আরবআল-হিকমাহ মিডিয়াইতিহাস- ঐতিহ্যবই ও রিসালাহবই ও রিসালাহ [আল হিকমাহ]মিডিয়াশাইখ ইউসুফ আল উয়াইরী রহিমাহুল্লাহসৌদী আরবহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

জিহাদের পথে ৮ টি বাঁধা – মূল শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরি (রহিমাহুল্লাহ)

 ————————–  

জিহাদের পথে ৮ টি বাধা

শাইখ ইউসুফ আল উয়াইরি (রহিমাহুল্লাহ)

অনুবাদ – বিলাল আব্দুল কারিম (বাঙ্গালী)

একজন মুজাহিদ সবচেয়ে বড় যে বিজয় অর্জন করে তা হচ্ছে তার নিজের নফসের বিরুদ্ধে এবং দুনিয়ার সাথে তার সম্পর্কের বিরুদ্ধে। একজন মুজাহিদ এমন একটি ক্ষেত্রে বিজয় লাভ করেন যেখানে প্রায় সমগ্র উম্মাহই ব্যর্থ – তা হচ্ছে ত্যাগ ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর ক্ষেত্রে। আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল বলেন,

قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ

বল, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর, আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করার থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর চূড়ান্ত নির্দেশ বা আল্লাহর শাস্তি আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে, অবাধ্য আচরণকারীদের, আদেশ অমান্যকারীদের হেদায়েত করেন না। (সূরা তাওবা, ২৪)

প্রিয় ভাইয়েরা, এই আয়াতে একজন মুসলমান ও আল্লাহর পথে জিহাদের মধ্যে আটটি বাঁধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই আয়াত জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ এর পথে আটটি প্রতিবন্ধকতার কথা বলছে। এবং আরও যদি অন্যান্য বাঁধা থাকে তবে সেগুলোও এই আটটির সাথে সম্পর্কিত। এই আটটি প্রতিবন্ধকতা কী কী?

প্রথমত ‘তোমাদের পিতা’। বিশেষ করে আমরা এমন একটি সময়ে আছি যখন এই উম্মাহ জানে না বা বোঝে না যে ইসলামের প্রতি তাদের কী করণীয়। এই উম্মাহ আল্লাহকে ভালবাসে, রাসূলকে (স) ভালবাসে, তারা প্রকৃত মুসলমান হতে চায়, তারা মুসলমান হিসেবে গর্ব বোধ করে, কিন্তু তারা আসলে বুঝতে পারে না যে আল্লাহ তাদের কাছে কী প্রত্যাশা করেন, তারা বুঝতে পারে না যে রাসূল (স) তাদেরকে কী আদেশ করেছেন। বর্তমান সময়ে জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ হচ্ছে ফরয-এ-আঈন। কিন্তু এরকম পিতামাতা খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর যারা তাদের সন্তানদের আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার অনুমতি দিবেন। তাই, যখন আল্লাহ বলছেন তোমাদের পিতাগণ একটি বাঁধা, বর্তমানে ঠিক সেরকম পরিস্থিতিই বিরাজ করছে। পিতাগণ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। উম্মাহর বেশিরভাগ পিতাই তাদের সন্তানদের আল্লাহর পথে জিহাদ করার অনুমতি দিবেন না।

এবং খাত্তাব (রহ.) বলেছেন যে

যদি আমরা আমাদের পিতাদের অবাধ্য না হতাম, আমরা কেউই জিহাদে অংশগ্রহণ করতে পারতাম না। আমাদের পিতার অবাধ্য হতে হয়েছিল।

এক্ষেত্রে পিতামাতার অবাধ্য হওয়া একটি পুণ্যের কাজ। গুরুত্বের দিক থেকে আল্লাহর পর পিতামাতার আদেশ মান্য করার স্থান দ্বিতীয়তে। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের অমান্য করা একটি পুণ্যের কাজ কারণ আপনি আল্লাহর জন্য তাদেরকে অমান্য করছেন। তাই, আপনি আপনার পিতামাতার আদেশ মান্য করবেন ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ তাদের আদেশ আল্লাহর আদেশের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না। যখনই তাদের আদেশ আল্লাহর আদেশের বিপরীতমুখী হবে, তখন আপনি কোনটা বেছে নেবেন? আপনি আল্লাহর আদেশ মানবেন নাকি পিতামাতার? এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে আপনাকে আল্লাহর আদেশই মানতে হবে। সব কিছুর উপর আল্লাহর আদেশকে স্থান দিতে হবে।

