আল-কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)তানজীমবার্তা ও বিবৃতিমিডিয়ামুফতি আব্দুল্লাহ আশরাফ হাফিযাহুল্লাহ

“মুসলিম উম্মাহ’র প্রতি বার্তা” – মুফতি আবদুল্লাহ আশরাফ (দা বা) || আল-কায়েদা উপমহাদেশ

সমস্ত প্রশংসা সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক রাসূলে কারিম ﷺ এর উপর।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

 

وَقَاتِلُوا الْمُشْرِكِينَ كَافَّةً كَمَا يُقَاتِلُونَكُمْ كَافَّةً وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ مَعَ الْمُتَّقِينَ
“আর তোমরা মুশরিকদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করো, যেমন তারা তোমাদের সাথে সর্বাত্মকভাবে যুদ্ধ করে এবং জেনে রাখো আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন”। (সূরা তওবা, আয়াতঃ ৩৬)


ইসলামের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ক্রুসেডার, যায়নবাদি ইহুদি ও ব্রাহ্মণ্যবাদি শক্তির চালানো বর্তমান এই যুদ্ধের বাস্তবতা হল এই যে, এ যুদ্ধ হল এক সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী যুদ্ধ। এটি নিছক দুটি বিরোধী পক্ষের মাঝে যুদ্ধ নয়, বরং এ হল এমন দুটি আদর্শের অস্তিত্বের লড়াই যে আদর্শদ্বয় সহাবস্থান করতে পারে না। এ হল হক্ব ও বাতিলের চিরন্তন যুদ্ধ, যাতে তৃতীয় কোন পক্ষ নেই। এই যুদ্ধ একই সাথে অস্ত্র ও আদর্শের। এ যুদ্ধ যেমন তলোয়ারের, তেমনি কলমেরও। এ যুদ্ধ হলো সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক।

বৈশ্বিক কিংবা আঞ্চলিক, যে দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখা হোক না কেন, সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী এ যুদ্ধের বাস্তবতা চিন্তাশীল সকলের কাছেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিক এবং তাদের আজ্ঞাবহ মুরতাদ ও মুনাফিক গোষ্ঠী তাদের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও প্রচারমাধ্যমের সকল শক্তি প্রয়োগ করছে ইসলামকে মুসলমানদের জীবন, রাষ্ট্র, সমাজ ও মানসপট থেকে মুছে দেয়ার জন্য। আর যদি তারা তাদের সামরিক আগ্রাসন সাময়িক ভাবে কখনো বন্ধ রাখেও, তবু তাদের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ তারা নিরন্তর চালিয়ে যায়।

মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

 

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا بِطَانَةً مِنْ دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا مَاعَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ الْبَغْضَاءُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ وَمَا تُخْفِي صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْقِلُونَ

‘হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা মারাত্মক। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াতঃ ১১৮)


উপমহাদেশের এবং বিশেষভাবে বাংলাদেশের বর্তমান ঘটনাপ্রবাহকে সঠিকভাবে অনুধাবন করতে হলে, আমাদেরকে এই সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী যুদ্ধের আলোকে বাস্তবতাকে বুঝতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ থেকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, এই তাগুতি শাসনের সংসদ থেকে শুরু করে জেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে, প্রশাসন থেকে শুরু করে বিচার-বিভাগে, সচিবালয় থেকে শুরু করে চেম্বার অফ কমার্সে, নিরাপত্তা বাহিনী থেকে শুরু করে প্রেস ক্লাবে, কর্পোরেট জগত থেকে শুরু করে কৃষি ও কুটির শিল্পে – প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদি শক্তি যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে, তা এই সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী যুদ্ধেরই অংশ।

বাংলাদেশের অর্থনীতির সকল গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর উপর, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের উপর, প্রচারমাধ্যম ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের উপর ক্রুসেডার ও হিন্দুত্ববাদী শক্তি যে আধিপত্য কায়েম করেছে, তা এই যুদ্ধেরই অংশ। রামপাল থেকে রূপপুর, বিনা শুল্কে ট্রানজিট থেকে শুরু করে ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও সিনেমার মাধ্যমে নোংরামিপূর্ণ, শিরকী সংস্কৃতির অবাধ প্রচার-প্রসার, সব একই সূত্রে গাঁথা।

সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নামে, সম্প্রীতি ও ঐক্যের অজুহাতে মুসলিম তরুণ-তরুণীদের মাঝে মুশরিকদের বিভিন্ন উৎসব ও বিশ্বাসের স্বাভাবিকীকরন, সুকৌশলে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যবইয়ের মাঝে ইসলামবিরোধী ও ঈমান বিধ্বংসী বিভিন্ন বিষয় ঢুকিয়ে দেয়ার মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের মগজধোলাই, কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি এবং কওমী শিক্ষা কর্তৃপক্ষের স্বীকৃতির আড়ালে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ও এর সিলেবাসকে নিয়ন্ত্রনের হীন প্রচেষ্টা, মসজিদের মিম্বর থেকে সরকারী খুতবা দিতে বাধ্য করণ, মানবতা ও জাতীয়তাবাদের দোহাই দিয়ে দ্বীন ইসলামের সমালোচনা, মুক্তচিন্তা আর বাক-স্বাধীনতার নামে রাসূলুল্লাহর ﷺ উপর আক্রমণ, ইসলামবিদ্বেষ ছড়ানো, মানবাধিকারের নামে সমকামিতার মতো জঘন্য বিকৃতির প্রচার, যৌন শিক্ষার নামে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে শিশুদেরকে যিনা-ব্যাভিচার শিক্ষা দেয়া – এ সবকিছু এ যুদ্ধেরই অংশ।

আরাকানে মুসলমানদের উপর রাষ্ট্রীয় তদারকিতে বৌদ্ধদের চালিত জাতিগত নিধন, ভয়ানক মানবিক বিপর্যয়ের পরও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নির্লিপ্ততা, তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদাসীনতা, ব্যাপক মাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হবার পরও আমেরিকা নিয়ন্ত্রিত জাতিসংঘের নিস্ক্রিয়তা, সর্বদা মানবাধিকারের সবক দেওয়া বুদ্ধি-ব্যবসায়ী আর ‘শান্তির দূত’দের নির্বাক থাকা – এসবই ইসলামের বিরুদ্ধে কাফির-মুশরিকদের সর্বাত্বক এ যুদ্ধেরই অংশ। জোরপূর্বক খিলাফতের দাবিদারদের কাছ থেকে কিছু ইয়াজিদিদের রক্ষা করার অজুহাতে যে আমেরিকার নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট ইরাক ও সিরিয়া আক্রমণ করে, সেই একই পশ্চিমা-বিশ্ব রক্তে ভেসে যাওয়া আরাকানের ব্যাপারে থাকে নিষ্ক্রিয়, নির্লিপ্ত, নির্বিকার। পোড়া মাংসের গন্ধ আর ধর্ষিতার আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে যাওয়া আরাকানের বাতাস এবং মুসলিমদের রক্তের নদী পশ্চিমা বিশ্বের ‘মানবতাবোধ’কে জাগ্রত করে না। কিন্তু মানবতার নামে মুসলমানদের হত্যা করতে এই একই পশ্চিমা বিশ্ব কখনো পিছপা হয় না।

