অডিও ও ভিডিও [আন নাসর]আন-নাসর মিডিয়াবাংলা প্রকাশনাশাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো [পর্ব-০২] -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ || ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড

আন নাসর মিডিয়া পরিবেশিত
ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর স্মৃতিচারণ
ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো
[পর্ব-০২]
-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ
[বাংলা ডাবিং ভিডিও, অডিও, পিডিএফ ও ওয়ার্ড]
ভিডিও ডাউনলোড করুন
(১০৮০ ফরম্যাট, ৭২০ মেগাবাইট)
ভিডিও ডাউনলোড করুন
(৭২০ ফরম্যাট, ৭৫.৩ মেগাবাইট)
ভিডিও ডাউনলোড করুন
(৪৮০ ফরম্যাট, ৫০.৭ মেগাবাইট)
https://banglafiles.net/index.php/s/Si9MEycggLCCNFe
https://archive.org/download/a02f021080/A_02_F-02_480.mp4
https://file.fm/f/fz9tz4ef
অডিও ডাউনলোড করুন

(২২.২৩ মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/ZgoaqtCn47aiBE2
https://archive.org/download/a02f021080/A_02_F-02.mp3
https://file.fm/f/8g4b5ymv

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
(৫১৩ কিলোবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/spxjzdboWmB9e3L
https://file.fm/f/9mdykm9k
https://archive.org/download/siticharonporbo2/siticharon%20porbo2.pdf


ওয়ার্ড ফাইল ডাউনলোড করুন
(১৪৫ কিলোবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/zHFrWbjQFgaGWn8
https://file.fm/f/9xr3gs6q
https://archive.org/download/siticharonporbo2/siticharon%20porbo2.doc


প্রচ্ছদ ডাউনলোড করুন
(১৪ মেগাবাইট)

https://banglafiles.net/index.php/s/DLnnHYWExGnz2yE
https://file.fm/f/9csxzju6

—————————–

اپنی دعاؤں میں ہمیں یاد رکھيں
اداره النصر براۓ نشر و اشاعت
القاعدہ برِّ صغیر(بنگلادیش)

আপনাদের দোয়ায়
আন নাসর মিডিয়ার ভাইদের স্মরণ রাখবেন!
আল কায়েদা উপমহাদেশ (বাংলাদেশ শাখা)

In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent [Bangladesh]


ইমামুল মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর স্মৃতিচারণ

ইমামের সাথে অতিবাহিত দিনগুলো

 

পর্ব-০

 

-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ

———————————————————–

 

অনুবাদ ও পরিবেশনা

بسمِ الله والحمدُ للهِ والصلاةُ والسلامُ على رسولِ الله وآلِه وصحبِه ومن والاه.

বিশ্বের আনাচে-কানাচে অবস্থানকারী আমার মুসলিম ভাইগণ! আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।

হামদ ও সালাতের পর-

মুজাদ্দিদ ইমাম ও বীর মুজাহিদ শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো নিয়ে আজকে আলোচনার দ্বিতীয় পর্ব। আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাদের সকলকে শাইখের সাথে তাঁর রহমতের ছায়াতলে একত্রিত করেন। পূর্বের সাক্ষাৎকারে আমি এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলাম, মুহসিনে উম্মত শাইখ উসামা রহ. এর স্মৃতিগুলো নিয়ে আলোচনার এই পর্বগুলো হবে একটু ভিন্ন ধরনের। শাইখের সান্নিধ্যে অবস্থানকারীগণ খুব ভালোভাবেই অবগত আছেন যে, শাইখ উসামা রহ. এর ব্যক্তিত্বের একটি আদর্শিক দিক হচ্ছে: তিনি তানযীম ও সাংগঠনিক গোঁড়ামি থেকে একেবারেই মুক্ত ছিলেন। এমন লোক খুব কমই হয়ে থাকে, যারা সাংগঠনিক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত থাকেন। শাইখ উসামা রহ. সেই কম লোকদেরই একজন ছিলেন। আমার স্মরণ আছে, জালালাবাদকে বিজয়ের অপারেশন ও আক্রমণের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যখন আমি শাইখের নিকট পৌঁছলাম; তখন সব সংগঠনের ভাইদেরকে শাইখের পাশে একত্রিত অবস্থায় দেখলাম। ইখওয়ান, জামা‘আতুল জিহাদ আরব-অনারব, ইরাকের, এমনকি সকল মুজাহিদ সাথীরা শাইখকে ঘিরে একত্রিত হয়েছিল। এই অবস্থা দেখে আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম। তখন অনিচ্ছাসত্ত্বেও এই কথা বলে উঠলাম, মাশাআল্লাহ! হে উসামা বিন লাদেন কতই না সৌভাগ্য আপনার! আপনি সকলকে এই জিহাদের মহান লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ওপর এবং এই কল্যাণকর কাজের ওপর একত্রিত করে ফেলেছেন। শাইখ উসামা রহ. এর আরেকটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, সে কোন সংগঠনের লোক বা কোন তানযীমের লোক, তিনি এদিকে খেয়াল করতেন না; শাইখ মুসলিমদের কল্যাণের জন্য প্রত্যেক জ্ঞানী ব্যক্তির সাথেই পরামর্শ করতেন। এমনকি তিনি অন্য সংগঠনের ভাইদেরকে নিজের কাজে ব্যবহার করতেন এবং স্বতন্ত্র দায়িত্বে নিয়োজিত রাখতেন। কারো মাঝে যদি কোনো যোগ্যতা দেখতেন; তাহলে তার থেকে পরিপূর্ণ ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করতেন এবং তাকে যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে লাগিয়ে রাখতেন।

