প্রবন্ধ-নিবন্ধ

ডিবির সানি সানোয়ারের প্রগলভ বয়ানের বিশ্লেষণ!

বাংলাদেশের পুলিশরা নিয়মিত বিরতিতে জঙ্গিদের ব্যাপারে নানা ‘কথিত’ বিশ্লেষণ প্রকাশ করে। পুলিশদের কথিত বিশ্লেষণ পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে ভাবলাম জঙ্গিরাও তো পারে পুলিশদের ব্যাপারে কিছু বিশ্লেষন সময়ে সময়ে তুলে ধরতে। জঙ্গিরা অন্যান্যদের চাইতে করিৎকর্মা হয়। তাই আমিও ভাবনার সাথে সাথেই কাজে লেগে গেলাম।
রিসার্চ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের পুলিশদের সাহিত্য প্রতিভা বেশ ভালো। এটা অবশ্য তাদের ক্রসফায়ার এবং জঙ্গি আস্তানা সংক্রান্ত বিভিন্ন নাটকের


.
বুঝলাম বিশ্বখ্যাত, বিশ্বনন্দিত কিংবদন্তীর পুলিশ হিরো বাবুল আক্তারের নানা ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়তে গিয়ে। কি নেই তার লেখায়। সামাজিক-অ্যাকশান-ড্রামা-রোমান্স-পরকীয়া-হত্যা…আগামী বইমেলায় বাবুলের বই পাবার আশা রাখি। হিরো কেন কিলার – এটা এক নাম হতে পারে।

পুলিশের সাহিত্য প্রতিভার ব্যাপারে আরো বুঝলাম – ডিবির সানি সানোয়ার নামের এক লোকের লেখা পড়ে। এই লোক সম্ভবত দ্বিতীয় বাবুল হতে চায়। তো এই দ্বিতীয় বাবুল তার এক লেখায় মাও সে তুং এর উক্তি উল্লেখ করে লিখেছে –

ধর্মভিত্তিক জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউ। সমগ্র জনগণ তাদের হিংস্রতায় ভীতসন্ত্রস্ত। ফলে তাদের প্রতি নেই কারও ন্যূনতম সমর্থন। ফলে জঙ্গিরা প্রতিনিয়ত ধরা পরে যাচ্ছে। কেননা, পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি মুসলমানদের সমর্থন ছাড়া ধর্মভিত্তিক জঙ্গি সংগঠনগুলো বাঁচতে পারবে না। এবং সেটাই ঘটছে।

আর সবচেয়ে বড় কথা – কোন সমর্থন পাবার সম্ভাবনা নাই বললেই চলে। তাই তারা পানি ছাড়াই অল্প কিছুক্ষণ বেঁচে থাকার কৌশল রপ্ত করতে শিখছে মাত্র।”

স্বীকার করতেই হয় তার লেখার হাত খারাপ না। লেখার প্লট এবং ভাষায় অনন্য সাধারন ব্যবহারে আপ্লুত হয়ে পরায় কিছু এই অনুগল্প সম্পর্কে কিছু মন্তব্য না করে পারছি না।
.
সানি সানোয়ার গল্প ভালো ফেঁদেছে তবে পুলিশের চিরাচরিত বৈশিষ্ট্য মিথ্যা ছাড়তে পারেনি। সত্যের সাথে দ্বিগুন পরিমাণ মিথ্যা মিশিয়ে কাহিনী এগিয়েছে। অবশ্য পুলিশের কাছ থেকে সত্য আশা করাটাও বেমানান।
.
আসুন দেখা যাক দ্বিতীয় বাবুল সানি সানোয়ারের দাবি – (জঙ্গিদের) প্রতি নেই কারও ন্যূনতম সমর্থন – এই দাবির পক্ষে কিছু প্রমান।
.
সানির দাবি সত্য। কারন সানির বস টেকো মনিরুল অ্যামেরিকার নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে বলেছে –
বিস্ময়করভাবে জঙ্গিরা সেক্যুলারিজমকে প্রশ্নবিদ্ধ করার কাজে সফল হয়েছে। অধিকাংশ মানুষ মনে করে জঙ্গিরা ঠিক কাজই করেছে। সাধারন মানুষ মনে করে ব্লগার, সমকামী এবং এই জাতীয় অন্যান্য সেক্যুলারদের হত্যা করা ঠিকই আছে। এছাড়া তারা সেক্যুলার সরকারকে রক্ষনাত্বক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

