আত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্সআরবইলম ও আত্মশুদ্ধিবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ সুলতান আল উতাইবিসৌদী আরবহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

ত্বলিব আল-’ইল্‌মদের প্রতি উপদেশ – শাইখ সুলতান আল উতাইবি

ত্বলিব আল-’ইল্‌মদের প্রতি উপদেশ

শাইখ সুলতান আল উতাইবি

ডাউনলোড লিংক

https://archive.org/details/AdviceToTheSeekerOfKnowledgebangla

https://archive.org/download/AdviceToTheSeekerOfKnowledgebangla/Advice_to_the_Seeker_of_Knowledge_BENGALI.pdf

https://www.mediafire.com/file/s60e2j5khwc8s4c/talibul_ilmder_proti_upodesh.pdf/file

 

 

اﻟﺜﺎﻟﺚ ﻣﻦ ﺳﻠﺴﻠﺔ اﻟﻤﻘﺎﻻت

رﻳـــــــﺎح ﻣﻦ ﺟﻨﺎت اﻟﻔﺮدوس

The Third of the Series of Treatises

Breezes,

From the Gardens of Firdaws

 

وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ

“তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন,

যা তৈরি করা হয়েছে মুত্তাক্বীদের জন্য।” আলি-’ইমরানঃ ১৩৩

 

ত্বলিব আল-ইলমদের প্রতি উপদেশ

“আবু আব্দুর রহমান আল-আসারী”

তাওহীদের পথে শহীদ মুজাহিদ,

শাঈখ সুলতান আল-’উতাইবি-র, ছদ্মনাম

(আল্লাহ তাঁর প্রতি রহম করুন ও তাঁকে শহীদদের মধ্যে গণ্য করুন)

 

আত্-তিবয়ান পাবলিকেশন্স – এর পক্ষ হতে বিতরণ

সংক্রান্ত বিশেষ অনুরোধঃ প্রকাশকের টীকাসহ এই গ্রন্থের

সকল অংশে যে কোন প্রকার – যোগ-বিয়োগ, বাড়ানো-

কমানো অথবা পরিবর্তন করা যাবে না, এই শর্তে, যে কোন

ব্যক্তি এই প্রকাশনা প্রচার বা বিতরণ করার অধিকার রাখেন।

 

 

 

ত্বলিব আল-ইলমদের প্রতি উপদেশ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি সারা সৃষ্টি জগতের মালিক, এবং সালাত প্রেরণ করছি আমাদের নবী (সাঃ)-এর প্রতি, এবং তাঁর পরিবার ও সাহাবাদের প্রতি, আর তাঁদের সকলের প্রতি যারা তাঁর পদচারণা অনুকরণ করে, এবং তাঁর সুন্নাহকে নিজেদের পথ হিসেবে বেছে নেয় – কেয়ামতের দিন পর্যন্ত।

অতঃপর, আমার এ বার্তা আমি প্রেরণ করছি আমার সেই ভাই এর প্রতি, যে ইলমের সন্ধানী…

আসসালামু ’আলাইকুম, ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

হে ত্বলিব আল-’ইলম (’ইলম সন্ধানী)! এই কথাগুলো আমি লিখেছি স্মরণ করিয়ে দেবার জন্য, এবং তোমাকে আন্তরিকভাবে কিছু পরামর্শ দেবার জন্য, যাতে করে আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে পারি এবং আমি আল্লাহর কাছে এই কামনাই করছি যে আমার এই বার্তা যেন তোমার কাছে পৌঁছায় যখন তুমি পূর্ণ শান্তি এবং সুস্থতার মধ্যে আছো।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তুমি সাবধান থাকবে, তোমার ইসলামের জ্ঞান অর্জনের এ চেষ্টা যেন কোন চাকুরী অর্জন অথবা দুনিয়ার কোন লাভ (পদ, মর্যাদা, সুনাম, প্রতিপত্তি, ইত্যাদি) পাওয়ার জন্য না হয়; কারণ সহীহ হাদিসে বর্ণিত রয়েছে যে নবী (সাঃ) বলেছেনঃ ধ্বংস হয়েছে সেই দিনার আর দিরহামের গোলাম আর ক্বাতিফাহ্ (পুরু মোলায়েম কাপড়) এবং খামিসাহ (ধনসম্পদ এবং বিলাসী পোশাক) এর গোলাম, কারণ সে খুশী হয় যখন তাকে এইসব দেয়া হয়, আর নাখোশ হয় যখন তাকে এসব দেয়া হয় না। এমন লোক ধ্বংস হোক, আর তার শরীরে যদি কোন কাঁটা ফুটে যায়, সে যেন এমন কাউকে খুঁজে না পায়, যে সেই কাঁটা বের করে দিতে পারে…।[1]

আর আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

مَنْ كَانَ يُرِيدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِينَتَهَا نُوَفِّ إِلَيْهِمْ أَعْمَالَهُمْ فِيهَا وَهُمْ فِيهَا لا يُبْخَسُونَ

أُولَئِكَ الَّذِينَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الآَخِرَةِ إِلاَّ النَّارُ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوا فِيهَا وَبَاطِلٌ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যে কেও পার্থিব জীবন ও তার শোভা কামনা করে, দুনিয়াতে আমি তাদের কর্মের ফল পূর্ণ দান করি এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। তাদের জন্য আখিরাতে অগ্নি ব্যতীত অন্য কিছুই নাই এবং তারা যা করে আখিরাতে তা নিষ্ফল হবে এবং তারা যা করে থাকে তা নিরর্থক।[2]

