আল-ফজর বাংলাইলম ও আত্মশুদ্ধিপাকিস্তানবই ও রিসালাহমিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

ওয়াকফের অতিরিক্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় খরচের বিধান! মূল শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.

4lgZxE.png

ওয়াকফের অতিরিক্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় খরচের বিধান!

মূল
শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.

উর্দু সংকলন ও বিন্যাস
মাওলানা আম্মার খাঁন তুরাঙ্গজাঈ হাফিজাহুল্লাহ

EFeGXH.jpg

online
https://archive.org/stream/WaqferSompod_20180130/waqfer%20sompod#page/n0/mode/2up

pdf

https://banglafiles.net/index.php/s/jEBtiondamfdfEC
https://archive.org/details/WaqferSompod_20180130

http://www.mediafire.com/file/nh7k59ybysmd30e/waqfer+sompod.pdf

word

https://banglafiles.net/index.php/s/apdMkXrEL4Y88j4
https://archive.org/details/WaqferSompod

http://www.mediafire.com/file/q28vnvanjaed7f8/waqfer+sompod.docx

অনলাইনে ছড়িয়ে দিন –
https://justpaste.it/waqfer_sompod

======================

ওয়াকফের অতিরিক্ত সম্পত্তি আল্লাহর রাস্তায় খরচের বিধান!

মূল

শাইখুল হিন্দ মাওলানা মাহমুদ হাসান দেওবন্দী রহ.

উর্দু সংকলন ও বিন্যাস

মাওলানা আম্মার খাঁন তুরাঙ্গজাঈ হাফিজাহুল্লাহ

অনুবাদ

মাওলানা আইমান মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

পেশ লফজ!

الحمد للہ وکفی وسلام علی عبادہ الذین اصطفی، ﺃما بعد

আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-

﴿قُلْ إِنْ كانَ آباؤُكُمْ وَأَبْناؤُكُمْ وَإِخْوانُكُمْ وَأَزْواجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوالٌ اقْتَرَفْتُمُوها وَتِجارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسادَها وَمَسٰكِنُ تَرْضَوْنَها أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفٰسِقِينَ﴾ [التوبہ:24]

“(হে নবী) আপনি তাদেরকে বলে দিন যদি তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐসব ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছো, আর ঐ ব্যবসায় যাতে তোমরা মন্দা পড়বার আশঙ্কা করছো এবং ঐ গৃহসমুহ যা তোমরা পছন্দ করছো, যদি এসব তোমাদের নিকট অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ ও তার রাসুলের চেয়ে এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা প্রতীক্ষা করতে থাকো এই পর্যন্ত যে, আল্লাহ নিজের নির্দেশ পাঠিয়ে দেন (অর্থাৎ আযাব), আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করেন না”৷ (সুরা তাওবা-২৪)

এবং আল্লাহ তাআলা ইরশাদ আরও করেন-

﴿هاأَنْتُمْ هٰؤُلآءِ تُدْعَوْنَ لِتُنْفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَمِنْكُمْ مَنْ يَبْخَلُ وَمَنْ يَبْخَلْ فَإِنَّما يَبْخَلُ عَنْ نَفْسِهِ وَاللَّهُ الْغَنِيُّ وَأَنْتُمُ الْفُقَرآءُ وَإِنْ تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْماً غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثالَكُم﴾ [محمد:38]

“দেখো তোমরাই তো তারা যাদেরকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে বলা হচ্ছে অথচ তোমাদের অনেকে কৃপণতা করছে; যারা কার্পণ্য করে তারা তো কার্পণ্য করে নিজেদেরই প্রতি৷ আল্লাহ অভাবমুক্ত এবং তোমরা অভাবগ্রস্ত, যদি তোমরা বিমুখ হও তবে তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্হলাভিষিক্ত করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না”৷ (সুরা মুহাম্মাদ-৩৮)

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

’’مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِي سَبِيلِ اللَّهِ كُتِبَتْ لَهُ بِسَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ’’

“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় সামান্য পরিমান সম্পদ ব্যয় করে তার জন্য এর বদলায় সাতশত গুন বেশী (সওয়াব) লিখা হয়”৷ 

’’مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَدْ غَزَا

“যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তার কোন মুজাহিদের সামানার ব্যাবস্থা করে দিল, সেও জিহাদ করল”৷

’’مَنْ جَهَّزَ جَيْشَ الْعُسْرَةِ فَلَهُ الْجَنَّةُ‘‘

“যে ব্যক্তি কোন সংকটপূর্ণ বাহিনীর জরুরত পুরা করে দিল, তার জন্য জান্নাত”৷

আজ পৃথিবীতে কুফর ও ইসলামের লড়াই চলছে৷ বাতিল পন্থীরা অত্যন্ত ঘামঝরা মেহনত করে চাঞ্চল্যের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং মুসলমানদের দ্বীন আকিদা ও  ভূমির ওপর চারোদিক থেকে আগ্রাসী হামলা চালাচ্ছে৷ আমেরিকার নেতৃত্বে বিশ্ব কুফরীশক্তি ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক ও সোমালিয়াসহ অসংখ্য মুসলিম রাষ্ট্রে মুসলমানদের সাথে লড়ে যাচ্ছে৷ শামের প্রতিই যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে, সেখানে চলমান যুদ্ধকে রাফেজীরা নিজেদের পবিত্র ও ধর্মীয় যুদ্ধ মনে করে নিজেদের সমুদয় সম্পদ ও সন্তানকে এনে তার চরণে ঢেলে দিচ্ছে৷ আপনি শামে লড়াইরতদের মাঝে সারা দুনিয়ার রাফিজীদেরকেই দেখতে পাবেন৷ অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রে এই যুদ্ধই দেশীয় সেনাবাহিনী দ্বারা চালানো হচ্ছে ওবং দ্বীনদারদের রক্ত প্রবাহিত করা হচ্ছে৷

