ইলম ও আত্মশুদ্ধিবই ও রিসালাহবালাকোট মিডিয়ামিডিয়া

আমি তো জিহাদ করতেই চাই কিন্তু কিভাবে? কার সাথে? কোথায়?-উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ || বালাকোট মিডিয়া

বালাকোট মিডিয়া
পরিবেশিত

আমি তো জিহাদ করতেই চাই
কিন্তু কিভাবে? কার সাথে? কোথায়?

উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ

অনলাইনে ছরিয়ে দিন-
———————————–

আমি তো জিহাদ করতেই চাই কিন্তু কিভাবে? কার সাথে? কোথায়?

-উস্তাদ আহমাদ যাকারিয়া হাফিজাহুল্লাহ

 

বিসমিল্লাহ ওয়াস সালাতু আস সালাম আলা রাসুলিল্লাহ।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন –

كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِتَالُ وَهُوَ كُرْهٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تَكْرَهُواْ شَيْئًا وَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ وَعَسَى أَن تُحِبُّواْ شَيْئًا وَهُوَ شَرٌّ لَّكُمْ وَاللّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لاَ تَعْلَمُونَ

তোমাদের উপর জিহাদ ফরজ করা হয়েছে, অথচ তা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয়। পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জানো না। [সুরা বাকারা ২:২১৬]

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা আরো বলেন –

قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ

যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হাতেই তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুমিনদের অন্তরসমূহ প্রশান্ত করবেন। [সুরা তাওবা ৯:১৪]

জিহাদের ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন প্রায়ই সামনে আসে, যেমনঃ

কোথায় জিহাদ করব?

কিভাবে জিহাদ করব?

কার সাথে জিহাদ করব?

কারা হক্ক দল?

আমি কিভাবে জিহাদ করতে পারি?

এখন কি জিহাদ করা সম্ভব? ইত্যাদি।

প্রশ্নের উত্তরে যাবার আগে কিছু জরুরী আলোচনা সেরে নেয়া দরকার। সবার আগে আমাদের বর্তমানে জিহাদের কনসেপ্ট ভালো ভাবে বুঝতে হবে। আমরা সাধারণ ভাবে জিহাদ বলতে বুঝে থাকি “কিতাল”। যেটাকে “আর্মড কমব্যাট” ও বলা যেতে পারে। সশস্ত্র যুদ্ধ। এটা জিহাদের একটা কাজ অবশ্যই কিন্তু এটাই সম্পূর্ণ জিহাদ না। তাই বিষয়গুলো আমাদের আগে ভালো ভাবে জেনে নেয়া দরকার।

১। গ্লোবাল জিহাদ মডেলঃ

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে জিহাদ চলমান তা হচ্ছে জিহাদের গ্লোবাল মডেল। অর্থাৎ সারা দুনিয়াব্যাপী জিহাদ একই মৌলিক লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পরিচালিত হচ্ছে। এই বিষয়টি জানা দরকার এজন্য যে, আমাদের জিহাদি যে কোন কাজ গ্লোবাল জিহাদের বাইরে নয়। অর্থাৎ আপনি একা করেন বা কোন দলের সাথে করেন, আপনার জিহাদি কাজ এমন হওয়া দরকার, তা যেন গ্লোবাল জিহাদের কাজের সহায়ক হয়। এই জিহাদের কাজ যদিও অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হতে পারে কিন্তু দিন শেষে প্রতিটি কাজ একই মৌলিক লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্যকে সফল করার জন্য। যেমন একটি মৌলিক উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বব্যাপী কুফরের সর্দার আমেরিকার স্বার্থে আঘাত করা। এটি একটি মৌলিক লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য। এখন আলাদা আলাদা ভূখণ্ডের জন্য এই উদ্দেশ্য অর্জনের পদ্ধতি ভিন্ন হতে পারে। এটি জরুরী নয় যে, প্রতিটি ফ্রন্টে একই কৌশলে কাজ করতে হবে। এছাড়া গ্লোবাল জিহাদ মডেলের জন্য এটিও জরুরী নয় যে, আপনাকে কোন দল বা জামাতের সাথে যুক্ত হতেই হবে। যদি আপনি কোন হকপন্থি জিহাদি জামাত বা দলের সাথে যুক্ত হতে পারেন তবে তা সবচেয়ে উত্তম। কিন্তু আপনি যদি কোন হকপন্থি জিহাদি জামাতের সাথে যুক্ত হতে নাও পারেন তবুও আপনার জন্য জিহাদের কাজ বন্ধ নয় বরং আপনি নিজে ‘একাকী মুজাহিদ’ (ইংরেজিতে এটাকে বলা হয় Lone Wolf) বা কয়েকজন সমমনা দ্বীনী ভাইকে সাথে নিয়ে ‘উলফ প্যাক’ হিসেবে কাজ করতে পারেন।

