অডিও ও ভিডিওঅডিও ও ভিডিও [আল হিকমাহ]আল-হিকমাহ মিডিয়ানির্বাচিতশাইখ খালেদ বিন উমর বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ

বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি | ষষ্ঠ দরস | শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ


مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

أصول التعامل مع أهل البدع والمخالفين
“الدرس السادس”

বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি
“ষষ্ঠ দরস”

Treatment policy with bidat and opponents
“6th dars “

للشيخ الأمير خالد باطرفي – حفظه الله
শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
By Sheikh Khalid Batarfi Hafizahullah


 

 

 

 

للمشاهدة المباشرة والتحميل
সরাসরি দেখুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Viewing and Downloading

লিংক-১ : https://justpaste.it/bidyatider_sathe_acoronniti-6
লিংক-২ : https://mediagram.me/707f7e5a2362176b
লিংক-৩ : https://noteshare.id/l58r4q9
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20210928…e_acoronniti-6
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20210928…7f7e5a2362176b
লিংক-৬ : https://web.archive.org/web/20210928…are.id/l58r4q9


روابط الجودة الاصلية
FULL HD 1080 (405.6 MB)
মুল রেজুলেশন [৪০৫.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/E538wpE7EDDk3Zb
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul-6.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/60ad726a-70e1-4c51-9ea1-abd885523ed7/1e7930da07f498ceb7efeb82982f10f0982e2a86f176d39049308c27e5645a68
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321g524af06c8d484450ba6df6fcf5e49486
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/jBXurhSw46/file.html


روابط الجودة العالية
HQ 1080 (287.1 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [২৮৭.১ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/RWbZpPftFaTEt4t
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul-6%20HQ.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/02a5ef60-85d3-48a2-98d5-6a47a94f6e9d/560ae7912a221edbefa70857865fa86d0f625dac516eae39f3de29598d4a7d37
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321g7ff1385cf1bf416291e0eed55628505d
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/ZInP7iLJIh/file.html


روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (122.6 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১২২.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/WWx5s3qMdgymxeF
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul-6%20MQ.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/8b5c91aa-80c4-4161-a4ff-34ff6112b880/978887c050a97dcedd5677a4fbb57798e6f8c90fb69e8c2cab2f8f03bff6e9fd
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321g956c1a2a2de74cc582ac6033526dc873
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/SjHSl6nMQG/file.html


روابط الجودة المنخفضة
LQ 360 (47.5 MB)
৩৬০ রেজুলেশন [৪৭.৫ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/3KjQ7fX27asD75y
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul-6%20LQ.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/768c0e24-bb1e-4c4a-bb96-f33444193d96/dad64c6be43ba0e4fdddbf6055d59a8b3309929bd3d21017b1ee742a80a43c96
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321g25cb4b351d3f4584ba4c2dd061e141f4
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/1AmpcHDlTE/file.html


روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (47.6 MB)
3GP রেজুলেশন [৪৭.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/Lyb2GFdHdwRkYWN
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul-6.3gp
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/06db4d85-9a95-4695-a975-52a7179f6218/01ee070a57a423447fa2fb57d001a6646ec57875cb9d35762f2b4c91daa607be
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321ge1dcb64e847b4f4e933086a4657678db
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/Hy8cKnAskA/file.html

روابط بي دي اب
PDF (504 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫০৪ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/kfedB74rnSA8iAi
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul6.pdf
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/f392e874-2573-4447-aa4b-2eada1bdab42/31e930acfb01135cc0076b87352e3fce42b7aac25cf1ecc6dd0f9072e870d715
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321gd20a477e083a407cb4798b00a1784d12
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/8mWt9cEIc4/file.html

روابط ورد
Word (340 KB)
ওয়ার্ড [৩৪০ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/zj9j95tzLAtpeC5
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul6.docx
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/cf0ee387-3903-4591-9992-04988a25bcc3/52fb4c9dd69a5452d7d624f71a7d7fa1b10e02f56ca83469a9f6de5b758fd10e
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321gcb047a738f834e19b6e65b4f28aa2d0a
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/S9snOqP4kO/file.html


روابط الغلاف- ١
book Banner [627 KB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৬২৭ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/MCJ8td3araDPgsw
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul6%20Prossod.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/5612355f-7123-4f5e-b967-320da70dc81f/deb60dac3ff49940cc1d98ca4d0dca6837dcd07052becbcebab7748da1dab832
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321g4efe4b51bddd4947b365f9490700bfd8
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/sAxYqZb6gG/file.html


