প্রবন্ধ-নিবন্ধ

ওমর আল জাবিরের প্রশ্নের জবাব

[ওমর আল জাবিরের #প্রশ্ন – আমরা সবাই চাই আমাদের অত্যাচারিত, অসহায় মুসলিম ভাইবোনদের জন্য কিছু করতে। গাজায় মুসলিম শিশুর মৃত্যু দেখে তরুণরা জিহাদের জন্য এক পায়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের শিশুদের মৃত্যু নিয়ে সেই তরুণদের এসব নিয়ে কেন যেন বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই। নিজের দেশের হাজার হাজার ধর্ষিত বোন, নির্যাতিত শিশু, ভাইয়েরা আমাদের দিকে তাকিয়ে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে মরে গেছে। কিন্তু ওদের দিকে না তাকিয়ে আমাদের তরুণরা সিরিয়া, গাজা, কাশ্মীর গিয়ে জিহাদের রঙিন স্বপ্নে মগ্ন কেন?
#উত্তর – আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি বিকৃতিসাধনকারীর বিভ্রান্তি থেকে। আমরা আশ্রয় প্রার্থনা করি দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবনকারী হওয়া থেকে, আমরা আশ্রয় প্রার্থনাকারী করি সিরাতুল মুস্তাক্বিম থেকে বিচ্যুত হওয়া থেকে। সকল বিচ্যুতির শেষ গন্তব্য জাহান্নাম।
আমাদের জন্য মুসলিম হিসেবে যে বিষয়টি অনুধাবন সবচেয়ে বেশি জরুরী তা হল, আল্লাহ ও রাসূলের ﷺ পক্ষ থেকে কোন কিছু যখন আমাদের সামনে উপস্থিত করা হচ্ছে তখন আমাদের দায়িত্ব শোনা ও মানা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আল ক্বুর’আনে বলেন –

“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন ক্ষমতা নেই যে, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।“ [আল-আহযাব, ৩৬].তিনি আরো বলেন –মুমিনদের বক্তব্য কেবল এ কথাই যখন তাদের মধ্যে ফয়সালা করার জন্যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের দিকে তাদেরকে আহবান করা হয়, তখন তারা বলেঃ আমরা শুনলাম ও আদেশ মান্য করলাম। তারাই সফলকাম। [আন-নূর, ৫১].একজন মুসলিমের মধ্যে এ বৈশিষ্ট্যটি থাকা আবশ্যক। মুমিনের দায়িত্ব না নিজের মাথা থেকে, নিজের খেয়ালখুশি মতো, নিজের সুবিধামতো, নিজের পছন্দমতো ব্যাখ্যা বের করা। মুমিনে দায়িত্ব আল্লাহর ইচ্ছা অনুযায়ী, আল্লাহর বেধে দেয়া নিয়মে, আল্লাহর রাসূলের ﷺ দেখানো পদ্ধতি অনুযায়ী আল্লাহর হুকুম পালন করা। পাশাপাশি মুমিনের দায়িত্ব হল দ্বীনের বিসয়গুলোকে ঐভাবে বোঝা বা ঐ অবস্থান গ্রহণ করা যেভাবে সাহাবীগন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া আজমাইন করেছিলেন।আমাদের এও মাথায় রাখা উচিত যে এ দ্বীন ইসলাম নাযিল করেছেন রাব্বুল আলামীন, আসমান ও যমীনের অধিপতি আল্লাহ। সুতরাং কোন সময় কোন হুকুম প্রযোজ্য, কোন সময় কোন হুকুম উপযুক্ত এ বিষয়ে মানুষের সৃষ্টিকর্তাই সর্বাধিক জ্ঞাত। আপনার ও আমার চেয়ে আল্লাহ ভালো বোঝেন বর্তমান সময়ে শারীয়াহ প্রযোজ্য কি না, আপনার ও আমার চেয়ে আল্লাহ ভাল জানেন বর্তমান সময়ে জিহাদ প্রযোজ্য কি না। এ ব্যাপারে আল্লাহ যা বলেছেন তাই চূড়ান্ত আপনার বা আমার কি মনে হয় – তার এক পয়সার মূল্যও এখানে নেই। আর আল্লাহ তাঁর সিদ্ধান্ত আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানব জাতির উপর ফরয হল দ্বীন ইসলামের অনুসরণ। এ বিষয়গুলো অনুধাবন ও সর্বদা আকড়ে থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।