আরবআর্কাইভমিসররামাদান আর্কাইভশাইখ আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম রহিমাহুল্লাহ

একটি সরল রামাদ্বান প্রোগ্রাম – আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

একটি সরল রামাদ্বান প্রোগ্রাম

আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

{হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হল যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। (রোযা) কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য; তবে তোমাদের কেউ যদি পিড়িত থাকে বা সফরে থাকে, তবে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আর যারা রোযা রাখতে অক্ষম তারা ফিদিয়া হিসেবে খাদ্য দেবে মিসকিনদের, যদি কেউ স্বেচ্ছায় সৎকাজ করে তবে তা তার জন্য উত্তম। রোযা তোমাদের জন্য কল্যানকর যদি তোমরা বুঝে থাকো।}

[আল-বাক্বারাহঃ ১৮৩-১৮৪]

মহান আল্লাহ তাআলা এখানে কয়েকটি নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনের সংখ্যা বলেছেন । এমনকি তা হল কয়েকটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ঘন্টার সমষ্টি! রামাদ্বান মাস ৭২০ ঘন্টা অথবা ৬৯৬ ঘন্টার যেকোনো একটি হয়ে থাকে এবং এর প্রত্যেকটি মিনিট অতি মূল্যবান। সালাফ এবং সাহাবারা (রাঃ) বছরের পর বছর রামাদ্বান এর জন্য অপেক্ষা করতেন, একটি ঘটনা এভাবে বর্ননা করা হয়ে থাকে যে, সাহাবিরা প্রায়ই বলতেন, হে আল্লাহ, আমাদেরকে রজব এবং শাবান মাসে আপনার ইবাদাত করার সুযোগ দিন এবং রামাদ্বান প্রত্যক্ষ করার তৌফিক দান করুন।

যেহেতু রামাদ্বান হল অন্তর, দেহ ও মন পবিত্র করার বাৎসরিক উপলক্ষ্য, মানুষের দেহ এবং মন এ এর প্রভাব তেমন গভীর হয় না। অন্তরের অনেকগুলো ইবাদাত রয়েছে এবং শরীর এই ইবাদাতের কারনে যতটুকু কষ্ট ভোগ করবে, অন্তর ততই আলোর সন্ধান পাবে। এজন্যই জিহাদ হল ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়া; কারন এটি হল সবচেয়ে কষ্টকর এবং কঠিন ইবাদাত। এর পুরষ্কার বিশাল, অন্তরে এর প্রভাব প্রগাঢ় হয় এবং আত্মিক উন্নতি সাধন ও তাওহীদকে প্রতিষ্ঠিত করতে এর প্রভাব অনেক।

সে কারনে একজনের ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত ইবাদাতও রয়েছে। যদিও, অন্তরের উপর এসকল ইবাদাতের প্রভাব ঐসকল ইবাদাতের তুলনায় কম হয় যেগুলো দেহের সাথে সম্পর্কিত। তারপরও, অন্তরের উপর যাকাতের একটি গভীর প্রভাব রয়েছে, কেননা এটি অন্তরকে লালসা থেকে পবিত্র করে। আপনি কখনোই গরীব লোকদের সাথে সমব্যথী হতে পারবেন না যদি না আপনি তার ব্যথা অনুভব করেন, সে যেভাবে জীবনধারন করে আপনিও সেভাবে করেন এবং সে যেভাবে অভুক্ত থাকে আপনিও সেভাবে থাকেন। আপনি যদি রোজা রাখেন তাহলে আপনি আপনার দেহ আরো শক্তিশালী এবং সতেজ হচ্ছে অনুভব করবেন। এইসময়ে আপনি এই ভেবে আনন্দিত হবেন যে আপনিও কিছু আত্মত্যাগ করতে এবং নিজেকে লালসা হতে পবিত্র করতে সক্ষম।

অনুরূপভাবে জিহাদও, ধন সম্পদ দিয়ে জিহাদ করলে এটি কারো অন্তর সেভাবে পরিশুদ্ধ করে না, যেভাবে নিজে জিহাদে উপস্থিত থাকলে হয়ে থাকে। এবং এই কারনে ইসলাম নিজে উপস্থিত থেকে জিহাদ করার ব্যাপারে কোনো সাহাবীকে ছাড় দেয় নি, এটা কোনো ব্যাপার নয় যে তার সমাজে অবস্থান কি অথবা তার কেমন খ্যাতি রয়েছে যেমনটি হয়েছে উসমান(রাঃ) এর ক্ষেত্রে।

