অডিও ও ভিডিওঅডিও ও ভিডিও [আল হিকমাহ]আল-হিকমাহ মিডিয়ানির্বাচিত

বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি | পঞ্চম দরস | শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ


مؤسسة الحكمة
আল হিকমাহ মিডিয়া
Al-Hikmah Media

تـُــقدم
পরিবেশিত
Presents

الترجمة البنغالية
বাংলা অনুবাদ
Bengali Translation

بعنوان:
শিরোনাম:
Titled

أصول التعامل مع أهل البدع والمخالفين
“الدرس الخامس”

বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি
“পঞ্চম দরস”

Treatment policy with bidat and opponents
“5th dars “

للشيخ الأمير خالد باطرفي – حفظه الله
শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
By Sheikh Khalid Batarfi Hafizahullah



 

 

 

 

للمشاهدة المباشرة والتحميل
সরাসরি দেখুন ও ডাউনলোড করুন
For Direct Viewing and Downloading

লিংক-১ : https://archive.vn/4fcTI
লিংক-২ : https://mediagram.me/c0681754e97ef313
লিংক-৩ : https://archive.ph/u3F7o
লিংক-৪ : https://web.archive.org/web/20210922…681754e97ef313
লিংক-৫ : https://web.archive.org/web/20210922…e_acoronniti-5

روابط الجودة العالية
HQ 1080 (336.9 MB)
১০৮০ রেজুলেশন [৩৩৬.৯ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/8MRC8CtbBrojWji
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul-5.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/e507d68c-9b28-4d97-b9d1-9bd784a9a3df/32379
1fb3981d731c5c42f14458881c7e9413a9dc5bfbafdf409443e2c5d066d

লিংক-৩ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/di16ce9271b63f6824e999f55244ca5f79887

روابط الجودة المتوسطة
MQ 720 (169.6 MB)
৭২০ রেজুলেশন [১৬৯.৬ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/Wq5FfKSDXd7D4sx
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul-5%20MQ.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/1a6cecdb-5c17-4a5e-a5be-217431bd75c4/1f54d0e3adca7400cf17365bb88ee87e7cdc7ad6408ede1bc5452d9b725655fb
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/dhoip9d00be76a5f64d04ae182978db22586d
লিংক-৫ : https://jmp.sh/kXFRdJ2g

روابط الجودة المنخفضة
LQ 360 (67.7 MB)
৩৬০ রেজুলেশন [৬৭.৭ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/L5jmmcgeL9cgM73
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul-5%20LQ.mp4
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/ec5a1fe2-8e66-47df-afef-19d554910fc1/18c23c4efd44fffac9d01a9600be13132be43e3df19590f369f1de75a5b17a57
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/di16c8c84d04ec6b346c99d352e8721d4aa5f
লিংক-৫ : https://jmp.sh/kYC2BpdM


روابط جودة الجوال
Mobile Qoality (71.8 MB)
3GP রেজুলেশন [৭১.৮ মেগাবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/brSzQeispe7ABtR
লিংক-২ :https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul-5.3gp
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/393d587a-3aab-48f0-bfe5-4e9e7de308c0/f947c18362e58021ef09959274939b33f8e3730c23d4eca29e2b78df237167f7
লিংক-৪ :https://workdrive.zohopublic.eu/file/a7hz058c00b0b9e3e4180a7e4a76ee4dc036b
লিংক-৫ : https://jmp.sh/SLVKelgu

روابط بي دي اب
PDF (592 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৫৯২ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/9A8LA7LsQyQYGZd
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul%20-%205.pdf
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/d1d68559-5cf1-475d-aae0-394af2097ab1/fee82925631ba7928e39259d2b852b7898d3cd20c8d24a051f0a9e0e652e5f85
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/a7hz0da657500250c48e9ad916dcefa9188c9
লিংক-৫ : https://jmp.sh/GGSl7XRL

روابط ورد
Word (350 KB)
১য়ার্ড [৩৫০ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/b8gYREpGkxMXj3N
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul%20-%205.docx
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/f17188ab-916d-4d10-a0f3-17f91d326c2c/7cc9d6744141e6c2fad7ff94115e83f04f07c2c23abd650e5e9a742cae940a17
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/a7hz04615c4fee3b74fcc9cc37a781fdda946
লিংক-৫ : https://jmp.sh/vcbY6cLl

روابط الغلاف- ١
book Banner [629 KB] বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [৬২৯ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/Hn2Xa5bEW8rS7XN
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul%20-%205%20Prossod.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/8663c353-b440-450e-a1a9-ab5ca9e37eae/3d2d00e5749a4512bf9906659348e7b3730c17d5bd1d67f75bc92d8d35b7489c
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/a7hz008fdbaf94a5f4d12b081a18bea958a09
লিংক-৫ : https://jmp.sh/fwAB7GqM

روابط الغلاف- ٢
Banner [946 KB] ব্যানার ডাউনলোড করুন [৯৪৬ কিলোবাইট]

লিংক-১ : https://banglafiles.net/index.php/s/FAkCgJiHQptNXy5
লিংক-২ : https://archive.org/download/bidati-o-birudhider-sathe-acoronniti-5/Usul%20-%205%20Banner.jpg
লিংক-৩ : https://drive.internxt.com/sh/file/348a7d34-2225-4d55-b1aa-03b1f92dffa0/0e84cf205c457a7c15a79253ceff435b751dca846ca87470c94eb1d74ba9cf8a
লিংক-৪ : https://workdrive.zohopublic.eu/file/a7hz0fa6035686cc847cca971b67509f8676c
লিংক-৫ : https://jmp.sh/hhZQ5Xwn

******

 

বিদআতি ও বিরোধীদের সাথে আচরণনীতি
শাইখ খালিদ বাতারফি হাফিযাহুল্লাহ
পঞ্চম দরস

অনুবাদ ও প্রকাশনা

-মূল প্রকাশনা সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
মূল নাম:
أصول التعامل مع أهل البدع والمخالفين – الدرس الخامس، للشيخ الأمير خالد باطرفي – حفظه الله –
ভিডিও দৈর্ঘ্য: ১১:০৯ মিনিট
প্রকাশের তারিখ: রজব ১৪৪২ হিজরি
প্রকাশক: আল মালাহিম মিডিয়া

 

 

বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
পঞ্চম মূলনীতি: আমাদের বিরোধিতাকারী প্রত্যেককেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কিংবা বাহাত্তর ফিরকার লোক বলে হুকুম না লাগানো। তবে কেউ যদি কট্টরপন্থী বিদআতি হয়; যার ব্যাপারে সকলে একমত, তার হুকুম ভিন্ন।
এ সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“এই এ’তেকাদ ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে আমাদের বিরোধিতাকারী প্রত্যেকেই হালাক হয়ে যাবে, এমনটা জরুরী নয়। কারণ, বিরোধিতাকারী কখনো এমন মুজতাহিদ হয়ে থাকেন, যার ভুল-ভ্রান্তি আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দেন। কখনো কখনো এই মুজতাহিদের ইলমের এই স্তরে তার পৌঁছা হয় না, যার দ্বারা তার উপর হুজ্জত কায়েম হয়।
কখনো বা তার এই পরিমাণ নেক আমল অর্জিত হয়, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার (সগীরা) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন। আর যদি ভীতি প্রদর্শনের বাক্যগুলো এমন হয় যা এধরণের ব্যক্তিদেরকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়, তাহলে আবশ্যক হয় না যে, তাবীলকারী মুজতাহিদ, ধার্মিক, (গুনাহ মিটানোর মত) নেকী অর্জনকারী এবং ক্ষমাপ্রাপ্ত ও অন্যান্যগণ তাতে অন্তর্ভুক্ত হবে। সুতরাং, এটিই প্রথম কথা বরং একথার দাবী হল এই যে, যারা এই বিশ্বাস ধারণ করবে, তারা মুক্তিলাভ করবে এই বিশ্বাসের ক্ষেত্রে । আর যে এর বিপরীত বিষয় বিশ্বাস করবে, তাতে সে মুক্তিলাভ করতেও পারে, না-ও পারে”।
অর্থাৎ, তিনি উল্লেখ করেছেন যে, এসমস্ত বিষয়ে যারাই নিপতিত হবে, প্রত্যেকেই হালাক ও ধ্বংস হয়ে যাবে, বিষয়টি এমন নয়। কারণ, কখনো তিনি মুজতাহিদ হয়ে থাকেন; যিনি আল্লাহর ইচ্ছায় ক্ষমাপ্রাপ্ত। কখনো বা তার নিকট দলিল-প্রমাণ পৌঁছেনা, সেই বিষয়ে তার নিকট কোন ইলম পৌঁছেনি; যাতে তিনি নিপতিত হয়েছেন। আবার কখনো দেখা যায়, তার এমন নেক আমল রয়েছে, যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটি মুছে দেন। উদাহরণতঃ হযরত হাতেব বিন আবী বালতা‘আ যেমনটা করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোপন বিষয় প্রকাশে উদ্যত হয়েছিলেন; যা কবীরা গুনাহসমূহের অন্যতম। তবে তাঁর এই কবীরা গুনাহকে মিটিয়ে দিয়েছে তাঁর ঐ আমল, যা তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণের মাধ্যমে অর্জন করেছিলেন। পাশাপাশি ইসলামের জন্য তাঁর অন্যান্য ত্যাগ ও কুরবানি।
একথা ইবনুল কাইয়ূম আল-জাওযিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ-ও তাঁর যাদুল মা‘আদ কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, “নিশ্চয় বড় বড় নেক আমল বড় বড় গুনাহসমূহকে মিটিয়ে দেয়। এমনিভাবে কোন ব্যক্তি যখন কোনক্ষেত্রে তাবীলকারী মুজতাহিদ হয়ে থাকেন, যাতে তিনি হক ও সত্য বিষয়ের ইচ্ছা পোষণ করেন, সেক্ষেত্রেও বিশেষভাবে বড় আমলের দ্বারা আল্লাহ তার এই বড় ভুল-ভ্রান্তিগুলো ক্ষমা করে দেন”।
আলোচ্য মূলনীতিতে এটিই একমাত্র উদ্ধৃতি, যা শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ করেছেন।
আর মূলনীতিটি হচ্ছে- আমাদের বিরোধিতাকারী প্রত্যেককেই হালাক ও বাহাত্তর ফিরকার অন্তর্ভুক্ত বলে হুকুম না দেয়া।
ষষ্ঠ মূলনীতি: নির্দিষ্ট ব্যক্তির অবস্থার উপর চিন্তা-ভাবনা করা।
আমাদের আলোচ্য বিষয় অর্থাৎ, বিদআতিদের সাথে আমাদের আচরণের মূলনীতিসমূহের মধ্যে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। তা হচ্ছে- নির্দিষ্ট ব্যক্তির অবস্থার উপর চিন্তা-ভাবনা করা। তার থেকে যেসব বিষয় সংঘটিত হয়েছে, যা স্পষ্টতঃ কুফরি কিংবা ফাসেকীকে আবশ্যক করে, সে সম্পর্কে শর্তাদি প্রমাণিত হওয়া ও প্রতিবন্ধক বিষয়ের অনুপস্থিতি নিশ্চিত হওয়ার মাধ্যমে চিন্তাভাবনা করা।
এটিকে আমরা সবচে’ গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেছি। অর্থাৎ, আলোচ্য বিষয়ের সবচে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি; যা অনুধাবন করা আমাদের জন্য অত্যাবশ্যক। এমনটা বলার কারণ কী? কারণ, এখানেই পার্থক্য সুস্পষ্ট হবে। এর মাধ্যমেই এই বিষয়ে মানুষের অজ্ঞতা প্রকাশ পাবে। ফলে এই মাসআলার উপর ভিত্তি করেই বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের উপর ওয়ালা-বারা তথা বন্ধুত্ব ও শত্রুতা নির্ণয় হবে। কাউকে তাকফীর করা হবে অথবা তাকফীর করা হবে না। যখন আপনি কাউকে তাকফীর করবেন, তখন আপনি আমার সাথে একমতপোষণকারী হবেন। আর যদি আপনি তাকে তাকফীর না করেন, তখন আপনি আমার বিরুদ্ধাচারী। আপনাকে আমি শত্রু জ্ঞান করবো এবং আপনাকে পরিত্যাগ করবো ইত্যাদি।
এটি খুবই সূক্ষ্ম বিষয়। আচরণগত মূলনীতিসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি মূলনীতি। এটি যদি আমরা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি, এই যুগে সৃষ্ট বহু সন্দেহ-সংশয় এবং আইম্মা-মাশায়েখগণের বক্তব্যের অন্ধ আনুগত্য (তথা তাআসসুব) আমাদের থেকে দূর হয়ে যাবে। মানে, তাদের কোন একজন বিশিষ্ট কাউকে টার্গেট করে বললেন- অমুক জামাত বা অমুক ব্যক্তি কাফের। তখন আবশ্যক হয়ে পড়ে যে, আমরাও তাকে তাকফীর করবো। এখন যদি কেউ একজন এসে বলে- আপনি আমাকে যা বলবেন, (কোনরূপ চিন্তা-ফিকির ছাড়া অন্ধের মত দিল) আমি তাই করবো। এটি কেমন কথা?
