প্রবন্ধ-নিবন্ধ

কেন নতুন জামাত তৈরি করতে হল কেন?

বাংলাদেশে জামাতে ইসলামীর মতো একটি মুসলিম জামাত থাকতে আপনারা কেন সেখানে যোগ না দিয়ে নতুন জামাত সৃষ্টি করছেন?

#প্রশ্ন

বাংলাদেশে জামাতে ইসলামী –র মতো একটি মুসলিম জামাত থাকতে আপনারা কেন সেখানে যোগ না দিয়ে নতুন জামাত সৃষ্টি করছেন?
[নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক] .
.
#উত্তর– আমাদের যে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে তা হল ইসলামের প্রতিটি পরিভাষার পেছনে একটা শরীয়াহগত বাস্তবতা আছে। শরীয়াহর প্রতিটি শব্দ দ্বারা একটি সুনির্দিষ্ট বাস্তবতাকে বোঝানো হয়। যদি সে বাস্তবতা কোন কিছুর ক্ষেত্রে
.
একথার অর্থ ঠিক যেমন কোন জামা’আ, এমনকি কোন ইমারাহও নিজেদের খিলাফাহ দাবি করলেই তারা শারীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে খিলাফাহ হয়ে যায় না [যেমন “আইএস”]। তেমনি ভাবে কোন জামা’আ নিজেদের “ইসলামী” দাবি করলেও তারা অটোম্যাটিক ভাবে ইসলামী জামা’আ বলে গন্য হবে না।
.
বরং উভয় ক্ষেত্রেই তাদের দাবিকে শারীয়াহর আলোকে বিচার করতে হবেঙ্গেবং যতোক্ষন পর্যন্ত শার’ঈ শর্তসমূহ পূরন না হবে ততোক্ষন তাদের দাবি গ্রহণযোগ্য হবে না। বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর ব্যাপারে যেকোন আলোচনাতে এ বিষয়টি বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
.
অন্যান্য সকল ইসলামী দলের মতোই ইসলামী ছাত্র শিবির এবং জামাতে ইসলামীর মধ্যে ভালো দিক আছে, কিন্তু একটি স্বতন্ত্র জামা’আ হিসেবে তারা একটি হক্বপন্থী জামা’আর কিংবা ইসলামী জামা’আর শর্ত পুর্ণ করে কি না, তা আমাদের দেখতে হবে ক্বুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে। আর ক্বুর’আন ও সুন্নাহর আলোকে আমরা দেখতে পাই বেশ কিছু কারনে জামাতে ইসলামীকে একটি হক্বপন্থী ইসলামী জামা’আ বলা যায় না।
.
প্রথমত পৃথিবীতে ইসলাম কায়েমের মানহাজ বা পদ্ধতিগত দিক দিয়ে বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী, শরীয়াহর অনুসরণের বদলে পশ্চিমা গণতন্ত্রের নীতির অনুসরণ করে। গণতন্ত্রের প্রবক্তাদের দেয়া সংজ্ঞানুযায়ী এবং গনতন্ত্রের প্রয়োগের বাস্তবতা থেকে প্রমাণিত গণতন্ত্র এমন একটি আদর্শ যা শিরক ও কুফরের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠা। ইসলামীর শরীয়াহর দৃষ্টিকোণ থেকে গণতন্ত্রের একটি পর্যালোচনার জন্য দেখুন –

ইসলামের দৃষ্টিতে গনতন্ত্রের সংশয় সমূহ

https://www.pdf-archive.com/2014/05/03/islam-er-drishtite-gonotontrer-songsoy-somuho/islam-er-drishtite-gonotontrer-songsoy-somuho.pdf

গণতন্ত্র একটি জীবনব্যবস্থা – https://www.pdf-archive.com/2014/05/03/gonotontro-ekti-jibon-bebosta/gonotontro-ekti-jibon-bebosta.pdf