সুতরাং, কেউ যদি সাধারণভাবে পিতামাতার অনুগত থাকেন কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তাদের অমান্য করেন তবে বুঝতে হবে তিনি সংস্কৃতির কারণে নয় বরং আল্লাহর জন্যই পিতামাতার আনুগত্য করেন। এতে এটাই প্রমাণিত হয় যে পিতামাতার আনুগত্য করার সঠিক নিয়ত রয়েছে তার।

কারণ এমন অনেক লোক আছে যারা শুধু সংস্কৃতির কারণে পিতামাতার আনুগত্য করেন। আবার এমন অনেকে আছেন যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য পিতামাতার আনুগত্য করেন, তারা পিতামাতার প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করেন শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। তাই, যখন আল্লাহ ও পিতামাতার আদেশ সাংঘর্ষিক হয় তখন তারা আল্লাহর আদেশকে প্রাধান্য দেন। তো, এটাই হচ্ছে প্রথম বাঁধা।

দ্বিতীয়ত ‘তোমাদের সন্তান’। আপনাদের মধ্যে যারা বিবাহিত তারা বুঝবেন যে সন্তান কতখানি প্রিয় হতে পারে। হাদিসে বলা হয়েছে সন্তান তোমাদের কৃপণ ও কাপুরুষে পরিণত করে। যাদের সন্তান আছে তাদের এ দুটো রোগ দেখা দেয় তবে তারা ব্যতীত যাদের উপর আল্লাহর রহমত রয়েছে। কেন সন্তান একজন মানুষকে কৃপণ ও কাপুরুষে পরিণত করে? কারণ “আমাকে এখন পরিবার সামলাতে হয়। সন্তানদের কাপড় দিতে হয়। তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। আমাকে এটা করতে হয়, সেটা করতে হয়।” তাই, টাকা দেয়ার কথা আসলে তাদের হাত সংকীর্ণ হয়ে যায় এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার ক্ষেত্রে সন্তান-সন্ততির উপস্থিতি তাদেরকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করে।

তো, এরকম অনেক লোক আপনি পাবেন যাদেরকে যদি জিজ্ঞেস করেন তারা কেন জিহাদে অংশগ্রহণ করে না, তারা বলে আমার জিহাদ হচ্ছে পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ করা। এটাই আমার জিহাদ। নিজেকে আল্লাহর পথের মুজাহিদ ভেবে সে নিজেকেই বোকা বানাচ্ছে। তার এবং আল্লাহর পথে জিহাদের মধ্যে তার সন্তান ও পরিবার একটি বড় বাঁধা। এটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত যে এই রোগটি সেইসব ভাইদেরও হয় যারা আল্লাহর পথে জিহাদকে বোঝেন এবং এক সময়ে তারা আল্লাহর পথে মুজাহিদ ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর যখন তাদের সন্তান হয়, হঠাতই এগুলো তাদের পেছনে বসে থাকার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটা এমন এক ফিতনাহ যা তাদেরকে দুনিয়ার সাথে আঁকড়ে ধরে রাখে।

একারণে একজন বিবাহিত পুরুষ, যার সন্তান আছে, একজন অবিবাহিত পুরুষের চেয়ে, যার এমন কোন পিছুটান নেই, বেশি সওয়াব পাবেন। এবং সাহাবাদের (রা) সময় এ ফিতনাহ ছিল পরিপূর্ণ – তাদের অনেকেরই দুই, তিন বা চার জন স্ত্রী ছিলেন, আপনার একটি বা দুটি সন্তান আছে আর তাদের অনেক সন্তান ছিল, অন্যদিকে পরিবারের পেছনে ব্যয় করার মত সম্পদ ছিল তাদের খুবই সীমিত। তাই তাদের ক্ষেত্রে এ ফিতনাহ ছিল একদম পরিপূর্ণ। একারণে তারা যখন আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তা ছিল খুবই বড় একটি পদক্ষেপ। তো, জিহাদের ক্ষেত্রে পরিবার হচ্ছে খুবই বড় একটি ফিতনাহ।

