কমাণ্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. জীবনচরিত || বই/পিডিএফ/টেক্সট
কমাণ্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ.
জীবনচরিত
(আল কায়েদা শুরা কমিটির সর্বপ্রথম অনারব সদস্য)
پی ڈی ایف
PDF (629 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৬২৯ কিলোবাইট]লিংক-১ : https://archive.org/download/ilias_kashmiri/ilias%20kashmiri.pdf
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy7e2c7c1ce6b3464bb4d3bccf85b427d5
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/a1cb0868-6bbf-499f-80f1-09e1fe679971/3c53667cd121c87fe7d0c5fb0dee90abf5351e432c5a952c005bc6c17feecb34
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=h0f1g7z1r3
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/jiboncorito/ilias+kashmiri.pdf
ورڈ
WORD (592 KB)
ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন [৫৯২ কিলোবাইট]লিংক-১ : https://archive.org/download/ilias_kashmiri/ilias%20kashmiri.docx
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy8eab72cf4f194b7da1aecaf086e47287
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/b5d692e9-b414-4daf-ab70-90dd0ed9c918/5d461ed635896fe018c070954e89754156b7ccac4c87d94dba7fb064964645e6
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=q0p0m1z3c3
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/jiboncorito/ilias+kashmiri.docxروابط الغلاف- ١
book cover [548 KB]
বুক কভার ডাউনলোড করুন [৫৪৮ কিলোবাইট]লিংক-১ : https://archive.org/download/ilias_kashmiri/ilias%20kashmiri.png
লিংক-২ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/db7hy3b0c551eccea40479f44c44af1bead95
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/1d68ea6c-bf88-439f-a2b0-e746fe55cdcf/c838d5fc0187856c6674457647d27b63f38738dd824559ec0c87292396836462
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=m0u6f4q7e6
লিংক-৫ : https://f005.backblazeb2.com/file/jiboncorito/ilias+kashmiri.png
প্রকাশকালরোববার, ১৮ জুন ২০১৭ ইংরেজি, ০৪ আষাঢ় ১৪২৪ বাংলা, ২২ রমজান ১৪৩৮ হিজরি
__________________________________________________আমাদের সাথেই থাকুন!
ওয়ার্ডপ্রেস || ফেসবুক|| ইউটিউব
================
কমাণ্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ.
জীবনচরিত
(আল কায়েদা শুরা কমিটির সর্বপ্রথম অনারব সদস্য)
রচনা
উমর মুখতার
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
বাতিলের আতংক বিশেষ করে ভারতীয় হিন্দু কাপুরুষ আর্মির যম, ইসলামের একজন মহান বীর, উপমহাদেশ বিশেষ কাশ্মীরি স্বাধীনতাকামীদের একজন স্বপ্নপুরুষ কমান্ডার মুহাম্মাদ ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ.।
জন্ম ও জন্মস্থান-
কমাণ্ডার মুহাম্মাদ ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. ১৯৬৪ সালের ১০ই ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সামহানী উপত্যকার বিম্বুরে (আদি মিরপুর) জন্মগ্রহণ করেন।
শিক্ষাদীক্ষা-
ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. ইসলামাবাদের আল্লামা ইকবাল উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ বিষয়ে ডিগ্রী ১ম বর্ষ অধ্যয়ন সমাপ্ত করেন। অতঃপর জিহাদি কার্যক্রমের কারণে তিনি আর পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারেন নি।
জিহাদি জীবনের শুরু-