.
.
যদি কোন জামা’আ ইসলাম কায়েমের প্রশ্নেই শরীয়াহর অনুসরণের বদলে কাফিরদের সৃষ্ট নিয়মের অনুসরণ করে, যদি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর চাইতে তাদের কাছে আব্রাহাম লিঙ্কনের মানহাজ অধিকতর পছন্দ হয় তবে কিভাবে মানহাজের বা পদ্ধতিগত দিকে দিয়ে সে জামা’আকে ইসলামী জামা’আ বলা যাবে, যদিও সে জামা’আর সদস্যরা মুসলিম হয়?
.
.
এ বিষয়ে হাকিম আল উম্মাহ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ বলেন –
ড. আইমান আয-যাওয়াহিরী বলেন-
‘দুটি বৈশিষ্ট্যের উপস্থিতি ব্যাতীত কোনো ইসলামি আন্দোলনকে আমরা ইসলামি মনে করি না। এ দুটি বৈশিষ্ট্য হল, শারিয়াহ্কে আইনের উৎস হিসেবে গ্রহণ করার আগ্রহ এবং সবধরনের সংবিধান, আইন ও সংখ্যাগরিষ্ঠের খেয়ালখুশির ওপরে শারিয়াহ্কে স্থান দেয়া। বিভিন্ন জায়গায় ক্রমান্বয়ে দুর্বল হওয়ার পর প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সামরিক পরাজয়ের মাধ্যমে খিলাফাহ্র বিলুপ্তি – আমাদের সামরিক পরাজয়ের পাশাপাশি মানসিক ভাবেও পরাজিত করে গিয়েছে। এ পরাজয় আমাদের মধ্যে অনেককে বাধ্য করেছে শারিয়াহ্র শত্রুদের তৈরি পদ্ধতির মাধ্যমে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার অনুসন্ধানে। ফলে আমাদের মধ্যে অনেকে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে শারিয়াহ্-বহির্ভূত উপায়ে। তারা অধিকাংশের খেয়ালখুশিকে সার্বভৌমত্ব দেয়ার মাধ্যমে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। এ হল ঠিক ঐ ব্যক্তির মতো অবস্থা- যে কিনা খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করার মাধ্যমে মদ নিষিদ্ধ করতে চায়! এটি কি আদৌ কোনো যৌক্তিক উপায় হতে পারে?! [“নিরর্থক ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে স্বাধীনতা” – আস সাহাব] .
শায়খের এ বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় উঠে এসেছে আর তা হল পৃথীবির বুকে আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা বা শারীয়াহ দ্বারা শাসন করা। যেকোন ইসলামি জামা’আ ইসলামী বলে গন্য হবার জন্য আবশ্যক শর্ত হলে শারীয়াহ দ্বারা শাসন করা। কিন্তু জামাতে ইসলামী এবং মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুডের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি তারা ক্ষমতায় যখন গেছে (বাংলাদেশস আংশিকভাবে এবং মিশরে পূর্ণভাবে) তখন তারা মানবরচিত আইন দিয়েই শাসন করেছে। শুধু তাই না তারা আল্লাহর আইনের পরিবর্তে নিজেরা সংসদে প্রবেশ করে আইন প্রণয়ন করেছে। অথচ এগুলো দ্বীন ইসলামের এমন বিষয় যা নিয়ে বিন্দুমাত্র আপোষের সুযোগ নেই।

এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন –

https://www.pdf-archive.com/2014/02/26/prithibir-buke-allahr-shason/prithibir-buke-allahr-shason.pdf

