অডিও ও ভিডিওঅডিও ও ভিডিও [আন নাসর]আন-নাসর মিডিয়ানির্বাচিতনির্বাচিত প্রকাশনামিডিয়া

শতাব্দীর চুক্তি নাকি বহু শতাব্দীর ক্রুসেড?- পর্ব – ২ || শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ || bengali-translation

مؤسسة النصر
আন নাসর মিডিয়া
An Nasr Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

صفقة القرن أم حملات القرون (الحلقة الثانية)
শতাব্দীর চুক্তি নাকি বহু শতাব্দীর ক্রুসেড?- পর্ব – ২
Deal of the Century or the Crusade of the Century (Episode 2)

للشيخ أيمن الظواهري – حفظه الله
শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ
By Sheikh Ayman al-Zawahiri (May Allah Protect Him)

 

 

 

 

 

 

 

للمشاهدة المباشرة والتحميل
সরাসরি দেখুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Viewing and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/shotabdir_cukti-2
লিংক-২ : https://mediagram.me/d3cf71d6b53720fc
লিংক-৩ : https://noteshare.id/GPbDnED
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20220822011214/https://justpaste.it/shotabdir_cukti-2
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20220822011300/https://mediagram.me/d3cf71d6b53720fc
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20220822011510/https://noteshare.id/GPbDnED

روابط الجودة الاصلية
FULL HD 1080 (726 MB)
মূল রেজুলেশন [৭২৬ মেগাবাইট]

 

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/Q4KrwTmKeyfNsS6
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20HD.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh388a0a04171249f58233226dbc24c6bb
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=s5e4e9y6y8
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/6b53aae4-7492-4e52-928b-3c7aab8af9de/63d0c5e40a13b48536687f709d09f35743affd4483fa9b383f98271ac3975dd0

 

روابط الجودة العالية
HQ 1080 (528 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [৫২৮ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/4aFmycPigKfnkEn
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20-1080%20.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh736d8e73107d484198c04ebc8c6d1879
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=r7b2c7p3r9
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/3733baf9-7139-47fb-b5ae-7c7f580e145a/a925e37c544b71a30138d6c00733325316cb318a04f6e678abed72dd7ebfcdf0

روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (189 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১৮৯ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/CL73wsDY2B3j8TQ
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20-720%20.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykhce1fa86a3d10407bb540bb687cbe82f2
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=s9k4j2f5f1
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/66500b74-5a7b-46b0-9916-ee3fa25f1cbe/9617e5d6fd7254099aa1724eb66db5ba4e82928505e96a4e16fe0c19ffca259a

روابط الجودة المنخفضة
LQ 360 (69 MB)
৩৬০ রেজুলেশন [৬৯ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/isqqqzmT5GsAZqa
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20-360%20.mp4
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh9b03b48a626f40df9d9817ce2cbf70f1
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=x6c2u4i1x7
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/b09e54a7-8707-4bf3-b654-37576ce466e9/eaaea37cf1c077d8f31e29b03250eb490d41b3a47915d3ada4c8b211e8ec2818

روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (90 MB)
3GP রেজুলেশন [৯০ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/5KzsTsRndGxmotS
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20.3gp
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykhbab0337a50be43f9a3974e8df718565f
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=q6r4j0u2l2
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/9ef5c61a-82ab-488f-ace4-d231fe66c166/9c817f34ac0d08e4ef59fac15c0b1b16d5bc894a323cbe3b29867b1105c821b3

روابط بي دي اب
PDF (734 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭৩৪ কিলোবাইট]

 

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/MBiJH8BKdErreM4
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2.pdf
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh8448f84c6de843aca879f1cd1a5a550a
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=w9v1j8w3z4
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/9fa3eae6-9438-4208-a21a-8ea55885a964/c9c12cfbca142228b4b7a50c8f4652bde1810b923e66d5154483b858b1ae69d3

روابط ورد
Word (3 MB)
ওয়ার্ড [৩ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/tNbaqppi8kLBftj
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2.docx
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh33148dd37abc480183549d872e8c4007
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=m7l7y0f1v3
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/238d84bf-b19b-43d7-ad16-42c72ae4697c/0b9acc5a4374f130d9e807a54b1dcdbd47d2a45275e1865eada2b53033605213

روابط الغلاف- ١
book Banner [4 MB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৪ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/56NRS6GsSHFjtnS
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20Book%20Cover.png
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh26ed2ebc8d6d4fd1ae8fab32fda39a92
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=e4l4t8k1d7
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/21e1405a-c631-4608-9135-13b153a337d3/4abb884ec9e44b69c4ae9479a3f292cd03cec5de08d4471930442bc95ac10f1c

روابط الغلاف-٢
Banner [651 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [৬৫১ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/HbzHnNDHwfC3zLy
লিংক-২ : https://archive.org/download/sotabdir_chukti_2/SotabdirChukti-2%20banner.png
লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/2mykh45616885935a4256b5315ebb5e9f740d
লিংক-৪ : https://www.idrive.com/idrive/sh/sh?k=p5t7x4s0e1
লিংক-৫ : https://drive.internxt.com/sh/file/7d500acb-ec8b-4488-a6a2-41484babf1ad/ab1a7115a54836e193accd0911e265703a380c76b016cc6fd282c774b326a972

 

*******

 

 

শতাব্দীর চুক্তি

নাকি

বহু শতাব্দীর ক্রুসেড?

 

পর্ব – ০2

 

শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য

মূল নাম:

صفقة القرن أم حملات القرون (الحلقة الثانية) : للشيخ أيمن الظواهري حفظه الله

ভিডিও দৈর্ঘ্য: 1:04:10 মিনিট

প্রকাশের তারিখ: জুমাদাল উখরা, ১৪৪৩ হিজরি

প্রকাশক: আস সাহাব মিডিয়া


[প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে মুসলিমদের পবিত্র ভূমি ‘ফিলিস্তিন’কে দখল করে রেখেছে জায়নবাদি ইসরাইল। প্রতিনিয়ত মুসলিম পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করে ‘গাযা অঞ্চল’ অধিকৃত করে নিয়েছে। এমতাবস্থায় ২০২০ সালের ২৮শে জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে পাশে নিয়ে কথিত একটি ‘শান্তি পরিকল্পনা’ প্রকাশ করে। সেখানে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করা এবং অধিকৃত গাযা ও পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। এটিই শতাব্দীর নিকৃষ্ট শান্তি চুক্তি- যা মুসলিম উম্মাহ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে]

 

بسم الله والحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله وآله وصحبه ومن والاه

সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার, সাহাবায়ে কেরাম এবং তার সকল ‍অনুসারীদের উপর।

সমগ্র পৃথিবীর মুসলিম ভাই ও বোনেরা!

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

গত অধিবেশনে আমি সংক্ষিপ্তভাবে ইসলাম ও ক্রুসেডের মধ্যকার দ্বন্দ্বের কতিপয় প্রধান দিক নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমি ক্রুসেডারদের মোকাবেলা করার সম্ভাব্য কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আমি আরও উল্লেখ করেছিলাম যে, বুঝার সুবিধার্থে এই আলোচনাকে কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হবে।

প্রথমত: দাওয়াত সচেতনতার জিহাদ।

দ্বিতীয়ত: প্রতিরোধ জিহাদ এবং শত্রুকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জিহাদ।

আমি ‘দাওয়াত ও সচেতনতার জিহাদ’ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমি আরও উল্লেখ করেছিলাম, যেহেতু এই আলোচনাটি বেশ বড় তাই বিষয়টিকে সংক্ষিপ্ত ও সহজ করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি পয়েন্টের ভিত্তিতে আলোচনা করা হবে। আমরা ধারাবাহিক ভাবে নিম্নলিখিত পয়েন্টগুলোর উপর আলোকপাত করব ইনশা আল্লাহ।

সচেতনতা তৈরির জিহাদ

উম্মাহর তরবিয়ত ঠিক করার জিহাদ

দাওয়াতের লড়াই

রাজনৈতিক জিহাদ

-(উম্মাহর) ঐক্যের গুরুত্ব

আমি ‘সচেতনতা তৈরির জিহাদ’ – এই পয়েন্টটি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আরও বলেছিলাম যে, বিষয়টিকে বুঝার জন্য নিম্নলিখিত ৩ প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়টি বিশ্লেষণ করব:

১ম প্রশ্ন: আমাদের প্রকৃত শত্রু কারা?

২য় প্রশ্ন: ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা (আল্লাহর জন্যই বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্যই শত্রুতা)’ –এর আকীদাকে আমরা কীভাবে আমাদের জীবন যাপনের পদ্ধতি হিসেবে গ্রহণ করবো?

৩য় প্রশ্ন: আমরা কাকে আমাদের পথ প্রদর্শক ও আমির হিসেবে গ্রহণ করবো?

“আমাদের প্রকৃত শত্রু কারা?” এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আমি পশ্চিমাপন্থী রাষ্ট্রগুলো নিয়ে আলোচনা করেছি। ঐ সকল রাষ্ট্র নিয়েও আলোচনা করেছি যারা দাবি করে, তারা উম্মাহর পক্ষে লড়াই করছে, অথচ ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে তারাই কার্যকরি ভূমিকা পালন করছে। এরপর তাদের গণমাধ্যমগুলো কীভাবে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করছে সে সম্পর্কেও আলোচনা করেছি। এরপর আল জাজিরা চ্যানেলে (“اللاعبون بالنار -আগুন নিয়ে খেলাকারী)” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিওকে[1] উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছি।

আলোচনার বিন্যাস ছিল এমন;

– (আল জাজিরা কর্তৃক) বিভ্রান্তি ছড়ানো ও বাস্তবতা গোপন করা

– আল-কায়দার বিরুদ্ধে আল জাজিরার মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার পূর্বের কোন ইতিহাস আছে কি?

– কেন আল জাজিরা অপবাদ ছড়ানোর অভিযানে যুক্ত হল? অর্থাৎ আল জাজিরা ও আল-কায়দা সংগঠনের মধ্যকার বিরোধ কী নিয়ে?

অতঃপর আমি মিথ্যা প্রচারণার মাধ্যমে জনমত নষ্ট করার জন্য আল জাজিরা যে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা করেছি। তাদের দাবি; আল কায়দা বাহরাইন ইন্টেলিজেন্সের হয়ে কাজ করছে।

আজকের আলোচনায় আমি আল জাজিরা কেন সত্য গোপন করছে এবং কোন লক্ষ্যে তারা মুজাহিদদের প্রতি অপবাদ দিচ্ছে – তার কিছু বাস্তবতাও তুলে ধরার চেষ্টা করবো।

এখানে মোটাদাগে তাদের দুটি বক্তব্য আছে;

এক. মুজাহিদরা বিশ্বাসঘাতক, তাই তাদের পরিত্যাগ কর।

দুই. ইজরাইলিরা হল শান্তিকামী, তাই তাদের সাথেই থাক।

আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করে আমার মূল আলোচনা শুরু করছি। আল্লাহই একমাত্র তাওফিক দাতা।

আল জাজিরা বাস্তবতাকে প্রকাশ না করে গোপন করছে দুটি কারণে ।

প্রথমত: আল জাজিরার মালিকপক্ষ হচ্ছে কাতার। আর কাতার আমেরিকার শতভাগ অনুগত রাষ্ট্র।

দ্বিতীয়ত: মুসলিম বিশ্বের বুকে ‘যায়নবাদ’ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কাতারের অন্যতম ভূমিকা রয়েছে।

প্রথম বিষটির বিষয়ে কথা হল:

যদি আমরা কাতার নিয়ে আলোচনা করি তাহলে আমরা দেখব – কাতার রাষ্ট্রটির দুটি রূপ রয়েছে। একটি হল ‘আদ দাওলাতুল হাকিকিয়্যাহ’ (এটি হল অভ্যন্তরীণ এবং বাস্তব রূপ) আর দ্বিতীয়টি হল ‘আদ দাওলাতুল ওয়াহমীয়্যাহ’ বা ‘আদ দাওলাতুস শিকলিয়্যাহ’ তথা; বাহ্যত রূপ।

কাতারের অভ্যন্তরীণ রূপ:

কাতারের অভ্যন্তরের ব্যবস্থাপনা যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। এটাকে সংক্ষেপে CENTCOM (United States Central Command)[2] বলা হয়। আমেরিকান এই নেতৃত্ব ব্যবস্থা মিশর থেকে মধ্য এশিয়া হয়ে আফগান পর্যন্ত বিস্তৃত। অপর দিকে এই বাহিনী তুর্কি থেকে নিয়ে ‘দিয়েগো গার্সিয়া (Diego Garcia) উপদ্বীপ পর্যন্ত কাজ করছে।

উক্ত CENTCOM এর অধীনে কাতারের একাধিক ঘাটিতে আমেরিকান বিমান বাহিনীর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কাতারের বিভিন্ন জায়গায় এই বাহিনী ছড়িয়ে আছে। কাতারের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ‘ক্যাম্প সানোবি’ এবং ‘সাইলিয়্যাহ সেনানিবাস’, উম্মে সাঈদ অঞ্চলের জ্বালানি আমদানীর স্থানে, উম্মে সালানা অঞ্চলে বৈদেশিক মালামাল আমদানির স্থানে – এসকল ঘাটি অবস্থিত। CENTCOM যে সকল অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তার মধ্যে – উপসাগরীয় অঞ্চল, তুরস্ক, ইরাক, মিশর, ইসরাইল, জর্ডান, ইয়েমেন, আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলীয় রাষ্ট্রগুলো, পাকিস্তান ও মধ্য এশিয়া উল্লেখযোগ্য। এসব জায়গায়ও তাদের সেনাঘাঁটি রয়েছে।

তাহলে বুঝা গেল যে, এটিই কাতার রাষ্ট্রের বাস্তব  চালিকা শক্তি। এই অভ্যন্তরীণ রাষ্ট্রব্যবস্থাই কাতারকে পরিচালনা করে। কাতারের আরেকটি রূপ আমরা দেখতে পাই যার জাতিসংঘ, আরবলীগ ও ওআইসিতে সদস্যপদ রয়েছে। রয়েছে নিজস্ব বিমান বন্দর, সৈন্যবাহিনী, পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত। এটি হলো তাদের ‘আদ-দাওলাতুল ওয়াহমিয়্যাহ’ তথা; বাহ্যিক রূপ।

ألْقاب ممْلكة في غيْر موْضعها

অযোগ্যের ক্ষেত্রে রাজকীয় উপাধি ব্যবহার,

كالْهر يحْكي انْتفاخا صوْلة الأسد

এমন ভীতু বিড়ালের ন্যায়, যে নিজ দম্ভ প্রকাশ করতে গিয়ে সিংহের ক্ষমতা ও দাপটের কথা বর্ণনা করে।

এই কারণেই কাতারের বাহ্যিক সরকার ব্যবস্থাপনা (আমির, শাসনব্যবস্থা, আল জাজিরা) ‘আদ দাওলাতুল হাকিকিয়্যাহ’ তথা আমেরিকার ইচ্ছা ও চাহিদার বাইরে নিঃশ্বাসও ফেলতে পারে না। এজন্যই কাতার তার ‘আদ দাওলাতুল হাকিকিয়্যাহ’র সদস্যদের জন্য আরাম-আয়েশের বিভিন্ন উপকরণ থেকে শুরু করে নাইট ক্লাব ও ডে ক্লাব এর ব্যবস্থা করে। আমেরিকার সাথে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র ক্রয় করার চুক্তি করে।

[এখন আমরা এ বিষয়ে কিছু প্রমাণ পেশ করছি]

ডোনাল্ড ট্রাম্পঃ

ঐ ব্যক্তির উপরই আমরা পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি, যে আমাদের সাথে সবসময় উঠাবসা করে এবং আমাদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরণের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র ইত্যাদি ক্রয় করে। সেই হল আমাদের প্রকৃত বন্ধু। তার সাথেই আমরা কাজ চালিয়ে যেতে পারি। আমার বিশ্বাস, তার সাথে করা প্রতিটি কাজই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী তামিম বিন হামাদ:

আমেরিকার সাথে আমাদের অর্থনৈতিক সহায়তার চুক্তি এখন প্রায় ১২৫ মিলিয়ন ডলারের। আমাদের প্রত্যাশা ও লক্ষ্য হল, আগামী বছরগুলোতে এই আর্থিক সহায়তার হার দ্বিগুণ করা। আমাদের পারস্পরিক সামরিক সহযোগিতাও অনেক দৃঢ় ও শক্তিশালী। সন্ত্রাসী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনায় আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার কথাতো সর্ব-মহলে স্বীকৃত। আলহামদুলিল্লাহ! আমি আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করছি যে, এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমরা সফলতা অর্জন করেছি। আমি এখানে আসার আগে CENTCOM এর হেড অফিসে গিয়েছিলাম। সেখানে জেনারেলের সাথে সাক্ষাত করেছি। আর এই সাক্ষাতটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে দোহা ও যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বন্ধুত্বের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হল।

