আল-হিকমাহ মিডিয়াইলম ও আত্মশুদ্ধিতথ্য প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশলবই ও রিসালাহবই ও রিসালাহ [আল হিকমাহ]মিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

উমারাদের পাথেয় -শাইখ আবু হামজা আল-মুহাজির রহ.

وصايا
للأمراء

উমারাদের পাথেয়

মূল

শাইখ আবু হামজা আল-মুহাজির রহ.

 

 

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

http://www.mediafire.com/file/mc6xrq3gr51uqn2/94.umarader_pathey.pdf/file
https://archive.org/download/95.umaraderpathey/95.umarader%20pathey.pdf
https://archive.org/details/UmaraderPathey
https://archive.org/download/UmaraderPathey/umarader%20pathey.pdf
https://mymegacloud.com/download/dXBsb2Fkcy9qYWhpZDI0L0FMLUhJS01BSC1NRURJQS85NV91bWFyYWRlci1wYXRoZXkucGRm/h/599e6a79cd1aa61e614c4ffb155bb2ba
https://www.solidfiles.com/v/6dBRAqBxrmDXL

http://www.mediafire.com/file/mc6xrq3gr51uqn2/94.umarader_pathey.pdf/file
https://archive.org/download/95.umaraderpathey/95.umarader%20pathey.pdf
https://archive.org/details/UmaraderPathey
https://archive.org/download/UmaraderPathey/umarader%20pathey.pdf

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

http://www.mediafire.com/file/70o4chdzgavlnmk/94.umarader_pathey.docx/file
https://archive.org/details/95.umaraderpathey
https://archive.org/download/95.umaraderpathey/95.umarader%20pathey.docx
https://archive.org/download/UmaraderPathey/umarader%20pathey.docx
https://mymegacloud.com/download/dXBsb2Fkcy9qYWhpZDI0L0FMLUhJS01BSC1NRURJQS85NF91bWFyYWRlci1wYXRoZXkuZG9jeA==/h/70b850c829efc95663bec850194de694
https://www.solidfiles.com/v/6dBRAqBxrmDXL

http://www.mediafire.com/file/70o4chdzgavlnmk/94.umarader_pathey.docx/file
https://archive.org/details/95.umaraderpathey
https://archive.org/download/95.umaraderpathey/95.umarader%20pathey.docx
https://archive.org/download/UmaraderPathey/umarader%20pathey.docx

—————————

وصايا للأمراء

উমারাদের পাথেয়

মূল

শাইখ আবু হামজা আল-মুহাজির রহ.

অনুবাদ

মুফতি আব্দুল মালেক মুসা হাফিজাহুল্লাহ

শাইখ আবু হামযা আল-মুহাজির রহ. এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

শাইখ আবু আইয়ূব আল মিসরী রহ. (১৯৬৮-এপ্রিল ২০১০) মূলত শাইখ আবু হামযা আল-মুহাজির নামেই পরিচিত। শাইখ ০৭ জুন ২০০৬ ইংরেজি-১৫ অক্টোবর ২০০৬ ইংরেজি পর্যন্ত আল কায়েদা ইন ইরাকের ও ০৭ জুন ২০০৬ ইংরেজি-১৫ অক্টোবর ২০০৬ ইংরেজি পর্যন্ত মুজাহিদিন শুরা কাউন্সিল এর দ্বিতীয় প্রধান ছিলেন। ১৫ অক্টোবর ২০০৬ ইংরেজি-১৮ এপ্রিল ২০১০ ইংরেজি পর্যন্ত ইসলামিক স্টেট অফ ইরাকের যুদ্ধমন্ত্রী ও ০৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ ইংরেজি-১৮ এপ্রিল ২০১০ ইংরেজি পর্যন্ত আমির ছিলেন।

যোদ্ধা হিসাবে যোগদান:

তিনি মিশরে জন্মগ্রহণ করেন, মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিন-মুসলিম ব্রাদারহুড এ যোগ দেন এবং জেনারেল ক্যালডওয়েলের মতানুযায়ী ১৯৮২ সালে হাকিমুল উম্মাহ ডা. শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ’র ‘ইজিপশিয়ান ইসলামিক জিহাদ’ এ যোগ দেন যেখানে তিনি শাইখ যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহর সাথে একসাথে কাজ করেন। শাইখ রহ. ১৯৯৯ সালে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন এবং সেখানে তিনি শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর “আল ফারুক প্রশিক্ষণ শিবির”এ অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি একজন বিষ্ফোরক বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেন।

বিবাহ:

শাইখ রহ. ইউসুফ হাদ্দাদী লাবীব নামে পাসপোর্ট্‌ নিয়ে ইয়েমেন এ প্রবেশ করেন এবং সেখানে গ্রামের এক স্কুলে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৮ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিবাহ করেন। শাইখের সম্মানিতা স্ত্রীর নাম ছিল হাসনা। এবং তাঁদের তিন সন্তান জন্মগ্রহণ করে।

১৮ এপ্রিল বাগদাদের দক্ষিনে লেক থার্ডার এলাকায় সেই অভিযানে শাইখের সম্মানিতা স্ত্রী গ্রেফতার হন এবং অভিযানে শাইখ রহ. শাহাদাত বরণ করেন।

পরবর্তীতে এক বিবৃতিতে ইরাকের আল কায়েদার জর্ডানি কমান্ডার শাইখ আবূ মূসআব আয যারকাবী রহ. এর কথা উল্লেখ করে শাইখের স্ত্রী জিজ্ঞাসাবাদে বলেন “আমি শুধু এতটুকু জানি যে, ২০০৬ সালে মার্কিন এক বিমান হামলায় শাইখ আবু মুসআব আয যারকাবী রহ. শাহাদাত বরণ করার পর শাইখ আবু আইয়ূব আল মাসরী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন”। জানা যায় শাইখ রহ. নিজেকে গোপন করে রাখতে পছন্দ করতেন।

ইরাক গমন:

পরবর্তীতে শাইখের সম্মানিতা স্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, আফগানিস্তানে আমেরিকান আক্রমণের পরে ২০০২ সালে শাইখ আরব আমিরাত হয়ে ইরাকে প্রবেশ করেন। প্রাথমিকভাবে তিনি বাগদাদের কাররাদা অঞ্চলে বাস করেন। তারপর আমিরিয়া ফেনালে, এবং তারপর আল জাদীদাহ এ বসবাস করেন। এখানে তিনি দেশের আল কায়েদার দক্ষিনাঞ্চলের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সুত্রে জানা যায় যে, “তিনি (ইরাকের) অন্যান্য গ্রুপকে আল কায়েদার অধীনে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছিলেন”। ডিফেন্স লিংক নিউজ এর রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে, “আল মাসরী ২০০৩ সালের শুরুতে আল কায়েদার বাগদাদ সেল প্রতিষ্ঠিত করেন।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন আক্রমনের ফলে তার পরিবার বাগদাদ ছেড়ে উত্তরে দিয়ালার উদ্দেশ্যে চলে যায়। শাইখের সম্মানিতা স্ত্রী বলেন: “দ্বিতল ভবন যেখানে আমরা মার্কিন বিমান হামলার শিকার হয়েছিলাম। সেখানে একজন মুজাহিদ শহীদ হয় কিন্তু আমার স্বামী এবং আমি ফাল্লুজার দিকে বেরিয়ে পড়তে সক্ষম হই।”আরব সুন্নি অধ্যুষিত শহরটি বাগদাদের পশ্চিমে অবস্থিত, যা সে সময় মার্কিন বিরোধী এক দূর্গ ছিলো।

শাইখ রহ. ২০০৪ সালে ফাল্লুজার প্রধান যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে শহরে মার্কিন বাহিনীর এক আক্রমনের পর তাঁর পরিবার সহ আবারো সরে পরেন। এবার রাজধানীর পশ্চিমে আবু গারিব শহরের দিকে যান।

২০০৭ সালে শাইখ রহ. এবং তাঁর পরিবার লেক থার্ডার এলাকায় চলে যান। শাইখের স্ত্রী বলেন: “শাইখের শাহাদাতের আগ পর্যন্ত আমরা সর্বদাই বাড়ী পাল্টাতে থাকতাম”।

১৬ জুন ২০০৬-এ ইরাকের একটি অ্যাম্বুশ থেকে নিখোঁজ হয় এমন দুই মার্কিন সেনা সদস্যকে শাইখ আবু হামজা আল-মুহাজির রহ. নিজে হত্যা করেন। পরবর্তীতে ১৯ জুন ২০০৬ ইরাকের ইউসুফিয়া’য় তাদের লাশ একটি ফাঁদ হিসাবে উদ্ধার হয়।

শাইখ আবু আইয়ূব আল মাসরী রহ.কে ২০০৫ সালে অথবা তারও পূর্ব থেকে আমেরিকান জোট এবং ইরাকের শিয়া সরকার খুঁজছিল। মুজাহিদীন শূরা কাউন্সিল -যার মধ্যে ইরাকে আল-কায়েদা ও অন্যান্য ইরাকি মুজাহিদিন গোষ্ঠীগুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল- ২০০৬ সালে জুন মাসে শাইককে নতুন আমীর হিসাবে আবু হামযা আল-মুহাজির নামে অভিহিত করে।

৭ মার্চ ২০০৭ সালের পর বুশ প্রশাসন শাইখের মাথার মূল্য নির্ধারণ করে, যা পরবর্তীতে ২৫মিলিয়ন ডলারে পর্যন্ত উন্নিত হয়।

শাহাদাত বরণ

২০০৬ সালের অক্টোবরে আমেরিকা দাবী করে যে, শাইখ আবু হামযা আল মুহাজির এক মার্কিন অভিযানে ‘হাদীসা’য় নিহত হয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে জানা যায় যে শাইক শাহাদাত বরণ করেন নি। তবে ১৮ই এপ্রিল ২০১০ তারিখে ইরাকের তিকরিতের কাছে মার্কিন ও শিয়া ইরাকী সেনাদের এক যৌথ অভিযানে শাইখ আবু আইয়ুব আল মাসরী রহ. শাহাদাত বরণ করেন।

উক্ত হামলায় দীর্ঘ লড়াইয়ের পর শাইখ আবু উমার আল বাগদাদী রহ., এবং তাঁর ছেলেও শাহাদাত বরণ করেছিলেন।

উল্লেখ্য ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে কুয়েতি সংবাদ মাধ্যম ‘আল জারীদাহ’আল কায়েদা আরব উপদ্বীপ শাখার একজন সিনিয়র সদস্য শাইখ ইবরাহীম আল বান্না হাফিজাহুল্লাহর এক সাক্ষাৎকার প্রকাশ করে। তিনি শাইখ আবু হামযা ইয়েমেনে থাকাকালীন তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। সাক্ষাৎকারে শাইখ ইবরাহীম আল বান্না হাফিজাহুল্লাহ জানান যে, শাইখ আবু হামযার আসল নাম ‘আব্দুল মুনয়িম আল বাদাভী ছিলো। ইতিপূর্বে ২০০৯ সালে আল কায়েদার সামরিক বিভাগের বিশিষ্টজনদের বর্ণনায় পাওয়া নামের সাথে মিলে যায়।

———————————–

بسم الله الرحمن الرحيم

الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، وعلى آله ومن والاه، أما بعد

প্রিয় মুজাহিদ ভাই! মনীষীদের যবান থেকে এবং বিভিন্ন গ্রন্থের গভীর থেকে আপনার জন্য এখানে কিছু উপদেশ একত্র করেছি। বিচক্ষণতার দাবি করছি না; আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করছি, তিনি যেন আমাকে-আপনাকে এর দ্বারা উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করেন।

১. নিয়তকে আল্লাহর জন্য খালেস করা।

এতেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

تكفّل الله لمن جاهد في سبيله لايخرجه إلّا الجهاد في سبيله وتصديق كلماته بأن يدخله الجنة أو يرجعه إلى مسكنه الذي خرج منه مع ما نال من اجر أو غنيمة

‘আল্লাহ তা’আলা ঐ ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার কিংবা যেখান থেকে সে বের হয়ে ছিল সেখানে নেকি বা গনিমতসহ ফিরিয়ে দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করল এবং আল্লাহর পথে জিহাদ ও তাঁর কালিমার সত্যায়ন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যও তার ছিল না।’

একমাত্র আল্লাহ তাআলার কালিমাই সমুন্নত হওয়াকে আপনার কাজের লক্ষ্য হিসেবে স্থির করুন। আবু মূসা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল, যে বিরত্ব প্রকাশ, অহমিকা প্রদর্শন ও লোক দেখানোর জন্য কিতাল করল, তাদের মধ্যে কে আল্লাহর পথে আছে? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর কালিমাই সমুন্নত হোক এ উদ্দেশ্যে কিতাল করল, সে আল্লাহর পথে আছে?’