২। ইম্প্রোভাইজড আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ারঃ

এটাও আমাদের জানা জরুরী যে, আমাদের বর্তমান জিহাদের ধরণ কেমন? এই জিহাদ কোথাও কনভেনশনাল (প্রথাগত যুদ্ধ), আবার কোথাও গেরিলা ওয়ারফেয়ার। তবে অধিকাংশ জায়গায় এই যুদ্ধ ‘গেরিলা ওয়ারফেয়ার’। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ‘আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ার’। তাই আমাদের এটাও জানা জরুরী যে, গেরিলা ওয়ারফেয়ার কেমন হয়, বিশেষ করে ‘আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ার’। এ ব্যাপারে আরো জানার জন্য – এই বইটি দেখতে পারেন, ‘Mini Manual of the Urban Guerrilla’ By Carlos Marighella একজন গেরিলা যোদ্ধার কিছু মৌলিক চাহিদা আছে। আর সেগুলোকে এক কথায় প্রকাশ করার জন্য বলতে হয় – একজন গেরিলা যোদ্ধাকে প্রায় সকল বিষয়ে পারদর্শী হতে হয়। বর্তমানের জিহাদ আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ারের ইম্প্রোভাইজড ভার্শন। অর্থাৎ এটি আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ার, কিন্তু প্রতিনিয়ত এটি শত্রুর চালের সাথে সাথে এর কৌশল এবং প্রায়োরিটি ইম্প্রোভাইজড করে চলেছে।

৩। ফ্রন্টের ধরণঃ

ভূমির ধরণ। যে কোন যুদ্ধের জন্য ‘ভূমির ধরণ’ বা সে এলাকার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানা অত্যন্ত জরুরী। কনভেনশনাল ওয়ারফেয়ারে ভূমির ধরণ বা Terrain বলতে সাধারণত ভূমির ভৌগলিক অবস্থার বিবরণ বুঝায়। কিন্তু গেরিলা ওয়ারফেয়ারে বা আরবান গেরিলা ওয়ারফেয়ারে এটি আরো বেশি কিছু বুঝায়। বর্তমান  দুনিয়াতে ভূমির ধরণ অনুযায়ী জিহাদের ময়দানগুলোকে (ফ্রন্টগুলোকে)কয়েকটা ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন, কিছু ফ্রন্ট আছে যেগুলো সরাসরি কিতাল বা আর্মড কমব্যাট এর জন্য উপযুক্ত। কিছু আছে যেগুলো সরাসরি আর্মড কমব্যাট বা কিতালের জন্য উপযুক্ত না, কোন ভাবেই না। বরং সে এলাকাগুলো সাপোর্টিং ল্যান্ড হিসেবেই বেশি উপযুক্ত। অর্থাৎ ঐ সমস্ত এলাকাগুলো “আর্মড কমব্যাটের” জন্য উপযোগী না। বরং অন্য কোন ফ্রন্টের জন্য সাপোর্টিং ল্যান্ড হিসেবে কাজ করার জন্য বেশি উপযুক্ত। কোন ল্যান্ড কি কাজের জন্য উপযুক্ত তা কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। যেমন,

– ভূমিরঅবস্থা, (পাহাড়ী, সমতল, মরুভূমি),

– জনগনের অবস্থা (জিহাদের পক্ষে, জিহাদের বিপক্ষে),

– শাসকের ক্ষমতার অবস্থা (ক্ষমতার প্রয়োগ বিভিন্ন অঞ্চল জুড়ে কেমন?)

