আরবআল-ফজর বাংলাইলম ও আত্মশুদ্ধিবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ আব্দুল্লাহ আল-মুহাইসিনীশামহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

কেন আই এস কে খারেজি বলা হয়? – শায়খ আবদুল্লাহ আল মুহাইসিনি হাফিজাহুল্লাহ

কেন আই এস কে খারেজি বলা হয়?

– শায়খ আবদুল্লাহ আল মুহাইসিনি হাফিজাহুল্লাহ

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

https://banglafiles.net/index.php/s/6mfLQfZ8PYiPGAa

http://www.mediafire.com/file/7p3aphmud36439o/F.pdf

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

https://banglafiles.net/index.php/s/WcDNxLTM55f2K8P

https://archive.org/download/keno_taderke_khareji_bola_hoy/keno_taderke_khareji_bola_hoy.docx

******************************

 

কেন তাদেরকে খারেজি বলা হয়?

খারেজিদের সাথে আইএস/IS এর সামঞ্জস্যপূর্ণ ৩০ টি বৈশিষ্ট্য

শাইখ

আবদুল্লাহ আল মুহাইসিনি

(আল্লাহ তাঁকে সুরক্ষিত রাখুন)

আলোচনাটি করা হয়েছে ১৪৩৭ হিজরীর ৬ ই মহররম শামের ইদলিব শহরে

 

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর।

সকল ভাইদেরকে অনেক অনেক মোবারকবাদ! আমরা আল্লাহর তা’আলার নিকট তার উত্তম নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলীর মাধ্যমে প্রার্থনা করছি, যেমনিভবে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে আপনাদের সাথে একত্রিত করেছেন, তেমনিভাবে যেন নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতেও আমাকে আপনাদের সাথে একত্রিত করেন! বলুন, আমীন!!!

হে আল্লাহ, আমাদেরকে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাতে একত্রিত করুন! হে আল্লাহ আমাদেরকে নবী, সিদ্দিকীন ও শুহাদাদের সাথে একত্রিত করুন!

 হে আল্লাহ! হে বিশ্ব জগতের প্রতিপালক! আমাদেরকে সীমান্তে যুদ্ধকারীদের প্রতিদান থেকে বঞ্চিত করিয়েন না!

 হে আল্লাহ! আমাদেরকে আপনার পথের মুজাহিদদের অন্তর্ভূক্ত করুন! হে পরাক্রমশালী, সম্মানী!

প্রিয় ভাইয়েরা!

এই সংকটময় মুহূর্তে এবং এই গুরুত্বপূর্ণ সংলাপে আমার আলোচনা, সিরিয়ান জিহাদী ময়দানের সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয়ে। বরং চলমান উম্মাতে ইসলামীয়ার ও সকল জিহাদী ময়দানগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।

আমার আলোচনা সেই দল সম্পর্কে, যাদেরকে ‘জামাতুদ দাওলাতিল ইসলামীয়া’ (আই এস) বলা হয়। এবং এই নবঘটিত বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘ ঝগড়া ও দীর্ঘ মতবিরোধ নিয়ে।

অনেক সময় মানুষ আমাদেরকে প্রশ্ন করে,

কেন আমরা দাওলাতুল ইসলামের সাথে মতবিরোধ করি? অথচ আমরা তো লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ–ই চাই, আমরা তো খেলাফতই চাই। তারা তো খেলাফতই ঘোষণা করেছে, তাহলে আমরা কেন খেলাফতের বিরুদ্ধে বিবাদ করি?

মানুষ প্রশ্ন করে, কেন আমরা তাদের সাথে সন্ধি করে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি না?

 মানুষ আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে, আমরা কেন তাদেরকে খারেজি বলি?

অথচ খারেজি শব্দটি ইসলামের মধ্যে একটি গুরুতর শব্দ!

প্রিয় ভাইয়েরা!

আশা করি, আমি আজ এ সবের উত্তর দিবো। আশা করি, আমাদের আওয়াজ এই ভূমি থেকে পৃথিবীর পূর্ব পশ্চিম পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।

 হে ভাইয়েরা!

নিশ্চয়ই কোন মুসলিমকে আল্লাহর দ্বীনের কোন গুণে উল্লেখ করলে, সেটা ফলশ্রুতিতে কোন ঝগড়া বা মতবিরোধ সৃষ্টি করে না। কিন্তু বিধানগত গুণাবলী, যেমন আপনি অমুকের গুণ উল্লেখ করলেন, সে কাফের, বা অমুকের গুণ উল্লেখ করলেন, সে মুরতাদ, অথবা অমুককে বললেন; সে শাব্বিহ বা অমুককে বললেন; সে খারেজি… এগুলো আল্লাহর দ্বীনে গুরুতর শব্দ।

 মুসলিমদের উচিত এ সমস্ত বিষয়ে অনুপ্রবেশ না করা, এগুলো আলেমদের জন্য ছেড়ে দেওয়া, যাদের কাছে আল্লাহ এই দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। যে এতে অনুপ্রবেশ করবে, সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার সামনে জিজ্ঞাসিত হবে। এজন্যই নবী করীম বলেছেন:

     “যে তার ভাইকে বলল: “হে কাফের, তাতে আল্লাহর নিকট তাদের   যেকোন  একজন অবশ্যই তাতে পতিত হবে।”

সুতরাং বিষয়টি ভয়াবহ।

যখন আমি একজন মানুষের নিকট এসে বললাম, হে অমুক! তুমি তো কাফের হয়ে গিয়েছে, তখন মাসআলাটি অবশ্যই এই দু’টির যেকোন একটি হবে: হয়ত সে আল্লাহর নিকট কাফের হবে, নয়ত কথাটি আমার দিকেই ফিরবে। আল্লাহর নিকট এর থেকে মুক্তি প্রার্থনা করছি।

এ কারণেই নবী বলেছেন:

“যখনই কোন মুসলিম অপর মুসলিমকে বলে হে কাফের, তখন যদি তার                      সাথী তেমন না হয়, তাহলে বিষয়টি ঘুরে তার উপরই পতিত হবে।”

সম্মানিত ভাইয়েরা!

চলুন, আমরা এই মহান দিনে এই বরকতময় জামিয়ার বরকতময় সমাবেশে কিছুক্ষণ অবস্থান করি, যাতে আমরা ‘খারেজি’ শব্দটির ব্যাপারে কিছু চিন্তা করতে পারি, যেটা রাসূলুল্লাহব্যবহার করেছেন।

এবং আমরা দেখতে পারি যে, এটা কি, জামাতুদ দাওলার উপর প্রযোজ্য হয়? যদি তাদের উপর প্রযোজ্য হয়, তাহলে আমরা তাদের সম্পর্কে বলবো: খারেজি। আর যদি তাদের উপর তা প্রযোজ্য না হয়, তাহলে আল্লাহর আশ্রয়! আমরা তা ই বলবো, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল যা বলেছেন।

হে ভাইয়েরা!

খারেজি পরিভাষাটি, এই শব্দটি কোন নতুন শব্দ নয়। সর্বপ্রথম যিনি খারেজি শব্দটি বলেছেন, তিনি কে? রাসূলুল্লাহ ﷺ যেমন জাবের রা: এর হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

খারেজিয়া হল জাহান্নামের কুকুর। তিনি ﷺ এটা তিন বার বলেছেন। খারেজিরা জাহান্নামের কুকুর, খারেজিরা জাহান্নামের কুকুর, খারেজিরা জাহান্নামের কুকুর।

অতঃপর বলেন:

        “তারা আল্লাহর নিকট সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট। আরেক বর্ণনায় এসেছে এভাবে-তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।”

 আসুন, আমরা দেখি কি কি গুণাবলী রাসূলুল্লাহ ও খারেজিদের ব্যাপারে নির্ধারণ করেছেন?

প্রথমত ভাইয়েরা!

এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমি আপনাদের জন্য ত্রিশটির মত বৈশিষ্ট্য জমা করেছি। সাথে সাথে আমরা দেখবো যে, এ বৈশিষ্ট্যগুলো জামাতুদ দাওলার মাঝে প্রযোজ্য হয় কি না?

 কিন্তু এর পূর্বে আমি বলবো: ইসলামের আলেমগণ বিভিন্ন দল-উপদল, সম্প্রদায় ও জাতি সম্পৰ্কীয় গ্রন্থাদীতে লেখেন: প্রতিটি দলের মধ্যেই দুই প্রকার গুণ থাকে।

একটি হচ্ছে ভিত্তি স্থাপনকারী গুণ, তথা মৌলিক গুণ।

আরেকটি হচ্ছে প্রমাণকারী গুণ, তথা সাদৃশ্য প্রকাশকারী গুণ।

 উদাহরণ স্বরূপ:

যেমন আপনি ফায়সাল বা খালিদ নামক একটি ব্যক্তির ব্যাপারে বললেন; অমুক ব্যক্তি শাব্বিহ। তার মূল বৈশিষ্ট্য হল: সে সরকারের সাথে সহযোগীতার কাজ করে।

কিন্তু এর সাথে তার আরো অনেক সহযোগী বৈশিষ্ট্য থাকে। আপনি বললেন: খালিদ শাব্বিহ, তার রং সাদা বা সুন্দর, তার আকৃতি এমন.. সে দ্রুত রেগে যায়, ইত্যাদি ইত্যাদি… এগুলো তার মৌলিক বৈশিষ্ট্য নয়। যে কারণে আপনি তাকে শাব্বিহ গুণে উল্লেখ করছেন, সেই মূল গুণটি কি? সেটা হল: সে সরকারের সাথে সহযোগীতামূলক কাজ করে।

আমরা যখন খারেজিদের বৈশিষ্ট্যাবলী দেখি, আমরা দেখি এক্ষেত্রে দুটি বৈশিষ্ট্য হল মৌলিক। যে এ দুটি করবে, সে খারেজি। যে এগুলো করবে না, সে তা নয়’

এ ধরনের অনেক বৈশিষ্ট্যাবলী রয়েছে, যেগুলো ‍উলামগণ উল্লোখ করেছেন এমনকি কারো মাঝে সকল বৈশিষ্ট্যগুলো না পাওয়া যাওয়া সত্ত্বেও সাদৃশ্য প্রকাশকারী কিছু গুণ থাকতে পারে।