ডোনাল্ড ট্রাম্পঃ

আমি নিশ্চিতভাবে বলছি; যদি কাতার আমাদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখে তাহলে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও কাজেই চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। আর এই বিশাল সামরিক ঘাঁটি তৈরি করতে কাতারই আমাদের সাহায্য করেছে। পৃথিবীতে এমন সহযোগিতার উদাহরণ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এখানে ৮ মিলিয়ন ডলারের বেশি ব্যয় হয়েছে। আমি স্রষ্টার কৃতজ্ঞতা আদায় করে বলছি; এই পুরো খরচের অধিকাংশ ছিল তোমাদের পক্ষ থেকে।

কাতারের প্রধানমন্ত্রী তামিম বিন হামাদ:

প্রকৃত বন্ধুর সাথে ভঙ্গুর ঐক্য হয় না, বরং এমন ঐক্যই হয় যা কখনো ভাঙ্গার নয়। আর যুক্তরাষ্ট্র ও কাতার একে অপরের প্রকৃত বন্ধু। তাই কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র এক হয়ে সন্ত্রাস দমনের কাজ করছে এবং এর জন্য অর্থায়ন করছে। তার ভিত্তি যেটাই হোক না কেন।

সন্ত্রাস দমনের অন্যতম লক্ষ্য হল – শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ বিশ্ব প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সবাই নিরাপদে বসবাস করবে। আর এই নিরাপত্তা ও সামরিক সম্পর্ক বৃদ্ধির চুক্তিগুলো বাস্তবায়নে আমরা দু’পক্ষই বদ্ধপরিকর। এখন থেকে আমরা নিরাপত্তা এবং সামরিক বিষয়গুলোকে আরও উন্নত করব এবং সামরিক ঘাঁটিগুলোকে বিস্তৃত করব। আমেরিকান সৈন্য ও তাদের পরিবারর্বগ যেন স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা হবে। আমরা পরস্পর সন্ত্রাসী দলগুলোকে প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন কল্যাণকর সংস্থার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। যেমন ‘বুব’ এবং ‘ওয়াদরাফ’ সংস্থা।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

আমেরিকা কাতারের উপর খুবই সন্তুষ্ট। বারবার তার ব্যাপারে প্রশংসার বাণী শুনাচ্ছে। আর কাতারের আল জাজিরা খুব গৌরবের সাথে এই প্রশংসাগুলো তাদের চ্যানেলে প্রকাশ করছে। কৌশলস্বরূপ আমেরিকার অধীনস্থ অন্যান্য রাষ্ট্র প্রধানদের সামনে এই বলে বেড়াচ্ছে যে, আমরাই আমেরিকার সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছি।

আল জাজিরা বাস্তবতাকে প্রকাশ না করার দ্বিতীয় কারণ:

মুসলিম বিশ্বের বুকে ইহুদিবাদ ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে কাতারের অন্যতম ভূমিকা।

* কাতার ইতিপূর্বে ‘আল মাকতাবুত তিজারিয়্যাহ’ তথা বাণিজ্যিক কার্যালয় শিরোনামে ইসরাইলে একটি দূতাবাস চালু করেছে। ইতিমধ্যে ইসরাইলি রাজনীতিবিদ জিপি লিভনী (Tzipi Livni) কাতার সফর করে, কাতারের আমির হামাদ এর সাথে সাক্ষাৎ করেছে[3]। আল জাজিরা অফিস পরিদর্শনে গিয়ে সেখানকার কর্মকর্তাদের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছে। এছাড়াও ইসরাইলের সাংস্কৃতিককর্মী ও পেশাজীবীরা নানা উপলক্ষে কাতার ভ্রমণ করছে।

* ইতিপূর্বে কাতারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে আন্ত:ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ (Florentino Pérez), শাইখুল আযহার এবং বাদশা আব্দুল্লাহর মাঝে সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বড় ধরণের ভূমিকা রেখেছে।

* আল জাজিরা চ্যানেল বাইতুল মাকদিসে তাদের একটি অফিস চালু করলে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সেটা পরিদর্শনে যায়।

এগুলো হচ্ছে প্রকাশ্য বিষয়, অভ্যন্তরীণ অবস্থা আরও করুণ।

এলি আভিদার (Eli Avidar) (প্রাক্তন নেসেট সদস্য, কাতারে যায়নিষ্ট কার্যালয়ের সাবেক প্রধান) এর বক্তব্য:

আমেরিকান রাষ্ট্রদূত, এলিসা পেটমিসিয়ন আমাকে ফোন করে জানান যে, তিনি আমার সাথে সাক্ষাত করতে চান। আমি বললাম, ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যেই সাক্ষাত করছি’। তারপর আমি আমেরিকান দূতাবাসে তার সাথে সাক্ষাত করি।

তিনি আমাকে বলেন, ‘এইমাত্র আমি (কাতারের প্রধানমন্ত্রী) হামাদ বিন জসিমের সাথে সাক্ষাত করেছি। তিনি আমাকে বলেছেন; সম্ভব হলে তুমি (এলি আভিদার) যেন সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত দোহা থেকে তিন সপ্তাহের জন্য ছুটি নাও। সম্মেলন শেষে আবার দোহায় ফিরে আসবে’।

আমি তাকে বললাম, ‘সম্মানিত রাষ্ট্রদূত! তাকে বলুন; আমরা দোহায় থাকবো না, দুই সপ্তাহের জন্য অফিস বন্ধ রাখব’।

আমি জানি যে, কাতার আমাদের দূতাবাস বন্ধ করার চাপ দিতে পারে। এতে আমাদের কিছু যায় আসে না। তবু আমি দ্রুত জেরুজালেম চলে যাই এবং আদালতের মাধ্যমে একটি রায় ঘোষণা করিয়ে নেই। রায়টি ছিল এমন – আমাদের দোহায় অবস্থান করা নিয়ে কোন ইসরাইলি সংবাদপত্র সংবাদ প্রচার করতে পারবে না।

আমেরিকান রাষ্ট্রদূত হামাদের সাথে সাক্ষাত করে বিষয়টি জানালে সে আনন্দ প্রকাশ করে এবং ধন্যবাদ জানায়। আর বলে যে, সম্মেলন শেষ হওয়া পর্যন্ত ইসরাইলকে চুপ থাকতে বলুন। এর দুই ঘণ্টা পরে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অনানুষ্ঠানিক মুখপাত্র দোহায় ইসরাইলি অফিস বন্ধ করার ঘোষণা দেন।

তখন আমার থেকে মাত্র পাঁচশত মিটার দূরে দোহায় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। সেখানে কাতারের আমির হামাদ বিন জসীমও ছিল। সবাই তাকে এই বলে সংবর্ধনা দিচ্ছিল যে, ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে আরবদের মধ্য থেকে আপনার ভূমিকা প্রশংসনীয়।

উপরে উল্লেখিত ঘটনাটি হল কাতারের ত্রিমুখী খেলার সামান্য নমুনামাত্র। তারা একদিকে ইসরাইলের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক স্থাপন করেছে। কিন্তু বাহ্যত দেখাতে চায় তাদের মাঝে কোন সম্পর্ক নেই। তারা আমেরিকার পূর্ণ কর্তৃত্ব মেনে নিয়েও আমেরিকার অধীনস্থতা অস্বীকার করতে চায়।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

কাতার এবং তার রাষ্ট্রীয় চ্যানেল আল জাজিরা জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার জন্য চক্রান্তমূলক ভূমিকা পালন করছে। তাদের এই বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের ভিত্তিতেই আরব জনমত গড়ে তুলছে।

কাতার একদিকে ফিলিস্তিনিদের সাথে সহমর্মিতার দাবি করে গাযার কিছু সংবাদ প্রচার করছে। অন্যদিকে জিপি লিভনীকে (Tzipi Livni) নিজেদের দেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আরব ভূমির উপর আধিপত্য বিস্তারকারী ইসরাইলের খবর তাদের চ্যানেলে প্রচার করছে। পবিত্র কুদসে তাদের কার্যালয়ে ‘নেতানিয়াহু’কে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। তারা ইসরাইলি নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সংশ্লিষ্টদের জন্য বিভিন্ন কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে।

আহমাদ মানসুর (আরব আমিরাতের একজন মানবাধিকার কর্মী):

জালিম ও মাজলুমদের সাথে একই ধরণের আচরণ করা হচ্ছে!! যে অস্ত্র বহন করে আর যে পাথর বহন করে উভয়কে একই দৃষ্টিতে দেখানো হচ্ছে। যে ফিলিস্তিনিরা ইসরাইল কর্তৃক নিজেদের দখলকৃত ভূমি রক্ষা করার চেষ্টা করছে, সে নাকি ইসরাইলিদের মতোই সহিংসতা চালাচ্ছে!!

দুর্ভাগ্যবশত আল জাজিরাসহ সমস্ত মিডিয়া আউটলেটগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধের সংবাদের ক্ষেত্রে নিউজ বুলেটিনে ‘সহিংসতা’ শব্দটি ব্যবহার করছে। এটি ইসরাইলের ‘স্বার্থ রক্ষা’র শব্দ। সর্ব প্রথম এর ব্যবহার ইসরাইল শুরু করেছিল।

[নিচের আলোচনাটুকু একটি টকশো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এটি ড. আবদুল্লাহ আল নাফিসী এবং কাতারের মানবাধিকারকর্মী আহমাদ মানসুরের মাঝে অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত আলোচনায় কাতার এবং আল জাজিরার সাথে ইসরাইলের সম্পর্কের বেশ কিছু বিষয় ফুটে উঠেছে।]

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী: (‘আল জাজিরা’কে লক্ষ্য করে বলেন)

আমরা দেখতে পাচ্ছি, তোমরাই আরব জনগণের কাছে যায়নিষ্ট ইহুদিদের বার্তা পৌঁছে দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছো। পশ্চিমা বিশ্বের সরকার অথবা বিরোধী দল যদি তাদের সাধারণ জনগণকে উদ্দেশ্য করে দুই-তিন মিনিটের কোন বার্তা দিতে চায়, তখন ব্যবহৃত মিডিয়া চ্যানেলগুলোকে মোটা অংকের অর্থ দিতে হয়। অথচ তোমরা নি:শর্তভাবে আরব উপসাগরীয় জনগণকে সম্বোধন করে বার্তা দেয়ার জন্য যায়নিষ্ট ইহুদিদের সুযোগ করে দিচ্ছো!! তাও আবার সম্পূর্ণ স্বাধীনতার সাথে! সেই সাথে তোমরা নানা ব্যাখ্যার মাধ্যমে আরব জনগণের জন্য পরিভাষা সংক্রান্ত জটিলতাগুলো আরও প্রকট করে তুলছো।

(কথা থামিয়ে দিয়ে) আহমাদ মানসুর বলেন:

আল জাজিরা এটি করছে কখনো তাদের মত প্রকাশের শিরোনামে, কখনোবা অন্যদের মতামত তুলে ধরার নামে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

আমার মনে হয়, এটা আমাদের সাথে এক ধরণের প্রতারণা। তথাকথিত বাক-স্বাধীনতার নামে এটি প্রতারণাই।

আহমাদ মানসুর:

জি! ব্যাপারটি বাস্তবে এমনই। কারণ আমরা অনেক সাংবাদিক থেকে জানতে পেরেছি; তারা বলেছে যে, তারা ইসরাইল বিষয়ক সংবাদগুলো সাধারণত সরাসরিই সংগ্রহ করে। কোন মাধ্যম ছাড়া!!

ব্যাপারটি এভাবে ঘটে যে, তারা সরাসরি নেতানিয়াহুর কাছে যায়। নেতানিয়াহু আল জাজিরার মাধ্যমে পুরো জাজিরাতুল আরবে তার বার্তা পৌঁছায়। আরবদেরকে তার দাবি দাওয়া ও যুক্তিগুলো বুঝানোর চেষ্টা করে। আর আমরা সে সংবাদুগলো বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করি। সারকথা হলো; আল জাজিরার মাধ্যমে ইসরাইলের কথাগুলো আমাদের কাছে পৌঁছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

তুমি কি আমার কথার বিপক্ষে কথা চাচ্ছো?

আহমাদ মানসুর তার কথা কেটে বলেন:

না না, বিষয়টি এরকম না।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

তুমি হয়তো বিষয়টি স্বীকার করবে না। এই কাজের আঞ্চলিক ফলাফল, সিংহভাগ জনগণের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। অধিকাংশ ব্যক্তিদের উপর এর ক্ষতি আসবে।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

আল জাজিরা চ্যানেল একদিকে ইরাক প্রতিরোধ যুদ্ধের নির্বাচিত সংবাদগুলো প্রচার করে। অন্যদিকে আল জাজিরা ইরাকে অবস্থিত তাদের কার্যালয়ে আমেরিকান সেনা প্রধানকেও স্বাগত জানায়।

কাতার একদিকে মিশর এবং সৌদি আরবের সমালোচনা করছে, এজন্য যে তারা ইসরাইলের সামনে মাথানত ও সমঝোতা করছে। অন্যদিকে তাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ছিলো এমন একজন – যে ইসরাইলের সবচে বড় অনুগতদের একজন। তার ভাষায় ইসরাইল হলো – হোয়াইট হাউজের প্রধান নিয়ন্ত্রক ও পার্লামেন্টের সিনেট সভাপতি।

হামাদ বিন জসীম বিন জাবের আল সানির (Hamad bin Jassim bin Jaber Al Thani) বক্তব্য:

আমি স্পষ্টভাবে বলছি যে, ইসরাইলের পক্ষ নেয়ায় কাতারের উপর আমেরিকা প্রশাসন সন্তুষ্ট। আর আরবরা বিশ্বাস করে যে, ইসরাইল হলো হোয়াইট হাউজের মূলচাবি এবং আমেরিকার পার্লামেন্টের সিনেট সভাপতি। প্রকৃত বাস্তবতা এটাই।

আমেরিকা চায় যে, ইসরাইল এবং আরব নেতৃবৃন্দগণ একে অপরের রাষ্ট্রে অধিক পরিমাণে যাতায়াত করুক। যাতে তাদের মাঝে কোন দূরত্ব না থাকে।

হামাদ বিন জসীম বিন জাবের আল সানির (Hamad bin Jassim bin Jaber Al Thani)

আমি একটু স্পষ্ট করে বলি; আমি মনে করি ইসরাইলে গমনাগমন এবং তাদের সাথে ভালো সম্পর্কের দ্বারা আমেরিকা আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে। আরববিশ্ব মনে করে যে, ইসরাইল হচ্ছে হোয়াইট হাউজের চাবি এবং বিশ্ব মোড়লদের গডফাদার। আর বাস্তবতা আসলে এটাই।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

আর হামাদ বিন জসীম ইসরাইলী নেতাদেরকে আরব বিশ্বে দেখতে চায়। এমনিভাবে সে আরব বিশ্বের নেতাদেরকে ইসরাইলে দেখতে চায়।

হামাদ বিন জসীম বিন জাবের আল সানি:

আমিও কাতার, সৌদি, মিশরসহ প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্রে ইসরাইলিদের দেখতে চাই। একইভাবে ইসরাইলেও আরব কিংবা কাতারিদের দেখতে চাই।

আমার বিশ্বাস – এটাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য, যে লক্ষ্য অর্জনে আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছি।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

একদিকে কাতার পবিত্র কুদসকে ইহুদিকরণের বিরুদ্ধে কিছু প্রতিবেদন প্রচার করছে, অন্যদিকে শতাব্দীর নিকৃষ্ট চুক্তিকে কেন্দ্র করে (বাইরাইন প্রতিরক্ষা বাহিনীর আয়োজিত) “মানামা এয়ার ফোর্স” সেমিনারে উপস্থিত হওয়ার জন্য ইসরাইলের কাছে দাওয়াত পাঠাচ্ছে। এসবের লক্ষ্য হলো – সমঝোতার রাজনীতির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর চেতনাকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলা।

কাতার তাদের মিডিয়া আল জাজিরা’র মাধ্যমে একদিকে আরব বসন্তের সময় বাহ্যত রক্ষকের ভূমিকা গ্রহণ করেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘ কর্তৃক মানবাধিকার সভায় পূর্ব তুর্কিস্তানের ‘উইঘুর’ মুসলিমদের বিরুদ্ধে চীনকে শক্তিশালী করেছে। কাতারের এই ঘৃণ্য রাজনীতি হল মধুর মধ্যে বিষ ঢালার ন্যায়। আমি পূর্বে বলে এসেছি যে, কাতারের প্রকৃত নেতৃত্ব আমেরিকার কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে পরিচালিত হয়।

আরেকটা কারণ হল, কাতার ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণের দিকে ঝুঁকে গেছে। তাই কাতার মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য প্রোপাগান্ডা যুদ্ধে আমেরিকার সাথে অংশগ্রহণ করছে।

কাতার একদিকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অপবাদ দিচ্ছে, অন্যদিকে ফিলিস্তিনীদের সাথে সামান্য সহমর্মিতার চাদর পরে দর্শকদের সামনে সহানুভূতির অভিনয় করছে। আর এই চক্রান্তের সারকথা হল দুটি বাক্য;

১. মুজাহিদরা গাদ্দার, সুতরাং তাদের পরিত্যাগ করো।

২. ইসরাইল হল বাস্তবিক বন্ধু, তাই তোমরা তাকে সাদরে গ্রহণ করো।

***

উপরোক্ত আলোচনা ছিলো আল জাজিরার মিথ্যাচার এবং বাস্তবতা গোপন করা প্রসঙ্গে। পরবর্তী পয়েন্টে আমরা আল জাজিরার ‘আল লা’ইবূনা বিন নার’ ক্লিপের বিষয়ে মন্তব্য পেশ করবো।

প্রশ্ন হল; ‘আল জাজিরা আল কায়দার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে’ – এ বিষয়ে কী আল কায়দার কাছে কোন প্রমাণ আছে?