এবং এরকম আরো কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করে কোন একটি ফ্রন্টের কাজের ধরণ কেমন হবে। এ বিষয়ে আরো বিশদ ভাবে জানার জন্য – Management Of Savagery – By Abu Bakr Nazi – এই বইটি পড়ে নিতে পারেন।

৪। শত্রু সম্পর্কে জানাঃ

“If you know the enemy and know yourself, you need not fear the result of a hundred battles. If you know yourself but not the enemy, for every victory gained you will also suffer a defeat. If you know neither the enemy nor yourself, you will succumb in every battle.”

“তুমি যদি তোমার শত্রুর সম্পর্কে এবং নিজের সম্পর্কে জানো তবে ১০০ যুদ্ধ হলেও তোমার চিন্তার কোন কারণ নাই। তুমি যদি শুধু নিজেকে জানো কিন্তু শত্রুর ব্যাপারে না জেনে থাকো তবে প্রত্যেক বিজয়ের সাথে তুমি পরাজয়ও পাবে। তুমি যদি শত্রু এবং নিজের উভয় ব্যাপারেই না জেনে থাকো তবে তুমি প্রত্যেক যুদ্ধেই পরাজয়ের স্বাদ পাবে”।

― সান জু, দা আর্ট অফ দা ওয়ার

এখানে মূল যে বিষয়টি জানা দরকার তা হচ্ছে শত্রু কিভাবে দুনিয়াব্যাপী জিহাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। সত্যি বলতে এটি অনেক বিশদ আলোচনা। এই বিষয়টিকে ভাসমান বরফ খন্ডের সাথে  তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ বরফের উপরে যা দেখা যায় পানির নিচে তারচেয়েও অধিক বিদ্যমান, যা দেখা যায়না। ইসলামের বিরুদ্ধে ক্রুসেডার শক্তির যে ক্রুসেড দৃশ্যমান এরচেয়ে হাজার গুন বেশি চক্রান্ত অধিকাংশের সামনে অদৃশ্য। কাফেরদের এই ক্রুসেড শুধু  “ট্যাঙ্ক” আর “এফ ১৫” এর নয়। বরং তাদের এই যুদ্ধের আরো বড় একটি ক্ষেত্র হচ্ছে “ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ড”। অর্থাৎ আমাদের বিশ্বাস এবং আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কে পরিবর্তন করে দেয়া। এবং এটিই হচ্ছে সবচেয়ে ভয়ংকর যুদ্ধ। কারণ – আপনি ট্যাঙ্ক দেখতে পাবেন, কিন্তু তাদের এই চক্রান্ত আপনার চোখে সাধারণভাবে ধরা পড়বেনা। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই যে –  মুজাহিদদের শক্তির একটা বড় অংশ ব্যয় হয়ে যায় শুধুমাত্র এই সন্দেহ দূর করতে যে – “এখন কোন জিহাদ নাই” সারা দুনিয়াব্যাপী এখন জিহাদের আরেক রুপ হচ্ছে “মিডিয়া জিহাদ”। বাস্তবতা হচ্ছে – মিডিয়া এখন জিহাদের ৮০ ভাগ কিংবা আরো বেশি। আর এটির কারণ হচ্ছে – শত্রুর আক্রমণের বড় একটা অংশ হচ্ছে মিডিয়া কেন্দ্রিক। শত্রুদের যুদ্ধের অন্যতম একটি কৌশল হচ্ছে – “সাইকোলজিক্যাল ওয়ার”। আপনি যদি মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন বর্তমান সমাজে এই জিহাদ বিমুখীতা এবং জিহাদের ব্যাপারে অপব্যাখ্যার মূল কারণ হচ্ছে – এই “সাইকোলজিক্যাল ওয়ার” বা “প্রোপাগান্ডা”। প্রত্যেকটি যুদ্ধের জন্য একটি আদর্শ দরকার হয়। যে আদর্শের জন্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কাফেররা পরিষ্কার ভাবে জেনে গেছে যে, মুসলিমদের ঈমান এবং আকিদাহ কে বোমা এবং গুলি দিয়ে শেষ করা সম্ভব নয়। তাই তারা বেছে নিয়েছে ব্যাটল অফ হার্টস অ্যান্ড মাইন্ড। এখন তারা আকিদাহ কে শেষ করতে চায়না তারা চায় আকিদাহ কে পরিবর্তন করে ফেলতে। আল্লাহ বলেছেন – (ভাবার্থে) কাফেরদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করোনা, তারা কক্ষনো তোমাদের বন্ধু নয়। অথচ মুসলিম এখন কাফেরদেরকেই বেশি আপন মনে করে! অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমাদের উপরে কোন হামলা হলে, আমরা মনে করি, আমাদের কাফের বন্ধুরাই আমাদের নিরাপত্তা দিবে! নাউজুবিল্লাহ!

