আরবআল-ফজর বাংলাইয়েমেনইলম ও আত্মশুদ্ধিনির্বাচিতবই ও রিসালাহমিডিয়াশাইখ ইবরাহীম আর রুবাইশ রহিমাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

বই || জিহাদে নারীদের অবদান -শাইখ ইবরাহিম আর রুবাইশ রহঃ

জিহাদে নারীদের অবদান

শাইখ ইবরাহিম আর রুবাইশ

banner-11.jpg

সরাসরি পড়ুন

https://tinyurl.com/alfajr6

পিডিএফ ডাউনলোড করুন

https://banglafiles.net/index.php/s/EaNEci7c5C3Dijn

http://www.mediafire.com/file/0dbe9hbj0e9fa1g/6_Women_In_Jihad.pdf

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন

https://banglafiles.net/index.php/s/C6PeygoqT3kYPkG

https://archive.org/download/jihade-nariri-vomika_202107/jihade%20nariri%20vomika.docx

************************

কোনো ফাইলের ডাউনলোড লিঙ্ক না পেলে আর্কাইভে লগ-ইন করুন। ইনশা’আল্লাহ ডাউনলোড করতে পারবেন। আর্কাইভ আইডি না থাকলে এই আই ডি/পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন কারণ অধিকাংশ পোস্টের কন্টেন্টই আর্কাইভ থেকে ডাউনলোড করতে গেলে Item not available দেখায়)

লগ ইন আই ডি – k_sumon17@yahoo.com
পাসওয়ার্ড – $##$ghjk1234

জিহাদে নারীদের ভূমিকা

শাইখ সুলাইমান আর-রুবাইশ (রহিমাহুল্লাহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সমস্ত নবী ও রাসূলদের শ্রেষ্ঠ, আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর, তার পরিবারবর্গ ও সাহাবাদের উপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা যথাযথভাবে তাদের অনুসরণ করবে তাদের উপর।

আম্মা বাদঃ আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিজীবকে সৃষ্টি করেছেন। আর তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র ইবাদতের জন্য। তাদের অস্তিত্ব দান করেছেন শুধুমাত্র ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অভিমুখী হওয়ার জন্য।

তাই মানুষকে ঘরের ব্যবস্থাপনা করা, সম্পদ ও স্ত্রী সন্তানদের প্রাচুর্য অর্জন করার জন্য সৃষ্টি করা হয়নি। বরং তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর অভিমুখী হওয়ার জন্য। আল্লাহ তা’আলা তাদের জন্য দুনিয়ার ভোগ-সন্তার, স্বাদ ও আরাম-আয়েশের নির্দিষ্ট একটা পরিমাণ বৈধ করেছেন। যতটুকু তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত থেকে অমনোযোগী করে দিবে না।

মানুষের মধ্যে কেউ কেউ এই হিকমতটি বুঝেছে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ ফলে সে আল্লাহর ইবাদতে ব্যস্ত হয়েছে। আর দুনিয়া থেকে সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করেছে। যেমনটা আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

“আর তোমার দুনিয়ার অংশও ভুলে যেও না।”

আর কিছু কিছু মানুষ সেই হিকমতকে ভুলে গেছে, যার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছিল৷ ফলে তারা দুনিয়াকে তাদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বানিয়েছে। আল্লাহর আদেশ ছেড়ে তাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে এবং তাদের কাছে সত্ত্বাগতভাবে দুনিয়াই উদ্দেশ্য হয়ে গেছে।

ফলে তারা আল্লাহর ইবাদত ছেড়ে দেয়, তার আদেশ বাদ দিয়ে দেয় এবং দুনিয়া ও তার যতটুকু আল্লাহ তাদের জন্য বৈধ করেছেন, তার মধ্যে ব্যস্ত হয়ে আল্লাহর দ্বীন ছেড়ে দেয়। এভাবে দুনিয়াকেই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে উদ্দেশ্য বানিয়ে নেয়।

দুনিয়ার দোহাই দিয়ে ইবাদত ছেড়ে দেওয়া হয়। জিহাদ ছেড়ে দেওয়া হয় দেশের ভালবাসার কারণে, জিহাদ ছেড়ে দেওয়া হয় স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে থাকার জন্য, জিহাদ ছেড়ে দেওয়া হয় রিযিক সঞ্চয় করার জন্য, জিহাদ ছেড়ে দেওয়া হয় দুনিয়ার স্বাদ-আয়েশ ভোগ করার জন্য।

আমরা যদি সেই বিষয়টি বুঝতাম, আল্লাহ আমাদেরকে যার জন্য সৃষ্টি করেছেন, তাহলে আমরা আল্লাহর আদেশের জন্য এ সকল জিনিস ছেড়ে দিতে পারতাম এবং আমাদের মন দুনিয়ার যে সমস্ত স্বাদ ও আরামের দিকে আমাদেরকে আহ্বান করে, তার উপর আল্লাহর হুকুমকে প্রাধান্য দিতে পারতাম। এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:

“তাই পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে এবং তোমাদেরকে যেন

প্রতারিত না করে মহা প্রতারক ।”

একজন শ্রেষ্ঠ ও জ্ঞানী মুমিন, তথা যে ইবাদত ও সেই হিকমত বুঝে, যার জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে চিন্তা করে কিভাবে সে তার প্রতিটি দিনকে, তার সমগ্র জীবনকে এবং তার সমগ্র দুনিয়াকে আল্লাহর সন্তুষ্ট অন্বেষণের জন্য নিয়োজিত করতে পারে।