روابط الغلاف- ٢
Banner [561 KB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [৫৬১ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/RSLDnzWrqzGLdte
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-6/Usul6%20Banner.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/92e9e45c-a503-4dc2-8773-7add70c1b443/5c84136d59d188a35fb15eefdf085e6aea83ba58d46ac1be2b54f3702975e776
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/7321ga39fedd350a04857813abcb2c90382de
লিংক-৫ : https://krakenfiles.com/view/3LAeUR9rdI/file.html

********

 

বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি
শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
ষষ্ঠ দরস

অনুবাদ ও প্রকাশনা

-মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
মূল নাম:
أصول التعامل مع أهل البدع والمخالفين – الدرس السادس، للشيخ الأمير خالد باطرفي – حفظه الله –
ভিডিও দৈর্ঘ্য: ১১:০৯ মিনিট
প্রকাশের তারিখ: রজব ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশক: আল মালাহিম মিডিয়া

بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام علي رسول الله وعلي اله وصحبه ومن والاه -اللهم لا سهل إلا ما جعلته سهلا وأنت تجعل الحزن إذا شئت سهلا
আমরা পূর্বের দরসে বিদআতপন্থী ও ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে ছয়টি আচরণবিধি উল্লেখ করেছিলাম।
এক নম্বর নীতি –
সৎ ও শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিগণ যারা ইজতিহাদ কিংবা ভুলবশত: বিদআতের সম্মুখীন হয়েছেন, এক্ষেত্রে তাদেরকে মাজুরাতের দৃষ্টিতে দেখা এবং তাদের সম্ভাবনাময় কথাগুলোকে উত্তম অবস্থার উপর ছেড়ে দেয়া।
দুই নম্বর নীতি –
মৌলিক কিংবা শাখাগত মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে যখন কোন মুজতাহিদের ভুল হয়ে যায় তখন তাঁকে গুনাহগার বলা যাবে না এবং কুফর বা পাপাচারকে তার দিকে নিসবত করা যাবে না। প্রবৃত্তি ও ছাড়াছাড়ির কারণে যিনি ভুল করেন তার আর ইজতিহাদ ও ব্যাখ্যাগত কারণে যিনি ভুল করেন উভয়ের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করা জরুরী।
তিন নম্বর নীতি –
কোন বিদআতি থেকে যে বিদআত প্রকাশ পেয়েছে কিংবা সে যে বিদআতের অনুসরণ করে তা প্রত্যাখ্যান করা আবশ্যক। তার সাথে আচরণ করা হবে তার বিদআতের মাত্রা অনুযায়ী। অর্থাৎ তার বিদআত শরীয়তের দৃষ্টিতে জঘন্য নাকি সাধারণ – এই ভিত্তিতে।
চার নম্বর নীতি –
একজন বিদআতিকে ততক্ষণ পর্যন্ত বিদআতি কিংবা প্রবৃত্তিপূজারী বলা যাবে না, যতক্ষণ না তার বিদআতটা সীমালঙ্ঘন তথা জঘন্যতম বিদআতের রূপধারণ করে। এটি আহলে ইলমগণের একটি প্রসিদ্ধ নীতি।
পাঁচ নম্বর নীতি –
ইখতিলাফের ক্ষেত্রে বিরোধীপক্ষকে ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং হাদিসে বর্ণিত পথভ্রষ্ট বাহাত্তর দলের অন্তর্ভুক্ত মনে না করা, যতক্ষণ না তাদের বিদআতটা সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্তকৃত বিদআতে পরিণত হয়।
ছয় নম্বর নীতি –
কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষ হতে যখন স্পষ্ট কুফর বা ফিসক পাওয়া যাবে তখন তার উপর হুকুম বাস্তবায়ন করতে ‘মাওয়ানিউল আহকাম’ তথা এই হুকুম বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতাগুলোর প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
আজ আমরা বিদআতপন্থীদের সাথে আচরণবিধির সপ্তম মূলনীতি নিয়ে আলোচনা করবো ইনশা আল্লাহ। সেটি হল:
“ইতিকাদি, আমলী ও শাখাগত মাসআলার ক্ষেত্রে এমন মতানৈক্য, যা স্পষ্ট কুফরকে আবশ্যক করে না, কিংবা বিদআতি ব্যক্তি ইজতিহাদ অথবা ব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে একাজ করেছে – এমন মতানৈক্য ইসলামী ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্যের রজ্জুকে ছিন্ন করে না। যদিও তারা কিছু ক্ষেত্রে পরস্পর মতানৈক্য করে”।