যখন রাসুল (স) হিজরত করলেন, তা প্রথম দিকে ফরয-এ-আঈন ছিল, তা ছিল বাধ্যতামূলক। তো মক্কার অনেক মুসলমান হিজরত করতে চাইলেন। এই হিজরত ছিল খুবই বড় একটি ত্যাগ।

নিজের ভূমি, ব্যবসা-বাণিজ্য ছেড়ে যাওয়া খুবই বড় মাপের ত্যাগ। কারণ মক্কার কাফের মুশরিকরা তাদের কোন সম্পদ সাথে নিতে দেয় নি। তারা মুসলমানদের স্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল। মুহাজিররা তাদের সাথে কোন সম্পদই নিয়ে যেতে পারেননি। নিজের ভূমি ছেড়ে তারা অচেনা ভূমিতে যাচ্ছিলেন যেখানে  তাদের কোন অর্থনৈতিক সাহায্য ছিল না। এটা ছিল খুবই কঠিন এক পরিস্থিতি।

তো, মক্কার কিছু মুসলিম হিজরত করতে চাইলেন। তখন তাদের সন্তান ও স্ত্রীগণ তাদেরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল, এখানে আমাদের কোন সাহায্যকারী নেই, আমাদের দেখাশুনা করার মত কেউ নেই। কার জন্য আমাদের ছেড়ে যাচ্ছেন? ফলে সেই মুসলমানদের মন গলে গেল এবং তারা মক্কায় থেকে গেলেন। কেন? পরিবারের দেখাশুনা করার জন্য।

বেশ কয়েক বছর পর রাসুল (স) ও সাহাবাগণ মক্কা বিজয় করে ফিরে এলেন। ওই মুসলমানগণ যারা পেছনে রয়ে গিয়েছিলেন তারা আল্লাহর কেবল মাত্র একটি আদেশ অমান্য করেছিলেন যে তারা হিজরত করেন নি। যার ফলাফল স্বরূপ তারা রাসুল (স) এর সাথে জিহাদ করতে পারেন নি, রাসুল (স) এর হালাকায় অংশগ্রহণ করতে পারেন নি, মসজিদে নববিতে রাসুল (স) এর খুতবা শুনতে পারেন নি, রাসুল (স) এর তালবিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারেন নি এবং মদীনার ইসলামি সমাজে বসবাস করতে পারেন নি। তারা এত সব থেকে বঞ্চিত হলেন শুধুমাত্র একটি আদেশ অমান্য করার কারণে।

ইবনুল কাইয়ুম (র) বলেন,

পাপ ও পুণ্য কাজ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। তারা মাত্র একটি পাপ করেছিলেন যা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে তারা অনেক পুণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

এই উদাহরণটির দিকে লক্ষ্য করুন – ধরুন নামাজের সময় হয়েছে এবং আপনি বাড়িতে বসে আছেন। আপনি জামাআতের সাথে নামাজ আদায় করার সিদ্ধান্ত নিলেন। এটা হচ্ছে একটি পুণ্য কাজ। আপনি বাড়ি থেকে বের হয়ে মসজিদে যাচ্ছেন, প্রতি পদক্ষেপে সওয়াব পাচ্ছেন; মুসল্লিদের সালাম দেয়ার কারণে সালামের সওয়াব পাচ্ছেন; তাদের সাথে মুসাফা করার সময় আপনার পাপ ঝড়ে পড়ছে; তারপর জামাআতে নামাজ আদায় করার জন্য সে সওয়াব পেলেন; তারপর জিকির করলেন এবং জিকিরের সওয়াব পেলেন; তারপর সুন্নত নামাজ আদায় করে সে সওয়াব পেলেন; এবং সবশেষে বাড়ি ফেরার সময়ও প্রতি পদক্ষেপে সওয়াব পেলেন। খেয়াল করুন কিভাবে একটি পুণ্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেল। আবার আপনি যদি বাড়িতে বসে থাকতেন তাহলে এই সমস্ত সওয়াব থেকে বঞ্চিত হতেন।