উলামায়ে কেরাম এর দৃষ্টান্ত স্বরূপ বলেন,

যেমন: ‘রাফেযী’ শব্দটি। যে ই সাহাবা রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিমকে গালি দেয়, সেই রাফেযী। কিন্তু তার মাঝে এমন কিছু বৈশিষ্ট্যও থাকতে পারে, যেগুলো সাদৃশ্য প্রকাশকারী বা ইঙ্গিত প্রদানকারী বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য হতে পারে। তবে মৌলিক বৈশিষ্ট্য হিসাবে গণ্য হবে না।

উদাহরণ স্বরূপ: রাফেযীদের একটি মত হল: মুতআ (সাময়িক বিবাহ) জায়েয হওয়া। এখন একজন রাফেযী এসে বলল: আমি তো মুত‘আ জায়েয হওয়ার কথা বলি না! তাহলে কি আমরা তাকে বলবো, যেহেতু তুমি মুতআ জায়েয হওয়ার কথা বল না, তাই তুমি রাফেযী নও? বরং আমরা বলবো, যেহেতু তুমি সাহাবীদেরকে গালি দিয়েছে, তাই তুমি রাফেযীদের অন্তর্ভূক্ত।

 তাই আমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি, আল্লাহ এমন প্রত্যেক ব্যক্তির উপর অভিশম্পাত করুন, যারা আমাদের মাতা আয়েশা রা: এর উপর অভিশম্পাত করে, যারা আবু বকর, ওমর, ওসমান ও আলী রা: কে অভিশম্পাত করে। রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম আজমাঈন!

 

তাহলে খারেজীদের সর্বপ্রথম বৈশিষ্ট্য হল: তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করে।

তাদের উপর ধর্মত্যাগের অভিযোগ এনে হত্যা করে।

আমরা দেখতে পাই, বুখারী ও মুসলিম রহ: এর যৌথ বর্ণনায় এসেছে: রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: “খারেজিরা মুসলিমদের হত্যা করে।”

ইমাম আহমাদ রহ: বলেন:

          “খারেজিরা দ্বীন থেকে বের হয়ে গেছে, উম্মাহর বিরুদ্ধে তরবারী কোষমুক্ত করেছে এবং তাদের রক্ত ও সম্পদ বৈধ করে নিয়েছে।”

শামবাসীদের ইমাম, আহলুস সুন্নাহর ইমাম, তথা ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন:

        “খারেজিরা আহলে কিবলার রক্ত প্রবাহিত করাকে বৈধ করে নেয়। তাদের এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে যে, তারা মুরতাদ।”

এই বৈশিষ্ট্যটি জামাতুদ দাওলার মাঝে আছে, নাকি নেই? হে ভাইয়েরা আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করছি.. হ্যাঁ, আছে। একারণেই তারা, এখন যে আপনাদের সামনে আলোচনা করছে, তাকেও মুরতাদ বলে গণ্য করেছে। যদিও আমরা নামায আদায় করছি, রোজা পালন করছি।

তারা আপনাদের জাবহাতুন নুসরার ভাইদেরকে মুরতাদ গণ্য করছে। অথচ তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করছে। তারা আপনাদের আহরারুশ শামের ভাইদেরকে মুরতাদ গণ্য করছে, জাইশুল ফাতহকে ধর্মত্যাগী বাহিনী বলছে। ইদলিবকে গণ্য করছে আদি কুফরের ভূমি হিসাবে, ইসলামের ভূমি নয়। হালাবকেও এমনই বলছে।

এ কথাগুলো কোন নতুন কথা নয়; বরং সকলেই এগুলো জানেন। তাই এটাই হল তাদের প্রথম বৈশিষ্ট্য যে, তারা মুসলিমদেরকে হত্যা করে।

কিন্তু আমরা কি তাদেরকে তাকফীর করবো? না, আমরা তাদেরকে তাকফীর করবো না। কারণ কাউকে তাকফীর করা ঝগড়ার বিষয় নয় যে, কারো সাথে মতবিরোধ হলেই তাকে বলবঃ

হে কাফের। বরং এক্ষেত্রে অনেক ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয় রয়েছে, আমরা সেগুলোর উপর আমল করবো। এটা ঝগড়ার বিষয় নয়। তাদের মাঝে আর আমাদের মাঝে ঝগড়া নয়। বরং মূল বিষয়টি হল, যা আপনাদের আলোচক বলছে,

সেই আল্লাহর শপথ! যিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই, আমি উভয় পক্ষের মাঝে সমঝোতা করার জন্য ছয় মাস চেষ্টা করেছি, আর তারাও মনে করতো যে, আপনাদের এই আলোচক একজন শায়খ, একজন আলেম।

অবশেষে যখন রক্ত প্রবাহিত হতে লাগল, আর আমরা তার প্রতিবাদ করলাম, তখন বলল: তোমরা মুরতাদ!!

তাই এটা হল প্রথম বৈশিষ্ট্য, তথা মুসলিমদের হত্যা করা।

 

তাদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল মুসলিমদেরকে তাকফীর করা।

প্রথমটি হল মুসলিমদেরকে হত্যা করা, আর দ্বিতীয়টি হল মুসলিমদেরকে তাকফীর করা।

তারা  মুসলিম মুজাহিদদেরকে হত্যা করছে, না করছে না? আমি আপনাদেরকে জিজ্ঞেস করছি ভাইয়েরা! তারা তাকফীর করছে, না করছে না?

 ভাইয়েরা! এখন আমরা যে আলোচনা করছি, তার দ্বারা আমাদের উদ্দেশ্য হল: পর্যালোচনা বা অনুসন্ধান। এটি একটি ব্যাপক বিষয়। যখন আপনার নিকট কোন বিষয় ভিন্ন রকম মনে হবে, তখন আপনি হাত উঠাবেন, আপনি বলবেন যে, না ভাই, তারা মুজাহিদদেরকে তাকফীর করে না।

তারা কি বর্তমানে মুজাহিদদেরকে তাকফীর করছে??

হ্যাঁ! এছাড়াও তারা তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন প্রকার ধর্মত্যাগের বিশেষণগুলো ব্যবহার করছে। এমনকি এক সময় তারা যাদের পতাকাতলে ছিল তাদেরকেও। তারা এক সময় ইমামুল জিহাদ শায়খ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহর পতাকাতলে ছিল।

 অথচ তারা তাঁর ব্যাপারেও নির্বোধ, গাধা ইত্যাদি বিশেষণগুলো ব্যবহার করছে। এমনিভাবে তারা তাদের আলেমদের ক্ষেত্রেও এই বিশেষণগুলো ব্যবহার করে। সেই আফগানিস্তানের মুজাহিদদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করেছে, যারা রাশিয়ার অহংকারকে ধূলিসাৎ করেছিল।

বর্তমানে যে রাশিয়া আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে, সর্বপ্রথম কারা তাদের অহংকার চূর্ণ করেছিল? আফগানিস্তানের ভাইয়েরাই কি নয়?

 আর অচিরেই আমরা শামেও তাদের অহংকার চূর্ণ করবো ইনশাআল্লাহ। সর্বপ্রথম যারা রাশিয়ার অহংকার চূর্ণ করেছিল, তারা হল আফগানিস্তানের তালেবান ভাইয়েরা।

এখন তারা এমন বই প্রকাশ করছে, যার নাম হচ্ছে: “আত-তিবয়ান ফি বয়ানে রিদ্দাতি তালিবান’’- অর্থাৎ তালিবানের ধর্মত্যাগ সম্পর্কে প্রমাণসিদ্ধ স্পষ্ট আলোচনা! আল্লাহর নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি

আসুন, আমরা তাদের তৃতীয় গুণ নিয়ে আলোচনা করি। তৃতীয় গুণটি মৌলিক গুণ নয়। মৌলিক গুণ দু’টিই। তা হলো:

এক. মুসলিম ও মুজাহিদদের তাকফীর করা।

দুই: মুসলিমদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা।

আমি যেকোন প্রকার তাকফীরের কথা বলছি না। কারণ তাকফীর আল্লাহর দ্বীনের একটি অংশ। তাকফীর দ্বীনের একটি মূলনীতি।

কিন্তু কাকে তাকফীর করা? এমন কাফেরকে তাকফীর করা, যে কোন ইসলাম ভঙ্গকারী বিষয়ে লিপ্ত হয়েছে। এবং শরীয় দলিল-প্রমাণের ভিত্তিতে করা।

তৃতীয় গুণ হল: খারেজিদের মধ্যে বেশি থাকে কম বয়স্ক ও বুদ্ধিহীন লোক।

ইতিহাস ঘেটে দেখুন, (এখন আমরা ১৪০০ হিজরীর পরে আছি) যুগে যুগে খারেজিদের মধ্যে বেশি থাকে কম বয়স্ক ও বুদ্ধিহীন লোক।

মুজাহিদিনের মাঝে ছোটরা থাকাতে কোন সমস্যা নেই, কিন্তু সমস্যা হল জিহাদের নেতৃবৃন্দ বা নির্দিষ্ট কোন দলের নেতৃবৃন্দ বৃদ্ধিহীন হওয়া, যারা নির্বোধের মত চিন্তা করে।

এমনকি তাদের কেউ কেউ আমাদের ব্যাপারে বলে: তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা কুফরী সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়ে অগ্রগণ্য।

আমি বলি; কারণ?!

