ফাতাওয়া-ফারায়েজবই ও রিসালাহবাংলাদেশশাইখুল হাদীস মুফতি আবু ইমরান হাফিযাহুল্লাহহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

হারবি কুফফারদের কতল করার দলিলঃ শায়খুল হাদিস আবু ইমরান (হাফিঃ)

 

পিডিএফ- https://archive.org/download/dawah_book/qa-6.pdf

بسم الله الرحمن الرحيم
والصلاة والسلام على رسولنا الأمين صلواتُ ربي وسلامهُ عليه وعلى آله وصحبه أجمعين .. أما بعد
মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত কোনো দেশ, গোত্র ও দলের সাধারণ সদস্যরাও যোদ্ধা হিসেবেই পরিগণিত। তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ।

১। কোরআন থেকে দলীল:
(এক) আল্লাহ তাআলা বলেন:
فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ) التوبة5-)
অর্থ: অতঃপর মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা করো, তাদেরকে বন্দী করো, অবরোধ করো এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাকো। (সূরা তাওবাহ-৫)
(দুই) আল্লাহ তাআলা অন্যত্র বলেন:
“قَاتِلُوا الَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَلا بِالْيَوْمِ الْآخِرِ وَلا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَلا يَدِينُونَ دِينَ الْحَقِّ مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ حَتَّى يُعْطُوا الْجِزْيَةَ عَنْ يَدٍ وَهُمْ صَاغِرُونَ”
অর্থ: তোমরা যুদ্ধ করো আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং সত্য দ্বীন(ধর্ম) অনুসরণ করে না, যতক্ষণ না নত হয়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। (সূরা তাওবাহ-২৯)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বিখ্যাত গ্রন্থ আল-উম্ম কিতাবে বলেন,
قال الشافعي في الأم : “أصل الفرض قتال المشركين حتى يؤمنوا , أو يعطوا الجزية” ..
“মূল ফরজ হলো, মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে অথবা জিজিয়া দিয়ে বশ্যতা স্বীকার করে থাকে।”