যেমনিভাবে দুনিয়াদাররা সকাল হলেই রিযিক সঞ্চয় ও ব্যবস্থা করা এবং অধিক পরিমাণ দিনার ও দিরহাম জমা করার মধ্যে লিপ্ত হয়ে যায় এবং দুনিয়া অন্বেষণে প্রচেষ্টা চালায়, তেমনিভাবে আখেরাত অন্বেষণকারীগণ- যারা আল্লাহর নিকট যা আছে তা কামনা করে এবং সেই হিকমত বুঝে, যার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে, তাদের উপর আবশ্যক হল: তারা তাদের প্রতিটি দিনে, প্রতিটি ঘন্টায় ও প্রতিটি সেকেন্ডে চিন্তা করবে যে, সে কিভাবে তার সমস্ত দিনগুলো এবং সমস্ত জীবনটা আল্লাহর ইবাদতে কাটাতে পারে এবং কোনটা আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার জন্য সবচেয়ে সহজ পথ। যাতে সেই হিকমায় উত্তীণ হতে পারে, যার জন্য তাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে।

যে লক্ষের দিকে তারা দৌড়াবে, তা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা ও আখিরাতে তার নিকট যা আছে তা লাভ করা।

এজন্য মুমিন বান্দার উপর আবশ্যক হল এমন কোন দুনিয়াবী কাজে লিগু না হওয়া, যা আল্লাহ থেকে অমনোযোগী করে দেয়। আর সেই ইবাদতের ভার বহন করা, যার প্রতি আল্লাহ আদেশ করেছেন, চাই তা যতই কষ্টকর ও বিপদসংকূল হোক না কেন।

নফসের উপর কঠিন ইবাদতসমূহে মধ্যে একটি হল আল্লাহর পথে জিহাদ। এটা কষ্টকর, আদম সন্তানের মনে অপছন্দনীয়। যেহেতু এর মধ্যে অনেক কষ্ট, বিপদ, ক্লান্তি ও কাঠিন্য রয়েছে, সম্পদ ও জীবনের কুরবানী রয়েছে, দেশের বিচ্ছেদ ও স্ত্রী-সন্তানদের ত্যাগ রয়েছে।

এ কারণে অনেক মুসলিম আখিরাতের উপর দুনিয়াকে প্রাধান্য দিয়ে এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । আমরা আল্লাহ তা’আলার নিকট এর থেকে মুক্তি ও নিরাপত্তা কামনা করছি।

এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন:

“তোমাদের উপর যুদ্ধ ফরজ করা হয়েছে। যদিও তা তোমাদের নিকট অপছন্দনীয়।”

কিন্তু আল্লাহ তা’আলা এর পরেই বলেছেন:

“হতে পারে কোন জিনিসকে তোমরা অপছন্দ করো, কিন্তু তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।”

তাই জিহাদ যদিও মানুষের মনে অপছন্দনীয়, কিন্তু এটাই কল্যাণকর ।

এটা কল্যাণকর, যেহেতু তাতে রয়েছে মহা প্রতিদান।

এটা কল্যাণকর, যেহেতু তাতে রয়েছে উচ্চ মর্যাদা ।

এটা কল্যাণকর, যেহেতু তাতে রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও গুনাহের মার্জনা।

এটা কল্যাণকর, যেহেতু তাতে রয়েছে আল্লাহর দ্বীনের সম্মান আর কুফরী দ্বীনের বিলুপ্তি, মুশরিকদের লাঞ্চনা আর মুমিনদের সম্মান। এতে রয়েছে তাদের ঐক্য এবং পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা।

যদি মুসলিম উম্মাহ জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর উপর একমত হত, তাহলে কখনোই মুসলিমদেরকে নিয়ে শক্ররা খেলা করতে পারত না। আর আজ আমরা মুসলিমদের জখমের অভিযোগ করতাম না, সেই হত্যাযজ্ঞের অভিযোগ করতাম না, যা ফিলিস্তিনে, ইরাকে, আফগানিস্তানে, চেচনিয়ায় ও অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি।

কিন্ত যখন মুসলমানগণ জিহাদ থেকে বিমুখতা অবলম্বন করল, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদের উপর তাদের শক্রদেরকে চাপিয়ে দিলেন। আর যে সম্প্রদায়ই জিহাদ পরিত্যাগ করে, তারাই লাঞ্ছিত হয়। যদি মুসলিমগণ আল্লাহর হুকুমকে আকড়ে ধরতো এবং আল্লাহর সম্মানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করত, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে দুনিয়ার কর্তৃত্ব প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিত করতেন আর জান্নাতের সর্বোচ্চস্থানে তাদের মর্যাদা উন্নীত করতেন।

কারণ আল্লাহ তা’আলা মুজাহিদদের জন্য এমন জিনিস প্রস্তুত করে রেখেছেন, যা অন্যদের জন্য প্রস্তুত করেননি।

যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: আল্লাহ তা’আলা মুজাহিদদের জন্য প্রস্তুত করেছেন একশ”টি মর্যাদার স্তর, যার একটি স্তরের সাথে আরেকটি স্তরের ব্যবধান হল আসমান-যমীনের ব্যবধানের সমান। সুউচ্চ মর্যাদা আল্লাহ তা’আলা প্রস্তুত করে রেখেছেন তার পথের মুজাহিদদের জন্য ।

চিন্তা করে দেখুন, যখন মুজাহিদদের জন্য এই মর্যাদা, তাহলে নারী মুজাহিদাদের কি হতে পারে? সেই নারীর কি মর্যাদা হতে পারে, যে জিহাদ করার ইচ্ছা করে! যে যুদ্ধ করতে চায়! যে ইন্তেশহাদী হামলা করতে চায়! যে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল্লার পথে নিজেকে কুরবানী করতে চায়!

