আরবগণতন্ত্র আর্কাইভফাতাওয়া-ফারায়েজবই ও রিসালাহশাইখ আবুন নুর আল ফিলিস্তিনী রহিমাহুল্লাহশামহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

ইসলামী দলের নামে পার্লামেন্টে যাওয়ার হুকুম কি ? শাইখ আবুন-নুন ফিলিস্তিনি

ইসলামী দলের নামে পার্লামেন্টে যাওয়ার হুকুম কি ?
শাইখ আবুন-নুন ফিলিস্তিনি

 

প্রশ্ন: কোন ইসলামী দলের নামে যে পার্লামেন্টে যায় তার হুকুম কি হবে, এবং যে ব্যক্তি কাফের দল সমূহের সাথে *চুক্তি করে ও অংশগ্রহন করে। এবং যে আমেরিকার সহায়তাকারী বাহিনীতে যোগ দেয়ার জন্য মুসলমানদের সন্তানদেরকে উদ্ভু্দ্ধ করে, যারা পরে মুজাহিদদেরকে কষ্ট দিচ্ছে, দুর্বল করছে ও শেষ করে দিচ্ছে। তাদের হুকুম কি হবে?

উত্তর: সমস্ত প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য। হে প্রিয় ভাই! তোমার প্রশ্নে যা উল্ল্যেখ করেছ তাতে তিনটি কুফুরী কাজ পাওয়া যায়।

প্রথম বিষয়: আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত শরিয়ত প্রনয়নের ক্ষেত্রে অংশ গ্রহন করা।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ


তাদের কি এমন শরীক আছে, যারা তাদের জন্যে সে ধর্ম প্রনয়ন করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি ? ( শুরা : ৪২ )
সুতরাং এই সমস্ত মানব রচিত নিয়ম নীতির প্রনয়ন যার মাধ্যমে ত্বাগুতরা আল্লাত তায়ালা কতৃক হারামকে বৈধ করছে আর আল্লাহ তায়ালার হালালকে আইন বিরোধী ঘোষনা করছে এবং আল্লাহ তায়ালার হুদুদকে বাতিল করছে, ইহা আসমান-জমীনের প্রভুর সাথে স্পষ্ট কুফুরী ও এমন জিনিসে অংশীদারিত্ব করছে যাকে প্রনয়নের অধীকার তিনি ছাড়া আর কারোর নেই। কেননা আইন-কানুন প্রনয়ন এমন বৈশিষ্ট্য যা ইলাহ ও রবের মাধ্যেই সীমাবদ্ধ। *সুতরাং আল্লাহ তায়ালা ব্যতিত যে ব্যক্তি শরীয়ত প্রনয়ন করল এবং ত্বাগুতি আইন প্রনয়নকারী বৈঠকে মিলিত হল এবং তাদের শিরকী দায়িত্বসমূহে অংশগ্রহন করল যে নিস্বন্দেহে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত কাফেরে পরিনত হবে।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রা:) বলেন:

 

( والإنسان متى حَلّل الحرام المُجمع عليه ، أو حرَّم الحلال المجمع عليه، أو بدّل الشرع المجمع عليه، كان كافراً باتفاق الفقهاء.) مجموع الفتاوى (3/267).


কোন মানুষ যখন ঐক্যমতে সাব্যস্ত হালালকে অবৈধ করে ও হারামকে অনুমতি দেয় অথবা দ্বীনের সন্দেহ হীন কোন বিষয়কে পরিবর্তন করে, তাহলে সমস্ত ফুকাহাদের ঐক্যমতে যে কাফের বলে পরিগনিত হবে।