অর্থাৎ, তাদের কেউ কেউ যেন একথাই বলছে- চিন্তা-ফিকির করার অধিকার আপনার নেই। (কোনকিছু) নির্ধারণ করার সামর্থ্য আপনার নেই। (তো) আপনার ইচ্ছা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত নয়, বরং শাইখের ইচ্ছার সাথে আবদ্ধ। নেতা-আমীর বা অন্য কারো ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। এটি ভুল। এটি চূড়ান্ত পর্যায়ের ভ্রান্তি; যাতে অধিকাংশ মানুষই লিপ্ত রয়েছে।
কিছু কিছু লোক তাদের আকল-মস্তিষ্ক অন্যদের সাথে বেঁধে রাখতে চায়। মানুষ অন্য সব সৃষ্টিজীব থেকে ভিন্ন হয়েছে এই আকলের কারণে। আর সে চায় এই আকলকে অকেজো করে রাখতে। এই ধারণায় যে, তিনি এক্ষেত্রে সালাফের অনুসরণ করেন। হাঁ, অবশ্যই আমরা আকলের উপর নকল (তথা কুরআন ও হাদিস)-কে অগ্রগামী রাখবো। কেননা, আমাদের জ্ঞান-বুদ্ধি অসম্পূর্ণ। কিন্তু নকল (কুরআন-হাদিস) হচ্ছে সুরক্ষিত। কুরআন ও সুন্নাহ উভয়ই ভুল-ত্রুটিমুক্ত। কিন্তু একথার অর্থ এই নয় যে, অমুক শাইখ ভুলের ঊর্ধ্বে। অমুক নেতা নিষ্পাপ। অমুক গোত্রপতি ত্রুটিবিহীন। অমুক আমীর নিরপরাধ। না। প্রত্যেকেরই কিছু কথা গ্রহণীয় এবং কিছু কথা পরিত্যাজ্য। কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যতিক্রম। সালাফগণ (রহিমাহুমুল্লাহ) যখনই এসকল উসুল ও নীতিমালা জেনেছেন এবং সূক্ষ্মভাবে তা উপলব্ধি করেছেন, তাদের মতবিরোধ আমাদের বর্তমান সময়ের মতো কখনোই হয়নি। আমাদের মাঝে মতবিরোধ, অর্থাৎ আহলুস সুন্নাহ বা যারা আহলুস সুন্নাহর প্রতি নিজেদেরকে সম্বোধন করে থাকেন এবং ইসলামের জন্য নিবেদিত অন্যান্য দলসমূহের মাঝে। তারা যদি এই বিষয়টি খুব সূক্ষ্মভাবে অনুভব না করেন, তখনই তাদের মাঝে বিরোধ ও বিতর্কের সৃষ্টি হবে।
উদাহরণতঃ আপনি যখনই ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহকে পাবেন, দেখবেন ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ জাহমিয়্যাহ ও মুতাযিলাদেরকে ব্যাপকভাবে তাকফীর করে থাকেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁকে আপনি এইসব ফেরকার অনেক ইমামের পিছনে নামায আদায় করতে দেখবেন। যারা এই বিষয়টি বোঝেননি, তাদের নিকট বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয়েছে। (অর্থাৎ তারা ভাবছে) কীভাবে তিনি জাহমিয়্যাহদেরকে কাফের বলেন, অথচ তিনি তাদের পিছনে নামায আদায় করেন!? যে এমনটা বলবে, সে কাফের। যে একথা বলবে, সে কাফের। যে বলবে- কুরআন মাখলুক (সৃষ্ট), সে কাফের। এমনটাই বলেন সকল উলামায়ে কেরাম যে, এটাই (আসল) কথা। কিন্তু তিনি জাহমিয়্যাহদের পিছনে নামায পড়ার মাসআলায় বিভিন্ন কউল রয়েছে , বিষয়টি ব্যাখ্যাসাপেক্ষ মাসআলা যা তার নিকট সুস্পষ্ট হয়নি। সে এব্যাপারে অজ্ঞ। বিদআতিদের পিছনে নামায সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা অচিরেই আসছে, ইনশাআল্লাহ। এটি মৌলিক নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর হুকুমে এ সম্পর্কে আমরা শীঘ্রই আলোকপাত করবো। তবে এখানে এই অধ্যায় সম্পর্কে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করছি। এক লোক আসলো, যার অবস্থা সুস্পষ্ট। আর সে এমন লোক, যে কোন কুফরিতে পতিত। তার মাঝে শর্তসমূহ পূর্ণরূপে পাওয়া যায়। (তাকফীরের) প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারী বিষয় তার থেকে পাওয়া যায় না। ফলে আমি তাকে তাকফীর করি। এই ব্যক্তিকে আমি তাকফীর করি এবং তার পিছনে নামাযও পড়ি না।
এক ব্যক্তি এসে আমাকে বললো- না, এই বিষয়ে আমি আপনার বিরোধিতা করছি। সে এভাবে বলেনি কিংবা বলে থাকলেও সে এক্ষেত্রে তাবীলকারী। কোন সমস্যা নেই। সে তাকে তাকফীর করেনি, আমি তাকফীর করেছি। সে তার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, আমি করিনি। কিন্তু এর কারণে কি আমরা পরস্পর শত্রু হয়ে গেছি? না, কেবল এর ভিত্তিতে আমরা শত্রু হয়ে যাইনি।
(কিন্তু) আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে, এই যুগে কিছু কিছু মানুষ – উদাহরণস্বরূপ – যখন কেউ তাগুতকে তাকফীর করে না, যার কুফরি একেবারেই সুস্পষ্ট। অর্থাৎ, অনেক মানুষের মাঝেই এটা পাওয়া যায় যে, তারা তাগুতদেরকে তাকফীর করে না। এতে তেমন জটিলতা নেই। কিন্তু অমুক শাইখকে যদি তুমি তাকফীর না করবে, আমি তোমার সাথে শত্রুতাপোষণ করবো, তোমাকে তাকফীর করবো, তোমাকে পানাহার করাবো না এবং তোমার পিছনে নামাযও পড়বো না। ভালো। কেন তা সত্ত্বেও আমি একারণে তাকফীর করি? এই বিষয়টি আসলেই সংঘটিত হয়েছে, নাকি হয়নি। নিঃসন্দেহে। কেন? কারণ, এখানে মানুষ ভ্রান্তি ও জুলুমে নিপতিত। ইনসাফপূর্ণ নয়। এই পন্থায়। এই মূলনীতি যদি আমরা বুঝতে পারি, তাহলে এমন বহু সমস্যাই আমরা অনুধাবন করতে পারবো, বহু দল ও জামাত আজ যেসবে জর্জরিত।
