আন-নাসর মিডিয়াআর্কাইভউস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিযাহুল্লাহপাকিস্তানপাকিস্তান আর্কাইভবার্তা ও বিবৃতিবার্তা ও বিবৃতি [আন নাসর]মিডিয়াহযরত উলামা ও উমারায়ে কেরাম

সত্যের পথে মৃত্যুর এই অদম্য বাসনা, আমাদেরকে থামতে দেয় না – উস্তাদ উসামা মাহমূদ হাফিজাহুল্লাহ

[বিগত ২৫ রবীউল আউয়াল (১৫জানুয়ারী ২০১৫ মোতাবেক) উত্তর ওয়ারিস্তানের লোয়ারাহের ক্যাম্পে আমেরিকান ড্রোন হামলায় আল-কায়েদা ভারত উপমহাদেশের নায়েবে আমীর ও দাওয়াহ বিভাগের প্রধান উস্তাদ আহমদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহ শাহাদত বরণ করেন। তিনি এবং আল-কায়েদা অন্যতম নেতা কারী ইমরানসহ অন্যান্য মুজাহিদ রাহিমাহুমুল্লাহের শাহাদত উপলক্ষে আল-কায়েদা ভারত উপমহাদেশের মুখপাত্র উস্তাদ উসামা মাহমূদ হাফিজাহুল্লাহ একটি বার্তা দেন। যার নাম হচ্ছে ‘মৃত্যুর জন্যে সত্যের এই অদম্য বাসনা, আমাদেরকে থামতে দেয় না’। এই বার্তা থেকে উস্তাদ আহমদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহর এই জীবনাংশ অনুবাদ করা হলো]

পিডিএফ ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/fs8BrR6HMqL32RB
https://www.file-upload.com/u0r4654f0pic

ওয়ার্ড ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/8i5La4Xfbwqkzj5
https://www.file-upload.com/pz1v8ou18wm4

ব্যানার ডাউনলোড করুন
https://banglafiles.net/index.php/s/9H8e4THw3MfRLg2
https://www.file-upload.com/qk4ghwqzp2kt

 