তাদেরও কি এই মর্যাদা লাভ হবে, নাকি এটা শুধু পুরুষদের জন্য বিশেষ?

প্রথমে আমরা বলবো: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার অনুগ্রহ ব্যাপক, তার রহমত সব কিছুকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। তিনি তার কল্যাণ ও দয়াকে তার বান্দাদের জন্য বন্ধ করে রাখেননি ।

এর সমর্থনে রয়েছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস- “যে আল্লাহর নিকট সত্য দিলে শাহাদাত কামনা করে, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদায় পৌঁছে দেন, যদিও সে নিজের বিছানায় মারা যায়।”

যে আল্লাহর নিকট শাহাদাত কামনা করে, আর এ ব্যাপারে আন্তরিক হয়, আল্লাহ তাকে শহীদদের মর্যাদা দান করবেন। শর্ত হল এই শাহাদাত কামনার ক্ষেত্রে সে আন্তরিক হতে হবে।তাহলে যে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য কষ্ট, বিপদ, পরিশ্রম ইত্যাদির সম্মুখীন হবে, তার মর্যাদা কতটুকু হতে পারে?!

আর মুজাহিদা নারীদের এমন শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে, যা অন্য নারীদের নেই। কারণ যেহেতু আল্লাহ মুজাহিদের জন্য একশ’টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত করে রেখেছেন, আর যখন মুজাহিদ এই সকল স্তরসমূহে প্রবেশ করবে… যখন কোন মানুষ শহীদ হিসাবে নিহত হবে এবং সে জান্নাতের উচ্চন্তরে পৌঁছবে, সুউচ্চ ফেরদাউসে স্থান লাভ করবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তার সাথে তার স্ত্রীকেও এ সকল স্তরসমূহে পৌঁছে দিবেন, যদিও সে নিজস্বভাবে এর থেকে অনেক নিম্নস্তরে থাকে।

এই ব্যাপারেই আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

“আর যারা ইমান আনে, আর ইমানের ক্ষেত্রে তাদের বংশধররা তাদের অনুসরণ

করে, আমি তাদের সাথে তাদের বংশধরকে অন্তর্ভূক্ত করবো, আর এতে তাদের

সওয়াব থেকে কিছুও কমাবো না। প্রতিটি মানুষ নিজ আমলের সাথে আবদ্ধ।”

এটা আল্লাহ তা’আলার একটি রহমত, অনুগ্রহ, উদারতা ও মহান দান যে, কোন মানুষ যখন জান্নাতের কোন উচ্চস্তরে থাকবে, আর তার স্ত্রী, তার সন্তান বা তার পরিবার ও বংশধরের কেউ তার থেকে নিম্নস্তরে থাকবে, তখন আল্লাহ তাআলা নিম্নস্তরের ব্যক্তিকে উচ্চন্তরের ব্যক্তির স্তরে পৌঁছে দিবেন। আর তাদের নেকিও কিছুমাত্র কমাবেন না। আর এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তা দান করেন।

তাহলে মুজাহিদের স্ত্রীর এই মর্যাদা লাভ হবে! এমনকি যদি সে তাকে জিহাদের জন্য উদ্ধুদ্ধ নাও করে, তাকেএব্যাপারে সাহায্য নাও করে।

তাহলে সে (স্ত্রী) যদি তার সাহায্যকারী হয়, তাহলে কি মর্যাদা লাভ হতে পারে?!

অতএব আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে অধিক মর্যাদা ও বিনিময় দান করবেন।

এখানে আরেকটি বিষয় আছে, তা হল: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যে কোন নেককাজের দিকে আহ্বান করে, তাকেও এ সকল ব্যক্তিদের সমপরিমাণ বিনিময় দান করবেন, যারা কিয়ামত পর্যন্ত তার উপর আমল করবে। আর এর কারণে তাদের বিনিময়ে সামান্যও ঘাটতি করবেন না।

কল্যাণের দিকে আহ্বানকারীরও সেই পরিমাণ বিনিময় লাভ হবে, যা তার ডাকে সাড়াদানকারীর লাভ হয়। যেকোন কল্যাণের দিকে আহ্বানকারীর।

উদাহরণ স্বরূপ, যেমন কোন ব্যক্তি যদি কাউকে সদকা করার বা সালাতুদ দুহা পড়ার বা অন্য কোন ইবাদত করার আদেশ করে, তাহলে আল্লাহ তা’আলা এই আমলকারীর জন্যও তার আমলের সওয়াব লিখবেন, আবার যে তাকে আদেশ করেছে, ডেকেছে এবং এই কল্যাণের জন্য উদ্দুদ্ধ করেছে, তার জন্যও এ আমলকারীর সমপরিমাণ সওয়াব লিখবেন, শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগহ স্বরূপ।

এমনিভাবে কোন নারী তার স্বামীকে বা ভাইকে বা তার নিকটাত্মীয়কে বা অন্য কাউকে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য ডাকলো, অত:পর উক্ত ব্যক্তি তাতে সাড়া দিল, অথবা তাকে কোন যুদ্ধে অংশ গ্রহণের জন্য আহ্বান করল বা তাকে কোন ইস্তেশহাদী হামলা করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করল, অত:পর উক্ত ব্যক্তি তাতে সাড়া দিল এবং সে যাতে উদ্ধুদ্ধ করেছিল, তা পালন করল, তাহলে আল্লাহ তা’আলা তার জন্যও এ ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব লিখবেন।