শাইখ উসামা রহ. এর উস্তাদ শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহ. এর মুক্তির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টার ঘটনাটিই এর প্রমাণ। তিনি সাংগঠনিক গোঁড়ামি থেকে পরিপূর্ণরূপে মুক্ত ছিলেন। শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহ. এর মুক্তির জন্য যখন প্রচেষ্টা চলছিল; তখন আমি খুব কাছ থেকেই এ বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। কয়েকবার তিনি এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থা করেছিলেন। এমনকি শুধুমাত্র এই বিষয়ের জন্যই একটি বিশেষ কনফারেন্সের আয়োজন করেছিলেন। যেখানে বিভিন্ন সংগঠনের ভাইয়েরা আলোচনা করেছিল। শাইখ উসামা রহ. যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক ভাইয়ের সাথেই শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহ. এর মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা করেছেন। এই কনফারেন্সের উপস্থিত সকলেই এই ব্যাপারে সাক্ষী; যারা হয়তো এখন আমার আলোচনাও শুনছেন। একবার, শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহ. এর মুক্তির জন্য চেষ্টা করছিলেন; এমন কয়েকজন ভাই বললেন, আমরা শাইখ উসামার সাথে এই ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য কথা বলবো। আমি তাদের নিয়ে শাইখের নিকট পৌঁছলাম; তখন তিনি জালালাবাদের নিকটাবর্তী একটি উপত্যকায় অবস্থান করছিলেন। যেখানে চারপাশেই ছিল মুজাহিদীনদের ঘাঁটি। পাহাড়ের পাশ দিয়ে খুব সুন্দর নদী প্রবাহিত হচ্ছিল। দৃশ্যটা ছিল খুবই মনোরম। এটা ঐ স্থান; যেখানে বসে শাইখ সেই ঐতিহাসিক শপথ বাণী উচ্চারণ করেছিলেন, আমেরিকা ততক্ষণ পর্যন্ত নিরাপত্তা লাভ করবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ফিলিস্তিনে নিরাপত্তা লাভ করি। অতঃপর আমি সেখানে পৌঁছে শাইখ আবু হাফস রহ. ও শাইখ উসামা রহ. এর সাথে এই বিষয়ে আলোচনা করলাম। শাইখ উসামা রহ. বলে উঠলেন, আমি তো এই বিষয়ের জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত। আপনি এই ভাইদের কাছে জিজ্ঞাসা করুন, যদি আমার এই বিষয়ে চেষ্টার ক্ষেত্রে কোনো অপূর্ণতা থেকে থাকে; তাহলে আমি সেটা পূর্ণ করার জন্য প্রস্তুত আছি। অতঃপর আমি সেই ভাইদের বললাম, শাইখ তো এই কথা বলছেন; তখন তারা বললেন, না আমরা এই কথা বলছি না যে, শাইখ কোনো অপূর্ণাঙ্গতা রেখেছেন। বরং আমরা তো এই ব্যাপারে শাইখকে সহযোগিতা করতে চাই।

আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে আমরা মুসলিম বন্দীদের মুক্তি করার জন্য, বিশেষকরে শাইখ উমর আব্দুর রহমানকে মুক্ত করার জন্য আমেরিকান ইয়াহুদী ওয়ার্ন আইনিষ্টাইনকে বন্দী করতে সক্ষম হয়েছি। তার মুক্তির জন্য যে শর্তগুলো রেখেছি, তার মাঝে একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হলো: শাইখ উমর আব্দুর রহমান রহ. কে মুক্তি দেওয়া এবং তাঁর পরিবারের নিকট তাঁকে সহীহ সালামাতে পৌঁছে দেয়া। বাকি শর্তগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য কিছু শর্ত হলো: বোন আফিয়া সিদ্দীকাকে মুক্তি দেওয়া এবং শাইখ আবু হামজা মুহাজিরসহ ঐ সকল বন্দীদের মুক্তি দেওয়া; যাদেরকে আল-কায়েদার সাথে সম্পৃক্ততার কারণে বন্দী করা হয়েছে। যার সাথে আরো অনেক শর্ত রয়েছে, আপনারা বিস্তারিত আমার ভিডিওতে দেখতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলার কাছে দুআ করছি- তিনি যেন শাইখ উমর আব্দুর রহমানের মুক্তিকে ত্বরান্বিত করেন এবং বাকি সকল মুসলিমকেও মুক্তির নেয়ামত দান করেন।