আমার মুসলিম ভায়েরা! আজ বাতিল পন্থীরা বাতিল হওয়া সত্ত্বেও নিজেদের জীবনের সমস্ত গচ্ছিত সম্পত্তি এই কুফর ও ইসলামের লড়াইয়ে এনে ঢেলে দিচ্ছে৷ ইসলামের বিরুদ্ধে বড় অংকের ডলার ব্যয় করছে৷ “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এই শিরোনামে সারা দুনিয়ায় মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাচ্ছে৷ মুসলিমদের ওপর চেপে বসা শাসকশ্রেণীদেরকে নিজেদের অর্থের বিনিময়ে খরিদ করে নিচ্ছে এবং মুসলিম দেশসমূহের সেনাবাহিনীদেরকে নিজেদের অর্থায়নে উম্মাহর মুজাহিদদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে৷ মুজাহিদদের দুর্নাম করার জন্য, তাদের ঐক্যকে টুকরা টুকরা করার জন্য, তাদের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা চালানোর জন্য এবং তাদেরকে সন্ত্রাস সাব্যস্ত করার জন্য ডলারের বৃষ্টি বর্ষণ করছে৷ কিন্তু ইনশাআল্লাহ তাদের এতসব ষড়যন্ত্র তাদের জন্য আফসোসের কারণ হবে৷ আল্লাহ তাআলা এরশাদ  করেন-

﴿إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ لِيَصُدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ فَسَيُنْفِقُونَهَا ثُمَّ تَكُونُ عَلَيْهِمْ حَسْرَةً ثُمَّ يُغْلَبُونَ﴾ [الأنفال:36]

“নিশ্চয়ই কাফির লোকেরা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করতেই থাকবে, অতঃপর ওটাই শেষ পর্যন্ত তাদের জন্যে দুঃখ ও আফসোসের কারণ হবে এবং তারা পরাভূতও হবে”৷ (সুরা আনফাল-৩৬)

সুতরাং আমরা যারা মুসলমান আছি আমাদের এখনই উচিৎ নিজেদের ঈমানী দায়িত্বকে চিনা, অন্তরে ইসলামী চেতনাকে জাগ্রত করা, নিজেদের জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় উপস্থিত করা, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর খাতিরে জানকে জানদাতার হাতে সোপর্দ করা, আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা, কুফরী শক্তির কোমর ভেঙ্গে দেয়ার জন্য দিনরাতকে একাকার করা এবং যারা কুফরী শক্তির গতিরোধ করার করার জন্য সীসাঢালা প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তাদের জন্য নিজেদের সম্পদকে ব্যয় করা, নিজেদের ধনভান্ডারকে উম্মুক্ত করে দেয়া এবং তাদের তপ্তখুনে কমপক্ষে নিজেদের উপার্জিত টাকা দ্বারা হলেও শরীক থাকা৷ এটাই কোরআনের নির্দেশ। এটাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ। এটাই সাহাবায়ে কেরামের কীর্তি। এটাই সময়ের আহবান৷

আজ তো আমরা আল্লাহ তাআলা এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা ও গোলামির এবং সাহাবায়ে কেরামের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলার লাখো দাবী মুখে তুলে থাকি৷ কিন্তু আমাদেরকে যখন জিহাদে যাবার জন্য এবং আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়ের জন্য বলা হয়, তখন আমাদের মধ্যে অনেকে কৃপণতার আশ্রয় নিয়ে থাকে৷ অথচ, মুমিন কখনো কৃপণ হতে পারেনা৷ বিশেষত যখন দ্বীন সংশ্লিষ্ট কোন বিষয় সামনে আসে, তখন তো আল্লাহ তাআলা ও তাঁর দ্বীনের প্রতি কৃপণতার কথা কল্পনাও করা যায়না৷ উম্মতের এমন প্রতিটি মুহূর্তে একমাত্র সাহাবায়ে কেরাম এবং সালাফে সালিহীনদের আমল ও কর্ম পদ্ধতি-ই আমাদের জন্য হতে পারে আধাঁর পথের মশাল ও কাজের নমুনা৷

আল্লাহর পথে ব্যয় ও সাহাবায়ে কেরামের কর্মপন্থা

ইমাম কুরতুবী রহ. সুরা আল ইমরানের এই আয়াত-

﴿ لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتّٰى تُنْفِقُوْا مِمَّا تُحِبُّوْنَ وَمَا تُنْفِقُوْا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰہَ بِہٖ عَلِيْمٌ

“তোমরা যা ভালবাস, তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না এবং তোমরা যা কিছুই ব্যয় কর আল্লাহ তা পরিজ্ঞাত আছেন”৷  এই আয়াতের অধীনে লিখেন যে, যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল তখন হযরত আবু ত্বালহা রা: বললেন-

’’إن ربنا لیسألنا من أموالنا فأشھدك یا رسول اللہ أني جعلت أرضي للہ‘‘

“আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে আমাদের সম্পদ ব্যয় করার জন্য আদেশ করেছেন, সুতরাং হে আল্লাহর রাসুল আপনি সাক্ষী থাকুন যে, আমি আমার জমিন আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে দিলাম”৷

এমনিভাবে যায়েদ বিন হারিসা রা: এর কাছে ‘সুবুল’ নামে একটি ঘোড়া ছিল, যা তার নিকট সীমাহীন প্রিয় ছিল৷ তিনি ঘোড়াটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে ন্যস্ত করে দিয়ে বললেন-

’’اللّٰھم إنك تعلم أن لیس لي مال أحب إلي من فرسي ھذہ‘‘

“আল্লাহ! আপনি ভাল করেই জানেন যে, আমার কাছে এই ঘোড়াটির চেয়ে প্রিয় আর কোন সম্পদ নেই”৷