২। হাদীস থেকে দলীল:
তাওহীদ একজন মানুষের জান-মাল-ইজ্জতের নিরাপত্তা দেয়। আর যে তাওহীদ গ্রহণ বা ঈমান আনে না তাঁর জান-মালেরও কোনো নিরাপত্তা থাকে না। কেননা, শিরক-কুফরী এমনই জঘন্য অপরাধ। এ ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
أَنَّ أَبَا هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَمَنْ قَالَ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ فَقَدْ عَصَمَ مِنِّي نَفْسَهُ وَمَالَهُ إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللَّهِ رَوَاهُ عُمَرُ وَابْنُ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ] أخرجه مسلم (1/52 ، رقم 21) ، والنسائى (6/4 ، رقم 3090)[
অর্থ: আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, আমি মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ না তারা বলে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” সুতরাং যে ব্যাক্তি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর সাক্ষ্য দিবে তাঁর জান ও মাল-সম্পদ আমার থেকে নিরাপদ। তবে ইসলামের কোনো হক্* ব্যাতীত। আর তাঁর অন্তরের হিসাব আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত। (বুখারী, মুসলিম ১/৫২,হাঃ নং-২১। নাসায়ী-৬/৪ হাঃ নং৩০৯০)
وفي صحيح مسلم من حديث بريدة أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يوصي قادة جيوشه وسراياه بقوله ] اغزوا باسم الله ، قاتلوا من كفر بالله ،[…
অর্থ: সহীহ মুসলিমে বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) কোনো বাহিনী বা সারিয়া প্রেরণের প্রাককালে সেনাপতিকে এই উপদেশ দিতেন যে, তোমরা আল্লাহর নামে যুদ্ধ করবে, যারা আল্লাহর সাথে কুফরী করে তাদেরকে হত্যা করবে……………।
(সহীহ মুসলিম-১৭৩১, ইবনে হিব্বান-১৫২৩)
أخرجه الترمذي أن الرسول الله صلى الله عليه وسلم: نصب المنجنيق على أهل الطائف، ورجاله ثقات .
অর্থ: তিরমিজিতে বর্নিত হয়েছে, রাসূল (সাঃ) তায়েফবাসীদের প্রতি মিনজানিক (ক্ষেপণাস্ত্র) স্থাপন করেছেন। (সাবিলুস সালাম ৪/২৫৩১)
وبالحديث الآخر عن سلمة بن الأكوع: بيتنا هوازن مع أبي بكر الصديق وكان أمره علينا رسول الله صلى الله عليه وسلم .
অর্থ: অপর একটি হাদিস বর্নিত হয়েছে সালামাহ বিন আকওয়া (রাঃ) হতে, তিনি বলেন, আমরা আবু বকর (রাঃ) এর সাথে হাওয়াযেন গোত্রের অধিবাসীদের উপর রাত্রী বেলায় আক্রমণ পরিচালনা করি। রাসূল (সাঃ) তাঁকে আমাদের আমীর নিয়োগ করে দিয়েছিলেন। (আবু দাউদ)
عن عطية القرظي ، رضي الله عنه قال : عرضنا على رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم قريظة فكان من أنبت قتل ، ومن لم ينبت خلي سبيله ، فكنت فيمن لم ينبت ، فخلى سبيلي .
وقد أخرجه أهل السنن الأربعة بنحوه وقال الترمذي : حسن صحيح
অর্থ: আতিয়াহ আলকুরাজী (রাঃ) হতে বর্নিত, তিনি বলেন, বনী কুরাইজার যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) এর সামনে (কুরাইজাহ গোত্রের জনসাধারনকে) উপস্থিত করা হয়েছে। অতঃপর যাদের পশম গজিয়েছে (সাবালক হয়েছে) তাদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আর যাদের পশম গজায় নি তাদের পথ হত্যা থেকে রেহাই দেন। আর আমি ছিলাম তাদের মধ্যে। অতঃপর আমাকে হত্যা থেকে রেহাই দেন।
(আবু দাউদ, নাসায়ী,ইবনে মাজাহ, তিরমিজী। ইমাম তিরমিজি হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছে।) উল্লেখ্য যে, বনী কুরাইজার সাধারণ লোকদের হত্যা করা হয়েছিল এদের সর্দারদের বিশ্বাসঘাতকতার কারনে। জনসাধারণদের সবাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ না করা সত্বেও সবালক সবাইকেই যোদ্ধা হিসেবেই গণ্য করা হয়েছে এবং তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে।
قال ابن حزم في المحلى 7 / 299 تعليقا على حديث : عرضت يوم قريظة على رسول الله صلى الله عليه وسلم فكان من أنبت قتل ، قال ابن حزم : وهذا عموم من النبي صلى الله عليه وسلم ، لم يستبق منهم عسيفا ولا تاجرا ولا فلاحا ولا شيخا كبيرا وهذا إجماع صحيح منه
অর্থ: উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইবনে হাযম (রহঃ) ‘আল মহাল্লা’(৭/২৯৯)গ্রন্থে বলেন, আর এটা রাসূল (সাঃ) এর পক্ষ থেকে সাধারণ নির্দেশ। তিনি তাদের মধ্যে কোনো কর্মচারী, ব্যবসায়ী, কৃষক, বৃদ্ধ কাউকে বাকী রাখেন নি।
এছাড়া,
যদি আমরা একথা মেনে নেই যে, আমেরিকা বা অন্যান্য ইয়াহুদী নাসারা ও কাফেররা বিশ্বাসঘাতক আরব শাসকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছে। তথাপি ও তাদেরকে হত্যা করা জায়েজ।
সীরাতের দিকে লক্ষ্য করুন, আবু বাসীর (রাঃ) এর প্রসিদ্ধ ঘটনা, যার মূল আলোচনা বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে।
রাসূল (সাঃ) ও কুরাইশ কাফেরদের মাঝে হুদাইবিয়ার সন্ধি ও চুক্তি ছিল। তা সত্বেও আবু বাসীর (রাঃ) যখন মক্কা থেকে পালিয়ে মদিনায় মুসলমানদের নিকট হিজরত করলেন তখন কাফেররা এসে চুক্তির শর্তানুযায়ী তাঁকে নিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে আবু বাসীরকে যারা ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তিনি তাদেরকে হত্যা করে পালিয়ে যান। আর পরবর্তীতে আবু বাসীর (রাঃ), আবু জান্দাল ও অন্য যারা পরবর্তীতে উনার সাথে সংযুক্ত হয়েছেন সবাই মিলে কুরাইশদের কাফেলাগুলোতে আক্রমণ করে তাদের হত্যা করতেন, তাদের মালামাল ছিনিয়ে নিতেন। অথচ রাসূল (সাঃ) তাঁর এই কাজকে নিন্দা করেন নি। আর একথা সর্ববিদিত যে, যদি রাসূল (সাঃ) এর জ্ঞাতস্বারে কোন কাজ সংগঠিত হয়, আর তাতে তিনি নিন্দা না জানান, তাহলে এটা শরীয়তের পরিভাষায় تقرير বা “রাসূল (সাঃ) এর সম্মতি” হিসেবে গণ্য।
রাসুল (সাঃ) এর সাথে চুক্তি থাকাবস্থায় যদি এটা জায়েজ হয়, তাহলে এই সকল বিশ্বাসঘাতক মুরতাদ আরব শাসক গুলোর চুক্তির কি কোনো বৈধতা আছে?! বরং নিঃসন্দেহে আমেরিকানদের হত্যা করা বৈধ।