আমার ইচ্ছা আছে, আমি শাইখের আরো কিছু মহান আদর্শ নিয়ে আলোচনা করবো। শাইখ উসামা রহ. খুবই যাহেদ তথা দুনিয়াবিমুখ ছিলেন। বাস্তবতা হচ্ছে, শাইখ উসামা রহ. এর যুহদ তথা দুনিয়াবিমুখতার ব্যাপারটি কারো অজানা নয়। সবার জানা আছে, আরবের এই কোটিপতি ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি নিজের সমস্ত সম্পদ আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় খরচ করে দিয়েছেন। কিন্তু এখানে আমি শাইখের অতিবাহিত জীবন-যাপনের মাঝ থেকে কিছু দুনিয়াবিমুখতার উদাহরণ আপনাদের সামনে পেশ করবো।

শাইখ উসামা রহ. এর ঘরে যখন কেউ প্রবেশ করতেন; তখন তাঁর ঘরের অবস্থা দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়ে যেতেন! তাঁর ঘরে কাঠের কিছু চেয়ার, প্লাস্টিকের কিছু চাটাই ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। অর্থাৎ একেবারেই মাল-সামানাবিহীন একটা অবস্থা। শাইখ যখনই আমাদেরকে নিজের ঘরে খাবার খেতে ডাকতেন, তখন তার ঘরে যা উপস্থিত থাকতো; তাই সামনে পরিবেশন করতেন। রুটি, সবজি আবার কখনো ভাতও। শাইখের ইচ্ছা হলো: মুজাহিদীনরা যাতে আরাম-আয়েশের, ভোগ-বিলাসের জীবন থেকে একেবারেই দূরে থাকে। এমনকি যখন আমরা করয়াতুল আরবের মধ্যে ছিলাম; আল্লাহ তা‘আলা যেন এই বরকতময় বসতি এবং দখলকৃত সমস্ত মুসলিম ভূখণ্ডকে মুসলিমদের হাতে আবারো ফিরিয়ে দেন। তখন শাইখ অধিকাংশ সময়ই ভাইদেরকে এই ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন, যাতে করে তারা নিজের ঘরে বিদ্যুতের ব্যবস্থা না করে এবং বিদ্যুৎ ছাড়াই থাকার অভ্যাস করে। আবার মাঝে মাঝে এ ব্যাপারে খুব কঠোরতাও দেখাতেন। আমি মাঝে মাঝে শাইখের সাথে কিছু বিতর্ক করতাম যে, এই কঠোরতার কারণ কি? তিনি বলতেন, ‘যাতে মুজাহিদীনরা এই ভোগ বিলাসের জীবনকে জিহাদের শত্রু মনে করে। এবং যে দিন তাদের প্রশিক্ষণ কঠিন পরিস্থিতিতে হবে, তখন তারা জিহাদের কষ্টকে খুব সহজভাবে মেনে নিতে পারবে। এবং কোনো কঠিন পরিস্থিতিই তাদেরকে জিহাদ থেকে দূরে সরাতে পারবে না। জিহাদের প্রশিক্ষণের প্রতি শাইখের খুব গভীর দৃষ্টি ছিল।

আমি একটি বিষয় আলোচনা করতে ভুলেই গিয়েছিলাম, শাইখের এই দুনিয়াবিমুখতার পরও তিনি মেহমানদের আপ্যায়ন করানোর ক্ষেত্রে খুবই প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তিনি তাঁদের জন্য পশু জবাই করতেন এবং খুব ভালো খাবার পরিবেশন করতেন। এমনিভাবে মানুষ যখন কান্দাহারে অনেক ভিড় করছিল, দুই-একদিন পর পর দশ-বিশজনের একেকটি প্রতিনিধি দল শাইখের সাথে সাক্ষাত করতে আসতেন; তখন শাইখ মেহমানদের আধিক্যতার কারণে একপাল বকরী ক্রয় করেছিলেন। যাতে তাঁদের মেহমানদারিতে কোনো ধরনের ত্রুটি না হয়। এভাবেই দিন দিন যখন মেহমান আরো বাড়তে লাগলো, তখন শাইখ সেখানে একটি মেহমানখানাও নির্মাণ করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা যেন কান্দাহারের পবিত্র ভূমিকে আবারো মুসলিমদের হাতে ফিরিয়ে দেন।