অর্থাৎ যদি এই বিদআতপন্থা অবলম্বনকারী ব্যক্তি এমন কথা বলে বা এমন কাজ করে কিংবা তার অনুসারীদেরকে এমন আদেশ করে বা তারা এমন বিষয়ে তার অনুসরণ করে যা তাকে কুফর বা স্পষ্ট ফিসকের সীমায় পৌঁছে দেয় না বরং শুধু শাখাগত মাসআলার ইখতিলাফ হয় তাহলে তা শত্রুতা ও বিদ্বেষকে আবশ্যক করে না। উদাহরণস্বরূপ সালাফদের জামানায় ‘খালকে কুরআন’ এর ফেতনার সময় যা ঘটেছিলো। ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুনদাহ ও ইমাম ইসফাহানী তাদের প্রত্যেকেরই একটি স্বতন্ত্র দরসের মজলিস ছিলো। সেক্ষেত্রে দেখা যেতো এদের ছাত্রবৃন্দরা অন্য শাইখের ছাত্রদের সাথে কথা বলতোনা। তাদের মাঝে শত্রুতা ছিলো। আর এই পরস্পর শত্রুতার একমাত্র কারণ ছিলো – হুবহু কুরআনের শব্দের দুনিয়াবি কথা বলা। অথচ এই মাসআলাটি ছিলো সম্পূর্ণ শাব্দিক মতবিরোধ। বড় কিংবা মৌলিক কোন মতবিরোধ ছিলো না। এক পক্ষ বলতেন যে, কুরআন দিয়ে কথা বলা এটি মাখলুক তথা আবিষ্কৃত। আর দ্বিতীয় পক্ষ বলতেন: কুরআন দিয়ে কথা বলা এটা আল্লাহর কালাম।
যিনি বলেন যে, কুরআন আল্লাহর কালাম; তাদের দাবী হলো – যে ব্যক্তি কুরআন দিয়ে কথা বলেছে সে মূলত আল্লাহর কালাম দিয়েই কথা বলেছে। আর দ্বিতীয় পক্ষ বলেন, এটি হলো কোরআনের প্রতিধ্বনি মাত্র। মূল কুরআন নয়।
কাজেই মূল কথা হলো; এই ইখতিলাফ বা মতবিরোধ সেসময় সবার মাঝে অনেক বিস্তৃত হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে এই ইখতিলাফকে কেন্দ্র করে দলে দলে বিভক্তি ও শত্রুতার সূচনা হলো। অথচ বিষয়টি এতই সহজ ও স্বাভাবিক ছিলো যে, উভয় পক্ষ তার সমাধানের জন্য এক মজলিসে আলোচনাই যথেষ্ট ছিলো।
মতবিরোধপূর্ণ মাসআলাসমূহের ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান পরিস্থিতিও এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখা যায় কতক লোক রয়েছে যারা এমন কিছু জামাতেরও বিরোধিতা করে যারা ঈমান আমলের ক্ষেত্রে কুফর ফিসক পর্যায়ের পৌঁছেনি। তারা সামান্য বিষয় নিয়ে পরস্পর শত্রুতা পোষণ করে। যেমন মুজাহিদদের ব্যাপারে কতক বিরোধীরা বলে যে, এরা বেশী বেশী সঙ্গীত শুনে। এক্ষেত্রে তারা এই মূলনীতি দাঁড় করায় যে, শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি নিন্দনীয়। এখানে মূল বিষয়টি হলো সঙ্গীত, এটা কিন্তু নিন্দনীয়, তা সত্ত্বেও একে মূলনীতি বানিয়ে শত্রুতা পোষণ করা যাবে না।
তারা বেশি বেশি সঙ্গীত শুনে, বেশি বেশি হাসি মজাক করে – এই সমস্ত ছোট ছোট বিষয়ের কারণে সে জিহাদি এই জামাত থেকে দূরে থাকতে চায়। সে কারণ খুঁজতে গিয়ে এই ক্ষুদ্র কারণগুলো ছাড়া অন্য কোন কারণ পায়নি। অথচ যে আমাদের ভুল ধরিয়ে দেয় এবং আমাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ হই।
একই অবস্থা আমাদের ও অন্যান্য জামাতেরও। অর্থাৎ একে অন্যকে বর্জন করে শুধুমাত্র ঢোল বাজিয়ে গান-বাদ্য করার কারণে। নিঃসন্দেহে এটি একটি গুনাহের কাজ। সবচেয়ে বড় কথা হলো এর মাধ্যমে মানুষের অন্তর শক্ত হয়ে যায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো – যে জামাতের বিরোধিতা করা হচ্ছে, ‘ঢোল বাজিয়ে গান বাদ্য করার কারণে’ – এটিই কি সেই জামাতের সবচেয়ে বড় অপরাধ?
যদি বিষয়টি এমন না হয় তাহলে আমাদেরকে বিরোধিতার ক্ষেত্রে একটি বিষয় খেয়াল করতে হবে যে, কোন বিষয়টি আমাদের বিরোধিতার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং উপযুক্ত হবে? অর্থাৎ আমরা অবশ্যই বিরোধিতা করবো গুরুত্বপূর্ণ ভুলের স্তর বিন্যাস অনুযায়ী।
সুতরাং কুফর ও ফিসক থেকে নিম্ন পর্যায়ের ভুলগুলোর পরিমাণ যতটুকু হবে, গুরুত্ব ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তা শুদ্ধ করা এবং প্রত্যাখ্যান করার পদ্ধতিও তেমনই হবে। বিশেষত যখন মাসআলাটি (ভুলটি) কুফরকে আবশ্যক করবে না। এমনিভাবে ব্যক্তি কোন মুজতাহিদ, মুতাআওয়িল (শরয়ী ব্যাখ্যাকারী) হলেও।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“সাহাবা-তাবেঈন ও পরবর্তী আলিমগণের নীতি ছিলো, যখন তারা কোন বিষয়ে মতবিরোধ করতেন তখন তারা এক্ষেত্রে প্রথমেই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নির্দেশের অনুসরণ করতেন। যেমনটি আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর, যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম”। (সূরা নিসা ৪:৫৯)
আর কোন মাসআলার ক্ষেত্রে যখন তারা পরস্পর মতবিরোধ করতেন তখন তা হতো পরামর্শসুলভ ও পরস্পর সহমর্মিতার মধ্য দিয়ে। তাদের মাঝে ইলমী এবং আমলী মাসআলার ক্ষেত্রে মতবিরোধ হলেও তাদের মাঝে সম্প্রীতি, সহমর্মিতা ও দ্বীনি ভ্রাতৃত্ববোধ বহাল থাকতো। তবে হ্যাঁ, যে ব্যক্তি কুরআন, সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিষয় ও পূর্ববর্তীদের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত কোন বিধানের অযাচিত বিরোধিতা করবে তার সাথে বিদআতিদের মতোই আচরণ করা হবে”।

উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য সাহাবায়ে কেরামের সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজে আল্লাহ তায়ালাকে দেখার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “যে ব্যক্তি দাবি করবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়া সালাম আল্লাহ তায়ালাকে দেখেছে সে আল্লাহর প্রতি জঘন্য অপবাদ আরোপ করলো”।
অথচ জুমহুর তথা অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতটিই গ্রহণ করেছিলেন। বিপরীতে যারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর মতের উপর রয়েছেন, তাদেরকে ওলামাগণ বিদআতি বলে আখ্যায়িত করেন না।
তদ্রূপ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা এর একটি মত ছিলো, “মৃত মানুষেরা জীবিতদের কথাবার্তা শুনতে পান না”। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো বলেছেন, “আমি তাদের যা বলি, তা তোমরা তাদের থেকে বেশী শুনতে পাওনা (বরং তারা তোমাদের মতই শুনে)”।
তখন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একথার ব্যাখ্যা হলো – অবশ্যই তারা এখন জেনে গেছে যে, আমি তাদের যা বলেছিলাম তা সত্য ছিলো।
তথাপি সত্য এটাই যে, মৃত মানুষেরা জীবিতদের জুতার আওয়াজ শুনতে পায়। যেমন এক হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
وما من رجُلٍ يمرُّ بقبرِ الرَّجلِ كانَ يعرفُهُ في الدُّنيا فيسلِّمُ عليْهِ إلَّا ردَّ اللَّهُ عليْهِ روحَهُ حتَّى يردَّ عليْهِ السَّلامَ
“যখন কেউ এমন কোন ব্যক্তির কবরের পাশ দিয়ে যায় যে তাকে দুনিয়াতে চিনতো আর অতিক্রমকারী তাকে সালাম দিলো তখন আল্লাহ তায়ালা মৃত ব্যক্তির মাঝে রূহ ফিরিয়ে দেন যাতে সে তার সালামের উত্তর দিতে পারে”।(মাজমুউল ফাতাওয়া)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন আরও অনেক হাদিস বর্ণিত আছে। কিন্তু আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা উক্ত হাদিসগুলোর বিভিন্ন তাবীল (ব্যাখ্যা) করেছিলেন (আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হোন)। তবুও তাদের মধ্য হতে একে অপরকে বিদআতি বা গোমরাহ বলতে শুনা যায় নি।
তেমনি মে’রাজের বিষয়ে মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মতামত হলো, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মে’রাজ হয়েছে রূহের (স্বপ্নের) মাধ্যমে। অথচ সকল মুসলমানদের মতামত তার বিপরীত। কিন্তু এটি তাদের মাঝে বিবাদের কারণ হয়নি। এমন আরও অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে।
তেমনি আহকাম তথা বিধি-বিধানের ক্ষেত্রেও অসংখ্য মতবিরোধ রয়েছে। যদি ব্যাপারটা এমনই হতো যে, দুইজন মুসলমান যখনই কোন বিষয়ে মতবিরোধ করে তখনই তারা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ করবে তাহলে তো মুসলিমদের মাঝে কোন সম্প্রতি ও ভ্রাতৃত্ববোধ বহাল থাকতো না। যেমনটি দেখা যায় যে, আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু – উম্মতের এই দুই মহান ব্যক্তির মাঝে অনেক বিষয় নিয়ে মতবিরোধ হতো। কিন্তু এই মতবিরোধে উভয়ের একমাত্র লক্ষ্য থাকতো উম্মতের কল্যাণ। তাই এটি কখনো তাদের মাঝে বিরোধের কারণ হয়নি।
এই বিষয়ে হাদিসের আরেকটি বর্ণনা হলো যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনু কুরাইযার যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামকে বলেছিলেন: “কেউ যেন বনু কুরাইযা ছাড়া কোথাও আসরের নামাজ না পড়ে”। তখন পথেই তাদের আসরের সময় হয়ে গেলে কেউ বললেন, ‘আমরা বনু কুরাইযা গিয়েই আসর পড়বো’। তাই তাদের নামাজ ছুটে গেলো।
আর কেউ বললেন: ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বক্তব্য দ্বারা নামাজ দেরীতে পড়া উদ্দেশ্য নেননি’। তাই তারা পথেই নামাজ পড়ে নিলেন। দুই দলের কাউকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিন্দা করেননি। (মুত্তাফাক আলাইহি)।