এটাই এই হাদিসের উদ্দেশ্য । বান্দা যে নেক আমলের নিয়ত করে, যেটাকে আগ্রহ সহ পালন করতে চায় এবং যেটা দাওয়াতের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়, আল্লাহ তা’আলা তাকে তা পালন করার সওয়াব দান করেন।

ফলে অনেক সময় মানুষ জিহাদ করতে অক্ষম হয়, কিন্তু সে আল্লাহর নিকট দু’আ করে, মানুষকে এর উপর উদ্ধুদ্ধ করে, এর দিকে আহ্বান করে, ফলে সে যখন কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট আসবে, তখন তার নেকির পাল্লায় বহু সংখ্যক শহীদের ও বহু সংখ্যক জিহাদের সওয়াব লেখা হবে।

একারণে মুজাহিদা নারী যখন কিয়মাতের দিন আল্লাহর নিকট আসবে, তখন তার নেকির পাল্লায় এ সকল বাচ্চারাও থাকবে, যাদেরকে সে জিহাদের শিক্ষা দিয়ে প্রতিপালন করেছিল।

যখন অনেক মুসলিম এমন রয়েছে- আমরা আল্লাহর নিকট মুক্তি কামনা করছি, আল্লাহর নিকট দু’আ করি, আল্লাহ তাদেরকে হেদায়াত দান করুন এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দিন! – যারা তাদের সন্তানদেরকে খেলোয়ার, শিল্পী ও অভিনেতার আদর্শ অনসুরণের উপর বড় করে তোলে । তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল অবস্থা হল, যে দ্বীনি বিষয়াদী ভুলে শুধু তার দুনিয়ার পিছনে পড়ে থাকে।

কিন্তু মুজাহিদের স্ত্রী, যে তার পরিবারকে জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর আদর্শের উপর এবং আল্লাহর পথের মুজাহিদদের সাহায্য করার আদর্শের উপর প্রতিপালন করে এবং তাদের মধ্যে বপন করে জিহাদের বীজ, শাহাদাত ও শহীদদের মর্যাদার শিক্ষা এবং দ্বীনের সাহায্য করার শিক্ষা… যে নারী তার পরিবারবর্গকে এর উপর প্রতিপালন করবে, সে কিয়ামতের দিন এমতাবস্থায় তার প্রভুর সামনে আসবে যে, তার নেকির পাল্লায় তারা সকলে থাকবে এবং আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে একত্রিত করে দিবেন।

যদি সে তাদের থেকে উচ্চ মর্যাদার হয়, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে তার স্তরে পৌঁছে দিবেন। আর যদি তারা তার থেকে উচ্চ মর্যাদার হয়, তাহলে আল্লাহ তাকে তাদের স্তরে পৌঁছে দিবেন। যেমনটা আল্লাহর নিম্নোক্ত আয়াতে স্পষ্ট:

“যারা ইমান এনেছে এবং তাদের বংশধরও ইমানের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করেছে, আমি তাদের বংশধরকেও তাদের সাথে মিলিয়ে দিবো । আর এতে তাদের আমলের সওয়াব সামান্যও কমাবো না। প্রতিটি মানুষ নিজ আমলের সাথে আবদ্ধ।”

এমনিভাবে জিহাদের মহা সওয়াবের একটি হল, যেটা মুজাহিদা নারীদের জন্য একটি প্রশস্ত দরজা, তা হল: দু’আ।

মুজাহিদগণ তাদের যুদ্ধে কষ্ট করে, তাদের বের হওয়ার মধ্যে কষ্ট করে, শত্রুদের প্রতীক্ষায় বসে থাকার মধ্যে কষ্ট করে, কিন্তু তাদের সাথে খুব সামান্য অস্ত্র থাকে। কিন্তু তাদের সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সবচেয়ে ভয়ংকর অস্ত্র, যেটা আনতে শক্ররা অক্ষম এবং যা প্রতিটি বুঝমান মুসলিমের জন্যই সহজ; এমনকি লোলা, পরকালগামী বৃদ্ধ ও ক্ষীণ বৃদ্ধাদের জন্য সহজ, তা হল: দু’আ।

কারণ বান্দার মাঝে ও আল্লাহর মাঝে কোন পর্দা বা আড়াল নেই। প্রতিটি বান্দাই পারে রাতের শেষ তৃতীয়াংশে জাগ্রত হতে, আল্লাহর সামনে আপ্রাণভাবে প্রার্থনা করতে, কাকুতি মিনতি করতে, তার সামনে ভেঙ্গে পড়তে এবং তার সামনে বিগলিত হতে, যেন তিনি মুজাহিদদেরকে সাহায্য করেন, তাদেরকে বিজয় দান করেন এবং তাদেরকে ক্ষমা করে দেন।

কারণ মুজাহিদগণ যে সকল অস্ত্র ব্যবহার করে, তার মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় অস্ত্র। কোন পুরুষ বা নারী যেন নিজেকে তুচ্ছ মনে না করে, কারণ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা লঙ্জাশীল সম্মানিত। যখন বান্দা তার নিকট দু’আর হাত তুলে, আল্লাহ তা’আলা তাকে ব্যর্থ করতে ও খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা পান।