আপনি জিহাদ করতে চাইলে উপরের ৪ টি বিষয় খুব ভালো ভাবে জানা থাকতে হবে। কারণ এই ৪ টি বিষয়ের উপরে নির্ভর করবে আপনার পরবর্তী কাজের ধরণ কেমন হবে।

যেমন আপনি যদি “গ্লোবাল জিহাদ মডেল” ভালোভাবে বুঝতে পারেন তাহলে – কোথায় জিহাদ করব? এই প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন।

আপনি যদি “শত্রু সম্পর্কে জানা” বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে নিতে পারেন তাহলে – কিভাবে জিহাদ করব? এই প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজেই বের করে নিতে পারবেন।

আমি জিহাদ করতে চাই কিন্তু তা কিভাবে?

১। নিয়তঃ

সর্বপ্রথম আপনি নিজের নিয়ত ঠিক করবেন। ঠিক কেন এবং কি কারণে আপনি জিহাদ করতে চান? কারণ প্রত্যেক কাজ তার নিয়তের উপরে নির্ভরশীল। আপনি বিশ্বাস করেন কিংবা না করেন আপনার জিহাদের কাজের জন্য কোন জিহাদি দল, কমান্ডার বা কোন শায়েখ কোন উপকারেই আসবেন না যতক্ষণ না আপনার নিয়ত ঠিক হবে, কারণ – এই পথে চলার জন্য আপনার আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য দরকার হবে। আল্লাহর সাহায্য ব্যতিত কোন মুজাহিদের পক্ষে সফলতার দিকে এক কদম ও অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়! তাই সবার আগে আপনি আপনার নিজের নিয়ত ঠিক করে নেন।

২। ইলমঃ

এরপরেই সবার আগে যা দরকার তা হচ্ছে  – ইলম। আপনি যা কিছুই করেন না কেন তার আগে আপনার সে বিষয় ইলম দরকার। আপনি যদি সত্যি জিহাদ করতে চান তবে জিহাদের ব্যাপারে ইলম অর্জন করেন। অন্তত এটি সবার আগে আপনার জানা দরকার – আপনি কেন জিহাদ করবেন। জিহাদের এই পথ সোজা নয় এবং সংক্ষিপ্তও নয়, এই লম্বা কঠিন সফরের জন্য আপনার দরকার হবে ইলম। আপনি যথাসম্ভব জিহাদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করার চেস্টা করেন। এবং অবশ্যই তা কুরআন এবং হাদিস দিয়ে শুরু করেন। ইলম শুধু অর্জনের জন্য নয় বরং যা কিছু শেখার তাউফিক আল্লাহ দিবেন তা আমল শুরু করেন। আমল ব্যতিত ইলম কোন উপকারে আসতে পারেনা।