আরাকানের এ বাস্তবতা এই অঞ্চলের প্রতিটি মুসলমানদের সামনে আবারো এই সত্যকে সন্দেহাতীতভাবে তুলে ধরেছে যে, যদি অধিকার আদায় করতে হয়, তবে তা মুসলমানদের নিজেদেরকেই করতে হবে কারণ পশ্চিমাদের সৃষ্ট ‘মানবতার’ সংজ্ঞায় মুসলিম রক্তের কোন দাম নেই। তাই কোন সংঘ, কোন সরকার, কোন সেনাবাহিনী, কোন সংস্থা, কোন শান্তি-পুরস্কার বিজেতা মুসলমানদের রক্ষা করতে আসবে না। যদি নিজেদের রক্ষা করতে হয়, যদি নির্যাতিত মুসলমান নর-নারী ও শিশুদেরকে কাফির-মুশরিকদের হাত থেকে রক্ষা করতে হয় তাহলে মুসলমান যুবাদেরকেই সেই দায়িত্ব নিতে হবে।

যদি এ ভূখন্ডের মুসলমানরা তাদের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোনদের সাহায্য করতে চান, যদি প্রবাহিত এই পবিত্র রক্ত তাদের অন্তরকে ক্ষত-বিক্ষত করে, যদি মহান আল্লাহর সামনে এই রক্তের দাবির ব্যাপারে প্রশ্নের সম্মুখীন হবার ভয় তাদের অন্তরগুলোকে প্রকম্পিত করে, তাহলে তাদের এ সত্য অনুধাবন করতে হবে যে, নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এ ভূখন্ডের সকল উলামায়ে কিরাম, তলিবুল‘ইলম, ইসলামী দলসমূহ এবং সাধারণ মুসলিমদেরই এগিয়ে আসতে হবে। এই দায়িত্ব তাদের নিজেদের কাঁধেই নিতে হবে। পশ্চিমা ক্রুসেডার ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের দালাল তাগুত সরকার কখনই মুসলমানদের সহায়তায় এগিয়ে যাবে না। প্রতারণা, নিফাকি আর বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই তাদের কাছ থেকে আশা করা যায় না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এ অঞ্চলের মুসলমানদের করণীয় এবং এ ব্যাপারে দিকনির্দেশনা উপরোক্ত প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতেই নির্ধারন করতে হবে। কারণ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন বিশ্লেষণ আপাতদৃষ্টিতে চাকচিক্যময় কিংবা তৃপ্তিদায়ক হলেও আদতে তা মূল্যহীন। তাই এ অঞ্চলের তাওহিদী জনতা ও বিশেষভাবে মুসলিম যুবকদের প্রতি আমাদের আহবান হলঃ

প্রথমত, এ সর্বাত্মক ও সর্বব্যাপী সংঘাতের বাস্তবতা ও স্বীয় দায়িত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হোন, কারণ এ যুদ্ধের বাস্তবতা ও ব্যপ্তিকে স্বীকার ও অনুধাবন করা ছাড়া কার্যকরীভাবে এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করা সম্ভব না। তাওহিদবাদী প্রত্যেক যুবকের জন্য আবশ্যক হলো আত্মতৃপ্তি ও গা-বাচানোর মনোভাব ঝেড়ে ফেলে ঐ দায়িত্বকে স্বীকার ও গ্রহণ করা, যে মহান দায়িত্ব আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা এ প্রজন্মের মুসলিমদের কাছে অর্পণ করেছেন। নিশ্চয় রাব্বুল আলামিনের সৃষ্টিজগতে দুর্ঘটনাবশত কিছু ঘটে না। এই সময়ে, এই প্রেক্ষাপটে, আপনার অবস্থানও কোন দুর্ঘটনা নয়। চারদিকে ঈমানের বাতাস বইছে, শাহাদাতের বাজার খুলে দেয়া হয়েছে, আর আল্লাহর দ্বীনের সমর্থনে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ও সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকারের সুযোগ আজ মুমিনদের হাতের নাগালে রয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মুজাহিদিন সংগঠন, উমারা ও উলামগণের বক্তব্য, বিবৃতি ও কিতাবাদি অধ্যয়নে এবং তাদের দিকনির্দেশনা অনুসরণে মনোযোগী হোন। নিশ্চয়ই সঠিক মানহাজ, সঠিক আক্বিদা, যোগ্য নেতৃত্ব, উপযুক্ত পরিকল্পনা, নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য, শোনা ও মানার মনোভাব ছাড়া কেবল বিচ্ছিন্ন কিছু কর্মকান্ড কিংবা প্রত্যেক ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তার অনুসরণের মাধ্যমে উম্মাহর পক্ষে এ যুদ্ধে বিজয় অর্জন করা সম্ভব নয়।

আমাদেরকে খেয়াল রাখতে হবে সায়্যিদিনা উমর (রাঃ) এর সেই কথাঃ

 

لَا إِسْلَامَ إِلَّا بِجَمَاعَةٍ ، وَلَا جَمَاعَةَ إِلَّا بِإِمَارَةٍ ، وَلَا إِمَارَةَ إِلَّا بِطَاعَةٍ

“জামায়াত ছাড়া ইসলাম নেই, ইমারাহ ছাড়া জামায়াত নেই, আনুগত্য ছাড়া ইমারাহ নেই”। (জামিউল বায়ানিল ইলম লি ইবনে আব্দুল বার)

তৃতীয়ত, এ যুদ্ধের মনস্তাত্ত্বিক অক্ষ নিয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হোন। জিহাদী ময়দানের কেন্দ্রে অবস্থানকারী ব্যক্তিরাই হক্ব ও বাতিলের এ যুদ্ধে মিডিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ, হাকিমুল উম্মাহ শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহসহ অন্যান্য মুজাহিদিন উমারাহ ও উলামাগণের বিভিন্ন বক্তব্যে বারংবার যে বিষয়টি উঠে এসেছে তা হল, বর্তমান যুগে যুদ্ধের অর্ধেক কিংবা তার চেয়েও বেশী হল মিডিয়া। তাই এ মিডিয়া জিহাদের গুরুত্ব অনুধাবন ও হক্ব আদায় করা আমাদের সকলেরই একটি আবশ্য কর্তব্য। এটি এমন এক দায়িত্ব যার ব্যাপারে ময়দানে অবস্থান করা মুজাহিদিন আফসোস করেন! অতএব এ দায়িত্বকে, জিহাদি মিডিয়ার গুরুত্বকে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই।

চতুর্থত, আপনাদের প্রাণপ্রিয় তানজীম আল–কায়েদা শুধু একটি দলের নাম নয় বরং এটি একটি আদর্শ, একটি মানহাজ। এটি বর্তমান যুগে সফলভাবে আল্লাহর রাসুল ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের (রাঃ) আদর্শবাহী দলের নাম। তাই আপনারা এই আদর্শের শিক্ষাকে গ্রহণ করুন এবং এর উপর কায়েম হয়ে যান। যদি এই আদর্শ অনুসারে মুজাহিদিন নেতৃবৃন্দ ও উলামাগণের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দাওয়াতি ও মিডিয়ার ময়দানে আপনি কাজ আঞ্জাম দিতে থাকেন, তাহলে আপাতত মুজাহিদিনের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনে সক্ষম না হলেও আপনি এই জিহাদী কাফেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবেই গণ্য হবেন। অতএব, আমাদের সাথে সংযুক্তিকে কাজ শুরু করার একটি পূর্বশর্ত না বানিয়ে, আপনার কাজকে সংযুক্তির একটি মাধ্যমে পরিণত করুন। মুজাহিদিন ভাইদের সাথে সম্পর্কিত হবার আগ পর্যন্ত মিডিয়ার জিহাদ জারি রাখুন।