সাধারণ সাথী, যারা বাইরের সাধারণ বিভাগে থাকতেন, তাদের খাবারের ব্যবস্থা সাধারণ বডিং থেকেই করা হতো। যেখানে রুটি, ডাল, সবজি ব্যতীত অন্য কিছু পাওয়া দুঃসাধ্যের ব্যাপার ছিল। যখনই বাহির থেকে কোনো মেহমান শাইখের সাথে সাক্ষাত করতে আসতেন, তখন তারাও আনন্দিত হয়ে যেতেন এবং বলতেন, চলো, আজকে খাবারে নতুন কিছুর ব্যবস্থা হবে, গোশত অথবা অন্য কিছু। এভাবে শাইখ রহ. এত সাধাসিধে জীবন-যাপন করার পরেও যখন তিনি কোনো জিহাদী সফরে বের হতেন, তখন শাইখের সাথে থাকা সাথীদের জন্য অনেক বেশি খরচ করতেন। এখানে জিহাদী সফরের কথা বলা হচ্ছে; আর জিহাদী সফর ব্যতীত শাইখের অন্য কোনো সফর তো ছিলই না। আল্লাহ তা‘আলা যেন তাঁর এই সকল কষ্টকে কবুল করেন। এই অধিক খরচ করার কারণে আমি শাইখকে একবার বললাম, শাইখ এটা কি প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খরচ নয়? তো শাইখ বললেন, তাদেরকে তাদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দাও। কারণ আমার সাথে যারা থাকে, তাদের অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়; তাদের জীবনের সময় খুবই সংকীর্ণ এবং তাদের অধিকাংশই অন্যান্য কাজের সুযোগ পায় না; এমনকি তাদেরকে সবসময়ই অভিযানের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। কারণ কখনো শাইখ আসছেন, আবার কখনো যাচ্ছেন। আবার কখনো সফরে বের হচ্ছেন, তো এই সাথীরা সব সময়ই ছায়ার মত শাইখের পাশে থাকছেন। এ জন্যই শাইখ এদের ব্যাপারে বলতেন, তাদেরকে একটু আলাদাভাবে দেখা দরকার। এটি হচ্ছে শাইখের উত্তম আদর্শের একটি দৃষ্টান্ত।

অনুরূপভাবে শাইখের নিরাপত্তা কর্মীদের সাথেও শাইখের এক আশ্চর্যজনক সম্পর্ক ছিল। নিরাপত্তার জন্য নির্ধারিত এ সব সাথীরা শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্ট করার জন্যই এ কাজ করতেন। এ ধরনের লোকের ঋণ কোনোভাবেই শোধ করা সম্ভব নয়। কারণ তারা নিজেদের জান, নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে শাইখের নিরাপত্তার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। এমনিভাবে  তারা শাইখকে হেফাজত করার জন্য আল্লাহর কাছেই সওয়াবের আশা করতেন।

শাইখ উসামা রহ. কে হেফাজত করার ব্যাপারে ঐ সব সাথীদের আত্মোৎসর্গের একটি ঘটনা আমার স্বরণ আছে, আফগানিস্তানে ত্রুসেড যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর শাইখ বিভিন্ন জিহাদের ঘাঁটিতে অবস্থান করছিলেন। সে সময় আমিও শাইখের সাথে ছিলাম। এভাবেই যখন আমরা জালালাবাদে পৌঁছলাম, তখন আফগানিস্তানে ব্যাপক বোম্বিং শুরু হলো। রাত হতে না হতেই বোমা বর্ষণের ধারাবাহিকতা জালালাবাদ এবং তার আশপাশের এলাকায়ও পৌঁছে গেল। আমাদের মনে এই আশংকা হচ্ছিল, অচিরেই এই বোমাবর্ষণ আমাদেরকেও ছেঁয়ে ফেলবে। আমরা তো জলদি করেই সেখান থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছা করলাম। আমরা যেই ঘরে ছিলাম; তার সামনের দিকে একটি বাগান এবং পিছন দিকে কিছু কামরা ছিল। ঐ সময় আমার যা বুঝে আসছিল, সেই অনুযায়ী আমি পিছনের দিকের কামরাগুলোকেই আশ্রয়স্থল বানালাম। কিন্তু শাইখকে শাইখের নিরাপত্তাকর্মীরা সামনের দিকে বাগানে নিয়ে গেল। বাগানের মাঝে এমন কিছুই পেলেন না; যার আড়ালে তারা অবস্থান করতে পারবে। তাই তারা শাইখকে একটি দেয়ালের পাশে বসিয়ে দিলেন এবং তারা শাইখের সামনে নিজেদেরকে একটি সীসাঢালা প্রাচীরে পরিণত করলেন। তারা শাইখকে আড়াল করে রাখলেন, যদি আঘাত লাগেই; তাহলে যেন তাদের গায়ে লাগে আর শাইখ নিরাপদে থাকেন। এই হলো শাইখ এবং তাঁর হিফাজতকারীদের/প্রহরীদের গভীর সম্পর্কের একটি দৃষ্টান্ত।