এটা যদিও বিধি-বিধানের অন্তর্ভুক্ত কিন্তু এছাড়াও যে সমস্ত বিধান শরীয়তের মৌলিক উসূলের অন্তর্ভুক্ত নয় সেইগুলির মতভেদের ক্ষেত্রেও উক্ত মূলনীতি অনুসরণীয়।
ইমাম শাফেয়ী (রহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত আছে যে, সমকালীন এক আলেমের সাথে তিনি মুনাযারা করলেন। তখন ঐ আলেম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন এবং তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। পরের দিন তিনি তাকে দেখে তার হাত ধরে বললেন: “শুনো ভাই! আমরা পরস্পর যদি কোন মাসআলায় মতবিরোধ করি তবে তার কারণে যেন আমাদের মধ্যকার সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব নষ্ট না হয়”। যেমনটি বলা হয় ‘মতবিরোধ’ সম্প্রীতির বিরোধী বিষয় নয়।
সমাজের কিছু মানুষ রয়েছে, যারা অন্যের সাথে মতবিরোধ করতে বিরক্তিবোধ করে না। সুতরাং তাদের ক্ষেত্রে আপনার নীতি হবে যে, আপনি তাদেরকে নিজের প্রতি আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করবেন এবং এটিই হলো প্রজ্ঞার দাবী। সাথে সাথে আপনি আপনার প্রতিপক্ষকে তার অবস্থানের চেয়ে জঘন্য ভেবে মূল্যায়ন করবেন না। আল্লাহর শপথ! বিতর্ক প্রিয় ব্যক্তিদের সাথে বিতর্ক করে আপনার ভালো লাগবে। কেননা সে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী এবং অল্পতেই আপনার সাথে বিরোধে জড়াবে না। এর বিপরীতে এমন কতিপয় মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের হৃদয়ের সংকীর্ণতার কারণে স্বাভাবিক বিষয়েও বিতর্ক বা মতভেদ করতে রাজি নয়।
সুতরাং আদর্শ মুসলিম হল সে, যে মানুষের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সালফে সালেহীনের নির্দেশিত পন্থা অনুসরণ করে। প্রত্যেক বিষয়কে তার স্ব-অবস্থানে বহাল রাখে, এক্ষেত্রে কোন ধরণের বাড়াবাড়ি করে না। আর কোন ছোট বিষয়কে প্রাসঙ্গিকতার চাইতে অধিক বড় করে দেখে না।
তিনি (শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ) আরও বলেন, “প্রশংসা-নিন্দা, ভালোবাসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা-মিত্রতা সকল কিছু অর্জিত হবে এবং সকল বিষয়ের মানদণ্ড হবে একমাত্র কুরআন। সুতরাং একজন মু’মিন সে যে স্তরেরই মু’মিন হোক না কেন তার সাথে সম্পর্ক হবে বন্ধুত্বের। আর একজন কাফের সে যেমনই হোক না কেন তার সাথে সম্পর্ক হবে শত্রুতার।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ﴿﴾ وَمَن يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ
“অর্থ: (হে মুমিনগণ!) তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ তাঁর রসূল এবং মুমিনবৃন্দ-যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র। (55) আর যারা আল্লাহ তাঁর রসূল এবং বিশ্বাসীদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই আল্লাহর দল এবং তারাই বিজয়ী”। (সূরা মায়েদা ৫:৫৫-৫৬)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“অর্থ: হে মুমিনগণ! ইয়াহুদী ও খ্রিষ্টানদেরকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করো না। তারা নিজেরাই একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাদেরকে বন্ধু বানাবে, সে তাদেরই মধ্যে গণ্য হবে”। (সূরা মায়েদা ৫:৫১)
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
“অর্থ: আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক”। (সূরা তাওবাহ ৯:৭১)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ
“অর্থ: মুমিনগণ, তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধরূপে গ্রহণ করো না”। (সূরা মুমতাহিনা ৬০:১)
أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِي وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ ۚ بِئْسَ لِلظَّالِمِينَ بَدَلًا
“অর্থ: তোমরা কি তাকে এবং তার বংশধরদেরকে আমার পরিবর্তে নিজেদের অভিভাবক বানাচ্ছো, অথচ তারা তোমাদের শত্রু? জালিমদের জন্য (এটা) কতইনা নিকৃষ্ট বিনিময়”। (সূরা কাহাফ ১৮:৫০)