পাকিস্তানের প্রভাবশালী জিহাদি সংগঠন তেহরিকে তালেবান এর উমার মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ অনুসারে- “কাশ্মির ও আফগানিস্তানের মুজাহিদিনদের মতে, তিনি একজন সত্যবাদী এবং সৎ চরিত্রের মুজাহিদিন ছিলেন, যিনি ১৯৮০ সালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদে, ভারতের বিরুদ্ধে কাশ্মিরে ও এখনকার সবচেয়ে বড় তাগুত আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদে অনেক কুরবানি দিয়েছেন। আল্লাহ শহীদ ইলিয়াস কাশ্মিরির উপর রহমত বর্ষণ করুন।
৪২ বছর বয়সের ইলিয়াস কাশ্মিরি রহ. আজাদ কাশ্মিরের কতলি এলাকার অধিবাসী ছিলেন। তিনি তার সময়ের সেরা সামরিক বিষয়ক শিক্ষক এবং একজন গেরিলা যুদ্ধের বিশেষজ্ঞ ছিলেন। রাশিয়ার দখলদারদের বিরুদ্ধে জিহাদে তিনি তার এক চোখ আল্লাহের রাস্তায় কোরবানি করেছেন, কিন্তু আল্লাহর রাস্তায় তাঁর দৃঢ়তা ও সঙ্কল্পতায় কখনই কমতি হয় নি। তিনি সবসময় আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত খুজে বেড়িয়েছেন।”
তাঁর সম্পর্কে উইকিপিডিয়াতে যদিও লেখা আছে তিনি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর “এসএসজি”এর একজন কমান্ডো ছিলেন, কিন্ত আমরা কোন নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানতে পারিনি। তবে পাকিস্তানী আর্মি ভারতের বিরুদ্ধে বেশ কিছু লড়াইয়ে তাঁর থেকে কৌশল গ্রহণ করেছিল, যা এই বইয়ের শেষে উল্লেখ করা হবে।
খোরাসান থেকে প্রত্যাবর্তন-
পাকিস্তানের প্রভাবশালী জিহাদি সংগঠন তেহরিকে তালেবান এর উমার মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায়- “আফগানিস্তানে রাশিয়ার পরাজয়ের পর, শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. এবং উনার মত আরও শত মুজাহিদিন শাহাদাত বরণ ও কাশ্মীরের মুসলমানদেরকে গরু পুজারিদের হাত থেকে স্বাধীন করার লক্ষে কাশ্মীরের দিকে ফিরে এসেছিলেন। যেহেতু শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরি একজন দক্ষ অভিজ্ঞ কমান্ডার ছিলেন, হয়ত সে কারণেই নিরাপত্তা সংস্থা উনার স্বাধীনভাবে কাজ করাটা উপযুক্ত মনে করেনি। তাঁকে বলা হল যেন তিনি কাশ্মীরিদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকেন, কিন্তু তিনি কর্ণপাত করেননি। এবং যেহেতু আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করাকে তিনি অধিক ভালোবাসেন, তাই তিনি কখনও এ জিহাদে যোগ দিতে ইতস্তত করেননি।
নতুন জিহাদি দলের প্রতিষ্ঠা-
১৯৯১ সালে তিনি কাশ্মীরে “লস্করে হরকাতুল জিহাদ আলইসলামী” নামক দলে যোগ দেন কিন্তু কয়েক বছর পর দলের উপর প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপ থাকায় তিনি দলটি ছেড়ে দেন এবং প্রাতিষ্ঠানিক হস্তক্ষেপের বাইরে গিয়ে “হরকাতুল জিহাদ আলইসলামী ৩১৩ ব্রিগেড” প্রতিষ্ঠা করেন, যা এমন মজবুত আক্রমণাত্মক অপারেশন চালায়, যে কয়েক মাসের মধ্যেই ভারতীয় সেনাবাহিনী এই দলের নাম শুনলে কেঁপে উঠত। বেশির ভাগ অপারেশনে তিনি নিজেই শাহাদাতের প্রবল আকাংখা নিয়ে যোগ দিতেন। তাঁর এ অতুলনীয় জযবার জন্য সাথীদের মধ্যেও তাঁর একটি বিশেষ স্থান ছিল।”
কাশ্মীর স্বাধীনতা বিপ্লব চলাকালীন সময়ে ৩১৩ ব্রিগেড সম্বলিত একটি আশ্চর্য জিহাদি দল হিসেবে হরকাতুল জিহাদ আলইসলামীর (HUJI) পরিচিতি ছিল। এই দলটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কাশ্মীর, ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশ ব্যাপী একটি শক্তিশালী জিহাদি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হয়।
সিআইএ-র বার্তা মতে, ২০০৮ সালের নভেম্বর মাসে গুটিকয়েক জংগী কর্তৃক ভারতের মুম্বাই শহরে যে হামলা সংঘটিত হয়েছিল, তাদের এধরণের হামলা চালানোর মত সক্ষমতা রয়েছে বলে সিআইএর (CIA) দাবী।
সম্মানিত পাঠকদের জেনে রাখা উচিত, ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ… জীবনী সম্পর্কে খুব কমই জানা গেছে এবং যতটুকু জানা গেছে তার অধিকাংশ তথ্যই অসংগতিপূর্ণ। তাই আমরা নির্ভরযোগ্য সুত্র ছাড়া কোন তথ্য গ্রহণ করিনি।