হযরত ওমর রা: এর কাছে একটি বাঁদি ছিল, যাকে তিনি খুব ভালবাসতেন৷ তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলার মোবারক নির্দেশ এই যে, “তোমরা যা ভালবাস, তা হতে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনই কল্যাণ লাভ করতে পারবে না”৷ তাই আজ আমি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির আশায় এই বাদিটি মুক্ত করে দিলাম৷

তাবুক যুদ্ধের সময় যখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামদেরকে সম্পদ খরচ করার জন্য বললেন, তখন প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী সম্পদ উপস্থিত করলেন৷ হযরত আবু বকর রা: ঘরের সমস্ত আসবাবপত্র এনে সামনে রাখলেন৷ যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হল যে, পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছেন? তিনি উত্তর করলেন যে, তাদের জন্য আল্লাহ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যথেষ্ট৷

সে সময় হযরত ওসমান রা: এই পরিমাণ ব্যয় করেছেন যে, মুসলিম সেনাবাহিনীর অভাব দূর হয়ে গেছে৷ ঐ সময় তিনি হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র সভাশেষে এই সুসংবাদে ভূষিত হলেন যে, ভবিষ্যতে হযরত ওসমান রা: এর কোন গুনাহ তার কোন ক্ষতি করবে না (অর্থাৎ তা তার জান্নাতে যাবার জন্য প্রতিবন্ধক হবে না)৷

এই ছিল সাহাবায়ে কেরামের রীতি-নীতি ও কর্মপন্থা৷ যখনই নির্দেশ পেয়েছেন সাথে সাথেই কোমর বেঁধে নির্দেশ পালনের ফিকিরে লেগে গেছেন৷

ইমাম কুরতুবী রহ: উল্লেখিত আয়াতের অধীনে সাহাবায়ে কেরামের উপলব্ধি সংক্রান্ত একটি মুল্যবান টীকা ধরেছেন৷ লিখেছেন, “সুবহানাল্লাহ! যখন আল্লাহ তাআলার কোন হুকুম (নির্দেশ) অবতীর্ণ হতো তখন সাহাবায়ে কেরামের উপলব্ধি এদিক সেদিক ঘুর-পাক খেত না যে, এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য এটা, এ আয়াতের তাবীল এটা… বরং তারা (হুকুম পাওয়া মাত্রই) আমলের ফিকিরে লেগে যেতেন৷ তাদের পূর্ণ পরিশ্রমই ছিল আমলের উপর৷

জিহাদের প্রয়োজনীয়তা ও শাইখুল হিন্দ রহ: এর কর্মপদ্ধতি

এবং এই একই কর্মপদ্ধতি সাহাবায়ে কেরামের পর সালাফে সালেহীন ও আকাবেরে উম্মতের কাছে থেকে গেছে৷ বিশেষতঃ অধঃপতন ও অবনতির যুগে যখন উম্মতে মুসলিমার ওপর ঘুটঘুটে অন্ধকার রাত্রির নিকুশ কালো আধাঁর ছেয়ে গিয়েছিল এবং তাদেরকে সর্বদিক থেকে আক্রমণ করা হচ্ছিল, শাসক শ্রেণীরা নিজেদের ভোগবিলাসে বিভোর ছিল ও ভোগবিলাসিতার চাদরে নিজেদের মুড়ে নিয়েছিল, তখন আকাবিরে উম্মতগণ জিহাদের ফরজ দায়িত্বকে জীবিত করে নিজেদের জানমাল তাতে কোরবান করেছেন৷ বিংশ শতাব্দীর সূচনলগ্নে যখন দ্বীনের দুশমন পশ্চিমাশক্তি মুসলমানদের কেন্দ্র ‘খেলাফতে উসমানিয়া’র বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল, তখন ভারত উপমহাদেশে মুসলমানদের নেতা শাইখুল হিন্দ রহ. তাঁদের সাহায্যের জন্য ইলমি-আমলি থেকে শুরু করে প্রতিটি ময়দানেই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন৷ যেমনি জানে খেটেছেন তেমনি মুখেও পরিপূর্ণ প্রচেষ্টা ব্যয় করেছেন৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কিছুদিন পূর্বে যখন বলকানের যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়লো, তখন শাইখুল হিন্দ রহ. পুরা দারুল উলুম দেওবন্দকে ইসলামী সেনাদলের সাহায্যমূলক ক্যাম্প বানিয়ে দিয়েছিলেন৷

ডাঃ আবু সালমান শাহজাহানপুরী শাইখুল হিন্দ রহ. এর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন-

’’جنگِ بلقان کے زمانے میں حضرت شیخ الہند کا کیا حال تھا؟ میاں سید اصغر حسین اور مفتی عزیز الرحمن، حضرت کے دونوں تذکرہ نگاروں نے لکھا ہے کہ ترکوں کی شکست کی خبر سنتے تو آپ کی ریش مبارک پر آنسو گرتے تھے، راتوں کو دعائیں مانگا کرتے۔ اگر کوئی دیکھے تو بالکل یہ حالت تھی کہ اگر حضرت کے بس میں ہوتا تو انگریزوں کو کچا چبا ڈالتے۔ پھر بھی جس قدر بس میں تھا کیا۔ مدرسے کی چٹھی کردی، طلبہ ومدرسین کو شہر شہر اور گاؤں بھیجا، چندہ کیا، خود اپنی تنخواہ اور تمام ملازمین ومدرسین کی تنخواہیں چندے میں دیں۔ طلبہ نے آپ کے اشارے پر سالانہ امتحانات میں کامیابی پر ملنے والے انعامات اور مطبخ کی خوراک بھی چندے میں دے ڈالی۔ اس طرح اس رقم کےعلاوہ جو حضرت کی ترغیب و تحریک پر لوگوں نے خود اپنے ذرائع سے ترکی بھیج دی تھی، خاص دارالعلوم کے ذریعے سے تقریباً ایک لاکھ روپے بمبئی نیشنل بینک کی معرفت ترکی بھیجا۔ جس کے صلے میں ترکی (عثمانی) حکومت نے آپ کا شکریہ ادا کیا اور وہ رومال جس میں جنابِ رسول اللہﷺ کا پیراہنِ مبارک رکھا رہتا تھا، دارالعلوم کو بہ طور تبرک اور عطیہ بھیجا جو آج بھی دارالعلوم کے خزانے میں تبرکاً موجود ہے‘‘