২. প্রজাদের উপর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা, তাদের কল্যানকামী হওয়া:

مَا مِنْ أَمِيرِ عَشَرَةٍ إِلا يُؤْتَى بِهِ يَوْمَ القِيَامَةِ مغلولا لا يكفه إلا العدل أو يوبقه الجور

‘প্রত্যেক দশজনের আমিরকে কিয়ামতের দিন বেড়ি পড়িয়ে হাজির করা হবে; হয়তো ন্যায়বিচার তাকে মুক্তি দিবে নতুবা অন্যায় তাকে ধ্বংস করে দিবে।’

ما من إمير يلي أمر المسلمين ثم لا يجهد لهم و ينصح إلا لم يدخل معهم الجنة

‘যে আমির মুসলমানদের দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত হল; কিন্তু তাদের জন্য কষ্ট শিকার করল না, তাদের কল্যানকামী হল না, তাহলে সে তাদের সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’

لا يسترعي الله عبدا رعية يموت حين يموت وهو غاش لها إلا حرم الله عليه الجنة

‘যদি কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা জনগণের শাসক নিযুক্ত করেন এবং সে তাদের সাথে প্রতারণাকারী রূপে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন।’

৩. মাশওয়ারা করা এবং পরষ্পর আলোচনা করা:

পরষ্পর আলোচনা করা মাশওয়ারারই একটি অংশ। অর্থাৎ- এক মজলিসে বিভিন্ন ফিকির নিয়ে আলোচনায় বসা। প্রত্যেকেই অপরের মতামতের উপর মন্তব্য করা বা নতুন কোনো মতামত পেশ করা। পরিশেষে যেন সঠিক মতটি পরিষ্কার হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, وشاورهم في الأمر ‘(গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে তাদের সঙ্গে পরামর্শ কর…।’

আল্লাহ তাআলা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর কাছের ব্যক্তিদের সাথে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়েছেন; অথচ নবীজীর জ্ঞান তাদের তুলনায় বেশি। তাহলে আপনাদের বেলায় কী নির্দেশ হবে?

বর্ণিত আছে,

ما ندم من استشار وما خاب من استخار

‘পরামর্শে নজ্জা নেই, ইস্তেখারায় হতাশা নেই।’

من استغنى بعقله ضل، ومن اكتفى برأيه زل، ومن استشار ذوي الألباب سلك سبيل الصواب ، ومن استعان بذي العقول فاز بدرك المأمول

‘যে নিজের জ্ঞানকে পরিপূর্ণ মনে করল সে পথভ্রষ্ট হল। যে নিজের মতকে যথেষ্ট মনে করল সে পদস্খলিত হল। যে জ্ঞানীদের সাথে পরামর্শ করল সে সঠিক পথ ধরল। আর যে বিবেকবানদের সহযোগিতা নিল সে উদ্দেশ্য অর্জনে সফলতা লাভ করল।’

সুতরাং প্রত্যেক আমিরের কার্যকর একটি মজলিসে শূরা থাকা দরকার; প্রধান আমির থেকে শুরু করে অভিযানের আমিরগণ- সবার জন্য। তবে ব্যস্ত কোনো ব্যক্তির সঙ্গে পরামর্শ করবে না, যে তার প্রয়োজন পূরণের ইচ্ছা করছে। তার সাথেও করবে না, যে তাতে কোনো কিছু পাওয়ার লোভ করে; এবং তার সাথেও না, যে মতামত দিতে গিয়ে চিন্তা-ফিকরকে পাল্টিয়ে দেয়। বলা হয়, ‘মতামত যুক্তিযুক্ত না হলে ছেড়ে দাও।’ আলী রা. থেকে একটি প্রবাদ আছে, ‘শাইখের পরামর্শ গোলামের বিশাল জমায়াত থেকেও শ্রেষ্ঠ।’ অর্থাৎ-কিতাল বিষয়ে।

শাইখ যখন একা থাকেন তখন মাশওয়ারা কর; কারণ তিনি গোপন বিষয়কে সবচে’ বেশি সংরক্ষণকারী, ফাস করা থেকে সবচে’ সংযমী। বাস্তব কথা হল, মাশওয়ারা এবং পরষ্পর আলোচনা শান্তির দার, বরকতের দু’টি দরজা। এদু’টি বিষয় সঙ্গে থাকলে সিদ্ধান্ত লক্ষ্যভ্রষ্ট হতে পারে না।

৪. ঐ ব্যক্তি থেকে বেঁচে থাক, যে শুধু মতামত দিতে গিয়ে তোমার সাথে তাল মিলায়। ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের অন্যায়ের ব্যাপারে সতর্ক হও। বরং যে পরামর্শদাতা ভালোর জন্য তোমার মতের বিপরীত মতামত পেশ করে, তাতে ধৈর্য ধারণের ব্যাপারে নিজেকে প্রস্তুত কর, তাদের কথা ও তিরস্কারের তিক্ততাকে চুমুক দিয়ে পান কর। এর জন্য নিজেকে সপে দাও ঐ মহাপুরুষদের সামনে, যারা বিবেক-বুদ্ধির অধিকারী, যাদের আছে বদান্যতা, আছে দোষ গোপনের যোগ্যতা।