যাইহোক, প্রায়শই ওয়ার্ল্ড ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি তাকে নিয়ে নানা বিবৃতি প্রদান করে থাকে যে, তিনি বিশ্বের একজন অন্যতম মারাত্মক, কর্মতৎপর ও সফল গেরিলা লিডার।
আল হাদিদ অপারেশন-
১৯৯৪ সালে তিনি ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে আল-হাদীদ অপারেশনের নেতৃত্ব দেন, যার উদ্দেশ্য ছিল তার কিছু জিহাদি সহকর্মীকে মুক্ত করা। তার ২৫ জনের একটি দলে ডেপুটি পদে ছিলেন শায়খ উমার সাঈদ (২০০২ সালে করাচীতে অপহৃত ইউএস রিপোর্টার ড্যানিয়েল পার্লের অপহরণকারী)।
এই দলটি লন্ডন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের নাগরিক সহ বেশকিছু বিদেশীকে অপহরণ করে। তাদেরকে দিল্লীর অদূরে গাজিয়াবাদে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তারা ভারত সরকারকে দাবী জানায়, তারা যেন তাদের সহকর্মীদের মুক্তি প্রদান করে কিন্তু তার বদলে ভারতীয় বাহিনী তাদের গোপন আস্তানায় আঘাত হানে। শায়খ উমার আহত অবস্থায় ধরা পড়েন। (পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান এয়ারক্রাফট হাইজ্যাকের মাধ্যমে অপহৃত যাত্রীদের সাথে বিনিময় চুক্তির ভিত্তিতে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।) ইলিয়াস অক্ষত অবস্থায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
ভারতের কারাগারে-
একবার ভারতীয় সেনাবাহিনী তাঁকে দখলকৃত কাশ্মির থেকে তাঁর এক সাথী নাসরুল্লাহ মনসুর লাংরাইল (আল্লাহ তাঁকে জেল থেকে আজাদ করুন) সহ গ্রেফতার করে। ভারতীয় সেনাবাহিনী দুজনকেই জেলে পাঠায়। তাঁকে দু বছরে ভারতের বিভিন্ন জেলে রাখা হয় এবং একদিন অবশেষে তাঁর সাথী নাসরুল্লাহ মনসুর লাংরাইল জেলে থাকা অবস্থায় আল্লাহর সাহায্যে তিনি জেল ভেঙে পালিয়ে যান। ভারতীয় জেল থেকে পালানোর পর তিনি বিশেষ খ্যাতি লাভ করেন। কাশ্মীর জিহাদের উপর লেখা প্রকাশনাগুলোতে তাঁকে একজন বীর নায়ক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
১৯৯৮ সালে কাশ্মিরে হিন্দু আর্মির নির্যাতনের প্রতিশোধ-
১৯৯৮ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী আজাদ কাশ্মিরের নিরীহ মানুষের উপর যখন আক্রমণ চালানো শুরু করে, তখন ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পেছন থেকে হামলা করার পরিকল্পনা করে। বেশ কয়েক বার পাপিষ্ঠ হিন্দুদের উপর হামলা করে আহত করায় তারা তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে।
রক্তের বদলে রক্ত-
২০০০ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি, ভারতীয় সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা দুই কাশ্মীরকে বিভক্তকারী “লাইন অব কন্ট্রোল” (LoC) রেখা অতিক্রম করে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে প্রবেশ করে এবং সেখানকার লনজট গ্রামে গুলি চালিয়ে ১৪ জন সাধারণ নাগরিককে হত্যা করে। তারা যাবার সময় মুসলিম মেয়েদের অপহরণ করে নিয়ে যায় এবং এর মাঝে তিনজনের ছিন্ন মস্তক অপরপ্রান্তে জড়ো হওয়া পাকিস্তানি সৈন্যদের দিকে ছুড়ে মারে। তার ঠিক পরদিনই, ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. তাঁর “৩১৩ ব্রিগেড” হতে ২৫ জনকে সাথে করে লক লাইন অতিক্রম করেন এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর নাকাইল সেক্টরে এক গেরিলা অভিযান পরিচালনা করেন। তারা ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর একজন অফিসারকে আটক করে এবং তার শিরোচ্ছেদ করে। এরপর ওই অফিসারের কাটা মাথা পাকিস্তানের কোতিল বাজারে সাড়ম্বরে প্রদর্শন করা হয়।[1]
বাস্কার পর্বতের গাদ্দারি-