প্রয়োজন শুধু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার দিকে মনোযোগী হওয়া, কাকুতি মিনতি করা, দীর্ঘ সিজদা করা এবং আল্লাহর নিকট বিনীতভাবে প্রার্থনা করা। তার সুন্দর নামসমূহ ও সুউচ্চ গুণাবলী উল্লেখ করে।

বেশি বেশ দু’আ করা। কারণ বান্দাকে এই দু’আর জন্যও সওয়াব দেওয়া হবে। এমনকি যদি দু’আটি কবুল নাও হয়, তথাপি আল্লাহ এর বিনিময়ে বান্দাকে সওয়াব দিবেন। মুজাহিদা স্ত্রীদের থেকে যেটা কাম্য, তা হচ্ছে আনুগত্য ও নেক আমল। আর মুজাহিদের স্ত্রীদের জন্য আল্লাহ বিপদে ও পরিশ্রমে তাদের সঙ্গ দিতে পারে।

কারণ এই যামানার একজন মুজাহিদের জীবন সেই যামানার একজন মুজাহিদের জীবনের মত নয়। কারণ বর্তমানে মুজাহিদগণ ও তাদের স্ত্রীগণ এমন বিপদাপদের সম্মুখীন হন, যা পূর্ববর্তী যামানার মুজাহিদগণ ও তাদের স্ত্রীগণকে সহ্য করতে হত না।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যামানায় মুজাহিদগণ তাদের ঘর-বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানদের সাথে, কৃষিক্ষেত্র, দোকান, বাজার ইত্যাদির মাঝেই থাকতেন। অত:পর যখন কোন আহ্বানকারী যুদ্ধের জন্য আহ্বান করত, তখন যুদ্ধে বের হয়ে পড়তেন, এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ, একমাস বা তার চেয়ে কম-বেশ সময়ের জন্য। অত:পর আবার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতেন।

পক্ষান্তরে বর্তমান যামানায় যখন কোন মুজাহিদ জিহাদের পথ অবলম্বন করে, তার বিরুদ্ধে পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে, দুনিয়ার সমস্ত শক্তিগুলো ও তাদের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে যুদ্ধ করা হয়। সে হয়ে যায় বিতাড়িত, নির্বাসিত। তার জন্য সকল কাজ ও চাকরির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তাকে বিতাড়িত করা হয়, নির্বাসন দেওয়া হয়, শাস্তি দেওয়া হয়। তার উপর সর্বপ্রকার বিপদ ও কষ্ট অবধারিত হয়ে যায়। অনেক সময় দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয়, অনেক সময় স্ত্রী-সন্তানদের থেকে দূরে থাকতে বাধ্য করা হয়।

পিঠ সোজা করার মত রিযিক পায় না। এই পরিমাণ অর্থকড়ি পায় না, যার দ্বারা তার নিজের ও পরিবারবর্গের খরচ চালাবে। উপযুক্ত জায়গা, উপযুক্ত আশ্রয় পায় না। এই সকল বিপদ আপদ তার জন্য অবধারিত হয়ে যায়।

তাই যখন কোন মুজাহিদ এমন নেককার স্ত্রী পায়, যে তাকে এই সকল বিপদাপদ ও কষ্টে সাহায্য করে, সর্বদা তার সাথে থাকে এই চিন্তা করে যে, এই দুনিয়া ধ্বংসশীল, এটা অতিক্রম করে চলে যাওয়ার একটি জগত; স্থায়ী বসবাসের জায়গা নয়, নশ্বর জগত; স্থায়ী জগত নয়।

যে তার সাথে ধৈর্যরে সাথে অটল থাকে এই চিন্তা করে যে, কোন মুমিন বা মুমিনা যত বিপদাপদ, কষ্ট ও সংকীর্ণতার সম্মুখীন হয়, তার জন্য তাদেরকে কিয়ামতের দিন বিনিময় দেওয়া হবে। বলা হবে যে, আল্লাহর এই বান্দা ধৈর্যশীল ছিল অথবা এই স্ত্রী, মুজাহিদের স্ত্রী ধৈর্যশীল ছিল, সে তার স্বামীকে ধৈর্য্য ধারণ করতে উৎসাহিত করেছে, তাকে সাহায্য করেছে, সে ছিল তার উত্তম সহযোগী, তখন উক্ত মুজাহিদ আল্লাহর হুকুমে তার জন্য প্রতিহতকারী ও সাহায্যকারী হবে।

উক্ত স্ত্রী হবে খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ রা: এর মত, যখন তার নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলেন, যে সময় তার নিকট ওহী এসেছিল, ফলে তিনি অনেক ভীত হলেন এবং তার নিকট তা প্রকাশ করলেন, তখন তিনি বললেন: কখনো নয়; আল্লাহর শপথ! আল্লাহ কখনো আপনাকে লাঞ্ছিত করবেন না, আপনি আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষা করেন, বোঝা বহন করেন, হারানো জিনিস কুড়িয়ে দেন, মেহমানদের মেহমানদারী করেন এবং সত্য বিপদে সাহায্য করেন। এভাবে তিনি তাকে সাহস দেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা তার স্ত্রীর মাধ্যমে তাকে দৃঢ় করেন। এমনিভাবে মুজাহিদের স্ত্রীও ।