প্রশ্নকর্তার মতো লোকেদের মাঝে এ বৈশিষ্ট্যগুলোই অনুপস্থিত। তাই যখন কিছু লোকের সামনে দ্বীনের কোন সুস্পষ্ট হুকুম পেশ করা হয় আর জখন তারা দেখে এ হুকুম পালন কষ্টকর, যখন তারা দেখে এ হুকুম পালন তাদের নিস্তরঙ শান্তির জীবনের উপর বিপদ ডেকে আনতে পারে, যখন তারা দেখে এ হুকুম তাদের বর্তমান লাইফস্টাইলের সাতে খাপ খায় না তখন তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো আল্লাহর এ হুকুমকে এমনভাবে ব্যাখ্যা করে যাতে করে অপ্রিয় কাজ করার বাধ্যবাধকতা থেকে নিজেদের মুক্ত করা যায়, আবার একই সাথে ইসলাম পালনের দাবিও করা যায়।

প্রশ্নকর্তা বলেছেন যারা জিহাদের কথা বলে তারা গাযার মুসলিম শিশু নিয়ে চিন্তা করে তারা ফিলিস্তীনে জিহাদে যেতে চায় কিন্তু তারা বাংলাদেশে শিশু হত্যা নিয়ে কোন কথা বলে না কেন? এ প্রশ্নের প্রথম উত্তর হল, এ দুটি বিষয়কে এ প্রশ্নে এক করে উপস্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু আদতে বিষয় দুটি কি এক? শারীয়ার দৃষ্টিতে এ দুটি বিষয়ের হুকুম কি এক?
শারীয়াহ থেকে সুস্পষ্ট ভাবে আমরা জানি যখন কোন আগ্রাসী কাফির-মুশরিক শত্রু মুসলিমদের উপর আক্রমন করবে তখন মুসলিমদের আবশ্যক দায়িত্ব আগ্রাসী কাফিরদের বিরুদ্ধে আক্রান্ত মুসলিমদের সাহায্য করা। আর এ সাহায্য করার পদ্ধতি কি তাও আল্লাহ স্পষ্ট ভাবে ও কঠোর ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন –
আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে ক্বিতাল করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।[সূরা নিসা, ৭৫] দেখুন আল্লাহ কিন্তু প্রশ্ন করেন নি, কেন আমরা দান-খয়রাত করছি না বা কেন আমরা মানবিক সাহায্য পাঠাচ্ছি না, বা কেন আমরা ফেসবুকে লিখছি না, বা কেন আমরা প্রতিবাদ করছি না, বা কেন আমরা মানববন্ধন করছি না, বা কেন আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহন করছি না, কেন আমরা ইমান-আমল ঠিক করছি না, কেন আমরা আক্বিদা শুদ্ধ করছি না, কেন আমরা জ্ঞান-বিজ্ঞানে উন্নতি করছি না – আল্লাহ এগুলোর কোন কিছুর ব্যাপারে প্রশ্ন করছেন না।
.
তিনি বলছেন – তোমাদের কি হল কেন তোমরা আল্লাহর রাহে ক্বিতাল করছো না? অর্থাৎ যদি আমরা এ সবগুলো কাজ করতামও তবুও আমাদের এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হতোই। যখন মুসলিম নারীপুরুষশিশু নির্যাতিত হবে তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে আদেশ হল আল্লাহর রাহে ক্বিতাল করা। বিষয়টি পরিষ্কার। সুতরাং গাযা কিংবা, কাশ্মীর, কিংবা সিরিয়া, কিংবা আফগানিস্তানের কিংবা বসনিয়ার, কিংবা আরাকানের কিংবা পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষার জন্য আল্লাহর রাহে ক্বিতাল করা দ্বীন ইসলামের স্পষ্ট সুপ্রতিষ্ঠিত বিধান। এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।
.
