প্রবন্ধ-নিবন্ধ

ফিতনা সংক্রান্ত হাদিস

প্রশ্নকারীঃ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।

প্রশ্নঃ আমি নিম্নোক্ত লিখাটি এক আইডি থেকে কপি করলাম। লিখাটি হলো: তলোয়ার দিয়ে ফিতনা দূর করা যায় না, উল্টো যে দুর করতে চাচ্ছে সে নিজেই ফিতনায় পড়ে যাবে, এবং ফিতনা বাড়বে — এই ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি বর্তমান সময়ের সাপেক্ষে?

.
#উত্তর – ভাই এ প্রশ্নের প্রসঙ্গে দুটো হাদিস উল্লেখ করেছেন। হাদিস – ৫২ عن يزيد بن صهيب الفقير قال بلغني أنه ما تقلد رجل سيفا في فتنة إلا لم يزل مسخوطا عليه حتى يضعه আমার কাছে এই কথা পৌছেছে যে, ফিতনার সময় যে তার তলোয়ারের অনুসরন করবে সেই ভুলের মাঝে পড়ে গিয়ে আফসোস করবে এবং সে লাঞ্চিত হবে। [ মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা – ৩৬৪৬২ ] .
হাদিস – ২৬ হুজাইফা রা: বলেছেন: عن حذيفة قال وكلت الفتنة بثلاثة بالجاد النحرير الذي لا يريد ان يرتفع له شيء إلا قمعه بالسيف وبالخطيب الذي يدعو إليه الأمور وبالشريف المذكور فأما النحرير فتصرعه وأما هذان فتجثهما فتبلو ما عندهما তিনটা জিনিস দিয়ে ফিতনা বাড়বে। এমন লোকের হাতে রক্তপাত বৃদ্ধির কারনে, যে ফিতনা বাড়ুক সেটা চায় না, বরং তলোয়ার দ্বারা কমাতে চায়। এমন খতিবের কারনে যে সবকিছু নিজের দিকে ডাকে। এবং প্রশংসিত শরিফ লোকের কারনে। এর পর রক্তপাত যখন বেড়ে যাবে, তখন সেটা তাদেরকে ফেলে দেবে। এরপর তাদেরকে উপড়ে ফেলবে এবং তাদের নিকট যা ছিলো সেটা তাদের ক্ষতি করবে। [ মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা – ৩৬৪৩৬ ] .
হাদিসগুলো দেখলাম। সুন্দর হাদিস। এগুলো মুসলিমদের মধ্যে সংগঠিত ফিতনার সময়ের জন্য আমলযোগ্য হাদিস। ‘বর্তমান সময় সাপেক্ষে’ বলতে যদি আপনি এটা বুঝিয়ে থাকেন যে, বর্তমানে তাগুত-মুরতাদরা শাসন করতেছে। একটা ফিতনা চলছে। এই সময় অস্ত্র হাতে নেয়া উচিত হবে কিনা? তাহলে বলবোঃ এই হাদিসগুলোতে আসলে এই ফিতনার আলোচনা হচ্ছে না। বরং উসমান (রাঃ) এর শাহাদাতের পর থেকে মুসলিম সমাজে যে ফিতনা শুরু হয়েছিল, সেই দিকে ইংগিত করে এই কথাগুলো এসেছে।
.
হুজাইফা (রাঃ) এর উল্লেখিত হাদিসটির আগে, পরের হাদিসগুলো দেখলেই এটা সহজে চোখে পড়ে। উল্লেখিত ২টি হাদিসই এসেছে কিতাবুল ফিতানে। আর দেখেনঃ কিতাবুল ফিতানে ৩টি অধ্যায় (বাব) রয়েছে। من كره الخروج في الفتنة وتعوذ عنها, ما ذكر في فتنة الدجال, ما ذكر في عثمان অধ্যায়গুলো নাম দেখলেই এটা বুঝা যাচ্ছে এই ফিতনা বলতে কুফর-শিরকের সয়লাব কিংবা মুসলিম ভূমিতে কাফিরদের আক্রমণের ব্যাপারকে আলোচনা করা হচ্ছে না।
.
আর মুসলিম ভূমিতে কাফিরদের আক্রমণ হলে তখন যে জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়, এই ব্যাপারে উলামাগণ ইজমা উল্লেখ করেছেন। একইভাবে শাসকের মধ্যে সুস্পষ্ট কুফরী দেখা গেলে, তাকে অপসারণ যে জরুরী হয়ে যায়, আর সামর্থ্য না থাকলে হিজরত করে অন্যত্র চলে যেতে হয়, এই ব্যাপারেও ইজমা রয়েছে।
.
প্রকৃত পক্ষে অনেকেই এধরণের কয়েকটি হাদিস ব্যবহার করে বোঝাতে চান বর্তমান সময় জিহাদ করা যাবে না এতে সমস্যা বৃদ্ধি পাবে। এ ধরনের অবস্থান ভুল হবার পক্ষে সবচে বড় যুক্তি হল শারীয়াহ থেকে জিহাদের ব্যাপারে স্পষ্ট হুকুম আমরা পাই। এ হুকুম কোন কোন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা হবে সেটা নিয়েও শারীয়াহর বক্তব্য স্পষ্ট এবং আলিমগণের ‘ইজমা স্পষ্ট। যখন কাফিররা মুসলিম ভূখন্ড দখল করে নেয়, মুসলিমদের বন্দী করে, মুসলিমদের হত্যা করে, তখন জিহাদ করার হুকুম স্পষ্ট। এমন অবস্থায় জিহাদ না করাটাই ফিতনা।
.
এছাড়া আমরা আত ত্বইফাতুল মানসুরার হাদীস জানি। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন –
.
সালামাহ বিন নুফাইল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

তারা মিথ্যা বলছে! জিহাদ তো কেবল শুরু হয়েছে, আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর পথে জিহাদ করতেই থাকবে। বরং আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকে কারো কারো হৃদয়কে বক্র করে দিবেন যাতে তারা তাদের বিরদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং এবং এই কিতাল থেকে তাদেরকে তিনি রিযক্ব দান করবেন যতক্ষণ না ক্বিয়ামাত কায়েম হয় এবং আল্লাহ্‌র ওয়াদা এসে যায়। ঘোড়ার কপালে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত রহমত থাকবে (সুনান নাসায়ি, হাদিস নং ৩৫৬১ – সাহিহ)
.
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
এই দ্বীন সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানের একটি দল এই দ্বীনের সংরক্ষণের জন্য কিয়ামাত পর্যন্ত কিতাল (يُقَاتِلُ যুদ্ধ) করতে থাকবে। (সাহিহ মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস নং ৪৭১৭, ই.ফা. ৪৮০০)
.
সুতরাং এ হাদীসগুলো থেকে বোঝা যাচ্ছে ক্বিয়ামত পর্যন্ত একটি দল থাকবে যারা জিহাদ করবে। আর এ দলের প্রশংসা করা হয়েছে। যদি ফিতনার সময় জিহাদ-ক্বিতাল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ থাকে তাহলে এ হাদীসগুলোর বক্তব্যের কি হবে? এ কারনে বক্তব্যের সাথে সমন্বয় করেই আমাদের প্রশ্নে যে হাদিসদুটির কথা এসেছে সেগুলো বুঝতে হবে। তাই প্রশ্নে উল্লেখিত হাদিসদুটির কারণে বর্তমান সময়ে মুজাহিদীনদের আমলের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন আসছে না। আল্লাহু ‘আলাম

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × three =

Back to top button