মাইন বিছানোর জন্য যাবেন। ঐ রাতের মত এত বেশি আনন্দিত শাইখকে অন্য কোনো দিন আমি দেখি নই। শাইখ খুব আনন্দ ফুর্তি করতে ছিলেন। আমরাও শাইখের সাথে হাসি,তামাশ ও রসিকতা করতে ছিলাম। কোন সময় যে, রাত গভীর হয়ে গেল ১১.৩০ বেজে গেল বুঝতেই পারলাম না। সকালে ফজরের পরপরই রওনা করতে হবে বিধায় আগে আগে ঘুমিয়ে পড়ার তাড়া ছিল। অথচ এখন রাতের আর মাত্র কয়েক ঘণ্টাই বাকি আছে। আর ঐ সময় শায়েখ বলতে ছিলেন, আস ভাই আজকের রাত গল্পের মধ্যেই পাড় করে দেই। হতে পারে আগামি কাল আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কবুল করে ফেলবেন। সেক্ষেত্রে জান্নাত ছাড়া আর কোথাও কখনো দেখা হবে না, গল্প করার সুযোগও হবে না।

কবি বলেন,

তোমার রবের শপথ এত এক ভিন্ন জগতের অজানা স্বাদ,
বরং এত হল শাহাদাত যার পরেই অপেক্ষা করছে ফুলের মাল্য।
মুজাহিদের জীবনের চেয়ে সার্থক কোনো জীবন আমি দেখিনি,
সে তার হায়াতকে আল্লাহর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে, তার কাছে অতিরিক্ত কিছু নেই।
তার নামায রোযা অন্যদের নামায রোযার মত নয়,
আর তার অন্তর হল ফানুস তুল্য।

যাই হোক রাত শেষ হয়ে গেল। সফরের সময় ঘনিয়ে আসল। ফজরের আযান হল। নামায আদায় করা হল। শাইখ খুব দ্রুত নামায পড়লিছেন। আসলে শাহাদাতের সময় যখন ঘনিয়ে আসে তখন আগ্রহী অন্তর সেদিকে খুব দ্রুত ছুটে যেতে চায়। পরম প্রিয় প্রভুর সান্নিধ্যের জন্য খাচায় বন্দী পাখির মত ছটফট করতে থাকে।
আমরা নামায শেষ করে দেখি শাইখ প্রফুল্ল চিত্তে তাড়াহুড়া করে গাড়িতে উঠছেন। অন্য ভাইয়েরাও গাড়িতে উঠে পড়ল। শাইখ গাড়ি চালক আবু দুজানা কহতানী রহ. কে দ্রুত গাড়ি স্টাট করতে তাগিদ দিচ্ছেন। শাইখের তাড়াহুড়ার কারণে অনেক ভাই শাইখকে শেষ বারের মত সালাম দেওয়ার সুযোগও পেলনা। এ সফর চারজনের জন্য নির্ধারিত ছিল। শাইখ আবু সুলাইমন, ভাই আবু দুজানা কহতানী (এরা দুজন ঘটনা স্থলে শহীদ হয়েছিলেন), ভাই হায়দার এবং শাইখ আলী জানের পুত্র আবু হুরাইরা। (এরা দু‘জন পরবর্তীতে শহীদ হয়েছেন।)
চার জন গাড়িতে চেপে রওনা করলেন। কথা ছিল নির্দিষ্ট এক স্থানে পৌঁছে এক আনসারী ভাইকে সঙ্গে নেয়া হবে যিনি এই কাফেলাকে রাহবারী করবেন। আনসারী ভাইয়ের কাছে যাওয়ার পর সে বলল, দশটা পর্যন্ত আমার জন্য অপেক্ষা কর, ১০টার পর আমি তোমাদের সাথে যেতে পারবো। ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষার পালা অনেক দীর্ঘ হয়ে যায়। তাই ভায়েরা আপসে মরামর্শ ক্রমে, আল্লাহর উপর ভরসা করে নিজেরাই পথ চিনে নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছার সিদ্ধান্ত নিয়ে বের হয়ে পড়ল।

উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী রাস্তা বেয়ে গাড়ি এগিয়ে চলল। একপর্যায়ে গাড়ি যখন আফগান সীমান্তে প্রবেশ করল, তখন আমেরিকান ফৌজ তাদেরকে দেখে ফেলল। তারা পাহাড়ের চূড়ায় তাদের জন্য ওঁৎপেতে রইল। এক ভাই বলেছেন, আমরা কানাঘুষার কিছু আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম। কিন্তু ভাবতে ছিলাম এটা হয়তো মেষ রাখালদের কথার আওয়াজ। আমরা একটা গাছ দেখতে পেলাম। সফরে ক্লান্তি-অবসাদ দূর করার জন্য গাছের নিচে বসলাম। এক মিনিট কিংবা আধা মিনিটও পাড় হয়নি এর মধ্যই আমাদের উপর বৃষ্টি মত গুলি বর্ষণ শুরু হল। ভাই আবু হুরাইরা বলেন, আমি যখন শাইখের দিকে তাকালাম দেশি শাইখের মাথা থেকে রক্ত ঝরছে। তিনি রক্ত মুছতে মুছতে বললেন, ‘আল-হামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার’।