৫. দীন-দুনিয়ার জন্য সবচে’ বড় ক্ষতিকারর জিনিস হচ্ছে, বাদশার সামনে প্রজাদের বাস্তব খবরাখবর অস্পষ্ট থাকা। এ জন্য আপনি প্রজাদের থেকে আড়াল হয়ে থাকবেন না। কারণ, আপনিও একজন মানুষ। আপনি জানেন না, আপনার কাছ থেকে মানুষ কী লুকানোর চেষ্টা করছে। আপনি নিরাপত্তার শরাব পান করে বসে থাকবেন না যে, আপনি বেচেঁ গেলেন আর আপনার প্রজারা ধ্বংস হয়ে গেল। তাহলে আপনিই হবেন তখন সবচে’ নিকৃষ্ট বাদশা।

বিশ্বস্ত এবং সৎ ব্যক্তিদেরকে দায়িত্ব দেয়ার পর আপনি নিজে তার খোঁজখবর রাখুন। অন্যথায় বিশ্বস্ত ব্যক্তিই একসময় দুঃর্নীতিতে জড়িয়ে পড়বে, সৎ লোকই ধোঁকা দিতে শুরু করবে। এ জন্য তদন্তের ব্যবস্থা রাখুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُمْ بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ

‘হে দাউদ আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খশীর অনুসরণ কর না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।’

এখানে আল্লাহ তাআলা পরিস্কার ঘোষণাকে বাদ দিয়ে ঈশারা-ইঙ্গিতের উপর ক্ষ্যান্ত হননি। এমনকি খেয়াল-খুশীতে জড়িয়ে যাওয়াকে ভ্রষ্টতার সাথে জুড়ে দিয়েছেন।

বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কা আছে এমন কোনো ব্যক্তিকে সত্যায়ন করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করবেন না। এ ধরণের ব্যক্তি ধোঁকাবাজ হয়, যদিও সে সৎ লোকদের সাদৃশ্যতা গ্রহণ করুক। তার বক্তব্যকে উপেক্ষা করবেন না; কারণ সে সত্যবাদীও হতে পারে। ভাইদের প্রতি ভাল ধারণা রাখুন; কারণ ভাল ধারণা আপনার দীর্ঘ ক্লান্তিকে দূর করে দিবে।

৬. আমিরের জন্য উচিৎ হল, নিজেকে এবং তাঁর বাহিনীকে আল্লাহর এমন হক ও হদসমূহের উপর গড়ে তুলবে, যা তিনি আবশ্যক করে দিয়েছেন এবং নির্দেশ করেছেন। কারণ, যে দীনের ক্ষেত্রে মুজাহাদা করবে, আল্লাহর বিধিবিধান মানার ব্যাপারে তার সবচে’ বেশি সচেতন থাকতে হবে। আপনার আমল নষ্ট থাকলে অন্যের ইসলাহ করতে পারবেন না। আপনি প্রতারক হলে সুপথ দেখাতে পারবেন না। আপনি পথভ্রষ্ট হলে অন্যকে পথপ্রদর্শন করতে পারবেন না। অন্ধ কীভাবে পথ দেখাবে? অসম্মানী ব্যক্তি কীভাবে সম্মান শেখাবে? গোনাহের অপমানের চেয়ে বড় কোনো অপমান নেই। আবার আনুগত্যের সম্মানের চেয়ে বড় কোনো সম্মানও নেই। সুতরাং মন্দ চরিত্র ও নষ্ট লোকদের সাহচর্য বর্জন করুন।

৭.  যদি কোনো বিষয়ের অভাব আপনাকে অন্যায়ভাবে তা অর্জনের প্রতি আহ্বান করে তাহলে তা থেকে বেঁচে থাকুন। কারণ, অভাবে সবর করলে তা থেকে মুক্তির উপায় বের হয়। সবরের পরিণামে যে কল্যাণ অর্জিত হবে তা অন্যায়ে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে অনেক উত্তম। তাছাড়া দীনের ভিত্তি তো সবরের উপরই।

৮. ভিন্ন বাহন বা ভিন্ন পোষাকে নিজেকে আলাদা করবেন না। হযরত উমর রা. আবু মুসা আশআরী রা. এর কাছে লিখে পাঠালেন,

… وقد بلغني أنه فشا لك ولأهل بيتك هيئة في لباسك ومطعمك ومركبك، ليس للمسلمين مثلها، فإياك يا عبد الله أن تكون بمنزلة البهيمة مرت بواد خصب، فلم يكن لها هم إلا التسمن، وإنما حتفها في السمن، واعلم أن العامل إذا زاغ زاغت رعيته، وأشقى الناس من شقيت به رعيته

‘আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, আপনার ও আপনার পরিবারের পোষাক, খাবার-দাবার ও বাহনের অবস্থা ভিন্ন রাকম, যা সাধারণ মুসলমানদের নেই। হে আব্দুল্লাহ! আপনি নিজেকে চতুষ্পদ যন্তুর অবস্থানে দাঁড় করাবেন না, যে শুধু সবুজ ঘাসবিশিষ্ট মাঠে গমন করে; হৃষ্টপুষ্ট হওয়া ছাড়া যার অন্য কোনো ভাবনা নেই, হৃষ্টপুষ্ট অবস্থাতেই যার মুত্যু হয়। রাখাল যখন বক্র হয়ে যায় তখন তার পশুপালও বক্র হতে থাকে। সবচে’ র্দূভাগা ঐ ব্যক্তি, যার কারণে তার প্রজারা বিচ্যুত হয়ে যায়।’

৯. জানা থাকা দরকার, যুদ্ধের ব্যাপারে জ্ঞানীরা বলেছেন, যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ অংশের নাম সবর, কৌশল যার শক্তি, কষ্ট ও সাধনা যার ভিত্তি, বিচক্ষণতা যার সভ্যতা, সাবধানতা যার লাগাম। এই প্রত্যেকটির জন্য রয়েছে দীর্ঘ সামারা/ফল। ধৈর্যের সামারা দৃঢ়তা, কৌশলের সামারা সফলতা, সাধনার সামারা তাওফীক, বিচক্ষণতার সামারা সৌভাগ্য, সতর্কতার সামারা নিরাপত্তা। যুদ্ধ সম্পর্কে আমর ইবনে মা’দীকারুবাকে জিজ্ঞেস কার হলে তিনি বলেন,

من صبر فيها عرف، ومن نكل عنها تلف

‘যুদ্ধে যে সবর করে সে অনুধাবন করতে পারে। আর যে তা থেকে সরে আসে সে বিফল হয়ে যায়।’