পঞ্চমত, নিজের সময়ের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন। নিশ্চয় এ সময়ের জন্য আপনি জিজ্ঞাসিত হবেন। হক্বকে বোঝার পর, তাওহিদের অর্থ বোঝার পর যে দায়িত্ব একজন মুসলিমদের উপর অর্পিত হয় অবশ্যই সে দায়িত্বের ব্যাপারে আমরা সবাই জিজ্ঞাসিত হব। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সমগ্র মানব জাতির মাঝে কিছু মানুষকে দ্বীন ইসলামের উপলব্ধি দান করেছেন। আর বর্তমান বাস্তবতা হল এই যে, এই পুরো মুসলিম উম্মাহর মাঝে কিছু মানুষকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বিশুদ্ধ তাওহিদ ও জিহাদের উপলব্ধি দান করেছেন। তাই এ নিয়ামত লাভ করার পরও যদি আপনি আপনার দায়িত্বের ব্যাপারে গাফেল থাকেন, তবে অবশ্যই তা হবে আল্লাহর এই নিয়ামতের না-শোকরী।

অতএব হেদায়েত দানের মাধ্যমে যে দায়িত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আপনার উপর অর্পণ করেছেন, সেই দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হোন। কোন ব্যক্তির মুজাহিদিনের সাথে সংযুক্ত হতে না পারা, কিংবা হিজরত করতে না পারা

– তার উপর থেকে কলম উঠিয়ে নেয়ার কারণ নয়। বরং আমরা প্রত্যেককেই আমাদের নিজ নিজ অবস্থানের প্রেক্ষিতে জবাবদিহি করতে হবে। তাই নিজ অবস্থান থেকে সাধ্যমত আল্লাহর দ্বীনকে নুসরত করার কাজে সচেষ্ট হোন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর দ্বীন আমাদের অমুখাপেক্ষী, কিন্তু তিনি কাফির ও মুমিনদের পৃথক করতে চান, তাঁর প্রিয় বান্দাদের জান্নাতে প্রবেশ করাতে চান, আর তাঁর কাছে আমাদের কাছ থেকে পৌছায় কেবল আমাদের তাক্বওয়া।

মনে রাখবেন ইসলামে জড়তার কোন স্থান নেই। হয় একজন ব্যক্তি ঈমানের পথে ক্রমাগত উন্নতির চেষ্টায় নিয়োজিত থাকবে অথবা তার অবস্থার অবনতি হবে। এর মাঝামাঝি কোন অবস্থান নেই। নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনি এই দুই অবস্থার কোনটিতে আছেন? আপনি কি সাধ্যমত নিজের উন্নতির চেষ্টা করছেন? নাকি আপনি এক ধরাবাঁধা ছাঁচে নিজেকে আটকে ফেলেছেন?

জড়তা ও নিষ্ক্রিয়তার কোন সুযোগ আমাদের নেই। সেই জান্নাতের জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ন হোন যা আসমান ও যমীনের চাইতে প্রশস্ত। আর তাই নিজের আর্থিক, সামাজিক, পারিবারিক অবস্থা ও প্রেক্ষাপটকে অজুহাত না বানিয়ে, হিজরত করতে না পারা কিংবা মুজাহিদিনের সাথে সংযুক্ত হতে না পারাকে নিজের নিষ্ক্রিয়তার পক্ষে যুক্তি হিসেবে উত্থাপন না করে, শয়তানের ওয়াসওয়াসায় কান না দিয়ে – নিজ অবস্থান থেকে নিজ দায়িত্ব পালনে, নিজ সময়ের সদ্ব্যবহারে সচেষ্ট হোন।

আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

 

بَلِ الْإِنْسَانُ عَلَى نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ . وَلَوْ أَلْقَى مَعَاذِيرَهُ
‘বরং মানুষ নিজে নিজেকে খুব ভাল করে জানে। সে যতই অজুহাত পেশ করুক না কেন’। (সুরা কিয়ামাহ, আয়াতঃ ১৪-১৫)


নিশ্চয় সাফল্য আল্লাহর পক্ষ থেকে, আমাদের কাজ হল ইখলাসের সাথে আমাদের সাধ্যের সবটুকু ঢেলে দেয়া।
এই আমানতের হক্ব আদায় এবং অর্পিত এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সম্মানিত মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা আমরা তুলে ধরছি ইনশাআল্লাহ।

 

মনস্তাত্ত্বিক ও মিডিয়া জিহাদ


এ ভূখন্ডে যাদেরকে আল্লাহ তাওহিদ ও জিহাদের ব্যাপারে হেদায়েত দান করেছেন তাদের সকলের জন্য আবশ্যক হল সাধ্যমত মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা। তাই সকল তাওহিদবাদী ভাই-বোনদের আমরা এ যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহনের আহবান জানাচ্ছি। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ন ময়দান হল মিডিয়া। মনস্তাত্ত্বিক ময়দানে তথা মিডিয়া জিহাদের ক্ষেত্রে মুজাহিদ ভাইদের বিশেষভাবে যে বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজনঃ

– সাধারণ মুসলিম জনগণকে সামনে রেখে মিডিয়া কার্যক্রমের ভিত্তি স্থাপন করুন। জনবিচ্ছিন্ন প্রচারণা, জনবিচ্ছিন্ন গেরিলার চাইতেও দুর্বল। মনে রাখুন, আমরা নিজেদেরকে উম্মাহর মাঝে অভিজাত কিছু বলে মনে করি না, বরং নিজেদেরকে উম্মাহর অংশ মনে করি। মিডিয়ার কার্যক্রম তখনই কার্যকর হয়, যখন তা গণমানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করা হয়।

– আগ্রাসী ক্রুসেডার, যায়নবাদি ও ব্রাহ্মণ্যবাদি গোষ্ঠীর চক্রান্ত সম্পর্কে জনগনকে সচেতন করে তুলুন। তাদের অনুগত শাসকগোষ্ঠী ও নিরাপত্তা বাহিনী এবং কাফির-মুশরিকদের আজ্ঞাবাহী মিডিয়ার অপকর্ম জনগণের সামনে তুলে ধরুন।

– তাওহিদের সম্পূর্ণ ও সঠিক ব্যাখ্যা উম্মাতের সামনে সহজ ও সুন্দরভাবে তুলে ধরুন। বিধান এবং সার্বভৌমত্ব যে কেবল একমাত্র আল্লাহরই – এ বিষয়টি তাদেরকে জানিয়ে দিন।

– গণতন্ত্রের বাস্তবতা, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতারণা, গণতন্ত্র ও ইসলামের সংঘাত এবং সর্বোপরি মানব রচিত ব্যবস্থার বিভ্রান্তির মোকাবেলায় আসমানী বিধানের সৌন্দর্য ও শ্রেষ্ঠত্ব মানুষের সামনে তুলে ধরুন। বিভিন্ন মানবরচিত মতবাদের অনুসরণকারী দলের সাহায্য-সমর্থনের ঈমান-বিধ্বংসী পরিণাম সম্পর্কে মুসলিম জনগণকে সচেতন করে তুলুন।