এবং শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওয়াহাব (রহঃ) এই আয়াতের ভিত্তিতে তার লেখা বই ‘কিতাব আত্-তাওহীদ’-এর একটি অধ্যায়ের নামকরণ করেছেন – ‘পার্থিব স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে কাজ করা শিরকের পর্যায়ভুক্ত’।[3]

শেখ আব্দুর রহমান ইবনে হাসান (রহঃ) তাঁর “কুররাত ‘উইয়ূন আল মুওয়াহিদীন” (এই বইটি কিতাব আত্-তাওহীদের ব্যাখ্যা) গ্রন্থের “বিশুদ্ধ তাওহীদবাদীদের দৃষ্টির প্রশান্তি” অধ্যায়ে বলেছেনঃ “আর এই অবস্থা বহু মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষকদের এবং বহু মুজাহিদীনদের, যারা নিজেদের চেষ্টার বিনিময় হিসেবে কিছু পুরস্কার ও খ্যাতি অর্জন করতে চায়। তাই সাবধান হয়ে যাও, এবং এই অবস্থা থেকে বাঁচার জন্য সাবধানতা অবলম্বন কর, আল্লাহ যেন আমাকে এবং তোমাকে ইখলাস দান করেন।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তোমার এই (’ইলম) সন্ধানের পিছনে নিয়্যত (উদ্দেশ্য) যেন হয় তোমার নিজের মধ্য থেকে জাহিলিয়াতকে (জ্ঞানহীনতা বা মূর্খতা) উৎখাত করা, যাতে করে তুমি জ্ঞান সহকারে আল্লাহ−তা’আলার ইবাদাত করতে পারো; এবং এই উম্মাহর মধ্য থেকেও জাহিলিয়াতকে উৎখাত কর, আল্লাহর দ্বীনের শিক্ষা দিয়ে।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! জেনে রেখো, যে মহান আল্লাহর এই কিতাব মুখস্থ করা একটি সুউচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন আমল এবং একটি অমূল্য অর্জন, কিন্তু এই কিতাবের উপর আমল করা ফারদ (আবশ্যক), ওয়াজিব (অবশ্যকরণীয়) এবং একটা কর্তব্য যা তোমার জন্য বাধ্যতামূলক।

কারণ অবশ্যই, এই যুগে আমরা কিছু মানুষ দেখেছি, যারা কুরআনকে মুখস্থ করা ফারদ (আবশ্যক) করেছে আর এর (হুকুমের) উপর আমল করাকে একটি গুণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাই এটা থেকে সতর্ক থেকো, কারণ এইসব লোকেরাই বহু হুকুমকে রহিত করছে।

আর আমি তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সেই সাহাবীর উক্তি (আব্দুল্লাহ ইবনে মাস্উদ (রহঃ), যিনি বলেছিলেনঃ “আমরা কুরআনের দশটি আয়াত শিখতাম, আর এর বাইরে যেতাম না (এর বেশী আয়াত শিখতাম না), যতক্ষণ না সেগুলো অনুধাবন করতাম ও সেগুলোর উপর আমল করতাম।”[4] সুতরাং তাঁদের সমস্ত কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তুমি সতর্ক হও… এবং আবারও সতর্ক হও… এবং আরও সতর্ক হও, তাক্বলীদ (উলামা বা কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুসরণ)-এর ব্যাপারে, কারণ অবশ্যই এটি একটি মারাত্মক ব্যাধি। এবং তোমার প্রতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে আল-কুরআন ও রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাহকে নিষ্ঠার সাথে আঁকড়ে ধরে রাখা, যেভাবে সঠিক পথে পরিচালিত পূর্বগামী (আস-সালাফ আস-সালিহ) উপলব্ধি করেছিলেন, যদিও সমস্ত মানবজাতি তোমাকে প্রত্যাখ্যান করে।

ইমাম আশ-শাফেঈ (রহঃ) বলেছেনঃ “সকল উলামা, পূর্বের এবং এই সময়ের, এ বিষয়ের উপর একমত (ইজমা) যে যদি কারও নিকট রাসূল (সাঃ)-এর একটি সুন্নাহ স্পষ্ট ভাবে জানা থাকে, তা হলে অন্য কারও কথার (ধারণা, মত বা সিদ্ধান্ত) উপর ভিত্তি করে সেই সুন্নাহকে ছেড়ে দেয়া কোন অবস্থাতেই জায়েয নয়।”[5]