ইসলামাবাদের উস্তাদ আহমদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহের প্রকৃত নাম রাজা মুহাম্মদ সালমান । তিনি ইলমের দ্বীনের পিপাসু ছিলেন, ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ইসলামাবাদ থেকে শরয়ী জ্ঞান পরিপূর্ণ করার পর যখন জিহাদের ফরজিয়্যাত তাঁকে জিহাদের ময়দানে নিয়ে আসলো, তখন এখানে কঠিন থেকে কঠিনতর অবস্থা এবং অশেষ জিহাদি ব্যস্ততার মধ্যেও জ্ঞানার্জনের সফর অব্যাহত রাখেন, সাথীদেরকেও এ ব্যাপারে মনোযোগী করতেন এবং সাথীদেরকে পড়ানোর মধ্যে বিশেষ আকর্ষণ অনুভব করতেন। উলামাদেরকে খুব ভালবাসতেন এবং তাঁদের অনুসরণকে আবশ্যক মনে করতেন। পাকিস্তানের বিভিন্ন দ্বীনী মাদ্রাসাসমূহের সাথে সুসম্পর্ক রাখার প্রচেষ্টা করতেন এবং ফিকহি মাসয়ালাসমূহে তাদের ফতোয়া তলব করতেন। শরীয়ত প্রতিষ্ঠার জিহাদের জন্যে উৎসাহিত করা এবং সমাজ সংস্কারের সুত্রধরে তাদেরকে চিঠি লিখতেন এবং নিজের মত ও নিবেদন তাদের কাছে পৌছাতেন। কথা-কাজে শরয়ী হুকুম জানার প্রচেষ্টা এবং শরয়ী মূলনীতি জানার পর সাথে সাথে এটাকে কাজে রূপান্তর করা তাঁর কাজের সুস্পষ্ট সৌন্দর্য ছিল। তাঁকে দেখে, অন্তরে আল্লাহর স্মরণ সতেজ হতো, আল্লাহর শরীয়তের সম্মান ও মর্যাদা অন্তরে বসে যেতো এবং তাঁর সাথে সামান্য সময় অতিবাহিত করলে ইলমে দ্বীনের প্রতি ভালবাসা এবং এরচেয়ে বেশি এর উপর আমল করার জন্যে তীব্র বাসনা সৃষ্টি হতো।
তাঁর ব্যক্তিত্ব বিনয় এবং ইখলাসে পরিপূর্ণ ছিলো, চেহারার মধ্য থেকেও এই উন্নত গুণ পরিলক্ষিত হতো, এটা কোনো সাময়িক, লৌকিক বা কৃত্রিম পোষাক ছিলো না, বরং বেশী নিকটে বসবাসকারীর কাছে বেশি প্রকাশিত হতো যে, তাঁর অন্তর কতো পরিষ্কার।এটা এমন নির্মোহ বৈশিষ্ট্য ছিলো যে, শ্রোতার অন্তরে তাঁর কথা এমন আসন তৈরি করতো যে সে প্রভাবিত না হয়ে পারতো না।
প্রসন্ন স্বভাব ও স্থির মনের অপূর্ব সমন্বয় ছিলো। মুখ ও অন্তরের হেফাজত তাঁর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো। মুসলমানদের ব্যাপারে সর্বদা সুধারণা পোষণ করতেন, যদি অন্য কোনো সাথী কারো ব্যাপারে কুধারণা প্রকাশ করতো তাহলে সাথে সাথে নির্দেশনা দিতেন। হাসি-কৌতুকের মধ্যেও গীবত অথবা অন্য মুসলমানদের ব্যাপারে বিদ্রূপের মতো ত্রুটি প্রকাশ পেতো না। যদি কেউ তাঁকে কষ্ট দিতো অথবা তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতো, তাহলে সবর করতেন, নিজেও নিশ্চুপ থাকতেন এবং সাথীদেরকেও এইসব ভাইদের ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখতেন। হাসি-কৌতুকে এই বিষয়ের লক্ষ্য রাখতেন যে অন্তর যেনো আল্লাহর স্মরণ থেকে গাফিল না হয়ে যায়, যদি কোনো মাহফিলে হাসি-কৌতুক সীমালংঘনের পর্যায়ে যেতো তাহলে সাথে সাথে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ভাইদেরকে আল্লাহর দিকে মনোযোগী করতেন এবং অন্তর মৃত হওয়া বাঁচানোর স্মরণ করে দিতেন। এমন সংস্কারক ও মুরব্বী ছিলেন যে, সাথী যদি কোনো সময় তার সাথে সামান্য সময় ব্যয় করে তাহলে তার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা যেতো। অত্যন্ত ভালোবাসা এবং কল্যাণকামিতার সাথে আত্মশুদ্ধি ও ইসলাহের প্রচেষ্টা করতেন। সাথীদের সাথে সহজেই মিশে যেতেন, প্রত্যেকের সাথে এই পরিমাণ ভালবাসার সম্পর্ক হতো যে, বিদ্যমান সাথীদের প্রত্যেকে এই মনে করতো যে, সেই তাঁর নিকটতম বন্ধু। ইবাদতের মধ্যে আল্লাহর ভয় এবং অন্তরের কোমলতার আমি পরিপূর্ণভাবে প্রত্যক্ষ করেছি, কুরআন অনুধাবনের স্পৃহা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ আমানত ছিলো, তেলাওয়াত কখনো বন্ধ করতেন না এবং তেলাওয়াতের মধ্যে আল্লাহর আয়াতসমূহে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতেন, আল্লাহর নিদর্শনসমূহ দ্বারা এর মহত্ত্ব অন্তরে বসাতে চেষ্টা করতেন, প্রভূর নির্দেশাবলী পড়ে নিজের আমলের যাচাই করতেন, জান্নাত-জাহান্নামের আলোচনায় অধিকাংশ সময় চক্ষু ভিজে ফেলতেন। শেষদিন দিনগুলোতে অবরোধের সময় যে চিঠিটি লিখেছেন, এরমধ্যেও কুরআনের আয়াতের মধ্যে চিন্তা-ভাবনার আলোকে আমাদের অবস্থার সুত্রে যে শিক্ষা পেয়েছেন তা পাঠিয়ে দিয়েছেন!