অনুরূপভাবে শাইখ খুবই দানশীল ছিলেন। আল্লাহর রাস্তায় খরচের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি ফি সাবীলিল্লাহর জন্য খরচ করে দিয়েছেন। আমার একটি ধারণা, আল্লাহ তা‘আলা শাইখকে দুনিয়াতে সম্মানিত করেছেন এবং আশা করি, জান্নাতেও তিনি তাঁকে সম্মানিত করবেন। তো এর একটি বড় কারণ হলো: তাঁর সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে দেয়া। একবার আমি শাইখ আবু হাফস রহ. কে জিজ্ঞাস করলাম, এমন কোন বিষয় রয়েছে, যার জন্য আল্লাহ তা‘আলা মানুষের অন্তরে শাইখ উসামা রহ. এর প্রতি এত ভালবাসা এবং সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা দান করেছেন?

এই ব্যাপারে শাইখ আবু হাফস রহ.ও এই কথা বলেছিলেন, আমার ধারণা অনুযায়ী এর কারণ হলো: তাঁর সমস্ত সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় খরচ করে দেয়া। আমি বললাম, আল্লাহর কসম! আপনার কথা একেবারেই সত্য।

শাইখ রহ. দানের ব্যাপারে ছিলেন একেবারেই উদার। সাথে সাথে তিনি আল্লাহ তা‘আলার ওপর ভরসাও করতেন। তিনি খরচ করতে থাকতেন এবং পরবর্তীতে আল্লাহ তা‘আলার থেকে রিজিকের আশা করতেন। আর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে রিজিকের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হতো।

অধিকাংশ মানুষই এটা মনে করেন যে, শাইখ উসামা রহ. আরবের কোটিপতি হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কোটিপতি থাকা অবস্থায় জীবন অতিবাহিত করেছেন। আবার কোটিপতি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে বাস্তবতা হলো: শাইখ উসামা রহ. যখন সুদান থেকে বের হলেন, তখন তাঁর অনেক সম্পদ লোকসান হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা যেন সুদানের হুকুমতকে হিদায়াত দান করেন; যারা শাইখ উসামা রহ. এর অর্থ দিয়ে উপকৃত হয়ে শাইখ উসামা রহ. এর সহযোগিতার ক্ষেত্রে হাত গুটিয়ে নিয়েছিল। এটা ভিন্ন কথা, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তীতে মুজাহিদীন ও তালেবানদের মাধ্যমে শাইখকে সাহায্য করেছেন। সুদানের বিষয়ে সময় হলে আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ। আসল কথা হলো: শাইখ যখন সুদান থেকে বের হলেন, তখন তাঁর সম্পদের অবস্থা এত ভালো ছিল না, মানুষ যেরূপ ধারণা করে থাকে। তবে এটা সত্য, শাইখ তখনো সম্পদের মালিক ছিলেন। এতদসত্ত্বেও কখনোই শাইখ জিহাদের ক্ষেত্রে সম্পদ খরচ করতে কৃপণতা করেননি। যার একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ হলো, শাইখের নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন আক্রমণের বিশাল খরচ। ৯/১১ হামলার ব্যাপারে এখানে আমি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরবো, আমেরিকা এবং তার দোসর আরব-অনারবের মিডিয়াগুলোর একটি নিকৃষ্ট চরিত্র হলো: যখন ৯/১১ এর হামলার আলোচনা আসে, তখন তারা শুধুমাত্র নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, তথা টুইন টাওয়ারের আলোচনা করেই ক্ষান্ত হয়ে যায়। পেন্টাগন ও ঐ জাহাজের কথা আলোচনা করা হয় না; যা সেলভিনিয়ায় ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই সকল লোকেরা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এর আলোচনা তো করে; কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে পরাশক্তির অধিকারীদের মাথায় আঘাতের বিষয়গুলোও উল্লেখ করে না। এমনিভাবে যখন ৯/১১ এর হামলার দিন আসে, তখন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের ধ্বংস্তুপের নিকট গিয়ে কিছু অশ্রু বিসর্জন দিয়ে থাকে এবং এই চেষ্টা করতে থাকে যে, কিভাবে মুজাহিদীনদেরকে হিংস্র ও খুনী সাব্যস্ত করা যায়। পাশাপাশি এটাও বুঝানোর চেষ্টা করে যে, আমেরিকা এতই পূত-পবিত্র! তারা কোনো অপরাধ-ই করেনি। তবে বাস্তবতা হলো: এরাই হচ্ছে তারা; যারা জাপানে পরমাণুবিক বোমা দিয়ে জাপানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। কিন্তু সুবহানাআল্লাহ! এত কিছু করার পরেও তারা একেবারেই মাসুম ও নির্দোষ!

