উপমহাদেশনির্বাচিতসংবাদ

ভারতে গোরক্ষকদের হামলায় আবারো মুসলিম নিহত

ভারতের রাজস্থান রাজ্যের আলোয়াড়ের কাছে কথিত গোরক্ষক বাহিনীর হামলায় আবারো একজন মুসলিম খামারি নিহত হয়েছেন। আর ওই একই ঘটনায় আহত হয়ে তার সঙ্গী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
কিন্তু পুলিশ প্রথমে এই ঘটনায় এফআইআর পর্যন্ত নিতে চায়নি, কিন্তু পরে গ্রামবাসীদের চাপে উমর মুহাম্মদ ও তাহির খানের হামলাকারী হিসেবে অজ্ঞাতনামা গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গ্রহণ করেছে।
যেখানে এই ঘটনাটি ঘটেছে, তার বেশ কাছেই মাসকয়েক আগে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় পহেলু খানকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল এবং ভারতের সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্টরা প্রায় সবাই বলছেন, খুব পরিকল্পনামাফিক একটা নির্দিষ্ট ছকে গোরক্ষকরা দেশ জুড়ে এসব হামলা চালাচ্ছে।
রাজস্থানের আলোয়াড়ের কাছে একটি রেল লাইনের পাশে গত শুক্রবার পাওয়া গিয়েছিল উমর মোহাম্মদের গুলিবিদ্ধ দেহ।
উমরের মৃত্যুর পর দুদিন কেটে গেলেও পুলিশ কোনও এফআইআর নেয়নি, কিন্তু রবিবার তার গ্রামের লোকজন এসে পুলিশ থানা ঘেরাও করে অভিযোগ জানায় গোরক্ষকদের হামলোতেই তার মৃত্যু হয়েছে, আর গুরুতর জখম হয়েছেন তার এক সঙ্গী।
উমর যে মিও মুসলিম সম্প্রদায়ের, তাদের পঞ্চায়েতের প্রধান শের মুহাম্মদ বলছিলেন, ‘ভোরবেলা যখন ওরা গাড়িতে গরু নিয়ে যাচ্ছিল তখন ওদের ওপর হামলা চালানো হয়।’
‘কিন্তু এটাকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানোর জন্য ওর দেহটা নিয়ে যাওয়া হয় রেললাইনের পাশে, যাতে চলন্ত ট্রেন উপর দিয়ে চলে গিয়ে দেহটা ছিন্নভিন্ন করে দেয়। ওমর তো মারা গেছেই, গুলি লেগে জখম হয়ে তাহিরও এখন হাসপাতালে ভর্তি।’
রাজস্থান পুলিশ অবশেষে এই ঘটনায় এফআইআর নিলেও কর্মকর্তারা এখনও মুখ খুলছে না। তবে ওই এলাকার খুব কাছেই গত এপ্রিলে যেভাবে পহেলু খানকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল, তার সঙ্গে এই ঘটনার অসম্ভব মিল আছে বলে মনে করছেন অধ্যাপক মনীষা শেঠি, যিনি পহেলু খান হত্যা তদন্তের তথ্যানুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
শেঠির কথায়, ‘এই খুনগুলোতে সরকার ও জনতার মধ্যে এক ধরনের অংশীদারি দেখা যাচ্ছে, যেখানে খুব সংগঠিতভাবে সরকারি মদতে জনতা এসে হামলা চালাচ্ছে। আর তারপর ভুয়ো এনকাউন্টার কেসে যেরকম হয়, ঠিক সেভাবে পুলিশ আক্রান্তদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ রুজু করছে।’
আর এটা শুধু দু-একটা রাজ্যে নয়, প্রায় গোটা ভারতেই ছড়িয়ে পড়ছে।
তার কথায়, ‘আসাম, কর্নাটক, ঝাড়খন্ড, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান বা হরিয়ানা সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে গোরক্ষকরা হামলা চালাচ্ছে ঠিক একটা প্যাটার্ন অনুযায়ী। আর গরু-মহিষ পরিবহণের সময় মুসলিমরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। মুহাম্মদ আখলাক, পহেলু খান, জুনাইদ আর এখন এই উমর, সবাই এই একই দুর্ভাগ্যজনক প্যাটার্নের শিকার।’
হরিয়ানা-রাজস্থানের মিও মুসলিমরা শত শত বছর ধরে গরু-মহিষ প্রতিপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন, এই পরিস্থিতিতে তাদের দিন কাটানোই বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সাবা নকভি বলছিলেন, বহু জায়গায় তাদের বাড়ি বা খামার থেকে পর্যন্ত গরু-মহিষ কেড়ে নেয়া হচ্ছে।
একটি ঘটনার দৃষ্টান্ত দিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘ওই মুসলিম পরিবারের দশটি দুধেল গাভি জোর করে কেড়ে নিয়ে তারা একটি গোশালায় রেখে দিয়েছিল, যা তাদের পরে ঘুষ দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়।’
‘এর মধ্যে দুটি গাভি মারা পড়ে, আর গোশালায় দুধ দোয়াতে না-পারায় গরুর বাঁটে সংক্রমণ হয়ে যায় আরও চারটি গরুর। এই অসহায় পরিবারগুলো এখন ট্রাকে গরু-মহিষ নিয়ে যাওয়ার সময় হিন্দু চাষীদের বলছেন, আপনারা গাড়িতে সামনে বসুন।’
উমর মুহাম্মদ-তাহির খানদের টেম্পুতে কোনও হিন্দু সঙ্গী ছিল না। আর ভোররাতে তাদের গাড়ি থামিয়েই গোরক্ষকরা আরও একটা নির্মম হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × five =

Back to top button