খুব দ্রুতই কাশ্মিরের এই বীর মুজাহিদ বেঈমান ও শত্রুদেরকে আতংকিত করে তুললেন। তাঁর গেরিলা অপারেশন এমনই এক মাত্রায় পৌছাল, যে তিনি ভারতীয় সেনাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘাটি দখল করে নিলেন। কতলি আজাদ কাশ্মিরে আয়ত্তে রাখা এই ঘাটিটি আসলে একটি পর্বত যা এখানকার ভাষায় বলা হয় “ভাল্লুক পর্বত” আর মুজাহিদিনরা এটাকে ডাকতো “বাস্কার পর্বত” নামে।
এই পর্বতটি ভারত থেকে একটি যুদ্ধের মাধ্যমে বিজিত হয়েছিল এবং এই পর্বতটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এতে মুজাহিদগণ তাদের যোগাযোগ ব্যবস্তা স্থাপন করে যার মাধ্যমে দখলকৃত কাশ্মির উপত্যকায় কর্মরত মুজাহিদদের সাথে যোগাযোগ করা যায়। তারপর না-পাক সেনাদল বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার নামে সংগঠনের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে থাকে।
আপনি তাদের হস্তক্ষেপের বিষয়টা বুঝার জন্য এই ঘটনা লক্ষ করবেন যে তৎকালিন রাওয়ালপিন্ডির কর্প কমান্ডার জেনারেল মেহমুদ আহমেদ, প্রায় ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. এর ঘাঁটিতে যেত এবং ভণ্ডামিপূর্ণ ভাবে ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে তাঁর গেরিলা অপারেশনের তারিফ করত। এইসব সেই সময় যখন ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে তাঁর কার্যক্রমের তুঙ্গে। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. সেনাবাহিনীর আসল উদ্দেশ্য বুঝে ফেলেন। এই বন্ধুত্ব ভেঙে যায় এবং ইলিয়াস কাশ্মীরির উপর বিচার শুরু হয় এবং এর কারণ হল একটি কথিত জিহাদি সংগঠন।
কান্দাহারে বিমান হাইজ্যাক করলে মাওলানা মাসউদ আযহারকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং তিনি পাকিস্তানে চলে আসেন। পাকিস্তানে আসার পরপরই মাওলানা মাসউদ আযহার তাঁর নিজের সংগঠনের এলান করে যার নাম জাইশে মুহাম্মদ। কাশ্মীর জিহাদের অনেক মুজাহিদ এই নতুন দলে যোগ দেয়। জেনারেল মেহমুদ ইলিয়াস কাশ্মীরিকে জাইশে মুহাম্মদে যোগ দিতে বলে ও বলে যেন বাস্কার পর্বতের ঘাঁটিটি ভারতকে ফেরত দেওয়া হয় এবং তিনি যাতে মাওলানা মাসউদ আযহারকে তাঁর নেতা মানে ও গোয়েন্দাদের হাতে চলে আসে। এই সব কিছুর জন্য তাঁর উপর অনেক চাপ প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তিনি এসব করতে রাজি হননি এবং গোয়েন্দাদের এই চাপকে অগ্রাহ্য করেন। এর ফলে জাইশে মুহাম্মদের যোদ্ধারা ইলিয়াস কাশ্মীরির রহ. এর ঘাঁটিতে আক্রমন চালায়। অন্যদিকে ভারতীয় বাহিনী ঘাঁটির উপর প্রবল বোমা বর্ষণ করতে থাকে কিন্তু পরাক্রমশালী আল্লাহর কুদরতে ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. বেচে যান কিন্তু তাঁর অনেক সাথী এই লড়াইয়ে শহীদ হন (আল্লাহ তাঁদের শাহাদাত কবুল করুন, আমিন)। এরপর এই ঘাঁটিটি ভারতকে উপহার হিসেবে দিয়ে দেওয়া হয়।
গুজরাটে মুসলিম গণহত্যার প্রতিশোধ-
২০০২ সালে গুজরাটে ভারতীয় সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত মুসলিম হত্যাযজ্ঞকে কেন্দ্র করে ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. ভারত শাসিত কাশ্মীরের আখনর ক্যান্টনমেন্টে এক মারাত্মক প্রাণঘাতী অপারেশন চালায়।
এই অপারেশনে তিনি ৩১৩ বিগ্রেডকে দুইটি পৃথক দলে বিভক্ত করেন। আক্রমণের প্রথম সারির টোপ হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল, ব্রিগেডিয়ার এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। দু’জন জেনারেল আহত হয় (অথচ পাকিস্তান আর্মি পরপর তিনটি যুদ্ধে মাত্র একজন ভারতীয় জেনারেলকেও আহত করতে পারেনি) এবং বেশ কয়েকজন ব্রিগেডিয়ার ও কর্নেল মারা যায়। এটা ছিল দীর্ঘ কাশ্মীর বিদ্রোহে ইন্ডিয়ার জন্য সবচেয়ে আলোচিত বিপত্তিকর অবস্থাগুলোর একটি।
পাকিস্তানী আর্মির কারাগারে-
২০০৩ এ তাঁকে পারভেজ মোশাররফের উপর হামলার মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গ্রেফতার করা হয়। যেখানে বাস্তবতা হল পারভেজ মোশাররফের উপর হামলার সময় ইলিয়াস কাশ্মিরি মাত্র এল ও সি পার করেন ও উপত্যকায় প্রবেশ করেন, যেখানে তিনি জাম্মুর টাণ্ডা এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপর হামলা করেন ও অনেককে হত্যা করেন।