“বলকান যুদ্ধের সময় হযরত শাইখুল হিন্দ রহ. এর অবস্থা কেমন ছিল? মিঞা সাইয়্যেদ আসগর হুসাইন এবং মুফতি আযীযুর রহমান, হযরতের দু’জন জীবনী লেখক লিখেছেন, যখনই তিনি তুরষ্কের পরাজয়ের সংবাদ শোনতেন তখনই তার দাড়ি মোবারক চোখের অশ্রুতে ভিজে যেতো, রাতে দোয়ায় কান্না-কাটি করতেন৷ যদি কেউ হযরতের প্রতি লক্ষ্য করে তাহলে এ অবস্থাই পরিলক্ষিত হত যে, যদি হযরতের সামর্থ্য থাকতো তাহলে ইংরেজদের কাঁচা চিবিয়ে খেতেন৷ তারপরও যতটুকু সামর্থ্যে ছিল, তিনি করেছেন৷ মাদরাসা ছুটি দিয়ে দিয়েছেন, ছাত্র উস্তাদদের শহরে শহরে গ্রামে গ্রামে পাঠিয়ে দিয়েছেন, চাঁদা কালেকশন করেছেন, স্বয়ং নিজের বেতন এবং সমস্ত স্টাফ ও শিক্ষকদের বেতনও চাঁদায় দিয়ে দেন৷ ছাত্ররা হযরতের ইশারায় বার্ষিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কারণে পাওয়া পুরষ্কার এবং বোর্ডিং এর খানাও চাঁদায় দিয়ে দেয়৷ তেমনিভাবে এ টাকাগুলো ছাড়াও হযরতের উৎসাহপ্রদান ও উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে লোকেরা নিজ মারফতে বহু টাকা তুরষ্কে পাঠিয়েছে৷ বিশেষকরে দারুল উলূম মারফতে (সে কালের) প্রায় একলক্ষ রুপি মুম্বাই ন্যাশনাল ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠিয়েছে৷ একারণে তুরষ্ক (ওসমানী) সরকার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে এবং সেই রুমাল যাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামা মোবারক রাখা হত, তা দারুল উলূমে বরকত ও হাদিয়া স্বরুপ পাঠিয়ে দিয়েছে৷ যা আজো দারুল উলূমের সংরক্ষণাগারে বরকত লাভের উদ্দেশ্য বিদ্যমান আছে”৷

 

সম্পদশালী, প্রাচুর্যবান, জনকল্যাণ মূলক সংস্হা এবং দাতব্যকর্ম পরিচালকদের জন্য ভাবার বিষয়!

এমন এক মূহুর্ত, যে মূহুর্তে ইসলামের টিকে থাকার প্রশ্ন উঠে এসেছে, মুসলিম উম্মাহর জীবন মৃত্যুর লড়াই শুরু হয়ে গেছে এবং বিশেষকরে যখন তাদের জনশক্তির পাশাপাশি সরঞ্জামাদি ও টাকা পয়সারও প্রয়োজন পড়ে, তখন তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, কৃষিখাতে, জনকল্যাণ মূলক কাজে ও অন্যান্য খাতে খরচ করার তুলনায় দ্বীন-ধর্ম ও জাতির প্রতিরক্ষায় লড়াইরত মুজাহিদরাই বেশী হকদার এবং সে সমস্ত অসহায় মুসলমানরাই বেশী হকদার যারা কাফেরদের নির্যাতনে গৃহহারা হয়ে আজ মানুষের দ্বারে দ্বারে ফিরছে৷ এমনকি আকস্মিক দুর্ঘটনা ও ভূমিকম্প যেখানে জীবন মৃত্যুর লড়াই চলছে, তাদের ওপরও ঐ সমস্ত মুজাহিদদের প্রাধান্য দেয়া হবে, যেমনটি ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. তাঁর আমলে ফাতাওয়া দিয়েছিলেন৷ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “যদি সম্পদ কম থাকে এবং একদিকে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ও অপরদিকে জিহাদেরও সম্পদের প্রয়োজন পড়ে, যে প্রয়োজন পুরা না করলে জিহাদের ক্ষতি হবার আশঙ্কা থাকে, তাহলে সেক্ষেত্রে তখন কোনটাকে প্রাধান্য দেয়া হবে?

তিনি উত্তরে বললেন, আমরা জিহাদকে প্রাধন্য দিব, যদিওবা দুর্ভিক্ষগ্রস্থ লোকেরা মারাই যাক না কেন, কেননা এই মাসআলাটি কাফেররা মুসলমান বন্দিদেরকে ঢাল বানাবার মাসআলার মত৷ বরং তার চেয়েও অগ্রগামী, কেননা ঢাল বানানোর মাসআলায় মুসলমান আমাদের কর্ম দ্বারা মৃত্য বরণ করে, অথচ ঐসমস্ত দুর্ভিক্ষগ্রস্তদের মৃত্যু আল্লাহ তাআলার কর্ম দ্বারা হচ্ছে”৷

ইমাম কুরতবী রহ.ও লিখেছেন-

“সমস্ত ওলামায়ে কেরাম এ কথার ওপর একমত যে, যদি মুসলমানদের কোন আর্থিক প্রয়োজন সামনে আসে এবং ইতিপূর্বেই যদি যাকাত আদায় করা হয়ে থাকে তাহলে তখন লোকদের জন্য ফরজ যে, তারা সেই প্রয়োজন পুরা করার জন্য নিজেদের ব্যক্তিগত টাকা ব্যয় করবে”৷