৩। আনসার কিংবা মুজাহিদঃ

জিহাদের জন্য দুটি আবশ্যকীয় উপাদান হচ্ছে আনসার এবং মুহাজির। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেন – আপনি কি একজন মুহাজির হতে পারবেন? নাকি একজন আনসার। আনসার অর্থ আপনি কোন একজন মুহাজির বা মুজাহিদ ভাই এর আনসার হবেন। আপনি আপনার অর্থ সম্পদ, বাড়ি গাড়ি যা কিছু আছে তা দিয়ে জিহাদের আনসার হবেন। অথবা আপনি হিজরত করবেন কিংবা একজন মুজাহিদ হবেন। সবাই মুহাজির হতে পারবে এমন কথা নাই, আবার সবাই আনসার হবে এমন না। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন আপনি কোন কাজ উত্তম ভাবে করতে পারবেন? যেটি আপনার জন্য উত্তম মনে হচ্ছে আপনি সেটির জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। যদি আপনি মনে করেন আপনি হিজরত করে মুহাজির হতে পারবেন তবে আপনি হিজরতের প্রস্তুতি নেন। আর যদি আপনি মনে করেন আপনি আনসার হতে পারবেন তবে আপনি নিজেকে একজন মুহাজির বা একজন মুজাহিদকে পালন করার প্রস্তুতি হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করেন।

মুহাজির হিসেবে প্রস্তুতির মানে কি? অর্থাৎ আপনি নিয়ত করেন আপনি হিজরত করবেন, এবং এর জন্য যা যা করা দরকার তার সব প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন। অনেকে প্রশ্ন করেন – কিভাবে হিজরত করবো? প্রশ্ন হিসেবে এটি অসঙ্গত নয় তবে আমি এবং আপনি যে ময়দানে আছি সে ময়দানের প্রেক্ষিতে এ প্রশ্নটি একটু জটিল। আপনাকে একটি বিষয় বুঝতে হবে – জিহাদ সোজা না। এটা  জিহাদ, এখানে কষ্ট আছে, চ্যালেঞ্জ আছে। এই পথে অনেকটাই আপনাকে নিজে নিজে হাটতে হবে। এতে আপনার মন খারাপ করার বা কষ্ট পাবার কিছু নাই। কেন? কারণ আপনিই প্রথম না, বরং আপনার মতই সবাই এরকম ভাবেই শুরু করে। আপনাকে শুরু করতে হবে, এবং বাকি ব্যবস্থা আল্লাহ আস্তে আস্তে করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। দ্বিতীয় বিষয় – মানুষ বিদেশে স্কলারশিপের জন্য কত কিছু করে। বাইরের একটা চাকরির জন্য কত আবেদন করে। তাহলে জিহাদ কেন এর ব্যতিক্রম হবে! আপনি যদি হিজরত করতে চান এই পথ আল্লাহ করে দিবেন ইনশা আল্লাহ কিন্তু শুরুটা আপনাকেই করতে হবে। আমি হিজরত করতে চাই – বলে এই আশায়  বসে থাকা চলবেনা যে কেউ একজন এসে আপনাকে হিজরতের রাস্তা দেখিয়ে দিবে। বরং আপনি নিয়ত নিয়ে শুরু করেন দেখবেন আল্লাহ আপনার জন্য রাস্তা সহজ করে দিয়েছেন। এমনটাই বরাবর হয়ে থাকে।