.
.
তৃতীয়ত, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মুমিনদের বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে বলেছেন তারা কাফিরদের প্রতি কঠোর এবং মু’মিনদের প্রতি কোমল [সূরা মায়িদা, ৫৪ সহ আরো অন্যান্য আয়াতে]। অথচ বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী মধ্যে এর উল্টোটাই দেখা যায়। হরতাল ও অবরোধের সময় জামাতে ইসলামি সগর্বে সাধারন মানুষের গাড়ি ভাংচুর করে এবং এটাকে “জিহাদ” বলে, কিন্তু অন্যদিকে কাফিরদের মাথা অ্যামেরিকান দূতাবাসের গাড়ি ভাঙ্গার জন্য তারা নতমস্তকে দুঃক্ষপ্রকাশ করে। তারা অ্যামেরিকাতে ৫০ জন কাফির সমকামীর হত্যা নিয়ে নিন্দা প্রকাশ করে কিন্তু একইদিনে সিরিয়া ও ইরাকে ১৫০ এর বেশি মুসলিমদের মৃত্যু নিয়ে তারা নিন্দা করে না। গুজরাটের কসাই নরেন্দ্র মোদিকে তারা অভিনন্দন জানায় কিন্তু কাশ্মীর, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেনের মুজাহিদিনের জন্য একটি কথা তারা উচ্চারন করে না। বরং জঙ্গিবাদ দমনে পশ্চিমকে সহায়তা দেবার অঙ্গীকার করে। তারা বাংলাদেশে অবস্থানকারী কাফিরদের জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়, কিন্তু অবরোধে মুসলিমদের যানবাহনে পেট্রোল বোমা ছুড়তে তাদের সমস্যা হয় না।
.
.
চতুর্থত, আল ওয়ালা ওয়াল বারা, অর্থাৎ আল্লাহর খাতিরে ভালবাসা এবং আল্লাহর খাতিরে বিদ্বেষ পোষণের ব্যাপারে তাদের মধ্যে দেখা যায় চরম শৈথিল্য। বরং আমরা দেখি তারা দলের খাতিরে ভালোবাসে এবং দলের খাতিরে বিদ্বেষ পোষণ করে। সাফল্যের খাতিরে ভালোবাসে আবার সাফল্যের খাতিরে বিদ্বেষ পোষণ করে। একসময় শি’আ রাফিদ্বা ইরানের বিপ্লবকে নিজেদের আদর্শ হিসেবে নেয়, আবার অন্যসময় দ্বীনকে বিক্রি করা তিউনিশিয়ার আন-নাহদাকে নিজেদের আদর্শ হিসেবে নেয়, আবার অনেক সময় ন্যাটো সদস্য, ইস্রাইলের সামরিক মিত্র টার্কিকে নিজেদের আদর্শ দাবি করে। কখনো নারী নেতৃত্ব হারাম বলে আবার বার বার নারীদের অধীনে “জামা’আবদ্ধ হয়।। অথচ আদর্শ হিসেবে রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবা রাঃ দের জামা’আ যথেষ্ট।
.
জামাতে ইসলামী সদস্যদের মধ্যে প্রচন্ড আওয়ামী বিদ্বেষ দেখা যায়, কিন্তু যখন বাংলাদেশে কাফিরদের হয়ে সমকামীতার প্রচার ও প্রসারের জন্য কাজ করা অ্যামেরিকান দূতাবাস কর্মী জুলহাজ মান্নান মারা যায় তখন জামাতে ইসলামী সদস্যদের বলতে শোনা যায় আওয়ামীদের চাইতে জঙ্গিরা বড় শত্রু। মিশরেও মুরসির ইখওয়ানুল মুসলিমীন ক্ষমতা পেয়ে সিনাইয়ের মুজাহিদিনের উপর আক্রমন করেছে কারন এ মুজাহিদিনরা ইস্রাইলের গ্যাস পাইপলাইনের উপর হামলা করেছিলেন। একইভাবে তারা ইস্রাইলের স্বার্থে গাযার সাথে রাফা সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছিল, অথচ গাযার মানুষ তখন ইহুদীদের হামলার শিকার হচ্ছিল। এভাবে ইখওয়ান ক্ষমতা পেয়ে ইস্রাইলের সীমান্তরক্ষার দায়িত্ব পালন করেছে, এবং ক্ষমতার জন্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