মোটকথা হল, যখন মুজাহিদদের ওপর কঠিন অবস্থা চলে আসে, যেমনটি আজ সারাবিশ্বের মুজাহিদদের অবস্থা৷ যাদের মধ্যে পাকিস্তানে (ও বাংলাদেশে) শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইরত মুজাহিদরাও অন্তর্ভুক্ত, তখন সমস্ত মুসলমানদের ওপর বিশেষকরে প্রাচুর্যবান লোকদের ওপর এ দায়িত্ব বেড়ে যায় যে, তারা মুজাহিদদের এ প্রয়োজনটুকু পুর্ণ করে তাদেরকে এ ব্যপারে নির্ভাবনায় রাখবে, যেন তারা একাগ্রতার সাথে নিজেদের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের প্রতিরক্ষায় নিজেকে আত্মনিয়েজিত রাখতে পারে৷ ইসলমের প্রতিরক্ষার বিষয়টি যা কিনা সীমাহীন গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার পাশাপাশি স্পর্শকাতরও বটে, তা সর্বাবস্থায় অন্যান্য প্রয়োজনের তুলনায় অগ্রাধিকার পাওয়ার উপযুক্ত৷ এর অনুমান শাইখুল হিন্দ  রহ. এর সেই ঐতিহাসিক ফাতাওয়া দ্বারা করা যেতে পারে, যা তিনি দারুল উলুম দেওবন্দের প্লাটফর্মে প্রচার করেছিলেন যে, “অন্যান্য কাজে ওয়াকফকৃত সম্পত্তির অতিরিক্ত সম্পদ বলকান যুদ্ধে ও তুর্কি সেনাবাহিনীদেরকে দেয়া শুধু জায়েযই নয় বরং জরুরী”৷ আমরা বর্তমান পরিস্থিতিতে পথ প্রদর্শনের জন্য সেই ফাতাওয়াটি নিম্নে প্রকাশ করছি৷

ওয়াকফকৃত সম্পদ বলকান যুদ্ধ ও ওসমানী (তুর্কী) সেনাবাহিনীদের মাঝে ব্যয় করার ব্যাপারে শাইখুল হিন্দ রহ: এবং দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া

ইস্তিফতাঃ

সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মের মুফতিয়ানে কেরাম ও দ্বীনের ওলামায়ে কেরামের কি রায় এ মাসআলার ব্যপারে যে, একটি মসজিদ আছে, যাতে ওয়াকফের টাকা ব্যয় করা হয়৷ আর তাতে ওয়াকফের পদ্ধতি এই ছিল যে, ওয়াকফকারী একটি কোম্পানির কিছু শেয়ার ক্রয় করে ওয়াকফ করে দিয়েছে যার আয় মাসভিত্তিক জমা হয়ে থাকে এবং ধীরে ধীরে তার পরিমাণ আসলকে ছাড়িয়ে গেছে বা সমপরিমাণ হবে বা কিছু কম হবে এবং অবস্থা এই দাঁড়িয়েছে যে, নির্দিষ্ট সেই মসজিদটিতে এবং তার আশ-পাশের মসজিদেও বর্তমানে বরঞ্চ ভবিষ্যতেও দীর্ঘদিন যাবৎ কোন প্রয়োজন পড়বে বলে জানা নেই৷ এখন যদি সেই অতিরিক্ত শেয়ারগুলো যা তার আসলকে ছাড়িয়ে গেছে বিক্রি করে সেই মহান কাজ তথা বলকান যুদ্ধের আহত তুর্কী সেনাদের, এতিমদের, বিধবাদের ও তুর্কী সেনাবাহিনীর সাহায্যে ব্যয় করা হয় তাহলে কি তা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীয়তে বৈধ হবে?

সাথে সাথে মসজিদের নামে যেহেতু বিশেষ কোন সম্পত্তি ওয়াকফ করা নেই, বরং কোম্পানির সেই শেয়ার যা সম্মিলিত, তা থেকে বর্তমানে যে টাকা হাতে আছে, শুধু কি তাকেই এই খাতে ব্যয় করা জায়েয হবে? নাকি আসল ওয়াকফের আয় দ্বারা যে শেয়ার কেনা হয়েছে তাও বিক্রি করে এই খাতে দেয়া জায়েয হবে?

জবাব:

প্রশ্নে উল্লেখিত সুরতে উল্লেখিত ওয়াকফের অতিরিক্ত আয় আহত ও এতিমদের সাহায্যার্থে এবং উল্লেখিত যুদ্ধে ব্যয় করা শরীয়ত সমর্থিত ও জায়েয আছে৷ এবং সেই শেয়ার যা ওয়াকফের আয় দ্বারা ক্রয় করা হয়েছে তা উপরিউক্ত খাতে ব্যবহার করাও জায়েয৷ এ ব্যপারে ওয়াকফ সম্বন্ধীয় হাদিস সমূহ বর্ণিত আছে৷ তবে কিছু বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, মসজিদের ওয়াকফকৃত সম্পত্তির যে পরিমাণ আয় মুসলমানদের বিপদ-দুর্যোগ ও যুদ্ধ-বিগ্রহে ব্যয় করা হবে তা ঋণ স্বরূপ হতে হবে৷ এবং কিছু বর্ণনা দ্বারা জানা যায় যে, ঋণের শর্ত ছাড়াই তা ব্যবহার করা যাবে৷ কিন্তু যেই মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে এই পরিমাণ আয়ের টাকা জমা হয়ে থাকে যে, সে টাকা ঐ  মসজিদের বর্তমানেও প্রয়োজন নেই এবং সামনেও প্রয়োজন পড়বে বলে জানা নেই এবং সাথে সাথে আহতদের সাহায্য করার প্রয়োজনটা যখন এই পরিমাণ গুরুতর হয় যা কারো নিকট অষ্পষ্ট থাকে না, তখনতো ঋণ হিসেবে গণ্য করা ব্যতিত আহতদের সাহায্যার্থে তুর্কী যুদ্ধে ব্যয় করা শুধু জায়েযই নয় বরং জরুরী৷