ফরজ জিহাদ আদায়ের অনুভূতি এবং এটাকে শরীয়ত মোতাবেক দেখার অদম্য বাসনা তাঁর শিরা-উপশিরায় বিদ্যমান ছিলো। জিহাদের ঝান্ডাকে ইলম এবং দূরর্শিতার সাথে সমুন্নত করার ক্ষেত্রে দীন ও জিহাদের দায়ী ছিলেন। কুরআন-সুন্নাহের এই বোঝার ক্ষেত্রে এইসব তাফসীর-ব্যাখ্যাকে সঠিক মনে করতেন যা সাহাবায়ে কেরাম রাজিয়াল্লাহু আনহুম, সালাফে সালেহীন এবং তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণকারী সমস্ত ইমামগণ ও মুহাদ্দিসগণের মাধ্যমে আমাদের পর্যন্ত পৌছঁছে। এরই ধারাবাহিকতায় অঞ্চলের প্রবীণ উলামায়ে কেরামদের থেকে ফায়েদা গ্রহণ করা নিজের জন্যে আবশ্যক মনে করতেন। যেহেতু জিহাদী বিষয়ে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী উলামাগণের সাথে সাথে জিহাদাঙ্গনের শায়খদের নির্দেশনায় চলা আবশ্যক মনে করতেন, জিহাদের ময়দানে শায়খ মুস্তফা আবু ইয়াযিদ, শায়খ আতিয়্যাতুল্লাহ ও শায়খ আবু ইয়াহইয়া রাহিমাহুমুল্লাহের মতো শায়খদের সান্নিধ্য ও নির্দেশনায় এক দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। এই মহান নিয়মতের সাথে সাথে শায়খ আব্দুল্লাহ আযযাম, শায়খ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুমাল্লাহু, শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি, শায়খ আবু ওয়ালিদ আনসারি, শায়খ আবু কাতাদাহ ফিলিস্তিনি এবং শায়খ আবু মুসআব আস-সুরি হাফিজাহুমুল্লাহর মতো শায়খদের পুস্তকাদি ও রচনা শায়খ উসামা রাহিমাহুল্লাহর প্রজ্ঞাপূর্ণ দাওয়াত এবং গ্লোবাল জিহাদি আন্দোলনের দৃষ্টিভঙ্গি বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করে। অর্থাৎ, বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত এই মানহাজ, যা শরীয়তের প্রত্যেক অবস্থার মধ্যে অনুসরণ শেখায়, তাওহীদের উম্মাহকে কালেমায়ে তাওহীদের আশপাশে জড়ো হয়ে ফরজে আইন জিহাদের দিকে আহবান করে, মসলকী ও শাখাগত ইখতেলাফকে দূরে টেলে উম্মতে মুসলিমাহর সবদলকে জড়ো করে সবচেয়ে বড় শত্রু আমেরিকা ও ইসরাইল এবং তাদের সেবাদাসদের বিরুদ্ধে দাঁড় করায়, অত্যাচারী কুফরি শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর উপর গুরুত্ব দেয় এবং শরীয়ত বাস্তবায়ন ও নবুওতের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাওয়াত দেয়। এই মানহাজ আমাদের উস্তাদ আহমদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহ জিহাদি শায়খদের কাছ থেকে শিখেছেন, এটাকে শরীয়াহের মনে জেনেছেন এবং উম্মতে মুসলিমার একমাত্র উপায় হিসেবে পেয়েছেন, এবং শায়খ উসামা রাহিমাহুল্লাহ এবং তাঁর দল আল-কায়েদার এই পবিত্র জিহাদি দৃষ্টিভঙ্গির খেদমত, নিজের জাতিকে এরদিকে একত্র করা এবং এর ভিত্তির উপর জিহাদি আন্দোলনকে দাঁড় করানোর প্রচেষ্টাকে নিজের জীবনের লক্ষ্য বানিয়েছেন।