সারকথা হলো: শাইখ জিহাদের ক্ষেত্রে অনেক বেশি খরচ করতেন। এই ব্যাপারে শাইখ আমাকে একবার একটি ঘটনা শুনিয়েছিলেন। একবার শাইখের নিকট খুব সামান্য কিছু পয়সা ছিল, ঐ সময় ৯/১১ এর হামলার প্রশিক্ষণের জন্য নিযুক্ত এক ভাই আসেন এবং বলেন আমার খুব শীঘ্রই এত টাকা প্রয়োজন। যদি এই টাকার ব্যবস্থা হয়, তাহলে সাথীদেরকে পরিপূর্ণরূপে গড়ে তুলতে পারবো। শাইখ রহ. বললেন, আমার কাছে শুধুমাত্র আগামী মাস চলার মতো খরচ আছে; যাও! তুমি এগুলো নিয়ে যাও। আল্লাহ তা‘আলা হয়তো আমাকে অন্য জায়গা থেকে ব্যবস্থা করে দিবেন। আসলে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ব্যবস্থা করেও দিয়েছিলেন। একবার এক ভাই আমাকে একটি ঘটনা বলেছিলেন, সে এই ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন। একবার আমেরিকান এম্বেসিতে আক্রমণের জন্য নির্ধারিত এক জিম্মাদার সাথী শাইখের কাছে এসে বললেন, আমাদের পঞ্চাশ হাজার ডলার খুব শীঘ্রই প্রয়োজন; ঐ সময় শাইখের কাছে শুধুমাত্র পঞ্চান্ন হাজার ডলার ছিল। শাইখ ঐ ভাইদেরকে পঞ্চাশ হাজার ডলার দিয়ে দিলেন এবং বলতে লাগলেন আমার কখনো অতিরিক্ত সম্পদের জন্য এত আনন্দ লাগেনি; যতটুকু আনন্দ আজকের এই অতিরিক্ত পাঁচ হাজার ডলারের জন্য লাগছে। আজকে আমার এ জন্য আনন্দ লাগছে, আমি আমার সম্পদের অধিকাংশ সম্পদই জিহাদের জন্য খরচ করে দিয়েছি। আসলে জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহর জন্য শাইখের খরচের ব্যাপারটি একটি প্রসিদ্ধ বিষয়; যা সকলেই জানি।