৩। সাহাবায়ে কেরামদের থেকে দলীল:
قال الفاروق عمر لأبي جندل -رضي الله عنهما-: فإنما هم مشركون، وإنما دم أحدهم: دم كلب!. رواه أحمد والبيهقي.
অর্থ: ওমর ফারুক (রাঃ) আবু জানদাল (রাঃ) বলেন, এরা মুশরিক, এদের রক্ত কুকুরের রক্ত। (মুসনাদে আহমদ ও বাইহাকী)

৪। মুফাসসিরীনদের থেকে থেকে দলীল:
(এক) ইমাম তাবারী (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর তাফসীরে তাবারীতে সূরা তাওবাহ এর ৫ নং আয়াতঃ
فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ) التوبة5-)
অর্থ: অতঃপর মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর, তাদেরকে বন্দী করো,অবরোধ করো এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থাকো। (সূরা তাওবাহ-৫)
এর ব্যাখ্যায় বলেন,
قال الطبري : ( فاقتلوا المشركين ) يقول : فاقتلوهم ( حيث وجدتموهم ) ، يقول : حيث لقيتموهم من الأرض ، في الحرم ، وغير الحرم في الأشهر الحرم وغير الأشهر الحرم ( وخذوهم ) يقول : وأسروهم ( واحصروهم ) ، يقول : وامنعوهم من التصرف في بلاد الإسلام ودخول مكة( واقعدوا لهم كل مرصد ) ، يقول : واقعدوا لهم بالطلب لقتلهم أو أسرهم “كل مرصد” ، يعني : كل طريق ومرقب .
অর্থ: যমিনের যেখানেই তাদেরকে পাও হত্যা করো, চাই তা হারাম শরীফে হোক বা হারাম শরীফের বাহিরে হোক। সন্মানিত মাসসমূহে হোক বা অন্য মাসে হোক। এবং তাদেরকে বন্দি করো। তাদেরকে ইসলামের রাষ্ট্রে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে ও মক্কা শরীফে প্রবেশে বাধা দাও। এবং তাদেরকে হত্যা কিংবা বন্দি করার লক্ষ্যে প্রত্যেকটি ঘাঁটি বা রাস্তায় ওঁৎ পেতে বসে থাকো।
(দুই) ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেন,
والمسلم إذا لقي الكافر ولا عهد له: جاز له قتله.]تفسير القرطبي 338/5[
অর্থ: মুসলিম ব্যক্তি যখন এমন কোন কাফেরের সাথে সাক্ষাত করে যার সাথে কোন চুক্তি নেই, তখন তাকে হত্যা করা জায়েজ। (তাফসীরে কুরতুবী-৫/৩৩৮)
(তিন) ইবনে কাছির (রহঃ) বলেন:
قد حكى ابن جرير الإجماع على أن المشرك يجوز قتله إذا لم يكن له أمان وإن أمّ البيت الحرام أو بيت المقدس]تفسير ابن كثير 6/2[
অর্থ: ইবনে জারীর (রহঃ) এই ব্যাপারে ইজমা বর্ননা করেছেন যে, মুশরিকদেরকে হত্যা করা জায়েজ, যদি তাঁর সাথে ‘আমান’ বা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি না থাকে। যদিও সে বাইতুল হারাম বা বাইতুল মাকদিসে (পূন্যময় স্থানে) গমনরত অবস্থায় থাকে। (তাফসীরে ইবনে কাছীর-২/৬)
(চার) ইমাম তাবারী (রহঃ) অন্যত্র বলেনঃ
أجمعوا على أن المشرك لو قلد عنقه أو ذراعيه لحاء جميع أشجار الحرم: لم يكن ذلك له أمانا من القتل إذا لم يتقدم له أمان
[تفسير الطبري61/6]بتصرف.
অর্থ: এব্যাপারে ইজমা রয়েছে যে, কোনো মুশরিক যদি তাঁর গর্দানে, দুই বাহুতে দাড়িতে হারাম শরিফের সমস্ত লতা-পাতা লটকিয়ে রাখে তার যদি ‘আমান’ বা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি না থাকে তাহলে তাকে হত্যা থেকে ঐ কাজটি নিরাপত্তা দিবে না। (তাফসীরে তাবারী-৬/৬১)