– ইসলামভিত্তিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সকল ভূমিসমূহের মুসলমানদের ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করুন। উম্মাহর উপর ক্রুসেডার, হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইহুদিদের আক্রমণের ব্যাপারে আপনার চারপাশের মুসলিমদেরকে, উলামায়ে কিরামকে নিয়মিত অবহিত করুন।

– আল্লাহর রাহে ভালোবাসা এবং আল্লাহর রাহে শত্রুতার মূলনীতি সম্পর্কে উম্মাহকে অবহিত করুন। উম্মাহর এই কঠিন সময়ে যেন প্রত্যেকে তার সামর্থ্য অনুযায়ী উম্মাহর সাহায্যে এগিয়ে যায়, এর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ব্যয় করুন।

– তাগুতী শাসনব্যবস্থা ও মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীকে প্রত্যাখ্যান করতে উম্মাতকে উদ্বুদ্ধ করুন। নিশ্চয় এ হল নবীওয়ালা একটি দাওয়াতী কাজ। আর এরা তো এমন পর্যায়ের তাগুত যারা মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে মুশরিকদের আরাধ্য দেবী ‘দুর্গার’ কাছে প্রার্থনা করার আহবান জানায়। আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন উপাস্যের কাছে দুয়া করার আহবান জানানোর ধৃষ্টতা এ জমিনের অন্য কোন তাগুত এখন পর্যন্ত দেখাতে পারেনি। হে মুসলমানগণ, এদেরকে সর্বাত্মকভাবে পরিহার করুন।

– শিথিলতা ও চরমপন্থা থেকে মুক্ত সঠিক মানহাজ, উম্মাহর কল্যাণের জন্য আত্মত্যাগকারী মুজাহিদিন এবং উম্মাহর উপর জোরপূর্বক কর্তৃত্ব দাবিকারীদের মাঝে পার্থক্য সাধারণ মুসলিমদের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরুন। নিশ্চয়ই এ দুটি অসম বিষয়কে সমান প্রমাণ করতে দাজ্জালী মিডিয়া সর্বদা সচেষ্ট।

– উম্মাহর প্রতি নবীওয়ালা মহব্বত রেখে দাওয়াতী কাজ পরিচালনা করুন, কঠোরতা পরিত্যাগ করুন। দাওয়াত পৌছানোর ক্ষেত্রে উত্তম আদব বজায় রাখুন। অত্যাধিক হাসি-তামাশা, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে বাক-বিতন্ডা ইত্যাদি পরিত্যাগ করুন। নিশ্চয়ই সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) ছিলেন উত্তম আদব ও আখলাকের অধিকারী। তারা আরামপ্রিয় কিংবা অলস ছিলেন না। নিশ্চয় তারা তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না, যারা যৌবনে পদার্পনের পরও অধিকাংশ সময়ই কিশোরদের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন আমোদ-প্রমোদে মেতে থাকে। তারা ছিলেন উগ্রতা ও ভাঁড়ামিপূর্ণ আচরন থেকে মুক্ত।

– অনলাইনে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাওয়াহ ইলাল্লাহ জারি রাখুন। বিভিন্ন ই-মেইল গ্রুপ, ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদির মাধ্যমে তাওহীদ ও জিহাদের দাওয়াহ, এ সংক্রান্ত বই, প্রশ্নোত্তর, অডিও, ভিডিও ছড়িয়ে দিন। মুজাহিদিনের প্রচারনার কাজে ইন্টারনেট, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সাথে সময়ের অপচয় এবং অন্তরে নিফাক্ব ও রিয়া সৃষ্টির ক্ষেত্রেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রভাব ব্যাপক। এ হল এমন এক অস্ত্র যা অস্ত্রধারনকারী এবং শত্রু উভয়েরই ক্ষতি করতে সক্ষম। এ মাধ্যমকে কিভাবে আপনি ব্যবহার করবেন তা সম্পূর্ণভাবে আপনার সিদ্ধান্ত। মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের এ ময়দানে আপনি সময় কাটাতে পারেন ইখলাসের সাথে আল্লাহর দ্বীনকে এবং মুজাহিদিনকে নুসরত করার কাজে অথবা আপনি এ মাধ্যমকে ব্যবহার করতে পারেন অলস বিনোদন, মূল্যহীন আড্ডা আর অপ্রয়োজনীয় কথার মাধ্যমে সময় নষ্ট করে।

– মনস্তাত্ত্বিক ও মিডিয়া জিহাদের এ ময়দানে উল্লেখিত কাজগুলোর গুরুত্ব যতটুকু, এগুলোর প্রচারের গুরুত্ব তার চেয়ে কোন অংশে কম নয় বরং অনেক ক্ষেত্রেই বেশি। কোন মিডিয়ার সফলতা শুধুমাত্র প্রকাশনার সফলতার উপর নির্ভর করে না, এর প্রচারনার উপরও অনেকাংশে নির্ভর করে। আর তাই শুধুমাত্র প্রকাশনা তৈরি করলেই হবে না, এসকল প্রকাশনাকে সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে। তাই তাওহীদ ও জিহাদের উপর অনলাইনে মজুদ বই-প্রবন্ধ-অডিও-ভিডিও, বিশেষ করে মুজাহিদিনের সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশনা যথাসম্ভব ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন। মুজাহিদিনের বক্তব্য, বিশ্লেষন ও বার্তা প্রচারের মাধ্যমে উম্মাহর সামনে সঠিক দিক-নির্দেশনা তুলে ধরুন।

– শিক্ষাব্যবস্থা ও পাঠ্যবইয়ের মধ্যে শিরক, কুফর ও ইসলামবিদ্বেষী যে সকল বিষয় ইসলামের শত্রুরা অন্তর্ভূক্ত করেছে, সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরুন। কাফির-মুশরিক এবং তাদের আজ্ঞাবহ মুরতাদ ও মুনাফিক গোষ্ঠী দীর্ঘদিনের প্রচারনার মাধ্যমে ব্যক্তি ও সমাজিক জীবনে যে সকল কুফর, শিরক ও ঈমান-বিধ্বংসী বিষয়ের স্বাভাবিকীকরন করেছে, সেগুলো সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করুন।

– সকল দাওয়াতি ও মিডিয়া কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আমীরুল মুজাহিদীন শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরির (হাফিজাহুল্লাহ) এর ‘জিহাদের ব্যাপারে সাধারণ দিক-নির্দেশনা’তে বর্ণিত নির্দেশনাসমূহের আলোকে আপনার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করুন। যেমনঃ উম্মাহকে আগ্রাসী ক্রুসেডার, যায়নবাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদীদের ব্যাপারে সচেতন করা, উম্মাহর মধ্যে তাওহীদ ও জিহাদের মানহাজের প্রচার ও এর যৌক্তিকতা দলীল-আদিল্লাসহ তুলে ধরা, মুসলিম উম্মাহর বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের গুরুত্ব তুলে ধরা এবং বর্তমান মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উম্মাহকে তাহরীদ করা।

