নির্বাচিতবাংলাদেশসংবাদ

দেশে কোন তন্ত্র মন্ত্র নয় কেবল ইসলামই পারে জীবনের সকল সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন হয়েছে। আন্দোলন নস্যাৎ করতে ছাত্রলীগের কর্মীরা হেলমেট পরে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছে। এরপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ মিলে জিগাতলা ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েক জায়গায় তান্ডব চালিয়েছে। অনেক শিক্ষাথী হতাহত হয়েছে। পুলিশ হেলমেট পড়িহিত ছাত্রলীগ ক্যাডারদের গ্রেফতার না করে বিভিন্ন মেস ও বাসায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। যা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। এখনও চলছে গ্রেফতার অভিযান। কিন্তু ফলাফল কতটুকু হল? গণপরিবহনে নৈরাজ্য চলছেই। বাস-মিনিবাসের বেপরোয়া চলাচল, সিটিং ও বিরতিহীনের নামে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, পাল্লাপাল্লি করে ছুটে চলা, যত্রতত্র থামা, ওঠানামা করানো, ট্রাফিক নিয়ম লঙ্ঘন কোনোটাই বন্ধ হয়নি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা কম দেখা গেলেও এখনও চলছে ফিটনেসবিহীন বাস ও মিনিবাস। ভুক্তভোগি যাত্রীদের অভিযোগ, নগর পরিবহনে সেবা বলতে কিছু নেই। বেশিরভাগ বাসের সীট সরু-আরাম করে বসা যায় না। কোনো কোনো বাসের সীট নড়বড়ে, দরজা-জানালা নাই, বডি থেকে টিন খুলে পড়েছে, সামনে-পেছনের লাইট জ্বলে না, হুইস পাইপ দিয়ে কালো ধোঁয়া বের হয়, চলতে গিয়ে বিকট শব্দ হয় আরও কতো কি? নিয়ম না মেনে চলার কারণে নগরীর ব্যস্ত এলাকাগুলোতে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টির কারণও এই যাত্রীবাহী বাসগুলো। সবকিছু মিলিয়ে পরিবহন সেক্টর সেই আগের মতোই বিশৃঙ্খল, অরাজক, নিয়মনীতিহীন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরেও পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
সাধারণ বাস মালিকরা বলেছে, পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারী দলের নেতারা। আবার শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বেও আছেন মন্ত্রী-এমপিরাই। তাদের প্রভাবেই চালক থেকে শুরু করে পরিবহন শ্রমিকরা বেপরোয়া। এ কারণে শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হবে।
জানা গেছে, ঢাকায় বাস কোম্পানি আছে ২৪৬টি। আর বাস চলে প্রায় ৮ হাজার। বেশিরভাগ বাসেরই ফিটনেসসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আপডেট নেই। জানা গেছে, প্রভাবশালী রাজনীতিকদের বাস কোম্পানি থাকায় এতোদিন ফিটনেসবিহীন, রংচটা, লক্কর-ঝক্কর মার্কা বাসের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকায় তিনটি রুটে চলাচল করে সরকারের এক মন্ত্রীর পরিবারের মালিকানাধীন কোম্পানীর বাস। সরকারদলীয় দুজন বর্তমান ও একজন সাবেক এমপির নিজ নামেই পরিবহন কোম্পানি আছে। এর বাইরে এমপি পরিবারের সদস্য, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সরকার-সমর্থক কাউন্সিলরসহ ২০ থেকে ২৫ জন নিজ নামে বা পরিবারের সদস্যদের নামে কোম্পানি করে বাস পরিচালনা করছেন। আবার পুলিশের সাবেক উর্ধ্বতন কর্মকর্তার ভাই, ছাত্রলীগের সাবেক একজন সাধারণ সম্পাদকের কোম্পানির অধীনেও বাস-মিনিবাস চলছে ঢাকায়। আছে একটি বিশেষ জেলার কিছু ব্যক্তির বাস কোম্পানীও। সাধারণ মালিকরা জানান, প্রভাবশালী এসব মালিকের বাসগুলোর চালক শ্রমিকরাও নিজেদেরকে প্রভাবশালীই মনে করে। বেপরোয়া চলাচলে তারা দ্বিধাবোধ করে না।
গত ২৯ জুলাই বাসচাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস আরও দুটি বাসের সাথে পাল্লা দিয়ে ফুটপাতে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের উপর তুলে দেয়। এতে ঘটনাস্থলে দুজন নিহত ও আরও ১০/১২জন আহত হয়। ওই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ ধীরে ধীরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনে রুপ নেয়। জাবালে নূর পরিবহন কোম্পানীর মালিক সরকারের এক মন্ত্রী শাহজাহানের শ্যালক। বাস মালিকরা জানান, এ কোম্পানীর বাস যারা চালায় তাদের বেশিরভাগই বেপরোয়া। ওই মন্ত্রীর ভাইয়ের মালিকাধীন কনক পরিবহনের বাস চালকদের বিরুদ্ধেও একইরকম অভিযোগ আছে। শাহজাহানের এসমস্ত শালা দুলা ভাইয়েরা বসে আছে গণতন্ত্রের অলিতে গলিতে প্রতিটি সেক্টরে। যাদের শত অপরাধের ও কোন জবাবদিহিতা করতে হয় না।

তাহলে  প্রশ্ন জাগে পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরবে কবে? এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, বিষ বৃক্ষ রোপণ করে যেমন সুস্বাদু ফলের আশা করা বোকামী তেমনি মানবরচিত আইনে দেশ পরিচালনাকারীদের নিয়ন্ত্রণে শুধু পরিবহন সেক্টরেই নয়, কোন সেক্টরেই  শৃঙ্খলা  ফিরে আসবে না।এটাও বিষ বৃক্ষ থেকে সুস্বাদু ফলের আশা করার মতেই বোকামী। তাই চ্যালেঞ্জ করে বলা যায়, কোন তন্ত্র মন্ত্র নয় কেবল ইসলামই পারে জীবনের সকল সেক্টরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে। কেননা ইসলামে শাসক ওশাসকের ছেলে অপরাধ করলেও শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

4 × five =

Back to top button