অন্যদিকে পাপ কাজও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। যেমন – একজন মদ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল, মাতাল হল, কাউকে হত্যা করল বা জিনাহ করে ফেলল বা অন্য কোন পাপ কাজ করল। এখানেও পাপ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি সে মদ না খেত তাহলে তার হয়ত এতগুলো পাপ করা হত না। তাই, পাপ ও পুণ্য কাজ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।

এখন, যখন রাসুল (স) ও সাহাবীরা (রা) ফিরে আসলেন, মক্কার ঐ মুসলমানগণ দেখলেন যে মুহাজির সাহাবীরা (রা) রাসুল (স) এর সাথে এই বছরগুলো থাকার কারণে অনেক মর্যাদার অধিকারী হয়েছেন। তারা বদর, উহুদ, আল খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, রাসুল (স) এর সান্নিধ্যে জ্ঞান অর্জন করেছেন, পুরো কোরআন মুখস্থ করেছেন; অন্যদিকে মক্কার মুসলমানগণ এতসব পুণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

পরিবারের কারণে এত পুণ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে মক্কার মুসলমানগণ খুব হতাশ হলেন। তখন আল্লাহ আয়াত নাজিল করলেন, তোমাদের স্ত্রী-সন্তানদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের শত্রু। তাদের থেকে সাবধান থাক। যাদেরকে তোমরা তোমাদের মিত্র ভাবছ, দুনিয়াতে সবচেয়ে কাছের মানুষ ভাবছ, তোমাদের স্ত্রী ও সন্তানরা, আল্লাহ বলছেন তারা তোমাদের শত্রুও হতে পারে।

তখন ঐ মুসলমানগণ ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের প্রহার করতে লাগলেন, দেখ তোমাদের জন্য আমরা কত পুণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছি।

আল্লাহ তখন এই আয়াতের বাকি অংশ নাজিল করলেন, যদি তোমরা ক্ষমাশীল হও, আল্লাহকেও ক্ষমাশীল ও দয়াবান পাবে। এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। তাদেরকে প্রহার করা কোন কাজেই আসবে না। তাই আল্লাহ বলছেন, তোমাদের একটি পথই খোলা আছে তা হল ক্ষমার পথ। তোমরা ঐ সওয়াব থেকে বঞ্চিত হয়েছ এবং এখন আর কিছু করার নেই।

তাই, আমাদেরকে খুবই সতর্ক হতে হবে, বিশেষ করে ঐসব ভাইদের যারা জিহাদ এবং বর্তমানে জিহাদের প্রয়োজনীয়তা বোঝেন এবং তারা হয়ত একসময় মুজাহিদ ছিলেন। তাদেরকে অনুধাবন করতে হবে জিহাদের তুলনায় পরিবারের গুরুত্ব কতখানি যখন জিহাদ ফরয-এ-আঈন। তাই জিহাদকে পরিবার ও সন্তান সহ সকল কিছুর উপর প্রাধান্য দিতে হবে। তো, এটা হচ্ছে দ্বিতীয় বাঁধা।

তৃতীয়ত ‘তোমাদের ভাইগণ’। ভাইরাও জিহাদের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়াতে পারে। তারা আপনাকে সহযোগিতা করবে না। আপনি জিহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য পরিবার বা ব্যবসা যেটাই পেছনে রেখে যাবেন তারা তার দেখভাল করবে না।

এর পরে আসছে ‘তোমাদের গোত্র’। বর্তমানে একে আমরা বলি জাতি, মাতৃভূমি, দেশ। এবং জাতীয়তাবাদ একটি প্রতিবন্ধকতা।

লোকদের দেখবেন আল্লাহর পথে জিহাদের চেয়ে তারা জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়। তারা বলে দেশে শান্তি বজায় রাখা দরকার এবং দেশকে বিপদমুক্ত রাখা প্রয়োজন। কেন? কারণ এটা দেশের জাতীয় বা গণ স্বার্থ। তারা বোঝে না যে আমাদের উচিৎ আল্লাহর দ্বীনের স্বার্থ দেখা, দেশের স্বার্থ নয়।