হে ত্বলিব আল-’ইলম! সতর্ক হয়ে যাও মানুষের পবিত্রতা (তাক্বদীস) ঘোষণা করা থেকে এবং অতি মাত্রায় প্রশংসা (তা’ছিম) করা হতে; তার চাইতে বরং আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের (সাঃ) সুন্নাহর মর্যাদা সুউচ্চ করে ধরাকে অন্য সবার থেকে সামনে (অগ্রে) নিয়ে এসো, সে যেই হোক না, আর কারো নামের সাথে জুড়ে দেয়া খিতাব (মুফতি, লাজনাহ ইত্যাদি) দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যেও না।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! নিজের প্রশংসা হতে সতর্ক হয়ে যাও, আর এর দ্বারা প্রতারিত হওয়া থেকে, কারণ নিশ্চয়ই, এই আত্মপ্রশংসা দ্বারাই পুণ্যবান মানুষ ধ্বংস হয়।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! জেনে রেখো যে, সবচেয়ে জরুরি আবশ্যক বিষয়, আর সমস্ত ফারদ বিষয়সমূহের মধ্যে সবচেয়ে ঊর্ধ্বে যেই ফারদ, তা হচ্ছে তাওহীদ। তাই তাওহীদকে তোমার সংশ্লিষ্ট বিষয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত কর; এর জ্ঞান অর্জন কর, সেই জ্ঞান কর্মে (আমলে) পরিণত কর, আর এই দিকেই আহবান কর (দা’ওয়াত দাও)- কারণ অবশ্যই এই তাওহীদ-ই ছিল তোমার অনুকরণীয় রাসূল, মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর দা’ওয়াতের কেন্দ্রবিন্দু।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তোমার সাথে যেই জ্ঞান সন্ধানী ভাইয়েরা রয়েছে, তাদের সাথে পূর্ণ সততার সাথে আন্তরিক থাকো, কারণ অবশ্যই জ্ঞান সন্ধানীদের মধ্যে আমি এমন কিছু লোককেও দেখেছি যাদের মধ্যে মিথ্যাচার চিরস্থায়ী, আর তারা দ্বিমুখিতার জন্য চিহিৃত… আমরা দেখতাম তারা আমাদের সাথে মিলিত হত এক রকম চেহারা নিয়ে, আবার অন্যদের সাথে মিলিত হত অন্য এক চেহারা নিয়ে; আমাদেরকে তারা এক ধরনের কথা বলে, অন্যদের তারা আরেক ধরনের কথা বলত, তারা এখানে কোন কথা সত্যায়িত করলে, অন্য জায়গায় তারা সেই কথাই প্রত্যাখ্যান করত… তাই এ সব লোকদের ব্যাপারে সাবধান হয়ে যাও, তাদের সাথে কোন বৈঠকে মিলিত হবে না বা কোন রকম বন্ধুত্ব স্থাপন করবে না, কারণ অবশ্যই তোমার সহচররা তোমাকে প্রভাবিত করে।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! জিহাদের ময়দানে তোমার প্রয়োজন রয়েছে, আর যুদ্ধের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো তোমার সন্ধানী – তো কোথায় তুমি যখন দুর্বল ও অত্যাচারিত মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন হয়?

হে ত্বলিব আল-’ইলম! অবশ্যই যারা তোমার চারপাশে রয়েছে, তারা তোমাকে উদাহরণস্বরূপ দেখে – তাই তোমার সাথে তাদের সম্পর্ক যেন একটি বাধা না হয়ে দাঁড়ায় (জিহাদে যোগদানে অথবা সাহায্য করা হতে পিছিয়ে থাকার কারণ)।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! সতর্ক হয়ে যাও, এমন অযুহাতসমূহ ব্যবহার হতে, যেগুলো মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাহাবাদের পক্ষ থেকেও গ্রহণযোগ্য ছিল না – আর নিজের ব্যাপারে স্পষ্ট ও আন্তরিক থাকো – কারণ অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে দেখছেন এবং তিনি সমস্ত গোপন বিষয় জানেন।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তুমি আল্লাহ তা’আলার এই উক্তির উপর কি আমল করেছঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا مَا لَكُمْ إِذَا قِيلَ لَكُمُ انْفِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ اثَّاقَلْتُمْ إِلَى الْأَرْضِ أَرَضِيتُمْ بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا مِنَ الْآَخِرَةِ فَمَا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا فِي الْآَخِرَةِ إِلا قَلِيلٌ

إِلا تَنْفِرُوا يُعَذِّبْكُمْ عَذَابًا أَلِيمًا وَيَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ وَلا تَضُرُّوهُ شَيْئًا وَاللَّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

 হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে ভূতলে ঝুঁকে পড়? তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবনে পরিতুষ্ট হয়েছ? আখিরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ তো অতি অল্প। যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দেবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা কখনও তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্ব শক্তিমান।[6]

আর আল্লাহ হুকুম দিয়েছেনঃ

انْفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنْفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ

অভিযানে বেরিয়ে পড়, হালকা অবস্থায় হোক অথবা ভারী অবস্থায় এবং জিহাদ কর আল্লাহ পথে তোমাদের সম্পদ ও জীবন দ্বারা। সেটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে!”[7]