আনসার হিসেবে প্রস্তুতির মানে কি? অর্থাৎ আপনি এখন মুহাজির বা মুজাহিদকে নিজের সমস্ত কিছু অপেক্ষা অধিক ভালোবাসবেন। আপনি আপনার সমস্ত কিছু দিয়ে সেই মুহাজির  বা মুজাহিদ ভাই এর সমস্ত প্রয়োজন বিশেষ ভাবে সমস্ত জিহাদি প্রয়োজন পূরণ করার সাধ্যমত চেস্টা করবেন। হতে পারে আপনি সেই ভাইকে আপনার বাসায় রাখবেন, কিংবা আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন কিংবা যে কোন প্রয়োজনে আপনি সেই ভাইয়ের জন্য এগিয়ে যাবেন, যে কোন বিপদে আপনি ভাইয়ের সামনে ঢাল হয়ে দাড়াবেন, এতে যদি আপনার সমস্ত কিছু বিসর্জন দিতে হয় তবুও! এটিই হচ্ছে আনসারের কাজ। এখন আপনি নিজে ঠিক করে নিবেন আপনি কতটুকু পারবেন? কিভাবে পারবেন? হতে পারে আপনি আপনার বাসায় কোন মুজাহিদ ভাইকে রাখতে পারবেন না, কিন্তু আপনি মাসে ২০,০০০ টাকা সাদাকাহ করতে পারবেন, সেটাই করেন।

৪। দাওয়াহঃ

ইলম অর্জনের পরে আপনি যখন ঠিক করে নিলেন আপনি আনসার হবেন নাকি মুহাজির বা মুজাহিদ হবেন তখন অন্য প্রস্তুতির সাথে সাথে আপনি এবার দাওয়াতের কাজ শুরু করতে পারেন। এই দাওয়াতের বিষয়টি আসলে একটু ব্যাপক। আপনার মূল লক্ষ্য থাকবে চেতনা এবং আদর্শ হিসেবে জিহাদের দাওয়াত দেয়া। কেননা কাফেরদের একটি চেষ্টা হচ্ছে চেতনা এবং আদর্শ হিসেবে জিহাদকে বিকৃত করে দেয়া। তাই আপনার কাজ হবে কাফেরদের সেই প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেয়া। একই সাথে আপনি বিশুদ্ধ ঈমান এবং তাওহিদের দাওয়াতও দিবেন। এভাবে আপনি আস্তে আস্তে ছোট ছোট তয়িফা বা গ্রুপ গঠনের চেষ্টা করবেন। আপনি তাদেরকে গড়ে তুলবেন এবং তাদের থেকে বিভিন্ন কাজ নিতে পারেন। তাদেরকে আনসার কিংবা মুজাহিদ বা মুহাজির হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এছাড়া আপনি তাদেরকে বিভিন্ন জিহাদি কাজে সম্পৃক্ত করতে পারেন, যেমন হ্যাকিং, মিডিয়া ইত্যাদি। এই কাজটি আসলে অত্যন্ত ব্যাপক যদি আপনি তা এভাবে গ্রহণ করতে সাহসী এবং ইচ্ছুক থাকেন। এখানে বিষয়টি এমন যে, আপনি নিজে একজন মুজাহিদ হিসেবে গড়ে উঠবেন এবং একই সাথে আরো অনেককে আপনার মত মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তুলবেন। প্রথম দিকে আপনি কি অর্জন করলেন তা দেখতে যাবেন না, বরং আপনি শুধু এই চেষ্টা করবেন – যত বেশি সম্ভব জিহাদের চেতনা এবং আদর্শকে প্রচার করা। জিহাদের আদর্শ মানে উগ্রতা নয়। এমনকি জিহাদ বুঝেন এমন অনেকে জিহাদের দাওয়াতকে উগ্রতা ভাবেন, এক্সট্রিমিজম ভাবেন যদিও তারা মোটিভেটেড। কিন্তু আসলে আমি যা বলতে চাচ্ছি তা সেরকম কিছু না। আমি যখন বলছি জিহাদ একটি চেতনা – তখন এটির উপস্থাপনা এমন সাবলীল এবং বাস্তবমুখী হতে হবে যেন মানুষ বুঝতে পারে জিহাদ আলাদা কোন বিষয় নয়, বরং নিজের ঈমান এবং আকিদাহ নিয়ে বেঁচে থাকার জন্যই জিহাদ অপরিহার্য। আর এই কাজ আপনি সবার আগে আপনার নিজের পরিবার থেকে শুরু করতে পারেন। তবে কোন ক্ষেত্রে যদি এমন হয় যে, আপনি হিজরতের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর এবং সে অনুযায়ী আপনি চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন। এমন অবস্থায় দাওয়াতি কাজ করলে আপনার হিজরতের কাজ ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে তবে আপনি ইস্তেখারা সাপেক্ষে দাওয়াতের কাজ বন্ধ রাখতে পারেন।