তাড়াহুড়া করা থেকে বিরত থাকুন। কারণ অনেক তাড়াহুড়া এমন আছে যার পর লজ্জিত হতে হয়।

১০. শত্রুদের বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াইয়ে কঠিন-বিপদে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিন এবং অভিযানগুলোতে তাদেরকে ছড়িয়ে দিন, যাতে তাদের দ্বারা দুর্বলরা শক্তি খুজে পায়, তাদের বিরত্ব দেখে ভীরুরা সাহসী হয়ে ওঠে। গুজব রটনাকারী ও নিরাশকারী কোনো ব্যক্তি আপনার সাথীদের সাথে অংশ গ্রহণ করছে কি না এ ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। গুপ্তচর ও জাসুসদের থেকে হুশিয়ার হোন। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এমন অনেক দল আছে যারা আল্লাহর হুকুমে বড় বড় অনেক দলকেও পরাজিত করেছে। যুদ্ধের মধ্যে শুধু শক্তিশালীদেরকে নিয়ে যাবেন আর দুর্বলরা যারা আল্লাহর নিয়ামত প্রপ্তির আশাবাদী তাদেরকে রেখে যাবেন, এমনটি করবেন না। কেননা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

وهل تنصرون وترزقون إلا بضعفائكم

‘তোমাদের মাঝে অবস্থিত দুর্বলদের মধ্যস্ততা ছাড়াই কি তোমরা সাহায্য ও রিযিক প্রাপ্তির আশা কর?’

নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক জাতিকে তাদের দুর্বলদের কারণে সাহায্য করে থাকেন।

১১. প্রস্তুতির ক্ষেত্রে যা আপনার পক্ষে সম্ভব তা গ্রহণ করতে অবহেলা করবেন না; যেমন, বর্ম, হেলমেট ইত্যাদি। এগুলো সঙ্গে রাখার অর্থ কাপুরুষতা নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সবচে’ বড় বীর পুরুষ, তাঁরও বর্ম ছিল। তবে মুনাসিব সময়ে বর্মহীন থাকতেও বাধা নেই। হাবিব ইবনুল মুহাল্লাব বলেন,

ما رأيت رجلا في الحرب مستلئما إلا كان عندي رجلين، ولا رأيت حاسرين إلا كانا عندي واحدا

‘যুদ্ধের ময়দানে আমার নিকটে দু’জন ব্যক্তিকেই দেখেছি যুদ্ধের আসবাব পরিহিত। বর্মবিহীন দুইজন ব্যক্তি থাকলে একজনকে আমার নিকট দেখতে পেতাম।’

জ্ঞানীদের কেউ এ হাদিস শুনে বলতে লাগল, ‘সত্যিই, অস্ত্রের অনেক ফজিলত রয়েছে। চিৎকারের সময় লোকদেরকে ডাকতে দেখবে, অস্ত্র! অস্ত্র!! তারা কথা বলে না যে, হে লোকেরা! হে লোকেরা!!’

১২. প্রত্যেক আমিরের একজন দায়িত্বশীল থাকতে হবে, যিনি মুজাহিদ ভাইদের জন্য এমন আহার ও পানীয়বস্তুর ব্যবস্থা করবেন, যার দ্বারা তারা দীর্ঘক্ষণ শক্তির সাথে থাকতে পারে। যখন আফগান তালেবানের কোনো একজন কমান্ডারের অধীনস্ত যুদ্ধাদের পকেট তালাশ করলাম, তখন দেখতে পেলাম, তাতে কিশমিশ রয়েছে।

১৩. শাসকের উপর কর্তব্য হল, প্রত্যেক দলের জন্য একজন করে আমির নিযুক্ত করা, সেই সাথে ভাইদের গাড়ি, অস্ত্র ও খাবার-দাবারের খোঁজ-খবর নেয়া; বিশেষ করে যুদ্ধের পূর্বে। তাতে এমন কিছু প্রবেশ করাবে না, কঠিন মূহুর্তে যা কষ্টকর হয়ে যায়। এমন কিছু রেখেও দেবে না, দূরসফর ও কঠিন মূহুর্তে যার প্রয়োজন পড়ে; বিশেষ করে যখন দীর্ঘ যুদ্ধের মুখোমুখি হতে হয়।

১৪. খেয়াল রাখতে হবে, এক গাড়িতে যেন তিন জনের বেশি যোদ্ধা না থাকে। তবে যদি কোনো সুবিধার জন্য বেশির প্রয়োজন পড়ে তাহলে ভিন্ন কথা। এবং অভিযানগুলোর মাঝে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের পরষ্পর কথা বলার জন্য কোড ও যুদ্ধের জন্য সঙ্কেত নির্ধারণ  করতে হবে।

১৫. আমির অবশ্যই তার প্রজা ও সৈনিকদেরকে তাদের শক্তি বৃদ্ধির উপকরণগুলো শোনাবে। শত্রুদের উপর তাদের সাফল্যের ব্যাপারে অবগত করবে। তাদের জন্য শত্রুদেরকে ঘায়েল করার সরঞ্জামাদী ব্যবস্থা করে দেবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

إِذْ يُرِيكَهُمُ اللَّهُ فِي مَنَامِكَ قَلِيلًا وَلَوْ أَرَاكَهُمْ كَثِيرًا لَفَشِلْتُمْ وَلَتَنَازَعْتُمْ فِي الْأَمْرِ

‘আর স্মরণ কর, আল্লাহ যখন তোমাকে স্বপ্নে ওদের পরিমাণ অল্প করে দেখালেন; বেশি করে দেখালে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলতে এবং যুদ্ধ সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি হত।’ [সূরা আনফাল:৪৩]

১৬. আমিরের জন্য উচিৎ হল, সে কিতালের জায়গাগুলো ভালভাবে প্রশিক্ষণ নিবে। এমন জায়গা থেকে কিতাল করবে না, যেখান থেকে সহজেই তাকে দেখা যায়। এবং তার বাহিনী থেকে এতটুকু দূরত্বে অবস্থান করবে না, যেখান থেকে তাদেরকে নিয়ে নিরাপদে ফিরে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ে।

১৭. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, الحرب خدعة ‘যুদ্ধ কৌশলের নাম।’