.
জামাতে ইসলামীর ক্ষেত্রেও একইরকম আদর্শ এবং একইরকম অবস্থান দেখা যায়। একইভাবে কাফিরদের সাথে সুর মিলিয়ে তারা বৈশ্বিক জঙ্গিবাদ দমনের কথা বলে। এবং যখন তারা ক্ষমতায় ছিল তখন এ অজুহাতেই যারা বাংলাদেশে শারীয়াহ প্রতিষ্ঠার দাবি করেছিল জামাত সেক্যুলার আইন অনুযায়ী তাদের হত্যা করায় অংশগ্রহণ করে। এমনকি নিজামী মৃত্যুর আগে বক্তব্য বলে জঙ্গিবাদ দমনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হবে? অথচ এটা পরিষ্কার পশ্চিমা মিডিয়ার কাছে জিহাদই জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদই জিহাদ।
.
অথচ জামাতের পক্ষ থেকে কখনো বলা হয় না জিহাদ বলতে তারা কি বোঝে আর জঙ্গিবাদ বলতে তারা কি বোঝে? আর তারা কি পশ্চিমের গণতন্ত্রে আদর্শের মত পশ্চিমের বেধে দেওয়ায় জঙ্গিবাদের সংজ্ঞাও গ্রহণ করেছে? কোন ইসলামী জামাত কি তার মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সহায়তা করতে পারে? কোন ইসলামী জামা’আ কি মুসলিমদের পরিবর্তে ইহুদী ও নাসারাদের বন্ধু হিসেবে গ্রহন করতে পারে? কোন ইসলামী জামা’আ কি দ্বীনের অপরিবর্তনীয় বিষয় ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারে? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
“হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।” [আল-মায়িদা, ৫১] .
পঞ্চমত, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামীর মাঝে তাওহীদের সাথে এবং সার্বিকভাবে দ্বীন ইসলামের ব্যাপারে আপোষকামীতা পরিলক্ষিত হয় ব্যক্তিপর্যায়ে এবং সাংগঠনিক ভাবে। ব্যাক্তি পর্যায়ে আমরা দেখি লেবাসগত এবং আচরণগত বিভিন্ন বিশয়ে সুন্নাহ ওয়াজিব বিষয়ের ব্যাপারে শিথিলতা। সাংগঠনিক পর্যায়ে আমরা দেখতে পাই তারা সুস্পষ্ট বিদ’আ-কুফর এবং শিরকের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকে এবং শুভেচ্ছা জানায়। যেমন ক্রিসমাস, পূজা ইত্যাদি। নারী নেতৃত্বকে মেনে নেয়। ইনিয় বিনিয়ে বাক-স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার পক্ষে তর্ক করে।
.
অথচ এধরনে আচরন পশ্চিমা আদর্শে স্বাভাবিক হলেও ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণভাবে এগুল অগ্রহনযোগ্য। এভাবে সাংগঠনিক ভাবে দ্বীন কায়েমের মানহাজ থেকে শুরু করে কর্মীদের চকচকে শেইভড গাল, এবং টাকনুর নিচে প্যান্ট পর্যন্ত, আপাদমস্তক ভাবে জামাতে ইসলামী পশ্চিমাদের সৃষ্ট আদর্শ এবং ধারার অনুসরণ করে, অথচ তারাই অন্যদেরকে বলে পশ্চিমাদের সৃষ্টি!
.
.
ষষ্ঠত, দ্বীনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভুল তাউয়ীল বা ব্যাখ্যা করা বর্তমানে জামাতের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাড়িয়েছে। গণতন্ত্র থেকে শুরু করে, জিহাদ-ক্বিতাল, সুদ, শূরা, আল ওয়ালা ওয়াল বারাসহ উল্লেখিত সব বিষয়েই বিভিন্ন জোড়াতালি ব্যাখ্যা দিয়ে বিভিন্ন পশ্চিমা কুফরি ধারনা ও পদ্ধতির ইসলামীকরন করাকে জামাতে ইসলামী তাদের নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছে। অথচ এটি সাহাবাদের রাঃ অবস্থান ছিল না।
