গাজওয়াতুল হিন্দ আর্কাইভতথ্য প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশলবই ও রিসালাহবালাকোট মিডিয়ামিডিয়া

বাংলায় অনূদিত একটি বই মাস্টার হেই লং রচিত “নীরবে হত্যার কৌশল”

বাংলায় অনূদিত একটি বই মাস্টার হেই লং রচিত

“নীরবে হত্যার কৌশল”

ডাউনলোড করুন

Pdf

https://banglafiles.net/index.php/s/9rQoXG3YjdN6B64
https://ia600900.us.archive.org/3/items/balakot_media_books/techniques_of_silent_killing_bn.pdf
http://www.mediafire.com/file/x2jfa3tmq1xo9ei/4.techniques_of_silent_killing_bn.pdf/file
https://archive.org/download/nirobe-hottar-koushol/techniques_of_silent_killing_bn.pdf

Word
https://banglafiles.net/index.php/s/Sj8anCWrHnw7dd8

https://archive.org/download/nirobe-hottar-kowsol/.docx

====================================
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية (بنغلاديش)
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ বাংলাদেশ শাখা
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]

********************************************

 

নীরবে হত্যার কৌশল

মূল:

মাস্টার হেই লং

 

 

অনুবাদ:

বালাকোট মিডিয়া

সূচিপত্র

 

 

সূচনা.. 4

প্রথম অধ্যায়ঃ হস্তচালিত অস্ত্রসমূহ. 4

গজালঃ… 4

ছুরিঃ… 7

নাকচাকুঃ… 8

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ গজাল. 12

কৌশল ১. 14

কৌশল ২. 18

কৌশল ৩. 22

কৌশল ৪. 26

কৌশল ৫. 28

কৌশল ৬. 32

কৌশল ৭. 34

তৃতীয় অধ্যায়ঃ ছুরি.. 37

কৌশল ৮. 37

কৌশল ৯. 38

কৌশল ১০. 41

কৌশল ১১. 43

কৌশল ১২. 44

কৌশল ১৩. 46

কৌশল ১৪. 48

চতুর্থ অধ্যায়ঃ নানচাকু. 52

কৌশল ১৫. 56

কৌশল ১৬. 58

কৌশল ১৭. 61

কৌশল ১৮. 62

কৌশল ১৯. 64

কৌশল ২০. 67

কৌশল ২১. 69

উপসংহার. 72

সূচনা

এই বইটিতে সেসকল হত্যা-কৌশলের বর্ণনা এসেছে যেগুলোর জন্য নীরবতা, টার্গেটের ঘনিষ্ট সংস্পর্শে আসা এবং কেউ বুঝতে পারার আগেই সরে পড়া অপরিহার্য বিষয় । এখানে উল্লিখিত সকল অস্ত্রই সম্পূর্ণ দৈহিক সংস্পর্শের সহায়তায় হস্তচালিত অস্ত্র । এখানে আলোচিত সকল কৌশলেই আততায়ী তার নির্বাচিত টার্গেটকে একটিমাত্র আঘাতের দ্বারা হত্যা করেন এবং এই সময় যত কম সম্ভব দৃষ্টি আকর্ষণ করেন ।

আমরা এখানে দেখিয়েছি যে, কিভাবে একজন আততায়ী হেটে যাওয়া একটি টার্গেটকে সম্মুখ থেকে, পার্শ্ব থেকে এবং পেছন থেকে আক্রমণ করেন । এছাড়াও বসে থাকা টার্গেটকে কিভাবে পার্শ্ব থেকে ও পেছন থেকে আক্রমণ করা যায় তাও আমরা দেখিয়েছি । আপনি যদি চতুর্থ অধ্যায়ের কৌশলগুলো ব্যতীত অন্য যে কোন অধ্যায়ের পাতা উল্টান, তাহলে আপনি লক্ষ্য করবেন

যে, প্রতিটি দৃশ্যের ধারাবাহিকতায় টার্গেট মাটিতে লুটিয়ে পড়ার আগেই আততায়ী দৃশ্য থেকে সরে পড়ছেন । আর যখন একটি টার্গেট খতম হয়ে যায় তখন একজন আততায়ীর কাজ সুসম্পন্ন হয় ।

এছাড়া নিজেকে বাঁচিয়ে রাখাও একজন আততায়ীর একটি কাজ, যেন যখন প্রয়োজন পড়ে তখন তিনি তার এই কাজের দক্ষতাকে ব্যবহার করতে পারেন । এজন্য যা প্রয়োজন তা হলো, আততায়ীর সঠিকভাবে এলাকায় প্রবেশ করা, তার টার্গেটের অবস্থান বের করা এবং পাকড়াওকৃত না হয়ে সেই টার্গেটকে নিষ্ক্রিয় (হত্যা) করা । যখন তিনি তার কাজ সম্পন্ন করে ফেলবেন তখন কোন প্রকারের দ্বিধা-ইতস্ততা না করে তার ঘুরে যেতে হবে এবং চলে যেতে হবে ।

প্রথম অধ্যায়ঃ হস্তচালিত অস্ত্রসমূহ

গজালঃ

যদিও গজাল বা এর স্বরূপ জিনিস বাজারে কিনতে পাওয়া যাবে তবে একজন আততায়ী বাজার থেকে তা কিনবেন না, কারণ তা ক্রয়ের জন্য পরবর্তীতে বিক্রেতা তাকে মনে রাখতে পারে । আর যেহেতু খুব সহজেই গজাল তৈরী করা যায় তাই একটি অতিরিক্ত গজাল বাজার থেকে কিনে রাখলে এতে শুধু ঝুঁকিই বৃদ্ধি পাবে । গজাল এর চিত্র নীচে দেয়া হলোঃ

চিত্র-১ এ গুপ্তহত্যার জন্য একটি আদর্শ গজাল তুলে ধরা হলো । ভালো হয় যদি গজালের দন্ডটি১০ ইঞ্চির মতো লম্ব হয় এবং একটি সাধারণ পেন্সিলের মতো পুরু হয় । (আসলে কিছু কিছু টার্গেটের ক্ষেত্রে একটি সুচালো মাথা বিশিষ্ট প্রকৃত পেন্সিলও তার মৃত্যু বয়ে আনার জন্য দৈর্ঘ্য ও শক্তিতে যথেষ্ট হবে । কিন্তু, এটি অনেকের জন্যই যথেষ্ট হবে না ।) দন্ডটির সরু মাথার দৈর্ঘ্য দেড় থেকে দুই ইঞ্চি হতে হবে এবং রুক্ষতা বা অমসৃণতা থেকে মুক্ত হতে হবে । দন্ডটির সরু মাথাটির এমন হওয়া চাই যেন এটি কোন প্রকারের রুক্ষতা ও জবরদস্তি ব্যতীত সহজেই একটি কাপড় ভেদ করে যেতে পারে । সরু মাথাটি রুক্ষ ও অমসৃণ হলে এর উপর নিযুক্ত চাপের দিক পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে (ফলশ্রুতিতে টার্গেটের ঠিক যে অংশে আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছেন তা লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যেতে পারে)। তাই গজালের সরু মাথাটি এবং গজালের সম্পূর্ণ দন্ডটি মসৃণ হওয়া জরুরী ।

গজালের হাতলের দৈর্ঘ্য আনুমানিক চার ইঞ্চি লম্বা হতে হবে, তবে ব্যবহারকারীর হাতের উপর ভিত্তি করে তা আরও বেশীও হতে পারে । এক খন্ড লম্বা কাপড়ের টুকরোই হাতল বানানোর জন্য সবচেয়ে উত্তম । এর জন্য কাপড়ের টুকরোটিকে নির্ধারিত স্থানে ভালো করে পেঁচিয়ে নিয়ে হবে এবং প্রাথমিক প্যাঁচগুলো দেবার সময় কাপড়টিকে গজালের দন্ডে বিদ্ধ করে দিতে হবে, আর সেই সাথে এমনভাবে পেঁচিয়ে নিতে হবে যেন গজালের ভোঁতা শেষ প্রান্তটিও কাপড় দ্বারা আবৃত হয়ে যায় । ঠিক যেমন দেখা যাচ্ছে চিত্র-১ এ ।

যেকোন হস্তচালিত অস্ত্রের ন্যায় গজাল ব্যবহারের জন্যও প্রয়োজন হস্তচালিত নিয়ন্ত্রণ কৌশল । এখানে যেসকল কৌশল বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর জন্য গজাল ধরার মূলত দুই ধরণের পদ্ধতি আছে । চিত্র-২ এ গজাল ধরার প্রথম পদ্ধতি দেখানো হয়েছে । এখানে আততায়ী তার বৃদ্ধাঙ্গুলি ছাড়া বাকি চারটি আঙ্গুল দিয়ে শক্ত করে গজালের হাতলকে আঁকড়ে ধরবেন এবং গজালের দন্ডটিকে দৃঢ়তা প্রদানের জন্য তার বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা গজালের দন্ডে চাপ দিয়ে ধরে রাখবেন যেন আঘাত করার সময় এটি নির্ধারিত লক্ষ্য থেকে সরে না পড়ে । এই পদ্ধতিতে তখনই গজালটিকে ধরা হয় যখন আনুভূমিক দিক কিংবা উপরের দিক বরাবর প্রচন্ড বেগে আঘাত করা হয় ।

চিত্র-৩ এ গজাল ধরার দ্বিতীয় পদ্ধতি দেখানো হচ্ছে । এখানে হাতের মুষ্টির তলদেশ থেকে গজালটি বের হয়ে আসে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির দ্বারা এর ভোঁতা প্রান্তে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হয় যেন টার্গেটকে আঘাত করার সময় গজালটি যখন টার্গেটের সংস্পর্শে আসে তখন তা আকস্মিক আঘাতের সহায়ক হয় । এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হয় কিছু বিশেষ আনুভূমিক আঘাত এবং সকল নিম্নমুখী আঘাতের ক্ষেত্রে ।