আই এস আই এর জেলে তাঁকে খুব মারাত্মক কষ্ট দেয়া হয়। তাঁকে এক বছর জেলে রাখা হয় এমন এক কারণে, যা তিনি করেননি এবং সামরিক সংস্থা তাঁর বিরুদ্ধে কিছু প্রমান না করতে পেরে অবশেষে তাঁকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ২০০৫ তাঁকে আবার বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়। হাজতে তাঁকে খুব মারাত্মক নির্যাতন ও অপমান করা হয়, যা দেখে হিজবুল মুজাহিদিনের উপরস্থ এক নেতা বলতে বাধ্য হয় যে ভারত ও পাকিস্তানের জেলের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। এই লোকগুলো আমাদের বিশ্বাস করে না, কারণ আমরা কাশ্মীরি।
অবশেষে এক বছর রাখার পর এবং কাশ্মিরের জিহাদি সংগঠনগুলোর চাপে সামরিক সংস্থা তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গ্রেফতার ও নির্যাতন তাঁকে ভেতর থেকে ভেঙে দেয়। এবং তিনি নিজেকে কাশ্মীরি যোদ্ধাদের থেকে আলাদা করে ফেলেন এবং কিছু সময়ের জন্য নিশ্চুপ হয়ে যান।
উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হিজরত-
২০০৫ সালে দ্বিতীয়বারের মত আইএসআই (ISI) এর বন্দীদশা থেকে মুক্তিপ্রাপ্তির পর হরকাতুল জিহাদ আলইসলামীর এই দুর্দান্ত কমান্ডার মনে করলেন যে, আমেরিকার চাপে পড়ে পাকিস্তান আর্মি তার ৯/১১ পূর্ববর্তী অদ্বিতীয় সেনা নৈপুণ্যতায় ফিরে যেতে একেবারেই অক্ষম হয়ে পড়েছে, তাই তিনি কাশ্মীর ছেড়ে জিহাদের জন্য আফগানিস্তানে যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন।[2]
তিনি আফগানিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, কেননা তিনি সেখানেই প্রথম ট্রেনিংপ্রাপ্ত হন এবং কাশ্মীরে আগমনের পূর্বে ১৯৮০ সালে তিনি আফগান জিহাদে লড়েছিলেন। কাজেই তিনি তার পরিবারসহ উত্তর ওয়ারিজিস্তানের পথে যাত্রা করলেন। প্রাথমিকভাবে তার উদ্দেশ্য ছিল ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে আফগান তালিবানদের হয়ে লড়াই করা।
গোলযোগপূর্ণ বর্ডার এলাকায় তার স্থানান্তরিত হবার সংবাদে ওয়াশিংটনের শিরদাঁড়া বেয়ে যেন এক শীতল পরশ বয়ে গেছিল। তারা জানত যে, ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. তার ব্যাপক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তানের অপরিপক্ব যুদ্ধের চিত্রকে আধুনিক গেরিলা যুদ্ধের রূপ দিতে সক্ষম। ইলিয়াসের অতীত রেকর্ড থেকে এমন ধারণাই মেলে।
গ্লোবাল জিহাদের নেতৃত্ব-
যাইহোক তিনি যেহেতু একটা দীর্ঘ সময়ব্যাপী আন্তর্জাতিক জিহাদি নেটওয়ার্কে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তাই তার চিন্তাধারা ও দর্শন ছিল ভিন্ন। সেটা শুধুমাত্র কাশ্মীর স্বাধীনতা আন্দোলনের মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল না। ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় তার জিহাদ ছিল একটি চালিকাশক্তির ন্যায়, তবে তা গ্লোবাল জিহাদের ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। তিনি পরিবারসহ উত্তর ওয়ারিজিস্তানের একটি ছোট শহর রামজাকের একটি বাড়িতে এসে উঠেন এবং সেটাকেই তার ট্রেনিং সেন্টারে পরিণত করেন।
কাশ্মীরি ছিলেন একজন সহজাত ও অসাধারণ প্রতিভাসম্পন্ন কমান্ডার যিনি পুরো ইন্ডিয়াজুড়ে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অলৌকিক ভূমিকা রেখেছেন। জিহাদি জগতের সাথে তার আত্মিক সম্বন্ধ ছিল। যার ফলে, শত শত সৈন্য কাশ্মীরের ময়দান ছেড়ে আফগানিস্তানের উত্তর ওয়ারিজিস্তানে তার নিকট পাড়ি জমাল। এই যোদ্ধারা কাশ্মীরে তাদের লড়াইয়ে ইস্তফা দিয়ে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হিজরত করে এবং ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে জিহাদ শুরুর জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়।