ফাতহুল কাদীরে এসেছে-

’’ولو اجتمع مال الوقف ثم نابت نائبۃ من الکفرۃ فاحتیج إلی مال لدفع شرھم قال الشیخ الإمام (محمد بن فضل) ما کان من غلۃ وقف المسجد الجامع یجوز للحاکم أن یصرفہ إلی ذلك علی وجہ القرض إذا لم تکن حاجۃ للمسجد إلیہ‘‘۔

“যদি ওয়াকফের সম্পদ জমা হয়ে যায়৷ অতঃপর কাফেরদের পক্ষ থেকে এমন কোন বিপদাপদ এসে যায়, যা থেকে পরিত্রাণের জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়৷ শাইখ ইমাম মুহম্মাদ ইবনে ফজল রহ. বলেন, তাহলে সেক্ষেত্রে জামে মসজিদের ওয়াকফের যে টাকা আয় থাকে কাযীর জন্য তা উল্লেখিত খাতে ঋণ স্বরূপ ব্যয় করা জায়েয আছে, যদি আপাততঃ মসজিদের সে টাকার প্রয়োজন না থাকে”৷

সহীহ বুখারী শরীফে এসেছে-

وعن أبي وائل قال جلست مع شیبۃ علی الکرسي في الکعبۃ فقال لقد جلس ھذا المجلس عمر فقال لقد ھممت أن لا أدع فیھا صفراء ولا بیضاء إلا قسمتہ، قلت إن صاحبیك لم یفعلا، فقال ھما المرءان أقتدي بھما۔ (بخاری شریف: ج؛ ۱، ص؛۲۱۷)

“হযরত আবু ওয়ায়েল রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি কা’বা শরীফে হযরত শাইবা রা: এর সাথে চেয়ারে বসা ছিলাম৷ হযরত শাইবা রা: বললেন, হযরত ওমর রা: এ স্থানে বসে বলেছিলেন, আমি মনস্থ করেছি যে, কা’বার দেরহাম লোকদের মাঝে বন্টন করে দিব৷ আমি বলেছিলাম, আপনার দুই সাথী এমনটি করেনি৷ তিনি বললেন তাঁরা দু’জন এমন ব্যক্তি যাদেরকে আমি অনুসরণ করি”৷

উমদাতুল কারীতে এসেছে-

وقال ابن الصلاح الأمر فیھا (أي في کسوۃ الکعبۃ) إلی الإمام یصرفہ فی مصارف بیت المال بیعًا وعطاءً واحتج بما ذکرہ الأزرقي أن عمر کان ینزع کسوۃ الکعبۃ کل سنۃ فیقسمھا علی الحجاج (عمدۃ القاری: ج؛۴ ، ص؛۶۰۴) ‘‘۔

“ইবনুছ ছালাহ রহ. বলেন, কা’বা শরীফের গিলাফের ক্ষেত্রে কাযীর করণীয় হল, সে তা বাইতুল্লাহর ব্যয় খাতে ব্যয় করে ফেলবে। হয়তো দান করে দিবে বা বিক্রি করে দিবে৷ এবং তিনি দলিল প্রদান করেন আরযুক্বী রহ. এর বর্ণনা দ্বারা যে, হযরত ওমর রা: প্রতি বৎসরের কা’বার গিলাফ খুলতেন ও তা হাজ্বীদের মাঝে বন্টন করে দিতেন৷

আশবাহের পার্শ্বটিকা হামাবীতে এসেছে:

لا یصرف القاضي الفاضل من وقف المسجد إلی قولہ قیل بعاوضۃ ما في فتاویٰ فاضي خان في أن الناظر لہ صرف فاضل الوقف إلیٰ جھات البر بحسب ما یراہ الخ۔ القاعدۃ الخامسۃ عن الفن الأول، المجلد الأول ص؛۱۶۰ مصری‘‘۔

….ওয়াকফের তত্ত্ববধায়কের জন্য বৈধ আছে যে, তিনি তার বুঝ মত ওয়াকফের বর্ধিতাংশকে বিভিন্ন পুণ্যময় কাজে ব্যয় করবে….৷

উপরোক্ত ইবারত দ্বারা বুঝে আসে যে, সমকালীন এই প্রয়োজনে অর্থাৎ তুর্কী যুদ্ধের এতিম ও আহতদের সাহায্যে ঐ মসজিদের ওয়াকফ সম্পত্তির অতিরিক্ত আয় ব্যয় করা জায়েয আছে, যে মসজিদের বর্তমানেও কোন প্রয়োজন নেই এবং ভবিষ্যতেও তেমন কোন প্রয়োজন পড়বে না বলে আশা করা যায়৷ আর যে সমস্ত ফুকাহায়ে কেরামগণ এ শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যে, বিপদাপদে ঋণেৱ হিসেবে প্রদান করা হবে, তাদের উদ্দেশ্য হল যদি কখনো মসজিদের কোন প্রয়োজন পড়ে তাহলে তখন সে টাকা ফিরিয়ে এনে মসজিদে ব্যয় করা হবে৷ কিন্তু যখন সেই ওয়াকফকৃত সম্পত্তির আয় সর্বদা এই পরিমাণে বৃদ্ধি পেতে থাকে যে, যদি ধারণাপ্রসূত ভবিষ্যতে মসজিদের কোন প্রয়োজন পড়েও তাহলেও তা মসজিদের ভবিষ্যতের আয় দ্বারাই নিরসন করা সম্ভব, তখন অন্য খাতে খরচকৃত টাকাকে ঋণ বলার দরকার নেই৷ যেমনটি বুখারী উমদাতুল কারী ও হামাবীর ইবারতের উদ্দেশ্য৷

উত্তর লিখেছেন-

আযীযুর রহমান (উফিয়া আনহু)

মুফতি- মাদরাসায়ে আরাবিয়্যাহ দেওবন্দ

উত্তর সঠিক হয়েছে-

বান্দা মাহমুদ উফিয়া আনহু (শাইখুল হিন্দ রহ.)