অর্থাৎ শারীয়াহ থেকে প্রমাণিত যে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ফিলিস্তীন, কাশ্মীর, আরাকানের ব্যাপারে ক্বিতালের হুকুম প্রযোজ্য। অন্যদিকে বাংলাদেশে শিশুমৃত্যুর কারন আগ্রাসী কাফির শত্রুর আক্রমন না। বরং এখানে শিশু হত্যার কারন হল অপরাধ। অপরাধ দমনের দায়িত্বও দ্বীনের মধ্যে আছে। কিন্তু সেটা হল হিসবাহ, সৎ কাজে আদেশ অসৎ কাজে নিষেধ, রাষ্ট্র পরিচালনা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের অন্তর্ভুক্ত বিষয়। এখানে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর হুকুম প্রযোজ্য না।
.
ব্যাপারটা সহজ ভাবে বলার চেষ্টা করি। গাযাতে মুসলিম শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, বাংলাদেশেও মুসলিম শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু তাঁর অর্থ এই না যে দুটি বিষয় এক। উভয় ক্ষেত্রেই মুসলিম শিশু মারা যাচ্ছে এটা এ দুটি বিষয়কে শারীয়াহর দৃষ্টিতে এক করে দেখার জন্য, এবং দুটীর উপর একই হুকুম চাপিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট না। এ দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ এবং দুটী বিষয়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কিন্তু এ দুটি দুটো আলাদা বিষয়। অর্থাৎ যদি বাংলাদেশের শিশুদের হত্যা বন্ধ করা হয় তবুও গাযায় জিহাদের হুকুম রহিত হবে না, আর যদি গাযার শিশুদের হত্যা বন্ধ করা হয় তবুও বাংলাদেশে শিশু হত্যা বন্ধের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না।
.
একই সাথে উভয় ক্ষেত্রে শারীয়াহর দৃষ্টি থেকে করণীয় এক না। গাযাতে নির্যাতিত শিশুদের রক্ষার জন্য শার’ঈ হুকুম ক্বিতাল। কিন্তু বাংলাদেশে কি নির্যাতিত শিশুদের নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে শার’ঈ ভাবে হুকুম ক্বিতালের? নাকি তাদের বন্দী করা ও তাদের উপর শার’ঈ হাদ্দ (শারীয়াহর নির্ধারিত শাস্তি) প্রয়োগের? প্রশ্নকারী এ দুটি ভিন্ন বিষয়কে এক করে দেখাচ্ছেন।
.
ধরুন এক ব্যাক্তি রোযা রাখে না, কিন্তু দান খয়রাত করে। এখন তাঁর দান খয়রাত করা কি রোযা না রাখার গুনাহ থেকে তাকে মুক্তি দেবে? কখনোই না। আবার ধরুন এক ব্যাক্তির উপর যাকাত ফরয। সে যাকাত আদায় করে না, নামাযও আদায় করে না। এখন সে যদি যাকাত আদায় করে তবে কি তার আর নামায আদায় করতে হবে না? নামায তাঁর উপর ফরয সে যাকাত দিক বা না দিক। এখানে দুটি বিষয়ে এক করার, এক্টির দোহাই দিয়ে আরেকটি থেকে বিরত থাকার সুযোগ নেই।
.
তাহলে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত জিহাদের আলোচনায় এ বিষয়টির অবতারনার অর্থ কি? স্পষ্টভাবে যেখানে জিহাদের হুকুম প্রযোজ্য এবং তরুনরা এ জিহাদে অংশগ্রহন করতে চাইছে এমন অবস্থায় প্রশ্নকারী অন্য একটি হুকুমের সাথে ইচ্ছাকৃতভাবে জিহাদকে মিলিয়ে ফেলে কি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন?
.
.
দ্বিতীয় ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্ট হল, শারীয়াহ অবস্থান থেকে আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে জিহাদ আর নিজ ভূখন্ডে অপরাধ দমন – এ দুটি দায়িত্বের গুরুত্ব কি একই মাত্রার? নিঃসন্দেহে দুটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু প্রশ্ন হল এ দুটি কি শারীয়াহর দৃষ্টিকোন একই মাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ?