৫। জিহাদে অংশ গ্রহনের ৪৪ উপায়ঃ

জিহাদের অংশগ্রহণের প্রায় ৪০ এর অধিক উপায় আছে। শাইখ আনওয়ার আল আওলাকি রহঃ এর বিখ্যাত লেকচার আছে – “44 Ways of supporting Jihad”  এই লেকচারটি শুনে নিতে পারেন বা এই ম্যানুয়ালটি পড়ে নিতে পারেন। এরপরে আপনার নিজের জন্য যে কাজটি সবচেয়ে সহজ হয় সেটি দিয়ে শুরু করেন। এরপরে আস্তে আস্তে আর বেশি উপায়ে অংশগ্রহণের চেষ্টা করতে থাকেন। আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন ইনশা আল্লাহ। এছাড়া জিহাদ যখন ফরজ তখন  জিহাদের প্রস্তুতিও ফরজ। এখন আমার কিংবা আপনার এই বলে বসে থাকার কোন সুযোগ নাই যে, আমি তো জানিনা কিভাবে জিহাদ করব? আমি তো জানিনা কার সাথে জিহাদ করব? কিছু করতে না পারলেও অন্তত প্রস্তুতি নিতে হবে – আনসার হিসবে কিংবা মুজাহিদ বা মুহাজির হিসেবে।

আবারো বলছি জিহাদের ফরজিয়াত পূরণের জন্য কোন দল বা জামাতের সাথে অংশগ্রহণ জরুরী না। হক্কপন্থী দল বা জামাতের খোঁজে থাকতে হবে এবং আল্লাহর কাছে দুয়া করতে হবে কিন্তু এই অপেক্ষায় বসে থাকা যাবেনা। এখানে একটি বাস্তবতা আমাদের বোঝা দরকার – আমি কোন দলের সাথে যোগ দিব? এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর আপেক্ষিক। একই সাথে যুদ্ধের ধরণ অনুযায়ী  ময়দানে এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর আশা করা ঠিক না। মনে করেন, আপনি একটি গেরিলা ইউনিটের কমান্ডার। আপনাকে কেউ একজন ফেসবুকে নক দিয়ে বললো আমি আপনাদের ইউনিটে যোগ দিতে চাই, কিভাবে জয়েন করবো? বা কোথায় জয়েন করবো? আপনি এই প্রশ্নের কি উত্তর দিবেন? নিরাপত্তার কারণে আপনার পক্ষে এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব না। বাস্তবতাও তাই। আপনি যদি আশা করেন কেউ একজন আপনাকে বলে দিবে কিভাবে কি করতে হবে, কোথায় জয়েন করতে হবে তাহলে আপনি ভুল করছেন। তাহলে আপনি হয়ত নিজেকে জানেন কিন্তু আপনার শত্রুকে জানেন না।  এক্ষেত্রে আপনার কোন একটি সফলতা আসলেও তার সাথে একটি ব্যর্থতাও থাকবে।

সব শেষে – আমি জিহাদ করতে চাই এটি বলা সবচেয়ে সোজা। এটি বলে সে অনুযায়ী আমল করা কঠিন, সে অনুযায়ী আমল করে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ধরে রাখা সবচেয়ে কঠিন, যতক্ষণ না আল্লাহ সহজ করে দেন। আপনাকে এখুনি সব করে ফেলতে  হবে এমন নয়। বরং আপনি নিজেকে প্রস্তুত করেন সময় নিয়ে। আপনি মনে রাখবেন আপনি যদি আল্লাহর সাথে সত্য থাকেন, আল্লাহও আপনার সাথে সত্য থাকবেন। আপনি যদি সত্যি জিহাদী কাফেলার সাথে শরীক হতে চান আপনাকে জামাতের সাথে শরীক করার দায়িত্ব আল্লাহর। এ ব্যাপারে আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। তবে ভাবার বিষয় হচ্ছে – একবার জামাতের দেখা পাবার পর আপনি সেই পরিস্থিতির জন্য কতটুকু প্রস্তুত! এমন অনেক ভাই আছেন যারা জিহাদের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন, কিন্তু যখন জিহাদের কঠিন বাস্তবতা সামনে হাজির হয়েছে তখন তারা নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তারা এই কঠিন পথ পাড়ি দেয়ার সাহসটুকু যোগাড় করতে পারেননি, কিংবা পথিমধ্যে ঝরে গেছেন!