আর একটি অস্ত্রকে মজবুতভাবে মুষ্টিবদ্ধ করে আঁকড়ে ধরার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলাই বাহুল্য । উপযুক্তভাবে হাতল নির্মাণের মাধ্যমেই এই উদ্দেশ্য সাধিত হয় । ঢিলা প্যাঁচ দ্বারা নির্মিত একটি পিচ্ছিল কিংবা শিথিল হাতল নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কষ্টকর এবং যখন শক্তভাবে তা আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করা হয় তখন তা নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে । একটি হাতলের পরিধির মাপ কিরূপ হবে তা ব্যবহারকারীর হাতের আঙ্গুলের দৈর্ঘ্যের উপর নির্ভরশীল । একজন আততায়ীর উচিত হাতল যেন তার হাতে ঠিকমতো ফিট হয় সেই ব্যাপারে অতিরিক্ত যত্নশীল হওয়া ।

ছুরিঃ

চিত্র-৪ এ একটি “ফাইটিং নাইফ” (লড়াই এ ব্যবহৃত ছুরি) দেখানো হয়েছে । এটির দুই পার্শ্বই ধারালো এবং দুই পার্শ্বই সমানভাবে সরু হয়ে একটি পয়েন্টে মিশেছে । যেই ছুরির শুধুমাত্র একটি পার্শ্বই ধারালো হয় এবং/অথবা মাথার দিকে সুচালো প্রান্ত একদিকে বাঁকানো থাকে, সেই ছুরিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য বিশেষ কোণ থেকে সেটিকে প্রয়োগ করতে হয় । একজন আততায়ী সর্বদা সর্বোচ্চ কার্যকারিতা ও কার্যদক্ষতার দিকে ছুটে চলেন, আর যেই ছুরির একটি পার্শ্ব কাটতে অক্ষম সেটি আসলে একটি অর্ধেক ছুরি ।

ভালো “ফাইটিং নাইফ” (লড়াই এ ব্যবহৃত ছুরি) ওজনে হালকা হয় এবং এগুলোর হাতল সাধারণত পুডিং নির্মিত (যা সাধারণত অ্যালুমুনিয়াম এর অ্যালোয় দ্বারা নির্মিত) হয় যা গলিয়ে সেই ছুরির ধাতব অংশের সাথে জোড়া লাগিয়ে দেয়া হয় । আর ছুরির ধাতব অংশ নির্মিত হয় সার্জিক্যাল স্টীল এর দ্বারা, যার ফলে এর ধারালো পার্শ্ব প্রচন্ড ধারালো হয় । ছুরির দৈর্ঘ্য ১০ ইঞ্চির মতো হবে যা একটি অতি উত্তম দৈর্ঘ্য । এই দৈর্ঘ্যের ছুরি দিয়ে কোন টার্গেটকে নিষ্ক্রিয় (হত্যা) করতে ব্যর্থ হওয়া দুরহ ব্যাপার ।

চিত্র-৫ ছুরি ধরার নিম্নমুখী পদ্ধতি দেখানো হয়েছে যা নিম্নগামী খাড়া আঘাতের জন্য এবং কিছু আনুভূমিক বরাবর আঘাতের জন্য ব্যবহৃত হয় । লক্ষ্য করুন, এখানে বৃদ্ধাঙ্গুলি ছুরির হাতলকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যা গজালের ক্ষেত্রে হয়নি । এই দৈর্ঘ্যের ছুরির নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহারকারীর সকল শক্তিকে ছুরির হাতলেই নিয়োগ করা প্রয়োজন, তাই চিত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলিও হাতলকে আঁকড়ে ধরে রেখেছে । চিত্র-৬ এ ছুরি ধরার অভ্যন্তর-পদ্ধতি দেখানো হয়েছে । এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয় সকল উর্ধ্বগামী আঘাত এবং কিছু সমান্তরাল আঘাতে এবং কিছু আনুভূমিক আঘাতের বেলায় । আর এই কথা বলাই বাহুল্য যে, যেই ছুরিটিকে গুপ্তহত্যার কাজে ব্যবহার করা হবে সেই ছুরিটিকে ধার দিয়ে রেজর (যেটাকে বাংলায় বলে খুরধার) এর ন্যায় ধারালো করে রাখতে হবে ।

নাকচাকুঃ

যখন আমেরিকার আম জনতার কাছে নাকচাকুর প্রথম পরিচয় করানো হলো তখন এটি বেশ অপরিচিত এক কৌশল হিসেবে দেখা দিলো যার উপর অল্প কিছু মানুষই দক্ষ ছিল । কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল যে, সেখানকার প্রায় অর্ধেক তরুণেরাই এটি বহন করছে এবং প্রচন্ড বেগে এটিকে ছুটিয়ে বেড়াচ্ছে যেন এটি একটি খেলনা । আমি নিজে দশ-বারো বছরের কিশোরদেরকে প্রচন্ড বেগে এটিকে ব্যবহার করতে দেখেছি ।

প্রথমদিকে সেখানকার কর্তৃপক্ষ এই অস্ত্রটির প্রাণঘাতী কর্মদক্ষতা শনাক্ত করতে না পারলেও ধীরে ধীরে বিভিন্ন স্টেট এটিকে অবৈধ ঘোষণা করা শুরু করে । আমার এক ছাত্রের (প্রাক্তন ফেডেরাল প্রসিকিউটর) ভাষ্যমতে এটিকে তারা একটি আগ্নেয়াস্ত্রের মতোই ভয়ংকর মনে করে । যদিও টার্গেটের হাড় ভেঙ্গে তাকে নিশ্চল করার জন্য এই অস্ত্রটিকে একটি কার্যকর অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায়, আমরা এখানে এটির প্রাণঘাতী প্রয়োগগুলো নিয়েই আলোচনা করবো ।

চিত্র-৭ এ নানচাকুর একটি উদাহরণ ছবি দেওয়া হয়েছে, তবে এই অস্ত্রটির বানিজ্যিকিকরণের পর থেকে এখন এটির প্রচুর ধরণ বাজারে কিনতে পাওয়া যায় । আর ওজনের দিক থেকে এগুলো দশ আউন্স থেকে শুরু করে এমনকি বত্রিশ আউন্সেরও এখন কিনতে পাওয়া যায় । এটির সার্বিক দৈর্ঘ্য দশ থেকে ষোল ইঞ্চির শিকলও ব্যবহৃত হয় । এই অস্ত্রটি কন্টকযুক্ত, সহজে মুষ্টিবদ্ধ করার জন্য খাঁজবিশিষ্ট এবং গোল কিংবা অষ্টভুজাকৃতির প্রস্থচ্ছেদ বিশিষ্ট লাঠিবিশিষ্ট অবস্থাতেও পাওয়া যায় ।

একটি উত্তম পছন্দ হলো চৌদ্দ আউন্সবিশিষ্ট এবং চৌদ্দ ইঞ্চির নাইলনের দড়ি দ্বারা বাঁধা নানচাকু যার লাঠির ক্ষেত্র (প্রস্থচ্ছেদ) অষ্টভুজাকৃতির । চৌদ্দ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের নাইলনের দড়ি এবং চৌদ্দ আউন্স ওজনের নানচাকু দ্বারা সহজেই মানবদেহের বিভিন্ন অংশের হাড় ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব । আর শিকলের থেকে নাইলনের দড়িই অধিকতর শ্রেয়, কারণ শিকল অনেক শব্দ উৎপাদন করে । যাহোক, এই বইটিতে যা নানচাকু নিয়ে আলোচনা করা হবে সেটার লাঠি দু’টিকে সংযুক্তকারী দড়ির দৈর্ঘ্য চার ইঞ্চির বেশী হবে না ।

যে পদ্ধতিতে এবং যে জায়গায় এই নানচাকু সবচাইতে ভালো ব্যবহৃত হতে পারে – তা হলো টার্গেটের গলা ও ঘাড় এর উপরে এটির প্রচন্ড চাপ দেওয়ার ক্ষমতাটির প্রয়োগ । এর উদ্দেশ্য হলো একদিকে টার্গেটের মেরুদণ্ডের কশেরুকা (অর্থাৎ ঘাড়) এবং অপরদিকে টার্গেটের শ্বাসনালী ও স্বরযন্ত্র ভেঙ্গে দেয়া ।

চিত্র-৮ এ একটি নানচাকু দেখানো হয়েছে যেটি টার্গেটের ঘাড়ের পরিধি জুড়ে আটকে ধরেছে । এখানে টার্গেটের ঘাড়ের সম্মুখ ও পিছন দিকে প্রচণ্ড চাপ প্রয়োগের জন্য প্রতিটি লাঠির নিচের অংশটুকুকে (অর্থাৎ লাঠির খোলা প্রান্ত) লিভার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, যার ফলে দড়ির সংলগ্ন জায়গায় লাঠির উপরের অংশ দ্বারা আটকানো টার্গেটের ঘাড়ের সম্মুখ ও পিছন দিকে প্রচণ্ড   চাপ সৃষ্টি হয় । চিত্র ৯, ১০ ও ১১ তে এই সময়ে নানচাকু ধরার বিভিন্ন পদ্ধতি দেখানো হয়েছে (যেগুলো হলো যথাক্রমেঃ হাতের তালুদ্বয় মুখোমুখী করে, হাতের তালুদ্বয় নীচের দিক করে এবং একটি হাত উপরের দিকে ও অপর হাত নীচের দিকে করে) । টার্গেটের সাপেক্ষে আততায়ী কোথায় অবস্থান করেছে তার উপর নির্ভর করে আততায়ী এই পদ্ধতিগুলোর মধ্য থেকে কোন একটি পদ্ধতি ব্যবহার করবেন যা চতুর্থ অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচিত হয়েছে ।