মুহাল্লাব রহ. বলেন,

عليكم بالمكيدة في الحرب، فإنها أبلغ من النجدة

‘তোমরা যুদ্ধের ময়দানে কৌশল অবলম্বন কর; কারণ কৌশল বিরত্বের চেয়েও বড় জিনিস।’

নিম্নে কিছু কৌশল উল্লেখ করা হল:

ক. গুপ্তচর ছরিয়ে দেয়া।

খ. খবরাখবর সম্পর্কে সম্মখ অবগত হওয়া।

গ. যুদ্ধের লক্ষ্যস্থল গোপন রাখা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন কোনো যুদ্ধের ইচ্ছা করতেন তখন ভিন্ন দিকে গমনের ভান করতেন।

إذا ضاق صدر المرء عن سر نفسه   <>   فصدر الذي يستودع السرّ أضيقُ

‘যে ব্যক্তির হৃদয় নিজের তথ্য গোপন করার ক্ষেত্রে সঙ্কীর্ণ,

তাহলে তথ্য যার কাছে গোপন রাখা হয় তার হৃদয় তো থাকবে আরো বেশি সঙ্কীর্ণ।’

সর্বাবস্থায় শত্রুর ব্যাপারে সতর্ক থাকুন; যেন,

ক. কাছ থেকেই ঝাপ না দেয়।

খ. অথবা দূর থেকে আগ্রাসন না করে।

গ. অথবা অসতর্কতার অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে বসে না থাকে।

ঘ. কিংবা ফিরে আসার পর পুনরায় অনুসরণ না করে।

১৮. আমিরের দক্ষতা ও বিচক্ষণতার নিদর্শন হল সুযোগের সদ্ব্যবহার। ‘কেননা তা মেঘমালার গতিতে চলে। কোনো জিনিস চোখে দেখার পর তার নিদর্শন তালাশ করবেন না। আনুগত্যের সামনে ঝাপ দিন, গোনাহের সামনে ঝাপ দেবেন না।’

إذا هبت رياحك فاغتنمها   <>   فإن لكل خافقة سكون

‘যখন তোমার সুরভি বিচ্ছুরিত হয়, তাকে গনিমত হিসাবে গ্রহণ কর।

কেননা প্রত্যেক স্পন্দেনের জন্য নিরবতা রয়েছে।’

১৯. দলের আমিরের জন্য জায়েয আছে যে, তিনি শাহাদাতের প্রতি উৎসাহী কাউকে শাহাদাতের জন্য ইঙ্গিত করতে পারেন; যার ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত যে, সে শহীদ হলে বাকি মুসলমানদের জন্য উৎসাহ বেড়ে যাবে। আবার এর বিপরীতও হতে পারে যে, তিনি এমন ব্যক্তিকে নিহত হওয়া থেকে রক্ষা করবেন, যে নিহত হলে মুসলিম ভাইদের শক্তি কমে যাবে। যেমন, বিশেষ কোনো নেতা বা কমান্ডার। এই জন্য কলবের অবস্থান সবচে’ নিরাপদ হয়ে থাকে এবং শত্রু থেকে অনেক দূরে রাখতে হয়।

২০. আপনার মুজাহিদ ভাইদেরকে এমন কিছু হত্যা করতে বা বন্দি করতে অনুমতি দিবেন না, যা তাদের সফরকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়, যার কারণে তাদের মঝে মতবিরোধ তৈরি হয়। যদিও তা কোনো না কোনো দিক থেকে জায়েয হয়ে থাকুক। করণ, কিতাল চলাকালে মতের মিল থাকা এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ যার তুলনা হতে পারে না।

২১. অন্যায়ভাবে রক্ত প্রবাহিত করা থেকে বাচুন! অন্যায়ভাবে রক্ত প্রবাহিত করা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন!! বিদ্বেষ তৈরি করা ও নেয়ামত দূর করার জন্য অন্যায়ভাবে রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে দ্রুতগতি সম্পন্ন কোনো উপায় নেই। আপনার দায়িত্ব ও সৈন্যদলকে হারাম রক্ত দিয়ে শক্তিশালী করবেন না। কেননা এটি এমন বিষয়কে তাড়িয়ে নিয়ে আসবে যার পরিণাম হচ্ছে দুর্বলতা ও শক্তিহীনতা। এমনটি হলে আল্লাহর কাছে এবং আমাদের কাছে আপনার কোনো উজর গৃহিত হবে না। আল্লাহর শপথ! আহলে সুন্নাতের নিরপরাধ কাউকে যদি প্রমাণ ছাড়া বা সন্দেহবশত হত্যা করা হয়, তাহলে আমরা তার সাথে ইনসাফের আচরণ করব।

২২. কোনো কাজের সহজতা যেন আপনাকে ধোঁকায় না ফেলে। অনেক সময় ঢালু জায়গার পর পথ দুর্গম হয়ে থাকে। এই জন্য আপনার পরিকল্পনা যেন আজকের জন্যেও হয় এবং আগামীকালের জন্যেও। জনগণের জন্য ঐ আমির অপেক্ষা ক্ষতিকর কোনো আমির হতে পারে না, যে শুধু আজকের জন্য পরিকল্পনা করে।

২৩. মুহসিনকে তার ইহসানের মূল্যায়ন করুন, বিজয় লাভের পর সৈন্যদলকে মর্যাদাবান করুন, বীর পুরুষকে মানুষের সামনে সম্মানিত করুন। পক্ষান্তরে অন্যায়কারীকে তার অন্যায়ের বিচার করুন, যদিও ধমক দিয়ে হোক। আমিরের জন্য অপরাধীকে অপরাধের কারণে শাস্তি দেয়া জায়েয আছে। যদি এমনটি না করেন, তাহলে মুহসিন ব্যক্তি দুর্বল হয়ে পড়বে, অপরাধী শাহসী হয়ে যাবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে এবং পরিবেশ নষ্ট হবে।

মুহসিন ব্যক্তিকে ইহসানের প্রতিদান যেন হয় সবার সামনে, আর অপরাধীর শাস্তি যেন হয় গোপনে; বিশেষকরে যদি বড় কেউ হয়। যদি ফাসাদ সৃষ্টিকারী কেউ হয় তাহলে তাকে শাস্তি দিন জনসম্মুখে। শরিয়ত এমনটাই নির্দেশ করে।

সাবধান! শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি থেকে অথবা ক্ষমা করার ক্ষেত্রে লজ্জিত হওয়া থেকে বাচুন। অতিরিক্ত কঠোরতা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন! কেননা শরিয়ত শাস্তি প্রদান করে সংশোধনের জন্য, শুধু আরোগ্য লাভের জন্য নয়। রাগের সময় অসঙ্গত শব্দ উচ্চারণ করা থেকে সতর্ক হোন; এমন অনেক শব্দ আছে, যা শব্দের উচ্চারণকারীকে বলে, ‘আমাকে ছেড়ে দাও!’