.
.
সপ্তমত, অবাস্তব পরিকল্পনা। জামাতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলিমিনের প্রথমে অবস্থান ছিল গণতন্ত্রে অংশগ্রহণ না করা। পরে তারা এ সিদ্ধান্ত পাল্টায় বাস্তবতা এবং পর্যায়ক্রমে গনতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা ও শরীয়াহ কায়েমের দোহাই দিয়ে। কিন্তু যখন তারা ক্ষমতায় আসলো তখন তারা তার কিছুই করতে পারলো না। আবার সিসি যখন তাদের হত্যা করা শুরু করলো তখন নেতা কর্মিদের কোন কার্যকর দিকনির্দেশনা তারা দিতে পারলো না।
.
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশেও তাদের একই অবস্থা। দেশের চরম ইসলামবিদ্বেষি সরকারের বিরোধিতা করার চেয়ে, ইসলামের পক্ষে অবস্থান নেয়ার চাইতে নিজেদের নেতাদের রক্ষা করাই তাদের কাছে অধিক গুরুত্বপূর্ন। কিন্তু সেক্ষেত্রেও তারা চরম ভাবে ব্যার্থ। এবং নিজেদের নেতাকর্মীদের জন্য কোন সঠিক, সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা তাদের নেই। দেশে ক্রমাগত ইসলামের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু জামাতে ইসলামীর এসব ব্যাপারে বলার বা করার কিছুই নেই। অথচ তারা দেশের সবচেয়ে বড় “ইসলামী” দল। এভাবে ঐতিহাসিকভাবে বারবার জামাত ইসলামী ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এবং কৌশলগতভাবে চরম ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে। ৭১ এ তারা যালিম পাকিস্তানী বাহিনীর বিরুদ্ধে মাযলুম জনগনের অনুভুতিকে বুঝতে ব্যার্থ হয়েছে এবং এখনো তারা মুশরিক ভারতের বিরুদ্ধে জনগনের অনুভুতি অনুধাবনে ব্যার্থ হচ্ছে।
.
প্রকৃত পক্ষে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জামাতে ইসলামীর শরীয়াহ কায়েম, নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষা এবং হারানো মুসলিম ভুমি উদ্ধারের কোন স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেই। তাদের সমস্ত পরিকল্পনা সরকার ক্ষমতায় যাবার উপর কেন্দ্রীভূত।
.
এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য দেখুন – https://dawahilallah.in/archive/index.php/t-1695.html
.
মিশরের উদাহরন থেকে প্রমাণিত হয় যে কোন মতে সরকার ক্ষমতায় যেতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ইসলামের পক্ষে কিছু করা ইখওয়ান বা জামাতের পক্ষে সম্ভব হবে না। মুরসি পশ্চিমের বিপক্ষে, ইস্রাইলের বিপক্ষে কোন পদক্ষেপই নেয় নি, মুসলিম উম্মাহ নির্যাতিতদের রক্ষা, শারীয়াহ কায়েমের জন্য কোন পদক্ষেপই নেয় নি, তথাপি পশ্চিমারা তাকে ক্ষমতায় থাকতে দেয় নি। যখন প্রয়োজন হয়েছে পশ্চিমারা ঠিকই তাদের ছুড়ে ফেলেছে।
দেখুনঃ শুকনো খেজুরের তৈরি গণতন্ত্রের মূর্তি –

