অডিও ও ভিডিওঅডিও ও ভিডিও [আল হিকমাহ]আল-হিকমাহ মিডিয়াবাংলা প্রকাশনামাওলানা আসিম উমরমিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

সফর আরও দৃঢ়তা চায়, গন্তব্য সামান্য দূরে।।মাওলানা আসেম উমার (দা বা)

কাফেলা পথ হারিয়েছে মরুভূমিতে বহুদিন হল। ছুটছে মরীচিকা থেকে মরীচিকার পেছনে। পথ হারিয়ে গন্তব্য ভুলে যাওয়া ক্বওমের অবস্থা এমন দাড়িয়েছে আবর্জনা আর সুগন্ধির মাঝে পার্থক্য করাও অসম্ভব হয়ে এগেছে। অধিকাংশই হাল ছেড়ে দিয়েছে। গন্তব্যহীন ছুটে চলা, অপমান আর লাঞ্ছনাকে মেনে নিয়েছে ভবিতব্য হিসেবে। পথ খুজে ফেরা দূরে থাক, গন্তব্যে পৌছনো দূরে থাক, তারা বেছে নিয়েছে নিজ অবস্থানের চারপাশেই ঘুরপাক খাবার।
.
কিন্তু কোন মতে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার আদর্শকে প্রত্যাখ্যান করে, পরাজিত মানসিকতাকে অস্বীকার করে, অধিকাংশের নিষ্ক্রিয়- জড়তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিল একটি দল। মরুর বুক চিরে, গনগণে আগুনের নিচে, লু হাওয়াকে তুচ্ছ করে, পিপাসাকে উপেক্ষা করে এগিয়ে চললো গন্তব্যের দিকে। সত্য প্রতিশ্রুতির ভরসায়।
.
শত প্রতিকূলতা সহ্য করে তার এগিয়ে চললেন। ইঞ্চি ইঞ্চি করে এগোলেন। বছরের পর বছর। সময়ের সাথে বাধাবিপত্তি বৃদ্ধি পেল। গন্তব্যের যতো কাছে তারা যেতে সক্ষম হলেন ততোই বাড়তে লাগল প্রতিকূলতা। কিন্তু এ ক্ষুদ্র কাফেলা এগিয়ে চললো, হাল ছাড়লো না, পথ হারালো না। তারা এগিয়ে চললো।
.
আজ সফর শেষ হবার পথে। কিন্তু ভোর হবার আগেই রাতের অন্ধকার সবচেয়ে গাড় হয়ে আসে। গন্তব্যে পৌছনোর ঠিক আগেই সফরকে সবচেয়ে দীর্ঘ মনে হয়। আর এই মুহুর্তগুলোকেই মনে হয়ে সবচেয়ে দীর্ঘ, সবচেয়ে অসহনীয়। এসমসয়টাতেই প্রতিকূলতা সবচেয়ে বেশি। কিন্তু যারা এ কাফেলার অংশ তারা জানেন হাল ছাড়ার, পথ চলা থামানোর কিংবা ধৈর্য হারা হবার কোন সুযোগ নেই।
.
নিশ্চিত যে সাফল্য, সুনিশ্চিত যে পুরস্কার কিভাবে ক্ষণিকের মোহ, মুহুর্তের আবেগ, অসেচতনতা, কিংবা দুনিয়ার তুচ্ছাতিতুচ্ছ কষ্টের জন্য তাকে উপেক্ষা করা যায়? যখন এ দুনিয়া এক মাছির ডানার চাইতেও মূল্যহীন?
.
তাই সুসংবাদ গ্রহণ করুন, আর নিজেকে প্রস্তুত করুন, ধৈর্য ধারণ করুন। দৃঢ়তার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ুন কাজে, নিজেক সাজিয়ে নিয়ে প্রস্তুত হন দুটি কল্যাণময় ফলাফলের যেকোন একটিকে বেছে নেওয়ার জন্য। বাতাসের বারুদ আর বিজয়ের আগমনের গন্ধ কি আপনাদের উদগ্রীব করছে না? রক্তকে আন্দোলিত করছে না?
.
সফর আরো দৃঢ়তা চায়, গন্তব্য সামান্য দূরে।

ডাউনলোড করুন 55 MB
https://archive.org/details/20201026_20201026_0034
https://archive.org/download/20201026_20201026_0034/%E0%A6%B8%E0%A6%AB%E0%A6%B0%20%E0%A6%86%E0%A6%B0%E0%A6%93%20%E0%A6%A6%E0%A7%83%E0%A7%9D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%20%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A7%9F%2C%20%E0%A6%97%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%A6%E0%A7%82%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A5%A4%E0%A5%A4%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%93%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%BE%20%E0%A6%86%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AE%20%E0%A6%89%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%28%E0%A6%A6%E0%A6%BE%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%29.mp4
https://www.solidfiles.com/v/nDzAkQVmjz6nr
https://a.top4top.io/m_1759ecpn91.mp4
https://mega.nz/file/dkU2QJ4A#CBwfwWeNsoohuX0rIkL7oy6HlaipwqsnAT1RqmP5v4Q
https://archive.org/details/30.soforaro
https://anonfiles.com/H01bE7j3pd/_mp4

http://www.mediafire.com/file/cjl8uu5c2scuzfb/30.sofor_aro.mp4/file

Doc File Download 75KB

https://mega.nz/file/R5cETRrS#1tXlWtyFQzaXGct3eRZ_g6ZgTCy5jNxs9UXozvOiq6k

https://ia601501.us.archive.org/25/items/SfrAl-hikma/mp4

https://archive.org/details/30.soforaro
https://archive.org/download/30.soforaro/30.sofor%20aro.mp4

http://www.mediafire.com/file/cjl8uu5c2scuzfb/30.sofor_aro.mp4/file

ডাউনলোড লিঙ্ক না পেলে আর্কাইভে লগ-ইন করুন। ইনশা’আল্লাহ ডাউনলোড করতে পারবেন। আর্কাইভ আইডি না থাকলে এই আই ডি/পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন –
(মডারেটর ভাইরা সকল পোস্টেই এই আইডি/পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে পারেন যাতে ভাইয়েরা আর্কাইভ থেকে ডাউনলোড করতে পারে, অধিকাংশ পোস্টের কন্টেন্টই আর্কাইভ থেকে ডাউনলোড করতে গেলে Item not available দেখায়)

লগ ইন আই ডি – kbnszsys@grr.la
পাসওয়ার্ড – asdf1234

দু’আর দরখাস্ত…

 


بسم الله الرحمن الرحيم

সফর আরো দৃঢ়তা চায়, গন্তব্য সামান্য দূরে


দাওয়াতের ময়দানে অবিরাম ব্যস্ত মুজাহিদ ভাইদের কাছে কয়েকটি আবেদন।
মাওলানা আসেম ওমর হাফিজাহুল্লাহ, আমীর, আলকায়েদা ভারতীয় উপমহাদেশ।