সানির দাবি সত্য কারন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেক্যুলার চিন্তক আবদুর রশীদ বলেছে –

(জঙ্গিদের কারণে) বাংলাদেশের রাজনীতি সেক্যুলার বনাম ইসলামপন্থীতে পরিণত হয়েছে।

সানির দাবি সত্য কারন, জঙ্গিদের হাতে নিহত সমকামী জুলহাজের ২৫ জন সহকর্মী বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের অ্যাম্বেসিতে গা ঢাকা দিয়ে আছে।
.
সানির দাবি সত্য কারন, জঙ্গিদের হাতে নিহত ইসলামবিদ্বেষী ব্লগারদের অনেক দোসর প্রাণের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
.
সানির দাবি সত্য কারন এসব ঘটনা বাংলাদেশের মুসলিমদের অন্তরসমূহকে প্রশান্ত করেছে।
.
সানির দাবি সত্য কারন তার বস টেকো মনির আরো বলেছে –

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম তথা আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (এবিটি) জঙ্গিরা নিউ জেএমবির মতো উগ্রভাবে অপারেশন চালায় না। তারা ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে অপারেশন চালায়।

এ সংগঠনটি এতটাই পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিবাদ চালায় তার একটি উদাহরণ হল তারা জনমতের বাইরে যায় এমন ঝুঁকি নিয়ে অপারেশন চালায় না। তারা যাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তার বিরুদ্ধে বিশদ হোমওয়ার্ক করে।

সানির দাবি সত্য জঙ্গিদের প্রতি কারো কোন সমর্থন নাই, প্রতিনিয়ত তাদের সমর্থন কমছে। এর প্রমান হল, ক্রমাগত পুলিশ-র‍্যাবসহ, সরকারের বিভিন্ন নেতা এবং মিডিয়া বলছে উচ্চবিত্ত এবং উচ্চশিক্ষিত ঘরের তরুণেরা বর্তমানে আশঙ্কাজনকহারে জঙ্গিবাদের জড়িয়ে পড়ছে।

এবং এই হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাবেক-বর্তমান আর্মি অফিসার, তাদের সন্তান, উচ্চপদস্থ সরকারী কর্মকর্তার সন্তান, ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্টের সন্তান, সবচেয়ে ভালো পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র।

বাংলা, ইংলিশ, আরবী সব মিডিয়ার ছাত্র এখন জঙ্গিদের সাথে যোগ দিচ্ছে। এটা থেকে প্রমান হয় সানির দাবি সত্য। জঙ্গিদের প্রতি কোন সমর্থন নাই। ঠিক যেমন ক্বুরাইশদের সমাজের ক্রীম তরুণগুলোর মত অবস্থা। যারা সবকিছু পেয়েও বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করে নতুন এক উগ্রবাদী আদর্শে (ক্বুরাইশের মুশরিরা ইসলামকে উগ্রই মনে করতো) জড়িয়ে পড়েছিল!