উত্তর: হ্যাঁ, এ বিষয়ে আমাদের কাছে একাধিক প্রমাণ আছে। তারা জামাল ইসমাঈলের সাথে শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’র একটি সাক্ষাৎকারকে বিকৃত করেছে।

সাক্ষাৎকার গ্রহণের কয়েক মাস পর কাতারে ‘তাদমীরুল কায়েদা’ তথা আল কায়দাকে নস্যাৎকরণ’ শিরোনামে একটি প্রোগ্রাম হয়। সেই প্রোগ্রামে আমেরিকার তথাকথিত সন্ত্রাসবাদের পক্ষে শাইখের সাক্ষাৎকারকে বিকৃত করে প্রকাশ করা হয়। এটি ছিলো আমেরিকার কর্তৃক আফগানিস্তানের খোস্ত এলাকায় হামলার পরের ঘটনা।

ইরাকি মুজাহিদদের সম্বোধন করে দেয়া শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র বার্তার বিকৃতি:

আস সাহাব মিডিয়ার প্রতিবেদক (১৪২৮ জিলকাদ): ‘কাতার কীভাবে আল কায়দার প্রধান শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ’র ইরাক সম্পর্কিত বক্তব্যকে বিকৃত করেছে’?

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

কাতার এক্ষেত্রে তিনটি জঘন্য বিকৃতি সাধন করেছে। তবে বিশ্ববাসী বিষয়টি খুব দ্রুতই (মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই) অনুধাবন করেছে।

১. শাইখের বক্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অংশ তারা মুছে দিয়েছে বা গোপন করেছে।

২. শাইখ যে উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটাকে তারা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেছে। অনুষ্ঠানের উপস্থিত অতিথিদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে তারা এমনটি করেছে। যেমন, তারা দাবি করেছে যে, শাইখ শুধুমাত্র দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়্যা সংগঠনের মুজাহিদদের তিরস্কার করেছেন এবং উপদেশ দিয়েছেন। অথচ বাস্তবতা হল তিনি ইরাকে অবস্থানরত সকল মুজাহিদ ভাইদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দিয়েছেন। (এই বিকৃতির ফলে মুজাহিদদের মাঝে আন্ত:সংকট দেখা দিয়েছিল)

৩. বিষয়টি যাচাই করার জন্য ঐ সকল ব্যক্তিদের উপস্থিত করা হয়েছে; যারা শাইখের বক্তব্যের প্রতি সহমর্মী নন বা যারা শাইখের বক্তব্যের বিরোধী ছিলো। অথচ স্বাভাবিক নিরপেক্ষতার দাবি হল; যারা শাইখের বক্তব্য গ্রহণ করেন এবং যারা তার বিরোধিতা করেন উভয় পক্ষকে উপস্থিত করা।

আল কায়দার অধিকাংশ সংবাদ প্রচার করার ক্ষেত্রে তারা উক্ত নীতি অবলম্বন করে। কারণ অধিকাংশ সময়ে আল কায়দার বিরুদ্ধে প্রচারিত সংবাদের বিপরীতে তারা কোন প্রতিবাদের মুখোমুখি হয় না। আর যারা আল কায়দার সমালোচনা বিষয়গুলো শুনে তারাতো সমালোচনা শোনার জন্যই শুনে।

আল জাজিরা চ্যানেলের দ্বারা আল কায়দার ডকুমেন্ট বিকৃতিকরণের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। পূর্ব থেকেই এমনটা করার অনেক প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এর মধ্যে প্রসিদ্ধ একটি ঘটনা হল; শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাথে জামাল ইসমাইলের সাক্ষাৎকার।

প্রথমদিকে আল জাজিরা চ্যানেল এই সাক্ষাৎকারটি প্রচার করেনি। প্রচার না করার ক্ষেত্রে তারা কারণ উপস্থাপন করে যে, এই বক্তব্যের বাক্যগুলো অস্পষ্ট এবং এগুলো সংশোধনের প্রয়োজন। পরবর্তীতে আনুমানিক ছয়মাস পর তারা আবার ‘তাদমীরুল কায়েদা’ তথা ‘আল কায়দাকে নস্যাৎকরণ’ নামক উদ্ভট শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান করে। সেখানে তারা এই কথোপকথনের সিংহভাগ এমনভাবে প্রচার করেছে যেন শাইখ উসামা আমেরিকাকে আফগানিস্তানের (প্রাদেশিক শহর) খোস্তে আক্রমণের জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন। আর অন্যদিকে এর জন্য দোষারোপ করেছেন মুজাহিদদেরকে!

যখনই আল কায়দার বিষয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ হয়েছে, তখনই আল জাজিরা সেখানে বিকৃতি সাধন করেছে।

এছাড়াও তারা সাইয়্যেদ ইমামের কিছু পদস্খলনকে আল কায়দার বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে চেয়েছিলো। একে কেন্দ্র করে তারা একাধিক প্রোগ্রাম করে। একবার তারা কায়রোতে দু’ঘণ্টা ব্যাপী একটি বিশেষ প্রোগ্রাম করে। প্রোগ্রাম শেষে তারা আরেকটি প্রোগ্রাম করার প্রতিশ্রুতিও দেয়।

অবশ্য এসকল কার্যকলাপের দ্বারা তারা সফল হতে পারেনি। কারণ ইতিমধ্যে উক্ত পদস্খলন ও অধঃপতনের বিপরীতে আল কায়দা এবং অন্যান্য মুজাহিদদের দালিলিক খণ্ডন প্রকাশিত হয়েছে। যেমন, এ বিষয়ে ‘তারবিয়া’ নামক রিসালাহ এবং শাইখ আবু ইয়াহিয়া আল লিব্বি রহিমাহুল্লাহ’র ‘আত তানফীদ’ নামক রিসালার প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এখন আল জাজিরা এই সত্য বিষয়টি প্রচার না করে মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছে। কারণ তারা জানে, তারা এমনটা করেছিল আমেরিকার নির্দেশ অনুসারে।

আরেকটি দৃষ্টান্ত হল; তারা জনগণের সামনে প্রচার করেছে যে, ৯/১১ আক্রমণটা ছিল আমেরিকার অভ্যন্তরীণ হামলা। তথা আমেরিকা নিজেই তার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে হামলা করেছে। কাতার এই ঐতিহাসিক ঘটনাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করার কারণ হল – আমেরিকা তাদের অভিভাবক। তাই অন্য কেউ তাকে আঘাত করেছে, এটা তাদের জন্য খুবই দুঃখজনক বিষয়। এছাড়াও তারা কোন এক পত্রিকার লিখিত কথার উপর ভিত্তি করে আল কায়দাকে এই অপবাদ দিয়েছে যে, তারা বিভিন্নভাবে আরব আমিরাতকে সহযোগিতা করছে।

সাংবাদিকগণ পত্রিকায় বা সংবাদপত্রে সত্যমিথ্যা যা লেখে সেটাকেই তারা প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করে। আমার প্রশ্ন হল: জামাল ইসমাঈল, শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নেয়ার পর, উভয়ের কথোপকথন সম্পর্কে যা লিখেছেন তাও কি তারা সত্য হিসেবে গ্রহণ করবে?

বাস্তব কথা হচ্ছে; না, তারা তা করবে না।

আস সাহাব মিডিয়া:

জামাল ইসমাইল স্বীয় গ্রন্থ “ইবনু লাদেন, আল জাজিরা ওয়া আনা” তে শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাথে তার সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন,

“অন্য যে সাংবাদিক আমার সাথে উসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল, সে ইসলামাবাদে পৌঁছার কয়েক ঘণ্টা পূর্বে আমি দোহায় পৌঁছেছি। আমি ধারণা করেছিলাম যে, চ্যানেলে সম্প্রচার করার জন্য সাক্ষাৎকারের কোন একটা অংশের ভিডিও ক্লিপ আগেই আনা হবে। তারপর তা প্রচার করা হবে। এতে আমরা বৈশ্বিক অন্যান্য সংবাদ সংস্থাগুলোর উপর অগ্রগামিতা লাভ করবো।

আশ্চর্যের বিষয় হল – সাক্ষাৎকারের কোন অংশই প্রচার করা হচ্ছিলো না। আমি খুব দ্রুত ঐ সাংবাদিক এবং সহ-সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করলাম। আমি উক্ত সাক্ষাৎকার প্রচার না হওয়ার কারণ জানতে চাইলাম। আমাকে জানানো হলো এ সাক্ষাতকারের ভিডিও ক্লিপ এখনো পর্যন্ত প্রধান পরিচালকের কার্যালয়ে রয়েছে। তিনি তা প্রচার করার বিষয়ে কার্যালয়ের প্রধান সম্পাদকের সাথে আলোচনা করছেন (তাকে আমরা প্রধান সম্পাদক না বলে প্রধান চক্রান্তকারী বলতে পারি)।

তার নাম হল “সালাহ নাজম”। তিনি কাতার এবং মিশরের মধ্যকার বিশেষ চুক্তির মাধ্যমে আল জাজিরা চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। (যেমনটি উক্ত চ্যানেলের কর্মরত অনেক কর্মকর্তা বলেছেন)। আর এই ব্যক্তিই উসামা বিন লাদেন এর সাক্ষাৎকারটি আল জাজিরায় প্রচার করার উপর আপত্তি করেছেন।

আল জাজিরায় কর্মরত আস্থাভাজন ব্যক্তিগণ পরবর্তীতে আমাকে বলেছেন, ‘সালাহ নাজম’ ক্ষুদ্ধ হয়ে বলেছিল, ‘আমাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় যে কারো যেকোন বিষয় প্রচার করার স্থান নয়। আমাদের কেন্দ্র উসামার মুখপাত্র হবে এর বৈধতা দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমি উক্ত সাক্ষাৎকার প্রচার করলে পরবর্তীতে উপর থেকে চাপ আসতে পারে। ফলে আমাদের সংবাদ কেন্দ্রই বন্ধ হয়ে যাবে’।

এছাড়া যে শাইখ উসামার সাক্ষাৎকার প্রচার করবে তাকে আল জাজিরা থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেয়া হয়েছে। সাক্ষাত্কারটি সম্প্রচার না করতে তার অজুহাত ছিল যে, আমি উসামা বিন লাদেনের অধিকাংশ কথা ও মতামতের সাথে একমত নই।

এই ঘটনার আনুমানিক দুই সপ্তাহ পর আল জাজিরা চ্যানেল ইসরাইলের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আমনোন শাহাক (Amnon Lipkin-Shahak) এর একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে। তিনি সেসময় হিব্রু রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী ছিলেন।

যে সাংবাদিক সাক্ষাৎকার নিয়েছে, সে জেনারেলের কথা কাটাকাটি করেনি। বরং সে মৃদু হাসি দ্বারা ঐ জেনারেলের বিভিন্ন কথার উত্তর দিয়েছে। অথচ আমনোনের হাত ফিলিস্তিন, লেবানন ইত্যাদি মুসলিম রাষ্ট্রের এবং আরবদের রক্তে রঞ্জিত। সাংবাদিকের কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, সে জেনারেলের আলোচনাকে স্বতঃপূর্ত মনে মেনে নিয়েছে।

পরবর্তীতে আল জাজিরা চ্যানেলে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা এবং আল জাজিরার প্রধান সম্পাদকের সম্পর্কে জানে অনেক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, সালাহ নাজম ছিল মিশরীয় বামপন্থী। মিশরীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিল সে। এই ব্যক্তি ইতিপূর্বে অনেক পশ্চিমা গণমাধ্যমে কাজ করেছেন।

আল জাজিরা চ্যানেলের অনেকে বলেছেন যে, তিনি বর্তমানে আরব উপদ্বীপে আমেরিকা এবং মিশর দূতাবাসের প্রতিনিধি। তাই তাকে উপদ্বীপে পুনরায় আনা হয়েছে। তিনি কাতার এবং মিশরের শাসকদের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে আল জাজিরার প্রধান সম্পাদকের আসন গ্রহণ করেন। কাতারের সাথে মিশরের ‘মিত্রতা চুক্তির’ একটি মৌলিক শর্ত ছিলো – ‘সালাহ নাজম’কে আল জাজিরার প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেয়া।

জামাল ইসমাইল আরও বলেন – ‘একবার তিনি আল জাজিরার পরিচালনা পরিষদের প্রধানকে বলেন: আল জাজিরা চ্যানেল দু’বার আইমান আয যাওয়াহিরীর সাক্ষাৎকার গ্রহণের চেষ্টা করেছে। চ্যানেলটি এই সাক্ষাৎকার সম্পন্ন করার জন্য লাখ লাখ ডলার ব্যয় করতে প্রস্তুত ছিলো। এখন তো আইমান আয যাওয়াহিরী’র সাথে আনুমানিক এক ঘণ্টার পরিপূর্ণ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা তোমাদের কাছে এসেছে। সে সাক্ষাৎকারের কোন কিছুই এখনো কোন সংবাদ সংস্থা প্রচার করেনি’।

প্রশ্ন হলো – কেন তোমরা উক্ত সাক্ষাৎকার কিংবা কমপক্ষে তার একটা অংশও প্রচার করছ না? অথচ তোমরা তো আলোচিত এবং অগ্রগামী সাংবাদ মাধ্যম হতে চাও’।

সে-সময় আমি কাতার ও মিশরের দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সম্পর্কের বিষয়টা চিন্তা করিনি। এ চুক্তির ফলে কাতারে উন্নতির লক্ষণ দেখা দিতে শুরু করেছে। যেমন, ‘সালাহ নাজম’কে আল জাজিরার প্রধান সম্পাদক হিসাবে নির্বাচন করা। অথচ তিনি আইমান আয যাওয়াহিরীর ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার প্রচার করতে বাধা দিয়েছে। অন্যদিকে আল জাজিরা দাবি করে তারা সত্য প্রচার, বাস্তবতা উদঘাটন এবং সকলের বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী।

জামাল ইসমাইল আরও বলেন, তিনি পরিচালনা পরিষদের প্রধানকে শাইখ উসামা বিন লাদেনের সাক্ষাৎকার প্রচারে বিলম্ব করার কারণ জিজ্ঞেস করেছিলেন। তিনি উত্তর দেন: ইতিপূর্বে শাইখ উসামার বক্তব্য প্রচারের কারণে আমেরিকা শুধুমাত্র আল জাজিরা চ্যানেলকে নয়, বরং পুরো কাতারের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছে।

বিশেষত যখন তার এমন সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়, যেখানে তিনি আমেরিকার আরবে উপস্থিতি, আমেরিকার মুসলিম রাষ্ট্রে বোমা হামলা করা এবং তাদের প্রতিহত করার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করেন। জামাল ইসমাইলের নেয়া উক্ত সাক্ষাৎকারে শাইখ উসামা বিন লাদেন আমেরিকায় আক্রমণ করা ও আরব অঞ্চলে আমেরিকান অস্তিত্বের বিষয়ে মুখ খুলেছেন। সেইসাথে আমেরিকাকে প্রতিরোধ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও কথা বলেছেন।

পরবর্তীতে আল জাজিরার কতক কর্মকর্তা এবং পরিচালকের নিকটস্থ ব্যক্তিবর্গ থেকে জানতে পেরেছি যে, শাইখের উভয় সাক্ষাৎকার দোহায় অবস্থিত আমেরিকান এবং মিসরীয় দূতাবাসের কাছে সোপর্দ করা হয়েছিল। অন্য কোন দূতাবাসে তা পাঠানো হয়নি।

 শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

তাহলে সংক্ষেপে বলা যায় যে, আল জাজিরা চ্যানেল প্রতারণামূলক প্রচারনীতির পথে হাঁটছে। যার সারকথা হলো; মুজাহিদগণ বিশ্বাসঘাতক, তাই তাদের পরিত্যাগ কর! আর ইসরাইলিরা হলো প্রকৃত বন্ধু, তাই তাকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো!