الحمدلله رب العالمین ،والصلاۃوالسلام علی سيد الأنبياء والمرسلين وعلى وآله وأصحابه اجمعین،
أما بعد فأعوذ بالله من الشيطن الرجيم۔ بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তা’আলা বলেন:
وَمَنْ اَحْسَنُ قَوْلًا مِّمَّنْ دَعَآ اِلَى اللّٰهِ وَعَمِلَ صَالِحًـا وَّقَالَ اِنَّنِيْ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ
“আর ঐ ব্যক্তির কথার চেয়ে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে আল্লাহর দিকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, নিশ্চয়ই আমি মুসলিমদের মধ্য হতে একজন”। (ফুস্সিলাত:৩৩)
আল্লাহ তা’আলা আরো বলেন:
فَالَّذِيْنَ ھَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِھِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقٰتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْھُمْ سَيِّاٰتِھِمْ وَلَاُدْخِلَنَّھُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِھَا الْاَنْھٰرُ ۚ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ ۭوَاللّٰهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ.
“সুতরাং যারা হিজরত করেছে, স্বীয় ঘর-বাড়ি থেকে বাহিস্কৃত হয়েছে, যাদেরকে আমার রাস্তায় কষ্ট দেওয়া হয়েছে এবং যারা যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের গুনাহসমূহ মুছে দেব এবং তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ; ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান”। (আলে ইমরান:১৯৫)
নবী কারীম সা: বলেছেন:
أفضل الجهاد من قال كلمة حق عند سلطان جائر
“উত্তম জিহাদ হল, যে জালিম শাসকের সামনে হক কথা বলে”। (তিরমিযী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)
রাসূল সা: আরো বলেন,
يأتي علی الناس زمان الصابر فيهم علی دينه کالقابض علی الجمر
“মানুষের উপর এমন যামানা আসবে, যখন স্বীয় দ্বীনের উপর অবিচল ব্যক্তি হবে, হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণকারীর ন্যায়”। (জামে তিরমিযী)
দাওয়াতে জিহাদের ময়দানে হকের কালিমা উচ্চারণকারী ভাইয়েরা! আমার মা ও বোনেরা!
মদীনার সম্মানিত সরদার সা: বলেছেন, মানুষের উপর এমন একটি কাল আসবে, যখন পূরো দ্বীনের উপর জমে থাকা এমন হবে, যেমন জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে ধারণ করা। মোল্লা আলী কারী রহ: বলেন, হাদীসের মর্ম হল, যেমনিভাবে হাতের মুষ্টিতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখা সীমাহীন ধৈর্য্য ও ভীষণ কষ্ট ব্যতীত সম্ভব হয় না, তেমনিভাবে ঐ যামানায় নিজের পুরো দ্বীনকে হেফাজত করা এবং ঈমানী নূরকে বাঁচানো সীমাহীন ধৈর্য্য ব্যতীত সম্ভব হবে না।
চির সত্যবাদী নবী করীম সা: পূর্বেই বলে দিয়েছেন, الصابر فهم علی دينه کالقابض علی الجمر “সে সময় স্বীয় দ্বীনের অবিচল ও অটল ব্যক্তি হবে জ্বলন্ত অঙ্গার হস্তে ধারণকারীর ন্যায়”।
যখন দ্বীনকে দু’ভাগে বিভক্ত করে ফেলা হবে, একটি হবে ব্যক্তিগত (বা প্রাইভেট) দ্বীন, আরেকটি হবে রাষ্ট্রীয় দ্বীন। ব্যক্তিগত দ্বীনের উপর আমল করার ব্যাপারে প্রত্যেকেরই স্বাধীনতা থাকবে। রাষ্ট্র কারো ব্যক্তিগত জীবনযাপনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি নামাযী হয়ে থাকতে চায়, তবে দুনিয়ার যেকোন স্থানে সে নামায পড়তে পারবে। তার উপর কারো কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যদি কেউ হিন্দু হয়ে থাকতে চায়, তাহলে তারও যেকোন জায়গায় স্বীয় মূর্তিসমূহের পূজা করার অনুমতি থাকবে। যদি কেউ ইহুদী বা খৃষ্টান হয়ে থাকতে চায়, তাহলে এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এমনকি যদি কোন মুসলমান মুরতাদ হয়ে যায়, স্বীয় দ্বীনই ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকেও নিজের মনমত করার অনুমতি দেওয়া হবে; অন্য কারো তার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার থাকবে না। এমনকি যদি কেউ নাস্তিক যিন্দীক হয়েও জীবন কাটাতে চায় তাহলে এই নব্য জাহিলিয়্যাত তথা গণতন্ত্রের নিকট এরও এমন সম্মানজনক প্রচার হবে, যেমনটা একজন আল্লাহর ওলীর হয়।
গণতন্ত্র, চাই প্রাচ্যের হোক অথবা পাশ্চাত্যের হোক, তা এই যিন্দীককে হেফাজত করা নিজের দায়িত্ব মনে করবে। এভাবে ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট দ্বীন পালনের সবারই স্বাধীনতা থাকবে। কিন্তু দ্বিতীয় প্রকার দ্বীন, যেটা সম্মিলিত জীবনের সাথে সম্পর্ক রাখে, যার মধ্যে বন্ধুত্ব এবং শত্রুতার ব্যাপারগুলো থাকে, যার মধ্যে অর্থনৈতিক ও ফৌজদারী ব্যাপারগুলো থাকে, ঐ দ্বীনের মধ্যে কারো স্বাধীনতা থাকবে না। বরং রাষ্ট্রীয় ফরমানের বলে প্রত্যেককে সেই দ্বীনই মানতে বাধ্য করা হবে, যে দ্বীন আন্তর্জাতিক সংঘ রাষ্ট্রের মাধ্যমে কার্যকর করবে। সম্মিলিত কাজে-কর্মে কেউ যদি নিজের দ্বীনের উপর আমল করার কথা বলে, নিজের মু’আমালা কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী পরিচালনা করার কথা বলে, যদি সে এ ব্যাপারে রাষ্ট্রেীয় ফরমানকে চ্যালেঞ্জ করে, তাহলে তাকে রাষ্ট্রীয় ‘দেবী’র (সংবিধানের) বিদ্রোহী মনে করা হবে। তার সাথে যুদ্ধ করা হবে, যতক্ষণ না সে রাষ্ট্রীয় ধর্মের ভিতর প্রবেশ করে। অন্যথায় তাকে মেরে ফেলা হবে।