উল্লেখ্যঃ শুধুমাত্র মুজাহিদিনের আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ার প্রকাশনা বা অডিও-ভিডিওর অনুবাদ কিংবা ডাবিং এর মাধ্যমে এই কাজ সম্পূর্ন হবে না যদিও এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মিডিয়ার মাধ্যমে যে বার্তাটি আপনি সাধারণ মুসলিমদের কাছে পৌছে দিতে চাচ্ছেন তা আপনাকে সাজাতে হবে এদেশের মানুষের উপযোগী করে, তাদের চিন্তা-চেতনা, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে। অন্যথায় শত প্রচেষ্টার পরও আপনার দাওয়াতি কাজ কিংবা মিডিয়ার প্রকাশনা দেশের আপামর জনগণের মনে রেখাপাত করতে সক্ষম হবে না। শিক্ষা গ্রহণ করুন মুজাহিদিনদের ইমাম মুহাম্মাদ ﷺ এর উদাহরন থেকে, যিনি মরুবাসী বেদুঈনের সাথে কথা বলতেন তার বোধগম্য ভাষায় এবং শহরবাসী সম্ভ্রান্তদের সাথে কথা বলতেন তাদের বোধগম্য ভাষায়। বাংলাদেশের পূর্ববর্তী জিহাদি সংগঠনগুলোর ইতিহাস এবং জোরপূর্বক খিলাফতের দাবিদারদের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুন। আর নিশ্চয় মুমিন একই গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না।

– আপনি সাধারণ মুসলিম জনগণের ইলম ও চিন্তা-চেতনাকে সামনে রেখে, তাদের উপযোগী দাওয়াতি ও মিডিয়ার প্রকাশনার প্রতি মনযোগী হোন। নিজেকে তাদের অবস্থানে কল্পনা করে চিন্তা করুন। স্মরণ করে দেখুন, সর্বপ্রথম তাওহীদ কিংবা জিহাদের দাওয়াত পাবার পর আপনার মনে কোন প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল? প্রথমেই কি জিহাদের কোন ময়দানের সূক্ষ কোন খবর কিংবা দূরবর্তী কোন ময়দানের কোন উমারাহ কিংবা উলামার ব্যাপারে জানাটাই আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল? নাকি এই মানহাজ হক্ব হবার ব্যাপারে, এই মানহাজ কুরআন-সুন্নাহর অনুগামী ও ইসলামের জন্য কল্যাণকর হবার ব্যাপারে নানা প্রশ্নের উত্তর খুজে পাওয়া আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল? তাই, সাধারন জনগণের জন্য তাদের ভাষায়, তাদের অবস্থানে গিয়ে আপনাকে কথা বলতে হবে।

– একইভাবে বিভিন্ন ইসলামী দলের জন্য তাদের অবস্থান ও তাদের বিভিন্ন সংশয় ও ভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কিছু প্রজেক্ট হাতে নিতে পারেন। এটা হতে পারে ছোট প্রবন্ধের আকারে কিংবা কোন ইমেজ কিংবা কয়েক মিনিটের একটা অডিও কিংবা ভিডিওর মাধ্যমে যা দিয়ে তাদের অন্তরে প্রভাব সৃষ্টি করা যায়। তবে মনে রাখা উচিত, মানুষকে কথা দিয়ে আহত করে নিজের উদ্দিষ্ট দাওয়াত কবুল করানোর আশা বৃথা, বরং সেখানে থাকতে হবে উম্মাহর প্রতি নবী-ওয়ালা দরদ।

– বর্তমান যুগের গতিশীল জীবনপদ্ধতি ও কুফরপন্থী-ফাসেকী মিডিয়াগুলোর প্রভাবের কারণে যে কোন বিষয়ে সাধারণ মানুষ খুব অল্প সময়ই মনযোগ ধরে রাখতে পারে। তাই মিডিয়া কার্যক্রমের ক্ষেত্রে এই বিষয়টি বিবেচনা করা জরুরী। মিডিয়ার সফলতা নির্ভর করে দর্শকের কাছে নিজের বার্তা পৌছে দেয়া এবং দর্শককে এর দ্বারা প্রভাবিত করার মাধ্যমে। তাই অনেক বড় অডিও/ভিডিওর পরিবর্তে ছোট আকারের অডিও/ভিডিও তৈরী করা অধিকতর কার্যকরী হতে পারে।
অনেক সময় একটা ছোট ইমেজ কিংবা একটা ছোট কথাও জনগণের মনে ব্যাপক সারা ফেলে। কারণ সাধারন মুসলিমদের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় ধরে একটি উচ্চমানের বড় ভিডিও দেখার চাইতে একটি মধ্যমমানের ছোট ভিডিও দেখার সম্ভাবনা বেশি। আপনারা অনেকেই হয়তো লক্ষ্য করেছেন, আমিরুল মুজাহিদিন শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) এর সাম্প্রতিক বয়ানগুলোও সংক্ষিপ্ত আকারের। তবে বছরে হয়তো দুই-একটা বড় ভিডিও তৈরী করা যেতে পারে কোন নির্দিষ্ট বিষয়কে পরিপূর্ণভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য।

– সর্বশেষ যে বিষয়টার দিকে আপনাদের মনযোগ আকর্ষন করবো তা হচ্ছে, মুজাহিদিনের মিডিয়ার প্রকাশনাগুলোকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আপনি বেশী বেশী চিন্তা-ফিকির করুন। অর্থাৎ কিভাবে তাওহিদ ও জিহাদের বার্তাকে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌছে দেয়া যায় তা নিয়ে চিন্তা করুন।

বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে কিভাবে আপনাদের তৈরী প্রকাশনাগুলোকে বেশী বেশী মানুষের কাছে পৌছানো যায়, এই ব্যাপারে আপনাদের মাশোয়ারাগুলো পরিচিত দ্বীনি ভাইদের কাছে তুলে ধরুন। এর গুরুত্ব বারংবার তাদের সামনে পেশ করুন। কারণ মিডিয়ার সাফল্য অনেকাংশেই তার প্রচারনার উপর নির্ভরশীল। সর্বোৎকৃষ্ট মানের একটি প্রকাশনাও যদি সাধারন মানুষের কাছে না পৌছায় তাহলে চূড়ান্ত হিসেবে মিডিয়া প্রকাশনা হিসেবে তা অনেকাংশেই ব্যর্থ, যদিও ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহর কাছে এর জন্য প্রতিদান পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। আপনি কষ্ট করে একটি ইমেজ/অডিও/ভিডিও তৈরী করার পর যদি সেটা মাত্র একশত জনের কাছে পৌঁছায় তাহলে এই কষ্টের ফসলটা ঠিকমতো ঘরে তোলা হলো না। এর বিপরীতে যদি সেটা কয়েক হাজার কিংবা লক্ষাধিক মানুষের কাছে পৌছায়, তাহলে সেটা মূল উদ্দেশ্য অর্জনে অনেক বেশী এগিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

 

ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রে নির্দেশনা


সাধ্যমত মনস্তাত্ত্বিক ময়দানের লড়াইয়ে অংশগ্রহনের পাশাপাশি তাওহীদ ও জিহাদের মানহাজের পথিকদের জন্য ব্যক্তিগত জীবনেও কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরী। ব্যক্তিগত পরিমন্ডলে করনীয়সমূহকে নিম্নোক্ত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়ঃ