https://www.pdf-archive.com/2014/02/28/shukno-khejur-diye-toiri-gonotontrer-murti/shukno-khejur-diye-toiri-gonotontrer-murti.pdf

.
অথচ ইখওয়ান ও জামাত এখন পশ্চিমাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে, তাদের ভাষায় কথা বলে, তাদের নিয়মে খেলে, তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করে ক্ষমতায় আসারা স্বপ্ন দেখছে। অথচ মু’মিন কখনো এক গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না। এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন –
.
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই। [আল-বাক্বারাহ, ১২০] .
.
অষ্টমত, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর ব্যাপারে জামাতের অবস্থান তাদের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলার আরেকটি কারন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে একাধিক জায়গায় বলেছেন – মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য হল আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা, এবং মু’মিন হল তারা যারা আল্লাহর রাস্তায় মারে ও মরে। এছাড়া সুস্পষ্ট হাদীস থেকে আমরা জানি জিহাদ চলবে ও কিয়ামত পর্যন্ত এবং এ উম্মাহর মধ্যে একটি দল সর্বদা বিদ্যমান থাকবে যারা আল্লাহর রাস্তায় ক্বিতাল করবে, এবং এদলটি হল সাহায্যপ্রাপ্ত দল বা তাইফাতুল মানসুরা।
.
সালামাহ বিন নুফাইল (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,