আমাদের উচিৎ জাতিগত পরিচয় ভুলে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করা। অনেক ভাইরা এবং অনেক সংগঠন জিহাদ থেকে দূরে থাকে “জাতিকে বিপদমুক্ত” রাখার অযুহাতে। আর এটা মানুষ ও জিহাদের মধ্যে একটি বাঁধা।

যেমন ধরুন, কিছু কিছু মুসলিম দেশ বলে যে আমাদের এখানে জিহাদ প্রয়োজন নেই কারণ জিহাদ করলে কাফেররা আমাদের দেশ আক্রমণ করবে, দখল করবে।

আল্লাহর পথে জিহাদ না করার পেছনে এটা কোন যুক্তিই হতে পারে না। আল্লাহ যা চান আপনাকে তাই করতে হবে, আর ফলাফল আল্লাহর হাতেই ছেড়ে দিতে হবে। যদি আল্লাহ নির্ধারিত করে থাকেন যে আল্লাহর শত্রুরা আপনাদের দেশ আক্রমণ করে দখল করবে, তাহলে সেটা তো আল্লাহরই কদর।

আপনি তাই করবেন যা আল্লাহ আপনাকে করতে বলেছেন। এই মহাবিশ্ব আপনি পরিচালনা করছেন না বরং আল্লাহই পরিচালনা করছেন। সুতরাং ফলাফল আল্লাহরই উপর ছেড়ে দিন। আল্লাহ আমাদের জিহাদ করতে বলেছেন এবং আমরা এটা ইবাদাত হিসেবে করব।

অনেক মুসলমান আছেন যারা জাতীয়তাবাদের জন্য, দেশের জন্য যুদ্ধ করেন, কিন্তু আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করেন না। তারা মুসলমানদের সম্মানের জন্য যুদ্ধ করেন না, তারা আল্লাহর দ্বীনের সম্মানের জন্য যুদ্ধ করেন না। তারা জানতে পারেন যে কোরআনকে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করা হচ্ছে, কিন্তু তারা সে ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নেন না।

কিন্তু তাদের রাষ্ট্রপ্রধান বা রাজা যদি বলেন যে চল আমরা ঐ দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি তাহলে তারা যুদ্ধে যাবার জন্য তৈরি হয়ে যাবে, যদি তাদের প্রতিপক্ষ একটি মুসলিম দেশও হয়। তারা জাতীয়তাবাদের জন্য যুদ্ধ করবে কিন্তু ইসলামের জন্য নয়।

পরবর্তী বাঁধা হচ্ছে ‘তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ এবং তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর’। এই দুটি আলাদা হলেও একে অপরের সাথে সম্পর্কিত। অর্জিত সম্পদ, টাকা, স্থাবর সম্পত্তি, ব্যবসা এবং ব্যবসার আসু লাভ আল্লাহর পথে জিহাদ ও মুসলমানের মধ্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।

কিছু লোক তাদের দোকানের কারণে, কিছু লোক তাদের রেস্তোরাঁর কারণে এবং কিছু লোক এই কারণে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন না যে তারা কোন অফিসের কর্মচারী। অথচ আল্লাহ এগুলোকে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

ভাই ও বোনেরা জিহাদে অংশগ্রহণ না করার জন্য কারণ খোঁজেন। তারা বলেন দাওয়াহই জিহাদ, আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার, আমি আল্লাহর দ্বীনের জন্য কাজ করছি, আমি একজন শিক্ষক, আমি একজন ডাক্তার। কিন্তু জিহাদ যদি ফরয-এ-আঈন হয় তবে আপনাকে তা করতেই হবে। হ্যাঁ, এটা গুরুত্বপূর্ণ যে উম্মাহর জন্য ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক এবং সকল পেশাজীবী প্রয়োজন, কিন্তু আপনি কি এটা বলতে পারেন যে আমি একজন ডাক্তার তাই আমি নামাজ পড়ব না এবং রোজা রাখব না? কেউ কি এমন বলে? তাহলে, জিহাদ ও নামাজের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? আমরা ইতোমধ্যে বলেছি যে আল্লাহর পথে জিহাদ হচ্ছে নামাজ ও রোজার মতই বাধ্যতামূলক।