সে বলে; কারণ তোমরা হলে মুরতাদ, আর সরকার হল আসলি কাফের।

এটা কি নির্বুদ্ধিতা নয়? অবশ্যই। আল্লাহর শপথ! সবচেয়ে বড় ধরণের নির্বুদ্ধিতা। আমরা আল্লাহর নিকট এর থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি।

 নির্বুদ্ধিতার নমুনা দেখুন- “তুমি জাবহাতুন নুসরাহ, জাইশুল ফাতহ সহ সকল মুজাহিদদেরকে মুরতাদ গণ্য কর, কিন্তু তবুও তাদের সাথে এখন তোমার যুদ্ধ করা একটি নির্বুদ্ধিতা।

 তুমি প্রথমে সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, তারপর এদের দিকে দেখা অসহায়

লোকদের মৃত্যুর ধারাবাহিতকা বন্ধ কর, তারপর যাকে ইচ্ছা তাকফীর কর।

 নির্বুদ্ধিতার একটি বিষয় হল;

তারা সেই সময় মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আসে, যখন মুজাহিদগণ কুফরী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকে।

যখন মুজাহিদগণ জিসর আস সুগুরে পৌঁছে গিয়েছিলেন, তখনই (আপনাদের মনে আছে) তারা মাযুদের পথ আটকে দিয়েছিল। মুজাহিদদের এলাকায় প্রবেশ করল এবং মারিহের দিক থেকে অগ্রসর হতে লাগল।

আরেক দিকে দেখুন, বর্তমানে যখন রাশিয়া অনুপ্রবেশ করছে, যখন উচিত ছিল নিজেরা থেমে গিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবং ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাওয়া, কিন্তু তখন আপনারা কি দেখলেন??

রাশিয়া দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করছে আর তারা সামাজিক বিদ্যালয় ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলো ছিনিয়ে নিচ্ছে। সুবহানাল্লাহ!! এটা কি নির্বুদ্ধিতার সবচেয়ে বড় কাজ নয়? অবশ্যই।

চতুর্থ বৈশিষ্ট্য দেখুন, বাহ্যিক অবস্থা সুন্দর হওয়া।

একারণে ভাইয়েরা! খারেজিদের সম্পর্কে আলোচনাগুলো এমন, যার প্রতি গভীর মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। কেন রাসূলুল্লাহ থেকে শুধু বুখারী ও মুসলিমে খারেজিদের ব্যাপারে ১০ টি হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে। কেননা বিষয়টাতে পার্থক্য করা প্রয়োজন হয়।

সাধারণ মানুষ বলে: ভাই! তাদের দাড়ি আছে, আল্লাহর পথে যুদ্ধ করছে, জিহাদ করছে, আমি কিভাবে পার্থক্য নির্ণয় করবো?! একারণেই বিষয়টি উলামাদের দিকে ফিরাতে হবে।

ইমাম আযুররি রহ: বলেন:

    “একারণে কেউ কোন খারেজিকে অনেক সাধনা করতে দেখলে, তার কুরআন  তেলাওয়াত, নামাযে দীর্ঘ কিয়াম, অধিক রোজা বা সুন্দর কথাবার্তা দেখে প্রতারিত হওয়া উচিত হবে না, যখন তার আদর্শ হয় খারেজিদের আদর্শ। অর্থাৎ যখন সে মুসলিমদেরকে হত্যা করে ও তাদের তাকফীর করে। আমরা আল্লাহর নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি।”

এখন কিছু লোক বলে, ভাই! কিভাবে তাদেরকে খারেজি বলবেন, অথচ তাদের মাঝে কত মুহাজিরীন, সালিহীন এবং আরো কত ভাল লোক আছে!! এর অর্থ কি?!!

যে মুসলমানদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে ও তাকফীর করে, তার বাহ্যিক সুন্দর অবস্থা তার কোন উপকারে আসবে না।

সর্বপ্রথম খারেজিরা কাকে হত্যা করেছে? কে জানে? সর্বপ্রথম কাকে হত্যা করেছে? কোন সাহাবীকে হত্যা করেছে?

খাব্বাব ও আলী রা: কে। চতুর্থ খলীফাকে কারা হত্যা করেছে? খারেজিরা।

ইবনুল মুলযিম, যে আলী রা: কে হত্যা করেছে। যখন মুসলিমরা তাকে হত্যা করতে ইচ্ছা করল, সে কাঁদতে লাগল। অথচ সে মুসলিমদের ইমাম আলী রা: কে হত্যা করেছে!! সে কাঁদতে লাগলো।

মুসলমানরা জিজ্ঞেস করলো: তুমি কাঁদছো কেন? সে উত্তর দিল: আমি আমার

জবানের জন্য কাঁদছি, যা কখনো আল্লাহর যিকর থেকে বিরতি দেয়নি, এখন

অতিসত্তর তার আল্লাহর যিকির বন্ধ হয়ে যাবে!!

কি কাজে আসবে তোমার উত্তম কথা, যখন তুমি মুসলিমদেরকে তাকফীর করো, তাদেরকে হত্যা করো!

একারণে ইমাম ইবনে কাসীর রহঃ আল্লাহর নিম্মোক্ত আয়াতসমূহের ব্যাপারে বলেন:

        “তুমি বল: আমি কি আমলের দিক থেকে তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি সম্পর্কে তোমাদেরকে জানাবো?

” মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যর্থ কারা?

যাদের পার্থিব জীবনের সকল পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে গেছে, আর তারা (তাদের মনে মনে) ধারণা করছে, তারা ভাল কাজ করছে।

” তারা ধারণা করছে, তারা মুজাহিদ! তারা ধারণা করছে তারা অচিরেই খেলাফত প্রতিষ্ঠা করবে। তারা ধারণা করছে, তারা ভাল কাজ করছে!

কিন্তু ইবনে কাসীর রহ: বলেন: এই আয়াত খারেজিদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।

ইবনে কাসীর রহ: বলেন: “আমি ধারণা করছি, এই আয়াত খারেজিদের ব্যাপারে।”

 তাই সে যে নিজেকে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে ধারণা করে, একারণে হতে পারে সে তার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে সত্যবাদি, কিন্তু আফসোসের বিষয় হল: সে মুসলিমদেরকে হত্যা করে, তাদের রক্ত প্রবাহিত করে এবং তাদেরকে তাকফীর করে।

 নিশ্চিতভাবেই, তাদের মাঝে ‘বাহ্যিক অবস্থা সুন্দর’ এ বিষয়টি বিদ্যমান আছে।

পঞ্চম বৈশিষ্ট্য হলো- খারেজিরা কুরআন বুঝে ভুলভাবে, কাফেরদের ব্যাপারে অবতীর্ণ কুরআনের আয়াতগুলোকে মুসলিমদের ব্যাপারে প্রয়োগ করে।

আমি আপনাদেরকে এর উদাহরণ দিচ্ছি:

 বর্তমানে জামাতুল বাগদাদী। তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, আয়াতটি পাঠ করে আর এর দ্বারা ইশারা করে মুসলিমদের দিকে। আয়াতটি নাযিল হয়েছে কাফেরদের ব্যাপারে, কিন্তু তারা তা কাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে? মুসলিমদের ক্ষেত্রে।

 আরেকটি উদাহরণ দিচ্ছি:

আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে, সে তাদের অন্তর্ভূক্ত।” তারা এই আয়াতটি পাঠ করে কারো ব্যাপারে বলে দেয়: হে অমুক! তুমি কাফের হয়ে গেছে। কারণ তুমি অমুকের সাথে বন্ধুত্ব করেছে। আর অমুক কাফের। তারা এর দ্বারা আল্লাহর পথের মুজাহিদদেরকে উদ্দেশ্য করে।

এভাবে তারা কাফেরদের সম্পর্কিত আয়াতগুলোকে নিয়ে মুসলিমদের ব্যাপারে প্রয়োগ করে। দেখুন, ইবনে ওমর রা: কি বলেন! তিনি বলেন:

   “খারেজিরা হল আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট। তারা কফেরদের ব্যাপারে

     অবতীর্ণ একটি আয়াতকে নিয়ে মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করে দেয়।”

 এ বিষয়টি জামাতুদ দাওলার মাঝে বিদ্যমান আছে, নাকি নেই? বিদ্যমান আছে।

ষষ্ঠ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, মুমিনদের নারীদের অন্যায়ভাবে বিচ্ছেদ ঘটানো।

ইবনে ওমর রা: বলেন:

     “খারেজিরা হল, পৃথিবীতে আল্লাহর সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি। তারা মুসলমানদের     বিরুদ্ধে বের হয়েছে। তাদেরকে তাকফীর করেছে ও হত্যা করেছে। এমনকি    অবশেষে তারা এক ব্যক্তির স্ত্রীর নিকট যায়, অতঃপর তাদের কেউ তাকে বিয়ে করে ফেলে এই ধারণা করে যে, তার স্বামী কাফের হয়ে গেছে।”

 এটা বিদ্যমান আছে, নাকি নেই? বিদ্যমান আছে। আল্লাহর শপথ! এটা বিদ্যমান আছে।

আমি অনেক মুজাহিদকে চিনি, যারা কেঁদে কেঁদে বলছে; আমার স্ত্রী তাদের নিকট গেছে এই ধারণা করে যে, এটা খেলাফত। অতঃপর তারা তার স্বামীকে মুরতাদ বলে তাকে বিয়ে করে ফেলেছে।

 সুবহানাল্লাহ! ইবনে ওমর রা: এই কথাটি বলেছেন কত পূর্বে ভাইয়েরা!!!? ১৪০০ বছর পূর্বে। আর এখনও পর্যন্ত হুবহু এই ষষ্ট বা পঞ্চম গুণটির পুনরাবৃত্তি ঘটছে।

আপনারা আমার সাথে গুণগুলো গণনা করুন ভাইয়েরা!

উলামায়ে কেরাম বলেন:

    “খারেজিরা মুসলিম হত্যার সূচনা করে। ইবনে তাইমিয়া রহ: খারেজিদের     ব্যাপারে বলেন: সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের পরবর্তী উলামাগণ খারেজিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। তারা সকল মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারী। তবে যারা তাদের সাথে একমত পোষণ করে, তাদের ব্যতিত। তারাই প্রথমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। তাদের অনিষ্ট যুদ্ধ ছাড়া দূর হয়। (মিনহাজুস সুন্নাহ আন নাবাওয়িয়্যাহ)”

 কিছু দিন পূর্বে আদনানীর ভাষণ শুনুন!

সে এভাবে বলে: অচিরেই আমরা সকল দলকে ছিন্ন ভিন্ন করে ফেলবো, তাদের কাতার চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবো এবং সকল সংগঠন শেষ করে দিবো। আরও এই এই করবো..

 আমরা বলছি:

“হে দাওলা! তুমি ধারণা করছো, আমরা তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছি। তাহলে আমাদের ভাই ইয়ামানের সিংহদের কি অপরাধ ছিল? যখন তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করছিল?”