হে ত্বলিব আল-’ইলম! জেনে রেখো, ’ইলম অর্জনকারীর জন্য সাহস একটি অপরিমেয় বাধ্যতা – তাই সাহসী হও এবং সততার সাথে কথা বল, আর কারও সাথে কোন ব্যাপারে আপোষ কর না। আর জেনে রেখো – আল্লাহ তোমাকে সবরকম অনিষ্ট থেকে রক্ষা করুন – শুধুমাত্র সত্যকে গোপন করা এবং এই ব্যাপারে চুপ থাকা হতেঃ আল্লাহ তা’আলা সতর্ক করে দিয়েছেন, তাঁর তরফ থেকে আসন্ন শাস্তির ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে; বরং তিনি অভিশপ্ত করেছেন তাদেরকে[8] আর কারও ক্ষমতা বা শক্তি নাই, একমাত্র আল্লাহ তা’আলার (অনুমতি) ছাড়া। এমনই যদি হয় (তাদের অবস্থা যারা শুধুমাত্র সত্যকে গোপন করে, চুপ থাকার মাধ্যমে) তাহলে তাদের ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম অথবা অবস্থান কি যারা সত্যিকার অর্থে মিথ্যা বলে? এবং আমি তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি আল্লাহর তা’আলার উক্তিঃ

وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنُنَّهُ لِلنَّاسِ وَلا تَكْتُمُونَهُ فَنَبَذُوهُ وَرَاءَ ظُهُورِهِمْ وَاشْتَرَوْا بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا فَبِئْسَ مَا يَشْتَرُونَ

আর (স্মরণ কর), আল্লাহ− যখন আহলে কিতাবদের কাছ থেকে প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করলেন যে, তা (সঠিক জ্ঞান) মানুষের কাছে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করবে এবং তা গোপন করবে না, তখন তারা সে প্রতিজ্ঞাকে অগ্রাহ্য করল ও তুচ্ছ মূল্যে বিক্রয় করে; সুতরাং তারা যা ক্রয় করে তা কত নিকৃষ্ট![9]

আর অবশ্যই আমরা এমনও ’ইলম এবং বোধ শক্তি সম্পন্ন ব্যক্তিদের দেখেছি, যারা কাপুরুষতা, দুর্বলতা ও ভীতি দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে, যখন তাদের দিকে আঙ্গুল দেখানো হয়। তা হলে ’ইলম কি কাজে এলো যদি তার উপর আমলই না করা হয়? আর অবশ্যই, এরা (পুতুল-স্বরূপ আলেমরা) বহু মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে; আর রাসূল (সাঃ)-এর উক্তিটি কতই না সত্য, যখন তিনি বলেছিলেনঃ আমি আমার উম্মতকে নিয়ে আর কোন বিষয় নিয়ে ভীত না একমাত্র বিভ্রান্তির দিকে আহ্বানকারী ইমামদের (নেতা, আলেম) বিষয় ছাড়া।[10]

হে ত্বলিব আল-’ইলম! সালাত্বীনদের (সুলতান, রাজা, শাসকগণ, ইত্যাদি) সংস্পর্শে যাওয়া থেকে সতর্ক হয়ে যাও কারণ সহীহ সনদে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে যে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ “যে কেউ সুলতানের কাছে যাওয়া আসা করে, সে (অবশ্যই) ফিতনায় কবলিত হবে।[11]

তাহলে তুমি কি আশা কর – হে জ্ঞানের সন্ধানী – এই ত্বাওয়াগীতদের কাছ থেকে, যারা বল প্রয়োগে শাসনের মাধ্যমে, দাম্ভিকভাবে সর্বস্থানে মানবজাতিকে অত্যাচারিত এবং বশীভূত করে রেখেছে, আল্লাহ− বিধানকে মুছে ফেলেছে এবং সর্বত্র মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের সাহায্যকারী হয়েছে, মুসলিমদেরকে শাসন করছে মানব রচিত আইন দ্বারা আর হুদুদ (আল্লাহ প্রদত্ত শাস্তির বিধান)-কে রহিত করেছে… আরও বহু ধর্মদ্রোহী কর্মে লিপ্ত হয়েছে; তাই তাদের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাও আর সতর্ক হয়ে যাও সরকার দ্বারা নিযুক্ত উলামাদের ব্যাপারে যারা তাদের সাথে বৈঠকে মিলিত হয় – যারা তাদের ’ইলমকে অপবিত্র করেছে আল্লাহর শত্রুদের সংস্পর্শে এসে এবং তাদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে। শুধু তাই নয়, তারা অংশ নিয়েছে ও যোগদান করেছে তাদের সাথে, সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার কাজে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার কাজে এবং তাদের মিথ্যাকে সৌন্দর্যমন্ডিত করার কাজে।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেও না, যারা শাবাব (তরুণদের) দোষ দেয় – কোন হালাকা, আসর, বিরতি কিংবা ক্লাসের সময় – তাদের মস্তিষ্ককে অসাড় করে দেয় যার কারণে তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য এগিয়ে যেতে পারে না, যেন তারা কোন না কোন কারণে সত্যের একটি শব্দও উচ্চারণ করতে পারে না; বা যাতে করে তারা একজন অত্যাচারী শাসককে “হে অত্যাচারী শাসক” কিংবা কোন কাফিরকে “হে কাফির” বলেও সম্বোধন না করে।

এবং আমি তোমাকে আন্তরিকভাবে পরামর্শ দিচ্ছি – যদি তুমি শাবাবদের উপর কোন দায়িত্বে থেকে থাকো – তাহলে (জেনে রেখ) তোমার অবশ্যই ঈমানদারদের লড়াই করার জন্য উৎসাহিত করা উচিত, এখানে (এই আরবের ভূমিতে) অথবা অন্যথায় (ইরাক, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, চেচনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইত্যাদি) অথবা প্রকাশ্যভাবে এই মিল্লাত সম্পর্কে জানিয়ে দেয়া এবং সব কারণসমূহ পরিষ্কার করে দেয়া… তা না হলে, তোমার উচিত অন্যদেরকে নিজের স্থানে (যারা এই দায়িত্বের জন্য উপযুক্ত) এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেয়া, আর নিজের অজান্তে দায়িত্ব পরিত্যাগ করে পলায়নকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেও না।