لَّا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ ۚ أُولَٰئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُم بِرُوحٍ مِّنْهُ ۖ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا ۚ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ ۚ أُولَٰئِكَ حِزْبُ اللَّهِ ۚ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ
“অর্থ: যারা আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তাদেরকে আপনি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবেন না, যদিও তারা তাদের পিতা, পুত্র, ভ্রাতা অথবা জ্ঞাতি-গোষ্ঠী হয়। তাদের অন্তরে আল্লাহ ঈমান লিখে দিয়েছেন এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর অদৃশ্য শক্তি দ্বারা। তিনি তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। তারা তথায় চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট এবং তারা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, আল্লাহর দলই সফলকাম হবে”। (সূরা মুজাদালা ৫৮:২২)
যার মাঝে ঈমান ও পাপাচার উভয়টা বিদ্যমান তার সাথে বন্ধুত্ব করা হবে তার ঈমান হিসেবে। তার সাথে বিদ্বেষও রাখা হবে তার পাপাচার হিসেবে। কেননা শুধুমাত্র গুনাহ ও পাপের কারণে সে একবারেই ঈমান থেকে বের হয়ে যাবে না। যেমনটি মনে করে থাকেন – খারেজি ও মুতাযিলাগণ। এজন্য নবীগণ, সিদ্দিকগণ, শুহাদা এবং সালেহীনদেরকে ঈমান ও দ্বীন, ভালোবাসা ও বিদ্বেষ, বন্ধুত্ব ও শত্রুতার ক্ষেত্রে ফাসিকদের স্থলে ধরা হবে না।
وَإِن طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ۖ فَإِن بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَىٰ فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّىٰ تَفِيءَ إِلَىٰ أَمْرِ اللَّهِ ۚ فَإِن فَاءَتْ فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا بِالْعَدْلِ وَأَقْسِطُوا ۖ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ﴿﴾إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ فَأَصْلِحُوا بَيْنَ أَخَوَيْكُمْ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“অর্থ: যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ইনসাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে পছন্দ করেন। (9) মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে-যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও”। (সূরা হুজরাত ৪৯:৯-১০)
পরস্পর লড়াই ও বিদ্রোহ হওয়া সত্ত্বেও উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদেরকে একে অপরের ভাই বলে আখ্যায়িত করেছেন”।
অর্থাৎ যেহেতু যুদ্ধ বিগ্রহ থাকার পরেও ভ্রাতৃত্ব বহাল থাকে, সুতরাং তার চেয়ে নিম্ন বিষয়ের ক্ষেত্রেতো ভ্রাতৃত্ব বহাল থাকবেই।
এজন্যই তো হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বিদ্রোহীদের সাথে লড়াই করতেন কিন্তু যুদ্ধের পর উভয় দলের নিহতদের একসাথে জানাযা পড়তেন। অর্থাৎ যদি আল্লাহ তায়ালার হুকুম এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কর্ম পদ্ধতি না থাকতো তাহলে মুসলিম জাতি বিদ্রোহী ও খারেজীদের সাথে লড়াইয়ের সঠিক পদ্ধতি জানতো না।
অর্থাৎ খারেজী এবং বিদ্রোহীদের সাথে লড়াইয়ের পদ্ধতির ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার পর হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুরই শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে। অন্যথায় বিদ্রোহী ও খারেজীদের সাথে লড়াই করার বিষয়ে শরিয়তের অনেক নস আমাদের কাছে অস্পষ্ট রয়ে যেত। যেমন; যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়নকারী শত্রুর পিছু ধাওয়া করা, বন্দিদের হত্যা করা, শত্রুদের যখমিদের চিকিৎসা করা ইত্যাদি বিষয়।