উত্তর সঠিক হয়েছে-

মুহাম্মদ আনোয়ার শাহ্ আফাল্লাহু আনহু (কাশ্মীরি)

উপসংহার

এই ফতোয়াটি প্রকাশ করার পর আমি সম্পদশালী, প্রাচুর্যবান, জনকল্যাণ মূলক সংস্হা এবং দাতব্যকর্ম পরিচালকদের নিকট শুধু এতটুকু আরজ করতে চাই যে, আপনারা আপনাদের দায়িত্বটুকু অনুভব করার চেষ্টা করুন এবং পুণ্যের কাজে অগ্রগমন করুন৷ বর্তমানে প্রতিটি রণাঙ্গনেই মুজাহিদীন এবং জিহাদপ্রভাবিত বিধবা ও এতিমদের মুসলমানদের অর্থের প্রয়োজন৷ যেন জিহাদপ্রভাবিত লোকদের জন্য তা সহায়ক হতে পারে এবং যেন মুজাহিদগণ ইসলাম প্রতিরক্ষার কাজে লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন৷ প্রতিটি বিবেকসম্পন্ন ব্যক্তিই এই বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত আছে যে, কোন যুদ্ধের চাকাই অর্থের যোগান ছাড়া ঘুরানো যায় না৷ এ কারণেই আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারীমের অধিকাংশ জায়গায় জানের তুলনায় অর্থ দ্বারা জিহাদ করার আদেশ আগে দিয়েছেন৷ উপমহাদেশের প্রাচুর্যবান ব্যক্তিবর্গ, জনকল্যাণ মূলক সংস্থা এবং দাতব্যকর্ম পরিচালকদের উচিত যে, তারা কাফেরদের পক্ষ থেকে জারী করা “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ” এই শিরোনামের কারণে ব্যপকভাবে সারাবিশ্বের মুজাহিদীনে ইসলাম ও অসহায় মসলমানদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে এবং বিশেষকরে আফগানিস্তানে চলমান যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মুজাহিদদের প্রতি ও পাকিস্তানে পাক সেনাবাহিনী, গোপন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা, এবং শাসকশ্রেণীর জুলুম থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ধারাবাহিকতায় ভারত উপমহাদেশীয় আল কায়েদার অঙ্গসংগঠনের প্রতি তাদের দানের হাত প্রসারিত করবে এবং ওয়াকফ সম্পত্তির অতিরিক্ত আয়, নিজেদের যাকাত, সদকা, দান, নফল কুরবানী, জমির উশর ইত্যাদি দ্বারা ইমারতের ইসলামিয়া আফগানিস্তান ও আল কায়েদার মুজাহিদদের সাহায্য সহোযোগীতা করবে৷ আল্লাহ তাআলা আপনাদের প্রতিটি পয়সায় বিনিময়ে আখেরাত জান্নাতে প্রাসাদ দান করুন এবং আপনাদের জন্য জিহাদের সওয়াব লিখে দিন আমিন৷

এ রচনাটিতে শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ. এর সোনালী বাণী দ্বারা ইতি টানা হচ্ছে, তিনি বলেন-

“প্রাচুর্যবান ব্যক্তিদের উচিত নিজের সম্পদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার হুকুমের প্রতি মনোনিবেশ করা৷ বর্তমানে জিহাদের জন্য আর্থিক সহায়তার বড়ই প্রয়োজন৷ আজ মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমান হুমকির মুখে রয়েছে এবং চোখের সামনে তাদের গ্রামের পর গ্রাম জালিয়ে ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে; অথচ কত ধনবান ব্যক্তি এখনো নিজেদের খাহেশাতে নিমগ্ন রয়েছে৷ যদি এ সকল ধনী ব্যক্তি শুধুমাত্র একদিনের জন্য নিজেদের প্রবৃত্তিকে দমন করে, নিজেদের আরাম-আয়েশে সম্পদ ধ্বংস করা থেকে বিরত থাকে এবং সে সম্পদের মোড় আফগানিস্তানে লড়াইরত মুজাহিদদের দিকে ফিরিয়ে দেয়….  ঐসকল মুজাহিদদের প্রতি যারা ঠান্ডার তীব্রতায় কাতরাচ্ছে, যাদের খালি পায়ে বরফের ওপর চলা আজ অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেছে, যাদের ভাগ্যে খাওয়ার মত দু’বেলা রুটিও জোটে না, যাদের হাতে নিজেদের রক্ষা করার মত অস্ত্রটুকু পর্যন্ত নেই৷ আমি বলছি যে, যদি ধনবান ব্যক্তিরা তাদের শুধুমাত্র একদিনের খরচ ঐ সমস্ত আফগান মুজাহিদদের দেয়, তাহলে বাহ্যিক দৃষ্টির এই সামান্য কুরবানী অনেক বড় পরিবর্তনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং বিজয়ের পথে এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ৷

আল্লাহ তাআলা কাফেরদের ও তাদের দোসরদের মুকাবেলায় সকল মুসলমানদের সাহায্য ও বিজয় দান করুন এবং প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে মুজাহিদদের কামিয়াব করুন এবং পুরা দুনিয়াজুড়ে ইসলামেরই জয়-জংকার দান করুন এবং খেলাফত আ’লা মিনহাজিন নবুওয়াহ্ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে উন্নতি দান করুন, আমিন৷

 প্রথম পরিশিষ্ট

সম্রাট আব্দুল হামিদ খাঁনের যমানায় ওসমানীয় (তুর্কি) ও রুশদের মধ্যকার লড়াইয়ে মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. এর চাঁদা উত্তোলন কর্মসূচি গ্রহণ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে রাশিয়া শেষবারের মত ১৮৭৭ ও ১৮৭৮ সনে খেলাফতে ওসমানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়ায় এবং কাওকায এলাকায় হামলা করে৷ ঐসময় ওসমানীদের  সর্বশেষ শক্তিশালী সম্রাট খলীফা আব্দুল হামিদ সানী রহ. খেলাফতের মসনদে সমাসীন ছিলেন৷ সেসময় হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. ভারতবর্ষে খেলাফতে ওসমানীর সাহায্যের জন্য আন্দোলন শুরু করেন৷ তাঁর জীবনী লেখক মাওলানা নাসিম ফরিদী রহ. তাঁর স্মরণিকায় লিখেন-