৫। ফোকাহায়ে কেরামদের বক্তব্য:
(ক) ইমাম সারাখসী (রহঃ) বলেন,
قال السرخسي: ولا شيء على من قتل المرتدين قبل أن يدعوهم إلى الإسلام لأنهم بمنزلة كفار قد بلغتهم الدعوة] المبسوط 120/10[
অর্থ: মুরতাদদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার পূর্বে হত্যা করার মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। কেননা, এরা ঐসকল কাফেরের পর্যায়ে, যার কাছে দাওয়াত পৌঁছে গেছে।
(খ) ইমাম নববী (রহঃ) বলেন,
قال الإمام النووي: وأما من لا عهد له، ولا أمان من الكفار: فلا ضمان في قتله على أي دين كان]روضة الطالبين 259/9[
অর্থ: যেসকল কাফেরদের সন্ধিচুক্তি, আমান বা নির্দিষ্ট নিরাপত্তা চুক্তি নেই, তাঁকে হত্যা করার ব্যাপারে কোন জিম্মাদারী নেই। চাই সে যেকোন ধর্মেরই হৌক না কেন। (রওজাতুত তালেবীন- ৯/২৫৯)
(গ) ইবনু মুফলিহ (রহঃ) বলেন:
ولا تجب بقتله ديّة ولا كفارة -أي الكافر من لا أمان له- لأنه مباح الدم على الإطلاق كالخنزير المبدع263/8
কাফের এর সাথে যদি কোন ‘আমান’ না থাকে তাহলে তাঁকে হত্যা করলে কোন ধরনের দিয়ত বা কাফফারা ওয়াজিব হবে না। কেননা সাধারণভাবে তাঁর রক্ত শুকুরের রক্তের ন্যায় বৈধ। (মিবদা’-৮/২৬৩)
(ঘ) ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন:
الله تبارك وتعالى أباح دم الكافر وماله إلا بأن يؤدي الجزية أو يستأمن إلى مدة)[الأم 264/1(
বরকতময় আল্লাহ তাআলা কাফেরের রক্ত ও মাল বৈধ করে দিয়েছেন, তবে যদি সে জিযিয়া প্রদান করে অথবা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিরাপত্তা চুক্তিতে থাকে তাহলে নয়। ( আল-উম্ম ১/২৬৪)
(ঙ) ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন,
أما الكفار فدماؤهم على أصل الإباحة كما في آية السيف؛ فكيف إذا نصبوا الحرب…. السيل الجرار522/4].
“আর কাফেরদের রক্ত মৌলিকভাবেই বৈধ, যেমনটা তরবারির আয়াতে রয়েছে। অধিকিন্তু যখন তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা হবে।” (আস-সাইলুল জিরার-৪/৫২২)
তিনি আরো বলেন:
والمشرك سواء حارب أم لم يحارب: مباح الدم ما دام مشركًا] السيل الجرار 369/4.[
“মুশরিক চাই সে যোদ্ধা হোক বা না হোক যতক্ষণ সে মুশরিক থাকবে ততক্ষণ তাঁর রক্ত বৈধ।” (আস-সাইলুল জিরার-৪/৩৬৯)
(চ) ইমাম মাওয়ারদী (রহঃ) “আহকামুস সুলতানিয়াহ” কিতাবে বলেন,
“ويجوز للمسلم أن يقتل من ظفر به من مقاتلة المشركين ، محارباً وغير محارب” ] الأحكام السلطانية : الباب الرابع[
মুশরিকদের মধ্যে যুদ্ধের উপযোগী যে কাউকে সুযোগ পেলেই হত্যা করা বৈধ। চাই তারা যুদ্ধরত হোক বা না হোক। (আহকামুস সুলতানিয়াহ”/চতুর্থ অধ্যায়)।
(ছ) বিভ্রান্তিসৃষ্টিকারীদের জবাবে প্রখ্যাত ইমাম আল্লামা বদরুদ্দীন ইবনে জামাআহ (রহঃ) (যিনি ইবনে কাছীর ও আল্লামা যাহাবীর শিক্ষক)এর স্পষ্ট বক্তব্য হলোঃ
“يجوز للمسلم أن يقتل من ظفر به من الكفار المحاربين سواء كان مقاتلاً أو غير مقاتل ، وسواء كان مقبلاً أو مدبراً ، لقوله تعالى “فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ” (التوبة : 5)
যুদ্ধরত কাফেরদের যাকেই পাবে তাকেই হত্যা করা মুসলমানদের জন্য বৈধ। চাই সরাসরি সে যোদ্ধা হোক অথবা না হোক। চাই সে যুদ্ধে গমনকারী হোক বা যুদ্ধ থেকে পিছনে থাকুক। দলিল হলো আল্লাহ তাআলার বানী:
“فَاقْتُلُواْ الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُواْ لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ” (التوبة : 5)