তারা ওখানে গিয়ে মুজাহিদদের কাতারকে বিভক্ত করে আসছে, সোমালিয়ায় গিয়ে তাদের কাতার বিভক্ত করে আসছে, লিবিয়ায় ও অন্যান্য দেশে যাচ্ছে..

 তাই এটাও তাদের একটি বৈশিষ্ট্য।

এরপর দেখুন, উলামাগণ বলেন: খারেজিরা তাদের বিরোধী মত পোষণকারী প্রতিটি মুসলিমকে হত্যা করতে সচেষ্ট।

 ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন:

তাই খারেজিরা মুসলমানদের জন্য অন্যান্যদের তুলনায় অধিক নিকৃষ্ট। কারণ কেউই মুসলমানদের জন্য তাদের চেয়ে নিকৃষ্ট ছিল না। তারা তাদের মতের বিরোধী যেকোন মুসলিমকে হত্যা করতে সচেষ্ট।

 বর্তমানে যখন কেউ খারেজি ও মুজাহিদদের কাতারসমূহের মাঝে মারা যায়, তখন মাঝে মাঝে বলা হয় যে, সে যুদ্ধের কাতারে থাকা অবস্থায় নিহত হয়েছে। কিন্তু আপনারা কি সালকিন, সারমাদা ও এমন আরো অঞ্চলগুলোর দিকে তাকান না? এগুলো কি মুসলমানদের হত্যা করার আপ্রাণ চেষ্টা নয় আমার ভাইয়েরা!

তাহলে বোঝা গেল, তারা মুসলমানদের হত্যা করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে; এমন নয় যে, শুধু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

ঐ সকল মুজাহিদ ও মুসলিমদেরকে জিজ্ঞেস করুন, যারা তাদের সীমালঙ্ঘনের দ্বারা শহীদ হয়েছে। জিজ্ঞেস করুন আবু খালিদ আস-সুরী (আল্লাহ তাকে কবুল করুন!) ও অন্যান্য জিহাদী উলামাদেরকে, যারা তাদের হাতে শহীদ হয়েছেন।

তারপর সপ্তম ও অষ্টম গুণের প্রতি লক্ষ্য করুন! খারেজিরা মুতাশাবিহ বর্ণনাগুলোর পিছনে পড়ে আর মুহকাম বর্ণনাগুলো থেকে বিমুখ থাকে।

ভাইয়েরা!

আল্লাহর দ্বীন, তথা কুরআন ও সুন্নাহ দুই ধরণের: মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম হল স্পষ্ট কথা।

যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার বাণী

“যে ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করে, তার শাস্তি হল জাহান্নাম। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। আর আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত হন, তার উপর অভিশম্পাত করেন এবং তার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”

এটি এ ব্যাপারে একটি স্পষ্ট আয়াত যে, মুসলমানদের হত্যা হারাম এবং যে কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন।

 তারা মুসলমানদের হত্যা হারাম হওয়ার ব্যাপারে অসংখ্য স্পষ্ট আয়াতগুলো ছেড়ে মুতাশাবিহ হাদিসগুলোর দিকে যায়। আর বলে আমরা অতিসত্তর মারজিদাবিকে আসছি। অতঃপর মারজিদাবিক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ এর হাদিসগুলো এনে বলে; এই হাদিসগলো আমাদের পক্ষে দলিল।

 

এই হাদিসগুলোকে মুতাশাবিহা বলে নামকরণ করা হয়, কেন? কারণ মারজিদাবিক আজ অমুক গ্রুপের দখলে আছে, সন্ধাবেলা বা আগামীকাল যুদ্ধ হবে, তখন তা থাকবে অমুক গ্রুপের হাতে। দুই বছর পূর্বে মারজিদাবিক ছিল সিরিয়ান নুসাইরী সরকারের হাতে, এমনিভবে…

 তাহলে কি মারজিদাবিকের উপর ভিত্তি করে হক চেনার বিষয়টি বোধগম্য যে, যে তা দখল করবে, সেই-ই হকের উপর থাকবে? আর যে তা দখল করবে না, সে বাতিলের উপর থাকবে? না। এটা মুতাশাবিহ (সংশয়পূর্ণ) কথা। হক চিনতে হবে আল্লাহর কথা ও রাসূলের কথা থেকে।

উদাহরণ হিসাবে বর্তমানে পূর্ব গুতা অঞ্চলটির প্রতি লক্ষ্য করুন! রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মহাযুদ্ধের সময় মুসলমানদের তাবু থাকবে গুতায়। তাই বলে আপনার এটা বলা কি যুক্তিসঙ্গত হবে যে, যারাই গুতা দখল করবে, তারাই হকের উপর থাকবে, আর যারা তা দখল করবে না তারা বাতিলের উপর থাকবে? এগুলো এমন হাদিস, যেগুলোকে মুতাশাবিহা বলা হয়।

 ঠিক এরকম, তারাও আজ মুতাশাবিহগুলোর পিছনে পড়ছে আর মুহকামগুলো (সুস্পষ্ট) বর্জন করছে।

 ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন:

“এমনিভবে বিদআতিরা, যারা নবীকে স্বীকার করে, তাদের নিকটও এমন কিছু বিষয় অস্পষ্ট হয়ে গেছে, যা এই সকল (খারেজি) লোকদের নিকট অস্পষ্ট হয়ে গেছ। ফলে তারা খারেজিদের মত মুতাশাবিহগুলোর পিছনে পড়েছে আর মুহকামগুলো ছেড়ে দিয়েছে।”

 এরপর আসুন ভাইয়েরা তারপরের মাসাআলায়।

খারেজিরা, উলামা ও মর্যাদাবান লোকদেরকে ভৎসনা করে। এই জিনিসটা বিদ্যমান

কখন থেকে? নবী এর যামানা থেকে আজ পর্যন্ত। সর্বপ্রথম খারেজি যুলখুওয়াইসেরা। সে কাকে ভৎসনা করেছে? রাসূলুল্লাহ ﷺ কে!! মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী, ইলম ও তাকওয়ার ইমাম কে? রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে জনৈক খারেজি এসে বলল: আল্লাহকে ভয় কর হে মুহাম্মাদ! ইনসাফ কর! (হে আল্লাহর রাসূল’ও বলল না)

তারা কাকে খেয়ানতের অভিযোগ করল?

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে। নবী (ﷺ) বললেন; ধ্বংস তোমার! আমি যদি ইনসাফ না করি, তাহলে কে ইনসাফ করবে? ওমর রা: বললেন: তাকে হত্যা করে ফেলবো হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন: না। অতিসত্তর এদের বংশধর থেকে এমন অনেক লোক আসবে, যাদের নামাযের সময় তোমরাও নামাযে যাবে, তাদের রোযার সময় তোমরাও রোযা রাখবে.. অতঃপর রাসূলুল্লাহ খারেজিদের ব্যাপারে পুরো হাদিসটি বলেন।

তাহলে বোঝা গেল তাদের একটি বৈশিষ্ট্য হল আহলে ইলমদেরকে ভৎসনা করা।

ইবনে আব্বাস রা: তাদের নিকট আসলেন, তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। চিন্তা করুন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবাদের মধ্য থেকে একজন সাহাবী, আর তারা সাহাবাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।

 নবী ﷺ সাহাবাদের মর্যাদা সুউচ্চ করেছেন। বলেছেন: তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালি দিও না, তোমাদের কেউ যদি উহুদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাহলেও তা সাহাবাদের সমতুল্য হবে না।

ইবনে আব্বাস রা: খারেজিদের নিকট এসে বললেন:

“আমি সর্বোত্তম লোকদের নিকট থেকে তোমাদের নিকট এসেছি। অর্থাৎ আমি সাহাবাদের পক্ষ থেকে এসেছি, আর তোমাদের মধ্যে কোন সাহাবী নেই।

 তখন তারা বলতে লাগল: ইবনে আব্বাস কুরআন পড়ে, কিন্তু তা বোঝে না!” আল্লাহু আকবার!!

ইবনে আব্বাস কুরআন পড়ে, কিন্তু কুরআন বোঝে না!!! অথচ নবী ﷺ তার ব্যাপারে বলছেন: কুরআনের ভাষ্যকার, কুরআনের ব্যাপারে সবচেয়ে অধিক জ্ঞানের অধিকারী ইবনে আব্বাস।

 তারা ইবনে আব্বাসকে গালি দিয়ে বলতে লাগলো: ইবনে আব্বাস কুরআন বোঝে না!

বরং মূল বিষয়টি দেখুন, রাসূল ﷺ কি বলছেন!!

তিনি (ﷺ) বলেন: “এক সময় এমন একদল লোক আসবে, যারা কুরআন পড়বে, অতঃপর বলবে: আমরা তো কুরআন পড়েছি? তাই আমাদের থেকে বড় ক্বারী কারা আছে? এবং আমাদের থেকে বড় আলেম কারা আছে?”

 তাহলে খারেজিদের একটি বৈশিষ্ট্য হল: তারা আলেমদের থেকে অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করে। নেককার ও সংশোধনকারী লোকদের থেকে অমুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করে।

আদনানীর সর্বশেষ ভাষণটি শুনুন, তাতে সে কি বলেছে!

 সে এই শব্দ বলে: আর আমরা সকল প্রতীক বিলুপ্ত করে দিয়েছি, এ সকল মূর্তিগুলোকে অকার্যকর করে দিয়েছি, অর্থাৎ উলামাদেরকে। তারপর বলে: এই সকল লোকগুলো হলো-কাদামাটির গাধা।

সুবহানাল্লাহ!