এগুলো যদি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজে বাস্তবায়ন করে হাতে কলমে দেখিয়ে না দিতেন, তাহলে আমরা অবশ্যই এক্ষেত্রে ভুলের শিকার হতাম।
খারেজী এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাঝে যে বিষয়টি নিয়ে মতবিরোধ হয়েছিলো, তা হলো – তিনি বিদ্রোহীদের জখমীদের হত্যা করতেন না এবং তাদের নারীদের বন্দী করতেন না ইত্যাদি। আর এসমস্ত কাজ খারেজীরা করতো। যখন তারা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে বিতর্ক করলো তখন তিনি তাদেরকে বললেন: “তোমরা কি উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বন্দি হওয়ার যোগ্য মনে করো”?
তখন তারা কিছুই বলতে পারলো না। বরং তারা চুপ হয়ে গেলো। কেননা এবিষয়ে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ ছিলো। তাই সর্বযুগে যদি মূর্খরা চুপ থাকতো তাহলে এত মতবিরোধ সৃষ্টি হতো না।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মূর্খদের পরস্পর মতবিরোধ এমন একটি কাজ যার ফলে এ জামানায় শুধুমাত্র কুফর-ফিসক নয়, সামান্য সামান্য বিষয়ে বড় থেকে বড় ধরনের বিবাদ বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। বরং কতক জামাত এমন রয়েছে যাদের নিজেদের কাগুজে নীতিমালা তাদের বক্তব্যের সাথে মিলে না। তাহলে কিভাবে প্রত্যেকের সাথে একই আচরণ করা হবে? সুতরাং আমরা প্রত্যেকের সাথে তার প্রাপ্য অনুযায়ী উপযুক্ত আচরণ করবো। এমনকি শত্রুতা ও মিত্রতাও।
কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি বর্তমানে ٱلْوَلَاءُ وَٱلْبَرَاءُ তথা (শত্রুতা ও মিত্রতা) দুই প্রকারে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। হয়ত পরিপূর্ণ শত্রুতা, নয়ত পরিপূর্ণ মিত্রতা। তৃতীয় কোন প্রকার নেই। এই নীতি প্রত্যাখ্যাত। বস্তুত ٱلْوَلَاءُ وَٱلْبَرَاءُ তথা (শত্রুতা ও মিত্রতা) তিন প্রকার।
১। পরিপূর্ণরূপে সম্পর্কচ্ছেদ। এটা কাফেরদের জন্য।
২। পরিপূর্ণরূপে সম্পর্ক স্থাপন। এটা ঐ মু’মিনের জন্য যে নিজের ঈমান অনুযায়ী আমল করে।
৩। পাপী মু’মিনের জন্য তার ঈমান হিসেবে বন্ধুত্ব স্থাপন এবং পাপ হিসেবে সম্পর্কচ্ছেদ।
এই কারণেই আল্লাহ তায়ালা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে কথা বলতেন কিংবা তাকে সাহাবায়ে কেরামদের সাথে আচরণ করার পদ্ধতি শিখিয়েছেন তখন তাকে বলেছেন।
وَاخْفِضْ جَنَاحَكَ لِمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ﴿﴾فَإِنْ عَصَوْكَ فَقُلْ إِنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تَعْمَلُونَ
“অর্থ: আর যে মুমিনগণ আপনার অনুসরণ করে, তাদের জন্য বিনয়ের সাথে মমতার ডানা নুইয়ে দিন। আর তারা যদি আপনার অবাধ্যতা করে তবে বলে দিন, তোমরা যা কিছু করছো তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই”। (সূরা শুআরা ২৬:২১৫-২১৬)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে গুনাহগার মু’মিনদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করতে বলেননি। বরং তাদের কাজকে প্রত্যাখ্যান করতে বলেছেন।
আমরা যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সীরাতের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাই, কোন কোন সাহাবাগণ ভুল করেছিলেন। যেমন খালেদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাজের উপর স্বতন্ত্র ব্যাখ্যা তথা ইজতিহাদ করে একজন নব্য মুসলিমকে হত্যা করেছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধুমাত্র তার কর্ম থেকে মুক্ত হওয়া ঘোষণা দিয়েছেন।
আরেকটি উদাহরণ আমরা দেখতে পাই আব্দুল্লাহ ইবনু জাহাশ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সারিয়্যাতে। যখন তারা না জেনে হারাম মাসে লড়াই করেছিলেন তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের কাজ থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ভুলের সমর্থন দেননি, কিন্তু তাদের সাথে মুহাব্বাতের সম্পর্ক বহাল ছিলো।