আপনার প্রতি আমার শেষ কথা – আপনি মুজাহিদ হিসেবে প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং নিজেকে একজন মুজাহিদ হিসেবে গড়ে তুলেন, আর মুজাহিদদের সাথে মিলিয়ে দেয়ার জিম্মাদারি আল্লাহর উপরে ছেড়ে দেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা বলেন –

وَلَوْ أَرَادُواْ الْخُرُوجَ لأَعَدُّواْ لَهُ عُدَّةً وَلَـكِن كَرِهَ اللّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُواْ مَعَ الْقَاعِدِينَ

“আর যদি তারা (সত্যি) বের হবার (জিহাদের পথে) সংকল্প নিত, তবে অবশ্যই কিছু সরঞ্জাম প্রস্তুত করতো (প্রস্তুতি গ্রহন করত)। কিন্তু তাদের যাত্রা আল্লাহর পছন্দ নয়, তাই তাদের নিবৃত রাখলেন এবং আদেশ  দেয়া হল, বসা লোকদের সাথে তোমরা বসে থাক”। [সুরা তাওবা ৯:৪৬]

Related Articles

৪ Comments

  1. আসসালামু আলাইকুম।। আমি ছোট বেলা থেকে শিবিরের সাথে যুক্ত ছিলাম।। আমি বেশির ভাগ নাশীদ গাইতাম ও মিছেলে যেতাম এটাই ছিলাম। এবং কিছু দিন পর হিজবুত তাহরীর সাথে যুক্ত হই। তাদের এলমের চরচা এবং তাওহীদ, ইসলাম, গনুতন্ত্র, খিলাফতব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো আমাকে ভাবিয়ে তুলে এবং কিন্তু জিহাদের বিষয়টা কিছু সিন পর আমার সামনে প্রশ্ন বৃদ্ধ ওরা বলে জিহাদ করার জন্য একজন খলিফার অধিনা রাষ্ট্র নায়ক থাকা অপরিহার্য।। আর ওরা সেনাবাহিনী নুসরাতের মাধ্যমে খিলাফত আসবে বলে মনে করে।। এই বিষয়গুলো আমি কিছু দিন পর বুঝতে পারি ummah net work. এর চ্যানেল দেখার পর ও আমার কিছু বন্ধু পাওয়ার পর আমি পরিষ্কার।। জিহাদ কিয়ামত পরযন্ত চলতে থাকবে।। এখন বিষয় হল আমি এখান থেকে বুঝতে পেরেছি জহাদে অংশগ্রহণ করার জন্য সহি নিয়ত থাকা আবশ্যক এবং নিজের মধ্যে কি আছে আন্সার না মুজাহিদ হবে সেটা নিজেকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।। আসা করি আমার ইচ্ছা আমি আমার অবস্থান থেকে মিডিয়াতে কাজ করব ইনশা আল্লাহ।।

    1. আলহামদুলিল্লাহ্‌, ভাই আপনি মিডিয়াতে কাজ করতে চাচ্ছেন যেনে অনেক ভাল লাগলো। মুজাহিদদের অনলাইন ফোরাম https://dawahilallah.com/ এ নিয়মিত ভিজিট করবেন এবং অবশ্যই TOR browser ব্যবহার করে ফোরামে প্রবেশ করবেন।

Leave a Reply to ahmad abdullah Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

five × two =

Back to top button