এ সম্পর্কে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ বলেন-
“এজন্যই ইলমের অধিকারী ও সুন্নাহর অনুসারী উলামায়ে কেরাম তাদের বিরোধিতাকারীকে তাকফীর করেন না; যদিও বিরোধীরা তাঁদেরকে তাকফীর করে। কারণ, কুফর একটি শরয়ী বিষয়। সুতরাং কারো জন্য এর পিছনে পড়া সংগত নয়। যেমন, কেউ যদি আপনার সাথে মিথ্যা বলে, আপনার স্ত্রীর সাথে জিনা করে, তাহলে আপনার জন্য এটা বৈধ হবে না যে, আপনিও তার সাথে মিথ্যা বলবেন, তার স্ত্রীর সাথে জিনা করবেন। কারণ, মিথ্যা বলা ও জিনা হারাম; আল্লাহর হকের কারণে। ঠিক তদ্রূপ, তাকফীর করণটাও আল্লাহর হক। অতএব, কাউকে তাকফীর করা যাবে না, একমাত্র ঐ ব্যক্তি ব্যতীত যাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাকফীর করেছন। অর্থাৎ যে আল্লাহর কিতাব কুরআন ও রাসূলের হাদিস অনুযায়ী কাফের প্রমাণিত হয় তাকে ছাড়া অন্য কাউকে তাকফীর করা যাবে না”।
তিনি আরও বলেন-
“বিদআতিদের একটি চরিত্র হলো, তারা বিভিন্ন বক্তব্য উদ্ভাবন করে, যাকে দীনের আবশ্যিক বিষয় হিসেবে সাব্যস্ত করে। বরং তাকে ঈমানের অনুষঙ্গ বানিয়ে ফেলে, যা অবশ্য কর্তব্য বলে বিবেচিত হয়। এক্ষেত্রে যে তাদের বিরোধিতা করে, তাকেই তারা কাফের সাব্যস্ত করে এবং তার রক্ত হালাল মনে করে। যেমনটা খারেজী, জাহমিয়্যাহ, রাফেযী-শিয়া ও মুতাযিলা ইত্যাদি ফেরকাগুলো করে থাকে। এর বিপরীতে আহলুস সুন্নাহ কোন কিছু উদ্ভাবনও করে না, ইজতিহাদ করে কেউ ভুল করে ফেললে তাকে তাকফীরও করে না। যদিও তিনি তাদেরকে তাকফীরকারী হন, এমনকি তাদের রক্তও হালাল মনে করেন। যেমনিভাবে সাহাবায়ে কেরাম খারেজীদেরকে তাকফীর করেননি। অথচ ওরা হযরত উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে এবং তাঁদের সমর্থক ও তাঁদের জন্য বিরোধী মুসলিমদের রক্ত যারা হালাল মনে করতো, তাদের সকলকে তারা তাকফীর করেছিলো”।
অর্থাৎ, এটাই ছিলো সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পন্থা। অথচ তারা উসমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা প্রমুখ বড় বড় সাহাবীদের তাকফীর করেছে, তাঁদের রক্ত হালাল মনে করেছে। তা সত্ত্বেও তাঁরা তাদেরকে তাকফীর করেননি। যেমনটা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু থেকে বর্ণিত- যখনই কিছু মানুষ তোমার কাছে এসে বলবে, অমুক দলের তাসনিফ/ বিবরণগুলো কিরূপ? ঠিক তদ্রূপ, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষীয় কিছু লোকজনের উপরও মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর বিদ্রোহীদের আপত্তি ছিল এবং তাঁর সাথে আরও যারা ছিলো। আর খারেজীদের তাসনিফ, তারা যাদের থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলো।
তো তিনি তাদের সম্পর্কে কী বলেছেন? ইমামগণের ইনসাফের প্রতি দৃষ্টিপাত করুন। এসব তা-ই, যা তাঁর থেকে সঠিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তাঁর থেকে বেরিয়ে গিয়ে যারা বিদ্রোহী হয়েছে, তারা তাঁকে বললো: তাদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? তারা কি কাফের নয়? তিনি বললেন- তারা কুফরি থেকে পলায়ন করেছে। তারা বললো, তবে কি তারা মুনাফিক? তিনি বললেন- না, মুনাফিকেরা তো আল্লাহর যিকির করে খুব অল্প; কিন্তু তারা তো অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করে। তারা বললো- তাহলে তাদের ব্যাপারে আমরা কী ধারণা করবো? তিনি বললেন- আমাদেরই কিছু ভাই আমাদের উপর বিদ্রোহ করেছে।
তিনি একথা বলেছিলেন খারেজীদের ব্যাপারে। কিন্তু সঠিক কথা হলো, তারা যখন তাঁর সাথে খারেজীদের সম্পর্কে কথা কাটাকাটি করছিলো, তিনি তাদেরকে বলে দিয়েছেন- আল্লাহ তা’আলাই ভালো জানেন,! এ বিষয়ে আমি তাই জানি, আমার ইজতিহাদ যতটুকু পৌঁছেছে।
তারা খারেজীদের সম্পর্কে তাঁকে বললেন, তারা কি কাফের নয়? তিনি জবাবে বললেন, তারা তো কুফরি থেকে পলায়ন করেছে। তবে কি তারা মুনাফিক? তিনি বললেন, মুনাফিকেরা আল্লাহর যিকির অল্পই করে থাকে। কিন্তু এরা তো অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকির করে। তারা বললো, তাহলে তাদের ব্যাপারে আমরা কী বলবো? তিনি বললেন, তারা এমন সম্প্রদায়, যারা আমাদের উপর বিদ্রোহ করেছে। সুতরাং, তারা আমাদের ভাই হয়ে বিদ্রোহ করুক বা ভিন্ন কোন লোকই বিদ্রোহ করুক, সবাই বরাবর। অতএব, তাঁর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইনসাফ ও ন্যায়পরায়ণতার প্রতি লক্ষ্য করুন! এমনকি তাদের সাথে লড়াইয়ের মাঝে; যুদ্ধের পূর্বমুহূর্তে!
স্বভাবতই, কেউ যখন আপনার নিকট এসে বলবে- উদাহরণস্বরূপ- বর্তমানের অনেক দল, (তাদের মাঝে) খুব বেশি বৈপরীত্য। বর্তমানের ফিকহ বুঝার অবস্থা আগেরকার ফিকহ বুঝার অনুরূপ নয়। বর্তমান অবস্থা পূর্বের অবস্থার অনুরূপ নয়। অর্থাৎ এখনকার (মানুষের) অবস্থা আর সেযুগের (মানুষের) অবস্থার মাঝে (চিন্তাগত দিক থেকে) বেশ ব্যবধান রয়েছে। আর সে সময়ে অনেকেই ঈমান এনেছিলো। কেন? কারণ, তারা সাহাবায়ে কেরামদেরকে দেখেছিলেন। তাঁরা ছিলেন এমন মানুষ, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে জীবনযাপন করেছেন। এবং তাদের উপস্থিতিতে ওহী অবতীর্ণ হয়েছিলো। তা সত্ত্বেও হযরত আলী বিন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু খারেজীদের সাথে ইনসাফ করেছিলেন। অথচ তারা দেখছিলো যে, তাদের সামনে কে রয়েছে! আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর মতো অনেকেই; যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে তাঁদের জীবন অতিবাহিত করেছেন। আর তাঁদের উপস্থিতিতেই ওহী নাযিল হয়েছে।