আল্লাহ বলছেন ‘তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর’। আনসাররা যখন রাসুলকে (স) বাইয়াত দিলেন যে তারা নিজেদের পরিবারকে যেভাবে রক্ষা করে ঠিক সেভাবেই রাসুলকে (স) রক্ষা করবেন, তা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি শপথ। কারণ রাসুল (স) তাদেরকে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে, এক যুদ্ধ থেকে আরেক যুদ্ধে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ফলে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। তারা ঠিকভাবে তাদের কৃষিকাজের খেয়াল রাখতে পারছিলেন না। আপনারা জানেন কৃষিকাজ সপ্তাহে পাঁচদিন অফিস করার মত কাজ নয়, বরং তার জন্য নিবিড় ও নিয়মিত পরিচর্যা প্রয়োজন। কৃষির ক্ষেত্রে আপনি বলতে পারবেন না যে আমার ছুটি দরকার, আমি সপ্তাহে পাঁচদিন গাছের যত্ন নিব এবং গ্রীষ্মে আমাকে ছুটি দিতে হবে। আপনাকে নিবিড় পরিচর্যা করতে হবে। আনসারদের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল কারণ তারা কৃষিকাজে সময় দিতে পারছিলেন না।

তাই, যখন রাসুল (স) মক্কা মুক্ত করলেন, আনসাররা ভাবলেন, আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আমাদের কাজ শেষ করেছি, রাসুলকে (স) সাহায্য করেছি এবং তাঁর মাতৃভূমি এখন মুক্ত। এখন আমরা ফিরে যেতে পারি এবং আমাদের কৃষিকাজে মন দিতে পারি। আমাদের যা করা দরকার ছিল আমরা করেছি এখন আমরা ফিরে গিয়ে আমাদের ব্যবসার দিকে নজর দিতে পারব।

আল্লাহ তখন আয়াত নাজিল করলেন, তোমাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না। আনসারদের কৃষিকাজে ফিরে যাওয়াকে আল্লাহ ধ্বংসের কাজ বললেন যদিও তখন তাদের জন্য জিহাদ ফরয-এ-আঈন ছিল না। তখন জিহাদ ছিল ফরয-এ-কিফায়া। তা ব্যক্তিগত ফরয ছিল না বরং তা ছিল সমষ্টিগত ফরয। অর্থাৎ কিছু লোক পালন করলেই সবার আদায় হয়ে যাবে।

আবু আইয়ুব বলেন, এই আয়াতটি তাদের জন্য নাজিল হয়েছিল। আল্লাহ আমাদের বলেছেন যে আমরা যদি আমাদের কৃষিকাজে ফিরে যাই তাহলে তা হবে নিজেদের ধ্বংসের পথে ঠেলে দেয়া। তাই, যেসব মুসলিমরা এখন তাদের চাকরি নিয়ে, তাদের ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত, তাদেরকে এই আয়াত শুনিয়ে দিন যে তারা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে যখন তারা কাজ ও জীবীকার জন্য আল্লাহর পথে জিহাদকে ত্যাগ করছে।

সবশেষে ‘তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর’। ঘরের আরবি শব্দ হচ্ছে মিসকান যা এসেছে সাকিনাহ বা প্রশান্তি থেকে। আপনি যখন বাড়িতে থাকবেন তখন প্রশান্তি অনুভব করবেন কারণ ঘর হচ্ছে শান্তির নিদর্শন।

আমরা প্রকৃতিগত ভাবেই আমাদের বসবাস স্থলের প্রতি আসক্ত, বিশেষ করে আমাদের ঘরের প্রতি। আমাদের মাতৃভূমিও এর আওতায় পরে। আপনি ঘরের প্রতি টান অনুভব করবেন কারণ আমরা আমাদের বাড়িতে একটি নির্দিষ্ট রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে যাই – যে খাবার খাই, যে বিছানায় ঘুমাই। যখন কোন কিছু আপনার এই রুটিনকে ব্যাহত করে তখন আপনি অনিরাপদ বোধ করেন যা প্রশান্তির বিপরীত। বাড়িতে থাকলে আপনি প্রশান্তি অনুভব করেন এবং আপনার রুটিন যদি ব্যাহত হয় তবে আপনি অনিরাপদ বোধ করেন।