এবং সালাফরা রামাদ্বানকে মিনিট দ্বারা গণনা করতেন। তারা উবাই বিন ক্বাব এর পেছনে নামাজ পড়েছিলেন – এবং উমার বিন আল-খাত্বাব তার পিছনে তারাবী নামাজ পড়েছিলেন- এবং তাদেরকে নামাযে অনেক সময় দাঁড়িয়ে থাকার কারনে নিজেদের ভারসাম্য রক্ষার জন্য লাঠির প্রয়োজন হতো, এবং সাহাবিরা বলতেনঃ আমাদের ভয় হয় যে আমরা উবাই এর পেছনে নামাজ পড়তে থাকলে সাহরী পাবো না, এবং আমরা ভয় করি এই বরকতময় খাবার ছুটে গিয়ে ফজরের নামাজের সময় চলে আসবে- তারা সাহরীকে বরকতময় খাবার বলতেন – তাই চলুন আমাদের সন্তানদেরকে এই বরকতময় খাবার প্রস্তুতের জন্য এগিয়ে দেই।

আর কিছু তাবেঈ থেকে এরকম বর্ণিত আছে, এবং যারা তাদের পরে এসেছেন তাদের হতে, এটি হল তাদের কুরআন এবং নামাজ সম্পর্কিত, যে তাদের মধ্যে অনেকে রামাদ্বান মাসে কোরআন তেলাওয়াতে ৬০ বার খতম দিতেন, এবং এটি বিশেষভাবে ইমাম আশ শাফেই এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে; তিনি দিনে একবার এবং রাতে একবার করে কোরআন তেলাওয়াত শেষ করতেন। তাদের মধ্যে অনেকে দিন এবং রাত মিলিয়ে একবার শেষ করতেন, এবং অন্যরা তিন দিনে একবার করে শেষ করতেন, শেষ দশদিন আসা পর্যন্ত, যাতে তারা কোরআন দিনে একবার করে শেষ করতে পারেন, মসজিদে নির্জনে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারার মাধ্যমে।

এবং কোরআন একদিনে শেষ করা সহজ, যদি আমরা কোরআন তারতিল সহকারে আস্তে আস্তে পড়তে চাই তাহলে সময় লাগবে প্রায় ২৪ ঘন্টা, এবং তাড়াতাড়ি করে পড়লে লাগবে প্রায় ১০ ঘন্টা। যিনি কোরআন হিফজ করেছেন তার জন্য এক পারা ২০ মিনিটে শেষ করা সম্ভব, যা তাকে ত্রিশ পারা ১০ ঘন্টায় পড়তে সাহায্য করে। আমাকে আবুল হাসান আন-নাদাভী বলতেন, আমি আমার শিক্ষকদেরকে দেখেছি, এবং আমি তাদেরকে পুরো রমজান মাসে কথা বলতে দেখিনি। বরং তারা শুধুমাত্র ইবাদাতেই লেগে থাকতেন; নামাজ অথবা কোরআন পড়া এর যেকোনো একটিতে। যদি কারো সাথে কথা বলার প্রয়োজন হতো, তারা মিনিট এবং সেকেন্ড দ্বারা হিসাব করে কথাগুলো বলতেন।

তাই, রামাদ্বান হল সিয়াম এবং নামাজের সমষ্টি।

এই কারনে সালাফরা, যেমন ইমাম মালিক, ক্লাসের সময় ব্যতিত তাঁরা নিজেদেরকে নির্জনে রাখতে পছন্দ করতেন, আর বলতেনঃ বস্তুত রামাদ্বান হল নামাজ পড়া এবং কোরআন তেলাওয়াতের জন্য। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বলতেনঃ রামাদ্বান হল নামাজ পড়া, সাদাকা দেওয়া এবং কোরআন তেলাওয়াত করা।

এবং এই রামাদানেই জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এবং শয়তানদের শিকলাবদ্ধ করা হয়। এটি হল এমন কিছু যা প্রকৃত অর্থেই হয়ে থাকে, যেমন আমার একজন বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু, সে জীনদের সাথে যোগাযোগ করতো- কিন্তু ইতঃমধ্যে তাওবা করেছে- আমাকে জানিয়েছেঃ