ওরা তাঁদেরকে (সাহাবায়ে কেরামগণকে) কাফের আখ্যায়িত করেছে; তা সত্ত্বেও আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরকে তাকফীর করেননি এবং তাদেরকে হুমকিও দেননি। তিনি তাদের সাথে কেমন ব্যবহার করেছেন? কিতালের পূর্বে? বিশেষত যখন তারা বিভিন্ন বক্তব্য রটিয়ে প্রচার করতে শুরু করে, তিনি তাদের সাথে আলোচনা করেছেন এবং (এ উদ্দেশ্যে) হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-কে তাদের নিকট পাঠিয়েছেন। ফলে তাদের মধ্য থেকে যারা ফিরে আসার, ফিরে এসেছে এবং যারা রয়ে যাওয়ার, তাদের মাঝে রয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছলও যে, তারা পূর্ণাঙ্গরূপে পৃথক হয়ে গেল । তিনি তাদেরকে বললেন- তোমাদের জন্য আমাদের উপর তিনটি কর্তব্য রয়েছে। তা হলো, আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করবো না, আমাদের মসজিদে আসতে তোমাদেরকে বাধা দেবো না এবং আমাদের সাথে যুদ্ধ করলে তোমাদেরকে গনিমত থেকে বঞ্চিত করবো না। বিপরীতে আমাদের জন্য দুটি করণীয় রয়েছে তোমাদের উপর। রাহাজানী করবে না এবং অন্যায় রক্তপাত ঘটাবে না।
তিনি তাদেরকে একথা বলে দিয়েছেন একজনের পক্ষ থেকে। এটা স্পষ্টই ন্যায়সঙ্গত। এই শর্তাবলীর উপর তারা একমত হয়নি। ফলে যখন তারা আবদুল্লাহ বিন খাব্বাব বিন আরাতকে হত্যা করে এবং তার দাসীর পেট ফেড়ে গর্ভস্থ সন্তানকে বের করে আনে, তিনি তাদের কাছে এসে বললেন- নিহতকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করো। ব্যস, এটুকুই।
হে আমার ভাই, একটু চিন্তা করে দেখুন? এটা কেমন ন্যায়পরায়ণতা! (তিনি বললেন) কেবল নিহতকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করলেই হবে। কিন্তু তারা অস্বীকার করলো। অথচ তাদের বিরুদ্ধে তখনও প্রকাশ্যে যুদ্ধের ঘোষণা ছিল।
কিন্তু তাদের মাঝে (বিষয়গুলোর) ধারাবাহিকতা আচরণের ক্ষেত্রে কেমন ছিলো আর বর্তমানে কিছু মানুষ প্রকাশ্য যুদ্ধের পক্ষে না। তারা এগুলোর ধারাবাহিকতাও বুঝতে চায় না। এটা বাতিল।
এমনিভাবে কিছু মাসায়েলের ক্ষেত্রে, যাতে পূর্ববর্তী খারেজীরা সাহাবায়ে কেরামদের বিরোধিতা করেছিলো। তারা সেসব মাসায়েল নিয়ে মতবিরোধ করেছিলো, যেগুলোতে বর্তমানে বিভিন্ন দল, বিশেষত খারেজীরা বিরোধিতা করেছে। উলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন জিহাদি জামাত ও অন্যান্যদের। পুরোপুরি বিরোধিতা করেছে তারা। কেন? কারণ, তখন তাদের বিদআত ও বিরোধিতা ছিলো বিধানের ব্যাপারে। তারা বলেছিলো,হে আলী! বিধান চলবে আল্লাহর। তিনি বললেন, হাঁ, তিনি এক্ষেত্রে তাদের সাথে মতবিরোধ করলেন। বরং তিনি আল্লাহর বিধান দ্বারা ফায়সালা করলেন, যা তারা অস্বীকার করেছে। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন-
وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا فَإِنْ بَغَتْ إِحْدَاهُمَا عَلَى الْأُخْرَى فَقَاتِلُوا الَّتِي تَبْغِي حَتَّى تَفِيءَ إِلَى أَمْرِ اللّٰهِ
“মুমিনদের দু’দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে, তোমরা তাদের মাঝে মীমাংসা করে দাও। আর তাদের একদল অপর দলের বিরুদ্ধে বাড়াবাড়ি করলে, যারা বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরুদ্ধে তোমরা যুদ্ধ করো, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে”। (সুরা হুজুরাত-৪৯:৯)
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, উভয়ের মাঝে মীমাংসা করে দাও। এখানে কাকে সম্বোধন করা হয়েছে? কুরআনকে, নাকি ইসলামের অনুসারীদেরকে? ইসলামের অনুসারীদেরকে। তারাই মীমাংসা করে দেবে। অর্থাৎ, সেসব ব্যক্তিবর্গ, যারা ইসলাহ করবেন।
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন- তোমরা আমার কাছে কী চাও? আমি কুরআন সামনে রাখছি, সে-ই উভয়ের মাঝে মীমাংসা করে দেবে। অর্থাৎ, কোন বর্ণনা ও যুক্তিতর্ক এখানে প্রযোজ্য হবে না। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের সাথে সঠিক আচরণ দেখিয়েছেন।
আজকাল যখনই কেউ আপনার নিকট আসে, অমুক দল কাফের, অমুক ব্যক্তি কাফের; কেননা, সে এমন কথা উচ্চারণ করেছে, যা কুফরিকে আবশ্যক করে। কিংবা এমন কথা বলেছে, যা কুফরির দিকে নিয়ে যায়। অথবা যা ফালসাফা ও গ্রিক দর্শন পর্যন্ত নিয়ে যায়, কেননা পূর্ববর্তী দার্শনিকরা এমনটি করেছেন। সুতরাং এভাবে তাকফীর করার বিষয়টি সঠিক নয়।