.
শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন ইমান আনার পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হল আগ্রাসি শত্রুর মোকাবেলা তথা আগ্রাসী শত্রুর বিরুদ্ধে। আগ্রাসী শতুরর বিরুধে জিহাদের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবারা নামায কাযা করেছেন, রোযা ভেঙ্গেছেন এমন উদাহরন আছে। চার মাযহাবের ইমামগণ, আলিমগণ, মুফাসিরিন, মুহাদ্দিসিন, ফুক্বাহা একমত যখন আগ্রাসী শত্রু কোন মুসলিম ভূমির একহাত পরিমান দখল করে নেয় তবে তখন তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ ওই ভূমির ও ওই ভূমির নিকটস্থ ভূমির মুসলিমদের জন্য ফরযে আইন হয়ে যায়। অর্থাৎ ঐ ভূখন্ডের এবং ঐ ভূমির নিকটস্থ সকল মুসলিমের উপর ব্যক্তিগতভাবে জিহাদ ফরয হয়ে যায় যেভাবে ফরয নামায ব্যক্তিগতভাবে ফরয।
.
যদি লোকস্বল্পতা বা শক্তির স্বল্পতা থাকে তা ঐ ভূমি ও তার নিকবর্তী ভুমি পার হয়ে ফরযে আইনের দায়িত্ব ক্রমান্বয়ে প্রসারিত হতে থাকে। যতোক্ষন জিহাদের জন্য মুসলিমদের প্রয়োজন থাকবে এবং বিজয় অর্জিত হবে না ততোক্ষন ফরযে আইনের এ আওতা প্রসারিত হতে থাকবে, যতোক্ষন পুরো পৃথিবীর মুসলিমরা এ ফরযে আইন জিহাদের আওতায় চলে না আসবে।
.
এটা আমাদের “জঙ্গীদের” কথা না, এটা মুসলিম উম্মাহর আলিমগণের ‘ইজমা যাতে কোন দ্বিমত নেই। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন, “মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা – শায়খ আবদুল্লাহ আযযাম’ – http://ia802705.us.archive.org/…/IslamiBoi/Defence_of_Musli…
.
সুতরাং ফিলিস্তীন, কাশ্মীর, আরাকান, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়ার জন্য জিহাদ বর্তমানে পুরো মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরযে আইন। প্রশ্ন হল কোন ভুখন্ডের অধিবাসীদের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে নারী-শিশু নির্যাতন বা ধর্ষন দমন কি একই মাত্রার দায়িত্ব? অর্থাৎ এটা করা কি প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরযে আইন? নিঃসন্দেহে না। তাহলে এ দুটোকে মেলানোর অর্থই বা কি আর উদ্দেশ্যই বা কি?
.
নিজের মনমতো হুকুম তৈরি করা ফতোয়া তৈরি করা, দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবন করা মুমিনের কাজ না, মুমিনের কাজ শোনা ও মানা। কিন্তু প্রশ্নকারী সম্ভবত এ দায়িত্ব পালনে আগ্রহী না। তিনি নিজের মনমত দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবনে আগ্রহী এবং পারদর্শী।
.
.
তৃতীয় আরেকটি পয়েন্ট হল, বর্তমানে বাংলাদেশে যদি আমরা আসলে নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষন বন্ধ করতে চাই, যদি আমরা আসলেই পরিবর্তন চাই তাহলে করণীয় কি? মানববন্ধন? মোমবাতি প্রজ্বলন? ফানুশ ওড়ানো? ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়া? কারন তনু ধর্ষনের পর আমরা দেখেছি শাহবাগীরা এ নিয়ে ব্যাপক আন্দোলন করেছে কিন্তু কোন ফলাফল আসে নি।
.
এছাড়া আমরা আরো দেখেছি সুশীলদের ভাষায় “নিয়মতান্ত্রিক” কোন আন্দোলন করেই কোন পরিবর্তন আনাই সাম্প্রতিক সময়ে সম্ভব হয় নি। শিক্ষকদের আন্দোলন, নার্সদের আন্দোলন, মেডিকাল ভর্তি আন্দোলন, তনু হত্যার পর আন্দোলন, রামপাল আন্দোলন, হেফাযত আন্দোলন – কোনটাতেই কোন কিছু হয় নি। তাহলে যদি আমরা আসলে শিশু হত্যা, নির্যাতন বন্ধ করতে চাই তাহলে নিস্ফল আন্দোলন করার অর্থ কি?