যে সকল জীনরা আমার সাথে কাজ করতো আমার কাছে কোনো ধরনের খবর আনা নেওয়ার কাজে, তারা বলতোঃ আমরা রমজানে নিষ্ক্রিয় থাকি। আমি ভাবতাম যে তারা হল ঈমানদার জীন, কেননা তারা আমার সাথে নামাজ পড়ত এবং রোযা রাখত। যাইহোক আমি তাদের উত্তর হতে বুঝতে পারলাম যে তারা ছিল শয়তান (অবিশ্বাসী জীন)।

পরে আমি এক গবেষনার মাধ্যমে নিশ্চিত হলাম যে তারা ছিল অবিশ্বাসী জীন। আমি তাদেরকে আমার এক আত্মীয়াকে নিরাময় করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করলাম। তারা বলল, সে নিরাময় লাভ করবে না যদি না সে একটি ক্রুশ পরিধান করে।

তাই আমি তাদেরকে বললাম, তোমরা আসলেই শয়তান। তোমরা হলে অবিশ্বাসী জীন।

তারা বলল, আমরা হলাম বিশ্বাসী জীন।

আমি বললাম, এখন হতে আমাদের পরস্পরের সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই।

তারা বলল, তাহলে, আমরা তোমাকে আঘাত করবো।

আমি বললাম, আমি এজন্য প্রস্তুত আছি। আমরা মাঝরাতে কবরস্থানে মিলিত হবো, আমার মতে এটিই হল সবচেয়ে নির্জন এবং ভয়ানক জায়গা, এবং মাঝরাতে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে কবরস্থানে গেলাম। আমি এভাবে একইসাথে তিনদিন করলাম, কিন্তু তা সত্ত্বেও জীনরা আমরা নিকটেই আসতে পারলো না।

সুতরাং, এটা রূপক নয় বরং বাস্তবিক। শয়তানেরা শিকলাবদ্ধ ছিল, তারা চলাফেরা করতে পারে না এবং মানুষদের মধ্যে কুমন্ত্রনা ছড়াতে পারে না। বড় শয়তানগুলোকে শিকলাবদ্ধ করে রাখা হলেও ছোটগুলোকে চলাফেরা করতে দেওয়া হয়।

এবং রামাদ্বান হল জিহাদের রামাদ্বান, তাই আমি আপনাদের উপদেশ দিব যে রামাদানের একটি দিনের জন্য হলেও যেনো আপনারা নিম্নগামী না হোন।

আমি কাতারে অথবা এমিরেটস এ ছিলাম, এবং আমাকে বলা হয়েছিলঃ আমেরিকার ভাইয়েরা আপনাকে ডেকেছেন, এটা বলে যে আপনি যদি গিয়ে শেষ দশ রাত তাদের সাথে ব্যয় করতেন। আমি বললাম, সুবহান আল্লাহ্‌! আমি আগুনঝরা জালালাবাদ, কান্দাহার এবং কাবুল ত্যাগ করে শেষ দশ রাত আমেরিকায় ব্যয় করবো? এই সকল জায়গায় এক ঘন্টা সময় অতিবাহিত করা ষাট বছর নামাজে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে উত্তম, তারপরেও আমি আমেরিকায় যাবো, এমনকি রামাদানেও? এবং এ জন্যে এখানে থাকাকালিন সময়ে বিশেষভাবে গত পাঁচ বছর, আমি প্রত্যেক রামাদানেই পেশোয়ার এর বাইরে থাকতে ভালোবাসতাম, এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে পেশোয়ার এ প্রবেশ করতামনা। আমি রমজানে ছাদায়, জাদজিতে ট্রেইনিং ক্যাম্প এ সময় ব্যয় করতাম অথবা অন্য কোনো জায়গায়, এজন্য যে আমার জন্য এই রামাদ্বান কে রিবাত এর রামাদ্বান হিসেবে লিখা হোক। এবং রামাদানে রিবাতের ভূমিতে থাকা, রিবাতের ভূমিতে না থাকার চেয়ে হাজার গুন উত্তম, কারন রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহর পথে একদিন রিবাতে থাকা অন্যান্য জায়গায় হাজার দিন থাকার চেয়েও উত্তম, এমনকি কেউ যদি পুরো দিন রোজা রাখে এবং রাতে নামাজ পড়ে।(তিরমিজি এবং নাসাই হতে বর্ণিত)