 প্রথম ওয়ালারা যেমন বলেছিল, ঠিক তেমনই।

 নবী ﷺ বলেন:

“ তারা বলবে: আমরা কুরআন পড়েছি, তাই আমাদের থেকে অধিক জ্ঞানী কারা আছে? আমাদের থেকে বড় ফক্বীহ কারা আছে? অতঃপর নবী ﷺ বলেন: ঐ সকল লোকই হল জাহান্নামের ইন্ধন। আমরা আল্লাহর নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।”

 খারেজিরা উলামাদের স্মরণাপন্ন হয় না। অপরদিকে হকপন্থিরা উলামাদেরই স্মরণাপন্ন হন। একারণেই আদনানী তার সর্বশেষ ভাষণে কি বলল?! সে বলল: হে ওই সকল লোকেরা, যারা দাওলার খেলাফতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর, তোমরা ঐ সকল লোকদেরকে জিজ্ঞেস করো, যারা সব জায়গা থেকে ছুটে এসে দাওলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। অর্থাৎ সাধারণ লোক।

অথচ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা আমাদেরকে আদেশ করছেন যেন আমরা আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করি। আল্লাহ তা’আলা বলছেন: “তাই যদি তোমরা না জান, তাহলে যারা জানে তাদের থেকে জিজ্ঞেস করো।”

 তাহলে আলেমদেরকে ভৎসনা করার বিষয়টি আছে, নাকি নেই?

 কি বলেন ভাইয়েরা? আছে।

আমরা উলামাদের উদ্ধৃতির দিকে ফিরে আসি!

ইমাম শাতিবী রহ: “আল-ইতিসামে” বলেন:

খারেজিদের মধ্যে সবচেয়ে মূল বিকৃতি হল; তারাই সর্বপ্রথম সালাফে সালিহীনকে গালিগালাজ করেছে। এমনিভাবে আমাদের বর্তমান সময় পর্যন্ত এমনটাই চলছে।”

সুবহানাল্লাহ!!

এ বিষয়টি এখন তাদের মাঝে আছে, নাকি নেই ভাইয়েরা? এই কথাটি আপনাদের সামনে এই যামানার আলেমদের থেকে বলছি না। কাদেরকে থেকে বলছি? ইবনে তাইমিয়া থেকে, শাতিবি থেকে, ইবনে হাযেম থেকে, ইবনে ওমর থেকে।

তাহলে ১৪০০ বছর থেকে একই চিত্র! একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। কিন্তু এরপরও কারো অন্তরে সন্দেহ বাকি থেকে যায়, কেন? কারণ তারা আহলে ইলমদের স্মরণাপন্ন হয় না।

ইমাম হাসান রহ: বলেন: “যখন ফিত্না আসে, তখন তা একমাত্র আলেমরাই বুঝতে পারে। আর যখন ফিন্যা চলে যায়, তখন তা সাধারণ লোকেরা চিনতে পারে।”

তারপরের বিষয়ে আসি,

দশম বৈশিষ্ট্য:

 উলামাগণ বলেন: খারেজিদের কোন সত্যনিষ্ঠ আলেম নেই, যে তাদেরকে পরিচলান করতে পারে এবং তাদের তেমন কোন গ্রহণযোগ্য কিতাব খুজে পাবেন না।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ: বলেন:

“খারেজিদের ব্যাপারে জানা যাবে মানুষের মুখ থেকে, তাদের ব্যাপারে বিভিন্ন কথা থেকে, কিন্তু তাদের কোন কিতাব বা উলামা নেই।”

 তবারীর মধ্যে এসেছে, আলী রা: বলেন: খারেজিরা কুরআনের কারী নয়, দ্বীনের ফকীহ নয় এবং কুরআন সুন্নাহর ব্যাখ্যার আলেমও নয়। ইসলামের মধ্যে এর কোন পূর্ব নযীর নেই।

 (এটা বর্ণনা করা হয়েছে তারিখে তরীতে)

 বর্তমানে কি খারেজিদের কোন বড় ও প্রসিদ্ধ আলেম আর আল্লাহর শপথ! একজন আলেমও পাবেন না, প্রসিদ্ধ আলেমদের মধ্য থেকে।

হ্যাঁ, কিছু ইলমে নবীন যুবক এসে তাদের আগুনে ফু দেয় এবং তাদেরকে আশ্বাস দেয়।

সুবহানাল্লাহ! কোথায় উলামা!!

সমস্ত আলেমরা কি খেলাফতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে, যদি এটা খেলাফত হয়ে থাকে? একারণে তাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যসমূহের একটি হল এই যে, তাদের মাঝে আলেম-উলামা নেই।

এমনকি যে সমস্ত আলেমদের কিতাবগুলো এই খারেজিরাও বিতরণ করতো… দেখবেন, তারা শায়খ আবু কাতাদা আল-ফিলিস্তীনী রহ: এর কিতাবাদি বিতরণ করেছে.. কিছুদিন পরে তাদের বিরোধিতা করে তাদেরকে বাদ দিয়ে দেয় এবং গালিগালাজ করতে থাকে।

তারা অমুকের কিতাব, অমুকের কিতাব.. এভাবে বিভিন্ন জনের কিতাব বিতরণ করত, কিন্তু যেই তাদের বিরোধিতা করল, তৎক্ষণাৎ তাকে ফেলে দিল এবং বলল: তুমি আহলে ইলম নও। এরপর যখন তাদের থেকে সমস্ত উলামাগণ বের হয়ে গেল,

 তখন আদনানী বের হয়ে বলল: “আলহামদুলিল্লাহ! আমরা খিলাফতের পথে চলছি এবং সমস্ত প্রতীক ও উলামাদেরকে ফেলে দিয়েছি। যাতে আর কোন সমস্যা না থাকে!!”

 তাদেরকে বলা হবে:

কোথায় আলেমগণ?! তুমি আহলে ইলম ছাড়া কিভাবে আল্লাহর দিকে পথ চলবে? আল্লাহ বলছেন: “তোমরা আহলে যিকরকে (আলেমদেরকে) জিজ্ঞেস করো, যদি তোমরা না জান।”

আরেকটি বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য শুনুন! উলামায়ে কেরাম এদের সম্পর্কে বলছেন: তারা তাদের দেশকে দারুল ইসলাম (ইসলামের দেশ) বলে নামকরণ করে আর অন্যদের দেশকে বলে দারুল কুফর, যেখানে আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়ন করা হয় না।

এটা কি আছে, না নেই ভাইয়েরা? বর্তমানে তাদের লেখাগুলো পড়ে দেখুন, তাদের দলের মুখপাত্র আদনানীর ভাষণগুলো পড়ন। সে বলে: তাই দারুল ইসলামের অন্তর্ভূক্ত হোন! অর্থাৎ তাদের দেশের। কারণ আল্লাহর শরীয়ত সেখানে ছাড়া কোথাও বাস্তবায়ন করা হয় না!!!

 আমরা এখানে কী করছি!? কী করছে সর্বস্থানের মুজাহিদগণ? কী করছে লিবিয়া, সোমালিয়া, ইয়ামান ও অন্যান্য অঞ্চলের মুজাহিদগণ?

নামায আদায়কারীগণ কী করছেন?! যে আদালত আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা ফায়সালা করছে সেটা কী করছে?! আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার কী?

সুবহানাল্লাহ! আল্লাহর শপথ! আপনি কি আশ্চর্য হবেন না, কিভাবে মুসলিম যুবকদের বিবেক বুদ্ধি উবে গেল?! কিন্তু নবী ﷺ বলেছেন: শুনে রাখ, ঐ যামানায় অনেক মানুষের জ্ঞান উঠিয়ে নেওয়া হবে।

শুনুন, ইবনে তাইমিয়া রহ: বলছেন, আল্লাহ ইবনে তাইমিয়ার প্রতি সন্তুষ্ট হোন! তিনি তাদের কত সূক্ষ বৈশিষ্ট্যাবলী উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:

“এ হল খারেজিদের বৈশিষ্ট্য। তাই তারা তাদের নিজস্ব ইমাম, নিজস্ব জামাত ও পৃথক দেশের মাধ্যমে অন্য সকলের থেকে পৃথক হয়ে যাবে। আর তারা নিজেদের দেশকে দারুল হিজরত আর অন্য সকল দেশকে ‘দারুল কুফর ও হারব’ বলবে।” (মাজমুউল ফাতাওয়া, খন্ড: ১৩)

এটা কি বিদ্যমান আছে, নাকি নেই? শুধু তাদের ইমাম ও তাদের দেশ। আর বাকি সকল দেশ দারুল কুফর। আমাদের সাথে দারুল ইসলামে অন্তর্ভূক্ত হোন…।

 আমরা তারপরের গুণের আলোচনায় যাচ্ছি। খারেজি জামাত তাদের একজন ইমামকে মানে, যাকে তারাই নিয়োগ দেয়, তারা তাকে আমিরুল মুমিনীন বলে এবং যারা তার বিরোধিতা করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ওয়াজিব মনে করে।

ইমাম শাহরাস্তানী আল-মিলাল ওয়ান নিহালে খারেজিদের ব্যাপারে বলেন:

“খারেজিদের বিদ’আতটি শুরু হয় ইমামাত থেকে। তারা নিজেদের মধ্য থেকে কাউকে ইমাম নিয়োগ দেওয়া জায়েয করে নেয় এবং তাকে নিজেদের মতো  নিয়োগ দিয়ে সকল মানুষের জন্য আবশ্যক করে দেয়। এরপর যখন সে ইমাম হয়ে গেল, তখন যারা তার বিরুদ্ধে বের হয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচলনা করা ওয়াজিব হয়ে যায়। এটা উল্লেখ করেছেন আল-মিলাল ওয়ান নিহালে।”

 আর ইবনে তাইমিয়া রহ: খারেজিদের ব্যাপারে বলেন:

“তারা পৃথক ইমাম, জামাত ও দেশের মাধ্যমে সকল মানুষ থেকে পৃথক হয়ে যায়।”

এরপরে আসুন প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করার আলোচনায়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতআলা বলেন: “যারা আল্লাহর সাথে কৃত প্রতিশ্রুতি দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করে, আল্লাহ যে সম্পর্ক জুড়তে বলেছেন, তা ছিন্ন করে এবং যমীনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ।”

মুসআব ইবনে সা’দ রা: বলেন:

আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম: এ সকল লোক কারা? তিনি বলেন: এ আয়াতে উদ্দেশ্য হল হারুরীয়ারা, অর্থাৎ খারেজিরা।”

আপনি তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও গাদ্দারিগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন, আশ্চর্য হবেন! সেই ব্যক্তির বিষয়টি লক্ষ্য করুন, যে মাদ্রাসাতুত তাওহীদে, তাওহীদের পতাকায় আক্রমণ করে। সে বলে: আমি তোমাদের নিকট এসেছি পরস্পর সংলাপের জন্য। অতঃপর যখন সবাই জমায়েত হল, তখন সে নিজের মধ্যে বিস্ফোরণ ঘটালোএটা কি গাদ্দারী নয়?