তবে তাদের এই বিষয়টি শুধুমাত্র মুজাহিদদের বিশ্বাসঘাতক সাব্যস্ত করার উপর সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটা আরও ঘৃণ্যতর। কাতার ‘ইত্তিহাদুল উলামাইল মুসলিমীন’ তথা ‘মুসলিম উলামায়ে কেরামের ঐক্য’ নামে একটি সংগঠন তৈরি করে। কাতার নিজ দেশে তাদেরকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থায় করে দেয়। এই সংগঠনের সাবেক প্রধান একটি কলঙ্কজনক ফাতওয়া দেন। ফাতওয়াটি হল – মুসলিম রাষ্ট্রের সৈনিকদের জন্য আমেরিকান সেনাবাহিনীর পক্ষ হয়ে আফগানিস্তানে মুসলিমদের বিপক্ষে লড়াই করা বৈধ। (ইন্নালিল্লাহ!)

আর সে সংস্থার বর্তমান প্রধান, একটি বিরল ফাতওয়া দিয়েছে। ফাতওয়াটি হলো: ‘খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা ফরয নয়’।

কাতার তৃতীয় শান্তিচুক্তি করার পরও ট্রাম্পের নির্দেশনায় ‘ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ সংস্থার মাধ্যমে মানুষদের ধর্মনিরপেক্ষতার দিকেই আহবান করছে।

এছাড়াও কাতারে রয়েছে আমেরিকার ‘র‌্যান্ড কর্পোরেশনের’ শাখা অফিস। উক্ত কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রয়েছে। গ্রন্থটির নাম হলো- ‘আল ইসলামুদ দেমুকরাতিয়্যাহ আল মাদানী’। ২০০৪ সালে শেরিল বেনার্ড (Cheryl Benard) নামক একজন ইহুদি লেখিকা এই গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি তখন ‘র‌্যান্ড কর্পোরেশনের’ সভাপতি ছিলেন। উক্ত বইয়ে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, প্রগতিবাদ ও ধর্মহীনতার প্রতি মুসলিমদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং যারা শরিয়াহ আইন দাবি করে তাদের প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তার লক্ষ্য হল, ইসলামকে তথাকথিত শান্তি ও কোমল ধর্ম রূপে পেশ করা এবং ইসলামের কাঠোরতাকে অস্বীকার করা।

[নিম্নোক্ত আলোচনাটি সাংবাদিক আহমাদ মানসুরের সঞ্চালনায় ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসীর একটি টকশো থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।]

আহমাদ মানসুর:

জাজিরাতুল আরব এবং উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোতে তানযীমুল কায়েদা এবং অন্যান্য ইসলামী আন্দোলনের মোকাবেলা করার জন্য আমেরিকা কী কী কৌশল করছে?

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

বাস্তবতা হলো – এই যুদ্ধের পুরো কৌশল র‌্যান্ড কর্পোরেশনের অধীনে পরিচালিত। র‌্যান্ডের প্রধান কর্মকর্তা এখন কাতারে অবস্থান করছে। তার দায়িত্ব হলো জাজিরাতুল আরবে ইসলামের ভিত্তি কীভাবে ধ্বংস করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া।

শেরিল বেনার্ড (Cheryl Benard) নামে আরেকজন কাজ করছেন এ বিষয়ে। সে জালমাই খলিলজাদের (Zalmay Khalilzad) স্ত্রী। তাকেও র‌্যান্ড কর্পোরেশনের কার্যক্রমের দায়িত্ব দেয়া আছে। খলিলজাদকে ইরাক, আফগানিস্তানে বুশের পার্সোনাল দূত হিসেবেও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

আহমাদ মানসুর: খলিলজাদের প্রকৃত অবস্থা আমাদের জানা আছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

আমাদের আলোচনার জালমাই খলিলজাদ হলেন সেই ব্যক্তি যে ইরাক ও আফগানিস্তানের সব বিষয়ে বুশের প্রধান ‘পরামর্শদাতা’ ছিলো।

আহমাদ মানসুর: শুধু তাই নয়। বরং তিনি ইরাক, আফগানের গুরুত্বপূর্ণ সব ইস্যুতে বুশের পরামর্শদাতা ছিলেন।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

এই ব্যক্তি অর্থাৎ জালমাই খলিলজাদ ‘শেরিল বেনার্ড’ এর স্বামী। শেরিল বেনার্ড অস্ট্রিয়া এর রাজধানী ভিয়েনা’র একটি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক ছিলেন। তিনি বর্তমানে দোহায় তোমাদের কাছে আছেন।

আহমাদ মানসুর: আহ! তিনি দোহায় আমাদের নিকটই আছেন। আর আল জাজিরা চ্যানেলও দোহাতেই আছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

আরে! তোমার তো জানা আছে যে, ইতিপূর্বে এই মহিলা হোয়াইট হাউজ থেকে ‘রাজনৈতিক স্ট্রাটেজি’ বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র প্রস্তুত করে। বিষয়বস্তু ছিল – কীভাবে ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়গুলোকে প্রতিহত করা যায়। একজন সাধারণ পাঠকও বুঝতে পারবে, এটি ছিলো একটি জঘন্য বিষয়। আমি অনেককে এটি পড়ার পরামর্শ দেই, যাতে তারা পড়ে এর ভয়াবহতা বুঝতে পারে।

আহমাদ মানসুর: কীভাবে, কার সহায়তায় তিনি এটা প্রস্তুত করেছিলেন?

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

এটা তো সহজ বিষয়। আমেরিকান প্রশাসন ও র‌্যান্ড-কর্পোরেশনের সহযোগিতা নিয়েই কাজটি সম্পন্ন করেছে।

আহমাদ মানসুর: তা এখন সচরাচর পাওয়া যায়?

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী: হ্যাঁ।

আহমাদ মানসুর: যতদূর মনে হচ্ছে এসব গবেষণাপত্র মানুষের হাতে হাতে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

মূল আলোচনাটি শুরু হয়েছে ৭২ পৃষ্ঠার পর। এর শিরোনাম ছিলো ‘ইসলামী গণতন্ত্র ও মদিনা সনদ’। এই মহিলা জাজিরাতুল আরবে এই মতবাদটিই প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে।

আহমাদ মানসুর: এই গবেষণাপত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনগুলো? যার কারণে সর্বস্তরের জনগণ এর বিরুদ্ধে শ্লোগান দিচ্ছে?

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

এই গবেষণাপত্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – এখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমানে ‘ইসলামি আন্দোলন ও জিহাদ’ বৈশ্বিক শান্তির জন্য হুমকি স্বরূপ। এটা উক্ত প্রবন্ধের শুরুতেই রয়েছে।

আহমাদ মানসুর: ‘ইসলাম একটি ধর্মের নামান্তর’ – ‘শেরিল বেনার্ড’ এর এ কথার অর্থ কী?

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

(ক) তার এই কথার অর্থ হচ্ছে; ইসলাম একটি ধর্ম এবং এর রয়েছে স্রেফ কিছু শিক্ষা। দ্বিতীয় বিষয় হলো; ইসলাম মানে সেই ঐতিহাসিক কুরআন ও তার কাহিনীসমগ্র। আর এই যুগে তথা একবিংশ শতাব্দীতে এই ঐতিহাসিক কুরআন সংবিধান হওয়ার উপযুক্ত নয়। (পৃষ্ঠা- ২৫ ও ২৯)

(খ) মুসলিম নারীদের হিজাব পরার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সহনশীলতাকে সে সমালোচনার দৃষ্টিতে আলোচনা করেছে। তার দাবি হলো; পর্দার বিষয়ে আমেরিকা যেন, ফ্রান্সের মতো কট্টর অবস্থান গ্রহণ করে। (পৃষ্ঠা: ১৪)

(গ) তিনি আরও বলেন যে, বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে কুরআনে উল্লেখিত শাস্তির বিধান অত্যন্ত নিষ্ঠুর এবং তা প্রাচীনতম। এসব বিধান সভ্য বিধান নয় (তথা সভ্যতার যুগে এসব বিধান চলতে পারে না)। (পৃষ্ঠা: ১৪)

(ঘ) তিনি আরেকটু দৃঢ়ভাবে বলেন: কুরআন তো অস্পষ্ট ও রহস্যময় একটি গ্রন্থ। তাতে শুধুমাত্র কিছু দুর্বোধ্য শিক্ষা রয়েছে। (পৃষ্ঠা-১৮)

(ঙ) শুধু তাই নয়। সে এখন আমেরিকান প্রশাসনের মাধ্যমে সৌদি সরকারের কাছে আবেদন করেছে – সৌদি সরকার যেন সৌদিতে ইহুদি, খৃষ্টানদের জন্য গির্জা, উপসানালয় নির্মাণ করে দেয়।

আহমাদ মানসুর: একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে; বুশ আমেরিকার রাষ্ট্রীয় এক বার্তার ২-৬ পৃষ্ঠায় জাজিরাতুল আরবের লোকদের ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি আহবান করেছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

আরে এ বিষয়ে তো তিনি ২০নং পৃষ্ঠায়ও আলোচনা করেছেন।

আহমাদ মানসুর: মনে হচ্ছে, তিনি দীর্ঘ এক পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

আপনি জানেন যে, ঐ গবেষণা প্রবন্ধের এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের শরয়ী আপত্তি রয়েছে।

আহমাদ মানসুর: শুধু সৌদি আরব নয় বরং উপসাগরীয় বহু রাষ্ট্র এখন ইহুদিদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ কাজ শুরু করেছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

‘শেরিল বেনার্ড’ বলেছে, সৌদিতে ইহুদিদের উপাসনালয় নির্মাণের বৈধতা অবশ্যই দিতে হবে।

আহমাদ মানসুর: ইহুদিরাতো মদীনাহ মুনাওয়ারাকে তাদের পুরাতন মালিকানা বলে দাবি করছে।

ড. আব্দুল্লাহ আল নাফিসী:

আল্লাহ আপনার মাঝে ভরপুর বারাকাহ দান করুন। কারণ সম্প্রতি উক্ত বিষয়টি আমার সামনে এসেছে।

[টকশোটি এখানে শেষ হলো]

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

যে কাতার রাষ্ট্রকে মুসলিমদের বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্র মনে করা হয়, সে কাতারই আফ্রিকায়, ফ্রান্সের সামরিক আক্রমণকে সুদৃঢ় করার জন্য তাদের সেনাবহর ও ট্যাংক পাঠাচ্ছে। আর ফ্রান্স কাতারের সহযোগিতা নিয়ে আফ্রিকা অঞ্চল তথা মালি, নাইজেরিয়া ও বুরকিনাফাসোতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। সেইসাথে উত্তর দিক থেকে অবরোধ দিয়ে রেখেছে।

কিছুদিন আগে আল জাজিরা চ্যানেল ‘ফি সাবআ সিনীন’ শিরোনামে একটি ভিডিও ক্লিপ প্রকাশ করে। তাতে প্রেসিডেন্ট সি.সি’র অভ্যুত্থানের সাতবছর পর মিসরীয় যুবকদের অবস্থা কেমন; তা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। চ্যানেলটি সেখানে মিসরের দু’টি দলের কথা উল্লেখ করেছে। একদল যারা মুলহিদে পরিণত হয়েছে আর দ্বিতীয় দল হলো যারা শামের জিহাদে বের হয়েছে।

তো এই ভিডিও ক্লিপ প্রকাশের ক্ষেত্রে তাদের মৌলিক লক্ষ্য ছিলো, দর্শকদের সামনে তাদের বিষাক্ত প্রোপাগান্ডা প্রচার করা। এর দ্বারা তারা জনগণকে এটা বুঝাতে চাচ্ছে যে, ‘জিহাদ’ – এটিও ইলহাদ এবং নাস্তিকতার মতই একটি অপরাধ।

ড. ইয়াদ কুনাইবী:

জাজিরা চ্যানেলে ‘আল-দুহাইজ’ সিরিজের প্রচার, যাতে রয়েছে নাস্তিক্যতাবাদী চিন্তা চেতনা

আল-দুহাইজ একটি কমেডি সিরিজ। এর দ্বারা নানা ধরণের নাস্তিকতার প্রচারণা চালানো হয়। আল জাজিরা চ্যানেলে নিয়মিত এটি সম্প্রচারিত হয়।

ইতিপূর্বে আমরা বলেছি, উক্ত চ্যানেলটি কয়েক মাস পূর্বে ‘ফি সাবআ সিনীন’ শিরোনামে কিছু ডকুমেন্টারি অনলাইনে প্রচার করেছে। এতে জনগণের সামনে ইলহাদ তথা ইসলাম বিদ্বেষকে স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ইতিপূর্বে আমরা আল জাজিরা কর্তৃক কমেডি নাটকের মাধ্যমে ইসলাম ও এর প্রতীকসমূহ নিয়ে যে ঠাট্টা, বিদ্রূপ করা হয়েছে সেসব নিয়ে আলোচনা করেছি।

আলোচিত কাতার রাষ্ট্রই ‘আজমি বিশারা’ এর তত্ত্বাবধানে নতুন একটি আরবি চ্যানেল খুলেছে। যে চ্যানেলটির সূচনা হয়েছে খোলাফায়ে রাশেদিনের বিরুদ্ধে আক্রমণের মধ্য দিয়ে। শুধু এতটুকুতেই তারা থেমে থাকেনি। বরং ইসলামের চির সিদ্ধান্তকৃত (ইজমায়ী) বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও জনগণকে সন্দেহের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অথচ এই চ্যানেলগুলোকে মুসলিমদের সংস্থাগুলোই অর্থায়ন করছে।

প্রত্যেক জাতিই স্বীয় চ্যানেলের মাধ্যমে নিজেদের চিন্তা, ধার্মিকতা এবং ধর্মের মৌলিক বিষয়াদি প্রচার করতে চায়। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে, দ্বীনকে ধ্বংস করে দেয়া, ইলহাদের বিস্তার ঘটানো এবং যুবকদেরকে উদ্দেশ্যহীন বিকৃত পথের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য – একটা সম্প্রদায় ঐ সকল চ্যানেল ব্যবহার করে, যেগুলো ধনী ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর কাছে আছে। ইসলামী রাষ্ট্রগুলো এই অপকর্মের পথে পরস্পর প্রতিযোগিতা করছে। (লা হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ)

প্রিয় ভাই আমার!

এই চ্যানেলের ফেতনা থেকে বাঁচার জন্য আমাদের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

প্রথমত, আমরা আমাদের বন্ধু বান্ধব, সন্তান-সন্তুতিদের মধ্যে যারা দোহাই সিরিয়ালের উপর সদা চোখ রাখে তাদেরকে অতীত-বর্তমানের প্রোগ্রামগুলোর উপর সতর্ক দৃষ্টি দিতে বলবো।

দ্বিতীয়ত, আমরা এই ভিডিওগুলো এবং তার হাকীকত ইন্টারনেটের মাধ্যমে উপযুক্ত স্থানগুলোতে পৌঁছে দেব। যাতে এ সব বিষয়ে জনসমাজের চোখ খুলে দেয়া যায়। তৃতীয়ত, তাদেরকে رحلة اليقين এর অধিবেশনগুলো নিয়মিত দেখার জন্য আহবান করবো। এই অধিবেশনগুলোর লক্ষ্য হলো – বাস্তবিক বা কার্যকারী ইলমী ভাষার মাধ্যমে ইসলামিক চিন্তা ও স্বভাবের প্রতি মানুষের মনোনিবেশ করানো। ঈমানের মজবুত ভিত্তির উপর তাদের তুলে আনার চেষ্টা করাই হবে প্রত্যেক মুমিনের লক্ষ্য। (আল্লাহ সর্ব বিষয়ে পরাক্রমশালী, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না)।

(ড. ইয়াদ কুনাইবী’র বক্তব্য এখানেই শেষ)

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

হে স্বাধীন ও সচেতন দর্শক!