মুজাহিদের অনুভূতি ভিন্ন রকম হয়ে যায়, যখন সে তার স্ত্রীর নিকট আসে বা তার সাথে কথা বলে বা তার সাথে যোগাযোগ করে আর তখন সে অনেক বিপদ বা কষ্ট থাকে, অথবা স্ত্রী থেকে দীর্ঘ বিচ্ছেদে থাকে অথবা তাকে রেখে কোন জিহাদী ব্যস্ততায় দীর্ঘ সময় কাটিয়ে দেয়, আর তখন তার স্ত্রী তাকে বলে: আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করুন, আল্লাহ আপনার সাহায্যে থাকুন, আল্লাহ আপনাকে অবিচল রাখুন! আপনি অটল থাকুন, কারণ আপনার অবিচলতাই আমাদের অবিচলতা। নিশ্চয়ই দুনিয়া ধ্বংসশীল…। এভাবে সে তাকে সাহস যোগায় ও সঠিক পথ প্রদর্শন করে, তাহলে এ সকল কথাগুলো মুজাহিদের জন্য সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী হবে।

এই দুই নারীর সাথে ব্যবধান… তথা উপরিল্লেখিত বৈশিষ্ট্যের নারীর সাথে আর এমন নারীর সাথে, যার স্বামী তার সাথে কথা বললে বা তার সাথে যোগাযোগ করলে, সে বলে: আপনি কোথায় আছেন, আপনার অনুপস্থিতি আমাদেরকে কষ্ট দিয়েছে, আপনি যাওয়ার পরে আমরা কষ্ট ও সংকীর্ণতায় কাটিয়েছি। আমাদের জীবনটা অনেক কষ্টের, আপনি আমাদের নিকট ফিরে আসতে চান না, কত দিন পর্যন্ত এই বিচ্ছিন্ন জীবন… কতদিন পর্যন্ত চলবে এই বিপদ?

ফলে সে এমন কষ্ট, সংকীর্ণতা ও ভীষন্নতা অনুভব করে, যা অনেক সময় তার জন্য দুর্বলতার কারণ হয়, অনেক সময় তার বিকৃতি ও জিহাদ বর্জন, আত্মসমর্পণ ও জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ থেকে বিমুখ হয়ে যাওয়ার কারণ হয়। আর এগুলোর কারণ হল শুধু তার স্ত্রী।

কত পুরুষ জিহাদে অটল থেকেছে, আর তার অটল থাকার কারণ ছিল তার নেককার স্ত্রী। আর কত পুরুষ জিহাদের পথ ছেড়ে দিয়েছে, আর তার জিহাদের পথ ছাড়ার কারণ ছিল তার স্ত্রী, যে আল্লাহর পথে কুরবানী করতে চায়নি এবং তার উপর সংকল্প করেনি, যে আল্লাহর কোন বিনিময় লাভ করতে চায় না, আল্লাহর পথে কোন কষ্ট সহ্য করতে চায় না।

জিহাদের পথে এবং একজন মুসলিমের জীবনে প্রতিটি জিনিসের মধ্যে সওয়াবের নিয়ত করা যায়। প্রতিটি জিনিসের মধ্যে বিনিময় আছে। যেকোন কষ্টের মধ্যে বিনিময় আছে, অসুস্থতার মধ্যে বিনিময় আছে, প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে বিনিময় আছে, খাবারের ঘাটতির মধ্যে বিনিময় আছে।

কষ্ট, কাঠিন্য, প্রচন্ড গরম, প্রচ- ঠান্ডা, রোগ, স্ত্রীর বিচ্ছেদ, সন্তানের বিচ্ছেদ, স্বামীর বিচ্ছেদ সন্তানদের থেকে, সন্তানদের বিচ্ছেদ স্বামী থেকে, স্ত্রীর বিচ্ছেদ স্বামী থেকে…সেই ভুমি থেকে বিচ্ছেদ, যেখানে স্থায়ীভাবে থাকা মানুষের নিকট প্রিয়- এ সকল কিছুর মধ্যেই বিনিময় রয়েছে। যা বান্দা কিয়মাতের দিন দেখতে পাবে। ফলে যখন কিয়মাতের দিন আসবে, তখন নেকির পাল্লায় অনেক এমন আমল দেখতে পাবে, যেগুলো থাকার বিষয়টি সে ধারণাও করত না।

আল্লাহর নিকট বিনিময় প্রাপ্তির আশা রাখার বিষয়টি ব্যাপক। বান্দা যে বিষয়েই সওয়াব প্রাপ্তির আশা করে,তাকে তাতেই বিনিময় দেওয়া হয়।

যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেছেন:

“অবশ্যই আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করবো, কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং সম্পদ ও

ফলমুলের ঘাটতির মাধ্যমে । আর ধৈর্য্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।”

কারা ধৈর্য্যশীল? “যাদের কোন বিপদ ঘটলে, তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর জন্যই এবং আমরা তার দিকেইফিরে যাবো ।”

বিপদ, যেকোন ধরণের বিপদ, কষ্ট, ভয়, সংকট, দীর্ঘ সফর, দীর্ঘ পরিশ্রম, খাবারের স্বল্পতা, পানীয়ের স্বল্পতা,সন্তানদের থেকে স্বামীর বিচ্ছেদ, স্ত্রীর তিক্ততা, তার কষ্ট, তার পরিবারের কষ্ট, তথা এমন যা কিছুরই সম্মুখীনহয়, যেটাকে সে অপছন্দ করে সেটাই বিপদ।

মুমিন বান্দা এসকল বিপদের মোকাবেলায় ধৈর্য্যশীল থাকে । তার কোন বিপদ আসলে সে বলে: আমরা আল্লাহর জন্যই এবং আমরা তার নিকটই ফিরে যাবো।

