প্রবন্ধ-নিবন্ধ

কেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার দাবী মানছেনা ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব?

একসময় ইউরোপ তার সর্বশক্তি দিয়ে সমর্থন করেছে, প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করেছে পূর্ব-তিমুর কিম্বা সুদানের মত মুসলিম ভূমিগুলোর বিচ্ছিন্নতার, তারা আজ কাতালোনিয়ার জনমত আর যৌক্তিক স্বাধীনতার দাবিকে কেবল অস্বীকার করছে না বরং মোকাবেলাও করছে।

গণমাধ্যমের বরাতে জানা গেল, বাংলাদেশেরও কাতালোনিয়ার স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে স্পেনের গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপকে সমর্থন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন একটা রাষ্ট্র কি করে এ জাতীয় পদক্ষেপ নিতে পারে সে নিয়ে এখনো বড়ো আকারের প্রশ্ন না উঠাটা বাংলাদেশের জনগণের নিঃস্পৃহতার চরম প্রকাশ।

স্পেনের জন্য কাতালোনিয়া গুরুত্বপূর্ণ। OECD এর তথ্যমতে সমগ্র স্পেনের মাত্র ৬ শতাংশের কিছু বেশি আয়তনের এ অঞ্চলটির জিডিপি ৩১৪ বিলিয়ন ডলার। যা বিশ্বের ৩৪ তম বৃহৎ অর্থনীতি। হংকং, পর্তুগাল, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি প্রভৃতি দেশের থেকেও বেশি।

কাতালনিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রাম বহুপুরনো। ১৯৩৮ সনে জেনারেল ফ্রান্সিকো ফার্সো ( Francisco Franco) কাতালোনিয়ায় সর্বশেষ যে স্বাধীনতা আন্দোলন দমন করেন তাতে কমপক্ষে সাড়ে তিন হাজার মুক্তিকামী জনতাকে এব্রো যুদ্ধের পর হত্যা করা হয়। নির্বাসনে পাঠানো হয় অসংখ্য মুক্তিসংগ্রামীকে।

কাতালোনিয়া ইসলামি শাসনভূমির অধীন ছিল এককালে। নানাবিধ কারণে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব আছে। খ্রিস্টশক্তির বিরুদ্ধে মুসলমানদের যে বিজয় ইরবিয়ান পেনিনসুলায় তথা আন্দালুসিয়ায় (স্পেনে) হয়েছিল- যা ৭০০ বছর স্থায়ী হয়। তার বিরুদ্ধে খ্রিস্ট শক্তির যে প্রথম বিজয় তা ছিল কাতালান একটি অঞ্চলকেই মুসলমানদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া।

বার্সেলোনা হচ্ছে ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর নগরি। যা আধুনিক কাতালোনিয়ার রাজধানী এবং স্পেনের ২য় বৃহৎ নগর। ৯৬-৯৮ হিজরির কোনও এক কালে তারিক বিন যিয়াদের নির্দেশে আব্দুল আযিয বিন মুসা বার্সেলোনা জয় করেন। লুইস ৯০ বছর পর ১৮৫ হিজরিতে বার্সেলনা মুসলমানদের থেকে কেড়ে নেয়।

৩৭৫ সালে হিজাব আল মানসুর পুনরায় বার্সেলনা বিজয় করেন, তবে দুবছরেই এর পতন হয়। এরপর ইসলাম আর কখনো বার্সেলনায় মুক্ত ছিল না। মুসলমানের অধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল না। ২৩০ হিজরিতে খ্রিস্টশক্তি এখানকার উত্তর-পূর্বের সমস্ত মুসলিম সৈন্যকে হত্যা করেছিল- আমির আব্দুর রহমান ২য় এর কমান্ডার আব্দুল করিম তাদের অভিযান প্রেরণ করে দমন করেন.

খ্রিস্টশক্তির কাছে এটা তাই ইতিহাসের একটা গুরুত্বপুর্ণ অধ্যায়। ফলত তামাম সময়কালেই দেখা গেছে স্পেন এবং ইউরোপ তার যাবতীয় শক্তি দিয়ে কাতালান স্বাধীনতা আন্দোলন স্তিমিত করেছে। বর্তমান সময়েও সবরকম প্রচেষ্টাই অব্যাহত আছে। নানাবিধ জুজুর ভয় দেখিয়েছেন তারা।

সমসাময়িক সময়ে স্পেনে ও ইউরোপের অন্যসব জায়গায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অসংখ্য থিসিস এসেছে, বুদ্ধিজীবীরা বই-পত্তর কলাম লিখে কেবল এটা প্রমাণের চেষ্টা করছেন কাতালোনিয়ার স্বাধীনতা এটাকে ‘মুসলিম জঙ্গিবাদ’-এর দিকে ঠেলে দিবে। ‘জিহাদ স্টেট’, ‘টেরর স্টেট’ করে ছাড়বে।

মুসলিমরা এখানে তৃতীয় বৃহৎ ধর্মীয় জনগোষ্ঠী। কাতালোনিয়ায় মুসলিম ইমিগ্রেন্ট সবচে’ বেশি। অর্ধ মিলিয়ন মুসলিম জনগোষ্ঠী এর রাজনীতিতে বড়ো প্রভাবক হয়ে উঠেছে। মুসলিম অভিবাসীদের মধ্যে শীর্ষে পাকিস্তান, এরপর মরোক্কো এবং অনেকেই হয়ত জানেন না, ৩য় বৃহৎ অবস্থানে আছে বাংলাদেশিরা।

যাই হোক, কাতালনিয়ার স্বাধীনতা দমনে স্পেন এবং ইউরোপ বেশ উদগ্রীব। এর যত বড়ো কারণ অর্থনীতি গোঁড়ায় তারচে বড়ো কারণ ইসলাম। এবং অন্যসব অঞ্চলের স্বাধীনতাকামীদের দমন। তাই ইউরোপীয় গণতন্ত্রপন্থী বলে পরিচিতদের অনেকের মুখোশ নামতে শুরু করেছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen + three =

Back to top button