২০০৬ সালের মাঝের দিকেই কাশ্মীরি রহিমাহুল্লাহর সেনাদল সবাইকে অভিভূত করে দেয়। তার দলে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অনেক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার ছিলেন, এছাড়া এলিট জিহাদি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়্যেবার প্রাক্তন কমান্ডার এবং সেই সাথে ISI এর ইন্ডিয়ান সেলে ট্রেনিংপ্রাপ্ত তার নিজস্ব ৩১৩ ব্রিগেড এর সেনাদের নিয়ে তার ক্যাম্প গঠিত হয়েছিল। আল-কায়েদার শাইখ মুস্তাফা আবুল ইয়াজিদ এবং শাইখ আবু ওয়ালিদ আনসারী ও শায়খ ইসসার মত ভাবাদর্শীরা ধীরে ধীরে ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. এর ঘনিষ্ঠ হতে থাকেন এবং তাঁর চিন্তাধারা, আদর্শ ও সমরকৌশলকে প্রভাবিত করতে থাকেন। এই আল-কায়েদা শাইখরা এর আগে (হরাকাতুল মুজাহিদিন এর) ফজলুর রহমান খলীল, জাইশে মুহাম্মাদ’ এর মাসউদ আজহার ও আব্দুল্লাহ শাহ মাজহার সহ বহু জিহাদি কমান্ডারের সাথে আলাপচারিতায় গেছেন এবং ফলে তাঁদের মনে এই ভয় বদ্ধমূল ছিল যে পাকিস্তানি জিহাদি কমান্ডাররা কোনদিন ISI এর বাঁধাধরা গণ্ডির বাইরে যেতে সক্ষম হবে না। তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে তারা এটাই মনে করতেন যে, পাকিস্তানি জিহাদি কমান্ডারদের পক্ষে ISI এর সীমারেখার বাইরে গিয়ে সমরকৌশল পরিচালনা রীতিমত অসম্ভব। তারা এটাও জানতেন যে স্থানীয় উপজাতিদের কমান্ডাররা উপজাতিক ও পশ্তুন ঐতিহ্যের চিন্তাধারার শিকার। তারা আফগান কিংবা পশ্তুন সীমানার বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারে না।
সমরকৌশল-
যাইহোক, কাশ্মীরি ছিলেন ভিন্ন প্রকৃতির। তার একটি স্বজ্ঞালব্ধ উদ্ভাবনীশক্তিবিশিষ্ট অন্তর ছিল। তিনি কাশ্মীরে ইন্ডিয়ান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তান আর্মির সাথে সহযোগিতায় অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন এবং সে কারণে পাকিস্তানি সমরকৌশলের সাথে তিনি অত্যন্ত গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন। যাইহোক, পাকিস্তান আর্মির সাথে তার মূল্যবান সহায়তা প্রদানকালীন সময়ে তিনি যুদ্ধকৌশল পরিচালনার ব্যাপারে নিজস্ব বিভিন্ন অভিযান পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। তিনি ছিলেন একজন প্রকৃত চিন্তাবিদ। তিনি মোটেও অস্থিরপ্রবণ ছিলেন না এবং গভীর চিন্তাভাবনার প্রেক্ষিতে তিনি তার সিদ্ধান্তে উপনীত হতেন। রামজাকে আল-কায়েদার সাথে তাঁর যে আলাপ হয়েছিল, তা তাঁর চিন্তাধারা সীমানাকে বিস্ফোরিত করেছিল, এবং আল-কায়েদা তাঁকে নিজেদের মতাদর্শের উপরে আবিষ্কার করল। আল-কায়েদার ইতিহাসে তিনিই একমাত্র অনারব, যিনি তাঁদের এতটা কাছাকাছি আসতে পেরেছিলেন। কয়েকমাসের ভেতরেই তার পরিকল্পনা ও চিন্তাধারা আল-কায়েদাকে এতটাই অভিভূত করে ফেলল যে, তারা নিঃসংকোচে তাঁকে তাঁদের অভ্যন্তরীণ সাথীদের কাতারে সামিল করে নিল। ২০০৭ সালের মাথায় তিনি আল-কায়েদা শুরা কমিটির একজন স্থায়ী ও পূর্ণ সদস্যে পরিণত হন। তিনি আল-কায়েদার সেনা অভিযান শাখার প্রধান হিসেবেও দায়িত্বপ্রাপ্ত হন।
গোপন অশরীরী সেনাবাহিনী-
গোপন অশরীরী সেনাবাহিনী তথা লস্করে জিল[3] হল আল কায়েদার একটি বিশেষজ্ঞ টিম, যারা পৃথিবীর তাবড় তাবড় গোয়েন্দাদের চোখে ধুলা দিয়ে জিহাদি কার্যক্রমকে এগিয়ে নিচ্ছে। বিশ্বের বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ধরতে অপরাগ হয়ে গেছে। গোয়েন্দাদের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এই বিশেষজ্ঞ টিমকে লস্করে জিল বা গোপন অশরীরী সেনাবাহিনী বেলা হয়, কমান্ডার ইলিয়াস কাশ্মীরি রহমাতুল্লাহি আলাইহি এই লস্করে জিলের প্রথম সারির একজন সদস্য ছিলেন।