তাদের এই অবস্থার ফলাফল কি? “এ সকল লোকদের উপর বর্ষিত হয় তাদের প্রভুর পক্ষ হতে প্রভূত রহমত ও দয়া এবং তারাই সুপথপ্রাপ্ত।”

কল্যাণের যে সকল দরজাসমূহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা মুজাহিদা, তথা মুজাহিদের স্ত্রীর জন্য খুলে দিয়েছেন ও তার জন্য সহজ করেছেন, তার মধ্যে একটি হল: যেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: প্রত্যেক নেককাজই সদকা । তাহলে যে ভাল বিষয়ই কোন মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের জন্য পেশ করে, সেটাই সদকা । যেটার মাধ্যমে সে সদকা করছে। যেটা সে তার নেকির পাল্লায় পাবে।

আল্লাহ তা’আলা মুজাহিদা বোনদের জন্য মুজাহিদের খেদমত করা ও তার সাহায্য করা সহজ করে দিয়েছেন, তার খাবার পাকিয়ে দেওয়া, তার কাপড় চোপর ধুইয়ে দেওয়া, তার প্রয়োজন পুরা করা, ঔষধ ঠিক করে দেওয়া, কিছু কিছু রোগের চিকিৎসা করা…মুজাহিদদেরকে যেকোন প্রকারে সাহায্য সহযোগীতা করা- এ সকল সহযোগীতাগুলো সদকা হিসাবে বিবেচিত হবে। বান্দা এর মাধ্যমে কিয়ামতের দিন বিপদ ও আযাব দূর করতে পারবে।

মুজাহিদ ও মুজাহিদাদের জন্য আরো যে সকল নেক আমলের পথ আল্লাহ খুলে দিয়েছেন, তার মধ্যে একটি হল: ঈমানী ভ্রাতৃত্ব, যেটা ভালবাসা, উদারতা ও সম্পৃতি সৃষ্টি করে, ফলে সে তার মুসলিম ভাইদের সাথে সহজ, কোমল ও উদার থাকে।

আল্লাহ তা’আলা সূরা হাশরে বিভিন্ন প্রকার মুমিনদের আলোচনা করেছেন। প্রথম দল হিসাবে উল্লেখ করেছেন মুহাজির ও আনসারদের দলকে । অত:পর তিনি মুহাজিরদের প্রশংসা করেন, যারা তাদের দেশ ও সম্পদ আল্লাহর পথে ত্যাগ করেছে। অত:পর তাদের পরে আনসারদের প্রশংসা করেছেন, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন:

“তারা মুহাজিরদের ভালবাসে, মুহাজিরদেরকে যা দেওয়া হয়েছে, তজ্জন্যে তারা অন্তরে ঈর্ধা পোষণ করে না এবং নিজেরা অভাবগ্রস্থ হলেও তাদেরকে অগ্রাধিকার দান করে।”

কি সেই বৈশিষ্ট্যগুলো ! যেগুলো আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বর্ণনা করলেন?

তা হল: “তারা নিজেদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের প্রচন্ড ক্ষুধা থাকে ।”

অর্থাৎ তারা যদিও সংকীর্ণতা, সংকট, দারিদ্র্য ও ক্ষুধায় থাকে, তথাপি তারা তাদের মুমিন ভাইদেরকে নিজেদেরউপর প্রাধান্য দেয়।

এই মূল ঘটনাটি নাধিল হয়েছে একজন সাহাবীর ব্যাপারে । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট একজন মেহমান আসল। রাসূলুল্লাহ তার মেহমানদারী করতে চাইলেন। কিন্তু তিনি তার বাড়িতে পানি ছাড়া কিছু পেলেন না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বললেন: কে তার মেহমানদারী করতে পারবে? আল্লাহ তার উপর রহম করবেন।

তখন একজন আনসারী সাহাবী দাঁড়িয়ে বললেন: আমি, হে আল্লাহর রাসূল। তিনি তার ঘরে প্রবেশ করে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন: ঘরে কি কিছু আছে? স্ত্রী বলল: শুধুমাত্র আমার শিশু বাচ্চাদের খাবার ছাড়া কিছুই নেই। তখন সাহাবী বললেন: এ তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মেহমান। তখন ঐ স্ত্রী কি বলেছিলেন?! তিনি কি বলেছিলেন, আমাদের নিকট কিছু নেই। আছে শুধু ক্ষুধা, পিপাসা, কষ্ট, বিপদ, সংকট । আমাদের নিকট যথেষ্ট পরিমাণ খাবার নেই।

না, তিনি এটা বলেননি। বরং তিনিও তার স্বামীর সাথে ধৈর্য্য ধারণ করলেন, সহ্য করলেন। তখন সাহাবী তার স্ত্রীকে আদেশ করলেন, যেন বাচ্চাদেরকে রাতের খাবার ব্যতীতই ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হয়।

অত:পর তারা সম্পূর্ণ খাবারটাই মেহমানের সামনে পেশ করে দিলেন। তারা কিছুই খেলেন না। এভাবে স্ত্রীও তার স্বামীর সাথে মেনে নিলেন এবং ধৈর্য্য ধারণ করলেন।

সকাল বেলা উক্ত সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর নিকট গেলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: গতকাল তোমাদের মেহমানদের সাথে তোমাদের আচরণে আল্লাহ মুগ্ধ হয়েছেন এবং আল্লাহ তা’আলার এই বাণী নাযিল হয়েছে:

“তারা নিজেদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের প্রচন্ড ক্ষুধা থাকে। আর যাকে মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত রাখা হয়েছে, এ সকল লোকই তো সফলকাম।”