অতি সাম্প্রতিক হাজেসের ঘটনাটির দিকে লক্ষ্য করুন! আর এক সপ্তাহ পূর্বে আমার সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিল, সেই আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই!

 সে বলল: আমাদের নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল: আমি আপনাদের সাথে নামায পড়তে চাই। নামায!!! যদি আপনি যুদ্ধ অবস্থায়ও থাকেন, আর কোন ব্যক্তি আপনার নিকট এসে বলে: আমি আপনার সাথে নামায পড়তে চাই, আপনি তো তাকে নামায পড়তে দিবেন।

সে বলল: আমি আপনাদের সাথে নামায পড়তে চাই। আমরা বললাম: নামায পড়ন, আপনাকে স্বাগতম! এরপর আমরা তার কাজ দেখলাম!

 দেখুন, জনসাধারণ তাদের এমন নাটক দেখেই প্রতারিত হয়!

তো আমরা বললাম: আমাদের সাথে নামায পড়তে পারেন। এরপর যখন আমরা সকলে একত্রিত হলাম, তখন সে তার পরকল্পনা বাস্তবায়ন করলো এবং আমাদের উপর বিস্ফোরণ ঘটালো

আমি বলছি: আল্লাহর শপথ! আমি এই ঘটনাটি শুনে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! সেই আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই, আমি এমন লোকের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, যার পা কাটা গেছে অথবা হাতের আঙ্গুল পরিমাণ কাটা গেছে।

 এটা কি গাদ্দারী নয়?!

 এটা অত্যন্ত নিকৃষ্ট গাদ্দারী! আমরা আল্লাহর নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। এর উপর প্রমাণ অনেক আছে

 আমরা ১৫ তম বা ১৬ তম বৈশিষ্ট্যের আলোচনায় আসি। খারেজিরা মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই বলে বিদ্রোহ করে যে, অন্যরা আল্লাহর শরীয়ত কার্যকর করছে না।

এটা কি পাওয়া যাচ্ছে, না যাচ্ছে না? সুবহানাল্লাহ!

১৪ শত বৎসর যাবত একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে বের হয়ে বলছে: তোমরা আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়ন করছে না।

 আল্লাহর শপথ ভাইয়েরা! যখন আমি এই পৃষ্ঠাগুলো এবং এ বিষয়ে ইলমের কিতাবসমূহ পড়ছিলাম, তখন আমি বলে উঠলাম: সুবহানাল্লাহ!! ইবনে তাইমিয়া আজকেও আমাদের সাথে উপস্থিত নাকি? ইবনে হাযেম বা আলী ইবনে আবি তালিব কি এই যুগে আমাদের সাথে উপস্থিত? কী সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন!

ইবনে জারির রা: বলেন: আলী রা: জুমআর খুতবা দিচ্ছিলেন, ইত্যবসরে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলে উঠল: হে আলী! তুমি আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে মানুষকে অংশীদার করেছো। আল্লাহর শরীয়তকে ফায়সালাকারী বানাওনি।

 অথচ আল্লাহ ব্যতিত কারো ফায়সালা করার অধিকার নেই। এরপর তারা চতুর্দিক থেকে আওয়ায করে উঠলো; আল্লাহ ব্যতিত কারো ফায়সালা করার অধিকার নেই! আল্লাহর ব্যতিত কারো ফায়সালা করার অধিকার নেই! তখন আলী রা: বলতে লাগলেন: এটা কথা সত্য, কিন্তু এর মাধ্যমে তোমরা ভ্রান্ত উদ্দেশ্য নিয়েছে।

এমনিভাবে যুগে যুগে খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: তাদের মাঝে ইলমের দুর্বলতা ও অজ্ঞতার বিস্তার।

ইবনে হাজার রহ: বলেন: খারেজিরা যখন তাদের বিরোধীদেরকে কাফের বলে হুকুম আরোপ করল এবং তাদের রক্ত প্রবাহিত করা বৈধ করে নিল, অপরদিকে যিম্মীদেরকে ছেড়ে দিতে লাগল, তখন তাদের কথা ছিল: আমরা আহলে যিম্মাদের চুক্তি পুরা করছি। এই বলে মুসলমানদের হত্যার কাজে লিপ্ত হল।

এ সবই জাহেলদের ইবাদত, যাদের অন্তর ইলমের নূরে উম্মুক্ত হয়নি।

দেখুন, খারেজিদের একটি বৈশিষ্ট্য হল, তারা তাদের বিরোধীদেরকে মুরজিয়া নামে বিশেষায়িত করে। বলে, অমুক মুরজিআদের দলভূক্ত। শুধু একজন আলেম তাদের বিরোধিতার কারণে তার ব্যাপারে বলে: সে মুরজিআ। সুবহানাল্লাহ! এমনকি এ বিষয়টা নিয়ে উলামায়ে কেরামও কথা বলেছেন।

 ইমাম আহমাদ রহ: বলেন:

“খারেজিরা আহলুস সুন্নাহ ওয়ালজামাকে মুরজিআ বলে নামকরণ করে। নিশ্চয়ই খারেজিরা নিজেদের কথায় মিথ্যাবাদী।”

তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য দেখুন, আত্মপ্রবঞ্চিত হওয়া এবং সাধারণ মানুষকে আকর্ষিত করা।

 নবী করীম বলেন:

নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে এমন একটি কওম আছে, যারা এমন ইবাদত ও সাধনা করবে, যার দ্বারা সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি মুগ্ধ হয়ে পড়বে এবং তারাও নিজেদের ব্যাপারে গর্বিত থাকবে, তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমনিভাবে ধনুক থেকে তার বের হয়ে যায়। (বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ রহ:) এটা আর স্পষ্ট করার প্রয়োজন নেই। খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল তারা উম্মাহর মাঝে এমন সময় প্রকাশিত হয়, যখন মুসলিমগণ তাদের। খেলাফত বিভক্ত হয়ে পড়ে। আলী রা: এর যামানায় তাদের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, যে সময় আলী রা: ও মুআবিয়া রা: এর মাঝে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছিল। এমনিভাবে তারা বর্তমানে নতুন করে শামে আত্মপ্রকাশ করেছে, যখন সেখানে বিভিন্ন গ্রুপগুলো বিভক্ত হয়ে পড়েছে। একারণেই নবী করীম ﷺখারেজিদের ব্যাপারে বলেন: তারা বের হবে মানুষের মাঝে বিভক্তির সময়। (বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারী রহ:) ইমাম নববী রহ: বলেন: “অর্থাৎ মানুষের বিচ্ছিন্নতা ও মতবিরোধের সময়। যেমন আলী ও মুআবিয়া রা: এর মাঝে হয়েছিল।”

দেখুন, খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: মানুষ থেকে তাওবা নেওয়া এবং মুসলমানদেরকে খুব দ্রুত দ্বীন থেকে বের করে দেওয়ার বিদআত। এমনকি বর্তমানে তারা অর্থাৎ বাগদাদীর খেলাফত বিভিন্ন অফিস খুলেছে, কি জন্য? তাওবা গ্রহণের অফিস। আর আমি পূর্বে যেমনটা জেনেছি, তার নির্দিষ্ট সময় হল রবিবার ও বুধবার। ফলে যে-ই তাদের নিকট যেতে চায়, তাদের সাথে যোগ দিতে চায়, যদি সে বড় শায়খ বা আলেমও হয়, তথাপি তারা বলবে: তুমি আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার পূর্বে চল, আমরা তোমার কুফরী থেকে তোমার তাওবা নিব। এটা কি এখন আছে, নাকি নেই? এমনিভাবে ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই এটা ছিল। তারা আলী রা: এর নিকট একটি পত্র লিখলো। তাতে বলল: পরকথা, হে আলী! তুমি তোমার রবের জন্য রাগ করনি, বরং তুমি তোমার নিজের জন্য রাগ করেছে। তাই যদি নিজের ব্যাপারে কুফরের সাক্ষা দেয় এবং তাওবা কর, তাহলে আমরা আমাদের মাঝে ও তোমার মাঝে সন্ধি করার চিন্তা-ভাবনা করবো।

(আলবিদায়া ওয়াননিহায়া) যখন শায়খ সালাহুদ্দীন রাক্কায় গেলেন এবং তাদের সাথে সন্ধি, যুদ্ধ বা যেকোন বিষয়ের ব্যাপারে সংলাপ করতে চাইলেন, তখন তারা বলল: এরা তওবা করার আগ পর্যন্ত আমরা কিছুতেই এটা করবো না। কারণ এরা মুরতাদ। ঠিক এমনিভাবে বর্তমানেও তারা কোন দলকে তাদের নিকট গ্রহণ করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের থেকে তাওবা না নেয় এবং তারা তাদের মাঝেও তাওবা চাওয়ার দরজা না খোলে এবং তার নিদর্শন তাদের মাঝে প্রকাশ না পায়। খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: বিতর্ক, প্রচারণা, বক্তৃতা ও মানুষকে বিভ্রান্ত করার উপর নির্ভর করা। আবুল আব্বাস বলেন: “খারেজি গোষ্ঠীর মাঝে অনেক বিতর্ক, ঝগড়া এবং অনেক বক্তা ও কবি ছিল।”

খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য: মানুষকে তাদের দ্বীন ও জ্ঞানের ব্যাপারে পরীক্ষা করা। পরীক্ষা করা খারেজিদের ধর্ম। (আস-সিয়ার লিয যাহাবী) মুহাল্লাব একজন লোককে তাদের নিকট পাঠালো তাদেরকে প্রশ্ন করার জন্য। লোকটি তাদেরকে বলল: তোমরা সেই দুই ব্যক্তির হুকুম বল তো, যারা তোমাদের নিকট হিজরত করার উদ্দেশ্য বের হয়েছে, অতঃপর তাদের একজন পথেই মারা গেল। তারপর তোমরা তার পরীক্ষা নিলে, আর সে তোমাদের কথা সমর্থন করলো না, তাদের কি হবে? প্রমাণিত হল যে, পরীক্ষা করা তাদের দ্বীনের অংশ। এমনিভাবে ইতিহাসের প্রতিটি যুগেই খারেজিদের একটি বৈশিষ্ট্য হল তাদের কথাগুলো সুন্দর, কিন্তু কাজগুলো মন্দ। নবী ﷺ বলেন: খারেজিরা সুন্দর কথা বলে, কিন্তু মন্দ কাজ করে, আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকে, কিন্তু তারা সামান্যও আল্লাহর কিতাবের উপর থাকে না। তাদের ভাষণগুলো শুনুন, আদনানীর শাহাদাতের অল্প কিছু দিন আগে তার সর্বশেষ ভাষণটি শুনুন! হে আমেরিকা! আমরা তোমার কাছে চলে এসেছি , হে অমুক! আমরা আসছি.. তাই ধৈর্য ধারণ কর আমেরিকা, একটু অপেক্ষা কর আমেরিকা!