আর আল্লাহর কসম! শুধুমাত্র নিজের জন্য দায়ী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা তোমার জন্য অধিকতর ভাল, এমন মৃত্যু থেকে যখন তুমি আল্লাহর কাছে ইসলামের তরুণদের বিভ্রান্ত করা এবং তাদেরকে জিহাদে যোগদানে বাধা দেয়ার দায়ে দায়ী – আর কোন ক্ষমতা কিংবা শক্তি নেই, একমাত্র আল্লাহ তা’আলার (অনুমতি) ছাড়া।

এবং আমি তোমাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি তোমার আদর্শস্বরূপ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর কথা, যখন তিনি কাবার চারপাশ দিয়ে তাওয়াফ করছিলেন, আর তিনি ছিলেন সম্পূর্ণভাবে একা ও দুর্বল, যখন তারা (মুশরিকরা) তাঁকে তীব্রভাবে গালমন্দ করছিল এবং তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছিল – তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেনঃ “হে কুরাইশের লোকেরা শুনে রাখোঃ তাঁর কসম যাঁর হাতের মুঠোয় মুহাম্মাদের প্রাণ রয়েছে, আমি তোমাদের কাছে এসেছি তোমাদেরকে হত্যা করার জন্য।” এই সম্পূর্ণ ঘটনাটি ইমাম আহমদ তাঁর মুসনাদ-এ বর্ণনা করেছেন।[12]

হে ত্বলিব আল-’ইলম! আমি সংক্ষিপ্ত কথায় তোমাকে জানিয়ে দিচ্ছি যে – তুমি যদি তোমার রাসূল (সাঃ)-কে প্রত্যেকটি বিষয়ে অনুসরণ কর আর সবসময় সততার সাথে কথা বল, তাহলে শীঘ্রই তোমাকে নানান কষ্ট দ্বারা পরীক্ষা করা হবে। আর ইবতিলা (পরীক্ষা, ক্লেশ, ইত্যাদি) হল মানুষের ঈমানের অবস্থান বা স্তর অনুযায়ী – যেভাবে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমাদের জানিয়েছেন;[13] এবং যেভাবে আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ

أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آَمَنَّا وَهُمْ لا يُفْتَنُونَ

মানুষ কি মনে করে যে, আমরা ঈমান এনেছি এই কথা বললেই তাদেরকে পরীক্ষা না করে অব্যাহতি দেওয়া হবে?[14]

জেনে রেখো যে, যখন তোমার সময় হবে, (পরীক্ষিত হবার নানান ক্লেশ এবং কষ্ট দ্বারা) তখন অন্যান্য ’ইলম শিক্ষাকারী ছাত্ররা তোমার বিরুদ্ধে সাবধান করবে, আর একইভাবে ওই সমস্ত সরকার দ্বারা নিযুক্ত উলামারাও (তোমার বিরুদ্ধে সকলকে সাবধান করবে) আর তোমাকে তখন পরিত্যাগ করা হবে, কুৎসা করা হবে এবং তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা হবে, আর তোমার ব্যাপারে বলা হবে যে তুমি খাওয়ারিজদের মধ্যে একজন – আরও এমন বহু অভিযোগ আনা হবে যেগুলো এখন আনা হয় সমস্ত বশীভূত এবং অত্যাচারিত তাওহীদ আহবায়কদের বিরুদ্ধে। তাই সবর (ধৈর্য ধারণ) কর, কারণ আল্লাহ বলেছেনঃ

  إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا

কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি আছে, অবশ্যই কষ্টের সাথেই স্বস্তি আছে।[15]