নানচাকু ধরার এই পদ্ধতিগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করুন এবং গবেষণা (নিজ হাতে নানচাকু নিয়ে ধরার এই পদ্ধতিগুলো চেষ্টা করুন) করুন যেন আপনি এটির সাথে অভ্যস্ত হয়ে  উঠেন । একটা ঘাড় ভেঙ্গে ফেলার জন্য এটি কি পরিমাণ উত্তম ও কার্যকর তা বুঝানোর জন্য আপনাকে বলছি, আপনি আপনার ঘাড়ের দুইপাশে এটার দুইটা লাঠি রেখে লাঠি দু’টিকে একে    অপরের দিকে নমনীয়ভাবে চাপ দিন । এতে আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে, এটার অনুশীলন করবার সময় আপনি আপনার সহযোগীর ঘাড়ে কি পরিমাণ চাপ দিতে পারবেন (অর্থাৎ, সর্বোচ্চ কি পরিমাণ চাপ প্রয়োগ করলে তা সহনশীলতার সীমার মাঝে থাকে তা বুঝতে পারবেন) ।

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ গজাল

সফলভাবে একটি নীরব হত্যা সম্পন্ন করার জন্য একজন আততায়ীর এমনভাবে তার টার্গেটকে হত্যা করতে হবে যেন টার্গেটটি যন্ত্রণার ফলে কিংবা সাহায্যের আশায় আর্তনাদ করার কোন সুযোগই না পায় । এজন্য আততায়ীর এমনভাবে টার্গেটের নিকটে যেতে হবে যেন টার্গেট তাকে দেখতেই না পারে, অথবা টার্গেটের কাছে তিনি যেন সন্দেহজনক হয়ে না উঠেন । যদি টার্গেটটি    আততায়ীকে দেখতে পায় এবং সে তার নিয়্যতের ব্যাপারে জেনে যায় তাহলে খুব সম্ভব সে চিৎকার ও আর্তনাদের মাধ্যমে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করবে যেন সে কিছু সাহায্য পেতে পারে ।

আরও যে বিষয়টির ব্যাপারে একজন আততায়ীর যত্নবান হতে হবে তা হলো ব্যথার বিষয়টি । বেশীরভাগ সময়েই আঘাতের প্রচণ্ডতা টার্গেটের উপর এমন অবিস্মরণীয় শক (স্নায়বিক আঘাত) সৃষ্টি করে যে সে প্যারালাইজড (সমগ্র দেহের অবশ হয়ে আসা) হয়ে পড়ে এবং অচেতন হয়ে যায় । তবে সবসময়ই একটি মারাত্মক আঘাত টার্গেটের তাৎক্ষণিক মৃত্যু বয়ে আনে না । অনেক    সময়ই টার্গেট আঘাতের ফলে সৃষ্ট যন্ত্রণার আর্তনাদ করার সময়টুকু কমপক্ষে পেয়ে যায় । আর স্বরযন্ত্র দিয়ে একটি শ্বাস ছাড়ার সুযোগ পেলেই এর দ্বারা সেই মাত্রার শব্দ উৎপন্ন করা যায় যার দ্বারা সেই ব্যক্তি তার নিকটবর্তী সকলেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করার সুযোগ পায় । আক্রমণ করার জন্য মানবদেহের একটি খুবই উপযুক্ত ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো সাবস্টার্নাল নচ  (substernal notch) । দেহের এই জায়গাটিতে সফলভাবে করা একটি আঘাত টার্গেটের ডায়াফ্রাম (বক্ষ ও উদরের মধ্যবর্তী ঝিল্লির পর্দা) কে প্যারালাইজ (অবশ) করে দেয়, যার ফলে সে আর চিৎকার দিতে পারে না । মৃত্যু এত দ্রুত ঘটবে যে, সাহায্যের আশায় কিংবা ব্যাথার কারণে চিৎকার দেবার সময়টুকুও সে পাবে না । এছাড়া আরও দু’টি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা হলো টেম্পল  (কপালের দুই পাশের যে কোন একটি) ও হৃৎপিন্ড । এই দুইটির কোন একটিতেও আঘাতের মাধ্যমে টার্গেটের দ্রুত মৃত্যু বয়ে আনা সম্ভব, তবে টার্গেট যে মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে আর্তনাদের কোন সুযোগ পাবে না এমন নিশ্চয়তা এই দুইটিতে পুরোপুরি নেই । কারণ যতক্ষণ টার্গেটের ডায়াফ্রাম (বক্ষ ও উদরের মধ্যবর্তী ঝিল্লির পর্দা) কাজ করছে ততক্ষণ এটি টার্গেটের স্বরযন্ত্র দিয়ে বায়ু প্রবাহিত করে শব্দ সৃষ্টি করতে পারে ।

এই সমস্যার মোকাবেলার জন্য দু’টি পথ রয়েছে । আক্রমণের সময় আততায়ী শিকারের খাদ্যনালী ও স্বরনালী চেপে ধরতে পারে যাতে করে মুখ দিয়ে কোন বাতাস বের হতে না পারে, অথবা সে মুখ চেপে ধরতে পারে যাতে কোন শব্দ হলেও তা চাপা পড়ে অশ্রুত থেকে যায় । এই অধ্যায়ের সাতটি কৌশলের চারটির ক্ষেত্রেই শিকারের মুখ ক্ষণিকের জন্যে চেপে ধরার দরকার হবে ।

চিত্র ১২ এবং ১৩ লক্ষ্য করুন । সাধারণত, যখন একটা কৌশলের জন্য মুখ চেপে ধরার প্রয়োজন হবে, তখন তা এই কায়দাতেই হবে । এছাড়াও একটি বিকল্প পদ্ধতি আছে যা অন্য একটি কৌশলের জন্যে ব্যবহৃত হবে, তবে যেহেতু তার জন্য একটি বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে, তাই সেই পদ্ধতিটি সেই কৌশলের ব্যাখ্যাে সময়ই আলোচনা করা হবে । এটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো আঙ্গুল দ্বারা ঠোঁটের উপর কঠিন চাপ প্রয়োগ করে সম্পূর্ণ হাতটিকে মুখের উপরে শক্তভাবে এঁটে রাখা । যাতে আক্রমণকারীর চাপ শিকারের মুখের নির্ধারিত অংশে দাগ ফেলে যায় ।

কৌশল ১

চিত্র-১৪ তে, লক্ষ্যবস্তু ঢিলেঢালা ভাবে বসে আছে- আক্রমণকারীর আক্রমণ ঠিক তার পিছন থেকে হচ্ছে । লক্ষ্যের সাথে প্রথম সংস্পর্শ তখনই হচ্ছে যখন আক্রমণকারী চিৎকার প্রতিরোধে শিকারের মুখ চেপে ধরেছেন ।

যখন আক্রমণকারী তার গজালটিকে উঠাচ্ছেন তখন তিনি এই পদ্ধতিতে (চিত্রঃ ১৫) তার শিকারকে ধরেছেন । যেহেতু শিকারের মাথা আঘাতকে ব্যাহত করতে পারে, তাই আক্রমণকারী তার (শিকারের) মাথাকে পাশে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন, যেমন ভাবে চিত্র-১৬ তে দেখানো হয়েছে ।

এটা কোন পৃথক ধাপ নয়- মুখ চেপে ধরা ও মাথাকে পাশে ঘোড়ানো একই সাথে করা হয়েছে । এরপর একটিমাত্র শক্ত আঘাতের মাধ্যমে, তিনি গজালটিকে শিকারের বক্ষাস্থির নিম্নমধ্যবর্তী অংশ ভেদ করার মাধ্যমে শিকারের হৎপিণ্ডে গেঁথে দিয়েছেন (চিত্র-১৭) । যখনই গেঁথে দেয়া সম্পন্ন হবে আক্রমণকারী তার (শিকারের) মুখ ছেড়ে দিতে পারেন ।

চিত্র-১৮ তে, আপনি দেখতে পাবেন এমনকি লক্ষ্যবস্তু সম্পূর্ণভাবে পড়ে যাওয়ার আগেই আক্রমণকারী প্রস্থান করছেন । যেইমাত্র তিনি গজালকে বক্ষাস্থি ভেদ করে হৎপিণ্ডে প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন, অমনি তার দায়িত্ব সম্পন্ন হয়ে গিয়েছে । এখন তার কাজ হলো গ্রেপ্তার এড়ানো । তিনি তাৎক্ষণিকভাবে স্থান ত্যাগ করছেন ।

কৌশল ২

পুনরায় আক্রমণকারী হৎপিন্ডে আঘাত করতে যাচ্ছেন, এবং পুনরায় লক্ষ্যবস্তু বসে আছে । তবে এবার আক্রমণ করা হচ্ছে পাশ থেকে (চিত্র-১৯) । লক্ষ্য করুন, গজালটিকে এমনভাবে ধরা হয়েছে যে, শিকার যদি আক্রমণকারীকে খেয়াল করেও থাকে তবু সে তার হাতে কোন অস্ত্র দেখতেপাবে না । অস্ত্রটি নিম্নমুখী/পিছনমুখী করে ধরে রাখা হয়েছে এবং আততায়ীর সেই কব্জিটি বাঁকা করা আছে যাতে গজালের দন্ডটি তার হাতের পিছনে ঢাকা পড়ে যায় ।

শিকারের দিকে নেয়া শেষ পদক্ষেপটি দ্রুত এবং লম্বা, যার ফলে ডান পা চেয়ারের কিছুটা পিছনে গিয়ে পড়ছে ।আক্রমণকারী এই সময় একই সাথে শিকারের মুখ চেপে ধরেছেন (চিত্র-২০) । তিনি চিত্র-২১ এ দেখানো পদ্ধতিতে তার মাথাকে ঘুরিয়ে দিচ্ছেন- এটা শিকারের মেরুদন্ডের সার্ভিকাল কশেরুকাকে প্রসারিত করার মাধ্যমে তাকে সামনে বেঁকে যাওয়া থেকে বিরত রাখবে, এবং তাকে অস্ত্রের দিকে চোখ পড়ে যাওয়া থেকেও বিরত রাখবে । অস্ত্রটিকে দ্রুতবেগে বৃত্তাকারে নিচে নামানোর মাধ্যমে তা শিকারের