হে আমির! আপনি শাস্তি অথবা ক্ষমার সময় অনর্থক কথা বলবেন না, আল্লাহ তা’আলা যে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন, শাস্তি দেয়ার ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করে সে সীমা অতিক্রম করবেন না। মনে রাখবেন, ‘কিয়ামত দিবসের অন্ধকারই সবচে’ বড় অন্ধকার।’

প্রিয় ভাই, সকল বিষয়ে আপনি সহানুভূতিশীল হোন; এমনকি শাস্তির ক্ষেত্রেও। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

                ولو كنت فظا غليظ القلب لانفضوا من حول

‘পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে দূরে সরে পড়ত।’ [সূরা আলে ইমরান: ১৫৯]

বর্ণিত আছে, ‘যাকে সহানুভূতি দান করা হয়েছে, তাকে কল্যাণের বড় অংশ দান করা হয়েছে। আর যে সহানুভূতি থেকে বঞ্চিত, সে কল্যাণের বিশাল অংশ থেকে বঞ্চিত।’ অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘এ দীন সুসংহত। সুতরাং এতে তোমরা সহানুভূতি অবলম্বন কর।’

২৪. জেনে রাখুন! আপনার সঙ্গীরা আল্লাহ প্রদত্ত বিধানাবলী উৎসাহী হয়ে শুনবে এবং মানবে।

এমন ব্যক্তিকেই শাস্তি দেবেন, যার ব্যাপারে আপনার ধারণা আছে যে, তার কাছে শাস্তি সহ্য করার মত দীন রয়েছে। যার ব্যাপারে ধারণা করবেন যে, তার কাছে এতটুকু পরিমাণ দীন নেই, যা তাকে অন্যায় থেকে বিরত রাখবে, তাহলে তাকে শাস্তি না দিয়ে নরম আচরণ করুন, তার উপর সদয় হোন। যে শাস্তি প্রদানে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবান, ক্ষমা করার দিক থেকেও সে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী। জ্ঞান ও ক্ষমতার দিক থেকে সবচেয়ে অপরিপক্ক ব্যক্তি সে, যে তার অধিনস্তদের উপর যুলুম করে। আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে ইনসাফকারী হোন। আপন সত্তা, পরিবার এবং সাথী-সঙ্গী ও প্রজাদের মধ্যে যাদেরকে আপনি ভালোবাসেন তাদের সকলের সাথে ইনসাফের আচরণ করুন। যদি এমনটি না করেন, তাহলে আপনি যুলুম করলেন। যে আল্লাহর বান্দাদের উপর যুলুম করে, আল্লাহ তা’আলা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। আল্লাহ তা’আলা যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তার সাথে আল্লাহর যুদ্ধ চলতে থাকে যতক্ষণ না সে তাওবা করে এবং তা থেকে বিরত থাকে। মাযলুমের বদদোয়া থেকে বাচুন! কেননা তার দোয়ার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা নেই; তার জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। পুরা দিনের মধ্যে আপনার এমন একটি সময় যেন থাকে, যাতে আপনি ভাববেন যে, আপনি কি কারো উপর যুলুম করেছেন? অথবা ওখানে একজন মাযলুম ছিল, আপনি কি তার সাহায্য করেছেন? যে আল্লাহর আজাবকে দ্রুত নিয়ে আসতে চায় সে যেন যুলুম করে।

২৫. সাথী-সঙ্গী ও মানুষের সাথে সদাচরণ করুন, তাঁদের মন জয় করতে পারবেন। সদাচরণের দ্বারা মুহাব্বত স্থায়ী হয়, আর তা দূর হয় যুলুম করার দ্বারা। সাধারণ মানুষের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক তৈরি করুন, তাহলে তাদের কাছ থেকে একনিষ্ঠ মহাব্বত পাবেন, তাদের সম্মান লাভ করতে পারবেন। আর নম্রতাই হল শক্তিশালীর পক্ষ থেকে ভালোবাসা।

উমর ইবনে আব্দুল আযিয রহ. লোকদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল ছিলেন। যখন আল্লাহ তা’আলার কোনো বিধান কর্যকর করার ইচ্ছা করতেন এবং মনে করতেন যে তা লোকদের কাছে অপছন্দনীয় হতে পারে, তখন লোকদের কাছে তা প্রিয় হয়ে ওঠার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন। এরপরেই তা বাস্তবায়ন করতেন। তারঁ থেকে বর্ণিত আছে,

إن الله ذم الخمر في القرآن مرتين وحرمها في الثالثة، وأنا أخاف أن أحمل الناس على الحق جملة فيدعوه، وتكون فتنة

‘আল্লাহ তা’আলা কুরআনে কারীমে মদের ব্যাপারে দুইবার নিন্দাবাদ জানিয়েছেন, হারাম করেছেন তৃতীয়বারের মাথায়। আমার ভয় হয় যে, মানুষের উপর হক বিষয় একবারে চাপিয়ে দেয়ার দ্বারা তারা তা ছেড়ে দেয় কি না, ফলে ফিতনা সৃষ্টি হয়ে যায়।’

২৬. মানুষের মর্যাদা ও শ্রেনী বিন্যাসের ব্যাপারে অবগত হোন। পুরুষকে অগ্রাধিকার দিন; কারণ,

ক. পুরুষ ইলম ও প্রজ্ঞার অধিকারী। তাদের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে যথেষ্ট নস রয়েছে।