হে ত্বলিব আল-’ইলম! সতর্ক হয়ে যাও তাদের ব্যাপারে যারা কুফফারদের সাথে সহ-অবস্থানের দিকে আহবান করে। ঐসকল পরাজিত বিশ্বাসঘাতকদের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাও। সতর্ক হয়ে যাও তাদের ব্যাপারে এবং প্রতারিত হয়ো না তাদের মধু আচ্ছাদিত কথা দ্বারা যা আসলে তাদের ভেতরের মারাত্মক বিষকে লুকিয়ে রাখে, আর তাদের আলোচনাসমূহ এবং সেখানে যোগদানকারীদের দেখে তুমি প্রতারিত হয়ে যেও না। তাদের ব্যাপারে এতটুকু বলা যায় যে তুমি তাদেরকে আহল বিদ্’আ (ভ্রান্ত বা নবোদ্ভাবিত পথের অনুসারী) হিসেবে গণ্য করবে। এবং আমাদের আস-সালাফ আস-সালিহ (সত্যানুসারী পূর্বপুরুষগণ) তাদের ব্যাপারে সাবধান করেছেন; তাই উদাহরণের জন্য ইবনে ওয়াদ্দাহ-র লিখিত ‘কিতাব আল-বিদ্’আ’ দ্রষ্টব্য।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! সবসময় মনোনিবেশ করবে আমাদের রবের কিতাব এবং রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাহর দিকে এবং গভীরভাবে এই দুইটি নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা কর, কারণ অবশ্যই এই দুইয়ের মধ্যেই রয়েছে প্রচুর উৎকর্ষতা এবং মঙ্গল।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! তুমি তোমার ভাইদের সাথে মাসাইল (দ্বীন সংক্রান্ত বিষয়সমূহ) নিয়ে আলাপ, অধ্যয়ন, শিক্ষা, মত বিনিময়, আলোচনা এবং বিতর্ক করতে আগ্রহী হবে – কারণ, অবশ্যই আলাপ আলোচনা ছাড়া মাসাইল এর ব্যাপারে রুসুখ (দৃঢ়, গভীর জ্ঞান) অর্জন করা যায় না।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! এমন যেন একটা সময় থাকে যখন তমি তোমার রবের সাথে একাকী থাকতে পারো এবং তাঁর শব্দাবলী অধ্যয়ন করতে পারো, তাঁকে নিষ্ঠার সহিত ডাকতে পারো – কারণ বস্তুতঃ, অবশ্যই দু’আ (আল্লাহকে ডাকা ও তাঁর কাছে চাওয়া) ইবাদত সমূহের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত, যেভাবে সহীহ সনদে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ আদ্-দুআ হচ্ছে ইবাদাহ।[16]

হে ত্বলিব আল-’ইলম! সমস্ত অসৎ আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক হয়ে যাও এবং তাদের আলোচনা সভাগুলোয় যোগদান করা থেকেও – কারণ, নিশ্চয় তারা দুষ্টচক্রে এবং বিভ্রান্তিতে লিপ্ত, যারা জনসাধারণকে গোমরাহ করেছে, আর তারা এই শাসকদের সাথে অংশ গ্রহণ করেছে মুসলিমদের ভূমিসমূহ বিক্রি করে দিতে, এমনকি তাদের পবিত্র ভূমিগুলোও (মক্কা, মদিনা এবং আল-কুদস)।

যেখানে আমরা দেখছি যে আল-কুদস (জেরুজালেম) ৫০ বছরের অধিক সময় ধরে ইহুদীদের কবলে – অথচ কি করেছে এই সুলতানদের ‘উলামাগণ’ (মুসলিমীনদের কাছে আল-কুদস ফিরিয়ে আনার জন্য)? এই যে এতসব সমিতি, যেগুলোর নাম, ‘হায়াত আল-কিবার আল-উলামা’ (প্রবীণ পণ্ডিতদের পরিষদ) এবং ‘আল-লাজনাহ্ আদ্-দাইমাহ্’ (স্থায়ী সদস্যদের সমিতি)… কারা এগুলোকে তৈরি করেছে? এবং কারা এগুলোর সদস্যদের নির্বাচিত করেছে? কারা এদেরকে নিয়োগ করেছে? নিঃসন্দেহে, (এর উত্তর) হচ্ছে এই বিশ্বাসঘাতক শাসকগোষ্ঠী।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! এই সকল ‘আলেমগণ’, যাদের সাথে ইসলামের শাবাব দৃঢ়ভাবে লেগে থাকে; তাদেরই অন্তর্ভুক্ত যারা স্বচ্ছভাবে ঘোষণা দেয় এবং বলে যে, ‘কোন শত্রুতা নেই মুসলিমীন এবং অন্যান্যদের মাঝে’। আর কিছু (শাসকগোষ্ঠী দ্বারা নিযুক্ত) ‘আলেমগণ’ এমনও আছে যারা সংসদসমূহকে একত্রিত করার উদ্দেশ্যে খ্রিস্টানদের ভূমিতে গমন করে আর তাদেরকে যখন ইউরোপীয় চরিত্রহীন নারীদের দ্বারা স্বাগতম জানানো হয়, তখন এই ব্যাপারটি তাদের কাছে সাধারণভাবে গ্রহণযোগ্য একটি বিষয়ের মতই থাকে এবং অন্যান্যরা এমনও আছে যারা বলেঃ “সব মানুষ যদি জিহাদে চলে যায়, তাহলে সমস্ত বিপণীকেন্দ্রগুলোতে ব্যবসা চালানোর জন্য কারা বাকি থাকবে…” এবং অন্য আরেকজন আল্লাহ তা’আলার (কথার) উপর কথা বলার চেষ্টা করে বলে, ‘ওয়ালী আল-খামরের[17] অনুমতি ছাড়া (লড়াই করতে গিয়ে) যারা নিহত হয়েছে আফগানিস্তানে, তারা শহীদ হতে পারে না।’ এবং তাদের শীর্ষ নেতা বলেঃ ‘আমেরিকানরা নিরপরাধ মানুষ…’ আবার অপর আরেকজন বলেঃ ‘আমেরিকানদেরকে রক্ত দান করা জায়েয…’ আরও এমন বহু উদাহরণ রয়েছে। এবং এরপরও, অন্য এমনও আছে, যারা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করে, কি করে প্রতি সপ্তাহে ত্বাওয়াগীতদের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা যায়।

এবং নিশ্চয় আমরা এই সব লোক এবং প্রবীণদের কাছে গিয়ে তাদেরকে আন্তরিকভাবে পরামর্শ দিয়েছি, তাদের সাথে আলাপ করেছি, বিতর্ক করেছি – কিন্তু এই সবে কোন মঙ্গলজনক ফল আমরা পাইনি – আর কারো কোন ক্ষমতা বা শক্তি নেই, একমাত্র আল্লাহর (অনুমতি) ছাড়া।

হে ত্বলিব আল-’ইলম! আমি তোমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে প্রশ্ন করছি – ইসলামে খ্যাতি সম্পন্ন উলামাদের অবস্থা কি এমন হবার কথা ছিল? নাকি এ অবস্থা হতে পারে একমাত্র ত্বাওয়াগীতদের নিযুক্ত পুতুল স্বরূপ উলামা এবং চাটুকারদের দ্বারা?!