সানির দাবি সত্য কারন সে যাকে রব মানে সেই অ্যামেরিকার সাবেক প্রতিরক্ষা সচিব তার গোপন ডায়রীতে লেখেছে –
আমেরিকা বহু জঙ্গী ধরেছে, হত্যা করেছে । কিন্তু তারপরও ওদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাস্তবে মুজাহিদদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সানির দাবি সত্য কারন সে যেটাকে কিবলা মনে করে সেই দিল্লীর মুশরিকরাও এখন বাংলাদেশের জঙ্গিদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
.
সানির দাবি সত্য কারন, যখন হোলি উৎসবে মুসলিম নারীদের শ্লীলতাহানি করা হয়, যখন প্রকাশ্যে কুরান পুড়ানো হয়, যখন মসজিদে ভাঙচুর করা হয়, যখন জুম্মার সময় মুসল্লিদের উপর আক্রমন করা হয়, যখন ইসলামকে টকশো তে আক্রমন করা হয় – তখন বাংলাদেশের আপামর মুসলিম জনতা সরকার, আদালত, পুলিশ কিংবা রাজনীতিবিদদের পক্ষ থেকে কোন ফয়সালা আশা করে না।
.
এর কারন হল বাংলাদেশের সাধারন মুসলিমরা জানে ইসলামের পক্ষে বাংলাদেশের সরকার নাই, বিরোধীদল নাই, মিডিয়া নাই, পুলিশ নাই। ইসলামের পক্ষে প্রশাসন নাই, আদালত নাই, সানি-বাবুলরা নাই। মানুষ জানে ইসলামের জন্য নিজের জীবনের রিস্ক নেওয়ার সাহস বাংলাদেশের অন্য কোন ইসলামপন্থীর নাই।
.
তারা জানে ইসলামের জন্য যদি নিজেদের জীবন তুচ্ছ করার জন্য, নিজেরা জেল-যুলুম, মৃত্যু আলিঙ্গন করে হলেও ইসলামের শত্রুদের শাস্তি দেওয়ার জন্য বাংলাদেশে শুধু জঙ্গিরাই আছে। আর তাই বাংলাদেশের আপামত মুসলিম জনতা মনে মনে প্রত্যাশা নিয়ে তাকিয়ে থাকে জঙ্গিদের দিকে। বুক ভরা আশা নিয়ে তারা অপেক্ষা করে জঙ্গিরা কিছু করে কি না, তার জন্য।
.
পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। সানির দাবি কতোটুক সত্য!
সানি আর তার বস মনিরুল-বেঞ্জিররা যা পেরেছে তা হল, বিপথগামী এবং অদূরদর্শী আইএসের কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে নিজেদের সফল প্রমান করার একটা সুযোগকে কাজে লাগাতে, এবং মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজেদের হিরো আলম, থুক্কু হিরো সানি বানিয়ে কিছু নাটক মঞ্চস্থ করতে। আর এই খুশিতেই তারা মনে করছে তারা জিতে গেছে।

একটা সহজ শিক্ষা দেই। এটা সানি টাইপ হুকুমের গোলামদের জন্য ফ্রি-তে দেওয়া হল। অ্যামেরিকা যখন ২০০১ এ তালিবানদের ইমারতের উপর হামলা চালিয়েছিল তখন আল-কায়েদা ছিল কয়েক শো জন মানুষের একটা সংগঠন।

যাদের অবস্থান ছিল পৃথিবীর একটা দেশে। আফগানিস্তানে। আজকে আল-কায়েদার শাখা ৭টার বেশি। আর সক্রিয় সদস্য সংখ্যা সারা পৃথিবী জুড়ে লক্ষাধিক! সমর্থকের আলোচনা না ই আনা হলো!
.
২০১১ সালে যখন অ্যামেরিকা শায়খ উসামাকে রাহিমাহুল্লাহ আক্রমন করেছিল, তখন তারা বলেছিল আল-কায়েদা শেষ। আর এখন সেই অ্যামেরিকাই বলছে আল-কায়েদা এখন অন্য যেকোন সময়ের চাইতে বেশি শক্তিশালী। এই হল ১৬ বছরের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফল। যেখানে অ্যামেরিকা তার সর্বশক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করেছে।
.
বাংলাদেশের ঘুষখোর, লম্পট, নির্বোধ, মূর্খ, ইন্ডিয়ার গোলাম পুলিশ আর সরকার আশা করে তারা ঐ কাজে সফল হবে যেখানে খোদ তারা যাকে রব হিসেবে গ্রহন করেছে সেই অ্যামেরিকা ব্যর্থ হয়েছে?
.
সানিদের জন্য চ্যালেঞ্জ রইলো। যদি আল্লাহ চান তাহলে তোমরা পরাজিত হবে, নিঃশেষিত হবে, এবং অপমানিত হবে। নিশ্চয় যুদ্ধ ক্রমঘূর্নায়মান, আর সাফল্য একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে। নিশ্চয় তিনি সকল কিছুর উপর শক্তিশালী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seven − 4 =

Back to top button