তাই, ভাইয়েরা, আপনাদের মধ্যে যারা পেশওয়ার থেকেছেন, তারা নিচের দৈনিক রুটিনটি অনুসরন করতে পারেনঃ

রামাদানে বেশি রাত পর্যন্ত জেগে থাকবেন না, রমজানের নামাজ, রোজা এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থি হওয়ার সময় হল সকাল বেলা। তাই রোজা ভাঙ্গুন খেজুর এবং পানির দ্বারা বাড়িতে অথবা মসজিদে, এবং মসজিদে খেজুর এবং পানি বিতরন করুন যেন সেখানে অবস্থানরতরা রোজা ভাঙ্গতে পারেন, এবং তার জন্য সুসংবাদ যে খাবার খাওয়ানোর মাধ্যমে আরেকজনের রোজা ভাঙ্গায়ঃ যে কোনো রোজাদারদের ইফতার করালো সে, ওই রোজাদার ব্যাক্তির সমান সাওয়াব পাবে, এতে রোজাদার এর সাওয়াবের কোনো কমতি হবে না, এমনকি যদি তা শুধুমাত্র খেজুর ও হয়ে থাকে তারপরেও, প্রতিযোগীরা এই মহান পুরস্কারের জন্য প্রতিযোগীতা শুরু করুন।

আমি কাতারে ছিলাম, এবং কিছু ভালো আমলদার আমাকে বললেনঃ আমরা ১০০০ মুজাহিদিনকে পুরো রমজান মাসে খাওয়াতে চাই। তাদের প্রত্যেকের জন্য কত প্রয়োজন হতে পারে? আমি বললাম, প্রত্যেকের প্রয়োজন হয় তিন কাতারি রিয়াল অথবা দিরহাম। আচমকা ৯০,০০০ কাতারি রিয়াল এর একটি চেক নিয়ে সে বলল, এটি হল জালালাবাদ এর হাজার মুজাহিদিনদের খবারের খরচ এবং যখন এগুলো পৌছে যাবে তখন আপনি আমাকে জানাবেন। পরের দিন যখন এগুলো চলে আসল, তখন আমি তার ফোন রিং পেয়ে আশ্চর্যান্বিত হলাম, সে আমাকে বলছিলঃ আরো দুই হাজার মুজাহিদিনদের খাবারের খরচ আসতেছে। তাদেরকে ভাত এবং মাংস খাওয়ান, কারন সেগুলো হল উত্তম খাবার।

এই প্রোগ্রামের সাথে লেগে থাকো, এবং এটি সহজঃ তোমার রোজা মসজিদেই ভাঙ্গো এবং তারপর মাগরীব এর সালাত আদায় করো। বাড়িতে ফিরে আসো, আল্লাহ্‌ তোমার জন্য যতটুকু ইচ্ছা করেছেন ততটুকু খাও, এবং ইশার সালা্তের জন্য অপেক্ষারত সময়ে ইস্তিগফার করতে থাকো। তারপর ইশা এবং তারাবী মসজিদে আদায় করো, পরে বাড়িতে ফিরে আসো। সাহরী খাও এবং এই সময়ের ব্যাপারে সজাগ থেকো। এটি বরকতময় খাবার হওয়া ছাড়াও দিনের শুরুর ঘন্টা গুলো ইস্তিগফারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত।

তাই সাহরীর পরপরই তাড়াতাড়ি অজু পড়ে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে নাও এবং আল্লাহর সাথে নিজের নৈকট্য বৃদ্ধি করে নাও। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ কে আমাকে ডাকছে, আমি তার ডাকে সাড়া দিব? কে আমার কাছে কিছু চাচ্ছে, আমি তা তাকে দিয়ে দিব? কে আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছে , আমি তাকে ক্ষমা করব।

তাই এই সময়ের উত্তম ব্যবহার করুন- খুব সকাল বেলার সময়গুলো- যখন দোয়া প্রায় নিশ্চিতভাবেই কবুল হয়।

তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী ও অনুগত, দানকারী এবং শেষরাতে ক্ষমা প্রার্থনাকারী। [আলে-ইমরানঃ ১৭]

তারা রাতের খুব কম অংশই নিদ্রায় কাটায়। আর রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করে। [যারিয়াতঃ ১৭-১৮]

তাই যখন ফজরের সময় আসে, মসজিদে যাও এবং সেখানে নামাজ পড়। এবং চেষ্টা করো যদি তোমার কোনো কাজ না থাকে তবে ফজর এবং সুর্য উদয়ের মধ্যবর্তী সময়ে জেগে থাকতেঃ আমার কাছে ফজরের নামাজ এর পরে কিছু লোক এর সাথে মসজিদে বসে মহান, রাজাধিরাজ আল্লাহর স্মরন করা ইসমাইল এর পুত্রদের মধ্য হতে চারজন দাস মুক্ত করার চেয়েও উত্তম। (আবু দাউদ হতে বর্ণিত হয়েছে)

এর পরে যাও এবং দুপুর পর্যন্ত বিশ্রাম নাও। দুপুর হতে আসর পর্যন্ত পরিবা্রের প্রয়োজনে উপস্থিত থাকো।

আমাদের চারপাশে এমন অনেক বিধবা, শিশু এবং এতিম রয়েছে যারা ভাত খেতে অক্ষম, তাদের কথা ভেবে অধিক খাবার খাওয়া, পান করা এবং মিষ্টি খাওয়া থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করবেন। আপনার মিষ্টি খাবার, পাউরুটি এবং ভাত ঐসকল মানুষদের জন্য সরিয়ে রাখুন।

আপনাদের মহিলাদরও অন্তর পরিশুদ্ধ করার প্রয়োজন রয়েছে, তদেরকেও কোরআন তেলাওয়াত এবং ইবাদাত এর জন্য নিজেদের সময় বের করা প্রয়োজন। তাদের খাবার তৈরী করা নিয়ে ব্যস্ত থাকা হচ্ছে রামাদ্বানের অপরিহার্য কাজ করা থেকে দূরে থাকা; এটা ইস্তেগফার, ক্বিরাত এবং ইবাদাত থেকে সরিয়ে রাখে। তাই যদি আপনি আসর এর নামাজ আদায় করেন এবং নিজেকে ব্যস্ত রাখার মতো কোনো কাজ না থাকে তবে আপনি মসজিদে সূর্য ডুবার পূর্ব পর্যন্ত কোরআন তেলাওয়াতে নিজেকে ব্যস্ত রাখুনঃ ……আমার কাছে আছরের নামাজ এর পরে কিছু লোক এর সাথে মসজিদে বসে মহান, রাজাধিরাজ আল্লাহর স্মরন করা ইসমাইল এর পুত্রদের মধ্য হতে চারজন দাস মুক্ত করার চেয়েও উত্তম। তাই যখন মাগরীব এর নামাজের সময় হয় তখন তা আদায় করুন এবং বাড়িতে চলে আসুন। এটি হল এমন একটি প্রোগ্রাম যা যে কেউ অনুসরন করতে পারেন, এর অধিকাংশ অথবা পুরোটাই। এই সকল দিনের প্রতি আলাদাভাবে মনযোগী হন এবং ঐ সকল ঘন্টার প্রতিও। রামাদানে অমুক কি বলল, তমুক কি বলল এইসকল কাজের জন্য এখানে কোনো সময় নেই অথবা টিভি দেখা এবং সামাজিকতার জন্য। রামাদ্বান মাসে রাতের বেলায় কারো বাড়িতে আসা যাওয়া করবেন না কারন এটি হল এই পবিত্র মাসের সময় অপচয় এবং চুরি। তারাবী পড়ার পর আপনারা মসজিদেই দেখা সাক্ষাত সেরে নিতে সক্ষম, আপনার কোনো ভাইয়ের যদি আপনার নিকট হতে কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তাহলে আপনাদের মিলিত হওয়ার স্থান এবং প্রস্থান করার স্থান হল মসজিদ। রামাদ্বান মাসে রাতের বেলা কারো বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তাদের ব্যস্ত করে তুলবেন না।


[একটি খুতবা হতে যার নাম সিয়াম এবং কিয়াম(রাতের নামায) এর মাস]

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 + sixteen =

Back to top button