এখানে আমি সামান্য কিছুই আলোচনা করতে পারবো। শাইখের জিহাদের জন্য খরচের ব্যাপারে আরেকটি বিষয় আলোচনা করা দরকার। সকলেই জানেন যে, শাইখ রহ. জিহাদের ক্ষেত্রে ব্যয় করার ব্যাপারে বড়ই প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। কিন্তু অনেকলোকই এই কথার ওপর অবগত নয় যে, শাইখ রহ. আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার লক্ষ্যে জিহাদের জন্য সম্পদ ব্যয়ের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কভাবে খরচ করতেন। [আমাদের আর কত সময় বাকি আছে ভিডিও ধারণ করার? ভিডিও ধারণকারী ভাইদেরকে খুবই পেরেশান দেখা যাচ্ছে!] তো আমি এই কথা বলছিলাম, শাইখ অন্যান্য ব্যাপারে সম্পদ খরচ করার ক্ষেত্রে খুবই কঠোর ছিলেন। এই ব্যাপারে আমার এক সাথীর ঘটনা স্মরণ আছে, যখন আমরা রুশদের বিরুদ্ধে জিহাদের সময় পেশওয়ারে অবস্থান করছিলাম; ঐ সময় আমার এক পরিচিত ভাই সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। ঐ ভাই, যার সাথে আমার এবং শাইখ আবু উবাইদা রহ. এর সম্পর্ক ছিল। তার ওপর মুজাহিদীনদের তা’লীম তারবিয়াতসহ বিভিন্ন বিষয়ের জিম্মাদারি ছিল। ঐ ভাইয়ের এমন একটি মাদরাসা করার ইচ্ছা ছিল, যেখানে উত্তম শিক্ষা দেওয়া হবে। এমন আলেম-উলামা তৈরী হবে; যারা সব ধরনের ভালো কাজে অংশগ্রহণ করবে। সে ছিল এই ব্যাপারে খুবই আগ্রহী । সে আমার এবং শাইখ আবু উবাইদার নিকট এসে বলল, আপনি আমার এই ইচ্ছার ব্যাপারে শাইখ উসামা রহ. এর সাথে আলোচনা করবেন আর আমাকে একটু সহযোগিতা করবেন। আমি বললাম, না, আমি এই ধরনের কাজ পূর্বে কখনো করিনি; আর এটা আমার অভ্যাসও নয় যে, আমি কাউকে শাইখের নিকট নিয়ে যাবো এবং বলবো শাইখ তাকে সহযোগিতা করুন। আমি এটা করতে পারবো না। তখন সে বলতে লাগল, তাহলে আপনি আমাকে একটু শাইখের সাথে আলোচনা করার ব্যবস্থা করে দিন। তখন আমি বললাম, আচ্ছা ঠিক আছে; চলো, শাইখের সাথে সাক্ষাত করিয়ে দেই। অতঃপর ঐ ভাই শাইখের সাথে বসলেন এবং নিরিবিলি আলোচনা শুরু করলেন, আর শাইখ সবগুলো কথাই গুরুত্ব সহকারে শুনলেন। অতঃপর যখন সে ভাই তার ইচ্ছার কথা শাইখকে জানালেন এবং বললেন, আমি চাই এই ব্যাপারে আপনি আমাকে কিছু সাহায্য সহযোগিতা করুন। শাইখ বললেন, না, আমি সাহায্য করতে পারবো না। এই কথা শুনে ঐ ভাই খুব পেরেশান হয়ে গেলেন এবং বলতে লাগলেন, এর কারণ কি? এটা কি কোনো ভালো কাজ নয়? এতে কি মানুষের উপকার হবে না? মুজাহিদীনরাও এর দ্বারা উপকৃত হবে। ঐ সময় শাইখ বললেন, আমার প্রিয় ভাই! আজকে জিহাদকে নিয়ে চিন্তা করার মতো কোনো লোক নেই। কিন্তু এই ধরনের এতিমদের ওপর এবং মাদ্রাসার ওপর খরচ করার বহু লোক রয়েছে। আর জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ যদি ঠিকভাবে হয়; তাহলে এ ধরনের সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে। সুতরাং আজকে জিহাদে সম্পদ খরচের মতো কোনো লোক নেই; এই পরিস্থিতিতে আমি জিহাদের সম্পদ আপনাকে দিয়ে দিবো! এটা হতেই পারে না।তখন ঐ ভাই অনেক আফসোস ও পরিতাপ করতে লাগলেন। কিন্তু তার চিন্তাধারা আগের মতোই রয়ে গেল এবং শাইখের সাথে তর্ক করতে লাগলেন; কিন্তু শাইখ নিজের মতের ওপর অটল রইলেন। এই পরিস্থিতিতে আমার সন্দেহ হচ্ছিল, শাইখ এটা মনে করে বসেন কিনা, আমি এবং আবু উবাইদা ঐ ভাইয়ের রায়ের সাথে একমত। তাই আমি বলে উঠলাম, ভাই! শাইখ যে কথা বলেছেন, সেটাই সঠিক। আর সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে এখন জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহই বেশি হকদার। যখন এটা পূর্ণাঙ্গ হয়ে যাবে, তখন অন্য জায়গায় খরচ করা হবে। ঐ সময় ঐ ভাই আরো নৈরাশ হলেন এবং বললেন, শাইখ! আপনি যদি আমাকে সাহায্য করতে না পারেন; তাহলে এমন কারো সাথে আমার সাক্ষাৎ করিয়ে দিন, যারা এই ব্যাপারে সাহায্য করবে। তখন শাইখ আবারো বললেন, আমি এটাও করতে পারবো না। ঐ ব্যক্তি বললেন, সুবহানাল্লাহ! এটার মাঝে আবার কি সমস্যা? শাইখ বললেন, এটা কিভাবে সম্ভব! একদিকে আমি এ কথা বলবো, এখন ব্যয় করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো: জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ, আবার আমি অপরদিকে অন্য জিনিসের জন্য টাকা চাইবো? এটা করলে তো কথা ও কাজে কোনো মিল থাকলো না।অতঃপর ঐ ভাই খুব বেশি নৈরাশ হলেন এবং শাইখের থেকে এ ব্যাপারে কোনো ধরনের ফায়দাই হাসিল করতে পারলেন না।

