নির্বাচিতবাংলাদেশসংবাদসম্পাদকীয়

কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য কমানো নিয়ে কিছু কথা!

About the author

About the author

খালিদ মুন্তাসির, লেখক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক।

 

২০শে আগস্ট সোমবারে ‘বিবিসি বাংলা’ সংবাদমাধ্যমে ‘কোরবানির ঈদ: বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসাগুলো বলছে, চামড়ার দাম কমলে তাদের আয় কমে যাবে’ এই শিরোনামে প্রকাশিত একটি নিউজ রিপোর্ট অনুযায়ী, ‘‘চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ পশুর চামড়ার মূল্য কমে যাওয়ার ব্যাপারে বলেন- পশুর চামড়ার দাম কমানোর মূল উদ্দেশ্য আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা নিশ্চিত করা। মি.আহমেদ বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়া শিল্প পড়তির দিকে। তাই স্থানীয় বাজারে যদি বেশী দামে আমরা চামড়া কিনি তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম বেশী হবে এবং বিক্রি কমে যাবে।” চামড়া-জাত পণ্যের রপ্তানি দিনদিন কমে যাওয়ায় পশুর চামড়ার দাম কমানোর সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্য শিল্পের উন্নয়নের কথা মাথায় রেখেই নেয়া হয়েছে বলে মনে করেন মি. আহমেদ।’’ [সূত্র:বিবিসি বাংলা]

উপরোক্ত কথা অনুযায়ী বুঝা যায়, বর্তমানে চামড়াজাত পণ্যের ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিয়েছে! আর, সে কারণেই বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে বাংলাদেশে চামড়ার মূল্য কমানো হয়েছে। ২০১৩ সালে যেখানে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিল ৯০ টাকা পর্যন্ত, সেখানে ২০১৮ সালে এসে তা হয়েছে ৫০টাকা! বিবিসি বাংলা’র বরাতে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছরই বাংলাদেশে চামড়ার সরকার নির্ধারিত মূল্য কমানো হয়েছে। অতএব, চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদের বক্তব্য বিবেচনায় বলা যেতে পারে যে, ২০১৪ সাল থেকেই বৈশ্বিক বাজারে চামড়া দ্রব্যের মন্দাভাব সৃষ্টি হওয়ায় সরকার চামড়ার মূল্য ক্রমশ কমিয়ে চলেছে। অথচ, বাস্তবতা হলো এই বক্তব্যের বিপরীত! ২০১৬ সালের ০৯ই জুলাই ‘পুঁজিবাজার’ নামক একটি ব্যবসা বিষয়ক সংবাদমাধ্যমে ‘চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি পোশাকশিল্পকেও ছাড়াবে’ এই শিরোনামে প্রকাশিত রিপোর্টটির ভাষ্য অনুযায়ী, রাজধানীর ঢাকা চেম্বার মিলনায়তনে  বৃহস্পতিবার(৯ই জুলাই, ২০১৬) ‘সরকার ও নিয়ন্ত্রকদের নীতিনির্ধারণে সহায়তার ক্ষেত্রে অ্যাক্রিডিটেশন একটি বৈশ্বিক হাতিয়ার’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলে, ‘দেশের চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি তৈরি পোশাকশিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে।’

আমাদের সকলেরই জানা যে, বাংলাদেশের বৈদিশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো- পোশাক শিল্প। আর, ২০১৬ সালে দেশের শিল্পমন্ত্রী আশা প্রকাশ করছে যে পোশাক শিল্পকেও ছাড়িয়ে যাবে চামড়াজাত দ্রব্যের রপ্তানিমূল্য! তাহলে বুঝা-ই যায়, বিশ্ববাজারে চামড়াজাত দ্রব্যের মন্দাভাব দেখা যায়নি, বরং চক্রান্তের ভাব উদয় হয়েছে সরকারের মনে! এ কারণেই, দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলোতে অধ্যায়নরত হাজার হাজার গরীব,ইয়াতিম শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া চালানোর মাধ্যমের উপর কুঠারাঘাত করেছে! চামড়ার দাম কমিয়ে দিয়ে গরীব-মিসকিনদের হক্বকে বিনষ্ট করেছে! অথচ, দেশের বাজারগুলোতেও চামড়া দ্রব্যের মূল্য খুবই চড়া! সাধারণ জনতার কাছে বিষয়গুলো অস্পষ্ট নয়। দেশের সরকার আজ গরীব মারার ফাঁদ পেতেছে! একদিকে চামড়ার মূল্য কমিয়ে গরীবের হক্ব নষ্ট করেছে, আরেকদিকে চামড়াদ্রব্যের দাম বাড়িয়ে গরীবদের জন্য তা আকাশছোঁয়া পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে!

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × three =

Back to top button