শাহাদাত বরণ-
২০১১ সালের এপ্রিলে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে ঘোষণা প্রদান করা হয় যে, ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. সম্পর্কে কোন তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার হিসেবে ৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার প্রদান করা হবে। এবং এই ঘোষণার পর, ওই বছরের জুলাই মাসেই, পাকিস্তানের দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানে আমেরিকার ড্রোন হামলায় তিনি শাহাদাত লাভ করেন।[4]
________________________________________________________
[1] পাকিস্তানের প্রভাবশালী জিহাদি সংগঠন তেহরিকে তালেবান এর উমার মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ থেকে জানা যায়-
“যখন আল্লাহর সিংহ ইলিয়াস কাশ্মীরি ভারতীয় বাহিনীর এই জঘন্য কাজের কথা জানতে পারেন, তখন তিনি আহত সিংহের মত হয়ে উঠেন এবং এর প্রতিশোধ নেওয়ার ঘোষণা দেন ভারতীয় বাহিনী থেকে। পরদিন ২৬ ফেব্রুয়ারী তিনি নাক্যাল এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর উপর গেরিলা আক্রমন করেন। ৩১৩ জনের ব্রিগেডের ২৫ জন বীর যোদ্ধা একটি ভারতীয় বাঙ্কার ঘেরাও করে ও তাতে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। একজন যোদ্ধার শাহাদাত ও সাতজন গো পূজারীকে জাহান্নামে পাঠানর পর তাঁরা একজন ভারতীয় ক্যাপ্টেনকে জীবিত গ্রেপ্তার করে। পরে ওই ভারতীয় ক্যাপ্টেনের মাথা ওই মৃত মেয়েদের পরিবারের সামনে কাটা হয়। ওই সময় তাঁর সাথীরা ওই ঘটনার ছবি তুলে রাখে স্মৃতি হিসেবে। পরে এই মাথা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়, যা তৎকালিন সেনাবাহিনীর প্রধান পারভেজ মোশারফকে পেশ করা হয়। পারভেয মোশারফ শহীদ ইলিয়াস কাশ্মীরির এই বীরত্ব প্রকাশের জন্য প্রশংসা করে এবং তাঁকে নগদ ১ লক্ষ রুপি দেয়া হয়। পাকিস্তানের পত্রপত্রিকায় ভারতীয় ক্যাপ্টেনের কাটা মাথা সহ ইলিয়াস কাশ্মীরির ছবি দেয়া হয়। হঠাৎ করেই কাশ্মীরি মুজাহিদদের মধ্যে ইলিয়াস কাশ্মীরির গুরুত্ব বেরে যায়। তাঁকে একজন বীর হিসেবে গণ্য করা হয়, যিনি মুসলমানদের হৃদয়কে শান্ত করেন এবং সাহস ও বীরত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে তাদেরকে গর্ববোধ করান। কিন্তু তিনি কখনও দুনিয়াবি গৌরবের জন্য নয় বরং তাঁর প্রভুর সন্তুষ্টি পাওয়ার চেষ্টা করতেন। এরপর জামিয়া মুহাম্মদিয়া ইসলামাবাদের মাওলানা জাহুর আহমেদ আলভী রহ. ভারতীয় সেনা ক্যাপ্টেনের গলা কাটার পক্ষে ফতওয়া দেন।”
[2] উমার মিডিয়া কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তাঁর উত্তর ওয়াজিরিস্তান হিজরতের প্রধান কারণ হিসেবে লাল মসজিদ ও জামিয়া হাফসার মর্মান্তিক ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যে “জুলাই ২০০৭ এ লাল মসজিদের ঘটনা তাঁকে একেবারে বদলে দেয় এবং তাঁর নিরবতা ভাঙতে বাধ্য করে। যে সিংহ তাঁর বোনদের রক্ষার্থে নিজের জীবন বাজি রাখে সে যখন দেখল যে তাঁর নিজের নাপাক সেনারা তাঁর বোনদের উপর এই ঝুলুম চালাল ও তাদের শাহীদ করল, সে হতবম্ব হয়ে গেল। বোনদের শরিয়াতের হুকুম প্রতিস্থাপনের ডাক দেওয়া এবং নাপাক সেনাদলের সত্যিকার চেহারা প্রকাশ পাওয়া ও তাদের জুলুম বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁর মন-মস্তিষ্কের অবস্থা একেবারে পাল্টে দেয়। বোনদের শাহাদাতের প্রতিশোধ নিতে ও আল্লাহ সম্মান রক্ষা করতে তিনি উত্তর ওয়াযিরিস্তানে চলে যান। বুকে শাহাদাতের আকাংখা নিয়ে এই মুজাহিদ জিহাদের মহান শিক্ষক হিসেবে অনেক দিন খেদমত করেন। এই এলাকা সত্যিকার মুজাহিদ, বন্ধু ও সমর্থক দ্বারা ভরা ছিল। আনসার ও মুজাহিদের এই অদ্ভুত শহরে তিনি ৩১৩ ব্রিগেড আবার সংগঠিত করেন।”