একজন মুজাহিদ এই রুটিন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যান। যে খাবার খান তা তার মা বা স্ত্রীর রান্না করা খাবার থেকে ভিন্ন, যে বিছানায় ঘুমান তা তেমন আরামদায়ক নয়, আবহাওয়া ভিন্ন হতে পারে এবং ঘুমানোর সময় পালটে যেতে পারে। এসব আপনাকে বাড়ি ফিরে যেতে ব্যকুল করে তোলে। যখন একজন আরব মুজাহিদ কাশ্মিরে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন তার কাছে সেখানকার খাবার খুব ঝাঁজালো মনে হয়। আবার একজন পাকিস্তানি মুজাহিদ যখন ইরাক বা অন্য কোথাও জিহাদে অংশগ্রহণ করেন তখন তার কাছে খাবার খুব নমনীয় মনে হয়, রুটিন পালটে যায়, তাপমাত্রাও পালটে যায়।

আব্দুল্লাহ ইবনে উমারের কথা যদি চিন্তা করি যখন তিনি আরমেনিয়াতে জিহাদ করছিলেন, যদিও এ ব্যপারটি আরও অনেক সাহাবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তিনি আরবে বড় হয়েছেন যেখানে আবহাওয়া খুব গরম, অথচ তিনি যুদ্ধ করছিলেন এমন এক জায়গায় যা কয়েক ফিট তুষারে ঢাকা থাকে। এই ধরণের রুটিন পরিবর্তন মেনে নেয়া কিন্তু সহজ নয় – এটা খুব বড় একটা ত্যাগ।

সম্ভবত একারণেই হজ্ব জিহাদের সাথে সম্পর্কিত। কিছু কিছু হাদিসে আপনি দেখবেন যে জিহাদ ও হজ্বের কথা একই হাদিসে এসেছে। যেমন – যখন আয়েশা (রা) রাসুল (স) কে জিজ্ঞেস করলেন যে পুরুষরা আপনার সাথে জামাআতে নামাজ পড়ে, আপনার সাথে জুম্মার নামাজ পড়ে, আপনার সাথে জিহাদে যোগদান করে, মহিলাদের ব্যপারে কী হবে? রাসুল (স) বললেন আপনাদের জিহাদ হচ্ছে হজ্ব।

কারণ একটু নিচের স্তরের হলেও হজ্বের সাথে জিহাদের কিছুটা সামঞ্জ্যশ্য আছে। হজ্বের জন্য আপনাকে ভ্রমণ করতে হয়, জিহাদেও অনেক ক্ষেত্রে ভ্রমণ করতে হয়। হজ্বে আপনার রুটিন পরিবর্তন হয়। যেমন – হজ্বের সময় ভিন্ন পোষাক পরিধান করতে হয়, তারপর আপনি হজ্ব চলাকালীন সময় নখ ও চুল কাটতে পারবেন না, সেখানকার খাবার ভিন্ন, মীনা ও আরাফায় ঘুমানোর ব্যবস্থা তেমন আরামদায়ক নয়, এরকম ভাবে আপনার রুটিন পালটে যায়। আপনাকে অনেক টাকাও খরচ করতে হয় কারণ হজ্ব বেশ ব্যয়বহুল। সুতরাং হজ্ব ও জিহাদের মধ্যে কিছুটা মিল রয়েছে যদিও জিহাদের ত্যাগ অনেক বড় মাপের ত্যাগ।

যদি আপনার বাসস্থানের প্রতি আপনার ভালবাসা আপনাকে আল্লাহর পথে জিহাদ থেকে দূরে রাখে, তাহলে তা প্রতিবন্ধকতায় পরিণত হয়। তাবুক যুদ্ধের কথা যদি বলি, তাবুক প্রান্তরে যাওয়ার জন্য অনেক দূরের পথ পারি দিতে হয়েছিল, তখন উত্তপ্ত গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরম, ফসল ঘরে তোলার সময় তখন। সবাই যখন ফসল ঘরে তোলার পরিকল্পনা করছিলেন রাসুল (স) তাদের বললেন যে আমাদের এখন রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। সুতরাং, তা ছিল খুবই বড় একটা ত্যাগ।