উস্তাদ আহমদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহ পিছনের সাত বছর ধরে আল-কায়েদার শায়খদের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের মধ্যে দাওয়াহ বিভাগের দায়িত্বের উপর নিয়োজিত ছিলেন। তিনি এই সময়ে পাকিস্তানের ভেতর শায়খ উসামা রাহিমাহুল্লাহ এবং শায়খ আইমান আজ-জাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহের জিহাদের দাওয়াতের পূর্ণ মুখপাত্রের ভূমিকায় ছিলেন, এই পথেই সাথীদেরকে দীক্ষা দেন, এই দৃষ্টিভঙ্গির দিকে পাকিস্তানবাসীকে আহবান করেছেন। আল-কায়েদার খোরাসানের দায়িত্বশীল শায়খ মুস্তফা আবু ইয়াজিদ রাহিমাহুল্লাহ তাঁকে ডাক্তার আরশাদ ওয়াহিদ রাহিমাহুল্লাহের শাহাদতের পর তাঁর স্থলে গ্রুপের নেতৃত্ব দেন। জিহাদের ময়দানে থেকে তিনি যেখানে জিহাদ ও মুজাহিদদের সম্পর্কিত প্রশাসনিক, সামরিক, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য ব্যস্ততায় নিয়োজিত ছিলেন, সেখানে সাথে সাথে তিনি শিক্ষকতা ও রচনা, আত্মশুদ্ধি ও অন্তরের পরিশোধন, বিবৃতি ও নির্দেশনা, প্রচার-প্রসারে ব্যাপক মনোযোগ ও সময় দিতেন।
পাকিস্তানে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার পথে প্রধান বাধা রাষ্ট্র ও সৈন্যদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও কিতালের বলিষ্ট দায়ী ও উদ্যমী নেতা ছিলেন। শায়খ উসামা রাহিমাহুল্লাহ পাকিস্তানে জিহাদের ঘোষণা করলেন এবং আল-কায়েদা এই জিহাদে পা রাখলো। তখন তাঁর নেতৃত্ব ও নির্দেশনায় আমেরিকাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তাদের সৈন্য এবং গোপন এজেন্সীসমূহে অনেক সফল অপারেশন পরিচালিত হয়।
পাকিস্তানের মধ্যে এবং তার চেয়ে অগ্রসর হয়ে নিখিল ভারতে আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠা তাঁর প্রাণিক আকাঙ্ক্ষা ছিলো। এই দলের প্রতিষ্ঠার সময় তিনি নিজের পূর্বের দল বিলুপ্ত করেন এবং অত্যন্ত প্রশান্ত ও প্রসন্ন হৃদয়ে মুহতারাম আমীর মাওলানা আসেম উমর হাফিজাহুল্লাহের হাতে বাইয়াহ দেন। মাওলানা হাফিজাহুল্লাহ তাঁকে নিজের নায়েবে আমীর এবং দাওয়াহ বিভাগের দায়িত্বশীল নির্ধারণ করেন। তিনি নিজের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আদায় করতেন। দায়িত্বশীলতারই এমন অনুভূতি ছিলো যে, তিনি উত্তর ওয়াজিরিস্তানে যুদ্ধের এলাকা এবং অবরোধ থেকে বের হওয়ার মধ্যে নিজের উপর অন্যান্য মুজাহিদদেরকে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমন সাথীদেরকে বের করতে গেলেন এবং নিজে তাদেরকে বের করার মধ্যে দেরী করতে লাগলেন, এমনকি যখন আমি অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁকে চিঠি দিলাম এবং তাড়াতাড়ি বের হতে খুব নিবেদন করলাম, বের হওয়ার বিভিন্ন রাস্তা ও ধারাবাহিকতাও আমি সামনে তুলে ধরলাম, তখন জবাবে আমাকে এই কবিতা লিখে পাঠালেন, যে, (অর্থ)
‘যখন আমার জীবনে মৃত্যু একবারই আসবে = তাহলে কেনো এটা শাহাদতের মাধ্যমে হয় না’?
পাকিস্তানকে আমেরিকার দাসত্ব থেকে মুক্তি দেওয়া, পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে জুলুম-অত্যাচার থেকে মুক্তি দেওয়া, পাকিস্তানের মধ্যে শরীয়তে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাস্তবায়ন উস্তাদ আহমদ ফারূকের স্বপ্ন ছিলো। পাকিস্তানের জিহাদের শক্তিবৃদ্ধি এবং এটাকে শরীয়তের মোতাবেক দেখা, তাঁর এমন আকাঙ্ক্ষা ছিলো যে, এরজন্যে তিনি সর্বদা চিন্তিত ও বিমর্ষ থাকতেন। পাকিস্তানের মধ্যে জিহাদের ঝান্ডা সমুন্নত দেখা, জুলুম ও কুফরের শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে এই মুবারক জিহাদকে সর্বদা অব্যাহত রাখা, এই জিহাদকে শরীয়তের ভিত্তির উপর সামনে নিয়ে চলা এবং অগ্রসর করার এই পরিমাণ উদগ্র বাসনা ছিলো যে, শাহাদতের দু’দিন পূর্বেও এই ব্যাপারে ওসিয়ত করে চিঠি প্রেরণ করেছেন এবং সাথে অডিওবার্তাও রেকর্ড করে পাঠিয়েছেন। এই