বক্ষাস্থি ভেদ করছে এবং দন্ড বা ফলাটি শিকারের হৎপিন্ডে গেঁথে যাচ্ছে । আঘাত সম্পন্ন হবার পর, তৎক্ষণাত আক্রমণকারী তাকে ছেড়ে দিচ্ছেন এবং প্রস্থান করেছেন (চিত্র-২৩) । তার কাজ সম্পাদিত হয়ে গেছে ।

কৌশল ৩

এই কৌশলে আঘাত করা হবে দেহের উর্ধ্ব-বক্ষাস্থির খাঁজে (supra-sternal notch) । এটি আরেকটি সংবেদনশীল অরক্ষিত অংশ যা মানবদেহের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ- শ্বাসনালী ও উর্ধ্বহৎপিন্ডের প্রধান রক্তনালীতে প্রবেশের সুযোগ দেয় ।

আক্রমণকারী একজন বসে থাকা লক্ষ্যবস্তুর দিকে অগ্রসর হচ্ছেন, যা চিত্র-২৪ এ দেখানো হয়েছে । তিনি তার মুখ চেপে ধরছেন এবং আঘাতের জন্যে অস্ত্র উঁচু করেছেন (চিত্র-২৫) তিনি শিকারের মাথাকে পাশে সরিয়ে দিচ্ছেন (চিত্র-২৬) । মুখ চেপে ধরে মাথা ঘুরিয়ে দেয়া এবং অপর হাতের অস্ত্র উঁচু করে ধরা – এ দু’টা পৃথক ধাপ নয়, মুখ স্পর্শ করার সাথে সাথেই এটি করা হয় ।

গলার অধোভাগে, একটি নিচু স্থান বা কিছুটা খাঁদ রয়েছে যেখানে কলারবোন মিলিত হয় । এটা উর্ধ্ব-বক্ষাস্থি খাঁজ (supra-sternal notch) এবং এটা এই কৌশলের আঘাতের স্থান । গজালটিকে এই স্থানটির ভিতরে গেঁথে দিতে হবে (চিত্র-২৭) । অন্যান্য বারের মত, লক্ষ্যবস্তু সম্পূর্ণভাবে মাটিতে পড়ার আগেই আক্রমণকারী দরজা বা বহির্গমনের দিকে পদক্ষেপ নিবেন (চিত্র-২৮) ।

যেভাবে চিত্র-২৯ এ দেখানো হয়েছে, প্রাথমিক আঘাত হবে সোজাসুজিভাবে উপর থেকে নীচে । এখন লক্ষ্য করুন চিত্র ৩০ ও ৩১ । আঘাতের সময় গজালকে এভাবে পার্শ্বের নাড়ানো হবে, যা মহা-ধমনী ও মহা-শিরাকে (aorta & superior vena cava) ছিড়ে ফেলার মাধ্যমে লক্ষ্যবস্তুর মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করবে ।

কৌশল ৪

এই কৌশলে, আঘাতের লক্ষ্যবিন্দু হচ্ছে শিকারের কপালের যেকোন একপাশ । এখানে আঘাতের ফল হবে মস্তিষ্কের ভেদন, রক্তক্ষরণ, এবং মৃত্যু ।

চিত্র-৩২ এ, লক্ষ্যবস্তুকে হাটতে দেখা যাচ্ছে । আক্রমণকারী পদক্ষেপ নিচ্ছেন পিছন থেকে । পুনরায়, লক্ষ্যবস্তুর চিৎকার প্রতিরোধে, আক্রমণকারী তার মুখ চেপে ধরার সাথে সাথে আক্রমণ করতে উদ্যত হচ্ছেন, যেভাবে চিত্র-৩৩ এ দেখানো হয়েছে । আক্রমণকারী শিকারের মাথা পিছনে নিজের দিকে টেনে ধরছেন এবং একটি বৃত্তাকার আনুভূমিক আঘাতের সাথে, গজালের ফলা বা দন্ডকে তার কপালের পাশে গেঁথে দিচ্ছেন (চিত্র-৩৪) । তিনি অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য শিকারের দেহকে পিছনে ধাক্কা দিচ্ছেন এবং তার পথ থেকে সরিয়ে দিচ্ছেন (চিত্র-৩৫)। শিকার মাটিতে আঘাতের পূর্বেই মৃত্যুবরণ করছে ।

কৌশল ৫

এই অধ্যায়ের শেষ তিনটি কৌশলে, আক্রমণকারী লক্ষ্যবস্তুর নিম্ন-বক্ষাস্থি খাঁজে (sub-sternal notch) আঘাত করেন যা নীরবে হত্যার জন্যে সম্ভবত মানবদেহের সবচেয়ে উত্তম অংশ। এই অংশে একটি আঘাত মধ্যচ্ছদার তাৎক্ষণিক অসারতা সৃষ্টি করবে, ফলে শিকার কোনভাবে চেঁচিয়ে উঠতে অপারগ হয়ে যাবে। অস্ত্র হৃৎপিন্ডকে নীচ থেকে ভেদ করতে থাকার সময়ই তার মৃত্যু ঘটবে।

চিত্র-৩৬ বক্ষাস্থি খাঁজের বহির্ভীগের অঞ্চল চিত্রিত করছে। আক্রমণকারী যখন এই অংশে আঘাত করেন, তার প্রভাব হয় মারাত্বক। তার আঘাত অবশ্যই হতে হবে সুক্ষ্ন কৌণিক অবস্থান বজায় রেখে, যেভাবে চিত্র ৩৭ ও ৩৮ এ দেখানো হয়েছে। এখানে তার আঘাতের মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তিনি যা করছেন তা হলো, বক্ষাস্থিকে ভেদ করে যাওয়া ছাড়াই হৃৎপিন্ডকে বিদ্ধ করছেন। নীচ দিয়ে উপনীত হওয়ার মাধ্যমে উপস্থিত কাঠামোকে অতিক্রম করার জন্য কঠিন আঘাতের প্রয়োজনীয়তাকে তিনি এড়িয়ে যাচ্ছেন।

যদি আক্রমণকারীর আঘাত খুবই শক্তিশালী হয়, যার ফলে তার মুষ্টি শিকারের বক্ষাস্থির উপরিভাগে জোরের সাথে চাপ প্রয়োগ করে, তাহলে এক্ষেত্রে তিনি বাতাসকে মধ্যচ্ছদা দিয়ে শিকারের মুখের দিকে ধাক্কা দিচ্ছেন, যার ফলে সে (শিকার) চেচিয়ে উঠতে সক্ষম হতে পারে। ফলে একটি নিঃশব্দ হত্যার উদ্দেশ্য প্রশমিত হয়ে যাবে, কারণ আক্রমণকারী নিজেই শিকারের কণ্ঠনালী দিয়ে বাতাস সঞ্চালিত হতে সাহায্য করছেন। কিন্তু যদি তিনি লক্ষ্যবস্তুর বুকে শক্ত আঘাত না করেন, তবে মধ্যচ্ছদা অচল হয়ে যাবে এবং গজালটি বাধাহীনভাবে হৃৎপিন্ডে পৌঁছাতে পারবে, ফলে নিঃশব্দ-হত্যা সংঘটিত হবে।

চিত্র-৩৯ এ, আক্রমণকারী লক্ষ্যবস্তুর দিকে মুখোমুখি অগ্রসর হচ্ছেন। আপনি লক্ষ্য করবেন গজালটি এই অবস্থায় তার হাতে নেই – এটি আছে পিছনের ডান পকেটে । যেই তিনি তার লক্ষ্যবস্তুকে অতিক্রম করা শুরু করছেন, তিনি পিছনের পকেট থেকে অস্ত্র বের করছেন (চিত্রঃ ৪০)। ঠিক বের করা থেকেই, তিনি অস্ত্রটিকে নিম্ন-বক্ষাস্থি খাঁজে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, যেভাবে চিত্র-৪১ এ দেখানো হয়েছে। আক্রমণকারী কোন পর্যায়েই হাঁটা থামাচ্ছেন না। আঘাতকালীন সময়ে তার গতি ধারাবাহিক রয়েছে। যখন লক্ষ্যবস্তু মাটিতে পড়ে যাচ্ছে, তিনি হাঁটা না থামিয়ে প্রস্থান করছেন (চিত্রঃ ৪২)।

কৌশল ৬

পরবর্তী কৌশলটি সরল এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন। আততায়ী শিকারের দিকে অগ্রসর হবেন না, বরং শিকারই আক্রমণকারীর দিকে আসবে। এই কৌশলটি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যাবে তখন, যখন লক্ষ্যবস্তুর দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট জায়গা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার একটি অভ্যাস বরাবরই থাকে। যদি সে সাধারনত একটি দেয়ালের নিকট দিয়ে যায়, আক্রমণকারী সেই দেয়ালের বিপরীতে দাঁড়াবেন। যদি সে সাধারনত একটি প্রশস্ত করিডোরের মাঝ দিয়ে যায়, আক্রমণকারী তাকে পাকড়াও করার জন্য যথেষ্ট নিকটবর্তী হতে ধীরে ধীরে করিডোরের সেই অংশে এসে দাঁড়াবেন। আক্রমণকারী আঁড়চোখের মাধ্যমে শিকারকে চিহিত করছেন (চিত্রঃ ৪৩)। তিনি শিকার যে দিক থেকে অগ্রসর হচ্ছে সেদিকে তাকাচ্ছেন না, এবং সে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তার দিকে ঘুরছেন না।