এরকম অবস্থায় নিজের পুরো দ্বীনকে বাস্তবায়নের দাবি করা ও তা কার্যকর করার জন্য যুদ্ধ করা এমন হবে, যেমন জ্বলন্ত অঙ্গার হস্তে ধারণ করা- الصابر فيهم علی دينه کالقابض علی الجمر, যখন ঘর থেকে মা’দের প্রিয় সন্তানদেরকে গুম করে ফেলা হবে, যখন যুবতী বোনদের লাশ রাস্তাগুলোতে এমনভাবে ছুড়ে ফেলা হবে, যেন তাদের কোন নাগরিক অধিকার কখনোই ছিল না। দেহেগুলোর মাঝে ছিদ্র, ইস্ত্রি দ্বারা দগ্ধ শরীর, ভীষণ অত্যাচারে ভগ্ন-চোয়াল এবং নিষ্পেষিত হাড্ডি, শুধু এই অপরাধে যে, এই লোকগুলো মুহাম্মদ সা: এর আনীত শরীয়ত ব্যতীত অন্য কোন দ্বীন মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। তাদের অপরাধ শুধু এই ছিল যে, তারা এ যুগেও মুহাম্মদ সা: এর পরিপূর্ণ দ্বীন প্রতিষ্ঠার দাবি করত।
হে উম্মতের ‘মা’গণ, যাদের কলিজার টুকরাকে প্রিয় নবীজী সা: এর শরীয়তের ভালবাসার অপরাধে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে! হে আমার সম্মানিত বোনগণ, যাদের প্রিয় স্বামীকে এই জালিম শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অভিযোগে ফাঁসীর কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে, নানা প্রকার ভীষণ অত্যাচারের পর শহীদ করে দেওয়া হয়েছে অথবা টর্চারসেলের সীমাহীন ভূতুড়ে অন্ধকারে গায়েব করে দেওয়া হয়েছে! এই সব কিছুর উপর ধৈর্য্য ধারণ করার বিনিময়ে তোমাদের প্রিয় নবী সা: কী উত্তম সুসংবাদ শুনিয়েছেন!!! তিনি বলেছেন:
للمتمسك فِيهن يَومَئذٍ بما أنتم علَيهِ أجرُ خَمسِينَ رَجلًا يعملُون مثلَ عَمَلِكم
“সেদিন যে ঐ দ্বীনকে ধারণ করবে এবং তার উপর অবিচল থাকবে, যে দ্বীনের উপর তোমরা আছো সে এমন পঞ্চশজন লোকের সমান সওয়াব পাবে, যারা তোমাদের আমলের ন্যায় আমল করে”। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! أَجْرُ خَمْسِينَ رَجُلًا مِنَّا أَوْ مِنْهُمْ “আমাদের পঞ্চাশজন লোকের সমান সওয়াব, নাকি তাদের পঞ্চাশজন লোকের সমান সওয়াব?” রহমাতুল্লিল আলামীন জবাব দিলেন, بَلْ أَجْرُ خَمْسِينَ مِنْكُمْ “বরং তোমাদের পঞ্চাশজন লোকের সমান সওয়াব পাবে”।
এই হাদীসের শব্দগুলোর মাঝে চিন্তা করুন, সেই লোকেরা কোন দ্বীনের উপর অবিচল থাকবে? প্রিয় হাবীব সা: বললেন, بما أنتم علَيهِ “তোমরা যে দ্বীনের উপর আছো”। অর্থাৎ আমার সাহাবাগণ যে দ্বীনের উপর আছে, ঐ লোকগণ সেই দ্বীনের উপর থাকবে। তারা আমেরিকার থেকে অনুমোদিত দ্বীন মানবে না, তারা ইসলামের আলোকিত চিন্তার ব্যাখ্যাকে গ্রহণ করবে না, মডারেট দ্বীনের সামনে ঝুকে যাবে না, পারস্পরিক তাল মিলিয়ে চলা এবং أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ “তোমরা কি কিতাবের কিছু অংশের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো আর কিছু অংশের প্রতি অবিশ্বাস করো” এর মত হবে না। যেই দ্বীনের উপর রাসূল সা: এর সাহাবাগণ ছিলেন, এই শরীয়তের পৃষ্ঠপোষকগণ সেই দ্বীনের উপর থাকবে।
আপনি কি জানেন, সাহাবায়ে কেরাম কোন্ দ্বীনের উপর ছিলেন? সেই দ্বীনের উপর ছিলেন, যে দ্বীন দিয়ে মুহাম্মদে আরবী সা: কে প্রেরণ করা হয়েছে। যাতে ব্যক্তিগত জীবনেও আল্লাহকে উপাস্য মানা হয় এবং সামাজিক জীবনেও! যা মসজিদ-মাদ্রসায়ও কার্যকর হওয়ার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে এবং বাজার ও রাষ্ট্রীয় ভবনসমূহেও। যা মুসলিম দেশসমূহেও কার্যকর করা ফরজ এবং অমুসলিম দেশসমূহেও।
ব্যাস, এই বিনিময় ঐ সমস্ত লোকদের জন্য, যারা জ্বলন্ত অঙ্গার হাতে নিয়ে ধৈর্য্য ধারণ করে থাকবে, এভাবে হয়ত তার হাতের চর্বিগুলো গলে গলে অঙ্গারকে ঠান্ডা করে দিবে অথবা ঐ দেহটিই ঠান্ডা হয়ে যাবে, যা জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণ করে ছিল।
এই অবস্থা শুধু আপনাদের উপর দিয়েই আসেনি; বরং আপনাদের পূর্ববর্তীরাও এ রকম অবস্থা কাটিয়ে গেছেন। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত স্বীয় কিতাবে বলেছেন:
اَحَسِبَ النَّاسُ اَنْ يُّتْرَكُوْٓا اَنْ يَّقُوْلُوْٓا اٰمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُوْنَ
“মানুষ কি মনে করে, ‘আমরা ঈমান এনেছি’ বললেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?” (আনকাবুত:২)
এই লোকেরা কি একথা বুঝে বসে আছে যে, তারা নিজেদেরকে মুসলমান বলবে, আর তাতেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে? না, বরং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে। আর এই পরীক্ষা কেমন হবে? ইমাম ইবনে জারীর রহ: বলেন, এটা হচ্ছে, আপনাকে আপনার দুশমনদের দ্বারা অর্থাৎ আল্লাহ, তার রাসূল এবং তার শরীয়তের শত্রুদের দ্বারা পরীক্ষা করা হবে, যেমন বনী ইসরাঈলকে ফেরাউন ও তার সাংসদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং ঈসার হাওয়ারীদেরকে তাদের দুশমনদের দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল। এই আয়াতের পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে,