এমনকি কা’আব ইবনে মালেক সহ তিনজন সাহাবী তাবুক যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করে যে অপরাধ করেছিলেন, তার শাস্তি স্বরূপ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে কথা বন্ধ রেখেছিলেন। তিনি তাদের সাথে কথা বন্ধ করেছিলেন একমাত্র শিষ্টাচার এবং সতর্ক করার জন্য, যাতে তারা অন্যান্য মানুষের জন্য শিক্ষার কারণ হন। যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তিন সাহাবীর সাথে কথা বলা বন্ধ না করতেন তাহলে কথা বন্ধের এ রহস্য এবং মূলনীতি জানা যেত না। যে মূলনীতি বর্তমানের অনেক মানুষই জানে না। ফলে তারা ভুল করে বসে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে কথা বন্ধ করেছিলেন কল্যাণের উদ্দেশ্যেই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি জানতেন যে, কা’ব ইবনে মালিক, মুরারা ইবনে রাবী এবং হিলাল ইবনে উমাইয়া এদের ঈমানের ক্ষেত্রে দুর্বলতা ছিল যা তাদের যুদ্ধে না যাওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অথবা যদি জানতেন যে, তাদের সাথে কথা বন্ধ করলে ফেতনার আশংকা আছে, তবে তিনি তাদের সাথে কথা বন্ধ করতেন না।
অনেক ব্যক্তি যারা যুদ্ধে যায়নি তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আসলো এবং অযুহাত পেশ করলো। যদিও তারাও ভুল করেছেন তবুও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সাথে কথা বন্ধ করেননি। বরং তাদের জন্য ইস্তিগফার করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই তিনজন ছিলেন মজবুত ও দৃঢ় ঈমানের অধিকারী। তাই তাদের সাথে তিনি কথা বলা বন্ধ করে দিলেন এবং কঠিন আচরণ করলেন।
ফলে হিলাল ইবনে উমাইয়া, মুরারা ইবনে রাবি রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘরে বসে কান্না শুরু করলেন। যেন কাঁদতে কাঁদতে নিজেকে শেষ করে দিবেন। কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের ভাবনার কথাগুলো এইভাবে বললেন যে, “আমার কাছে পৃথিবীটি অপরিচিত হয়ে গেলো। যেন এটি আমার পূর্ব পরিচিত পৃথিবী নয়”। তিনি বলেন, “একবার আমি আমার চাচাতো ভাই আবু কাতাদার কাছে প্রবেশ করলাম। সে ছিলো আমার কাছের মানুষ। আমি তাকে সালাম দিয়ে বললাম: ‘হে আবু কাতাদা!’। কিন্তু সে আমার সালামের উত্তর দিলো না। আমি তাকে বললাম: ‘হে আবু কাতাদা! আল্লাহর কসম আপনি কি জানেন না যে, আমি আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসি?
আবু কাতাদা প্রথমবার চুপ ছিলো। দ্বিতীয়বার বললাম তখনও চুপ থেকেছে। তৃতীয়বারে উত্তর দিলেন ও বললেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন”।
তখন কা’ব ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে গেলেন। ইতিমধ্যে তিনি আরেকটি কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হলেন, যখন তার কাছে গাসসানের শাসকের পক্ষ থেকে একটি চিঠি আসলো। চিঠির মধ্যে গাসসানের শাসক বললো: “শুনেছি আপনার সাথী আপনাকে বিতাড়িত করেছে। সুতরাং আপনি আমাদের কাছে চলে আসুন। আমাদের জন্য কর্তব্য হলো, আমরা আপনার পাশে দাঁড়াবো”।
আনসারগণের গাসসান গোত্রের সাথে সম্পর্ক রয়েছে এই হিসেবে যে, তারা সবাই আযদ গোত্রের। তাই তারা তাকে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিলো। কা’ব ইবনে মালিক বলেন, “আমি বুঝতে পারলাম যে, এটা একটা বড় পরীক্ষা। তাই আমি তা চুলায় নিক্ষেপ করলাম। (আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন)।
যদি তিনি দুর্বল মু’মিন হতেন তাহলে তিনি এই ফিতনায় পড়ে যেতেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের ঈমান সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা পরস্পর সম্পর্কচ্ছেদ করি প্রবৃত্তির তাড়নায়। এতক্ষণ আমরা প্রাসঙ্গিক আলোচনা করলাম। এই বিষয়ে আমরা সামনে স্বতন্ত্র আলোচনা সামনে করবো ইনশাআল্লাহ।

 

*****

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

8 − two =

Back to top button