ভাই আবু হুরাইরা বর্ণনা করেন: হামলার সাথে সাথে আমরা ছড়িয়ে পড়লাম। আমরাও পাল্টা হামলা শুরু করলাম। আমি ও ভাই হায়দার ওয়াজিরিস্তানের পথে সরে পড়লাম। আর শাইখ ও আবু দুজানা ভুল করে আফগানিস্তানের দিকে ঢুকে পড়লেন। ভাই হায়দার এক পাহাড় চূড়ায় উঠতে ছিলেন, আমিও তার পিছে অর্ধেক পথ উঠামাত্র হঠাৎ ভাই হায়দারের পা পিছলে গেল। সে পড়ে গেল। আমি ভাবলাম ভাই হয়তো শহীদ হয়ে গেছে। কিন্তু না, তিনি আবার উঠলেন। আমরা উভয়ে পাহাড় ডিঙ্গিয়ে গাছের আড়ালে আত্মগোপন করলাম। শাইখ ও ভাই আবু দুজানা যে দিকে গিয়েছিলেন সে দিক থেকে অব্যহতভাবে গুলি-পাল্টাগুলির আওয়াজ ভেসে আসতে লাগল। তিন ঘণ্টা পর্যন্ত ওখানে সংঘর্ষের আওয়াজ শুনতে পেলাম। যখন রাত নেমে আসল, চারিদিক ঘন অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে গেল তখন আমরা মারকাজের মুজাহিদ ভাইদের কাছে ফিরে আসলাম।

ভাই আবু দুজানা আমাদের কাছে ফিরে আসলে আমরা তাকে সাদরে গ্রহণ করলাম। তার কাছ থেকে বিস্তারিত ঘটনা শোনার পর তৎক্ষণাত এক আনসারী ভাইকে নিয়ে সীমান্তের পথে রওনা হলাম। সামান্তে পৌঁছে সিদ্ধান্ত হল, আমি একা ভিতরে প্রবেশ করে শাইখ এবং আবু দুজানার দেহ সড়িয়ে আনার চেষ্টা করব যেন তাদেরকে ওয়াজিরিস্তানে দফন করা যায়। কিন্তু যখন আমরা সীমান্তের ভিতর প্রবেশ করলাম তখন প্রচুর পরিমাণ গোলা বর্ষণ শুরু হল। শত্রু বাহিনীর কাছে নাইটভিশন দূরবীন ছিল। যা দিয়ে দিনের আলোর মত সব কিছু পরিষ্কার দেখা যায়। পাহাড় ও উপত্যকার কোনো কিছুই গোপন থাকে না। হয়তো তারা আমাদের দেখেই গুলি বর্ষণ শুরু করেছিল। প্রচণ্ড গুলি বষর্ণের কারণে আমরা শহীদ ভাইদের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হলাম না।

আমরা কিছু মেষ রাখলদের দিয়ে শহীদ ভাইদের দেহ অন্বেষণের চেষ্টা করলাম কিন্তু তাতেও সফল হলাম না। অত:পর আমরা এমন কিছু আনসারী ভাইদের মাধ্যমে ভিতরে প্রবেশে সফল হলাম যারা আমেরিকান সামরিক ঘাটির ভিতর থেকে আমাদের জন্য সংবাদ সংগ্রহ করত। তারা আমাদের বলল, আমরা শাইখ এবং ভাই আবু দুজানার অস্ত্র পড়ে থাকতে দেখেছি। তখন আমরা নিশ্চিত হলাম, হয়তো তারা বন্দী হয়েছে কিংবা শহীদ হয়েছে।
সূর্যাস্তের পর আমরা আরেকবার শহীদ ভাইদের কাছে পৌঁছার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর আরেক আনসারী ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ হল, সে বলল, এখান থেকে একশত মিটার দূরেই শহীদ ভাইদের দেহ রয়েছে। আমরা দ্রুত শহীদ ভাইদের কাছে পৌঁছার ইচ্ছা করলাম। কিন্তু আমেরিকান ফৌজ এবং আফগানের মুরতাদ বাহিনী পাহাড়ের চূড়ার ঘাটিতে বসে ছিল। তাই আমরা অগ্রসর হতে পারছিলাম না। অগত্যা অর্ধ রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। তারপর আল্লাহর উপর ভরসা করে অগ্রসর হলাম। প্রথমে ভাই আবু দুজানার দেহ পেলাম এরপর শাইখ রহ. এর দেহ পেলাম। দুই জনের দেহের অবস্থান থেকে বুঝতে পাড়লাম, ভাই আবু দুজানা রহ. পাহাড়ের ঢালে নামার পর শাইখ তার সাথে মিলিত হন। এরপর ওখানে ভাই আবু দুজানা শাহাদাত বরণ করেন। আর শাইখ আহত অবস্থায় ওখান থেকে প্রায় একশত মিটার দূরে একটা খন্দকে আশ্রয় নেন। আর সেখানে বসে পাল্টা আক্রমণ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে অত্যাধিক রক্ত ক্ষরণের কারণে শাহাদাতের অমীয় সুধাপানে ধন্য হন।