খ. পুরুষ বড়দের মধ্যে শামিল। সুতরাং

ليس منا من لم يجل كبيرنا، ويرحم صغيرنا، ويعرف لعالمنا حقه

‘যে বড়দের সম্মান করে না, ছোটদেরকে স্নেহ করে না, আলেমদের যথাযথ মর্যাদা বোঝে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’

গ. পুরুষ নেতৃত্ব ও মর্যাদার অধিকারী। যাদের মূলে রয়েছেন নবীগণ।

২৭. শহীদ ও বন্দীদের পরিবারের খোঁজখবর নিন, তাঁদেরকে অন্যদের উপর প্রাধান্য দিন। রুগির দেখাশোনা করুন। আপনার সঙ্গীদের সামনে নিজেকে খাদেম হিসাবে উপাস্থাপন করুন; আপনি তো তাঁদেরই একজন। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, আপনার দায়িত্ব বেশি, আল্লাহর সামনে আপনার হিসাব-নিকাশ বেশি। তাই আগামীর জন্য কাজ করুন।

২৮. সশস্ত্র বাহিনী ও দলের জন্য উত্তম বার্তাবাহক নির্বাচন করুন। এমনিভাবে যারা মানুষের সমস্যার সমাধান ও শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে তাদের জন্যও। কারণ এরা মানুষের সামনে রাষ্ট্রের মাথা। তাদের উত্তম ব্যবহার আমাদেরই উত্তম ব্যবহার, তাদের পক্ষ থেকে কষ্ট দেয়া আমাদের পক্ষ থেকেই কষ্ট দেয়া। মোটকথা, একজন জ্ঞানীকে বার্তাবাহক নিযুক্ত করুন।

২৯. আপনি বরাবর স্বজনপ্রীতি থেকে বিরত থাকুন; কারণ, মজবুত একটি রাষ্ট্রকে কঠিন স্বজনপ্রীতিই পারে ধ্বংস করে দিতে। স্বজনপ্রীতিকে অকেজো করতে শুধু শক্তি নয়, আপনার মেধা ও কৌশল ব্যবহার করুন। ইরাকবাসীরা ইবনে আশ’আস রহ. এর নেতৃত্বে আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল। সাঈদ ইবনে জুবায়েরসহ অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ তাবেঈ তাঁদের মধ্যে শামিল ছিলেন। অতঃপর হাজ্জাজ বিন ইউসুফ দাইরুল জিমাজিমে তাদেরকে পরাজিত করে। এ ক্ষেত্রে হাজ্জাজের শক্তির চেয়ে কৌশল ছিল বেশি। জেনে রাখুন, প্রজ্ঞাপূর্ণ সিয়াসাতের দাবি হচ্ছে, এসব ব্যক্তিকে দ্রুত পাকড়াও করা; বিশেষকরে লিডারদেরকে।

৩০. চেষ্টা-সাধনা করুন, আর হিম্মতকে বড় করুন। সাবধান! অক্ষমতা থেকে বেচে থাকুন। আল্লাহর শপথ! অক্ষমতা হচ্ছে সবচে’ নিন্দনীয় বাহন। যখনই হোঁচট খাবেন তখনই নতুনকরে চেষ্টায় লেগে যাবেন। অভিজ্ঞতার আলোকে জানা গেছে, আল্লাহ তা’আলা কোনো কাজে বিজয় দান করেন অনেকবার তাতে হোঁচট খাওয়ার পর।

আপনার ভাই

আবু হামযা আল-মুহাজির

১১ রমজান ১৪২৮ হিজরি

দোয়া

হে আল্লাহ! তুমি সব জায়গায় মুজাহিদ ভাইদের সাহায্য কর!

হে আল্লাহ! তাঁদের দৃঢ়পদ কর, তাঁদের অন্তরসমূহ জুড়ে দাও!

হে আল্লাহ! উভয় জগতের প্রতিপালক!! তুমি তাঁদের জন্য এমন চোখ হয়ে যাও যা দিয়ে তাঁরা দেখবে, এমন কান হয়ে যাও যা দিয়ে তাঁরা শোনবে, এমন হাত হয়ে যাও যা দিয়ে তাঁরা আক্রমণ করবে।

হে আল্লাহ! তুমি তাঁদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দাও; তাদের অন্যায়গুলো মিটিয়ে দাও; তাদের গোনাহসমূহ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে, বরফ দিয়ে ধুয়ে দাও!

হে আল্লাহ! তাঁদেরকে মন্দ লোকদের মন্দ থেকে, দালাল ও ধোঁকাবাজ খিয়ানতকারীদের নষ্ট চোখ থেকে হেফাজত কর; তাঁদেরকে তোমার নেক বান্দাদের মধ্যে শামিল করে নাও!

হে আল্লাহ! পরম দয়ালু!! তুমি শত্রুদের অস্তিত্ব বিলীন করে দাও, তাদের চোখ অন্ধ করে দাও, তাদের শক্তিকে অবশ করে দাও, তাদের ঐক্য ভেঙ্গে দাও, তাদের সামনে দেয়াল টেনে দাও, মুজাহিদদের উপর তাদের আক্রমণকে নস্যাৎ করে দাও এবং তাদের উপর মুজাহিদদের আক্রমণকে সফল কর!

হে আল্লাহ! জগতের প্রতিপালক!! তুমি তাঁদেরকে শাহাদাতের এমন পিয়াল দিয়ে সম্মানিত কর, যা তাঁদেরকে জান্নাতুল ফিরদাউসে পৌঁছাবে, তাঁদেরকে নবীগণ, সিদ্দীক ও শহীদদের সাথে জমায়েত করবে।

হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে মুজাহিদদের সওয়াব থেকে বঞ্চিত কর না এবং তাদের পরে আমাদেরকে ভুলে যেও না!

হে আল্লাহ! তুমি মুমিন-মুমিনা, মুসলিম-মুসলিমা, মুজাহিদ-মুজাহিদা এবং তাঁদের মধ্য থেকে জীবিত-মৃত সকলকে ক্ষমা করে দাও!

এবং রহমত বর্ষণ কর তোমার নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর!

وآخر دعوانا الحمد لله رب العالمين

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

18 + 19 =

Back to top button