যখন লক্ষ্যবস্তু উপযুক্ত নিকটবর্তী হচ্ছে, একটি ছোট পদক্ষেপের সাথে আততায়ী ডানে ঘুরছেন এবং কক্ষাস্থি-খাঁজে গজালটি গেঁথে দিচ্ছেন (চিত্রঃ 8৪)। এটি একটি চলমান আঘাত, অন্যকথায়, আক্রমণকারীর অবস্থান পরিবর্তন, ঘোরা, পদক্ষেপ, এবং আঘাত সবই একটি মসৃণ ও ধারাবাহিক অঙ্গ-সঞ্চালন। তিনি দরজার দিকে হাঁটা অব্যাহত রাখবেন যেটাকে তিনি প্রস্থানের উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা করে রেখেছেন (চিত্রঃ ৪৫)।

কৌশল ৭

এটি এই অধ্যায়ের শেষ কৌশল। এক্ষেত্রে, লক্ষ্যবস্তুকে একটি সুসংগঠিত আঘাত করার জন্য আততারী শিকারের মুখে চাপ প্রয়োগের কৌশল ব্যবহার করবেন।

চিত্র-৪৬ এ, লক্ষ্যবস্তু বসে আছে এবং আক্রমণকারী বামদিক থেকে অগ্রসর হচ্ছেন। খেয়াল করুন, আক্রমণকারী বসে থাকা লক্ষ্যবস্তুর একটু সামনে অবস্থান করছেন, যা কৌশল-২ থেকে ভিন্ন। প্রাথমিক চাপ প্রয়োগের জন্যে এটি প্রয়োজন।

আততায়ী তার ডান হাতের চারাটি আঙ্গুল লক্ষ্যবস্তুর মুখে স্থাপন করছেন এবং শক্তভাবে তার বৃদ্ধাঙ্গুল শিকারের থুতনীর নীচে চেপে ধরছেন (চিত্রঃ ৪৭)। এটি একটি স্পর্শকাতর অঞ্চল, তাই লক্ষ্যবস্তু চেষ্টা করবে ব্যাথা থেকে বেরিয়ে আসতে। যখন সে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে, তখন আক্রমণকারী শিকার যেদিকে চাপ প্রয়োগ করছে সেদিকেই টেনে ধরছেন (চিত্রঃ ৪৮)। তিনি বক্ষাস্থি-খাঁজে গজালটি গেঁথে দিচ্ছেন, যেভাবে চিত্র-৪৯ এ দেখানো হয়েছে। অতঃপর তিনি তাকে ছেড়ে দিচ্ছেন এবং তৎক্ষণাত প্রস্থান করছেন (চিত্রঃ ৫০)।

তৃতীয় অধ্যায়ঃ ছুরি

কৌশল ৮

চিত্র-৫১ তে আততায়ী তার শিকারের পেছন থেকে তার নিকটবর্তী হবেন। তারপর তিনি কয়েকটি দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন যাতে করে তিনি তাদের দু’জনের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারেন এবং তারপর তার বাম হাত দিয়ে শিকারের মুখ আদর্শভাবে ধরার পদ্ধতিতে চেপে ধরবেন, যেমনটি বর্ণনা করা হয়েছে দ্বিতীয় অধ্যায়ে (চিত্রঃ ৫২)। তিনি শিকারের মাথা তার ডান দিকের বাহুর সাথে টেনে ধরে রাখবেন, এবং খুবই জোরালো ভাবে শিকারের ডান কিডনিতে ছুরিটি ঢুকিয়ে দিবেন (চিত্রঃ ৫৩)। এটা খুবই যন্ত্রণাদায়ক আঘাত, সুতরাং তাকে খুবই জোর দিয়ে শিকারের মুখ চেপে ধরে রাখতে হবে যাতে করে তার মুখ থেকে কোন চিৎকার বেরিয়ে না আসে। আততায়ী তার শিকারের মুখ তিন গণনা করা পর্যন্ত চেপে ধরে রাখবেন, তারপর তিনি লক্ষ্যবস্তুকে ধাক্কা দিয়ে তার রাস্তা থেকে সরিয়ে চলে যাবেন, যেভাবে চিত্রে আঁকা হয়েছে (চিত্রঃ ৫৪)।

কৌশল ৯

এই কৌশলটিতে, আততায়ী শিকারের কিডনিতে আঘাত করতে যাচ্ছেন, কিন্তু পেছন থেকে আক্রমণ করার পরিবর্তে তিনি শিকারকে আক্রমণ করবেন যখন শিকার আততায়ীকে অতিক্রম করছে।

চিত্র-৫৫ তে, আততায়ী এমন এক স্থানে দাড়িয়ে আছেন, যেখানে তিনি জানেন যে, লক্ষ্যবস্তুকে এখান দিয়ে অবশ্যই অতিক্রম করতে হবে। ছুরিটি তার কোমর বরাবর লুকানো আছে। যখনই লক্ষ্যবস্তুটি তার পাশ দিয়ে অতিক্রম করতে শুরু করে, আততায়ী সামনে চলে আসেন, এবং তার মুখ অনেক জোরে চেপে ধরেন এবং তার মাথাকে পিছনে টেনে ধরেন। তারপর তিনি আঘাত করার উদ্দেশ্যে ছুরিটি টেনে বের করেন এবং শিকারের মাথা পিছনে টেনে ধরে রাখা অবস্থাতেই আকস্মিকভাবে ছুরিটি তার বাম কিডনিতে ঢুকিয়ে দেন। যেমনটি চিত্র-৫৭ তে দেখানো হয়েছে। তিনি এভাবে শিকারটিকে তিন গণনা করা পর্যন্ত ধরে রাখবেন, তারপর তিনি ছুরিটি ছেড়ে দিবেন এবং শিকারের মুখও ছেড়ে দিবেন এবং শীন্তভাবে বহির্গমনের দিকে চলে যাবেন (চিত্রঃ ৫৮)।

এই কৌশলে এবং এর আগের কৌশলে, এটা বলা হয়েছে যে, শিকারের মুখ তিন গণনা করা পর্যন্ত ধরে রাখতে হবে। কারণ হঠাৎ করে তিনি ছুরিটি তার বাম কিডনিতে ঢুকিয়ে দেয়ার কারণে প্রবল ব্যথার সৃষ্টি হয়, যদি আগে ভাগেই তার মুখ ছেড়ে দেয়া হয় তবে তার চিৎকার অন্য কেউ শুনে ফেলতে পারে। সুতরাং এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আততারী শিকারের মুখ চেপে রাখবেন যতক্ষণ না এই বিপদ কেটে যায়।

কৌশল ১০

এই কৌশলটিতে লক্ষ্য পরিবর্তন হচ্ছে শুধু মাত্র শারীরিক দিক দিয়ে এবং স্থানের দিক দিয়ে। লক্ষ্যবস্তুটি হলো এবার হৃৎপিণ্ড, এবং এই আঘাতটি করা হবে সিঁড়িতে।

চিত্র-৫৯ এ আততায়ী তার লক্ষ্যবস্তুটির পেছনে পেছনে এগোতে থাকে এবং তাকে সিঁড়ি তে নেমে আসা পর্যন্ত অনুসরণ করতে থাকে। তারপর আততায়ী কয়েকটি দ্রুত পদক্ষেপ নিবেন যাতে করে তিনি তাদের দু’জনের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনতে পারেন এবং তারপর শিকারের মুখ অনেক জোরে চেপে ধরে তিনি তার ছুরিটি উপরের দিকে উঠাতে থাকেন (চিত্রঃ ৬০)।

তিনি তার লক্ষ্যবস্তুটির মাথাকে পিছনে বাম দিকে টেনে রাখবেন এবং তার বাম দিকের বক্ষপেশীর সাথে লাগিয়ে রাখবেন (চিত্রঃ ৬১)। এটা শিকারকে ভারসাম্যহীন করে দেয় এবং যখন ছুরি ঢুকানো হয় তখন চিৎকার করা থেকে বিরত রাখে। আক্রমণকারী তার ছুরির মাথা সজোরে শিকারের বক্ষাস্থির মধ্যে দিয়ে ঢুকিয়ে দিবেন যাতে করে তা হৎপিণ্ডে ঢুকে যায় (চিত্রঃ ৬২)। মনে রাখতে হবে যে, তিনি শিকারের বক্ষের উপাস্থিক গঠনকে ভেদ করতে যাচ্ছেন, সুতরাং তাকে সর্বাত্মক শক্তি দিয়ে কাজ করতে হবে। তারপর তিনি লক্ষ্যবস্তুকে বাম পাশে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাবেন, যেভাবে চিত্রে আঁকা হয়েছে (চিত্রঃ ৬৩)।

কৌশল ১১

এখানেও আততায়ী লক্ষ্যবস্তুটির পিছন দিক দিয়ে আসবেন এবং হৃদপিণ্ডে আঘাত করবেন। কিন্তু এই ক্ষেত্রে লক্ষ্যবস্ত বসা অবস্থায় থাকবে।

আক্রমণকারী যখন লক্ষ্যবস্তুটির যথেষ্ট কাছে থাকবেন তখন তিনি তার ছুরি বের করবেন এবং দ্রুতগতিতে মুখ চেপে ধরার জন্য প্রস্তুত থাকবেন (চিত্রঃ ৬৪)। যখন তিনি শিকারকে ধরে ফেলেন, তখন তিনি শিকারের মাথাটা এক পাশে মুচরিয়ে ফেলবেন এবং ছুরিটি তার হৃদপিণ্ড ঢুকিয়ে দেবার জন্য উঠাবেন (চিত্র ৬৫ এবং ৬৬)। পূর্ববর্তী কৌশলগুলোর মতোই, এভাবে মাথা মুচরিয়ে দেয়াটা প্রথমবারের ধরার সময়ই করে ফেলতে হবে-এগুলো দু’টো আলাদা অবস্থান পরিবর্তন (movement) নয়। লক্ষ্যবস্তুটির মাথাটিকে আততায়ীর পেটের সাথে লাগিয়ে রাখতে হবে, এবং এই অবস্থায় আততায়ী তার ছুরির মাথাটি সজোরে শিকারের বক্ষাস্থির মধ্যে ঢুকিয়ে দিবেন এবং তা হৃদপিণ্ডে টুকে যাবে (চিত্রঃ ৬৭)। তারপর দ্বিধা ছাড়াই তিনি হেঁটে বহির্গমনের দিকে চলে যাবেন (চিত্রঃ ৬৮)।