.
আমরা এও দেখেছি রাঘব বোয়ালরা কোন অপরাধ করলে তার শাস্তি বাংলাদেশে হয় না। যেসব নারী-শিশু নির্যাতনের সাথে রাঘব বোয়ালরা জড়িত সেগুলোর বিচার এসব সরকার করে না, করবেও না, আর এগুলো বন্ধও হবে না। যখন এ সিস্টেমের মধ্যেই ঝামেলা তখন এ সিস্টেম দিয়ে ঝামেলার সমাধান হবে এটা আশা করা যায় না। একটা রাস্ট্রীয় পর্যায়ের সমস্যা কিভাবে ব্যক্তির মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে সমাধান করা যাবে? তরুণরা কোন যাদু বলে ধর্ষন-নির্যাতন বন্ধ করবে?
.
যদি আসলেই আমরা ইনসাফ চাই, বিচার চাই, অপরাধ দমন করতে চাই তবে আমাদের জন্য একমাত্র উত্তর হল আল্লাহর যমিনে আল্লাহর শারীয়াহ কায়েম করা। প্রশ্ন হল সে শারীয়াহ কায়েমের পদ্ধতি কি হবে? নিয়মতান্ত্রিক উপায়? যদি আপনি শারীয়াহ চান, তাহলেও উপায় হল জিহাদের মাধ্যমে এ ভূমিতে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠা। আর সকল পদ্ধতি শার’ঈ এবং বাস্তবিক – উভয় দিক থেকে ভুল ও ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।
.
.
আরেকটি অত্যন্ত মজার পয়েন্ট হল প্রশ্নকারী নিজে থাকে দেশের বাইরে। কাফিরদের দেশে। মুসলিম তরুনদের জিহাদের নেক নিয়ত ও জিহাদের প্রতি ভালোবাসা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এ ব্যক্তি নিজে বাংলাদেশের শিশু নির্যাতন নিয়ে কি করেছে? আচ্ছা বাংলাদেশের কথা বাদ দিন পশ্চিমে বছরে লাখ লাখ শিশুর উপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন করা হয়, কয়েক মাস বয়েসী শিশুদের ধর্ষনের পর্ণোগ্রাফি বানানো হয়, প্রশ্নকারী নিজে এগুলোর ব্যাপারে কি করেছে?
.
সে এবং তাঁর মতো লোকেরা নিজেরা জিহাদ করবে না, অন্যদের জিহাদ করতে দেবে না, জিহাদের দিকে আহবান করতে দেবে না, যারা জিহাদের দিকে আহবান করে তাদেরকে আক্রমন করবে, আল্লাহর কিতাবে ভুল ব্যাখ্যা করবে তারপর একটা অজুহাত বের করবে (যেমন বাংলাদেশের শিশুদের নির্যাতন থামানোর জন্য কাজ করে না কেন জিহাদিরা) – কিন্তু নিজেরা এ ব্যাপারে কিছুই করবে না। গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরবে। কিংবা এ প্রশ্নকারীর মতো কাফিরদের দেশে বসে আরামসে মুসলিম তরুনদের সমালোচনা করবে।
.
.
মজার ব্যাপার হল সূরা নিসার যে আয়াতে আল্লাহ আমাদের প্রশ্ন করেছেন কেন আমরা নির্যাতিতদের বাঁচানোর জন্য আল্লাহর রাহে ক্বিতাল করছি না, তার এক আয়াত পরেই আল্লাহ আমাদেরকে নির্দিষ্ট এক শ্রেণীর লোকের বর্ণনা জানিয়ে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের লোকের অবস্থা এ আয়াতগুলোতে সংক্ষেপে সবচেয়ে সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা। আর আলোচ্য প্রশ্ন ও প্রশ্নাকারীদের জন্যই এ আয়াতগুলোই উত্তর হিসেবে যথেষ্ট –
.