চিঠি ও বার্তা এমন সময় তিনি প্রস্তুত করেছেন, যখন তাঁর শাহাদতের প্রায় আশা হয়ে গিয়েছিলো, শত্রুদের প্রচন্ড অবরোধ ছিলো, এবং তাঁকে লক্ষ্য বানানোর জন্যে চল্লিশ দিন ধরে পাঁচ ড্রোনও মাথার উপর ছিলো। কিন্তু এমন কঠিন মুহূর্তেও কুফরি শাসনব্যবস্থার অত্যাচারের বিরুদ্ধে জিহাদের ঝান্ডা সমুন্নত রাখা এবং পাকিস্তানের বরকতময় কাফেলাকে সর্ববস্থায় সামনে অগ্রসর করার ওসিয়ত দিয়েছেন। এই ওসিয়তে পাকিস্তানের জিহাদে নিয়োজিত সব মুজাহিদদেরকে এই জিহাদকে শরয়ী জিহাদের উপর চলা, শরীয়াহ বহির্ভূত কাজের উপর নীরব না থাকা এবং এই জিহাদকে পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্যে প্রশান্তি এবং রহমত বানানোর জন্যে অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে জোর দিয়েছেন। জিহাদকে সঠিক রেখার উপর পরিচালনের ক্ষেত্রে তাঁর ব্যাকুলতাকে দেখুন, দীর্ঘ অবরোধের মধ্যেও শেষদিনগুলোতে যখন ডানেবামে শাহাদত এবং গ্রেফতারির সংবাদ আসছিলো, শত্রু মাথার উপর ছিলো, শাহাদত নিশ্চিত ছিলো, এই কঠিন মুহূর্তে ‘ফুরসান তাহতা রায়াতিন ন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’ [নবীসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পতাকাতলের অশ্বারোহী] গ্রন্থের অনুবাদে ব্যস্ত ছিলেন। মুহতারাম আমীর শায়খ আইমান হাফিজাহুল্লাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ যেখানে তিনি অর্ধ শতাব্দির জিহাদি ইতিহাস, এগুলোর ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতাসমূহের গভীরভাবে পর্যালোচনা এবং এগুলোর আলোকে আগামী জিহাদি আন্দোলনের নির্দেশনা, শিক্ষা ও উপদেশ সম্বলিত অনন্য সঙ্কলন। নিজের শেষদিনগুলোতে উস্তাদ আহমদ ফারূক রাহিমাহুল্লাহ বার বার বলতেন, যে, বর্তমান জিহাদ বিশেষভাবে পাকিস্তানের জিহাদের জন্যে এই পাঠ থেকে নির্দেশনা গ্রহণ খুবই আবশ্যক। লিখিত অনুবাদ অনেক সময় খেয়ে ফেলে, তাই তিনি ভয়েস রেকর্ডারের মাধ্যমে অনুবাদ ও পর্যালোচনা রেকর্ড করলেন এবং অধিকাংশের অনুবাদ করে শাহাদতের দু’দিন পূর্বে পাঠিয়ে দিলেন। আল্লাহ তাঁর এই উদগ্র বাসনা এবং জিহাদের রাস্তার ভালবাসাকে কবুল করুন। আমীন।
তিনি প্রত্যেক ধরনের মসলকী ও সাংগঠনিক উগ্রতা থেকে দূরে থাকতেন। শাখাগত মতানৈক্যের ভিত্তির উপর পৃথক থাকা এবং অন্যকে দূরে ঠেলে দেওয়ার বিপরীতে নিকটবর্তী হওয়া ও নিকটবর্তী করার ক্ষেত্রে, পরষ্পরে মিলেমিশে থাকা এবং কল্যাণের ক্ষেত্রে পারষ্পারিক সাহায্যের পরিবেশ তৈরী করা ছিলো তাঁর উজ্জ্বল গুণ। সাংগঠনিক এবং দলগত সংকীর্ণতা থেকে সরে সব জিহাদী দলসমূহের মুজাহিদ এবং অন্যান্য মুসলমানদের সাথে ভালবাসা রাখতেন, সবার ব্যথায় ব্যথিত এবং আনন্দে আনন্দিত হতেন। তেহরীকে তালেবানের আমীরদের সাথে স্বতন্ত্র সম্পর্কের মধ্যে থাকার চেষ্টা করতেন এবং পাকিস্তানের জিহাদের শক্তিবর্ধন ও সংশোধনের জন্যে কখনোসখনো কাজ ও পরামর্শকে নিজের জন্যে সৌভাগ্য মনে করতেন।
আল্লাহ তাঁর এই পবিত্র আশাকে কবুল করুন এবং পাকিস্তানে লড়াইরত মুজাহিদদেরকে শরীয়তের উপর চলার তাওফীক দিন, তাঁদের অন্তরকে সত্যের উপর অটুট রাখুন। আল্লাহ পাকিস্তানের জিহাদকে খুব উন্নতি দান করুন এবং এই জিহাদকে পাকিস্তানের মুসলমানদের জন্যে রহমত বানান। পাকিস্তান এবং এই নিখিল ভারত উপমহাদেশে দীনের শত্রু এবং আমেরিকার দাসদেরকে নিজের বিশেষ রহমত দ্বারা, এই পবিত্রাত্মার মুজাহিদদের রক্তের বরকতে আমাদের হাতে সুস্পষ্ট পরাজয় দিন এবং এই পূর্ণভূমিতে ইসলামের জয়জয়কার করুন। আমীন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

nineteen − 6 =

Back to top button