অথবা তাকফীর করা হবে ব্যাপক বক্তব্যের ভিত্তিতে। যেমন, সে সকল কথাবার্তা, যা আমরা ইতোমধ্যে উপস্থাপন করেছি। উদাহরণতঃ উলামায়ে কেরাম বলেন, কেউ যদি এমন কথা বলে, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। ফলে তারা (কথার) ব্যাপকতা গ্রহণ করলো এবং তা বাহ্যিক বিষয়াবলীর উপর ন্যস্ত করলো; তাকফীরের কোন নিয়মকানুনের প্রতি দৃষ্টিপাত করা ছাড়াই। অতএব, যে কেউ এক্ষেত্রে তাদের বিরোধিতা করবে, তারা তাকে শত্রুজ্ঞান করবে এবং তার সাথে সম্পর্কে ছিন্ন করবে।
বর্তমানে তাকফীরের এই জটিল বিষয়ে অনেক সীমালঙ্ঘন ও বাড়াবাড়ি চলছে, আর এই সীমালঙ্ঘনকারীরা প্রত্যেক ঐসকল ব্যক্তিদেরকে পথভ্রষ্ট আখ্যায়িত করে, যারা তাদের সাথে অবস্থান করে না ও তাদের কর্মপন্থার সাথে একমত হয় না। এমন আচরণ মুরজিয়াদের ক্ষেত্রেও পাওয়া যায়। বরং তাদের মাঝে তা আরও প্রকটভাবে পাওয়া যায়। আর বর্তমান সময়ে খারেজীদের চেয়ে মুরজিয়াদের ক্ষতি আরও বেশি মতবাদ হিসেবে। আর কার্যক্ষেত্রে মুরজিয়াদের চেয়ে খারেজীদের ভয়াবহতাই অধিক। উপরোক্ত কথার সমর্থনে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে শিহাব যুহরী প্রমুখ সালাফগণ যখনই বলেছেন, মুসলমানদের উপর ইরজার চেয়ে ক্ষতিকর কোন বিদআতের উদ্ভব ঘটেনি, তা কোন ক্ষেত্রে? মতবাদ বা দর্শনগত দিক থেকে। কারণ কী? কেননা, মুরজিয়াদের দর্শন এমন যে, কেউ যখন এই দর্শন পাঠ করবে, তখন তার নেফাক, কুফর ও যিন্দীকে পতিত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এর বিপরীতে কার্যক্ষেত্রে খারেজীরা মানুষকে কুফর থেকে সতর্ক করে থাকে। বস্তুতঃ তারা ইসলাম ও ইসলামে প্রবেশটাকে সুঁইয়ের ছিদ্রের চেয়েও ছোট/ হালকা মনে করে। আপনি যখন মুসলিম হতে চাইবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই আমাদের শর্তাবলী ও আবশ্যকীয় বিষয়াবলীর উপর চলতে হবে। যদি আপনি সামান্যও ব্যতিক্রম করেন, তাহলেই আপনি ইসলামের গণ্ডির বাইরে চলে যাবেন!
এর ফলে মানুষ কুফর থেকে সতর্ক থাকে। এমনকি কোন কোন সালাফ একথাও বলেছেন যে, ইরজা/মুরজিয়াদের বিদআত থেকে খারেজীদের বিদআত অনেকটাই হালকা। কারণ, খারেজীরা মানুষকে কুফর থেকে সাবধান করে, আর মুরজিয়ারা কুফর-যিন্দিককে মানুষের জন্য সহজসাধ্য করে দেয়।
এতো গেলো দর্শনগত দিক থেকে আলোচনা। কার্যকারণের দিক থেকে বললে, খারেজীদের শক্তি-সামর্থ্য বেড়ে গেলে, জমিনে তাদের খুনোখুনি ও ক্ষতিসাধন মুরজিয়াদের চাইতে বহুগুণ বেশি হবে। আজও আমরা বলি, মুরজিয়াদের অনিষ্ট অনেক প্রবল। এর কারণ কী? কারণ, তারা আল্লাহর সাথে কুফরিকারীকে মুসলমানদের ইমাম বানিয়ে নিয়েছে। আর এরা কাফের, যিন্দীক, আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানের বিপরীত দ্বারা শাসনকারী, শরীয়াহকে পরিবর্তনকারী ও কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনকারী থেকে সরে আসা প্রত্যেককেই তারা খারেজী বলে অভিহিত করেছে। এমনকি মানুষকে সত্যপথের অনুসারী, সাহাবায়ে কেরামের অনুসৃত পথে চলার ক্ষেত্রেও তারা ভীতিপ্রদর্শন করে থাকে। এবিষয়ে অর্থাৎ, তর্কের খাতিরে যদি আমরা মেনেও নিই যে, এই সমস্ত শাসক মুসলমান, তবুও তা শরীয়ত গর্হিত কাজই সাব্যস্ত হবে।
অত্যাচারী শাসক থেকে বের হয়ে যাওয়ার মাসআলাটি সালাফের নিকট মতবিরোধপূর্ণ ছিল। মানে, সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈনদের নিকট। পরবর্তীতে উলামায়ে কেরামের রায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ-এর বক্তব্য সুস্পষ্ট। উলামাগণ যখন দেখলেন যে, অত্যাচারী জালেম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার মধ্যে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণই বেশি, তখন বিদ্রোহ না করার উপরই তাদের রায় প্রতিষ্ঠা হয়। কিন্তু আমরা যখন ফুকাহায়ে কেরামের বক্তব্য দেখি, তখন দেখতে পাই যে, এটি ভিন্ন একটি বিষয়। হানাফীগণ অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে বৈধ মনে করেন। তাঁরা এটিকে আমর বিল-মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের পর্যায়ভুক্ত মনে করেন। মালেকীগণও বৈধ মনে করেন, যদি সামর্থ্য থাকে। ইমাম মালেক রহিমাহুল্লাহ-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, আল্লাহর হুকুম পরিত্যাগকারী (অর্থাৎ, সে আল্লাহর হুকুম পরিবর্তনকারী নয়) শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বিধান কী? তিনি বললেন, তোমার পক্ষে যদি ১২ হাজার সৈন্য থাকে, তাহলে বিদ্রোহ করতে পারো। কেন? কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সূত্রে বর্ণিত আছে,
وَلَنْ يُغْلَبَ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا مِنْ قِلَّةٍ
“আর বারো হাজার সৈন্য হলে সংখ্যা স্বল্পতার কারণে পরাজিত হয় না”।(সুনানে আবু দাউদ-২৬১১)