কৌশল ১২

এই ক্ষেত্রে, আততায়ী নিম্ন-বক্ষাস্থি খাঁজ (substernal notch) কে আক্রমণ করবেন। এ ধরনের শিকারের ক্ষেত্রে তিনি খুব সাধারণভাবে – একটি সিঁড়ির উপরের দিকে হেঁটে যাবেন। এই কৌশল খুবই সাধারণ, দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং মারাত্মক।

এই ক্ষেত্রে অস্ত্রটি গুপ্তঘাতকের শার্টের নিচে লুকানো অবস্থায় থাকবে (যা তার প্যান্টের ভিতর ঢুকানো থাকবে না)। অথবা এটা টিলা-ঢালা একটা জ্যাকেটের ভিতরেও লুকানো থাকতে পারে। যখনই তিনি তার টার্গেটের দিকে অগ্রসর হতে থাকবেন, তখনই তিনি আস্তে আস্তে করে ছুরিটা বের করতে থাকবেন। গুপ্তঘাতক যেন তার অস্ত্র ধরা হাতটি পেছন দিকে লুকিয়ে রাখেন, তিনি এমন ভাবে রাখবেন যেন টার্গেট মনে করে যে, তিনি তাকে তার পাশ দিয়ে যাবার জন্য জায়গা করে দিচ্ছেন (চিত্রঃ ৬৯)। টার্ণেট যখন তাকে অতিক্রম করতে থাকে তখন তিনি যেন তার ছুরিটা টার্গেটের বক্ষাস্থি খাঁজ (substernal notch) _এ ঢুকিয়ে দেন, তখন ছুরিটা উপরের দিকে তাক করানো অবস্থায় থাকবে (চিত্রঃ ৭০)।

সিঁড়ি দিয়ে উঠার সময় পদক্ষেপে কোনরকম তারতম্য করা গুপ্তঘাতকের কখনোই উচিত হবে না। বেশী বেশী অনুশীলনের মাধ্যমে এই কৌশলে সিঁড়ি দিয়ে উঠাকে এত স্বাভাবিক করে ফেলা যায় যে, টার্গেট যদি তার দিকে তাকিয়েও থাকে তবুও সে কিছু বুঝবে না অথবা আক্রমণটির ব্যপারে ধারণা করতে পারবে না। শিকার যখন সিঁড়ি দিয়ে পড়ে যেতে থাকবে গুপ্তবাতক তখন তার সিঁড়িতে উঠার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে থাকবেন, ঠিক তার সাধারণ গতিতে এবং পিছনে ফিরে দেখবেন না (চিত্রঃ ৭১)।

কৌশল ১৩

এই ক্ষেত্রে লক্ষ্যবিন্দু হলো উর্ধ্ব-বক্ষাস্থি খাঁজ (supra sternal notch)। গুপ্তঘাতক এখানে একজন বসে থাকা ব্যক্তিকে তার বাম পাশ দিয়ে আক্রমণ করবেন।

চিত্র-৭২ এ গুপ্তঘাতক শিকারের নিকটবর্তী হতে থাকবেন যখন তিনি তার অস্ত্র বাম হাতে লুকায়িত অবস্থায় বের করতে থাকবেন। এবার শিকারের মুখের বন্ধনীতে বৃদ্ধাঙ্গুল থুতনীর নিচে থাকবে, কিন্তু, এই পদ্ধতিটি দ্বিতীয় অধ্যায়ের মতো নয়। এখানে চিবুকের নিচে জোরে চাপ দেয়া গুরুত্বপূর্ণ না। তার উচিত হবে শিকারের মুখকে জোরে চেপে ধরা এবং সাথে সাথে তার মাথাকে পিছন দিকে টেনে ধরা যাতে করে উর্ধ্ব-বক্ষাস্থি খাঁজ (supra sternal notch) বের হয়ে আসে (চিত্রঃ ৭৩)। একটি শক্তিশালী নিম্নমুখী আঘাতের সাথে আততায়ী তার ছুরির ফলাটি ঢুকিয়ে দেন, যেভাবে চিত্র-৭৪ এ দেখানো হয়েছে। তারপর তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসেন (চিত্রঃ ৭৫)।

কৌশল ১৪

তৃতীয় অধ্যায়ের শেষের কৌশলে, আততায়ী খুবই গুরুত্বপূর্ণ দুইটি স্থানে আঘাত করেন। গলার সামনে এবং গলার এক পাশে- এবং এটা করবেন শুধুমাত্র একটি আঘাতেই।

চিত্র-৭৬ এ যেমন দেখানো হয়েছে, গুপ্তঘাতক বসে থাকা একটি টার্ণেটের পিছন দিক থেকে নিকটবর্তী হতে থাকবেন এবং তিনি তার অস্ত্র আস্তে আস্তে বের করতে থাকবেন। তিনি তার শিকারের মাথার কাছে তার ছুরিটি নিয়ে আসবেন এবং সাথে সাথে তিনি টার্ণেটের মুখ জোরে চেপে ধরবেন (চিত্রঃ ৭৭)। এবং টার্গেটের মাথাকে পুরোপুরি ডান দিকে ঘুরিয়ে দিবেন, তারপর তিনি ছুরির ধারালো অংশটা তার গলার বাম দিকে ধরবেন চিত্রঃ ৭৮)। তিনি ছুরিটির ধারালো পার্টিকে অনেক জোরের সাথে শিকারের গলায় লাগান এবং তা দিয়ে গলার বামে, ডানে এবং সামনে সজোরে ঘষা দেন যখন তিনি শিকারের মাথাটিকে ওপরের দিকে ঘুরাতে থাকেন, যেমনটি চিত্র-৭৯ এ দেখানো হয়েছে। তিনি শিকারকে ছেড়ে দেন, ছুরিটিও ফেলে দেন এবং তার পূর্বনির্ধারিত বহির্গমন দিয়ে বের হয়ে চলে যান (চিত্রঃ ৮০)।

এই কৌশলে দুইটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উল্লেখ্য। প্রথম এবং সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, এই কৌশলে ১৮০ ডিগ্রী ব্যসার্ধে রক্ত প্রবাহিত হবে এবং তা হবে প্রায় ৪ ফিট জুড়ে। এবং এটা বলার অপেক্ষাই রাখে না যে, (কমপক্ষে) গুপ্তঘাতকের দুই হাতই রক্তে ভরে যাবে।

দ্বিতীয়ত, আপনি এই বইয়ের পূর্বের সবগুলো কৌশলে দেখবেন যে, গুপ্তঘাতক অস্ত্রটি শিকারের শরীরে বিদ্ধ অবস্থায় রেখে চলে যান, কিন্তু এই ক্ষেত্রে দেখবেন যে, তিনি ছুরিটিকে পাশে ফেলে রেখে চলে যান, যদি না তার আবার শিকারকে আঘাত করতে হয়। তবে যাই হোক, অস্ত্রটি নিজের সাথে বহন করা যাবে না- তিনি স্থান ত্যাগ করার সময় সেটাকে ফেলে দিয়ে যাবেন। ইস্পাত বা লোহায় সব সময়ই শরীরের চামড়ার কিছু অংশ (residue) থেকে যায়, যা আইনগত চিকিৎসাবিদ্যার দ্বারা সহজেই প্রমাণ করা যায়। যদি গুপ্তঘাতক এই অস্ত্র সহ ধরা পড়ে যান তাহলে, বিশ্বের যে কোন আদালতে তাকে অপরাধী প্রমাণ করা যাবে। সুতরাং, তিনি অবশ্যই অস্ত্রটি বহন করবেন না!

চতুর্থ অধ্যায়ঃ নানচাকু

নীরব হত্যায় (Silent Killing) নানচাকুর কৌশলগুলো প্রয়োগ করার ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করার আগে আমাদের এটিকে শক্ত হাতে ধরা এবং ছেড়ে দেয়া নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে নিতে হবে।

চিত্র-৮১ তে লক্ষ্য করুন যে, লাঠিগুলোকে ধরা হয়েছে চওড়া প্রান্তে, দড়ি/রশি থেকে দূরে। প্রতিপক্ষের গলার চারদিকে পেঁচিয়ে ফেলার জন্য এটা জরুরী নয় যে, নানচাকুর দুইটি লাঠি দুই হাতে ধরতে হবে। লাঠিগুলো ঠিকমতো ঘুরাতে পারলে, এক হাত দিয়েই এই কাজটি করা যায়। এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক হাত দিয়ে অস্ত্রকে ঠিক অবস্থানে আনাটা বেশী প্রযোজ্য।

নিম্নলিখিত কৌশলটি টার্গেটের গলাকে চারদিক থেকে পেঁচিয়ে ফেলতে সক্ষম হবে। লাঠিগুলো যদি মেঝে বরাবর সমান্তরালভাবে থাকে তবে, হাত দিয়ে একটি দোল খাওয়ান এবং বাইরের দিকের লাঠিটি ছেড়ে দিন (চিত্রঃ ৮২)। অন্য লাঠিটি আপনার হাতের ভিতরে, আপনার বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং আপনার তর্জনী আঙ্গুল (index finger) দিয়ে শক্ত করে ধরে রাখবেন। বাইরের লাঠিটি যখন দোল খেয়ে আপনার অন্য হাতে যেতে থাকবে, আপনার আঙুলগুলো দিয়ে তখন লাঠিটির শেষ পর্যন্ত ধরে ফেলুন (চিত্রঃ ৮৩)।