তারপর বাস্তবক্ষেত্রে তাকালে আপনি দেখতে পাবেন, মারেহ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, দেখতে পাবেন সামাজিক বিদ্যালয় ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে, আরো দেখতে পাবেন হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ… সম্বোধন হে আমেরিকা, হে রাশিয়া, হে ইরান! আপনি শুনে বলবেন: আল্লাহু আকবার! বিজয় অতি নিকটে! কিন্তু যখন বাস্তব ভূমিতে দেখবেন, তখন দেখতে পাবেন তারা মারেহে আক্রমণ করছে, সামাজিক বিদ্যালয়ে আক্রমণে করছে! আর বর্তমানে অতিসত্তর আমরা হামার দিকে অগ্রসর হবো। ইতিহাসের জন্য এটা লিখে রাখছি.. আজ ৯ মুহাররম। এখনো যুদ্ধ শুরু হয়নি। মাত্র তার ভূমিকা শুরু হয়েছে। সেই আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই, আমরা আমাদের মাঝে ও তাদের মাঝে কিছু এলাকা সরকারের জন্য ছেড়ে দিয়েছি, যেটাতে আমরা প্রবেশ করবো না, যাতে তাদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে বাধ্য না হই। যাতে দামেশকের নিকটবর্তী অঞ্চলগুলো উদ্ধার করতে পারি। কিন্তু আপনারা মনে রাখবেন, (তবে যদি আল্লাহ এই ভূমিটিকে স্বীয় রহমতে ঢেকে নেন, তবে ভিন্ন কথা!) তারা অতিসত্তরই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সেখানে আক্রমণ করে বসবে। একারণে বলা হয়েছে যে, তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে, কিন্তু কাজ করে মন্দ। নবী ﷺ বলেন: শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায় আসবে, যারা সত্য কথা বলবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। অর্থাৎ শুধু মুখের কথা। খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল স্বার্থোদ্ধারের জন্য হত্যা করে ফেলা। কোন কল্যাণ বা স্বার্থের জন্য কাউকে হত্যা করে ফেলা যাবে!! কোন স্বার্থ আছে? তো হত্যা করে ফেল, কোন সমস্যা নেই!! ইবনুল ফুজা খারেজি বলে: “মানুষের স্বার্থের জন্য একজন লোককে হত্যা করা মন্দ কিছু নয়।” খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, তারা হক কবুল করবে না, তা যেদিক থেকেই আসুক কেন। আর কারো উপদেশও গ্রহণ করে না। ইবনে কাসীর রহ: বলেন:

“এই প্রকার মানুষ হল আদম সন্তানের সবচেয়ে বিরল প্রকার। তাই পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই সত্ত্বার, যিনি তার সৃষ্টিজীবকে নিজ ইচ্ছামত বিভিন্ন ধরণের বানিয়েছেন এবং পূর্বেই সব কিছু নির্ধারিত করে রেখেছেন। ইবনে কাসীর রহ: বলেন: “জনৈক সালাফ খারেজিদের ব্যাপারে কতই না সুন্দর বলেছেন যে: আল্লাহর (সুবহানাহু তা’আলা) নিম্নোক্ত আয়াতে তাদের কথাই আলোচিত হয়েছে “বল, আমি কি তোমাদেরকে কর্মে সর্বাপেক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি সম্পর্কে জানাবো? যাদের পার্থিব জীবনের সকল চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। অথচ তারা ধারণা করে, তারা ভাল কাজ করছে।” (তিনি এটা বলেছেন: আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়ায়) খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল, এর মাধ্যমে আমি খারেজিদের ব্যাপারে সর্বশেষ দু’টি গুণ বর্ণনা করে আলোচনা সমাপ্ত করবো। আশা করি, যারা এ ব্যাপারে আরো বেশি জানতে চান, তাদের জন্য আমরা একটি পুস্তিকা ছাপাবো। তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল বিকৃত পরহেজগারী। আপনি দেখতে পাবেন, তারা কিছু বিষয়ে খুব পরহেজগারী অবলম্বন করে, অথচ বড় বড় বিষয়গুলোতে পরহেজগারী অবলম্বন করে না। প্রথম যুগের খারেজিদের দিকে দেখুন, কাইস ইবনে আম্মাদ বলেন: খারেজিরা চলতে চলতে আব্দুল্লাহ ইবনে খাব্বাব রা: এর নিকট এসে পৌঁছলো। তিনি ফিত্না থেকে পৃথক হয়ে আল্লাহর এক গ্রামে একাকী বসবাস করছিলেন। তারা তাকে ধরল। বর্ণনাকারী বলেন: তখন তারা দেখলো, খেজুর গাছের আগা থেকে একটি খেজুর নিচে পড়ল। শুনুন পরহেজগারীর কাহিনী!! তখন তাদের এক ব্যক্তি সেটা নিয়ে মুখে পুরে দিল। তারা বলল: চুক্তিবদ্ধ ও যিম্মাভুক্ত লোকদের একটি খেজুর। তুমি এটা এর থেকে উত্তম মূল্যে গ্রহণ করেছে। অতঃপর খেজুরটি বের করল।

অতঃপর তারা একটি শুকরের কাছে আসল। তাদের একজন ব্যক্তি শুকরটি হত্যা করল। অতঃপর সেটা নিয়ে তারা তার খৃষ্টান মালিকের নিকট গেল এবং তাকে তার মূল্য পরিশোধ করল। তখন খাব্বাব রা: তাদেরকে বললেন: “আমি কি তোমাদেরকে এমন ব্যক্তি সম্পর্কে বলবো, যে তোমাদের ঐ খেজুর ও এই শুকর থেকে তোমাদের উপর অধিক হক রাখে?” (তখন তারা উক্ত সাহাবী রা: কে পায়ে শিকল বেঁধে রেখেছিল) । তারা বলল: “অবশ্যই।” তিনি বললেন: “আল্লাহর শপথ, আমি। আমি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর থেকে কখনো কোন নামায, রোযা.. (এভাবে অনেকগুলো বললেন) ছাড়িনি।” তখন তারা তার উপর আঘাত করে তাকে হত্যা করে ফেলল। বর্তমানেও কয়েকদিন পূর্বে পড়েছি, তারা একটি ভাষণ প্রকাশ করেছে, শুনুন বিকৃত পরহেজগারীর ঘটনা! তারা একটি ভাষণ সম্প্রচার করেছে, কোন কুরবানীর পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করা যাবে না। এটি একটি সুন্নাহ ঠিক আছে। আরো বয়ান সম্প্রচার করেছে: যে কষাই কোন কুরবানীর পশুকে অন্য আরেকটি পশুর সামনে জবাই করবে, এটা শরীয়ার বিরোধী। এটা পরহেজগারী। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হল: যখন তারা মুজাহিদদের নিকট আসে, তখন তাদেরকে সকল জনগণের সামনে হত্যা করে। মুসলমানদের ক্ষেত্রে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক বা কোন চুক্তির পরওয়া করে না। তাহলে বিকৃত পরহেজগারী বিদ্যমান আছে, নাকি নেই? এরপরে আমরা আসি আরেকটি বৈশিষ্ট্যের দিকে, তথা ঝগড়ার মধ্যে অন্যায় আচরণ করা এবং মানুষকে অভিশম্পাত করা। যুগে যুগে খারেজিদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল: তারা তাদের বিতর্কের মধ্যে অন্যায় আচরণ করে। আর নবী ﷺ বলেছেন, যেটা বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত হয়েছে-রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: মুনাফিকের আলামত তিনটি: তার মধ্যে একটি হল-বিতর্ক করলে অন্যায় আচরণ করে। যেমন খারেজিদের কিছু কিতাবে, যেমন কাশফুল গুম্মাহ নামক কিতাবে তারা ওহী লেখক ওসমান রা: এর ব্যাপারে বর্ণনা করে তিনি দাজ্জাল থেকে জঘন্য ফিত্না সৃষ্টিকারী। নাউযু বিল্লাহ! তারা ওসমান রা: এর ব্যাপারে বলে যে, ওসমান রা: দাজ্জাল থেকেও ভয়ংকর ফিত্নাকারী। এটা বলছে আমীরুল মুমিনীন ওসমান ইবনে আফফান রা: এর ব্যাপারে!!!