আপনি লক্ষ্য করলে নিশ্চিত হবেন যে, আরব উপদ্বীপের পূর্বাঞ্চলের পেট্রোল খনিতে যুগের হুবাল আমেরিকার ইশারা ছাড়া কোন কিছুই সম্ভব হয় না। একটু দৃষ্টি দিলেই পর্দার ভিতরের লুকায়িত বাস্তবতাও আপনাদের সামনে স্পষ্ট হবে। যা অত্যন্ত নিন্দাযোগ্য।

তৃতীয় পয়েন্ট:

আল জাজিরা চ্যানেল সম্পর্কে আমার আলোচনার তৃতীয় পয়েন্ট; আমার প্রশ্ন – আল জাজিরা কেন আল কায়দার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে? বিশেষ করে কাতার ও আল-কায়দার দ্বন্ধটি কোথায়? কেন কাতার আল কায়দার বিরুদ্ধে এমন অপবাদ দিচ্ছে ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে?

উত্তর: এই প্রশ্নের উত্তর অনেক সহজ। কাতার মূলত আমেরিকার কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার সেবক ও অনুগামী। কাতার অন্যান্য বাহ্যিক ইসলামী রাষ্ট্রগুলোর মতই আমেরিকার কেন্দ্রীয় শাসনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। আমেরিকার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদের চলার কোন উপায় নেই। শুধু কাতার নয়, বরং সৌদি, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বের শাসকরাই আমেরিকার অনুগত।

তারা যে শতভাগ আমেরিকার অনুগত – এর প্রমাণ স্বরূপ নিম্নে তাদের নেতৃবৃন্দের কিছু বক্তব্য তুলে ধরা হলো।

আব্দুল্লাহ আল হাশেমী:

আমার মনে হয়, আমরা ইসরাইলের জন্য হুমকি নই। কারণ ইসরাইল আমাদের জন্য হুমকির কারণ নয়। আমাদের প্রত্যেকের স্বাধীন দেশ রয়েছে। এর মানে এই নয় যে, আমরা অযথাই ইসরাইলের সাথে যুদ্ধ জড়িয়ে পড়বো।

আমরা বুঝি যে, আমরা যেমন আমেরিকার মৈত্রী দেশ, তেমনি ইসরাইলও আমেরিকার মৈত্রী দেশ। আপনাদের জানা আছে যে, আমেরিকা আমাদের জন্য বড় ভাইয়ের ভূমিকায় রয়েছে। যখন আমাদের বড় ভাই বলছেন, তোমরা পরস্পর যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না – তখন আমরা যুদ্ধে জড়াবো, এমনটি কল্পনাও করতে পারিনা।

মুহাম্মদ বিন সালমান:

আজকের সৌদি আরব ৭৯ বছর পূর্বে এমন ছিল না। এখন পুরো সৌদি আরবে সচেতনতা ও উন্নয়নমুলক বিভিন্ন প্রকল্প চলমান আছে। যদিও বিভিন্ন কারণে এটা হতে ৭৯ বছর সময় লেগেছে।

এখন আমি সেই বিষয়ের আলোচনা করছি না। আমাদের দেশের এই রূপ আগে ছিল না। আমরা তো আমাদের পূর্বের ইসলামে ফিরে যাচ্ছি, যা প্রকৃত ইসলাম নামে আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। সেটা ছিলো ইনসাফ-ন্যায়পরায়ণতায় ভরপুর এবং সকল ধর্ম-ঐতিহ্য ও সকল মানুষের জন্য, এককথায় সমগ্র বিশ্বের জন্য উন্মুক্ত। ৩০ বছরের নিচে, সত্তর ভাগ সৌদি জনগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, আমরা আমাদের ভবিষ্যতের মূল্যবান ৩০টি বছর উগ্র চিন্তা-চেতনা লালন করে নষ্ট করতে চাই না। যদি তাই করি তবে অতিশীঘ্রই আমরা নিজেদেরকে ধ্বংস করবো।

জোয়েল রোসনার্গ:

আমরা তাদের (সৌদির) কাছে দাবি জানিয়েছি তারা যেন গির্জা নির্মাণে সচেষ্ট হয় এবং পাঠ্যপুস্তক থেকে উগ্র ও চরমপন্থার বিষয়গুলোকে বাদ দেয়। যদি তারা ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতে উগ্রপন্থীদের সমর্থন করে, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিব।

মোহাম্মাদ বিন সালমানের শাসনকালের সময়টিকে আমরা অনেক গুরুত্বের সাথে দেখছি। আর সেও আমাদের সকল আহবানে সাড়া দিয়েছে। আমার বিশ্বাস তিনি বিরাট সংস্কারমূলক ও কল্যাণমুলক কাজ করছেন। আমাদের যুগে তার মত অন্য কোন ব্যক্তিকে দেখেনি যে একসাথে ৩৫০০ উগ্রপন্থী ইমামকে বরখাস্ত করেছে। তিনি তার উদারতার মাধ্যমে সৌদিআরবের প্রতি আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে চেষ্টা করছেন। কাজটি যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। এখনো অনেক কাজ করা বাকি আছে।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

অপরদিকে ‘আল কায়দা’ – মুজাহিদদের সংগঠন। তারা আল্লাহর অনুগ্রহে মুসলিম দেশগুলোকে স্বাধীন করা এবং পুনরায় খেলাফতে রাশেদাকে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে যুগের হুবাল ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

আল কায়দা ডাকাত, খুনি, বড় বড় অপরাধী ও তাদের দোসরদের হাত থেকে মুসলিমদের লুণ্ঠিত সম্পদ ও তেল-গ্যাসকে উদ্ধার করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাই সঙ্গত কারণেই এই দলটির সাথে কাতারসহ আমেরিকান দখলদারিত্বের অনুগত সকল রাষ্ট্রের মাঝে দ্বন্দ্ব থাকবেই। আর দেশটিতে যদি আমেরিকার সেনানিবাস, বিমান বন্দর এবং সামরিক ঘাটি থাকে, তাহলে এমন লাঞ্ছিত দেশের সাথে আল কায়দার বৈরিতা থাকাই স্বাভাবিক।

চ্যানেলগুলো যদি সত্যিকারার্থে বাস্তব সত্যকে উপস্থাপন করতে চায় – যেমনটি তাদের দাবি ও যা তারা বরাবরের মতোই বলে আসছে – তাহলে মুসলিম জনগণকে উদ্বিগ্ন করে এমন সব ভয়ংকর বিষয়কে তুলে ধরতে হবে। বিশ্ববাসীকেও সচেতন করতে হবে তাদের উপর নেমে আসা সকল বিপদাপদ সম্পর্কে।

আরব উপসাগরে পশ্চিমা সেনার উপস্থিতি কেন? এর পিছনের ইতিহাস কী? সেখানে কি পরিমাণ সেনা আছে? কোন কোন ব্যাটেলিয়ন রয়েছে? তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কী? তারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে? কী কী প্রকল্পে তারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে? তাদের দোসর কারা? কারা তাদেরকে মদদ দেয় এবং বিভিন্ন সেবা প্রদান করে? এ দেশে তাদের শক্তিশালী গুপ্তচর নেটওয়ার্কের সদস্য কারা? – এসবকিছু তুলে ধরতে হবে সংবাদ মাধ্যমে।

[কাতারের আল উদেইদ বিমান ঘাটি (Al Udeid Air Base)। এটি আমেরিকার বিমান ঘাটি হিসেবে পরিচিত। এখানে কাতার ও আমেরিকা উভয় রাষ্ট্রের সেনাদের সম্মিলিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। এই বিমান ঘাটিতে অবস্থানরত আমেরিকার একজন সৈনিকের সাথে একজন মহিলা সাংবাদিকের একটি সাক্ষাৎকার কিছুদিন আগে প্রকাশিত হয়। পাঠকের জ্ঞাতার্থে নিম্নে তা তুলে ধরা হলো।]

আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি:

সাংবাদিক:

৩৭৯ তম সার্ভ স্কোয়াড্রন বাহিনী “স্পার্টা (পেলোপোনিজ) ইউনিট” নামে পরিচিত। এরা ‘আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি’র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। অবশ্য তারা একা দায়িত্ব পালন করেনা। এই ইউনিটের সদস্যরা কাতারের সামরিক পুলিশের সাথে কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে একত্রে এই কাজ পরিচালনা করে। তারা ঘাঁটি ও চারপাশের এলাকার নিরাপত্তার জন্য দৈনিক টহল দেয়। এর কারণ কী?

আমেরিকান সৈনিক:

“আল উদেইদ বিমান ঘাঁটি”র উপর আসা শত্রুপক্ষের যে কোন হুমকিকে যেন আমরা প্রতিরোধ করতে পারি সে লক্ষ্যেই এই নিয়মিত টহল। আমরা ঘাঁটির বাইরে এবং ঘাঁটির চারপাশে কাতারের সেনাদের সাথে এক সাথে কাজ করি।

সাংবাদিক:

“স্পার্টা (পেলোপোনিজ) ইউনিটের সদস্যরা তাদের কাতারের সহকর্মীদের সাথে ডিউটির সময়টাতে পরিচিত হওয়ার এবং সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে।

আমেরিকান সৈনিক:

আমরা এবং কাতারের সামরিক পুলিশ বাহিনী পাহারার জন্য বেশ কয়েকটি যৌথ টহল ইউনিট পরিচালনা করছি। পাশাপাশি বিদ্রোহ প্রতিরোধ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজের প্রশিক্ষণ নিচ্ছি। আমাদের মাঝে মিত্রতা রয়েছে। আমরা উভয় দেশের চলমান ঘটনা প্রবাহ নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করি। একসাথে বসে চা-কফি পান করি।

আমাদের পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্ব তৈরি ও মিত্রতাকে মজবুত করার পিছনে একসাথে চা-কফি পান করা অনেক বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। আমরা একে অপরের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। আমরা যাদের সাথে কাজ করি তাদেরেকে জানি। আমাদের মধ্যে মিত্রতা বেশ গভীর।

সাংবাদিক:

তারা একসাথে কাজ করার সময়, পরস্পরের মাঝে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। তাদের সম্পর্কটি এতটাই গভীর ছিলো যে, তারা একে অপরকে ডাকনাম ধরে ডাকে। তারা একে অন্যের ভাষা এতটুকু শিখে নিয়েছে – যা দিয়ে প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলতে তাদের কোন কষ্ট হয় না।

আমেরিকান সৈনিক:

আমার বিশ্বাস কাতারের সামরিক পুলিশ বাহিনীর সাথে মজবুত সম্পর্ক গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসের পাশাপাশি মজবুত ও গভীর বন্ধুত্ব থাকায়, কাতার আমাদের সাথে সুন্দর আচরণ করছে। আর আমরা যেহেতু ভিন্ন জাতি ও আমাদের সেনাবাহিনীও ভিন্ন, তাই বন্ধুত্বের উপর ভিত্তি করে আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে উঠাই কল্যাণকর হবে।

সাংবাদিক:

বিমান ঘাঁটির নিরাপত্তা নিশ্চিতকরনে স্পার্টা ইউনিট ও কাতারের সামরিক পুলিশ বাহিনী নিজেদের ভাষার জটিলতা ও শিক্ষা-সাংস্কৃতির ভিন্নতাকে কোন প্রতিবন্ধকতা মনে করে না।

উপরোক্ত আলোচনার উপর শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ এর বক্তব্য:

১. কীভাবে আন্তর্জাতিক বড় বড় অপরাধীদের দ্বারা আরব উপসাগরীয় দেশসমূহের রাজনৈতিক নীতি নির্ধারিত হয়? (আমার প্রশ্ন হল;) এই আরবে তারা কয়জন ব্যক্তিকে, কয়টি পরিবারকে, কয়জন আত্মীয়কে এবং কয়টি গোত্রকে কাছে টেনে নিয়েছে এবং তাদেরকে পর্যাপ্ত দান করে প্রতিষ্ঠিত করেছে? আর এর বিপরীতে তারা কয়জনের উপর জুলুম-অত্যাচার করেছে এবং কতজনকে বিতাড়িত করেছে? (এটা সকলেরই জানা আছে)।

২. আরব উপসাগরে ইহুদিদের অনুপ্রবেশ, ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিককরণে ইসরাইলের গুরুত্বপূর্ণ কী কী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে? কোন কোন মিডিয়া তারা ব্যবহার করছে? তাদের অনুগত গুরুত্বপূর্ণ কোন কোন ব্যক্তি আছে? তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি? এগুলো জানতে হবে।

৩. পশ্চিমাদের মুসলিমদের ধন-সম্পদ বিশেষ করে তেল-গ্যাসকে চুরি করার ইতিহাস, পরিকল্পনা, বাস্তবতা ও পরিসংখ্যান সম্পর্কেও আমাদের অবগত থাকতে হবে।

কিন্তু দু:খের বিষয় হলো আল জাজিরা এসব সংবাদ প্রচার করে না। অবশ্য আমরাও এসব বিষয় নিয়ে আল জাজিরা থেকে কোন পদক্ষেপের আশা করি না। কারণ দিন শেষে আল জাজিরা সেই আমেরিকান বাহিনীর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সাথে সংযুক্ত।

বি.বি.সি. চ্যানেল থেকে:

কাতার লন্ডনে ১৫ বিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি বিনিয়োগ করে রেখেছে। ‘হ্যারডস লিমিটেড’ ছিল ব্রিটেনে শেষ কাতারি হোল্ডিং, যা কাতারীরা দেড় বিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে ক্রয় করেছে। এছাড়াও দোহা লন্ডনের আরও কিছু খাতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেমন – লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে, ব্যাংকিং খাত, সানপ্রেস সুপারমার্কেট, বার্কলেস ব্যাঙ্ক, লন্ডনে মার্কিন দূতাবাস নির্মাণ, ক্রিস্টির নিলাম ঘর, এমনকি ব্রিটিশদের বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ আরও অসংখ্য প্রকল্পে কাতার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এছাড়াও “সাউথ হুক স্টেশন” চুক্তির মাধ্যমে কাতারি গ্যাস ব্রিটেনে পরিবহণ করা, তাদের চাহিদার বিশ শতাংশ এলএনজি’তে রূপান্তর করা এবং লন্ডন শহরের চেলসি পার্কের উন্নয়নের জন্য কাতারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

নিম্নে ড. আহমাদ সাবেরের সাথে মিডিয়া হাউজের সঞ্চালকের একটি কথোপকথন তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে কাতার কীভাবে ব্রিটেনকে সাহায্য করছে তার কিছু অবস্থা ফুটে উঠেছে।

সঞ্চালক: মিডিয়া হাউজ থেকে বলছি।

ড. আহমাদ সাবের (অর্থনীতিবিদ): হ্যাঁ, শুনছি। বলুন।

সঞ্চালক: বর্তমানে ব্রিটেন বড় ধরণের অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে।

ড. আহমাদ সাবের (অর্থনীতিবিদ): হ্যাঁ, অবশ্যই।

ড. আহমাদ সাবের (অর্থনীতিবিদ):

আমার মতে ব্রিটেনের চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে (কাতার কর্তৃক) ব্রিটেনে বিনিয়োগ করা একটি কাঙ্ক্ষিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সঞ্চালক: ব্রিটেনে কাতার সরকার যেই সম্পদ খরচ করছে, অর্থমন্ত্রী ‘জর্জ আজমো’ তা সবিস্তারে তুলে ধরেছেন। এরপর সাংবাদিকগণ তাকে প্রশ্ন করেছেন যে, কাতারের এসব সম্পদ কোথা থেকে আসে? ব্রিটেনে কাতার কার সম্পদ বিনিয়োগ করছে? এগুলো কি দেশীয় সম্পদ?

ড. আহমাদ সাবের (অর্থনীতিবিদ): হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে এসব কাতারের উদ্বৃত্ত সম্পদ। কিছু কিছু রাষ্ট্রে প্রায়ই বহির্বিশ্ব থেকে অর্থায়ন করা হয়। আমার বিশ্বাস কাতারে এমনটি হয় না। বিষয়টি সকলের জানা আছে বলে আমরা এখন সেই বিষয়টি তুলে ধরতে চাচ্ছি না। তবে কাতারের কাছে থাকা সম্পদ পুরোটি কাতারের ব্যক্তিগত সম্পদ। পেট্রোল বিক্রি এবং বহির্বিশ্বের সাথে বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে অনেক মুনাফাই অর্জন হয়। এটা তাদের কাছে ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ নামে পরিচিত। অর্থাৎ ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল’ – এক ধরনের রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

ডোনাল্ড ট্রাম্প:

সৌদিআরব যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র। (মধ্যপ্রাচ্যের) এ সকল দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী বিনিয়োগকারী। এমনকি কখনো কখনো সৌদিআরব শত মিলিয়ন ডলারও বিনিয়োগ করেছে। এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় মানুষের জন্য হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব হয়েছে।

একই সময়ে সৌদি আরব আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে কাজ করছে। ইসরাইলের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে ও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

এটিতো হল কাতারের প্রকাশ্য অবস্থা। আড়ালে যা ঘটেছে তা আরও ভয়াবহ।

তাইসির উলওয়ানি: (শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ’কে প্রশ্ন করেন)

কিছু ছোট ছোট দেশ আছে, যাদেরকে ব্যক্তিগত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে দুর্বল মনে করা হয়। আমেরিকাকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে তাদের এই বিষয়টি কি ওজর হিসেবে গ্রহণ করার সুযোগ আছে?