শাইখের আদর্শিক আরেকটি দিক এটাও ছিল যে, শাইখ লেনদেনের ক্ষেত্রে অনেক সময় নিজের হক্ব মাফ করে দিতেন। এই ব্যাপারে আমার একটি ঘটনা স্মরণ আছে, আমাদের এক ভাই যিনি রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন; অতঃপর শাইখ যখন সুদানে চলে যান এবং সেখানে বিভিন্ন ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করলেন; তখন সেই ভাই শাইখের নিকট গেলেন। আর শাইখেরও ঐ ভাইয়ের প্রতি অনেক আত্মবিশ্বাস ছিল। তখন সেই ভাই শাইখকে বলল, শাইখ আমি মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে ব্যবসা করে থাকি; এর মাধ্যমে লাভ করে নিজেও উপকৃত হই এবং মানুষদেরকেও উপকৃত করি। তখন শাইখ বললেন, এটা তো খুব ভালো কথা। তখন সে বলল, আমি চাই আপনিও আমাকে কিছু সাহায্য করুন। শাইখ বললেন, ঠিক আছে, আপনাকে সাহায্য করবো কিন্তু একটি শর্ত আছে। সে বলল, শর্তটি কি? শাইখ বললেন, যে জিনিস আমি আপনাকে দিবো, সেটা আমার অনুমতি ব্যতীত বিক্রি করতে পারবেন না। উনি বললেন, ঠিক আছে আপনার শর্ত আমি মেনে চলবো। অতঃপর শাইখ একটি কাগজে সাইন করতে দিলেন এবং শাইখের গোডাউন থেকে অনেক পরিমাণ চিনি নিয়ে যেতে বললেন। শাইখ সুদানে ব্যবসা করতেন; এর মধ্যে চিনির ব্যবসাও ছিল। তিনি সুদানের কারখানা থেকে চিনি ক্রয় করে পাইকারি বিক্রি করতেন। শাইখ ঐ ভাইকে দশ হাজার ডলার সমপরিমাণ টাকার চিনি দেওয়ার জন্য এজাজতনামা লিখে দিলেন এবং বললেন এটা আপনাকে আমি ঋণ দিলাম। আপনি এটা বিক্রির মাধ্যমে হালাল রিজিক কামাই করবেন এবং যখন এর মূল্য একত্রিত হবে, তখন আমার ঋণ পরিশোধ করে দিবেন। কিন্তু এই শর্তটি রক্ষা করবেন, যা আপনাকে দিয়েছি। অতঃপর সে বলল, ইনশাআল্লাহ, আমি তা মেনে চলবো। সে চিনি নিয়ে চলে গেল এবং বিক্রি করতে শুরু করল। কিন্তু এই ভাই মনে হয় ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে খুব বেশি অভিজ্ঞ ছিলেন না। কিছুদিন পর তার নিকট লম্বা দাড়ি, লম্বা জামা পরিধানকারী এক ধোঁকাবাজদের লিডার আসলো। যে ছিল প্রসিদ্ধ ধোঁকাবাজ জামালুল ফজল। সে শাইখ উসামা রহ. এর প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতো। পরবর্তীতে টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে বহিস্কৃত হয় এবং সে সাধারণ মানুষদের অনেক টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করেছে। অবশেষে সে নিজেকে মানুষের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমেরিকার সাথে একত্রিত হয় এবং শাইখের ব্যাপারে ইনফরমেশন দিয়ে আমেরিকা থেকে টাকা উপার্জন করতে শুরু করে। যেহেতু এই জামালুল ফজল (আগে) শাইখের সাথে থাকতো; এজন্য ঐ ভাইও তার ওপর বিশ্বাস করে বসে এবং সে ঐ ভাইকে বলে, আমি তোমাকে পস্তু ভাইদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিবো। যে তোমাকে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিবে এবং তোমার থেকে চিনি নিয়ে তোমাকে পয়সা দিয়ে দিবে। অতঃপর সে ঐ ভাইটিকে চিনি নিয়ে চেক ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ঐ ভাই নিশ্চিত হয়, তাকে দেওয়া চেকটি ছিল জাল; সে ধোঁকাবাজি করেছে এবং চিনি নিয়ে গেছে। অতঃপর সে তাকে অনেক খুঁজেও ব্যর্থ হয় এবং শাইখের নিকট আসে। শাইখ রহ. বলেন, আমি তো তোমাকে প্রথমেই একটি শর্ত দিয়েছিলাম। তুমি শর্ত ভঙ্গ করেছ। সে বলল, আসলে অপরাধটা আমারই। আমি আপনার ঋণ পরিশোধের জন্য কিছু সময় চাইছি। অতঃপর সেই ভাই বহুদিন চেষ্টা করে অর্ধেক ঋণ শোধ করে, আর অর্ধেক ঋণ বাকি থাকে।

এরপর তিনি হিজরত করে আফগানিস্তানে তালেবানদের নিকট পৌঁছান। তখনও শাইখের সাথে তার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। অতঃপর ঐ ভাই আফগানিস্তানে ত্রুসেডারদের বোমাবর্ষণে শহীদ হোন। ঐ ভাইয়ের শাহাদাতের পর আমি শাইখ রহ. কে বলি, শাইখ উসামা! আপনি তো জানেন, শহীদদের সবকিছু ক্ষমা করে দেওয়া হয় الا الدين ঋণ ব্যতীত। যেহেতু এই ভাইয়ের নিকট আপনার ঋণ ছিল; এমনকি হতে পারে না যে, আপনি তাকে মাফ করে দিবেন এবং আখিরাতে প্রতিদানের আশা করবেন? অতঃপর শাইখ বললেন, ঠিক আছে, আমি এই ভাইকে ক্ষমা করে দিলাম এবং এই ভাইয়ের সাথে আমার সমস্ত মুয়ামালা এখানেই ক্ষান্ত হলো।

আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আগামী পর্বে আবার কথা হবে, ইনশাআল্লাহ।

وآخر دعوانا أنِ الحمدُ للهِ ربِ العالمين، وصلى اللهُ  على سيدِنا محمدٍ وآلِه وصحبِه وسلم.

والسلامُ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه

 

 

****************************

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

19 − 5 =

Back to top button