এটা ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ-এর বক্তব্য। শাফেয়ী মাযহাবের বক্তব্যও তাঁর অনুরূপ। ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহ এক্ষেত্রে কল্যাণ-অকল্যাণ দুটোই রয়েছে বলে মনে করেন। ফলে তিনিও একথা বলেছেন। তবে ইবনে হাযম যাহেরী রহিমাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন- বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও সালাফগণের ইজমা হয়েছে যে, তাঁরা বিদ্রোহকে বৈধ মনে করেন। তাঁদের সর্বাগ্রে রয়েছেন হযরত হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ও যায়েদ বিন আলী রহিমাহুল্লাহ প্রমুখ। অতএব, তাদের সাথে তর্কের খাতিরে যদি আমরা মেনেও নিই যে, এ সমস্ত শাসকবর্গ মুসলমান, তবে আমাদের নিকট তো সালাফগণের এসমস্ত বক্তব্যের দলীল রয়েছে। তখন সে অনুযায়ী কাজ করব।
বাকি, হাকিমের ব্যাপারে কথা হলো, তিনি যদি কুফরে লিপ্ত হন, উলামায়ে কেরামের ইজমা ও ঐক্যমতে, তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা ওয়াজিব। এটা কোন সুন্নাত বা মুস্তাহাব নয়, ওয়াজিব। ইসলামে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে অপসারণ করা ওয়াজিব। উলামায়ে কেরামের এই ইজমার কথা ইমাম নববী রহিমাহুল্লাহ কাযী ইয়ায রহিমাহুল্লাহ থেকে উদ্ধৃত করেছেন, “শিফা” কিতাবে। তাছাড়া ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখগণও তা বর্ণনা করেছেন এবং দলীল-প্রমাণও একথার স্বপক্ষে প্রমাণ বহন করে। অতএব, এটা প্রমাণিত যে, এদের নিকৃষ্টতা অনেক বেশি। কিন্তু তা সত্ত্বেও নেতৃত্বস্থানীয় অনেকেই তাদেরকে তাকফীর করেন না। কারো কারো ক্ষেত্রে তাকফীর করা হয়, তবে সেটা তাগুতের সাথে মুনাসাবাত ও আন্তরিকতার কারণে। আমি বলবো, আল্লাহর কসম, আমি দেখছি এসকল শাসকদেরকে তাকফীর করা হয় না, তাদের কুফরে পতিত না হওয়া কিংবা ছোট কুফরে লিপ্ত হওয়ার কারণে। সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
তাকফীরের শর্তসমূহ পাওয়া যাওয়ার শর্তারোপের ব্যাপারে এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তির হকের ক্ষেত্রে তার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ বিষয়ে শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ বলেন- কোন কথা কুফর হলেই তার বক্তাকে তাকফীর করা আবশ্যক নয়; যারা সে কথা অজ্ঞতা বা তাবীলের আশ্রয় নিয়ে বলে। কারণ, নির্দিষ্ট ব্যক্তির হকের ক্ষেত্রে কুফরি সাব্যস্ত হওয়া তার হকের ক্ষেত্রে পরকালীন সাবধানতা সাব্যস্ত হওয়ার মতোই। (অর্থাৎ, সে জাহান্নামে চিরকাল থাকবে।) বলাবাহুল্য, এর জন্য রয়েছে বিভিন্ন শর্ত ও প্রতিবন্ধক, যেমনটা আমরা স্ব-স্থানে সবিস্তারে উল্লেখ করেছি।
আর কেউ যদি বাস্তবে কাফের না হয়, তবে সে মুনাফিকও হবে না। বরং সেক্ষেত্রে সে মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। – মিনহাজুস সুন্নাহ।
ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ আরও বলেন-
“প্রকৃত বিষয় এই যে, কোন কথা কখনো কখনো কুফরি হয়ে থাকে। তাই সে কথার প্রবক্তাকে তাকফীরের ব্যাপারে কথাটি মুতলাক বা ব্যাপক ধরা হবে এবং এভাবে বলা হবে যে, এমন কথা কেউ বললে সে কাফের হয়ে যাবে। কিন্তু এমন কথা উচ্চারণকারী নির্দিষ্ট কাউকে তার তাকফীরের ব্যাপারে হুকুম প্রয়োগ করা হবে না; যাবত না তার উপর সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। যে দলীলের পরিত্যাগকারীকে স্পষ্টতই কাফের বলে অভিহিত করা হয়। এ বিষয়টি ওয়ায়ীদ বা হুমকির নস গুলোতে যেমন বলা হয়েছে তার মতোই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا
“যারা ইয়াতীমের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তারা তো তাদের উদরে অগ্নি ভক্ষণ করে। অচিরেই তারা জ্বলন্ত আগুনে দগ্ধ হবে”। (সুরা নিসা ৪:১০)
এই আয়াত এবং সতর্কতা সংশ্লিষ্ট নুসূস ইত্যাদি আপন জায়গায় ঠিকই আছে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কাউকে এর উপর হুকুম প্রয়োগ করা যাবে না। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট মুসলিম ব্যক্তির ব্যাপারে জাহান্নামী হওয়ার সাক্ষ্য দেয়া যাবে না; যেহেতু এই সম্ভাবনা রয়েছে যে, শর্ত ছুটে যাওয়ায় কিংবা কোন প্রতিবন্ধকতা থাকায় তার উপর এই ধমকি প্রয়োগ হবে না। দেখা যাবে, কখনো সে হারাম কাজ থেকে তাওবা করে ফেলবে, কখনো বা সে এমন কোন মহৎ কাজ করবে, যা তার সেই হারাম কাজের শাস্তিকে বিদূরিত করে দেবে। আবার কখনো সে এমন বিপদ-মুসিবতে আক্রান্ত হবে, যার দ্বারা তার কৃত অন্যায়-অপরাধ মিটিয়ে দেয়া হবে। এমনও হতে পারে, কোন গণ্যমান্য সুপারিশকারী তার ব্যাপারে সুপারিশ করবে।
ঠিক তদ্রূপ, যে সকল কথাবার্তার কারণে তার বক্তাকে তাকফীর করা হয়, কারো কাছে সঠিক বিষয় জানার জন্য আবশ্যকীয় সেসব নুসূস পৌঁছেনি। আর কখনো পৌঁছে থাকলেও হয়তো তাদের নিকট তা সুসাব্যস্ত কিংবা তা বোধগম্য মনে হয়নি। হতে পারে, কখনো তাদের নিকট বিভিন্ন সন্দেহপূর্ণ বিষয় এসে উপস্থাপিত হয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা উযর হিসেবে গ্রহণ করে নেবেন”।
(অর্থাৎ, আমাদের মতে এবং মুজাহিদ মুহাদ্দিসীনে কেরামের তাহকীক অনুপাতে কুফর দূনা কুফর ইত্যাদি। যেমন শাইখ সুলাইমান আল-উলওয়ান।