উদাহরণত: আমরা কাতারের কথা উল্লেখ করতে পারি। কাতার একটি ছোট রাষ্ট্র। তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একবার বলেছেন: ‘আমাদেরকে বড় বড় রাষ্ট্র চতুর্দিক থেকে ঘিরে আছে। তারা ইচ্ছা করলে আমাদেরকে নিমিষেই মানচিত্রের বুক থেকে মুছে ফেলতে পারবে। তাই কাতার আমেরিকা ও অন্যান্যদের সাথে মৈত্রী সম্পর্ক করতে বাধ্য’। কুয়েত ও বাহরাইন এর ক্ষেত্রেও এমন ওজর রয়েছে।

শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ:

এসব বিষয়ে অর্থাৎ ‘মুসলিমদের হত্যার মতো বিষয়ে’ ‘আমরা বাধ্য হয়ে করি’ এই যুক্তি কখনো শরয়ী ইকরাহের অন্তর্ভুক্ত হবে না। এটিকে শরয়ী ইকরাহ বলা হয় না।

এখন যদি কাতারের আমির এসে তার কাছের একজনকে আদেশ করে আপনার (তাইসিরের) ছেলেকে হত্যা করার জন্য, আর আমরা ঐ সেনার কাছে এসে জিজ্ঞেস করি, তুমি কেন ভাই তাইসিরের ছেলেকে হত্যা করলে?

অতঃপর সে যদি উত্তরে বলে, ‘আমি তা করতে বাধ্য। হে তাইসির! আমি আপনাকে কী পরিমাণ সম্মান করি সে বিষয়ে আপনি অবগত আছেন। তবে এখন আমি কি করবো? আমিরের হুকুমে আমি তো আপনার ছেলেকে হত্যা করতে বাধ্য’। এমন হলে আপনি (তাইসির) বিষয়টি কীভাবে দেখবেন?

এটাকে যদি আমরা ওজর হিসেবে গ্রহণ করি, তাহলে তো এসব অমূলক যুক্তির মাধ্যমে সকল মুসলিমদের রক্ত বৃথা যেতে থাকবে। তাই এটি আক্ষরিক অর্থে বাধ্যকরণ হলেও শরীয়তের পরিভাষায় এটি ইকরাহ বা বাধ্যকরণ হবে না।

এই সেনার প্রাণ আপনার ছেলের প্রাণের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ না। এই সেনা নির্যাতিত-মাজলুম ব্যাক্তিকে হত্যা করার অধিকার রাখে না। একইভাবে আপনার ছেলেকে হত্যা করার ক্ষেত্রে কোন জালেমকে সাহায্য করার অধিকারও তার নেই।

তাহলে আমরা সকলে বুঝতে পেরেছি যে, এই ধরনের বাধ্যকরণকে শরয়ী পরিভাষায় ‘ইকরাহ’ আখ্যা দেয়া যাবে না।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

কুফফারদের অনুগত রাষ্ট্র নিয়ে আমাদের পূর্বের আলোচনায় ফিরে আসি।

এখানে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট স্পষ্ট করতে চাই। সেটি হলো, এই অনুগত রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক দ্বন্দের কারণে কখনো কখনো মুসলিম, বিশেষ করে মুজাহিদরা ফায়দা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু দুটি বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে:

১. সেসকল ব্যক্তিদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে যারা এসব রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দের প্রশংসা করে। তারা এমনভাবে প্রশংসা করে, যেন এরা নেককার আল্লাহ ওয়ালা, ইমামুল মুসলিমীন এবং খোলাফায়ে রাশেদীন। যদিও তারা আল্লাহর শরীয়াহ বাদ দিয়ে মানব রচিত বিধান দিয়ে শাসনকার্য পরিচালনা করার মতো মারাত্মক অপরাধে লিপ্ত।

শুধু তাই নয়। বরং এদের কেউ কেউ এসকল নেতৃবৃন্দ নিয়ে প্রতিনিয়ত গর্ব করে এবং অন্যদেরকে এর প্রতি দাওয়াত দিয়ে যায়। উদাহরণত; এরদোগানের কথা বলা যায়। তিনি মিসর সফরকালে মানুষদের সুস্পষ্টভাষায় স্যেকুলারিজমের প্রতি আহবান করেছেন। এছাড়া তাদের ভূমিগুলো ভেতরগতভাবে কুফফার বাহিনী দখল করে নিয়েছে। ইসরাইল ও পশ্চিমা বিশ্বের সাথে সামরিক ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলোকে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে তারা পালন করছে।

শুধু এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি বরং তাদের কোন কোন রাষ্ট্রের তো তুরস্কের মতো ন্যাটোর সদস্যপদ রয়েছে। তারা মুজাহিদদেরকে তাগুতের কাছে হস্তান্তর করছে। এমনটি তুরস্ক সরকার বহুবার করেছে।

তুরস্কের জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (Justice and Developmant party) শাসনামলে তুরস্ক সরকার শাইখ আব্দুল হাদী আল ইরাকীকে (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) আমেরিকানদের হাতে তুলে দিয়েছে। প্রিয় ভাই আব্দুল্লাহ আজ্জামকে মরক্কোর হাতে তুলে দিয়েছিল। তেমনি মিসরের একজন যুবককে তুরস্কের কাছে চাওয়ার পর, তারা সেই যুবককে সিসি সরকারের কাছে হস্তান্তর করে।

দ্বিতীয় বিষয়টি হচ্ছে; মুসলিম জাতির সাথে এই দেশগুলোর গাদ্দারী। যেমনটি পাকিস্তানসহ সুদান, তুরস্ক এবং মালয়েশিয়া করেছে। তারা স্বদেশ থেকে চলে আসা হিজরতকারী মুসলিমদেরকে নিজ নিজ দেশের তাগুত সরকারদের হাতে তুলে দিয়েছে।

কেউ কেউ আপত্তি তুলে বলছে, এসব দেশ যে মুসলিমদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছে তার প্রমাণ কী? তাদের মতে, এসকল দেশ স্বদেশত্যাগকারীকে আশ্রয় প্রদান করে, ফিলিস্তিনীদের সহায়তা করে এবং অন্য অনেক তাগুত সরকারের সমালোচনা করে। যদিও বাস্তবতা হচ্ছে তারা একে অন্যের সমালোচনা করলেও সবাই তাগুত।

অতিসংক্ষেপে দুটি উদাহরণের মাধ্যমে এই প্রশ্নের জবাব মিলবে। যে উদাহরণ দুটির ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই।

পাকিস্তান ও সুদানের উদাহরণ:

প্রথম দিকে আফগান মুজাহিদ, আফগানের আনসার এবং পুরো মুসলিম বিশ্ব থেকে আগত মুহাজিরদের প্রতি তুরস্ক বা কাতার সহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সাহায্য সহযোগিতার তুলনায় পাকিস্তানের সহযোগিতা ছিলো শত শত গুণে বেশী। এরপর পাকিস্তান তাদেরকে দূরে ঠেলে দিয়েছে।

আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যখন নব্য ক্রুসেড যুদ্ধ শুরু হলো, তখন পাকিস্তান প্রতিবেশী একটি মুসলিম জনগণের বিরুদ্ধে সবচেয়ে ঘৃণ্যভাবে সেই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। অথচ এই মুসলিম জনগণ পাকিস্তানের কোন ক্ষতি করেনি। পাকিস্তান ইসলামী ইমারতের কমান্ডার এবং আফগানিস্তানে আগত মুহাজিরদের বিতাড়িত করেছে। হাজার হাজার আফগান মুজাহিদ ও মুহাজিরকে পাকিস্তান বন্দী করেছে, তাদেরকে শাস্তি দিয়েছে এবং তাদেরকে আমেরিকার হাতে তুলে দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ জেলে থেকে মৃত্যুবরণ করেছে। অতঃপর যখন আমেরিকা আফগান মাটিতে ব্যর্থ হয়েছে এবং তাদের সেনা প্রত্যাহার নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু হয়েছে, তখন পাকিস্তানও তার নীতিতে পরিবর্তন আনা শুরু করেছে, যদিও তাদের শত্রুতা এখনো চলমান।

সুদান প্রসঙ্গ:

সুদানে স্বাধীনতাকামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবার পর ঘোষণা দিয়েছিল যে, সুদানের একটি দ্বীনি লক্ষ্য রয়েছে। আর বাস্তবেই সুদান তাদের সংবিধানে কিছু পরিবর্তন এনে কিছু শরয়ী দণ্ডবিধি কার্যকর করেছিল। পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাহিনী গঠন করে দক্ষিণ সুদানে জিহাদের ঘোষণা দিয়েছে এবং তা স্বাধীনও করেছে। এছাড়া বিভিন্ন ইসলামী দলের নির্বাসিত নেতাদের তার দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এটি ছিলো শুরুর দিকে অবস্থা।

এরপর যখন সুদানের উপর বহির্বিশ্ব থেকে চাপ আসে তখন তারা পুনরায় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে এবং বেশ কিছু মুহাজিরদের স্বদেশীয় সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। যেমনটি ঘটেছে লিবিয়ার কয়েকজন ভাই এবং শাইখ মুস্তফা হামজা (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু) এর সাথে। শাইখ উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ, তার সঙ্গীদের এবং অন্যান্য সকল ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দেশ থেকে বিতাড়িত করে। তাদের ব্যাপারে সব তথ্য আমেরিকার কাছে তুলে দেয়।

আমেরিকার সাথে মিলে তদন্তের জন্য এবং ইসলামী আন্দোলনের মুহাজিরদের ব্যাপারে তথ্য বের করার জন্য যেসব সুদানিদেরকে আমেরিকা তলব করেছিল, সুদান সরকার তাদেরকেও আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করেছে।

শুধু তাই নয়, তারা মুসলিমদের সাথে এমন আচরণ করছে; যা শুনে মানবতার প্রতি দরদ রাখে এমন যে কেউ কান্নায় বুক ভাসাবে। আমাদের এক গর্ভবতী মুসলিম বোনকেও তারা দেশছাড়া করেছে। কিছু বন্দীকে স্বপরিবারে অপরিচিত ভিনদেশে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের লিবিয়ার কিছু ভাইকে তাদের সুদানী স্ত্রীসহ একসঙ্গে বের করে দিয়েছে।

শাইখ উসামা বিন লাদিন রহিমাহুল্লাহ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রজাতন্ত্রী সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট উমর হাসান আহমাদ আল বশীরের (১৯৯৩-২০১৯) কাছে গিয়েছিলেন। শাইখ বুঝাতে চেয়েছেন যে, আপনার এই সিদ্ধান্তের কারণে মূলত আমেরিকা ও তাদের দোসরদের এজেন্ডা বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু বশীরের ঘুরেফিরে কথা একটিই; আর তা হলো – এটি সুদানের কল্যাণের জন্য করা হয়েছে। এরপর শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ এর বিমান জাজিরাতুল আরব হয়ে আফগান অভিমুখে রওয়ানা হয়ে যায়।

আল্লাহর ইচ্ছায় সুদানের মাটিতে আরব মুহাজিরদের মেহনত ছিল – মুহাজিরদের প্রতি আল্লাহর এক অশেষ নেয়ামত এবং আমেরিকার জন্য এক বিরাট বিপর্যয়। শাইখ উসামা বিন লাদিন রহিমাহুল্লাহসহ তার সঙ্গীরা আফগানে পৌঁছেই আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দেন। আমেরিকায় আঘাত করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেন। কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি এবং তানজানিয়ার রাজধানী দারুস সালামে আমেরিকানদের দূতাবাসে আঘাত হানেন। এরপর USS col (ইউ এস.এস কোলে) বোমা হামলা চালান। এরপর নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটনে সবচেয়ে বড় বিজয় অর্জিত হয়। আমেরিকার অহংকার ও অর্থনৈতিক প্রতীক ‘টুইন টাওয়ারে’ হামলা চালান।

তবে আমাদের আরও একটি বিজয় অর্জিত হয়েছে, যা বাস্তবিক অর্থে এসব বিজয় থেকে কোন অংশে কম না। আর এই বিজয়ের ব্যাপারে শাইখ উসমা রহিমাহুল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আল্লাহর স্বীয় অনুগ্রহ ও দুর্বল বান্দাদের প্রতি নেয়ামত স্বরূপ আল্লাহ চাইলে তার শপথটি পূর্ণ হবে। আর সে বিজয়টি হলো- রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ব্যঙ্গচিত্র তৈরি করে অপমান করায়, ইসলামাবাদে অবস্থিত ডেনমার্ক দূতাবাস এবং প্যারিসের সাপ্তাহিক রম্য ম্যাগাজিন ‘চার্লি হেবদো’ থেকে প্রতিশোধ নেয়া। লাখো কোটি শুকরিয়া আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে যিনি এসকল হামলার দ্বারা মুমিনদের অন্তরকে প্রশান্ত করেছেন। আমি এখানে সায়্যিদিনা হাসসান বিন সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর একটি কবিতা উল্লেখ করছি। তিনি বলেন –

وقال الله: قد يسرت جندا  *  هم الأنصار عرضتها اللقاء

“আল্লাহ বলেন: আমি একটি বাহিনী তৈরি করেছি, তারা হল আনসার। শত্রুর মুখোমুখি হওয়াই যাদের একমাত্র লক্ষ্য।

لنا في كل يوم من معد  *  قتال أو سباب أو هجاء

প্রতিদিনই আমাদের একটি করে বিজয় হয়, লড়াই, নিন্দা কিংবা কথা দিয়ে।

فنحكم بالقوافي من هجانا  *  ونضرب حين تختلط الدماء

যারা আমাদের নিন্দা করে তাদের ফায়সালা আমরা কবিতা দিয়েই করি, কিংবা চরম আঘাতে তার রক্ত ছড়িয়ে দেই।

ألا أبلغ ترامب والعلوج  *  مهلهلة فقد برح الخفاء

শত্রু আর অপরাধীদের জানিয়ে দাও! বিজয় তো আমাদের সন্নিকটেই। সামনে আর কোন বাধা নেই আমাদের।

لهجو محمد سنجيب عنه  *  وعند الله في ذاك الجزاء

মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিয়ে কেউ নিন্দা করলে অবশ্যই তার জওয়াব আমরা দিব। আর তার প্রতিদান আমরা আল্লাহর কাছে পাবো।

أتهجوه ولست له بكفء  *  فشركما لخيركما الفداء

তুমি কে তাকে নিন্দা করার? তোমার মতো নিকৃষ্ট তাঁর মতো শ্রেষ্ঠ ব্যক্তির জন্য কোরবান হও।

فإن أبي ووالده وعرضي  *  لعرض محمد منكم وقاء

আমি, আমার বাপদাদা এবং আমার সম্মান, তোমাদের বিরুদ্ধে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানের ঢাল স্বরূপ।

لساني صارم لا عيب فيه  *  وبحري لا تكدره الدلاء

আমার জিহবা অতি ধারালো, তাতে কোন জড়তা নেই। আর সাগর সম বিশালতায় তোমাদের বালতি পরিমাণ নিন্দা কোন প্রভাবই ফেলবে না। ”

যদি শাইখ উসামা রহিমাহুল্লাহ ও তার সঙ্গীরা সুদানে থেকে যেতেন, তাহলে এই বিজয়গুলো অর্জিত হতো না। মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন:

كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تَكْرَهُوا شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ وَعَسَىٰ أَن تُحِبُّوا شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

“অর্থ: তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরয করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না”। (সুরা বাকারা ২:২১৬)

এর আগে সুদান কার্লোসকে ফ্রান্স সরকারের হাতে তুলে দিয়েছে। অথচ কার্লোস সুদানে আসার পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। তিনি সুদানের কাছে আশ্রয় চাইলে তারা তাকে আশ্রয় ও জানের নিরাপত্তা প্রদান করে।

কার্লোসের সকল প্রচেষ্টা ছিলো মুসলিমদের শত্রুদের প্রতি। কিন্তু পরবর্তীতে সুদান তার সাথে গাদ্দারী করে। লোকটির অসুস্থতার সময়ে, তার শরীরে অস্ত্রোপচারের সময়কে কাজে লাগিয়ে তারা তাকে অচেতন অবস্থায় ফ্রান্সের কাছে পাঠিয়ে দেয়। তাদের ভয় ছিলো ফ্রান্স জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদকে কাজে লাগিয়ে সুদানের মাটিতে নতুনভাবে আক্রমণ করতে পারে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো; ফ্রান্স কার্লোসকে হাতে পাওয়ার পরও ফের সুদানের বিরুদ্ধে নতুন করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ফলে সুদান দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টি বরবাদ করেছে।

কার্লোস জেলখানা থেকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘আমি মুসলিম এবং আমি উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহ হাতে জিহাদের বাইয়াত দিয়েছি’।

প্রজাতন্ত্রী সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট উমর হাসান আহমাদ আল বশীর ও সুদানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সুদানের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতা ও চিন্তাবিদ হাসান আব্দুল্লাহ আত তুরাবী দক্ষিণ সুদানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সংলাপ শুরু করেন। এগুলো করার পিছনে মূল কারণ ছিল, আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বকে সন্তুষ্ট করা। কিন্তু ফলাফল হিসেবে পেট্রোল সমৃদ্ধ সুদানের অর্ধেক তারা হাত ছাড়া করেছে।

সংলাপ থেকে ফিরে এসে তারা আত্মকলহে লিপ্ত হয়। ফলে তাদের সহযোগীরা তাদের সাথে ভিন্ন আচরণ করে বসে। এখন তারা কখনো জেলে যাচ্ছে, কখনো অভিযুক্ত করা হচ্ছে কিংবা তাদেরকে খোঁজ করা হচ্ছে। ফলে দুনিয়া ও আখেরাত উভয়টিই বরবাদ হয়েছে এসব বুদ্ধিজীবীদের। আর এটিই হলো স্পষ্ট ক্ষতি।

মহান আল্লাহ সত্য বলেছেন,

﴿ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ

“অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের আমলকে সংশোধন করেন না”। (সূরা ইউনুস ১০:৮১)

পূর্বের আলোচনার সাথে একটি কথা সংযুক্ত করছি – ইউরোপীয় বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র মুসলিম দেশগুলো থেকে বের হয়ে আসা শরণার্থীদেরকে বিভিন্ন কারণে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছে। তাই বলে এরা কি আল্লাহ ওয়ালা ও নেককার হয়ে গেছে? নাকি তারা মুসলিমদের সবচেয়ে বড় শত্রুই রয়ে গেছে?