আমরা শহীদ ভাইদের দেহ ওখান থেকে সড়িয়ে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু পারা গেল না। শত্রুর আমাদের অবস্থান জেনে ফেলল এবং গুলি বর্ষণ শুরু করল। তাই আমারা সিদ্ধান্ত নিলাম যে, ভাইদেরকে তাদের শাহাদাতগাহতেই দাফন করে যাব। ভাই আবু দুজানার দেহের পাশেই তার জন্য কবর খনন করলাম। ভাই আবু দুজানার সাথে যেসব সরঞ্জাম ছিল তা যেমনটা তেমনই তার সাথে ছিল। শত্রুর কোনো কিছু ধরেনি। হয়তো তারা কোনো বিষ্ফোরণের ভয়ে এসবে হাত দেয়নি।

ভাই আবু দুজানা রহ. কে দাফন করার পর পরই শত্রুর গোলা নিক্ষেপ চরম আকার ধারণ করল। ফলে আরমা শাইখের দাফন কার্য অসমাপ্ত রেখেই মারকাজে ফিরে আসলাম। সকালে পুরনায় যাওয়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু তখন শত্রু আমাদের জন্য খুব আঁটগাঁট বেঁধে ওঁৎপেতে ছিল। ফলে আমরা জায়গামত পৌঁছতে পারলাম না। সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষা করার পর রাতের অন্ধকারে শাইখের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হলাম। শাইখকে সেই খন্দকের মধ্যেই পেলাম। শাহাদাতের তিন দিন পরও শাইখের শরীরে সামান্যতম পরিবর্তন আসেনি। মনে হচ্ছিল যেন, মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে শাইখ শহীদ হয়েছেন। শাইখের কাছে আল কুরআনের একটি কপি ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। আমরা শাইখকে তার শাহাদাতগাহতেই দাফন করলাম। ওদিকে শত্রু বাহিনী পুনরায় একের পর এক গোলা বর্ষণ শুরু করল। কিন্তু এবার আমরা শাইখের দাফন কর্ম সমাপ্ত করতে সক্ষম হলাম। শাইখের শাহাদাতে আনসারী ভাইয়েরা আমাদের তুলনায় বেশি দু:খিত হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা শাইখকে শহীদ হিসাবে কবুল করে নিন।

শাইখ আবু ইয়াহইয়া আললীবী রহ. এর কাছে যখন শাইখের শাহাদাতের সংবাদ পৌঁছল, তখন তিনি এই পরিমাণ বিচলিত হলেন যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিলেন না। কখনো দাঁড়াচ্ছিলেন, কখনো বসছিলেন, কখনো হাঁটছিলেন। মোট কথা তিনি খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলেন এবং অস্থির হয়ে গিয়েছিলেন। আর বলতে ছিলেন, ‘অনেক সময় সংবাদ সঠিক হয় না, এটাও হয়তো এমনই কোনো সংবাদ।’ আরো বলেছিলেন, হায় আল্লাহ! আমরা এত বড় আলেমকে কিভাবে হারাতে পারি!! আমরা এই শাইখকে কিভাবে খোয়াতে পারি!! ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিয়ূন।

আমরা শাইখ আবু ইয়াহইয়া লীবী রহ. কে ইতিপূর্বে আর কখনো এত বিচলিত হতে দেখিনি। কত ভাইয়ের শাহাদাতের সংবাদ শাইখের কাছে পৌঁছেছে, কিন্তু শাইখ আবু সুলাইমানের শাহাদাতের সংবাদে তিনি যতটা ব্যথিত হয়েছেন, দু:খিত হয়েছেন অন্য কারো বেলায় এতটা হননি।

আল্লাহ তাআলা ইলমের দিক দিয়ে পাহাড়তুল্য এই দুই শাইখের উপর রহমত নাযিল করুন। এবং আমাদের সমস্ত নেতৃবর্গ ও উলামাদের উপরও রহমত বর্ষণ করুন।

লেখার এই শেষ প্রান্তে এসে আল-কায়দার উলামা ও মাশায়েখদের ব্যাপারে একটি সত্য কথা না বলে পারছি না- ‘ হে শাইখগণ! আপনারা আপনাদের পরবর্তীদেরকে আপনাদের মত মর্যাদা অর্জনে অক্ষম করে দিয়েছেন’। হে আল্লাহ আমাদেরকে এবং আমাদের সমস্ত শাইখদেরকে মাফ করে দাও। জান্নাতুল ফেরদাউসের উঁচু মাকামে তাদের সাথে আমাদেরকে একত্রিত করে দিও। আমীন।

মূল আরবী প্রবন্ধটি লিখেছেন ভাই মুতাযবিল্লাহ খোরাসানী।
বাংলায় অনুবাদ করেছেন ভাই আব্দুল্লাহ হিন্দুস্তানী।

ডাউনলোড

http://www.pdf-archive.com/2016/04/10/shahadater-golpo1/

http://document.li/IA4X


অনলাইনে পড়ার লিংক-
https://justpaste.it/t560

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

sixteen − 6 =

Back to top button