সেসময় একজন সাহাবা তার ঘরে গিয়ে দেখলেন যে তার স্ত্রী বাড়ির উঠান পানি দিয়ে ভিজিয়ে রেখেছে যাতে গরম কম লাগে। তখন তিনি তার আরেক ঘরে গিয়ে দেখলেন তার দ্বিতীয় স্ত্রীও একই কাজ করেছে। ঘরের প্রতি টান তাকে যুদ্ধে যাওয়া থেকে বিরত রাখল। যে তিনজন তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেননি তিনি তাদের মধ্যে একজন যিনি ঘরের টানে যুদ্ধে যান নি।

যাদের এমন রুটিন পরিবর্তনের ব্যপারে অভিজ্ঞতা আছে তারা জানেন যে এ বিষয়টি এক সময় না এক সময় ঘরের প্রতি দুর্বল করে তুলবে। কোন কোন মুজাহিদ বাড়ি না ফিরে, তাদের পরিবারের কাছে ফিরে না গিয়ে বছরের পর বছর যুদ্ধের ময়দানে কাটিয়ে দেন। এতে অনেক ধৈর্যের প্রয়োজন। অতএব, একজন মুজাহিদের অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে সবর।

তো, এই আয়াতের পর আল্লাহ বলছেন, বল, যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর, আল্লাহ, তাঁর রসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করার থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর চূরান্ত নির্দেশ বা আল্লাহর শাস্তি আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে, অবাধ্য আচরণকারীদের, আদেশ অমান্যকারীদের হেদায়েত করেন না।

যখন একজন মুজাহিদ এই আটটি প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে, তা একটি অসাধারণ বিজয়। এর সাথে তিনি আরেকটি বিজয় লাভ করেন, তা হচ্ছে ফাসিক না হওয়া। কারণ এই আয়াতের শেষে আল্লাহ বলছেন আল্লাহ ফাসিকদের হিদায়াত করেন না। ফাসিকের কাতারে না পড়া কি একটি বিশাল বিজয় নয়? আল্লাহ, তাঁর রাসুল (স) ও জিহাদের প্রতি ভালবাসা আক্ষরিক অর্থে প্রমাণের মাধ্যমে আপনি এই বিজয় অর্জন করেছেন। এখন আর এটা কোন মুখের কথা নয়। আর যদি আপনি আল্লাহ, তাঁর রাসুল (স) ও জিহাদের চেয়ে এই আটটির কোন একটিকে বেশি ভালবাসেন তবে আপনি ফাসিক হয়ে গেলেন এবং আল্লাহর শাস্তি আপনার উপর অনিবার্য।

সুতরাং যারা দাবি করে যে তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (স) কে ভালবাসেন তাদের তা প্রমাণ করতে হবে। এবং তাদেরকে সেটা কথা নয় কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে। একজন মুজাহিদ হওয়ার মাধ্যমেই আপনি তা প্রমাণ করতে পারবেন। আপনি দেখবেন যে অনেক সংগঠন ও অনেক মুসলমান আছে যারা জোর গলায় বলে যে শুধু তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে (স) ভালাবাসার পথে দেখাতে পারে, তারাই আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে (স) ভালাবাসে। তারা আরও বলে যে দেখুন আমরা রাসুলের (স) কত প্রশংসা করি, তাঁকে ঘিরে আমাদের কত উদযাপন। এগুলো শুধুই মুখের বুলি।

যদি আপনি দেখাতে চান যে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে (স) ভালবাসেন তাহলে মুজাহিদদের কাতারে যোগ দিন, তাহলে আপনাকে আর এই বিষয়ে কিছু বলতে হবে না কারণ আপনি তা কাজের মাধ্যমেই প্রমাণ করেছেন। ইসলাম শুধু মুখের কথার ধর্ম নয়, এটা কাজের ধর্ম। আপনার বিশ্বাস আপনার কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × 3 =

Back to top button