১। দাওয়াহ ইলাল্লাহ।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
“আপনার প্রতিপালকের দিকে আহ্বান করুন প্রজ্ঞা ও সদুপদেশের মাধ্যমে এবং তাদের (বিরোধীদের) সাথে এমন পন্থায় বিতর্ক করুন যা সবচেয়ে ভাল”। (সূরা নাহল, আয়াতঃ ১২৫)

মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের ক্ষেত্রে মিডিয়ার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল নিজের পরিচিত পরিমন্ডলে সাধ্যমত দাওয়াহ ইলাল্লাহ জারি রাখা। প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তার আচরন, কথা ও কাজের মাধ্যমে মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করা, নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সাধ্যমত ইসলামের দাওয়াত ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করা।

জেনে রাখুন, হিকমাহপূর্ণ উত্তম উপদেশ হচ্ছে আল্লাহর পথে দাওয়াতের পদ্ধতি। আর হিকমাহ মানে হচ্ছে সুন্নাহ, হক্ব ছেড়ে দেয়া কিংবা পরিবর্তন করা নয়। দাওয়াতের ক্ষেত্রে মুজাহিদ ভাইদের যে সকল বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিতঃ

– হাকিমুল উম্মাহ শায়খ আইমান আয যাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) এর ‘জিহাদের ব্যাপারে সাধারণ দিক-নির্দেশনা’ অনুযায়ী দাওয়াতী কাজ আঞ্জাম দেয়ার চেষ্টা করুন।
– আল্লাহর পথে দাওয়াতকে সহজভাবে উপস্থাপন করুন যেমনভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাওয়াহ দিয়েছেন। সীরাত গ্রন্থগুলোতে দেখুন তিনি কত সহজ, সাবলীলভাবে মানুষকে হক্বের দিকে আহবান করেছেন। সবার আগে নিজ আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত জনের কাছে তাওহীদের ও জিহাদের দাওয়াহ পৌঁছে দিন। স্কুল-কলেজ-ইউনিভাসির্টি ও মাদ্রাসাতে এই দাওয়াহ কার্যক্রম ছড়িয়ে দিন।
সামান্য বেতনের বিনিময়ে নিজের দ্বীন বিক্রি করে দেয়া তাগুতের এজেন্টদের হুমকি-ধমকিকে গুরুত্ব দিবেন না। আল্লাহর নবীগণকে (আঃ) আরো কত কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হয়েছে – সেটা মনে রাখুন। এই কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার পরই বিজয় দান করা আল্লাহর সুন্নাত। তিনি আমাদেরকে পরীক্ষা করে অবশ্যই যাচাই করে নিবেন। এটা তাঁর ওয়াদা।
– নিজ পরিবারকে দ্বীনের শিক্ষা দিন। বাচ্চাদেরকে মাদ্রাসায় শিক্ষা দিন বিশেষত কওমী মাদ্রাসায় দিন। অন্যদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করুন। নিজের বাসায়/বাড়িতে সাপ্তাহিক দ্বীনি হাল্*কা করার চেষ্টা করুন।
– তাওহিদ, জিহাদ, আল ওয়ালা ওয়াল বা’রা-সহ নানা বিষয়ে সঠিক শিক্ষা ও দিক-নির্দেশনার বিভিন্ন উৎস যেমনঃ মুজাহিদিন উলামাদের লিখিত বই, প্রবন্ধ, অডিও, ভিডিও, এছাড়া বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়ার পেইজ ইত্যাদি সকলের মাঝে বেশী বেশী ছড়িয়ে দিন। আপনি বই কিনে বন্টন করুন, মেমোরী কার্ড কিনে সেটাতে এ সকল অডিও-ভিডিও কপি করে বন্টন করুন, সিডি–ডিভিডি আকারে এগুলো বিতরণ করতে থাকুন।
ফুরুয়ী-ইখতিলাফী মাসআলার বিষয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। দ্বীনের মূল বিষয়সমূহ যথাঃ তাওহীদ, শিরক, কুফর, রিদ্দা, সুন্নাহ, বিদয়াত, জিহাদ ইত্যাদিতে মনোযোগ দিন। যে যে মাযহাব-মাসলাকে আছেন, তাকে সেটাতে রেখেই জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহতে শরীক করার চেষ্টা করুন। সবাইকে আপনার অনুসৃত মাজহাব-মাসলাকে শরীক করার চেষ্টা করবেন না। ফুরুয়ী মাসআলায় মুজতাহিদ উলামাগণের মতপার্থক্য শরীয়াতের একটি বৈধ বিষয়। এটা উম্মাহর জন্য প্রশস্ততা। তাই আপনি এসব মতপার্থক্যের পিছনে পড়ে থাকবেন না। নিশ্চয়ই শয়তান সর্বদা সচেষ্ট থাকে মুমিনদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার। আপনার মুসলিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে শয়তানের সহযোগী হবার ব্যাপারে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সামনে নিজের বিরুদ্ধে নিজে সাক্ষী হবার ব্যাপারে সতর্ক হোন।
– দাওয়াহ ইলাল্লাহ তথা জিহাদের সকল ক্ষেত্রেই একজন আলেম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। তাই, আম্বিয়াদের উত্তরসূরী হিসেবে তারা যেন মসজিদের মিম্বর থেকে তাওহীদ ও জিহাদের কথা জনগণকে বলেন – সেজন্য তাদেরকে উৎসাহিত করুন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন। তাদেরকে সম্মান করুন। তাদের কাছে মুজাহিদ উলামাগণের বই / প্রবন্ধ পৌঁছে দিন। তারাই এগুলোর অধিক হক্বদার।
– আপনার আশেপাশের হক্বপন্থী আলেম ও তালেবুল ইলমদের খুতবা ও আলোচনাগুলো রেকর্ড করুন এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট, ফোরামে আপলোড করে উম্মাহর সকলকে শুনার সুযোগ করে দিন।
– আপনি যাদেরকে দাওয়াহ দিবেন তাদের তিন-চার জনকে নিয়ে একটি করে পাঠচক্র গড়ে তুলুন। প্রতি পাঠচক্রের জন্য একজন দায়িত্বশীল বা মাসউল ঠিক করে দিন। সেই দায়িত্বশীলের মাধ্যমে তাদের ইলম, তারবিয়্যাহ, দাওয়াহ, জিহাদের প্রস্তুতি চালিয়ে যান।
– যাদের সামর্থ্য আছে, তারা উত্তম পদ্ধতিতে পিছনে বসে থাকা, জিহাদ বিরোধী ব্যক্তিদের সৃষ্ট বিভিন্ন সন্দেহ-শুবুহাত দূর করুন। উম্মাহকে নব্য-মুরজিয়া ও খারেজী গোষ্ঠীর বিষাক্ত থাবা থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করুন। তাদের বিভিন্ন অযৌক্তিক দাবির অসারতা মুসলমানদের সামনে তুলে ধরুন।
– শরীয়াত কায়েমের এই জিহাদে যে যতটুকু সমর্থন করতে চায়, তাকে ততটুকুসহ কাজে শরীক রাখুন। কেউ যদি শুধু মুজাহিদিন এর জন্য দুয়া করতে রাজী থাকে, তাকে ততটুকুই করতে বলুন।
– তাকফীরের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ির ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
– আপনার এলাকার দ্বীনি ভাইগণ একত্রিত হয়ে জামাতবদ্ধ জীবন যাপন করুন। সম্মিলিতভাবে দাওয়াতী কাজ করুন। সামর্থ্য অনুযায়ী দূর্গত, মজলুমদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন। মনে রাখবেন, আপনার নিজের পাশের দুর্গত, মজলুমদের দেখার দায়িত্ব আপনারই। পর্যাপ্ত শক্তি অর্জিত হয়েছে মনে করলে, সামর্থ্য অনুযায়ী নিজ নিজ এলাকায় আমরে বিল মারুফ, নাহি আনিল মুনকারের আ’মল শুরু করুন। এলাকার মুসলিম জনতাকে সাথে নিয়ে এলাকা থেকে মদ, গাঁজা, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ইত্যাদি দূর করার চেষ্টা করুন। নিজের দাওয়াতকে শুধুমাত্র জিহাদের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখবেন না।
– আপনি নিজ পরিসরে হক্ব দাওয়াত ছড়িয়ে দেন। আপনি নিজ পরিসরে আমাদের জাতির পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর মিল্লাতের অনুসরণকারী একজন প্রতিনিধি হয়ে যান। যুবক ইব্রাহীম (আঃ) এর মত আপনি নিজ অবস্থানে অটল-অবিচলভাবে দাঁড়িয়ে যান।