وَلَقَدْ فَتَنَّا الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَلَيَعْلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِيْنَ صَدَقُوْا وَلَيَعْلَمَنَّ الْكٰذِبِيْنَ
“আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছি। তাই আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী”। (আনকাবুত:৩)
অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষায় ফেলেছি। এই পরীক্ষা করা আল্লাহর রীতি। অতএব আল্লাহ অবশ্যই সত্যবাদীদেরকেও প্রকাশ করে দিবেন এবং অবশ্যই মিথ্যাবাদীদেরকেও প্রকাশ করে দিবেন। এই আয়াতে গুরুত্বারোপের পদ্ধতিগুলোর দিকে দেখুন, কতভাবে গুরুত্বারোপ করে বিশ্বজগতের বাদশা ঘোষণা করে দিয়েছেন।
সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ তা’আলা জিহাদের পথে বিবিধ কষ্টের উপর ধৈর্য্য ধারণকারীদের প্রশংসায় বলেন,
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قٰتَلَ ۙ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌ ۚ فَمَا وَهَنُوْا لِمَآ اَصَابَھُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ وَمَا ضَعُفُوْا وَمَا اسْتَكَانُوْا ۭ وَاللّٰهُ يُحِبُّ الصّٰبِرِيْنَ
“আর কত নবী ছিল, যার সাথে থেকে অনেক আল্লাহ ওয়ালা লড়াই করেছে। তবে আল্লাহ র পথে তাদের উপর যা আপতিত হয়েছে, তার জন্য তারা হতোদ্যম হয়নি, দুর্বল হয়নি এবং নতি স্বীকার করেনি। আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদেরকে ভালবাসেন”। (আলে ইমরান:১৪৬)
وَكَاَيِّنْ مِّنْ نَّبِيٍّ قٰتَلَ ۙ مَعَهٗ رِبِّيُّوْنَ كَثِيْرٌ অর্থাৎ অনেক নবী অতিবাহিত হয়েছেন, যাদেরকে স্বীয় দলের অন্যান্য অনেকের সাথে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে, فَمَا وَهَنُوْا لِمَآ اَصَابَھُمْ فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ কিন্তু তাদের পরবর্তীগণ আল্লাহর পথে যে বিপদাপদের স্বীকার হয়েছেন তাতে না হীনমন্য হয়েছেন, না দুর্বল হয়েছেন, না তারা জিহাদের সাহায্য ছেড়ে দিয়েছেন এবং না দুশমনদের সামনে মাথা ঝুকিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ ধৈর্য্য অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন- وَاللّٰهُ يُحِبُّ الصّٰبِرِيْنَ আল্লাহ অবিচলতা অবলম্বনকারীদেরকে এবং ধৈর্য অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন। অন্য জায়গায় বলেছেন,
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْـتَقَامُوْا تَـتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلٰۗىِٕكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِيْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ
“নিশ্চয় যারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের রব’ অতঃপর অবিচল থাকে, ফেরেশতারা তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় (এবং বলে,) ‘তোমরা ভয় পেয়ো না, দুশ্চিন্তা করো না, আর সুসংবাদ গ্রহণ কর সেই জান্নাতের, যার প্রতিশ্রুতি তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছিল”। (ফুস্সিলাত:৩০)
إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا “যারা বলে, আমাদের প্রভু একমাত্র আল্লাহ”- আপনি এই আয়াতে ভালবাসায় ভরা উক্তিটির নমুনা দেখুন- ‘আমাদের রব আল্লাহ’…আল্লাহকে রব মানার পর, যেন তার সমস্ত অনুগ্রহরাজরীর স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর সে বলল, আমাদের প্রভু আল্লাহ। অর্থাৎ যিনি আমাদেরকে খাওয়ান, পান করান, যিনি আমাদেরকে প্রতিপালন করেন। তারপরও তার দুশমনদেরকে ভয় পেয়ে অন্য উপাস্যকে মেনে নেওয়া, তার উপাসনায় ও ইবাদতে তিনি ব্যতীত অন্য কাউকে শরীক করা, তার প্রিয় বন্ধুর আনীত শরীয়ত ব্যতীত অন্য কোন শরীয়তকে ঐ দেশে কার্যকর হতে দেওয়া এটা আল্লাহ ও তার প্রিয় রাসূলের সাথে কেমন বিশ্বস্ততা? কেমন ভালবাসা, যে তার ভালবাসার উপর দেশের ভালবাসা প্রাধান্য পেয়ে যাবে?! তার ভয়ের উপর বান্দার ভয় প্রাধান্য পেয়ে যাবে, তাই বলতে থাকবে, হিন্দুস্তানে শরীয়ত প্রতিষ্ঠার কথা বলবে, তাহলে আমাদেরকে মেরেই ফেলা হবে?
اِنَّ الَّذِيْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ “যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ”, তিনি ঘরের মধ্যেও আছেন, বাহিরেও আছেন, তিনি মসজিদেও আছেন, আদালতেও আছেন। তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই বিধানদাতা। তার শাসনকর্তৃত্বে এবং আইন প্রণয়নে তিনি ব্যতীত অন্য কোন অংশীদার নেই- ثُمَّ اسْتَقَامُوا অত:পর তারা এই কালিমা পড়ে তার উপর অবিচল থাকে, এই কালিমার ব্যাপারে কোন সমঝোতা বা সন্ধি করে না। এরপর কী হয়? কাফেররা তাকে রকমারি পুরস্কারে পুরস্কৃত করে? তাকে নিরাপদ নাগরিক ও সম্মানিত নাগরিক হিসাবে উপাধি দেয়??? না!!! وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي তাকে আমার কালিমার পথে কঠিন কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়- مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ তাদের অনেক ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও উপবাসের সম্মুখীন হতে হয়, তাদের শরীরকে উত্তপ্ত বালুতে ঝলসানো হয়,তাদের শরীরকে বর্ষা দ্বারা ক্ষত-বিক্ষত করা হয়, তাদের মাথার উপর কড়াত রেখে মাঝখান দিয়ে ফাড়া হয়, জ্বলন্ত কড়াইয়ে ভুনা করা হয়, তাদেরকে লোহার পোশাকে পেকেট করে দিল্লীর প্রজ্জলিত আগুনের ধোঁয়ার মধ্যে গাছের উপর লটকিয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু তাদের অবস্থা এই হয় যে, তাদের যবানে”احد احد” ই জারি থাকে, আল্লাহর শাসনকর্তৃত্বের মাঝে, আল্লাহর আইন প্রণয়ন ক্ষমতার মাঝে কোন ইংরেজ, ্েকান ইহুদী অথবা কোন পাশ্চাত্যবাদীর গড়া গণতন্ত্রকে শরীক করতে রাজী হয় না- ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَـتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلٰىِٕكَةُ- এটা তাদেরই বৈশিষ্ট।
সুতরাং হে ঐ সকল বন্ধুগণ, যারা মুজাহিদদেরকে ভালবাসেন!
আজ আপনাদের ঐ প্রিয় ভাইদের সাথে দুনিয়াতে যা কিছু করা হচ্ছে, এগুলো কোন নতুন বিষয় নয়। শরীয়তের দুশমনদের নমুনাও বদলেনি, শরীয়তের পৃষ্ঠপোষকদের নমুনাও বদলেনি। উভয় শ্রেণীই আপন আপন পূর্বসূরীদের পথে চলছে। কিন্তু পরিশেষে সফলতা কার আসে, আর লাঞ্ছনা কার মুখের কুলুপ হয়? এটা বোঝার জন্য কোন দর্শন বোঝার প্রয়োজন নেই; ইতিহাস ই চিৎকার করে করে বলছে, ‘প্রকাশ্য সফলতা’ কার মাথার মুকুট হয়ে আসে, যার ফলে জানাযা উঠার সময়ই পুরো পরিবেশে গুরুগম্ভীর ভাব বিরাজ করে, আর ঐ শাসকদের হাশরের চিত্রও দুনিয়াবাসী দুনিয়াতেই দেখে ফেলেছে- فَمَا بَكَتْ عَلَيْهِمُ السَّمَاءُ وَالْأَرْضُ وَمَا كَاانُوا مُنْظَرِينَ “না জমীন তাদের তরে কেঁদেছে, না আসমান তাদের জন্য অশ্রু বর্ষণ করেছে”।
সুতরাং হে মুহাম্মদ সা: এর দ্বীনে বিশ্বাসীগণ!
ব্যাস, সামান্য ধৈর্য্য ধারণ করুন, সামান্য ধৈর্য! ঐ মায়ের ধৈর্য দেখুন, তার দ্বীনের প্রতি ভালবাসা এবং আল্লাহর একটি হুকুমের জন্য অনমনীয় হয়ে যাওয়ার অবস্থা দেখুন। ইবনে আবিদদুন্য়া এই ঘটনাটি তার “আসসব্র ওয়াসসাওয়াব আলাইহি” (“الصبر والثواب علیه”) নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন, ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বিহ বলেন, “পূর্ববর্তী জাতিসমূহের মধ্যে একজন নারী ছিল, যার নাম ছিল ‘সারাহ’। তার সাতজন ছেলে ছিল। ঐ দেশের বাদশা লোকদেরকে শুকর খেতে বাধ্য করতো। তাই এই মহিলাকেও তার সাত ছেলেসহ বাদশাহর সামনে আনা হল। বাদশা তার সবচেয়ে বড় ছেলের সামনে শুকরের গোশÍ রেখে বলল, এগুলো খাও। সে বলল, আল্লাহ যা আমার উপর হারাম করেছেন তা আমি কিভাবে খেতে পারি? বাদশা জল্লাদকে আদেশ করলো, জল্লাদ তার হাত পা কেটে একেকটি অঙ্গকে আলাদা করে ফেলল। এভাবে ছেলেটি শহীদ হয়েগেলো। মা নিজের চোখের সামনে এসব কিছু দেখছিলেন। তারপর তার ছোট ভাইয়ের সামনে শুকরের গোশÍ রাখা হল, বাদশা বলল, এগুলো খেয়ে নাও! সে জবাব দিল, যা আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন সেটা আমি কি করে খেতে পারি? বাদশা তামার বড় ডেগ আনার আদেশ করল, তারপর তাতে তেল ঢেলে ফুটানোর জন্য আগুনে দেওয়া হল। যখন তেল ফুটে টগবগ করতে লাগলো, তখন ঐ যুবককে তার মধ্যে ছুড়ে মারা হল। মা এ দৃশ্য ধৈর্য্যরে সাথে দেখছিলেন। তারপর তার ছোট ভাইকে ডাকা হল, তার সামনে শুকরের গোশÍ রেখে তাকে খেতে আদেশ করা হল, ঐ ছেলে বলল, আমার হারাম খাওয়ার তুলনায় আল্লাহর নিকট তুমি অনেক বেশি তুচ্ছ ও দুর্বল। বাদশাহ এটা শুনে হেসে দরবারিদেরকে সম্বোধন করে বলল, ‘তোমরা জান, সে কেন আমাকে গালমন্দ করল? তার উদ্দেশ্য হল, আমার রাগ উঠিয়ে দেওয়া, যাতে আমি তাকে তারাতারি মেরে ফেলি। কিন্তু সে ভুল করেছে’। এরপর বাদশা ঐ ছেলের গাঢ়ের চামড়া উঠানোর আদেশ করল, তারপর তার চেহারা ও মাথার গোশÍ উঠানোর আদেশ করল। এভাবে পুরো দেহের চামড়া উঠিয়ে ছেলেটিকে শহীদ করে দেওয়া হল। আল্লাহর একটি হুকুমের জন্য জীবন উৎসর্গ করার দৃশ্য এই মহান মা শান্তভাবে দেখছিলেন। এভাবে এই মহিলার বাকি সন্তানদেরকেও বিভিন্ন প্রকার কষ্ট দিয়ে শহীদ করে দেওয়া হয়। সবশেষে এই মহিলার সাথে তার সবচেয়ে ছোট ছেলেটি ছিল, যে তার অনেক আদরের ছিল। বাদশাহ এই ছোট ছেলে এবং মায়ের দিকে ফিরলো, মাকে বলল, ‘এই বাচ্চাকে আলাদা জায়গায় নিয়ে গিয়ে শুধু শুকরের গোশেÍর এক লোকম খাইয়ে দাও’। মা বলল, ‘ঠিক আছে’, সে তার বাচ্চাকে সেখানেই এক কোণে নিয়ে গিয়ে বলল, ‘বৎস! তোমার অন্যান্য ভাইদের উপর আমার একটি হক ছিল, আর তোমার উপর আমার দু’টি হক। কারণ আমি অন্যান্য ভাইদেরকে দুই বৎসর দুধ পান করিয়েছি। কিন্তু তুমি যখন গর্ভে ছিলে তখন তোমার পিতা মারা যান, এরপর যখন তুমি জন্মগ্রহণ করলে, তখন তুমি দুর্বল হওয়ার কারণে এবং তোমার প্রতি আমার অধিক ভালবাসার কারণে তোমাকে চার বৎসর দুধ পান করিয়েছি। একারণে তোমার উপর আমার দু’টি হক। তাই আমি তোমাকে আল্লাহর দুহাই দিচ্ছি, তুমি ঐ শুকরের সামান্য গোশÍও খেয়ো না এবং কিয়ামতের দিন আমার