’’وفات سے تقریباً تین سال پہلے ۱۲۹۴ھ میں سلطانِ ترکی (عثمانی) اور روس کی جنگ چھڑی تو حضرت قاسم العلوم﷫ بے چین ہوگئے اور اس سلسلے میں ترکوں کی مدد کے لیے تمام مسلمانوں سے چندے کی تحریک کی۔ حضرت﷫ کا ایک رسالہ بابت تحریکِ چندہ برائے عسکرِ سلطان عبد الحمید خاں مطبع ہاشمی میرٹھ میں چھپ کر شائع ہوا تھا اور اب قریب قریب نایاب ہے۔ اسی زمانے میں اس جنگ کے سلسلے میں ایک فتویٰ بھی مرتب فرمایا جس کو احقر نے قلمی شکل میں دیکھا ہے‘‘

“হযরতের মৃত্যুর প্রায় তিন বৎসর পূর্বে হিজরী ১২৯৪ সনে তুর্কিদের (ওসমানীয়দের) সাথে রাশিয়ার গন্ডগোল লাগলে হযরত কাসেমুল উলূম কাসেম নানুতুবী রহ. পেরেশান হয়ে যান এবং এরই ধারাবাহিকতায় তিনি সকল মুসলমানদের থেকে তুর্কিদের সাহায্যের জন্য চাঁদা উত্তোলন কর্মসূচি গ্রহণ করেন৷ সম্রাট আব্দুল হামিদ রহ. এর সেনাবাহিনীর জন্য চাঁদা উত্তোলন বিষয়ক হযরতের লেখা একটি পুস্তিকাও মিরাঠের হাশেমী ছাপাখানা থেকে গোপনে প্রকাশিত করা হয়, যা বর্তমানে প্রায়ই দুষ্প্রাপ্য৷ সেসময় তিনি সে যুদ্ধের ধারাবাহিকতায় একটি ফতোয়াও সংকলন করেছিলেন, যে ফতোয়াটির পান্ডুলিপিটি অধম দেখেছিল৷

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে আমরা জানাচ্ছি যে, ১৮৭৮ সনে রুশদের ওসমানীয় বিরোধী যুদ্ধটিই ছিল সেই সুযোগ, যা কাজে লাগিয়ে রাশিয়ান ভাল্লুকরা কাওকায শহরে অনুপ্রবেশ করে, এবং আজ দেরশো বছর যাবৎ মুসলমান ও রুশদের মাঝে কাওকায শহরে লড়াই চলে আসছে কিন্তু হযরত মাওলানা কাসেম নানুতুবী রহ. এর মত কাজ কি আর আজ কেউ করছে?

দ্বিতীয় পরিশিষ্ট

বলকান যুদ্ধ চলাকালীন নফল কুরবানীর মূল্য মুজাহিদিন ও আহত তুর্কীদের সাহায্যে প্রদান করা হবে

হিন্দুস্তানের গ্রান্ড মুফতি কেফায়াতুল্লাহ দেহলভী রহ. এর ফতোয়া

প্রশ্নঃ অধিকাংশ মুসলমান নফল কুরবানী করে থাকে৷ এখন তাদের জন্য এমন কুরবানীর মূল্য বলকানের আহত তুর্কীদের দিয়ে দেয়া কেমন? সাথে সাথে ফরজ কুরবানীর মূল্য বা তার চামড়া এই খাতে ব্যয় করা জায়েয হবে কিনা?

প্রশ্ন করেছেনঃ মাদরাসায়ে আমিনিয়্যাহ দিল্লী’র ছাত্রবৃন্দ, তারিখঃ ১৩ই নভেম্বর ১৯১২ ঈসায়ী৷

জবাবঃ যে সকল মুসলমানদের ওপর কুরবানী ওয়াজিব, তাদের জন্য কুরবানী করা আবশ্যক, মূল্য প্রদান করা জায়েয নেই৷ কিন্তু কুরবানীর চামড়া এবং নফল কুরবানীর মূল্য তারা ঐসকল বিপদগ্রস্ত মুসলমানদের দিতে পারবে যারা ইসলাম ও মুসলমানদের ইজ্জত রক্ষার্থে নিজেদের জান বিলীন করে দিচ্ছে৷ বরং এটাই উত্তম যে এ বৎসর নফল কুরবানীকে মুলতবী রাখা এবং তার সমপরিমাণ নগদ ক্যাশ আহত ও এতিমদের জন্য পাঠিয়ে দেয়া৷ প্রকাশ থাকে যে, মৃত নিকটাত্মীয়দের পক্ষ থেকে বিনা অসিয়তে যত কুরবানী করা হয় তা সবই নফল কুরবানীর অন্তর্ভুক্ত৷ সঠিকতর উত্তরের ব্যপারে আল্লাহই ভাল জানেন৷

উত্তরপ্রদানেঃ

কেফায়াতুল্লাহ (আফা আনহু) 

মুদাররিস- মাদরাসায়ে আমিনিয়্যাহ দিল্লী 

এই ফতোয়া দ্বারা জানা গেল যে, ওয়াকফের অতিরিক্ত সম্পত্তির পাশাপাশি নফল কুরবানীর মুল্যও কুফর ও ইসলামের লড়াইয়ে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদীন, আহত ও এতিমদের দেয়া উত্তম৷ যেন তারা এর সাহায্যে কাফেরদের আক্রমণ থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের রক্ষা করতে পারে৷

সমাপ্ত

  

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nine − 7 =

Back to top button