উল্লেখিত নির্দেশনার সবগুলোই হয়তো সবাই অনুসরণ করতে সক্ষম হবেন না। তবে সাধ্যমত চেষ্টা করতে হবে নিজ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দ্বীনের ব্যাপারে আপোষ না করে, হিকমতের সাথে এই নির্দেশনাগুলো যথাসাধ্য অনুসরণ করার।

২। জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ

وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَكِنْ كَرِهَ اللَّهُ انْبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ
“যদি সত্যিই জিহাদে যাওয়ার ব্যাপারে তাদের দৃঢ় সংকল্প থাকতো তাহলে অবশ্যই তারা যুদ্ধের জন্য কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো, কিন্তু তাদের অভিযাত্রা আল্লাহর মনঃপুত ছিল না, তাই তাদের নিবৃত্ত রাখলেন এবং আদেশ হলো ঘরে বসা লোকদের মত তোমরা বসে থাকো।” (সূরা তওবা, আয়াতঃ ৪৬)

জেনে রাখুন, জিহাদ যেভাবে ফরজ, জিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণও সেভাবে স্বতন্ত্র আরেকটি ফরজ। মুজাহিদিনের সাথে শামিল হতে না পারার কারণে আপনি সরাসরি ক্বিতালে শরীক হতে না পারলেও, জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণ না করার ক্ষেত্রে কোন অজুহাত কাজে আসবে না।

জিহাদের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নীচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখুনঃ
– আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য নিজেকে শারিরীক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। কঠিন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন থাকার অভ্যাস করুন। আরাম-আয়েশের জীবন পরিত্যাগ করুন। নিজ পরিবার-আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে মাঝে মাঝে দূরে থাকার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ঘরকুনো মনোভাব ত্যাগ করে মাঝে মাঝে একা কয়েকদিন দূরের পথ সফর করুন। নিজেদের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করুন। কঠিন ও পরিশ্রমের কাজ করুন। মাঝে মাঝে পায়ে হেটে দীর্ঘ পথ ভ্রমণ করুন, ক্যাম্পিং করুন। নিজেকে কষ্টসহিষ্ণুতার শিক্ষা দিন। নিজের কাজ নিজে করতে শিখুন। যেমনঃ রান্না করা, কাপড়-চোপড় ধোয়া, ঘর মোছা, টয়লেট পরিস্কার ইত্যাদি।

– নিজেকে আনসার হিসেবে গড়ে তুলুন। নিজের বাসায় একটি রুম মুজাহিদ ভাইদের জন্য বরাদ্ধ রাখুন। দুই-তিন জন মুজাহিদ ভাই যাতে দীর্ঘদিন আপনার বাসায় আশ্রয় নিয়ে থাকতে পারেন, এ রকম ব্যবস্থা রাখুন।

– উলামায়ে রব্বানীদের সাথে থাকুন। উলামায়ে ছু’দেরকে পরিহার করুন। উলামায়ে হক্ব তো তারাই যারা আম্বিয়াগণের (আঃ) যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে জনগণকে কুফরের দিকে পরিচালনাকারী তাগুতকে বর্জনের আহবান জানান, ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার আহবান জানান। পূর্ববর্তী আম্বিয়াদের মতোই বর্তমান সময়ের তাগুত ও ইসলামের শত্রুরা তাদেরকে চক্ষুশূল মনে করে। তারা শাসকদের কুফর ও শিরকের ব্যাপারে নিরব দর্শক হয়ে থাকেন না। এটাই নববী দাওয়াতের বৈশিষ্ট্য। ঐ সকল উলামায়ে ছু’দের পরিহার করুন যারা আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী, বৃটিশদের রচিত আইনে শাসনকারী এ সকল শাসকদের সাথে উঠাবসা করে, তাদের অনুকম্পা ভিক্ষা করে এবং তাদের মসনদকে শক্তিশালী করে।

– যথাসম্ভব আরবী ও উর্দু ভাষা শিক্ষা করুন। তাওহীদ ও জিহাদের ইলম অর্জন করুন। সম্ভব হলে মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে যান। তাওহীদ ও জিহাদ বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ আরবী ও ইংরেজী যে সকল বই অনুবাদ হয়নি, সেগুলো অনুবাদ করতে থাকুন। অল্প অল্প করে হলেও এসকল কাজে সাধ্যমত সময় দিন। নিজের সময়কে সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর কাজে খরচ করার চেষ্টা করুন।

– রাসূল ﷺ এর সীরাত এবং সাহাবা-তাবেয়ীগণের (রাঃ) জীবনী অধ্যয়ন করুন। মুসলিমদের ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করুন। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এই উম্মাহর জিহাদের ইতিহাস পড়ুন। ইসলামী খেলাফতের পতনের কারণ, খেলাফতের সময় রাষ্ট্রীয়, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন।

– চলমান দাজ্জালী-কুফরী বিশ্বব্যবস্থার অন্তর্গত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দূর্বলতা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে সম্যক ধারণা অর্জন করুন। মুসলিম জনগণকে এর কুফল সম্পর্কে সতর্ক করুন।

– বিশেষভাবে পশ্চিমা সভ্যতার নগ্নতা, অনৈতিকতা, অসভ্যতা, মানবতা ও স্বাধীনতার গালভরা বুলির আড়ালে দ্বিমুখীতা ও ভন্ডামী সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন।

– জিহাদী নাশিদ তৈরী, অডিও, ভিডিও, ইমেজ এডিটিং শিখুন। ওয়েব সাইট তৈরী, নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করুন।

– হ্যাকিং শিখুন। ইসলামের শত্রুদের বিভিন্ন সাইট ও প্রতিষ্ঠানের তথ্য হ্যাক করে মুজাহিদিনের হাতে তুলে দিন।