সাথে ও তোমার ভাইদের সাথে এ অবস্থায় উঠো না যে, তুমি তাদের সাথে নেই। অর্থাৎ তুমি দুনিয়ার জন্য এই হারাম খেয়ো না, বরং তোমার ভাইদের মত শাহাদাতের সুধা পান করে নিবে’। ঐ সন্তান বলল, ‘আলহামদু লিল্লাহ, আমি এত সুন্দর কথা আপনার থেকে শুনলাম, আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম, না আবার আপনি আমাকে এই হারাম খাওয়ার কথা বলেন’। তারপর মা এই ছেলেকে নিয়ে বাদশার সামনে এসে বলল, ‘নাও সে এসে গেছে। আমি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছি, খুব ভাল করে প্রস্তুত করে দিয়েছি’। তাই বাদশাহ ঐ বালককে হারাম খেতে আদেশ করল। তখন এই বালকও ঐ জবাবই দিল, যা তার ভাইয়েরা দিয়েছিল। ফলে বাদশাহ তাকেও মায়ের সামনে হত্যা করে ফেলল। এরপর মাকে বলল, ‘আমি তোমার উপর দয়া করবো, কারণ তুমি আজ নিজ চোখের সামনে অনেক কিছু দেখেছো। যাও এক লোকমা খেয়ে নাও, তারপর যা ইচ্ছা করো। তারপর তুমি যাই চাইবে তোমাকে তাই দিব। আরামে জীবনটা কাটিয়ে দিতে পারবে’।
এটা আসলে ফেরাউনদের পুরাতন বৈশিষ্ট্যই, তারা যখন শক্তি ব্যবহার করে ব্যর্থ হয়, তখন লোভ দেখাতে শুরু করে, যাতে তাদের নিজেদের গড়া ধর্মকে লোকদের সামনে সত্য প্রমাণ করা যায়। ঐ মহান মা জবাব দিল, ‘আমি সন্তানদের থেকেও বঞ্চিত হবো, এরসাথে আল্লাহর নাফরমানিও জমা করবো? অর্থাৎ সন্তানদের থেকে তো বঞ্চিত হয়েছিই, এখন তারপর বেঁচে থেকে কি করবো? আমি ঐ জিনিস খেতে পারবো না, যেটা আল্লাহ আমার উপর হারাম করেছেন’। তাই এই জালিম বাদশা তাকে শহীদ করে দিল”।
আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি রহম করুন।
তাই হে আমার মুজাহিদ ভাই ও বোনগণ! হে ঐ সকল বন্ধুগণ, যারা মুজাহিদদেরকে ভালবাসেন এবং যারা জিহাদে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করেছেন!
আজ আপনাদেরকে শুধু একটি হারাম খেতে বাধ্য করা হচ্ছে না, বরং অসংখ্য হারামকে হালাল বলে বিশ্বাস করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে। এই কুফরী গণতন্ত্রের সামনে মাথা ঝুকাতে বাধ্য করা হচ্ছে, যা, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে হত্যা করা হালাল অর্থাৎ আইনানুগ বানায়, যা আইন প্রণয়নের ক্ষমতা আল্লাহ থেকে নিয়ে পার্লামেন্টকে দেয়, যা আল্লাহর আইন দ্বারা শাসন করার পরিবর্তে ইংরেজদের আইন দ্বারা শাসন করাকে আবশ্যক বলে স্বীকৃতি দেয়, যা আল্লাহর ‘বিধান দেওয়া’র গুণের সাথে সৃষ্টিকে শরীক করে; বরং এই গুণটি পরিপূর্ণভাবে মানুষের হাতে ন্যাস্ত করে দেয়। তাই এক আল্লাহতে বিশ্বাসীগণ, তাওহীদের কালিমা মুখে উচ্চারণকারীগণ এবং নিজেদের নবীর প্রতি ঈমান আনয়নকারীগণ কি আজকের ফেরাউনদের ধমকির কারণে নিজেদের প্রকৃত উপাস্যের সাথে প্রকাশ্য শিরককে বরদাশ্ত করবেন? শুধু এই জন্য যে, যিন্দেগীর শ্বাসটুকু বাকি থাকবে আর সিনা থেকে ঈমান বের হয়ে যাবে?? না, কখনো না!!! এই কয়েকদিনের যিন্দেগীর জন্য স্থায়ী যিন্দেগী ধ্বংস করা যায় না, আল্লাহর দুশমনদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য নিজের আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করা যায় না!!
আল্লাহ তা’আলা এই পেরেশানীসমূহের উপর ধৈর্য্য ধারণ করার জন্য ঈমানদারদের সাথে অসংখ্য পুরস্কারের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ বলেন:
فَالَّذِيْنَ ھَاجَرُوْا وَاُخْرِجُوْا مِنْ دِيَارِھِمْ وَاُوْذُوْا فِيْ سَبِيْلِيْ وَقٰتَلُوْا وَقُتِلُوْا لَاُكَفِّرَنَّ عَنْھُمْ سَيِّاٰتِھِمْ وَلَاُدْخِلَنَّھُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِھَا الْاَنْھٰرُ ۚ ثَوَابًا مِّنْ عِنْدِ اللّٰهِ ۭوَاللّٰهُ عِنْدَهٗ حُسْنُ الثَّوَابِ.
“সুতরাং যারা হিজরত করেছে, স্বীয় ঘর-বাড়ি থেকে বাহিস্কৃত হয়েছে, যাদেরকে আমার রাস্তায় কষ্ট দেওয়া হয়েছে এবং যারা যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি অবশ্যই তাদের গুনাহসমূহ মুছে দেব এবং তাদেরকে প্রবেশ করাবো জান্নাতসমূহে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয় নহরসমূহ; ইহা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান”। (আলে ইমরান:১৯৫)
فَالَّذِينَ هَاجَرُوا وَأُخْرِجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ যারা আমার রাস্তায় হিজরত করেছে এবং তাদেরকে নিজেদের ঘর-বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে, وَأُوذُوا فِي سَبِيلِي আমার রাস্তায় তাদেরকে বিভিন্ন কষ্ট দেওয়া হয়েছে, وَقَاتَلُوا وَقُتِلُوا তারা আল্লাহর শরীয়তের জন্য যুদ্ধ করেছে এবং তাদেরকে শহীদ করে দেওয়া হয়েছে, لَأُكَفِّرَنَّ عَنْهُمْ سَيِّئَاتِهِمْ আমি অবশ্যই তাদের গুনাহসমূহ মুছে দেব, وَلَأُدْخِلَنَّهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ এবং অবশ্যই তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো, যার তলদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়।ثَوَابًا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ وَاللَّهُ عِنْدَهُ حُسْنُ الثَّوَابِ আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কারস্বরূপ। আর আল্লাহর নিকট রয়েছে উত্তম প্রতিদান।