“অতঃপর মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও সেখানেই হত্যা কর, তাদেরকে বন্দী করো,অবরোধ করো এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে ওঁৎ পেতে থাকো”। (সূরা তাওবাহ-৫)
[تحرير الأحكام في تدبير أهل الإسلام ص 182
বাস্তবতা: বাস্তবতা হচ্ছে, আমেরিকা ও ইসরাইল আমাদের সাধারণ মুসলমানদেরকে দিন-রাতে হত্যা করে যাচ্ছে। তারা দখলদার ইসরাইলের মাধ্যামে ৫০ বছরের ও বেশী সময় ধরে ফিলিস্তিনে আমাদের সাধারণ মুসলমানদেরকে হত্যা করে যাচ্ছে। তাদের ঘর বাড়ি বোমা মেরে, বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিচ্ছে। আর আফগানিস্তান ও ইরাকের কথা কি বলবো! সেখানে তারা হাজার হাজার নিরপরাধ সাধারণ মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে। তারা সোমালিয়ায় ১৩ হাজার মুসলমানকে হত্যা করেছে ও সুদানে গনহত্যা চালিয়েছে। এককথায় সারা বিশ্বে এই আমেরিকা আমাদের মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। মুসলমান, মুজাহিদদেরকে হত্যা, গ্রেফতার ও নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
তারা যেমন আমাদের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করেছে আমরাও তাদের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা বৈধ। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন:
(فَمَنِ اعْتَدَى عَلَيْكُمْ فَاعْتَدُوا عَلَيْهِ بِمِثْلِ مَا اعْتَدَى عَلَيْكُمْ)
“সুতরাং যে তোমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করে তাদের উপরও তোমরা সীমালঙ্ঘন করো যেমন সীমালঙ্ঘন তারা তোমাদের উপর করেছে”। (সূরা বাকারাহ-১৯৪)
আমেরিকার সাধারণ জনগণ তাদের সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে। সেই দেশে অবস্থান করে সেই দেশ ও শাসকদের স্বার্থে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় তাদের এই অসম্মতি তাদের নিরাপত্তার জন্য যথেষ্ট নয়, যতক্ষণ না তারা তাদের স্থান ও অবস্থান পরিত্যাগ করে।
একটা বিষয় স্মর্তব্য যে, আলহামদুলিল্লাহ মুজাহিদরা যখন কোনো কাজ করেন তখন এটা শরয়ীভাবে যাচাই বাছাই করেই করে থাকেন।
আর কাফেররা মুজাহিদদের নিন্দা বা বিরোধিতা করা নতুন কোন বিষয় নয়। এমর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
…তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং এক্ষেত্রে তাঁরা কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করবে না। …। (সূরা মায়েদাহ-৫৪)
عن ثوبان، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: “لا تزال طائفة من أمتي ظاهرين على الحق لا يضرهم من خذلهم حتى يأتي أمر الله وهم كذلك”.
সাওবান (রাঃ)বলেন, রাসূল (সাঃ) বএছেনঃ সর্বদা আমার উম্মতের একটি তায়েফাহ (দল) হক্বের উপর বিজয়ী থাকবে। তাদেরকে যারা নিন্দা করবে তারা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। কিয়ামত সংগঠিত হওয়া পর্যন্ত তারা এর উপর অটল থাকবে। (সহীহ মুসলিম)
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্য।

———————————
উত্তর প্রদানে, শাইখুল হাদীস আবু ইমরান (হাফিজাহুল্লাহ)
উৎসঃ দাওয়াহ ইলাল্লাহ ওয়েবসাইট

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

six − five =

Back to top button