১. হে মুজাহিদ, মুহাজির, স্বাধীন সচেতন ভাই!

বড় বড় অপরাধীদের অধীনে থাকা এসব শাসনব্যবস্থার পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে ইচ্ছা করলে আপনি উপকৃত হতে পারেন। তবে যেকোন মুহূর্তে তারা যেন আপনার সাথে কোন গাদ্দারি করতে না পারে, সে জন্য পূর্ণ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

ঐ সব দাঈ, আলোচক ও নেতাদের থেকে সবচেয়ে বেশী সতর্ক থাকবেন, যারা এসব শাসন ব্যবস্থার প্রশংসা করে বলে যে – অমুক প্রেসিডেন্ট তো যোহরের নামাজ পড়েছে বা আছরের নামায পড়েছে। অমুক আমীরের হাতে কোন রক্ত ঝরেনি। অমুক প্রধানমন্ত্রী অজুহাত পেশ করেছে যে, যখন তাকে এই মুহাজিরদের স্বদেশ থেকে হস্তান্তর করতে বলা হয়েছে, তখন তিনি না বুঝে তাদেরকে স্বদেশের তাগুতদের হাতে তুলে দিয়েছেন ইত্যাদি।

কবিতার অনুবাদ:

أمرتهم أمري بمنعرج اللوى

মরুভূমির বাঁকে বাঁকে আমি তোমাকে সতর্ক করেছি,

فلم يستبينوا النصح إلّا ضحى الغد

আমার কল্যাণকামিতার প্রমাণ তুমি আগামী সকালে অনুভব করবে।

২. আমি স্পষ্ট করতে চাই – আমাদের প্রকৃত শত্রু কারা?

জেলখানার কয়েকজন বন্দি মুক্তি পেয়ে এই বিভ্রান্তিকর মতটি প্রকাশ করেছিলো যে, মিসরের চতুর্থ প্রেসিডেন্ট (১৯৮১-২০১১) হোসনি মোবারক মুসলিমদের শাসক। তাদের দাবি অনুযায়ী আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাজহাবের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী – হোসনে মুবারকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নেই।

স্পষ্টত এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ নয়, বরং এটি বুশ, ওবামা, ট্রাম্পের সুন্নত।

তাদের আরও দাবি মিসরের তৃতীয় প্রেসিডেন্ট (১৯৭০-১৯৮১) মুহাম্মদ আনোয়ার মুহাম্মদ আস সাদাত ফেতনার সময়ে শাহাদাত বরণ করেন। জেল থেকে বেরিয়ে তারা এই জাতীয় অনেক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।

৩. যা স্পষ্ট করা জরুরী মনে করছি, তা হলো; মুহাম্মদ বিন সালমান ও জাজিরাতুল আরবের তাগুতদের মতো বড় বড় অপরাধীদের প্রতি দরবারী আলেমদের উচ্চ প্রশংসা’র বিষয়টি। এই আলেমরা এসকল তাগুতদের উলুল আমর বলে আখ্যায়িত করে। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ওয়াজিব মনে করে না। অথচ তাদের কেউ কেউ টেলিভিশনে এসে দৈনিক আধা ঘণ্টাব্যাপী ব্যভিচারের দিকে আহবান করে।

৪. আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাচ্ছি। ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত কিছু সংগঠন ‘আল ওয়ালা ওয়াল বারা’ এর আকীদাকে ভুলন্ঠিত করছে। তারা তাগুত রাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের প্রশংসা করে বলে যে, ‘এরা মানবকল্যাণে কাজ করে। কিন্তু তাদের মাঝে অল্প কিছু খারাপ লোক আছে। এরাই অন্যদের খারাপ কাজে উদ্বুদ্ধ করছে’।

এর দ্বারা এসকল ইসলামি দলগুলো মূলত জাতীয়তাবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষেই শ্লোগান দিচ্ছে। অথচ তাদের রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থা আল্লাহর আইনের বিপরীতে পরিচালিত হয়।

আপনি লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ জাহিলি যুগের ফায়সালার প্রশংসা করে, তাকে সর্বোত্তম ফায়সালা বলে বেড়ায়। কিন্তু যখন তাদেরকে পাকড়াও করা হয় বা কষ্ট দেয়া ও নির্যাতন করার জন্য ফায়সালা করা হয় – তখন তারা জোর গলায় চিৎকার করে বলতে থাকে – এটি ভুল ফায়সালা।

যাদের অন্তরে অণু পরিমাণ মানবতাবোধ, আত্মমর্যদাবোধ রয়েছে তাদের প্রত্যেকে যে দৃশ্যটি দেখে বিহ্বল হয়ে পড়ে, সে দৃশ্যপটটি হলো – বিক্ষোভকারীদেরকে হত্যা করার জন্য অস্ত্র-সজ্জিত উদ্ধত পুলিশ বাহিনীকে লক্ষ্য করে এক পাগড়ীওয়ালা আল্লাহর কসম খেয়ে বলেছে যে, এই পুলিশ বাহিনীরা আমাদের শত্রু নয়। নিঃসন্দেহে এটিই সর্বোচ্চ গোমরাহি।

মিসরের এক পাগড়িধারী বলেন, “শত্রু তোমাকে আঘাত করতে করতে একপর্যায়ে শহীদ করে ফেলবে। এতে কোন সমস্যা নেই, বরং তুমি শাহাদাত বরণ করবে। জেনে রাখো তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কোন যুদ্ধ নেই। কারণ আল্লাহর কসম! তারা তো আমাদের শত্রু না। আমাদের একটিই লক্ষ্য – আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সামনে অগ্রসর হতে থাকবো। তারা আমাদের শত্রু নয়, তাই তুমি শান্তিপূর্ণ অবস্থান করো। সংঘাতে যেওনা”।

এই অযৌক্তিক, স্বভাববিরোধী ও শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক তামাশাপূর্ণ দৃশ্যটিই মুসলিম উম্মাহ’র ভেঙ্গে পড়ার কারণ। কুফফাররা ইসলামী আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন দলের শত্রু-মিত্রের পার্থক্য নির্ণয়ের মানদণ্ডকে নড়বড়ে করে দিতে চেষ্টা করে। শত্রুমিত্র নির্ণয়ের মানদণ্ড ভেঙ্গে পড়াই, উম্মাহর পরাজয় নিশ্চিত করে।

৫. আরেকটি বিষয় নিয়ে কিছুটা আলোকপাত করবো, তা হলো – একটি ইসলামী আন্দোলনের প্রথম সারির এক নেতা বলেছেন যে, তাদের সাথে কথিত ইসলামী সরকারের সাথে কোন বিরোধ নেই। কারণ আমরা সকলে মুসলিম। তবে আমাদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের ক্ষেত্র হলো, গণতন্ত্র নিয়ে। (অর্থাৎ কে কত বেশি গণতান্ত্রিক হতে পারে তা নিয়ে!!)

ভারত ও ইসরাইলে সবচেয়ে বেশী গণতন্ত্র চর্চা হয়। আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সেও চর্চা হয়। আমার প্রশ্ন হলো; এই গণতন্ত্র চর্চা এমন রাষ্ট্রগুলোকে কী শরয়ী রাষ্ট্র বানিয়ে দিবে? এমন রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্ত কী শরয়ী সিদ্ধান্ত হয়ে যাবে? এটি অন্ধত্বের সাথে সুদূরপ্রসারী ভ্রষ্টতা নয় তো আর কী?

৬. তিউনিসিয়ার আন নাহদার প্রতিষ্ঠাতা রশিদ গানুশি ও তার বাহিনীর লজ্জাজনক কর্মকাণ্ড –

রশিদ গানুশি ঘোষণা দিয়েছেন যে, ‘এখন মুক্তির একমাত্র উপায় হলো – পদত্যাগ করা’। তিনি শরিয়তের বিপরীতে ফ্রান্স ও আমেরিকাকে সন্তুষ্ট করার জন্য ও তার আন-নাহদা আন্দোলনের সময়ে জনগণের আত্মত্যাগ ও কোরবানিকে বিক্রি করার জন্য ‘নিজাম বিন আলী’র দলের কাছে পদত্যাগ করেছেন।

আল মারযুকী: (প্রজাতন্ত্রী তিউনিসিয়ার চতুর্থ প্রেসিডেন্ট (২০১১-২০১৪) )

আরব বসন্তের আন্দোলন প্রায় সমাপ্তির দিকে। আরব বসন্তের সর্বশেষ দুর্গ তিউনিসিয়া বর্তমানে ভেঙ্গে পড়েছে। অত্যন্ত আফসোসের সাথে বলতে হয় – এই দুর্গটি ভেঙ্গে পড়েছে সাবেক সরকারের সাথে কাজ করার সময় আন-নাহদার মারাত্মক মারাত্মক অপরাধের সাথে জড়িয়ে পড়ার কারণে।

আন-নাহদার কল্পনা ছিলো – তারা সাবেক সরকারকে কাবু করে ফেলবে। কিন্তু পরিশেষে সাবেক সরকার আন-নাহদা উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আন-নাহদার সুনাম-সুখ্যাতি নষ্ট করেছে। ফলে বর্তমানে যারা রাজপথে বের হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই আন-নাহদার বিরোধী।

এটি আমাদের বুঝতে হবে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, মানুষ এখন আন-নাহদা ও আস সারওয়াতুত তিউনুসিয়াকে এক মনে করে বসে। অথচ ২০১৪ সালে আন-নাহদা ‘আস সারওয়াতুত তিউনুসিয়ার’ দল থেকে বের হয়ে, নষ্ট শাসন ব্যবস্থাকে ঠিক করার আহবানে তোনুসের সাথে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হয়।

‘তেহয়া তোনুস’ ও ‘ক্বালবে তোনুসে’র সাথেও মৈত্রী চুক্তি করে আন-নাহদা। আর এই প্রতিটি রাজনৈতিক দল – পরিপূর্ণরূপে বিকৃত দল। বর্তমানে মানুষ আন-নাহদা, আস সারওয়াতুত তিউনুসিয়া এবং ফাসাদ সৃষ্টিকারী দলকে একই মনে করে। এটি একটি ভয়ংকর বিষয়।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

আর এই ধরনের ব্যক্তির মাধ্যমে না কোন ইসলামী আন্দোলন সফল হবে, আর না কোন কুফরি আন্দোলন। বর্তমান শাসন ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ করে তার স্থানে নতুন শাসন ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠা করার নামই জাগরণ। তারা তা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এইসব ব্যক্তিবর্গ ও তাদের মতো লোকেরাই আরব বসন্তের ব্যর্থ হওয়ার পিছনে সবচেয়ে বড় দায়ী। তারা একই চিন্তা-দর্শন বারবার বলতে থাকে। একই ব্যর্থ দুর্যোগ পুন:পুন চর্চা করার মাধ্যমে পশ্চিমাদের অনুমতির ও সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।

৭. ‘বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধে কারা আমাদের শত্রু?’ এটা কীভাবে বুঝতে পারবো – সে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবো। সেই দল নিয়েও আলোচনা করবো, যাদের দাবি তারা জিহাদি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। অথচ তারা এমন সব গাদ্দারদেরকে সম্মানিত করছে, যারা আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থার লালিত কর্মচারী। তারা মনে করে ‘আহমাদ শাহ মাসউদ’ একজন মুসলিম ও সাহসী যোদ্ধা। আমি জানি সে কেমন মুজাহিদ ও কেমন মুসলিম।

এখন বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু তথ্য উদ্ধৃত করা হয়েছে, প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝার জন্য।

মন্তব্য প্রতিবেদন:

২০০০ সালের জুন মাসে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল আফগান নেতা আহমাদ শাহ মাসঊদের সাথে সাক্ষাৎ করার উদ্দেশ্যে পাঞ্জশির উপত্যকায় সফর করে। এই প্রতিনিধি দলের প্রধান ছিলেন, জেনারেল ফ্লিপ মারিও। তিনি যুগোস্লাভিয়ায় জাতিসংঘের হয়ে সেনাপ্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। আর যে ব্যক্তি আহমাদ শাহ মাসঊদের সাথে ফ্লিপ মারিও’র  সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেছে, সে হলো মাসউদের পুরাতন বন্ধু ‘পেটোর কালিয়া’। পেটোর কালিয়া আফগানে রাজনৈতিক সংকট ও সংঘাত নিরসনের চেষ্টায় কাজ করেছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আহমাদ শাহ মাসঊদ বলেন, ‘আফগানিস্তানে আপনাদের সকলকে অভিনন্দন’।

১৯৯৯ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আহমাদ শাহ মাসঊদের সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষক ও সামরিক উপদেষ্টা জি.পি. নাজিব বলেন ;

আমি স্থানীয়দের মতো বকুল অঞ্চলের টুপি পরতাম ও তাদের ভাষায় কথা বলতাম। আমি যেহেতু ফ্রান্সের ভাষায় কথা বলতাম না, তাই আফগানিস্তানের স্থানীয়রা বিশ্বাস করতো যে আমি আফগানী। আর ঐ সময় মানুষের সাথে আমার এই সম্পর্কটা অনেক কাজে লেগেছে।

যাইহোক, আমার বিশ্বাস আশপাশে বিভিন্ন দলের প্রায় পনেরো হাজার যোদ্ধা ছিলো। সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য সব দল উপস্থিত না হলেও, বেশ কিছু দল উপস্থিত হয়েছিলো। আমার মনে হয়েছে আহমাদ শাহ মাসঊদ কোন নির্বোধ ব্যক্তি নয়। বরং সে তীক্ষ্ম মেধার অধিকারী ছিল। তালেবানদের প্রতিহত করার জন্য তার সামরিক সহযোগিতার প্রয়োজন ছিল। ব্যক্তিগত স্বার্থে পিছু হটবে না, এমন সাহসী ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ তার খুব প্রয়োজন ছিল।

আহমাদ শাহ মাসউদের সাথে ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ অব্যাহত ছিল। তখনকার চলমান পরিস্থিতি নিয়ে ‘মাসউদের দৃষ্টিভঙ্গি’ কী তা নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য এবং আল কায়দা নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য পালাক্রমে মাসউদের সাথে ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা সাক্ষাৎ করতে থাকে।