যখন লাঠিটি টার্গেটের গলা পেঁচিয়ে যাবে, তখন যে হাতে লাঠিটি গ্রহণ করবেন সেই হাতকে প্রশস্ত করুন এবং এটাকে আপনার হাতের তালুতে আঘাত করতে দিন (চিত্রঃ ৮৪)। আপনি যখন লাঠির স্পর্শ অনুভব করতে পারবেন তখন আপনি মুঠো বন্ধ করে ফেলুন এবং আপনার তালুকে উপরের দিকে উঠান (চিত্রঃ ৮৫)। তালুর এই মোচড় দেয়ার কারণ আপনি স্পষ্টভাবে বুঝবেন যখন আপনি এই অধ্যায়ের কৌশল গুলো শিখবেন। এই মুহূর্তের জন্য, আমরা কিভাবে লাঠিটি ছাড়তে হবে তা নিয়েই বেশী চিন্তিত। মনে রাখবেন যে, এইভাবে ছাড়ার ক্ষেত্রে বৃদ্ধাঙ্গুলি লাঠির ভিতরের দিকে থাকবে।

এখন চিত্র-৮৬ তে দেখুন। এখনে বৃদ্ধাঙ্গুলি লাঠির বাইরের দিকে, এবং সাথে সাথে অন্য ভাবেও ছাড়তে হবে। যদি আমরা চিত্র-৮৭ এর মতো অবস্থা পেতে চাই। আপনাকে অবশ্যই আবারো দোল খাওয়া লাঠিটি হাতের নিচ দিয়ে টার্গেটের গলার ওপাশে দিতে হবে (চিত্রঃ ৮৮)।

হাতের তালু নিচে থাকা অবস্থায়, যে হাত দিয়ে গ্রহণ করা হবে সেই হাত খুলুন। চিত্র-৯০ তে, উভয় তালুই নিচে আছে। কোন ভাবে ধরবেন এটা নির্ধারণ করা নির্ভর করে ব্যক্তিগত ইচ্ছার উপর। এই দু’টো কৌশলই বেশ কার্যকর এবং এগুলোর পার্থক্য এবং কার্যকারিতা স্পষ্টভাবে বুঝানো হবে যখন এই অধ্যায়ে বিভিন্ন কৌশল দেখানো হবে।

তাৎপর্যহীনভাবে আততায়ী নানচাকু ছাড়া এবং ধরার যে কৌশলই ব্যবহার করুন না কেন, তার উচিত হবে এইগুলো বার বার অনুশীলন করা যতক্ষণ না তিনি এগুলো চোখ বন্ধ রেখে এবং বিদ্যুত গতিতে করতে পারেন। তার উচিত হবে একটি খুঁটিকে কেন্দ্র করে বার বার এটি অভ্যাস করা যাতে করে তিনি নানচাকুটি সহজাতভাবে গলার চারপাশে ঘুরিয়ে আনতে পারেন।

কৌশল ১৫

প্রথম কিছু কৌশল একদম সাধারণ, এগুলোতে নানচাকু ছোড়ার (release) প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু এগুলোর প্রত্যেকেটিই বেশ মারাত্মক।

চিত্র ৯১-তে দেখা যাচ্ছে যে, গুপ্তঘাতক নানচাকু দু’হাত দিয়ে ধরে (double palm-in grip) ডান দিক দিয়ে টার্গেটের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন। তিনি যতদূর প্রয়োজন হেলে আসবেন এবং নানচাকুটি টার্গেটের মাথার উপর দিয়ে দিবেন। যখনই লাঠিগুলো টার্গেটের গলা বরাবর চলে আসবে, তখনই গুপ্তঘাতক একটু পিছনে সরে এসে লাঠিগুলোকে যতটা সম্ভব শক্ত করে চেপে ধরবেন (চিত্রঃ ৯৩)।

এই কৌশল প্রয়োগ করে মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই একজন মানুষকে অচল করে ফেলা যায়। এই সময়ের মধ্যে হয়তো সে মানসিকভাবে অনেক আহত হয়ে পড়বে এবং বাঁধনমুক্ত হবার জন্য লড়াই করবে। এই মুহূর্তে গুপ্তঘাতককে আগে থেকেই সচেতন থাকতে হবে, এবং যে কোন অবস্থাতেই তাকে তার হাতগুলো দৃঢ় রাখতে হবে। যে অবস্থায় তারা সেই মুহূর্তে আছে এবং যতটা দূরত্ব তারা তাদের মাঝে রাখছে, এটা ততক্ষণ পর্যন্ত রাখতে হবে যতক্ষণ না আততায়ী লাঠি ফেলে দেন এবং স্থান ত্যাগ করেন।

যখন নানচাকুটি শিকারের গলায় পেঁচিয়ে ধরা হবে তখন সে শরীরে অনেক ধরনের অনুভূতি লক্ষ্য করবে। প্রথমত, শিকার চিৎকার-চেঁচামেচি করতে পারবে না। তার শ্বাসনালী এবং খাদ্যনালী পুরোপুরি ঠাসা বা চাপা অবস্থায় থাকবে, সুতরাং কোন শব্দ বা আওয়াজ তার মুখ থেকে বের হতে পারবে না। দ্বিতীয়ত, তার শ্বাসনালীর উপাস্থিক বৃত্তও ভেঙে যাবে যেটা কিনা তার শ্বাসনালীতে ছিদ্র করে দিবে এবং অমেরামত যোগ্য ক্ষতি সৃষ্টি করবে। ফুসফুসে এবং পাকস্থলীতে সাথে সাথে রক্ত প্রবাহিত হওয়া শুরু করবে । অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের জন্য রক্তচাপের মাত্রা একদম কমে যাবে, যা কিনা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম হবে। তদুপরি, মেরূদণ্ডের অস্থিসন্ধি ভেঙ্গে যাবে। এবং যখন এটা হবে তখন গুপ্তঘাতক তার লাঠিতে একটা স্পন্দন (vibration) অনুভব করবেন এবং তিনি একটি ফাটলের আওয়াজ শুনবেন এবং এরপর একাধিক ধুপ-ধাপ আউয়াজ শুনবেন যখন মেরুদণ্ডের কশেরুকা সংলগ্ন অংশ (cervical vertebrae) আলাদা হয়ে যাবে। নানচাকুর সব চেপে ধরা কৌশলেই (compression  (technique) এই পরিণতিটি হবে। যখন পুরোপুরি ভাবে এই কৌশল প্রয়োগ করা হয়, তখন টার্ণেটের বেঁচে থাকার কোন সুযোগ নেই।

কৌশল ১৬

এই কৌশলেও নানচাকু ছোড়ার (release) প্রয়োজন পড়ে না, এবং এখানেও চাপ প্রয়োগ করার সময় নানচাকু দু’হাত দিয়ে ধরেই (double palm-in grip) করা হয়।

চিত্র-৯৪ এ দেখা যাচ্ছে, গুপ্তঘাতক টার্গেটকে পিছন দিক থেকে আক্রমণ করবেন। মনে রাখবেন যে, লাঠিগুলো এখানে ৯০ ডিগ্রি কোণ গঠন করবে, যেমনটি চিত্র-৯৫ এ দেখানো হয়েছে। গুপ্তঘাতক টার্ণেটের মাথার উপর দিয়ে গিয়ে সামনের লাঠিটা তার গলা বরাবর রাখবেন জোরে চাপ দেবার জন্য (চিত্রঃ ৯৬)।

গুপ্তঘাতক এই কৌশলটি শুরু করেন এক হাতের তালুকে ভিতরের দিকে রেখে (চিত্র ৯৪ এবং ৯৫)। চিত্র-৯৭ এ দেখা যাচ্ছে যে, গুপ্তঘাতক এখানে দু’হাত দিয়ে চেপে ধরার কৌশল (double palm-down compression technique) প্রয়োগ করছেন। এই অবস্থান পেতে হলে, লাঠিগুলোকে শিকারের মাথার উপর দিয়ে দেয়ার পর, গুপ্তঘাতক যখন তার গলা চেপে ধরার জন্য লাঠিগুলোকে নিচে নামাতে থাকবেন, তখনই তিনি পর্যায়ক্রমে তার লাঠিটি তার তর্জনী (index finger) এবং মধ্যম আঙ্গুল (middle finger) এর মধ্যে বদল করবেন। এটা তখনই করতে হবে যখন তিনি শিকারের কান অতিক্রম করছেন। এটা প্রথমে কঠিন লাগতে পারে, কিন্তু অনুশীলন এই কৌশলটিকে সহজ ও মসৃণ করে দিবে।

কৌশল ১৭

এটা সম্ভবত নানচাকুর সবচেয়ে ভিন্নধর্মী একটি কৌশল। কিন্তু অনুকূল পরিবেশে এটা এত উপযোগী যে, এটাকে বর্ণনা করা প্রয়োজন।

আততারী তার হাতে শক্ত করে লাঠি দুইটিকে একসাথে করে নিয়ে, যেমনটি দেখানো হয়েছে চিত্র-৯৯ এ, একটি বসে থাকা টার্ণেটের দিকে অগ্রসর হন (চিত্রঃ ৯৮)। তিনি লাঠিগুলো শিকারের মাথার উপর দিয়ে নিয়ে গিয়ে তার গলায় তালাবদ্ধ করে ফেলেন (চিত্রঃ ১০০)। গুপ্তঘাতক তারপর নিজের পা উঁচু করবেন এবং শিকারের ঘাড়ের পিছনে বাঁধবেন (চিত্রঃ ১০১)। বাহুর এবং নিম্নাংশের জোর প্রয়োগ করে তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত টেনে যাবেন যতক্ষণ না লাঠি তার হাঁটুতে (kneecap) এসে লাগে। অবশ্যই এটা হবে না, কিন্তু এই অবস্থানে, তিনি তার নিম্নাংশের জোর প্রয়োগ করতে পারেন যাতে করে তিনি টার্গেটের ঘাড়ে সর্বাত্মক চাপ প্রয়োগ করতে পারেন প্রচণ্ড শক্তি দিয়ে।