যখন বান্দা মানষিক কার্পণ্য থেকে মুক্ত হয় এবং নিজের স্বার্থ, নিজের মনোবাসনা এবং নিজের দুনিয়াবী অংশ পাওয়ার লোভ থেকে যুক্ত হয়, তখনই সে সফলকামদের অন্তভূক্তি হবে।

মুহাজির ও আনসারদের পর আল্লাহ তা’আলা পৃথকভাবে এ সকল লোকদের কথা বলেছেন, যারা তাদের যথাযথ অনুসরণ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন:

“আর তাদের পরে যারা এসেছে, তারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদেরকে ও আমাদের এ সকল ভাইদেরকে ক্ষমা কর, যারা আমাদের পূর্বে ঈমান এনেছে। আর আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের জন্য বিদ্বেষ রেখো না। হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই তুমি দয়াশীল, অনুগ্রহকারী।”

মুমিনের উপর আবশ্যক হল তার অদৃশ্য বিষয়াবলী, তথা তার মনে তার মুমিন ভাইদের ব্যাপারে যে হিংসা- বিদ্বেষ আছে তা দূর করা।

মুমিনদের হওয়া উচিত পরস্পরের ব্যাপারে স্বচ্ছ হৃদয়, যাতে কোন হিংসা-বিদ্বেষ ও প্রতারণা থাকবে না। বান্দা এগুলো দূর করতে চেষ্টা করবে এবং ক্ষমা করে দিতে চেষ্টা করবে। তাই সে ক্ষমা করে দিবে এবং এড়িয়ে যাবে। কারণ যে ক্ষমা করে, আল্লাহও তাকে ক্ষমা করে দেন। ফলে যে ক্ষমা করে দেয়, মানুষের ভুলগুলোকে এড়িয়ে যায় এবং তার উপর যত সীমালজ্ঘন ও জুলুম করা হয়েছে, তাকে মার্জনা করে দেয়, আল্লাহ তা’আলাও তাকে ক্ষমা করে দেন।

যেমন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন:

তারা যেন ক্ষমা করে দেয়, এড়িয়ে যায়। তোমরা কি চাওনা, আল্লাহ তোমাদের

ক্ষমা করে দিক? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াশীল।”

বান্দার উচিত, আল্লাহর নিকট এই দু’আ করা যে, আল্লাহ যেন তার অন্তরকে পুত-পবিত্র করে দেন এবং তার মুসলিম ভাইদের জন্য স্বচ্ছ করেন। ফলে তার অন্তরে তাদের ব্যাপারে কোন প্রতারণা না থাকে, কোন হিংসা না থাকে।

বান্দা যখন এই স্তরে পৌঁছে, তখন এটাই জান্নাতবাসীদের বৈশিষ্ট্য।

একটি ঘটনা প্রসিদ্ধ, জনৈক সাহাবীর ঘটনা। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবাদের উদ্দেশ্যে বললেন: তোমাদের মাঝে একজন জান্নাতী লোক প্রবেশ করবে। অত:পর এমন একজন লোক প্রবেশ করলো, যার মধ্যে তারা অধিক নামাযের কোন শ্রেষ্ঠত্ব দেখতে পেলেন না। এভাবে দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিনও একই বিষয় ঘটল।

তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: তার পিছু নিলেন। তিনি বললেন: আমি আমার বাবার সাথে ঝগড়া করেছি, এখন যদি তুমি আমাকে তিন দিনের জন্য আশ্রয় দাও, যাতে আমি আমার অবস্থাটা দেখে নিতে পারি, তাহলে ভাল হত! তখন লোকটি তাকে তিন দিনের জন্য আশ্রয় দিল। আর তিনি তিন রাত তার সাথে উঠাবসা করলেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: এর লক্ষ্য ছিল, অর্থাৎ তিনি চিন্তা করেছিলেন এই লোক তো অধিক ইবাদতের মাধ্যমেই এই মর্যাদায় পৌঁছেছে, তাই তিনি তার রাত্রিজাগরণ ও রাতে নামাযের অবস্থা দেখতে চাইলেন, হয়ত এতে রহস্য উম্মোচিত হবে।

তাই তার সাথে তার বাড়িতে রাত্রি কাটালেন। কিন্তু তিনি তাকে অধিক নামায পড়তে দেখলেন না বা এরকমও দেখলেন না যে, সে যখনই রাত্রি বেলা পার্শ্ব পরিবর্তন করে, তখনই আল্লাহকে স্মরণ করে। এভাবে যখন তিন রাত্রি শেষ হল: তখন আব্দুল্লাহ তাকে বললেন: আসলে আমার মাঝে ও আমার পিতার মাঝে কিছুই ঘটেনি।

কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আপনার ব্যাপারে এই এই বললেন। তাই আমি চাইলাম, আপনার আমল দেখতে। কিন্তু আমি আপনার অধিক আমল দেখতে পেলাম না। তখন লোকটি বলল: ইবাদতের ব্যাপারটা আপনি যেমন দেখেছেন, তেমনই, কিন্তু আমার অন্তরে মুসলিমদের ব্যাপারে কোন কপটতা, হিংসা, বিদ্বেষ নেই। তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রা: বললেন: এটাই আপনাকে এই মর্যাদায় পৌছিয়েছে।

এমনিভাবে মুসলিমদের উচিত পরস্পরের ব্যাপারে স্বচ্ছ হৃদয় হওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইয়ের জন্যও সেই জিনিস পছন্দ না করে, যা নিজের জন্য পছন্দ করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

2 × 3 =

Back to top button