তারা মিথ্যা বলছে! জিহাদ তো কেবল শুরু হয়েছে, আমার উম্মাতের একটি দল আল্লাহর পথে জিহাদ করতেই থাকবে। বরং আল্লাহ মানুষের মধ্য থেকে কারো কারো হৃদয়কে বক্র করে দিবেন যাতে তারা তাদের বিরদ্ধে লড়াই করতে পারে এবং এবং এই কিতাল থেকে তাদেরকে তিনি রিযক্ব দান করবেন যতক্ষণ না ক্বিয়ামাত কায়েম হয় এবং আল্লাহ্‌র ওয়াদা এসে যায়। ঘোড়ার কপালে ক্বিয়ামাত পর্যন্ত রহমত থাকবে (সুনান নাসায়ি, হাদিস নং ৩৫৬১ – সাহিহ)
.
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
এই দ্বীন সর্বদা কায়েম থাকবে। মুসলমানের একটি দল এই দ্বীনের সংরক্ষণের জন্য কিয়ামাত পর্যন্ত কিতাল (يُقَاتِلُ যুদ্ধ) করতে থাকবে। (সাহিহ মুসলিম; কিতাবুল ইমারাহ অধ্যায়, হাদিস নং ৪৭১৭, ই.ফা. ৪৮০০)
.
কিন্তু বিশ্বে এ মূহুর্তে ঠিক কোন জায়গায় জামাতে ইসলামী কিংবা ইখওয়ানুল মুসলিমীন জিহাদ করছে? বিশ্ব কোন জায়গায় তারা সুরা নিসার ৭৫ নাম্বার আয়াতের উপর আমল করেছে? বরং বিভিন্ন জায়গাতে তারা মুজাহিদিনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এবং মিশরের তাগুত সিসি যখন ইখওয়ানের ভাইবোনদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছিল তখন তাদের মুখপাত্র বলেছিল “গণতান্ত্রিক উপায়ে শান্তিপুর্ণ প্রতিবাদই আমাদের জিহাদ!” বাংলাদেশেও আমরা জামাত-শিবিরের অনেক ভাইদের কাছ থেকে শুনি হরতাল-অবরোধ পিকেটিং-ই নাকি জিহাদ! অথচ হাদীসে সরাসরি ক্বিতাল শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে।
.
এছাড়া জামাত ও ইখওয়ানের মত দলগুলো শক্তিহীনতার দোহাই দিয়ে জিহাদ থেকে বিরত থাকে বা বলে এখন জিহাদ নেই। অথচ হাদীসের বক্তব্যের সাথে একথা সাংঘর্ষিক। অন্যদিকে প্রায় ৭ দশক ধরে জামাত যা পারে নি, জিহাদের মাধ্যমে কয়েক দশকের মধ্যে আফগানিস্তান, মালি, সোমালিয়া, ইয়েমেন, সিরিয়া সহ একাধিক জায়গায় মুজাহিদিন তা করে দেখিয়েছেন। আর তা হল দ্বীনের সাথে আপোষ না করে জিহাদের মাধ্যমে নির্যাতিত মুসলিমদের রক্ষা এবং ইসলাম কায়েম।
.
নিশ্চিত ভাবেই জামাতে ইসলামী তাইফাতুল মানসুরা না বরং জিহাদ ফরয হয়ে যাওয়ার পরও তারা জিহাদ থেকে বিরত থাকা একটি দল। এবং জামাতে ইসলামীর পদ্ধতির আবশ্যক অংশ হল জিহাদ থেকে বিরত থাকা। বিশেষ ভাবে যে দুটি বিষয়কে আল্লাহ ইমান ও নিফাক্বের মধ্যে পার্থক্যকারী হিসেবে ক্বুর’আনে উল্লেখ করেছেন সে দুটি হল জিহাদ (আত-তাওবাহ) এবং আল্লাহর আইন দিয়ে শাসন (আন-নিসা)। সুবহান’আল্লাহ আমরা দেখতে পাই এ দুটি বিষয়েই জামাতে ইসলামি সহ মূল ধারার অন্যান্য সকল ইসলামী দলের সমস্যা।
.
.
প্রশ্ন হল এতো কিছুর পরও কিসের ভিত্তিতে জামাতে ইসলামীকে – হক্বপন্থী ইসলামী জামা’আ বলা হবে? যখন তারা মানহাজ থেকে শুরু করে দ্বীনের আবশ্যক ও বুনিয়াদি নানা বিষয়ে আপোষ করেছে ও করছে? এবং এতো কিছুর পরও চরম ভাবে ব্যার্থ হচ্ছে? কেন আমরা এ জামা’আর সাথে যোগ দিবো যখন স্পষ্ট ভাবেই রাসূলুল্লাহর ﷺ হাদীস অনুয়ায়ীই হক্ব জামা’আ বিদ্যমান? কেন আমরা এ জামা’আতে যোগ দিবো যখন মু’মিনদের সকল বৈশিষ্ট্য এ জামা’আর মধ্যে বিদ্যমান না?
.
.
যারা হকের উপর আছেন কুরআনে তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে –
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
হে মুমিনগণ, তোমাদের মধ্যে থেকে তারা যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায় তাহলে অচিরেই আল্লাহ এক এমন সম্প্রদায় সৃষ্টি করবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারা তাঁকে ভালবাসবে। তারা ঈমানদারদের প্রতি হবে বিনম্র এবং কাফেরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী। (সুরা মাইদাঃ ৫৪)

.
.
কেন এ মাপকাঠিতে সঠিক দলকে খুজে না নিয়ে আমরা জামাতে ইসলামীকে সঠিক দল গণ্য করবো, যখন ইসলামী জামা’আ হিসেবে গন্য হবার শার’ই শর্তসমূহ পূরনে জামাতে ইসলামী ব্যার্থ? কেন আমরা ওই দলে যোগ দেবো না যারা আল্লাহর দ্বীনের সাথে আপোষ করে না, যারা বাংলার যমিনে রাসূলুল্লাহর ﷺ অবমাননাকারীদের তাদের উচিত শাস্তি দেয়, যারা মু’মিনদের প্রতি কোমল ও কাফিরদের প্রতি কঠোর, যারা মুসলিমদের আহবান জানায় তাওহীদ ও জিহাদের দিকে, যারা মুক্ত শিথিলতা ও চরমপন্থা থেকে, যারা সত্যিকার ভাবে অনুসরন করে মিল্লাতু ইব্রাহীমের এবং যারা নিন্দাকারীর নিন্দার পরোয়া করে না?

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

four × 3 =

Back to top button