جَزَاءً بِمَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
“এটা তাদের (নেক) আমলের প্রতিদানস্বরূপ”।
আর আল্লাহর জান্নাত কেমন! হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি দুনিয়াতে কখনো আনন্দের মুখ দেখেনি, সর্বদাই চিন্তা-পেরেশানী ও বিপদাপদের মধ্যে থেকেছে। কিয়ামতের দিন তাকে জান্নাতে একটি ডুব দেওয়ানো হবে, তারপর তাকে জিজ্ঞাস করা হবে, কখনো কোন পেরেশানী দেখেছো? সে বলবে, হে আমার রব, আমি কখনো কোন পেরেশানীই দেখেনি।
আবার এরকম একজন লোককেও আনা হবে, যে দুনিয়াতে কখনো কোন পেরেশানীই দেখেনি, সর্বদা সুখে-স্বাচ্ছন্দে কাটিয়েছে। তাকে জাহান্নামে একটি ডুব দেওয়ানো হবে, তারপর জিজ্ঞাস করা হবে, কখনো কোন আনন্দ দেখেছো? সে বলবে, দুনিয়াতে কখনো কোন আনন্দই দেখি নি। এটা এমন জান্নাত!!! ثَوَابًا مِنْ عِنْدِ اللَّهِ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ।
হযরত আলী রা: বলেছেন, “ألا إن الصبر من الإيمان بمنْزلة الرأس من الجسد” “লোকসকল! স্মরণ রাখ, ঈামনের মাঝে সবরের মর্যাদা হল, দেহের মধ্যে মাথার মত”। যখন মাথা কেটে ফেলা হয়, তখন দেহ শেষ হয়ে যায়। তাই শোন! যার সবর নেই তার ঈমান নেই। আল্লাহ সবরের অনেক ফযীলত রেখেছেন। নিজের পথে আগত কষ্টসমূহের উপর ধৈর্যধারণ করার বিনিময়ে ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্য এমন ওয়াদা করেছেন:
اِنَّمَا يُوَفَّى الصّٰبِرُوْنَ اَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ
“নিশ্চয়ই ধৈর্য্যধারণকারীদেরকে তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে হিসাব ছাড়া ”।
অর্থাৎ তাদের প্রতিদান মেপে মেপে দেওয়া হবে না, বরং বেহিসাব দেওয়া হবে।
দওয়াতী ময়দানে কর্মপরিচালনাকারী আমার ভাই ও বোনেরা!
পূর্বে তো মনে করা হতো, যুদ্ধের ময়দানেই শুধু শাহাদাত লাভ করা যায়, কিন্তু এখন আল্লাহর দায়ীদের জন্য দাওয়াতের ময়দানেই শাহাদাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন দাওয়াতের ময়দানেও শাহাদাতের পুরস্কার বিতরণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সুতরাং যে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের দৃঢ় বিশ্বাস রাখে তার অবশ্যই সেজে-গুজেই দাওয়াতের ময়দানে অবতীর্ণ হতে হবে, কারণ বর্তমানে শাসকদের সামনে হক কথা বলাকেই শাহাদাতের মাধ্যম বানানো হচ্ছে।
مَنْ كَانَ يَرْجُوْا لِقَاۗءَ اللّٰهِ فَاِنَّ اَجَلَ اللّٰهِ لَاٰتٍ
“যে ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন তার প্রস্তুতি নেয়, কারণ,) আল্লাহর(স্থীরকৃত) মৃত্যু অবশ্যই আসবে”। (আনকাবুত:৫)
এই নির্ধারিত সময় তো আসবেই। যেকোন অবস্থাতেই তা আসবে। তাই যদি আমাদের রব এটাকে দাওয়াতের ময়দানেই কবুল করতে চান তবে আপত্তি কিসে? আগ-পিছ ভাবা কিসে? জানের সওদা করে ফেলার পর তাকে সোপর্দ করে দিতে গড়িমসি কিসে? তোমার সাথীরা যুদ্ধের ময়দানে মাথা হাতের তালুতে রেখে হকের পথে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, তাই তুমি এখন দাওয়াতের ময়দানে মাথায় কাফন বেধে নাও, শাহাদাতের লায়লাকে সেখানেই খুঁজতে থাকো। একত্র তো ইংশাআল্লাহ একজায়গায়ই হতে হবে। মহান উদ্দেশ্যে যারা বের হয়েছে, তাদেরকে তো উদ্দেশ্যের জন্য বিভিন্ন কুরবানী দিতেই হয়। বিপ্লবের আওয়াজ উত্তলনকারী দলের গলায় তো হার পরিধান করানো হয় না; বরং এই পাগলদের জন্য তো ফাঁসির রশি এবং হত্যার নতুন নতুন রূপ আবিস্কার করা হয়। তপ্ত মরুকে খেজুর বাগান বানানোর আশায় যদি কিছু কাঁটা বিধে যায়, তবে চিন্তিত হওয়া উচিত নয়, যদি আমাদের রক্ত ও অশ্রু সাঁতরে উম্মতের কিশতী গন্তব্যপানে পৌছে যায়, তবে আমরা ব্যর্থ নই। যদি বহুজাতিক জেটের ভূ-সীমানায় বিভক্ত উম্মতকে কালিমার গ্রন্থিতে একীভূত করার জন্য আমাদেরকে নিজের লাশের পুল বানাতে হয়, তাহলে কদমে স্খলন সৃষ্টি না হওয়া চাই, যদি বরফে কম্পমান উম্মতকে উষ্ণতা দেওয়ার জন্য আমাদের দেহকে জ্বালাতে হয়, তবে এটা আমাদের স্থায়ী প্রশান্তির কারণ হবে। এ সবকিছু অনর্থক যাবে না, ইংশাআল্লাহ। তারপর এই কুরবানীসমূহের বিনিময়ে এমন একটি সময় আসবে, যখন সত্য বিজয়ী হবে, বাতিল শেষ হয়ে যাবে। তারপর লোকজন দলে দলে ঐ দৃষ্টিভঙ্গিকে গ্রহণ করে নিবে, যার জন্য এই জামাত উঠেছিল, এবং রক্তসাগর পড়ি দিয়েছিল।