– আমেরিকান, ভারতীয় ও অন্যান্য ক্রুসেডার দেশসমূহের বাসিন্দা, তাদের অফিস, থাকার জায়গা, বিনোদনকেন্দ্র, তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য সাধ্যমত সংগ্রহ করুন ও সুযোগ মতো মুজাহিদনদেরকে পৌছে দিন। আপনার আশেপাশে তাগুতী সরকারের আজ্ঞাবহ মুরতাদ নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা, ইসলামবিদ্বেষি বুদ্ধিজীবিদের কিংবা ইসলামের অবমাননাকারীদের অফিস, বাসা, দৈনন্দিন রুটিন ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য নোট করে রাখুন। সুযোগমতো মুজাহিদিনের কাছে হস্তান্তর করুন।

– তাত্ত্বিকভাবে যথাসম্ভব অস্ত্র ও বোমা তৈরীর পদ্ধতি শিক্ষা করুন। এ সংক্রান্ত শিক্ষাকে ইন্টারনেটে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিন।

– প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যাপারে তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করুন।

– ইসলামী ব্যবস্থাপনা বিদ্যার বাস্তব কৌশলগুলো আয়ত্ব করুন। রাসুল ﷺ এর সীরাত, খোলাফায়ে রাশেদীনের জীবনীতে এই ব্যাপারে ভাল ধারণা পাবেন। জিহাদী তানজীমগুলোর জন্য এটা খুবই জরুরী।

– সতর্কতার ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করুন। নিরাপত্তা বজায় রাখুন। মনে রাখবেন, আমরা অনলাইনে কাউকে আমাদের সাথে শরীক করি না। চেষ্টা জারি রাখলে একদিন আপনি বাস্তবে মুজাহিদিনের সাথে শরীক হতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।

এ প্রতিটি নির্দেশনা প্রত্যেকের জন্য প্রযোজ্য না হলেও প্রত্যেকের উচিত সাধ্যমত এই নির্দেশনাগুলোর অনুসরণ করা। নিজের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিমণ্ডলে সাধ্যমত দ্বীনের জন্য কাজ করা এবং নিজেকে প্রস্তুত করা। মনে রাখবেন, আপনি যদি আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করেন, আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন।

আপনি আল্লাহর দ্বীনের জন্য নিজের সময়, শ্রম ব্যয় করুন, আল্লাহ আপনাকে এর প্রতিদান দিবেন। সমস্ত মানবজাতি একত্রিত হয়েও আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না, শুধুমাত্র আল্লাহ যা অনুমতি দিয়েছেন তা ব্যতীত। মনে রাখবেন, কলম তুলে নেয়া হয়েছে, কালি শুকিয়ে গেছে। আর মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।

৩। তাযকিয়্যাতুন নফস।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّى

“নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নেয়”। (সুরা আ’লা, আয়াত ১৪)

যুগে যুগে যারাই তাওহিদের ব্যাপারে আপোষ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং আল্লাহর দ্বীনের উপর অবিচল থেকেছেন, তাদের সবাইকেই প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যুগে যুগে তাওহিদের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরোধিতা করেছে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী, সমাজ, রাষ্ট্র, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। আল্লাহর দ্বীনের জন্য সংগ্রাম করার ক্ষেত্রে, তাওহীদি কাফেলার অভিযাত্রীরা দুর্গম পথে পরীক্ষিত হবেই।

আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক (تعلق مع الله) মজবুত না থাকলে এ পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়া সম্ভব না। যদি ঈমান জীবন্ত না হয়, মজবুত না হয় তাহলে দুর্বল ভিত্তির উপর যতো বড়, যতো আলিশান দালানকোঠাই গড়ে তোলা হোক না কেন, তা যেকোন মূহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে। আর তাই আত্মশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা জারি রাখা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

মানুষের নফস তার সর্বাধিক নিকটবর্তী ও তার উপর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তারকারী শত্রু, তাই নিজের নফসকে নিয়ন্ত্রনে আনুন, অন্যথায় সে আপনাকে নিয়ন্ত্রন করবে।
এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রাখা প্রয়োজনঃ

 

  • পবিত্র কুর’আনের সাথে আপনার সম্পর্ক দৃঢ় করুন। নিয়মিত কুর’আন তিলাওয়াত করা। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট পরিমান কুর’আন পড়ার নিয়্যত করুন এবং চেষ্টা করুন। ধীরে ধীরে তিলাওয়াতের সময় বাড়াতে পারেন।
  • সকল প্রকার কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে হেফাজতে রাখুন। সগীরা গুনাহের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
  • দৃষ্টির হেফাযত করুন। নিজের দৈনন্দিন রুটিনকে এমনভাবে সাজিয়ে নিন যাতে করে ফাহেশা ও অশ্লীলতা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকা যায়।
  • পিতামাতার যথাসাধ্য খেদমত করুন। আল্লাহর হুকুমের মধ্যে থেকে তাদের আনুগত্য করুন। তাদের জন্য আপনার দয়ার ডানা বিছিয়ে দিন। আত্মীয়-স্বজনের হক্ব আদায় করুন।
  • বেশী বেশী যিকির-আযকার করুন। বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যার আযকারগুলো আকড়ে ধরুন। জিহাদের ময়দানের মুজাহিদগণ এটা খুবই গুরুত্ব দিয়ে আ’মল করে থাকেন।
  • নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামায আদায়ের চেষ্টা করুন। শেষ রাতে আল্লাহর নিকট নিজের ও উম্মাহর জন্যে কান্নাকাটি করে দোয়া করুন।
  • অন্তত দুই রাকাত হলেও নিয়মিত ইশরাকের নামাজে অভ্যস্ত হোন।
  • সপ্তাহে দুই দিন নফল রোযা রাখার চেষ্টা করুন। আইয়ামে বীজ এর রোযা রাখুন।
  • রাতে দীর্ঘসময় জেগে থাকার অভ্যাস ত্যাগ করুন, ফযরের পর না ঘুমানোর অভ্যাস করুন।
  • অপ্রয়োজনীয় কথা বলা, আড্ডার অভ্যাস ত্যাগ করুন। কথার মাধ্যমে অন্যকে কষ্ট দেয়া থেকে দূরে থাকুন।
  • আমোদ-প্রমোদ ও হাসি-ঠাট্টায় সময় ব্যয় করার অভ্যাস ত্যাগ করুন। নিশ্চয় অত্যাধিক হাসি ও কৌতুক মানুষের অন্তরকে শক্ত করে দেয়।
  • নিজের আচরণ ও কথার ক্ষেত্রে রাসুল ﷺ এর সুন্নাহর অনুসরণের চেষ্টা করুন। সবার সাথে আদব বজায় রেখে কথা বলুন, মুসলিম ভাইকে অগ্রাধিকার দিন, আত্মসমালোচনার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • স্থিতধী হবার চেষ্টা করুন। তাড়াহুড়া প্রবণতা ত্যাগ করুন।
  • নেককার, আল্লাহ ওয়ালাদের সাথে অবসর সময় কাটান। আর মৃত্যুর আগে মুমিনদের অবসরই বা কোথায়!

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে যথাসাধ্য আমল করার তাউফিক দান করুন।
আর সর্বশেষ কথা হল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ ﷺ, তাঁর পরিবার ও সাহাবা আজমা’য়ীনদের উপর।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × three =

Back to top button