একজন গুপ্তঘাতক এই কৌশল ব্যবহার করবেন শুধুমাত্র যখন তার লক্ষ্যবস্তুটি বসে থাকবে। শিকারের পিঠ অবশ্যই বেঞ্চের পিছনের সাথে লেগে থাকতে হবে । তা না হলে, শিকার যে কোন পাশে গড়িয়ে সরে যেতে পারে (এবং তা দুর্ঘটনাবশতও হতে পারে) এবং গুপ্তঘাতকের হাত থেকে শিকার ছুটে যেতে পারে।

কৌশল ১৮

এই কৌশল গুপ্তঘাতকের দক্ষতার পরীক্ষা হবে। এই কৌশলের ক্ষেত্রে আমরা ভিতরের অংশ দিয়ে ছোড়া (inside release) এবং দু’হাত দিয়ে ধরে (double palm-in grip) কাজ করা ব্যাখ্যা করব।

গুপ্তঘাতক আগে থেকেই স্থির হয়ে থাকবেন, যখন শিকার তার ডান দিক দিয়ে তার দিকে অগ্রসর হতে থাকবে (চিত্রঃ ১০২)। শিকার যখনই চিত্র-১০৩ এ আঁকা স্থানে চলে আসবে, গুপ্তবাতক তখনই তার একটু পাশে সরে গিয়ে পর্যাপ্ত জায়গা করে নিয়ে তার নানচাকুটি ঘোরাবেন যাতে করে তিনি শিকারের গলার চতুর্দিকে লাঠিগুলো আনতে পারেন। এবং একেবারে শেষ মুহুর্তে তিনি তার বাম হাত বাড়িয়ে দিবেন যাতে করে তিনি আসন্ন লাঠিটি ধরতে পারেন (চিত্রঃ ১০৪)। তিনি প্রাথমিক ধ্বস্তাধস্তির জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন (চিত্রঃ ১০৫)। তারপর দু’টো হাতের তালুকে ভিতরের (inward) দিকে ঘুরিয়ে, গুপ্তঘাতক নানচাকুটিকে জোরে চেপে ধরবেন (চিত্রঃ ১০৬), তার বাহু দৃঢ় করে রাখতে হবে, তার কনুইতে এবং তার কাঁধে। সম্পূর্ণ ক্ষমতাসম্পন্ন ১০ সেকেন্ডের চাপই শিকারকে হত্যা করতে যথেষ্ট।

কৌশল ১৯

এই ক্ষেত্রে, আততায়ী শিকারের দিকে অগ্রসর হবেন পিছন দিক থেকে, যখন তিনি হাঁটতে থাকবেন এমন অবস্থায়। তিনি এখানে বাহিরের অংশ দিয়ে ছোড়া (outside release) এবং দু’হাত দিয়ে নিচের দিকে ধরে (double palm-down grip) রাখার কৌশল ব্যবহার করবেন।

গুপ্তঘাতককে তার পূর্বের অনুশীলন এবং অভিজ্ঞতা তার এবং তার শিকারের মধ্যবর্তী দুরত্ব নির্ণয় করতে সাহায্য করবে (চিত্রঃ ১০৭)। একেবারে শেষ মুহূর্তে, তিনি দু’জনের মধ্যকার দূরত্ব কমিয়ে আনবেন এবং একই সাথে তিনি লাঠিটিকে দোল খাইয়ে শিকারের গলার চারপাশে নিয়ে আসবেন (চিত্রঃ ১০৮)। লাঠির অবস্থান এবং ডান হাতের অবস্থান চিত্র-১০৯ এ লক্ষ্য করুন। এটা শিকারের ডান পাশে ধরা আছে, যখন মুক্ত (loose) লাঠিটিকে শিকারের বাম পাশে ধরা হবে। গুপ্তঘাতক আড়াআড়িভাবে তার ডান হাত তার শরীরের বাম ঘাড়ের ওখানে নিয়ে আসবেন এবং মুক্ত (loose) লাঠিটিকে শিকারের গলার সামনে আড়াআড়িভাবে ধরবেন (চিত্রঃ ১১০)। তারপর তিনি দৃঢ়ভাবে চেপে ধরবেন।

আবারও গুপ্তঘাতক একটা সংক্ষিপ্ত ধ্বস্তাধস্তি প্রত্যাশা করতে পারেন (চিত্রঃ ১১৬)। তাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যে, চেপে ধরার সময় তাকে পুরো শক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং বাহুগুলোকে দৃঢ় রাখতে হবে।

শিকার কিছুক্ষনের জন্য ছোটার চেষ্টা করতে পারে, তবে তা কয়েক সেকেন্ডের বেশী হবে না। সাধারণত, সে এক হাত অথবা দু’হাত দিয়েই লাঠিটি তার গলা থেকে ছোটাতে চাবে, যেমনটা চিত্র-১১১ এ দেখানো হয়েছে। গুপ্তঘাতকের উচিত এরকম প্রতিক্রিয়া আগে থেকেই চিন্তা করে রাখা এবং তার হাত দু’টো খুবই দৃঢ় রাখা।

কৌশল ২০

পূর্বের কৌশলে গুপ্তঘাতক বাহিরের অংশ দিয়ে ছোড়া (outside release) এবং চেপে ধরার ক্ষেত্রে দু’হাতের তালু নিচের দিকে চেপে ধরে (double palm-down grip) রাখার কৌশল ব্যবহার করেছেন। এই ক্ষেত্রে, তিনি ভিতরের অংশ দিয়ে ছোড়া (inside release) এবং এক হাতের তালু নিচের দিকে রেখে এবং অপর হাতের তালু উপরের দিকে মুখ করে রেখে কাজ করবেন।

চিত্র-১১২ তে দেখা যাচ্ছে, গুপ্তঘাতক আগের কৌশলই ব্যবহার করছেন, কিন্তু লক্ষ্য করুন নানচাকু ভিতরের দিক থেকে ছোড়ার জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। তিনি এখানে দূরত্ব কমিয়ে আনবেন কয়েকটি দ্রুত পদক্ষেপের মাধ্যমে এবং অস্ত্রটি শিকারের ঘাড়ের উপর দিয়ে ঘুরিয়ে নিবেন, তার শরীরের অপর প্রান্ত বরাবর (চিত্রঃ ১১৩)। লাঠিটিকে ঘাড়ের একটু উপর বরাবর ধরবেন, গুপ্তঘাতক তৎক্ষণাৎ তার হাতের তালু উপরের দিকে ঘোরাবেন (চিত্রঃ ১১৪)। যেমন তিনি তার হাতের তালু উপড়ের দিকে মোচড় দিবেন, সাথে সাথে তিনি তার হাতটিকে শরীরের ডান দিকে নিয়ে আসবেন এবং লাঠিগুলো একসাথে করে জোরে চেপে ধরবেন (চিত্রঃ ১১৫)। মনে রাখবেন যে, এটি আগের কৌশলের মতো নয়। এখানে বাম হাতের তালু উপড়ের দিকে মুখ করে থাকবে।

কৌশল ২১

এই শেষ কৌশলে, গুপ্তঘাতক টার্গেটকে পিছন দিক থেকে আক্রমণ করেন। এই ক্ষেত্রে, তিনি ভিতরের অংশ দিয়ে ছোড়েন (inside release) এবং এক হাতের তালু নিচের দিকে রেখে এবং অপর হাতের তালু উপরের দিকে মুখ করে রেখে চেপে ধরার কাজ করবেন।

যখন গুপ্তঘাতক টার্গেটের কাছাকাছি চলে আসবেন তখনই তিনি তার নানচাকুটি বের করবেন এবং এক অংশ বাতাসে ছোঁড়ার জন্য প্রস্তুত হবেন (চিত্রঃ ১১৭)। যখন লাঠিটি টার্ণেটের শরীরের অপর পাশে চলে যাবে, গুপ্তঘাতক মাঝপথে এটিকে ধরে ফেলবেন (চিত্রঃ ১১৮)। যখন লাঠিটি তার হাতে জমে যাবে তিনি সাথে সাথে তার হাতের তালু উপরে মুখ করে ফেলবেন (চিত্রঃ ১১৯)। তারপর তিনি তার বাম হাতকে তার ডান পাশে নিয়ে আসবেন তার গতিশীলতা শেষ করার জন্য এবং তিনি লাঠি দু’টোকে তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেপে ধরবেন (চিত্রঃ ১২০)।

আবারও গুপ্তঘাতকের উচিত একটা সংক্ষিপ্ত ধ্বস্তাধস্তি জন্য প্রস্তুত থাকা (চিত্র ১২১)। তাকে অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে যে, চেপে ধরার সময় পুরো শক্তি প্রয়োগ করতে হবে এবং বাহুগুলোকে দৃঢ়ভাবে প্রসারিত করে রাখতে হবে এই ক্ষেত্রে এবং নানচাকুর অন্য সকল কৌশলে।

উপসংহার

এই বইয়ের সবগুলো কৌশলের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র একটি-আর তা হলো হত্যা। এগুলো আত্মরক্ষামূলক কৌশল নয়। আততায়ীর প্রকৃত জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জনের আগেই এটা মনে করা উচিত হবে না যে, তিনি যে কোন আগ্রাসন ঠেকাতে পারবেন। এগুলোকে হত্যার জন্য সাজানো হয়েছে এবং এগুলোর ফলাফলও তাই হবে। তার চেয়ে কম কিছু নয়। যাদি আততায়ী হত্যা ছাড়া অন্য কিছু চান, তবে তার অন্য কোন বই থেকে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা উচিত।

Related Articles

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

13 + six =

Back to top button