এই আছারটি জঈফ। কারণ, তার বর্ণনায় হিশাম বিন হুজাইর রয়েছেন। সালাফগণের অনেকেই হিশাম বিন হুজাইরকে ত্রুটিযুক্ত আখ্যায়িত করেছেন। আমাদের বিপরীত মত পোষণকারীগণ মনে করেন, এই হাদিস সহীহ। কোন কোন উলামায়ে কেরামের মতে হিশাম বিন হুজাইর দুর্বল নন। এখন কেউ এসে যদি বলে, বর্তমান সময়ে শাসকবর্গ যে কুফরে লিপ্ত, তা মূলত কুফর দূনা কুফর। এর প্রমাণ, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাদিস। তাহলে তার সাথে তর্কে আমরা বলবো- এই হাদিস জঈফ। সে বলবে- আপনাদের কাছে জঈফ; কিন্তু আমাদের কাছে তা সহীহ। তাহলে এখন কার কথা গৃহীত হবে? না, আমরা এই জাতীয় মতভেদের কথা বলছি না। আমাদের মতে, এসবই হচ্ছে তাবীলযোগ্য ও ওযরবশত। কিন্তু কথা হচ্ছে, কোন লোক প্রবৃত্তির বশীভূত হয়ে এমন কোন বিষয় পেশ করে যা মতবিরোধপূর্ণ তবে সেটি হবে নব-উদ্ভাবিত বা এ জাতীয় কিছু। সুতরাং ব্যাপক বক্তব্যের আলোকে কাউকে (তাকফীরের বিষয়ে) সু-নির্দিষ্ট করণে মতভেদ রয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ-এর বক্তব্য আমরা পূর্ণ করছি। তিনি বলেন-
“ঠিক তদ্রূপ, যে সকল কথাবার্তার কারণে তার বক্তাকে তাকফীর করা হয়, কারো কাছে সঠিক বিষয় জানার জন্য আবশ্যকীয় সেসব নুসূস পৌঁছেনি। আর কখনো পৌঁছে থাকলেও হয়তো তাদের নিকট তা সুসাব্যস্ত কিংবা তা বোধগম্য মনে হয়নি। হতে পারে, কখনো তাদের নিকট বিভিন্ন সন্দেহপূর্ণ বিষয় এসে উপস্থাপিত হয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা উযর হিসেবে গ্রহণ করে নেবেন। অতএব, মুমিনদের মধ্য থেকে যিনি সত্যান্বেষী মুজতাহিদ হবেন এবং ভুল করে ফেলবেন, আল্লাহ তা‘আলা তার ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করে দেবেন। সুতরাং মুমিনদের মধ্যে হক্ব অনুসন্ধানে ইজতিহাদ করে এবং তাতে সে ভুল করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তার ভুলকে ক্ষমা করে দেবেন, সে যে ধরণের ভুলই করুক না কেন, চাই তা চিন্তাগত মাসায়েলের ক্ষেত্রে হোক কিংবা কার্যগত ক্ষেত্রে। এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবাগণ ও জুমহুর ইমামগণের অনুসৃত পন্থা”।
এটাই আসহাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অধিকাংশ ইমামগণের নীতি-আদর্শ।
ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ তাঁর উপরোক্ত কথা সালাফগণের সূত্রে উল্লেখ করেছেন। যার উপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম এবং তাঁদের অনুসারী মুসলিমবিশ্বের ইমামগণ আমল করে এসেছেন আলোচ্য বিষয়ে।
এমনিভাবে আমার সামনে যখন (তাকফীরের) শর্তসমূহ পূর্ণ হয়ে যাবে এবং কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকবে, আমি ভুল করবো না এবং তা জায়েযও হবে না। কেননা, তখন কেউ আমাকে এই বলে অপবাদ দিয়ে বসবে যে, আমি খারেজীদের বিদআতের উপর রয়েছি। কারণ, আমি অমুককে তাকফীর করেছি আমার কাছে শর্তসমূহ পরিপূর্ণ পাওয়া যাওয়ার কারণে ও কোন প্রতিবন্ধকতা না থাকায়। এখন আমি মানুষের কাছে এসে এই লোকের সম্পর্কে জানাবো। এরপরও যদি তারা তাকে তাকফীর না করে, তাহলে আমার কাছে তারা ও তাদের অনুসারীরা ভ্রান্ত ও বিদআতি বলে বিবেচিত হবে। ঠিক তদ্রূপ, যারা তাকে তাকফীর করবে, তারা আমার প্রিয় ভাই বলে গণ্য হবে। এটাই হচ্ছে ব্যবধান। এমনিভাবে কেউ কেউ আসবে, আমি যদি দলীল-প্রমাণ বিদ্যমান পেয়ে, শর্তাবলী পূরণ ও প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ সাপেক্ষে এবং এই জাতীয় বিষয়ে হুজ্জতের পরিচয়জ্ঞান সহকারে তাদেরকে তাকফীর করি, তবুও তারা এসে বলবে- বিষয়টি এমন নয়; আপনি বরং এর দ্বারা খারেজী হয়ে গিয়েছেন। এটি আদৌ এমন নয়। কিন্তু আপনার নিকট কোন মুকাল্লিদ আসবে। এমনিভাবে মুকাল্লিদ; এ সম্পর্কে যিনি অধিক জ্ঞান রাখেন এবং তিনি এই বিষয়ের মুজতাহিদ, তা অস্বীকারের উপায় নেই। কিন্তু তিনি মনগড়াভাবে এই বিষয়ের উত্থাপনকারীর কথা খণ্ডন করবেন। তিনি চাইবেন, এই বুঝের চূড়ায় পৌঁছে যেতে। নেতৃত্ব ও ক্ষমতার মাধ্যমে, কিংবা সম্পদ বা অন্য কিছুর মাধ্যমে। কিংবা সন্তোষভাজন হওয়ার কোন উপায় অবলম্বন করা যার দ্বারা সে বিদআতের মাঝে পতিত হয়।
এভাবেই মানুষ বিদআত ও বিরোধিতায় পতিত হয়ে যায় এবং এর দ্বারাই সে ধমকির শিকার হয়। আল্লাহর পানাহ। আলোচনার সারমর্ম তাহলে এটিই? এটিই নীতিমালাসমূহের অন্যতম একটি নীতি। বিষয়টি আমরা ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি বলেই আমার ধারণা। আল্লাহই ভালো জানেন, কত কত মানুষ আজ এই বিষয়টি না বোঝার ফলে তাতে জড়িয়ে যাচ্ছে, বিদআতে পতিত হচ্ছে!
যাই হোক, আমরা ষষ্ঠ নীতিমালা সম্পর্কীয় আলোচনা এখানেই শেষ করছি।

 

 

مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة الحكمة للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية

আপনাদের দোয়ায়
আল হিকমাহ মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ

In your dua remember your brothers of
Al Hikmah Media
Al-Qaidah in the Subcontinent

Related Articles

২ Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

two × one =

Back to top button