আপনি একটু চিন্তা করুন, মুহাম্মদ সা: এর আনীত জীবন ব্যবস্থা না থাকার কারণে শুধু মানুষই নয়, বরং পুরো মানবতা আজ কেমন দু:সহ জীবনযাপন করছে? আল্লাহ স্বীয় দ্বীনের মর্যাদা উচু করার জন্য আপনাদেরকে নির্বাচন করেছেন, তার সাহায্যের জন্য আপনাদেরকে মনোনীত করেছেন। যদি তার পথে জান কুরবান করতে হয়, সম্পদ বিসর্জন দিতে হয়, আশঙ্কার সম্মুখীন হতে হয়, যখন আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যের বড় প্রয়োজন, যখন আজ শরীয়তের দুশমনেরা দুনিয়াতে আন্তর্জাতিক আইন, তথা আন্তর্জাতিক ইবলীসী শাসনব্যবস্থাই চালু রাখতে চায়, ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে প্রতিহত করার জন্য আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তখন যদি কেউ মুহাম্মদ সা: এর দ্বীনকে সাহায্য করে, তারজন্য ত্যাগ স্বীকার করে, তার পথে আগত প্রতিকূল অবস্থাসমূহের মুকাবেলা করে এবং সত্যের পথে অবিচল থাকে, তাহলে এরকম লোকদের জন্য আল্লাহ বড় মর্যাদা রেখেছেন। এরকম সময় উপবিষ্ট লোকেরা আর আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদদেরকে সাহায্যকারীগণ সমান হতে পারে না। এরকম সময় আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়নের জন্য অর্থব্যয়কারীগণ আর সম্পদ সঞ্চয়কারীগণ সমান হতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা সূরা হাদীদে বলেছেন,
وَمَا لَكُمْ اَلَّا تُنْفِقُوْا فِيْ سَبِيْلِ اللّٰهِ وَلِلّٰهِ مِيْرَاثُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضِ
“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা আল্লাহর পথে ব্যয় করছ না ? অথচ আসমানসমূহ ও যমীনের উত্তরাধিকার তো আল্লাহরই?”
হে মুহাম্মদ সা: এর শরীয়তের উপর ঈমান আনয়নকারীগণ!
তোমাদের কি হলো যে, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় খরচ করছো না, আসমান এবং যমীনের উত্তরাধিকার আল্লাহরই। এ সবকিছুই তার।
لَا يَسْتَوِيْ مِنْكُمْ مَّنْ اَنْفَقَ مِنْ قَبْلِ الْفَتْحِ وَقٰتَلَ
(“তোমাদের মধ্যে যারা মক্কা বিজয়ের পূর্বে ব্যয় করেছে এবং যুদ্ধ করেছে তারা সমান নয়”।)
যে বিজয়ের পূর্বে খরচ করেছে, এবং জিহাদ করেছে, তার সমান ঐ লোকেরা হতে পারে না, যারা বিজয়ের পরে খরচ করেছে এবং জিহাদ করেছে।
اُولٰۗىِٕكَ اَعْظَمُ دَرَجَةً مِّنَ الَّذِيْنَ اَنْفَقُوْا مِنْۢ بَعْدُ وَقٰتَلُوْا
(“এই সকল লোকেরা ঐ সমস্ত লোকদের তুলনায় মর্যাদায় উর্ধ্বে, যারা পরবর্তীতে সম্পদ খরচ করেছে এবং যুদ্ধ করেছে”।) (হাদীদ:১০)
বরং মর্যাদা বিবেচনায় এ সকল লোকেরা উত্তম, ঐ সমস্ত লোকদের তুলনায়, যারা বিজয়ের পরে খরচ করেছে এবং যুদ্ধ করেছে। কারণ বিজয়ের পূর্বে বিপদাপদ থাকে বেশি। এই সময় আল্লাহর প্রতিশ্রুতিসমূহের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা বাহ্যিক পরিস্থিতির বিপরীত মনে হয়। দুর্বল ঈমানের অধিকারীরা কুফরের শক্তি দেখে এই কুমন্ত্রণার স্বীকার হয় যে, তাদের মুকাবেলায় মুসলামনগণ কিভাবে বিজয়ী হবে? সুতরাং এই সময় আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতিশ্রুতিসমূহের উপর দৃঢ় ঈমান রেখে যারা নিজেদের মাল এই রাস্তায় খরচ করে, নিজেদের জান এই রাস্তায় উৎসর্গ করে মর্যাদা হিসাবে তারাই উত্তম। এজন্য এসময় যারা মুজাহিদদেরকে সাহায্য করবে, যারা এই সময় মুজাহিদদেরকে আশ্রয় দিবে, যারা এই সময় নিজের সন্তানদেরকে আল্লাহর রাস্তায় কুরবান হওয়ার জন্য পেশ করে, যখন মুজাহিদদের সাহায্যকারীদেরকে ভয় দেখনো হচ্ছে, যারা জিহাদকে ভালবাসে তাদেরকে ঘরের মধ্যে গুপ্তহত্যা করা হচ্ছে, ঘর থেকে উঠিয়ে শহীদ করে রাস্তায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে, এই সময় আল্লাহ নিজের দ্বীনের সাহায্যকারীদেরকে অবশ্যই সাহায্য করবেন এবং তাদেরকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।
হে উম্মতে মুহাম্মদীয়ার সন্তানগণ! চক্ষু খোল এবং ক্ষীণ অনুভূতি থেকে বেরিয়ে এসো, মিডিয়ার মিষ্টিকথার প্রতি কর্ণপাত করো না! পরাজয়, পরাজয়ই হয়। যুগের ফেরাউন আমেরিকা নিকৃষ্টভাবে পরাজিত হয়েছে।এই পরাজয়কে গরংংরড়হ ঈড়সঢ়ষবঃব বা যে সুন্দর নামই দেক না কেন; মূলত: এটা লাঞ্ছকার পরাজয়। আল্লাহ স্বীয় শরীয়তের জন্য যুদ্ধকারীদেরকে বিজয় উপহার দিয়েছেন। ঈমানদারদের জন্য এতে বড় উপদেশমালা রয়েছে। এজন্য শাসকশ্রেণীর জিহাদের বিরুদ্ধে বলা যেন আপনাকে পেরেশান না করে। ব্যস, একটু ধৈর্য্য ধারণ করুন! পরীক্ষার সময় আল্লাহর দ্বীনকে মজবুতভাবে আকড়ে থাকুন। এতসময় জিহাদে ব্যয় করার পর, জিহাদী কাফেলার সাথে চলার পর, যখন সফর আরো দৃঢ়তা চায়, আর গন্তব্যের সামান্য পথ বাকি আছে, এমন সময় কোন বুদ্ধিমান-মুসাফির দুর্বলতা বা অলসতা দেখায় না, বরং গন্তব্যে পৌছার জন্য প্রস্তুতি আরো গতিশীল করে। তাই সামান্য সাহস জমিয়ে রাখুন, এবং স্বীয় প্রতিপালকের সামনে সেজদায় পড়ে যান, তিনি অসহায়দেরকে আশ্রয়দানকারী এবং দুর্বলদেরকে সাহায্যকারী। নিজেকে হেফাজত করুন, খারিজীদের ফেৎনা থেকে এবং ইন্টারনেটের ফেৎনা থেকেও। মুক্ত কাফেলা… فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ এই কাফেলার স্থীরতা কোথায়? হয়ত শহীদদের কাফেলায়, অথবা বিজয়ীদের কাফেলায়!
আল্লাহ সর্বাবস্থায় আমাদের উপর সন্তুষ্ট থাকুন এবং আন্তর্জাতিক জিহাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সকল ষড়যন্ত্র থেকে মুজাহিদদেরকে এবং জিহাদকে যারা ভালবাসে তাদেরকে রক্ষা করুন। وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العلمين

আসসাহাব মিডিয়া সেন্টার, উপমহাদেশ

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

fourteen − seven =

Back to top button