মাসউদ ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি টার্গেট ছিল। স্থানীয় গোয়েন্দাদের একটি বড় নেটওয়ার্ক এর সাথে তার সম্পর্ক থাকায় তিনি কখনো কখনো উসামা বিন লাদেন এবং আল কায়দার গতিবিধি সম্পর্কে বেশ কিছু বিষয় আগেই জানতেন – যা ফ্রান্সের সাথে শেয়ার করা যেতো। আমি আহমাদ শাহ মাসউদের অনুমতিক্রমে ফ্রান্সের গোয়েন্দাদের কাছে উত্তরাঞ্চলের সমতল ভূমি  সম্পর্কে সামরিক তথ্য প্রচার করতাম। কারণ তখন আমি সেখানে রিপোর্টারের দায়িত্ব পালন করছিলাম।

আহমাদ শাহ মাসউদ: আপনার প্রত্যাবর্তন নিরাপদ হোক।

জেনারেল ফ্লিপ মারিও: আসলে এখানে আমার অনেক ভালো লেগেছে। আবার দেখা হবে। আমরা আপনাকে প্যারিসে ও ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আবার ফিরে আসবো।

পত্রিকার মন্তব্য:

এরপর ফ্লিপ মারিও ফ্রান্সের শহর স্ট্রাসবাগে (Strasbourg) ফিরে সরকারীভাবে আহমাদ শাহ মাসউদকে আমন্ত্রণ করার ব্যাপারে পার্লামেন্ট স্পিকার ‘নিকিউল ফন্টেইন’কে রাজি করান।

আলাঁ ম্যাডেলিন:

আহমাদ শাহ মাসউদের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ও তার সাথে কিছু সময় কাটানোর জন্যে আমি বিশেষভাবে পাঞ্জশির উপত্যকায় গিয়েছি। মাসউদ বাস্তবেই শক্তিশালী ব্যক্তি। তিনি অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রমী, যার কোন তুলনা হয় না।

আমি সেখানে অবস্থানকালে আহমাদ শাহ মাসউদ আমাকে বারবার একটি বার্তাই দেয়ার চেষ্টা করেছেন যে, তালেবানের অধীনে আফগানিস্তান পুরো বিশ্বের জন্যই ঝুঁকি তৈরি করবে। তিনি বিষয়টি নিয়ে আমাকে বারবার সতর্ক করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এখন এই স্বৈরাচারী শাসন থেকে আফগান জনগণের স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রয়োজন’। তখন আমি তাকে বলেছি, ‘আপনি অবশ্যই ফ্রান্সে আসবেন’। আর বর্তমান পরিস্থিতির সরেজমিনে পর্যবেক্ষণসহ আরও কিছু কারণে ফ্রান্সের বেশ কিছু সেনা এখন আফগানিস্তানে অবস্থান করছে।

পত্রিকার মন্তব্য:

আহমাদ শাহ মাসউদ ইউরোপের পার্লামেন্ট থেকে দাওয়াত পেয়ে প্যারিসে প্রথম স্টেশনে অবস্থান করেন।

আব্দুল্লাহ: সভাটি হঠাৎ করে হওয়ার পরও আমরা মিস্টার ফেড্রিনের সাথে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা-পর্যালোচনা করেছি। সভায় দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন ছিল। এরপর তিনি নাস্তা সেরে আসার পর তার (আহমাদ শাহ মাসউদ) সাথে আরও আলোচনা-পর্যালোচনা করেন। তারা দীর্ঘ আলোচনা করেছে, কারণ তারা অনুভব করেছে যে, তারা এমন এক নেতার সাথে কথা বলছে যিনি প্রকৃত অর্থেই তাদের স্তরের।

হুবার্ট ভেদ্রিন:

আহমাদ শাহ মাসউদ প্যারিসে আসতে পেরে খুবই উৎফুল্ল ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর অভ্যর্থনায় তিনি খুব খুশী হন। কারণ এর সাথে বিশেষ মর্যাদা জড়িয়ে আছে। আহমাদ শাহ মাসউদ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক জেনারেলকে বলেন – যদি সম্ভব হয় ফ্রান্স যেন অধিক পরিমাণে আমাদের জন্য অস্ত্র সরবরাহ করে। এটা আমাদের অনেক উপকারে আসবে।

পত্রিকার মন্তব্য:

নাইন ইলেভেনের পাঁচ মাস পূর্বে আহমাদ শাহ মাসউদ একটি পত্র নিয়ে ইউরোপে আসে।

বুশ বরাবর আহমাদ শাহ মাসউদের চিঠি:

যদি বুশ আফগানিস্তানের শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ে গুরুত্ব না দেয় এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় আফগান জনগণকে সহায়তা না করে, তাহলে আমরা আফগানিস্তানে যে সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি – অচিরেই তা আমেরিকা ও সারা বিশ্বের সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।

পত্রিকার মন্তব্য:

ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রীয়ভাবে আহমাদ শাহ মাসউদকে স্বাগত জানায়। বিশেষভাবে ইউরোপের শহর স্ট্রাসবাগে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট পরিদর্শনের সময়ে।

নিকোল ফোনটাইন:

আপনাকে ইউরোপীয় সংসদে স্বাগতম! এখানে আপনার উপস্থিতিতে আমি খুব আনন্দিত।

পত্রিকার মন্তব্য:

অবশেষে তার চিঠিটি মনোযোগের সাথে শুনা হয়।

নিকোল ফোনটাইন:

আপনারা অবগত আছেন যে, আফগান পরিস্থিতি নিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট দীর্ঘদিন ধরে উদ্বিগ্ন। আফগানের চলমান পরিস্থিতির কারণে, মানুষের সম্মান ও মৌলিক অধিকারগুলো বারবার ভয়ংকরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে। নারীরা ভীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি। দুর্ভিক্ষের ফলে হুমকির মুখে সারা দেশ। শরণার্থী সংকটও দেখা দিয়েছে।

আমি স্পষ্ট করে বলছি, আফগানিস্থানের বামিয়ান শহরের গৌতম বুদ্ধের ভাস্কর্য ভাঙ্গার মতো ঘটনাটি আমাদের পিঠ ভেঙ্গে দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি প্রমাণ করে যে, তালেবান কোন কিছু শ্রদ্ধা করেনা। আমি সর্বপ্রথম যে আহবান করছি তা হলো – আহমাদ শাহ মাসউদকে রাজনৈতিক স্বীকৃতি দেয়া হোক। তাকে প্রয়োজনীয় সামরিক সহায়তা দিতে হবে।

আহমাদ শাহ মাসউদ:

আপনাদের সকলের জানা আছে যে, আফগানিস্তানে বর্তমানে যে তালেবান বেড়ে উঠেছে, তারা ইসলামের অত্যন্ত সীমাবদ্ধ একটি চিত্র ও ব্যাখ্যা তুলে ধরছে। উসামা বিন লাদেনের ছত্রছায়ায় আফগান তালেবান সরকার এবং তাদের মতো যে গোষ্ঠীগুলো রয়েছে তারা কিছু নিকৃষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে। আমি জোর দিয়ে বলতে চাই – এসব গোষ্ঠীর লক্ষ্য শুধু আফগানিস্তানে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তাদের টার্গেট হচ্ছে, তারা আফগানিস্তানসহ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। আশা করি আপনারা আমার কথা বিশ্বাস করবেন।

নাজিবের বক্তব্য:

আমরা সংগ্রামের ‘আকারের’ দিকে না তাকিয়ে বাস্তবতার কথা বলছি। বিষয়গুলো দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে।

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

তাদের ধারনা, বোরহানুদ্দীন রাব্বানী উসামা বিন লাদেন রহিমাহুল্লাহকে আফগানিস্তানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। তাদের কি মিথ্যা বলতে লজ্জা করেনা? অথচ এখনো প্রত্যক্ষদর্শীরা বেঁচে আছে।

৮. আমাদের শত্রু কারা? বুদ্ধিবৃত্তিক আগ্রাসন রোধে কীভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়বো? – সে বিষয়ে পরে কখনো বিস্তারিত আলোকপাত করবো। এখানে তাদের বিষয়ে আলোচনা করবো, যারা ফিলিস্তিনের ভূমি বিক্রয়কারীদেরকে তাদের ভাই মনে করে।

“অসলো চুক্তি” অনুযায়ী দেশীয় ঐক্যের ক্ষেত্রে, তারা একে অপরকে ভাই মনে করে। আজ তারা যাদেরকে নেতা, জনপ্রতিনিধি ও ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের অংশীদার মনে করে, এরাই পূর্বে ফিলিস্তিনের বিরাট একটি অংশ ইহুদিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।

প্রসিদ্ধ ফাতওয়া:

২৬শে জানুয়ারি ১৯৩৫ সালে কুদসে ফিলিস্তিনী উলামায়ে কেরামের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে ‘ইহুদিদের কাছে জমি বিক্রি করা হারাম’ এই বিষয়ে তাদের একটি সম্মিলিত ফাতওয়া প্রকাশিত হয়। আমি এখানে সেই ফাতওয়া তুলে ধরছি।

“ইরাক, মিসর, ভারত, মরক্কো, সিরিয়া, ফিলিস্তিন ও অন্যান্য ইসলামী ভূখণ্ডের মুফতি ও উলামায়ে কেরামগণ নানান সময়ে বেশ কিছু ফাতওয়া প্রকাশ করেছেন। এসকল ফাতওয়াতে একটি বিষয় আমরা লক্ষ্য করেছি যে – সকল উলামায়ে কেরাম এবিষয়ে একমত – ফিলিস্তিনের মাটি ইহুদিদের কাছে বিক্রি করা,  বিক্রিতে দালালি করা, মধ্যস্থতা করা ও  যেকোনো পদ্ধতিতে বিষয়টি সহজ করার পিছনে কাজ করা সম্পূর্ণ হারাম। এই বিষয়ের উপর সন্তুষ্ট থাকা ও চুপ থাকাও হারাম।

আর জমি বিক্রি করে দেয়ার ফলাফল সম্পর্কে জানা থাকা সত্ত্বেও যদি কোন ফিলিস্তিনী এই বিষয়ে সমর্থন ও সন্তোষ প্রকাশ করে, তবে এই ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল মনে করার কারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। এটি ইসলাম থেকে বের করে দেয়ার মত স্পষ্ট কুফর”।

এমনটাই কুদসের মুফতি ও ইসলামী উচ্চ পরিষদের প্রধান সাইয়্যেদ আমীন আল হুসাইনির ফাতওয়াই উঠে এসেছে[4]

সুতরাং সকল কারণ, ফলাফল, ফাতওয়া ও আহকাম পর্যালোচনা করার মাধ্যমে একথা সুনিশ্চিতভাবে বুঝা যায় যে, ইয়াহুদিদের কাছে ফিলিস্তিনের ভূমি বিক্রেতা, (চাই তা সরাসরি হোক বা অন্য মাধ্যমে হোক) বিক্রয়ের বিষয়ের দালাল, সাহায্যকারী এদের একজনেরও জানাজা পড়া যাবে না। তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না। তাদের লাশ ফেলে দিতে হবে। তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাদের লাঞ্ছিত করতে হবে। তাদের প্রতি কোন প্রকার ভালোবাসা দেখানো যাবে না। যদিও তারা বাবা, ছেলে ভাই বা স্ত্রী হোক না কেন”।

(ফাতওয়াটি লেখা হয়; ২০শে শাওয়াল ১৩৩৫ হিজরি, ২৬শে জানুয়ারি ১৯৩৫ ইং.)

শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ:

হে মুসলিম মুজাহিদ! হে ফিলিস্তিনের স্বাধীন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি! হে মুসলিম উম্মাহ!

আপনারা সকলে এই ফাতওয়াটির প্রতি লক্ষ্য করুন। ইহুদিদের কাছে ভূমি বিক্রি করাকে কিভাবে মাসজিদুল আকসায় সমাবেত উলামায়ে কেরাম হারাম বলেছেন! সুতরাং যারা ফিলিস্তিনের মাটি, পাহাড়-পর্বত, উপত্যকা, নদী-নালা, উদ্যান, সমুদ্রতীর সবকিছু ইহুদিদের হাতে হস্তান্তর করেছে – তাদের ব্যাপারে শরীয়তের হুকুম কী হবে?

হে মুসলিম মুজাহিদ! হে ফিলিস্তিনের স্বাধীন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তি! হে মুসলিম উম্মাহ!

এই ফাতওয়াই ‘ইহুদিদের কাছে ভূমি বিক্রি করা হারাম’ – এর কারণ কী? আপনারা কি তা কখনো ভেবে দেখেছেন?

এর কারণ হচ্ছে, যাতে এইসব ইসলামী ভূখণ্ডকে ইহুদিকরণ থেকে রক্ষা করা যায়। ইহুদিরা যেন মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে ছিনিয়ে নিয়ে, সেখানকার অধিবাসীদের নিজস্ব ভূমি থেকে বিতাড়িত করে সেখান থেকে ইসলামের চিহ্ন মুছে দিতে না পারে – সেজন্যই জমি বিক্রি করাকে হারাম সাব্যস্ত করা হয়েছে।

যেখানে ইহুদিকরণের আশংকায় ভূমি বিক্রি করা হারাম বলা হয়েছে, সেখানে যারা ইহুদিকরণের জন্য ভূমি হস্তান্তর করে এবং ইহুদিদের মালিকানার স্বীকৃতি দেয় তাদের ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী হওয়া উচিত?

পরিশেষে সচেতন মুসলিম মুজাহিদদেরকে (যারা দ্বীন ও মুসলিম ভাইদের সম্মান-মর্যাদা ও স্বাধীনতা রক্ষা করার জন্য সচেতনতার সাথে যুদ্ধ করছেন)  স্মরণ করিয়ে দিতে চাই –

জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য-রাষ্ট্র ফিলিস্তিনের অধিকাংশ ভূমিকে ইহুদিদের জন্য স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘের সংবিধানে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, জাতিসংঘের অধীনে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের ভূমির নিজস্ব সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা এবং সম্মান রয়েছে। (অন্য কেউ এই ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না)

আজ এখানে সমাপ্ত করছি। ‘সচেতনতা তৈরির জিহাদ’ বিষয়ক বাকি আলোচনা আগামী পর্বে করবো ইনশাআল্লাহ।

وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين،

وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم.

والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته.

************

১ এই ভিডিওটি ২০১৯ সালের জুলাইতে প্রকাশিত হয়। ভিডিও লিঙ্ক – https://www.youtube.com/watch?v=0JrkC9jxan0

২ আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিশেষায়িত সৈন্যদল। এই দলগুলোতে সবগুলো বাহিনী থেকে সদস্যদের একত্রিত করে বিশেষ বাহিনী তৈরি করা হয়। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে এমন ১১ টি বিশেষায়িত বাহিনী রয়েছে। এর মধ্যে ৭ টি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের আমেরিকার নোংরা যুদ্ধে জড়িত। বাকি ৪ টি স্পেশাল অপারেশন, সাইবার সংক্রান্ত, স্ট্র্যাটেজি ও পরিবহন সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে। এই ৭ বিশেষায়িত বাহিনী মধ্যপ্রাচ্য, মিশর, আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিন এশিয়াতে আমেরিকার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলছে।

এই ৭ টি বিশেষায়িত বাহিনীর ১ টি – CENTCOM. এর সদর দপ্তর ফ্লোরিডাতে। ২য় আরেকটি সদর দপ্তর ২০০২ সালে দোহার ‘ক্যাম্প আস সাইলিয়্যাহ’তে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।

গালফ ওয়ার, আফগানিস্তানে হামলা ও  ইরাক যুদ্ধে এই বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যরাই অংশগ্রহণ করেছিল।

৩ ২০০৮ সালে এই সাক্ষাৎ হয়েছিল। লিঙ্ক – https://www.aljazeera.com/news/2008/4/14/livni-speaks-at-qatar-conference

৪ ফাতওয়া’র বাকি অংশ –

সমস্ত বিষয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং দলিলের আলোকে এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে,

ইহুদিদের নিকট ফিলিস্তিনের ভূমি বিক্রেতা কয়েক কারণে অপরাধী।

১. মুসলমানদেরকে তাদের বাড়ি ঘর থেকে বের করার ব্যাপারে পদক্ষেপগ্রহণকারী এবং সাহায্যকারী।

২. মসজিদে আল্লাহর ইবাদত করা থেকে বাঁধা প্রদানকারী এবং তা বিরান করার জন্য সচেষ্ট।

৩. ইয়াহুদীদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণকারী। কেননা তার সকল কার্যক্রম মুসলমানদের বিরুদ্ধে, ইয়াহুদীদের পক্ষে সাহায্য হিসেবে ধরা হবে।

৪. আল্লাহ তায়ালা, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদের কষ্টদানকারী।

৫. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আমানতের খেয়ানতকারী।

 

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

৪ Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + 8 =

Back to top button