আর তোমাদের কি হল যে, তোমরা আল্লাহর রাহে ক্বিতাল করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।
.
.
যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফির তারা লড়াই করে শয়তানের পক্ষে সুতরাং তোমরা ক্বিতাল করতে থাক শয়তানের পক্ষালম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।
.
তুমি কি সেসব লোককে দেখনি, যাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তোমরা নিজেদের হাতকে সংযত রাখ, নামায কায়েম কর এবং যাকাত দিতে থাক? অতঃপর যখন তাদের প্রতি ক্বিতালের নির্দেশ দেয়া হল, তৎক্ষণাৎ তাদের মধ্যে একদল লোক মানুষকে ভয় করতে আরম্ভ করল, যেমন করে ভয় করা হয় আল্লাহকে। এমন কি তার চেয়েও অধিক ভয়। আর বলতে লাগল, হায় পালনকর্তা, কেন আমাদের উপর ক্বিতাল ফরজ করলে! আমাদেরকে কেন আরও কিছুকাল অবকাশ দান করলে না।

( হে রসূল) তাদেরকে বলে দিন, পার্থিব ফায়দা সীমিত। আর আখেরাত পরহেযগারদের জন্য উত্তম। আর তোমাদের অধিকার একটি সূতা পরিমান ও খর্ব করা হবে না।
.
তোমরা যেখানেই থাক না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভেতরেও অবস্থান কর, তবুও। বস্তুতঃ তাদের কোন কল্যাণ সাধিত হলে তারা বলে যে, এটা সাধিত হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর যদি তাদের কোন অকল্যাণ হয়, তবে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ থেকে, বলে দাও, এসবই আল্লাহর পক্ষ থেকে। পক্ষান্তরে তাদের পরিণতি কি হবে, যারা কখনও কোন কথা বুঝতে চেষ্টা করে না। [সূরা নিসা, ৭৫-৭৮] ।
তাই এ ধরনের প্রশকারীদের আমি বলি, কোন রঙ্গিন স্বপ্নে মগ্ন হয়ে না, আল্লাহর রহমতে আমাদের তরুনরা জিহাদ করতে চায় কারন এটা আল্লাহর হুকুম। রঙ্গিন স্বপ্নে মজে না, তারা জিহাদ করতে চায় জান্নাতের আশায় এবং কবর ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে নিজেদের বাঁচানোর তাড়নায়। তারা জিহাদ করতে চায় কারন যখন আল্লাহ ও রাসূলের ﷺ দিকে তাদের আহবান করা হয় তখন তাদের রক্তে আলোড়ন সৃষ্টি হয়, যখন তারা মুসলিমদের কাফিরদের হাতে নির্যাতিত অপমানিত, লাঞ্ছিত হতে দেখে তখন তারা আল্লাহর পাকড়াওকে ভয় করে। তারা জিহাদ করতে চা কারন তারা উম্মাহর জন্য গীরাহ অনুভব করে। তারা জিহাদ করতে চায় কারন কাপুরুষতা থেকে আল্লাহ তাদের রক্ষা করেছেন।
.
হে অর্বাচীন প্রশ্নকারী! কিসের নেশায় মগ্ন হয়ে, কোন রঙ্গিন স্বপ্নে মজে, কাদের দ্বীনের অনুসরন করে আল্লাহর দ্বীনের বিকৃতি সাধনের চেষ্টা করছো? কোন রঙ্গিন স্বপ্নের লোভে তুমি নিজের মনমটো আল্লাহর কিতাবের ব্যাখ্যা করছো? মুসলিম যুবকদের আকরমন করছো? তাদের দ্বীনের প্রতি ভালোবাসাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছো? আর কোন রঙ্গিন স্বপ্নের মোহে তুমি মানুষকে বিভ্রান্ত করছো? কেন তুমি শুনছো এবং মানছো না? কেন তুমি দ্বীনের মধ্যে উদ্ভাবন করছো? কিসে তোমাকে বিচ্যুত করলো? কিসে তোমাকে আটকে রাখলো? তুমি কার পথের অনুসরণ করছো?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

3 × two =

Back to top button