দ্বিতীয় বিষয়: তারা ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের সাথে সন্ধুত্ব করছে যারা সত্য দ্বীনের সাথে কুফুরী করছে। ( ইরাক হিসেবে; কারণ প্রশ্নকারী ভাই সেখানের ) ঐ সমস্ত রাফেজীদের সাতে যারা গায়েবের ইলমের অধিকারী আল্লাহ তায়ালাকে জাহালাতের তুহমাত দিচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা তাদের কথা ও কুফুরী থেকে পূর্ন মুক্ত। তারা আরো বলে আমাদের হাতে থাকা কুরআন পরিবর্তিত বরং সঠিক কুরআন হচ্ছে ফাতেমী কুরআন যা নাযিল হয়েছে ফাতেমা রাদি: এর উপর এবং আল্লাহর নবীর ওফাতের ছয় মাস পর পর্যন্ত তার উপর ওহীর অবতরণ চালু ছিল !!! এই জন্যই তারা উম্মুল মূ’মীনিন এর উপর মিথ্যারোপ করে যার পবিত্রার ঘোষনা দিয়ে সাত আসমানের উপর থেকে আয়াত নাযিল হয়েছে …. এছাড়াও তাদের অন্য সব কুফুর ও শীরক তো রয়েছেই । ( এই অঞ্চলের ভিত্তিতে হবে যারা অসঙ্খ্য কুফুরী আইন প্রনয়ন ও মুসলমানদের বিরোদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য তো আছেই সাথে সাথে তারা নাস্তিকদেরকে তাদের নাস্তিকতা ছড়ানোর জন্য সুযোগ করে দিচ্ছে ও তাদের পক্ষ হয়ে প্রতিরোধ করছে )। যারা এই সমস্ত কাফেরদের সাথে সম্পর্ক করবে আল্লাহ তায়ালার সাথে তার কোন সম্পর্ক থাকবে না।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

 

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا * إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا


হে ঈমানদারগণ! তোমরা কাফেরদেরকে বন্ধু বানিও না মুসলমানদের বাদ দিয়ে। তোমরা কি এমনটি করে নিজের উপর আল্লাহর প্রকাশ্য দলীল কায়েম করে দেবে? নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা রয়েছে দোযখের সর্বনিম্ন স্তরে। আর তোমরা তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না। ( নিসা: ১৪৪-১৪৫ )

অন্য আয়াতে বলেন:

 

{ أَفَحَسِبَ الَّذِينَ كَفَرُوا أَنْ يَتَّخِذُوا عِبَادِي مِنْ دُونِي أَوْلِيَاءَ إِنَّا أَعْتَدْنَا جَهَنَّمَ لِلْكَافِرِينَ نُزُلًا ! قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْأَخْسَرِينَ أَعْمَالًا ! الَّذِينَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا ! أُولَئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ رَبِّهِمْ وَلِقَائِهِ فَحَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فَلَا نُقِيمُ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَزْنًا ! ذَلِكَ جَزَاؤُهُمْ جَهَنَّمُ بِمَا كَفَرُوا وَاتَّخَذُوا آيَاتِي وَرُسُلِي هُزُوًا }


কাফেররা কি মনে করে যে, তারা আমার পরিবর্তে আমার বান্দাদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করবে? আমি কাফেরদের অভ্যর্থনার জন্যে জাহান্নামকে প্রস্তুত করে রেখেছি। বলুনঃ আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিবজীবনে বিভ্রান্ত হয়, অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে। তারাই সে লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। সুতরাং কেয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন গুরুত্ব স্থির করব না। জাহান্নাম-এটাই তাদের প্রতিফল; কারণ, তারা কাফের হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে। ( কাহাফ ১০২-১০৬ )

তৃতীয় বিষয়: আল্লাহ তায়ালা যাদেরকে দ্বীন থেকে গাফেল করে দিয়েছেন তাদেরকে উল্ল্যেখিত ব্যক্তিরা জাগরণের আহ্বান জানানোর কারণে তারা আক্রমন কারী শত্রু ক্রুশের পূজারী ও তার মিত্রদের পক্ষে অস্ত্র উত্তোলন করছে। এবং দুই নদের দেশে অত্যাচার ও শিকরকে আরা দৃঢ় করছে। এবং দ্বীনের পথের মুজাহিদ তাওহীদবাদী ভাইদেরকে হত্যা করছে। তাদের রক্ত প্রবাহিত করছে, তাদের সম্মান বিনষ্ট করছে, তাদের সম্পদ দখল করছে ও তাদেরকে বাসস্থান থেকে বের করে দিচ্ছে এবং এই ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। সুতরাং এই সমস্ত জামাতে অংশ গ্রহন করা এবং তাদের কাতারে শামীল হয়ে দ্বীনের সাহায্যকারীদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আহ্বান ও উদ্বুদ্ধ্য করা, ইহা আল্লাহ তায়ালার *সাথে স্পষ্ট কুফুর ও ইরতিদাদ।

আল্লাহ তায়ালা উল্ল্যেখ করেন:

 

إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَىٰ إِخْرَاجِكُمْ أَن تَوَلَّوْهُمْ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٦٠:٩]


আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম।

তিঁনি আরো বলেন:

 

تَرَىٰ كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ [٥:٨٠]


আপনি তাদের অনেককে দেখবেন, কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা নিজেদের জন্য যা পাঠিয়েছে তা অবশ্যই মন্দ। তা এই যে, তাদের প্রতি আল্লাহ ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা চিরকাল আযাবে থাকবে।

অন্য আয়াতে এসেছে:

 

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا بِأَمْوَالِهِمْ وَأَنفُسِهِمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَالَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يُهَاجِرُوا مَا لَكُم مِّن وَلَايَتِهِم مِّن شَيْءٍ حَتَّىٰ يُهَاجِرُوا ۚ وَإِنِ اسْتَنصَرُوكُمْ فِي الدِّينِ فَعَلَيْكُمُ النَّصْرُ إِلَّا عَلَىٰ قَوْمٍ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُم مِّيثَاقٌ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ * وَالَّذِينَ كَفَرُوا بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ إِلَّا تَفْعَلُوهُ تَكُن فِتْنَةٌ فِي الْأَرْضِ وَفَسَادٌ كَبِيرٌ * وَالَّذِينَ آمَنُوا وَهَاجَرُوا وَجَاهَدُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالَّذِينَ آوَوا وَّنَصَرُوا أُولَٰئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُم مَّغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ


এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যারা ঈমান এনেছে, দেশ ত্যাগ করেছে, স্বীয় জান ও মাল দ্বারা আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য সহায়তা দিয়েছে, তারা একে অপরের সহায়ক। আর যারা ঈমান এনেছে কিন্তু দেশ ত্যাগ করেনি তাদের বন্ধুত্বে তোমাদের প্রয়োজন নেই যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগ করে। অবশ্য যদি তারা ধর্মীয় ব্যাপারে তোমাদের সহায়তা কামনা করে, তবে তাদের সাহায্য করা তোমাদের কর্তব্য। কিন্তু তোমাদের সাথে যাদের সহযোগী চুক্তি বিদ্যমান রয়েছে, তাদের মোকাবেলায় নয়। বস্তুতঃ তোমরা যা কিছু কর, আল্লাহ সেসবই দেখেন। আর যারা কাফের তারা পারস্পরিক সহযোগী, বন্ধু। তোমরা যদি এমন ব্যবস্থা না কর, তবে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বিস্তার লাভ করবে এবং দেশময় বড়ই অকল্যাণ হবে। আর যারা ঈমান এনেছে, নিজেদের ঘর-বাড়ী ছেড়েছে এবং আল্লাহর রাহে জেহাদ করেছে এবং যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছে, সাহায্য-সহায়তা করেছে, তাঁরা হলো সত্যিকার মুসলমান। তাঁদের জন্যে রয়েছে, ক্ষমা ও সম্মানজনক রুযী। ( *আনফাল- ৭২-৭৪ )

এই তিনটা এমন কুফুরী বিষয় যার একটা যদি কোন মানুষের মধ্যে পাওয়া যায় তাকে কাফের বানিয়ে দিবে। সুতরাং প্রশ্নে উল্ল্যেখিত ব্যক্তিদের কি অবস্থা হবে যাদের মধ্যে সবগুলোই পাওয়া গেছে।

এই সমস্ত ইসলামী নামধারী দলগুলোর নেতা ও প্রশাষনিক লোকেরা যতদিন কুফুরীতে লিপ্ত থাকবে ততদিন তাদের জামাআহ বা ব্যক্তিদের ইসলামী নামের দিকে ভ্রুক্ষেপ করা হবে না। কেননা ইহা আহলে সুন্নাহ ও জামাআহ এর নিকট কখনোই কাফের বলা থেকে বাধা দান কারী বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত ছিল না। সুতরাং যতদিন এই সমস্ত ইসলামী নামধারী পার্লামেন্ট বা প্রশাষনিক কোন ব্যক্তির মধ্যে তাকফীরের শর্ত সমূহ পূর্ণরূপে বিদ্যমান থাকবে ততদিন তাদেরকে তাকফীর থেকে কোন কিছু বাধা দিবে না।

هذا والله تعالى أعلم وأحكم، وصلى الله على نبينا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 2 =

Back to top button