[3] “খোরাসান থেকে কালো পতাকাবাহী বাহিনী” বইয়ের লেখক উক্ত বইয়ের ৬ অধ্যায়ে লস্করে জিল সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন-
“মুসলিম বিশ্বে আল কায়েদার ক্রমবর্ধমান আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি, তাদেরকে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ আরম্ভ করার অনুপ্রাণিত করে। যেখানে পশ্চিমা সমরকৌশলীরা অন্ধভাবে বিশ্বাস করে আসছিল যে, আফগান-পাক বর্ডারে আল কায়েদার কার্যক্রমই তাদের জন্য প্রধান হুমকি। এই সময়ের মধ্যে আল কায়েদা তাদের ভবিষ্যত কৌশল পরিকল্পনা সফল করার জন্য, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অংশে থেকে যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের জমায়েত করছিল। এই সমরবিশারদরাই হলো গোপন অশরীরী সেনাবাহিনী (লস্করে জিল), যা গঠন হয় মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অংশে থেকে যুদ্ধ বিশেষজ্ঞদের দ্বারা ।
এ গোপন সংগঠনটি তখনই গঠন হয় যখন মার্কিনরা অনুমান করে যে আফগানিস্থানে আল কায়েদার সদস্য ১০০ বেশি হবে না, আরো ৩০,০০০ মার্কিনসেনা পাঠালে আল কায়েদা ও তালেবানকে সমূলে ধ্বংস করা যাবে।
বাস্তবে এ গোপন প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন যুদ্ধ সংগঠিত এলাকায় (আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, ইয়েমেন, ও সম্ভাব্য অন্য আরো যুদ্ধক্ষেত্র) ভ্রমণ করে -ভবিষ্যতে ইসলামকে রক্ষার জন্য, নতুন গেরিলা কৌশল ও নতুন নুতন যুদ্ধক্ষেত্র প্রস্তুত করেন। এই নতুন প্রজন্মের সাফল্যের একটি কারণ হচ্ছে তাদের অধিকাংশই গুপ্তচর সংস্থার নজরদারি থাকতে না পারা।
সদস্যসমূহ:
ইলিয়াস কাশ্মীরি (বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গেরিলা সমর সমরকৌশল বিশারদ, প্রতিষ্ঠাতা ৩১৩ ব্রিগেড)।
হারুন – প্রাক্তন পাকিস্তান সেনাকর্মকর্তা, তালিবানের জন্য নতুন ধরনের গেরিলা যুদ্ধকৌশল প্রবর্তন করেন।
সিরাজুদ্দিন হাক্কানী (বিখ্যাত আফগান সমরকৌশল বিশারদ জালালুদ্দিন হাক্কানীর পুত্র) – তিনি সর্বজনবিদিত ভয়ঙ্কর তালিবান গ্রুপ – হাক্কানী নেটওয়ার্ক এর নেতৃত্ব দেন।
জিয়াউর রহমান ও মুহাম্মদ নেক – আল কায়েদার প্রতি আনুগত্যশীল নতুন প্রজন্মের তালেবান কমান্ডার। তারা নিজ গোত্রের উপর অন্ধ আনুগত্য না থাকার প্রবণতা চালু করেন (তালিবানদের পুরাতন প্রজন্মের কাছে নিজ গোত্রের আনুগত্য করার প্রবনতা ছিল)। নতুন প্রজন্মের তালিবানরা প্রধানত আরবি ভাষায় কথা বলে এবং অন্য কারো আগে আল কায়েদা নেতাদের প্রতি আনুগত্যশীল।
আসলে, গোপন সেনাবাহিনী একটি অনমনীয় তরুণ প্রজন্ম যারা কখনো শান্তি দেখেনি (গত ৩০ বছর ধরে), অশরীরী ব্যক্তিত্ব (গোয়েন্দা সংস্থার ধরা ছোয়া থেকে মুক্ত), ১০০% আল কায়েদা মতাদর্শে অনুগত, যাদের একমাত্র উদ্দেশ্য – পশ্চিমা ও জায়নিস্ট আধিপত্য থেকে জেরুজালেমসহ সকল মুসলিম ভুখন্ড রক্ষা করা।”
[4] বিবিসির সংবাদ অনুযায়ী- দক্ষিণ ওয়াজিরিস্তানের অন্যতম প্রধান শহর ওয়ানা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে লামান গ্রামে শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে একটি ড্রোন থেকে প্রথমে দুটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর ছোড়া হয় আরও দুটি ক্ষেপণাস্ত্র। ড্রোন হামলা চালায়, এতে ইলিয়াস কাশ্মীরি রহ. সহ নয়জন মুজাহিদ শহীদ হন।
হুজির তৎকালীন মুখপাত্র আবু হানজালা কাশি পাকিস্তান টেলিভিশন স্টেশনে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত, আমাদের আমির (নেতা) ও কমান্ডার ইন চিফ মোহাম্মদ ইলিয়াস কাশ্মীরি ও তাঁর বন্ধুরা শুক্রবার রাত ১১টা ১৫ মিনিটে মার্কিন ড্রোন হামলায় শহীদ হয়েছেন। আল্লাহ তাঁর মঙ্গল করুন…আমেরিকা শিগগিরই পূর্ণ প্রতিশোধ দেখতে পাবে। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য আমেরিকা।’
আপনাদের নেক দুয়ায় আমাদের ভুলবেন না!