আর উপসংহারে আমি আল্লাহ তা’আলার কাছে এই কামনাই করছি যে, আমার এ কথাগুলো যেন পাঠকের জন্য কল্যাণকর হয়, এবং উম্মাহর মধ্যে গ্রহণযোগ্য হয়। এবং আমি আল্লাহ তা’আলার কাছে এই দোয়া করি, তিনি যেন তোমাকে বাসীরাহ (দূরদৃষ্টি এবং গভীর জ্ঞান) দান করেন এবং তার উপর আমল করার ক্ষমতা দেন, আর তুমি যেখানেই থাকো তোমার উপর যেন আল্লাহর বরকত থাকে, এবং তিনি যেন তোমাকে সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত করেন।

এবং সমাপ্তিতে, আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট তাঁর পথে শাহাদাতের মৃত্যু চাই, যাতে করে তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট হন এবং এর কারণে আমাদের উদ্দেশ্য করে হাসেন – নিশ্চয়ই তিনি সবকিছু শ্রবণকারী, (দু’আর) উত্তরদাতা, পরম দয়ালু এবং মহান।

এবং শেষ প্রার্থনা এই যে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার, যিনি সমস্ত সৃষ্টি জগতের মালিক।

  • লাইলাত আল-জুমু’আ, বৃহস্পতিবার রাতে লিপিবদ্ধ করা হয়। ২৮শে রজব, ১৪২৪ হিজরি (২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০০৩)
  • “আবু আব্দুর রহমান আল-আসারী”

(সত্যিকার পরিচয়- শাঈখ সুলতান আল-উতাইবি, ১৭ই যুল-ক্বদাহ, ১৪২৫ হিজরি (বুধবার, ২৯শে ডিসেম্বর, ২০০৪) তারিখে আরবের ভূমি থেকে মুশরিকদেরকে বহিষ্কার করার সংগ্রামে নিয়োজিত থাকা কালীন শাহাদাত বরণ করেন।)

[1] অনুবাদকের টীকাঃ বুখারী (৬/৬১) কিতাবুল জিহাদ, আরও দ্রষ্টব্য ইবনে মাযাহ (৪/১৩৫ এবং ৪/১৩৬) কিতাবুয যুহুদ। সম্পূর্ণ হাদিসটি এইভাবে শেষ হয়, “…তুবা (জান্নাতের একটি গাছ) তাঁর জন্য যার চুল এলোমেলো এবং গা ধুলোয় ঢাকা অবস্থায় সে ঘোড়ার লাগাম ধরে রাখে, আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য; তাকে যদি সেনাদলের অগ্রগামীদের মধ্যে দেয়া হয়, সে তার এই পাহারা দেয়ার পদ নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্টি থাকে, আর তাকে যদি কোন পশ্চাতের দায়িত্ব দেয়া হয়, সেই পদকেও সে সন্তুষ্টির সাথে গ্রহণ করে নেয়; (সে এমনই সাধারণ এবং নগণ্য যে) সে যদি কারও কাছে অনুমতি চায়, তাকে সেই অনুমতি দেয়া হয় না, এবং সে যদি কোন ব্যাপারে সুপারিশ করে, সেই সুপারিশও নামঞ্জুর হয়ে যায়।”

[2] সূরা হুদ ১১:১৫-১৬

[3] অনুবাদকের টিকাঃ ‘কিতাব আত্ তাওহীদ’ (পৃঃ ১৩৩-১৩৫), শেখ আবদুল ক্বাদির আল-আরনা’উত (রহঃ)-র পাদটীকা সহ দ্রষ্টব্য, প্রকাশকঃ মাকতাবাহ দারুস-সালাম, রিয়াদ, ১৪১৩ হিজরি।

[4] এই হাদিসের কথার সদৃশ হাদিস বর্ণিত রয়েছে ইবনে আসাকির এর তারীখ দামিশক ইবনে মাসুদের জীবনী (পৃঃ ৯৩-৯৪)-এ, সহীহ সনদ সহ, এবং আয্-যাহাবীর আস্-সিয়ার (১/৪৯০), আরও দ্রষ্টব্য আল্-জামি’ লি-আহকাম আল-কুরআন (১/৩৯)।এরই সদৃশ ইমাম শাফেঈ-র কিছু কথা উল্লেখিত রয়েছে ইলাম্ আল্ মুওয়াক্কীন -গ্রন্থে (২/২৬৩)।

[5] এরই সদৃশ ইমাম শাফেঈ-র কিছু কথা উল্লেখিত রয়েছে ইলাম আল-মুওয়াক্কীন গ্রন্থে (২/২৬৩)