বর্তমানেও তাদের ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে: শুধু অমুক তালিবুল ইলম বা শায়খ তাদের সাথে দ্বিমত করেছে, তাই তার ব্যাপারে বলে দিচ্ছে এই লোক তো দালাল, গুপ্তচর, গোয়েন্দা, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী, সাহওয়াত, মুরতাদ। তার উপর সকল অপবাদ লাগিয়ে দিচ্ছে। সুবহানাল্লাহ! তারা কিভাবে মুজহিদদেরকে বলে সাহাওয়াত! অথচ আমরা জানি, সাহাওয়াত হল, যারা আমেরিকাকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য পরামর্শ দেয়। কিভাবে মুজাহিদগণ সাহওয়াত হতে পারে, অথচ আমেরিকা প্রতিদিন আক্রমণ করে মুজাহিদদেরকে হত্যা করছে! রাশিয়া হামলা করে মুজাহিদদেরকে হত্যা করছে, ইরান হামলা করে মুজাহিদদেরকে হত্যা করছে। এ সকল নির্বোধ ও আত্মপ্রবঞ্চিত লোকদের মনে কিভাবে এগুলো উদয় হয়?! এছাড়াও মানুষকে রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া (তথা অভিশম্পাত করা) এবং আরো অন্যান্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এই ৩০ টির কাছাকাছি বা ২৫ টির মত বৈশিষ্ট্য, যা আমরা গণনা করলাম। এছাড়াও আরো অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখন আমি আপনাদেরকে সেই আল্লাহর শপথ দিয়ে বলছি, যিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই! আমি এই যে বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করলাম এবং যেগুলো উলামায়ে কেরাম উল্লেখ করেছেন, এগুলো কি জামাতুদ দাওলার/আই এসের মাঝে পাওয়া যায়? প্রশ্ন আপনাদের প্রতি… পাওয়া যায়, না যায় না? এই তো আপনারাই দেখলেন। এজন্য ভাইয়েরা! আমি দীর্ঘ দিন থেকে এরকম একটি আলোচনাটি পেশ করতে চাচ্ছিলাম। তারপর যখন তাদের সর্বশেষ ভাষণটি দেখলাম এবং জানতে পারলাম যে, তারা আরো যুদ্ধ ও ফিতনা সৃষ্টি করবে, তখন আমি যিম্মা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য এই প্রয়াসটুকু চালালাম। হয়ত আমি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের দিন শামবাসী ও পৃথিবীর সকল মানুষের থেকে যিম্মামুক্ত অবস্থায় উপস্থিত হতে পারবো। আরেকটি কথা বলে আমি আমার আলোচনা শেষ করবো ভাইয়েরা! কিছু মানুষ বলে: তাহলে মানুষ তাদের দ্বারা প্রতারিত হওয়ার কারণ কি? আমি সেটাই বলবো, যেটা জনৈক সালাফ বলেছেন: “যে আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের ব্যাপারে প্রতারিত করে, আমরা তাদের দ্বারা প্রতারিত হয়ে পড়ি।” মানুষ যখন খেলাফাত ও ইসলামের কথা শুনলো…আল্লাহর শপথ!

“আমরা তো যুদ্ধ করি এবং আমাদের রক্ত প্রবাহিত হয় একমাত্র লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জন্য। আমরা সেই চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত ও একক আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তাঁর সর্বোচ্চ নামসমূহ দ্বারা, আমরা যদি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর জন্যই যুদ্ধ করে থাকি, তাহলে তিনি যেন আমাদেরকে শামের এক বিঘত জমির উপরও কর্তৃত্ব দান না করেন।” কিন্তু মানুষ এ বিষয়ে প্রতারিত হয়, কিছু মানুষ বলে, তাদের মাঝে মুহাজিরীন দেখা যায়, সালিহীন দেখা যায়, এরকম আরো ভাল বিষয় দেখা যায়। আমরা বলবো: খারেজিদের মূল বৈশিষ্ট্যই হল, তাদের মাঝে এমন কিছু লোেক পাওয়া যাবে, যারা কুরআন পড়বে, ইলম শিখবে, আল্লাহর কিতাব পড়বে। রাসূল তো খারেজিদেরকে জাহান্নামের কুকুর বলে নামকরণ করেছেন মুসলমানদের হত্যার ব্যাপারে তাদের উন্মত্ততার কারণে। আল্লাহর নিকট এর থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। অনেক সময় কেউ কেউ মুজাহিদ গ্রুপগুলোর মাঝে বিভিন্ন ভুল-ভ্রান্তি দেখার কারণে তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়। আমরা এটা বলি না যে, জিহাদী গ্রুপগুলো নিস্পাপ; ঐ সকল গ্রুপগুলোর মাঝে অনেক গুনাহ ও ভুল-ভ্রান্তি আছে। কিন্তু মুসলিমদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার মাসআলাটি আল্লাহর দ্বীনে সবচেয়ে গুরুতর বিষয়। একারণেই হযরত উসামা রা: যখন একজন মুসলিম ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলেছিলেন, তখন আল্লাহর রাসূল তাকে বলেছিলেন: “যখন কিয়ামতের দিন সে তোমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, তখন তুমি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর কি জবাব দিবে?” নবী ﷺ আরো বলেন: “সমগ্র দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহর নিকট অধিক সহজ, কোন মুসলিমকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার চেয়ে।” একারণে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল, তাদের সমর্থক অথবা যে স্বীয় অন্তরে তাদের প্রতি সামান্য দরদও রাখে, এমন লোকদের উদ্দেশ্য আমরা বলবো: আল্লাহর শপথ, আমরা আল্লাহর নিকট আপনার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো। আর আল্লাহর সামনে আপনিও তার সাথে শরীক থাকবেন। নবী ﷺ বলেছেন: “যে একটি শব্দের মাধ্যমেও কোন মুসলিমকে হত্যার ব্যাপারে সাহায্য করল, সে আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, তার দু’চোখের মাঝে কপালে লেখা থাকবে: আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশাগ্রস্ত।”

আমরা আল্লাহর নিকট এর থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। পরিশেষে বলছি, আমাদের এ কথার অর্থ এটা নয় যে, তাদের মাঝে কোন সত্যবাদী নেই, তাদের মাঝে কোন সৎ লোক নেই। এবং এ অর্থও নয় যে, তাদের প্রত্যেক সদস্যদের উপর পৃথক পৃথকভাবে খারেজি শব্দটা ব্যবহার করা হবে; বরং আমাদের কথা হচ্ছে এই খেলাফাত সম্পর্কে। এটা একটি ভ্রান্ত ও খারেজি খেলাফত। যা নিজের মাঝে খারেজিদের সকল গুণাবলীর সমাবেশ ঘটিয়েছে। আর যদি সকল গুণ নাও থাকে, তবে অধিকাংশগুলো অবশ্যই। আল্লাহর নিকট এ থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি। এখানে সর্বশেষ আরেকটি বার্তা দিচ্ছি: আমি দাওলার সকল যুবক, তাদের সকল হিতাকাঙ্খী ও তাদের দ্বারা যারা প্রতারিত হয়েছেন, তাদের সকলের উদ্দেশ্য বলছি: আপনারা এই বৈশিষ্ট্যগুলো শুনলেন, তাই ইলমী আলোচনা পড়ুন। এই ধারণা করবেন না যে, আপনি কিয়ামতের দিন একথা বলে মুক্তি পেয়ে যাবেন যে: আমি তো প্রতারিত হয়েছি। আমি আপনার উদ্দেশ্য বলছি: “আল্লাহর শপথ! আমি আপনার এমন একটি অবস্থার ব্যাপারে শঙ্কিত যে: আপনি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার সামনে উপস্থি হয়ে বলবেন: হে প্রভূ! তাদের শ্লোগানগুলো আমাকে ধোকায় ফেলেছে! হে প্রভূ! তাদের বক্তৃতাগুলো আমাকে প্রতারিত করেছে! আর তখন আল্লাহ আপনাকে বলবেন: তুমি কি আমার এই বাণী পড়নি: “তাই যদি তুমি না জান, তাহলে কিতাবের ইলমওয়ালাদেরকে জিজ্ঞেস করো? তখন আপনি সকল জগতের প্রতিপালকের সামনে কি বলবেন?!”

হে দাওলার সৈনিক! “আল্লাহর শপথ! আমি তোমার এমন অবস্থার আশঙ্কাবোধ করছি যে: তুমি কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াবে, আর নিজেকে ভাববে, তুমি মুজাহিদ; আল্লাহর পথে যুদ্ধ করেছো, আর তখন আমরা আল্লাহর নিকট তোমার সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াবো, সেই কুরআন বহন করে নিয়ে উঠবো, যা আমরা মুখস্ত করেছি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বহন করে নিয়ে উঠবো, অন্তরে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ বহন করে নিয়ে উঠবো, অতঃপর আল্লাহর সামনে তোমার বিরুদ্ধে দলিল পেশ করবো।

হে দাওলার সৈনিক।

আমি তোমার ব্যাপারে আশঙ্কা করছি যে, তুমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে দেখবে, তোমার প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে সহস্র আল্লাহর পথের মুজাহিদ, যাদের রক্ত তুমি প্রবাহিত করেছে, যাদেরকে তুমি অন্যায়ভাবে কাফের আখ্যা দিয়েছে। আল্লাহর নিকট মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি।” আর যারা, যা কিছু আলোচনা করলাম এ সকল কিছু দ্বারাও পরিতৃপ্ত না হয়ে বরং একথা বলছে যে: আমি এগুলোতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না, কারণ এখানে তো উভয় পক্ষ থেকেই মতবিরোধ ও যুদ্ধ হচ্ছে। আমি আপনাকে বলছি: আপনি আজও দাওলাকে জিজ্ঞেস করুন, পূর্বের সব বাদ দিন! এখনো কি দাওলা পারবে মুসলমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ করতে? রাজি হবে যেকোন সন্ধির মাধ্যমে? রাজি হবে যেকোন সমঝোতার মাধ্যমে? তারা বলবে: “এ সব অসম্ভব, কারণ তারা মনে করে, আমরা মুরতাদ। আর মুরতাদের সাথে সন্ধি করা হারাম।” ফলে কোন সন্ধি বা বিরতিকে গ্রহণ করা তারা সম্ভব মনে করে না। তবে যদি আল্লাহ নিজ রহমত দ্বারা তার বান্দাদেরকে অনুগ্রহ করেন, তবে ভিন্ন কথা। আমরা চিরঞ্জীব ও চিরপ্রতিষ্ঠিত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করছি, যেন আমরা কিয়ামতের দিন সকল জগতের প্রতিপালকের সামনে অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকি। যারা এই আলোচনাটি শুনেছেন/পড়েছেন, তাদের জন্য নবী ﷺ এর এই বাণীটিই যথেষ্ট: “খারেজিরা হল জাহান্নামের কুকুর। তারা আল্লাহর নিকট সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট।” তাই সত্যের পরে পথভ্রষ্টতা ব্যতিত আর কি আছে? হে আল্লাহ! হে চিরঞ্জীব, চিরপ্রতিষ্ঠিত! তোমার মহান নামের উসিলায় তোমার নিকট প্রার্থনা করছি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

7 + twelve =

Back to top button