[6] সুরা তাওবাহ ৯:৩৮-৩৯

[7] সূরা তাওবাহ ৯:৪১

[8] অনুবাদকের টীকা: দ্রষ্টব্য সূরা বাকারা ২:১৫৯

[9] সূরা আলি ইমরান ৩:১৮৭

[10] অনুবাদকের টীকা: দ্রষ্টব্য ইবনে কাসীর (৩/২৬৮), যেখানে তিনি এই হাদিসটিকে “উত্তম, শক্তিশালী,’ (জাই্ইদ, ক্বাওয়ী) হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। ইবনে তাইমিয়্যার ইক্বতিদা আস-সিরাত আল-মুসতাক্বীম (১/১৪২)এ এবং আল ইরাক্বীর লিখিত ‘তাখরীজ আল ইহয়া’তে এই হাদিসের বর্ণনা পাওয়া যায়। সহীহ আল-জামী’ (১৭৭৩ এবং ২৩১৬)-তে আল-আলবানী দ্বারা এবং মিশকাত-আল-মাসাবীহ (২৫৯)-তে এই হাদিসটিকে সহীহ হিসেবে আখ্যায়িত হয়েছে।

[11] সহীহ আল-জামী’ (৬২৯৬ এবং ৬১২৪) দ্রষ্টব্য যেখানে আল-আলবানী এ হাদিসটিকে সহীহ হিসেবে ঘোষিত করেছেন, এবং মিশকাত আল-মাসাবীহ (৩৬২৯)-এর এবং এরই সদৃশ একটি হাদিসের বর্ণনাকে আল-আলবানী সহীহ আন-নাসাঈ (৪৩২০)-তে সহীহ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন, যাতে বর্ণিত, “…যে কেউ সুলতানকে অনুগমন করবে, সে (অবশ্যই) ফিতনা দ্বারা কবলিত হবে।”

[12] ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল দ্বারা বর্ণিত, তার মুসনাদ-এ (১১/২০৩, #৭০৩৬)। ইমাম আহমদ শাকীর এই হাদিসের সনদকে সহীহ ঘোষিত করে বলেছেন, “ইসনাদুহু সহীহ”। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে ইবনে হাজার আল-হাইতামী মুজমাহ আয-যাওয়াইদ (৬/১৫-১৬) এ এই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, এবং আল-ফাতহ (৭/১২৪)-এ ইবনে হাজার আল-আসক্বালানী এই হাদিসটির ব্যাপারে ইঙ্গিত করেছেন, এবং ইবনে কাসীর উল্লেখ করেছেন যে আত্-তারীখ (৩/৪৬)-এ আল-বাইহাক্বী এটি বর্ণনা করেছেন।

[13] সহীহ সনদের আল-বুখারী এবং মুসলিম-এ সা’দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস (রাঃ) দ্বারা বর্ণিত যে, তিনি বলেছেন যে, “আমি প্রশ্ন করলামঃ হে রাসূল (সাঃ)! মানুষের মধ্যে সবচাইতে কঠিন ক্লেশ দ্বারা কারা কষ্ট পাবে? তিনি রাসূল (সাঃ) উত্তর দিলেনঃ রাসূলগণ, তারপর সত্যনিষ্ঠ লোকেরা, তারপর তারা যারা সত্যনিষ্ঠায় তাঁদের সবচেয়ে কাছাকাছি, তারপর তাঁরা যারা সবচেয়ে বেশি তাঁদের (পূর্ববর্তীদের) মত। একজন মানুষকে তার দ্বীনদারী অনুযায়ী পরীক্ষা করা হয়। তাই তার তরফ থেকে যদি সত্যিকার তাক্বওয়া এবং আল্লাহর− হুকুমের বাধ্যতা লক্ষ্য করা হয়, তাহলে তার উপর পরীক্ষা এবং ক্লেশ বাড়িয়ে দেয়া হয়; আর তার বাধ্যতা এবং তাক্বওয়ার ক্ষেত্রে যদি দুর্বলতা দেখা দেয়, তাহলে (তার পরীক্ষা এবং ক্লেশ সমূহ) কমিয়ে দেয়া হয়, এবং ঈমানদার ব্যক্তিকে সর্বক্ষণ পরীক্ষা করা হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত সে পৃথিবীর বুকে পদচারণ করে, তার উপর কোন গুনাহের দায় ছাড়া।

[14] সূরা আনকাবুতঃ ২

[15] সূরা আশ-শারহ ৯৪:৫-৬

[16] সহীহ আল-জামী’ (৩৪০৭)-তে আল-আলবানী দ্বারা সহীহ হিসেবে আখ্যায়িত এবং সহীহ আত্-তারগীবের (১৬২৭) এবং একইভাবে রয়েছে সহীহ আল-আদাব আল-মুফরাদ (৫৫০)-এ।

[17] অনুবাদকের টীকা: যদিও সউদী তাগুত শাসকদের ওয়ালী আল-আমর, অর্থাৎ ‘যিনি মুসলিমদের সার্বিক বিষয়ে অভিভাবক’, বলা হয়, লেখক এখানে তাকে ‘ওয়ালী আল খামর’, অর্থাৎ ‘মদের হেফাজতকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

eighteen − thirteen =

Back to top button